বাংলাদেশের অস্তিত্বের সংকট
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on January 26, 2021
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
মডেলটি ব্যর্থতার
বিশ্বমাঝে বাংলাদেশ এখন এক ব্যর্থতার মডেল। সেটি যেমন ভোট-ডাকাতি ও নৃশংস ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারের। তেমনি পর পর পাঁচবার দূর্নীতিতে বিশ্বে প্রথম হওয়ার। এবং সে সাথে গুম, খুন, চুরি ডাকাতি, ব্যাংক ডাকাতি, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের জোয়ার আনার। তাই যারা নীচে নামতে চায় তারা বাংলাদেশ বহু কিছু শিখতে পারে। সব রোগের পিছনেই কারণ থাকে। তাই কারণ আছে বাংলাদেশের এরূপ নীচে নামারও। পতনের শুরুটি চেতনার বিভ্রাট বা অসুস্থ্যতা থেকে। চেতনাই ব্যক্তিকে কর্ম ও আচরণে পথ দেখায়। ভারতের অনেকে যেরূপ গো-মুত্র সেবন করে, দলিতদের যেরূপ অচ্ছুৎ বলে এবং কিছুকাল আগেও বিধবাদের স্বামীর চিতায় জ্বালিয়ে হত্যা করতো –তা তো অসুস্থ্য চেতনার কারণে। তাই দুর্বৃত্তিতে লিপ্ত দেখে নিশ্চিত বলা যায়, চেতনার ভূমিটি সুস্থ্যতা হারিয়েছে। বাংলাদেশীদের রোগটি এখানেই। পরিতাপের বিষয়ট হলো, ১৯৭১’য়ে দেশটির জন্ম থেকে জনগণকে সুস্থ্য কোন দর্শন বা চেতনার সন্ধানই দেয়া হয়নি। বরং সেটিকে আড়াল করা হয়েছে। অথচ সুস্থ্য ইসলামের ন্যায় সুস্থ্য জীবন-দর্শনের কারণে মুসলিমগন তাদের গৌরব কালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হতে পেরেছিলেন।
বিপদের আরো কারণ, বাংলাদেশী মুসলিমদের চেতনার বিভ্রাট যে দিন দিন ভয়ানক রূপ নিচ্ছে -সে প্রমাণ প্রচুর। রোগ নিয়ে জটিল পরীক্ষা-নিরীক্ষার তখনই প্রয়োজন হয় যখন সেটি দেহের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশীদের চেতনার রোগটি এখন আর লুকিয়ে নেই, বরং সর্ববিধ সিম্পটম নিয়ে নিজের উপস্থিতি জাহির করছে। জাতীয় জীবনে কোন রোগই -তা সে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা নৈতিক হোক, হঠাৎ আসে না। বাড়ে বহুকাল ধরে। ঝড় শুরু হওয়ার আগে থেকেই আকাশে যেমন কালো মেঘ জমতে শুরু করে তেমনি জাতির জীবনেও কালো মেঘ জমতে থাকে বিপর্যের বহু আগে থেকেই। কালো মেঘ দেখেও ঝড়ের আলামত টের না পাওয়াটি অজ্ঞতা। তেমনি মানব জীবনের ভয়ানক অজ্ঞতাটি হলো, প্রচণ্ড বিচ্যুতি ও পথভ্রষ্টতার মধ্যে থেকেও তা নিয়ে বোধোদয় না হওয়া। এ অজ্ঞতা নিরক্ষরতার চেয়েও ভয়ানক।
এমন অজ্ঞতা যে শুধু দেশের সেক্যুলার রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের মাঝে বিরাজ করছে তা নয়, প্রকট রূপ ধারণ করেছে তাদের মাঝেও যারা নিজেদেরকে ধর্মভীরু মুসলিম ও ইসলামি আন্দোলনের কর্মী বা সমর্থক বলে দাবী করে। বাংলাদেশের অর্জিত ব্যর্থতার জন্য শুধু কোন একক ব্যক্তি বা দল দায়ী নয়, দায়ী সবাই। দুর্বৃত্ত শাসনকে যারা নীরবে মেনে নেয় দায়ী তারাও। কর্পুর যেমন দিন দিন হাওয়ায় হারিয়ে যায়, বাংলাদেশের মানুষের আক্বিদা ও আচরণ থেকে ইসলামী বিশ্বাস ও মূল্যবোধও যেন হাওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে আজ থেকে ৫০ থেকে বছর আগে বাংলার মানুষ ইসলামের যতটা কাছে ছিল, এখন ততটাই দূরে। তখন বিছমিল্লাহ বা আল্লাহর উপর আস্থা নিয়ে অন্ততঃ মুসলিমদের মাঝে বিরোধ ছিল না। অথচ এখন ঈমানের সে মৌল বিশ্বাসটি দেশের শাসনতন্ত্রে উল্লেখ করাও অসম্ভব হয়ে উঠেছে। ইসলাম থেকে বাংলাদেশের মানুষ যে কতদূর দূরে সরেছে এ হল তার নমুনা। আর এ অবস্থা সৃষ্টির জন্য যেটি সফল ভাবে কাজ করেছে সেটি দেশের সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থা। এ শিক্ষা ব্যবস্থার মূল প্রবর্তক ছিল ব্রিটিশ শাসকেরা। এর মূল কাজটি মুসলিমদের ঈমান বা আল্লাহর উপর আস্থা বাড়ানো ছিল না, ছিল ইসলাম থেকে দ্রুত দূরে সরানো। মহান আল্লাহপাক ও তার রাসূল কি বললেন সেটি ঔপনিবেশিক শাসনামলে যেমন গুরুত্ব পায়নি, এখনও পাচ্ছে না। বরং গুরুত্ব পাচ্ছে ডারউইন, ফ্রয়েড, কার্ল মার্কস, এঙ্গেলস, ল্যাস্কী বা রাসেলের মত অমুসলিমগণ কি বললো সেটি।
সেক্যুলার শিক্ষার নাশকতা
বিষ যেমন দেহের অভ্যন্তুরে ঢুকে দেহের প্রাণশক্তি বিনষ্ঠ করে, সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থাও তেমনি বিনষ্ট করছে ঈমান। মড়ক ধরায় চেতনায়। তাই আল্লাহর উপর আস্থা বিলুপ্ত করার লক্ষ্যে সেক্যুলারিস্ট ও নাস্তিকদের আর লাঠি ধরতে হচ্ছে না, দেশের শিক্ষ্যাব্যবস্থাই সেটি ত্বরিৎ সমাধা করছে। ফলে দেশে ৯০ ভাগ মুসলিম -এ পরিসংখ্যানটি নিছক বইয়ের পাতায় রয়ে গেছে; দেশবাসীর কাজ-কর্ম, ঈমান-আক্বীদা, নীতি-নৈতীকতায় নয়। বরং বাড়ছে মুর্তি নির্মাণ, মুর্তির সামনে মাতা নত করে খাড়া হওয়া ও মঙ্গল প্রদীপের কদর। এ শিক্ষা ব্যবস্থার ফলেই সফল ভাবে সমাধা হয়েছে কোর্ট-কাছারি, আইন-আদালত, প্রশাসন ও রাজনীতি থেকে ইসলাম সরানোর কাজ। আল্লাহর দ্বীনটির এমন নিষ্ঠুর অবমাননা স্বচক্ষে দেখার পরও রুখে দাঁড়ানোর লোক দেশে শতকরা ৫ জনও নাই। থাকলে ঢাকা শহরে শরিয়তের পক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের মিছিল হত। আর শতকরা ৯০ জন মুসলিমের দেশে ইসলামের এরূপ পরাজয় ডেকে আনার জন্য ভারত, ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তাবত ইসলামী বিরোধী শক্তির কাছে কদর বাড়ছে দেশের সেক্যুলার রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও এনজিও কর্মীদের। ভূয়শী প্রশংসা পাচ্ছে ইসলামকে পরাজিত করার এ বাংলাদেশী মডেল। ফলে RAB বা পুলিশের হাতে ভয়ানক ভাবে মানবাধিকার লংঘিত হলেও তা নিয়ে পাশ্চাত্যে শাসকগণ নিন্দা দূরে থাক, মুখ খুলতেই রাজী নয়।
শূণ্যস্থান বলে এ জগতে কিছু নেই। শূণ্যস্থান থাকে না চেতনা রাজ্যেও। সুশিক্ষার ব্যবস্থা না হলে দেশবাসীর মনের ভূবন কুশিক্ষার দখলে যাবেই। তখন ইসলামের শত্রুপক্ষের বিজয়ে অর্থদান, শ্রমদান ও রক্তদানের কাজটি কুশিক্ষাপ্রাপ্ত জনগণই নিজ গরজে সমাধা করে দেয়। কুশিক্ষা তখন ইসলামকে পরাজিত করার কাজে সফল হাতিয়ার রূপে কাজ দেয়। একারণে যারা ইসলামের বিজয় চায় তারাও সর্ব প্রথম যেটিকে গুরুত্ব দেয় সেটি দেশবাসীর সুশিক্ষা। এবং বন্ধ করে দেয় কুশিক্ষার সকল প্রতিষ্ঠানকে। এরূপ কাজটি ছিল নবী-রাসূলদের। মুসলিমদের দায়ভার তো সে কাজকে চালু রাখা। মহান আল্লাহতায়ালাও তাঁর সর্বশেষ নবী (সাঃ)কে সর্বপ্রথম যে পয়গাম দিয়ে পাঠিয়েছিলেন তা নামায-রোযার নয়, বরং জ্ঞানার্জনের।
সাম্প্রতিক কালে ইসলামী শিক্ষার গুরুত্ব এবং সেক্যুলার শিক্ষার নাশকতা যারা সবচেয়ে বেশী বুঝেছেন তারা হলো ইরানী আলেমগণ। মহম্মদ রেজা শাহের প্রতিষ্ঠিত দেশের সকল সেক্যুলার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তিন বছরের জন্য তাঁরা বন্ধ রেখেছিলেন। কিন্তু ইসলামের নামে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা পেলেও দেশটির নেতাদের দ্বারা সেটি হয়নি। যারা ইসলামের পক্ষের শক্তি ছিল তারাও বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেননি, ফলে ইসলামী শিক্ষার প্রবর্তন নিয়ে আন্দোলনও করেননি। এর ফলে বহাল তবিয়তে থেকে যায় ব্রিটিশের প্রবর্তিত সেক্যুলার শিক্ষাব্যাবস্থা। পাশ্চাত্যের যৌন ফিল্ম এবং রাশিয়া ও চীনের সমাজতান্ত্রিক বই ও পত্র-পত্রিকা যাতে অবাধে প্রবেশ করতে পারে -সেজন্য দেশের দরজা পুরাপুরি খুলে দেয়া হয়। যুবকদের চেতনায় মহামারি বাড়াতে এগুলোই পরবর্তীতে ভয়ানক জীবানূর কাজ করে। পাকিস্তান আমলে দেশের রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটগুলোকে সে জীবাণূ-ব্যবসায়ীদের হাতে লিজ দেয়া হয়েছিল। এভাবে দেশের এবং সেসাথে ইসলামের ঘরের শত্রু বাড়ানো হয়েছিল বিপুল হারে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই যারা বিরোধীতা করেছিল এবং দেশটি প্রতিষ্ঠার পর যারা তার বিনাশে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছিল -তারা হলো সেক্যুলারিস্ট জাতীয়তাবাদী এবং সমাজতন্ত্রিরা। সমাজতন্ত্র মারা গেছে, কিন্তু মারা যাওয়ার আগে মরণ ছোবল মেরে যায় পাকিস্তানের বুকে।
বিজয়ী হিন্দু এজেণ্ডা
উপমহাদেশের রাজনীতিতে সবসময়ই দুটি পক্ষ ছিল। দুই পক্ষের দুটি ভিন্ন এজেণ্ডাও ছিল। ফলে ১৯৪৭ সালে রাষ্ট্র নির্মানের দুটি বিপরীত ধারাও ছিল। একটি ছিল অখণ্ড ভারত নির্মানের ধারা। এ ধারার নেতৃত্বে ছিল কংগ্রেসের হিন্দু নেতৃবৃন্দ। অপরটি ছিল প্যান-ইসলামিক মুসলিম ধারা। শেষাক্ত এ ধারাটিই জন্ম দেয় পাকিস্তান। পাকিস্তানের নির্মাণের মূল ভিত্তি ছিল জিন্নাহর দেয়া দ্বি-জাতি তত্ত্ব। যার মূল কথা হলো: চিন্তা-চেতনা, মন ও মনন, নাম ও নামকরণ, তাহজিব ও তামুদ্দনের বিচারে মুসলিমগণ হলো হিন্দুদের থেকে সম্পূর্ণ এক ভিন্ন জাতি। তাদের রাজনীতি ও রাষ্ট্র নির্মাণের লক্ষ্য, ভিশন ও মিশন তাই এক ও অভিন্ন হতে পারে না। তাই অখণ্ড ও সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু-ভারতের কাঠামোর মাঝে মুসলিমদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও শরিয়ত অনুসরণের এজেন্ডা পূরণ অসম্ভব। পৃথক ও স্বাধীন পাকিস্তান এ এজেন্ডা পূরণে অপরিহার্য। হিন্দু কংগ্রেস ও ব্রিটিশ শাসকদের প্রচণ্ড বিরোধীতা সত্ত্বেও ১৯৪৭’য়ে দ্বি-জাতি তত্ত্বই বিজয়ী হয় এবং প্রতিষ্ঠা পায় পাকিস্তান।
কিন্তু অখণ্ড-ভারত নির্মাণের লক্ষে আত্মনিবেদিত হিন্দু নেতারা ১৯৪৭’য়ের সে পরাজয়কে মেনে নেয়নি। সুযোগ খুঁজতে থাকে মুসলিমদের সে বিজয়কে উল্টিয়ে দেয়ার। সে সুযোগ আসে ১৯৭১’য়ে। ১৯৭১’য়ে তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক বিজয় লাভ করে দেশটির পূর্বাঞ্চলে। ফলে বিজয়ী হয় হিন্দু এজেন্ডা। ভারত ১৯৪৭’য়ের পরাজয়ের বদলা নিয়ে নেয়। নিজেদের সাম্প্রদায়িক প্রকল্পকে মুসলিমদের কাছে আকর্ষণীয় করতে গায়ে সেক্যুলারিজমের লেবাস লাগায়। এটিকে ধর্মনিরপেক্ষতা বলে জাহির করে। সেক্যুলারিজমের মুসলিম-বিরোধী রূপটি নিয়ে বাংলাদেশের মুসলিমদের মনে প্রচণ্ড অজ্ঞতা থাকলেও সে অজ্ঞতা ভারতীয় মুসলিমদের নেই। ভারতের মুসলিম শিশুরাও সেটি বুঝে। তারা সেটি বুঝেছে হিন্দুদের দ্বারা সংঘটিত মুসলিম বিরোধী অসংখ্য দাঙ্গায় সহায়-সম্পদ ও আপনজনদের হারিয়ে; এবং চোখের সামনে মা-বোনদের ধর্ষিতা হতে দেখে। কিন্তু হিন্দু-ভারতের সে ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক রূপটিকে পর্দার আড়ালে রাখা হয়েছে বাংলাদেশের মুসলিমদের থেকে। বরং কুৎসিত রূপে চিত্রিত করা হয়েছে দেশের ইসলামপন্থি এবং একাত্তরের পাকিস্তানপন্থিদের। এভাবে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীর মনে যেমন সৃষ্টি করা হয়েছে পাকিস্তান-বিরোধী প্রচণ্ড ঘৃনা। সে সাথে লালন করা হয়েছে অখণ্ড ভারতের প্রতি মোহ। লাগাতর প্রচারণার ফলে বাংলাদেশী মুসলিমদের মনে এ বিশ্বাসও জন্ম নিয়েছে যে,পাকিস্তানের সৃষ্টিই ভূল ছিল এবং ভূল ছিল জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্ব।
পাকিস্তানকে যারা অনর্থক অনাসৃষ্টি বলে তারা যে শুধু ভারতীয় কংগ্রেসের হিন্দু নেতৃবৃন্দ তা নয়। তাদের সাথে সুর মিলিযে একই কথা বলে বাংলাদেশের কম্যুনিষ্ট, নাস্তিক, জাতীয়তাবাদী এবং মুসলিম নামধারি সেক্যুলারিষ্টগণ। হিন্দু-মুসলিম মিলন ও অখণ্ড ভারতের পক্ষে নানা গুণগানের কথাও তারা বলে। ১৯৭১’য়ে থেকে বাংলাদেশের সকল ছাত্র-ছাত্রী এবং জনগণ শুধু তাদের বাজানো ক্যাসেটটিই লাগাতর শুনে আসছে। অথচ কেন যে বাংলার মুসলিমগণ বিপুল ভোটে পাকিস্তানের পক্ষ নিল -সে কথা তারা বলে না। সে সময় শেখ মুজিব স্বয়ং কেন পাকিস্তানের পক্ষ নিলেন সে কথাও তারা বলে না। বরং বলে, পাকিস্তান সৃষ্টিই ভূল ছিল। তাদের সে নিরচ্ছিন্ন প্রচারণা কাজও দিয়েছে। ফল দাঁড়িয়েছে, এখন সে প্রচরণায় প্লাবনে ভেসে গেছে বহু ইসলামপন্থিরাও। ফলে ১৬ ডিসেম্বর এলে ভারতপন্থিদের সাথে তাঁরাও ভারতীয় বাহিনীর বিজয়ের দিনে উৎসবে নামে। বাংলাদেশে ইসলামি ধারার রাজনীতিতে এটি এক গুরুতর বিচ্যুতি, এবং এক বিশাল চেতনা-বিভ্রাট। তারা এমন সব কথা বলে, একাত্তরের পূর্বে কোন ইসলামপন্থির মুখে তা কখনোই শোনা যায়নি।
ইম্যুনিটি ইসলামের বিরুদ্ধে
অমুসলিম পরিবেষ্ঠিত এক ক্ষুদ্র দেশে নিজেদের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ধর্ম নিয়ে বাঁচতে হলে চিন্তা-চেতনায় বলিষ্ঠ ইম্যুনিটি তথা প্রতিরোধ শক্তি চাই। রোগের বিরুদ্ধে মানব দেহে ভ্যাকসিন বা টিকা সে ইম্যুনিটিই বাড়ায়। তখন কলেরা,যক্ষা বা পলিওর মত ভয়ংকর রোগের মধ্যে থেকেও মানুষ নিরাপদে বাঁচতে পারে। কোর’আনের জ্ঞান ও ইসলামের দর্শন মূলত ঈমানদারের চেতনায় সে ইম্যুনিটিই তীব্রতর করে। তখন উলঙ্গতা, অশ্লিলতা ও নানা রূপ কুফরির মাঝেও মুসলিমগণ ঈমান নিয়ে বাঁচতে পারে। হিজরতের আগে মক্কার মুসলিমগণ তো তেমন এক ইম্যুনিটির কারণেই সংখ্যাগরিষ্ঠ কাফেরদের মাঝেও বলিষ্ঠ ঈমান নিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন। অথচ মুসলিম অধ্যুষিত সেক্যুলার রাষ্ট্রগুলোতে ইসলামিক ইম্যুউনিটি গড়ার সে কাজটি হয়নি। বরং উল্টোটি হয়েছে। ইম্যুনিটি গড়া হয়েছে ইসলামের বিরুদ্ধে; এবং সেটি ইসলাম-বর্জিত শিক্ষার মাধ্যমে। ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের মনের গভীরে ইসলামের মৌল ধ্যানধারণা ও শিক্ষাগুলোও প্রবেশ করতে পারছে না।
ইসলামী চেতনা নিয়ে বেড়ে উঠাকে সাম্প্রদায়িক বা মৌলবাদ আখ্যা দিয়ে সেটি বাংলাদেশের ন্যায় বহু মুসলিম দেশে অসম্ভব করা হয়েছে। সেটি অসম্ভব ছিল মক্কার কাফের সমাজেও। নবীজী (সা:)’কে ইসলামের প্রচারের কাজ তাই লুকিয়ে লুকিয়ে করতে হতো। এমন প্রকাশ্যে নামায পড়াও বিপদজনক ছিল। দ্বীনের এ অপরিহার্য কাজের জন্য যে অনুকূল অবকাঠামো দরকার সেটি যেমন কাফের অধ্যুষিত মক্কায় সম্ভব হয়নি, তেমনি কোন অমুসলিম রাষ্ট্রেও সম্ভব নয়। নবীজী (সা:)’কে তাই মদিনায় গিয়ে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছে। ইসলামী রাষ্ট্রের কাজ নিছক হাসপাতাল, রাস্তাঘাট বা কলকারখানা নির্মাণ নয়। বরং সেটি হলো, ঈমানদার রূপে বেড়ে উঠার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা। এবং অনৈসলামের বিরুদ্ধে প্রতিটি নাগরিকের মনে ইম্যুনিটি গড়ে তোলা। কোন রাষ্ট্রের এর চেয়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ নেই। খাদ্য-পানীয় তো বিশ্বের সব দেশেই জুটে। এমন কি পশুও না খেয়ে মরে না। কিন্তু মুসলিম মন ও মানস প্রকৃত নিরাপত্তা পায় এবং ঈমানী পরিচয় নিয়ে বেড়ে উঠে একমাত্র ইসলামি রাষ্ট্রে। ইসলাম রাষ্ট্র নির্মান তো এজন্যই ফরয। নইলে কুফরির বিশ্বব্যাপী স্রোতে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই অধিক। তখন সে শুধু বেঁচে থাকে পারিবারীক মুসলিম নামটি নিয়ে, মুসলিম চরিত্র নিয়ে নয়। সোভিয়েত রাশিয়ার কম্যুনিস্ট কবলিত মুসলিমগণ তো বহুলাংশে হারিয়ে গেছে তো একারণেই। একই কারণে তারা হারিয়ে যাচ্ছে পাশ্চত্যের দেশগুলিতেও।
বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট একটি দেশ হলে কি হবে, ১৯৭১’য়ে যে দর্শনের উপর দেশটি জন্ম নিয়েছিল তাতে মুসলিম রাষ্ট্রের কাঙ্খিত সে মূল কাজটিই গুরুত্ব পায়নি। বরং চেতনার ভূমিতে ঢুকানো হয়েছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও সেক্যুলারিজম। সেক্যুলারিজমকে পরিচিত করা হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষবাদ রূপে। অথচ কোরআন ও সূন্নাহ মতে এ তিনটি মতবাদের যে কোন একটিকে বিশ্বাস করাই কুফরি। মুসলিম হওয়ার অর্থ ধর্ম-নিরপেক্ষ হওয়া নয়, বরং সর্ব-অবস্থায় ইসলামের পক্ষ নেয়া। নিজেকে মুসলিম দাবী করে ইসলামের বিজয়ে পক্ষ না নেয়াটি নিরেট মুনাফিকি। এবং পক্ষ নেয়ার অর্থ, ইসলামের বিজয়ে নিজের অর্থ, শ্রম, মেধা ও রক্ত দেয়া। শতকরা ৭০ ভাগের বেশী সাহাবী তো সে কাজে শহিদ হয়েছেন। তাই মুসলিম কখনো জাতীয়তাবাদী হয় না। সেক্যুলারিস্ট হয় না। বরং শতভাগ ইসলামী হয়। সে তার পরিচয় ভাষা বা ভূগোল থেকে পায় না। বর্ণ বা গোত্র থেকেও নয়। পায় ঈমান থেকে।
আর সমাজতন্ত্র? সেটি আজ খোদ সোভিয়েত রাশিয়াতেই আবর্জনার স্তুপে গিয়ে পড়েছে। অথচ শেখ মুজিব সে আবর্জনাও বাংলাদেশের মুসলিমদের মাথায় চাপিয়েছিলেন। এবং সে জন্য জনগণ থেকে কোন রায়ও নেননি। ১৯৭০’য়ের নির্বাচনে এটি কোন ইস্যুও ছিল না। শেখ মুজিব বাঙালী মুসলিমদের মাথার উপর এ কুফরি মতবাদগুলি চাপিয়েছেন নিছক তাঁর প্রভু দেশ ভারত ও রাশিয়াকে খুশি করার জন্য। ইসলামের বিরুদ্ধে মুজিবের গুরুতর অপরাধ, একাত্তরের পর ছাত্র-ছাত্রীদের মনে কুফরি ধ্যান-ধারণা বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন না দিয়ে বরং টিকা লাগিয়েছেন ইসলামের বিরুদ্ধে। আর সে অপরাধ কর্মটি করেছেন জনগণের দেয়া রাজস্বের অর্থে। এ ভাবে কঠিন করা হয়েছে বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের মনে ইসলামের মৌল শিক্ষার প্রবেশ। জিহাদ বা শরিয়তের প্রতিষ্ঠার ন্যায় ইসলামের এ মৌল বিষয়গুলো বাংলাদেশের মানুষের কাছে আজ গ্রহন-যোগ্যতা পাচ্ছে না –সেটি তো একারণেই। নতুন প্রজন্ম পাচ্ছে না ভ্রষ্ট মতবাদগুলোর মোকাবেলায় ইসলামিক ইম্যুনিটি। ফলে জোয়ারের পানির ন্যায় তাদের চেতনায় ঢুকেছে হিন্দু রাজনীতির এজেন্ডা -যার মূল কথাটি আজও অবিকল তাই যা তারা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে বলতো।
যে দেশটি ইসলামী নয় সেদেশে ইম্যুনিটি গড়ার সে ফরয কাজটি করে মসজিদ-মাদ্রাসা, আলেম-মাশায়েখ, ইসলামি সংগঠন, লেখক, বুদ্ধিজীবী ও চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ। তাঁরা সেটি করেন কোর’আন-হাদিস ও ইসলামী দর্শনের জ্ঞান বাড়িয়ে। নবীজী (সাঃ)র মক্কী জীবন তো সেটিরই সূন্নত পেশ করে। কিন্তু বাংলাদেশের সরকার যেমন সে কাজ করেনি, সঠিক ভাবে সেটি হয়নি আলেমদের দ্বারাও। ইসলামি সংগঠনগুলো ব্যস্ত ক্যাডার-বৃদ্ধি, অর্থ-বৃদ্ধি ও ভোট-বৃদ্ধির কাজে, কোর’আনের জ্ঞান ও ইসলামী দর্শন বাড়াতে নয়। তাদের অর্থের বেশীর ভাগ ব্যয় হয় দলীয় আমলা প্রতিপালনে। সে সাথে দেশের মসজিদ-মাদ্রাসাগুলোও তাদের হাতে অধিকৃত যাদের চেতনায় ইসলামের বিজয়ের কোন ভাবনা নেই। মসজিদ ও মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটিগুলোতে দখল জমিয়ে আছে সেক্যুলার মোড়ল-মাতবর, রাজনৈতিক ক্যাডার ও আলেমের লেবাস ধারী কিছু রাজনৈতিক বোধশূন্য ব্যক্তি। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বিপুল ভাবে বাড়লেও ইসলামের বিজয় বাড়ছে না। বরং মুসলিমদের চেতনা রাজ্যে দূষণ বাড়ছে ভয়ানক ভাবে। এমন এক দূষণ প্রক্রিয়াই ফলেই অখণ্ড ভারতের মোহ জেগে উঠছে এমন কি ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মাঝেও।
বাস্তবতা হলো, ১৯৭১’য়ে বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের যে সামরিক বিজয় এসেছিল তাতে শুধু পাকিস্তানের ভূগোলই পাল্টে যায়নি, পাল্টে গেছে বাংলাদেশী মুসলিমদের মনের ভূগোলও। ১৬ই ডিসেম্বরের বিজয়-উৎসবের সাথে ভারত আরেকটি মহা-উৎসব করতে পারে বাঙালী মুসলিমের চেতনা রাজ্যে তাদের এ বিশাল বিজয় নিয়ে। বাঙালী হিন্দুর যখন প্রবল রেনেসাঁ, মুসলিমদের উপর এমন আদর্শিক বিজয় তারা তখনও পায়নি। ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে শেখ মুজিবের সবচেয়ে বড় অপরাধ হল, হিন্দুদের কোলে তিনি এরূপ একটি সহজ বিজয় তুলে দিয়েছেন।
সামরিক বিজয় পরাজিত দেশে কখনই একাকী আসে না। সাথে আনে আদর্শিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বিজয়ও। বাংলাদেশের ভূমিতে ভারতের বিশাল বিজয় তাই একাত্তরে এসে থেমে যায়নি। বিজয়ের পর বিজয় আসছে সর্বক্ষেত্রে। একাত্তরে তাদের লক্ষ্য শুধু পাকিস্তানের বিনাশ ছিল না, ছিল ইসলামী চেতনার বিনাশও। তাছাড়া তাদের এ যুদ্ধটি নিছক পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও ছিল না, ছিল ইসলাম ও বাংলাদেশের ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধেও। পাকিস্তান-বিরোধী যুদ্ধটি শেষ হয়েছে একাত্তরেই। কিন্তু শেষ হয়নি বাংলাদেশের মাটি থেকে ইসলামপন্থিদের নির্মূলের কাজ। তাই ভারত তার পদলেহীদের দিয়ে যুদ্ধ-যুদ্ধ একটা অস্থির অবস্থা বজায় রেখেছে সেই ১৯৭১ থেকেই। তাছাড়া আওয়ামী লীগের আচরণ দেখেও বোঝা যায়, ভারতের পক্ষ থেকে বাঁকি কাজটি সমাধার মূল দায়িত্বটি পেয়েছে তারাই। বেছে বেছে ইসলামী সংগঠন নিষিদ্ধকরণ, ইসলামী নেতাদের বিনা বিচারে গ্রেফতার, মাদ্রাসার পাঠ্যসূচী ও মসজিদে খোতবার উপর নিয়ন্ত্রণ, অফিসে ও ঘরে ঘরে গিয়ে ইসলামী বই বাজেয়াপ্ত করা -ইত্যাদী নানা কর্মসূচী নিয়ে এগুচ্ছে তারা।
ভারতের বাংলাদেশ ভীতি এবং এজেণ্ডা
বাংলাদেশের ভূমিতে ভারতীয়দের এত তৎপরতার মূল কারণ, বাংলাদেশে ভীতি। ভয়ের সে মূল কারণটি হলো ইসলাম। ভারতীয়রা বোঝে, ইসলামী দর্শন এবং কোর’আনের জ্ঞানই জোগাতে পারে যে কোন আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের শক্তি। অতীতে আফগান জনগণ যে শক্তির বলে ব্রিটিশ বাহিনী ও পরে সোভিয়েত বাহিনীকে পরাজিত করেছিল সেটি অস্ত্রবল নয়। অর্থবলও নয়। বরং সেটি ছিল ইসলামী চেতনার বল। সে শক্তির বলে আজও তারা মার্কিনীদের পরাজয় করে চলেছে। ২০ বছরের যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট ও তার ৪০টি মিত্রদেশকে বিজয়ের কাছে ভিড়তে দেয়নি। আর বাংলাদেশীরা আফগানদের থেকে সংখ্যায় ৫ গুণ অধিক। এতবড় বিশাল জনশক্তির মাঝে ইসলামি চেতনার বিস্ফোরণ হলে তাতে কেঁপে উঠবে সমগ্র ভারত। ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ ও ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির মূলে তো তারাই।
বাংলাদেশের মূল শক্তি তাই তার ভূগোল নয়, সম্পদও নয়। বরং এই মুসলিম জনশক্তি। আর এই জনশক্তির সাথে ইসলামের যোগ হলে জন্ম নিয়ে এক মহাশক্তি। মরুর নিঃস্ব আরবেরা তো বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়েছিল এমন এক মিশ্রণ হওয়াতেই। ভারত তাই বাংলাদেশের মানুষকে কোর’আনের জ্ঞান থেকে দূরে সরাতে চায়। আর একাজে ভারতের সুবিধা হল, আওয়ামী লীগকে তারা অতি আগ্রহী কলাবোরেটর রূপে পেয়েছে। বাঙালী হিন্দুদের চেয়েও এ কাজে তারা ভারতের প্রতি বেশী বিশ্বস্থ ও তাঁবেদার। ভারত সে সুযোগটির সদ্ব্যাবহার করতে চায়। একাত্তরের বিজয়কে যুগ যুগ ধরে রাখার স্বার্থে আওয়ামী লীগের কাঁধে লাগাতর বন্দুক রাখাটিকে তারা অপরিহার্যও ভাবে। তবে এলক্ষ্যে তারা যে শধু আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উপরই পুঁজি বিনিয়োগ করছে -তা নয়। তাদের স্ট্রাটেজী, এক ঝুড়িতে সব ডিম না রাখা। তাই বিশাল পুঁজি বিনিয়োগ করেছে দেশের মিডিয়া, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যকর্মী, আলেম-উলামা, ছাত্রশিক্ষক, এমন কি ইসলামী দলগুলোর উপরও। সে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে তারা ভারতে পড়ার সুযোগও করে দেয়েছে। এখন বিপুল পুঁজি বিনিয়োগ করছে দেশের ইসলামী দলগুলোর নেতাকর্মী, বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়ার উপর। ভারত জানে, তাদের হাত থেকে আওয়ামী লীগ হারিয়ে যাওয়ার নয়। ক্ষমতায় থাকার সার্থে এ দলটি নিজ গরজেই ভারতে পক্ষ নিবে। কারণ, ভারতের হাতে যেমন রয়েছে বাংলাদেশের হিন্দু ভোট, তেমনি আছে রাষ্ট্রীয় পুঁজি, আছে ভারত-প্রতিপালিত বিশাল মিডিয়া। নির্বাচনী জয়ের জন্য এগুলোই জরুরি।
অরক্ষিত বাংলাদেশ
বাঘের পাল দ্বারা ঘেরাও হলে বিশাল হাতিও রেহাই পায় না। তাই যে জঙ্গলে বাঘের বাস সে জঙ্গলের হাতিরাও দল বেঁধে চলে। বাংলাদেশের বাস্তবতা হলো, মুসলিম বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন এক দেশ। ঘেরাও হয়ে আছে আগ্রাসী হিন্দুদের দ্বারা। ফলে বাংলাদেশ এক অরক্ষিত দেশ। তাই এদেশটির সীমাবদ্ধতা প্রচুর। যে কোন দেশের প্রতিরক্ষার খরচ বিশাল। আর ভারতের মত একটি বিশাল আগ্রাসী দেশের বিরুদ্ধে সে খরচ তো আরো বিশাল। এ বাস্তবতার দিকে খেয়াল রেখেই বাংলার তৎকালীন নেতা খাজা নাযিমউদ্দিন, সোহরোয়ার্দি, আকরাম খান, নূরুল আমীন, তমিজুদ্দীন খান প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের পার্লামেন্টারী সভায় লোহোর প্রস্তাবে সংশোধনী এনেছিলেন এবং পাকিস্তানে যোগ দেবার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পূর্ব বাংলা এভাবেই পাকিস্তানে প্রবেশ করেছিল সেদেশের সবচেয়ে বড় প্রদেশে রূপে। অথচ এরূপ পাকিস্তানভূক্তিকেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছে পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন। নিরেট মিথ্যাচার আর কাকে বলে? কোন দেশে ঔপনিবেশিক শাসন গড়তে হলে যুদ্ধ লড়তে হয়। প্রয়োজন পড়ে মীর জাফরদের। প্রয়োজন পড়ে লর্ড ক্লাইভ ও পলাশির। প্রশ্ন হল, ১৯৪৭’য়ে কে ছিল সেই মীর জাফর? কে ছিল ক্লাইভ? সে মীর জাফর কি ছিলেন সোহরোয়ার্দী? খাজা নাজিমুদ্দিন বা আকরাম খাঁ যারা বাংলাকে পাকিস্তান ভূক্ত করেছিলেন? আর ঔপনিবেশিক বাহিনীই বা কোথায়? কোথায় করলো তারা যুদ্ধ? জেনারেল ওসমানী, মেজর জিয়া, মেজর সফিউল্লাহ, মেজর আব্দুল জলিল, মেজর খালিদ মোশার্রফ কি তবে সে উপনিবেশিক বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন?
তবে জনগণও নির্দোষ নয়। জনগণের অপরাধ, তারা ১৯৭০ সালে নির্বাচিত করেছে গণতন্ত্র হত্যাকারি এক ফাসিস্টকে। স্বৈরাচারি মুজিবকে যে শুধু ভোট দিয়েছে তা নয়, অর্থ এবং রক্তও দিয়েছে। সে সাথে পরম বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছে ভারতীয়দের। ভারতের মোহ শুধু একাত্তরে নয়, আজও বেঁচে আছে বহু বাংলাদেশীদের মনে। সেটি গ্রাস করছে শুধু সেক্যুলারদেরই নয়, বহু ইসলামপন্থিকেও। তাদের চেতনার বিভ্রাটটি এতোই গভীর যে, ভারতের বিজয় এবং বাংলাদেশের উপর প্রতিষ্ঠিত ভারতের আধিপত্যকেও নিজেদের বিজয় ও নিজেদের অর্জন বলে উৎসবও করে। বাঙালী মুসলিমের এ এক ভয়ানক আত্মঘাতি রূপ। রোগ না সারলে সেটি প্রতিদিন বাড়ে। তেমনি বাড়ে চেতনার রোগও। তাই যে রোগ এক সময় ভারতপন্থি বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের মগজে ছিল সেটি এখন অন্যদেরও গ্রাস করছে। বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্বের বিরুদ্ধে এর চেয়ে বড় হুমকি আর কি হতে পারে? ১ম সংস্করণ ০৭/০৬/২০১১; ২য় সংস্করণ ২৬/১১/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018