বাংলাদেশের ভূমিতে ভারতের যুদ্ধ ও ইসলামের বিজয় প্রসঙ্গ
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 9, 2019
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
শেষ হয়নি শত্রুর যুদ্ধ
শত্রুর যুদ্ধ কখনোই শেষ হয়না। শত্রু শুধু রণাঙ্গন ও কৌশল পাল্টায়। বাংলাদেশের জনগণ যতদিন ইসলাম নিয়ে বাঁচবে এবং ইসলামের বিজয়ের স্বপ্ন দেখবে -ততদিন তাদেরকে তারা শত্রু গণ্য করবে। কারণ, ভারতীয়দের চেতনায় প্রবলতর হলো ইসলামভীতি। ইসলামী চেতনা নিয়ে বাঁচাকে ভারত ও তার বাঙালী কলাবোরেটরগণ পাকিস্তানী চেতনা বলে থাকে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভাঙ্গা সম্ভব হলেও সে চেতনাটি বিলুপ্ত হয়নি। ফলে বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের যুদ্ধও শেষ হয়নি। তবে একাত্তরের পর তারা কৌশল পাল্টিয়েছে। যুদ্ধ আসে দুটি ভিন্ন রূপে। কখনো রক্তাক্ষয়ী অস্ত্রযুদ্ধ রূপে। কখনো স্নায়ু যুদ্ধ বা কোল্ড ওয়ার রূপে। অস্ত্রের যুদ্ধটি সীমান্তে হয়। আর স্মায়ুযুদ্ধ বা বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধটি হয় দেশের অভ্যন্তরে,এবং ঘরে ঘরে ও রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে।এবং সেটি অবিরাম ভাবে। এ যুদ্ধটি যেহেতু স্নায়ু বা চেতনার রাজ্য জুড়ে হয়,এ যুদ্ধকে তাই স্মায়ুযুদ্ধও বলা হয়।এ যুদ্ধে অস্ত্র রূপে কাজ করে বুদ্ধিবৃত্তি, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও মিডিয়া। তাই এটিকে বলা হয় বুদ্ধিবৃত্তিক বা সাংস্কৃতিক যুদ্ধ।অস্ত্র ব্যবহৃত না হলেও এ যুদ্ধের নাশকতা কম নয়। বিগত একশত বছরে মুসলিম দেশগুলির সবচেয়ে বড় বড় পরাজয়গুলি হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তির যুদ্ধে। এবং সে পরাজয়ের ফলে মুসলিম বিশ্বের ভৌগলিক মানচিত্রের সাথে পাল্টে গেছে চেতনা ও সংস্কৃতির মানচিত্রও। এ রণাঙ্গনে জিততে হলে যোদ্ধার বুদ্ধিবৃত্তিক বলটা অপরিহার্য। অজ্ঞতা নিয়ে এ যুদ্ধে বিজয় এজন্যই অসম্ভব। তাছাড়া এ যুদ্ধে না বিজয়ী না হলে অসম্ভব হয় অস্ত্রের যুদ্ধে বিজয়। যেহেতু মহান আল্লাহতায়ালা চান ইসলামের পরিপূর্ণ বিজয়, তাই ইসলামের প্রথম দিন থেকেই জ্ঞানার্জন ফরজ করেছেন।
স্নায়ু যুদ্ধের অস্ত্র হলো জ্ঞান, ধ্যানধারণা, মতবাদ বা দর্শন। যুদ্ধ হয় শিক্ষা,সংস্কৃতি,বুদ্ধিবৃত্তি, মিডিয়া ও রাজনীতির ময়দানে। বিশ্বরাজনীতির ময়দান থেকে কম্যুনিজমকে বিলুপ্ত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো মিত্রদের একটি তীরও ছুড়তে হয়।অপরদিকে মুসলমানগণ তাদের আদর্শিক,রাজনৈতিক ও সামরিক বল হারিয়েছে জাতীয়তাবাদ,সমাজতন্ত্র,কম্যুনিজম,লিবারালিজম ও সেক্যুলারিজমের ন্যায় মতবাদগুলির হামলায়। সে হামলায় শক্তিহীন হয়েছে এবং অবশেষে ভেঙ্গে গেছে উসমানিয়া খেলাফতের ন্যায় দীর্ঘকালের বিশ্বশক্তি। মুসলমানগণ তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বলটি সর্বশেষ বার দেখিয়েছে পাকিস্তান সৃষ্টির প্রাক্কলে। মাওলানা মহম্মদ আলী জওহার, আল্লামা কবি ইকবাল,কবি আলতাফ হোসেন হালি, আশরাফ আলী থানবী,শিবলী নোমানী,সোলায়মান নদভীর মত এক ঝাঁক মুসলিম জ্ঞানসাধকের আবির্ভাব হয়েছিল ব্রিটিশ-শাসনাধীন ভারতে। অবাঙালী মুসলমানদের সে বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ বাংলাতেই আঘাত হেনেছিল। প্রভূত প্রভাবও ফেলেছিল। কারণ, শিক্ষিত বাঙালীগণ সেদিন উর্দু বুঝতো। শুধু তাই নয়, সর্বাধিক সংখ্যক উর্দু পত্রিকা বের হতো বাংলার রাজধানী কলকাতা থেকে। সে বুদ্ধিবৃত্তিক জোয়ারে বিলুপ্ত হয়েছিল ভাষা, বর্ণ, ফেরকা, প্রদেশভিত্তিক বিভক্তির দেয়াল। ফলে বাঙালী, বিহারী, পাঞ্জাবী, গুজরাতি, সিন্ধি, পাঠান, শিয়া-সূন্নি, দেওবন্দি-বেরেলভী ইত্যাদি নানা পরিচয়ে বিভক্ত মুসলিম সেদিন ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছিল। এ ছিল মুসলিম ইতিহাসে এক বিশাল অর্জন। পাকিস্তান অর্জিত হয়েছিল তো সে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়,কোন সামরিক শক্তি বলে নয়।
কিন্তু পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা এবং ভারতীয় মুসলিমদের এ একতা ইসলামের শত্রুদের ভাল লাগেনি। তাদের অনেকেই ছিল মুসলিমদের ঘরের শত্রু। বাংলাদেশের বুকে সে বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধে ইসলামপন্থিদের দ্রুত পরাজয় শুরু হয় ১৯৪৭য়ের পর থেকেই। কারণ, এ যুদ্ধে তাদের লড়াকু সৈনিক ছিল না। কারণ বাংলার মাটিতে গালিব, আল্লামা ইকবাল ও মাওলানা হালির জন্ম হয়নি; জন্ম হয়েছে পৌত্তলিক রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্কিমচন্দ্রের। সে সাথে বাংলার বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণে ভারতের বিনিয়োগটি ছিল বিশাল ও পরিকল্পিত। বাংলাদেশের মাটিতে চলমান স্নায়ুযুদ্ধ বা কোল্ড ওয়ারটি মূলতঃ ভারতের ১৯৪৭ পরবর্তী সে বিনিয়োগেরই ধারাবাহিকতা। এ যুদ্ধে নিয়োজিত সৈনিকদের মাধ্যমেই ভারতীয় আগ্রাসী শক্তি বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আদর্শিক মানচিত্রে পরিবর্তন আনার লাগাতর চেষ্টা করছে। সে লক্ষ্য পুরণে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণে ভারতের পক্ষ থেকে নিয়োজিত সৈন্যদের সংখ্যাটি বিশাল। তাদের সে যুদ্ধটি চলছে ডি-ইসলামাইজেশন প্রজেক্টের অংশ রূপে। এ যুদ্ধে তাদের বিজয়টি বিশাল। ফলে বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক অঙ্গণে ভারত-ভক্তদের সংখ্যাটি বিশাল। তাদের কাছে গুরুত্ব হারিয়েছে মুসলিম রূপে মাথা উঁচু করে বাঁচাটি। এবং তাদের কাছে শত্রু রূপে গণ্য হয়, ইসলামকে বিজয়ী করার কোর’আনী প্রজেক্টের অনুসারিগণ।
বাংলাদেশ তার বর্তমান মানচিত্রটি ভাষা বা জলবায়ুর কারণে পায়নি। একই বাংলা ভাষা ও একই বাংলার জলবায়ু পাশ্ববর্তী পশ্চিম বাংলার বহু কোটি বাঙালীর জীবনেও আছে। পশ্চিম বাংলার জনসংখ্যার দশ ভাগের এক ভাগ জনসংখ্যা নিয়ে বিশ্বের প্রায় শতাধিক দেশ স্বাধীন আছে। কিন্তু তারা আলাদা স্বাধীন দেশ পায়নি। বাংলাদেশের আজকের স্বাধীন অস্তিতের মূল ভিত্তিটি দেশটির ১৬ কোটি মানুষের আলাদা ধর্মীয় বিশ্বাস। সেটি ইসলাম। ভারত সে ভিত্তিটাই ধ্বসিয়ে দিয়ে চায়। আর ভিত্তিতে ধ্বস নামলে শুধু প্রাসাদই নয়,দেশও ধ্বসে পড়ে। সেটি ধ্বসাতেই বাংলাদেশে জোরে শোরে কোল্ড ওয়ার বা স্মায়ু যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এ কোল্ড ওয়ারের ফ্রন্ট লাইন যোদ্ধা হলো শত শত নাস্তিক ব্লগার।তারা ব্যবহার করছে ইন্টারনেটের ন্যায় আধুনিক প্রযুক্তিকে। তারা যেমন ভারতে আছে, তেমনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও আছে। নাস্তিক ব্লগারদের সাথে রয়েছে শত শত নাস্তিক মিডিয়াকর্মী,কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অঙ্গণ,টিভি নেটওয়ার্ক,বহু এনজিও অফিস,বহু পত্র-পত্রিকার দফতর,এমনকি বহু সরকারি অফিস মূলত এসব ভারতপন্থিদের হাতে অধিকৃত ভূমি।সেখান থেকে হামলা হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যান্য অঙ্গণে। হামলার লক্ষ্য শুধু ইসলামের মৌল বিশ্বাস,জিহাদী চেতনা ও কোরআন-হাদীসের শিক্ষা নয়, বরং খোদ মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর প্রিয় নবীরাসূল। তাদের সে বীভৎস প্রচারণা সম্প্রতি জনসম্মুখে প্রচারও পেয়েছে। তারা সে প্রচারণার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশীদের ইতিমধ্যে মুরতাদ বানিয়ে ছেড়েছে।ইসলামে বিশ্বাসীদের রাজনীতিকেই শুধু নয়,তাদের শারিরীক উপস্থিতিও বাংলাদেশের মাটিতে তারা মেনে নিতে রাজী নয়। ভারতের লক্ষ্য, বাংলাদেশী মুসলিমদের হিন্দু বানানো নয়,বরং ইসলাম থেকে দূরে সরানো। তারা জানে, ইসলাম থেকে দূরে সরলে এরাই ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হিন্দুদের চেয়ে অধিক যুদ্ধাংদেহী হবে। তাদের সে ধারণাটি আদৌ মিথ্যা প্রমাণিত হয়নি। বরং বাংলাদেশের মাটিতে আজ যারা শরিয়ত, হুদুদ, জিহাদ ও মুসলিম ঐক্যের ন্যায় ইসলামের মৌল বিধানগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তারা হিন্দু নয়, তারা তো ইসলাম থেকে দূরে সরা এ মুরতাদগণ।
একাত্তরের ভারত আওয়ামী লীগ,ছাত্রলীগ ও মস্কোপন্থি কম্যুনিস্টদের বহু হাজার নেতাকর্মীকে নিজ দেশের অভ্যন্তরে নানা স্থানে নিয়ে দীর্ঘদিন ট্রেনিং দিয়েছিল। লক্ষ্য এ ছিল না যে, তাদের উপর অর্পিত দায়-দায়িত্ব একাত্তরে পাকিস্তান ভাঙ্গার মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। শিক্ষা বা ট্রেনিংয়ের আছড় কি ৯ মাসে শেষ হয়? এমনকি কুকুর-বিড়ালের ন্যায় ইতর জীবকে একবার পোষ মানানো হলে আজীবন তারা পোষমানাই থেকে যায়। তারা বিদ্রোহ করে না। মানুষও তেমনি শিক্ষালয়ে যে শিক্ষা বা ট্রেনিং পায় তা নিয়ে মৃত্যুর পূর্বদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে। শিক্ষার গুরুত্ব এত অধীক বলেই নামায-রোযা ফরয করার আগে ইসলাম বিদ্যার্জনকে ফরয করেছে। মিশনারিরা তাই মুসলিম দেশে এসে শত শত স্কুল-কলেজ খোলে এবং হাজার হাজার মেধাবী ছাত্রদের নিজদেশে বৃত্তি দিয়ে নিয়ে যায়। তাই ভারতে গিয়ে যারা একবার রাজনৈতীক ও সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছে তারা ভারতীয় গোলামীর শিকলটি গলা থেকে নামিয়ে আবার স্বাধীন ভাবে দাঁড়াবে সেটি কি এতই সহজ? বাংলাদেশের স্বাধীনতার বড় শত্রু এ মানসিক গোলামরাই।
মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন আপনজনের কোলে গিয়ে আশ্রয় নেয়। কে কাকে কতটা আপন মনে করে সেটি তখন বুঝা যায়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগণ ও তাদের রাজনৈতীক মিত্ররা ভারতকে যে কতটা আপন মনে করে সেটি কি শুধু একাত্তরে প্রকাশ পেয়েছে? সেটি যেমন ১৯৭৫য়ে দেখা গেছে,তেমনি আজও নানা ভাবে বুঝা যাচ্ছে।পাকিস্তানের রাজনীতিতে বাংলাদেশ আজ আর কোন আলোচনার বিষয় নয়। পূর্ব পাকিস্তানকে তারা শুধু পাকিস্তানের মানচিত্র ও সংবিধান থেকেই বাদ দেয়নি, স্মৃতি থেকেও বাদ দিচ্ছে।সেদেশে এমন কোন দল নাই যারা বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানভূক্ত করার কথা মুখে আনে। তেমনি বাংলাদেশেও এমন কোন রাজনৈতীক দল নাই যারা পাকিস্তানের সাথে আবার একীভূত হওয়া নিয়ে ভাবে। কিন্তু বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের যেমন প্রচুর ভাবনা আছে,তেমনি এজেন্ডাও আছে। এজেন্ডার সাথে বিপুল বিনিয়োগও আছে। ২০০৮ সনের নির্বাচনের আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে ভারতে বিনিয়োগ কত বিশাল ছিল তার একটি বিবরণ দিয়েছে লন্ডনের বিখ্যাত পত্রিকা “দি ইকোনমিস্ট”। পাকিস্তান ভাঙ্গাটিই আগ্রাসী ভারতের একমাত্র লক্ষ্য ছিল না। লক্ষ্য হলো,ভারতের পূর্ব সীমান্তে ইসলামী রাষ্ট্র গড়ে উঠাকে যে কোন ভাবে প্রতিরোধ করা। কারণ আদর্শিক রাষ্ট্রের সীমারেখা কোন ভৌগলিক সীমানা দিয়ে সীমিত থাকে না। ভারতের ভয়, সে আদর্শ ভারতে ঢুকে পড়া নিয়ে। দেশে দেশে ইসলামের বিপুল জাগরণ দেখে ভারতের সে ভয় আরো বহুগুণ বেড়েছে। তাই ভারতের বিনিয়োগও বেড়েছে। তাই তাদের যুদ্ধটি স্রেফ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়। বরং সেটি ইসলাম ও উপমহাদেশের সকল ভাষী মুসলিমদের বিরুদ্ধে। ফলে বাংলাদেশের ভূমিতে ভারতের যুদ্ধটি তাই একাত্তরে শেষ হয়নি। বরং যতই বাড়ছে বাংলাদেশে ইসলামের জাগরণ ততই বাড়ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের বিনিয়োগ ও সংশ্লিষ্টতা।
ভারতের যুদ্ধ বাংলাদেশে
ভারতের শাসকচক্রের প্রচণ্ড ভয় দক্ষিণ এশিয়ার বুকে ইসলামী শক্তির উত্থান নিয়ে। রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটে চেতনার ভূমিতে। সেটি ঘটে বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তির বলে। তেমনি একটি প্রবল উত্থান এসেছিল ১৯৪৭ সালে। সে মুসলিম উত্থানের মুলে ছিল ভাষা ও আঞ্চলিকতার উর্দ্ধে উঠে জন্ম নেয়া প্যান-ইসলামিক চেতনা। সে চেতনা নিয়েই ঢাকার বুকে ১৯০৬ সালে জন্ম নেয় মুসলিম লীগ। মুসলিম লীগের নেতৃত্বে জন্ম নেয় পাকিস্তান। ১৯৭১য়ে পাকিস্তান ভেঙ্গে গেলেও চেতনা মারা পড়েনি। ফলে ভারতের যুদ্ধও শেষ হয়নি। কারণ চেতনা বেঁচে থাকলে সে চেতনার ভিত্তিতে দল গড়ে উঠে,আন্দোলনও গড়ে উটে। তাই কোন রাজনীতি বা আন্দোলন দমন করতে হলে চেতনাকে দমাতে হয়।কীরূপে সে ইসলামী চেতনাকে দমন করা যায় সেটি ভারতীয়দের বিদেশনীতির আজও মূল স্ট্রাটেজী। এটা ঠিক যে, পাকিস্তানের ব্যর্থতা অনেক। ঘর বাঁধলে তাতে ভয়ংকর শাপও বাসা বাঁধতে পারে। তা ডাকাতদেরও দখলে যেতে পারে। পাকিস্তান আজ আভ্যন্তরীণ শত্রুদের দখলদারির শিকার। কিন্তু তাতে ঘরবাঁধার গুরুত্ব কমে না।তাই পাকিস্তানের বর্তমান সংকট দেখে যারা পাকিস্তানের সৃষ্টিকেই অহেতুক বলে তাদের এ বিষয়টি বোঝা উচিত।তাছাড়া একটি শিশু প্রসবেও প্রচণ্ড বেদনা থাকে। আর ইসলামি বিপ্লব ও সভ্যতা প্রসবের বেদনা তো প্রকট ও দীর্ঘকালীন। তাদে বহু মানুষের জীবন ক্ষয় হয়, সম্পদহানিও হয়। সেটি নবীজী (সাঃ)র যুগেও হয়েছে। পাকিস্তান সে প্রসববেদনার মধ্যেই। বাংলাদেশও সে প্রসব বেদনায় প্রবেশ করতে যাচ্ছে। ১৯৪৭ সালের অখণ্ড পাকিস্তান বেঁচে থাকলে ইসলামী শক্তির উত্থান যে আরো প্রবলতর ভাবে হতো সে বিষয়টিও ভারতীয় নেতাদের অজানা ছিল না। তাই শুরু থেকেই তারা পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধীতা করেছিল। ১৯৪৭ সালের গান্ধি ও ইন্ধিরা গান্ধির পিতা জওহারলাল নেহেরু পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা রুখতে ব্যর্থ হন। কারণ,সে সময় বঙ্গভূমি থেকে শেখ মুজিব ও তাজুদ্দীনদের ন্যায় ভারতীয় হিন্দুস্বার্থের জন্য কোন সেবাদাস জুটেনি। হোসেন সহরোয়ার্দী,খাজা নাজিমুদ্দীন এবং ফজলুল হকের ন্যায় নেতাগণ তখন মুজিবের ন্যায় আগ্রাসী ভারতের হাতে শিকারি ঘুঘুতে পরিণত হননি। তারা বরং অবাঙালী মুসলমানদের সাথে মিলে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় অংশ নেন। ফলে ভারত অপেক্ষায় থাকে পরবর্তী সুযোগের এবং সেটি আসে ১৯৭১য়ে। ফলে সফল হয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটি কোমরভাঙ্গা যুদ্ধ তৈরী করতে।
ইসলাম বিনাশের একটি গ্রান্ড স্ট্রাটেজীকে সামনে রেখেই ভারত ১৯৭২ সালে তাদের সশস্ত্র সৈনিকদের সরিয়ে নিলেও স্মায়ু-যুদ্ধের কলমধারি যোদ্ধাদের তুলে নেয়নি। বরং বিপুল ভাবে বাড়িয়েছে সে বাহিনীর জনবল। সেটির শুরু শেখ মুজিবের আমল থেকেই। তাই মুজিবের ক্ষমতায় বসানোর পর দেশে কৃষি,শিল্প,রাস্তাঘাট ও আইনশৃঙ্খলায় কোন উন্নয়ন ঘটেনি,কিন্তু প্রচণ্ড ভাবে বৃদ্ধি ঘটেছে ছাত্র-শিক্ষক,রাজনৈতিক নেতা-কর্মী,বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়াকর্মীদেরকে ইসলাম থেকে দূরে সরানোর কাজ। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি পরিণত হয় ইসলামের শত্রু তৈরীর বিশাল ইন্ডাস্ট্রিতে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাশকরা মগজ ধোলাইকৃত ছাত্রগণ যখন মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর মহান রাসূলকে গালি দিয়ে ব্লগ লেখে,দাড়ি-টুপি-ধারি ব্যক্তিদের ফাঁসি চায়,ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে -তাতে কি বিস্ময়ের কিছু থাকে? বরং প্রমাণ মেলে ভারতের স্ট্রাটেজী ফল দিয়েছে। শাহবাগের মোড়ে একমাস ধরে তো সেসব ভারতীয় ফসলদেরই লাগাতর প্রদর্শণী চলছে। তারা শুধু জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করতে চায় না, নিষিদ্ধ করতে চায় সকল ইসলামপন্থিদের রাজনীতি। রুখতে চায় আল্লাহর আইনের প্রতিষ্ঠা।
লক্ষ্য ইসলামের বিজয়রোধ
আওয়ামী লীগ বিগত ১০ বছর ধরে লাগাতর ক্ষমতায়। এর আগে তারা আরো ক্ষমতায় এসেছে। তাদের রাজনৈতীক এজেন্ডা তাই কোন গোপন বিষয় নয়। ইসলামের বিজয় রোধ এবং যে কোন মূল্যে আল্লাহর শরিয়তের প্রতিষ্ঠা রোধই তাদের রাজনীতি।সেটি তারা বার বার নানা ভাবে প্রমাণ করেছে।তাছাড়া দলটির প্রতিষ্ঠাও ইসলামের খেদমতের জন্য হয়নি। বরং এদলটির সকল সামর্থ ব্যয় হয়েছে মুজিব বা হাসিনার ন্যায় যারা ইসলামে অঙ্গিকারশূণ্য তাদের ক্ষমতায় বসানোর কাজে। ইসলামের জাগরণ ঘটলে তাদের রাজনীতি যে ড্রেনে গিয়ে পড়বে সেটি তারা জানে। ফলে নিজেদের রাজনীতি বাঁচাতে তারা কোয়ালিশন গড়েছে দেশ-বিদেশের সকল ইসলামবিরোধী শয়তানি শক্তির সাথে।দিল্লির শাসকচক্রের সাথে শেখ হাসিনার গভীর বন্ধুত্বের কারণ এ নয় যে,তাদের মিলটি ভাষা,পোষাক-পরিচ্ছদ ও খাদ্য-পানীয়ে। বরং সে মিলটি তাদের তাদের রাজনৈতীক এজেন্ডায়। রাজনৈতীক সম্প্রীতি তো গড়ে উঠে এরূপ অভিন্ন এজেন্ডার উপর ভিত্তি করে। এজন্যই ভারতীয় শাসককে মুজিব বা হাসিনার ন্যায় বাঙালী হওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। ইন্দিরা ছিলেন এলাহাবাদের উর্দুভাষী মহিলা। কিন্তু তারপরও মুজিবের সাথে তার প্রচন্ড সখ্যতা জমেছিল। কারণ ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থহানী ঘটাতে উভয়ের রাজনৈতীক এজেন্ডায় ভীষণ মিল ছিল। কিন্তু সে মিলটি বাংলাদেশের কোন ইসলামপন্থি দল বা কোন আলেমের সাথে না থাকায় মুজিব তাদের সাথে তিনি একটি দিনের জন্যও একতা গড়তে পারেননি। ইন্দিরা গান্ধির এজেন্ডা ছিল,ভারতের দুই পাশে বিস্তৃত বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানকে খণ্ডিত করা। এবং সুযোগ বুঝে খণ্ডিত ও দুর্বল বাংলাদেশকে ভারতভূক্ত করা। এটিই হলো ভারতীয় রাজনীতির বহুপরিচিত নেহুরু ডকট্রিন। সে লক্ষ্যে একটি রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধের জন্য যে কোন ভারতীয় শাসকের ন্যায় ইন্দিরা গান্ধিরও প্রস্তুতি ছিল। কারণ তিনি জানতেন,পাকিস্তান একদিন পারমানবিক শক্তির অধিকারি হবেই। তখন ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে মোতায়েন করা হবে পারমানবিক বোমা বহনকারি দূর পাল্লার বহু মিজাইল। তখন ভারতের পক্ষে পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা,তিস্তা, গোমতির পানি ডাকাতি করা সম্ভব হবে না। সম্ভব হবে না বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের বাজার দখল ও অর্থনৈতিক শোষণ। সেটি করতে গেলে অনিবার্য হযে উঠতো পারমানবিক যুদ্ধ।তখন পাকিস্তানের পারমানবিক বোমা হামলার মুখে পড়বে সমগ্র ভারত। সেরূপ একটি পরিস্থিতি সৃষ্টির আগেই ভারত তাই পাকিস্তান খণ্ডিত করণে উঠে পড়ে লাগে। সে যুদ্ধটি শুরুর জন্য তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে মুসলিম স্বার্থ-বিরোধী একজন ভারতভক্ত নেতার প্রয়োজন ছিল ইন্দিরার। সে ভূমিকা পালনে ১৯৭১য়ে নিজেকে সঁপে দেয় শেখ মুজিব।
মিত্র ইসলামের শত্রুর
ব্যক্তির আসল পরিচয় জানা যায় তার বন্ধদের দেখে। কারণ প্রত্যেকেই চেতনা-চরিত্রের দিক দিয়ে অতি কাছের মানুষকেই বন্ধু রূপে বেছে নেয়। চোর-ডাকাত,ব্যাভিচারি বা মদ্যপায়ীদের বন্ধুত্ব তাই কোন ঈমানদারের সাথে হয় না। ইসলামের শত্রুপক্ষও তাই কোন আলেম-উলামাকে দলে নেয় না। তাদের সাথে রাজনৈতীক মৈত্রী গড়ে না। ইসলামের শত্রুপক্ষের রাজনীতিতে তাই নাস্তিক কম্যুনিষ্ট, ভারতীয় পৌত্তলিক, আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী ব্লগারগণ আপনজন রূপে গৃহীত হয়। নাস্তিক ব্লগার রাজীব নিহত হওয়ার পর শেখ হাসিনা যেভাবে তার ঘরে ছুটে গিয়েছিলেন সেটি রক্তের টানে নয়। বরং একই আদর্শে বিশ্বাসী হওয়ার কারণে। বাংলাদেশ শতাধিক ইসলাম প্রেমিক মানুষ নির্মম ভাবে পুলিশের হাতে নিহত হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা কি তাদের বাসায় একবারও গিয়েছেন বা তাদের মৃত্যুতে একটি বারের জন্য দুঃখ্য প্রকাশ করেছেন?
ইসলামের চিহ্নিত শত্রুদের সাথে শেখ হাসিনা ও তার পিতার সহযোগিতাপূর্ণ নীতি কোন গোপন বিষয় নয়। বর্তমানে ভারতে বসবাসরত চিত্তরঞ্জন সুতার হলো বাংলাদেশ খণ্ডিত করে খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা নিয়ে স্বাধীন বঙ্গভূমি আন্দোলনের নেতা। ইসলাম ও মুসলমানদের সে ঘোরতর শত্রু। তেমনি মুসলিম বিরোধী চেতনা ছিল মনরঞ্জন ধর ও ফনিভূষন মজুমদারের। অথচ আওয়ামী লীগ এ তিন’জনকেই তাদের দলের এমপি বানিয়েছিল। মনরঞ্জন ধর ও ফনিভূষনকে তো মন্ত্রীও বানিয়েছিল। মনরঞ্জন ধর ছিলেন এক সময় কংগ্রেসের নেতা। ১৯৪৭ সালে অবিভক্ত বাংলার সংসদে বাংলাকে বিভক্ত করে পশ্চিম বাংলাকে ভারতভূক্ত করার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন জ্যোতি বসু। জ্যোতি বসুদের কারণেই কলকাতা পূর্ব পাকিস্তানে আসেনি। অথচ সেই জ্যোতি বসু শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগনেতাদের ঘনিষ্ট বন্ধু। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনা মন্ত্রী বানিয়েছেন ও কোলে টেনে নিয়েছেন বাংলাদেশের রাজনীতির অতি কট্টোর নাস্তিক ও কম্যুনিস্টদের। সংসদে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, শাহবাগের যুবকদের থেকে তিনি অনুপ্রেরণা পান। নাস্তিক শাহবাগীদের সাহস জোগানোর জন্য সংসদ থেকে একটি প্রতিনিধি দলকেও সেখানে পাঠানো হয়।অথচ শাহবাগের মূল আয়োজক হলো সেসব ব্লগারগণ যারা ইন্টারনেটে দীর্ঘকাল যাবৎ মহান আল্লাহতায়ালা, তাঁর মহান নবী (আঃ) ও নবীজী (সাঃ)র স্ত্রী উম্মেহাতুল মু’মিনদের নিয়ে ইতর ভাষায় যা ইচ্ছে তাই লিখে আসছে। তাদের সে কুকর্ম জনসম্মুখে প্রকাশ পাওয়ায় বাংলার তৌহিদী মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়লেও শেখ হাসিনা ও তার আা্ওয়ামী লীগ সে কুলাঙ্গরদের সমর্থণ দেয়া বন্ধ করেনি। বরং গণধোলাই থেকে বাঁচাতে এসব শাহবাগী নাস্তিক ব্লগারদের দিবারাত্র দেয়া হচ্ছে পুলিশী প্রটেকশন। শেখ হাসিনা তো নিহত ব্লগার রাজীবের বাসায় গিয়ে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার হুমকিও দিয়েছেন। রাজীবকে তথাকথিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ রূপে ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়,নাস্তিক ব্লগারদের বক্তৃতাকে প্রায় সকল টিভি চ্যানেলে লাগাতর দেখানো ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভারতের প্রতি নিমকহালালীর রাজনীতি
আওয়ামী লীগের রাজনীতি মূলত ভারতের প্রতি নিমকহালালীর রাজনীতি। ১৯৭৫য়ের পট পরিবর্তনের পর শেখ হাসিনা বহুদিন দিল্লিতে কাটান। ভারতের নিমক তার পেটে তাই কম পড়েনি। পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলোর ন্যায় বিগত নির্বাচনেও হাসিনা ভারত থেকে বিপুল অর্থ পেয়েছেন। আর অর্থের সাথে তো শর্তও আসে। ফলে ক্ষমতায় আসার পরই তারা লিপ্ত হয় শর্ত পূরণে তথা ভারতীয় প্রভুর মনোবাসনা পূরণে। হাত দেয় জনগণের ঈমানে। ভারতীয় প্রজেক্টের অংশ রূপেই শেখ মুজিব নাস্তিক কম্যুনিস্টদের দলগড়ার পূর্ণ আজাদী দিলেও সে আজাদী ইসলামপন্থিদের দেননি। বরং তিনি ইসলামপন্থিদের শত্রুরূপে চিহ্নিত করেছেন। সে নীতি নিয়েই চলেছে শেখ হাসিনা। ফলে জনগণের মৌলিক নাগরিক অধিকার দিতে তিনি রাজি নন। বিরোধী দলকে শান্তি পূর্ণ সমাবেশ করতে দেয়া দূরে থাক তাদেরকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাতে দিতেও রাজী নন। পুলিশ তো জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের দলীয় অফিসে ঢুকতে দিচ্ছে না। ফলে যে স্বাধীনতা নিয়ে জর্জিয়া, সুদান, আলজিরিয়ার লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে শেখ হাসিনা ও তার দল সে স্বাধীনতা বাংলাদেশীদের দিতে রাজী নয়। ১৯৬৯ য়ে ঢাকার রাস্তায় লক্ষ লক্ষ মানুষে যে মিছিল হয়েছে সেটিও কেন নিষিদ্ধ বাংলাদেশে? অথচ তাদের দাবী তারা নাকি দেশের স্বাধীনতা এনেছে! এই যদি স্বাধীনতা হয় তবে পরাধীনতা কাকে বলে?
যুদ্ধ যখন অপরিহার্য হয়
রাজপথের আন্দোলনে ও হরতালে দেশের ক্ষতি হয় তা তো শিশুও বুঝে। সে নসিহত আওয়ামী সরকারের দেয়ার হক আছে কি? দলটি বিএনপির ২০০১-২০০৬ শাসানামলে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। হরতালের দিনে অফিসগামী মানুষদের তারা উলঙ্গ করেছে। যাত্রী-ভর্তি বাসে আগুন দিয়ে বহু মানুষ হত্যা করেছে। আজ এরাই আবার হরতালের বিরুদ্ধে নসিহত করে! অথচ সে নসিহত কি তারা নিজেরাও মানে? নিজে মানলে গত ৬ এপ্রিলের লংমার্চ ঠেকাতে তারা দুই দিনের হরতাল দিল কেন? সবকিছুই তারা করে নিজেদের রাজনৈতীক স্বার্থে। রাজনৈতীক স্বার্থে তারা যেমন নিজেরা ১৭৩ দিন হরতাল করেছে, তেমনি আবার হরতালের বিরুদ্ধেও কথা বলে। তাছাড়া দেশের অর্থনীতির ক্ষতি কি শুধু হরতালে হয়? সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় দেশের অর্থনীতির উপর চুরি-ডাকাতিতে। সরকারি দলের লোকদের হাতে দেশের ব্যাংকিং খাতের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে গেল। ভয়ানক ডাকাতি হয়ে গেল শেয়ার মার্কেটে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুন্ঠিত হলো হলমার্ক,ডেস্টিনির মত কোম্পানীগুলোর হাতে। মন্ত্রীদের দূর্নীতির কারণে পদ্মা সেতুর ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ বন্ধ হয়ে গেল। সরকার কি এসব দুর্নীতিবাজদের একদিনের জন্য শাস্তি দিয়েছে? দেশের অর্থনীতির প্রতি সরকারের সামান্য দরদ থাকলে নিজ দলে এসব চোর-ডাকাতদের কি প্রশ্রয় দিত?
দেশের স্বার্থে এবং ধর্মের প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতা বাঁচাতে শুধু বার বার হরতাল নয়,দেশবাসীকে লাগাতর যুদ্ধও করতে হয়।আর যুদ্ধ তো রক্তপাত ঘটবেই। হাজার হাজার মানুষের জানমালের কোরবানীও হয়। অনেক সময় সে কোরবানী অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কারণ দেশের উপর থেকে জালেমের শাসকদের দখলদারি কি শুধু নামায-রোযা,দোয়া-দরুদের কারণে শেষ হয়? এমন মহান বিপ্লবী কাজ তো প্রচুর কোরবানি চায়। আর সে কোরবানীই মু’মিনদের জন্য জান্নাতপ্রাপ্তি নিশ্চিত করে। ইসলামে তাই নামায রোযার পাশাপাশি জিহাদের বিধানও দেয়া হয়েছে। নবীজী (সাঃ)তাই যুদ্ধের পর যুদ্ধ করেছেন। নবীজী(সা)র সাহাবাদের ৭০% ভাগের বেশী সাহাবা সে জিহাদে শহীদ হয়েছেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,“তোমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান দেয়া হলো,যদিও তোমাদের নিকট এটি অপ্রিয়।কিন্তু তোমরা যা অপছন্দ করো সম্ভবত তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা ভালবাস সম্ভবত তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জান না।”-(সুরা বাকারা আয়াত ২১৬)।তাই ইসলামের প্রাথমিক যুগে শত্রুর নির্মূল ও মুসলমানদের বিশ্বশক্তি রূপে প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বহুরক্ত ও বহুঅর্থ ঢালতে হয়েছে। আবু লাহাব ও আবু জেহেলদের ন্যায় দুর্বৃত্তগণ নিছক দোয়ার বদলে নির্মূল হয়নি। তাদের নির্মূলে নবীজী (সাঃ) ও তার সাহাবায়ে কেরামকে নাঙ্গা তরবারি নিয়ে রণাঙ্গনে দাঁড়াতে হয়েছে। বিপুল অর্থ ও রক্ত ব্যয় করতে হয়েছে।
আবু জেহেল আবু লাহাব মারা গেলেও তাদের পৌত্তলিকতা তো আজও বেঁচে আছে। বেঁচে আছে তাদের বিষাক্ত থাবাও। অন্তুত সেটি প্রবল ভাবে বেঁচে শেখ হাসিনার ন্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মগজে। তাই বাংলাদেশের মুসলমানগণ আজ কত্টা বিপদে পড়েছে সেটি কি বুঝতে বাঁকি থাকে? শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ৫ই অক্টোবর রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনে দুর্গা পূজা উপলক্ষে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে বলেছেন,“আমরা জানি এবং শুনেছি মা দুর্গা প্রত্যেক বছর কোনো না কোনো বাহন চড়ে আমাদের এ বসুন্ধরায় আসেন। এবার আমাদের দেবী এসেছেন গজে চড়ে। জানি, গজে চড়ে এলে এ পৃথিবী ধন-ধান্যে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে—তা আমরা দেখতেই পাচ্ছি। এবার ফসল ভালো হয়েছে। মানুষ সুখেই-শান্তিতে আছে। দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পেয়ে ৭ ভাগে দাঁড়িয়েছে।”-(দৈনিক আমার দেশ, ৬ই অক্টোবর, ২০১১)। কথা হলো, পৌত্তলিক চেতনা তো একাকী বাঁচে না। সে চেতনা বাঁচে ইসলাম-নির্মূলের চেতনা নিয়ে। ফলে সে পৌত্তলিক চেতনায় ইসলামপন্থিদের নির্মূলের চেতনা আসবে, ইসলামি নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলানোর খায়েশ জাগবে, ইসলামি বিরোধী ব্লগারদের বীর মুক্তিযোদ্ধা বলা হবে –এ সবই কি স্বাভাবিক নয়?
জান্নাত লাভের ব্যবসা
যারা ইসলামের প্রতিষ্ঠা চায় তাদের জন্যও রয়েছে ভাবনার বহু বিষয়। যারা মনে করে নিয়েছে, দেশজুড়ে দু’চার বার হরতাল করলে বা কিছু মিছিল-সমাবেশ করলেই ইসলামবিরোধী শক্তি উৎখাত হবে এবং বাংলাদেশে ইসলামের বিজয় ঘটবে –সে ধারণাটি ভূল। কোন বিপ্লবই এত সহজে হয় না। এটি তো শয়তানী শক্তির বহুদিনের প্রতিষ্ঠিত শেকড় উপড়ানোর কাজ। কোন একটি গাছের শিকড় উপড়াতেও বহু মেহনত ও ব্হু সময় লাগে। ফলে বাংলাদেশে ইসলামি বিপ্লবের লক্ষ্যে বহুপথ ও বহু কোরবানী এখনও বাঁকি।পরীক্ষার পর পরীক্ষা দিয়ে কীতকার্য হতে হয়। তবে এমন লড়ায়ে মু’মিনের জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জনটি রাজনৈতিক বিজয় নয়।সেটি হলো জীবনের সকল গোনাহ থেকে পরিত্রাণ লাভ,সে সাথে করুণাময় মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে মাগফিরাত লাভ। সে মাগফিরাতের পথ ধরেই জুটে জান্নাত লাভ। তবে নিজ ভূমিতে রাজনৈতিক বিজয়ও যে মুমিন মাত্রই পছন্দ করে -সেটিও মহাজ্ঞানী আল্লাহতায়ালার অজানা নয়। তবে মু’মিন সেটি পায় একটি বোনাস রূপে। আখেরাতের বিশাল অর্জন থেকে এ রাজনৈতিক বিজয়টি এক বাড়তি পাওনা মাত্র। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এমন একটি রাজনৈতীক বিজয়ের প্রতিশ্রুতিটা এসেছে মাগফিরাত লাভের প্রতিশ্রুতির পরে। তবে এমন একটি বিজয় না পেলেও আখেরাতে ঈমানদারের প্রাপ্তিতে কোন কমতি হয় না। হযরত হামযা (রাঃ)র ন্যায় বহু উচ্চস্তরের সাহাবী সেরূপ বিজয় দেখে যেতে পারেননি। কিন্তু তাতে কি তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন? তাঁরা তো কাজ করেছেন আখেরাতে পুরস্কার লাভের লক্ষ্যে। এবং সে প্রতিশ্রুত প্রতিদানটি তাঁরা বিশাল ভাবেই পাবেন।
কোন কিছুই বিনা মেহনতে জুটে না। সামান্য মুনাফার জন্যও ব্যক্তিকে ব্যবসায় বসতে হয়। সে ব্যবসায় তার মেধা,অর্থ,শ্রম ও সময়ের বিনিয়োগ ঘটাতে হয়। মহান আল্লাহ তাঁর মু’মিন বান্দাহর মহাকল্যাণ চান। সে কল্যাণ পৌঁছাতে তাকে এমন এক ব্যবসার সন্ধান দিতে চান যাতে কোন লোকসান নাই। বরং আছে অতুলনীয় এক বিস্ময়কর মুনাফা। সেটি জান্নাত পাওয়ার মুনাফা। সমগ্র পৃথিবী এবং তার সকল পাহাড়-পর্বত ও সাগর-মহাসাগর যদি সোনা হয়ে যায় এবং কোন ব্যক্তি যদি পৃথিবীময় সে সোনার মালিকও হয়ে যায় তবুও কি তা দিয়ে সে জান্নাতের এক ইঞ্চি ভূমি কিনতে পারবে? পারবে কি সে সম্পদের বিনিময়ে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে? মহান আল্লাহপাক সে মহান ব্যবসার সন্ধানটি দিয়েছেন এভাবে,“হে ঈমানদারগণ!তোমাদের কি এমন এক ব্যবসার কথা বলে দিব যা তোমাদেরকে জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে বাঁচাবে? (সেটি হলো) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনো এবং তোমাদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করো। যদি তোমরা জানতে, এটিই হলো তোমাদের জন্য কল্যাণকর।(এর বরকতে)আল্লাহ তোমাদের গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার নিচে দিয়ে ঝরণাধারা প্রবাহিত,আর সে চিরস্থায়ী জান্নাতে তোমাদের জন্য দিবেন উত্তম ঘর। এটি একটি বড় কামিয়াবী।আর অন্যান্য জিনিষ যা তোমরা পছন্দ করো (তাও তোমাদের দেয়া হবে)আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য দিবেন এবং খুব শীঘ্রই দিবেন একটি বিজয়।(হে রাসূল!এ বিষয়ে) মু’মিনদের সুসংবাদ দান করুন।” –(সুরা সাফ আয়াত ১০-১৩)।
উপরুক্ত আয়াতগুলিতে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণার শিক্ষণীয় মূল বিষয়টি হলো,জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তি লাভ,হাশর দিনে মাগফেরাত লাভ ও পরকালে জান্নাত লাভ এবং দুনিয়ার বুকে রাজনৈতীক বিজয় লাভের জন্য ঈমানদারের জীবনেও লাগাতর একটি ব্যবসা চাই। সে ব্যবসায়ে জানমালের বিনিয়োগ চাই। মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত সে ব্যবসাটি হলো জিহাদ। মুসলমান হওয়ার অর্থ তাই শুধু কালেমা পাঠ নয়। স্রেফ নামায-রোযা,হজ-যাকাত পালনও নয়।বরং মহান আল্লাহর নির্দেশিত এ ব্যবসাকে তথা জিহাদকে জীবনের মূল ব্যবসা রূপে গ্রহণ করা। স্রেফ নামায-রোযা,হজ-যাকাত ও অন্যান্য ইবাদত মূলত মূল ব্যবসায়ে তথা জিহাদে ব্যক্তিকে আধ্যাত্মীক ভাবে প্রস্তুত করে।সে প্রস্তুতি না আসলে বুঝতে হবে তার ইবাদতেই সমস্যা আছে। প্রতিটি সাহাবায়ে কেরামের জীবনে মূল ব্যবসা ছিল জিহাদ। নানা পেশায় তাঁরাও কাজকর্ম করেছেন,তবে সে পেশাগুলো তাদের জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল না। সেগুলি ছিল নিছক জীবন নির্বাহের কৌশল। মূল লক্ষটি ছিল আল্লাহগর দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও ইসলামি রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার জিহাদ। এবং সে জিহাদের মাধ্যমে আখেরাতে মাগফেরাত লাভ ও জান্নাত লাভ।
ক্ষতির ব্যবসা
মানুষের সকল ব্যবসা ও সকল বিনিয়োগ শুধু ক্ষতির অংকই বাড়ায় যদি তা ইসলামের পথে না হয়। সে সত্যটি পবিত্র কোরআনের সুরা আসরে বলা হয়েছে এভাবে,“সময়ের কসম, নিশ্চয়ই সকল মানুষই ক্ষতির মধ্যে। একমাত্র তারা ব্যতীত যার ঈমান এনেছে,নেক আমল করেছে এবং একে অপরকে সৎ কাজের নসিহত করেছে এবং সবর ধারণ করেছে।” আর সবচেয়ে বড় নেক আমল হলো কাউকে অর্থদান, খাদ্যদান বা পথ থেকে কাটা সরানো নয়। বরং সেটি হলো সমাজ ও রাষ্ট্রের বুক থেকে তাগুতী তথা শয়তানি শক্তির দখলদারি সরানোর কাজ। ঘন মেঘ যেন সূর্যকে আড়াল করে রাখে কোরআনের সত্যকেও তেমনি আড়াল করে রাখে শয়তানি শক্তির হুকুমত। এভাবে তারা জাহিলিয়াত যুগের অন্ধকার নামিয়ে আনে। বাংলাদেশে আজ সেকাজটিই ব্যাপাক ভাবে হচ্ছে। জাহিলিয়াত যুগে মানুষ আল্লাহর ঘরে মুর্তি বসিয়েছিল। আর আজ বাংলাদেশে মুর্তি বসানো আছে নানাস্থানে। সেগুলিতে শ্রদ্ধা জানাতে ফুল চড়ানো হচ্ছে।
মহান আল্লাহতায়ালা যেমন ব্যক্তির ঈমান ও ইবাদত-বন্দেগী দেখেন,তেমনি তার প্রদর্শিত ব্যবসায় জান ও মালের বিনিয়োগও দেখেন। আল্লাহর অবাধ্যতা তথা কুফরি হয় যেমন তাঁর নির্দেশিত নামায-রোযা ও হজ-যাকাতের ন্যায় ইবাদত পালন না করায়,তেমনি অবাধ্যতা ঘটে যখন আল্লাহর নির্দেশিত ব্যবসায় জানমালের বিনিয়োগ করা না হয়। আজকের মুসলমানদের দ্বারা বড় অবাধ্যতা হচ্ছে তো এ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। তাদের সমুদয় সময়,শ্রম ও মেধা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে তাদের পেশাগত সাফল্য অর্জনে।নিজেদের পেশাগত সাফল্যে আনন্দ চিত্তে ভাবছে তারা ভালই করছে। অথচ এমন পেশাগত সাফল্যের বড়াই তাদের জাহান্নামে নিয়ে পৌছাবে।পবিত্র কোরআনে তাদের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহর সে ঘোষণাটি এসেছে এভাবে,“(হে মুহাম্মদ তাদেরকে) বল, আমি কি তোমাদের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের খবর শুনাবো? (তারা হচ্ছে) সে সব ব্যক্তি যারা জীবনের সকল প্রচেষ্টা শুধু পার্থিব জীবনের জন্য নিয়োজিত করে এবং তারা ভাবে কর্মে তথা পেশাগত ভাবে তারা কতই না উত্তম কাজ করছে।”-(সুরা কাহাফ, আয়াত ১০৩-১০৪)।
তাই সামান্য কয়েক দিনের হরতাল পালনে মুসলমানের জিহাদ শেষ হবে সেটি কি আশা করা যায়? তাছাড়া এ জিহাদ তো কি শুধু হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে? হাসিনা ও তার ১৪দলীয় মিত্রবাহিনীর লোকেরা তো এ যুদ্ধে নিছক ফুটসোলজার মাত্র। এ যুদ্ধের আসলে জেনারেলগণ তো যুদ্ধ লড়ছে দিল্লিতে বসে। যেমনটি লড়েছিল ১৯৭১য়ে। ভারত হাসিনার ঘাড়ে বন্দুক রেখে মূল শত্রু ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে আঘাত হানছে মাত্র। ফলে হাসিনা গদি উল্টে গেলে ভারত অন্যদের ঘাড়ে বন্দুক রাখবে। মুজিবের মৃত্যুর পরা তারা খালেদ মোশাররফকে বেছে নিয়েছিল। অতীতে জেনারেল এরশাদ ও জেনারেল মঈনকেও ভারত ব্যবহার করেছে।ভবিষ্যতে অন্যদেরও বেছে নিবে। তাছাড়া এমন বিশ্বাসঘাতক উৎপাদনে বাংলাদেশের ভূমি কি যে অতি উর্বর? যে দায়িত্ব নিতে ষাটের দশকে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় যেতে হয়েছিল, এখন সে প্রয়োজন নেই। একাত্তরের ন্যায় ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজন নেই। ভারতীয়গণ নিজেরাই এখন বাংলাদেশের মাটিতে বিপুল সংখ্যায় বিরাজ করছে সে দায়িত্ব সঁপে দিতে ও প্রশিক্ষণ দিতে।
যে জিহাদ অনিবার্য
কোন দেশে যুদ্ধ শুরুর মধ্যে যেমন নানা দুঃসংবাদ থাকে, তেমনি প্রচণ্ড একটি সুংবাদও থাকে। কারণ, যুদ্ধ জাতির জীবনে একটি প্রবল প্রসব বেদনা। যুদ্ধই মানব ইতিহাসে বড় বড় বিপ্লব প্রসব করেছে। নির্মাণ করেছে বড় বড় সভ্যতা। যুদ্ধের মধ্য দিয়েই জাতির জীবনে জন্ম নেয় সাহসী মোজাহিদের। নির্মূল হয় রাজনৈতিক ও সামাজিক জঞ্জাল। পরিবর্তন আসে রাজনৈতিক ও আদর্শিক মানচিত্রে। তাই যুদ্ধ সব জাতিকে দুর্বল করে না। বহু জাতিকে শক্তিশালীও করে। অফুরন্ত শক্তি ও প্রাণের সঞ্চারও করে। যুদ্ধের পর যুদ্ধ করেই প্রাথমিক কালের মুসলমানগণ বিশ্বশক্তি রূপে আবির্ভুত হয়েছিলেন।পরাজয় তো তখনই শুরু হয়েছে যখন মুসলমানগণ যুদ্ধে আগ্রহ হারিয়েছে। তাছাড়া যুদ্ধ তো জান্নাত লাভের চাবি। এখানেই তো মু’মিনের মূল পরীক্ষাটি হয়। পবিত্র কোরআনের মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাই ঘোষণা করেছেন,“তোমরা কি মনে করে নিয়েছো যে এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ এখনও তোমাদের উপর তোমাদের পূর্ববর্তীদের ন্যায় অবস্থা আসে নাই। তাদেরকে আক্রান্ত করেছিল অর্থ-সংকট, দুঃখকষ্ট;(ঈমানের সে পরীক্ষায়)তারা ভীত এবং প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল।এমন কি রাসূল এবং তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল তাঁরা বলে উঠেছিলেন,“আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে?” জেনে রাখো,অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে।”-(সুরা বাকারা,আয়াত ২১৪)। আরো বলা হয়েছেঃ “তোমরা কি মনে করে নিয়েছো যে তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ করেছে আর কে ধৈর্যশীল আল্লাহ সেটি এখনও প্রকাশ করেননি।”–(সুরা আল ইমরান, অয়াত ১৪২)। একই চেতনা ব্যক্ত হয়েছে নবী-জীবনের জিহাদে ও জিহাদ বিষয়ক তাঁর অসংখ্য হাদীসের মধ্য দিয়ে। এক্ষেত্রে সহীহ মুসলিম শরিফের প্রসিদ্ধ হাদীসঃ “যে ব্যক্তি মৃত্যূবরণ করলো অথচ জিহাদ করলো না এবং জীবনে জিহাদে যোগ দেয়ার বাসনাও করলো না সে ব্যক্তির মৃত্যু হয় মুনাফিক রূপে।” মহান আল্লাহতায়ালা আরো বলেছেন,“মানুষ কি মনে করে যে,“আমরা ঈমান এনেছি” শুধু এটুকু বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে,আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? অথচ তাদের আগে যারা ছিল তাদের সবাইকে আমি পরীক্ষা করেছি।আল্লাহকে তো অবশ্যই দেখে নিতে হবে, (ঈমান এনেছি বলার মধ্যে)কে সত্যবাদী,আর কে মিথ্যুক।”–(সুরা আনকাবুত আয়াত ২-৩)।
উপরুক্ত আয়াতগুলির ন্যায় পবিত্র কোরআনে জিহাদ বিষয়ক নির্দেশাবলীর সংখ্যাটি বিশাল। মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রতিটি মু’মিন বান্দাহকে জান্নাতের নিয়ামত ভরা জীবনের পুরস্কার দিতে চান। তবে সেটি কীরূপে সম্ভব -সে মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়টি তিনি গোপন রাখেননি। পবিত্র কোরআনে জান্নাতের সে চাবীর সন্ধানটি তিনি বার বার দিয়েছেন। সে চাবীটি যে আল্লাহর পথে জিহাদে -সে বিষয়টি তিনি নানা ভাবে বার বার সুস্পষ্ট করেছেন।সাহাবায়ে কেরামের ন্যায় প্রতি যুগের প্রকৃত ঈমানদারগণ সে চাবীকে চিনতে ভূল করেননি, ভূল করনেনি শক্ত হাতে তা আঁকড়ে ধরতেও। নবীজীর প্রত্যেক সাহাবা তো সে চাবি নিয়ে জেহাদ করেছেন এবং অধিকাংশ সাহাবা শহীদও হয়েছেন।ফলে তারা জান্নাতের সুখবরও পেয়েছেন।তাদের সম্পর্কেই তো মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন,“ আল্লাহ রাজী আছেন তাদের উপর এবং তারা রাজী আছেন আল্লাহর উপর” –(সুরা বাইয়েনাহ)। মহান আল্লাহর প্রদর্শিত ব্যবসায় জানমালের সর্বোচ্চ বিনিয়োগের কারণে তারাই সমগ্র মানব ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। মুসলিমগণ শুধু ঈমান এনেছি বলবে, নামায-রোযা ও হজ-যাকাত পালন করবে,আর তাতেই পরকালে তারা জান্নাত পাবে -তেমন সহজ পথ যে আল্লাহতায়ালা খোলা রাখেননি। উপরের আয়াতগুলিতে কি সেটাই প্রকাশ পায় না? নবীজী (সাঃ)র সাহাবাগণ এ বিষয়টি শতভাগ বুঝেছিলেন। ফলে সে আমলে এমন কোন সাহাবা ছিলেন না যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেননি। তাদের কাছে সে জিহাদটি ছিল ইসলামের বিজয়, রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা,শরিয়তের প্রতিষ্ঠা ও সে লক্ষ্যে জালেম শক্তির নির্মূলের জানমালের সর্বাত্মক বিনিয়োগ।
বাংলাদেশীদের সৌভাগ্য
কোন দেশে জিহাদ শুরু হলে বুঝতে হবে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে মু’মিনদের চুড়ান্ত পরীক্ষাটিও সেখানে শুরু হয়ে গেছে। এমন পরীক্ষা শুরু হওয়াটাই ঈমানদারের জন্য বড় সুংবাদ। কারণ, প্রতিটি পরীক্ষাই অংশগ্রহণকারীদের জন্য বড় রকমের প্রমোশনের সুযোগ নিয়ে আসে। পরীক্ষা না থাকার অর্থ প্রমোশনের সুযোগ না থাকা। তবে প্রমোশনের জন্য পরীক্ষায় পাশ করতে হয়। তবে পরীক্ষার হলে বসার জন্যও তো যোগ্যতা লাগে। গরু-ছাগলদের তো পরীক্ষায় হলে বসার প্রবেশপত্র দেয়া হয়না। ফলে যে দেশে জিহাদ নাই,বুঝতে হবে সে দেশের জনগণ মহান রাব্বুল আলমীনের দরবারে প্রমোশন পাওয়ার জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়নি। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার যে ইসলামের বিপক্ষ শক্তির সরকার তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? শরিয়তি আইনের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে সরকার। সরকারি মন্ত্রীগণ বলছে,শরিয়তী আইন প্রতিষ্ঠা পেলে বাংলাদেশে মধ্যযুগীয় অন্ধকার নেমে আসবে। এমন কথা তো সাংঘাতিক কুফরিপূর্ণ! হৃদয়ে সামান্য ঈমান থাকলে কেউকি এমন কথা মুখে আনতে পারে? এরূপ বক্তব্যের পর মহান আল্লাহতায়ালা, তাঁর মহান রাসূল (সাঃ) ও কোরআন-সূন্নাহর দুষমণ প্রমাণিত হওয়ার জন্য কি অন্য কোন দলীল লাগে? কাশ্মীর,মায়ানমার ও ভারতের মজলুম মুসলমানদের পক্ষ না নিয়ে হাসিনা সরকার ও তার ১৪ দলীয় জোট ভারতের শাসক শক্তির মিত্র হওয়াকেই অধীক গুরুত্ব দেয়। সরকারি টিভি ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মালিকানাধীন পত্র-পত্রিকা ও টিভিতে দাড়ি-টুপিধারিদের চরিত্র হনন হচ্ছে লাগাতর।
এমন একটি ইসলাম বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে মুসলিম ভূমিতে জিহাদ থাকবে না সেটি কি ভাবা যায়? ইসলামের শত্রুদের হাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম ভূমি অধিকৃত হবে আর সেদেশে সে অধিকৃতির বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু হবে না –তবে সেটি কি মুসলিমদের দেশ? ইসলামের বিজয় শুধু মুসলিম দেশের মসজিগুলোর উপর হলে চলে না,সে বিজয়কে রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের উপর প্রতিষ্ঠা করতে হয়। ইসলাম প্রতিষ্ঠার সে লড়াইটি পবিত্র জিহাদ রূপে গণ্য না হলে জিহাদ আর কাকে বলা যাবে? ইসলামে রাজনীতি বলে কিছু নাই। সেক্যুলার বলেও কিছু নাই। যা আছে তা হলো রাষ্ট্রের অঙ্গণে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা দেয়া ও প্রতিরক্ষা দেয়ার বিরামহীন লড়াই। এটিই পবিত্র কোর’আনের পরিভাষায় জিহাদ। রাজনীতি বলে পবিত্র কোর’আনে যেমন কোন উল্লেখ নাই, তেমনি নবীজী (সাঃ)র হাদীসেও নাই। অথচ নবীজী (সাঃ) খোদ ছিলেন রাষ্ট্রপ্রধান। সে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় ও প্রতিরক্ষায় আমৃত্যু যুদ্ধ লড়ে গেছেন। তাই যারা নবীজী (সাঃ)র প্রকৃত অনুসারি তাদেরকে যেমন নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত থেকে পৃথক করা যায় না, তেমনি বিচ্ছিন্ন করা যায় না আমৃত্যু জিহাদ থেকে। এরই প্রমাণ, নবীজী (সাঃ)র সাহাবাদের মধ্য এমন কেউ ছিলেন না যাদের জীবনে জিহাদ ছিল না। ফলে নবীজী (সাঃ)র অনুসারিগণ আজ তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয় কি করে? তাই ইসলামকে বিজয়ী করার কাজকে নিছক একটি রাজনৈতিক আন্দোলন রূপে জারি রাখার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। কল্যাণ তো এটিকে পরিপূর্ণ জিহাদ রূপে চালু রাখার মধ্যে। তাতে যেমন আল্লাহর সাহায্য আসে, তেমনি সাফল্যও আসে। সেটি যেমন ইহকালে, তেমনি পরকালেও। ২০/০৪/১৩; নতুন সংযোজন ৯/৩/২০১৯
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018