বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গণ: ইসলামবিরোধী শক্তির অধিকৃত ভূমি

ফিরোজ মাহবুব কামাল

 শিক্ষাঙ্গণ: বধ্যভূমি ঈমানের

মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে যে জ্ঞান সরাসরি মানুষকে দেয়া হয় সেটিই হলো ওহীর জ্ঞান সে জ্ঞানই লিপিবদ্ধ করা হয়েছে পবিত্র কুরআনে পূর্বে সে জ্ঞান দেয়া হয়েছিল তাওরাত, ইঞ্জিল ও জব্বুরে এই চারটি আসমানি কিতাবের বাইরেও ওহীর জ্ঞান লাগাতর দেয়া হয়েছে লক্ষাধিক নবীরাসূলের মাধ্যমে সেটি মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই তাই হযরত আদম (🙂 শুধু প্রথম মানবই নন, প্রথম নবীও কারণ, মানব রূপে বেড়ে উঠার জন্য স্রেফ দৈহিক ভাবে বাঁচাটিই জরুরি  নয়, জরুরি হলো আধ্যাত্মীক ভাবে বাঁচাটাও সে জন্য অপরিহার্য হলো ওহীর জ্ঞান মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এ জ্ঞানই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ দান পানাহার পশু-পাখিও পায়; কিন্তু মানুষজাতির জন্য করুণাময় স্রষ্টার অতি বিশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত হলো ওহীর জ্ঞান মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টিতে পরিণত হয় সে ওহীর জ্ঞানে, দৈহিক বল বা সৌন্দর্যে নয় এ জ্ঞানের বলেই মানুষ নিজেকে জান্নাতের উপযোগী করে গড়ে তোলে নইলে মানব সন্তান শুধু পশু নয়, পশুর চেয়েও নিকৃষ্টতর জীবে পরিণত হয় পশু জগতে গণনিধন নাইজাতি বা প্রজাতি নির্মূল নাই, সমকামিতাও নাই অথচ পশু থেকেও যারা নীচে নামে তাদের জীবনে শুধু এরূপ পাপাচারই থাকে না, থাকে তার চেয়েও জঘন্যতর অপরাধ প্রবনতা মানুষ সে ইতর স্তরটিতে পৌঁছে দৈহিক পঙ্গুত্বের কারণে নয়, সেটি ঘটে অসুস্থ বা মৃত ঈমানের কারণে এবং ঈমান অসুস্থ হয় বা মারা পড়ে পানাহারে কমতিতে নয়, বরং ওহীর জ্ঞান না থাকাতে এজন্যই প্রতিটি মানব সন্তানের উপর সবচেয়ে বড় দায়ভারটি গৃহনির্মাণ রুজী-রোজগার নয়; বরং সেটি হলো ওহীর জ্ঞানে নিজেকে যেমন আলোকিত করা, তেমনি অন্যদেরকেও আলোকিত করা একমাত্র সে আলোতেই সম্ভব সিরাতাল মুস্তাকীমে চলা ও উচ্চতর সভ্যতার নির্মাণ

শিকড় কেটে দিলে বৃক্ষ বাঁচে না তেমনি ঈমান বাঁচে না ওহীর জ্ঞানের সাথে সংযোগ ছিন্ন করা হলে ব্যক্তির দেহের মধ্যে তখন খুন হয় তার আধ্যাত্মিক সত্ত্বা দেহের খুনের চেয়ে ঈমানের খুন ও রূহের রুগ্নতা কি কম ভয়ংকর? ব্যক্তির বিবেক ও উচ্চতর নৈতিকতার সম্পর্ক তো রূহের সাথে; দেহের সাথে নয় দেহ খুন হওয়াতে মানুষ অপরাধ কর্মের সামর্থ্য হারায় দৈহিক রোগের কারণে কেউ জাহান্নামে যাবে না, জাহান্নামে যাবে রূহের রুগ্নতার কারণে রূহের রুগ্নতায় মানুষ ভয়ানক অপরাধীতে পরিণত হয় এমন মানুষকে মহান আল্লাহতায়ালা পশুর চেয়েও নিকৃষ্টতর বলেছেন দেহের  খাদ্য পানাহারে মেলে রূহের খাদ্য আসে কুরআনহাদীস তথা ওহীর জ্ঞান থেকে তাই কুরআনহাদীসের জ্ঞানচর্চা বন্ধ হলে রোগের উপদ্রব শুরু হয় রূহের জগতে যখন কোন দেশে এরূপ রুগ্ন রূহের মানুষদের সংখ্যা বিপুল ভাবে বেড়ে উঠে সেদেশ তখন দুর্বৃত্তি, সন্ত্রাস, ফ্যাসিবাদ স্বৈরাচার, চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, ধর্ষণ, যুদ্ধ, বিশ্বযুদ্ধ, এবং যুদ্ধে গণহত্যা, পারমানবিক বোমার ব্যবহার ও নগরধ্বংসের ন্যায় নানারূপ অপরাধে রেকর্ড সৃষ্টি করে

তাই কুরআনহাদীসের জ্ঞানচর্চাক বন্ধ করা ও এ জ্ঞানের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো অতি ভয়ানক ও গুরুতর অপরাধ এ অপরাধটি যেমন সমগ্র মানব কুলের বিরুদ্ধে, তেমনি মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে মানবসন্তানদের জান্নাতের উপযোগী রূপে গড়ে তোলার যে মিশনটি মহান আল্লাহতায়ালার, বিদ্রোহ ও নাশকতাটি মূলত সে মিশনের বিরুদ্ধে পৃথিবীপৃষ্ঠে এর চেয়ে গুরুতর অপরাধ আর কি হতে পারে? অপরাধ এখানে জীবন কেড়ে নেয়া নয়। শত শত কোটি টাকার সম্পদ ছিনিয়ে নেয়াও নয়বরং সেটি অনন্তঅসীম কালের জন্য জান্নাত ছিনিয়ে নেয়ার সে জান্নাতের এক বর্গগজ জমিও কি হাজার কোটি ডলারে কেনা সম্ভব? সেক্যুলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে এটি হলো সবচেয়ে জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ। অপরাধ এখানে কোটি কোটি মানুষকে অনন্ত কালের জন্য জাহান্নামের আগুনে ফেলার। শরিয়তের আইনে এজন্যই এটি গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ সেক্যুলারিস্টগণ সে গুরুতর অপরাধে লিপ্ত সমগ্র বিশ্বজুড়ে

নবীজী (সা🙂র হাদীস: প্রতিটি মানব সন্তানের জন্ম মুসলিম রূপে, কিন্তু তার ধর্মান্তর ঘটে পিতামাতা ও পরিবেশের কারণে বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলোতে ইসলাম থেকে কোটি কোটি সন্তানের ধর্মচ্যুতির ঘটনাটি ঘটছে কোন মন্দিরে বা গির্জাতে নয়, বরং সেটি হচ্ছে শিক্ষাঙ্গণে ঔপনিবেশিক শক্তির প্রবর্তিত শিক্ষানীতির কারণে ঈমানহত্যার বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে মুসলিম দেশগুলির স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ফলে খোদ মুসলিম ভূমিতে অক্ষত ও পূর্ণ ঈমান নিয়ে বেড়ে উঠা যেমন অসম্ভব করা হয়েছে, তেমনি অসম্ভব করা হয়েছে মুসলিম ভূমিতে সুস্থ ইসলামী ভাতৃত্বের বন্ধন নিয়ে বেড়ে উঠা ফলে অসম্ভব হয়েছে ইসলামী সভ্যতার নির্মাণ বরং শিক্ষার নামে বিস্তর পানি ঢালা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে ভাষা, গোত্র ও ভূগোলভিত্তিক বিভক্তিকে গভীরতর করতে এভাবে প্রবলতর করা হচ্ছে জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলারিজম, লিবারেলিজম ও পুঁজিবাদের জাহিলিয়াতকে। ফলে, মুসলিমগণ ব্যর্থ হচ্ছে প্যানইসলামিক মুসলিম ভাতৃত্ব নিয়ে বেড়ে উঠতে এ কারণেই ১৫০ কোটি মুসলিম ব্যর্থ হয়েছে সিভিলাইজেশনাল স্টেট প্রতিষ্ঠা দিতে অথচ মুসলিমদের জনসংখ্যা যখন ঢাকা, করাচী বা জাকার্তার ন্যায় যে কোন শহরের আজকের জনসংখ্যার চেয়েও কম ছিল তখনও বিশ্বশক্তি রূপে মুসলিমদের সম্মান ছিল মুসলিমগণ এখন যে পরিচিতিটি পেয়েছে তা হলো ভাষা, গোত্র ও অঞ্চলের নামে বিভক্তির দেয়াল ঘেরা ৫০টির অধিক জাতীয়, উপজাতীয় ও গোত্রীয় রাষ্ট্রের ফলে পৃথিবীর নানা কোনে মুসলিমগণ লাখে লাখে নিহত, ধর্ষিতা ও নিজ ভিটা থেকে উচ্ছেদ হলেও তাদের পাশে দাঁড়ানোর মত কোন শক্তিশালী সিভিলাইজেশনাল স্টেট না অথচ সেরূপ সভ্যতার পরিচয়বাহী অভিভাবক রাষ্ট্র খৃষ্টান, হিন্দু, চীনা ও ইহুদীর আছে

মুসলিম দেশগুলির স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হয়েছে শিক্ষার নামে মৃত ঈমান ও রুগ্ন রূহধারী দুর্বৃত্ত উৎপাদন ফলে বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতে যতই বাড়ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ততই বাড়ছে দুর্বৃত্তদের সংখ্যা। এ দুর্বৃত্তগণই পরবর্তীতে রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ, সেনা অফিসার, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আদালতের বিচারক রূপে দেশগুলির উপর নিজেদের দখলদারী প্রতিষ্ঠা করেছে ফলে মুসলিম বিশ্বজুড়ে বেড়েছে অনাচার, পাপাচার এবং নিষ্ঠুর স্বৈরাচার তাদের কারণে লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষ যেমন নির্যাতিত ও নিহত হচ্ছে, তেমনি অসম্ভব হয়েছে স্বাধীন ভাবে ধর্মপালন ফলে মুসলিমগণ যেমন শিক্ষাজীবন শেষ করছে কুরআন থেকে জ্ঞানার্জনের সামর্থ্য অর্জন না করেই। তেমনি তারা ইসলাম পালন করছে শরিয়ত, হুদুদ, শুরা, খেলাফা, জিহাদের ন্যায় অতি বাধ্যতামূলক কুরআনী বিধানগুলির প্রতিষ্ঠা না দিয়েই তারা বিচারপ্রার্থী হচ্ছে সেক্যুলার আদালত ও তার কুফরী আইনের কাছে। অথচ এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনের চুড়ান্ত হুশিয়ারী হলো: যারাই আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান তথা শরিয়ত মোতাবেক বিচারকার্য পরিচালনা করে না তারাই কাফির তারাই জালেম.তারাই ফাসেক (সুরা মায়েদা, আয়াত ৪৪, ৪৫ ও ৪৭) ঔপনিবেশিক কাফির শাসকগণ ও তাদের ভয়ে ভীতু আলেমগণ মহান আল্লাহতায়ালার এই কঠোর হুশিয়ারীকে মুসলিমদের দৃষ্টি থেকে লুকিয়ে রেখেছিল ঔপনিবেশিক শাসন শেষ হয়েছে, কিন্তু ঔপনিবেশিক আমলের শিক্ষার প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। ফলে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা নিয়ে আলেমদের মাঝে কোন আন্দোলন নাই।

ঔপনিবেশিক শাসকেরা মুসলিমদের সম্পদেই শুধু হাত দেয়নি, নাশকতা ঘটিয়েছে তাদের চেতনার ভূমিতেও সেটি সম্ভব হয়েছিল শিক্ষার নামে পরিকল্পিত কুশিক্ষার মাধ্যমে নইলে তাদের কুফরি আইন-আদালত কি মুসলিমদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেত? যার মধ্যে পবিত্র কুরআনের উপরুক্ত আয়াতের উপর ঈমান আছে সে কি কখনো বিচারক, উকিল ও বিচারপ্রার্থী রূপে কাফিরদের আদালতে এবং কুফরি আইনের কাছে হাজির হতো? কারণ মুসলিমের কাছে তার জীবনের মূল এজেন্ডা তো রোজ হাশরের বিচার দিনে কাফির, জালেম ও ফাসেক রূপে চিত্রিত হওয়া থেকে বাঁচা এবং করুণাময় রাব্বুল আলামীনের কাছে সাচ্চা মুসলিম রূপে পরিচিত হওয়া কিন্তু কাফিরদের আদালতে ও তাদের কুফরি আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করলে কি ঈমান ও মুসলিমত্ব বাঁচে?

 

অপরাধ: আল্লাহতায়ালার আয়াত লুকানোর

ঔপনিবেশিক কাফিরদের শিক্ষানীতির অন্যতম লক্ষ্য, মহান আল্লাহতায়ালার কুরআনী বিধানকে মুসলিমদের থেকে লুকানো ইসলামে এটি ভয়ানক অপরাধ তা ডেকে আনে আল্লাহতায়ালার ও তাঁর সৃষ্টিকুলের লানত যা পরকালে গোপনকারীকে জাহান্নামে নিয়ে হাজির করে এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে হুশিয়ারি এসেছে এভাবে, নিশ্চয়ই যারা গোপন করে আমি যা সুস্পষ্ট বর্ণনা ও হিদায়েত রূপে নাযিল করেছি মানুষের জন্য সে গুলো কিতাবে বিস্তারিত ভাবে পেশ করার পরও, তারাই হলো সেসব ব্যক্তি যাদের উপর অভিসম্পাত করেন আল্লাহ ও অন্যান্য অভিসম্পাতকারীগণ -(সুরা বাকারা, আয়াত ১৫৯) পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলি এজন্য নাযিল হয়নি যে সেগুলি লুকানো হবে বরং এজন্য যে, সেগুলি ব্যক্তি ও সমষ্টির জীবনে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা পাবে ফলে দ্বীনের অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো প্রতি জনপদে কুরআনের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়া এবং জনগণকে কুরআন-হাদীস শিক্ষা দেয়া সে শিক্ষার কারণেই ঔপনিবেশিক কাফিরদের হাতে অধিকৃত হওয়ার পূর্বে শরিয়তের আইনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সাধারণ মুসলিমদের কাছে অজানা ছিল না এবং অজানা ছিল না সে শরিয়তী আইনকে অস্বীকার করা ও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের শাস্তি ফলে নবাব সিরাজুদ্দৌলার আমলে দেশে কাজীর আদালত ছিল, সে আদালতে শরিয়তের আইন অনুসারে বিচার ছিল এবং হুদুদের প্রতিষ্ঠাও ছিল একই ভাবে শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা ছিল প্রতিটি মুসলিম দেশে

মুসলিম দেশের শাসক ও প্রজাগণ শরিয়তী আইন ভিন্ন অন্য আইনের সাথে পরিচিত ছিল না সেটি তাদের জন্য কাঙ্খিতও ছিল না যে ব্যক্তি উত্তর মেরুতে যেতেই ইচ্ছুক নয় সে কেন সেখানে যাওয়ার রাস্তার খুঁজবে? কুফরি আইনে সাথে মুসলিমদের সম্পর্ক ছিল এরূপ অথচ ইউরোপীয় কাফিরদের হাতে অধিকৃত মুসলিম দেশগুলির চিত্রই পাল্টে যায়। শাসন ক্ষমতা কবজা করা মাত্রই তারা শরিয়তী আইনকে বিলুপ্ত করে নিজেদের রচিত কুফরি আইনকে মুসলিমদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। এভাবেই মুসলিমদের জন্য অসম্ভব করে পূর্ণ ইসলাম পালন। এ পাপ তখন জাহান্নামের পথে নেয়। কাফির শক্তির হাতে অধিকৃত হওয়ার  এটিই হলো সবচেয়ে বড় বিপদ। এ মহা বিপদ ও পাপ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়, কাফিরদের শাসনের বিলুপ্তি জিহাদ এজন্যই মুসলিম জীবনে অনিবার্য হয়ে উঠে জিহাদের লক্ষ্য, মহান আল্লাহতায়ালার জমিনকে তাঁর দ্বীন পূর্ণ ভাবে পালনের জন্য উপযোগী করা এজন্যই যে দেশে জিহাদ নাই, সেখানে অসম্ভব হয় পূর্ণ মুসলিম রূপে বেড়ে উঠা ও বাঁচা তখন যা অনিবার্য হয় তা হলো কুফরি আইনের কাছে আত্মসমর্পণ

মুসলিমদের দৃষ্টি থেকে কুরআনের আয়াত লুকানোর কাজ যে শুধু ঔপনিবেশিক শাসকদের পক্ষ থেকে হয়েছে -তা নয়। এখন সেটি হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে তাদের হাতে যারা নিজেদেরকে মুসলিম রূপে পরিচয় দেয়। সেটি দুই ভাবে এবং দুইটি ভিন্ন পক্ষের দ্বারা। একটি পক্ষ হলো তারা, যারা কুরআনের বিধানকে জেনে-বুঝেও তার প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় নামছে না। এরা হলো মুসলিম দেশের আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ ও ইসলামী দলের নেতাকর্মীগণ। তারা মুসলিম সন্তানদের কুরআনের কথাগুলি না বুঝিয়ে স্রেফ তেলাওয়াত শিখিয়েই দায়িত্ব সারছে। বুঝার উপর তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না। তারা জানে, ইসলামকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার কাজটি জিহাদের এবং ইসলামকে বিজয়ী করার জিহাদ জানমালের কুরবানী চায়। এ কাজে শতকরা ৬০ ভাগের বেশী সাহাবায়ে কেরামকে শহীদ হতে হয়েছে। কিন্তু সে জিহাদের কথা তারা বলে না। ফলে জেনে বুঝেই তারা নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের এই পথকে পরিহার করেছে। কুরআন শিক্ষাদান ও শরিয়ত-হুদুদ-খেলাফার প্রতিষ্ঠার বদলে তারা বাঁচছে নিজ স্বার্থ পূরণের এজেন্ডা নিয়ে। সেটি হলো, তাদের দল, ফেরকা, মাদ্রাসা, দরবার ও পীরগিরি বাঁচানো। জিহাদের ময়দানে তো তারাই নামতে পারে যারা নিজেদের জানমালকে জান্নাতের বিনিময়ে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে বিক্রয়ের চুক্তি করেছে। মহান রাব্বুল আলামিন মুমিনের সাথে তাঁর সম্পাদিত সে চুক্তির কথা সুরা তাওবার ১১১ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছেদ্বিতীয় যে পক্ষটি পবিত্র কুরআনের আয়াত লুকানোর কাজে দিবারাত্র ব্যস্ত তারা হলো মুসলিম দেশগুলির শাসকগণ ও তাদের সহযোগী সকল সেক্যুলার শক্তি। সে কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে দেশের শিক্ষানীতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলিকেএবং সেটি করা হচ্ছে কুরআন-হাদীসের শিক্ষাকে সিলেবাসের বাইরে রাখার মধ্য দিয়েতারা এ কাজে নেমেছে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচানোর স্বার্থে। কারণ, ইসলাম ও মুসলিমের বিরুদ্ধে তাদের কৃত ভয়ানক অপরাধ নিয়ে এই আত্মস্বীকৃত ইসলামের বিপক্ষীয় শক্তি আদৌ অজ্ঞ নয়। কুরআন-হাদীসের শিক্ষা জনগণের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে তাদের বিপদ যে বাড়বে -সেটি তারা জানে। অপরাধ এখানে আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে যুদ্ধের। অতএব শাস্তি যে গুরুতর সেটি তারা বুঝে। অপরাধের সে শাস্তি থেকে প্রাণ বাঁচানোর স্বার্থেই তারা মহান আল্লাহতায়ালার আয়াতের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে খাড়া হয়

উপরুক্ত দুটি পক্ষের কর্মকান্ডের ফলে মুসলিম দেশগুলিতে ইউরোপীয় কাফিরদের শাসন বিলুপ্ত হলেও কুফরি আইন ও কুফরি আদালতের কাছে মুসলিমদের আত্মসমর্পণ এখনো শেষ হয়নি ফলে মুসলিম শাসনামলের আদালত, শরিয়তী আইন ও হুদুদ এখনো মুসলিম ভূমিতে ফিরে আসেনি নির্মিত হয়নি ইসলামী রাষ্ট্র। বরং বিদেশী কাফিরদের সুরক্ষিত আদর্শিক উপনিবেশ রূপে আজও বেঁচে আছে তাদের প্রতিষ্ঠিত পতিতাপল্লী, ক্লাব, সিনেমা পল্লী, কোটকাছারি, শিক্ষাঙ্গণ, সেনানীবাস, প্রশাসনিক অবকাঠামো ও সূদী ব্যাংকের স্থাপনা নিয়ে ফলে মুসলিম জীবনে শেষ হয়নি মহান রাব্বুল আলামিনের প্রতি আংশিক আনুগত্য নিয়ে বাঁচার দিন আরো বিস্ময়ের বিষয় হলো, আল্লাহতায়ালার প্রতি এরূপ সীমিত আনুগত্য নিয়ে মুসলিমদের মাঝে কোন বেদনা নাই তাঁর বিধানের প্রতি পূর্ণ আনুগত্যে দেখাতে তেমন আগ্রহও নেই অথচ জাহান্নামের আগুনের ভয় থাকলে তো কুফরি আইন-আদালতের কাছে এমন আত্মসমর্পণ নিয়ে হৃদয়ে কাঁপন শুরু হওয়া উচিত ছিল। সীমিত আনুগত্য ছেড়ে  মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি পূর্ণ আনুগত্যে তারা সদা নিষ্ঠাবান হতো।

সীমিত বা সিলেক্টেড আনুগত্য তো অভিশপ্ত ইবলিসেরও ছিল তার বিদ্রোহ ছিল মহান আল্লাহতায়ালার একটি মাত্র হুকুমের বিরুদ্ধে সেটি হযরত আদম (🙂কে সিজদা করার ক্ষেত্রে। অথচ মুসলিম ভূমিতে আজকের বিদ্রোহ তো অসংখ্য বিষয়ে। মহান আল্লাহতায়ালা তো চান তার প্রতিটি হুকুমের প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য সীমিত বা সিলেক্টেড আনুগত্য মানেই অবাধ্যতা নামাজের একটি ফরজ ভেঙ্গে গেলে পুরা নামাজ ভেঙ্গে যায়। তখন পুরা নামাজ পুণরায় পড়তে হয়। সেটি দ্বীন পালনের ক্ষেত্রেও। মহান আল্লাহতায়ালার কোন একটি বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নিয়ে তাই মুসলিম হওয়া যায় না। পবিত্র কুরআনে তাই বলা হয়েছে, উদখুলু ফিস সিলমি কাফ্ফা অর্থ: প্রবেশ করো ইসলামে পরিপূর্ণ ভাবে এবং ইসলামের অর্থ তো আল্লাহতায়ালার হুকুমের কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ তাই আংশিক আত্মসমর্পণ নিয়ে কখনোই ইসলাম পালন হয় না। অথচ যারা নিজেদের আলেম, ওয়ায়েজ, মোহাদ্দেস, পীরমাশায়েখ ও ধর্মীয় নেতাকর্মী রূপে জাহির করে তাদের মাঝেও এরূপ আংশিক দ্বীন পালন নিয়ে কোন মাতম নেই বরং দেখা যায় আত্মতৃপ্তি। তাদের মাঝে শরিয়ত, হুদুদ, খেলাফা ও মুসলিম উম্মাহর বুকে স্থাপিত বিভক্তির দেয়াল ভাঙ্গা নিয়ে কোন জিহাদ নেই ভাবটা এমন, যেন এগুলি ছাড়াই পরিপূর্ণ দ্বীনপালন সম্ভব!

 

লক্ষ্য: বুদ্ধিবৃত্তিক অধিকৃতি

কাফির শক্তির হাতে অধিকৃত হওয়ার বিপদ যে কত্টা ভয়াবহ, কতটা দীর্ঘমেয়াদী এবং কতটা বহুমুখি তারই জ্বলন্ত নমুনা নিয়ে বেঁচে আছে আজকের বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিশর, নাইজিরিয়া ও মালয়েশিয়ার ন্যায় সাবেক ব্রিটিশ কলোনিগুলোর মুসলিমগণকাফেরদের অধিকৃতির শুরুটি অস্ত্রের বলে হলেও তার ভয়ানক কুফলগুলো যুগ যুগ টিকে থাকে তাদের প্রণীত শিক্ষানীতির কারণে শিক্ষার আছড় সহজে শেষ হয়না। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যা কিছু শেখানো হয়, অধিকাংশ মানুষের জীবনে সেগুলি আমৃত্যু বেঁচে থাকে। মৃত্যুর আগে সেগুলি তারা সন্তানদের মাঝেও রেখে যায় বাংলাদেশের রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি, সংস্কৃতি ও আইন আদালতে ঔপনিবেশিক কাফিরদের সে অধিকৃতি আজও যেরূপ বেঁচে আছে তা তো ব্রিটিশ-প্রণীত শিক্ষানীতির ফলেই। এরই ফল হলো, নিজেদের আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক দখলদারী বাঁচাতে বিদেশী কাফিরদের এখন একটি তীরও ছুড়তে হচ্ছে না। তাদের প্রতিষ্ঠিত কুফরি আইনআদলতের কাছে আত্মসমর্পণ এখন বাঙালি মুসলিমের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে একই কাণ্ড ঘটেছে ইউরোপীয় কাফিরদের অন্যান্য সাবেক কলোনীগুলিতেও। সমাজ বিজ্ঞানের ভাষায় একেই বলা হয় এ্যাডুকেশনাল ও সাংস্কৃতিক মডেলিং

যখনই কোন মুসলিম দেশ ইসলামবিরোধী কাফির শক্তির হাতে অধিকৃত হয় তখন সে দেশটিতে তাদের মূল স্ট্রাটেজী হয় নবীজী (সা🙂র ইসলাম থেকে মুসলিমদের দূরে সরানো সে স্ট্রাটেজী মুসলিম দেশগুলিতে যে কতটা সফল হয়েছে সেটি বুঝা যায় সে দেশগুলিতে শরিয়তী বিধান, কুরআন শিক্ষা, জিহাদ ও মুসলিম ঐক্যের বিলুপ্তি দেখে। ইসলাম থেকে দূরে সরা তথা ইসলামী চেতনাশূণ্য মুসলিম জনশক্তিকে তারা তখন নিজেদের লোকবলে পরিণত করে এরূপ স্ট্রাটেজীর কারণেই মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও তাদের সম্পদ বৃদ্ধিতে মুসলিমগণ তেমন লাভবান হয়নি। তাদের সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি তাতে বাড়েনি। বরং মুসলিমদের সম্পদে অধিক শক্তিশালী হয়েছে দখলদার কাফিরগণ তাই ১৭৫৭ সালে এশিয়ার সবচেয়ে সম্পদশালী দেশ বাংলা দখলের ফলে ক্ষুদ্র ইংরেজ জাতির ভাগ্যই পাল্টে যায় বাংলা থেকে বিপুল সম্পদ ডাকাতির ফলে তারা শুধু দ্রুত পুরা ভারতই দখলে নেয়নি, বিশ্বময় বিস্তার করতে পেরেছে তাদের ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য একই ভাবে মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও গ্যাস প্রাচুর্য বাড়িয়েছে দখলদার মার্কিনীদের সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি অন্য গোলার্ধে থেকেও তারা পেয়েছে বিশ্বময় প্রতিপত্তি বিস্তারের সামর্থ্য।

শিক্ষার ও প্রশিক্ষণের সামর্থ্য বিশাল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নানা প্রকারের পশুপাখীকেও বশে আনা যায় এবং তাদের দিয়ে অনেক কাজও করিয়ে নেয়া যায় সেটি অবিকল সত্য মানব সন্তানদের বেলায় তেমন একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ঔপনিবেশিক ব্রিটিশগণ শিক্ষানীতি প্রণোয়ন করে অধিকৃত দেশগুলিতে তাতে তাদের সফলতাও জুটেছে প্রচুর সে শিক্ষানীতির ফলে ভারতীয় মুসলিমগণ যে কতটা ঈমানশূণ্য হয় তার উদাহরণ হলো: ইংরেজ বাহিনী ১৯১৭ সালে যখন জেরুজালেম ও ইরাক দখল করে তখন সে বাহিনীতে ইংরেজদের চেয়ে অধিক ছিল অইংরেজ সৈনিক বিপুল সংখ্যায় ছিল মুসলিম। সিরিয়া, ইরাকের ন্যায় ইসলামের কেন্দ্রীয় ভূমি কাফিরদের হাতে তুলে দিতে এসব মার্সেনারি মুসলিম সৈনিকগণ কাফির বাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে তৎকালীন খলিফার বাহিনীর বিরুদ্ধে। মুসলিম ভূমিতে গিয়ে মুসলিমদের হত্যা করেছে তাদের ঈমান এতটাই বিলুপ্ত হয়েছিল যে, খলিফার বিরুদ্ধে এতো বড় গুরুতর অপরাধেও তাদের হৃদয় কাঁপেনি বরং বিদেশী কাফিরদের বিজয়কে তারা নিজেদের বিজয় ও নিজেদের উৎসব রূপে গণ্য করেছে তেমনটি দেখা গেছে ২০০১ সালে কাবুলে এবং ২০০৩ সালে বাগদাদে মার্কিন বাহিনীর বিজয় কালে। এই হলো ইসলামশূণ্য শিক্ষাব্যবস্থার নাশকতা একই কারণে নৃশংস নাশকতার কাণ্ডটি ঘটেছে ২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরে, ২০০৭ সালে ইসলামাবাদের লাল মসজিদে এবং ২০১৩ সালে কায়রোর রাবা আল আদাবিয়া ময়দানে এ তিনটি স্থানেই দেশগুলির সেক্যুলার পুলিশ ও সেনাবাহিনী কামান দেগে শত শত মুসল্লিকে হত্যা করে

ঔপনিবেশিক কাফির শক্তির স্ট্রাটেজী শুধু মুসলিম ভূমির উপর সামরিক ও রাজনৈতিক দখলদারী নয়, বরং তাদের চেতনালোকের উপর আদর্শিক দখলদারীতেমন একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখেই কাফির শক্তির মূল স্ট্রাটেজী হলো, কুরআনহাদীসের সাথে মুসলিমদের সম্পর্ক ছিন্ন করা এজন্যই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার সিলেবাস ও পাঠ্যপুস্তক থেকে তারা কুরআনহাদীসের জ্ঞানদান বিলুপ্ত করে উপরুন্ত, ইসলামের বিরুদ্ধে নাশকতা বাড়াতে নতুন নতুন বই লেখে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে গড়ে তোলে ঈমানহত্যার বধ্যভূমি রূপে বাংলাদেশে ভারত সে কাজটিই করছে তাদের রাজনৈতিক, আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক সেবাদাসদের দিয়ে ফলে সেক্যুলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে দেহ নিয়ে বাঁচা সম্ভব হলেও কঠিন হয়ে দাঁড়ায় ঈমান নিয়ে বাঁচা। পরিণামে আজ থেকে প্রায় শত বছর পূর্বে মুসলিম জাহানে মুসলিমদের মাঝে ইসলাম ও ঈমান যতটা বেঁচে ছিল, এখন সেটি নাই। তখন অন্ততঃ মুসলিমদের মাঝে ভাষা, ভূগোল, বর্ণ ও গোত্রের নামে বিভক্তির এতো দেয়াল ছিল না। তখন পবিত্র ভূমিতে হজ্জে যেতে বা কোন মুসলিম ভূমিতে ঘর গড়তে কোন মুসলিমের পাসপোর্ট ও ভিসা লাগতো না। তখন আরব-অনারব, তুর্কি-কুর্দি, বাঙালি-অবাঙালি নিয়ে রাজনীতিতে বিভক্তির দেয়াল ছিল না, তারা সহজেই একই মঞ্চে একই লক্ষ্যে খাড়া হতে পারতো। ১৯৪৭ সালে তেমনটি দেখা গেছে দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম রাজনীতিতে। ফলে ঔপনিবেশিক ও আগ্রাসী হিন্দুদের সম্মিলিত বিরোধীতা সত্ত্বেও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এখন মুসলিম বিশ্বের ভৌগলিক মানচিত্রই শুধু নয়, আদর্শিক মানচিত্রও পাল্টে গেছে। ফলে সেরূপ একতা এখন কল্পনাও করা যায় না। মুসলিম দেশ ও তার জনপদগুলি পূর্ণ হয়ে গেছে রুগ্ন রূহ ও মৃত ঈমানের মানুষেফলে ইসলামের শত্রুগণ এখন বিপুল সংখ্যায় অনুগত খলিফা পাচ্ছে এদের থেকে বস্তুত এরাই দখলে নিয়েছে মুসলিম দেশের রাজনীতি, পুলিশ, প্রশাসন, বুদ্ধিবৃত্তি, শিক্ষাসংস্কৃতি ও সেনাবাহিনী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে এজন্যই শরিয়ত, হুদুদ, শুরা, খেলাফত ও জিহাদের ন্যায় ইসলামের মৌল বিধানগুলি রুখতে বিদেশী কাফিরদের যুদ্ধে নামতে হয় না সে কাজটি অতি সফল ভাবে সমাধা করে দিচ্ছে মুসলিম নামধারি তাদের বিশ্বস্ত খলিফাগণ   

 

লালনভূমি ফিতনা ও বিদ্রোহের

মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনপালন এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও নিরাপত্তাকে বাধাগ্রস্ত করার প্রতিটি কর্ম ও প্রতিটি ষড়যন্ত্রই হলো ফিতনা ইসলামী পরিভাষায় এটি গুরুতর অপরাধ ইসলাম ও মুসলিমের বিরুদ্ধে পরিচালিত এ ফিতনায় অসম্ভব হয় কুরআন শিক্ষা, শরিয়ত, হুদুদ, একতা, জিহাদ ও শুরার ন্যায় মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত বিধানগুলির প্রতিষ্ঠা দেশের রাজনীতিতে ফিতনা সৃষ্টিকারিগণ বিজয়ী হলে পরাজিত হয় মহান আল্লাহতায়ালার মূল মিশন আল্লাহতায়ালার বিধান তখন স্রেফ পবিত্র কুরআনেই থেকে যায়রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারে নয় তাই পবিত্র কুরআনে এরূপ ফিতনা সৃষ্টিকে চিহ্নিত করা হয়েছে মানব হত্যার চেয়েও জঘন্যতম অপরাধ রূপে কারণ, মানব হত্যায় পৃথিবী পৃষ্টে মহান আল্লাহতায়ালার মিশন মারা পড়ে না রাষ্ট্র ও সমাজ জুড়ে সভ্যতর হওয়ার প্রক্রিয়াও বন্ধ হয়না অথচ সেটি ঘটে মহান আল্লাহতায়ালার মিশন বিলুপ্ত হলে শয়তানী শক্তির হাতে অধিকৃত হওয়ার মূল বিপদটি এখানেই ফিতনা সৃষ্টি তখন রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিণত হয় খোদ রাষ্ট্র তখন মহান আল্লাহতায়ালার মিশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে রাজনীতি ও প্রশাসনের সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও তখন পরিণত হয় জনগণকে জাহান্নামের আগুনে নেয়ার বাহনে এজন্যই এরূপ ফিতনা সৃষ্টিকারীদের হাতে হাজার হাজার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পেলেও তাতে মানবতা ও নৈতিকতা বাড়ে না তখন শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সভ্যতর সমাজ নির্মাণের কাজও সামনে এগোয় না বরং বৃদ্ধি পায় ফিতনার জোয়ার মুসলিম বিশ্বজুড়ে আজ তো সেটিরই প্রভাব মুসলিম দেশগুলিতে আজ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কি কম? ইসলামের বিজয় ও গৌরব কালে এর শত ভাগের এক ভাগও ছিল না কিন্তু সেদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে আল্লাহর পথে সাচ্চা মুজাহিদ গড়ে উঠতো; ফলে বিজয়ও আসতো কিন্তু আজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে বেড়ে উঠছে ঈমানশূণ্য প্রবৃত্তির গোলামেরা ফলে মুসলিম ভূমিতে যতই বাড়ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ততই জনবল পাচ্ছে ইসলামের শত্রুপক্ষ ফলে মুসলিম বিশ্ব জুড়ে আজ যেরূপ বর্বর স্বৈরাচার, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও ইসলামবিরোধী তান্ডব -তা তো ঘটছে এসব নৃশংস দুর্বৃত্তদেরই হাতেই মুসলিম সমাজ থেকে ফিতনাকারিদের নির্মূল এজন্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ এবং ইসলামের এই শত্রুগণ স্রেফ দোয়াদরুদে নির্মূল হওয়ার নয় পবিত্র কুরআনে এজন্যই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুকুম এসেছে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, ততদিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে যতদিন না মুসলিম ভূমি থেকে ফিতনা নির্মূল হয়

ওহীর-জ্ঞানশূণ্য অপরাধীদের পশু বললে পশুর অবমাননা হয় কারণ, পশুগণ কখনোই কোন দেশে ফিতনা ঘটায় না কাউকে জাহান্নামের পথেও টানে না মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে কখনো বিদ্রোহেও নামে না সে বর্বরতা ও নৃশংসতা যেহেতু মানবদের দ্বারা ঘটে, পবিত্র কুরআনে এরূপ মানবেরা চিত্রিত হয়েছে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট জীব রূপে বলা হয়েছে, উলায়িকা কাআল আনয়াম, বাল হুম আদাল।অর্থ: তারাই হলো গবাদী পশুর ন্যায়; বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট। মানবের জন্য তার জন্ম থেকেই বাঁচার এজেন্ডাটি সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে সেটি স্রেফ মানব রূপে বেড়ে উঠা নয়, বরং আমৃত্যু মহান আল্লাহতায়ালার খলিফা রূপে বাঁচা আর আল্লাহতায়ালার খলিফা রূপে বাঁচার অর্থ তাঁর এজেন্ডাকে নিজ জীবনের এজেন্ডা রূপে গ্রহণ করা পবিত্র কুরআনের ভাষায় সে এজেন্ডাটি হলো, লিইয়ুযহিরাহু আলাদ্বীনে কুল্লিহি যার অর্থ, সকল ধর্ম ও সকল দ্বীনের উপর ইসলামের বিজয় ইসলামের শত্রুদের মূল দুশমনি তো মহান আল্লাহতায়ালার এই এজেন্ডার বিরুদ্ধে তারা তো চায় তাদের নিজ নিজ এজেন্ডার বিজয় সে লক্ষ্যে তারা মুসলিমদের বিচ্ছিন্ন করতে চায় মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা থেকে সেটি করে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কাজে লাগিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা নিজ জীবনে ধারণ করে বাঁচার অর্থ সিরাতাল মুস্তাকীমে চলা কিন্তু ওহীর জ্ঞান ছাড়া সিরাতাল মুস্তাকীম চেনা ও সে পথে চলা কী আদৌ সম্ভব? অন্ধকার জঙ্গলে আলো ও কম্পাস ছাড়া পথ চলার ন্যায় সেটি এক অলীক স্বপ্ন ওহীর জ্ঞানে তথা পবিত্র কুরআনের জ্ঞানে অজ্ঞ থাকার পরিনামটি এজন্যই ভয়াবহ সেটি যেমন পার্থিব জীবনে, তেমনি আখেরাতেও সেরূপ অজ্ঞতা পরকালে নিশ্চিত জাহান্নামে নিয়ে পৌঁছায়

 

দায়িত্বটি একমাত্র আল্লাহর

মানবকে সৃষ্টি করার সাথে সাথে তাঁর শিক্ষাদানের মহাদায়িত্বটি নিজ হাতে নিয়েছেন মহাজ্ঞানী মহাপ্রভু আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালা সে কাজে ওহীর জ্ঞান দিয়ে যেমন অসংখ্য বার ফেরেশতা পাঠিয়েছেন, তেমনি লক্ষাধিক নবীরাসূলও পাঠিয়েছেন মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া সর্বশেষ সে পথনির্দেশনাটি এখনো বেঁচে আছে এবং কিয়ামত অবধি তা বেঁচে থাকবে পবিত্র কুরআনের মাঝে পৃথিবী পৃষ্ঠে আর কোন নবী বা রাসূল আসবে না। কিন্তু যা কিছু শেষ নবী মহম্মদ (সা:)র উপর নাযিল হয়েছিল এবং তিনি যা কিছু শিখিয়ে গেছেন -সেগুলি বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব প্রতিটি মুসলিমের। প্রতিটি মুসলিম শাসক একাজে আল্লাহর রাসূলের খলিফা। ইসলামী বিধান সমূহের পূর্ণ প্রতিষ্ঠা দিতে নবীজী (সা:) যেমন ইসলামী রাষ্ট্র গড়েছিলেন এবং ১০ বছর যাবত সে রাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন সে রূপ রাষ্ট্র গড়ার দায়িত্ব প্রতিটি মুসলিমের। নইলে পূর্ণ ইসলাম পালন হয়না। ইসলামও পূর্ণ ভাবে প্রতিষ্ঠা পায়না। এমন রাষ্ট্রের যেমন ইসলামী রাজনীতি ও আইন-আদালত থাকে, তেমনি শিক্ষানীতিও থাকে।  রাষ্ট্রের শিক্ষানীতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির দায়ভারটি স্রেফ নিরক্ষতা দূর নয় শুধু কৃষি, শিল্প, বিজ্ঞান ও ব্যবসাবানিজ্য শেখানো নয় বরং মানুষকে সে কুরআনী রোডম্যাপের সাথে পরিচিত করা দেশের শিক্ষানীতির এটিই মূল দায়ভার। একমাত্র তখনই মানবসৃষ্টির পিছনে মহান আল্লাহতায়ার যে পবিত্র উদ্দেশ্যটি কাজ করে তার সাথে শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ একাত্ম হয় এবং সামর্থ্য পায় তাঁর একনিষ্ঠ বান্দা ও খলিফায় রূপে বাঁচায় নইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ডিগ্রি নিয়ে জীবন কাটায় শয়তানের সেবাদাস রূপে সেটি ঘটে এমনকি ধর্মপালন, দরবেশী রেওয়াজ ও আধ্যাত্মিকতার নামেও জনগণের বিরুদ্ধে এটিই হলো সবচেয়ে বড় নাশকতা সে নাশকতাটি ঘটে স্রেফ কাফির শাসিত অমুসলিম দেশগুলিতে নয়, বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতেও এবং সেটি বেশী বেশী ঘটে শিক্ষাঙ্গণে এবং সরকারের ব্যবস্থাপনায় কারণ, এসব দেশের রাজনীতি, প্রশাসন, আইনআদালত ও শিক্ষাসংস্কৃতির ভূমিও অধিকৃত হয়ে গেছে এমন সব ব্যক্তিবর্গের হাতে যারা নিজেরাই প্রচণ্ড পথভ্রষ্ট এবং অন্যদের পথভ্রষ্ট করাই তাদের মিশন ফলে ফিরাউন ও নমরুদের ন্যায় এদের রাজনীতি ও যুদ্ধবিগ্রহেরও মূল লক্ষ্য হলো, মহান আল্লাহতায়ালাপ্রদত্ত ওহীর আলোকে নিভিয়ে দেয়া এদের কারণেই মানবজাতির বিপর্যয়টি এখন বিশ্বময় পথ দেখানোর দায়িত্ব ছিল যে মুসলিমদের উপর তারাই এখন যুদ্ধে নেমেছে ইসলামের প্রতিষ্ঠা রুখতে এবং সেটি কাফির দের সাথে কোয়ালিশন গড়ে ইসলামের গৌরব কালে এমনটি কখনোই ঘটেনি

 

লালনভূমি অজ্ঞতা ও ব্যর্থতার

জীবনের দীর্ঘ সময় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটিয়েও যারা সিরাতাল মুস্তাকীম চেনা ও সে পথে চলার সামর্থ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়, তাদের শিক্ষাজীবন যে পুরাপুরি ব্যর্থতা নিয়ে কি সন্দেহ করা চলে? এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা জীবনে আর কি হতে পারে? ক্ষতি এখানে হাজার হাজার ট্রিলিয়ন ডলার অর্থ হারানোর নয়। ক্ষতিটি তার চেয়েও বিশাল ও ভয়ংকর সেটি অনন্ত অসীম কালের জন্য জান্নাত হারানোর। তবে বেদনাটি শুধু অতি বিশাল কিছু হারানোর নয়, বরং ভয়ানক কিছু পাওয়ারও। সে প্রাপ্তিটি হলো, অনন্ত কালের জন্য জাহান্নামের লেলিহান আগুনে দগ্ধ হওয়ার। তাই মানব জীবনের চুড়ান্ত সাফল্যটি হলো, শেষদিন অবধি জান্নাতের পথে চলায় ওহীর জ্ঞানে অজ্ঞ ব্যক্তির মূল বিপদটি হলো, জীবনের সবচেয়ে এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিতে সে যে দারুন অজ্ঞসেটিও সে বুঝতে পারে না একজন ব্যক্তির জীবনে এটিই হলো সবচেয়ে বড় অজ্ঞতা সে সাথে ভয়ানক অক্ষমতাও। সে অজ্ঞতা ও অক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি বা ডক্টরেট লাভে দূর হয় না বরং সে অজ্ঞতাকে আরো গভীরতর করা হয় সেক্যুলার শিক্ষাঙ্গণে পথহারা ব্যক্তির ন্যায় এমন অজ্ঞ ব্যক্তির জীবনেও প্রচুর ব্যস্ততা থাকে পেশা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি এবং ক্লান্তিও থাকে কিন্তু সে যে পথহারা সে হুশ তার থাকে না সে বেহুশ অবস্থায় জাহান্নামের পথটিই তার কাছে সঠিক মনে হয় সে বেহুশ অবস্থায় সিরাতাল মুস্তাকীমের পরিচয় লাভে এবং সে পথে চলাতে কোন আগ্রহ তার থাকে না অজ্ঞতাপ্রসূত সে অনাগ্রহের কারণেই কুরআন না বুঝে পড়াটি সওয়াবের কাজ মনে হয় অথচ মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা: তোমাদের জন্য আমি সুস্পষ্ট আয়াত বর্ণনা করেছি এজন্য যে, সেগুলির উপর আক্বলের তথা বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করবে অর্থাৎ তা নিয়ে গভীর গবেষণায় বসবে (সুরা হাদীদ, আয়াত ১৭) অতএব যে কুরআন পাঠে বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ হয়না, তাতে চরম অবাধ্যতা হয় মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের আর তাঁর হুকুমের এরূপ প্রতিটি অবাধ্যতাই তো কবিরা গুনাহ প্রশ্ন হলো, না বুঝে কুরআন পড়ায় কি দূর হয় ওহীর জ্ঞানের সে অজ্ঞতা? শয়তান তো এটিই চায়, মুসলিমগণ বেড়ে উঠুক কুরআনের জ্ঞান ছাড়াই ফলে না বুঝে কুরআন তেলাওয়াতে আনন্দ বাড়ে শয়তানের

বেঈমানগণ কুরআন না বুঝার ভয়ানক বিপদটি বুঝতে সক্ষম হবে জাহান্নামে পৌছার পর তারা তখন কি বলবে সে বর্ণনাটি দিয়েছেন মহাজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালা নিজে তারা বলবে, যদি আমরা (কুরআনের বাণীকে) শুনতাম এবং সেগুলির উপর আক্বল তথা বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করতাম তবে জাহান্নামের লেলিহান আগুনের বাসিন্দা হতাম না (সুরা মুলক, আয়াত ১০) তাই পবিত্র কুরআনে তেলাওয়াতে মূল লক্ষ্যটি হতে হয়, মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর নাযিলকৃত প্রতিটি আয়াতে কি বলেছেন তার উপর গভীর ভাবে মনোনিবেশ করা ও তা থেকে শিক্ষা নেয়া আর শিক্ষা তো তারাই নিতে পারে যারা কিতাবকে বুঝে কুরআন বুঝার বিষয়টি তাই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেটি প্রত্যেক নরনারীর উপর মহান আল্লাহতায়ালা ব্যক্তিকে যে অপরিসীম বুদ্ধিমত্তা দিয়েছেন সেটি কি স্রেফ হিসাবনিকাশ, চাষাবাদ, ব্যবসাবানিজ্য বা বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনে? সে বুদ্ধিমত্তার শ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ তো পবিত্র কুরআন থেকে শিক্ষা লাভে সে শিক্ষালাভের সাথে জড়িত পরকালে জান্নাত লাভ তাই কুরআনের জ্ঞানার্জনে বুদ্ধিমত্তার বিনিয়োগ না হলে প্রচণ্ড খেয়ানত হয় মহান আল্লাহতায়ালাপ্রদত্ত শ্রেষ্ঠ নেয়ামতের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত সে বিদ্যাবুদ্ধি ও সার্টিফিকেট পরকালে কোন কল্যাণই দেয়না।

পবিত্র কুরআন হলো মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে আসা সর্বশেষ হিদায়েতের গ্রন্থ মানুষের সাথে রাব্বুল আলামীনের এটিই হলো একমাত্র যোগসূত্র পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, যারা এই কিতাবকে শক্তভাবে ধরলো তারাই সিরাতাল মুস্তাকীম পেল। সুরা আল ইমরানের ১০১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: মাই ইয়াতিছিম বিল্লাহি ফাকাদ হুদিয়া ইলা সিরাতাল মুস্তাকীম। অর্থ: যারা শক্তভাবে ধরলো আল্লাহকে তারাই সিরাতাল মুস্তাকীমের দিকে হিদায়েত পেল। মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর নিজেকে প্রকাশ করেছেন কুরআনের মাঝে। তাই কুরআনকে ধরার অর্থ মহান আল্লাহতায়ালাকে ধরা। উপরুক্ত আয়াতে বস্তুত সেটিরই সুস্পষ্ট ঘোষণা এসেছে। বিশ্ববাসীর প্রতি তাঁর কি বয়ান -সেটি মানুষের কানে একমাত্র কুরআনই সরাসরি বলে। পবিত্র কুরআনের কারণেই মানুষকে মহান আল্লাহতায়ালার সে পবিত্র বয়ান অন্য কারো থেকে শুনতে হয়না। পৃথিবী পৃষ্টে মহান আল্লাহতায়ালার লক্ষ কোটি সৃষ্টি। কিন্তু সে সৃষ্টিকূলের মাঝে একমাত্র কুরআনই তাঁর প্রতিনিধিত্ব করে। তাই যারা আল্লাহতায়ালাকে পেতে চায় তারা তাঁকে পেতে পারে একমাত্র কুরআনের মাধ্যমে। অথচ কি পরিতাপের বিষয়, বাংলাদেশের মত দেশের অধিকাংশ মানুষ কুরআন বুঝতে অসমর্থ। ফলে তারা অসমর্থ মহান আল্লাহতায়ালা কি বলতে চান -সেটি বুঝতে। ফলে তারা সংযোগহীন হয় মহান আল্লাহতায়ালার সাথে। আর যারা আল্লাহতায়ালার সাথে সংযোগহীন তারা কি কোনরূপ কল্যান পেতে পারে?

 

প্রকল্প শয়তানকে খুশি করা

কুরআনের অন্যত্র নবীজী (সা:)কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, (হে নবী!) শক্ত ভাবে ধরুন যা কিছু আপনার উপর নাযিল করা হয়েছে, নিশ্চয়ই আপনি (এ কিতাবকে আঁকড়ে  ধরার কারণে) সিরাতাল মুস্তাকীমের উপর আছেন। (সুরা যুখরুফ, আয়াত ৪৩)আল্লাহর এ মহান কিতাবকে আঁকড়ে ধরার অর্থ এ কিতাবকে আঁকড়ে ধরে চুমু খাওয়া বা কপালে ঠ্যাকানো নয়, বরং আয়াতগুলিতে বর্ণিত শিক্ষাকে আঁকড়ে ধরা। আর সে জন্য অতি জরুরি হলো সে আয়াতের অর্থ বুঝতে পারা আর এ ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতাটি প্রতিটি ব্যক্তির ইসলামে এটি নামাজ-রোজার ন্যায় ফরজ। কুরআন বুঝার সে কাজটি না হলে ইসলামের মিশনটিই ব্যর্থ হয়ে যায়। পবিত্র কুরআনে মাহে রমজানের রোজার হুকুম এসেছে মাত্র একবার। তাতেই রমজানের রোজা ফরজ হয়ে গেছে। কিন্তু কুরআন বুঝার হুকুম বার বার এসেছে পবিত্র কুরআনে। কিন্তু সে ফরজ পালনে বাঙালি মুসলিমদের সে আগ্রহ কই? অথচ কুরআন বুঝার ফরজ পালন করার গরজে মিশর, ইরাক, সিরিয়া, সুদান, মরক্কো, লিবিয়া, তিউনিসিয়ার ও আলজিরিয়ার ন্যায় দেশের জনগণ মাতৃভাষা পাল্টিয়ে আরবী ভাষাকে গ্রহন করেছে। বুঝতে হবে, এ মহান কিতাবটি নবীজী (সা🙂র উপর অবতীর্ণ হলেও এটি এসেছে প্রত্যেক নর ও নারীকে জান্নাতের পথ দেখাতে তাই নবীজী (সা:), তাঁর সাহাবাগণ ও কিছু আলেম এ কিতাব থেকে শিক্ষা নিলে অন্যদের শিক্ষা নেয়ার দায়ভার তাতে শেষ হয়না অন্যদের তাতে জান্নাতের পথপ্রাপ্তি ঘটে না এ মহান কিতাব থেকে যে কেউ সিরাতাল মুস্তাকীম খুঁজে পেতে পারে কিন্তু তাতে সে ব্যক্তির কি কল্যাণ যে ব্যক্তিটি পবিত্র এ কিতাবটি বুঝতেই অক্ষম?

সঠিক গন্তব্যস্থলে পৌঁছার জন্য শর্ত হলো, সঠিক রাস্তাটি জানা পবিত্র কুরআন তো সেই সঠিক রাস্তার কথাটিই বলে। সেটি হলো সিরাতাল মুস্তাকীম। সে রাস্তা জানতে হলে কুরআন বুঝতে হয়। কিন্তু বুঝার সে কাজটি কি কখনো না বুঝে তেলাওয়াতে হয়? কুরআন বুঝার সে সামর্থ্য না থাকলে তাই ফরজ হলো বুঝার সে সামর্থ্য অর্জনে লেগে যাওয়া জ্ঞানার্জন এজন্যই অতি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ সারা রাত নফল ইবাদতের চেয়ে কিছুক্ষণের জন্য কুরআনের জ্ঞানার্জনকে এজন্যই নবীজী (সা🙂 শ্রেষ্ঠতর বলেছেন কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, নিজেদেরকে যারা মোল্লা, মৌলভী ও আলেম রূপে পরিচয় দেয় তাদেরও অনেকে না বুঝে কুরআন পাঠকে সওয়াবের কাজ বলেন কিন্তু না বুঝে তেলাওয়াতের সওয়াবে যে সিরাতাল মুস্তাকীম খুঁজে বের করার সামর্থ্য সৃষ্টি হচ্ছে না এবং যার ফলে মানুষ পথভ্রষ্ট হয়ে জাহান্নামের পথ ধরছে তা নিয়ে তাদের বেদনা নেই

কুর’আন পাঠের মূল উদ্দেশ্য তো সিরাতাল মুস্তাকীম খুঁজে বের করার সামর্থ্য সৃষ্টি করা। সেটিই তো প্রতিটি মুসলিমের উপর গুরুত্বপূর্ণ ঈমানী দায়ভার। সে সামর্থ্যটি বাড়াতেই নামাজ-রোজার পূর্বে কুর’আনের জ্ঞানার্জন প্রতিটি নরনারীর উপর প্রথম ফরজ করা হয়। সে ফরজ পালনে অনাগ্রহ ও অবহেলা তো জান্নাতের পথ খুঁজে পাওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। তখন সে অনাগ্রহ ও অবহেলায় মৃত্যু ঘটে ঈমানের। তখন মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে পদে পদে বিদ্রোহ হলেও মৃত ঈমানের মানুষটি সেটি বুঝতে পারে না। বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলির রাজনীতি, অর্থনীতি, আইন-আদালত, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও প্রশাসনের সর্বত্র জুড়ে আজ যে এতো বিদ্রোহ, এতো দুর্বৃত্তি ও এতো পাপাচার তার মূল কারণটি তো বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত ঈমান। সেটি ঘটেছে এ কারণে যে, ঈমান পুষ্টি পায়নি পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান থেকে। বাংলাদেশের শিক্ষানীতিতে এটিই হলো সবচেয়ে ভয়ানক ব্যর্থতার দিক। যে শিক্ষা জীবনে চলার পথে সঠিক পথের সন্ধান দেয় না, এবং সেটি জানার সামর্থ্যও বাড়ায় না –সেটি আবার কিসের শিক্ষা? প্রকল্প এখানে শয়তানের এজেন্ডাকে বিজয়ী করা। এমন শিক্ষা ব্যবস্থায় একমাত্র শয়তান ও তার অনুসারীগণই খুশী হতে পারে। যারা বাঁচে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে, তারা কি এ শিক্ষা নীতিকে কখনো মেনে নেয়? মেনে নিলে কি ঈমান থাকে? ১ম সংস্করণ ০১/০৪/২০১৮; ২য় সংস্করণ ২৯/০৭/২০২২।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *