বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অস্তিত্বের সংকট
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 20, 2019
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
স্বাধীনতা যেখানে শত্রুপক্ষের
ব্যক্তির ন্যায় যে কোন জাতির জীবনেও সবচেয়ে বড় ভাবনাটি হলো স্বাধীনতা ও অস্তিত্বের ভাবনা। তবে নিছক বাঁচা এবং স্বাধীন ভাবে বাঁচার মাঝে পার্থক্যটি বিশাল। জাতীয় জীবনে অতি ব্যয়বহুল হলো স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচা। বহু দেশের জনবল ও অর্থবলের বিপুল ভাগ ব্যয় হয় স্রেফ স্বাধীনতা বাঁচাতে। স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচার তাগিদে পাকিস্তানকে ভারতের সাথে পাল্লা দিয়ে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পারমানবিক বোমা বানাতে হয়েছে। গড়ে তুলতে হয়েছে দূর-পাল্লার শত শত মিজাইল। পালতে হচ্ছে বিশাল সেনাবাহিনী। দেশী কারখানায় বানাতে হয়েছে যুদ্ধ বিমান ও ট্যাংক। দেশটির রাজস্বের অর্ধেক খরচ হয় ইজ্জত ও স্বাধীনতা বাচাতে। অথচ গোলাম রূপে বাঁচাতে তেমন খরচ নাই। কারণ, গোলামের জীবনে ইজ্জত ও স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচার ভাবনা থাকে না। রাজনৈতীক স্বপ্ন থাকে না। ফলে তাদের কোন শত্রুও থাকে না। এদিক দিয়ে বাংলাদেশের খরচটি কম। কারণ, বাংলাদেশীদের স্বাধীনতার দাবীটি ক্ষুদ্র ও সীমিত। মানব রপ্তানি, পোষাক তৈরী, চিংড়ি উৎপাদনের স্বাধীনতাটুকু থাকলেই চলে। দেশের ভিতর দিয়ে ভারত করিরডোর নিল, পদ্মা ও তিস্তার পানি তুলে নিল, সীমান্তে পক্ষি শিকারের বাঙলাদেশীদের শিকার করলো –এসব বাংলাদেশীদের কাছে স্বাধীনতার বিষয় নয়। ভারত বাংলাদেশকে নিজ খরচে ও নিজে যুদ্ধ করে জন্ম দিয়েছে; ফলে এরূপ সীমিত স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচাটি জন্ম থেকেই ভারতের প্রতি দায়বন্ধতা। ভারতের প্রতি এরূপ অধীনতা নিয়ে বাঁচতে পারমানবিক বোমা, মিজাইল, বিশাল সেনাবাহিনীর প্রয়োজন পড়ে না। শক্তিশালী সেনাবাহিনী লাগে না। সেনা বাহিনী তো লাগে ভারতের প্রতি যারা নতজানু তাদের পাহারা দিতে; দেশের স্বাধীনতা বা দেশবাসীকে পাহারা দিতে নয়। অর্পিত সে দায়িত্ব পালনে সেনাবাহিনীর কতটা সজাগ সেটি দেখা যায় ২০১৩ সালের ৫ই মে শাপলা চত্ত্বরে। সাত হাজারের বেশী সেপাই সেদিন হাতিয়ার নিয়ে হাজির হয়েছিল শত শত মুসল্লি হত্যা করেছিল। কারণ, মুসল্লিগণ সেখানে হাজির হয়েছিল ভারতসেবী হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে।
গোলামের জীবনে রাজনীতি থাকে না। যুদ্ধও থাকে না। জীবনে রাজনীতি আসে, রাজনীতির সাথে লাগাতর লড়াই আসে তো স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচার তাগিদে। লড়াইটি আসে ভিশন তথা রাজনৈতিক স্বপ্ন পূরণের আগ্রহ থেকে। এমন লড়াই ভারতসেবী সেক্যুলার বাঙালীদের জীবনে থাকার কথা নয়। কিন্তু সে লড়াই অনিবার্য হয় উঠে মুসলিমের জীবনে। কারণ মুসলিমকে বাঁচতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার ভিশনের সাথে একাত্ব হয়ে। মহান আল্লাহর সে ভিশনটি একাধিক বার বর্নিত হয়েছে পবিত্র কোরআনে। সেটি হলো “লি’ইউযহিরাহুদ্দিনে কুল্লিহী” অর্থাৎ সকল ধর্মের উপর ইসলামের বিজয়। যে কোন লড়াইয়ে বিজয় আসে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে। তবে মুসলমান হওয়ার অর্থ হলো, মহান আল্লাহতায়ালার এ ভিশন পূরণে আপোষহীন হওয়া। এমন একটি ভিশনই মু’মিনকে আমৃত্যু মিশনারি করে; সে সাথে লড়াকু করে। মুসলিম জীবনে স্বাধীনতাটি বাঙালী,বিহারী, ইরানী বা আরব রূপে বাঁচার স্বাধীনতা নয়,কোন পতাকা বা মানচিত্র নিয়ে বাঁচার স্বাধীনতাও নয়। ভাষা ও জন্মভূমির পরিচয় নিয়ে বাঁচাটি স্বাধীনতা হলে নবীজী (সাঃ)কে কেন মক্কার জন্মগত নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও মক্কা ছাড়তে হলো? মক্কার বাইরের আনসারদের নিয়ে কেন তিনি মক্কাবাসীদের বিরুদ্ধে লড়লেন এবং হত্যা করলেন বহু মক্কাবাসীকে? মুসলমানের স্বাধীনতা হলো মহান আল্লাহর নির্দেশিত ভিশন ও মিশন নিয়ে বাঁচার স্বাধীনতা। সেটি রাষ্ট্রে ও সমাজে ইসলামের শিক্ষা ও শরিয়তি বিধান নিয়ে জীবন-যাপন ও রাষ্ট্র পরিচালনার স্বাধীনতা। কোন রাষ্ট্রে ইসলাম পালনের সে স্বাধীনতা কতটা অরক্ষিত বা পদদলীত হলো তার উপর বিচার হয় সে দেশের প্রকৃত স্বাধীনতা। পৃথক পতাকা,পৃথক মানচিত্র এবং স্বাধীনতার গালভরা বুলি এ বিচারে গুরুত্বহীন। পৃথিবীতের এমন পতাকা, এমন মানচিত্র এবং স্বাধীনতার এমন গালভরা বুলি বহু পরাধীন দাস-রাষ্ট্রেরও আছে। এদিক দিয়ে বলা যায়,বাংলাদেশে লুন্ঠিত হয়েছে মুসলমানদের স্বাধীনতা। বরং দেশটিতে লাগামহীন স্বাধীনতা পেয়েছে ইসলামের শত্রুপক্ষ। তাদের সে স্বাধীনতাটি হলো, বাংলাদেশের মাটিতে ইসলামকে পরাজিত রাখার স্বাধীনতা। ইসলামের শত্রুপক্ষ কাফেরগণ অনুরূপ স্বাধীনতা পেয়েছিল মক্কাতে। ইসলামের শত্রুপক্ষ তেমন স্বাধীনতা উদযাপিত করছে বাংলাদেশেও, সেটি দাড়ি-টুপিধারিদের লগিবৈঠা দিয়ে পিটিয়ে হত্যার মধ্য দিয়ে। ইসলামবিনাশী সে স্বাধীনতার প্রয়োগ হচ্ছে কোরআনের তাফসির বন্ধ, জিহাদ বিষয়ক বই বাজেয়াপ্ত এবং ইসলামপন্থিদের হত্যা ও তাদের উপর জুলুম নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে।
মক্কায় জন্ম নিয়েও নবীজী (সাঃ), হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত উমর (রাঃ)র ন্যায় সাহাবীগণ নিজ জন্মভূমিতে ছিলেন পরাধীন। কাফেরগণ তাদেরকে ধর্মপ্রচার ও ধর্মপালনের স্বাধীনতা দূরে থাক জীবনে বেঁচে থাকার স্বাধীনতা দিতেও রাজী ছিল না। মক্কার কাফেরদের কাছে স্বাধীনতার অর্থ ছিল মৃর্তিপুজার স্বাধীনতা, এবং সে সাথে মুর্তিপুজার বিরোধীদের নির্মূলের স্বাধীনতা। কাফেরদের সে স্বাধীনতা উদযাপিত হতো হযরত বেলালের মত ব্যক্তিদের জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর শুইয়ে। এবং হযরত ইয়াসির ও হযরত সুমাইয়ার মত নিরপরাধ ঈমানদারদের হত্যার মধ্যদিয়ে। ইসলামের শত্রুপক্ষের কাছে যা ছিল স্বাধীনতা সেটিই মুসলমানদের কাছে ছিল পরাধীনতা। এ পরাধীনতা থেকে বাঁচার তাগিদেই নবীজী (সাঃ)র ন্যায় শান্তিবাদী ব্যক্তিও যুদ্ধ এড়াতে পারেননি। সে যুদ্ধ ছিল শত্রুপক্ষের আরোপিত যুদ্ধ,এবং যুদ্ধের মধ্য দিয়ে কাফেরগণ মুসলমানদের অস্তিত্ব বিলীন করতে চেয়েছিল। অথচ ঈমানদারের কাছে স্বাধীনতার অর্থ হলো স্রেফ জীবন-ধারণ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাধীনতা নয় বরং আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন-পালন ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার স্বাধীনতা। সে স্বাধীনতা বাঁচাতে নবীজী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামকে আমৃত্যু লড়তে হয়েছে। শতকরা ৭০ ভাগের বেশী সাহাবাকে শহীদ হতে হয়েছে। স্বাধীনতা বাঁচানোর এ লড়াইটিই হলো পবিত্র জিহাদ। মুসলিমদের কাছে স্বাধীনতার এছাড়া ভিন্নতর কোন অর্থ নেই। ইসলামের শত্রুপক্ষের সাথে ঈমানদারের ভিন্নতা শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস ও ধর্মপালন নিয়ে নয়,বরং স্বাধীনতার অর্থ এবং এজেন্ডা নিয়েও।
প্রকল্প মেরুদন্ডহীন করায়
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনার সাথে সাথে ঈমানদারের জীবনে ইসলামকে বিজয়ী করার স্বপ্নটিও অনিবার্য হয়ে উঠে। ফলে রাজনীতিও আসে। অথচ ভিক্ষুকের বাঁচার মাঝে কোন রাজনৈতিক স্বপ্ন বা ভিশন থাকে না,ফলে তার শত্রু-মিত্রও থাকে না। এজন্যই ভিক্ষুকের জীবনে রাজনীতি নেই, এবং যুদ্ধ-বিগ্রহও নেই। ফলে যুদ্ধবিগ্রহ ও রাজনৈতিক সংঘাতে ভিক্ষুকের মৃত্যু হয় না। পৃথিবীতে মেরুদ্ন্ডহীন বহু জাতি ও উপজাতি বহু হাজার বছর বেঁচে আছে কোন রূপ যুদ্ধ-বিগ্রহে না জড়িয়ে। দেশী বা বিদেশী শত্রুর সাথে বিবাদ বা সংঘাত শুরু হয় তো স্বাধীন ভাবে বাঁচার ইস্যুতে। স্বাধীন ও স্বনির্ভর ভাবে বাঁচাটি যেমন পঙ্গু ও বিকলাঙ্গ মানুষের দ্বারা ঘটে না,তেমনি স্বাধীনতা আসে না মেরুদন্ডহীন দুর্বল জাতির জীবনে। ইসলামের শত্রুপক্ষ এজন্যই বাংলাদেশকে মেরুদন্ডহীন ভিক্ষুকের জাতিতে পরিনত করতে চায়। মুজিব-আমলে মেরুদন্ড ভাঙ্গার সে কাজটিই প্রয়োরিটি পেয়েছিল। ভারতীয় লুন্ঠন এজন্যই ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছিল। ফলে শায়েস্তা খানের বাংলা রাতারাতি “ভিক্ষার ঝুলি”তে পরিনত হয়েছিল। ফলে ১৯৭৪ সালে পরিকল্পিত ভাবে নামিয়ে আনা হয় এক ভয়ানক দুর্ভিক্ষ, যাতে প্রাণ যায় বহু লক্ষ বাংলাদেশীর।
যে অরণ্যে হিংস্র পশুর বাস তার আশোপাশে বসবাসে জীবন হারানোর ঝুঁকিটি প্রতি মুহুর্তের। সেখানে বাঁচতে হলে সর্বক্ষণের প্রস্তুতি চাই।তেমনি প্রতিমুহুর্তে স্বাধীনতা হারানোর ঝুঁকি নিয়ে বাঁচতে হয় আগ্রাসী প্রতিবেশী দেশের পাশে। বাংলাদেশের সমান প্রায় জনসংখ্যা পাকিস্তানের। স্বাধীনতার বাঁচাতে সে দেশটিকে জাতীয় বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় হয় বিশাল সেনা বাহিনী পালতে।বিপুল অর্থব্যয়ে দেশটিকে পারামানবিক বোমা ও দুরপাল্লার মিজাইলও বানাতে হয়েছে। লাভটি হয়েছে এই,সেদেশের নাগরিকদের ভারতীয় সেনাদের গুলিতে লাশ হয়ে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলতে হয় না। নিজদেশের সেনানিবাসে লাশ হয় না সে দেশের সেনাবাহিনীর অফিসারগণ –যেমনটি ঢাকার পিলখানায় হয়েছে ৫৭ জন অফিসার। দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে কোন মন্দিরে গিয়ে মুর্তিকে মা-দুর্গ বলে পৌত্তলিক হতে হয় না। ইসলামী দলের কোন নেতাকে পায়ে দন্ডবেরী লাগিয়ে হাজাতে উঠানো হয় না। শক্তিশালী সেনাবাহিনীর থাকার আরো ফায়দা হলো,নিজ দেশের ভিতর দিয়ে প্রতিবেশী দেশকে করিডোরও দিতে হয় না। নিছক প্রাণে বাঁচাটি কোন দেশেই ব্যয়বহুল নয়। নর্দমার কীট বা গর্তের ইদুরটি যেমন দীর্ঘদিন প্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকে,তেমনি গৃহহীন কাপালিক বা নদীতে ভাসা বেদেনীরাও বহু বছর বেঁচে থাকে। এরূপ বাঁচায় যেমন বিপুল অর্থব্যয় ও সংঘাত যেমন নেই,তেমনি আত্মসম্মানও নেই। এমন আত্মসম্মানহীন ব্যক্তিদের কাছে শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলা বরং অপচয় মনে হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় শত্রু হলো এমন চেতনাধারীরা।এরাই বাংলাদেশকে প্রতিরক্ষাহীন করছে।
লক্ষ্যঃ দালাল প্রতিপালন
আগ্রাসী শক্তির দেশদখল প্রকল্পটি শুধু সামরিক ভাবে হয় না। হয় রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবেও। বরং সামরিক দখলদারি হয় সেরূপ বহুমাত্রিক দখলদারিকে সুনিশ্চিত করতে। সামরিক ভাবে দেশ দখল অনেক সময় তাদের কাছে প্রচণ্ড ব্যয়বহুল মনে হয়।এরই ফলে বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগও বেড়েছে। বেড়েছে ইসলামের অন্যান্য শত্রু পক্ষেরও। তবে সেটি শিল্পে বা অর্থনীতিতে নয়, বরং মনুষ্য বাজারে। এরই ফল দাড়িয়েছে,বাংলাদেশের হাটেবাজারে শুধু গরুছাগলই বিক্রি হয় না, বিপুল হারে মানুষও বিক্রি হয়। এনজিও পাড়ায়, বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় এবং টিভিতে ভারতপন্থি ও ইসলামবিরোধীদের প্রবল আধিপত্য কি সেটাই প্রমাণ করেনা? বিক্রিত এ বিপুল সংখ্যক মনুষ্যজীবই ফারাক্কা ও টিপাইমুখ বাঁধের মধ্যে বাংলাদেশের কল্যাণ দেখে, এমন কি কল্যাণ দেখে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের জন্য করিডোর দানে। সে সাথে মহা-অকল্যাণ দেখে ইসলামের উত্থানে। ফলে এ মুহুর্তে বাংলাদেশের সীমান্তে কোন ভারতীয় সামরিক হামলার প্রয়োজন আছে কি? ভারতের পক্ষ নিয়ে এসব বিক্রিত বাংলাদেশীরাই প্রচণ্ড বিক্রমে লড়াই করে যাচ্ছে।
লন্ডনের ইকোনমিষ্ট পত্রিকা প্রকাশ করেছে,গত ২০০৮সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা ও তাঁর দলকে বিজয়ী করতে ভারত সরকার বস্তা বস্তা টাকা বিতরণ করেছে। ভারত যে শুধু ২০০৮ সালে বিতরণ করেছে তা নয়,১৯৫৪, ১৯৭০ এর নির্বাচনেও করেছে। যদি না করে থাকে তবে বুঝতে হবে ভারত সরকার ও তার গোয়েন্দারা ঘাষ খায়। ভারত এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র-ক্রেতা। ভারতের লক্ষ্য,সিঙ্গাপুর থেকে সোমালিয়া ব্যাপী সমগ্র ভারত মহাসাগর জুড়ে সামরিক আধিপত্য গড়ে তোলা। ভারতের পেটের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। পেটে বেদনা রেখে সেটি সম্ভব নয়। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ময়দান দখল নিতে ভারত অর্থব্যয় করবে না -সেটি বুঝা কি এতই কঠিন? কাশ্মিরে ভারত ৫ লাখেরও বেশী সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছে দীর্ঘকাল যাবত। যে কোন সরকারের কাছে এটি খুবই ব্যয়বহুল। এরূপ আরো কিছুকাল চলতে থাকেলে ভারতের অর্থনীতি দুর্বল হতে বাধ্য। সে তুলনায় বাংলাদেশে ৫ লাখ বা ১০ লাখ এজেন্ট প্রতিপালন করা তাদের কাছে নস্যিতুল্য। পশ্চিম বাংলা ও আসামে পুলিশ প্রতিপালনেও এর চেয়ে বেশী ব্যয় হয়। কাশ্মিরের জনসংখ্যা মাত্র এক কোটি,অথচ বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি। পশ্চিম বাংলা, আসাম, বিহার ও উড়িষ্যার সম্মিলিত বাজারের চেয়েও বৃহৎ হলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাজার। আফগানিস্তান বা ইরাকে একজন মার্কিন সৈন্য রণাঙ্গণে রাখতে বছরে ১ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। এ ব্যয়ভার পঙ্গুত্ব আনছে মার্কিন অর্থনীতিতে। যে কোন সামরিক হামলার চেয়ে দালাল প্রতিপালন এদিক দিয়ে অনেক কম ব্যয়বহুল। ভারত সেটি বুঝে। তাই বাংলাদেশে ভারত মনযোগী হয়েছে দালাল প্রতিপালনে। তাদের সে স্ট্রাটেজী বিপুল ফলও দিচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতপন্থি শিবির তাই এখন আর শুধু আওয়ামী লীগ নয়,বহু সাবেক চীনপন্থি,রুশপন্থি,মার্কিনপন্থি এবং ইসলামপন্থিও এখন এ শিবিরে যোগ দিয়েছে।বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিরুদ্ধে মূল হামলাটি আসছে তাদের পক্ষ থেকেই।
অধিকৃত দেশ
কাশ্মির অধিকৃত সামরিক ভাবে। কারণ এছাড়া ভারতের হাতে দ্বিতীয় রাস্তা নেই। সেখান থেকে ৫ লাখ ভারতীয় সৈন্য অপসারণের সাথে সাথে বাংলাদেশের চেয়েও বৃহৎ এলাকাটি পাকিস্তানে যোগ দিবে সেটি ভারত জানে। ভারতীয় অস্ত্র কাঁধে নিয়ে ভারতের পক্ষে যুদ্ধ করার লোক সেখানে নেই। মন্দিরে গিয়ে দুর্গাকে মা বলার মত মুসলিম নেতা-নেত্রীও নাই। ফলে সে যুদ্ধটি ভারতীয় হিন্দুদের নিজেদেরই লড়তে হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে ভারতীয় অস্ত্র কাঁধে নিয়ে তাদের পক্ষে যুদ্ধ করার লোকের সংখ্যা একাত্তরেও যেমন হাজার হাজার ছিল,এখনও কম নয়। এদেশটি মিরজাফর উৎপাদনে যে অতি উর্বর সেটি শুধু ১৭৫৭ সালে ও ১৯৭১য়েই প্রমাণিত হয়নি। এখনও হচ্ছে। ভারতের পক্ষে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্রই একমাত্র ষড়যন্ত্র নয়। দেশের সরকার,প্রশাসন ও সামরিক বাহিনী মূলত এসব ষড়যন্ত্রকারিদেরই দখলে। ফলে ভারতের হাতে বাংলাদেশ অধিকৃত রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে। ফলে সামরিক দখলদারি ভারতের জন্য শুধু বিপুল ব্যয়ভারই বাড়াবে, বাড়তি কোন সুবিধা দেবে না। এরূপ রাজনৈতিক দখলদারির লক্ষ্যে ভারত কাজ করছে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রথম দিন থেকেই। ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার গোপন তথ্য ইদানিং প্রকাশ পাচ্ছে। সাবেক গুপ্তচরদের পক্ষ থেকে এখন সেগুলো প্রকাশ করার লক্ষ্য হলো,নিজ দেশের নিরাপত্তা নিয়ে পাকিস্তান সরকার কতটা অনাড়ি ছিল এবং ভারতীয় গুপ্তচরগণ কতটা চৌকশ ছিল সেটি প্রমাণ করা। প্রকাশ পাচ্ছে, ভারত কিভাবে হাজার হাজার এজেন্ট পূর্ব পাকিস্তানে পাঠিয়েছিল সে তথ্যটি। সেটি শুধু ষাটের দশকে বা একাত্তরে নয়,বরং পঞ্চাশের দশক থেকেই। শেখ মুজিব নিজে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার সাথে কতটা সম্পৃক্ত ছিল সেটিও এখন প্রকাশ পাচ্ছে।
প্রকল্প ধীরে ধীরে গ্রাস করার
১৯৭১ সালে ফনিভূষন মজুমদার,চিত্তরঞ্জন সুতারের মত আওয়ামী লীগ নেতৃবর্গ ভারত সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে ভারত ভূক্ত করার। কিন্তু তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি সে পথে যাননি। অজগর একটি ইঁদুরকে একগ্রাসে গিলতে পারে। কিন্তু জীবটি বড় হলে পারে না। গ্রাসের আগে প্রথমে ক্ষুদ্রতর করা বৃহৎ শক্তির কাছে তাই একটি স্ট্রাটেজী। সে স্ট্রাটেজী নিয়েই ভারত সিকিম, মানভাদর বা নিজামের হায়দারাবাদকে গিলে ফেলেছিল। হয়ত ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানভূক্ত না হলে স্বাধীন পূর্ববঙ্গ তেমনটিই হত। কিন্তু একাত্তরের পূর্ব পাকিস্তান সিকিম,মানভাদর বা নিজামের হায়দারাবাদ ছিল না। স্বাধীন পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশে রূপে ইতিমধ্যেই পূর্ব পাকিস্তান অনেক এগিয়ে গিয়েছিল। ভারতের প্রায় ১০ কোটি পরাধীন মুসলমান ১৯৪৭ য়ের পর থেকে ১৯৭১ অবধি যে সংখ্যক রাজনৈতিক নেতাকর্মী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সামরিক অফিসার, ছাত্র-শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, আইনবিদ ও বিজ্ঞানীর জন্ম দিয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাতকোটি মুসলমান সে সময় কালে কমপক্ষে তার চেয়ে ১০ গুণ বেশী জন্ম দিয়েছে। ভারতে মুসলমানদের সংখ্যা শতকরা ১৫ ভাগ হলে কি হবে প্রশাসনে তারা শতকরা ২ ভাগও নয়। ব্রিটিশ ভারতে মুসলমানদের সুবিধা ছিল ভারত সরকার সে সুযোগ দিতেও রাজী নয়। অপরদিকে পাকিস্তান সৃষ্টিতে বাঙালী মুসলমানদের জীবনে নতুন জোয়ার শুরু হয়। বাংলায় প্রায় সাড়ে সাত শত বছরের মুসলিম ইতিহাসে ২৩ বছরের পাকিস্তানী যুগটিই ছিল সবচেয়ে দ্রুত এগুনোর দিন। একাত্তরে এসে পূর্ব পাকিস্তান তাই একগ্রাসে গেলার মত ইঁদুর ছিল না। ফলে অজগরের স্ট্রাটেজীর বদলে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের স্ট্রাটেজী হয় বাঘের স্ট্রাটেজী। গরু বা মহিষকে বাঘ এক গ্রাসে গিলতে পারে না,কিন্তু শক্তিহীন করার পর সেটিকে আস্তে আস্তে চিবিয়ে খায়। একাত্তরে ভারতের সামর্থ ছিল না পরাজিত পাকিস্তানকে মুখে পুরার,তাই চেয়েছে আস্তে আস্তে পেটে পুরতে। সেটি ধীরে ধীরে শক্তিহীন করার মধ্য দিয়ে। শক্তিহীন করার লক্ষ্যেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অবব্যহৃত বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে পৌছতে দেয়নি। ধ্বংস করেছে বাংলাদেশের শিল্প এবং অর্থনীতি। দখলে নিয়েছে বাংলাদেশের বাজার। লুন্ঠনের মধ্য দিয়ে উপহার দিয়েছে ১৯৭৪য়ের দুর্ভিক্ষ। এভাবে শক্তিহীন করার পর ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশের বেরুবাড়ী। ভারতভূক্ত করেছে বঙ্গপোসাগরে জেগে উঠা তালপট্টি দ্বীপ। সে স্ট্রাটেজীর অংশ হিসাবেই হাত দিয়েছে অবশিষ্ঠ পাকিস্তানেও। গোলযোগ সৃষ্টি করেছে পাকিস্তানের সিন্ধু ও বেলুচিস্তানে। পারমানবিক বোমা, দূরপাল্লার মিজাইল ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনী না থাকলে পাকিস্তানকে ইতিমধ্যে ভারত আরো চার টুকরো করে ফেলতো।
আগ্রাসী শত্রুদেশের স্ট্রাটেজী শুধু সামরিক দখলদারি নয়। এরা মানচিত্রে যেমন হাত দেয়, তেমনি শিক্ষা-সংস্কৃতি,ধর্ম-কর্ম,অর্থনীতি-রাজনীতিতেও হস্তক্ষেপ করে। একে বলা যায় সাংস্কৃতিক,রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ইঞ্জিনীয়ারিং। এমন এক আগ্রাসী মনোভাবের কারণেই বহু দেশের মানচিত্র নির্ধারণে সেসব দেশের জনগণের মতামত গুরুত্ব পায়নি। সাম্রাজ্যবাদীরা সেটি ঠিক করেছে স্রেফ নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার স্বার্থে। বিশাল মানচিত্র থেকে একটি দেশ প্রবল শক্তি পায়। তাই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আরবে মসজিদ-মাদ্রাসা ভাঙ্গেনি,ভেঙ্গেছে মানচিত্র। মসজিদ-মাদ্রাসা কয়েকজন ব্যক্তিই গড়তে পারে। কিন্তু মানচিত্রের এক ইঞ্চি ভূমি বাড়াতে প্রকাণ্ড যুদ্ধ লড়তে হয়। মুসলমানদের বহু রক্তে গড়া বহুশত বছরের সে মানচিত্র চূর্ণ করেছে শত্রুরা। খণ্ডিত মানচিত্রের ন্যায় দেশগুলির শাসক,শাসনতন্ত্র,শিক্ষাব্যবস্থা এবং আইন –কানূনও ঠিক করে দিয়েছে তারা। লক্ষ্য, এসব রাষ্ট্রে প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় নীতির উপর নিয়ন্ত্রন রাখা। একই লক্ষ্যে বাংলাদেশে শাসনতন্ত্র আমদানি হয়েছিল দিল্লি থেকে। সে শাসনতন্ত্রে নিষিদ্ধ হয়েছিল ইসলাম প্রতিষ্টা ও ইসলামি মূল্যবোধের রাজনীতি। আরব বিশ্বে বিদেশী এ শত্রুরা যে ২২টি রাষ্ট্রের জন্ম নিয়েছে তার কোনটিও কি আরব জনগণের ভোটে সৃষ্টি হয়েছে? সৌদি আরব,জর্দান,মরক্কো,ওমান,কাতার,কুয়েত,বাহরাইন,দুবাই, আবু-ধাবিসহ বহু আরব দেশে চাপিয়ে দিয়েছে রাজতন্ত্র। সেটিও কি জনগণের ভোটে হয়েছে? এসব রাজারা রাজ্য জয় করে রাজা হয়নি। রাজ্য জয় করেছে অন্যরা, তারা রাজা হয়েছে ২২ টুকরায় বিভক্ত সে খন্ডিত মানচিত্র পাহারা দেয়ার দায়ভার নিয়ে। আর এদের পাহারা দেয় সাম্রাজ্যবাদী আসল রাজারা। তাই কুয়েতে হামলা হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল পশ্চিমা বিশ্ব ছুটে আসে। অথচ ফিলিস্তিনী নারী-শিশুরা ইসরাইলী হামলায় যখন নিহত হয় তখন তাদের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ দূরে থাক নিন্দাবাদও ধ্বনিত হয় না। একাত্তরে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর তেমনি একটি অনুগত পক্ষকে ভারত ক্ষমতায় বসায়,এবং একমাত্র সে পক্ষটিকেই লাগাতর ক্ষমতায় দেখতে চায়।একাত্তরে যে লক্ষ্যে নির্বাচন হয়েছিল সেটি ভারতের কাছে তখন গৌণ হয়ে দাঁড়ায়। অথচ ১৯৭০য়ের নির্বাচন পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশের সৃষ্টির পক্ষে রিফারেন্ডাম ছিল না। সে নির্বাচনটি বাংলাদেশের শাসক নির্ধারণের লক্ষ্যে যেমন হয়নি, তেমনি ভারতের সাথে ২৫ সালা দাসচুক্তি সাক্ষরের লক্ষ্যেও হয়নি।
শৃঙ্খলিত স্বাধীনতা
বাংলাদেশের সমস্যা ও সীমাহীন সংকটগুলো বুঝতে হলে দেশটিকে ঘিরে আগ্রাসী ভারতীয় হিন্দুদের সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনাটি বুঝতে হবে। সেটি যে ১৯৭১য়ে শুরু হয়েছিল তা নয়।১৯৪৭য়ে শুরু হয়েছিল তাও নয়। বরং বহু পূর্ব থেকে। সেটির শুরু ১২০২ সালে মুসলমানদের হাতে বাংলা বিজয়ের পরপরই। মুসলমানদের কাছে এটি ইসলামের বিজয় রূপে গৃহিত হলে ভারতীয়দের কাছে সেটি গণ্য হয় মুসলিম আগ্রাসন রূপে। এ কথাটি চুপিসারে না বলে তারা অতি জোরে সোরেই বলে। এখন সে ভূমি তারা ভারত মাতার বুকে ফেরত চায়। ১৯৪৭ সালে বাংলা ভেঙ্গে পূর্ববঙ্গ বেড়িয়ে যায় এবং পাকিস্তানভূক্ত হয় তাদের ইচ্ছার বিপরীতে। বাংলাদেশ আজও টিকে আছে তাদের সেটিও তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানকে ভারত স্বাধীন দেশ রূপে প্রকাশ্যে স্বীকৃতি দিয়েছিল বটে,কিন্তু সেটি মন থেকে নয়। ভারতের আগ্রাসী সে মানসিকতা যেমন জনাব খাজা নাযিমুদ্দীন ও জনাব নুরুল আমীল যেমন বুঝতেন,তেমনি জনাব সহরোয়ার্দীও বুঝতেন। বুঝতেন তৎকালীন বাংলার মুসলিম জনগণ। ১৯৪৬ সালে সহরোয়ার্দী ছিলেন বাংলার প্রধানমন্ত্রী। তিনিই ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের পার্লামেন্টারী দলের দিল্লি সম্মেলনে ১৯৪০ সালে গৃহীত লাহোর প্রস্তাবে সংশোধনী এনে পূর্ব বাংলার পাকিস্তান ভূক্তির প্রস্তাব আনেন। বাংলার সমগ্র মুসলিম ইতিহাসে ১৯৪৬ সালের সে সিদ্ধান্তটিই ছিল ১২০২ সালে বাংলায় মুসলিম বিজয়ের পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সে সিদ্ধান্তের মধ্যে ছিল দূরদৃষ্টি,ছিল স্টেটসম্যান শিপ। কিন্তু মুসলিম নামধারি বাঙালী জাতীয়তাবাদী কাপালিকগণ একাত্তরে সেরূপ দূরদৃষ্টি ও প্রজ্ঞা দেখাতে পারেননি। যাদের সর্বোচ্চ যোগ্যতা শত্রুর সেবাদাস হওয়ায় তাদের থেকে সেরূপ প্রজ্ঞা কি আশা করা যায়? তারা বরং সৈনিকে পরিনত হয়েছে ভারতীয় প্রজেক্ট সফল করায়। তাদের কথা,১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ভূক্ত না হলে তখনই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হতো। ইতিহাস থেকে এরা কোন শিক্ষাই নেয়নি। তারা দেখে না,ভারতীয় আগ্রাসনের মুখে শেখ আব্দুল্লাহর স্বাধীন কাশ্মীরের স্বপ্ন যেমন টিকেনি,তেমনি বাঁচেনি হায়দারাবাদের নিজামের স্বাধীন দাক্ষিনাত্য। তেমনি বাঁচতো না ১৯৪৭য়ের স্বাধীন পূর্ববঙ্গ।
১৯৭১ ভারত বাংলাদেশের স্বীকৃতি দিলেও সেটি তাদের মনের স্বীকৃতি নয়। এমন স্বীকৃতি তারা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানকেও দিয়েছিল। একাত্তরের বিজয়ের মধ্য দিয়ে হিন্দুগণ বরং মুসলমানদের বিরুদ্ধে হাজার বছরের প্রতিশোধ নিয়েছে। ভারতীয় নেতারা সেটি গোপন রাখেনি। সে প্রতিশোধ শুধু ভারত ভেঙ্গে ১৯৪৭য়ে পাকিস্তান সৃষ্টির নয়। সেটি যেমন ইখতিয়ার মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির হাতে ১২০২ সালে মুসলমানদের বঙ্গ বিজয়ের প্রতিশোধ, তেমনি মুহাম্মদ ঘুরির হাতে দিল্লি বিজয়ের। তাছাড়া বাংলার মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের যে ক্ষোভ সেটি কি অন্য কোন প্রদেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে ছিল? কাযেদে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ তাঁর নিজ প্রদেশ গুজরাতে পা জমাতে পারেননি। পাঞ্জাবে এবং সিন্ধুতেও পারেননি। কিন্তু পেরেছিলেন বাংলায়। একমাত্র বাংলাতেই ছিল তার দলের সরকার। সে সরকারের প্রধানই লাহোরে পাকিস্তান প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। তাছাড়া তাঁর সে দলটির জন্মও হয়েছিল ঢাকাতে। মুসলিম লীগের রাজনীতি বাংলায় সফল হওয়ার কারণেই সেটি পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্ত প্রদেশে গ্রহনযোগ্যতা পায়।
তাছাড়া বাংলাদেশের প্রতি ভারতের কীরূপ নীতি সেটি কি এখনও গোপন বিষয়? ভারত আসলে কি চায় সেটি তাজুদ্দিনের সাথে ৭ দফা চুক্তি এবং শেখ মুজিবের সাথে ২৫ সালা চুক্তিতে কি প্রকাশ পায়নি? ফারাক্কা বাঁধ,টিপাই মুখ বাঁধ,সীমান্ত জুড়ে কাঁটা তারের বেড়া,সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা,বাংলাদেশের সাথে অসম বাণিজ্য, তিন বিঘা ভূমি হস্তান্তরে গড়িমসি –এগুলি কি প্রমাণ করে? বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্ব? ভারতের পূর্ব সীমান্তে শক্তিশালী বাংলাদেশ নির্মিত হলে ভারতের বিপদ বাড়বে সেটি ভারতীয় শিশুরাও বুঝে। ভারত চায় পঙ্গু ও শক্তিহীন বাংলাদেশ। চায় ভারতের প্রতি শর্তহীন আনুগত্য। তাই এরশাদের শাসনামলে চীন থেকে কয়েক খানি মিগ কেনায় প্রচণ্ড বিরোধীতা হয়েছিল ভারতের পক্ষ থেকে। সে সময় “ইন্ডিয়া টুডে” বিশাল ফিচার লিখে অভিযোগ এনেছিল,“বাংলাদেশ কি এ যুদ্ধবিমান কিনে ভারতে হামলা করতে চায়?” বাংলাদেশের সেনাবাহিনী পুলিশের চেয়ে বেশী শক্তিশালী হোক সেটি ভারতের কাম্য নয়। তেমন একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সামনে রেখেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফেলে যাওয়া বহু হাজার কোটি টাকার অস্ত্র বাংলাদেশ আর্মির হাতে পৌছতে দেয়নি। অথচ সে অস্ত্র কেনায় পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক রূপে অধিক অর্থ জুগিয়েছিল বাংলাদেশের জনগণ। ভারতীয় বাহিনীর সে অস্ত্রলুট নিয়ে আওয়ামী বাকশালী চক্র বিগত ৪০ বছর যাবত নিশ্চুপ। অথচ তাদের মনে সামান্যতম দেশপ্রেম ও শক্তিশালী বাংলাদেশ নির্মানে সামান্যতম অঙ্গিকার থাকলে ভারতের কাছে সে অস্ত্র ফেরত চাইতো। কারণ সেটি ছিল বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনা।ভারতের এ অপরাধ কি মাফযোগ্য? কিন্তু ভারতীয় স্বার্থের সেবাদাসগণ ভারতের এ অপরাধ নিয়ে কথা বলতে রাজী নয়।
তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শক্তিহানী করার ষড়যন্ত্রটি শুধু একাত্তরের অস্ত্র লুন্ঠনে সীমাবদ্ধ থাকেনি। এখন প্রমাণ মিলছে,২০১১ সালে পিলখানা হত্যাকান্ডের সাথেও ভারত ও তার বাংলাদেশী সেবাদাসগণ জড়িত। ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করে তারা যেমন সেনাবাহিনীর কোমর ভেঙ্গেছে,তেমনি বিধ্বস্ত করেছে বিডিআরকে। বাংলাদেশের ভূমিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ছিল মূল লক্ষ্যে পৌছার পথে ভারতীয়দের জন্য প্রথম বাঁধা। সেটি তারা ১৯৭১ সালেই অপসারণ করেছে। এখন তারা চায় পরবর্তী ধাপ নিয়ে এগিয়ে যেতে। পরবর্তী সে ধাপটি স্রেফ বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ধ্বংস নয়,বরং সেটি হলো জনগণের প্রতিরোধ চেতনার বিনাশ। চেতনা বিনাশের সে কাজকে দ্রুত সমাধা করার লক্ষ্যেই পত্র-পত্রিকা, মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীদের ময়দানে বিপুল সংখ্যক ভারতসেবীদের নামানো হয়েছে। এদের কাজ হয়েছে বাংলাদেশের উপর ভারতীয় অধিকৃতিকে জায়েজ রূপে চিত্রিত করা। এরাই সে অপশক্তি যারা ১৯৭৪ ভারত সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ এবং সে দুর্ভিক্ষে বহু লক্ষ মানুষের মৃত্যু নিয়ে কথা বলে না। একাত্তরে ভারতীয় বাহিনীর হাতে লুণ্ঠিত হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র নিয়েও কথা বলে না। এরা নিশ্চুপ পদ্মা ও তিস্তার পানি লুণ্ঠন নিয়েও। তারা নীরব থাকে সীমান্তে ভারতীয় সৈনিকদের বাংলাদেশী নিহত হলেও। শত্রুর হামলার মুখে আত্মসমর্পিত মানুষের প্রতিবাদের সামর্থ্য থাকাই স্বাভাবিক। ভারত তো চায় তেমনি এক আত্মসমর্পিত বাংলাদেশ। সেরূপ একটি বাংলাদেশ নির্মাণের কাজ শুরু ১৯৪৭ সাল থেকেই। এবং আজ সে ধারাই জোরে শোরে অব্যাহত রয়েছে।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018