বাংলাদেশে অপসংস্কৃতির প্লাবন
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 2, 2019
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
বাংলাদেশ ভাসছে অপসংস্কৃতির জোয়ারে। এ জোয়ারে প্রবল ভাবে প্লাবিত হয়েছে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের মনের ভূবন। বন্যার প্লাবনে ভাসলে দেশের মাটি থাকে, লোক-লস্কর থাকে, নতুন আবাদের সম্ভাবনাও থাকে। ফলে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর কিছু সামর্থ্যও থাকে। এমন প্লাবনে বাংলাদেশ বহুবার ভেসেছে। কিন্তু অপসংস্কৃতির জোয়ারে আর যাই হোক দেশের সুস্থ্য পরিচিতি থাকে না। অপসংস্কৃতির সে দূষীত জোয়ারে দেশের মাটি না ভাসলেও ভেসে যায় মানুষের চরিত্র, ধ্যান-ধারণা, ধর্ম ও আদর্শ। এতে শুধু নিজস্ব সংস্কৃতিই বিনষ্ট হয় না, বিপন্ন হয় জাতির প্রতিরক্ষা, রাজনীতি, অর্থনীতি ও নৈতিক মেরুদন্ড। মন ও মননে, নীতি ও নৈতিকতায়, চিন্তা ও চেতনায় জাতি তখন পঙ্গুত্ব পায়। এমন বিধ্বস্ত জাতি বেঁচে থাকে নিছক এক জৈবিক অস্তিত্ব নিয়ে। শিকড়হীন কচুড়িপানার ন্যায় জাতিও তখন ভাসমান অস্তিত্ব পায়। শিকড়কাটার এ কাজে এক সময় জাতিতে জাতিতে যুদ্ধ হত, প্রচুর অর্থ ও রক্তক্ষয়ও হত। কিন্তু এখন আর এ কাজে রাজ্য-জয়ের প্রয়োজন পড়ে না, সাংস্কৃতিক অস্ত্রে তা যুদ্ধ ছাড়াই সম্ভব।
অপসংস্কৃতিতে বাংলাদেশীদের যে কতটা চরিত্রহানী ঘটেছে সেটি কি এখনও গবেষণার বিষয়? দূর্নীতিতে দেশটি বিশ্বে পাঁচবার শিরোপা পাওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে সে ব্যর্থতা ও কদর্যতা কি প্রকাশ পায়নি? সত্তরের দশকে তলাহীন ভিক্ষার ঝুলির খেতাব কি সে ব্যর্থতারই সার্টিফিকেট ছিল না? সারা শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে সেটি বেশী দিন চাড়মার নীচে আড়াল থাকেনা। অচিরেই সে ক্যান্সার রোগীকে ধরাশায়ী করে ফেলে এবং দ্রুত কবরের দিকে টানে। নৈতিক অবক্ষয় তেমনি ধরাশায়ী করে একটি জাতিকে। বার বার রক্তক্ষরণে দূরারোগ্য ব্যাধী যেমন দেহকে নির্জীব করে, নৈতিক ব্যাধী তেমনি অবক্ষয় ঘটায় জাতির জীবনে। এবং সেটি লাগাতর বিভেদ, সংঘাত ও রক্তক্ষরণের মাধ্যমে। বাংলাদেশ তেমনি এক লাগাতর বিভেদ ও সংঘাতের দেশ। সংঘাত চলছে রাজনীতিতে, চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং এখন শুরু হয়েছে সেনানিবাসেও। সেরূপ এক বীভৎস সংঘাতেরই সম্প্রতি প্রকাশ ঘটলো ঢাকার পিলখানায়। বিশাল হত্যাকান্ড, হ্ত্যা শেষে লাশে অগ্নিসংযোগ, নারীধর্ষণ, ডাকাতি ও লুটতরাজের ন্যায় নানারূপ জঘন্যতা ঘটেছে সেখানে। যে বর্বরতা এক কালে ডাকাতেরা দুরপল্লীতে নিশিত রাতেও করতে লজ্জা পেত তা এখন দিনে দুপুরে দুইদিন ধরে রাজধানীর কেন্দ্র বিন্দুতে অনুষ্ঠিত হল। সরকারের নাকের ডগার উপর। এবং সেটি বিডিআরের ন্যায় নিরাপত্তা বাহিনীর শত শত সৈনিকদের দ্বারা। যাদের দায়িত্ব ছিল রক্ষকের, তারাই লিপ্ত হল গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুটতরাজে। শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসেই নয়, বিশ্বের ইতিহাসেও বর্বরতার এটি আরেক রেকর্ড। মানব ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিমাপের যেমন মানদন্ড থাকে, তেমনই মানদন্ড বা ইন্ডিকেটর আছে চরিত্র পরিমাপেরও। দূর্নীতি, সন্ত্রাস, রক্তাক্ষয়ী সংঘাত হল এমন চারিত্রিক অবক্ষয় পরিমাপের গুরুত্বপূর্ণ মানদন্ড। পোকামাকড় ও নর্দমার কীট দুর্গন্ধময় গলিত আবর্জনায় স্বচ্ছন্দে সাঁতার কাটে। সেখানেই তাদের আনন্দ। তা থেকে বেরিয়ে আসার কোন ভাবনা এসব কীটের থাকে না। তেমনি দুর্বৃত্ত মানুষেরও থাকে না উন্নত জীবন গড়ার প্রেরণা। বরং সে দুর্বৃত্তি নিয়েই তাদের গর্ব। এরাই সমাজকে নীচে টানে। বাংলাদেশ আজ যে এতটা নীচে নেমেছে তা তো এসব দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনিক কর্মচারি, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মীর কারণে। তারা নবী-রাসূলের মিশনকে যে শুধু বর্জন করেছে তা নয়, সেকেলে ও সাম্প্রদায়িকতা বলে সেটিকে অব্যাহত রাখার কাজকেও তারা অসম্ভব করেছে। ফলে বিফল হয়েছে মানুষ রূপে বেড়ে উঠার কাজ। বাংলাদেশের আজকের এ দুরবস্থা হল তারই নজির।
বাংলাদেশের ব্যর্থতা নিছক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা প্রশাসনিক নয়। এ ব্যর্থতা উন্নত মানুষ রূপে বেড়ে উঠার ব্যর্থতা। আর এটিই দেশটির সংস্কৃতি ও সভ্যতার সংকট। উন্নত সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পন্ন জাতির জন্ম দেওয়ার কাজটি এতটা সহজ নয়। এ কাজ শেখাতে মানবকুলে নবী-রাসূল এসেছিলেন। বিশ্বে শত শত ভাষাভাষী মানুষের মাঝে খুব কম সংখ্যক জাতিই সেটি পেরেছে। নিছক গরু-মহিষ, হাস-মুরগী, মৎস্য চাষ ও ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে এ কাজ হয় না। রাস্তাঘাট-কারখানা গড়েও হয় না। এজন্য জ্ঞানবান ও চরিত্রবান মানুষের সংখ্যা বিপুল ভাবে বাড়াতে হয়। আর একাজ দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতির। শিক্ষাকে এ জন্যই ইসলামে ফরয করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে শিক্ষার নামে যেটি বেড়েছে সেটি হল কুশিক্ষা। যা থেকে জন্ম লাভ করে দুর্বৃত্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজেনৈতীক কর্মী। আর সংস্কৃতির নামে পরিচর্যা পেয়েছে অপসংস্কৃতি।
প্রশ্ন উঠে, সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি কি? সংস্কৃতির মানদন্ডই বা কি? সংস্কৃতির উৎকর্ষ বা আগ্রাসন বলতেই বা কি বুঝি? এসব প্রশ্ন অতি গুরুত্বপূর্ন। তবে সংস্কারে যাদের আগ্রহ নেই, দেশ ও জাতি নিয়ে যাদের মাথা-ব্যাথা নেই তাদের কাছে এসব প্রশ্ন গুরুত্বহীন। কারণ তাদের সমগ্র অস্তিত্বব্যাপী যে ব্যস্ততা তাতে জীবনে চলার পথটা ঠিক না বেঠিক তা নিয়ে ভাববার ফুরসত নেই। জীবনে বাঁচাটাই যেন মূল, বাঁচাটা কিভাবে হল তা নিয়ে ভয়-ভাবনা নেই, চিন্তা-চেতনাও নেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে সকাল আবার সকাল থেকে সন্ধ্যা -এভাবেই জীবনের এ অবিরাম চক্রে আমৃত্যু ঘুরছে তারা। অবশেষে সবকিছু সাঙ্গ হয় মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। পাকা ফলের মত মানুষও ঝরে পড়ে বয়সের ভারে। এবং হারিয়ে যায় এ সংসার থেকে। অথচ অধিকাংশ মানুষই জীবনের করুণতম এদিনটির কথা বেমালুম ভুলে থাকে। চরিত্র হল সুস্থ্য চেতনার ফসল। চরিত্র ধরা পড়ে ব্যক্তির জীবন-সংস্কৃতিতে। “খাও-দাও-ফূর্তি কর” -এমন জৈব-চেতনায় মহত্তর চরিত্র জন্ম নেয় না। এ চেতনা তো পশুর। অথচ এমন জৈব-চেতনা অধিকাংশ মানুষের সমগ্র প্রয়াস-প্রচেষ্টা ও অস্তিত্ব জুড়ে। দু’দন্ড ভাববার ফুরসত ক’জনের? ক’জনের নজর মৃত্যুর ওপারে অনন্ত অসীম মৃত্যুহীন জীবনের দিকে? অন্যকে নিয়ে দূরে থাক, নিজের চূড়ান্ত লাভ-লোকসান নিয়েই বা গভীরভাবে ভাবছে ক’জন? তাদের সকল তাড়াহুড়া তো ভোগের সামগ্রী সংগ্রহে। চিন্তা-চেতনা, কর্ম ও আচরণে এবং বাঁচবার রুচিবোধে মানুষে মানুষে যে বিস্তর পার্থক্য তা তো দেহের মাপ, শরীরের গঠন বা গায়ের রঙের কারণে নয়। এ ভিন্নতা জীবন ও জগত নিয়ে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বিপরীত উপলব্ধির কারণে। যদিও সবার বসবাস একই পৃথিবীতে, তবে চেতনার ভূগোল বা দর্শনের পৃথিবী সবার এক নয়। জনে জনে এ পৃথিবী ভিন্ন ভিন্ন। চোখে দিব্য জ্যোতি থাকলেও চেতনার অন্ধত্বে অনেকেই অচেতন। অন্ধের হাতি দেখার মত এ জগত নিয়ে ভাববার মধ্যেও এদের বিশাল সীমাবদ্ধতা বা অজ্ঞতা। হাতির পায়ে হাত বুলিয়ে খুঁটি ভাবার মত এরাও অনেক চন্দ্র, সূর্য, গঙ্গা, হিমালয়কে উপাস্য ভাবে, অস্বীকার করে মূল স্রষ্টাকেই। কারণ, এদের চেতনারাজ্যে ঘন অন্ধকার। তাদের মানসলোকে আলোকিত সূর্য দূরে থাক, মিটি মিটি করে জ্বলা নক্ষত্রও নেই। নেই কোন লক্ষ্য বা লক্ষ্যে পৌঁছার সুনির্দিষ্ট পথ। ফলে তাদের জীবনে অন্ধকারের ভ্রান্ত পথে হাবুডুবু খাওয়া শুধু স্বাভবিকই নয়, অনিবার্যও। এ হাবুডুবু থেকে বাঁচবার তাগিদেই মনুষ্য মগজে জন্ম পেয়েছে নানা মতবাদ, নানা ইজম, নানা ধর্মের নামে নানা অধর্ম। রক্তাত্ব হয়েছে ইতিহাস, বিকৃত হয়েছে রুচিবোধ এবং সৃষ্টি হয়েছে সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি। সাংস্কৃতিক সংকটের শুরু বস্তুতঃ চেতনা রাজ্যের এরূপ অসুস্থ্যতা বা অন্ধকারচ্ছন্নতা থেকে। চেতনা রাজ্যে অন্ধকার নামলে পশুবৎ জৈবিকতাই প্রাধান্য পায়। বেঈমান ও ঈমানদার -উভয়ের বাঁচবার রুচিবোধই ভিন্ন। গবাদী পশু যেখানে ঘাস পায় সেখানেই মুখ দেয়, পশুবৎ মানুষও ন্যায়-অন্যায় না ভেবে যেখানে ভোগের উপকরণ দেখে সেখানেই হাত বাড়ায়। এ দুর্বৃত্ত মানুষগুলো কারো ধর্ম, ভাষা বা গায়ের রঙ দেখে তার উপর চড়াও হয় না। সবাই তার সম্ভাব্য শিকার বা টার্গেট। নিজ ভাষার ও নিজ প্রতিবেশীর উপরও তারা চড়াও হয়। এমন মানুষ তখন চতুষ্পদ জীব থেকে নীচে নামে। সুদ-ঘুষ, হত্যা-লুট, ধর্ষন-ব্যাভিচার -কোনটিই এমন দ্বিপদী জীবটির কাছে তখন তুচ্ছ বৈ নয়। পবিত্র কোরআনে এমন মানুষদেরই চতুষ্পদি জীব বা তার চেয়েও নিকৃষ্ট বলা হয়েছে। বলা হয়েছে ‘‘তারাই হল গবাদী পশুর ন্যায়, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট”।
জৈবিকতায় জীবনের সকল হিসাব-নিকাশ শুধু পার্থিব জীবনকে নিয়েই। অথচ পার্থিব জীবনই এ জীবনের সবটুকু নয়। অনন্ত-অসীম জীবনের এটি শুরু মাত্র, শেষ নয়। সসীম এ পার্থিব জীবনের সাথে অসীম ওপারের জীবনের তুলনাই হয় না। এ কারণেই ঈমানদারদের কাছে জীবনের পরিচয়টাই ভিন্ন। স্পষ্টভাবেই সে দেখতে পায় জীবনের এক অন্তহীন ছবি যার প্রায় সবটুকুই মৃত্যুর ওপারে। ইসলামী পরিভাষায় জীবনকে এমনভাবে দেখার সামর্থই হল মারেফত। এ সামর্থ বলে ঈমানদারের ক্ষুদ্র এপারের জীবনও পরিকল্পিত হয় অন্তহীন ওপারের জীবনকে সামনে রেখে। ফলে পাল্টে যায় ব্যক্তির চিন্তা-চেতনা, রুচিবোধ ও বাঁচবার সংস্কৃতিও। সংস্কৃতির সংস্কারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন উপকরণই হল অন্তহীন অসীম জীবনের ধারনা। ইসলামে সে ধারনাটাই হলো ঈমান। বিশ্বের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতির স্রষ্টা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কায় তেইশটি বছর ব্যয় করেছিলেন মানুষের চেতনালোকে এ ধারনাকে বদ্ধমূল করতে। পবিত্র কোরআনের প্রথম সুরাগুলোও এ বিষয়টির উপরই সর্বাধিক জোর দিয়েছে। ওপারের শান্তির লক্ষ্যে এপারের কষ্ট ও ত্যাগস্বীকার শুধু সহনীয়ই নয়, বরনীয়ও হয়ে উঠে। এমন পরকাল-সচেতনতায় অন্যায়ে আত্মসমর্পনের চেয়ে সত্যের পথে মৃত্যুই তখন কাম্য হয়ে উঠে। এমন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধিতে জাতি শক্তি ও সম্মানের অধিকারী হয়। মরুর নিঃস্ব আরবরা এ শক্তিবলেই বিশ্বশক্তির মর্যাদা পেয়েছিলেন। এমন পুণ্যতর সংস্কৃতি নিয়ে বেড়ে উঠার সামর্থের মধ্যেই প্রকাশ পায় ব্যক্তির মানবিক পরিচয়। সংস্কৃতির অর্থ তাই পোষাক-পরিচ্ছদে নয়, সেটি হল উচ্চতর মানুষ রূপে বাঁচবার ও বেড়ে উঠার প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের মানুষের বড় ব্যর্থতা এখানেই। সে ব্যর্থতা যেমন পাঁচবার বিশ্বে দূর্নীতিতে প্রথম হওয়ার মধ্য দিয়ে ধরা পড়েছে, তেমনি ধরা পড়েছে ২৫ শে ফেব্রুয়ারী পিলখানার বিডিআর ক্যাম্পে বীভৎস বর্বরতার মধ্যেও। ধরা পরেছে লগি-বৈঠা নিয়ে রাজপথে নিরীহ মুসল্লী হত্যার মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ সামরিক-অসামরিক, রাজনৈতিক-প্রশাসনিক সর্বক্ষেত্রে।
মানুষের জীবনে পরিপূর্ণতা আসে পরিশীলিত রূপে বেড়ে ওঠার মধ্যে, নিছক বেঁচে থাকার মধ্যে নয়। উদ্ভিদ ও অন্যান্য জীবজন্তু থেকে মানুষের মৌলিক পার্থক্য এখানেই। অন্য প্রাণীরা নিজস্ব জৈবিক বেশিষ্ট্য পায় জন্ম থেকেই। সিংহ জন্ম থেকেই সিংহ, যা শিখবার তা শিখে সিংহরূপে জন্মাবার কারনেই। কিন্তু মানুষকে মানব রূপে বেড়ে উঠার প্রয়োজনে শিখতে হয়, জানতে হয় এবং অভ্যস্ত হতে হয় অনেক কিছুতেই। একমাত্র তাকেই গড়তে হয় সভ্যতা, অন্য কোন প্রাণীকে নয়। এ শেখা, এ জানা এবং এ অভ্যাসের মধ্যেই নিহিত থাকে মানুষটি আদৌ সভ্য মানুষ রূপে বেড়ে উঠবে কিনা সেই গুরুত্বপূর্ন বিষয়টি। নইলে মানবরূপী সে দানবও হতে পারে বা খড়কুটোর মত ইতিহাসের স্রোতে ভেসেও যেতে পারে। বিশ্বের হিংস্রতর দানবের জন্ম কোনকালেও কোন অরণ্যে হয়নি, হয়েছে এ মানব কূলেই। ২৫শে ফেব্রুয়ারী পিলখানার বিডিআর ক্যাম্পে যারা হত্যা, ধর্ষন ও লুণ্ঠন চালালো তারা গরু-ছাগল বা কুকুর-বেড়ালের পেটে জন্ম নেয়নি। জন্ম নিয়েছিল মানুষের পেটেই। কিন্তু তাদের বর্বরতা যে কোন হিংস্র পশুকেও হার মানিয়েছে। সত্য তো এটাই, মানবরূপী এসব দানবদের হাতে যত মনুষ্যপ্রাণ নিধন হয়েছে সমগ্র কালের সকল পশুকূলও তা পারেনি। হিটলারের হুকুমে যত প্রাণের সংহার হয়েছে তা ইউরোপের সমগ্র অতীতে সমগ্র হিংস্র প্রাণীর নখরেও হয়নি। তেমনি হিরোসীমা ও নাগাসাকিতে বোমা ফেলে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট যত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে বিশ্বের সর্বকালের সকল জানোয়ারকূলও সে মাপের নিষ্ঠুরতা দেখায়নি। আর এ সব সম্ভব হয়েছিল জীবন ও জগৎ নিয়ে ভ্রান্ত চেতনা, বিকৃতরুচীবোধ ও সংস্কৃতির সংকটের কারণেই।
সংস্কৃতির কাজ মানুষকে গান-বাজনা শেখানো নয়, বরং সেটি হলো ব্যক্তির চিন্তা-চেতনা, আচার-আচরণ ও কর্মের পরিশুদ্ধকরণ। এখানে নীরবে কাজ করে ব্যক্তির ঈমান। ঈমান ছাড়া সুস্থ্য সংস্কৃতির নির্মাণ অসম্ভব। ঈমান না থাকার কারণে পাশ্চাত্য বিজ্ঞানে এগুলেও মানবতায় এগুতে পারিনি। ফলে শুধু ব্যভিচার, সমকামীতাতেই তারা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেনি, ভঙ্গ করেছে লুটতরাজ ও মানব হত্যাতেও। আজ ইরাক, ফিলিস্তিন ও আফগানিস্তানে তারা তাদের সে ব্যর্থতার সাক্ষর রাখছে। পরিপক্ক ঈমানের কারণেই ব্যক্তির মাঝে বাড়ে সুস্থ্য রুচিবোধ, বেড়ে উঠে উচ্চতর বিবেকবোধ ও আচরণ। ঈমানের পাশাপাশি ব্যক্তির ইবাদত সে বিবেকবোধ ও আচরণকে আরো সমৃদ্ধ ও শানীত করে। জন্মসূত্রে কেউ যেমন দুষ্ট নয়, তেমনি পরিশুদ্ধ বা পরিশীলিতও নয়। মুসলামের সংস্কৃতিকে তাই তার ইবাদত থেকে পৃথক করা যায় না। পরিশুদ্ধ বা পরিশীলিত হতে হয় একটি সুষ্ঠু ও সহায়ক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। সংস্কৃতি সে ভূমিকাই পালন করে। ব্যক্তিকে সুশিক্ষিত করার এটিই হল সবচেয়ে সনাতন পদ্ধতি। স্কুল, কলেজ বা বিদ্যালয় থেকে মানুষ যা শেখে তারচেয়েও বহুগুন বেশী শেখে দেশের চলমান সংস্কৃতি থেকে। ইসলামের নবীর আমলে বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলেও যে হারে সংস্কৃতিবান মহামানব সৃষ্টি হয়েছিল মুসলিম বিশ্বের আজকের শত সহস্র কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ও তার হাজার ভাগের এক ভাগও পারছে না। তবে এমন সংস্কৃতির বিনির্মাণে সমাজ ও রাষ্ট্রের সহায়ক ভূমিকা শুধু প্রয়োজনীয়ই নয়, অপরিহার্যও। অরণ্য মাঝে বৃক্ষের বৃদ্ধি সম্ভব, তবে এমন আরণ্যিক নিঃসঙ্গতায় মানুষ মানবিক গুণে বেড়ে উঠে না। কারণ মানবিকীকরণের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক প্রক্রিয়া সেখানে অনুপস্থিত। ইসলামী রাষ্ট্র ছাড়া তাই ইসলামের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পায়না। এমন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এজন্যই ইসলামে শ্রেষ্ঠ এবাদত। এ লক্ষ্যে ইসলামের নবী (সঃ) অর্ধশতেরও বেশী যুদ্ধ লড়েছেন।
সংস্কৃতির সংকট কতটা প্রকট তা নির্ণয়ের নির্ভূল মানদন্ড হল দেশে দূর্নীতি, দুস্কর্ম ও পাপাচার কতটা তীব্র সেটি। সাংস্কৃতিক সম্পদে দেশ কতটা সমৃদ্ধ তা সম্পদ, রাস্তাঘাট, কলকারখানা বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যায় নির্ণীত হয় না। সেটি হলে আজকের বাংলাদেশ ৫ শত বছরের প্রাচীন বাংলাদেশের চেয়ে শতগুণ উন্নত ও সংস্কৃতিবান দেশে পরিণত হত। কারণ এখন জেলায় জেলায় বেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়, বেড়েছে কলকারখানা ও রাস্তাঘাট। প্রাচীন কালে এর হাজার ভাগের একভাগও ছিল না। অথচ দেশে যতই বাড়ছে রাস্তাঘাট, কলকারখানা ও বিশ্ববিদ্যালয় ততই বড়ছে দুর্বৃত্তি। বাড়ছে ধর্ষণ ও হত্যা। অপর দিকে সংস্কৃতির গুণাগুণ ও মূল্যমান নির্ণয়ে নাচ-গান, নাটকের মান, উপন্যাস্যের সংখ্যা ও কবিতার কাটতিও জরুরী নয়। আরব মুসলমানেরা না নেচে এবং না গেয়ে, এমনকি একখানি নাটক বা উপন্যাস না লিখেও বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছিলেন। এ সংস্কৃতিতে উলঙ্গতা বিদায় নিয়েছিল, নির্মূল হয়েছিল ব্যাভিচার এবং দূর হয়েছিল নানাবিধ পাপাচারও। সৃষ্টি হয়েছিল এমন সব উচ্চতর মহামানব যা আজও ইতিহাসের চরম বিস্ময়। বস্তুতঃ সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠত্ব নির্ণীত হয় মানবের শ্রেষ্ঠত্বে। এবং সমাজ ও দেশ কতটা বর্বরতা মুক্ত হল তার ভিত্তিতে। যে দেশে সৈনিকদের হাতে নারকীয় হত্যাকান্ড, লুটপাট ও ধর্ষন হয়, ছাত্রদের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হত্যা হয় এবং রাজনৈতিক কর্মীদের হাতে প্রকাশ্য রাজপথে লগিবৈঠা নিয়ে মানুষ খুন হয় -সেদেশকে কি সভ্য বলা যায়? পাপাচারের আধিক্যে আর যাই হোক কোন দেশের সাংস্কৃতিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয় না। বরং প্রমাণিত হয় দেশটির নৈতিক ও সাংস্কৃতিক দূর্গতি। দূর্নীতি, দুষ্কর্ম ও পাপাচারের প্রচন্ডতাই বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অনগ্রসরতার বড় প্রমাণ। ফার্সীতে অপরিশোধিত খনিজ তেলকে বলা হয় ‘নাফতে খাম’ আর অমার্জিত রুচিহীন মানুষকে বলা হয় ‘ইনসানে খাম’। তেলের ক্ষেত্রে যেমন রিফাইনারী, ব্যক্তির ক্ষেত্রে তেমনি সংস্কৃতি। সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই অপরিশোধিত ব্যক্তির পরিশুদ্ধি ঘটে -যেমন রিফাইনারীর মধ্য দিয়ে অপরিশোধিত তেল পরিশোধিত তেলে পরিণত হয়। অপরদিকে অপসংস্কৃতিতে দূষিতকরণ ঘটে ব্যক্তির চরিত্র ও সমগ্র অস্তিত্বের। এরই ফলে সমাজে বৃদ্ধি ঘটে নীতিহীন ও চরিত্রহীন মানুষের।
সংস্কৃতির আরবী প্রতিশব্দ হল ‘তাহযীব’। তাহযীবের শাব্দিক অর্থ পরিশুদ্ধকরণ, যা এসেছে আরবী ক্রিয়া পদ ‘হাযযাবা’ থেকে। ফার্সী ভাষাতেও সংস্কৃতির অর্থ ভিন্নতর নয়। বাংলা ভাষাতেও সংস্কৃতি হলো সংস্কারের প্রক্রিয়া। ফলে সংস্কৃতির অর্থ নাচ-গান, চিত্রকলা বা নিছক সাহিত্য চর্চা নয়, বরং তার চেয়ে অনেক ব্যাপক ও গভীরতর। ইসলামে এটি মানুষকে পূর্নাঙ্গতর তথা ইনসানে কামেল বানানোর প্রক্রিয়া। এ লক্ষ্যে সাংস্কৃতিক কর্মও এবাদত। প্রশ্ন হল, সংস্কৃতির উপকরণ কি? জাতির সংস্কারে যা কিছু সহায়ক তাই হল সাংস্কৃতির উপকরণ, যা কিছু এর বিপরীত তা অপসংস্কৃতি। নাটক, গান, কবিতা বা উপন্যাসের প্রসার বাংলা ভাষায় কম হয়নি, সাহিত্যে নোবেল প্রাইজও মিলেছে। এদেশে যত নাটক, গান, কবিতা ও উপন্যাস বিগত পঞ্চাশ বছরে পঠিত হয়েছে হাজার বছরেও তা হয়নি। কিন্তু যেভাবে নীতিহীনতা ও দূর্নীতি নীতিতে পরিণত হয়েছে তাতে সুস্পষ্ট যে সংস্কৃতির ময়দানে কাজের কাজ তেমন হয়নি। এর অর্থ হল, মানুষের চেতনা রাজ্যে বা রুচিবোধে উচ্চতর পরিবর্তন সাধনে এসবের দেয়ার মত কিছুই নেই। বরং জুগিয়েছে স্বেচ্ছাচারি ভাবে জীবন উপভোগের উম্মাদনা। সাহিত্য পরিণত হয়েছে হিরোইনের ন্যায় নেশাগ্রস্ত করার উপকরণে। এসব সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকার্যের সৃজনশীল কিছু সামর্থ্য থাকলে বাংলাদেশ দূর্বৃত্তিতে বারবার শিরোপা পেত না। রাজনৈতিক কর্মী ও নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে বারবার দেশে নারকীয় ঘটনাও ঘটতো না। প্রশ্ন থেকে যায়, চেতনার পরিশুদ্ধির অর্থ কি? একের কাছে যা শুদ্ধ অপরের কাছে তা অশুদ্ধও হতে পারে। উলঙ্গতা অনেকের কাছেই দোষের নয়। পবিত্র জ্ঞান করে অনেকেই সেটির পুজা-অর্চনাও করে থাকে। ভারতের প্রাচীনতম মন্দিরে উলঙ্গ মূর্তির যে ছড়াছড়ি এগুলো এমনিতেই হয়নি। এগুলো এক বিশেষ চেতনারই প্রতিচ্ছবি। অশ্লিল আচারের প্রসারে হিন্দু ধর্মের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় কতটা তীব্র এতে সেটাই প্রকাশ পায়। আঁচ করা যায় যে এরা সমাজকে কতটা উলঙ্গ করতে চায়। উলঙ্গ মূর্তির এমন পূজারীদের কাছে যা কিছু শালীন ও পবিত্র, একজন মুসলমানের কাছে তা অতি অশালীন ও অপবিত্র বৈ নয়। তাই হিন্দু ও মুসলমানের সংস্কৃতি কখনই এক ও অভিন্ন ছিল না। কারণ শ্লিল ও অশ্লিলের মানদন্ডই এখানে ভিন্ন। অপরদিকে কালের স্রোতে হেসে খেলে গা ভাসিয়ে চলাই যাদের জীবন লক্ষ্য তাদের কাছে যা কিছু আনন্দদায়ক, যা কিছু মনোমুগ্ধকর, যা কিছু ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সে গুলিই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনকে পূণ্যময় করার বিষয়টি তাদের কাছে তুচ্ছ বৈ নয়।
পুণ্যতা হল পরকালের পাথেয়। দৃষ্টি যাদের মৃত্যুর ওপারে একটুও সামনে এগোয় না তাদের কাছে এমন পুণ্যতা কতটুকু গুরুত্ববহ? ফলে এমন চেতনায় অপসংস্কৃতিই প্রসার পায়, সংস্কারপ্রাপ্ত মন ও মনন নয়। সংস্কৃতি চর্চার নামে আজ বাংলাদেশে যা ঘটছে তা নিতান্তই ভয়ঙ্কর। পুঁতিগন্ধময় আবর্জনার স্তুপে যেমন মশককূল বৃদ্ধি পায়, তেমনি অপসংস্কৃতির বিপুল আয়োজনে বৃদ্ধি পাচ্ছে দুষ্ট লোকের সংখ্যা। এদের উপস্থিতি দেশের সর্বস্তরে। সামরিক, বেসামরিক, রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক তথা সর্বত্র জুড়ে। এদের কারণে শান্তি-শৃঙ্খলাই শুধু নয়, বিপন্ন হচ্ছে দেশের অস্তিত্বও। উলঙ্গতা ও অশ্লিলতার আমদানি এখন বাংলাদেশের বাণিজ্য-নীতিতে পরিনত হয়েছে। সরকার উলঙ্গ ছায়াছবির আমদানিকে শুধু বৈধই করেনি বরং হলের সামনে পুলিশ বসিয়ে তা প্রদর্শনের নিরাপত্তাও দিয়েছে। একই ভাবে পাহারাদার বসিয়ে নিরাপত্তা দিচ্ছে বেশ্ব্যাবৃত্তির। এভাবে সরকারি উদ্যোগে বিণিয়োগ বাড়ানো হয়েছে মানুষকে চরিত্রহীন করতে। উলঙ্গতা আসছে শুধু ইউরোপ-আমেরিকা থেকেই নয়, জোয়ারের পানির ন্যায় সেটি আসছে প্রতিবেশী ভারত থেকে। শিল্পপণ্যের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে আমদানী হচ্ছে সেদেশের কদর্য সাংস্কৃতিক পন্যও। বাংলাদেশ তাদের অবাধ সাংস্কৃতিক বাজার। প্রতিবছর নেচে গেয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সে দেশের নট-নটীরা। বিপুল বাজার পাচ্ছে তাদের ছায়াছবি। মশা যেমন শুধু রক্তই চোষে না, শরীরে রেখে যায় ভয়ঙ্কর রোগও। এসব ভারতীয় ছায়াছবি ও নট-নটিরাও বাড়াচ্ছে চারিত্রিক রোগ এবং সেসাথে ছড়াচ্ছে এইডসের মত ঘাতক রোগের বীজ। এইডসে আক্রান্ত রুগীর সংখ্যায় ভারত এখন আফ্রিকাকে ছাড়িয়ে বিশ্বে প্রথম হতে চলছে। অপসংস্কৃতির নোংরা পরিবেশেই জন্ম নেয় এইডস। ভারতে সে জোয়ার যে কতটা তীব্র তা এইডসের প্রসার থেকেই সুস্পষ্ট। অপসংস্কৃতির জোয়ারের সে নোংরা জল ভারত এখন বাংলাদেশেও ঠেলে দিচ্ছে। ভারতের সাথে পাল্লা দিয়ে গড়া হচ্ছে এক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল। ফলে গ্রামে-গঞ্জে, নগরে বন্দরে পাল্লা দিয়ে শুরু হয়েছে নাচ-গান ও যাত্রার নামে দেশী অশ্লিলতার ফেরী। ফলে ঝাঁকে ঝাঁকে বেড়ে চলেছে অশ্লিলতায় অনুরক্ত চরিত্রহীন মানুষ। যৌনতার এরূপ অবাধ উস্কানীতে যুবকেরা মদ, গাঁজা ও নিষিদ্ধ পল্লী খুঁজবে এটাই তো স্বাভাবিক। পাপাচার-চর্চার সে বাজারে যাতে কোনরূপ বিঘ্নতা না ঘটে সেজন্য নিষিদ্ধ পল্লীতে ধর্মপ্রাণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় চলছে পুলিশী প্রহরা। এভাবে সুপরিকল্পিতভাবে গুনাহ্র ভাগীদার করা হচ্ছে নিরীহ দেশবাসীকেও। ব্যাভিচারীর বাজার এখন এতই বেড়েছে যে বেশ্যাবৃত্তি এখন নিষিদ্ধ লোকালয় চেড়ে প্রকাশ্য রাজপথ ও লোকালয়ে নেমেছে। রোগ-ভোগ, কলেরা-মহামারি কে ভালো কে মন্দ সে বাছ-বিচার করেনা, তেমনি বাছ-বিচার করছে না মানবরূপী সমাজের এই জঘন্য কীটেরাও। ফলে হামলার শিকার হচ্ছে ঘরের নিরীহ গৃহবধুরাও। অপসংস্কৃতির এটি এক অনিবার্য পরিণতি বৈ নয়। কান টানলে মাথা এসে যায়, অপসংস্কৃতির চর্চা চললে পাপাচারও বাড়তে বাধ্য। দেশের, জাতির ও ধর্মের ক্ষতিসাধনে যারা তৎপর তারা যে ইতিমধ্যেই বহুদূর এগিয়ে গেছে অপসংস্কৃতির বর্তমান তান্ডব তারই প্রমাণ। অপসংস্কৃতির এ আগুন যখন লেগেই গেছে -তা না নিভালে আরো বাড়তে থাকবে। এভাবে অবিরাম চললে এতদিনের অক্ষত ঘরগুলোও আর রক্ষা পাবে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো দেশের এত বড় ভয়ঙ্কর অবস্থা নিয়ে দেশের ক’জন ভাবতে এবং সে সাথে কিছু করতে আগ্রহী?
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018