বাংলাদেশে অসভ্যদের শাসন ও বর্ধিষ্ণু কলংক
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on August 11, 2019
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
রাজত্ব অসভ্যদের
পৃথিবী পৃষ্টে প্রতি যুগে এবং প্রতি দেশে সভ্য ও অসভ্যদের উপস্থিতি ছিল। উভয়ের সুস্পষ্ট পরিচিতি এবং সংজ্ঞাও ছিল। সে মানদণ্ড নিয়েই প্রতি যুগে এবং প্রতি সমাজে কে সভ্য এবং কে অসভ্য -সে বিচারটি হয়। পশুরা অসভ্য ও ইতর। কারণ, আইন বা আইনের শাসন –এসব তারা কিছু বুঝে না। আইন থাকলেও তারা তা মানে না। সেখানে শাসন চলে যারা অধীক বলবান ও হিংস্রদের। ফলে যে পশুর দেহটি বিশাল, দাঁতগুলো ধারালো এবং নখরও দীর্ঘ -সে হয় ক্ষমতার মালিক। সিংহ তাই বনের রাজা। সে সমাজে দুর্বলেরা যেমন ক্ষমতাহীন, তেমনি নিরাপত্তাহীনও। অসভ্য বন্য জীবনে বাঁচার অধিকার, প্রতিবাদ ও ন্যায় বিচার লাভের অধিকার কারোই থাকে না। সে সমাজে দুর্বলরা বাঁচে সবলদের কৃপা নিয়ে এবং তাদের ক্ষুধা মেটাতে। এটিই জঙ্গলের রীতি ও অসভ্যতা। তেমন এক অসভ্য ও ইতর অবস্থা আধুনিক যুগেও যে কতটা বীভৎস রূপে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে –আজকের বাংলাদেশ হলো তারই উদাহরণ।
সভ্য সমাজে প্রত্যেকের যেমন বৈধ পিতা থাকে, তেমনি গণতান্ত্রিক দেশে প্রতিটি সরকারের পিছনেও বৈধ ভোট থাকে। ফলে জারজ সন্তানের ন্যায় কোন জারজ সরকারের অস্তিত্ব কোন গণতান্ত্রিক দেশে ভাবা যায় না। সেটি অসভ্য স্বৈরাচারের প্রতীক। অথচ বাংলাদেশে সে অসভ্য স্বৈরাচারই চেপে বসেছে অতি নৃশংসতা নিয়ে। এবং সেটি ভোট-ডাকাত শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারের নেতৃত্বে। ফলে দেশ ও দেশবাসীর ললাটে যোগ হয়েছে নতুন কলংক। অথচ সে কলংক প্রতিবেশী ভূটান বা নেপালের নেই। শ্রীলংকা ও পাকিস্তানেরও নাই। শেখ হাসিনা, তার দল আওয়ামী লীগের কাজ হয়েছে সে কলংককে শুধু স্থায়ী করা নয়, বরং সেটিকে দিন দিন আরো কুৎসিত করা। তবে আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশের গায়ে এরূপ কলংকলেপন নতুন ঘটনা নয়। দলটির জন্ম থেকে এটিই তাদের লিগ্যাসি বা ঐতিহ্য। পাকিস্তান আমলেও সংসদের অভ্যন্তরে ডেপুটি স্পিকারকে তারা পিটিয়ে হত্যা করেছিল। শেখ মুজিবের হাতে সে কলংক বেড়েছিল শুধু গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা ও আইনের শাসন কবর দেয়াতে নয়, বরং দেশকে ভিক্ষার তলাহীন ঝুড়ি এবং ভারতের অধীনস্থ্য এক গোলাম রাষ্ট্র বানোনার মাধ্যমে।
বাংলাদেশের বুকে অতি শক্তিহীন, অধিকারহীন ও অসহায় হ.লো দেশের জনগণ। তাদের হাতে যেমন অস্ত্র নেই, তেমনি পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন এবং আইন-আদালতও নাই। প্রতিটি সভ্য সমাজে জান-মাল ও ইজ্জত নিয়ে বাঁচার অধিকার যেমন থাকে, তেমনি থাকে ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার। সে অধিকার না থাকলে তাকে কি সভ্য সমাজ বলা যায়? কিন্তু বাংলাদেশে এর কোনটাই নাই। আদালতে রায় লেখা হয় -সরকার যা চায় সেদিকে খেয়াল রেখে। যেমন আব্দুল কাদের মোল্লার জেলের রায়কে ফাঁসির রায়ে পরিবর্তন করা হয়েছে সরকারি দলের চাপে। তবে বাংলাদেশে এরূপ অসভ্যতা কোন স্বল্পকালীন বিষয় নয়, বরং প্রতিদিন এবং প্রতিক্ষণের বিষয়। বন্য পশু থেকে তার পশুত্বকে কখনোই আলাদা করা যায় না। তেমনি জালেম সরকার থেকে আলাদা করা যায় না তার অসভ্য অপসংস্কৃতিকে । জালেম শাসকের রাজনীতি, প্রশাসন ও বিচার-আচার চলে বস্তুতঃ সে অসভ্যতা নিয়েই।
তাই শেখ হাসিনা ও তার দলের অসভ্যতা শুধু ২০১৮ সালের ৩০’শে ডিসেম্বরের ভোট-ডাকাতি নয়। একাত্তরে লক্ষাধিক বিহারী হত্যা, হাজার হাজার রাজাকার হত্যা, মুজিবামলে ৩০ হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মী হত্যা, শাপলা চত্ত্বরের গণহত্যা, চলন্ত বাসে আগুন দেয়া, লগি-বৈঠা নিয়ে রাজপথ রক্তাত্ব করা, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বিরোধীদলীয় নেতাদের হত্যা এবং বিরোধী দলীয় নেত্রীর বাসার সামনে বালির ট্রাক দিয়ে ঘেরাও করার বিষয়ও নয়। বরং সেটি হলো আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের প্রতিদিন ও প্রতিমুহুর্তের রাজনৈতিক নীতি ও সংস্কৃতি। ডেঙ্গুজ্বরের ভাইরাস যেমন প্রচণ্ড জ্বর, মাথা-ব্যাথা, রক্তপাত নিয়ে হাজির হয়, তেমনি রাজনীতির অঙ্গণে আওয়ামী লীগও হাজির হয় গুম, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস এবং ফ্যাসিবাদের জীবাণু নিয়ে।
লজ্জাহীনতাও যেখানে অহংকার
সাধারণ চোর-ডাকাতদেরও কিছু লজ্জাশরম থাকে। তাই দিনে নয়, রাতের আঁধারে মুখে মুখোশ পড়ে চুরি-ডাকাতি করে। কিন্তু এ দিক দিয়ে হাসিনা ও তার দলের নেতাকর্মীগণ অসাধারণ; লজ্জাশরমের লেশমাত্রও নাই। ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষে চোখের সামনে প্রকাশ্যে ভোট ডাকাতিতে নামতে পেরেছে। নবীজী (সাঃ)র হাদীসঃ “লজ্জা হলো ঈমানের অর্ধেক”। ঈমান দেখা যায় না; কিন্তু প্রকাশ পায় লজ্জা-শরমের মাঝে। তাই যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে চুরি-ডাকাতি, ভোট-ডাকাতি, সন্ত্রাস বা দেহব্যবসায় নামে -বুঝতে হবে তার ঈমানের ভান্ডারটি শূণ্য। এরা বাঁচে উগ্র বেঈমানি নিয়ে। সে বেঈমানি টুপি, কালো পট্টি, নামায-রোযা, হজ্ব বা উমরাহ করে ঢাকা যায় না। খুন, গুম,ধর্ষণ, ব্যাংক লুট, শেয়ার মার্কেট লুট, অর্থপাচার ও শত্রু রাষ্ট্রের সেবাদাস হওয়ার ন্যায় ভয়ানক অপরাধগুলিও তখন মামূলী ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
তবে এরূপ লজ্জহীনতা স্রেফ হাসিনা বা দলীয় কর্মীদের মাঝ সীমিত নয়। বরং প্রকট দেশের প্রশাসন, পুলিশ, আদালত, সেনাবাহিনী ও মিডিয়ার মাঝেও। এরূপ লজ্জহীনতার মাঝেই জন্ম নেয় অসভ্য সংস্কৃতি; তখন চুরি-ডাকাতি, ভোট-ডাকাতি, গুম-খুন বা ধর্ষণ কোন অপরাধ গণ্য হয় না। বরং বৈধ ও সভ্য কর্ম মনে হয়। হাসিনা ও তার দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে তাই ২০১৮ সালের ভোট ডাকাতি নিয়ে কোন অপরাধবোধ নাই; বরং বড্ড উৎসব-মুখর। এ ঘৃণ্য অপরাধকেও তারা ন্যায় ও আইনসিদ্ধ মনে করে। চোর-ডাকাতদের হাতে দেশ শাসনের এখানেই মহা বিপদ। চুরিডাকাতি, খুন-ধর্ষণই তাদের মূল অপরাধ নয়, তারা হত্যা করে বিবেকবোধ ও মূল্যবোধকে। নির্মূল করে এমন কি নৃশংস অপরাধকেও ঘৃণা করার সামর্থ্য। ধ্বংস করে ঈমান। যুগে যুগে দুর্বৃত্ত ফিরাউনগণ এভাবেই সমাজে ভগবান রূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বাকশালী মুজিব যে ভারতের সেবাদাস, নৃশংস খুনি এবং গণতন্ত্র হত্যাকারি –তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? বামপন্থি নেতা সিরাজ শিকদারকে হত্যার পর সংসদে দাঁড়িয়ে শেখ মুজিব বলেছিল, কোথায় আজ সিরাজ শিকদার? শুধু তাই নয়, ৩০ হাজার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী হত্যা করে রক্ষি বাহিনীকে দিয়ে। কিন্তু সে অপরাধী মুজিব পেয়েছে জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধুর খেতাব। সেটি সম্ভব হয়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষের বিবেক মারা পড়াতে। সে অভিন্ন পথটি ধরেছে শেখ হাসিনাও। মুজিবের ন্যায় হাসিনাও চায় দেশ জুড়ে ঈমান ও বিবেক নাশের মহামারিটি তীব্রতর করতে। এজন্যই কোর’আনের তাফসিরের বিরুদ্ধে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। নিষিদ্ধ করেছে পিস টিভি ও ইসলাম চ্যানেল। জিহাদ বিষয়ক বই এবং কোর’আনের তাফসির বাজেয়াপ্ত করার কাজে মহল্লায় পুলিশ নামিয়েছে। কারণ, বিবেকের খাদ্য তো কোর’আনের জ্ঞান। কোর’আনের জ্ঞানশূণ্য মানুষেরা গরুর ন্যায় ইতর পশুকেও ভগবান বলে। পুংলিঙ্গকেও পূজা দেয়। এমন জাহেলগণ হাসিনাকে মহামান্য প্রধানমন্ত্রী রূপে সম্মান দিবে –তাতেই বা বিস্ময়ের কী? একারণেই হাসিনার সাফল্যটি এক্ষেত্রে বিশাল। বহু লক্ষ মানুষ –যার মধ্যে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, সেনা অফিসার, আদালতের বিচারপতি এবং সংসদ সদস্য, তার মত ডাকাত সর্দারনীকেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে সালাম দেয়। এমন কি মসজিদ-মাদ্রাসার বহু হাজার হুজুরও তাকে কওমী জননী বলে।
অথচ কোন সভ্য দেশে চোর-ডাকাত ও ভোট-ডাকাত সন্মান পাবে বা প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসবে -সেটি কি ভাবা যায়? ভাবা যায় কি ভোটমুক্ত কোন নির্বাচনের কথা? যে কোন সভ্য দেশের আইনেই ভোট-ডাকাতি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন কি বাংলাদেশের আইনেও। অথচ বাংলাদেশে সে ডাকাতি হয়েছে দশ-বিশটি কেন্দ্রে নয়; সমগ্র দেশজুড়ে। কিন্তু দেশের কোথাও তা নিয়ে কোন বিচার হয়নি এবং কারো কোন শাস্তি হয়নি। যেমন ভোট-ডাকাতি কোন অপরাধই নয়। অথচ হাজার হাজার গৃহস্থের গৃহে ডাকাতির চেয়ে এটি যে শতগুণ জঘন্য অপরাধ –তা নিয়ে কি বিতর্ক চলে? ঘরে ঘরে ডাকাতি হলে অর্থহানি হয় বটে, কিন্তু তাতে দেশবাসীর স্বাধীনতা লুণ্ঠিত হয় না। অথচ ভোট-ডাকাতিতে শুধু স্বাধীনতাই লুণ্ঠিত হয় না, লুণ্ঠিত হয় দেশের রাজস্বভান্ডার, ব্যাংক-বীমা, প্রশাসন ও আইন-আদালত। তখন আদালত থেকে উধাও হয় আইনের শাসন, এবং বিচারে রায় লেখা হয় ডাকাতদের হুকুম মোতাবেক। নিরপরাধ মানুষকেও তখন ফাঁসিতে ঝুলতে হয়। তখন সরকার পায়, যাকে ইচ্ছা তাকে গুম, হত্যা এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের অধিকার। ফলে তখন অসম্ভব হয় সভ্য ও স্বাধীন ভাবে জীবন যাপন। সব চেয়ে বড় কথা, এরূপ অসভ্য শাসনে দেশ ও দেশবাসীর কলংক বাড়ে বিশ্ব জুড়ে। এবং সে কলংক ইতিহাসের বই থেকে কখনো মুছে যায় না।
শ্রেষ্ঠত্ব দুর্বৃত্ত নির্মূলে
দেশের কলংক শুধু সরকারের অপরাধের কারণে বাড়ে না, বাড়ে জনগণের ব্যর্থতার কারণেও। এক্ষেত্র বাংলাদেশের জনগণের ব্যর্থতাটি কি কম? যারা সভ্য ও ভদ্র তারা কি শুধু ভাত-মাছ খায়? তাদের বড় পরিচয়টি হলো, তারা অসভ্য, অভদ্র, চোর-ডাকাত ও সকল জাতের অপরাধীদেরকে ঘৃণা করে। মুসলিম জীবনে এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। মানুষের ঈমান, আমল ও চরিত্রের বড় পরীক্ষাটি হয় এখানে। এখানেই প্রকাশ পায় ঈমানের বল। অনেক চোর-ডাকাত, দেহব্যবসায়ী, সুদখোর, ঘুষখোরও হাজার টাকা দান করে। কিন্তু অন্যায়কে ঘৃণা করার সামর্থ্য তাদের থাকে না। অথচ সে সামর্থ্য না থাকাতে সে নিজেও অসভ্য, অভদ্র এবং অপরাধী হয়। বড় বাড়ী, দামী পোষাক ও ক্ষমতার দাপট দিয়ে কি এ অসভ্যতা কখনো ঢাকা যায়? এরূপ অসভ্য ও অপরাধীদের পক্ষে অসম্ভব হয় ঈমানদার হওয়া। কারণ, ঈমানদারকে শুধু আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূলকে বিশ্বাস করলে চলে না। শুধু নামায-রোযা এবং হজ্ব-যাকাত পালন করলেও চলে না। তাঁকে বাঁচতে হয় যেমন অপরাধীদের বিরুদ্ধে ঘৃণার সামর্থ্য নিয়ে, তেমনি লড়তে হয় তাদের নির্মূল করার অঙ্গিকার নিয়েও। ঘৃণার সে সামর্থ্য এবং লড়াইয়ের সে অঙ্গিকার না থাকলে –এমন ব্যক্তি যেমন বেঈমান হয়, তেমনি অসভ্য এবং অপরাধী হয়। এরাই চোর-ডাকাত ও ভোট-ডাকাতদের দলে শামিল হয়। প্রশ্ন হলো, এরূপ অসভ্য অপরাধীদের দিয়ে কি মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর পবিত্র জান্নাত ভরবেন? তাদেরকে কি জান্নাতের ধারে কাছেও আসতে দিবেন?
বাংলাদেশে এরূপ অপরাধীদের সংখ্যাটি বিশাল। বিশ্বের অন্য যে কোন দেশের তুলনায় বিশাল বলেই বাংলাদেশ দুর্বৃত্তিতে পর পর ৫ বার বিশ্বে প্রথম হয়েছে। নইলে এতটা নীচে নামা মামূলী বিষয় ছিল না। সমগ্র মানব জাতির ইতিহাসে এরূপ অর্জনটি একমাত্র বাংলাদেশেরই। মুজিব আমলে এরূপ ডাকাতগণই এক কালের সুজলা সুফলা দেশকে বিশ্বব্যাপী তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি রূপে পরিচিত করেছিল। যে রূপ নির্বাচন ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হলো সেটিও কি বিশ্বের আর কোথাও হয়েছে? তবে এ কলংকটি কি শুধু শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা ও তাদের দল আওয়ামী লীগের কামাই? দেশের প্রশাসন, পুলিশ, আদালত, সেনাবাহিনী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়াতে যে অসংখ্য অসভ্যদের উপস্থিতি – একাজ তো তাদেরও। হাসিনার ন্যায় প্রমাণিত ডাকাতকে ঘৃণা করা দূরে থাক, তারা বরং তার পক্ষে ডাকাতিও করছে। আজ্ঞাবহ লাখ লাখ ডাকাত থাকলে কি ডাকাত সর্দারনীকে স্বশরীরে ডাকাতীতে নামার প্রয়োজন পড়ে? তখন প্রয়োজন পড়ে হুকুমের। হুকুম পেলে নিজেরাই ডাকাতি করে তারা ডাকাতির মাল সর্দারনীর ঘরে পৌছে দেয়। ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর সমগ্র দেশজুড়ে যে ভোটডাকাতি হলো -সেটি তো এভাবেই হয়েছে। শাপলা চত্ত্বরের গণহত্যাটিও হয়েছিল এ খুনি ডাকাতদের হাতে।
অপমান, অসভ্যতা এবং কলংক যেমন দুর্বৃত্তদের শাসন মেনে নেয়ায়, তেমনি শ্রেষ্ঠত্ব তাদের নির্মূলে। সুরা আল ইমরানের ১১০ আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা মুসলিমদের শ্রেষ্ঠ জাতি বলে অভিহিত করেছেন। সে বিশেষ মর্যাদাটি এজন্য নয় যে, তারা বেশী বেশী নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত পালন করে। বরং এজন্য যে, তারা অন্যায়কে তথা অন্যায়ের নায়কদেরকে নির্মূল করে এবং ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা দেয়। অথচ বাংলাদেশীগণ নিজেদের মুসলিম রূপে পরিচয় দিলেও তারা এ পথে নাই। তারা চলছে সম্পূর্ণ বিপরীত এজেন্ডা নিয়ে। অতীতে মুসলিমগণ যে শুধু নিজেদের জন্মভূমি থেকে অপরাধীদেরকে নির্মূল করেছিলেন তা নয়, নির্মূল করেছিলেন এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বহু দেশ থেকে। কারণ, ইসলামের এজেন্ডা কোন ভাষা বা ভূগোলের সীমারেখা দ্বারা সীমিত নয়। সেটি হলে কি তুর্কী বীর ইখতিয়ার মহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি বাংলা বিজয়ে আসতেন? আর না এলে ভয়ানক বিপদটি হতো বাংলার মুসলিমদের। তারা বঞ্চিত হতো ইসলাম থেকে। তখন ধর্মের নামে তারা মগ্ন হতো গরুপূজা, শর্পপূজা, মুর্তিপূজা ও লিঙ্গপূজা নিয়ে।
মাছি-চরিত্রের মানুষ ও নাশকতা
মহান আল্লাহতায়ালার ক্ষুদ্র দুটি সৃষ্টি হলো মাছি ও মৌ’মাছি। এ দুটি ক্ষুদ্র প্রাণীর উল্লেখ রয়েছে পবিত্র কোর’আনেও। মৌ’মাছির নামে একটি সুরার নামকরণও করা হয়েছে। সেটি হলো সুরা নামল। পবিত্র কোর’আন কোন বিজ্ঞান বা জীব বিজ্ঞানের বই নয়; এটি হিদায়েতের গ্রন্থ। পবিত্র এ কিতাবে নানা জীবের উল্লেখ করা হয়েছে যাতে মানব তাদের জীবন থেকে হিদায়েত নেয়। প্রশ্ন হলো, মাছি ও মৌ’মাছি থেকে শিক্ষণীয় বিষয়টি কি? মৌ’মাছির জীবনে বাঁচার মূল মিশনটি হলো মানব কল্যাণ। সে লক্ষ্যে মৌ’মাছি আমৃত্যু মেহনত করে । এবং হাজার হাজার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌচাক গড়ে। তারা বাঁচে জামায়াতবদ্ধতা নিয়ে। মৌচাকের মধু মৌ’মাছি নিজে খায় না, মানুষকে খাওয়ায়। মানুষের জন্য মধুতে রয়েছে বহুমুখি কল্যাণ। শিক্ষণীয় আরেকটি বিষয় হলো, মৌ’মাছি কখনোই আবর্জনায় বসে না; খুঁজে ফুল। মৌ’মাছির ন্যায় ঈমানদারগণও তাই বর্জন করবে আবর্জনা, মানব কল্যাণে হবে নিবেদিত প্রাণ এবং বাঁচবে জামাতবদ্ধ এক সুশৃঙ্খল জীবন নিয়ে। একমাত্র তখনই দেশ কল্যাণ কর্মে ভরে উঠে।
অপর দিকে মাছি বাঁচে নানারূপ অকল্যাণ নিয়ে। সে কখনোই ফুলের উপর বসে না; খুঁজে দুর্গন্ধময় গলিত আবর্জনার স্তুপ। আবর্জনার মাঝেই তার বসবাস ও বংশবিস্তার। রোগ-জীবাণু ছড়ানো এবং মানব বসতিকে বাসের অযোগ্য করাই তার আমৃত্যু মিশন। মাছি মালেরিয়া, ডেঙ্গু, কলেরা ও ডায়োরিয়ার ন্যায় বহু ভয়াবহ রোগের মহামারি ঘটায়। লক্ষণীয় হলো, সমাজে অবিকল মাছি-চরিত্র নিয়ে বাস করে চোর-ডাকাত, ভোট-ডাকাত, খুনি, ধর্ষক, ঘুষখোর, সূদখোর, দেহব্যবসায়ী তথা সমাজের সকল অসভ্য অপরাধীগণ। এরা পাপাচারের প্রতিষ্ঠান খুঁজে এবং সযত্নে দূরে থাকে মসজিদ, মাদ্রাসা, কোরআনের ক্লাস, ইসলামি সংগঠন থেকে। এমন কি অতীতে এরা নবী-রাসূলদের পাশেও ভিড়েনি। মশামাছির ন্যায় রাষ্ট্রের বুকে এদের বংশ বিস্তার ও দখলদারি বাড়লে, ভয়ানক বিপদ বাড়ে জনগণের। তখন গুম, খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের রাজনীতি দেশের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়। সভ্য সমাজের নির্মাণে এজন্যই মশামাছির নির্মূলের ন্যায় অতি গুরুত্বপূর্ণ হলো এ অসভ্য অপরাধীদের নির্মূল। ইসলামে এ নির্মূলের কাজটিই হলো পবিত্র জিহাদ। যে সমাজে এ জিহাদ নাই সে সমাজে রাস্তাঘাট, ক্ষেতখামার, ঘরবাড়ী, কলকারখানা বাড়লেও সভ্য রাষ্ট্র ও সভ্যতা নির্মিত হয় না।
মশামাছি কখনোই তাদের কাঙ্খিত বাসস্থানটি চিনতে ভূল করে না। তেমনি ভূল করে না অপরাধীগণও। তারা খুঁজে অপরাধীদের হাতে অধিকৃত রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের অপরাধীগণ তাই আওয়ামী লীগকে চিনতে কোন কালেই ভূল করেনি। সেটি মুজিব আমলে যেমন নয়, তেমনি হাসিনার আমলেও নয়। ফলে দেশজুড়ে লুটপাট ও ভোট-ডাকাতিতে মুজিব ও হাসিনার কোন কালেই লোক বলের অভাব হয়না। লোক বলের অভাব হয় না লগি-বৈঠা নিয়ে রাস্তায় দলীয় ক্যাডার নামাতে। মশামাছি কখনোই মৌ’মাছির সাথে মেশে না; তাদের থাকে নিজস্ব দল ও নিজস্ব রুচি। সে দল ও রুচি নিয়েই তাদের চলাফেরা। একই রূপ চরিত্র অপরাধ জগতের নেতা-কর্মীদেরও। ফলে অতি নৃশংস অপরাধীদের ঘৃণার সামর্থ্য তাদের থাকে না। এটির কারণ, নৈতিক মৃত্যু। দেহ নিয়ে বাঁচলেও তারা নীতি-নৈতিকতা ও ঈমান নিয়ে বাঁচে না। এজন্যই প্রতিবেশী ভারতে মুসলিমগণ হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হলেও হাসিনা ও তার দলীয় নেতাকর্মীদে মুখে প্রতিবাদ নাই। বরং হাসিনার এজেন্ডা, অপরাধীদের সাথে বন্ধুত্ব মজবুত করা। গুজরাতে মুসলিম বিরোধী গণহত্যার নায়ক নরেন্দ্র মোদী এজন্যই হাসিনার এতো ঘনিষ্ট বন্ধু। মোদির ন্যায় খুনির সাথে মিতালী দৃঢ়তর করতে হাসিনা নিয়মিত আম ও পাঞ্জাবী পাঠায়। (মোদি সে কথাটি মিডিয়াকে বলেছে এবং যা প্রকাশও পেয়েছে।) খুনিকে ঘৃণা করার মত সামান্য বিবেকবোধ যার মধ্যে আছে -সে কি কখনো মোদির ন্যায় গণহত্যার নায়ককে বন্ধু রূপে গ্রহণ করতে পারে? বস্তুতঃ যারা শাপলা চত্ত্বরে গণহত্যা করতে পারে তারাই গুজরাতের গণহত্যার নায়কের বন্ধু হতে পারে।
অসভ্যতা অপরাধীদের নির্মূলে ব্যর্থতায়
চুরি-ডাকাতি, ভোট-ডাকাতি, খুন-গুম, ধর্ষণ, সন্ত্রাস তথা নানা রূপ অপরাধ কর্মে অংশ নেয়াটাই শুধু অপরাধ নয়, অপরাধ ও অসভ্যতা হলো সেরূপ অপরাধীদের মাথায় তুলে মান্যতা দেয়া। সে অসভ্য কাজটি হয় তাদেরকে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি, নেতা বা প্রশাসনের কর্মকর্তা করার মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশে তো সেটিই হয়েছে। দুর্গন্ধময় আবর্জনাকে যারা আবর্জনার স্তুপে না ফেলে গৃহে জমা করে -তাদরকে কি সভ্য, ভদ্র বা সংস্কৃতবান বলা যায়? অসভ্যতাদের নির্মূল না করাটাই চরম অসভ্যতা। সমাজের সবচেয়ে ক্ষতিকর জীবগুলো শুধু মশামাছি নয়, চোর-ডাকাত, ভোট-ডাকাত, ধর্ষক এবং খুন-গুমের নায়কগণও। সভ্য সমাজে তাদেরকে গৃহের চাকর-বাকর বা রাস্তার ঝাড়ুদারও করা হয় না। তাদের পাঠানো হয় কারাগারে বা কবরস্থানে। অথচ বাংলাদেশে তাদেরকে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, এমপি তথা সরকারের উচ্চাসনে বসা হয়। তাদের নির্মূলে ইসলামের এজেন্ডাটি অতি সুস্পষ্ট। পবিত্র কোর’আন শুধু নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত ফরজ করতে নাযিল হয়নি; নাযিল হয়েছে শরিয়তের আইন প্রতিষ্ঠা দিতে। শরিয়তের আইন হলো অপরাধীদের নির্মূলে মহান আল্লাহপ্রদত্ত হাতিয়ার। এ হাতিয়ারের প্রয়োগ না হলে দেশ অপরাধীদের দখলে যায় এবং জোয়ার আসে অসভ্যতার। তাতে ব্যর্থ হয় ইসলামের মূল এজেন্ডা। তাই খোলেফায়ে রাশেদার আমলে একটি দিনও কি শরিয়তের আইন ছাড়া চলেছে? এমন কি ভারতে মুসলিম শাসনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজির আদালতে শরিয়তের আইন প্রতিষ্ঠিত ছিল। সে আইন বিলুপ্ত করেছিল ইংরেজ কাফেরগণ। ইংরেজগণ শুধু ইসলামে অবিশ্বাসী ছিল না; বিশ্বব্যাপী আগ্রাসন, দস্যুবৃত্তি, খুন, বর্ণগত নির্মূল, ব্যাভিচার ও নানারূপ অপরাধ ছিল তাদের মজ্জাগত। তারা যে শরিয়তের বিলুপ্তি ঘটাবে -সেটিই ছিল স্বাভাবিক। তারা আইন বানিয়েছিল নিজেদের আগ্রাসন, কুফরি বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও অপরাধ কর্মগুলি বাঁচাতে। ফলে তাদের আইনে সাম্রাজ্যবাদি দস্যুবৃত্তি, বেশ্যাবৃত্তি, মানব খুন, অত্যাচার, জুয়া, মদ্যপানের ন্যায় নানারূপ অপরাধও বৈধতা পেয়েছে। বাংলাদেশে ইংরেজ শাসনের বিলুপ্তি ঘটেছে; কিন্তু বিলুপ্ত হয়নি তাদের দর্শন ও জীবনধারার অনুসারি সেক্যুলারিস্ট খলিফাদের শাসন। ফলে ইংরেজদের প্রণীত কুফরি আইন ও বিচারব্যবস্থা বাংলাদেশে আজও বেঁচে আছে; এবং আজও বহাল রয়েছে শরিয়তের বিলুপ্তি। বাঙালী মুসলিমদের ব্যর্থতা অনেক। তবে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটি হলো দেশে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা না দেয়া। শরিয়তের প্রতিষ্ঠা মুসলিম জীবনে এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালার সুস্পষ্ট হুশিয়ারিটি হলোঃ “আমার নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী যারা বিচার করে না তারা কাফের।…তারা জালেম। …তারা ফাসেক।” –(সুরা মায়েদা, আয়াত ৪৪,৪৫,৪৭)। মুসলিম রাষ্ট্রের মেরুদ্ন্ড হলো এই শরিয়ত; একমাত্র এটিই কাফের রাষ্ট্র থেকে তাকে পৃথক করে –মুসলিম জনসংখ্যা নয়। তাই শরিয়ত ছাড়া কি ইসলাম পালন হয়?
আদালতে শরিয়তের বিচার না থাকায় দেশবাসীর ক্ষয়ক্ষতির অংকটি হয় বিশাল। দেশের সকল চোর-ডাকাতদের চুরি-ডাকাতির ফলে দেশ ও দেশবাসীর এ যাবত যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে –ভোট-ডাকাতদের শাস্তি না দেয়াতে ক্ষতিটি হয়েছে তার চেয়ে বহুগুণ অধীক। ডাকাতি হয়ে গেছে সমগ্র দেশ। অথচ জনগণের দেয়া শত শত কোটি টাকার রাজস্বের অর্থ ব্যয় হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী, সেনা বাহিনী, প্রশাসনিক বাহিনী এবং আদালতের বিচারক পালতে। কিন্তু এ ভোট-ডাকাতি রুখতে ও ডাকাতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে তাদের অবদানটি শুণ্য। বরং তারা পরিণত হয়েছে ডাকাতদের লাঠিয়ালে। ইসলামে চুরির শাস্তি হলো হাত কেটে দেয়া। কিন্তু যারা সমগ্র দেশের উপর ডাকাতি করে তাদের শুধু হাত কাটলে কি ন্যায় বিচার হয়? সভ্য দেশে তাদের মৃত্যুদন্ড বা প্রাণদন্ড দেয়া হয়। কিন্তু সে বিচার ব্যবস্থা বাংলাদেশে নাই। ফলে বাংলাদেশে চোর-ডাকাতেরাই শাসকের আসনে জেঁকে বসেছে। এবং এসব চোর-ডাকাতদের বিরুদ্ধে কথা বলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য হচ্ছে এবং অপহরণ, হত্যা, গুম ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে নিরপরাধ মানুষ।
শেখ হাসিনার আদর্শ হলো তার পিতা শেখ মুজিব। কিন্তু তার ডাকাতিটাও কি কম নৃশংস ছিল? তার ডাকাতিতে প্রাণ হারিয়েছিল গণতন্ত্র। জনগণ থেকে ভোট না নিয়েই নিজেকে তিনি আজীবনের জন্য প্রেসিডন্ট ঘোষণা দিয়েছিলেন। জনগণের ভোটের উপর ডাকাতিকে তিনি জায়েজ করিয়ে নিয়েছিলেন নিজ দলের কলাবোরেটরদের দিয়ে। নিষিদ্ধ করেছিলেন সকল বিরোধী দলগুলিকে। নিজে শত শত মিছিল-মিটিং করলেও তিনি কেড়ে নিয়েছিলেন বিরোধীদের মিছিল-মিটিং করা ও ভোট দানের স্বাধীনতা। নিষিদ্ধ করেছিলেন সকল বিরোধী দলীয় পত্রিকা। প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন এক দলীয় বাকশালী শাসক। সেটি ঘটেছিল ১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এদিনটি ছিল আরেক দেশ-ডাকাতির দিন। আওয়ামী লীগের শাসন মানেই ডাকাতদের শাসন। এবং ডাকাতগণই ছিল একাত্তরের নায়ক। তাদের হাতে ১৯৭০-য়ে জনগণের ভোটের উপর ডাকাতি করেছিল গণতন্ত্র ও স্বায়ত্বশাসনের মুখোশ পড়ে। একাত্তরের যুদ্ধ, মুজিবের হাত দিয়ে অর্জিত ভারতের গোলামী এবং সে সাথে বাংলাদেশের আজকের ফ্যাসিবাদী রাজনীতি –এসবই হলো সে বিশাল ডাকাতীর ধারাবাহিকতা। তাদের না জানলে অজানা থেকে যায় বাংলাদেশের ইতিহাস।
যারা গণতন্ত্রের শত্রু, তারা জনগণেরও শত্রু। শেখ হাসিনা তারই প্রমাণ। জনগণের বন্ধু হলে সে কি জনগণের ব্যালটের উপর ডাকাতি করতো? মিছিল-মিটিং ও কথা বলার স্বাধীনতা কেড়ে নিত? গুম-খুন ও সন্ত্রাসের রাজনীতি চালু করতো? যারা নিজেদের প্রতিষ্ঠা দিয়েছে ভোট-ডাকাত রূপে -তাদের থেকে এর চেয়ে সভ্য কিছু কি আশা করা যায়? ১৬/৬/২০১৯ তারিখে ২০ লাখ মানুষের মিছিল হয়েছে হংকং’য়ে। অথচ হংকং’য়ের জনসংখ্যা ঢাকার সিকি ভাগও নয়। কিন্তু সে রকম মিছিল ঢাকাতে অসম্ভব। কারণ, হংকং’য়ে ঢাকার ন্যায় অপরাধীদের শাসন নাই। জনগণ সেখানে মানবিক অধীকার নিয়ে বাঁচে। ফলে মিছিল-মিটিং ও বাক-স্বাধীনতা তাদের সংস্কৃতির অঙ্গ। অথচ ঢাকায় সে রকম মিছিল হলে সেটি শাপলা চত্ত্বরের গণহত্যাতে পরিণত হতো। বাংলাদেশের মানুষ আর কতকাল এক ডাকাত সর্দারনীকে প্রধানমন্ত্রী রূপ সন্মান দেখাতে থাকবে? মানব রপ্তানি, পোষাক রপ্তানি, চিংড়ি রপ্তানি বাড়িয়ে বা দুয়েকটি ক্রিকেট ম্যাচ জিতে কি সে অপমান দূর করা যায়? বস্তুতঃ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো এটি। এবং সে ব্যর্থতার কথা ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী।
দুর্বৃত্ত শাসনের বড় নাশকতাটি
গরু-ছাগলেরা চোর-ডাকাত, ভোট-ডাকাত, খুনি, ধর্ষক ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে না; তারা ঘাস পেলেই খুশি। অথচ সভ্য মানুষের আচরণটি ভিন্নতর। মহল্লায় চোর-ডাকাত ঢুকলে তাদের ধরা ও শাস্তি দেয়ার মধ্যেই মানবিক পরিচয়। সেটি না হলে দেশ অপরাধীদের দখলে যায় এবং অসভ্যতায় ভরে উঠে। এতে দেশ দ্রুত বাসের অযোগ্য হয়। কিন্তু স্বৈরাচারি শাসকগণ নিজেরাই যেহেতু অপরাধী, অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনগণের এ ঘৃণা ও প্রতিরোধকে তারা ভয় পায়। তারা চায়, গরুছাগলের ন্যায় জনগণও ভোজন-সর্বস্ব পশুতে পরিণত হোক এবং বিলুপ্ত হোক বিবেকবোধ এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণাবোধ। চায়, জনগণ তাদের কু-কর্মে সহায়ক শক্তিতে পরিণত হোক। দুর্বৃত্তদের শাসনের এটিই সবচেয়ে বড় নাশকতা। তাদের শাসন দীর্ঘকাল চললে জনগণ পানাহারে বাঁচলেও বিবেকশূণ্য ও মানবতাশূণ্য হয়। তখন জনগণের গলায় গোলামীর রশি পড়িয়ে কিছুটা বেতন বাড়ায়। হাসিনার সরকারও তাই স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে বেতন বাড়িয়েছে। তাছাড়া বেতনের অর্থ তো আর তার নিজের পকেট থেকে আসছে না। গরু ঘাস পেলে যেমন লাঙ্গল টানে; মানব রূপী এরূপ আত্মসমর্পিত পশুগণও তেমনি বেতন পেলে সরকারি দলের ডাকাতে পরিণত হয়। তখন স্বৈরাচারি সরকার বাঁচাতে ভোট-ডাকাতি, গুম-খুন বা গণহত্যা চালাতেও তাদের মনে সামান্যতম দংশন হয় না।
পাকিস্তানের ন্যায় বাংলাদেশ ভারতের প্রতিদ্বন্দী একটি পারমানবিক শক্তি হতে পারিনি -বাংলাদেশের জন্য সেটিই মূল ব্যর্থতা নয়। দেশবাসীর সবচেয়ে কলংকজনক ব্যর্থতাটি হলো চোর-ডাকাত ও ভোট-ডাকাতদের ন্যায় অসভ্যদের শাসন নির্মূলের ব্যর্থতা। চোর-ডাকাত মাত্রই অসভ্য ও নৃশংস হয়। সভ্য জনগণ তাই সমাজ থেকে শুধু আবর্জনাই সরায় না, চোর-ডাকতদেরও সরায়। নইলে সভ্য ভাবে বাঁচাটি অসম্ভব হয়; সমাজ তখন কানায় কানায় পূর্ণ হয় অসভ্যতায়। অতীতে সে পথ ধরেই বাংলাদেশ দুর্বৃত্তিতে পাঁচ বার বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে। বাংলাদেশীদের সাম্প্রতিক কলংকটি হলো, তারা এক ডাকাত সর্দারনীকে প্রধানমন্ত্রী রূপে স্থান দিয়েছে। কোন সভ্য দেশে কোন কালেও কি এমনটি ঘটেছে?
বাংলাদেশীদের জন্য বিপদের আরো কারণ হলো, দেশটির অসভ্য ও অপরাধী শাসকগণ একাকী নয়। তাদের পিছনে রয়েছে আরেক ভয়ানক অপরাধী সরকার। সেটি ভারতের বিজিপি সরকার। ভারত তার নিজ দেশে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লাগাতর যুদ্ধ শুরু করেছে। সেদেশে মুসলিমদের হত্যা করা, ঘরাড়ি থেকে বহিস্কার করা, তাদের গৃহে আগুণ দেয়া এবং মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করা বস্তুতঃ সে যুদ্ধেরও অংশ। গরুর রশি হাতে দেখলে মুসলিমদের পিঠিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। মাথায় টুপি থাকলে টুপি কেড়ে নিয়ে ‘জয় রামজি’ ও ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’ বলতে বাধ্য করা হচ্ছে। এবং তাদের রাস্তায় পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। মুসলিম নির্মূলের এ যুদ্ধে মূল সেনাপতি হলো নরেন্দ্র মোদি। মোদি তার শাসনমালে গুজরাতে ২০০২ সালে ২ হাজারের বেশী মুসলিমকে হত্যার ব্যবস্থা করে। মোদির লক্ষ্য, মুসলিমদের মুসলিম রূপে বাঁচাটিই অসম্ভব করা। কোন মুসলিম কি এমন খুনির বন্ধু হতে পারে?
পরকাল বাঁচানোর জিহাদ
খুনির বন্ধু হতে হলে তো তাকেও খুনি বা খুনের সমর্থক হতে হয়। হত্যা করতে হয় তার ঈমানকে। ঈমান শুধু ব্যক্তিকে নামায-রোযার ন্যায় ইবাদতেই উদ্বুদ্ধ করে না, বরং বিশ্বের নানা প্রান্তের মজলুম মুসলিমের প্রতি সহমর্মিতা নিয়ে বাঁচতে শেখায়। সে সহমর্মিতাই প্রমাণ করে সে মুসলিম উম্মাহর অংশ। দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হাত-পা দেহের ব্যাথা অনুভব করে না। তেমনি মুসলিম উম্মাহ থেকে বিচ্ছন্ন ব্যক্তিও অনুভব করে না অন্য মুসলিমের বেদনা। বেদনার সে অনুভুতিটি আসে ঈমান থেকে। তাই কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, মায়ানমার, ভারত বা অন্য যে কোন দেশের গুলিবিদ্ধ, ধর্ষিতা, অত্যাচারিত মুসলিমের বেদনা যদি কেউ হৃদয়ে অনুভব না করে -তবে বুঝতে হবে সে ঈমানদার নয়। এমন ব্যক্তি বাঙালী, ভারতীয়, পাকিস্তানী, আরব বা অন্য কিছু হতে পারে –কিন্তু সে মুসলিম নয়। সে বেদনা না থাকাটাই শত ভাগ প্রমাণ করে তার অন্তরে ঈমানের লেশ মাত্র নাই। অথচ ভারতে রাস্তায় নেমে সে বেদনার প্রকাশ করাটি যেমন শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তেমনি অবস্থা বাংলাদেশেও। এভাবেই হাসিনা অসম্ভব করছে বাঙালী মুসলিমদের শুধু মুসলিম রূপে বাঁচা নয়, সভ্য মানুষ রূপে বাঁচাও। তাই বাংলাদেশের বুকে তার শাসন যতই দীর্ঘায়ীত হবে –বাংলাদেশীরা ততই পরিণত হবে গণতন্ত্রমুক্ত, ঈমানশূন্য ও মানবতাশূণ্য ভোজন-বিলাস জীবে। এভাবে তারা দূরে সরছে শুধু ইসলাম থেকে নয়, বরং মানবিক পরিচয় থেকেও। হাসিনা এভাবে বাঙালী মুসলিম জীবনে শুধু বিচ্যুতি ও কলংকই বাড়াচ্ছে না, ধাবিত করছে পরকালীন আযাবের দিকেও। তাই দেশ থেকে অসভ্য-অপরাধীদের শাসন নির্মূল স্রেফ রাজনীতির বিষয় নয়, এটি পরকাল বাঁচানোর জিহাদ। ১১/০৮/২০১৯
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018