বাংলাদেশে কেন এতো অসভ্য তাণ্ডব?
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 5, 2019
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
মানবপশুর তাণ্ডব
মনুষ্যজীব হিংস্র পশুতে পরিণত হলে পরিনাম যে কতটা অশ্লীল ও ভয়াবহ হয় -পহেলা বৈশাখে ঢাকার রাজপথে সেটিই প্রমাণিত হলো। রাজধানীতে বাঘ-ভালুকের চলাফেরা নেই,কিন্তু মানবরূপী হিংস্র পশুর উপস্থিতিটি বিশাল। নইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে হাজার হাজার মানুষের সামনে পশুগণ এরূপ অসভ্য তাণ্ডবের সাহস পায় কি করে? দেশের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব স্রেফ মানবশিশুকে শিক্ষক,ডাক্তার,প্রকৌশলী,বিজ্ঞানী বা অন্য পেশাজীবী রূপে গড়ে তোলা নয়,বরং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো হিংস্র পশু হওয়া থেকে তাদেরকে বাঁচানো।এবং মানবিক গুণ নিয়ে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা। কিন্তু সে কাজটি বাংলাদেশে যে যথার্থ ভাবে হয়নি সেটিই বার বার প্রমাণিত হচ্ছে।ফলে দেশে যতই বাড়ছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ততই বাড়ছে মানববেশী পশুর সংখ্যা। আজ থেকে শত বছর আগে বাংলাদেশের বুকে যখন কোন বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না,তখনও কি কোন শহরে বা গ্রামে প্রকাশ্য দিবালোকে নারীর উপর এরূপ দলবদ্ধ হামলা ও শ্লীলতাহানীর ঘটনা ঘটেছে? আবারো প্রমাণ মিললো,নারী মাংসের প্রতি প্রচন্ড ক্ষুধা নিয়ে মানবরূপী এ হিংস্র পশুগণ বিপুল সংখ্যায় পথেঘাটে ভদ্রবেশে চলা-ফেরা করে। সুযোগ পেলেই এ জীবগুলো মুখোশ খুলে স্বমুর্তিতে আবির্ভুত হয়,এবং হানা দেয় ও ক্ষুধাও মেটায়।এবারের পহেলা বৈশাখে এরূপ হিংস্র পশুদের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে লুন্ঠিত হলো বহু নারীর সম্ভ্রম।এলাকাটি নিভৃত বনজঙ্গল নয়,পতিতাপল্লিও নয়।বরং বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্টদের কাছে এটিই সেক্যুলার সংস্কৃতির তীর্থকেন্দ্র।আর সেখানেই অনুষ্ঠিত হলো এ আদিম বন্যতা।
বর্ষবরণের নামে ঢাকার রাজপথে গত ১৪ই এপ্রিলে যা ঘটেছে তা কোন সভ্য দেশে ঘটে না।শ্লীলতাহানীর এ বর্বর তাণ্ডবটি নিমিষের ব্যাপার ছিল না। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ,এ অসভ্যতা ঘটেছে ২ ঘন্টা ধরে। এবং সেটি রাতের আঁধারে বা গহীন জঙ্গলে ঘটেনি। ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্দানের গেটের সামনে।এবং দিন-দুপুরে ও হাজার হাজার মানুষের চোখের সামনে। ঘটেছে পাশে দন্ডায়মান পুলিশের সামনে। ১৮ই এপ্রিল দৈনিক মানব জমীনের রিপোর্ট,এ অসভ্য জন্তুগুলো উৎসবভরে মেয়েদের কাপড় খুলেছে,এবং বিবস্ত্রদের রাস্তায় শায়ীত করে ইজ্জত লুটেছে।তাদের সহচররা ভেঁপু বাজিয়ে ঘের বেঁধে উৎসব করেছে। এমন বীভৎস কান্ড টিএসসি সামনে স্থানে স্থানে জটলা বেঁধে হয়েছে। সন্তানের সামনে মায়েরা এবং স্বামীর সামনে স্ত্রীরা লাঞ্ছিতা হয়েছে। হাতজোড় করেও তারা রক্ষা পায়নি। যেন জঙ্গলে একপাল নেকড়ের মাঝে অসহায় কিছু মানুষ পড়েছিল।তবে পার্থক্য হলো,শিকার ধরে এরূপ উৎসব করার রুচি ক্ষুধার্ত পশুদের থাকে না। এ অসভ্য দুর্বৃত্তরা এতটাই বেহায়া ও বেপরওয়া ছিল যে,হাজার হাজার মানুষ ও পুলিশের সামনেও অসভ্যতা জাহিরে লজ্জা পায়নি।ভেড়ার পালে যেমন নেকড়ে ভয় পায় না,এ হিংস্র পশুদের মনেও তেমনি ভয়ের উদয় হয়নি।বরং যারা থামানোর চেষ্টা করেছে তাদের উপরই চড়াও হয়েছে। বন্যপশুদের তুলনায় মানবপশুদের সুবিধাগুলি বিশাল। বন্যপশুরা মানব সমাজে আশ্রয় ও প্রশ্রয় পায় না,তাই প্রাণ বাঁচাতে তাদের ত্বরিত বনে ফিরে যায়। কিন্তু মানব পশুগণ মানুষের মাঝে বেঁচে থাকে এবং প্রশ্রয় ও প্রতিপালন পায় নিজ ঘর ও নিজ সমাজে। বনের পশুদের চিনতে এমনকি শিশুও ভূল করে না,কিন্তু এ মানবপশুদের চিনে উঠতে অধিকাংশ মানুষই ভূল করে। ভূল করে পুলিশও।ফলে ক্ষুধা মিটিয়ে নিরাপদে তারা ঘরে ফিরতে পারে;এবং সেখানে নিরাপত্তাও পায়।পহেলা বৈশাখের পশুরাও তাই নিরাপদে ঘরে ফিরে যেতে পেরেছে। জনতা বা পুলিশ –কেউই তাদের গায়ে একটি আঁচড়ও কাটতে পারিনি।তাদের সামনে বরং বিপুল সুযোগ,ভবিষ্যতে আরো হিংস্র ও দলে ভারী হওয়ার।
কাপুরুষ জনগণ
খবরের ভয়াবহতা শুধু এ নয়,বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বহু নারী শ্লীলতা হারিয়েছে।আরো ভয়ানক খবর হলো,নারীদের শ্লীলতাহানীর সে অসভ্য উৎসবের বিরুদ্ধে বিশাল জনসমুদ্র থেকে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে উঠেনি।দুর্বৃত্তদের উপর কেউ বীর বিক্রমে ঝাঁপিয়েও পড়েনি।জনগণের আচরণ ছিল ভেড়ার পালের ন্যায়। ভেড়া যেমন নেকড়ের সাথে লড়াই করে না,তেমনি নরপশুদের বিরুদ্ধে জনগণও লড়েনি। ফলে কোন একজন নরপশুও আহত হয়নি।এমনটি কি কোন সভ্য সমাজে ভাবা যায়? এমন পরিস্থিতি দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে জিহাদ তো ফরজ হয়ে যায়। অথচ সেখানে যারা হাজির হয়েছিল তারা মুর্খ গ্রামবাসী ছিল না। অধিকাংশই ছিল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী।সেক্যুলার শিক্ষার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যে কীরূপ মানবতাহীন,দায়িত্বহীন ও মেরুদন্ডহীন কাপুরুষ উৎপাদিত হচ্ছে এ হলো তার প্রমাণ। গ্রামবাংলার নিভৃত কোণে কোন নারী এরূপ বিপদে পড়লে কি এমনটি হতো? বিপদের আরো কারণ,সরকারপন্থি পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়ার কাছে এরূপ বীভৎস অসভ্যতা আদৌ কোন অপরাধ কর্ম রূপে গণ্য হয়নি। যেন তারা কিছু দেখেনি,কিছু শোনেওনি। ১৯/০৪/১৫ তারিখে আওয়ামী লীগপন্থি দৈনিক জনকন্ঠ তো এরূপ ভয়ানক ঘটনাকে ইসলামি মৌলবাদিদের মিথ্যা প্রপাগান্ডা বলে চিত্রিত করেছে।অথচ রিপোর্টটি স্রেফ কোন মৌলবাদি পত্রিকার নয়,অন্যান্য পত্রিকারও।ছবি ছড়িয়ে পড়েছে এমনকি ইন্টারনেটেও। দৈনিক মানব জমিন রিপোর্ট করেছে (১৮/০৪/২০১৫),অনেক বিবস্ত্র নারী তাদের পাশবিকতার ক্ষুধা মিটাতে গিয়ে সড়কের উপর জ্ঞানও হারিয়ে ফেলে।দুর্বৃত্তদের কাছে কেউ কেউ করজোরে আব্দার করেছিল যেন পাশবিকতার শিকার মেয়েদের প্রাণে না মারা হয়।
প্রশ্ন হলো,চোখের সামনে এরূপ অসভ্য কর্ম হতে দেখে কি কোন সভ্য মানুষের আচরন এরূপ হয়? সে অসভ্য দুষ্কর্ম রুখার কঠোর নির্দেশ তো মহান আল্লাহতায়ালার।নামাযের সময় হলে মুসলমান মাত্রই নামায পড়ে। নইলে কি ঈমান থাকে? নামাযের হুকুম অমান্য করলে অমার্জনীয় বিদ্রোহটি হয় মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে।ইসলামে এরূপ বিদ্রোহীরাই তো কাফের। তেমনি চোখের সামনে অপরাধ কর্ম হতে দেখে সেটি রুখার চেষ্টা না করলে কি ঈমান থাকে? অপরাধ রুখার দায়িত্ব কি স্রেফ পুলিশের? সে দায়িত্ব তো প্রতিটি ঈমানদারের। মুসলমানকে শুধু নামায-রোযা,হজ-যাকাত পালনের হুকুম মানলে চলে না। তাকে তো “আ’’মিরু বিল মারুফ” (ন্যায়ের নির্দেশদান) ও “নেহী আনিল মুনকার” (অন্যায়ের নির্মূল)-মহান আল্লাহতায়ালার এ অলংঘনীয় নির্দেশটিও মানতে হয়। মুসলিম দেশের মহল্লায় তাই পুলিশের প্রয়োজন পড়েনা,প্রতিটি ঈমানদারই পুলিশে পরিণত হয়। মুসলমানদের গৌরব কালে তাই এতো পুলিশ ছিল না।কিন্তু ঈমানহীনতায় কি সেটি সম্ভব? সে তখন স্বার্থপর ও আত্মকৃন্দ্রীক হয়,অন্যের বিপদে সে তখন জড়ায় না। পাশের গরুটি জবাই হলেও অন্য গরুরা যেমন নিশ্চিন্তে ঘাট খায়,স্বার্থপর এ জীবগণও তেমনি কারো বিপদ দেখলে ঘাড় ফিরিয়ে ভেগে যায়। বরং সুযোগ পেলে অসহায় নরনারী থেকে নিজেরাও স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করে। ঈমানহীনতা ব্যক্তিকে তাই শুধু দায়িত্বহীন দর্শকেই পরিণত করে না,অসভ্য কর্মের ভাগীদারও করে ফেলে।
বাংলাদেশে ঈমানহীনতা ও বিবেকের অসুস্থ্যতা কি শুধু যৌন সন্ত্রাসীদের? সে রোগ ছড়িয়ে পড়েছে জনগণের মাঝেও –বিশেষ করে সেক্যুলার চেতনার মানুষগুলির মাঝে। বর্ষবরণের নামে ঢাকার রাজপথে লাখে লাখে যে জনতা নেমে এসেছিল তারা যে কতটা দায়িত্বশূণ্য সেটির প্রমান তো তারা নিজেরাই দিয়েছে। প্রমান দিয়েছে দেশের পুলিশও। পাহারারত পুলিশ সেদিন কাউকে গ্রেফতার করেনি। এমন কি যে দুইজন অপরাধিকে ঘটনাস্থল থেকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল তাদেরকেও পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। পুলিশ সে অসভ্য ঘটনার নীরব দর্শকে পরিণত হয়।পত্রিকায় প্রকাশ,সে জনসমুদ্র থেকে মাত্র একজন হিন্দু ছাত্র তার গায়ের পাঞ্জাবী খুলে বিবস্ত্র এক নারীকে দেয়।নিজের গায়ের বস্ত্র খুলে আরেক বিবস্ত্র নারীকে দিয়েছিল একজন রিকশাচালক।আরো লক্ষণীয় হলো,সে তাণ্ডবের আশে পাশে দাড়ি-টুপিধারি কোন ইসলামিস্ট ছিল না। কারণ,বর্ষবরণ বাংলাদেশের ইসলামিস্টদের সংস্কৃতি নয়।ফলে সে জনসমুদ্রে যারা উপস্থিত ছিল তাদের শতভাগই ছিল সেক্যুলারিস্ট। ফলে সেক্যুলারিস্টদের কদর্য ও কাপুরুষ চরিত্রটিই সেদিন ধরা পড়েছে।
অসুস্থ্য চেতনাটি একাত্তরের
কোন গৃহে আগুন লাগলে পাশের গৃহবাসীদের বিবেকের সুস্থ্যতা বা অসুস্থ্যতাও তখন প্রকাশ পায়। সুস্থ্য বিবেকের প্রতিবেশীগণ সে আগুণ থামাতে হাতের কাছে যা পায় তা নিয়ে লেগে যায়। কিন্তু অসুস্থ্য চেতনায় সেটি ঘটে না। মৃত ব্যক্তির ন্যায় মৃত বিবেকের মানুষও ভাল কাজের সামর্থ হারায়। বিবেকের সে মৃত্যুটি প্রকট ভাবে ধরা পড়ে যখন চোখের সামনে কেউ খুন হয় বা নারীর শ্লীলতাহানি হয় এবং সে নীরব থাকে।বাঙালী চরিত্রের যে কদর্যতা বার বার ধরা পড়েছে। সেটি বেশী ধরা পড়েছিল একাত্তরে। একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনীর পরাজয়ের পর ৪ জন বন্দী রাজাকারকে কাদের সিদ্দিকী ঢাকা স্টেডিয়ামে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছিল। যেন সে নৃশংসতা ছিল সেদিনের সবচেয়ে বড় স্পোর্টস –তাই স্টেডিয়ামে আয়োজিত হয়েছিল। হাজার হাজার দর্শক তখন অতি উৎসবভরে সে নৃশংস হত্যাকান্ডকে দেখেছিল।অথচ সেটি ছিল আন্তর্জাতিক আইনে ভয়ানক যুদ্ধাপরাধ। যুদ্ধে প্রতিদেশেই মানব-হত্যা হয়। কিন্তু সে হত্যা নিয়ে যখন উৎসব হয় তখন সেটি আন্তর্জাতিক খবর হয়। নিরস্ত্র ও বন্দী মানুষ হত্যার সে উৎসবের খবরটি বিশ্বের নানাদেশের পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হয়। এরূপ বীভৎস বর্বরতা নিয়ে খোদ শেখ মুজিবকে প্রশ্ন করতে সেদিন ঢাকায় ছুটে এসেছিলেন প্রখ্যাত ইটালিয়ান সাংবাদিক ওরিয়ানা ফালাসী।মুজিবের মুখে সেদিন কোন সদুত্তর ছিল না। আাওয়ামী ক্যাডারদের ন্যায় অপরাধ নিয়ে উৎসব করার এরূপ বিবেকহীনতা ছিল খোদ শেখ মুজিবেরও।তাই বন্দী সিরাজ সিকদারকে হত্যা করে সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি বাহাদুরি দেখিয়েছেন। বলেছেন,কোথায় আজ সিরাজ সিকদার? এবং এরূপ বিবেকহীনতাই তো একাত্তরের চেতনা। এবং বিবেকহীনতা যখন নারীর শ্লীলতাহানীর উৎসবে পরিণত হয় তখনই সেটি খবর হয়।পত্রপত্রিকায় সেটি প্রকাশও পায়। কিন্তু কত হাজার নারী যে নানা কাম্পাসে ও নানা জনপদে যৌনসন্ত্রাসীদের হাতে নিভৃতে শ্লীলতা হারাচ্ছে সে খবর ক’জনের?
একাত্তরে শুরু হওয়া সে রোগটির আদৌ চিকিৎসা হয়নি। ফলে বিহারী মহিলাদের শ্লীলতাহানীর মধ্য দিয়ে যে বীভৎসতার শুরু,সেটি এখন বাঙালী রমনীদের উপর গিয়ে পড়েছে। পাপীরা যে মা-বোনদেরও ছাড়ে না এ হলো তারই প্রমাণ। ফলে পাকিস্তান আমলের একাত্তরের যুদ্ধপূর্ব ২৩ বছরে যত ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশ একমাসে তার চেয়ে বেশী নারী ধর্ষিতা হচ্ছে। পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ঘটেছে পাকিস্তানের ২৩ বছরে কোথাও কি ঘটেছে? আরো বিপদের কারণ,এ রোগের চিকিৎসার বদলে চলছে রোগটিকে আরো গভীরতর ও দেশময় করার আয়োজন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে যা কিছু ঘটছে,তা যে অচিরেই অন্যান্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও নগরবন্দরে ছড়িয়ে পড়বে তা নিয়ে কি কোন সন্দেহ আছে?
দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীনতাটি সেদিন নানা ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। পুলিশ যেমন দায়িত্ব পালন করেনি,তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও দায়িত্বপালন করেনি। দায়িত্বপালন করেনি উপস্থিত জনগণও। অভিযোগ উঠেছে,ক্যাম্পাসে যখন নারীদের শ্লীলতাহানি হচ্ছিল তখন সে খবরের বার্তাবাহক গিয়ে দেখেন,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোর কম্পিউটার গেমস খেলায় ব্যস্ত। খেলা ছেড়ে কিছু করার প্রয়োজনবোধ করেনি। আর পুলিশের হাতে দুই অপরাধীকে তুলে দিলেও পুলিশ সে দুইজনকে ছেড়ে দেয়। বরং ঘটনার পর পুলিশ কর্তৃপক্ষ শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে। জনগণকে বুঝাতে চেষ্টা করছে,শ্লীলতাহানীর এরূপ কোন ঘটনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেনি। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলছে,পত্রিকায় ও ইন্টারনেটে শ্লীলতাহানির যে ছবি ছাপা হয়েছেঠ সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের।যেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান অন্য কোন দেশে বা জঙ্গলে যা বাংলাদেশের পুলিশ বিভাগের দায়িত্ব-বহির্ভূত। আরো প্রশ্ন হলো,নারীদের ইজ্জত-আবরু যে দেশে দিন-দুপুরে রাজধানীর জনসমুদ্র ও পুলিশের সামনে লুন্ঠিত হয় সে দেশে রাতের আঁধারে নিভৃত গ্রামে নারীগণ কতটা নিরাপদ? সভ্যদেশে এমন ঘটনা ঘটলে ত্বরিত বেগে সেখানে পুলিশ পৌছে যায়;এবং অপরাধীদের গ্রেফতার করে।বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে এমন ঘটনা ঘটলে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি,প্রভিসি বা প্রক্টোরের ঘুম হারাম হয়ে যায়। কিন্তু ঢাকায় সেদিন সেরূপ কিছুই ঘটেনি। চারিদিক থেকে পুলিশী নীরবতার বিরুদ্ধে যখন প্রতিবাদ উঠছে তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে,তারা সিসি টিভির ছবি দেখে অপরাধিদের গ্রেফতার করবে।সেটি যে স্রেফ জনগণকে শান্তু করার লক্ষ্যে তা বুঝে উঠা কি এতটাই কঠিন? পুলিশের পক্ষ থেকে এরূপ প্রতিশ্রুতি পূর্বেও বহুবার শোনানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়েছে কী? বিগত ৬ দিনে পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি।
অসভ্যতার বাম্পার কেন আওয়ামী আমলে?
বর্ষা শুরু হলেই ব্যাঙের ডাক শুরু হয়।তেমনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে অসভ্যতারও নয়া রেকর্ড নির্মীত হয়। রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের ন্যায় যৌন সন্ত্রাসীরাও তখন নতুন জীবন ফিরে পায়। হেতু কী? ব্যাঙের ন্যায় দুর্বৃত্তরাও উপযোগী পরিবেশ চিনেত ভূল করে না। বাংলাদেশের ইতিহাসে যৌনসন্ত্রাসের সবচেয়ে ইতর ঘটনাটি ঘটেছিল শেখ হাসিনার প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়াতে। সেটি ঘটেছিল জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।তখন মানিক নামের এক ছাত্রলীগ কর্মী বিশ্ববিদ্যালয় কাম্পাসে ধর্ষণে সেঞ্চুরির উৎসব করেছিল। বর্বর সে কুকর্মের খবরটি ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকায় ফলাও ভাবে প্রকাশ পায়। কিন্তু হাসিনা সরকার সে ভয়ানক অপরাধীকে গ্রেফতার করেনি এবং তার বিরুদ্ধে কোনরূপ বিচারও করেনি। বরং নিরাপদে বিদেশে পাড়ি দেয়ার সুযোগ করে দেয়। হাসিনার আমলেই বাংলাদেশ প্রথমবার দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করে। তখনও দূর্নীতির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ব্যাধি না সারালে তা দিন দিন বৃদ্ধি পায় –সেটিই রীতি। সেরূপ অবস্থা নৈতীক রোগের ক্ষেত্রেও। কিন্তু বাংলাদেশে ঘটেছে উল্টোটি। নির্মূলের চেয়ে বরং সে নৈতীক রোগের পরিচর্যা দেয়া হয়েছে অধীক। সেটি রাজনৈতিক প্রয়োজনে। কারণ,প্রতিপক্ষ নির্মূলে এ যৌন সন্ত্রাসীরা দলের রাজনৈতিক সন্ত্রাসী রূপে কাজ করে। আওয়ামী বাকশালীদের কাছে এরূপ সন্ত্রাসী সৈনিকদের দলে রাখাটি নারীর ইজ্জত-আবরু রক্ষার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।তাদের কাছে যৌন সন্ত্রাস যেন বোনাস। জাপানী স্বৈরশাসকগণ তাদের সৈন্যদের এরূপ বোনাস দিত যৌনদাসীদের দিয়ে। সে যৌনদাসীদের সংগ্রহ করেছিল অধিকৃত কোরিয়া,ভিয়েতনাম,ক্যাম্বোডিয়ার ন্যায় দেশ থেকে। একাত্তরে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর বিহারী মহল্লায় আওয়ামী দুর্বৃত্তদের একারণেই বলাৎকারে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। প্রশ্ন হলো,এমন দুর্বৃত্ত আওয়ামী সন্ত্রাসীগণও কি কাম্পাসের ছাত্রীদের যৌন সেবাদাসের চেয়ে বেশী কিছু ভাবে? সেরূপ একটি ভয়ানক রুগ্ন চেতনা মগজে বাসা না বাঁধলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কর্মীটি ধর্ষণে সেঞ্চুরি উদযাপনের স্পর্ধা পায় কি করে? কেনই বা ঘটবে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে বা কাম্পাসে ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে মেয়েদের বার বার লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা?
দেশ যখন স্বৈরাচারি দুর্বৃত্তদের হাতে অধিকৃত হয় তখন দেশবাসি শুধু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সন্ত্রাসেরই শিকার হয় না,নেমে আসে যৌন সন্ত্রাসও।বাংলাদেশ তো তেমনি এক অধিকৃত দেশ। রাজনৈতিক সন্ত্রাস রূপ নেয় নৃশংস ফ্যাসিবাদি স্বৈরাচারে। পুলিশ,র্যাব,বিজিবী ও সেনাবাহিনীর সেপাইরা সে সন্ত্রাসে ক্ষমতাশীল দলের আজ্ঞাবহ লাঠিয়াল। ফ্যাসিবাদি স্বৈরাচারে মানুষ মৌলিক মানবাধিকার হারাবে,নিরাপরাধ মানুষ গুম,খুন ও জেল-জুলুমের শিকার হবে এবং বহু মানুষ ফাঁসিতে ঝুলবে –সেটিই তো স্বাভাবিক।অর্থনৈতিক অঙ্গনেও তখন শুরু হয় চরম সন্ত্রাস।ফলে শুরু হয় বাংক-ডাকাতি,শেয়ারমার্কেট ডাকাতি ও টেন্ডার-ডাকাতির ন্যায় নানারূপ চুরিডাকাতি ও লুটপাট। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সন্ত্রাসের সাথে শুরু হয় যৌনসন্ত্রাসও।বাংলাদেশের নারী-পুরুষ আজ সর্বপ্রকার সন্ত্রাসের শিকার। লক্ষ্যণীয় হলো,চলমান যৌনসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আওয়ামী ঘরানার সেক্যুলারিস্ট নেত্রীগণ আজ নীরব। পহেলা বৈশাখে এত কিছু হয়ে গেল,কিন্তু তারা রাস্তায় নামেনি। কারণটিও বোধগম্য। তাদের কাছে নারীর শ্লীলতা ও সম্ভ্রমের চেয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে বাঁচিয়ে রাখাটি বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আওয়ামী লীগের বাঁচার মধ্যেই তাদের বাঁচা। অথচ এরাই ২০১৩ সালে হেফাজতের ইসলামের সমাবেশ থেকে এক বেপর্দা নারী সাংবাদিককে নিরাপত্তার স্বার্থে স্থান ছাড়তে বলায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছিল। সেটি নারী স্বাধীনতার উপর আঘাত বলে অভিযোগ এনেছিল। এরা হলো আওয়ামী ঘরানার খাঁচার ঘুঘু। খাঁচাবদ্ধ এ ঘুঘুদের কাজ হলো বাইরের আজদা ঘুঘুদের খাঁচার দাসত্বে আহ্বান করা।
অসভ্য সংস্কৃতি
স্বৈরাচারে শুধু অসভ্য রাজনীতিই থাকে না,থাকে অসভ্য সংস্কৃতিও। সে অসভ্য রাজনীতি ও সংস্কৃতির থাকে আন্তর্জাতিক রূপও। নানা ভাষা,নানা বর্ণ,নানা দেশ ও নানা যুগের স্বৈরাচারি শাসকগণ তাই একই সুরে কথা বলে। যুগে যুগে তাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অসভ্যতাটিও তাই অভিন্ন।বিশ্বের যে কোন দেশে স্বৈরাচারি শাসনামলে নিরপেক্ষ আদালত বলে কিছু থাকে না। দায়িত্ববান পুলিশ ও প্রশাসন বলেও কিছু থাকে না। বিচারকগণ সে রায়ই দেয় যে রায় দিতে স্বৈরাচারি শাসকের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়।স্বৈরাচারি শাসনামলে তাই জেল বা ফাঁসির শাস্তির জন্য অপরাধী হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না,ক্ষমতাসীন সরকারের বিরোধী হওয়াই সে জন্য যথেষ্ট।বিচারক,প্রশাসক ও পুলিশ তখন স্বৈরাচারি শাসকের হুকুমের তাঁবেদারে। তারা শুধুমাত্র সে কাজই করে যে কাজে সরকারের পক্ষ থেকে হুকুম দেয়া হয়। তাদের মূল কাজটি সরকারের গদি বাঁচানো,জনগণের জানমাল বা ইজ্জত বাঁচানো নয়। সরকারের গদি বাঁচানোর প্রয়োজনে নির্যাতনের পাশাপাশি তাদের উপর নির্বিচারে গুলি চালানোর অনুমতিও থাকে। তাই বাংলাদেশ যখনই কোন স্বৈরাচারি শাসকের যারা অধিকৃত হয়েছে তখন সে স্বৈরাচারের অসভ্য আচরণগুলোও প্রকাশ পেয়েছে। সেটি যেমন মুজিব আমলে,তেমনি হাসিনার আমলেও। একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচারকে মুজিব গণতন্ত্র রূপে প্রচার করেছিল।পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দেয়াকে বলা হতো বাকস্বাধীনতা। তেমনি শেখ হাসিনার কাছেও ভোট-ডাকাতির নির্বাচন হলো গণতন্ত্র। মুজিবামলের ন্যায় পুলিশ,রক্ষিবাহিনী,র্যাব,সেনাবাহিনী,বিজিবী পরিণত হয়েছে স্রেফ স্বৈরাচারি শাসকের পাহারাদারে। তাদের সে ভূমিকাটি দেখা গেছে ২০১৩ সালে ৫ মে তারিখে রাতে শাপলা চত্বরে। সরকারের হুকুম পালনে তারা সদাপ্রস্তুত। সেটিই প্রমাণ করতে হেফাজতে ইসলামের জমায়েতে শতশত মানুষকে নৃশংস ভাবে হতাহত করে। মৃত মুসল্লীদের লাশ ময়লার গাড়িতে তুলে গায়েবও করেছে।সরকারের হুকুম ছাড়া কোন এ্যাকশনে যেতে তারা রাজী নয়। এমনকি চোখের সামনে নারীর সম্ভ্রম লুন্ঠিত হতে দেখেও নয়। পহেলা বৈশাখে যৌন সন্ত্রাসীদের কাউকে গ্রেফতার না করার হেতু তো এটিই।তাছাড়া পুলিশ,র্যাব ও বিজিবি’র সদস্যরা তো নিজেরাই মানুষ খুন করে ও গুম করে। ফলে এরূপ অপরাধীদের কাছে কি নারীর শ্লীলতাহানি কি আদৌ অপরাধ গণ্য হয়? পুলিশ জানতো,আওয়ামী শাসনামলে তাদের দলীয়কর্মী ভিন্ন অন্য কারো প্রকাশ্যে নারী মাংস শিকারের স্পর্ধা থাকে না। সেদিন কাউকে গ্রেফতার করার অর্থ ছিল সরকারি দলের নেতাকর্মীদের গায়ে হাত দেয়া। সরকারি চাকুরি করে কোন পুলিশ কি সে সাহস দেখাতে পারে? সেদিন সাহায্য চেয়েও পুলিশ থেকে তাই সাহায্য জুটেনি। অথচ এ পুলিশই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার,গুম বা হত্যা করায় তরিৎকর্মা।
শীত যখন আসে তখন তা শুধু দেশের রাজধানীতে আসে না, অন্যত্রও আসে। সেটি অশ্লীলতা ও যৌনসন্ত্রাসের ক্ষেত্রেও। নববর্ষ,থার্টিফাস্ট নাইট,ভালবাসা দিবস পালনের অশ্লীলতা তাই শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সীমিত নয়।পত্রিকায় প্রকাশ,নারীরা লাঞ্ছিত হচ্ছে এবং অতীতে বার বার শ্লীলতা হারিয়েছে জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়,চট্টগ্রাম,বরিশালসহ দেশের অন্যান্য বিভিন্ন স্থানে।এবং সেটি ফি বছর। আজ থেকে ৫০ বছর আগে ক’টি পরিবারে কাঠের দরজা ছিল? ক’টি ঘরে মজবুত বেড়া ছিল? এতো থানা-পুলিশও কি তখন ছিল? কিন্তু সেদিন ক’জন নারীর এরূপ শ্লীলতাহানি হয়েছে? অথচ আজ পুলিশের চোখের সামনে নারীর উপর হামলা হচ্ছে। কারণ,স্বৈরাচার শুধু দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিই পাল্টায়না,পাল্টিয়ে দেয় দেশের প্রশাসনিক সংস্কৃতিও। পুলিশী নীরবতা একারণেই আজ সর্বস্তরে। সে নীরবতার কারণে সাহস বেড়েছে সমাজের দুর্বত্ত পশুদের। ২০১০ সালে বর্ষবরণ ও থার্টি ফাস্ট নাইটে এ পশুরা প্রায় ২০ জন ছাত্রী লাঞ্ছিত করেছিল।কিন্তু সে অপরাধে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। কোনরূপ শাস্তিও কাউকে দেয়া হয়নি।২০০০ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের রাতে শাউন আখতার বাঁধন নামের এক নারীকে বিবস্ত্র করা হয়েছিল। তখনও কারো শাস্তি হয়নি। এমন কি এ বছরেও ১০ মার্চ তারিখে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ক্রিকেট বিজয়ের উৎসবে টিএসসির সামনে ছাত্রীরা লাঞ্ছিত হয়।ক’দিন আগে জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে উপর্যপরি ধর্ষিতা হয়েছে এক উপজাতীয় ছাত্রী। কিন্তু অপরাধীদের কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। ২০১০ সালে ২রা অক্টোবরে বরিশালের মূলাদীতে ছাত্রলীগ কর্মীরা দুই বোনকে ধর্ষণ করে। ২০১০ সালে ২৬শে এপ্রিল তারিখে ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউশনে ১ ছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। বাংলাদেশের পত্রিকাগুলো ঘাঁটলে এরূপ শত শত ঘটনা নজরে পড়বে।ছাত্রলীগ কর্মীগণ আজ শুধু রাজনৈতিক সন্ত্রাসী নয়,তারা পরিণত হয়েছে ভয়ানক যৌনসন্ত্রাসীতে। এ অপরাধীদের কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এবং আদালত শাস্তি দিয়েছে -সে প্রমাণ নেই।
কেন অসভ্যতার এ তাণ্ডব?
দুর্বৃত্তগণ সর্বত্র জন্মা না,বেড়েও উঠে না।তারাও উপযোগী রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক পরিবেশ খোঁজে। ইসলামপূর্ব জাহিলিয়াত যুগে আরবের বুকে যে দুর্বৃত্তগণ বিপুল ভাবে বেড়ে উঠেছিল তারাই উপযোগী পরিবেশ না পেয়ে নবীজী (সাঃ)ও তাঁর মহান সাহাবাদের শাসনামলে নির্মূল হয়ে গিয়েছিল। দেশ অপরাধীদের দ্বারা অধিকৃত হলে অশ্লিলতা ও দুর্বৃত্ত উৎপাদনে তখন বাম্পার ফলন হয়।সেটি যে শুধু জাহেলিয়াত যুগের আরদের মাঝে ছিল –তা নয়,মুর্তিপুজারি ভারতীয় ও বাঙালীদের মাঝেও ছিল।মন্দিরে মন্দিরে দেব-দেবীর উলঙ্গ মুর্তির মাঝে সে অসভ্যতা এখনো বেঁচে আছে। এমন জাহেলিয়াতের কারণে শ্রীকৃষ্ণের উলঙ্গ প্রেমলীলাও ধর্ম,শিবের লিঙ্গপুজাও ইবাদত। পুজামন্ডপের সামনে নরনারীর মিলিত নাচগান বা উলুধ্বনি হলো সংস্কৃতি। আওয়ামী বাকশালীরা বাংলাদেশের জনগণকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে এরূপ জাহেলিয়াতের দিকে ফিরিয়ে নিতে চায়। ধর্ম যার যার কিন্তু পূজা সবার – এ রূপ শ্লোগান তো সে জন্যই দেয়া হচ্ছে। এটিই তাদের রাজনীতির মূল মিশন। ইসলামের বিরুদ্ধেই এজন্যই তাদের এতো শত্রুতা। তেমন এক গভীর শত্রুতা নিয়েই শেখ মুজিব সকল ইসলামি দলকে নিষিদ্ধ করেছিল।এবং দলগুলির নেতাদের কারারুদ্ধ করেছিল।
মুসলমানের দায়বদ্ধতা বিশাল। প্রতি মুহুর্তে তাকে বাঁচতে হয় চেতনায় মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণকে নিয়ে। এ স্মরণই তাকে পাপের পথ থেকে বাঁচায়। এভাবে সে বাঁচে জাহান্নামের আগুন থেকে। ঈমানদারের নামায-রোযা,হজ-যাকাত,তাসবিহ-তাহলিল,কোরআন তেলাওয়াতসহ প্রতিটি ইবাদত হলো মূলত মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ। পথ চলায় অন্যমনস্ক হলে দিনের বেলাতেও পা গর্তে পড়ে। তেমনি মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ থেকে বিচ্যুত হলে এমনকি ঈমানদারও ব্যক্তিও সিরাতুল মোস্তাকীম থেকে পথভ্রষ্ট হয়।সে ব্যক্তিও তখন মুনাফিক বা কাফেরে পরিণত হয়। তাছাড়া মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ থেকে বিচ্যুত হওয়ার বিপদ যে কত ভয়ানক সেটি হুশিয়ারি এসেছে খোদ মহান আল্লাহতায়ালা থেকে। বলা হয়েছে, “এবং যারা আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল তার উপর আমি শয়তান নিয়োগ করে দেই। এবং সে তার সঙ্গিতে পরিণত হয়।” –(সুরা জুখরুফ,আয়াত ৩৬)।উপরুক্ত আয়াতটির অর্থ দাঁড়ায়,যে ব্যক্তির মধ্যে আল্লাহর যিকর নাই সে কখনোই একা নয়,তার সাথে সর্বক্ষণ সঙ্গিরূপে থাকে পাপিষ্ঠ শয়তান। আর ঘাড়ের উপর শয়তান থাকার বিপদ তো ভয়ানক। তখন অসম্ভব হয় হিদায়েতে পথে চলা। সে সাক্ষ্যটিও দিচ্ছেন মহান আল্লাহতায়ালা।পরবর্তী আয়াতে তাই বলেছেন,“নিশ্চয়ই তারা (শয়তান)সত্যপথ থেকে তাদেরকে বিপদগামী করে,অথচ ভাবে তারা সত্যপথ প্রাপ্ত।” সুরা জুখরুফ আয়াত ৩৭)।পহেলা বৈশাখের অসভ্যতার তাণ্ডব হলো সেটি কি কোন সুস্থ্য মানুষের কাজ? এটি তো একমাত্র তাদের দ্বারাই সম্ভব যাদের বিবেক শয়তানের দ্বারা অধিকৃত।এমন ব্যক্তিদের পক্ষে মিথ্যাচার,চুরি-ডাকাতি,সন্ত্রাস,অশ্লিলতা,ধর্ষণ,মানুষ হত্যাও অতি সহজ হয়ে যায়। সেক্যুলার রাজনীতির মূল মিশন তো এটাই। তাদের রাজনীতিতে আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর দ্বীনের বিজয়ে ব্যক্তির অঙ্গিকার ও জিহাদ হলো সন্ত্রাস।
অধিকৃতি পৌত্তলিক শক্তির
অথচ ঈমানদারের কাছে আল্লাহতায়ালার যিকর শুধু জায়নামাযের বিষয় নয়,সেটি তার রাজনীতি,সংস্কৃতি,ব্যবসা-বাণিজ্য,বুদ্ধিবৃত্তিসহ প্রতিমুহুর্তের বাঁচার। এমন কি যিকর থাকে তার একাকী পথচলাতেও। এ যিকর শুধু আল্লাহতায়ালার নামের স্মরণ নয়,বরং তার নিজের উপর অর্পিত ঈমানী দায়বদ্ধতার স্মরণ। ঈমানদারের রাজনীতিতে তাই জয় বাংলা,জয় হিন্দ বা জয় সমাজতন্ত্রের ধ্বনি উচ্চারিত হবে সেটি কি ভাবা যায়? তার মুখে তো থাকে গগনবিদারী “নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবর”এর যিকর।মু’মিনের বাঁচার মিশন তো মহান আল্লাহতায়ালার নামকে সর্বত্র বড় করা এবং তাঁর সার্বভৌমত্ব ও শরিয়তকে রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা দেয়া। সেক্যুলারিস্টদের চেতনায় যেহেতু আল্লাহর স্মরণ নেই,ফলে তাদের ঘাড়ে প্রতিক্ষণ অবস্থান নেয় শয়তান –মহান আল্লাহতায়ালার সে প্রতিশ্রুতিটি এসেছে পবিত্র কোরআনে। সেক্যুলারিস্ট মাত্রই তাই শয়তানের দ্বারা অধিকৃত (possessed) –আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ তাই তাদের মজ্জাগত। এজন্যই সেক্যুলারিস্টদের হাতে দেশ অধিকৃত হলে ব্যক্তি,সমাজ ও রাষ্ট্র জুড়ে অধিকৃতি বাড়ে শয়তানের। তখন শুধু গণতন্ত্র ও মানবাধিকারই কবরে যায় না,কবরে যায় ইসলামি ধর্মীয় অনুশাসন ও তাহযিব-তামু্দ্দনও।পাপের রাজ্যে তখন মহাপ্লাবন আসে।জোয়ার আসে নাচ-গান,উলুধ্বনি,মঙ্গল প্রদীপ,আল্পনা আঁকা, হোলি খেলা ও মুর্তি গড়ার হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির। শয়তানের অধিকৃতির কারণে পৌত্তলিকদের পূজাও তখন সার্বজনীন হয়। পূজাকে সার্বজনীন করতেই শেখ হাসিনা দলবল নিয়ে পূজামন্ডপে যান এবং কথাবার্তা বলেন অবিকল হিন্দু পৌত্তলিকের মত। ২০১১ সালের ৫ই অক্টোবর দুর্গা পূজা উপলক্ষে তিনি গিয়েছিলেন রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনে। পূজামন্ডপের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি যা বলেছিলেন সে কথা বলার পর কেউ কি মুসলমান থাকে? বলেছিলেন,“আমরা জানি এবং শুনেছি মা দুর্গা প্রত্যেক বছর কোনো না কোনো বাহন চড়ে আমাদের এ বসুন্ধরায় আসেন। এবার আমাদের দেবী এসেছেন গজে চড়ে। জানি, গজে চড়ে এলে এ পৃথিবী ধন-ধান্যে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে—তা আমরা দেখতেই পাচ্ছি। এবার ফসল ভালো হয়েছে। মানুষ সুখেই-শান্তিতে আছে। দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পেয়ে ৭ ভাগে দাঁড়িয়েছে।”-(দৈনিক আমার দেশ, ৬ই অক্টোবর, ২০১১)।
রাষ্ট্রপ্রধানের যে পবিত্র আসনটিতে বসেছিলেন স্বয়ং নবীজী (সাঃ),এবং তাঁর ইন্তেকালের পর বসেছিলেন হযরত আবু বকর (রাঃ),হযরত উমর (রাঃ),হযরত উসমান (রাঃ)ও হযরত আলী (রাঃ)র ন্যায় মহান সাহবাগণ,১৫ কোটি মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশে সে আসনটি হাইজ্যাক হয়ে গেছে পৌত্তলিক চেতনার এমন এক ব্যক্তির আছে যার প্রবল বিশ্বাস দেশে ভাল ফসল হয় হিন্দুদের দেবী দুর্গা হাতিতে চড়ে আসাতে।পূজা মন্ডপে গিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার করুণার কথাটি তার মনে নিমিষের জন্যও উদয় হয়নি। মুসলিম দেশের উপর দেবদেবী পূজারীদের এরূপ অধিকৃতি প্রতিষ্ঠা পেলে সে দেশের মুসলিম জনগণ কি সেটি একটি দিনের জন্যও মেনে নিতে পারে? মুসলিম জনসংখ্যা যখন বাংলাদেশের একটি ইউনিয়নের জনবসতির সমানও ছিল না তখনও তারা আরব ভূমিতে সেটি মেনে নেয়নি। পৌত্তলিক আধিপত্য নির্মূলে জানপ্রাণ দিয়ে তারা জিহাদ করেছেন।
ইবাদতের সিঁড়ি ও মাগফিরাত
সলাম কবুলের সাথে সাথে প্রকৃত মু’মিনের জীবনে মহান আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্যে পৌঁছার বিরামহীন তাড়াহুড়া শুরু হয়। তাড়াহুড়ার সে নির্দেশটি এসেছে মহান আল্লাহতায়ালা থেকেই। বলা হয়েছে,“তাড়াহুড়া করো তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে মাগফিরাত লাভে ও জান্নাত লাভে –যে জান্নাতের বিস্তার আসমান-জমিন তূল্য এবং যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য” –(সুরা আল ইমরান,আয়াত ১৩৩)। আর মাগফিরাত লাভের উপায় তো ইবাদত। ইবাদতের যে সিঁড়িটি বেয়ে রাব্বুল আ’লামীনের সান্নিধ্যে পৌঁছতে হয় সে সিঁড়ির প্রথম ধাপটি হলো নামায-রোযা।এবং সর্বোচ্চ ধাপটিতে হলো জিহাদ।এ দুই প্রান্তিক ধাপের মাঝে যেমন জ্ঞানার্জন ও জ্ঞানদানের ধাপ আছে,তেমনি তাবলিগ ও হিজরত আছে,এবং আছে অর্থ,শ্রম ও সময়ের কোরবানী।আছে শত্রুশক্তির সাথে লড়াই। এবং সর্বোচ্চ ধাপটি হলো আল্লাহর পথে জীবনদানের। জীবনদানের পর্বে যারা পৌঁছতে পারে তাদেরকে বলা হয় শহীদ।সিঁড়ির সর্বশেষ এ ধাপটিই হলো সরাসরি জান্নাতে প্রবেশের খোলা দরজা।মহান আল্লাহতায়ালা সেটি খুলে দেন শহীদদের জন্য। সিঁড়ির শুরুর ধাপটিতে তথা নামায-রোযার পর্বে ঘুষখোর,সূদখোর,মদখোর,ধোকাবাজ,মিথ্যাবাদি তথা মোনাফিকগণও পা রাখতে পারে। এমন কি আল্লাহ সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়ত প্রতিষ্ঠার যারা ঘোরতর বিরোধী তারাও নামাযীর বেশে সে সিঁড়িতে হাজির হতে পারে। কিন্তু তা থেকে তারা উপরে উঠতে পারে না;আজীবন নীচের ধাপেই থেকে যায়। আল্লাহর রাস্তায় প্রাণদান দূরে থাক,সেরূপ কাজে স্বপ্ন দেখার সামর্থও তাদের থাকে না। কিন্তু সে সিঁড়ির সর্বোচ্চ ধাপটিতে যারা পৌঁছতে পারে সে শহীদদের পুরস্কারটি তো বিশাল। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা,যারা তাঁর রাস্তায় জীবন দান করবে তাদের সকল গুনাহকে তিনি মাফ করে দিবেন এবং বিনাহিসাবে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।এবং তিনি নিষেধ করেছেন এসব শহীদদের মৃত বলতে।ফলে তাদের জীবনে থাকবে না কবরের আযাব,আলমে বারযাখ,পুলসিরাত ও রোয-হাশরের বিচার।
সামনে মহাবিপদ
সারাটি জীবন যে ছাত্র স্কুলের প্রথম শ্রেণীতেই কাটিয়ে দেয়,তার জীবনে কি কোন সাফল্য বা পুরস্কার জোটে? সাফল্যের জন্য তো তাকে প্রতিধাপে পরীক্ষা দিয়ে লাগাতর উপরে উঠতে হয়। নবীজী (সাঃ)র সাহাবাগণ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ এজন্য,তাদের কেউই সিঁড়ির প্রথম ধাপে জীবন কাটিয়ে দেননি। তারা সবাই উঠেছেন সর্বোচ্চ ধাপে। তাদের জীবনে যেমন নামায-রোযা ও হজ-যাকাত ছিল,তেমনি ছিল ইলম,হিযরত ও জানমালের কোরবানী। ছিল অর্থ ও রক্তদানের জিহাদও। নবীজী (সাঃ)র এমন কোন সাহাবা ছিলেন না যিনি জিহাদে অংশ নেননি। শতকরা ৭০ ভাগের বেশী সাহাবা শহীদ হয়ে গেছেন। নবীজী (সাঃ)র পিছনে সে সময়ও অনেকে নামায পড়েছেন। কিন্তু তারা সিঁড়ির সে নীচের ধাপটি থেকে এক ধাপও উপরে উঠেনি বরং নীচে নেমেছে। তারা শুধু যে জিহাদ থেকে দূরে থেকেছে তা নয়,শত্রুশক্তির সাথে মিলে ষড়যন্ত্র করেছে মুসলমানদের ক্ষতি সাধনে। তাদেরকে তাই মুনাফিক বলা হয়েছে। নবীজী (সাঃ)র সাহাবা হওয়ার মর্যাদা তাদের জুটেনি। প্রশ্ন হলো,বাংলাদেশের ১৫ কোটি মুসলমানের নামায-রোযা ও হজ-যাকাত কি এজন্য যে তারা পৌত্তলিক শাসনের প্রতি আত্মসমর্পণ করবে? আত্মসমর্পণ তো নীচে নামার পথ। এ পথ তো জাহান্নামের। এরূপ আত্মসমর্পণে মহান আল্লাহতায়ালার আযাব কি তাদের উপর অনিবার্য হয়ে উঠবে না? পরকালেই বা তারা মহান আল্লাহর দরবারে জবার দিবে কীরূপে?
শেখ হাসিনা ও তার অনুসারিরা চায়,বাংলাদেশের জনগণ বেড়ে উঠুক পৌত্তলিক চেতনা নিয়ে। চায়,বাঙালী মুসলিমগণও হাসিনার ন্যায় পূজামন্ডপে যাক এবং দুর্গা যে গজে চড়ে আসে এবং সেভাবে আসাতে ফসল যে ভাল হয় -সে বিশ্বাসের ঘোষণা দিক। আওয়ামী বাকশালীদের অনেকেই সে বিশ্বাসে দীক্ষাও নিয়েছে। ইদানি তারা বলতে শুরু করেছে “ধর্ম যার যার,পূজা সবার”। এভাবেই আওয়ামী-বাকশালীরা পূজার সংস্কৃতিকে বাঙালী মুসলমানদের জীবনে সার্বজনীন করতে চায়। দেবদেবী,পূজা,আনন্দ-উল্লাস ও জীবনভোগের মাঝে তারা মহান আল্লাহতায়ালকে স্মৃতিকে ভূলিয়ে দিতে চায়। অথচ মহান আল্লাহতায়ালাকে ভূলে যাওয়ার শাস্তি তো বিশাল। তখন মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নিজেদের কল্যাণের কথাও তাদেরকে ভূলিয়ে দেয়া হয়। সে ঘোষণাটি মহান রাব্বুল আলামীনের। ফলে মানুষ তখন আত্মভোলা উম্মাদে পরিণত হয়। কিসে শান্তি, কিসে জান্নাত লাভ,আর কিসে জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ -সে মৌলিক ভাবনাটুকুও আত্মভোলা মানুষের মাঝে থাকে না। তাই পবিত্র কোরআনের হুশিয়ারি,“এবং তোমরা তাদের মত হয়োনা যারা আল্লাহকে ভূলে যায়। সেটি হলে তাদেরকে নিজেদের (কল্যাণের) কথাই ভূলিয়ে দেয়া হবে। তারাই হচ্ছে পাপী।” –(সুরা হাশর আয়াত ১৯।) ফলে সমাজ তখন এরূপ পাপী ও তাদের পাপাচারে পূর্ণ হয়ে উঠে। মানুষ তখন গুম হয়,রাজপথে লাশ পড়ে,এবং নারীরা বিব্স্ত্র ও ধর্ষিতা হয়। তাছাড়া নারীদের বিবস্ত্রকরণ ও শ্লীলতাহানী ছাড়া মানব্পশুদের উৎসব ষোলকলায় পূর্ণ হয় কি করে? মানবরূপী অসভ্য দানবদের তো সেটিই সংস্কৃতি। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে মহিলাদের শ্লীলতাহানির যে অসভ্য তাণ্ডবটি হলো সেটি কোন দৈবাৎ ঘটনা নয়;বরং বহুদিন ধরে বেড়ে উঠা অসভ্যতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। দেহের পচনটি ধীরে ধীরে বাড়ে। কিন্তু সেটি গভীরতর হলে দুর্গন্ধ তো বেরুবেই।পচনের সে প্রকাশটি স্থান-কাল-পাত্র দেখে না। সেটি যেমন বেশ্যালয়ে ঘটে,তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়েও ঘটে। এ চারিত্রিক পচন রোধে ত্বরিত ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশে নারীদের ইজ্জত রক্ষা ও সভ্য ভাবে বাঁচা যে অসম্ভব হবে -তা নিয়েও কি সন্দেহ আছে? ২৪/০৪/২০১৫
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018