বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on November 26, 2023
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- 1 Comment.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
উপেক্ষিত পবিত্র কুর’আন ও দুর্বৃত্তায়ন
যাত্রাপথে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়টি ঘটে তখন, যখন জানা থাকে না সঠিক রোডম্যাপটি। অথবা অবহেলা হয় সে রোডম্যাপের অনুসরণে। তখন অসম্ভব হয় সঠিক গন্তব্যে পৌঁছা। সে ভূলটিই ব্যাপক ভাবে হচ্ছে জীবনের পথচলাতেও। কোটি কোটি মানুষ জাহান্নাম যাবে খুন, ধর্ষণ, চুরিডাকাতির ন্যায় অপরাধের কারণে নয়, বরং জান্নাতের পথটি না জানায় বা সেটি সঠিক ভাবে অনুসরণ না করায়। পবিত্র কুর’আন হলো মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া সেই রোডম্যাপ। তাই মানব জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো, সে রোডম্যাপটি জানা ও পদে পদে সেটি অনুসরণ করা। এখানে ভূল হলে জাহান্নাম অনিবার্য। এ পৃথিবীতে ধর্ম, ফিরকা, তরিকা, মতবাদ ও দর্শনের নামে শত শত পথ আবিস্কৃত হয়েছে। কিন্তু জান্নাতের পথ মাত্র একটিই। সে পথটিকে পবিত্র কুর’আনে সিরাতাল মুস্তাকীম বলা হয়েছে। অন্য সকল পথই হলো জাহান্নামের পথ। তাই মানব জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, অন্য সকল পথের মাঝে সিরাতাল মুস্তাকীমকে খুঁজে পাওয়া। ব্যক্তির জীবনে পরীক্ষার শুরু এখান থেকেই। সেটি তার আক্বলের বা প্রজ্ঞার। তবে কি ভাবে সিরাতাল মুস্তাকীম পাওয়া যায় -সে বিষয়ে পথ দেখিয়েছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। সে পথটি জুটে একমাত্র পবিত্র কুর’আনকে আঁকড়ে ধরার মধ্য দিয়। এজন্যই সে নির্দেশ এসেছে সুরা জুখরুফের ৪৩ নম্বর আয়াতে। একই কথা বলা হয়েছে সুরা আল ইমরানের ১০১ নম্বর অয়াতে। বলা হয়েছে: “যে আল্লাহকে তথা আল্লাহর কিতাবকে অবলম্বন করলো, সেই পরিচালিত হলো সিরাতাল মুস্তাকীমের পথে।”
অথচ পৃথিবী পৃষ্ঠে সবচেয়ে বড় ভূল ও অবহেলাটি হয়েছে কুর’আনী রোডম্যাপটি বুঝায় ও সেটির অনুসরণে। তবে এটিও সত্য, কুর’আন থেকে শিক্ষা নেয়া ও কুর’আন অনুসরণের সামর্থ্য সবার থাকে না। ফলে, কোটি কোটি মানুষের ঘরে পবিত্র কুর’আন থাকা সত্বেও তারা সুস্পষ্ট ধাবিত হচ্ছে জাহান্নামের দিকে। সেটি বুঝা যায় তাদের জীবনে দুর্বৃত্তি, মিথ্যাচার ও ইসলামী বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখে। পবিত্র কুর’আন থেকে কারা পথ পায় -সে কথাটিও মহান আল্লাহতায়ালা নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন। সেটি সুরা বাকারার দ্বিতীয় আয়াতে। পবিত্র কুর’আনকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন: “এই হলো সেই কিতাব -যাতে নাই কোন সন্দেহ; পথ দেখায় তাদের -যারা মুত্তাকী অর্থাৎ যারা আল্লাহকে ভয় করে।” উপরিউক্ত এ আয়াতে সতর্ক বাণীটি হলো: পবিত্র কুরান থেকে একমাত্র তারাই পথ পায় -যাদের মধ্যে রয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার ভয়।
প্রশ্ন হলো, কীরূপে নির্মিত হয় আল্লাহর ভয়? পবিত্র কুর’আনে আল্লাহতায়ালার ভয়কে বলা হয়েছে তাকওয়া। যাদের রয়েছে তাকওয়া, তাদেরকে বলা হয় মুত্তাকী। সে ভয় এখানে সিরাতাল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুতির। ভয় এখানে নিজ গুনাহর শাস্তির। ভয়, অর্পিত দায়িত্ব পালন নিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে জবাবদেহীতার। ভয় এখানে নিজের জানা-অজানা নানা দুর্বলতা ও ব্যর্থতার এবং জাহান্নামের আগুনের। ভয়, অর্পিত আমানতের খেয়ানতের।
তাকওয়ার জন্ম ঈমান থেকে। মুত্তাকী তারাই যাদের রয়েছে গভীর ঈমান। আল্লাহতায়ালা, তাঁর রাসূল, আখেরাত, রোজ হাশর, জান্নাত ও জাহান্নাম নিয়ে যার ঈমান নাই -তার আবার তাকওয়া কিসের? তাকওয়া না থাকলে কর্ম ও আচরণে কোন লাগাম থাকে না। তখন সর্ব কর্মে সে স্বেচ্ছাচারি হয়। তাকওয়া হলো ঈমানের পরিপক্ক রূপ। ঈমান বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি পায় তাকওয়া। এবং ঈমান পুষ্টি পায় ও প্রবলতর হয় পবিত্র কুর’আনের জ্ঞানে। সে বয়ানটি খোদ মহান আল্লাহতায়ালার -যা এসেছে পবিত্র কুর’আনে সুরা আনফালের ২ নম্বর আয়াতে।
পানির অভাবে ফসল বাঁচে না, তেমনি কুর’আনী জ্ঞানের অভাবে বাঁচে না ব্যক্তির ঈমান। কুর’আনের জ্ঞান ছাড়া তাই মুসলিম রূপে বাঁচা ও বেড়ে উঠার কাজটি হয়না। তাকওয়া বাড়াতে তাই ঈমান বাড়াতে হয়। আর ঈমান বাড়াতে হলে কুর’আনের জ্ঞান বাড়াতে হয়। শুরুটি কুর’আন বুঝা থেকে শুরু করতে হয়। একটি দেশে কতজন প্রকৃত ঈমানদার বা মুসলিম -সে সংখ্যাটি কতজন নামাজী-রোজাদার, কতজন হাজী, কতজন মাদ্রাসার ছাত্র, কতজন তাবলিগী -তা থেকে বুঝা যায় না। সে সংখ্যাটি সঠিক ভাবে জানা যায়, কতজন কুরআন বুঝার সামর্থ্য রাখে ও কুর’আন অনুসরণ করে -তা থেকে। ডাক্তারী বই পড়েও অনেকে বাজে ডাক্তার হয়। কিন্তু ডাক্তারী বই না পড়ে একজনও ডাক্তার হতে পারে না। বিষয়টি কুর’আন বুঝার ক্ষেত্রেও। কুর’আন বুঝেও অনেকে পাপী হয়। কিন্তু কুর’আন না বুঝে এবং কুর’আন অনুসরণ না করে যে মুসলিম হওয়া যায় না -সে হুশিয়ারিটি পবিত্র কুর’আনের বহুবার শোনানো হয়েছে।
কুর’আনের জ্ঞান ব্যক্তিকে প্রস্তুত করে নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাতসহ সর্ববিধ ইবাদতের জন্য। এবং ইবাদতের পথই হলো হলো সিরাতাল মুস্তাকীমের পথ। সেটি বলা হয়েছে সুরা ইয়াসিনের ৬১ নম্বর আয়াতে। তাই যে ইবাদতে নাই, বুঝতে হবে সে সিরাতাল মুস্তাকীমে নাই। ইবাদতের অর্থ, মহান আল্লাহতায়ালার সার্বক্ষণিক আনুগত্য -সে আনুগত্য ৫ ওয়াক্ত নামাজ ও এক মাসের রোজায় শেষ হয়না।। আগাছাপূর্ণ জমিতে বীজ গজায় না; গজালে’ও তা বেড়ে উঠে না। তেমনি কুর’আনের জ্ঞানশূণ্য মনে নামাজ-রোজার ন্যায় ইবাদত যতই পালন করা হোক তা কাঙ্খিত চারিত্রিক পরিশুদ্ধি আনে না। কুর’আন বুঝার কাজটি না বুঝে তেলাওয়াতে হয় না, হয়না অনুসরণের কাজও। ফলে ব্যর্থতা বাড়ে মুসলিম হওয়ায়। সে ব্যর্থতাটি ধরা পড়ে ব্যক্তির কর্ম, আচরণ, রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিতে। বাংলাদেশে মসজিদ-মাদ্রাসার নির্মাণ বিপুল ভাবে হলেও কুর’আন বুঝার কাজটি হয়নি। সেটি বুঝা যায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশটিতে গুম, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতির ন্যায় নানাবিধ দুর্বৃত্তির সয়লাব দেখে। সেটি আরো বুঝা যায় যখন অসংখ্য নামাজী, রোজাদার ও হাজী রাজনীতিতে স্বৈরাচার, সেক্যুলারিজম, জাতীয়তাবাদ ও ভোটডাকাতির ন্যায় হারাম পক্ষে খাড়া হয়।
সবচেয়ে বড় অপরাধ কর্ম ও সবচেয়ে বড় নেককর্ম
সবচেয়ে বড় অপরাধ কর্মটি চুরি-ডাকাতি নয়, সেটি হলো সেক্যুলার রাজনীতি, সেক্যুলার শিক্ষা ও সেক্যুলার বুদ্ধিবৃত্তি। কারণ, এগুলির লক্ষ্য জনগণকে ইসলাম ও কুর’আন থেকে দূরে সরানো। এগুলিই দুর্বৃত্তায়নের হাতিয়ার। চোর-ডাকাত মানুষের অর্থ কেড়ে নেয়, কিন্তু তাদের এজেন্ডা কাউকে জাহান্নামে নেয়া নয়। সে ভয়ানক কাজটি করে সেক্যুলার রাজনীতিবিদগণ, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীগণ। তারা সে কাজটি করে জনগণকে পবিত্র কুর’আন তথা সিরাতাল মুস্তাকীম থেকে দূরে সরিয়ে। সেরূপ অপরাধ কর্মের উদাহরণ হলো বাংলাদেশ। এ দেশটিতে শাসন ক্ষমতা সেক্যুলারিস্টদের হাতে। এ দেশের স্কুলে নাচ-গান, ছবি আঁকা, মুর্তি নির্মাণ ও খেলাধুলার জন্য যে সময় বরাদ্দ করা হয়েছে -সে পরিমাণ সময় কুর’আন শেখানো ও নবীজী (সা:)’র হাদীস বা জীবনী শেখানোর জন্য রাখা হয়নি। বরং ডারউনের তত্ত্ব, পৌত্তলিক রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়িয়ে শিশু মনকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের সিরাতাল মুস্তাকীমের সন্ধান দেয়া তাদের এজেন্ডা নয়। অথচ শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে এটিই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অন্য কিছু শিখতে ব্যর্থ হলে সে জাহান্নামে যাবে না। কিন্তু অন্য বহুকিছু শিখেও সিরাতাল মুস্তাকীম চিনতে যদি ব্যর্থ হয়, তবে সে নিশ্চিত জাহান্নামে যাবে।
যারা জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চায়, তাদের জন্য কুর’আন বুঝা এবং কুর’আন অনুসরণের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ ন।ই। এজন্যই নবীজী (সা:) বলেছেন, সেই ব্যক্তিই তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যে নিজে কুর’আন থেকে শেখে এবং অন্যকে কুর’আন শেখায়।” অর্থাৎ কুর’আন শেখা ও কুর’আন শেখানো হলো শ্রেষ্ঠ নেককর্ম। হাদীসটির মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা রয়েছে। সে বার্তাটি হলো: সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি তারা, যারা কুর’আন থেকে শিক্ষা নেয়না, কুর’আন অনুসরণ করেনা এবং অন্যদের কুর’আন শেখানোর কাজটিও করে না। এরাই হলো জাহান্নামের খাস বাসিন্দা -যারা জীবন্ত চলেফেরা করে এ পৃথিবীপৃষ্ঠে। এমন ব্যক্তিদের হাতে কোন দেশ অধিকৃত হলে সে দেশে দ্রুত দুবৃত্তায়ন ঘটে। তখন মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাটি রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিতে পরিণত হয়। এজন্যই সর্বশ্রেষ্ঠ জনকল্যাণ মূলক কাজটি রাস্তাঘাট, ব্রিজ বা কলকারখানা নির্মাণ নয়, বরং সেটি হলো জাহান্নামের আগুন থেকে জনগণকে বাঁচানো। সে কাজটি করতে হয় কুর’আন-হাদীসের জ্ঞানকে জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে। সে কাজটি অসম্ভব হয় রাষ্ট্র সেক্যুলারিস্ট দুর্বৃত্তদের হাতে অধিকৃত হলে। অথচ ইসলামী রাষ্ট্র নির্মিত হলে সে কাজটি রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিণত হয়
কুর’আন শিক্ষাদানের ন্যায় মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি কিছু মোল্লা-মৌলভীর করুণার উপর ছেড়ে দেয়া যায়না। পবিত্র কুর’আন থেকে শিক্ষাদানের কাজটি রাষ্ট্রীয় খাতে নিতে হয় এবং সেটিকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হয়। নবীজী (সা:) এবং খোলাফায়ে রাশেদার আমলে তো সেটিই হয়েছে। এ কাজটি ছিল প্রতিটি নবী ও রাসূলের। নবী-রাসূলগণ অর্থদান করেননি; তাদের সে সামর্থ্যও ছিল না। তবে তাদের দানটি ছিল অর্থদানের চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ অধিক মূল্যবান। সেটি ছিল ওহীর জ্ঞানদান। অর্থ জান্নাতের পথ দেখায় না, কিন্তু সে কাজটি করে ওহীর জ্ঞান। নবীরাসূলদের অবর্তমানে সে কল্যাণের কাজটি মুসলিম দেশের রাষ্ট্রের করতে হয়। অতীতে হযরত দাউদ (আ:)ও সুলায়মান (আ:) ছাড়া অন্য নবী-রাসূলদের হাতে রাষ্ট্র ছিল না। ফলে তাদের কর্ম সীমিত থেকেছে নিজ নিজ গোত্রের মাঝে। শেষ নবী হযরত মহম্মদ (সা:) রাষ্ট্র গড়েছেন এবং কুর’আন শিক্ষাদানের কাজে রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোকে ব্যবহার করেছেন। ফলে ইসলামের বিস্ময়কর বিপ্লব এনেছেন বিশ্বের বিশাল এলাকা জুড়ে। এজন্যই তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। এবং নবীজী (সা:)’র সে রাজনীতিই হলো প্রতি যুগে ঈমানদাদের রাজনীতি। এমন রাজনীতিতে রাষ্ট্র পরিণত হয় জান্নাতের বাহনে।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, আজ কোথাও ইসলামী রাষ্ট্র নাই। ফলে বেঁচে নাই নবীজী (সা:)’র প্রতিষ্ঠিত মহাকল্যাণকর কাজের রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতি। রাষ্ট্র পরিণত হয়েছে শয়তানের হাতিয়ারে। আজকের মুসলিম রাষ্ট্রগুলি বাঁচছে সেক্যুলার রাজনীতি নিয়ে। বস্তুত এটি হলো ইসলাম থেকে দূরে সরা বেঈমানদের রাজনীতি। কুর’আন শেখানোর কাজটি ব্যক্তি ও পরিবারের উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু নানা পেশা ও নানা কর্মে ব্যস্ত পরিবার-প্রধানের পক্ষে কি সম্ভব কুর’আনের শিক্ষক হওয়া? সে কাজটি একজন প্রশিক্ষিত শিক্ষকের। ফলে সেক্যুলারিস্টদের অধিকৃত দেশে সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধটি হচ্ছে কুর’আনে সাথে। ইতিহাস, ভূগোল, গদ্য-পাঠ, পদ্য-পাঠ, পাটিগণিতের পাঠ হলেও পবিত্র কুর’আনের পাঠ হচ্ছে না। ব্রিটিশদের হাতে অধিকৃত হওয়ার আগে বাংলার প্রায় সিকি ভাগ জমি খাজনা মওকুফ করে মসজিদ-মাদ্রাসার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু মুসলিমদের অশিক্ষিত করা ও কুর’আন থেকে দূরে সরানোর লক্ষ্যে সে জমি কেড়ে নিয়ে হিন্দুদের জমিদার বানানো হয়। ঔপনিবেশিক ইংরেজদের ন্যায় বিদেশী কাফির শক্তি ইসলামের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধের শুরু করে, বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্ট সরকার সে যুদ্ধই অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমগণ শত্রুদের চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে নিজেরা কোন যুদ্ধ গড়ে তুলতে পারিনি। বরং তারা নিজেরা সেক্যুলারিস্টদের যুদ্ধের খরচ জোগাতে রাজস্ব-দাতায় পরিণত হয়েছে।
রাষ্ট্র যখন জাহান্নামের বাহন
যে দেশের অধিকাংশ মানুষ কুর’আন পড়ে না, পড়লেও অর্থ বুঝে না -তারা যে কোন পথে চলছে সেটি বুঝে উঠা কি এতোই কঠিন? কুর’আন না পড়ে ও না বুঝে সিরাতাল মুস্তাকীম চলা অসম্ভব -এ নিয়ে বিতর্ক থাকার কথা নয়। সিরাতাল মুস্তাকীমে চলার কাজটি যে হচ্ছে না -তার প্রমাণ তো অসংখ্য। এর বড় দলিল হলো, দেশে গুম, খুন, ঘুষ, ধর্ষণ, চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, স্বৈরাচার, সন্ত্রাস ও নানারূপ দুর্বৃত্তির জোয়ার। এমন কাজ কখনোই সিরাতাল মুস্তাকীমে চলা মানুষদের নয়। একাজ তো জাহান্নামের যাত্রীদের। আর দেশকে জাহান্নামের যাত্রীদের দিয়ে পূর্ণ করাই সরকারের পলিসি। কারণ, বাংলাদেশের সরকার স্বঘোষিত সেক্যুলারিস্ট- অর্থাৎ তাদের রাজনীতিতে ইসলামের প্রতি কোন অঙ্গীকার নাই। কুর’আন বুঝা ও কুর’আন অনুসরণ করা তাদের নীতি নয়। সেটি তাদের কাম্যও নয়। বরং ধর্ম থেকে তথা ইসলাম থেকে দূরে থাকাটাই তাদের নীতি। ধর্মের পূর্ণ অনুসরণকে তারা সাম্প্রদায়িকতা ও পশ্চাদপদতা বলে। বাংলাদেশের সংবিধান রাজনীতির অধিকার দেয় একমাত্র সেক্যুলারিস্টদের, নির্বাচনী লড়াইয়ের অঙ্গণে ইসলামপন্থীদের কোন স্থান নাই।
কুর’আনের পথে না থাকার অর্থ নিশ্চিত পথভ্রষ্ট্র হওয়া। পথভ্রষ্ট্রদের পথটিই হলো নিশ্চিত জাহান্নামের পথ। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সেক্যুলারিস্টগণ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে কুর’আন শিক্ষাকে বিলুপ্ত করেছে। সেক্যুলারিস্টগণ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পেলে এভাবেই রাষ্ট্রকে জাহান্নামের বাহনে পরিণত করে। প্রতিদেশে এটিই শয়তানের এজেন্টদের এজেন্ডা। তেমনি এক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ। প্রশ্ন হলো, জনগণকে জাহান্নামে নেয়া যাদের পলিসি -তাদের হাত থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করার চেয়ে বড় জিহাদ আর কি হতে পারে? কিন্তু পরিতাপের বিষয়, বাংলাদেশের মুসলিমগণ সে জিহাদে নাই। তাদের আত্মতৃপ্তি এনিয়ে যে, তারা নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও দোয়াদরুদের মধ্যে আছে। অথচ নবীজী (সা:)’র ইসলাম নিয়ে বাঁচার অর্থ শুধু এগুলি নিয়ে বাঁচা নয়। জিহাদেও নামতে হয় -যেমন নবীজী (সা:) ও সাহাবাগণ নেমেছেন। অথচ সে বোধ তাদের মধ্য নাই। তাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে বাংলাদেশ পুরাপুরি অধিকৃত হয়ে গেছে জাহান্নামের যাত্রীদের হাতে।
জিহাদবিমুখ মুসলিম এবং শত্রুপক্ষের বিজয়
ঈমান নিয়ে বাঁচার অর্থই হলো অবিরাম ইবাদত নিয়ে বাঁচা। মূল তাড়নাটি এখান মহান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রিয়তর হওয়া। সেরূপ একটি তাড়নার কারণে ঈমানদার মাত্রই একাত্ম হয় মহান আল্লাহতায়ার এজেন্ডার সাথে। এ পৃথিবী পৃষ্ঠে অপর এজেন্ডাটি শয়তানের। সেটি মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের। ঈমানদারকে বাঁচতে হয় শয়তানের সে এজেন্ডার বিরুদ্ধে আমৃত্যু লড়াই নিয়ে। সে লড়াইকে সে মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন ও মাগফিরাত লাভের হাতিয়ার মনে করে। তখন তাঁর রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও রণাঙ্গণের লড়াই ইসলাম বিরোধী শক্তির নির্মূলে পবিত্র জিহাদে পরিণত হয়। লক্ষ্য হয়: দুর্বৃত্ত শক্তির নির্মূল, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং সকল মিথ্যা ধর্ম ও মিথ্যা মতবাদের উপর ইসলামের বিজয়। ঈমানদারের রাজনীতি এজন্যই কখনো সেক্যুলার হয়না। কারণ, সেক্যুলার হওয়ার অর্থ, ইসলামের বিজয়ে অঙ্গিকারহীন হওয়া।
ঈমানদারের পক্ষে অসম্ভব হলো জাতীয়তাবাদী, গোত্রবাদী,বর্ণবাদী ও রাজতন্ত্রী হওয়া। কারণ, জাতীয়তাবাদী, গোত্রবাদী, বর্ণবাদী ও রাজতন্ত্রী হলে রাজনৈতিক লড়াইয়ের এজেন্ডা থেকে বাদ পড়ে ইসলামের বিজয়। তখন রাজনীতির মূল এজেন্ডা হয় ভাষা, বর্ণ, গোত্র ও স্বৈরশাসকের গৌরব বাড়ানো; এবং গুরুত্ব হারায় মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা নিয়ে বাঁচা। এমন চেতনাধারীদের কাছে ইসলামপন্থীরা শত্রু গণ্য হয়। তখন নিজেদের প্রতিষ্ঠিত প্রতিপত্তির সুরক্ষায় তারা নির্মূল চায় ইসলামপন্থীদের। শয়তানী শক্তির সে নীতিটি চলে আসছে এজিদের আমল থেকেই। ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে সেরূপ একটি নির্মূল মুখী যুদ্ধ চলছে বাংলাদেশ, মিশর, সৌদি আরব, আরব আমিরাতের মত স্বৈরাচার কবলিত দেশগুলিতে। তাদের রাজনীতিতে তাই উগ্র বেঈমানীর লক্ষণ। স্বার্থান্বেষী কপট বেঈমান ছাড়া কোন ঈমানদার তাদের রাজনীতিতে যোগ দেয় না। এরূপ বেঈমানদের সংখ্যা একটি দেশে কতটা বিশাল -সেটি বুঝা যায় সে দেশের শাসন ক্ষমতায় তাদের বিজয় দেখে।
অধিকাংশ মুসলিম দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে বিজয়টি আজ ইসলামের শত্রুপক্ষের। বাংলাদেশে তাদের বিজয়টি বিশাল। অথচ এ দেশটিতে কোটি কোটি নামাজী ও রোজাদার রয়েছে। বহু লক্ষ মানুষ যাকাত দেয়; বহু হাজার মানুষ প্রতিবছর হজ্জ করে। মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার মোহাদ্দেসের সংখ্যাও বহু লক্ষ। লক্ষ লক্ষ মানুষ সংশ্লিষ্ট আছে তাবলিগ জামায়াতের সাথে। কিন্তু তারা ইসলামের বিজয় ও শরিয়তের প্রতিষ্ঠা নিয়ে ভাবে না। তারা নাই ইসলামের প্রতিপক্ষ নির্মূলে এবং ইসলামকে বিজয়ী করার জিহাদে। অর্থাৎ তারা বাঁচছে নবীজী (সা:)’র সর্বশ্রেষ্ঠ সূন্নতটি পালন না করেই। তারা ভাবে নবীজী (সা:) ও ইসলামের বিধান শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতেই। হয়তো ভাবে, ইসলামের সেরূপ কোন বিধান নেই রাষ্ট্রের আদালত, শিক্ষানীতি, সমাজনীতি, প্রশাসন, যুদ্ধবিগ্রহ ও অর্থনীতি পরিচালনায়। ফলে এ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলি ইসলামের শত্রুপক্ষের দখলে গেলেও তারা চিন্তিত নয়।
প্রশ্ন হলো, নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাদের যুগে কি এরূপ নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তার কথা ভাবা যেত? কারণ, যারা মুসলিমদের নিরাপত্তা ও ইসলামের বিজয় নিয়ে ভাবে তাদের কাছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক ক্ষেত্রগুলি অতি গুরুত্বপূর্ণ । মুসলিমদের সকল বিপর্যয়ের শুরু মসজিদ মাদ্রাসা থেকে হয়নি, শুরু হয়েছে রাষ্ট্রীয় অঙ্গণ থেকেই। সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের কাজের শুরুটিও এখান থেকে করতে হয়। তাই পবিত্র কুর’আন তার রোডম্যাপ থেিযঢিডযকে রাষ্ট্রের এ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গণগুলিকে বাইরে রাখেনি। বরং সত্য তো এটাই, নবীজী (সা:) তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূন্নত রেখে গেছেন রাষ্ট্র পরিচালনার অঙ্গণে। এটি হলো তাঁর ১০ বছর মেয়াদী রাষ্ট্র পরিচালনার সূন্নত। অথচ বিস্ময়ের , হলো, মুসলিমগণ বাঁচছে সে সূন্নতগুলির প্রতিষ্ঠা না দিয়েই। আলেমদের ব্যস্ততা টুপি-দাড়ি, মাথায় পাগড়ি বাঁধা, খোরমা খাওয়া, মিলাদ মহল, ওরশ, ফিরকাবাজী ও নিজেদের মধ্যকার কলহ-বিবাদ নিয়ে। রাষ্ট্রের বুক থেকে শয়তানী শক্তির দখলদারী নির্মূলের জিহাদে তারা নাই। সেটি যেন কোন ইস্যুই নয়। তারা মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ, কুর’আন পাঠ, নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালনের স্বাধীনতা পেলেই খুশি। আদালতে কুফুরি আইন প্রতিষ্ঠা পেলেও তা নিয়ে তাদের বিবেকে দংশন হয় না। অথচ মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও শরিয়তকে বিজয়ী করতে নবীজী (সা:)’র অর্ধেকের বেশী সাহাবী শহীদ হয়ে গেছেন। সেরূপ বিজয় আনতে অধিকাংশ আলেম জিহাদে নামতে রাজী নয়। অথচ বিরামহীন যুদ্ধ করছে এবং বিপুল অর্থ, শ্রম ও রক্তের বিনিয়োগ করছে ইসলামের শত্রুরা। শত্রুর আগ্রাসনের মুখে জিহাদ না থাকার অর্থ, রণাঙ্গণ শত্রুর জন্য খালি ছেড়ে দেয়া। তখন মুসলিম ভূমি সহজেই দখলে নেয় শয়তানের সৈনিকেরা। যারা নিজেদের মুসলিম রূপে দাবী করে তাদের অপরাধটি এখানে গুরুতর; সেটি যেমন মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে পরাজিত রাখার, তেমনি ইসলামবিরোধীদের বিজয়ী করার।
নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ শত্রু বাহিনীর হামালাকে বদর, ওহুদ ও খন্দকের ওপারে আটকিয়ে দিয়েছিলেন। ফলে তারা মদিনার মুসলিম গৃহে ও মুসলিম মহল্লায় ঢুকতে পারিনি। ফলে সেখানে শত্রুরা গণহত্যা চালাতে পারিনি। এবং মুসলিম জীবন থেকে শরিয়তও বিলুপ্ত করতে পারিনি। কিন্তু ইসলামের শত্রুপক্ষ শুধু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির উপর নয়, প্রতিটি মহল্লার উপর পূর্ণ দখলদারী প্রতিষ্ঠা করেছে। বিদ্যালয়ে কি শেখানো হবে, আদালতে কোন আইনে বিচার হবে, কে স্বাধীনতা পাবে, কে শাস্তি পাবে এবং কে পাবে নিরাপত্তা -সে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি আজ নির্ধারণ করছে বিজয়ী শত্রুপক্ষ। শরিয়ত প্রতিষ্ঠার এজেন্ডা নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়ানোও নিষিদ্ধ। নিবন্ধন দেয়া হয়না।
শত্রুপক্ষের সৈনিকগণ দখল বসিয়েছে প্রতিটি মহল্লায়। অথচ প্রতিবাদ জানাতে মুসলিমগণ এখনো জিহাদে নামেনি। তাদের জীবনে বদর, ওহুদ ও খন্দক আসেনি। অথচ জিহাদ হলো নবীজী (সা:)’র সর্বশ্রেষ্ঠ সূ্ন্নত; সে সূন্নত তারা পরিত্যাগ করেছে বহু আগেই। মহান আল্লহতায়ালার সাথে এটি বিশাল গাদ্দারী। এ গাদ্দারীর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মত একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে বিজয়ী করা হয়েছে ইসলামের শত্রুপক্ষকে এবং পরাজিত করা হয়েছে ইসলামকে। গুরুতর এ অপরাধের সাথে জড়িত এমন প্রতিটি মুসলিম -যারা নিজেদেরকে রাজনীতির ময়দান থেকে স্বেচ্ছায় দূরে সরিয়ে রেখেছে। এরূপ অপরাধ প্রতিশ্রুত আযাব নামিয়ে আনে। সে আযাব যেমন নমরুদ-ফিরাউন, হালাকু-চেঙ্গিস ও মুজিব-হাসিনার ন্যায় নৃশংস অপরাধীদের শাসন রূপে হাজির হয়, তেমনি আখেরাতে হাজির করে জাহান্নামের আগুনে। অথচ সে আযাব থেকে বাঁচানোর কোন উদ্যোগই নাই। সে আযাব থেকে বাঁচার একটিই পথ, সেটি জিহাদের। সে জিহাদ যেমন প্রতিশ্রুত রহমত নামিয়ে আনে, তেমনি আনে বিজয়ও।
দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি
বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় আকারের চুরি-ডাকাতি মহল্লার চোর-ডাকাতগণ করে না। সেটি করে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীগণ। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ডাকাত হলো আওয়ামী শাসক দলের প্রধান শেখ হাসিনা। এই আওয়ামী ডাকাত-সর্দারনীর হাতে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ডাকাতি হয়েছে ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর। অন্য দেশের ডাকাতগণ এক রাতে বড় জোর কিছু ঘর বা কিছু দোকানের উপর ডাকাতি করে। কিন্তু হাসিনা ডাকাতি করে নিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা। এতে মালিক বনে গেছে সমগ্র দেশের। পৃথিবীর প্রায় দুইশতটি দেশের মাঝে আর কোন দেশেই ডাকাতগণ এতো বড় ডাকাতি কোন কালেই করতে পারিনি। অন্য দেশে ডাকাতগণ বড় জোর কিছু গৃহ, কিছু দোকান বা কিছু ব্যাংকের উপর ডাকাতি করে, কিন্তু সমগ্র দেশকে ডাকাতি করে নিয়েছে -সে ইতিহাস কোথাও নেই। কিন্তু সে ইতিহাস নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশে। দেশটি এখন পুরাপুরি ডাকাতদের দখলে। রাষ্ট্রীয় রিজার্ভ তহবিল, ব্যাংকগুলিতে গচ্ছিত জনগণের অর্থ, বিদেশী লোনের অর্থ, প্রকল্পের অর্থ, সরকারি জমি, রাস্তার গাছ, দেশের হাজার-বাজার -এরূপ সবকিছুর উপরই ক্ষমতাসীন ডাকাতদের দখলদারী।
প্রতিটি চোর, ডাকাত, ভোটডাকাত ও স্বৈরাচারি দুর্বৃত্তই শয়তানের একনিষ্ট এজেন্ট। তাদের বিজয়ে শয়তানের এজেন্ডা বিজয়ী হয় এবং পরাজিত হয় মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা। তাদের কাজ, রাষ্ট্রকে জাহান্নামের বাহনে পরিণত করা। এবং সে সাথে সিরাতাল মুস্তাকীমের পথে চলা কঠিন করা। শয়তানের অধিকৃত এ দেশে ফাঁসিতে ঝুলে অথবা শাপলা চত্বরের ন্যায় গণহত্যায় ইসলামপন্থীদের শহীদ হতে হয়। ডাকাতের দল কি কখনো শান্তি ও উন্নয়ন দিতে পারে? তারা যা দিতে পারে তা হলো আরো বেশী বেশী নৃশংস ডাকাতি। যে কোন সমাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন হলো মানবোন্নয়ন। আর সবচেয়ে বড় নাশকতাটি হলো দেশবাসীর চরিত্রে ধ্বংস-সাধন। সমগ্র দেশ জুড়ে ডাকাতির জন্য জরুরি বেশী বেশী ডাকাত উৎপাদন। নইলে সবগুলি শহর, থানা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ের প্রতিটি অফিসে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাকাত বসানো যায় না এবং দেশজুড়ে ডাকাতিও করা যায়না। ফলে ডাকাতদের কাছে জরুরি হলো দেশবাসীর চরিত্রের বিনাশ এবং বেশী বেশী ডাকাত উৎপাদন। এজন্যই ডাকাতদলের হাতে দেশ অধিকৃত হলে প্লাবন আসে খুন, গুম, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, ব্যাংক ডাকাতি, চুরিডাকাতি ও ভোটডাকাতির। বাংলাদেশে তো সেটিই ঘটেছে। ফলে দেশ দ্রুত ধাবিত হচ্ছে অশিক্ষা, অনৈক্য, সংঘাত, দুর্বৃ্ত্তি ও অসভ্যতার পথে। দুর্বৃত্তির প্রবল প্লাবনে ভাসার কারণেই বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্বে ৫ বার প্রথম হয়েছে। কথা হলো, এরূপ দুর্বৃত্তিতে ভাসলে কি জনগণের মাঝে সততা, সংহতি, সম্পৃতি ও সৌহার্দ সৃষ্টি হয়?
বাংলাদেশে সকল স্বাধীনতা শুধু চোর-ডাকাতদের। এটিই হলো একাত্তরের অর্জন। তাদের হাতে ডাকাতির শিকার যেমন রাষ্ট্রীয় সম্পদ, তেমনি ডাকাতি হয়ে গেছে জনগণের নাগরিক অধিকারও। ডাকাতির শুরু শেখ মুজিবের আমল থেকে, সে ডাকাতি প্রক্রিয়াকে আরো বলবান করেছে শেখ হাসিনা। ফলে গণগন্ত্র এখন কবরে শায়ীত। তাদের যুদ্ধ একাত্তরে শেষ হয়নি। বরং দিন দিন প্রবলতর হয়েছে। এখন যুদ্ধ চলছে, তাদের বিরুদ্ধে যারা দেশ থেকে চুরিডাকাতি ও ভোটডাকাতি নির্মূল করতে চায়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ধরে রাখতে এ ডাকাতগণ বার বার ভোটডাকাতি করতে চায়। চোর-ডাকাতদের রাজনীতিতে আপোষের কোন স্থান নাই। কারণ এ অপরাধে তারা নেশাগ্রস্ত। ফলে যারা ডাকাত দলের সদস্য নয় -তাদের জন্য অসম্ভব হয়েছে সভ্য ও ভদ্র ভাবে বাঁচা।
জনগণের সামনে রাস্তা মাত্র দুটি: এটিট ডাকাত-সর্দারনী হাসিনার কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণের; অপরটি ডাকাত নির্মূলের। প্রতি যুগেই মানুষের সামনের মাত্র এরূপ দুটি রাস্তাই খোলা থাকে। একটি নির্ভেজাল জাহান্নামের, অপরটি জান্নাতের তথা সিরাতাল মুস্তাকীমের। হাসিনার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো, সে জাহান্নামের পথটি তার সকল কদর্য বৈশিষ্ঠ নিয়ে জনগণের সামনে হাজির করেছে। জাহান্নামের এ পথে যেমন গুম, খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, চুরিডাকাতি ও ভোটডাকাতি আছে, তেমনি আছে মহান আল্লাহতায়ালার উপর আস্থার বিলুপ্তি, মুর্তি নির্মাণ ও মুর্তি পূজা। নামাজ-রোজায় যেমন ঈমানের প্রকাশ, মুর্তি নির্মাণের মাঝে তেমনি বেঈমানী ও হিন্দুত্বের প্রকাশ। মক্কার আবু লাহাব, আবু জেহেলদের দল ইসলামের বিরুদ্ধে এরূপ বিজয় পায়নি, এতো মুর্তিও তারা নির্মাণ করেনি -যা হাসিনার দ্বারা হয়েছে। মুর্তি নির্মাণে এতো আগ্রহ তার মনের জাহেলী রূপটি নগ্ন ভাগে প্রকাশ করে দিয়েছে। কোন ঈমানদার কি তাকে সমর্থন করতে পারে? অতিশয় বিসম্ময়ের বিষয় হলো, হাসিনার মত একজন হিন্দুত্ববাদী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী!
বাংলাদেশে হিন্দুত্বায়ন
বাংলার বুকে মুসলিম শাসনের শুরু ৮ শত বছর আগে। কিন্তু কোন মুসলিম শাসকের হাতে একটি মুর্তিও নির্মিত হয়নি। একাজ ছিল একমাত্র হিন্দুদের। ইসলামের আগমন মুর্তি গড়তে আসেনি; বরং মুর্তি ভাঙ্গাই ছিল নবীজী (সা:)র ও ইব্রাহিম (আ:)’র সূন্নত । তাই বাংলার বুকে মুর্তি একমাত্র মন্দিরে শোভা পেয়েছে, কোন রাজপথে ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে নয়। পাকিস্তান আমলেও পূর্ব পাকিস্তানে কোন মুর্তি নির্মিত হয়নি। বাংলাদেশ সৃষ্টির পরও হাসিনার পূর্বে কেউ মুর্তি বসায়নি। কিন্তু শেখ হাসিনা হাজির হয়েছে হিন্দুত্ববাদের অদম্য সেপাহী রূপে। হাসিনা শত শত মুর্তি বসিয়েছে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশে এভাবেই দ্রুত হিন্দুত্বায়ন হচ্ছে। হিন্দুত্ববাদী নেতারা বাংলাদেশকে অখণ্ড ভারতের সাথে সংযুক্ত করার দাবীও তুলছে। আবু লাহাব, আবু জেহেল ও তাদের সাথীরা শয়তানকে এতো বড় বিজয় দিত পারিনি -যা দিয়েছে হাসিনা। এজন্যই ভারতের মুর্তিপূজারীদের শিবিরে হাসিনার পক্ষে এতো জয়োধ্বনি। বিনিময়ে ভারতের হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে ভাবেই হোক যে হাসিনাকে তারা ক্ষহমতায় রাখবে। তাকে দিয়েছে ভোটডাকাতির পূর্ণ লাইসেন্স। এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভারত সরকার বলছে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কোন রূপ হস্তক্ষেপ না করতে।
এখন এটি সুস্পষ্ট, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ভোটডাকাতিকে ভারত সরকার যেভাবে সমর্থন দিয়েছে, সেরূপ সমর্থন তারা ২০২৪ সালেও দিবে। যাদের মনে শরিষার দানা পরিমাণ ঈমানী আলো এখনো বেঁচে আছে, বাংলার বুকে শয়তানী শক্তির এ বিশাল বিজয়টি চিনতে তাদের ভূল হওয়ার কথা নয়। যারা ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ চায়, অবশ্যই নজরে রাখতে হবে ইসলামের-বিরোধী শয়তানী শক্তির এ চলমান যুদ্ধকে। সমু্দ্র যাত্রায় সমুদ্রের স্রোতধারা ও বায়ুপ্রবাহের গতিপ্রকৃতি জানতে হয়, তেমনি ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণে মুজাহিদদের জানতে হয় শয়তানী শক্তির চলমান যুদ্ধ ও তাদের রণকৌশল গুলিকেও। তাই ভারতের উপর থেকে তারা দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে পারে না। তবে বিদেশী শত্রুদের সাথে তাদের চিনতে হবে ঘরের শত্রুদেরও।
গণতন্ত্রের কবরে কি সম্ভব সভ্য রাষ্ট্রের নির্মাণ?
দুর্বৃত্ত কখনোই তার দুর্বৃত্তি ছাড়ে না। দুর্বৃত্তিই হলো তার বেঁচে থাকার হাতিয়ার। এজন্যই দেশের শাসন ক্ষমতা একবার দখলে পেলে তাদের লক্ষ্য হয়, নির্বাচনে নিজেদের পরাজয়কে যে কোন ভাবেই হোক অসম্ভব করা। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির বিশাল অবকাঠামোকে তারা দুর্বৃত্তির হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করতে চায়। তারা জানে, নিরপেক্ষ নির্বাচনে তাদের বিজয় অসম্ভব। ফলে থাকে প্রচণ্ড নির্বাচন-ভীতি। এজন্যই তাদের এজেন্ডা হয়, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথকে যে কোন ভাবে বন্ধ করা। সে লক্ষ্য পূরণে শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে ২০১১ সালে বিলুপ্ত করেন দীর্ঘ রাজনৈতিক লড়াইয়ের মাধ্যমে অর্জিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে। এর আগে নিজ ক্ষমতাকে স্থায়ী করতে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী পিতা শেখ মুজিব পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সংসদীয় গণতন্ত্রকে কবরে রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন একমাত্র নিজের দল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ তথা বাকশালকে।
শেখ মুজিব নির্বাচনে জিতেছেন গোপালগঞ্জের একটি আসন থেকে একজন এম.পি. রূপে, কিন্তু দখল করে বসেন দেশের প্রেসিডেন্টের আসনটি। অথচ প্রেসিডেন্ট পদ্ধতিতে প্রেডেন্ট নির্বাচনটি দেশজুড়ে জনগণের ভোটে হতে হয়। অথচ সেরূপ নির্বাচন তিনি হতে দেননি। তার পরিকল্পনা ছিল, সোভিয়েত রাশিয়া ও চীনের ন্যায় আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকা। নির্বাচনের মাধ্যমে অপসাররণের সকল পথকে তিনি বন্ধ করেছিলেন। শেখ মুজিবের ছিল না সমালোচনা সহ্যের সামর্থ্য। তাই নিষিদ্ধ করেছিলেন সকল বেসরকারি পত্র-পত্রিকা। এবং কেড়ে নিয়েছিলেন মিটিং-মিছিলের অধিকার। যে স্বাধীনতা তিনি পাকিস্তান আমলে ভোট করেছেন, সে অধিকার তিনি বাংলাদেশীদের দেননি। শেখ মুজিব নিহত হলেও তার নীতি বেঁচে আছে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের মাঝে। আওয়ামী রাজনীতির মূল লক্ষ্য, প্রতিপক্ষের নির্মূল। হাসিনার তার বিরোধীদের চিত্রিত করেন রাষ্ট্রের শত্রু রূপে। তাদের নির্মূলে হাসিনা বদ্ধপরিকর। এ নির্মূল প্রক্রিয়ার পথ ধরেই জামায়াতে ইসলামী’র শীর্ষ নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। তাদের বহু নেতাকর্মী এখনো কারাগারে। গুম ও খুন হয়েছে বহু বিএনপি নেতা। খালেদা জিয়াসহ শত শত বিএনপি নেতাকর্মী এখনো কারাবন্দী। শাপলা চত্বরে নিহত এবং আহত করা হয়েছে হেফাজতের বহুশত নেতাকর্মীকে। এবং কারাবন্দী করা হয়েছে বহুশত আলেমকে। বিরোধী দলগুলিকে রাস্তায় আন্দোলনে নামতে দেয়া হচ্ছে না।
২০২৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে পুণরায় চলছে ২০১৮’য়ের ন্যায় ভোটডাকাতির পূর্ণ প্রস্তুতি। শেখ হাসিনা জানে, নিরপেক্ষ নির্বাচনের অর্থ সুনিশ্চিত পরাজয়। সে পরাজয় এড়াতেই নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের সামান্যতম আগ্রহ নাই। বিদেশী শক্তির পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবী উত্থাপনকে তারা বলছে, বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ। তাদের কথা, ভোটডাকাতি তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়; সেটি তারা করবে নিজেদের ইচ্ছা মত। সে ভোটডাকাতির উপর অন্য কারো হস্তক্ষেপ তারা মেনে নিবে না। অথচ ২০১৪’য়ের নির্বাচনে হুসাইন মহম্মদ এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নিতে চাপ দিতে এসেছিল ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং। অথচ ভারতের সে হস্তক্ষেপকে আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলা হয়নি। নব্বইয়ের দশকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছিল। তখন হাসিনা বলতো, দলীয় সরকারের অধিনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অসম্ভব। কিন্তু ক্ষমতায় এসে হাসিনা সংবিধান সংশোধন করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনকে অসম্ভব করতে। এখন নিরপেক্ষ নির্বাচন রুখতে সে সংশোধিত সংবিধানের দোহাই দেয়া হচ্ছ। চোর-ডাকাতগণ কখনোই গৃহস্বামীর মতামতের ইজ্জত দেয় না। তাদের নজর গৃহস্বামীর অর্থের উপর। তেমনি যারা ভোটডাকাত, তাদের নজর জনগণের ব্যালটের উপর। সেগুলি ছিনতাই করে তারা নির্বাচনী বিজয় ছিনিয়ে নিতে চায়।। সে পথেই ছিনিয়ে নিতে চায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা। তারা কখনোই জনগণের রায়কে ইজ্জত দেয় না। প্রশ্ন হলো, যেখানে গণতন্ত্র মৃত এবং যে দেশটি স্বাধীনতাহীন ও ইজ্জতহীন মানুষদের কারাগার -সেখানে ইসলামী রাষ্ট্র দূরে থাক কোন মামূলী সভ্য রাষ্ট্রও কি নির্মিত হয়?
আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের নির্মূল কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ?
তবে অপরাধ শুধু বাংলাদেশের দুর্বৃত্ত ফ্যাসিস্ট শাসকচক্রের নয়, গুরুতর অপরাধ বাংলাদেশী জনগণেরও। গৃহে আবর্জনা জমতেই পারে। সে আবর্জনার স্তুপে বিষাক্ত পোকামাকড়, সাপ-বিচ্ছুও জন্ম নিতে পারে। সেগুলি নির্মূলেরর দায়িত্ব তো দেশবাসীর। কিন্তু সে কাজটি হয়নি। কোন গৃহের আঙ্গিণায় গলিত আবর্জনা, শিয়াল-শকুন ও পোকামাকড়ের ভিড় দেখে বুঝা যায়, সে গৃহে কোন ভদ্র ও সভ্য মানুষ বাস করে না। কোন সভ্য জনগণ কি চোরডাকাত, ভোটডাকাত দুর্বৃত্তদের শাসন একদিনের জন্যও মেনে নেয়? সভ্য মানুষের ঘরে সাপ, শিয়াল, বাঘ ঢুকলে সাথে সাথে যুদ্ধ শুরু হয়। তেমনি যুদ্ধ শুরু হয় চোরডাকাত-ভোটডাকাতের শাসন শুরু হলে। ইসলামে এটি কোন মামূলী কাজ নয়। এটি পবিত্র জিহাদ তথা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। কারণ, এ ইবাদতটি না হলে মহান আল্লাহতায়ালার বিধানটি শুধু কুর’আনেই থেকে যায়। এবং যে দেশে এ ইবাদতটি বেশী বেশী হয় সে দেশে ততবেশী সভ্য রাষ্ট্র নির্মিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশীগণ সে ইবাদতে নামেনি। তারা আওয়ামী বাকশালী দুর্বৃত্তদের শাসন মেনে নিয়েছে বিগত ১৫ বছর ধরে। ফলে দিন দিন বেড়েছে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের নৃশংস দুঃশাসন।
সুস্থ মানুষের এক হাতে মশা বসলে অন্য হাত সে মশার উপর ত্বরিৎ আঘাত হানে। কিন্তু মৃত মানুষের চোখের উপর ঠোকর মারলেও সে নীরব ও নিষ্ক্রিয় থাকে। সে অবস্থা বাংলাদেশীদেরও। যে কোন সভ্য দেশে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করলে বিপ্লব ঘটে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে শাপলা চত্বরে গণহত্যা হলো। পিলখানায় ৫৭ জন অফিসারকে হত্যা করা হলো। বার বার ভোটডাকাতি হলো। শত শত মানুষকে গুম, খুন ও অপহরণ করা হয়েছে। আবরার ফাহাদের ন্যায় কত নিরীহ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মিথ্যা মামালা সাজিয়ে বহু নিরপরাধ মানুষকে ফাঁসিতে চড়ানো হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ডাকাতি হয়েছে। এতো অপরাধের পরও কি কোন সভ্য দেশে অপরাধী সরকার ক্ষমতায় থাকে? বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, দেশটি কোন রাষ্ট্র নয়, এটি এক গহীন জঙ্গল। জঙ্গলে কোন অপরাধেরই শাস্তি হয় না। কারণ সেখানে পুলিশ ও আদালত থাকেনা।
নবীজী (সা:) যেখান থেকে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজটি শুরু করেছিলেন বাংলাদেশে সে কাজটি শুরু করতে হবে তারও অনেক পূর্ব থেকে। নবীজী (সা:)কে মদিনায় গিয়ে কোন আওয়ামী বাকশালী দুর্বৃত্তদের মুখে পড়েননি। বরং মদিনার মানুষ তাঁকে উষ্ণ সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তাই তাকে কোন অসভ্য আওয়ামী শাসনকে নির্মূল করতে হয়নি। অথচ নবীজী (সা:) যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন -যাতে ছিল ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়তী আইনের বিচার, জিহাদ ও প্যান-ইসলামিক ঐক্য, সে ইসলমের কথা বললে বাংলাদেশ সন্ত্রাসী ও জঙ্গি রূপে চিহ্নিত হতে হয়। দলের নিবন্ধন দূরে থাক, দলীয় নেতাদের কারাবন্দী করা হয়। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে এটি এক বিশাল সমস্যা। গৃহ নির্মাণ করতে হলে প্রথম সে স্থান থেকে আবর্জনা ও আগাছা সরাতে হয়। বাংলাদেশে সে কাজটি বিশাল। কারণ আওয়ামী বাকশালীগণ তাদের শিকড়কে দীর্ঘকাল ধরে অনেকে গভীরে নিয়ে গেছে। তাই কোন একক দলের পক্ষে তাদের উৎখাত করা সম্ভব নয়। একাজে নানা মতের নানা মানুষের মাঝে চাই ইস্পাতসম ঐক্য। জনগণের বুকে উপর চেপে বসা জগদ্দল পাথর না সরিয়ে সামনে এগুনোর পথ নাই। এই আওয়ামী বাকশালীদের নির্মূলের পরই ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণে বেগবান হতে পারে, তার পূর্বে নয়। যারা ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা চায় তাদের এ বিষয়টি অবশ্যই বুঝতে হবে।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018
বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলমান আসলে মুসলমান না। অধিকাংশ বাঙালি মুলত ‘মুসলমান’ শব্দটির অর্থ পর্যন্ত জানে না এবং যে ব্যক্তি মুসলমানের আচরনবিধিই জানে না, সে কিভাবে মুসলমানের মত আচরনও করবে?
অধিকাংশ বাঙালি–মুসলমান আসলে মালাউনের মত আচরন করে এবং যার ফলে মালাউনদের ভোট দেয় এবং সেই
কারণে সমগ্ৰ দেশ আল্লাহর লানতের ভুক্তভোগী।