বাংলাদেশে মুরতাদদের অপরাধ এবং শেখ হাসিনার মুরতাদপ্রীতি
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 10, 2019
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
অপরাধ ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে উস্কানির
মুরতাদ তারাই যারা প্রকাশ্যে ইসলাম পরিত্যাগ করে এবং আল্লাহর কোরআনী হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।বাংলাদেশের এমন মুরতাদের সংখ্যা বহু। এবং তাদের অপরাধও অতি জঘন্য। তারা যে শুধু নিজেরা ইসলাম পরিত্যাগ করেছে ও আল্লাহ বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে তা নয়। সাধারণ মানুষকেও তারা নানা ভাবে উস্কানি দিচ্ছে ইসলামের মৌল শিক্ষা পরিত্যাগে ও আল্লাহর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্রোহে।একাজে তারা ব্যবহার করছে দেশের টিভি নেটওয়ার্ক,পত্রপত্রিকা,ইন্টারনেটসহ নানা এনজিও ফোরাম। ইসলামের বিরুদ্ধে এভাবে যুদ্ধ শুরু করে তারা বিনষ্ট করছে বাংলাদেশের সামাজিক শান্তি। গত ৬ই এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের ডাকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমাবেশ হওয়ায় তারা জোরে শোরে প্রচার শুরু করছে বাংলাদেশ মধ্যযুগের অন্ধকারে ফিরে যাচ্ছে।নারীদের বলছে,ইসলাম এলে তাদের স্বাধীনতা ও অধিকার কেড়ে নেয়া হবে এবং নারী শিক্ষা বন্ধ করে তাদেরকে গৃহবন্দী করা হবে। ইসলামি জাগরণের বিরুদ্ধে এসব কথা বলে তারা স্কুলছাত্রী ও গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির নারী শ্রমিকদেরও ময়দানে নামানোর ষড়যন্ত্র করছে।
যে কোন দেশে এমন বিদ্রোহে উস্কানি দান গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।খলিফা রাশেদার যুগে এ অপরাধে মুরতাদদের মৃত্যুদন্ড দেয়া হতো। হযরত আবুবকর (রাঃ)র আমলে যারা যাকাত দিতে অস্বীকার করেছিল তাদেরও মুরতাদ বলা হয়েছে এবং শাস্তি দেয়া হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের সরকার আজ নানা ভাবে মুরতাদদের মদদ জোগাচ্ছে। মুরতাদদের সাথে সুর মিলিয়ে এমনকি মন্ত্রীরা বলছে,হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি মেনে নিলে দেশ পিছিয়ে মধ্যযুগে যাবে। বলা হচ্ছে ১৩ দফা দাবি সংবিধান পরিপন্থি। প্রশ্ন হলো,মুসলমানের নিরুংকুশ আনুগত্য কি আল্লাহর প্রতি না সংবিধানের প্রতি? শতকরা ৯০ ভাগ মুসলামনের দেশে মুসলমান যদি তার স্রষ্টা মহান আল্লাহর প্রতি শত ভাগ আনুগত্যই করতে না পারে তবে তার ধর্মপালনের স্বাধীনতা কোথায়? হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা দাবী উত্থাপন করেছে কোরআনী হুকুমের প্রতি আনুগত্য দেখাতে। সংবিধান যদি সে আনুগত্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তবে সে সংবিধানকে আবজর্নার স্তুপে ফেলাই কি যথার্থ নয়? সংবিধানকে আবর্জনায় ফেললে পরকালে সামান্যতম শাস্তিও হবে না। কিন্তু কোরআনী হুকুমের প্রতি সামান্য অবহেলা দেখালেও কি ঈমান বাঁচে? তাতে তো তার জন্য জাহান্নাম অনিবার্য করবে! মুসলমান হওয়ার অর্থ তো কোরআনের প্রতিটি হুকুমের পূর্ণ আনুগত্য। কোন একটি হুকুম পালনে সামান্যতম অবাধ্যতা চলে না। মুসলিমগণ তো পৃথক রাষ্ট্র গড়ে অমুসলিম রাষ্ট্রের সে কুফরি অনুশাসন থেকে বাঁচার স্বার্থে। ১৯৭২ সালে সংবিধান তৈরীর আগে ১৯৭০ সাল আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিব জনগণ থেকে ভোট নিয়েছিল এ ওয়াদা দিয়ে যে, কোরআন-সূন্নাহর বিরোধী কোন আইন তৈরী হবে না।এখনও প্রতি নির্বাচনে ভোটারদের সামনে আওয়ামী লীগ জোরে সোরে সে ওয়াদা করে। তাহলে প্রশ্ন হলো,সংবিধানে ইসলাম এবং হেফাজতে ইসলামে ১৩ দফার সাথে সাংঘর্ষিক বিধান আসলো কি করে? বাংলাদেশের সংবিধানের বিরুদ্ধে কথা বলা বললে শাস্তি হয়। শাস্তি হয় শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে কথা বললেও। কিন্তু মহান আল্লাহ ও তাঁর দেয়া দেয়া পবিত্র সংবিধানের বিরুদ্ধে কেউ বিদ্রোহ করলে বা মিথ্যাচার করলে শাস্তি দূরে থাকে পুরস্কৃত করা হয়।মুসলিম দেশের কোন সরকারের এটি কি মুসলিম-সুলভ আচরণ?
ফিরিয়ে নিতে চায় সনাতন জাহিলিয়াতে
সমাজ বা রাষ্ট্র যত আধুনিকই হোক সেখানে লাগাতর সংঘাত চলে সনাতন সত্য তথা ইসলামের বিরুদ্ধে সনাতন অজ্ঞতা তথা জাহিলিয়াতের। পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের ন্যায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে জাহিলিয়াতের অনুসারিরাই বিজয়ী এবং পরাজিত হয়েছে ইসলাম। ফলে দেশের আদালতে যেমন শরিয়ত আইন নেই, তেমনি বৈধতা পেয়েছে মদ্যপান, সূদ, জুয়া, অশ্লিলতা এবং বেশ্যাবৃত্তির ন্যায় সনাতন পাপাচার। জাহিলিয়াতের অনুসারিরা ইসলামের পক্ষ নেয়া এবং শরিয়তী বিধানের প্রতিষ্ঠাকে বলছে সাম্প্রদায়িকতা। কথা হলো, প্রতিরাষ্ট্রে ও সমাজে প্রতিটি নরনারীকে একটি পক্ষ নিয়ে বাঁচতে হয়। মুসলিমদের বাঁচতে হয় ইসলামের প্রতিষ্ঠার পক্ষ নিয়ে; এ প্রসঙ্গে নিরপেক্ষ হলে তাকে কাফের বা মুনাফিক হতে হয়। মক্কার বুকে নবীজী (সাঃ) যখন ইসলামের দাওয়াত দেয়া শুরু করেন তখন সেখানে ছিল জাহিলিয়াতের বিজয়। কিছু সত্যসন্ধানী নবীজী (সাঃ)র সে দাওয়াত কবুল করে মুসলমান হয়ে যান। তারাই শুরু করেছিলেন ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও জাহিলিয়াত নির্মূলের যুদ্ধ। সে যুদ্ধই হলো ঈমানদারের জিহাদ। জাহিলিয়াত নির্মূলের সে জিহাদে নবীজী (সাঃ)র সাহাবাদের বেশীর ভাগ শহীদ হয়ে যান। সে সংঘাতময় সমাজে নিরপেক্ষ বা অসাম্প্রদায়িক বলে কেউ ছিল না। প্রত্যেকেই কোন পক্ষ বা সম্প্রদায়ভূক্ত ছিলেন। ফলে যারা ইসলামের পক্ষ নেয়াকে সাম্প্রদায়িকতা বলে তারা মূলতঃ মুসলিমদের ইসলাম থেকে দূরে সরতে বলে। তারা চায় মুসলিমদের আদিম জাহিলিয়াতে ফিরিয়ে নিতে।
মানব ইতিহাসের অতি পুরাতন সত্যটি হলো, সত্যকে মেনে নেওয়ায় সবার রুচী থাকে না। বহুকীট আজীবন শুধু নর্দমার আবর্জনা খুঁজে। বহু মানুষও তেমনি দিবারাত্র নিরেট মিথ্যা খুঁজে এবং মিথ্যাকে আঁকড়ে ধরে আজীবন বেঁচে থাকে।এমন মানুষের সংখ্যা কি বাংলাদেশে কম? বরং বিপুল। ফলে শাপ-শকুন,গরু-ছাগল ও কাদামাটির পুতুল যেমন বহু কোটি অনুসারি পেয়েছে,তেমনি কার্ল মার্কস,মাওসেতু্ংয়ের ন্যায় কম্যুনিস্টগণও বহু হাজার মাইল দূরের এ দেশটিতে বিপুল সংখ্যক ভক্ত পেয়েছে। বহু ভক্ত পেয়েছে মুজিবের ন্যায় স্বৈরাচারি,বাকশালী, ভারতসেবী মানবতা বিরোধী নেতাও। শাহবাগে ফ্যাসিস্ট ব্লগারদেরও সার্কাসেও তাই বিপুল জনসমাগম হয়। নবীজী (সাঃ)র আমলে এমন মিথ্যাসেবকগণই নবীজী(সাঃ)কে যাদুগ্রস্ত পাগল বলেছে এবং তাঁর দাওয়াতকে পাগলের প্রলাপ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।ধর্ম,সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের নামে তারা বাপদাদার অনুসৃত মুর্তিপুজা,অশ্লিলতা ও পাপাচারকেই অনুসরণ করেছে।এ শ্রেণীর মানুষ বাংলাদেশেও আজ মঙ্গলঘট,মঙ্গলপ্রদীপ,স্মৃতিস্তম্ভে নগ্নপদে ফুলদানের সংস্কৃতিতে ফিরে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট করা হচ্ছে উলঙ্গতা,অশ্লিল নাচগান,নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশা,মদ্যপান,ব্যাভিচারে –এসব নানারূপ কুকর্মে।এভাবে ফিরিয়ে নিচ্ছে সনাতন জাহিলিয়াতে। মিথ্যাসেবীদের কাছে এরূপ পাপাচার প্রতিযুগেই শালিন কর্ম এমন কি ধর্মকর্ম রূপে গণ্য হয়েছে। খুন-রাহাজানি এবং দুর্বলের উপর অত্যাচারকেও তার অন্যায় মনে করেনি। এমনকি নিজের কণ্যাকে তারা জ্যান্ত দাফন করতো।এমন দুর্বৃত্তরা নবীজী(সাঃ)র এর ন্যায় মানব ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবকেও এক ইঞ্চি ভূমি বিনা যুদ্ধে ছেড়ে দেয়নি।বাংলাদেশেও তাদের উত্তরসুরীরা ইসলামের প্রতিষ্ঠাকামি উম্মাহকে ছাড় দিতে রাজী নয়।ফলে বাংলাদেশেও তাই অনিবার্য হয়ে উঠছে সংঘাত। কারণ,প্রকৃত মুসলমান তার ঘরবাড়ি ছাড়তে পারে,দেশ ত্যাগও করতে পারে,এমনি কি নিজের জানমালও কোরবানী করতে পারে। কিন্তু আল্লাহর দ্বীনের বিজয় এবং শরিয়তের প্রতিষ্ঠার জিহাদ থেকে তো একটি দিনের জন্য বিরত থাকতে পারে না। মেনে নিতে পারে আল্লাহর জমিনের উপর তার বিদ্রোহীদের এ দখলদারি। কারণ সেটি করলে তাঁর ঈমান বাঁচে না,এবং পরকালে জাহান্নামের আগুন থেকেও নিস্কৃতি মিলবে না।
ইসলাম কি মধ্যযুগীয় বর্বরতা?
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সরকারের লাগাতর ইসলামবিরোধী নীতি ও নাস্তিক-মুরতাদের পক্ষাবলম্বনের কারণে মুসলমানদের পিঠ আজ দেয়ালে ঠেকে গেছে। ইসলামের পক্ষে সৃষ্টি হয়েছে বিপুল জাগরণ। লক্ষ লক্ষ মানুষের লংমার্চ ও ৬ই এপ্রিল বিশাল জনসমুদ্রের পর বাংলাদেশের মুসলমানগণ নতুন আত্মবিশ্বাস পেয়েছে। হেফাজতের ইসলামের ১৩ দফা দাবী এবং সে দাবী মেনে নেয়া না হলে আগামী ৫ই মে ঢাকা অবরোধের ঘোষণার পর ইসলামের বিপক্ষ শক্তি ভাবছে,বাংলাদেশে ইসলামের বিজয় বুঝি এসেই গেল।সে বিজয়কে রুখবার জন্যই জোরে শোরে বলতে শুরু করেছে,বাংলাদেশ মধ্যযুগে ফিরে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো,প্রশাসন ও রাজনীতিতে ইসলামের বিজয় এবং আদালতে শরিয়তি আইনের প্রতিষ্ঠাকে কেউ মধ্যযুগীয় বর্বরতা বললে –সে কি আদৌ মুসলমান থাকে? সে রাষ্ট্রে ইসলামের প্রতিষ্ঠার কাজটি তো খোদ নবীজী (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম করেছেন। তবে কি নবীজী (সাঃ)ও সাহাবায়ে কেরাম আরবের বুকে অন্ধকার যুগ নামিয়ে এনেছিলেন? অথচ মুসলমান হওয়ার অর্থ শুধু কালেমা পাঠ নয়,বরং আল্লাহর কোরআনী বিধানের উপর পূর্ণ আস্থা এবং সেগুলি মেনে চলা। সে সাথে রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করা। নবীজী (সাঃ)র জীবন-ইতিহাস তো সে কথাই বলে।
ইসলামে নারীর মর্যাদা
ইসলাম নারীকে কারো মা,কারো কন্যা বা কারো স্ত্রী রূপে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে যে মর্যাদা দিয়েছিল সেটি কি আর কোন ধর্ম দিয়েছে? ভারতে তো সে মর্যাদা দেয়া দূরে থাক,লক্ষ লক্ষ নারী শিশুকে জন্মের আগেই প্রতিবছর আবোরশনের মাধ্যমে হত্যা করা হচ্ছে।অথচ ইসলামে অতি ছওয়াবের কাজ হলো নারী শিশুর পালন।নবীজী(সাঃ)র হাদীসঃ যে ব্যক্তি তিনটি এমনকি দুটি বা একটি কন্যা সন্তান যথার্থ ভাবে লালন-পালন করলো সে ঈমানদার ব্যক্তিটি জান্নাত পাবে। ইসলাম নারীকে দিয়েছে মৃত পিতামাতার সম্পত্তির উপর উত্তরাধিকার। ইসলামের আগে আর কোন ধর্ম কি সেটি দিয়েছে? হিন্দুধর্মে নারীকে সম্পদের উপর অধিকার দেয়া দূরে থাক,তাকে তো মৃত স্বামীর সাথে চিতায় জ্বালিয়ে হত্যা করা হতো। গ্রীসের মানুষ নারীকে গৃহের অস্থাবর সম্পদের ন্যায় আরেক গৃহ-সম্পদ মনে করতো।কেউ মারা গেলে তার সম্পদের ন্যায় স্ত্রীদেরও বিলিবন্ঠন করা হতো। অথচ ইসলাম স্ত্রীকে দিয়েছে স্বামীর সমান নাগরিক অধিকার। সন্তানের বেহেশত বলা হয়েছে মায়ের পায়ের নীচে। ফলে এমন ইসলামকে নারী-বিরোধী বলার চেয়ে বড় মিথ্যাচার এবং ইসলামের বিরুদ্ধে নিকৃষ্ট হামলা আর কি হতে পারে? এমন কথা তো কাফের, মুনাফেক ও মুরতাদ তথা ইসলামের দুষমনদের কথা। এমন কথা বলার অর্থ নবীজী (সাঃ) ও তারা সাহাবায়ে কেরামকে নারী-বিরোধী বর্বর(নাউযু বিল্লাহ মিন যালিক)রূপে আখ্যায়ীত করা! অথচ শাহবাগ গণমঞ্চের আয়োজক নাস্তিক ব্লগারগণ তো তাদের ব্লগে এমন কথাই বহুবছর ধরে বলে আসছে। ফলে নাস্তিক ব্লগারদের থেকে আওয়ামী লীগের নেতাদের পার্থক্য কোথায়? যার অন্তরে আল্লাহর উপর ঈমান আছে এবং তাঁর দেয়া ইসলামী বিধানের উপর সামান্যতম আস্থা আছে সে কি এমন কথা মুখে আনতে পারে? আল্লাহর উপর বিশ্বাসের অর্থ কি শুধু তাঁর অস্তিত্বের উপর বিশ্বাস? বিশ্বাস তো হতে হবে ইসলামের প্রতিটি হুকুম এবং আল্লাহর শরিয়তের প্রতিটি বিধানের উপর।কোরআন পাকে মহান আল্লাহর নির্দেশ,“উদখুলু ফিস সিলমে কা’ফফা” অর্থাৎ তোমরা প্রবেশ করো ইসলামের বিধানে পরিপূর্ণ ভাবে। তাই কোন কোরআনী অনুশাসনের বিরুদ্ধে কোনরূপ অনাস্থা চলে কি?
মধ্যযুগ কি অন্ধকার যুগ?
কথা হলো,মধ্যযুগ নিয়ে এত ভীতি কেন? ইসলাম নিয়ে এমন ভীতি তো কাফেরদের। তাদের সে ভীতি তো প্রতিযুগের ইসলাম ও মুসলমানদেরকে নিয়েই। কারণ ইসলামের মধ্যে তারা তাদের নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতির মৃত্যু দেখে। কিন্তু মুসলমানদের মনে সে ভীতি আসে কি করে? মুসলিম ইতিহাসের যা কিছু অতি গর্বের এবং যা কিছু অতিমহান তা তো সবই মধ্যযুগের। সে আমলেই এসেছিলেন ইসলামের নবী হযরত মহম্মদ (সাঃ)।সে সময় এসেছিল এশিয়া আফ্রিকা ও ইউরোপের বিশাল ভূভাগ জুড়ে ইসলামের বিজয়। তখনই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল সর্ববৃহৎ বিশ্বশক্তি রূপে মুসলিম উম্মাহ। জন্ম নিয়েছিল খোলাফায়ে রাশেদার ন্যায় মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসন ব্যবস্থা। গড়ে উঠেছিল দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন এবং নিরপেক্ষ ও সহজলভ্য বিচারব্যবস্থা। হযরত আবুবকর (রাঃ),হযরত উমর (রাঃ),হযরত উসমান (রাঃ),হযরত আলী (রাঃ),হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ),আবু ওবাইয়া (রাঃ) সাদ বিন আক্কাস (রাঃ),হযরত উমর বিন আব্দুল আজীজ (রাঃ),তারিক বিন জিয়াদ ও মহম্মদ বিন কাসিমের ন্যায় অসংখ্য মহান ব্যক্তিবর্গ।শুধু মুসলিম ইতিহাসে নয়, সমগ্র মানব ইতিহাসে তারাই শ্রেষ্ঠ সন্তান। সে আমলেই মুসলমানদের হাতে পরাজিত হয়েছিল রোমান ও পারসিক সাম্রাজ্যের ন্যায় তৎকালীন দুই বিশ্বশক্তি। সে আমলে সারা বিশ্বের সকল বিজ্ঞানীদের অধিকাংশই বাস করতো মুসলিম ভূমিতে।একমাত্র সুলতান মাহমুদের রাজ্যে তখন যত বিজ্ঞানীর বসবাস ছিল অবশিষ্ঠ বিশ্বে তার অর্ধেক বিজ্ঞানীও ছিল না। ইউরোপ তো তখন অন্ধকারে আচ্ছন্ন। আমেরিকা তখনও আবিস্কৃতই হয়নি।গণিতশাস্ত্র,রসায়ন,ভূগোল,চিকিৎসা,জ্যোতিষশাস্ত্র,স্থাপত্য বিদ্যা,কৃষি,জরিপ,মুদ্রা,সমরবিদ্যা,দর্শন,ইতিহাসশাস্ত্র ইত্যাদী বিষয়ে মুসলমানদের অবদান কি কম? ইউরোপীয় মনিষীগণও সেটি স্বীকার করে।স্পেনে মুসলমানদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউরোপীয় ছাত্রগণ বিদ্যালাভে আসতো। ইউরোপের রেনেসাঁর সূত্রপাতে স্পেনের মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান কি কেউ অস্বীকার করতে পারে? অথচ বাংলাদেশের ইসলামের বিপক্ষ শক্তিটি ইসলামের সে গৌরব যুগকে অন্ধকার যুগ বলছে!মুর্খতা আর কাকে বলে!
মধ্যযুগীয় বাংলাও কি আজকের ন্যায় এতটা কলংকিত ছিল? ইখতিয়ার মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির হাতে বাংলায় মুসলিম শাসনের শুরুর ঘটনাটি কি কোন আধুনিক কালে ঘটেছিল? অথচ বাংলাদেশের সমগ্র ইতিহাসে সেটিই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারি ঘটনা। সে ঘটনাটিই বাংলার মুসলমানদের ভাগ্য চিরকালের জন্য পাল্টে দেয়। সে মুসলিম বিজয়ের মধ্য দিয়েই বঙ্গিয় এ ভূমিতে আগমন ঘটে আল্লাহর একমাত্র মনোনিত দ্বীন ইসলামের। সে বিজয়ের মধ্য দিয়েই বাংলার মানুষ সেদিন মহান আল্লাহর সত্যদ্বীনকে চেনা এবং মিথ্যাকে বর্জনের সৌভাগ্য পেয়েছিল।বাংলার মাটিতে মহান আল্লাহর রহমত অঢেল। তবে এ বঙ্গীয় ভূমিতে মুসলমানদের বিজয় ও ইসলামের আগমনই ছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত। আর সেটি এসেছিল মধ্যযুগে। মধ্যযুগের সে গৌরবময় দিনগুলো না আসলে বাংলার আজকের মুসলমানদের কী অবস্থা হতো সেটি কি কোন ঈমানদার ভেবে দেখেছে? তাদেরকে কি শাপশকুন,গরুছাগল,গাছপালা,নদীনালা আর উলঙ্গ সাধুদের ভগবান বলে পুঁজা করতো হতো না? তার চেয়ে বড় অন্ধকারময় জাহেলিয়াত আর কি হতে পারতো? তাতে বাংলার মানুষ কি পরকালে জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে মুক্তি পেত? মানব জীবনের বড় অর্জনটি সম্পদ-লাভ বা সন্তান-লাভ নয়। বরং সেটি হেদায়েত-লাভ। একমাত্র হেদায়েত লাভের মাধ্যমেই জান্নাতপ্রাপ্তি ঘটে। বাংলার কোটি কোটি মানুষের জীবনে সে হেদায়াত লাভটি ঘটেছিল মধ্যযুগে।তাই নিশ্চিত বলা যায়, বাংলার ইতিহাসে সে যুগটিই হলো সবচেয়ে আলোঝলোমল যুগ। সে আলোময় যুগের বরকতেই বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ আজ মুসলমান। একমাত্র নর্দমার কীটগণই সে যুগকে অন্ধকার যুগ বলতে পারে। প্রকৃত অন্ধকার যুগ তো ইসলাম-পূর্ববর্তী কাফের শাসনের যুগ।অথচ বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্টগণ তো বাংলার সনাতন সংস্কৃতির নামে বাংলাদেশীদেরকে সে অন্ধকার যুগেই ফিরিয়ে নিতে চায়।
মধ্যযুগের বাংলা
সে মধ্যযুগেরই বাংলার আরেক গৌরব হলো মোগল সুবেদার শায়েস্তা খান। তাঁর আমলে বাংলা দুনিয়ার বুকে সবচেয়ে প্রাচুর্যময় দেশ রূপে খ্যাতি পেয়েছিল। বিদেশী পরিব্রাজকগণ বাংলার সে প্রাচুয্য দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছিলেন। সুবে বাংলা সেদিন সত্যই সোনারবাংলা ছিল। অথচ আজকের অর্জন? একমাত্র আধুনিক কালেই বাংলাদেশ পরিচয় পেয়েছে বিশ্বের তলাহীন ভিক্ষার ঝুড়ি রূপে। সেটি আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবের আমলে। বিশ্বজুড়ে নিন্দিত হয়েছে দূর্নীতিতে ৫বার প্রথম হওয়ার মধ্য দিয়ে। আজও সে পরিচয়টি বিলুপ্ত হয়নি। সীমাহীন দূর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দ্যকৃত ঋণ বাতিল করে দিল।এ আধুনিক কালে দেশজুড়ে বেড়েছে খুন-ডাকাতি,বেড়েছে ব্যাভিচার,বেড়েছে বিদেশের পতিতাপল্লিতে নারী রপ্তানি। আজ বাংলাদেশে যত পতিতার বসবাস সম্ভবত বিগত ৫০০ বছরের সমগ্র সময়েও বাংলার বুকে এত পতিতার বসবাস হয়নি। এত সূদখোর,এত ঘুষখোর ও এত সন্ত্রাসীও জন্ম নেয়নি। এত শাহবাগী নাস্তিকও জন্ম নেয়নি। সরকারের হাতে নাগরিকের নিরাপত্তা না বেড়ে বেড়েছে প্রাণনাশ। অহরহ হচ্ছে হামলা,হত্যা ও গুম। মাত্র গত দুই মাসে দুইশত নাগরিককে সরকারের পুলিশ ও র্যাব বাহিনী হত্যা করেছে। এর চেয়ে অন্ধকার যুগ বাংলাদেশে কোন কালেও কি ছিল? তাই প্রশ্ন হলো,সোনার বাংলার সে মধ্যযুগীয় গৌরবযুগকে অন্ধকার যুগ বলা হলে আজকের এ দুর্বৃত্তকবলিত আওয়ামী যুগকে কি বলা যাবে?
সোনারবাংলা যুগের সে গৌরবের কারণটি বাংলার ভূগোল বা জলবায়ু ছিল না,ছিল শরিয়তের আইন,ছিল কাজীদের বিচার।দেশের আদালতে তখন আল্লাহর কোরআনী আইন অনুসারে বিচার হতো। চোর-ডাকাত,ব্যাভিচারি ও খুনিদের সেদিন শাস্তি দেয়া হতো। আল্লাহর সে বিধানকে আদালত থেকে হটিয়েছিল ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসকগণ। আর তাদের খলিফাগণই আজ ও সেটি বহাল রেখেছে। কোন মু’মিন ব্যক্তি কি আল্লাহর আইনের এ পরাজিত দশা মেনে নিতে পারে? মেনে নিলে কি তার ঈমান থাকে? মানুষের ঈমান তো যাচাই হয় রাজনীতিতে কোন পক্ষ নিল,এবং কোথায় সে তাঁর মেধা,শ্রম ও রক্তের বিনিয়োগ করলো তা থেকে। মুসলমান তাই ভারতপন্থি হয় না,মার্কিন বা চীনপন্থিও হয় না। সে নেয় করূনাময় মহান আল্লাহর পক্ষ। আল্লাহর শরিয়তের প্রতিষ্ঠাই হয় তাঁর রাজনীতি। সে উদ্দেশ্যেই তাঁর বেঁচে থাকা ও মৃত্যু। কিন্তু সমস্যা হলো,নর্দমার কীট কখনোই ফুলে বাসা বাঁধে না। নর্দমার দুর্গন্ধময় আবর্জনা থেকে সে একটুও বেরুতে চায় না।কারণ,সে তো পুষ্টি পায় গলিত আবর্জনা থেকেই। বাংলাদেশের আওয়ামী বাকশালীদের এখানেই মূল রোগ। তাই তারা বার বার ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার এবং ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর নাশকতায় ফিরে যায়। বাংলাদেশ আজ যে ভাবে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ রূপে পরিচিতি পেয়েছে,যেভাবে বেড়েছে চুরিডাকাতি,ধর্ষণ,সন্ত্রাস,মানবাধিকার হত্যা ও গণতন্ত্র বিরোধী নাশকতা –আওয়ামী বাকশালীদের তো তা নিয়েই প্রচুর আনন্দ। এ পাপের রাজনীতি থেকে তারা বেরিয়ে আসতে রাজী নয়। অপমানজনক এ যুগের নায়ক ছিলেন গণতন্ত্রহত্যাকারি বাকশালী মুজিব। অথচ আওয়ামী লীগ তাকেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বলছে। হিরোইন সেবনের মধ্যে প্রবল নেশাগ্রস্ততা থাকে। তেমনি প্রকট নেশাগ্রস্ততা থাকে স্বৈরাচারি রাজনীতির মাঝেও। সে নেশাগ্রস্ততার কারণে গণতান্ত্রিক শাসনপদ্ধতিতে ফিরে যাওয়া তাদের পক্ষে আর কখনোই সম্ভব হয় না। ফলে গণতন্ত্রহত্যাকারি বাকশালী মুজিবের প্রতি আজও তাদের এত আসক্তি।
সনাতন সত্য ও সনাতন জাহিলিয়াত
তাছাড়া যা কিছু সত্য এবং যা কিছু মহান -তা কি যুগের তালে মিথ্যা হয়ে যায়? যে সত্যের আবির্ভাব হযরত ইব্রাহীম (আঃ)র সময়ে হয়েছিল তা তো হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত ঈসা (আঃ)র সময়ও নিরেট সত্য রূপেই গণ্য হয়েছিল।তাদের ইন্তেকালের বহুশত বছরও সে সত্য সত্য রূপে গণ্য হয়েছিল হযরত মুহম্মদ (সাঃ)র সময়।এবং আজও তা বেঁচে আছে সত্য রূপেই। খাদ্য-পানীয় পচে যায়, লোহাতেও মরিচা ধরে, সুরম্য প্রাসাদও ধ্বসে যায়। কিন্তু সত্য তো সর্বকালে অম্লান। ফলে মধ্যযুগীয় কোরআনী সত্য আজ প্রতিষ্টা পেলে বাংলাদেশ অন্ধকারে ডুববে কেন? তাছাড়া কোরআন কি শুধু নবীজী (সাঃ)র যুগের মুসলিমদের জান্নাতে নেয়ার জন্য এসেছিল? কোরআন তো নাযিল হয়েছে নবীজী(সাঃ)-পরবর্তী সর্বযুগের সর্বমানুষকে পথ দেখাতে। পবিত্র কোরআনের উপর সে বিশ্বাস না থাকলে কেউ কি মুসলিম থাকে। প্রতি যুগের প্রতি ঈমানদারের দায়িত্ব তো সে কোরআনকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরা।এখানেই ঈমানদারের ঈমানদারি। তাছাড়া যা কিছু মিথ্যা ও অসত্য সেগুলিও কি যুগের পরিবর্তনে আধুনিক হয়? আবর্জনা তো চিরকালই আবর্জনা। মক্কার কাফেরগণ যে মুর্তিপুজা করতো আজকের পৌত্তলিকগণও তো সেটি করে। এজন্য কি তাদেরকে আধুনিক বা আলোকিত বলা যাবে? আঁধারের রূপ তো সব সময়ই এক।
হেফাজতের ইসলামের ১৩ দফা দাবীকে মধ্যযুগীয় বর্বরতা বলার চেতনাটি আদৌ আধুনিক নয়। মক্কার কাফেরগণও নবীজী(সাঃ)র সত্যবানীকে সেদিন কাদিম যুগের কল্পকথা বলে তিরস্কার করতো।আজকের মিথ্যাসেবীগণ তাদের চেতনা ও চরিত্রের ন্যায় ভাষাও যে পাল্টায়নি এ হলো তার প্রমাণ।কাদিম জাহিলিয়াত আজও কাদিমই রয়ে গেছে।মিথ্যা এভাবেই নানা রূপ নিয়ে সমাজে বার বার ফিরে আসে।তাই বার বার ফিরে আসে একই রূপ কাদিম উলঙ্গতা,অশ্লিলতা,ব্যাভিচার,মদ্যপান,নাস্তিকতাসহ নানা প্রাচীন পাপাচার।তাই বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্ট,নাস্তিক,পৌত্তলিক ও ইসলামে অবিশ্বাসীগণ যেভাবে নিজেদেরকে আধুনিক বলছে সেটি নিতান্তই মিথ্যাচার।উলঙ্গতা,অশ্লিলতা,ব্যাভিচার,মদ্যপান,নাস্তিকতা,চুরি-ডাকাতির কি কোন আধুনিক রূপ আছে? বরং তা তো সনাতন জাহেলিয়াত।পার্থক্যটুকু তো শুধু পোষাক,ফ্যাশান বা বোতলের ব্রান্ডে। ইতিহাসের সাক্ষ্য,পথভ্রষ্ট মানুষেরা যুগে যুগে মহান আল্লাহতায়ালার প্রদর্শিত সনাতন সত্যকে ভূলে বার বার একই রূপ জাহিলিয়াতের দিকেই ধাবিত হয়েছে।
শত্রু আল্লাহর ও ইসলামপন্থিদের
বাংলাদেশের মুরতাদদের যুদ্ধটি নিছক আলেম-উলামাদের বিরুদ্ধে নয়,বরং তাদের মূল যুদ্ধটি খোদ মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে।মক্কার বহু কাফের সেকালে নিজেদের সন্তানদের নাম আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান রাখতো। এবং সেরূপ নাম ধারণ করেই তারা মুর্তিপুজা করতো। তারা মহান নবীজী(সাঃ)র বিরুদ্ধে যুদ্ধেও নেমেছে। আজও বাংলাদেশে বহু মুরতাদ মুসলিম নাম ধারণ করে ইসলামের প্রতিষ্ঠা রুখতে ব্যস্ত। কেউ তো মাথায় টুপি, মুখে দাড়ি, হাতে তসবিহ, মাথায় কালোপট্টি ও নামের আগে মাওলানা লাগিয়ে ইসলামের বিজয় রুখতে ময়দানে নেমেছে। অথচ মুসলমান হওয়ার দায়বদ্ধতা হলো,নানা যুগের বহুরূপী এ জাহেলদের চেনা এবং তাদের প্রতিষ্ঠিত সে মিথ্যার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলা।সে সাথে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে যে শরিয়তী বিধান দিয়েছেন সেটির প্রতিষ্ঠায় আপোষহীন থাকা।
মহান আল্লাহতায়ালালা ও তাঁর রাসূলকে যে কুলাঙ্গর গালি দেয় তাকে ঘৃণা করা প্রতিটি ঈমানদারের উপর ফরয। ফরয রূপে গণ্য হয় তাকে সর্বশক্তি প্রতিরোধ করা। এবং বিধান রয়েছে সামর্থ্য থাকলে এমন শত্রুর নির্মূলের। ইসলামের এমন শত্রুর প্রতি সামান্য দরদ দেখালে সে কি মুসলমান থাকে? মহান আল্লাহতায়ালার ভাষায় পবিত্র কোরআনে মুসলমানদের চরিত্রের যে বর্ণনাটি দেয়া হয়েছে তা হলো,“আশাদ্দু আলাল কুফ্ফার ও রুহামাঁও বায়নাহুম”।অর্থাৎ তারা হলো কাফেরদের বিরুদ্ধে অতিশয় কঠোর এবং পরস্পরে অতিশয় রহমদিল-সম্পন্ন।বিষাক্ত গোখরার প্রতি রহম দিল দেখানোটি বেওকুপি। তাই আক্রোশপূর্ণ শত্রুর সাথে দয়াভরা রহমদিলের আচরণ করা ইসলামে নিষিদ্ধ।তারই প্রমাণ হলো, মক্কার এক কাফের শত্রুর সাথে স্রেফ পত্র যোগাযোগ করার কারণে নবীজী (সাঃ) তাঁর এক সাহাবাকে মদিনার বুকে সামাজিক ভাবে বয়কটের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আপোষহীন সে প্রচন্ড কঠোরতা নিয়েই মহান নবীজী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাগণ বহু হামলাকারি কাফেরকে হত্যা করেছেন। অনেককে আরবভূমি থেকে চিরতরে বহিস্কারও করেছেন।
কিন্তু শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার নীতিটি হলো সম্পূর্ণ উল্টো। তাদের কঠোর দমন নীতিটি শুধু ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে,ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে নয়। বরং সকল মিত্রতা ইসলামের শত্রুদের সাথে। তাই দেশের রাজনীতি,সংস্কৃতি,আইন-আদালত ও শিক্ষা থেকে হাসিনার সরকার যেমন ইসলামকে সরাতে চায়,তেমনি ফাঁসীতে লটকাতে চায় ইসলামপন্থিদের।সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর আস্থার বানি সরানো হয়েছে তো মহান আল্লাহর বিরুদ্ধে সেরূপ এক নির্ভেজাল আক্রোশ নিয়েই। কথা হলো, সামান্য ঈমান থাকলেও কি কোন ব্যক্তি এমন কাজ করতে পারে? কোন ছেড়া কাগজের টুকরায় আল্লাহর নাম থাকলে ঈমানদার ব্যক্তি সে কাগজকে সম্মান দেখায়। অথচ শেখ হাসিনা ও তার দল সে সম্মান সংবিধানের লিপিবদ্ধ আল্লাহর নামে সাথে দেখায়নি। তাই অতি উদ্ধত বেশেই সেটি সরিয়ে দিল। আর তার পিতা কোরআনের আয়াত সরিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে। অবশেষে তাকে নিজেকেও অতি অপমানজনক ভাবে সরতে হয়েছে। কারণ পাপ কাউকে ছাড়ে না। হাসিনা সরকার শত শত হিজাবধারি মহিলাদের স্রেফ কোরআন শিক্ষার আসরে অংশ নেয়া বা রুমে ইসলমি বই রাখার অপরাধে সরকার গ্রেফতার করে জেলে তুলছে।
ইতিহাস নির্মিত হলো ফটিকছড়িতে
২০১৩ সালে ফঠিকছড়িতে যা ঘটেছিল সেটি অবিস্মরণীয়।জনগণ তাদের নিজেদের দায়িত্বের কথা যে বুঝে তারই প্রকাশ ঘটেছিল ফঠিকছড়িতে। তাদের স্মরণে জাগ্রত হয়েছিল আল্লাহতায়ালার কাছে জবাবদেহীতার কথা। ধর্ম ও দেশ বাঁচানোর দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিকের। গ্রামে আগুন লাগলে কোন গ্রামবাসী কি ঘরে ঘুমুতে পারে? তেমনি কোন মুসলিম ভূমি ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে অধিকৃত থাকলে কোন ঈমানদার কি নীরব থাকতে পারে? ঈমানের প্রকৃত পরীক্ষা তো এখান থেকেই শুরু হয়।নাস্তিকেরা দুমাস যাবত শাহবাগে দিবারাত্র সমাবেশ করেছে। তাদের দাবী ছিল, সকল ইসলামি দলের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ এবং সকল রাজাকারদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা। কিন্তু তারা ভূলে যায়,তারাই বাংলাদেশের সমগ্র জনগণ নয়।শাহবাগের বাইরে রয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণ।ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কোরবানীর কাছে শাহবাগী নাস্তিকদের ত্যাগ নস্যিতূল্য। তারাও তো ইসলামের প্রতিরক্ষায় শুধু অর্থ ও সময় নয়,জীবন দিতে পরোয়া করে না। বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই স্বৈরশাসকের হাতে প্রাণ দিয়েছে বহু হাজার মানুষ। জীবন দেয়ার সে জজবা নিয়ে ৫ এপ্রিল ২০১৩ সালের লংমার্চে শত শত মুসল্লী কাফনের কাপড় পড়ে রাজপথে নেমেছিল। বাংলাদেশে গ্রামেগঞ্জে এমন মুসল্লির সংখ্যা লক্ষ লক্ষ। এরাই স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে পালন করছিল ১১ই এপ্রিলের হরতাল। অথচ আওয়ামী লীগ সে হরতালে বাধা দিতে শত শত মোটর সাইকেল,বহুকার ও মাইক্রোবাস নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল। এটি ছিল চরম উস্কানি মূলক উদ্যোগ। এটি ছিল জনগণের ইসলামি অনুভূতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা। অতীতে আওয়ামী লীগ যখন হরতাল ডেকেছে তখন কি দেশের ১০০% ভাগ সে হরতালের পক্ষে ছিল? কিন্তু যারা বিপক্ষে ছিল তারা কি কখনো মিছিল বের করেছে?
ফটিকছড়ি ঢাকা নয়, এটি গ্রাম বাংলার হাজার হাজার গ্রামের ন্যায় গ্রামীন জনপদ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়ার নামে নাস্তিক ও ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী যোদ্ধা উৎপাদনের যত ইন্ডাস্ট্রি ঢাকা শহরে রয়েছে তা কি ফঠিকছড়িতে আছে? এখানে পরিস্থিতিই ভিন্ন।গ্রামবাংলায় তাই শাহবাগের সার্কাস গড়া সম্ভব নয়। ফলে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারিরা ফটিকছড়ির মত একটি গ্রাম এলাকায় হরতালের দিনে মিছিল বের করবে এবং তাতে নিস্তার পাবে সেটি তারা ভাবলো কি করে? তাই ফটিকছড়ির বিক্ষুব্ধ নারীপুরুষেরা সেদিন হাতের কাছে যা পেয়েছে রাস্তায় নেমে আসে। ফলে গণপিটুনির মুখে পড়ে হরতাল বিরোধীদের মিছিল। জনগণ তাদের গাড়ী এবং শতাধিক মটরসাইকেল দগ্ধিভূত করেছে। হামলার মুখে পড়েছে পুলিশ,র্যাব ও বিজিবী সদস্যগণও। শুকনো কাঠের স্তুপে পেট্রোল বিছানো থাকলে তাতে বিস্ফোরণ ঘটাতে বেশ কিছু লাগে না। আগুনের সামান্য স্ফুলিঙ্গই সেটি ঘটাতে পারে। সারা বাংলাদেশ জুড়ে আজ ঘৃনার পেট্রোল বিছানো। যে কোন স্থানে সরকারি দল সামান্য উস্কানি দিলেই বিস্ফোরণ ঘটবে। ফটিকছড়িতে তো সেটিই ঘটলো। তবে এমন পরিস্থিতি ফটিকছড়ির একার নয়,সমগ্র বাংলাদেশই আজ ফটিকছড়ি।
হাসিনার মুরতাদপ্রীতি
১৪/০৪/১৩ তারিখে দৈনিক “নয়াদিগন্ত”য়ের খবরে প্রকাশ,সরকার ইন্টারনেটের ফেসবুকে বা ব্লগে প্রকাশিত কোন কিছুকে ডাউনলোড করে পত্রিকায় ছপানোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর অর্থ হলো,আল্লাহ-রাসূল ও ইসলামের বিরুদ্ধে নাস্তিক-মুরতাদের লেখা প্রকাশ করে দৈনিক “আমার দেশ” ও দৈনিক “ইনকিলাব” যেভাবে জনসম্মুখে তাদের মুখোশ উম্মোচিত করে দিয়েছে সেটি এখন আর করা যাবে না। এখন থেকে সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ রূপে চিহ্নিত হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এমনটি করা হোক -সেটি ছিল শাহানবাগের নাস্তিক ব্লগারদের দাবী। সরকার তাদের সে দাবিই মেনে নিল,এবং এভাবে ইন্টারনেটে তাদের ইসলামবিরোধী প্রচারণাকে প্রটেকশন দিল। ভারতও সেটিই চাচ্ছিল। অপর দিকে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি বিরোধীদের ওয়েব সাইট “বাঁশের কেল্লা” বন্ধ করে দেয়ার।
ইসলামবিরোধী নাস্তিকদের সাথে হাসিনা সরকারের বন্ধন যে কতটা মজবুত সেটি কি এরপরও বুঝতে বাঁকি থাকে? সরকার বিরোধীদলীয় নেতাদের আদৌ মাঠে নামতে দিচ্ছে না,এমনকি অফিসেও বসতে দিচ্ছে না। অথচ শাহবাগী ব্লগারদের পুলিশী প্রটেকশন দেয়া হচ্ছে। এ পুলিশকে দিয়েই দুই শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। ফলে এমন একটি জুলুমবাজ ও ইসলামবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে ইসলামপন্থিদের লড়াই যে শত ভাগ জিহাদ তা নিয়ে কি কোন সন্দেহ থাকে? কারণ লক্ষ্য তো এখানে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা। লক্ষ্য এখানে মুরতাদদের দখলদারি থেকে স্বাধীনতা লাভের। এর চেয়ে পবিত্র জিহাদ তাইআর কি হতে পারে? মহান আল্লাহতায়ালা তো এমন একটি জিহাদেই মু’মিনের আত্মনিয়োগ তথা জানমালের বিনিয়োগ দেখতে চান।জানমালের বিনিয়োগকারিকে দিতে চান জান্নাতের সুসংবাদ। বাংলাদেশে তেমন একটি খালেছ জিহাদই তো শুরু হয়ে গেছে। আর এখানেই বাংলাদেশীদের জন্য সুখবর। কারণ এমন একটি জিহাদের কারণে মহান আল্লাহতায়ালা এদেশের কিছু লোককে প্রমোশন দিতে চান। অনেকে এ জিহাদে শহীদ হবে,আহতও হবে। তাদের মহান রব তাদেরকে জান্নাতে নিতে চান।বাংলাদেশী মুসলমানদের জন্য এর চেয়ে বড় সৌভাগ্যের বিষয় আর কি হতে পারে? ১৪/০৪/১৩
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018