বাংলাদেশে সরকারী সন্ত্রাসের তান্ডব
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on October 23, 2020
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
এতো সন্ত্রাসের হেতু কি?
রাজনীতিতে লড়াই থাকবে এবং যুদ্ধ হবে -সেটি শুধু স্বাভাবিকই নয়,অনিবার্যও। লড়াই এখানে ক্ষমতা দখলের।মানুষ শুধু পেটের ক্ষুধা নিয়ে জন্মায় না, জন্মায় ক্ষমতার ক্ষুধা নিয়েও।তাই মানব ইতিহাস জুড়ে লড়াই শুধু খাদ্যপানীয় ও সম্পদের সংগ্রহে নয়,বিপুল আয়োজন যুদ্ধ-বিগ্রহ নিয়েও। এটি এক আদিম বাস্তবতা। কোন দলের নেতা বা নেত্রীকে তাই ফেরেশতা ভাবার সুযোগ নেই। গ্রীক দার্শনিক এ্যারিস্টোটল মানুষকে সংজ্ঞায়ীত করেছেন রাজনৈতিক জীব (পলিটিক্যাল এ্যানিমাল) রূপে।যাদের জীবনে রাজনীতি নাই -এ্যারিস্টোটলের দৃষ্টিতে তারা নিরেট পশু,পূর্ণাঙ্গ মানব নয়।এটিই হলো মনুষ্যপ্রাণীর সেক্যুলার পরিচয়। ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব এ্যারিস্টোটলের ধারণাকে আরো শক্তিশালী করেছে। কারণ ডারউইনের বিশ্বাস,মানব সৃষ্টির শুরুটি মানব রূপে হয়নি, বর্তমান দৈহিক রূপটি এসেছে লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনের ধারায়। ডারউইনের ধারণা,অন্যান্য জীবজন্তুর ন্যায় মানুষও এক প্রজাতির পশু। এভাবে মানবের স্রষ্টা রূপে অস্বীকার করা হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালাকে। সেসাথে লুকানো হয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি রূপে মানবের পরিচয়। দেয়া হয়েছে “struggle for existence and survival of the fittest” এর তত্ত্ব,এবং এভাবে জায়েজ করা হয়েছে অবিরাম যুদ্ধ, যুদ্ধে প্রাণনাশ, এবং দুর্বলের নির্মূলের মধ্য দিয়ে সবলের বেঁচে থাকাকে। জন্ম লাভ করেছে সাম্রাজ্যবাদ,উপনিবেশবাদ ও বর্ণগত নির্মূলের ন্যায় নানারূপ ভয়ংকর মতবাদ। এভাবে বিজ্ঞানের নামে মানবের পশুসুলভ হিংস্র আচরণকে বৈধতা দেয়া হয়েছে।
পশুরা বনেজঙ্গলে লড়াই করে পশুসুলভ হিংস্রতা নিয়ে। পশুর হিংস্রতার লক্ষ্য প্রতিপক্ষ পশুর হত্যা। অনুরূপ সহিংস ত্রাস থাকে সেক্যুলার মানব-পশুদের মাঝেও। আর যাতে ত্রাস তাই তো সন্ত্রাস।তবে পার্থক্য হলো পশুর সন্ত্রাসে রাজনীতি থাকে না,কিন্তু থাকে মানুষের সন্ত্রাসে। সন্ত্রাস তখন ভয় দেখিয়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়ের হাতিয়ারে পরিণত হয়। এদিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী দেশ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিনী সন্ত্রাসের ভয়ে অন্যান্যরা এতটাই ভীত যে, দেশটি এ্যাটোম বোমা,রাসায়নিক বোমা,ক্লাস্টার বোমা,মিজাইল ও ড্রোন দিয়ে অন্যদেশ দখল করলে এবং সেদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করলেও বহুদেশই সে নৃশংস বর্বরতার নিন্দা করে না। জাতিসংঘে মার্কিনীদের বিরুদ্ধে ভোটও দেয় না। ফলে ভয়ানক খুনিরাও তখন নির্দোষ থেকে যায়। পশু সমাজে হিংস্র ত্রাসের এরূপ রাজনৈতিক প্রয়োগ নাই। পশুরা হিংস্রতা দেখায় স্রেফ বাঁচার স্বার্থে, রাজনৈতিক স্বার্থে নয়। মানুষকে রাজনৈতিক পশু বলার সম্ভবত সেটিই কারণ। রাজনীতির সাথে সন্ত্রাসের সংমিশ্রণ ঘটলে সন্ত্রাস তখন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক রূপ পায়। যুদ্ধ তখন বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হয়। বিশ্বব্যাপী ত্রাস সৃষ্টির সে লক্ষ্য নিয়েই মার্কিনীগণ ভিয়েতনাম,আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ায় আগ্রাসন করে। আজও মার্কিন যুদ্ধবিমান ও ড্রোন হাজার হাজার মাইল দূরে থেকে মুসলিম ভূমিতে হামলা করছে।তাই বাস্তবতা হলো, মানব জাতির সমগ্র ইতিহাসে যত রক্তপাত ও প্রাণনাশ হয়েছে -তা হিংস্র পশুর নখরে ঘটেনি।ঝড়,প্লাবন বা ভূমিকম্পেও হয়নি।ঝরেছে সহিংস মানুষের হাতে। সে সন্ত্রাসের রাজনীতিতে হিন্দু রাজা শংকরাচর্যের বাহিনীর হাতে ভারতের বৌদ্ধগণ, ইউরোপিয়ানদের হাতে আমেরিকার রেড-ইন্ডিয়ানগণ, খৃষ্টানদের হাতে স্পেনের মুসলমানগণ নির্মূলর শিকার হয়েছে।
সন্ত্রাসী তান্ডবে সরকার
মানব ইতিহাসের বড় সন্ত্রাসী চোর-ডাকাতেরা নয়। মহল্লার পেশাদার খুনিরাও নয়। বরং সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হলো স্বৈরাচারি শাসকগণ। সন্ত্রাস তখন আর মুষ্টিমেয় দুর্বৃত্তদের হাতে সীমিত থাকে না। সে সন্ত্রাস স্রেফ চুরিডাকাতি ও কিছু মানব খুনের মধ্যেও সীমিত থাকে না। সেটি তখন জনগণের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরিণত হয়। লুন্ঠিত হয় দেশের রাজস্ব ভান্ডার। সে সন্ত্রাসে ব্যবহৃত হয় দেশের পুলিশ,সেনাবাহিনী,গোয়েন্দা বাহিনী এবং সমগ্র প্রশাসন। নির্যাতন ও হত্যার কাজে তখন সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হয়। বিদেশী শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের দোহাই দিয়ে যে অস্ত্র-ভান্ডার গড়ে তোলা হয় -সে ভান্ডারের অস্ত্র তখন দেশবাসীর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। হত্যাকান্ড তখন ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল স্কেলে হয়। সে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালাতেই ২০১৩ সালের ৫ই মে সেনাবাহিনীর কামান ও গোলাবারুদ ঢাকার শাপলা চত্ত্বরে আনা হয়েছিল। সে রাতে কয়েক ঘন্টার সরকারি সন্ত্রাসে হাজার হাজার মানুষ হতাহত হয়েছিল। লাশ গায়েব করা হয় ঢাকা সিটি কর্পোরশনের ময়লার গাড়িতে তুলে। শেখ হাসিনার জঙ্গি সরকার জনগণের বিরুদ্ধে এভাবে বারবার হামলা করেছে। একই রূপ সন্ত্রাস চালিয়েছে শেখ মুজিব। তাই ৩০ হাজার মানুষ খুনে মুজিবকে বেগ পেতে হয়নি।
আইয়ুব খান এবং ইয়াহিয়া খানও মুজিবকে জেলে নিয়েছিল। কিন্তু তাকে রিম্যান্ডে নিয়ে দৈহীক নির্যাতন করেনি, হত্যাও করেনি। আইয়ুব খানের আমলে জেলখানায় মুজিবের প্রথম শ্রেণী মিলেছিল।ইয়াহিয়া খান মুজিবকে কোন জেলের প্রকোষ্ঠে আবদ্ধ না রেখে পুরা একটি গৃহকে তার বাসগৃহে পরিনত করেছিল। তার সেবায় চাকর-বাকরও নিয়োগ করেছিল। মুজিব পরিবারের ভরনপোষণের জন্য উচ্চহারের ভাতার ব্যবস্থা করেছিল। শেখ মুজিবের স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা করেছিল ঢাকাস্থ সামরিক হাসপাতালে। অথচ মুজিবের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের গুরুতর অভিযোগ ছিল। সেটি ছিল রাষ্ট্রদ্রোহের এবং সে সাথে ভারতের ন্যায় শত্রুদেশের চর হওয়ার। বহু দেশে এ অপরাধের শাস্তি মৃত্যদন্ড। অপর দিকে মুজিব ও হাসিনার আচরণ? তাদের আমলে বিরোধী দলীয় নেতাদের পায়ে ডান্ডা বেরি পড়ানো হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার গৃহ বালিবাহি ট্রাক দিয়ে ঘেরাও করা হয়েছে; খাবার পৌঁছতেও বাধা দেয়া হয়েছে। এবং তাঁকে কারারুদ্ধও করা হয়েছে। মুজিবের জেলে সিরাজ সিকদার প্রাণে বাঁচেনি, প্রাণে বাঁচেনি মুসলিম লীগের প্রবীন নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীও। স্রেফ রাজনৈতীক কারণে বাঁচতে দেয়া হয়নি প্রায় ৩০ হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে; মুজিবের রক্ষিবাহিনী তাদেরকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। শেখ হাসিনার সরকার হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করে রিম্যান্ডে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করছে। গ্রেফতারের পর হত্যা করে শোনানো হয় বন্দুকযুদ্ধের কিসসা। কখনো বা বলা হয়, নিহত ব্যক্তিগণ গণপিটুনিতে মারা গেছে। একাত্তরের খুন ও ধর্ষণের অভিযোগ এনে ইসলামপন্থিদেরকে ফাঁসিতে ঝুলানো হচ্ছে। অথচ হত্যা ও ধর্ষণ কি শুধু একাত্তরে হয়েছিল? ৩০ হাজারের বেশী মানুষকে হত্যা করা হয়েছে মুজিবামলে। ধর্ষণ, হত্যা ও গুম লাগাতর চলছে শেখ হাসিনার আমলে। কিন্ত একাত্তর-পরবর্তী এরূপ অগণিত ধর্ষণ ও খুনের অপরাধে ক’জনকে আদালতে তোলা হয়েছে? ক’জনকেই বা শাস্তি দেয়া হয়েছে?
বিরামহীন বিস্ফোরণ সন্ত্রাসের
নেকড়ে যে দেশে বা যে বনেই বাস করুক, তার হিংস্রতা সর্বত্রই সমান। তেমনি অবস্থা স্বৈরাচারি শাসকদেরও। স্বৈরাচারি শাককদের পরকালের ভয় থাকে না। পরকালের ভয় তো ঈমানদারদের গুণ। সে ভয় ব্যক্তির সহিংসতা রোধে ব্রেকের কাজ করে। অপরদিকে সেক্যুলারিস্টগণ বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বেঈমান। ফলে তাদের রাজনীতিতে ইসলামের প্রতি যেমন অঙ্গিকার থাকে না, তেমনি ব্রেকও থাকে না। ফলে বর্বরতা সে রাজনীতিতে অতিশয় নৃশংস ও সীমাহীন হয়। তখন বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে সন্ত্রাসের। তাই সেক্যুলার রাজনীতিতে দেখা দেয় হালাকু-চেঙ্গিজ-হিটলার-স্টালিনদের বর্বরতা। এজন্যই মানব জাতির ইতিহাসে সন্ত্রাসের সবচেয়ে বড় বড় বিস্ফোরণগুলি ঘটেছে ইউরোপে। ইউরোপীয়দের সে সন্ত্রাসী চেতনা থেকেই জন্ম নিয়েছে উপনিবেশবাদ,সাম্রাজ্যবাদ,বর্ণবাদ,বর্ণীয় নির্মূলবাদ (এথনিক ক্লিন্জিং),ফ্যাসীবাদ ও মার্কসবাদের ন্যায় মানব ইতিহাসের সবচেয়ে হিংস্রাত্মক ও ধ্বংসাত্মক মতবাদ। সে সন্ত্রাসের সবচেযে ভয়ানক বিস্ফোরণ ঘটেছে দু’টি বিশ্বযুদ্ধে -যাতে মৃত্যু ঘটে প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষের এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় শত শত নগর-বন্দর,রাস্তাঘাট,ক্ষেত-খামার ও কালকারখানা। মাত্র এ দুটি বিশ্বযুদ্ধে যে পরিমাণ সম্পদ ধ্বংস হয় বা সাগরগর্ভে ডুবিয়ে দেয়া হয় তা দিয়ে সমগ্র বিশ্বের মানুষ বহুযুগ বিনাশ্রমে খেয়েপড়ে আরাম-আয়াশে বাঁচতে পারতো।
মানুষ অন্য এক প্রজাতির পশু মাত্র -সে তত্ত্বটি প্রবলতর হয় চেতনার ভূমিতে মার্কসবাদ, জাতীয়তাবাদ, বর্ণবাদের ন্যায় মতবাদ প্রবলতর হওয়াতে। কারণ, ধর্মবিবর্জিত এ হিংস্র মতবাদগুলিতে স্থান পায় মানব-সৃষ্টি বিষয়ে ডারউনের দেয়া বিবর্তনবাদ ও সে সাথে নিরেট বস্তুবাদ। এরূপ নিরেট বস্তুবাদী চেতনার কারণ এসব মতবাদের অনুসারিদের কাছে মানব-হত্যাটি মশা-মাছি ও কুকুর-শৃগাল হত্যার ন্যায় অতি তুচ্ছ ঘটনা গণ্য হয়। এভাবে মানব জীবনের সবচেয়ে বড় অবমূল্যায়ন হয় এসব বেঈমানদের হাতে। বিপ্লবের নামে বিপুল সংখ্যক মানবহত্যা তখন মামূলী বিষযে পরিণত হয়। সোভিয়েত রাশিয়ার বুকে প্রায় কোটি মানুষ নিহত হয়েছে স্বৈরাচারি শাসক জোসেফ স্টালিনের হাতে। বিশ লাখেরও বেশী মানুষকে হত্যা করেছিল ক্যাম্বোডিয়ার মার্কসবাদী পলপর্ট সরকার। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নামে চীনে বহুলক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে চেয়ারম্যান মাও সে তুং। একই রূপ হত্যাযজ্ঞে নেমেছিল ভারতীয় নকশালীরা। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও অতি ঘাতক জীব হলো এসব মার্কসবাদীরা। সমাজতন্ত্র, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র, কম্যুনিজমের নামে বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জে বিশেষ করে যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা এলাকায় কম্যুনিষ্টদের নানা দল,উপদল ও জাসদের গণবাহিনী বিগত কয়েক দশক ধরে শ্রেণীশত্রু নির্মূলের নামে হত্যা করেছে মামূলী আয়ের শত শত কৃষক ও ব্যাবসায়ীদের। এখনও সেটি চলেছে। সেসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের আজ অবধি বিচার হয়নি, দমনও হয়নি। দেশের প্রশাসন,মিডিয়া ও রাজনৈতীক দলগুলোর কাছে সে হত্যাকান্ডগুলো এমনকি সন্ত্রাস রূপেও চিহ্নিত হয়নি। বরং সে মার্কসবাদী সে ঘাতক চেতনা নিয়েই অনেক বামপন্থি আজ আওয়ামী বাকশালীদের সাথে একাত্ম হয়ে ইসলাম ও ইসলামপন্থিদের নির্মূলে নেমেছে। ফলে নির্যাতন,জেল-জুলুম ও মানবহত্যা এখন আর মুষ্টিমেয় সন্ত্রাসীর হত্যাকান্ড নয়,সেটিই এখন স্বৈরাচারি সরকারের রাষ্ট্রীয় নীতি। সে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে যোগ দিয়েছে শুধু ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র ক্যাডারগণই নয়,বরং দেশের পুলিশ বাহিনী, র্যাব বাহিনী,বিজিবি ও সেনাবাহিনী।এদের বন্দুকের নল এখন জনগণের দিকে। তাদের গুলিতে অগণিত লাশ পড়ছে পথেঘাটে। রাজনৈতিক শক্তির মূল উৎস এখন আর ভোট নয়, বরং সেটি বন্দুকের নল।
বিজয়ী নির্মূলের রাজনীতি
বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে চেতনাটি আজ বিজয়ী তা হলো সেক্যুলার চেতনা। সে অভিন্ন চেতনা নিয়েই রাজনীতি ছিল শেখ মুজিবের ও তার দলবলের। সেক্যুলারিজমের অভিধানিক অর্থ হলো ইহজাগতিকতা। অর্থাৎ ইহলৌকিক কল্যাণের ভাবনা তথা পার্থিব স্বার্থসিদ্ধি। এমন চেতনায় বিলূপ্ত হয় পরকালের ভয়, থাকে না মহান আল্লাহতায়ালার কাছে জবাবদেহীতার ভয়ও। পরকাল-ভীতি,ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জান্নাত লাভের ভাবনা সেক্যুলার চেতনায় গণ্য হয় পশ্চাৎপদতা ও সাম্প্রদায়িকতা রূপে। তাতে বিলুপ্ত হয় বক্তির কর্ম ও আচরণের উপর আল্লাহভীতি, উচ্চতর মূল্যবোধ ও ধর্মীয় চেতনার নিয়ন্ত্রণ। সেরূপ নিয়ন্ত্রণ জন্তু-জানোয়ারের মাঝে না থাকার কারণে সহিংস হওয়াটাই তাদের রীতি। তেমনি স্বার্থ শিকারে সহিংস হওয়াটি পরকালের চেতনাহীন সেক্যুলারিস্টদের রীতি। ফলে রাজনীতির ময়দানে তখন প্লাবন আসে বন্য সহিংসতার। তখন ভদ্র ভাবে কথা বলা, সংলাপ করা বা আপোষে তখন রুচি থাকে না। সেটি পশুদের জঙ্গলে যেমন থাকে না, তেমনি বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্টদের মাঝেও নাই। তাই মারামরি শুধু রাজপথেই নয়,সেটি সংসদে ও টিভির টকশোতেও। আইয়ুব খান ও ইয়াহিয়া খান যেমন সকল দলের নেতাদের নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক করেছিলেন সেটি হাসিনা রাজনীতিতে ভাবাও যায় না। সেরূপ সভ্য আচরণ মুজিবের রাজনীতিতেও ছিল না। তাদের রাজনীতিতে শুধু একটিই সুর –সেটি নির্মূলের।এবং সে নির্মূলের লক্ষ্য হলো দেশের বিরোধী দল বিশেষ করে ইসলামপন্থিগণ।
সেক্যুলারিস্টদের সহিংস রাজনীতিতে বাংলাদেশে আজ যেমন রক্ত ঝরছে, তেমনি অতীতেও ঝরেছে। সেটি যেমন রাজপথে,তেমনি সংসদের অভ্যন্তরেও। পঞ্চাশের দশকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের অভ্যন্তরে আহত হয়েছেন এবং পরে প্রাণ হারিয়েছেন সে পরিষদের ডিপুটি স্পীকার জনাব শাহেদ আলী।১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ক্যাডারগণ বিরোধীদের নির্বাচনি জনসভাও করতে দেয়নি। ১৯৭০ সালের ১৮ই জানুয়ারির পল্টন ময়দানের জামায়াতে ইসলামীরে জনসভাতে নির্মম ভাবে হত্যা করে দুইজন জামায়াত কর্মীকে। আহত করেছিল শতাধিক ব্যক্তিকে। সন্ত্রাসী হামলায় পন্ড করে দেয় ২৫ই জানুয়ারির মুসলিম লীগের পল্টনের জনসভা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে এভাবেই বিজয় ঘটেছে সন্ত্রাসের।সন্ত্রাসের সে রাজনীতি তীব্রতর করতেই আওয়ামী ক্যাডারগণ বিরোধী দলে থাকা কালে লাঠি,লগি-বৈঠা,পিস্তল-বন্দুক ও গানপাউডার নিয়ে রাজপথে নেমেছে। আগুণ দিয়ে নিরীহ যাত্রীদের পুড়িয়ে মেরেছে। তখন শেখ হাসিনার নির্দেশ ছিল এক লাশের বদলে দশলাশ ফেলার। এছিল তাদের রাজপথের রাজনীতি। ক্ষমতা হাতে পাওয়ায় সন্ত্রাসের সে রাজনীতিই আরো তীব্রতা পায়। তাই রক্ত ঝরেছে যেমন মুজিব আমলে, তেমনি ঝরেছে হাসিনার আমলেও।
শেখ হাসিনার গদীতে বসার পর তার দলীয় সন্ত্রাসীদের হাতে এখন আর শুধু দা-কুড়াল,কিরিচ,বন্দুক নয়,তাদের দলে এখন দেশের সমগ্র পুলিশবাহিনী, র্যাববাহিনী, বিজিবি, সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও আইন-আদালত এবং সে সাথে রাষ্ট্রীয় অস্ত্র ভান্ডারের সমগ্র অস্ত্র। ফলে চরম আকার ধারণ করেছে মানব হত্যা। লাশ পড়ছে প্রতিদিন। ধ্বংস হচ্ছে নিরস্ত্র ও নিরীহ মানুষের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা-বাণিজ্য।যে কোন দেশে সরকারের মূল দায়িত্ব হলো জনগণের জানমালের হেফাজত। কিন্তু সে দায়িত্ব পালনে বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহ নাই। সরকারের কাছে সেটি প্রায়রিটিও নয়। জনগণের জানমাল তাই সবচেয়ে অরক্ষিত। ফলে ব্যাপক ভাবে বেড়েছে হত্যা, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি ও লুটতরাজ। পুলিশ, র্যাব বিজিবি ও সেনাবাহিনীর কাজ হয়েছে স্রেফ স্বৈরাচারি সরকারের গদীর পাহারাদারি। শাসকদের কাছে সমগ্র দেশ গণ্য হচ্ছে গণিমতের মাল রূপে। সে কায়েমী স্বার্থের প্রতিরক্ষায় রাষ্ট্রের কর্মচারিগণ গণ্য হচ্ছে নিছক ভৃত্য রূপে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমুহের উপর প্রতিষ্ঠিত এরূপ অধিকৃতিকে কোন স্বৈরাচারি শাসক কি সহজে ত্যাগ করে? গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারি শাসকের শত্রুতা এজন্যই এতো প্রকট। শেখ হাসিনা এজন্যই ভোটের রাজনীতিতে আর ফিরতে রাজী নয়। রাজপথের মিটিং-মিছিল ও স্বাধীন পত্র-পত্রিকা প্রকাশের স্বাধীনতাও দিতে রাজি নয়। মানব ইতিহাসে বর্বর স্বৈরাচারিগণ শত শত বছর ক্ষমতায় থেকেছে স্রেফ অস্ত্রের জোরে, জনগণের দোয়ারে ভোট ভিক্ষায় যাওয়ার রুচি কোন কালেই তাদের ছিল না। বরং তারা তো চায় জনগণকে ভিক্ষুক করতে। এসব মুখোশধারিরা গণতন্ত্রের বুলি মুখে আনে স্রেফ জনগণকে বোকা বানানোর জন্য। শাসনক্ষমতায় জনগণকে ভাগীদার করার ইচ্ছা এসব স্বৈরাচারিদের কোন কালেই ছিল না। বাংলাদেশে সেটি যেমন মুজিবের ছিল না,হাসিনারও নাই। সেটি থাকলে পুলিশ,র্যাব,বিজিবি ও সেনাবাহিনীর বন্দুকের নল কেন জনগণের দিকে থাকবে? লাশ কেন রাজপথে পড়বে? দেশবাসীর প্রতি সামান্যতম দরদ থাকলে শেখ মুজিব একদলীয় বাকশালই বা কেন প্রতিষ্ঠা করবে? ১ম সংস্করণ ২৭/২/২০১৫; ২য় সংস্করণ ২৩/১০/২০২০
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018