বাংলাদেশে সেক্যুলারিজমের তাণ্ডব এবং সংকটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on December 5, 2022
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার বুকে সবচেয়ে উগ্র সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বাংলাদেশে। সেটি ১৯৭১’য়ে দেশটির প্রতিষ্ঠা লাভের পর। অথচ ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল বাঙালি মুসলিমগণ। সমগ্র ভারতের মাঝে বাংলাই ছিল মুসলিম লীগের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি। ১৯৩৭ সালের নির্বাচন থেকে বাংলার প্রধানমন্ত্রীত্ব সব সময়ই মুসলিমদের হাতে থাকে। তখন মুখ্যমন্তী না বলে প্রধানমন্ত্রী বলা হতো। সে সময় বাঙালিম মুসলিমদের চেতনায় কাজ করতো প্যান-ইসলামিক মুসলিম ভাতৃত্বের চেতনা। তাতে বিহারী, পাঞ্জাবী, পাঠান, সিন্ধি, গুজরাতী, বালুচ তথা সকল ভাষী মুসলিমগণ তাদের কাছে গণ্য হতো আপন রূপে। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার মূলে ছিল এই প্যান-ইসলামিক ভাতৃত্ব। লক্ষণীয় হলো, বাঙালি মুসলিমদের এই শ্রেষ্ঠ অবদানগুলির কোনটিই সেক্যুলারিজম-সম্মত ছিল না। বরং সেগুলির পিছনে কাজ করেছিল ইসলামের প্রতি দায়বদ্ধতার চেতনা।
কিন্তু প্যান-ইসলামিক চেতনার শত্রু ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদী, বামপন্থী ও হিন্দুত্ববাদী শক্তিবর্গ। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্ম হয় নানা রূপ সমস্যার বিশাল পাহাড় মাথায় নিয়ে। দুয়েক দশকের মধ্য সেগুলি দূর করা সম্ভব ছিল না। যেমন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝে বিরাজমান বিশাল বৈষম্য। তখন বাঙালি মুসলিমদের মাঝে একজন কারখানার মালিক বা শিল্পপতি ছিল না। একজন জেনারেল দূরে থাক, একজন কর্নেলও ছিল না। একজন আই,সি, এস. অফিসার ছিল না। একটি প্রাদেশিক রাজধানী নগরী ছিল না। ঢাকা ছিল একটি জেলা শহর মাত্র। ছিল না কোন পাটকল। সে সময় বহু শিল্পপতি, ১০৩ জন আই,সি, এস. অফিসার, একাধিক জেনারেল, বহু ব্রিগেডিয়ার ছিল অবাঙালিদের মাঝে। থানা শহরে দূরে থাক মহকুমা শহরগুলিতেও কোন কলেজ ছিল না। ছিল একটি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়। চোখে পড়ার মত ছিল এ বিশাল বৈষম্য। সে বৈষম্য নিয়েই শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তানীদের মাঝে রাজনীতি। সকল বৈষম্যের জন্য দায়ী করা হয় পাকিস্তানকে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী, বামপন্থী ও হিন্দুত্ববাদী শক্তিবর্গ এ বৈষম্যকে প্যান-ইসলামী চেতনা ও পাকিস্তানের বিনাশে হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করে। এ বৈষম্যই বাঙালিদের মাঝে সেক্যুলারিজমকে শক্তিশালী করে তোলে।
তখন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝে অর্থনৈতিক, সামরিক ও প্রশাসনিক বৈষম্যের চেয়ে অধিক গুরুতর ও ভয়ানক বৈষম্য গড়ে উঠে চেতনার ভূবনে। বাঙালি পূর্ব পাকিস্তানীদের মনে তখন উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্লাবন। অপরদিকে পাকিস্তানকে বাঁচাতে হলে চাই প্যান-ইসলামিক মুসলিম ভাতৃত্বের চেতনা। এ দুটোর মাঝে সমন্বয় অসম্ভব (incompatible)। অর্থনৈতিক, শিল্প-বাণিজ্য, সামরিক ও প্রশাসনিক বৈষম্য দূর করার যতই চেষ্টা হোক, চেতনার বৈষম্য দুরীকরণের কাজ আদৌ সহজ ছিল না। কারণ সে জন্য চাই চেতনার পরিশুদ্ধি। চেতনার পরিশুদ্ধির জন্য চাই ইসলামী জ্ঞানের পরিপুষ্টি। কিন্তু বাংলা সাহিত্য সে জ্ঞানের ভান্ডার ছিল না। পৌত্তলিক রবীন্দ্র সাহিত্য পড়িয়ে কি সেটি সম্ভব? চেতনার সে গভীর বৈষম্যই একাত্তরে পাকিস্তানের বিভক্তি ডেকে আনে।
১৯৭১’য়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিজয়ের পর ক্ষমতাসীন হন শেখ মুজিব ও তার দল আওয়ামী লীগ। তখন বাঙালি জাতিয়তাবাদ ও সেক্যুলারিজমের জোয়ার তার সর্বোচ্চ চূড়ায়। মুজিব যে সেক্যুলারিজমের জন্ম দেন তার মূল বৈশিষ্ট্য ছিল হিন্দুত্বতোষণ, ভারতমুখীতা এবং ইসলাম বৈরীতা। একাত্তরের যুদ্ধটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীতে সেটি পরিণত হয় ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে। এ যুদ্ধের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ভারত। এবং সেটি ১৯৪৭ সাল থেকেই।
পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, বর্ণবাদী নির্মূল ও বিশ্বযুদ্ধের নৃশংতার ইতিহাসকে বুঝতে হলে অবশ্যই মানবতা বিধ্বংসী পুঁজিবাদের চরিত্র ও নাশকতাকে বুঝতে হয়। তেমনি মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সংকটকে বুঝতে হলে অবশ্যই আগ্রাসী ইহুদীবাদকে বুঝতে হবে। সেটি না বুঝলে বুঝার কাজটি ব্যর্থ হতে বাধ্য। তেমনি বাংলাদেশের ইতিহাস সঠিক ভাবে বুঝতে হলে প্রথমে ভারতীয় শাসকচক্রের হিন্দুত্ববাদকে বুঝতে হবে। নইলে বাংলাদেশের ১৯৫২’য়ের ভাষা আন্দোলন, ষাটের দশকের আগরতলা ষড়যন্ত্র, ভারতের একাত্তরের যুদ্ধজয়, ২০০৯ সালের পিলখানায় সামরিক অফিসারদের হত্যাকান্ড, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে হিফাজত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, জামায়াত নেতাদের ফাঁসি এবং ২০১৪ ও ২০১৮’য়ের ভোট ডাকাতির ইতিহাসে অজানা থেকে যাবে।
হিন্দুত্ববাদী আধিপত্যবাদ শুধু বিজিপি, রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ, হিন্দু মহাসভা ও জনসংঘের আদর্শ নয়। হিন্দুত্ববাদ নিয়েই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রসের রাজনীতির শুরু। এ রাজনীতির গুরু ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, মহন দাস করমচাঁদ গান্ধি, বাল গঙ্গাধর তিলক ও বল্লব ভাই প্যাটেল। তাদের কাছে হিন্দু জাগরণের প্রতীক রূপে গণ্য হতো ভারতে মুসলিম নির্মূল অভিযানের গুরু মারাঠী সন্ত্রাসী শিবাজী। বাঙালি কংগ্রস নেতার সুরেন্দ্রনাথ ব্যাণার্জি বাংলায় শিবাজী পূজা শুরু করেন। সেটিকে সমর্থণ দেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিবাজীর বন্দনায় কবিতাও লিখেছেন। কংগ্রেসী রাজনীতির মূল লক্ষ্য: ভারত ভূমিতে হিন্দু শাসনের প্রতিষ্ঠা এবং মুসলিম দমন ও নির্মূল। কায়েদে আজম মহম্মদ আলী জিন্নাহ সে হিন্দু মানসের পরিচয় পান কংগ্রসের ভিতরে ঢুকে। সে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি বলেন বর্ণহিন্দু নেতৃত্ব চিকিৎসার অযোগ্য (জিন্নাহর ভাষায় incorrigible)। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় জিন্নাহর আপোষহীন হওয়ার মূল কারণ হলো হিন্দুত্ববাদের সাথে জিন্নাহর প্রত্যক্ষ পরিচয় ও অভিজ্ঞতা। কংগ্রেস তাদের এই হিন্দুত্ববাদের রাজনীতিকে বলে থাকে সেক্যুলার রাজনীতি। গুজরাতের কসাই নরেন্দ্র মোদিও নিজেকে সে ভারতীয় সেক্যুলারিজমের অনুসারী বলে প্রচার করে।
ভারতে সবচেয়ে বেশী মুসলিম নির্মূলের দাঙ্গাগুলি বিজিপি শাসনামলে হয়নি, সেগুলি হয়েছে কংগ্রেসের শাসনামলে। দাঙ্গার সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশী। অযোধ্যায় ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের দরজা যিনি সর্ব প্রথম হিন্দুদের জন্য খুলে দেন এবং মসজিদ প্রাঙ্গণে মূতি পূজার অনুমতি দেন -তিনি হলেন কংগ্রেস দলীয় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি। কংগ্রেস দলীয় প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাংয়ের শাসনামলেই বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়। অথচ ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কাজকে পূর্ব থেকেই বেআইনী কাজ বলে আখ্যায়ীত করে। অথচ ভারত সরকার সে বেআইনী কাজ রুখতে কোন উদ্যোগই নেয়নি। অথচ সে বেআইনী কাজটি রুখা সরকারের দায়িত্ব ছিল। দিন-দুপুরে লক্ষাধিক মানুষ সে ধ্বংসকাজে অংশ নেয়। কিন্তু ভারতীয় পুলিশ একজন অপরাধীকেও মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেফতার করেনি। এর কারণ, কংগ্রসের হিন্দুত্ববাদ। হিন্দুত্ববাদীরা তো এই ঐতিহাসিক মসজিদ ভাঙ্গা নিয়ে উৎসব করেছে। অতএব সে অপরাধ রুখবে কেন?
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, হিন্দু মহাসভা ও অন্যান্য হিন্দু সংগঠনগুলি পাকিস্তানের সৃষ্টিকে সর্বশক্তি দিয়ে বিরোধীতা করেছে। তাদের প্রবল বাধা সত্ত্বেও ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা পায়। কিন্তু দেশটির প্রতিষ্ঠা ভারত সরকার কোন কালেই মেনে নেয়নি। মন থেকে স্বীকৃতিও দেয়নি। সেটি বুঝা যাবে, সর্বভারতীয় কংগ্রসের সিদ্ধান্তের দিকে নজর দিলে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা পায় ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট তারিখে। ১৯৪৭ সালের সেপ্টম্বর মাসে মোম্বাই শহরে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রসের কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং হয়। সে মিটিংয়ে পাকিস্তানকে মেনে নেয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা হয়। সভায় প্রশ্ন তোলা হয়, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা কংগ্রেসের অখণ্ড ভারত নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। এবং সে নীতিই ভারতীয় জনগণকে কংগ্রেস শুরু থেকেই বলে এসেছে। কংগ্রসে তাই পাকিস্তান মেনে নেয় কি করে? সে সভায় পাকিস্তানকে শুধু সাময়িক ভাবে মেনে নেয়ার পক্ষে প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্তু স্থায়ী স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব সেদিন গৃহিত হয়নি। ঘোষিত না হলেও সেদিন স্থায়ী নীতি রূপে যা স্থির করা হয় তা হলো অখণ্ড ভারতের নির্মাণ। ১৯৭১’য়ের যুদ্ধ ছিল সে নীতিরই বাস্তব রূপ।
বুঝতে হবে, যে কারণে পাকিস্তানের সৃষ্টি কংগ্রসের অখণ্ড ভারত নীতির সাথে সাংঘর্ষিক, সেই একই কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতাও তাদের স্থায়ী নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। পাকিস্তানের ন্যায় বাংলাদেশের প্রতিও ভারতের স্বীকৃতি সাময়িক মাত্র। একাত্তরে বাংলাদেশ নির্মিত হয়েছিল ভারতের দ্বারা, ভারতের জন্য এবং ভারতের স্বার্থপূরণে (Bangladesh is a part of India, for India and made by India)। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারত যুদ্ধ করেনি। অখণ্ড ভারত নির্মাণের পথে পাকিস্তান ভাঙ্গা জরুরি ছিল বলেই ভারতীয় বাহিনী যুদ্ধ করেছে।
একাত্তরে মুক্তিবাহিনী একটি জেলা দূরে থাক, একটি থানাও স্বাধীন করতে পারিনি। পূর্ব পাকিস্তানে মোতায়েন কৃত মাত্র ৩৫ হাজার পাকিস্তানী সৈন্যের বিরুদ্ধে ভারত তার পূর্ব সীমান্তে আড়াই লক্ষ সৈন্য দিয়ে যুদ্ধ করে এবং পাকিস্তানী বাহিনীকে পরাজিত করে। এ যুদ্ধ ছিল ভারতের নিজের যুদ্ধ। ভারত বরাবরই চেয়েছে, বাংলাদেশ বাঁচবে ভারতে অধিনত একটি আশ্রীত দেশ রূপে। পাবে শুধু নামে মাত্র স্বাধীনতা। সেটি বিশ্ববাসীকে ধোকা দেয়ার জন্য। যেমন ভোটডাকাত হাসিনাও ব্যালট পেপার ছাপায় ও নির্বাচন দেয়। তাজুদ্দীনকে দিয়ে ৭ দফা ও মুজিবকে দিয়ে ২৫ সালা দাসচুক্ত স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়েছিল তো সে গোলাম বানানোর লক্ষ্যেই। বাংলাদেশ বাঁচবে ভারতের রাডারেরর নীচে –সে কথাটি ভারতের এক সাবেক সেনাপ্রধান তো খোলাখোলিই বলেছেন।
ভারতের রাজনীতির স্ট্রাটেজী কি সেটি বুঝতে হলে ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ (আর. এস. এস)’য়ের ভিশন ও স্ট্রাটেজীকে অবশ্যই বুঝতে হবে। সেটি বুঝলে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি -সেটি স্পষ্ট বুঝা যাবে। আর. এস. এস’য়ের কেন্দ্রীয় অফিস মহারাষ্ট্রের নাগপুরে। এই শহরেই ১৯২৫ সালে আর. এস. এস’য়ের জন্ম হয়। সে অফিসের দেয়ালে ভারতের একটি বৃহৎ মানচিত্র টানানো আছে। সে মানচিত্র স্বাধীন পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নামক কোন দেশের অস্তিত্ব নেই। অখণ্ড ভারতের ঐ মানচিত্রের মাঝে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ –এই দুটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ একীভুত। এ মানচিত্রই বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য সুস্পষ্ট বার্তা দেয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে যারা ভাবে তাদের জন্য এ মানচিত্রের মধ্যেই রয়েছে মহাবিপদের সংকেত।
টিভি চ্যানেল আল জাজিরার সাবেক সাংবাদিক মেহেদী হাসান ঐ অফিসে সাক্ষাতকার নিতে যান। অফিসে ঢুকে দেয়াল টানানো অখণ্ড ভারতের ঐ বিশেষ মানচিত্রটি দেখতে পান। আল জাজিরার ক্যামেরা ম্যান সেটিকে টিভি পর্দার দেখিয়েছে। মেহেদী হাসান রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ’য়ের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব’কে ভারতের ঐ অখণ্ড মানচিত্রের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে জানতে চান। রাম মাধব নিঃসংকোচে জবাব দেন, মানচিত্রে অখণ্ড ভারতের যে রূপ, ঐরূপ অখণ্ড ভারত নির্মাণই আর,এস,এস’য়ের লক্ষ্য। উল্লেখ্য হলো, ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার বাল্যকাল থেকেই আর,এস,এস’য়ের সদস্য। প্রশ্ন হলো, অখণ্ড ভারত নির্মাণই যখন ভারতের শাসক দলের লক্ষ্য, বাংলাদেশ ভারতের কাছে স্বাধীন দেশ রূপে স্থায়ী স্বীকৃতি পায় কীরূপে? বাংলাদেশকে স্থায়ী ভাবে স্বীকৃতি দিলে আর,এস,এস’য়ের অখণ্ড ভারত নির্মাণে স্বপ্ন কীরূপে পূরণ হবে? প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ আর কত কাল ভারতের সাময়িক স্বীকৃতি নিয়ে বাঁচবে?
সেক্যুলারিস্টদের যুদ্ধ শিক্ষাঙ্গণে ও ইসলামের বিরুদ্ধে। সেক্যুলারিস্টদের লক্ষ্য, মুসলিমদের ইসলাম থেকে দূরে সরানো। আর সেজন্য জরুরি ইসলামের জ্ঞানের মূল উৎসের সাথে সম্পর্কছেদ। ঘরের পানির সংযোগ কেটে দিলে সে ঘরের বাসিন্দা পানির অভাবেই মারা পড়ে। তেমনি ইসলামী জ্ঞানের সংযোগ কেটে দিলে মারা পড়ে মুসলিমের ঈমান। তখন বিলুপ্ত হবে মুসলিমত্ব। আজ থেকে ৬০-৭০ বছর আগে বাংলা ভাষা শতকরা ৯৯ ভাগ বই লিখতো হিন্দুরা। বাংলা ভাষায় ইসলামী বই বলতে ছিল মাত্র মোকসুদুল মু’মিনুন, নেয়ামূল কুর’আন, বেহেশতি জিওয়ার, বিষাদ সিন্ধু ও আনোয়ারা উপন্যাস। অথচ মুসলিম রূপে বাঁচতে হলো ঘরে শুধু ভাত, মাছ, গোশতো, তরকারি হলে চলে না। ইসলামী জ্ঞানও অপরিহার্য। নইলে শুধু দেহ বাঁচে, ঈমান বাঁচে না। ঈমান বাঁচানোর তাগিদে মুসলিমগণ সে আমলে ঘরে ঘরে উর্দু ও ফার্সি বই রাখতো। স্কুলে বা ঘরে ওস্তাদ রেখে উর্দু ও ফার্সি শিখতো।
ইংরেজ শাসকগণ মুসলিমদের এ সংকটটি বুঝতো। তাই মুসলিম ছাত্রদের জন্য স্কুলে উর্দু ও ফার্সি শেখার ব্যবস্থা রেখেছিল। কিন্তু বাঙালি হিন্দুদের সেটি ভাল লাগিনি। তারা দাবী তোলে বাংলার স্কুল থেকে উর্দু ও ফার্সি বিলুপ্ত করতে হবে। তখন বাংলার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ফজলুল হক। ডি.পি. আই (জনশিক্ষা পরিচালক) ছিলেন ইংরেজ। তখন সে ইংরেজ বাঙালি হিন্দুদের দাবীর জবাব দেন এই বলে, “বাংলা সাহিত্যে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের চিত্তে পুষ্টি জোগানোর মত কোন সাহিত্য নাই। তাই তাদের উর্দু ও ফার্সি শিখতেই হবে।” তখন ফজলুল হকও জোর দিয়ে বলেন, বাংলার স্কুলে অবশ্যই উর্দু বা ফার্সি শেখাতে হবে। সে আমলে স্কুলে উর্দু ও ফার্সির কারণেই বাঙালি শিক্ষিত যুবকগণ প্যান-ইসলামিক চেতনা নিয়ে বেড়ে উঠার সুযোগ পেয়েছিল এবং ভারতের নানা ভাষী মুসলিমদের সাথে মিলে “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান” পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জিহাদে শরিক হতে পেরেছিল। পাকিস্তান সৃষ্টির আগেই মুসলিম লীগ তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা পেলে উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা। এটি তাই ১৯৪৮ সালে জিন্নাহর একক ঘোষণা ছিল না।
ইসলামী জ্ঞানের সংযোগ বিচ্ছেদের কাজটি ব্রিটিশ আমলে সফল না হলেও সফল হয়েছে পাকিস্তান আমলে। সেটি বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। বাঙালি মুসলিমের জ্ঞানের সংকটি একজন অমুসলিম ইংরেজ যতটা বুঝতে পেরেছিল সেটি বাংলার মুসলিম নামধারী সেক্যুলারিস্ট, কম্যুনিস্ট ও ন্যাশনালিস্ট কাপালিকগণ বুঝতে পারিনি। এবং বুঝার চেষ্টাও করেনি। কারণ তারা ছিল পাকিস্তানের ঘরের শত্রু। ভাষা আন্দোলনকে তারা পাকিস্তান ভাঙ্গার হাতিয়ারে পরিণত করে। তারা উর্দু বর্জনের আন্দোলন শুরু করে। তখনই টের পাওয়া যায়, পাকিস্তান ভাঙ্গতে এখন আর বিদেশী কাফিরদের হামলার প্রয়োজন হবে না। সেটি মুসলিম নামধারী এই ঘরের শত্রুরাই সমাধা করে দিবে। সেটি প্রমাণিত হয় ১৯৭১ সালে। এটিই ছিল আধুনিক কালে মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় নাশকতা। বাঙালি মুসলিমগণ সে নাশকতার নেতা রূপে মাথায় তুলে নেয় গণতন্ত্রের খুনি, ফ্যাসিবাদের জনক, ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের দালাল ও দুর্বৃত্তদের গডফাদার শেখ মুজিবকে। এটিই হলো বাঙালি মুসলিমের সবচেয়ে গুরুতর বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক অপরাধ। আজও সে অপরাধের আযাব ভুগতে হচ্ছে বাংলাদেশীদের। হাসিনা হাজির হয়েছে সে আযাবের হাতিয়ার রূপে।
পাকিস্তান আজও পাঞ্জাবী, সিন্ধি, পাঠান, বেলুচ ও মোহাজিরদের নিয়ে ২২ কোটি মুসলিমের দেশ রূপে টিকে আছে -সেটি উর্দুর কারণে। অথচ পাকিস্তানের ৪টি প্রদেশের প্রতিটি প্রদেশ আলাদা রাষ্ট্র হতে পারতো। পাকিস্তানের ক্ষুদ্রতম প্রদেশও আয়তনে বিশ্বের অর্ধেক রাষ্ট্রের চেয়ে বৃহৎ। সমগ্র বিশ্বে পাকিস্তানই হলো একমাত্র মুসলিম দেশ যেখানে ৪টি ভাষাভিত্তিক বৃহৎ প্রদেশ এক দেশের মানচিত্রের মাঝে টিকে আছে। এর কারণ তাদের চেতনায় পুষ্টি পাচ্ছে উর্দু থেকে। কারণ, উর্দু ভাষা, অঞ্চল ও বর্ণের বন্ধন ভেঙ্গে প্যান-ইসলামিক হতে শেখায়। চেতনার সে পুষ্টির কারণেই বিপুল সংখ্যক পাঞ্জাবী, মোহাজির, বেলুচ ও সিন্ধিরাও একজন পাঠান ইমরান খানকে সমর্থন করে। রবিন্দ্রনাথ, সুনীল ও হুমায়ুন আহমেদর পাঠকদের মাঝে সেরূপ ভাষার নামে গড়া দেয়াল পাড়ি দেয়ার সামর্থ্য কখনোই আশা করা যায় না। বাঙালি একজন অবাঙালিকে ভোট দিবে সেটি তাই ভাবাই যায় না। সেজন্য চিত্তের সামর্থ্য চাই। সে সামর্থ্য সৃষ্টিতে আল্লামা ইকবাল, গালিব, হালি, হাফিজ জুলোন্ধরী, ফয়েজ আহম্মদ ফয়েজের মত সুশিক্ষিত সাহিত্যিকের সাহিত্য চাই।
উর্দু ভাষাই এখন সমগ্র মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ভাষা। আরবী-ফার্সীর চেয়েও তা আজ অধিক সমৃদ্ধ। এ ভাষায় একমাত্র করাচী ও লাহোর –এই দুটি শহর থেকে যে পরিমান বই প্রকাশিত হয় তা ২২টি আরব দেশ থেকেও প্রকাশিত হয় না। কারণ, মিশর, সৌদি আরব, সিরিয়া, জর্দানের মত অধিকাংশ আরব দেশে একখানি বই দূরে থাক, একখানি লিফলেটও সরকারী অনুমোদন ছাড়া ছাপা যায় না। অথচ পাকিস্তান বই ছাপতে কোন অনুমোদন লাগে না। উর্দু ভাষায় রয়েছে আল্লামা ইকবালের ন্যায় মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শিক্ষিত কবি। তাঁর শিক্ষালাভ ঘটে বিশ্বের তিনটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেগুলি হলো পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়। মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি দর্শন পি.এইচ.ডি লাভ করেন।
উর্দু ভাষার গুরুত্ব বাংলাদেশের বাঙালি মুসলিমগণ না বুঝলেও পশ্চিম বাংলার বাঙালি মুসলিমগণ ভালই বুঝেছে। তাদের সৌভাগ্য, তাদের মাঝে বাংলাদেশের বাঙালি মুসলিম সেক্যুলারিস্টদের ন্যায় ইসলামের শত্রু নাই। পশ্চিম বাংলার স্কুলগুলিতে উর্দু শেখানো হয়। পশ্চিম বাংলার সরকার সেটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে পশ্চিম বাংলার মুসলিমগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ফলে সরকার পিছু হটে। উর্দু বহাল রাখতে বাধ্য হয়। হয়তো এমন একদিন শীঘ্রই আসবে যখন বাঙালি মুসলিমের বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব পশ্চিম বাংলার মুসলিমদের হাতে যাবে। হয়তো বাংলাভাষা সমৃদ্ধ হবে তাদের চেষ্টায়।
বাংলাদেশের জনগণের সকল ব্যর্থতার মূল কারণ: তারা শুধু ভাত-মাছের জোগার নিয়ে ব্যস্ত। জ্ঞানের সংগ্রহে তাদের আগ্রহ নাই। জ্ঞানের ভান্ডারে সংকটের কারণে বাঙালি মুসলিমের দারুন ব্যর্থতা মানবিক গুণে বেড়ে উঠায়। রবীন্দনাথ বা হুমায়ন আহমেদের ন্যায় সাহিত্যিকের জন্ম না নিলে বাঙালির কি কোন ক্ষতি হতো? বাঙালি রূপে বেড়ে উঠায় কি কোন সমস্যা হতো? স্রেফ বাঙালি হতে তো রবীন্দ্র সাহিত্য লাগে না। উর্দু ভাষায় রবীন্দনাথ নাই্। তাতে কি তাদের সমস্যা হচ্ছে? কিন্তু মুসলিম রূপে বেড়ে উঠায় জ্ঞানর গুরুত্বটি বিশাল। জ্ঞানের ভান্ডারে সংগ্রহ বাড়াতে ইসলামের গৌরব কালে মিশর, ইরাক, সিরিয়া, সুদান, মরক্কো, আলজিরিয়া, লিবিয়ার জনগণ তাদের মাতৃভাষাকে দাফন করে আরবী ভাষাকে গ্রহণ করেছিল।
রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গানে প্রচুর ভাব, ভাষা ও ছন্দ আছে। কিন্তু দর্শনও কি আছে? দর্শন নাই বলেই রবীন্দ্র সাহিত্য বাঙালি জীবনে পথ দেখায়নি। অথচ দর্শনের মাঝেই সাহিত্যের পুষ্টি। চাটনি ও চানাচুর মুখরোচক। কিন্তু চাটনি ও চানাচুর খেলে দেহ পুষ্টি পায়না। সেটি সাহিত্যের বেলাতেও। সাহিত্যিকের কাজ তাই শুধু ব্যক্তির ভাবে বা কল্পনায় সুরসুরি দেয়া নয়। তাকে জনগণের চেতনাতেও পুষ্টি জোগাতে হয়। এজন্য সাহিত্যিককে সাহিত্যে নামার আগে শিক্ষিত হতে হয়। গভীর জ্ঞানের অধিকারী হতে হয়। ইকবাল সে কাজটি করেছেন তিনটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ সেটি করেনি। তিনি স্কুল জীবনও শেষ করেননি। এজন্যই ইকবাল শ্রেষ্ঠ। ইকবাল উপমহাদেশের মুসলিমদের পথ দেখিয়েছেন। তার পরামর্শের ভিত্তিতেই ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠা পায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র। ১৯৭১’য়ে দেশটি দ্বিখণ্ডিত হওয়ার পরও আজ বিশ্বের বুকে সবচেয়ে শক্তিশালী মুসলিম দেশ। ২২ কোটি মানুষের এই দেশটির হাতে রয়েছে পারমানবিক বোমা এবং মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ সেনাবাহিনী।
বাংলাদেশের বাঙালিগণ পথ হারিয়েছে তাদের রাজনীতি, নৈতিকতা, চেতনা ও শিক্ষা-সংস্কৃতিতে। সেটির প্রমাণ, তারা মূর্তি নির্মাণ করে ও রাস্তাঘাটে মূর্তি স্থাপন করে। মঙ্গল প্রদীপ নিয়ে তারা মিছিল করে। পূজার সংস্কৃতিকে নিজেদের সংস্কৃতি রূপে গর্ব করে। বাংলার বুকে মুসলিমের ইতিহাস এক হাজার বছরেরও বেশী। এই দীর্ঘকাল যাবত বাঙালি মুসলিম কি একটি মূর্তিও নির্মাণ করেছে? এ কাজ ছিল হিন্দুদের। অথচ এক হাসিনার আমলে শত শত মূর্তি বসানো হয়েছে। এটি তো পথ হারানোর লক্ষণ। তারা পথ হারিয়েছে সিরাতাল মুস্তাকীম থেকে। এজন্য দায়ী পৌত্তলিক রবিন্দ্র সাহিত্য। সে সাথে দায়ী দেশের রবিন্দ্রভক্ত রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব। ইসলামী দর্শন সমৃদ্ধ ইকবাল সাহিত্য পাঠ হলে বাংলার মানুষ এরূপ পথ হারাতো না। দুর্বৃত্তিতে ৫ বার বিশ্বে প্রথম হতো না। ভোটডাকাতিতেও বিশ্ব রেকর্ড গড়তো না।
পাকিস্তান আমলে স্কুলে দ্বীনিয়াত নামে একটি বই পড়ানো হতো। সে বইটিকে মুজিবামলে নিষিদ্ধ করা হয়। মুজিব এভাবেই শয়তানের এজেন্ডাকে বিজয়ী করে। আওয়ামী রাজনীতিই হলো হিন্দুত্ববাদীদের বিজয়ী করা এবং শয়তানের এজেন্ডাকে বিজয়ী করার রাজনীতি। যেসব প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে ইসলাম ও মুসলিম শব্দ ছিল -সেগুলিও বিলুপ্ত করা হয়। ভারতে জামায়াতে ইসলামী, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ, হিন্দু মহাসভা ও বিশ্বহিন্দু পরিষদেরর মত বহু ধর্মীয় দল বেঁচে থাকার অধিকার পেলেও মুজিব সকল ইসলামী দলকে নিষিদ্ধ করেন এবং সেসব দলের নেতাদের কারাবন্দী করেন। এবং ইসলামের নামে সংগঠন করা দণ্ডনীয় অপরাধে পরিণত করেন। জাতীয় সঙ্গীতের নামে রবীন্দ্রনাথের পৌত্তলিক চেতনার গান “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি” গানকে জাতীয় সঙ্গীতে পরিণত করেন।
ভারতের বেনারসে হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং আলীগড়ে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এখনো বেঁচে আছে। কিন্তু শেখ মুজিব জাহাঙ্গির নগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল থেকে মুসলিম শব্দটি কেটে দেন। নজরুল ইসলাম কলেজের নাম থেকে ইসলাম বাদ দিয়ে স্রেফ নজরুল করা হয়। অথচ নজরুলের পুরা নামটি নজরুল ছিল না, ছিল নজরুল ইসলাম। পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামে কুর’আনের আয়াত “ইকরা বিসমে রাব্বিকাল্লাযী খালাক” লেখা ছিল। সেটিও মুজিব বাদ দেন। পাকিস্তান আমলে রেডিও ও টিভিতে প্রতিদিন সকালে কুর’আন তেলাওয়াত দিয়ে শুরু করা হতো। সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে অবশ্য জনগণের দাবীর প্রেক্ষিতে আবার চালু করা হয়। তবে শুধু কুর’আন পাঠ নয়, কুর’আনের সাথে হিন্দু, খৃষ্টান ও বৌদ্ধদের ধর্মগ্রন্থ থেকেও পাঠকরা শুরু করা হয়।
বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রে মহান আল্লাহতায়ালার উপর আস্থার বাণী ঘোষিত হয়েছিল। প্রতিকর্মে আল্লাহর উপর আস্থা নিয়ে বাঁচতে হয় প্রতিটি ঈমানদারকে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকগণ তাদের বিশ্বাসের প্রকাশ ঘটায় প্রতিটি ডলারের নোটের উপর “We trust in God।” কিন্তু বাঙালি সেক্যুলারিস্টদের মনে সে ধর্মীয় চেতনাটুকুও নাই। তাই শেখ হাসিনার কাছে আল্লাহর উপর আস্থার বাণী পছন্দ হয়নি; এজন্যই সে বাণীকে বিলুপ্ত করা হয়েছে। মূর্তিগড়া ও মূর্তির পায়ে ফুল দিয় সম্মান জাননো কোনকালেই মুসলিম সংস্কৃতি ছিল না। কিন্তু হাসিনা ও তার বাকশালী সেক্যুলারিস্টদের কাছে মূর্তিগড়া ও মূর্তিপূজার সংস্কৃতি গুরুত্ব পায়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা বসানো হয়েছে মুজিবের মূর্তি। ছাত্রদের বাধ্য করা হচ্ছে ভক্তি ভরে সে মূর্তি ছুয়ে স্কুলে প্রবেশ করতে। মুসলিমগণ আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া চায়। কিন্তু সেক্যুলারিস্টদের চেতনায় আল্লাহ নাই, তাই কল্যাণ কামনা করে মঙ্গল প্রদীপ জ্বেলে।
বাঙালি সেক্যুলারিস্টগণ সেক্যুলারিজমের ব্যাখ্যা দেয় ধর্মীয় নিরপেক্ষতা বলে। সেটি নিছক ধোকাবাজী ও প্রতারণা মাত্র। তাদের কাছে সেক্যুলারিজম হলো জনগণকে ইসলাম থেকে দূরে সরানোর হাতিয়ার। সে সাথে হিন্দুত্ববাদে দীক্ষাদানের। সেটি যেমন শেখ মুজিবের রাজনীতিতে দেখা গেছে, এখন দেখা যাচ্ছে হাসিনার রাজনীতিতে। “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার” এ স্লোগান দিয়ে বাঙলি সেক্যুলারিষ্টদের লক্ষ্য হলো বাঙালি মুসলিমদের উপর পূজার সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়া। বাঙালি মুসলিমদেরকে তারা হিন্দু না বানাতে না পারলেও দীক্ষা দিচ্ছে হিন্দু সংস্কৃতির। সেক্যুলারিজম এভাবেই মুসলিম ভূমিতে কাজ করছে “de-Islamisation” এবং “cultural conversion” ‘য়ের হাতিয়ার রূপে।
বাংলাদেশে সেক্যুলারিস্টদের বিজয়টি বিশাল। মুসলিমদের ঈমানশূণ্য করতে ও সিরাতাল মুস্তাকীম থেকে দূরে সরাতে তারা দারুন সফল হয়েছে। অসুস্থ্ মানুষের দেহে মশা-মাছি বসলেও তা তাড়াতে পারে না। এমনটি হলো বুঝতে হবে, সে মত্যু-পথযাত্রী। তেমনি অসুস্থ্ জাতি পারে না শত্রু তাড়াতে। ফলে নিজেদের ভোটডাকাতি হলে বা পুরা দেশ ডাকাতি হয়ে গেলেও তারা সেটি নীরবে দেখে। শত্রুর শাসনও তারা বিনা প্রতিবাদে মেনে নেয়। এমন কি নৃশংস গণহত্যা হলেও তারা প্রতিপাদে রাস্তায় নামে না। জনগণের মাঝে সে নীরবতা দেখা গেছে শাপলা চত্বরের গণহত্যার পর। দেখা গেছে পিল খানা হত্যাকান্ডের পর। দেখা গেছে ২০১৮ সালে ভোটডাকাতির পর। এগুলি প্রমাণ করে প্রতিবাদের সাহস ও শক্তি ১৭ কোটি মানুষের মাঝে বেঁচে নাই। এসবই হলো বাঙালি মুসলিম জীবনে সেক্যুলারিজমের নাশকতার চুড়ান্ত রূপ। ইসলাম থেকে দূরে সরলে এরূপ পরাজয় ও বিচ্যুতি নিয়েই বাঁচতে হয়। তবে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়টি অপেক্ষা করছে আখেরাতে। তবে কথা হলো, সে হুশটি কি কখনো মুমূর্ষুদের থাকে? ১২/১১/২০২২
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018