বাংলাদেশ সরকারের বিদ্রোহ ও জনগণের দায়ভার
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 2, 2019
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
বিদ্রোহ শুধু প্রজারাই করে না। গুরুতর বিদ্রোহ হতে পারে খোদ সরকারের পক্ষ থেকেও। সেটি যেমন হতে পারে জনগণের সাথে কৃত ওয়াদার বিরুদ্ধে, তেমনি হতে পারে সর্বময় ক্ষমতার মালিক মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধেও। বাংলাদেশ সরকারের দ্বারা এমন বিদ্রোহ হচ্ছে বস্তুত উভয় ক্ষেত্রেই। এবং সেটি কিভাবে এবং কতটা গুরুতর ভাবে হচ্ছে সেটিই এ প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয়। আদালতের রায়, দেশের আইন বা শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে কেউ বিদ্রোহ করলে বা “মানবো না বললে” তার বিরুদ্ধে তৎক্ষনাৎ পুলিশ ও গোয়েন্দা ছুটে আসে। গ্রেফতার করে তাকে আদালতে দাঁড় করায়। আদালত তাকে শাস্তি দিয়ে জেলে পাঠানো। বিদ্রোহটি গুরুতর হলে অপরাধীকে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে বা গুলি করে হত্যা করা হয়। বিশ্বের কোন দেশের সরকারই বিদ্রোহীদের প্রতি সদয় নয়। কারণ, সেটি হলে রাষ্ট্র টেকে না। তাই বিদ্রোহ দমনে পুলিশ ব্যর্থ হলে সেনাবাহিনী তলব করা হয়। এটাই বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের নীতি। তেমনি এক গুরুতর অপরাধ হল আল্লাহ ও তাঁর আইনের বিরুদ্ধে অবাধ্যতা বা বিদ্রোহ। আল্লাহর বিরুদ্ধে এরূপ বিদ্রোহের শাস্তিও অতি কঠোর। মহান আল্লাহ শুধু নামায-রোযা, হজ-যাকাতের বিধানই দেননি, সুস্পষ্ট বিধান দিয়েছেন সম্পদের বন্ঠন, চুরি-ডাকাতি, জ্বিনা ও খুনের ন্যায়ের নানাবিধ অপরাধের শাস্তির। সে বিধান পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ। ইসলামে এটিই হল শরিয়ত।
দেশে রাস্তাঘাট, কলকারখানা, স্কুল-কলেজ বা হাসপাতাল কোথায় নির্মিত হবে তা নিয়ে দেশবাসী মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর বিতর্ক করতে পারে। পবিত্র কোরআনে যে সব বিষয়ে কিছু বলা হয়নি বা নির্দেশ আসেনি, মানুষের অধিকার রয়েছে তা নিয়ে বিষদ বিশ্লেষণের। কিন্তু যে বিধান বা আইন পবিত্র কোরআনে বলে দেয়া হয়েছে সেক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র বিতর্কের সুযোগ নেই। তখন ঈমানদারের দায়িত্ব হয়,“সামি’না ওয়া তায়ানা” অর্থঃ ‘শুনলাম ও মেনে নিলাম’ বলা। আল্লাহর আইন বা হুকুমের গুাণাগুণ নিয়ে বিতর্কের অর্থই হল, আল্লাহর জ্ঞান ও বিচার শক্তি নিয়ে সন্দেহ। সে আইন না মানার অর্থ হল আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে অনাস্থা ও বিদ্রোহ। মুসলিম রাষ্ট্রে এমন বিদ্রোহীর বিরুদ্ধে বিচার এবং বিচার শেষে শাস্তি প্রয়োগ করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। মুসলিম দেশের সরকারের উপর এটিই সবচেয়ে বড় আমানত। সে দায়িত্বপালনে অসমর্থ হলে বৈধতা হারায় সরকার। সরকারের বৈধতা নিছক নির্বাচনী বিজয়ের মধ্যে নয়, বরং সেটি হল পবিত্র আমানতের দায়ভার বহনের সামর্থ। নির্বাচনী বিজয় তো অর্থব্যয় ও ধোকাবাজীতেও সম্ভব। খেয়ানতকারী যত জনপ্রিয়ই হোক তাকে দেশ শাসনের অব্যাহত অধিকার দিলে দেশ বিপন্ন হতে বাধ্য। লিন্দুপ দর্জির ন্যায় যারা সিকিমকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল তারাও এক সময় জনপ্রিয় ছিল, নির্বাচনে জয়ীও হয়েছিল। বাংলাদেশকে যিনি ২৫ সালা দাসচুক্তির মাধ্যমে ভারতের হাতে তুলেছিলেন ও গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়েছিলেন তিনিও বিপুল ভোটে নির্বাচনে জিতেছিলেন। জনগণের বিরুদ্ধে নির্বাচিত সরকারের বিদ্রোহ ও গাদ্দারী যে কতটা জঘন্য হতে পারে এ হল তার নজির। তারা একই ভাবে বিদ্রোহী হতে পারে মহান আল্লাহর স্বার্বভৌমত্ব ও তাঁর আইনের বিরুদ্ধে। আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নবীজী (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের আমলেও হয়েছে। তবে তার শাস্তিও হয়েছে। হযরত আবু বকর (রাঃ)য়ের আমলে কিছু লোক যাকাত দিতে অস্বীকার করেছিল। সে অপরাধে তাদের প্রাণদন্ড দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের সরকার আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের কি শাস্তি দিবে? তারা নিজেরাই তো বিদ্রোহী। কাফের হওয়ার অর্থ শুধু মুর্তিপুজা নয়। বরং সেটি আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে যে কোন বিদ্রোহ। পবিত্র কোরআনে যেমন বলা হয়েছে, “আল্লাহ যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী যারা ফায়সালা করে না তারা কাফের।” -সুরা মায়েদা, আয়াত ৪৪।
প্রজারূপে যেমন প্রতিটি মুসলমানের কিছু দায়-দায়িত্ব থাকে, তেমনি গুরুতর দায়িত্ব পালন করতে হয় শাসক রূপেও। এসব ক্ষেত্রে সামান্যতম অবাধ্যতা বা বিদ্রোহ চলে না। মুসলমান হওয়ার অর্থ সর্বাবস্থায় মুসলমান হওয়া। প্রজারূপে যেমন, তেমনি সরকার-প্রধান রূপেও। অথচ এখানেই বাংলাদেশ সরকারের মূল সমস্যা। তারা নিজেদের মুসলমান রূপে দাবী করে। নির্বাচন কালে কোরআন ও সূন্নাহর বিরুদ্ধে কোন রূপ আইন প্রণয়ন হবে না সে ওয়াদাও করে। কিন্তু বাস্তবে করে উল্টোটি। নিজ ওয়াদার বিরুদ্ধে তারা নিজেরাই বিদ্রোহ করে। আল্লাহর বিধানের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের যে সামান্যতম শ্রদ্ধাবোধ নাই, এবং সে আইন মানতেও যে তারা রাজী নয় -সম্প্রতি সেটিই আবার প্রকান্ড ভাবে প্রকাশ পেল। এবং সেটি গত ৭ই ফেব্রেয়ারী সরকারের মন্ত্রীসভায় গৃহীত সিদ্ধান্তে। সরকার ‘নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১’ নামে গৃহীত সিদ্ধান্তটি হল, মৃত পিতার রেখে যাওয়া সম্পদে তার পুত্র ও কন্যারা সমান অধিকার পাবে। সরকারের ও ঘোষণাকে আল্লাহর আইনের প্রতি আত্মসমর্পন বলা যায় না, বরং সেটি সুস্পষ্ট বিদ্রোহ। পিতার মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়ার সম্পত্তির কে কতটা পাবে তা নিয়ে ইসলামে কোন অস্পষ্টতা নেই। কোরআনে নামাযের বিধান এসেছে। কিন্তু কোন ওয়াক্তে কত রাকাত নামায পড়তে হবে, রুকু সিজদা কতবার হবে, কখন কি পাঠ করতে হবে -সে বিষয়ে পবিত্র কোরআনে কোন ঘোষণা নেই। সে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো শিখতে হয় নবীজী(সাঃ)র সূন্নত থেকে। ইসলামে পবিত্র কোরআনের পাশাপাশি হাদীসের গুরুত্ব তাই অপরিসীম। কিন্তু পিতার মৃত্যুর পর তার সম্পদ কীভাবে বন্টন করতে হবে সে বিষয়টি তিনি নবীজীর উপর ছেড়ে দেননি। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা সেটি স্বয়ং অতি বিস্তারিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। সেটি হল,“আল্লাহ তোমাদের সন্তান সম্বন্ধে নির্দেশ দিচ্ছেনঃ এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার সমান। …..এ হল আল্লাহর নির্ধারিত সীমা (হুদুদুল্লাহ)। কেহ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করলে আল্লাহ তাঁকে জান্নাতে দাখিল করবেন। যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তাঁরা স্থায়ী হবে এবং এটি মহা সাফল্য। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হল এবং তার নির্ধারিত সীমা লংঘন করল, তিনি তাকে আগুণে নিক্ষেপ করবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং তার জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।”-(সুরা নীসা ১১-১৪)। বাংলাদেশ সরকারের অপরাধ, করুণাময় মহান আল্লাহতায়ালার কাছে আত্মসমর্পণের বদলে তারা তাঁর বিধানকেই অবিচারমূলক রূপে রহিত করল।
হুদুদুল্লাহ ইসলামের একটি বিশেষ পরিভাষা। হুদুদ শব্দটির অর্থ সীমানা। আল্লাহতায়ালা ঈমানদারদের জন্য সিদ্ধ-অসিদ্ধ, হারাম-হালালের একটি সুর্নিদ্দিষ্ট সীমানা নির্ধারন করে দিয়েছেন। মুসলমান হওয়ার অর্থ হল, নির্ধারিত সে সীমানার মধ্যে অবস্থান করা। সে সীমানার বাইরে যাওয়ার অর্থ ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়া। এবং সে সীমানা থেকে বের হয়ে যাওয়ার শাস্তি হল জাহান্নাম। ফলে মুসলমানগণ যেখানে ঘর বাঁধে সেখানে শুধু মসজিদ গড়ে না, সেখানে ইসলামের হুদুদ আইনের প্রতিষ্ঠাও করে। কারণ সেটি না হলে মুসলমান হওয়ার মধ্যে প্রচন্ড অসম্পূর্ণতা থেকে যায়। শূণ্যতা থেকে যায় ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রের। তাই সমগ্র ইতিহাসে এমন কোন মুসলিম রাষ্ট্র পাওয়া যাবে না যেখানে আল্লাহর হুদুদ প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। সেটি যেমন খোলাফায়ে রাশেদার আমলে হয়েছে, তেমনি আব্বাসীয়, উমাইয়া ও উসমানিয়া খলিফাদের আমলেও হয়েছে। সেটির পূর্ণ প্রতিষ্ঠা ছিল ভারতে মুসলিম শাসন আমলেও। ব্রিটিশ শাসনের প্রতিষ্ঠার পূর্বে বাঙলাতেও হুদুদ আইন তথা শরিয়তি আইনই ছিল দেশের আইন। কোন মুসলমানের পক্ষে যেমন নামায-রোযা পরিত্যাগ করা অভাবনীয়, তেমনি অভাবনীয় হল শরিয়তের বিধানকে পরিত্যাগ করা। অথচ বাংলাদেশ সরকার আল্লাহর সে হুদুদ আইনের প্রয়োগের বিরোধী। উপমহাদেশে শরিয়তী হুদুদ আইন কোন মুসলমানের হাতে বিলুপ্ত হয়নি, হয়েছিল ব্রিটিশদের হাতে। ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়েছে, কিন্তু অবসান হয়নি তাদের সেকুলার খলিফাদের শাসন। ফলে প্রতিষ্ঠা পায়নি ইসলামের শরিয়তী আইন। আওয়ামী লীগ সরকারের যুক্তি, সম্পদের বন্টনে ইসলামের যে হুদুদ আইন তাতে নারী-পুরুষের বৈষম্য রয়েছে।তারা চায় সে অসমতা ও বৈষম্য দূর করতে।
এটা ঠিক, সম্পদের বন্ঠনে ইসলামে নারী পুরষের মাঝে বৈষম্য রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, এরূপ অসমতা কি অবিচার? এবং সর্বক্ষেত্রে সমতা কি সুবিচার? সমতা যে কোন কোন ক্ষেত্রে চরম অবিচার ও জুলুমবাজীতে পরিনত হয় সে হুশ কি বাংলাদেশ সরকারের আছে? নারীপুরষের শরীরের গঠন, শক্তি, সৌন্দর্য ও সামর্থে রয়েছে সুস্পষ্ট অসমতা। সে অসমতা দূর করা কি আদৌ সম্ভব? পুরুষের পক্ষে কি সম্ভব সন্তান ধারণ? তার পক্ষে কি সম্ভব মায়ের ন্যায় সন্তানকে বুকের দুধদান, সেবাদান ও লালন পালন? তার পক্ষে কি সম্ভব একাকী চাষাবাদ করা? সম্ভব কি রণাঙ্গণে রাতের পর রাতে পুরুষের পাশাপাশি যুদ্ধ করা? নিভৃত রণাঙ্গনে কে দিবে তাকে নিরাপত্তা? সম্পদের প্রয়োজনও তো সবার সমান নয়। তাই সম্পদের বন্টনে সমতার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হল কার কতটা প্রয়োজন সেদিকে নজর দেয়া। আর সেটি মহান আল্লাহতায়ালার চেয়ে আর কে বুঝে? অথচ ইসলামে অঙ্গিকারশূণ্য আওয়ামী লীগের নেতাগণ সেটি মানতে রাজী নয়।
ইসলাম নারীকে পুরুষের প্রতিদ্বন্দী রূপে দেখে না, এবং ভাই প্রতিদ্বন্দী নয় বোনের। নারী-পুরুষ, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন সবাইকে ইসলামি সমাজ নির্মানে বিশাল দায়ভার কাঁধে তুলে নিতে হয়। সে দায়ভার পালনে প্রতিটি মুসলমান হল মহান আল্লাহর খলিফা। তবে ইসলাম সে দায়ভারটি নারী-পুরুষের উপর সমান ভাবে বন্টন করে না। উভয়কে একই রণাঙ্গনে ও একই বাংকারেও হাজির করে না। উভয়ের লড়াইয়ের ক্ষেত্রের ন্যায় দায়ভারও ভিন্ন। তাই অসমান হল তাদের প্রয়োজনটিও। এক্ষেত্রে সুবিচারটি জরুরী, সমতা নয়। পরিবারীক ও সামাজিক শান্তির স্থাপনে বড় প্রয়োজনটি হল মূলত এই সুবিচার, এ ক্ষেত্রে অবিচার হলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রজুড়ে জন্ম নেয় মহা অশান্তি। অশান্তির সে আগুণ থেকে পরিবারের কেউই রক্ষা পায়না। তাই পরিবারকে বিধ্বস্ত করার মধ্যে কারোই কোন কল্যাণ নেই। কিন্তু সে সুবিচার পরিবারে কীরূপে সম্ভব? সুবিচারের সে সামর্থ কি মানুষের আছে? ইসলামের পূর্বে তো নারীকে ভোগ্য পণের ন্যায় আরেক পণ্য গণ্য করা হত। হিন্দুরা তো সদ্য-বিধবাদের তাদের মৃত স্বামীর সাথে পুড়িয়ে মারতো। পরিবারে একত্রে কাজ করে শুধু স্বামী-স্ত্রী ও তাদের সন্তানেরা নয়, ভাই-বোনও। তাই ভাই-বোনকে একে অপরের প্রতিদ্বন্দিরূপে খাড়া করার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। ভাই তার স্ত্রীকে আনে ভিন্ন এক পরিবার থেকে। আর সে তার বোনকে স্ত্রীরূপে তুলে দেয় অন্য এক পরিবারের পুরুষের হাতে। বোন তার পিতার সম্পদের যে হিস্যা নিয়ে স্বামীর ঘরে যায়, সমপরিমান হিস্যা নিয়ে আসে তার স্ত্রীও। ইনসাফ কাজ করছে এখানেও। মুসলিম সমাজে সমস্যা অনেক। তবে বিগত ১৪ শত বছর ধরে মুসলিম সমাজে মৃত পিতার সম্পদের বন্টন নিয়ে কোন সমস্যা দেখা দেয়নি। অথচ আজ সেটিই আওয়ামী সরকারের কাছে বড় সমস্যা রূপে দেখা দিয়েছে। সে সমস্যার সমাধানে তারা আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঝান্ডা উড়ানোটি জরুরী মনে করছে। ইসলামের শত্রুপক্ষ চায়, এভাবে যুদ্ধ শুরু হোক মুসলমানদের ঘরে ঘরে। এ যুদ্ধ তীব্রতর হলে মুসলমানরা তখন আর বিদেশী শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ফুরসতই পাবে না। আওয়ামী লীগ সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে হত্যা, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, দূর্নীতি, চুরি-ডাকাতি, পানি-গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা, সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা ও নারি অপহরনের ন্যায় গুরুতর সমস্যার সমাধানে। কিন্তু সে ব্যর্থতার মাঝে যুদ্ধের নতুন ফ্রন্ট খুলেছে ইসলামের বিরুদ্ধে। তাদের প্রত্যাশা, এতে বিপুল অর্থ ও রাজনৈতিক সর্মথন মিলবে ইসলাম বিরোধী আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন থেকে এবং বিরোধীদের চিত্রিত করা যাবে ইসলামী মৌলবাদী রূপে।
সেক্যিউলারদের বড় অপরাধ যেমন আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, তেমনি তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বড় ব্যর্থতাটি হল সম্পদের বন্টনে ভাই ও বোনের মাঝে যে অসমতা সেটির পিছনে যে মূল দর্শন সেটি বুঝতে না পারায়। যুদ্ধের ময়দানে সকল সৈনিকের সমান দায়িত্ব থাকে না। কেউবা লড়ে সম্মুখ ভাগে, কেউবা পশ্চাতে। কেউবা লড়াই করে ট্যাংক নিয়ে, কেউবা বন্দুক হাতে। কেউ বা পিছনে থেকে রশদ জোগায়। দায়িত্ব ও অবস্থান অনুযায়ী তাদের অস্ত্র ও সাজসজ্জাও ভিন্ন। কারো ভূমিকাকে এখানে খাটো করে দেখা যায় না। তেমনি অবস্থা সংসার জীবনেও। এখানেও নারী ও পুরুষের সামর্থ অনুযায়ী তাদের দায়িত্বের সাথে প্রয়োজনটাও ভিন্ন। দায়িত্ববন্টন ও সম্পদ বন্টনে তাই সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকাটি জরুরী। ইসলাম তো সে নীতিমালাটাই দেয়। নইলে বিশৃঙ্খলা অনিবার্য। যেখানেই সম-অধিকারের নামে সে শৃঙ্খলাকে ভাঙ্গার চেষ্টা হয়েছে সেখানেই নেমে এসেছে বিপর্যয়। এর উদাহরণ হল পাশ্চাতের পরিবার। পাশ্চাত্য দেশগুলিতে তালাকের পর পরিবারের সম্পদের সমান ভাবে ভাগাভাগীর বিধান চালু করা হয়েছে। ফল দাড়িয়েছে এই, অধিকাংশ পুরুষ আর বিয়ে করতেই রাজী হচ্ছে না। কারণ তাদের ভয়, বিয়ে ভাঙ্গলে তাদের দিন-রাতের কষ্টার্জিত সম্পদ, গৃহ, গাড়ী –সবকিছুর অর্ধেক তার তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীকে দিতে হবে। পাশ্চাতে তো অর্ধেকের বেশী বিয়েই ভেঙ্গে যায়। ফল দাঁড়িয়েছে এই, নারী হারাচ্ছে কোন একজন পুরুষের সারা জীবনের জীবনসঙ্গি হওয়ার সুযোগ। ফলে তাকে কাটাতে হচ্ছে পুরুষের গার্ল ফ্রেন্ড বা কর্লগার্ল রূপে। জুটছে না স্ত্রীর মর্যাদা। আর্থিক নিরাপত্তার অভাবে হাজার হাজার মহিলা শামিল হচ্ছে পতিতাবৃত্তিতে। ফলে নারী হচ্ছে আরো অসহায়। পরিণত হচ্ছে ভোগ্যপণ্যে। স্ত্রী হিসাবে আজীবন সে ভালবাসা তার হাতের নাগালে ছিল এখন সেটি কল্পনার সামগ্রী। সমতার নামে নারীদের উপর এত দায়িত্ব চাপানো হয়েছে যে তার পক্ষে গর্ভধারণ ও সন্তান প্রতিপালনের দায়িত্বটি এখন অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ নারীর সবচেয়ে আপনজন হল তার সন্তানেরা। ইসলামে মায়ের সন্মান পিতার চেয়ে বেশী। বলা হয়েছে মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের জান্নাত। তবে সন্মান সব সময়ই অর্জনের বিষয়, অর্জন করতে হয় সময়, শ্রম, ভালবাসা ও আবেগ বিণিয়োগ করে। যে মা বেশীর ভাগ সময় কাটায় ঘরের বাইরে এবং সন্তান পালনে যার হাতে কোন সময়ই থাকে না, তার পক্ষে কি সন্তানের সাথে ঘনিষ্ট হওয়ার সময় থাকে? ফলে সম-অধিকারের নামে পাশ্চাত্য সমাজ নারীকে শুধু তার স্বামী থেকেই দূরে সরিয়ে নেয়নি, দূরে সরিয়েছে তার সন্তান থেকেও। ফল নারী হয়েছে আপনজন হারা।
নারী-পুরুষ উভয়ই মহান আল্লাহর সৃষ্টি। আর নিজ-সৃষ্টির প্রতি সুবিচার স্রষ্ঠার চেয়ে আর কে বেশী করতে পারে? তাছাড়া সম্পদই জীবনের সবকিছু নয়। সম্পদ থাকলেই কি নারীর পক্ষে একাকী সুখশান্তি অর্জন সম্ভব? কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও তার পক্ষে কি সম্ভব হয় দূর গ্রামের কোন এক নির্ভত কোণে একাকী ঘর বেঁধে বসবাস করা? এমনটি মানব সমাজে কোন কালেও ঘটেনি। ইসলামে নারীকে একাকী হজে যাওয়ার অনুমতি দেয় না। একাকী সফরে বেরুনোর অনুমতি নেই। অনুমতি নেই একাকী হাটেবাজারে যাওয়ার। এ্টি তার নিরাপত্তার বিষয়। গৃহে ডাকাত পড়লে কোন সুস্থ্য ব্যক্তিই তার স্ত্রী বা কন্যাকে ডাকাতের মোকাবেলায় পাঠায় না। সে বরং নিজের জীবন বাজী রেখে মোকাবেলায় নামে। দেশে যুদ্ধ শুরু হলে শত্রুর মোকাবেলার মূল দায়িত্বটাও পুরুষের। পুরুষ যেমন বন-জঙ্গল, মাঠ-ঘাট, পাহাড়-পর্বত, সমূদ্র একাকী অতিক্রম করতে পারে সেটি কি কোন মহিলা পারে? এসব ক্ষেত্রে সমতাটা কোথায়?
শান্তি প্রতিষ্ঠাই ইসলামের মুল মিশন। সে শান্তি যেমন প্রতিটি নারীর, তেমনি প্রতিটি পুরুষের? কিন্তু কীরূপে সে শান্তি সম্ভব? বোনকে ভাইয়ের এবং নারীকে পুরুষের প্রতিদ্বন্দি রূপে খাড়া করায় যে কতটা বিপর্যয় আনে তার উদাহরণ পাশ্চাত্যের দেশগুলি। সারা জীবন নারীকে অফিসে বা কারখানায় খাটতে হয়, নিজের দায়ভার নিজেকেই নিতে হয়। বৃদ্ধ-কালে তার পাশে দাঁড়ানোর কেউ থাকে না। নিজ খরচে বা রাষ্ট্রের খরচে তাকে নার্সিং হোমে বা কেয়ার হোমে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়। অথচ মুসলিম সমাজে নারী অর্থশূণ্য হলেও তার পাশে বিপদের দিনে দাঁড়ানোর লোক থাকে। তার পাশে দাঁড়ায় সমগ্র পরিবার। জন্ম থেকে বিবাহ অবধি যেমন তার পিতামাতা ও ভাইবোন, তেমনি বিবাহের পর তার স্বামী ও সন্তানেরা। বিবাহ ভেঙ্গে গেলে আবার তার পিতা ও ভাইয়েরা সহায় হয়। নতুন করে আবার বিবাহেরও ব্যবস্থা হয়। পরিবার ও সমাজ এভাবে অসহায়ের পিছনে যে রূপ দায়িত্ব পালন করে সেটি কি নিছক অর্থ দিয়ে সম্ভব? পাশ্চাত্যে পরিবার প্রথা বিপর্যস্ত হওয়ায় নারীপুরুষকে বৃদ্ধকালে আশ্রয় নিতে হয় কেয়ার হোমে যা অতি ব্যয়বহুল। ব্রিটিশ সরকার প্রতি বছর শত শত কোটি পাউন্ড খরচ করছে এসব অহায় বৃদ্ধ নারী-পুরুষদের পিছনে। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এখন প্রচন্ড হিমশিম খাচ্ছে। ব্রিটিশ সরকারের বাজেটের খরচের অন্যতম বড় খাত হল এটি। কথা হল ব্রিটেনের মত একটি শিল্পোন্নত সম্পদশালী দেশেরই যেখানে এ অবস্থা সেখানে বাংলাদেশের মত দেশে সরকার কি সে দায়িত্ব নিতে পারে? অথচ নারীর নিরাপত্তা বাড়াতে ইসলাম একদিকে যেমন তাকে পিতামাতার সম্পদের অংশীদার বানিয়েছে, তেমনি অংশীদার বানিয়েছে তার স্বামী ও সন্তানের সম্পদের। ইসলাম এক্ষেত্রে অনন্য। আর কোন ধর্মে নারীর এরূপ অধিকার নেই। মুসলিম পরিবারে নারীর নিরাপত্তা-জালটি সুবিস্তৃত। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারের আইন সে নিরাপত্তা বিধ্বস্ত করতে চায়। ভাই ও বোনকে পরস্পরেরর চিরপ্রতিদ্বন্দি রূপে খাড়া করতে চায়।
মুসলমান রূপে ব্যক্তির মূল দায়িত্বটা হল, আল্লাহর হুকুমের পূর্ণ আনুগত্য। আল্লাহর আইনে যদি নারীর জন্য পুরুষের চেয়ে দ্বিগুণ সম্পত্তি দেয়ার কথা থাকতো তখনও তার দায়িত্ব হত সে বিধানের প্রতি আনুগত্য। আল্লাহর কোন হুকুমের মধ্যে অবিচার বা অকল্যাণ খোঁজাটাই হারাম। এটা কাফেরের সাজে, কোন মুসলমানের নয়। আল্লাহর প্রতিটি বিধানের লক্ষ্য তো মানুষের জীবনকে সুখময় করা। অকল্যাণ তো শয়তানের কাজ। পবিত্র কোরআনের ঘোষণা, “ওয়া মাল্লাহু ইউরিদু জুলমান লিল আলামীন” সুরা আল ইমরান, আয়াত ১০৮। অর্থঃ আল্লাহর কাজ এ নয় যে তিনি জগৎবাসীর জন্য কোন জুলুম চাইবেন। তাই ইসলাম কবুলের সাথে সাথে প্রতিটি ঈমানদার নরনারীর কাজ হয়, আল্লাহর বিধানের পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করা। মোমেনের এ ভূমিকাই তাকে মহান আল্লাহর আনসার রূপে গণ্য হওয়ার ইজ্জত দিয়েছে। ক্ষ্রদ্র মানবসৃষ্টির জন্য এর চেয়ে বড় সম্মান আর কি হতে পারে? অথচ বাংলাদেশ সরকার সুস্পষ্ট ভাবে আল্লাহর প্রতিপক্ষ বা শত্রু রূপে দাঁড়িয়েছে। কথা হল, এ অবস্থায় একজন মুসলমানের দায়িত্বটা কি? সে কি আল্লাহর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া এক বিদ্রোহী সরকার বা দলের পক্ষ নিবে? আরো কথা হল, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ কি কখনই নিজেদেরকে ইসলামের পক্ষের শক্তি রূপে দাবী করেছে? ইসলামের পক্ষ নেয়াটিকে সব সময়ই মৌলবাদী বলে গালীগালাজ করে আসছে। জিহাদ যেখানে মোমেনের সর্বোচ্চ ইবাদত রূপে আখ্যায়ীত করেছে, সেখানে জিহাদের উপর লিখিত কোন বই ঘরে বা অফিসে রাখাটি ফৌজদারি অপরাধ রূপে চিত্রিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারেরর পুলিশ ও র্যাব বাহিনী ঘরে ঘরে ঢুকে এরূপ বই বাজেয়াপ্ত করছে এবং গ্রেফতার করছে গৃহকর্তাকে। এমন এক সরকারের কাছে মহান আল্লাহর শরিয়তী বিধান অগ্রহণযোগ্য ও বর্জনীয় হবে সেটাই কি স্বাভাবিক নয়?
একজন মুসলমানকে শুধু আল্লাহর অস্তিত্বের উপর বিশ্বাস করলে চলে না, মহান আল্লাহকে রাষ্ট্রের সার্বভৌম আইনদাতা রূপেও মেনে নিতে হয়। আল্লাহকে সার্বভৌম মানার অর্থ, তাঁর আইনকে অলংঘনীয় রূপে মেনে নেয়া। অথচ বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রে সে সত্যটি স্বীকৃতি পায়নি। বরং এর মূল ভিত্তিটি আল্লাহর অবাধ্যতা ও বিদ্রোহের উপর। বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ। একজন মুসলমান যেমন তার নাম, ধর্ম-কর্ম, খাদ্য, পোষাক-পরিচ্ছদ, আচরণ ও রুচীতে একজন কাফের থেকে ভিন্ন, তেমনি মুসলিম রাষ্ট্র ভিন্ন কাফের অধ্যুষিত দেশ থেকে। নবীজীর আমলে পৃথিবীতে শতাধিক রাষ্ট্র ছিল। কিন্তু সেসব রাষ্ট্র থেকে নবীজী (সাঃ) ও তাঁর পর সাহাবায়ে কেরামের রাষ্ট্রটি ভিন্ন চরিত্রের ছিল। মুসলিম রাষ্ট্রের শাসক যেমন স্বৈরাচারি হতে পারে না, তেমনি সে রাষ্ট্রের আইন-আদালত, সংস্কৃতি, শিক্ষানীতিও আল্লাহর অবাধ্যতা ও বিদ্রোহের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। মুসলমান রূপে বাংলাদেশীদের বড় দায়িত্বটি শুধু নবীজীর (সাঃ) ন্যায় নামায-রোযা, হজ-যাকাত পালন নয়, বরং মদীনায় ১০টি বছর ধরে রাষ্ট্র পরিচালনার যে সূন্নতটি তিনি রেখে গেছেন সেটির অনুকরণে রাষ্ট্র নির্মানও। নইলে অসম্ভব হবে মুসলমান রূপে বেড়ে উঠা এবং আল্লাহর দরবারে নবীজী (সাঃ)র উম্মত রূপে পরিচয় দেয়া।
শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের নেতাদের নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্বাস আছে। সে বিশ্বাসগুলো প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুস্পষ্ট রাজনৈতিক কৌশলও আছে। তাদের সে রাজনৈতিক বিশ্বাসটি মূলত শরিয়তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের উপর প্রতিষ্ঠিত। তারা বিশ্বাস করে বাঙালী জাতীয়তাবাদ ও সেক্যিউলারিজমে। সেক্যিউলারিজমের মূল কথা, কোন ধর্মীয় আইনকে রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত না করা। মহান আল্লাহর সে আইনকে তারা কোরআনের মধ্যে বন্দী দেখতে চায়। আল্লাহ ও তাঁর শরিয়তের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের এ যুদ্ধটি তাই কোন লুকানো বিষয় নয়। এটিই তাদের রাজনীতির বহু ঘোষিত মূল এজেন্ডা। সেটি বাস্তবায়নের লক্ষেই তারা লাগাতর কাজ করছে। এক্ষেত্রে তারা আন্তর্জাতিক ইসলাম বিরোধী কোয়ালিশনের পার্টনার। তারা পার্টনার ভারত সরকারের। তাদের পার্টনারদের ন্যায় তাদেরও আনন্দ আল্লাহর হুদুদ আইনের বিলুপ্তি দেখার মধ্যে। কিন্তু প্রশ্ন হল, বাংলাদেশের ১৫ কোটি মুসলমান কি আল্লাহর বিধানের এ পরাজয়কে মেনে নিবে? আর সেটি মেনে নিলে তারা আল্লাহর দরবারে কি জবাবটি দিবে? নবীজী (সাঃ)র আমলে এমন কোন সাহাবীও কি ছিলেন যিনি আল্লাহর বিধানকে বিজয়ী করার জন্য জানমালের কোরবানী পেশ করেননি। কিন্তু প্রশ্ন হল, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের মুসলমানদের কোরবানীটি কি? দেশ অধিকৃত আজ ইসলামের বিপক্ষ শক্তির হাতে। তারা সে অধিকার জমিয়েছে জনগণের ভোটের বলে। নির্বাচনের সময় তারা জনগণকে সার্বভৌম এবং দেশের মালিক-মোখতার বলে। অথচ নির্বাচনের পর দেশের একমাত্র ভাগ্যনির্ধারক ও সার্বভৌম রূপে প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের। তখন গুরুত্ব হারায় জনগণের ঈমান-আক্বিদার বিষয়টি। বাংলাদেশের ১৫ কোটি মুসলমানের ঈমান বা বিশ্বাসের দাবী তারা মানতেই রাজি নয়। প্রশ্ন হল, জনগণ কি এরূপ আল্লাহ-দ্রোহীদের বিদ্রোহ দীর্ঘায়ীত করতে কি নীরবই থাকবে?
সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী তখন সে বিদ্রোহ দমনে ময়দানে নামে। প্রশ্ন হল, সরকারের পক্ষ থেকে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হলে সে বিদ্রোহ দমনে কারা ময়দানে নামবে? অমুসলিম দেশে আল্লাহর পক্ষে ময়দানে নামার লোক না থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেটি যদি মুসলিম দেশে ঘটে তবে অমুসলিম দেশ থেকে সে মুসলিম দেশটির পার্থক্য কোথায়? কোন দেশে মুসলিমের বসবাস থাকলে সে দেশের মসজিদগুলিতে যেমন নামাযী থাকবে, তেমনি রাজপথে আল্লাহর বাহিনীও থাকবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহর বাহিনী রূপে যাদেরকে চিত্রিত করা হয়েছে তারা হল ঈমানদারগণ। প্রতিটি ঈমানদারের প্রতি মহান আল্লাহর সুস্পষ্ট নির্দেশটি হল, “ইয়া আইয়োহাল্লাযীনা আমানু কু’নু আনসারাল্লাহ” অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারি হয়ে যাও। -সুরা সাফ, আয়াত ১৪। আনসার শব্দের অর্থ সাহায্যকারি। প্রশ্ন হল, কোন ঈমানদার কি মহান রাব্বুল আলামিনের এ নির্দেশের অবাধ্য হতে পারে? আর অবাধ্য হলে কি তার ঈমান থাকে? তাই মুসলমান হওয়ার অর্থই হল, আল্লাহর আনসার হওয়া। তখন সেটিই তাঁর বাঁচা-মরাসহ জীবনের মূল মিশন হয়ে দাঁড়ায়। সে নামায পড়ে, রোযা রাখে, হজ করে এবং যাকাত দেয়। এগুলো করে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও আনসার রূপে তাঁর হুকুম পালনে অঙ্গিকারটি আরো মজবুত করার লক্ষ্যে। ইবাদতের মূল লক্ষ্য তো এটাই। যে ইবাদত আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও তাঁর আনসার রূপে দায়িত্ব পালনে অঙ্গিকার বাড়ায় না সেগুলি কি আদৌ ইবাদত? যে দেশে মুসলমানের সংখ্যা ১৫ কোটি, সেদেশে ১৫ কোটির এক বিশাল আনসার বাহিনী থাকবে সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? প্রতিটি ঈমানদার এখানে আল্লাহর পুলিশ। এমন এক বিশাল বাহিনী ময়দানে থাকতে সেদেশে আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হয় কি করে? বিদ্রোহীরা বিজয়ীই বা হয় কি করে? আল্লাহর দরবারে কি এ নিয়ে বিচার বসবে না? নবীজী (সাঃ)র আমলে প্রতিটি মুসলমান ছিল সে প্রতিরোধ বাহিনীর সদস্য। সে বাহিনীর এমন কোন সদস্যই ছিল না যিনি আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রতিরোধে কোন রূপ ভূমিকা নেননি। শতকরা ৬০ ভাগের বেশী সাহাবী তো শহিদ হয়ে গেছেন। বাস্তবতা হল, সে বাহিনী ছাড়া মুসলমানদের কোন সেনাবাহিনী ছিল না। আল্লাহর আনসারদের কাজ শুধু কোরআন পাঠ, নামায-রোযা ও হজ-যাকাত পালন? নবীজী (সাঃ) এবং তার সাহাবাগণ কি সেগুলোর মাঝে নিজেদের ধর্মীয় জীবন সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন? তারা তো নামায-রোযা, হজ-যাকাতের পাশাপাশি দেশ জুড়ে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের পরাজিতও করেছিলেন। আল্লাহর বিরুদ্ধে সরকারের বিদ্রোহের জবাব জনগণকেই দিতে হয়। এ কাজ ফেরেশতাদের নয়। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে মুসলমানদেরকে আল্লাহর বাহিনী (হিজবুল্লাহ)আখ্যায়ীত করেছেন। তাদের কাজ হল, তাঁর রাস্তায় জিহাদ করা। সে জিহাদের লক্ষ্য, শুধু বিদেশী শত্রুদের হাত থেকে দখদারমূক্ত করা নয়। বরং আল্লাহর বিদ্রোহীদের হাত থেকেও দেশকে মূক্ত করা।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ। গণতন্ত্রের সুফল হল, জনগণ এখানে নিরংকুশ ক্ষমতা পায় দেশ পরিচালনার। ফলে এখানে জনগণের দায়ভারটি বিশাল। তবে সে বিশাল দায়ভার ৫ বছর পর পর একবার কয়েক মিনিটের জন্য ভোটকেন্দ্রে হাজির হওয়ার মধ্য দিয়ে পালিত হয় না। এ দায়িত্ব প্রতিদিনের, প্রতি মুহুর্তের। ঘোড়ার পিঠে চড়ে লাগাম ছেড়ে দিলে ঘোড়া যে কোন দিকে নিয়ে যেতে পারে। এজন্যই ঘোড়ার মুখে লাগাম পড়াতে হয়। এবং প্রতি মুহুর্তে সে লাগাম হাতে রাখতে হয়। বিষয়টি অভিন্ন নির্বাচিত সরকারের বেলায়ও। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার কারণেই জনগণের প্রতি সরকার সব সময় সদয় হয় না। তাদের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাশীলও হয় না। বরং সুযোগ পেলেই তারা স্বেচ্ছাচারী হয়। এমন কি কেড়ে নেয় জনগণের ভোটের অধিকার। জনগণের সাথে এভাবেই তো বার বার গাদ্দারী হয়। হিটলার ও শেখ মুজিবের ন্যায় অতি নিষ্ঠুর স্বৈরাচারি পয়দা হয়েছে তো জনগণের ভোটে নির্বাচিতদের মধ্য থেকে। তারা নির্বাচিত হওয়ার পরপরই বহুদলীয় গণতন্ত্র, মানাবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে কবরে পাঠিয়েছিল।
তাই ভোটদানের পর গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের দায়ভার কমে না, বরং বাড়ে। প্রতি মুহুর্তে সরকারের গতিবিধি ও কর্মকান্ডের উপর জনগণকে নজর রাখতে হয়। ভোট হল জনগনের হাতের লাগাম, তবে সেটিই একমাত্র লাগাম নয়। জনগণের হাতে রয়েছে রাজপথ, রয়েছে মিডিয়া, রয়েছে আন্দোলন ও হরতাল। পুলিশ ও সরকারি প্রশাসনের তুলনায় এগুলো যে কত বেশী শক্তিশালী সেটি তিউনিসিয়া, মিশর, লিবিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশে সেটি সম্প্রতি প্রমাণিত হচ্ছে। জনগণ যদি তার শক্তির যথার্থ প্রয়োগ করে তবে যে কোন শক্তিশালী স্বৈরাচারি সরকারকে ধরাশায়ী করা কোন কঠিন কাজ নয়। মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী স্বৈরাচারি শাসক ছিল ইরানের শাহ। নিরস্ত্র জনগণ আজ থেকে তিরিশ বছর আগেই তাকে আস্তাকুঁড়ে পাঠিয়েছে। আরব বিশ্বের আরেক শক্তিশালী স্বৈরাচারি শাসক ছিল হোসনী মোবারক। সেও এখন আবর্জনার স্তুপে। কিন্তু বাংলাদেশে সমস্যা হল এসব আবর্জনা এখনও বসে আছে জনগণের মাথায় এবং ধ্বনি তুলছে আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের। দেশের আইন আদালত এখন বিদ্রোহীদের দখলে। ফলে জ্বিনা, পতিতাবৃত্তি, সূদখোরি, মদ্যপান, বিদেশী শত্রুর দালালী কোন অপরাধ নয়। বরং অপরাধ্য গণ্য করা হচ্ছে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী সম্পদের বন্টন! কৃষি শিক্ষা, শিল্প, বিজ্ঞান, প্রশাসন বা রাজনীতিতে বাংলাদেশীদের ব্যর্থতা ও পরাজয় অনেক। তবে ১৫ কোটি মুসলমানের এটাই কি সবচেয়ে বড় পরাজয় নয় যে দেশ আজ অধিকৃত আল্লাহর দ্বীনের বিদ্রোহীদের হাতে? ঘুমন্ত ও মৃত মানুষের মাথায় যেমন ক্ষুদ্র কীটও বাঁধে, তেমনি ঘুমন্ত জাতির বেলায়ও। একটি দেশে দুর্বৃত্তদের দুঃশাসন দেখে একথা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় সেদেশের মানুষ কতটা ঘুমন্ত বা চেতনাহীন। আর বাংলাদেশে দূর্নীতিতে পাঁচ বার বিশ্ব শিরোপা পেয়ে প্রমাণ করেছে দুর্বৃত্তরা দেশটিতে কতটা প্রবল ভাবে বাসা বেঁধেছে। তাই বাংলাদেশের মানুষের এখন ঘুম ভাঙানোর সময়। আরব দেশগুলী জুড়ে ঘুম ভাঙানোর কাজটি হয়েছে বিগত প্রায় ৪০ বছর ধরে। এখন তারা গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে। ফলে মাথা থেকে ঝড়ে পড়ছে বহুদিনের জমা আবর্জনাগুলো। আর আবর্জনার তো কোন শিকড় থাকে না। সেগুলো তো বেড়ে উঠে ঝড়ে পড়ার জন্যই। অতীত ইতিহাসের ন্যায় আরব বিশ্বে তো সেটাই নতুন করে প্রমানিত হচ্ছে। ১৯/০৩/১১
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018