বাঙালি ও অবাঙালি মুসলিমের বৈষম্য এবং ফ্যাসিবাদী মিথ্যচার
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on May 7, 2022
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- 1 Comment.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
মিথ্যার নাশকতা ও বাঙালী মুসলিমের মিথ্যাচর্চা
মিথ্যা বলা মহাপাপ। নবীজী (সা:) মিথ্যাকে সকল পাপের মা বলেছেন। মিথ্যার নাশকতা ভয়াবহ। এ পাপ যেমন সংঘাত বাড়ায়, তেমনি পরকালে জাহান্নামে টানে। এবং মিথ্যার সাথে মহাপাপ হলো সত্যকে গোপন করাও। তবে সে মিথ্যা রটানার মূল লক্ষ্য যদি হয় নানা ভাষী মুসলিমদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষকে গভীরতর করা -তখন সে পাপ আরো জঘন্যতর রূপ নেয়। তাই ইসলামে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো মিথ্যার বিরুদ্ধে লড়াই এবং সত্যকে প্রকাশ করা। এটিই ইসলামে জিহাদ। মিথ্যার জঞ্জাল সরিয়েই মুসলিমদের মাঝে ঐক্য ও সৌহার্দ গড়ে তোলা সম্ভব। মিথ্যা প্রচারে শুধু শত্রুতা ও পাপের অংকই বাড়ে। মিথ্যাই শয়তানের প্রধান হাতিয়ার। অথচ সে হাতিয়ার এখন বাঙালি মুসলিমদের হাতে। মিথ্যাচর্চায় তারা ইতিহাস গড়েছে। এ নিবন্ধে তারই কিছু উদাহরণ দেয়া হবে।
মুসলিমদের প্রতি মুহুর্তে বাঁচতে হয় একতা নিয়ে। নামাজ-রোজার ন্যায় একতা ফরজ। তাই বিভেদ নয়, একতার সূত্রগুলো খুঁজে বের করতে হয়। অথচ এক্ষেত্রে বাঙালী মুসলিমগণ ভারতের পৌত্তলিক কাফেরদের চেয়েও নীচে নেমেছে। নানা জাতপাত ও নানা ভাষার ভিন্নতা সত্ত্বেও ভারতের বাঙালী-অবাঙালী ও নানা প্রদেশের হিন্দুগণ একতাবদ্ধ। অথচ তারা চায় মুসলিমগণ বাস করুক পরস্পরে ঘৃণা ও হানাহানী নিয়ে। বাংলাদেশের বুকে হিন্দুত্ববাদী ভারতের স্ট্রাটেজী হলো বাংলাদেশীদের মধ্যে অবাঙালী মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিশেষ করে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে ঘৃণার আগুণে লাগাতর পেট্রোল ঢালা। সে কাজটি করছে ভারতসেবী ও ফ্যাসিবাদী বাঙালী বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদদের মাধ্যমে। একাজে তারা ভারতের অতি অনুগত দাস।
মহান আল্লাহতায়ালা চান মুসলিমদের মাঝে একতা। কারণ একতাই শক্তি ও ই্জ্জতের পথ। কিন্তু শয়তান চায়, মুসলিমগণ বাঁচুক পরস্পরে কলহ ও বিদ্বেষ নিয়ে। বিভেদের এ পথে তারা শক্তিহীন ও ইজ্জতহীন হোক। হিন্দুত্ববাদী ভারত ও বাংলাদেশের ভারতসেবী ফ্যাসিস্টগণও সেটিই চায়। অথচ উপমহাদেশের সম্মিলিত হিন্দু শক্তির বিরুদ্ধে বাঙালী মুসলিমদের একার পক্ষে ইজ্জত ও স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচা অসম্ভব। তাই বাঙালী মুসলিমদের বন্ধু খুঁজতে হবে বাংলার বাইরেও। কারণ, উপমহাদেশের মুসলিমদের ভাগ্য একসঙ্গে জড়িত। অথচ বাংলাদেশের ভারতসেবী ফ্যাসিস্টরা চায় মুসলিমগণ বাঁচুক অবাঙালী মুসলিমদের প্রতি গভীর বিদ্বেষ ও ঘৃণা নিয়ে। অবাঙালী মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিশেষ করে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃস্টির অন্যতম উপকরণটি দুটি। এক). ১৯৭১’য়ে ৩০ লাখ বাঙালীর নিহতের কাহিনী। দুই). কিস্তান আমলের বাঙালী-অবাঙালী মুসলিমের বৈষম্য। ভারতে মুসলিমগণ নিহত, ধর্ষিতা ও নির্যাতি হচ্ছে। তাদের ঘরবাড়ী ও দোকানপাঠ জ্বালানো হচ্ছে। কিন্তু ভারতসেবী বাঙালী তার নিন্দা করেনা। তাদের কামানের মুখ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। কামানের গোলা এখানে নিরেট মিথ্যা।
তিরিশ লাখের কিসসা
১৯৭১’য়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। এর অর্থ ৭৫ মিলিয়ন। তিরিশ লাখ অর্থ ৩ মিলিয়ন। একজন স্কুল ছাত্রও ঐকিক নিয়মে হিসাব কষে সহজে বের করতে পারবে ৭৫ মিলিয়নের মাঝে ৩ মিলিয়ন মারা গেলে প্রতি ২৫ জনে একজনকে মারা যেত হয়। (হিসাবটি এরূপ: ৭৫/৩=২৫)। ফলে যে গ্রামে ১০০০ লোকের বাস ছিল সে গ্রামে কমপক্ষে ৪০ জনকে মারা যেতে হয়। সে গ্রামে কেউ মারা না গেলে পাশের গ্রাম থেকে ৮০ জনকে মারা যেতে হবে। এ হারে মারা না গেলে ৩০ লাখের হিসাব মিলবে না। প্রশ্ন হলো বিল, হাউর, বাউর, নদীর চর, সাগরের দ্বীপে পরিপূর্ণ ৬৮ হাজারের পূর্ব পাকিস্তানের সবগুলো গ্রামে কি পাকিস্তান আর্মী পৌঁছতে পেরেছিল? জেনারেল নিয়াজী তার বই “Betrayal of East Pakistan” য়ে লিখেছেন তার হাতে মাত্র ৪৫ হাজার সৈন্য ছিল। কথা হলো তার ৪৫ হাজার সৈন্য ৬৮ হাজার গ্রামে মানুষ খুনে ঘুরলে সীমান্তে যুদ্ধ করলো কারা?
আরো প্রশ্ন হলো, ৯ মাসে ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করতে হলে প্রতিদিন ১১ হাজারের বেশী মানুষকে হত্যা করতে হয়। অতএব ৩০ লাখ নিহতের কাহিনী যে কত বড় মাপের মিথ্যা -সেটি বুঝে উঠা কি এতোই কঠিন? অথচ কি বিস্ময় যে ৩০ লাখের নিহতের মিথ্যাটি বাঙালীর মুখে মুখে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, পত্রিকার কলামিস্ট, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী, বুদ্ধিজীবী তাদের মুখে এ মিথ্যা অহরহ ধ্বনিত হয়। ইবলিস শয়তানও কোন দেশের জনকে এতটা বুদ্ধিহীন ও মিথ্যুকে পরিণত করতে পারিনি যা পেরেছে মিথ্যুক মুজিব ও তার অনুসারীরা।
বৈষম্যের কিসসা
এ নিয়ে কোন সন্দেহ নাই, পাকিস্তানের ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত এই ২৩ বছরে বাঙালী ও অবাঙালী মুসলিমদের মাঝে শিল্প, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনে চাকরিতে প্রচুর বৈষম্য ছিল। কিন্তু সে বৈষম্যের কারণ কি -তাই নিয়েই বিতণ্ডা। প্রচণ্ড মিথ্যাচার হচ্ছে এ ক্ষেত্রটিতেও। বাংলাদেশীদের মুখে যে কথাটি প্রায়ই শোনা যায় তা হলো বাঙালি ও অবাঙালি মুসলিমের মধ্যে যে বিশাল বৈষম্য, সেটি সৃষ্টি হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানীদের উপর পশ্চিম পাকিস্তানীদের শোষণের কারণে। কিন্তু এ বক্তব্যের সত্য কতটুকু? প্রশ্ন হলো, ১৯৪৭ সালে যখন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা পায় তখন কি বাঙ্গালি ও অবাঙালি মুসলিমগণ সর্বক্ষেত্রে বৈষম্যমুক্ত এক সম অবস্থান থেকে যাত্রা শুরু করেছিল? বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছিল কি তবে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর এবং সেটি পশ্চিম পাকিস্তানীদের শোষণের ফলে?
অথচ ইতিহাসের দলিল এ প্রসঙ্গে অতি সুস্পষ্ট। যে কোন বিবেকবান ও চিন্তাশীল মানুষের চোখেই সেটি ধরা পড়তে বাধ্য। বাঙালী ও অবাঙালী মুসলিমদের মাঝে বিশাল বৈষম্য বিরাজ করছিল পাকিস্তান সৃষ্টির বহু পূর্ব থেকেই। সেটি ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই। বরং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সে বৈষম্য অনেকটা কমে এসেছিল। পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বে কোন বাঙালি মুসলিম কি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে জেনারেল, বিগ্রেডিয়ার ও কর্নেল পর্যায়ের অফিসার হতে পেরেছিল? একজন বাঙালি মুসলিমও কি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আইসিএস) অফিসার হতে পেরেছিল? একজন বাঙালি মুসলিম কি কোন একটি ইন্ডাস্ট্রির মালিক ছিল? ক’জন বাঙালি মুসলিমের গৃহে একখানী দালান বা বিল্ডিং ছিল? ক’জন বাঙালী মুসলিম নবাব বা জমিদার ছিল? ক’জন বাঙালী মুসলিম হাইকোর্টের বিচারপতি ও ব্যারিস্টার ছিল? এসব ক্ষেত্রে অবাঙালী মুসলিমগণ বাঙালী মুসলিমদের থেকে বহুগুণ এগিয়ে ছিল। ফলে সৃষ্টি হয়েছিল বৈষম্য।
পাকিস্তান সৃষ্টির সাথে সাথে সামরিক বাহিনীর জেনারেল বা প্রশাসনে সেক্রেটারী পর্যায়ে অবাঙালীদের সাথে বাঙালীর সমতা সৃষ্টি সম্ভব হয়নি। সেটি সম্ভবও ছিল না। কারণ, নতুন পাশকরা কোন একজন বাঙলীকে রাতারাতি জেনারেল বা সেক্রেটারী করা কি সম্ভব? কারণ, সে পর্যায়ে পৌছতে কমপক্ষে ২০ বছরের চাকুরির অভিজ্ঞতা লাগে। পাকিস্তান সৃষ্টির আগেই সামরিক বাহিনীতে অনেক অবাঙালি মুসলিম জেনারেল, ব্রিগেডিয়ার, কর্নেল ও মেজর পদে অধিষ্ঠিত ছিল। অথচ ১৯৪৭ সালে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে একজনও আইসিএস অফিসার ছিল না। অথচ তখন ১০৩ জন অবাঙালি মুসলিম আইসিএস অফিসার ছিলেন। জনাব নুরুন্নবী নামক একজন মাত্র বাঙালী মুসলিম আইসিএস অফিসার পদে চাকুরি করতেন। তবে তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সে পদে আসীন হননি। সে পদটি তিনি পেয়েছিলেন ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে অনারারী অনুদান রূপে। ১৯৪৭ সালে একজন বাঙালি মুসলিম শিল্পপতি ছিল না। অথচ তখনও অবাঙালি মুসলিমদের মাঝে আদমজী,ইস্পাহানী, দাউদ, সাইগল, বাওয়ানী, রেঙ্গুনওয়ালা ইত্যাদি বহু শিল্পপতি ছিল। ইস্পাহানী বাদে তাদের সবাই পশ্চিম পাকিস্তানে হিজরত করে। অতএব পাকিস্তানে যাত্রাই হয়েছে বিশাল বৈষম্য নিয়ে। তাই সে বৈষম্যের দায় পশ্চিম পাকিস্তানীদের শোষনের ফল বলা যায় কি করে? এরূপ বৈষম্য কি ২৩ বছরের শোষণে সৃষ্টি হয়? এ বৈষম্য তো সৃষ্টি হয়েছে ১৯০ বছরের ব্রিটিশ শোষণের ফলে। যার সাথে যোগ হয়েছিল হিন্দু জমিদারদের নির্মম শোষণ। কিন্তু হিন্দুসেবী ও ইসলাম বিদ্বেষী বাঙালী বাকশালীরা সে কথা মুখে আনে না। এটি হচ্ছে আওয়ামী বাঙালীদের সত্য গোপনের অপরাধ।
পাকিস্তান সৃষ্টিকালে পূর্ব পাকিস্তানে কোন প্রাদেশিক শহর ছিল না। ঢাকা ছিল একটি জেলা শহর মাত্র। অথচ পাকিস্তানে ছিল করাচী, লাহোর, পেশোয়ার ও কোয়েটা এ চারটি প্রাদেশিক শহর। ফলে ঐ শহরগুলির পূর্ব থেকেই প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক অবকাঠামো ছিল। ফলে ঢাকার ন্যায় সেখান আম তলায় অফিস বসাতে হয়নি। কিন্তু ঢাকাতে প্রাদেশিক শহরের অবকাঠামো নির্মাণ করতে হয়েছে ১৯৪৭’য়ের পর। রাওয়ালপিন্ডি শহর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের সামরিক রাজধানী। এটি ছিল একটি বিশাল গ্যারিসন শহর। তাই করাচী, লাহোর, পিন্ডির সাথে ঢাকা শহরের যে বিশাল বৈষম্য সেটি পাকিস্তান সরকার সৃষ্টি করেনি। ঐতিহাসিক কারণে পাকিস্তান সৃষ্টির আগে থেকেই সেটি বিদ্যমান ছিল। করাচী ও লাহোর শহর ঢাকার চেয়ে অন্তত পাঁচ গুণ বৃহৎ নগর ছিল ১৯৪৭এর আগেই। লাহোর শহরটি বহুবার ভারতের রাজধানীর মর্যাদা পেয়েছিল।
বাঙালী ও অবাঙালী মুসলিমের মাঝে পূর্ব থেকেই বিশাল বৈষম্য প্রতিষ্ঠা পায় শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। অবাঙালী বলয়ে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, হায়দারাবাদের ওসমানীয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লাহোরের কিং এডওয়ার্ড মেডিক্যাল কলেজ, করাচীর ডাও মেডিক্যাল কলেজ পাকিস্তান সৃষ্টির বহু আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা পায় সেগুলির অনেক পরে। ফলে বাঙালী মুসলিমের তূলনায় অবাঙালীরা এগিয়ে যায়। ফলে সৃষ্টি হয় বৈষম্য। সেজন্য কি তাই পাকিস্তানকে দায়ী করা যায়?
১৯৭১-পরবর্তী বৈষম্য
বরং ইতিহাসের সত্য বিষয়টি হলো, পাকিস্তান সৃষ্টির পরই অবাঙালী মুসলিমদের সাথে বাঙালীর বৈষম্য কমতে থাকে। অনেক বাঙালী মুসলিম সেক্রেটারী পদে আসীন হয়। অনেকে জেনারেল, ব্রিগেডিয়ার ও কর্নেল পদেও পৌঁছে। বহু কলেজ, বহু মেডিক্যাল কলেজ, বহু ক্যাডেট কলেজ, বহু বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি ও ইঞ্জিনীয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানের ২৩ বছরে প্রতিষ্ঠা পায়। ১৯৪৭ সালে কোন পাটকল ছিল না। কিন্তু ২৩ বছরের ৫০টির বেশী পাটকল প্রতিষ্ঠা পায়। বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাটকল নির্মিত হয় পূর্ব পাকিস্তানে। অথচ এ আমলকে বলা হয় পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসনামল। বিস্ময়ের বিষয়, ১৯০ বছরে ব্রিটিশের ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে থেকেও অসংখ্য বাঙালী ব্যর্থ হয়েছে ঔপনিবেশিক শাসন কাকে বলে –সে বিষয়টি বুঝতে। ১৯০ বছরে কোন বাঙালী কি ইংল্যান্ডের কোন ক্ষুদ্র মন্ত্রী হতে পেরেছে? অথচ তিনজন বাংলার সন্তান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। গভর্নর জেনারেল তথা রাষ্ট্র প্রধানও হয়েছে।
বাস্তবতা হলো, ১৯৪৭’য়ে দুই প্রদেশের মাঝে যে বিশাল বৈষম্য নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল সেটি ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ অবধি এই ২৩ বছরে অনেকটাই কমে গিয়েছিল। কিন্তু ১৯৭১’য়ে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকে সে বৈষম্য আবার দ্রুত গতিতে বাড়তে শুরু করেছে। পাকিস্তানীদের সাথে প্রচণ্ড বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে। গণতন্ত্র চর্চা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মিছিল মিটিংয়ের স্বাধীনতায় পাকিস্তান এখন সমগ্র মুসলিম বিশ্বে প্রথম। সেখানে লাখ লাখ মানুষের জনসভা হয়। আলেমগণ স্বাধীন ভাবে জলসা করে। পত্রিকাগুলি মনের খুশিতে লেখালেখী করে। দেশের জেলে কোন রাজবন্দী নাই।
অথচ বাংলাদেশে গণতন্ত্র এখন কবরে শায়ীত। হাজার হাজার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার এবং কারাবন্দী। বিরোধী দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা। মিটিং-মিছিলের স্বাধীনতা নাই। তালা লাগানো হয়েছে বিরোধী দলীয় পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলগুলোতে। পাকিস্তানে কখনোই ভোটডাকাতির ন্যায় অসভ্যতা হয়নি, কিন্তু সেটি বাংলাদেশে অহরহ হয়। পাকিস্তান একটি স্বাধীন দেশ, অথচ বাংলাদেশ ভারতের অধীনে একটি গোলাম দেশ। দিল্লি হুমকি দেয়, বাংলাদেশকে ভারতের রাডারের বাইরে যেতে দেয়া হবে না। সে ধমক কি পাকিস্তানকে দিতে পারে? ভারত নদীর পানি নিয়েছে, করিডোর নিয়েছে, এখন সমুদ্র বন্দরও নিচ্ছে। স্বাধীনতার কিছু বাঁকি আছে কি?
বিশাল বৈষম্য এখন সামরিক ও প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেও। ৫৭টি মুসলিম দেশের মধ্যে পাকিস্তান এখন সবচেয়ে শক্তিশালী। দেশটি পারমানবিক বোমার অধিকারী। দেশটি যুদ্ধবিমান, মিজাইল, ট্যাংক, ড্রোন ও দূরপাল্লার কামান তৈরী করে এবং সেগুলি বিদেশে বিক্রি করে। অথচ বাংলাদেশ একটি বন্দুকও তৈরী করে না। দেশ ইতিহাস গড়েছে দরজীর কাজ ও চিংড়ি উৎপাদনে। এবং ইতিহাস গড়েছে গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের রাজনীতিতে। এই হলো পশ্চিম পাকিস্তানীদের সাথে বাঙালী মুসলিমের আসল বৈষম্য। পাকিস্তান যদি এগিয়ে যায় এবং বাংলাদেশ যদি লাগাতর পিছিয়ে যায় -তবে তো বৈষম্য বাড়বেই। অথচ কি বিস্ময়! ১৯৭১-পরবর্তী এই বিশাল বৈষম্য নিয়ে বাকশালী ফ্যাসিবাদীদের মুখে কোন কথা নাই। ০৭/০৫/২০২২
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018
বিবিসি সাংবাদিক সিরাজ রহমান মৃত্যুর পুর্বে তার লিখিত বিবৃতিতে বলে গেছেন কিভাবে সেইখ মুজিব বাংলা তিন লক্ষকে ইংরেজীতে তিন মিলিয়ন বলে উল্লেখ করেছিলেন। এবং সেই কারণেই বাংলার তিন লক্ষ মুজিবের ভুল অনুবাদের মাধ্যমে তিরিশ লক্ষ হয়ে গেল। এখানে এটাও মনে রাখা দরকার যে প্রাথমিক অনুমান তিন লক্ষের মধ্যে প্রায় অর্ধেক ছিল অবাঙালি মুসলমান।