বাঙালি মুসলিমের ব্যর্থ শিক্ষানীতি: মূল সংকটটি দর্শনে

ফিরোজ মাহবুব কামাল

শুরুটি শিক্ষাঙ্গণে

মানুষ কেন পানাহার করবে তা নিয়ে কারো দ্বিমত নেই পানাহারের গুরুত্ব বুঝার জন্য কলেজবিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেয়ার প্রয়োজন নেই; শিশু এবং নিরক্ষরগণও সেটি বুঝে এমন কি পশুরাও বুঝে কারণ পানাহারের সাথে বাঁচামরার সম্পর্ক কিন্তু কেন পড়বো, কেন শিখবো, কি শিখবো এবং কতটা শিখবোতা নিয়ে জনে জনে বিভেদ প্রচুর কারণ, জ্ঞানার্জনের এ বিষয়টি সম্পৃক্ত বাঁচার সাথে নয়, বরং কেন বাঁচবো এবং কীরূপে বাঁচবো সে বিষয়গুলির সাথে কেন বাঁচবো এবং কীরূপে বাঁচবোসে বিষয়ে সবার ধারণা যেহেতু এক নয়, ফলে ভিন্নতা আসে শিক্ষার উদ্দেশ্য ও বিষয় নিয়ে আমরা সবাই একই উদ্দেশ্যে পানাহার করি বটে; কিন্তু সবাই একই উদ্দেশ্যে ও একই ভাবে বাঁচি না বাঁচার উদ্দেশ্য ও ধরণ জনে জনে ভিন্ন হওয়ার কারণে জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যটিও ভিন্নতর হয় ঈমানদার ও সেক্যুলারিস্টদের মাঝে শিক্ষা নিয়ে বিরোধটি এজন্যই অতি বিশাল সেক্যুলারিস্টদের শিক্ষানীতিতে যেমন ঈমান বাঁচেনা, তেমনি ঈমানদারদের শিক্ষানীতিতে পুষ্টি পায় না সেক্যুলারিস্টদের চেতনা তাই উভয়ের বাঁচামরার লড়াইটি স্রেফ রাজনীতির অঙ্গণে সীমিত নয়, তার চেয়েও গুরুতর ও চুড়ান্ত লড়াইটি হয় শিক্ষাঙ্গণে শিক্ষাঙ্গণের লড়াইয়ে পরাজিত হলে অনিবার্য হয় রাজনৈতিক পরাজয় এজন্যই বাংলাদেশসহ সকল মুসলিম দেশের সেক্যুলিরস্টগণ শিক্ষাঙ্গণের উপর থেকে তাদের দখলদারী ছাড়তে রাজি নয় তারা নানা দলে বিভক্ত হলেও শিক্ষাঙ্গণে কুরআনহাদীস ও ইসলামী বিষয়ে পাঠদান বন্ধে তারা জোটবদ্ধ এবং সে লক্ষ্যে তাদের কোয়ালিশনটি আন্তর্জাতিক কাফির  শক্তির সাথে কারণ, কুরআন-হাদীসের জ্ঞানদান শুরু হলে তাতে সেক্যুলারিজম বাঁচে না। তখন বাঁচে না ইসলামকে পরাজিত করার সেক্যুলার রাজনীতি।  

আভিধানিক অর্থে সেক্যুলারিজমের অর্থ ইহজাগতিকতা লক্ষ্য এখানে ইহজাগতিক তথা পার্থিব স্বার্থসিদ্ধি আখেরাতের কল্যাণ নিয়ে ভাবনার স্থান এখানে নাই। জীবন এখানে নিতান্তই দুনিয়ামুখী মতবাদের মূল কথা: নৈতিকতা, শিক্ষাসংস্কৃতি ও রাজনীতিতে কখনোই ধর্মের প্রভাব থাকতে দেয়া যাবে না সেক্যুলারিস্টদের দাবী: ধর্মের প্রভাব তথা পরকালীন জীবনের ভাবনাকে সীমিত রাখতে হবে শুধু মাত্র ব্যক্তিগত জীবনের গণ্ডিতে; বড় জোর স্থান দেয়া যেতে পারে মসজিদের চার দেয়ালের মাঝে সে ভাবনাকে শিক্ষাসংস্কৃতি ও রাজনীতিতে আনতে দেয়া যাবে না তাদের কথা, শিক্ষাসংস্কৃতি ও রাজনীতিতে থাকবে স্রেফ পার্থিব জীবনকে আনন্দময় করার তাড়না তাদের লক্ষ্য, পরকালের ভয়ভাবনাশূণ্য এক অবাধ জীবন ভোগলালসা পূরণের স্বার্থে সে জীবনের উপর ধর্মীয় বিধান ও আধ্যাত্মীকতার নামে কোন রূপ লাগাম টেনে দিতে তারা রাজী নয় ফলে তাদের কাছে মদ্যপান, অশ্লীলতা, বেপর্দাগী, নাচগান, ব্যভিচার ও সমকামিতার ন্যায় জঘন্য পাপাচারও বৈধ ও গ্রহনযোগ্য গণ্য হয় এগুলো গণ্য হয় মৌলিক মানবিক অধিকার রূপে অধিকারের সংরক্ষণে তারা ময়দানে জাতিসংঘ এবং তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকেও নামিয়ে আনে ইসলামের মিশন যেহেতু ন্যায় ও নেক আমলের প্রতিষ্ঠা এবং সর্বপ্রকার দুর্বৃত্তি ও পাপাচারের নির্মূল উভয়ের মাঝে শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান এজন্যই অসম্ভব ক্ষেত্রে আপোষ চলে না ইসলামের বিরুদ্ধে সেক্যুলারিস্টদের আক্রোশ ও যুদ্ধ এজন্যই অতি তীব্র ও লাগাতর আখেরাতের ভয়ভাবনা বিনাশে ও ছাত্রছাত্রীদের পার্থিবমুখী করতে শিক্ষাঙ্গণ ও শিক্ষানীতি পরিণত হয়েছে মূল হাতিয়ারে সেক্যুলারিস্ট শিক্ষাব্যবস্থায় এজন্যই কুরআন হাদীসের কোন স্থান থাকে না স্থান থাকে না নবীজী (সা🙂’র জীবন চরিত এবং ইসলামের বরেণ্য বীরদের ইতিহাস আখেরাতের ভাবনা এবং সে ভাবনা নিয়ে কিছু করাকে চিত্রিত করা হয় সেকেলে, পশ্চাদপদতা ও সাম্প্রদায়িকতা রূপে

ঈমানদারদের কাছে বিষয়টি সম্পূর্ণ বিপরীত তাদের চেতনায় শুধু পার্থিব জীবনের কল্যাণচিন্তাই থাকে না, অধিক গুরুত্ব পায় অনন্তঅসীম আখেরাতে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার ভাবনা তখন বাঁচার মূল লক্ষ্যটি হয়ে দাঁড়ায় জান্নাতে পৌঁছার ভাবনা কারণ, দুনিয়ার জীবন ক্ষণিকের, কিন্তু আখেরাতের জীবন বিলিয়ন বা ট্রিলয়ন বছরে শেষ হবার নয় সেখানে মৃত্যু নাই সে জীবন অনন্তঅসীম কালের ঈমানদারীর অর্থ শুধু মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূলে (সা🙂 পাকের উপর ঈমান নয়, অটল ঈমান রাখতে হয় আখেরাতের উপরও তার কাছে আখেরাতের সফলতাই প্রকৃত সফলতা। তাঁকে প্রতিটি মুহুর্ত বাঁচতে হয় ইসলামের প্রতিটি বিধানের উপর ঈমান নিয়ে সামান্য মুহুর্তের জন্যও সে ঈমানশূণ্য তথা কাফির  হতে পারে না ঈমানশূণ্য অবস্থায় মৃত্যু হলে জাহান্নাম অনিবার্য বিশ্বাসটি তাঁর মজ্জাগত ইসলামের প্রতিটি বিধানের প্রতি পূর্ণ ও সার্বক্ষণিক আনুগত্য নিয়ে মুমিনের অবস্থানটি তখন স্রেফ মসজিদে বা নিজ গৃহে সীমিত থাকে না, বরং প্রবেশ করে রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গণে ঈমানদার যেখানে যায় সেখানে সে ঈমানকে সাথে নিয়ে যায় ঈমানকে জায়নামাজে ফেলে শিক্ষাসংস্কৃতি, কাজকর্ম, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি, প্রশাসন, আদালত বা সংসদে প্রবেশ করা তাই ইসলামের রীতি নয় নবীজী (সা🙂 তাঁর সাহাবায়ে কেরামের জীবনে এমন ঘটনা এক মুহুর্তের জন্যও ঘটেনি এখানেই সেক্যুলারিস্টদের থেকে ঈমানদারের মূল পার্থক্য মুসলিম দেশগুলিতে সেক্যুলারিস্টগণ নিজেদেরকে মুসলিম রূপে পরিচয় দেয় বটে, কিন্তু শিক্ষাসংস্কৃতি, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি, প্রশাসন, আদালত বা সংসদে তাদের অবস্থানটি হয় ইসলামের বিধানের বিরুদ্ধে সেখানে ইসলামের জন্য কোন স্থান ছেড়ে দিতে রাজী নয় অথচ মুমিনের প্রতি মুহুর্তের ভাবনা, কাজকর্ম, হিসাবনিকাশ ও পরিকল্পনায় গুরুত্ব পায় আখেরাত ফলে তাদের আদর্শ ও চলার পথটি সেক্যুলারিস্টদের থেকে ভিন্ন সে ভিন্নতা যেমন ইবাদতবন্দেগীতে, তেমনি শিক্ষাসংস্কৃতি, রাজনীতি ও আইনআদালতে কুরআনী জ্ঞানার্জনের বিষয়টি তখন স্রেফ গতানুগতিক লেখাপড়ার বিষয় রূপে গণ্য হয় না, গণ্য হয় শ্রেষ্ঠতম ইবাদত রূপে

 

শুরু জ্ঞানার্জন থেকে

অজু না হলে যেমন নামাজ হয় না, তেমনি মন ও মগজ কুরআনহাদীসের জ্ঞানে সমৃদ্ধ না হলে অসম্ভব হয় প্রকৃত মুসলিম হওয়া ইবাদতের ওজন নির্ভর করে কুরআন-হাদীস থেকে সংগৃহীত জ্ঞানের উপর। বিষয়টির গুরুত্ব সঠিক ভাবে বুঝা যায় মহান নবীজী (সা🙂 জীবন থেকে তাঁর নবুয়তী জীবনের শুরুটি নামাজরোজা, হজ্জযাকাত বা জিহাদ দিয়ে হয়নি, বরং শুরু হয়েছিল ওহীর জ্ঞানার্জন দিয়ে নবীজী (সা🙂 উপর মহান আল্লাহতায়ালার প্রথম নির্দেশটি ছিল ইকরা তথা পড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ না হওয়া অবধি তাঁর প্রতিদিনের ইবাদত ছিল রাতের অর্ধেক বা একতৃতীয়াংশ বা তার চেয়ে কিছু বেশী বা কম সময় একাকী দাঁড়িয়ে পবিত্র কুরআন পাঠ নবীজী (সা🙂 উপর সে হুকুমটি এসেছে সুরা মুজাম্মিলে রেসালত প্রাপ্তির প্রায় ১১ বছর পর যখন ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয় তখনও নামাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ রূপে প্রাধান্য দেয়া হয় জায়নামাজে দাঁড়িয়ে কুর’আন পাঠ। নামাজরত সে অবস্থাকে বলা হয় মু’মিনের মিরাজ –যা রূহের সংযোগ ঘটায় মহান রাব্বুল আলামিনের সাথে। নামাজে দাঁড়িয়ে যখন সে আয়াতগুলো পাঠ করা হয় তখন সে পঠিত আয়াতগুলির মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহতায়ালা সংলাপ হয় তাঁর বান্দার সাথে।

বস্তুত কোন ব্যক্তি বা কোন জনগোষ্ঠির জীবনে ঈমানদারী কতটা বেঁচে আছেসেটি বুঝা যায় পবিত্র কুরআনের সাথে সংযোগ দেখে যে দেশে শতকরা ৯৯ ভাগ মুসলিম মহান আল্লাহতায়ালার বাণী সরাসরি কুরআন থেকে বুঝতে অসমর্থ্য সেদেশে মুসলিমদের প্রকৃত ঈমানদার রূপে বেড়ে উঠায় সংকটটি যে কত গভীরতা বুঝতে কি গবেষণার প্রয়োজন পড়ে? পবিত্র কুরআনের বাণী বুঝার গুরুত্বটি প্রাথমিক যুগের মুসলিমগণ এতটাই গভীর ভাবে বুঝেছিল যে, মিশর, সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, মরক্কো, সূদান, আলজিরিয়া, তিউনিসিয়া, মৌরতানিয়ার ন্যায় তৎকালীন অনারব দেশগুলোর মানুষ তাদের মাতৃভাষাকে বর্জন করে কুরআনের ভাষা আরবীকে গ্রহণ করেছিল অথচ আজ ঘটছে উল্টোটি যাদের মাতৃভাষা আরবী তাদের মাঝে বিপুল সংখ্যক মানুষের আগ্রহ নাই কুরআন বুঝায় যারা মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীন পালনে আগ্রহী নয়, তারা কি পবিত্র কুর’আন থেকে দ্বীনের হুকুমগুলি জানতে আগ্রহী হতে পারে? সেক্যুলার শিক্ষায় তো সেটিই গুরুত্ব পায় যা পার্থিব জীবনে ভোগের আয়োজন বাড়াতে সহায়তা দেয় এ শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্রছাত্রীগণ তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করে স্রেফ ইহজাগতিক জীবনে সফল হওয়ার কামনায় যারা জান্নাতে যেতে চায়, একমাত্র তারাই জান্নাতের পথটি জানতে চায়। অথচ সে আগ্রহের মৃত্যু ঘটে চেতনার ভূবনটি দুনিয়ামুখী দর্শনে অধিকৃত হলে যে কারণে আবু জেহল ও আবু লাহাবের মত আরব কাফেরগণ আরবী ভাষায় নাযিলকৃত কুর’আন পাঠে আগ্রহী হয়নি, অনুরূপ দশা আজকের আরব সেক্যুলারিস্টদেরও।

খাদ্যত্যাগে দেহের মৃত্যু অনিবার্য তেমনি ঈমানের মৃত্য ঘটে কুরআনী জ্ঞানের শূণ্যতায় ঈমানদারকে তাই স্রেফ পানাহারের তাড়না নিয়ে বাঁচলে চলে না, প্রতি মুহুর্তে বাঁচতে হয় পবিত্র কুরআন থেকে জ্ঞানার্জনের তাড়না নিয়ে এটিই হলো বিদ্যাশিক্ষা ও শিক্ষাদান নিয়ে ইসলামের মূল দর্শন তথা ফিলোসফি সে দর্শন মানুষের জীবনে কতটা গভীর বিপ্লব আনতে পারে তারই প্রমাণ হলো প্রাথমিক যুগের মুসলিমগণ অশিক্ষিত এক বর্বর জাতি যারা নিজের কন্যা সন্তানকে জীবন্ত দাফন করতো, তারা সে জ্ঞানের বরকতে সমগ্র মানবইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষিত জাতিতে পরিণত হয় যারা এক সময় ভেড়া চড়াতো, চাষাবাদ করতো বা ক্ষুদ্র ব্যবসা করতো তাদের মধ্য থেকে সৃষ্ঠি হয় সর্বকালের শ্রেষ্ঠ আলেম, শ্রেষ্ঠ জেনারেল, শ্রেষ্ঠ কাজী ও শ্রেষ্ঠ ফকিহ

সন্তানের পানাহার পশু-পাখীরাও জোগায়। কিন্তু পিতামাতার দায়িত্ব শুধু সন্তানের দেহের খাদ্য জোগানো নয়, গুরুতর দায়ভারটি হলো ঈমানের খাদ্য জোগানো এবং ঈমান বাঁচানো ঈমান স্রেফ না বুঝে তেলাওয়াতের সামর্থ্যে বাঁচে না; জরুরি  হলো ওহীর জ্ঞানের পুষ্টি সেজন্য অপরিহার্য হলো, কুরআন বুঝার সামর্থ্য মহল্লাতে তাই শুধু চাল-ডাল, মাছগোশত ও তরিতরকারীর ভাল দোকান থাকলে চলে না, পবিত্র কুরআন বুঝার সামর্থ্য বাড়াতে উন্নতমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সে সাথে উন্নত মানের বইয়ের দোকানও থাকতে হয় ঈমান বাঁচাতে তাই শুধু হাটেবাজারে ছুটলে চলে না, নিয়মিত ছুটতে হয় কুরআন বুঝার আসরেও বস্তুত একটি মুসলিম জনবসতিতে ঈমান কতটা বেঁচে আছে সেটি বুঝা যায় এরূপ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও সেখানে জনগণের ভিড় দেখে যে দেশে নরনারীর ভীড় স্রেফ হাটে বাজারে, খেলার মাঠে, সিনেমা হলে, নাটকপাড়ায় ও নাচের আসরে এবং জনশূণ্যতা পবিত্র কুরআন শিক্ষার আসরে জনগণের চিত্তে কুরআনী জ্ঞানের শূণ্যতা সে দেশে অনিবার্য এমন দেশে চরম আকাল দেখা দেয় সত্যিকারের ঈমানদারের। তখন সৈনিক জুটে না আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জিহাদে। বরং বিপুল সংখ্যক সন্ত্রাসী জুটে চোর-ডাকাতের দলে ও ফ্যাসিবাদী রাজনীতিতে। তখন জোয়ার আসে গুম, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, চুরি-ডাকাতি ও ভোটডাকাতির। এমন দেশে দ্রুত বিলু্প্ত হয় আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, তাঁর শরিয়তী আইন এবং ইসলামী অনুশাসন বাংলাদেশ তারই উদাহরণ। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশ হলেও এদেশে বেঁচে নেই নবীজী (সা🙂 যুগের ইসলাম বেঁচে নেই শরিয়ত, হুদুদ, কেসাস, মুসলিম উম্মাহর একতা, খেলাফত ও জিহাদের ন্যায় ইসলামের মৌল বিধান এরূপ ইসলামশূণ্যতার কারণে বাংলাদেশে প্রবলতর হয়েছে লুটপাট, অর্থপাচার, স্বৈরাচার, অশ্লীলতা, ব্যভিচার, ফটো পূজা, মিনার পূজা, কবর পূজা, বর্ষবরণ ও বসন্তবরণের সংস্কৃতি প্রশ্ন হলো, পাপাচারপূর্ণ মুসলিম সমাজের এই কদর্য ইসলামকে ইসলাম বললে নবীজী (সা🙂 যুগের ইসলামকে কি বলা যাবে?

 

নাশকতা সেক্যুলারিজমের

মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি পৌত্তলিক বা অন্য কোন কাফির সেনাবাহিনীর হাতে হয়নি সেটি হয়েছে রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণগুলি সেক্যুলারিস্টদের হাতে অধিকৃত হওয়াতে এবং সেটি ঔপনিবেশিক কাফিরদের হাতে অধিকৃত হওয়ার বহু আগেই সে ভয়ানক বিপদের শুরু মুসলিম নামধারি স্বদেশী সেক্যুলারিস্ট স্বৈরাচারী শাসকদের শাসনামল থেকেই তাদের দখলদারীর কারণে মুসলিমগণ হারিয়েছে ওহীর জ্ঞানের পুষ্টি; এবং বিলুপ্ত হয়েছে কাফিরদের হামলার বিরুদ্ধে জিহাদের জজবা এবং ছিন্ন হয়েছে পবিত্র কুরআনের সাথে সংযোগ। শত্রুর হামলার প্রতিরোধে মহান আল্লাহতায়ালার এ চুড়ান্ত নির্দেশটি হলো: (কাফিরদের হামলার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য) প্রস্তুত হও সমগ্র সামর্থ্য দিয়ে এবং শক্ত করে লাগাও ঘোড়ার লাগামকে এবং সন্তস্ত্র করো আল্লাহর ও তোমাদের শত্রুদের (সুরা আনফাল, আয়াত ৬০)। কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালার সে নির্দেশ স্রেফ পবিত্র কুরআনেই রয়ে গেছে নির্দেশটি  মুসলিমদের অন্তরে স্থান পায়নি, তাদের রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও রণনীতির উপর তার প্রতিফলন ঘটেনি জনগণ থেকে নিজেদের দখলদারী বাঁচাতে মুসলিম দেশের স্বৈরাচারী শাসকগণ সবসময়ই মুসলিম নাগরিকদের নিরস্ত্র ও যুদ্ধে প্রস্তুতহীন রেখেছে স্বৈরাচারী শাসকগণ ব্যস্ত থেকেছে তাদের শাসন বাঁচাতে এবং সে সাথে নিজেদের ভোগের আয়োজন বাড়াতে। ইসলাম ও মুসলিমের চেতনার প্রতিরক্ষা দেয়া তাদের এজেন্ডা ছিল না। শুধু শাসকগণই নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়নি, ব্যর্থ হয়েছে আলেমগণও। ফলে ঔপনিবেশিক কাফির  শক্তির হাতে  মুসলিম দেশগুলি যখন একের পর অধিকৃত হতে থাকে, তখন সে আগ্রাসন রুখতে সাধারণ মুসলিম দূরে থাক, আলেমদেরও রণাঙ্গণে দেখা যায়নি ফলে সহজ হয়েছে ইউরোপীয় কাফিরদের বিজয় ও তাদের অধিকৃতি বিদেশী শাসকদের দীর্ঘ শাসন সেক্যুলারিজমের সে চলমান জোয়ারকে আরো তীব্রতর করেছে সে জোয়ার সৃষ্টিতে শিক্ষাঙ্গণ ব্যবহৃত হয়েছে মূল ক্ষেত্র রূপে

ঈমানদারদের তাই শুধু সীমান্তে কাফির  শক্তির সামরিক হামলাকে প্রতিহত করলে চলে না, প্রতিহত করতে হয় চেতনার ভূমিতে স্বদেশী ও বিদেশী শত্রুশক্তির আদর্শিক দখলদারীকেও এবং সে চুড়ান্ত লড়াইটি হয় শিক্ষাঙ্গণে এটিই হলো মুমিনের বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ সেক্যুলারিস্টদের হাতে শিক্ষাঙ্গন অধিকৃত হওয়ার বিপদটি তাই ভয়ানক তখন কাফিরদের বিরুদ্ধে সামরিক যুদ্ধে মুসলিমদের পক্ষে লড়াকু সৈনিক মেলে না পরাজয় তখন অনিবার্য হয় মুসলিম দেশের শিক্ষাঙ্গণগুলিতে সেরূপ আত্মঘাতী দখলদারীটি ঘটেছে মুসলিম নামধারি সেকুলারিস্টদের হাতে তাই স্পেনে মুসলিমদের নির্মূল হওয়া থেকে বাঁচাতে যেমন লোকবল মেলেনি, তেমনি যোদ্ধা জুটেনি বাংলা ও ভারতে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও। একেই কারণে বাঁচেনি সমানিয়া খেলাফত এবং দিন দিন কঠিনতর হচ্ছে আগ্রসী ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঁচানো মুসলিম দেশে ধ্বংসের শুরুটি তাই বিদেশী শত্রুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে হয়নি, বরং সেটি হয়েছে নিজ দেশের শিক্ষাঙ্গণগুলি সেক্যুলারিস্টদের হাতে অধিকৃত হওয়াতে

মহান আল্লাহতায়ালার উপর বলিষ্ঠ ঈমানে জ্ঞানচর্চায় এবং সে সাথে সামরিক শক্তিতে যে কীরূপ দ্রুত বিপ্লব সৃষ্টি হয়তারই প্রমাণ হলো প্রাথমিক যুগের মুসলিমগণ সে যুগান্তকারী বিপ্লব সৃষ্টিতে ঈমান মূলত ইঞ্জিনের কাজ করে সেক্যুলারিস্টদের মূল অপরাধটি হলো, ইসলামের সে ইঞ্জিনকেই তারা নির্জীব করে দেয় তারা সেটি করে মুসলিম জীবন থেকে ইসলামকে সরিয়ে পবিত্র কুরআনের পূর্বে আরবী ভাষায় কোন কিতাব ছিল না জ্ঞানদান ও জ্ঞানার্জনে ক্ষেত্রে তাদের জীবনে বিশাল বিপ্লবটি এসেছিল ইসলাম কবুলের পর আরবী ভাষায় অতি দ্রুত সৃষ্টি হয় জ্ঞানের বিশাল ভাণ্ডার বিশ্বের আর কোন ভাষায় জ্ঞানের জগতে এতো দ্রুত এতো বড় বিশাল ভাণ্ডার আর কোন কালেই গড়ে উঠেনি শয্যাশায়ী মরণাপন্ন ব্যক্তির পানাহারে রুচি থাকে না, তেমনি রুগ্ন ঈমানের মানুষেরও আগ্রহ থাকে না জ্ঞানার্জনে ঈমানদার ব্যক্তি মাত্রই জানে তাঁর আমলে ওজন বাড়ে ওহীর জ্ঞানের সংমিশ্রনে। ফলে আমলের ওজন বাড়াতে সে কুরআনের জ্ঞান সংগ্রহে মনযোগী হয়। বেঈমানের সে হুশ থাকে না। ফলে অজ্ঞতা নিয়ে বাঁচাই তার সংস্কৃতিতে পরিণত হয়। জাহিলিয়াতের যুগে আরবদের জ্ঞানশূণ্যতার মূল কারণটি হলো তাদের ঈমানশূণ্যতা জ্ঞানের জগতে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব জুড়ে আজ যেরূপ অজ্ঞতার জোয়ার, সেটির কারণও ভিন্নতর নয় সেটি মুসলিম মানসে গোত্রবাদ, আঞ্চলিকতাবাদ, জাতীয়তাবাদ, ফ্যাসিবাদ, পুঁজিবাদ, স্বৈরাচার ও সেক্যুলারিজমে ন্যায় নানারূপ নব্য জাহিলিয়াত তথা নব্য অজ্ঞতা জাহিলিয়াতের প্রকোপে আধুনিক মুসলিমদের মাঝে বিলুপ্ত হয়েছে মুসলিম রূপে বেড়ে উঠার আগ্রহ। এবং তাতে বিলুপ্ত হয়েছে পবিত্র কুরআন থেকে জ্ঞানসংগ্রহে আগ্রহ মুসলিমগণ কীরূপে উপনিত হলো আজকের এ ভয়ানক অবস্থানে সেটি বুঝতে হলে তাই জরুরি  হলো নব্য জাহিলিয়াতের নাশকতাগুলি সঠিক ভাবে বুঝা শয়তান আজ আর পুতুল পূজার ন্যায় সনাতন অজ্ঞতা তথা জাহিলিয়াতের দিকে ডাকে না স্ট্রাটিজীতে সে আধুনিকীকরণ করেছে ফলে ডাকে নানারূপ নব্য জাহিলিয়াতের দিকে সেগুলি হলো সেক্যুলারিজম, জাতীয়তাবাদ, ফ্যাসিবাদ, বর্ণবাদ, লিবারালিজম, পুঁজিবাদ, কম্যুনিজম ইত্যাদি মতবাদ। এক্ষেত্রে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে শয়তানের বিজয়টি অতি বিশাল বস্তুত মুসলিম দেশগুলিতে ইসলামের পরাজয়ই শয়তানের সে বিজয়কে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়

ইসলাম ও কুরআনের জ্ঞানকে পরিহার করে মুসলিমগণ কোথাও বিজয় ও ইজ্জত পেয়েছে সে প্রমাণ নেই সেটি মূলত পরাজয় ও অপমানের পথ তাদের দোয়া কবুল করা দূরে থাক, খোদ মহান আল্লাহতায়ালাই এমন বিদ্রোহীদের উপর লানত তথা অভিসম্পাত পাঠান অভিসম্পাত পাঠান তাঁর ফিরেস্তাগণও। পবিত্র কুরআনে সে হুশিয়ারি বার বার এসেছে তেমন একটি হুশিয়ারি এসেছে সুরা আল ইমরানের ৮৫ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে, এবং যারা ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য জীবন বিধানকে গ্রহণ করলো, সেটিকে কখনোই কবুল করা হবে না। এরাই আখেরাতে পতিত হবে ক্ষতির মধ্যে।এদের উপর মহান আল্লাহতায়ার ক্রোধ যে কতটা তীব্র সেটি ঘোষিত হয়েছে উক্ত সুরার ৮৭ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে, এরাই হলো তারা যাদের উপর বর্ষিত হয় আল্লাহর লানত, ফেরেশতাদের লানত এবং সকল মানব জাতির লানত।অথচ পরিতাপের বিষয় হলো, আজকের মুসলিম জীবনে মহান আল্লাহতায়ালার বিধান বেঁচে নাই। তারা পরিত্যাগ করেছে নবীজী (সা:)র প্রতিষ্ঠিত কুরআনী ইসলাম যাতে ছিল ইসলামী রাষ্ট্র, মানবাধিকার, শরিয়ত, হুদুদ, কিসাস, খেলাফত, শুরাভিত্তিক শাসন, প্যান-ইসলামিক একতা ও জিহাদের বিধান। সেগুলি পরিহার করে তারা প্রতিষ্ঠা দিয়েছে স্বৈরাচার, জাতীয়তাবাদ, গোত্রবাদ, পুঁজিবাদ ইত্যাদি বাতেলী মতবাদ। গড়েছে ভাষা, গোত্র ও অঞ্চল-ভিত্তিক বিভক্ত মানচিত্র। আজকের মুসলিমগণ এভাবে প্রমাণ করেছে, মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে তারা কতটা বিদ্রোহী ও অবাধ্য ফলে আজ যে দুরাবস্থাটি মুসলিমদের ঘিরে ধরেছে সেটি তাদের নিজেদের কামাই দিন দিন সেটি আরো তীব্রতর ও বেদনাদায়ক হচ্ছে গণহত্যা, নগর ধ্বংস, দেশ থেকে বিতাড়নের যে ভয়ানক নাশকতা ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানে ঘটেছে এবং এখনো ঘটছে তা ঔপনিবেশিক শাসনামলের দুই শত বছরেও হয়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিজাইল ও বোমা হামলায় একমাত্র মোসল শহরে যত ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, হালাকুচেঙ্গিজের হামলায় তার সিকি ভাগও ধ্বংস হয়নি সমগ্র মুসলিম ভূমি পরিণত হয়েছে শত্রুশক্তির যথেচ্ছা জবরদখল, হত্যা, ধর্ষণ ও ধ্বংসের অবাধ চারণভূমিতে মুসলিমগণ হারিয়েছে জানমাল ও ইজ্জতআবরু নিয়ে বাঁচার নিরাপত্তা বিদেশী কাফির  শত্রুদের নাশকতার পাশাপাশি নাশকতায় নেমেছে স্বৈরাচারী দেশী শত্রুগণ তাই মুসলিমগণ লাশ হচ্ছে শুধু কাফির  অধিকৃত মায়ানমার, কাশ্মির ও ফিলিস্তিনে নয়, বরং সিরিয়া, মিশর, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশেও  বনজঙ্গলে কেউ নিহত বা ধর্ষিতা হলে বিচার বসে না তেমনি এক ভয়ংকর অবস্থা এখন মুসলিম বিশ্বের বহু দেশে ভারত, অধিকৃত কাশ্মির ও আরাকান পরিণত হয়েছে হত্যা ও ধর্ষণের অভয় অরণ্যে কোথাও কোন বিচার নাই, কারো কোন শাস্তিও নাই

 

মানব শিশু কীরূপে পশুতে পরিণত হয়?

মানব সন্তানদের মাঝে পশুবৎ ইতর অবস্থাটি সৃষ্টি হয় জ্ঞান ও দর্শনের অভাবে ভারত মহাসাগরের নিকোবর দ্বীপ বা প্রশান্ত মহাসাগরের পাপুয়া নিউিগিনিতে যে মানব সন্তানেরা বন্যপশুদের সাথে বনেজঙ্গলে, ঝুপড়িতে, গুহায় বা গাছের ডালে উলঙ্গ ভাবে বসবাস করে এবং পশুদের ন্যায় পানাহার ও যৌনজীবন যাপন করেতাদের কেউই পশু রূপে জন্মায়নি জন্ম হয়েছিল মানব শিশু রূপেই তাদের মস্তিস্ক, হৃৎপিন্ড, হাতপা, ফুসফুস বা দেহের অন্য কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গই আধুনিক মানুষ থেকে ভিন্নতর নয় কিন্তু মানব রূপে তাদের বেড়ে উঠাটি প্রাচীন প্রস্তর যুগের স্তরেই থেমে আছে, বিগত বহু শত বছরেও তা সামনে এগোয়নি বিশাল ব্যর্থতাটির কারণ শারীরিক পঙ্গুত্ব বা অসুস্থতা নয়, বরং সেটি হলো অশিক্ষা সৃষ্ট জ্ঞানের অপুষ্টি অশিক্ষাজনীত সে অপুষ্টির কারণে এ জীবনে কেন বাঁচবো এবং কীরূপে বাঁচবো সে বিষয়ে সঠিক ভাবনার সামর্থ্য তারা পায়নি শূণ্যতা এখানে দর্শনের কারণ, দর্শনই দেয় দেখবার সাথে তা নিয়ে যুক্তি খোঁজার সামর্থ্য হযরত আদম (সা🙂কে সৃষ্টি করা হয়েছিল শুধু একখানি সুন্দর দেহ দিয়ে নয়, জ্ঞানের বিশাল ভান্ডার দিয়েও মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া জ্ঞানের বরকতেই তিনি তাঁর প্রশ্নের জবাব দিতে সমর্থ হয়েছিলেন যা ফেরশাতগণ দিতে পারেননি জ্ঞান ও প্রজ্ঞার কারণেই তিনি ফেরেশতাদের কাছে সিজদার যোগ্য বিবেচিত হয়েছিলেন।

জ্ঞান বিলুপ্ত হলে সে ইজ্জত থাকে না, মানব সন্তানও তখন পশুর স্তরে পৌঁছায় তারই উদাহরণ পেশ করে নিকোবর ও পাপুয়া নিউগিনির জঙ্গলী মানুষেরা কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাদের সে ব্যর্থতা কজনকে ভাবতে শেখায়? এবংজনকে তাদের কল্যাণে কিছু করতে শেখায়? ভারত সরকারের নীতি এক্ষেত্রে অতিশয় অমানবিক পর্যটকদের সামনে তাদেরকে পেশ করা হচ্ছে মানবআকৃতির দর্শনীয় পশুরূপে ট্যুরিজম বাড়াতে ভারত সরকারের বিনিয়োগটি হলো তাদের বন্য জীবনের সংরক্ষণে ফলে তাদেরকে মানবিক স্তরে ফিরিয়ে আনা ভারত সরকারের এজেন্ডা নয়, বরং সেটি হলো তাদের বন্য রূপকে পর্যটকদের দেখিয়ে রাজস্ব ভাণ্ডারে অর্থবৃদ্ধি

ওহীর জ্ঞান থেকে সংযোগহীন হলে মানব জীবনে কীরূপ পশুসুলভ বর্বরতা নেমে আসে, নিকোবর ও পাপুয়া নিউগিনির বন্য মানুষগণ মূলত তারই প্রমাণ তবে এরূপ জ্ঞানশূণ্যতার শিকার একমাত্র তারাই নয় সে বিপদ ঘিরে ধরেছে শত শত কোটি আধুনিক মানুষকেও এমন কি খোদ মুসলিম দেশের কোটি কোটি মানুষকেও ওহীর জ্ঞানের সাথে  সংযোগহীনতার কারণে তারাও প্রচণ্ড ভাবে মানবতাহীন ও ঈমানহীন হয়েছে এদের কারণেই দেশে দেশে আজ জাহান্নামের পথে বিশাল বিশাল মিছিল সে মিছিলে মূল সুরটি মহান আল্লাহতায়ার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের যে দেশে প্রাচুর্য স্রেফ দেহের খাদ্যে এবং প্রকট দুর্ভিক্ষ রূহের খাদ্যে, সে দেশে ঈমান বাঁচানো যে কতটা অসম্ভব হলো তারই নজির ওহীর জ্ঞানশূণ্য দেশে হিজরত এ জন্যই ইসলামে হারাম সেরূপ নিষিদ্ধ দেশে  হিজরত করে নিকোবর ও পাপুয়া নিউগিনির মানুষদের পূর্বপুরুষগণ শুধু নিজেদের উপরই বিপদ ডেকে আনেনি, পশুর স্তরে পৌঁছে দিয়েছে তাদের সন্তানদের 

 

সংকট দর্শনে

স্রেফ বাঁচা বা ভোগের তাড়না নিয়ে বাঁচা মানুষকে শ্রেষ্ঠতর জীবে পরিণত করে না সে মহান লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে বাঁচতে হয় উচ্চতর দর্শন নিয়ে তাই একজন ব্যক্তি কতটা মানবিক ও ঈমানদার সেটি তার নামাজরোজা ও হজ্জযাকাতে ধরা পড়ে না এরূপ ইবাদত এমন কি বহু ঘুষখোর, মদখোর, সূদখোর, মিথ্যাবাদী ও নানারূপ অপরাধীদের জীবনেও দেখা যায় সেটি ধরা পড়ে জীবন ও জগত নিয়ে তার দর্শনে ও বাঁচার মিশনে ধরা পড়ে রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিতে। প্রশ্ন হলো, দর্শন বলতে আমরা কি বুঝি? এটি হলো ব্যক্তির মানসলোকের তথা চেতনালোকের ভাবনার সামর্থ্যের বিষয় কোন একটি বিষয়কে মনের আলোতে দেখা, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা, সঠিক ধারণাটি খুঁজে বের করা এবং তা থেকে শিক্ষা নেয়ায় চিত্তের বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্যই হলো দর্শন যার ভাল দৃষ্টিশক্তি আছে এমনকি সে ব্যক্তিও গভীর অন্ধকারে কিছুই দেখতে পারে না তাই অন্ধকারে কিছু দেখতে আলো জ্বালাতে হয় এরচেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো মনের আলো মনের আলোতেই মানুষ তাঁর দৃষ্টিলোকে জান্নাতকে দেখতে পায়। সে সাথে দেখতে পায় জান্নাতের পথ তথা সিরাতাল মুস্তাকীম এবং বাঁচে জাহান্নামের পথ থেকে কোনটি সত্য এবং কোনটি মিথ্যা, কোনটি ন্যায় এবং কোনটি অন্যায় দিনের আলো সে বিচারের সামর্থ্য দেয় না সে জন্য চাই মনের আলো তবে মন একমাত্র সেটিই দেখতে পায় এবং সেটি নিয়ে ভাবতে সক্ষম হয় -যা মন জানে। মন যা জানে না তা যেমন একজন ব্যক্তি দেখতে পায় না, তেমনি তা নিয়ে ভাবতেও পারে না। মনকে নির্ভূল ভাবে কোন কিছু জানানোর কাজটি করে ওহীর জ্ঞান তথা কুর’আন। তাই জীবনের শুরুতে যারা পবিত্র কুর’আনের জ্ঞানকে আত্মস্থ্য করতে পারে তারাই সত্যিকার আলেম ও দার্শনিক হয়। যারা সুদ খায়, ঘুষ খায়, ব্যভিচারে নামে, জালেমের পক্ষে লাঠি ধরে বা সন্ত্রাসে নামেতারা কি অন্ধ? তাদের অন্ধত্বটি চোখের নয়; সেটি মনের অভার এখানে জ্ঞানের, দর্শনের ও সুস্থ বিবেকবোধের জ্ঞান ও দর্শন দেয় মনের আলো মুমিনের মনে সে জ্ঞান ও দর্শনের বলটি আসে মহান আল্লাহতায়ালাপ্রদত্ত ওহীর জ্ঞান থেকে ইসলামে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো সে জ্ঞানের তালাশে লেগে থাকা এখানে ব্যর্থ হলে মুসলিম হওয়াই অসম্ভব হয়

পবিত্র কুরআনে মনের আলো দানকারী ওহীর জ্ঞান চিত্রিত হয়েছে নূর রূপে সে নূর মুমিনকে দেয় দেখার ও ভাববার সামর্থ্য পবিত্র কুরআন হলো সেই নূর। নির্দেশ দেয়া হয়েছে সে নূর অনুসরণের। হুকুম দেয়া হয়েছে, ঈমান আনো আল্লাহর উপর, তাঁর রাসূলের উপর এবং সেই নূরের উপর যা আমি নাযিল করেছি। এবং তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তার খবর রাখেন। -(সুরা তাগাবুন, আয়াত ৮)। তাই মুসলিম জীবনে শিক্ষার অপরিহার্য বিষয় হলো, শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পরিচয়টি তুলে ধরা নয় বরং সে সাথে তাঁর নাযিলকৃত নূর তথা কুরআনের সাথে মানব সন্তানদের পরিচিত করানো। এবং গুরুতর অপরাধ হলো সে নূরকে গোপন করা। অথচ বাংলাদেশের ন্যায় দেশগুলিতে শিক্ষাঙ্গণে সে নূরকে লুকানোর কাজটি হচ্ছে পরিকল্পিত ভাবে। এবং বাড়ানো হচ্ছে মনের অন্ধকার। এভাবে চেতনার ভূমিতে হামলার সুবিধা করে দেয়া হচ্ছে শয়তান ও তার অনুসারীদের।  ফলে দেশের অধিকাংশ মানুষই পথ হারিয়েছে তাদের ধর্মকর্ম, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও সংস্কৃতিতে।

ঈমানদার ও কাফির এ উভয় শ্রেণীর মানুষ একই ভূমি, একই জলবায়ু ও একই রূপ ভাতমাছে বেড়ে উঠলেও জীবন ও জগতকে নিয়ে তারা একই রূপ ভাবে না একই ভাবে দেখেও না তাদের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিও একই রূপ হয়না। ঈমানদার ও বেঈমানের মাঝে চিন্তা-চেতনায় যে বিশাল পার্থক্য তার মূলে কাজে করে তাদের ভিন্ন ভিন্ন দর্শন। বাইরের ভূবনকে তারা দেখে ও তা নিয়ে ভাবে নিজ নিজ দর্শনের আলোকে ঈমানদার তাঁর দর্শনের সামর্থ্য পায় আল্লাহপ্রদত্ত নূর তথা কুরআনী জ্ঞান থেকে। বেঈমানের সেটি থাকে না। সে নূরের অভাবে কাফেরের মন এজন্যই সদা অন্ধ চেতনালোকের সে অন্ধত্বের কারণে বিশাল ভূবনের কোটি কোটি সৃষ্টির মাঝে কাফিরগণ কোথাও মহান আল্লাহতায়ালার কুদরত ও আলামত দেখতে পায় না অথচ ঈমানদার ব্যক্তি স্রষ্টার আলামত দেখতে পায় প্রতিটি সৃষ্টির মাঝে দেখতে পায় গৃহের সামনে। কুরআনী জ্ঞানের সে নূর না থাকার কারণে এমন কি মুসলিম রূপে পরিচয়দানকারি ব্যক্তির জীবনেও কাফিরদের জীবনদর্শন, রাজনীতি, বিচারআচার ও সংস্কৃতির থেকে পৃথক কোন ভিন্ন ধারা সৃষ্টি হয়না শরিয়ত, কেসাস, হুদুদ, খেলাফত ও জিহাদ নিয়ে হিন্দুত্ববাদী দুর্বৃত্ত কাফিরগণ যেভাবে কথা বলে, সে অভিন্ন সুরে কথা বলে ইসলামী চেতনাশূণ্য মুসলিম নামধারি বাংলাদেশের বাঙালি ফ্যাসিস্টগণও

তাই কোন দেশের জনগণের রাজনৈতিক মানচিত্রে ও তাদের সংস্কৃতির ভূবনে স্থায়ী পরিবর্তন আনতে হলে পরিবর্তন আনতে হয় তাদের মনের ভূবনে। মনকে আলোকিত না করে রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারকেই বা কীরূপে আলোকিত করা সম্ভব? মনের ভূবনকে আলোকিত করার মূল হাতিয়ারটি হলো শিক্ষা। ব্যক্তি ও জাতির জীবনে শিক্ষার গুরুত্ব এজন্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও চুড়ান্ত। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ইসলামের শত্রুপক্ষের অধীনে রেখে ইসলামের বিজয় এজন্যই অসম্ভব। কারণ, যাদের নিজেদের মনের ভূবনে গভীর অন্ধকার, তারা কি কখনো আলো ছড়াতে পারে? মুসলিম বিশ্বের অসংখ্য স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এজন্যই ব্যর্থ হচ্ছে জাহিলিয়াতের অন্ধকার সরাতে। এবং ব্যর্থ হচ্ছে পতন রুখতে। ১ম সংস্করণ ১৫/০৪/২০১৮; ২য় সংস্করণ ৩০/০৭/২০২২।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *