বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি

ফিরোজমাহবুব কামাল

ভারতের বাংলাদেশ-ভীতি

ভারতের রয়েছে প্রচণ্ড বাংলাদেশ-ভীতি। ভয়ের মূল কারণ, ১৬ কোটি বাঙালি মুসলিমের ইসলামে বিশ্বাস। ভারতীয়রা মুর্খ নয়। তারা জানে, আদর্শের শক্তি। বাঙালি মুসলিমের সাথে যুদ্ধের অর্থ একটি ধর্ম ও আদর্শের সাথে যুদ্ধ। লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা যায়, হাজার হাজার ঘর-বাড়ীকেও ধ্বংস করা যায় -যেমন ইসরাইল আজ ফিলিস্তিন ও লেবাননে করছে এবং মার্কিনীরা করেছিল ইরাক ও আফগানিস্তানে। কিন্তু আদর্শকে হত্যা করা যায়না -বিশেষ করে সে আদর্শটি যদি হয় ইসলাম। ইসলাম অমর; তাই বিশুদ্ধ ইসলাম এখোন বেঁচে আছে কোটি কোটি মানুষের মনে। ইসলামের দর্শন জোগায় যে কোন আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের শক্তি। একজন ঈমানদারের এটিই হলো সর্বোচ্চ ইবাদত। মুসলিম বেঁচে থাকলে সে ইবাদতও বেঁচে থাকে। যে শক্তির বলে আফগান জনগণ ব্রিটিশ বাহিনী ও পরে সোভিয়েত বাহিনীকে পরাজিত করেছিল -সেটি অস্ত্রবল ছিল না। অর্থবলও ছিল না। সেটি ছিল কুর’আনী দর্শনের বল। সে কুর’আনী দর্শন প্রায় প্রতিটি আফগান মুসলিমকে সৈনিকে পরিণত করেছিল। এবং সে দর্শনের বলেই তারা মার্কিনদেরও পরাজিত করেছিল। ২০ বছরের যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট ও তার ৫০টি মিত্রদেশকে তারা কখনোই বিজয়ের কাছেও ভিড়তে দেয়নি। এটিই ইসলামের বল।  

বাংলাদেশীরা আফগানদের থেকে তুলনায় সংখ্যায় প্রায় ৫ গুণ। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত রাশিয়ার চেয়ে ভারত শক্তিশালী নয়। এতো বড় বিশাল বাঙালি মুসলিম জনশক্তির মাঝে ইসলামী চেতনার বিস্ফোরণ হলে তাতে কেঁপে উঠবে সমগ্র ভারত। মুজিব এবং হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্ত বাংলার মাটিতে দ্বিতীয়বার স্থান পাবে না। বাংলার ছাত্র-জনতা মুজিবের মূর্তিই শুধু ভাঙ্গেনি, তার মূর্তির মুখে প্রশ্রাবও করেছে। এ ঘৃণা শুধু মুজিবের বিরুদ্ধে ছিল না, সে ঘৃণা ছিল মুজিবের পালনকর্তা ভারতের বিরুদ্ধেও। এরপরও কি বুঝতে বাঁকি থাকে বাঙালি মুসলিম ভারতীয়দের আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদকে কতটা ঘৃণা করে। একাত্তর থেকে শুরু করে এ অবধি ভারত বাঙালি মুসলিমের চেতনায় শুধু ঘৃণার বারুদ ঢেলেছে; সেটি এখন বিস্ফোরণোন্মুখ। ভারতসেবীরা এখন হয় পলায়ন করেছে, নতুবা গর্তে ঢুকেছে। ফলে ভারতের পক্ষে এখন লোকবল নাই। গর্ত থেকে বেরুলেই তারা প্রতিরক্ষার মুখেও পড়বে।   

ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীরা বাঙালি মুসলিমের চেতনার ভূমিতে একাত্তর থেকে বারুদ ঢালার যে কাজটি করেছে, ব্রিটিশ শাসনামালে সে অভিন্ন কাজটিই করেছিল বাঙালি হিন্দু জমিদার ও হিন্দু মহাজনগণ। তারই ফলে বাংলার বুকে ১৯০৬ সালে ঢাকাতে সৃষ্টি হয়েছিল মুসলিম লীগ। এবং বাংলাই পরিণত হয়েছিল মুসলিমের লীগের মূল দুর্গে -যা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের সৃষ্টিকে অনিবার্য করে তুলে। এখন এ নিয়ে সামান্যতম দ্বিমত নাই, পাকিস্তান সৃষ্টির মূলে পাঞ্জাবী, পাঠান, সিন্ধি ও বেলুচ মুসলিমগণ ছিল না, ছিল বাঙালি মুসলিমগণ। কায়েদে আযম মহম্মদ আলী জিন্নাহর ডাকে “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান (লড়াই করেই নিব পাকিস্তান)”য়ের চুড়ান্ত লড়াইটি লাহোর, করাচী, পেশোয়ার বা পিন্ডিতে লড়া হয়নি, সে লড়াইটি হয়েছিল বাংলার রাজধানী কলকাতাতে। সে রক্তাক্ত লড়াইয়ে ৫ থেকে ৭ হাজার বাঙালি ও বিহারী মুসলিম কলকাতার রাস্তায় কংগ্রস, হিন্দু মহাসভা ও RSS‘য়ের গুন্ডাদের হাতে প্রাণ হারিয়েছিল। সে রক্তদানের পর ব্রিটিশ সরকার ও কংগ্রস নেতৃবৃন্দ পাকিস্তান দাবী মেনে নিতে বাধ্য হয়।

জমিনে বীজ থাকলে এবং সহায়ক পরিবেশ পেলে তা পুণরায় গজাবেই। ভারত সেটি বুঝে। ভারত ইসলামের সে বীজ বাংলার মাটি থেকে ধ্বংস করতে পারিনি। এটিই ভারতের ব্যর্থতা। ভারত তার আজ্ঞাবাহী মুজিব-হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন চাপিয়ে সে বীজ গজানোর সহায়ক পরিবেশ কিছু কালের জন্য ধবংস করেছিল মাত্র। এবং সৃষ্টি করেছিল এক বৈরী পরিবেশ। মুজিব-হাসিনার উৎখাতে ১৬ কোটি বাঙালি মুসলিম এখন নতুন পরিবেশ পেয়েছে। বাঙালি মুসলিম পেয়েছে ঈমান ও জিহাদ নিয়ে বেড়ে উঠার স্বাধীনতা। এখানেই ভারতের ভয়।

নেকড়ে তার স্বভাব বদলাতে পারে না; ফলে সে কখনোই মানুষের বন্ধু হতে পারে। একই রূপ সীমাবদ্ধতা ভারতেরও। ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীরা কখনোই তাদের ইসলামের প্রতি ঘৃণা ও মুসলিমবৈরীতা পাল্টাতে  পারবে না; ফলে কখনোই তারা বাঙালি মুসলিমের বন্ধু হতে পারবে না। বড় জোর তারা বন্ধুর মুখোশ পড়তে পারে এবং মুজিব-হাসিনার ন্যায় কিছু পদলেহী দাস প্রতিপালন করতে পারে। হাসিনার চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, গুম-খুনের রাজনীতি, বিচার-বহির্ভুত হত্যা ও নৃশংস ফ্যাসিবাদের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে ভারত প্রমান করেছে তারা বাঙালি মুসলিমের কত বড় নৃশংস শত্রু। নেকড়ের নৃশংসতা মানুষ কোন কালেই ভূলে না, বাঙালি মুসলিমও তেমনি কখনো ভূলবে না ভারতের শত্রুতাকে। ১৯৭১’য়ের যুদ্ধটি ছিল ভারতের নিজস্ব যুদ্ধ। এ যুদ্ধের লক্ষ্য বাঙালি মুসলিমদের স্বাধীনতা দেয়া ছিল না; বরং মূল লক্ষ্যটি ছিল পাকিস্তান ভাঙ্গা এবং বাঙালি মুসলিমদের গোলাম বানানো। একাত্তরে ভারত সে লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়। ভারতের সে গোলামী বাঙালি মুসলিম হাড়ে হাড়ে ভুগেছে।

বাংলাদেশের মূল শক্তি তাই তার ভূগোল নয়, সম্পদও নয়। বরং সেটি হলো ১৬ কোটি মানুষের মুসলিম জনশক্তি। এ বিশাল জনশক্তির সাথে কুর’আনী জ্ঞানের যোগ হলে জন্ম নিবে রাজনৈতিক অঙ্গণে এক মহাশক্তি। মরুর নিঃস্ব আরবেরা বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়েছিল তো তেমন এক মিশ্রণ হওয়াতেই। ভারত তাই বাংলাদেশের মানুষকে কুর’আনের জ্ঞান থেকে দূরে সরাতে চায়। এজন্যই প্রতিটি বাংলাদেশীর উপর চলছে ভারতের পক্ষ থেকে বছরের প্রতিদিন এবং প্রতি ঘন্টা নজরদারী। মুজিবকে দিয়ে তাই পাকিস্তানে আমলে চালু করা দ্বীনিয়াত বইটি স্কুলে নিষিদ্ধ করেছিল। সংকুচিত করা হয়েছিল ইসলাম ও কুর’আনের উপর পাঠদান। এবং শুরু করা হয়েছিল ইসলাম থেকে মুসলিমদের দূরে সরানোর নানা রূপ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রকল্প। হাসিনা বাজেয়াপ্ত করছে জিহাদ বিষয়ক সকল বই। নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল কুর’আনের তাফসির ও জুম্মার খোতবার উপর।  

 

অরক্ষিত বাংলাদেশ: প্রতিরোধ কিরূপে?

বাঘের পাল দ্বারা ঘেরাও হলে বিশাল হাতিও রেহাই পায় না। তাই যে জঙ্গলে বাঘের বাস সে জঙ্গলের হাতিরাও দল বেঁধে চলা ফেরা করে। বাংলাদেশের বাস্তবতা হলো, দেশটি মুসলিম বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন এক দেশ। ঘেরাও হয়ে আছে আগ্রাসী হিন্দুদের দ্বারা। ফলে বাংলাদেশ দারুন ভাবে এক অরক্ষিত দেশ। তাই এদেশটির সীমাবদ্ধতা প্রচুর। যে কোন দেশের প্রতিরক্ষার খরচ বিশাল। আর ভারতের মত একটি বিশাল আগ্রাসী দেশের বিরুদ্ধে সে খরচ তো আরো বিশাল। এ বাস্তবতার দিকে খেয়াল রেখেই বাংলার তৎকালীন শীর্ষ স্থানীয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাযিমুদ্দীন, মাওলানা আকরাম খাঁ, নূরুল আমীন, মৌলভী তমিজুদ্দীন খান প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের পার্লামেন্টারী সভায় লহোর প্রস্তাবে সংশোধনী এনেছিলেন এবং পাকিস্তানে যোগ দেবার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সংশোধনীর কারণ, ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ গৃহীত লাহোর প্রস্তাবে বাংলাকে পাকিস্তানভূক্ত করার কথা ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর আব্দুল জলিল লিখেছেন, অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা। সে সত্য বিষয়টি পাকিস্থানপন্থীরা ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালেই বুঝেছিলেন। কিন্তু মেজর আব্দুল জলিল বুঝেছেন পাকিস্তান ভাঙ্গার পর।

১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলা পাকিস্তানে প্রবেশ করেছিল সে দেশের সবচেয়ে বড় প্রদেশে রূপে। অথচ এরূপ স্বেচ্ছায় পাকিস্তানভূক্তিকেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলে বাংলার বুকে পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন। এটি নিরেট মিথ্যাচার। কোন দেশে ঔপনিবেশিক শাসন গড়তে হলে যুদ্ধ লড়তে হয়। প্রয়োজন পড়ে দেশী মীর জাফরদের। ঔপনিবেশিক শক্তির জন্য প্রয়োজন হয় লর্ড ক্লাইভ ও পলাশীর বিজয়ের। প্রশ্ন হলো, ১৯৪৭’য়ে কে ছিল সেই মীর জাফর? কে ছিল ক্লাইভ? তবে ১৯৪৭’য়ের সে মীর জাফর কি ছিলেন সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দিন ও আকরাম খাঁ -যারা বাংলাকে পাকিস্তান ভূক্ত করেছিলেন? আর ঔপনিবেশিক বাহিনীই বা কোথায়? কোথায় করলো তারা যুদ্ধ? জেনারেল ওসমানী, মেজর জিয়া, মেজর সফিউল্লাহ, মেজর আব্দুল জলিল, মেজর খালিদ মোশাররফ কি তবে সে উপনিবেশিক বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন?

এ অরক্ষিত অবস্থা থেকে বাঁচতে হলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গণের নির্ভরযোগ্য বন্ধু খুঁজতে হবে। এবং প্রতিরক্ষার জন্য প্রতিটি সামর্থবান নাগরিককে প্রস্তুত করতে হবে। বুঝতে হবে, স্বাধীন ভাবে বাঁচার খরচটি বিশাল। স্বাধীন ভাবে বাঁচার সামর্থ্য না থাকলে মুসলিম রূপে বাঁচা ও বেড়ে উঠার স্বাধীনতাও হারাতে হয়। এজন্যই মহান আল্লাহতায়ালা মুসলিমের জন্য শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত ফরজ করেননি, ফরজ করেছেন শত্রুর সম্ভাব্য হামলা রুখতে প্রতিরক্ষার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়াকেও। সে হুকুমটিও মহান আল্লাহতায়ালার -যা এসেছে সুরা আনফালের ৬০ নম্বর আয়াতে। সে ফরজ পালনে গাফলতি দেখালে পরাধীনতার আযাব নিয়ে বাঁচতে হয়। সে ফরজ ১৭৫৭ সালে বাঙালি মুসলিমগণ পালন করেনি বলেই তাদের ১৯০ বছরের নৃশংস গোলামী ভোগ করতে হয়েছে। 

বাংলাদেশীগণ বিস্ময়কর ইতিহাস গড়েছে ২০২৪’য়ের ৫ আগস্টে শেখ হাসিনার ন্যায় ভারতের সেবাদাসী ফ্যাসিস্টকে শাসন ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করে। বহু ব্যর্থতার মাঝে এ হলো বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার এক বিরাট বিজয়। বাংলার ইতিহাসে এটি এক গৌরবের দিন। হাজারো মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হলো এক নতুন স্বধীনতা। কিন্তু এ স্বাধীনতার শত্রু অনেক। ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীরা বাঙালি মুসলিমের ১৯৪৭’য়ের স্বাধীনতা যেমন চায়নি, ২০২৪ সালের স্বাধীনতাও চায়না। আজকের স্বাধীন বাংলাদেশকে তারা শত্রু মনে করছে। তাদের পছন্দের বাংলাদেশ তো এক পরাধীন এবং ভারতের প্রতি নতজানু বাংলাদেশ -যেমনটি ছিল শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার সময়। সম্প্রতি (আগস্ট, ২০২৪) কলকাতার এক টিভি চ্যানেলের সাথে সাক্ষাতকারে ভারতের সাবেক সেনা প্রধান শঙ্কর রায় চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশ এখন আর ভারতের বন্ধু দেশ নয়, এখন শত্রু দেশ। ভারত সরকারকে এখন থেকে সতর্ক থাকতে হবে।”

প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ কিরূপে ভারতের শত্রু দেশে পরিণত হলো? বাংলাদেশ কি ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে?  না, বাংলাদেশ কোন যুদ্ধ শুরু করেনি। দেশটির জনগণ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের যাঁতাকল থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন হয়েছে মাত্র। ভারত সে স্বাধীনতা মেনে নিতে পারছে না। বাংলাদেশীদের স্বাধীনতার প্রতি ভারতীয়দের ঘৃণা যে কতটা তীব্র -সেটির প্রকাশ ঘটছে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সাম্প্রতিক বক্তব্যে। প্রকাশ পাচ্ছে ভারতীয় মিডিয়ার টক শো’তে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার এ ভারতীয় শত্রুগণ বলে, “ভারত নাকি ১৯৭১’য়ে বাংলাদেশীদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল।” তাদের এ দাবী যে কতবড় মিথ্যা -সেটি বুঝে উঠা  কি এতোই কঠিন? অথচ ১৯৭১ সাল থেকে ভারত সে প্রকান্ড মিথ্যাকেই জোর গলায় শুনিয়ে আসছে। বাস্তবতা হলো, ভারত তো একাত্তরে বাংলাদেশীদের গলায় গোলামীর শিকল পরিয়েছিল। বাংলাদেশে মানুষ সে গোলামী থেকে এবার মুক্তি পেল। ভারত সেটি চায়নি। ভারতের ১৯৭১’য়ের প্রকল্প এভাবে যে ব্যর্থ হবে -ভারত তা ভাবতেই পারিনি। তাই মনের তীব্র আক্রোশে ক্ষোভ ঝাড়ছে বাংলাদেশীদের প্রতি।

বাঙালি মুসলিমগণ তাদের প্রতিবেশীদের পাল্টাতে পারবে না। বাঁচতে হবে আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদী ভারতের পাশেই। এটাই বাংলাদেশীদের জন্য বাস্তবতা। নবীজীর আমলেও মুসলিমগণ কোন সহায়ক পরিবেশ পায়নি। দুই পাশে ছিল দুই বিশ্বশক্তি। এক পাশে ছিল রোমান সাম্রাজ্য, আরেক পাশে ছিল পারস্য সাম্রাজ্য। তাদের তূলনায় মুসলিমদের লোকবল ও সামরিক বল ছিল নগন্য। কিন্তু তারা সেদনি দুটি বিশ্বশক্তিকে পরাজিত করেছিল। ঘরের পাশে নেকড়ের বসবাস থাকলে নেকড়ে মারার কৌশল জানতে হয়। তেমনি পাশে শত্রুশক্তি থাকলে যুদ্ধ শিখতে হয়। প্রতিবেশী রূপে ভারত আছে বলেই পাকিস্তান আজ ৫৭টি মুসলিম দেশের মাঝে সবচেয়ে শক্তিশালি সামরিক শক্তি। দেশটি নিজে তৈরী করে পারমানবিক বোমা, বোমারু বিমান, মিজাইল ও ট্যাংক। ফলে ভারত জনসংখ্যায় ৫ গুণ বৃহৎ হয়েও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসনে ভয় পায়। বাংলাদেশকে তাই শিখতে হবে কিভাবে স্বাধীন ভাবে বাঁচতে হয়। শত্রু শক্তির আত্মসমর্পণ নিয়ে বাঁচা কোন সভ্য নীতি হতে পারে না। স্বাধীন ভাবে বাঁচার খরচটি বিশাল; তবে সে খরচ জুগাতেই হবে। নইলে গোলামী নিয়ে বাঁচতে হবে।

স্বাধীন ভাবে বাঁচায় মুসলিমগণ তাদের নিজেদের বিনিয়োগ বাড়ালে মহান আল্লাহতায়ালাও তাঁর নিজ বিনিয়োগ বাড়ান। সেটিই সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহতায়ালার শাশ্বত নীতি। অতীতে মুসলিমগণ তো সে সাহায্য পেয়েই বড় বড় শত্রু বাহিনীকে পরাজিত করেছে। ঈমানদারদের জন্য বিজয়ের সে পথ মহান আল্লাহতায়ালা আজও খোলা রেখেছেন। বিজয়ের ইতিহাস তাই শুধু অতীতের কাহিনী নয়, বিজয়ের ইতিহাস আজও নির্মিত হচ্ছে। তিন কোটি আফগান মুসলিম তাই দুই আধুনিক বিশ্বশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত রাষ্ট্রকে পরাজিত করতে পেরেছে। তাই প্রশ্ন হলো, ১৬ কোটি বাঙালি মুসলিম কেন আত্মসমর্পণ করবে ভারতীয় পৌত্তলিকদের কাছে? তবে সে গায়েবী সাহায্য ও বিজয় পেতে হলে বাঙালি মুসলিমদের সর্বপ্রথম সত্যিকার মুসলিম হতে হবে। শর্ত হলো, মহান আল্লাহতায়ালার আজ্ঞাবাহী সৈনিক হতে হবে। তখন মুসলিম বাহিনীকে বিজয়ী করার দায়িত্ব সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহতায়ালা নিজে হাতে নেন। তখন কি কেউ তাদের পরাজিত করতে পারে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *