বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট

ফিরোজ মাহবুব কামাল

স্বপ্নের গুরুত্ব ও ঈমানদারের স্বপ্ন

ঈমানদার ও বেঈমানের স্বপ্ন কখনো একই রূপ হয়না। স্বপ্নের মাঝে পরিচয় মেলে যেমন ঈমানদারীর, তেমনি বেঈমানীর। এ স্বপ্ন সে স্বপ্ন নয় -যা ব্যক্তি গভীর ঘুমের ঘোরে দেখে থাকে। বরং এ স্বপ্ন হলো সে স্বপ্ন -যা সে অতি সজ্ঞানে ও জাগ্রত অবস্থায় দেখে থাকে। স্বপ্ন থেকেই জন্ম নেয় রাজনীতির। তাই স্বপ্ন না থাকলে রাজনীতি থাকে না। পশুর সেটি থাকে না বলে পশুর পরিচয় নিছক পশু রূপে। পশুর আস্তাবলে তাই রাজনীতির জন্ম হয় না। বস্তুতঃ রাজনীতি হলো মানুষের স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার। সে স্বপ্ন পূরণে ব্যক্তি যেমন কর্মে নামে, তেমনি রাজনীতিতেও নামে। সময়, শ্রম, অর্থ, মেধার পাশাপাশি এমনকি নিজের জীবনও বিণিয়োগ করে। মুসলিম তো সে স্বপ্ন পূরণে শহীদও হয়। শহীদের রক্ত এখানে শক্তিশালী অস্ত্র রূপে কাজ করে। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে ব্যক্তির শহীদ হওয়াটাই তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। কারণ, ব্যক্তি এখানে প্রাণ দেয় নিজের প্রতিষ্ঠা, ব্যবসা বা সম্পদ বাড়াতে নয়, বরং মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের বিজয় বাড়াতে। ফলে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে এর চেয়ে বড় একাত্মতা এবং এর চেয়ে বড় নেককর্ম নেই। এমন নেককর্মের বিনিময়ে মু’মিন ব্যক্তিটি রেহাই পাবে আখেরাতে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জবাবদেহীতা দেয়া থেকে। অথচ সেদিনের বিচার থেকে অন্য কারো রেহাই নেই।

মু’মিনের জীবনে যে স্বপ্নটি সবচেয়ে বড়, সেটি হলো মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার স্বপ্ন। মু’মিনের সকল কর্ম ব্যস্ততার মাঝে কাজ করে এ ভাবনা। এখানে আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে মু’মিন তাঁর নিজের বাঁচার এজেন্ডাকে এক করে ফেলে। সে তখন পরিণত হয় হিজবুল্লাহ বা আল্লাহতায়ালার বাহিনীর মুজাহিদে। তার জীবনে তখন জিহাদ শুরু হয়। মহান আল্লাহতায়ালার সে এজেন্ডাটি ঘোষিত হয়েছে এভাবে:

هُوَ ٱلَّذِىٓ أَرْسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلْهُدَىٰ وَدِينِ ٱلْحَقِّ لِيُظْهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِ

অর্থ:“তিনিই সেই মহান আল্লাহ যিনি সঠিক পথ ও সত্যদ্বীনসহ রাসূলকে প্রেরণ করেছেন এ জন্য যে তাঁর দ্বীন যেন সকল ধর্ম ও মতের উপর বিজয়ী হয়।” –(সুরা সাফ আয়াত ৯, সুরা তাওবাহ আয়াত ৩৩, সুরা ফাতহ আয়াত ২৮)।

তাই আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে জাতীয়তাবাদ, পুঁজিবাদ, সোসালিজম, সেক্যুলারিজম, হিন্দুধর্ম, খৃষ্টানধর্মসহ অন্য কোন ধর্ম ও অন্য মতবাদের উপর বিজয়ী করার জিহাদটি কোন ইসলামী দলের বা কোন মৌলানা-মৌলভীর এজেন্ডা নয়। বরং সেটি খোদ মহান আল্লাহতায়ালার। ঈমানদার হওয়ার অর্থই হলো মহান আল্লাহতায়ালার সে এজেন্ডার সাথে পুরোপুরি একাত্ব হওয়া। সে এজেন্ডার বিরুদ্ধে যে কোন বিরোধীতা বা যুদ্ধই হলো সুস্পষ্ট কুফুরি বা বেঈমানী। এমন বিরোধীতা মূলত শয়তান ও তার অনুসারীদের কাজ। অথচ মুজিব ও তার দল অবস্থান নেয় শয়তানের পক্ষে এবং যুদ্ধ শুরু করে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার বিরুদ্ধে। সেটি সুস্পষ্ট বুঝা যায়, মুজিব যখন নিষিদ্ধ করে সকল ইসলামী দলকে। এবং নিষিদ্ধ করে ইসলামকে বিজয়ী করার এজেন্ডা নিয়ে সংগঠিত হওয়াকে এবং কারাবন্দী করে সকল ইসলামপন্থী নেতাদের। মুজিবের সে লিগ্যাসী নিয়ে হাসিনার রাজনীতিও পরিণত হয় ইসলামের বিরুদ্ধে বিরামহীন যুদ্ধে। ইসলামে বিরুদ্ধে এরূপ যুদ্ধাংদেহী অবস্থান নেয়ার কারণে মুজিব এবং হাসিনা উভয়ই সাহায্যদাতা রূপে পাশে পায় পৌত্তলিক ভারতকে।

স্বপ্ন কোন মামুলি বিষয় নয়। স্বপ্নের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির ঈমানদারী ও বেঈমানী কথা বলে। ব্যক্তির ঈমান যত বাড়তে থাকে, তার এ স্বপ্নের মধ্যে ততই বিপ্লব ও পবিত্রতা আসে। তীব্রতর হয় মহান আল্লাহতায়ালার খুশি করার তাড়না। ঈমান যখন পূর্ণ ঈমানে ভরপুর হয়, তখন ঈমানদারের বাঁচা, মরা, লড়াই ও কুরবানী সব কিছুই লিল্লাহ তথা আল্লাহতায়ালার জন্য হয়ে যায়। সে তখন কোন নেতা, জাতি, বর্ণ, শ্রেণী, দল বা গোত্রের জন্য বাঁচে না, মারাও যায়না। বরং বাঁচে এবং মারা যায় একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার জন্য। প্রতিটি ঈমানদার ব্যক্তি থেকে মহান আল্লাহতায়ালা তো সেটিই চান। এ জন্যই কোন ঈমানদার জাতীয়তাবাদী, গোত্রবাদী, বর্ণবাদী, রাজতন্ত্রী ও দলবাদী হয় না। ইসলামে সেটি হারাম। মুমিনদের লিল্লাহ বা আল্লাহমুখী করতেই মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশ:

قُلْ إِنَّ صَلَاتِى وَنُسُكِى وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِى لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ 

অর্থ: “ বলুন (হে মহম্মদ), নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কুরবানী, আমার বেঁচে থাকা এবং আমার মৃত্যু সবকিছুই বিশ্বচরাচরের মহান প্রতিপালকের জন্য‍।” –(সুরা আনয়াম, আয়াত ১৬২)।    

 

সে আমলের স্বপ্ন ও এ আমলের স্বপ্ন

আজ প্রায় ৪০ কোটি আরব মুসলিম জন্ম দিয়েছে ২২টি আরব রাষ্ট্রের। এ আরব ভূমিতে আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বে বাস করতো মাত্র কয়েক লাখ আরব মুসলিম। কিন্তু নবীজীর যুগের সে আরব মুসলিমগণ যে স্বপ্ন নিয়ে বাঁচতেন, সে স্বপ্ন নিয়ে আজকের আরবগণ বাঁচে না। কারণ তাদের মাঝে আজ বেঁচে নাই সেই সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বের ঈমান। ভাল স্বপ্ন দেখতেও ঈমানী বল লাগে। লাগে প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি; এবং লাগে জীবন, জগত, রাজনীতি ও ভূ-রাজনীতি বুঝার মারেফাত।  একজন জ্ঞানবান ঈমানদারের স্বপ্ন আর জাহিল বেঈমানের স্বপ্ন এজন্যই একই রূপ হয় না। স্বপ্ন দেখতে এবং সে স্বপ্ন বাঁচাতে লাগে সহায়ক পরিবেশ। নবীজীর আমলের আরব মুসলিমদের যে ঈমান ছিল, আজকের আরবদের মাঝে সে ঈমানের শত ভাগের এক ভাগও বেঁচে নাই। সে আমলের আরবগণ বাঁচতেন একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালা জন্য এবং নিহতও হতেন তাঁরই জন্য। তাদের স্বপ্নের সবটুকু জুড়ে ছিল মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার তাড়না। তারা স্বপ্ন দেখতেন কি করে আরব, ইরানী, তুর্কি, কুর্দি, হাবসী, মুর -এসব নানা ভাষী ও নানা বর্ণের মুসলিমদের মাঝে সীসাঢালা দেয়ালসম একতা গড়ে বিশ্ব মাঝে অপরাজেয় মুসলিম উম্মাহ গড়া যায়। তাদের স্বপ্নের মানচিত্রে ভাষা, বর্ণ ও গোত্র ভিত্তিক অবজ্ঞা ও বিভক্তি স্থান পায়নি। ফলে মুসলিম ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব তো তারাই। মুসলিম ইতিহাসের যা কিছু গর্বের তার সিংহ ভাগের নির্মাতা তো তারাই। কিন্তু আজকের আরবদের স্বপ্নের সবটুকু জুড়ে যে তাড়না সেটি মিশরী, সৌদি, কাতারী, ইয়েমেনী, ওমানী, কুয়েতী, সুদানী, ইরাকী -ইত্যাদি উপজাতীয়, গোত্রীয়, পারিবারিক পরিচয়কে গৌরবময় করা নিয়ে। মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা নিয়ে কিছু ভাবা বা তা নিয়ে কিছু করার স্বপ্ন তারা দেখে না। সেরূপ স্বপ্ন দেখার জন্য যে ঈমান জরুরি -সে ঈমান তাদের নাই।  

তবে আজকের আরবদের স্বপ্ন বিলুপ্তির বোধগম্য কারণও রয়েছে। যদিও আজকের আরব ভূমিতে একই রূপ আলোবাতাস ও জলবায়ু বেঁচে আছে, বেঁচে নাই মহান নবীজীর প্রতিষ্ঠিত ইসলাম -যাতে ছিল মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব, মহান আল্লাহর শরিয়তী আইন, কুর’আনী জ্ঞান ও দর্শন, দুর্নীতির নির্মূল ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার জিহাদ এবং প্যান-ইসলামী মুসলিম ভাতৃত্ব। আজকের আরব মানসে বিরাজমান প্লাবনটি আরব জাতীয়তাবাদ, গোত্রবাদ, স্বৈরতন্ত্র ও সেক্যুলারিজমের। এরূপ দূষিত দর্শনের প্লাবনে ভাসলে কি ঈমানদারের ন্যায় স্বপ্ন দেখা যায়? ঈমানদারের ন্যায় স্বপ্ন দেখতে হলে তো পূর্ণ ঈমানদার হতে হয়। সমৃদ্ধ হতে হয় কুর’আনী জ্ঞানে। সেকালের মুসলিমগণ সম্পূর্ণ মুক্ত ছিলেন হারাম দর্শনের দূষণ থেকে। তারা শুধু ভৌগলিক সীমান্তকেই সুরক্ষিত করেননি, সুরক্ষিত করেছিলেন চেতনার সীমান্তকেও। আজকের ন্যায় জাহিলিয়াতের স্রোতে না ভেসে তারা কুর’আনের আলো নিয়ে উজানে ছুটেছেন। ফলে সেদিন আরব দেশের একজন ভেড়ার রাখাল মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ নিয়ে যে বিশাল স্বপ্ন দেখতেন এবং সে স্বপ্ন সফল করতে জিহাদে নামতেন, সে সামর্থ্য আজকের আরব শেখ, মুফতি, প্রফেসর, বুদ্ধিজীবী, আলেম ও আল্লামাদের নাই। সে আমলে সিন্ধুর রাজা দাহিরের অত্যাচার থেকে হিন্দুদের বাঁচাতে মহম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধুতে ছুটে এসেছিলেন এবং তাদের মুক্তি দিয়েছিলেন, অথচ আজ ৪০ কোটি আরবদের মাঝে কেউ নাই যারা ফিলিস্তিনী মুসলিমদের পাশে দাঁড়াবে! আরবদের বিচ্যুতি বুঝতে কি এটুকুই যথেষ্ট নয়?     

একই অবস্থা বাঙালি মুসলিমদের। আজ থেকে শত বছর আগে একজন বাঙালি মুসলিম কৃষক মুসলিম উম্মাহ নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও ইজ্জত যে স্বপ্ন লালন করতেন, সে স্বপ্ন দেখার সামর্থ্য কি আজকের বাঙালি মুসলিম রাজনীতিবিদ, প্রফেসর, বিচারক, আলেম, আল্লামা, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের আছে?  অধিকাংশেরই সে সামর্থ্য নাই। তারা ভেসে গেছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলারিজম ও বাম ধারার দূষিত জোয়ারে। শত বছর পূর্বে বাঙালি মুসলিমদের চেতনায় প্রবল প্লাবনটি ছিল ইসলাম ও প্যান-ইসলামী মুসলিম ভাতৃত্বের। আজকের বাঙালি মুসলিমদের তুলনায় তারা ইসলামের অনেক বেশী কাছে ছিল। সেদিন তারা খলিফাকে বাঁচাতে ভারত জুড়ে খেলাফত আন্দোলন গড়েছে, ঘরে ঘরে মুষ্টির চালের হাড়ি বসিয়েছে। সে আন্দোলনের প্রাণশক্তি ছিল বাঙালি মুসলিম।  তাদের স্বপ্নের ভূমিতে বাঙালি-অবাঙালির বিভাজন স্থান পায়নি। ফলে তাদের বিচারে কে গুজরাতী, কে পাঞ্জাবী, কে বিহারী, কে সিন্ধি এবং কে পাঠান -সেটি গুরুত্ব পায়নি। সকল ভাষা ও সকল এলাকার মুসলিমই বাঙালি মুসলিমদের কাছে সেদিন আপন গণ্য হয়েছে। ফলে করাচীতে জন্ম নেয়া গুজরাতী মহম্মদ আলী জিন্নাহকে তারা নেতা রূপে মেনে নিয়েছেন। কিন্তু আজকের বাঙালি মুসলিম কি সেটি ভাবতে পারে? সে ঈমানী সামর্থ্য ভেসে গেছে বাঙালি জাতীয়তাবাদের জোয়ারে বহু আগেই।  

 

বাঙালি মুসলিমের সর্বশ্রেষ্ঠ কর্ম ও সর্বনিকৃষ্ট অপরাধ

শতবছর পূর্বে বাঙালি মুসলিমগণ নিজেদের মনে করতো উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠি রূপে। ফলে তাদের প্রাণে তাড়না জেগেছিল দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিমদের জন্য কিছু করার। ফলে ১৯০৬ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের নেতৃস্থানীয় মুসলিম নেতাদের ঢাকায় ডেকে এনে গড়ে তোলে মুসলিমদের সর্বভারতীয় সংগঠন মুসলিম লীগ। এবং মুসলিম লীগের ঘাঁটি রূপে গড়ে তোলে অবিভক্ত বাংলাকে। তখন বাংলা ছিল সমগ্র ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ। বাংলার কলকতা ছিল ভারতের রাজধানী। বাংলার এই ঘাঁটি থেকেই পরিচালিত হয়েছে খেলাফত আন্দোলন এবং পরে কায়েদে আজম মহম্মদ আলী জিন্নাহ’র নেতৃত্বে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার শেষ লড়াইটিও সংঘটিত হয় এই বাংলাতেই। সেটি ছিল ১৯৪৬ সালের ১৬ই আগস্ট কলকাতা নগরীতে। । কংগ্রেস এবং ব্রিটিশ সরকারের সাথে সকল আলাপ-আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর কায়েদে আজম বুঝতে পারলেন, আলোচনায় আর কাজ দিবে না; এবার রাজপথে প্রত্যক্ষ লড়ায়ে নামতে হবে। ডাক দিলেন “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান‍”য়ের direct action day পালনের। ঐদিন কলকাতায় হিন্দু গুন্ডাদের হামলায় ৫ থেক ৭ হাজার মুসলিম শহীদ হয়। তাদের সে রক্তদান সেদিন বৃথা যায়নি, পাল্টে দেয় ভারতীয় কংগ্রেস ও ঔপনিবেশিক ইংরেজদের রাজনীতি। তারা মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবী সাথে সাথে মেনে নেয়। এভাবে পাকিস্তানের সৃষ্টিই হলো বাঙালি মুসলিমের হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ কৃর্তি।  

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্যান-ইসলামী চেতনার জোয়ারে ভাটা শুরু হয়। শুরু হয় বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সেক্যুলারিজমের প্রবল জোয়ার। সে জোয়ারে প্লাবিত হয় বাঙালি মুসলিমের চেতনার ভূমি। প্লাবনের পানি যেমন ক্ষেতের ফসল ভাসিয়ে নেয়, জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলারিজম ও বাম ধারার জোয়ারও তেমনি ভাসিয়ে নেয় ইসলামী মূল্যবোধ ও প্যান-ইসলামী মুসলিম ভাতৃত্ববোধ। বিলুপ্ত হয় শত বছর পূর্বে দেখা বাঙালি মুসলিমের স্বপ্ন। পাল্টে যায় বাঙালি মুসলিমের পূরনো পরিচিতি। বাঙালি মুসলিম পরিচয়ের বদলে প্রতিষ্ঠা পায় স্রেফ বাঙালি পরিচয়। পাল্টে যায় বন্ধু ও শত্রুর সংজ্ঞাও। ইসলামের পক্ষে অবস্থান নেয়া চিত্রিত হয় সাম্প্রদায়িকতা রূপে। অথচ মুসলিম হওয়ার অর্থ শুধু ইসলামের পক্ষে  অবস্থান নেয়া নয়, ইসলামের পক্ষ জিহাদ করা এবং সে জিহাদে জান ও মালের বিনিয়োগ করাও। নইলে মুনাফিক হতে হয়। চেতনার সে দূষণে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীরা গণ্য হয় বাংলাদেশীদের পরম বন্ধু রূপে; আর শত্রু রূপে গণ্য হয় ভারত থেকে প্রাণ বাঁচাতে অবাঙালি মুসলিগমগণ -বিশেষ করে বিহারী মুসলিগণ। ফলে একাত্তরে শুরু হয় অবাঙালি মুসলিম নিধন। সে সময় লক্ষাধিক বিহারী নারী, শিশু ও পুরুষকে হত্যা এবং হাজার হাজার বিহারী নারীকে ধর্ষণ করা হয়। কেড়ে নেয়া হয় তাদের ঘরবাড়ী ও দোকানপাট। জাতীয়তাবাদ, বর্ণবাদ ও বামধারার সেক্যুলার রাজনীতি যে একটি জনগোষ্ঠিকে কতটা নৃশংস, বর্বর ও বিবেকহীন করতে পারে সেটি text book ইতিহাস নির্মিত হলো এই মুসলিম বাংলায়। বাঙালি মুসলিমের সমগ্র ইতিহাসে এটিই হলো সর্বনিকৃষ্ট অপরাধ -যা ইতিহাসে যুগ যুগ বেঁচে থাকবে।

 

বিজয় তুলে দিল শত্রু শিবের

মুজিব ও তার অনুসারী বাঙালি জাতীয়তাবাদী এবং বামপন্থী রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের সবচেয়ে সাফল্যটি হলো তারা বাঙালি মুসলিমের ১৯৪৭’য়ে ও তার পূর্বে ধারণকৃত স্বপ্নের বিলুপ্তি ঘটাতে পেরেছে এবং তাদেরকে একাত্ম করতে পেরেছে কলকাতার বাঙালি হিন্দু বাবুদের স্বপ্নের সাথে। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলিমদের তারা বুঝাতে পেরেছে হিন্দু বাঙালি ও মুসলিম বাঙালির স্বপ্নের মাঝে কোন পার্থক্য নাই। এটিই হলো বাংলার মাটিতে ইসলামের শত্রুপক্ষের সবচেয়ে বড় বিজয়। এমন বিজয় ১৯০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনেও পায়নি। ব্রিটিশ কাফিরগণ মুসলিমদের ভূগোলের উপর দখল জমাতে পারলেও বাঙালি মুসলিমদের স্বপ্নের মানচিত্রের উপর এরূপ বিজয় পায়নি।। এটি ছিল তাদের বিশাল বৃদ্ধিবৃত্তিক বিজয়। এটি ছিল বাঙালি মুসলিমদের বুদ্ধিবৃত্তিক কনভার্শন (intellectional conversion)। কোন মুসলিম সন্তান হিন্দুদের শিবিরে এতো বড় বিজয় এনে দিবে -তা হিন্দুরা বিগত হাজার বছরেও ভাবতে পারিনি। মুজিব এ জন্যই ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের কাছে দেবতুল্য।  

সে স্বপ্ন বিলুপ্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিক কনভার্শনের ফলে বাঙালি মুসলিমগণ ভাবতে শুরু করে হিন্দুরা তাদের আত্মার আত্মীয় এবং একাত্তরে তারাই যুদ্ধ করে তাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। অথচ সমগ্র মুসলিম ইতিহাসে সম্ভবত এমন মিথ্যা তত্ত্ব দ্বিতীয়টি নেই যে, একজন পৌত্তলিকের স্বপ্ন ও একজন মুসলিমের স্বপ্ন এক, পৌত্তলিকেরা মুসলিমদের স্বাধীনতা এনে দেয় এবং তাদের  স্বাধীনতার সুরক্ষা দেয়। বাঙালি মুসলিমের সমগ্র ইতিহাসে এটিই হলো সবচেয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক মিথ্যাচার ও সবচেয়ে বিপর্যয়। অথচ ১৯৭১ থেকে বাংলাদেশের বিদ্যালয়ে, পাঠ্য পুস্তকে, মিডিয়া জগতে ও  সাহিত্যের অঙ্গণে সে মিথ্যাকেই প্রবল প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়েছে। সেটিকেই ইতিহাস বলা হয়েছে। বাংলাদেশের বুকে মুজিব-হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন, ইসলামের বিরুদ্ধে বিরামহীন যুদ্ধ, গণতন্ত্রের দাফন, দুর্বৃত্তির প্লাবন, ভারতের গোলামী, ১৯৭৪’য়ের দুর্ভিক্ষ, ইসলামপন্থীদের ফাঁসি, শাপলা চত্বের গণহত্যা, দেশ জুড়ে মুর্তিস্থাপন ও হিন্দুত্বায়নের জোয়ার মূলত সে বিপর্যয়েরই ফসল। অথচ ইতিহাসের বড় সত্য হলো, মুসলিম এবং অমুসলিম এক দেশ, এক জনপদ ও এক অভিন্ন জলবায়ুতে বাস করলেও তাদের স্বপ্ন কখনোই একই রূপ হয়না। এক হয়না তাদের বাঁচার এজেন্ডা ও রাজনীতি। সে ইতিহাস বিগত সাড়ে চৌদ্দশত বছরের। সে ভিন্ন স্বপ্ন, ভিন্ন এজেন্ডা ও ভিন্ন ধারার রাজনীতির কারণেই তো ১৯৪৭ সালে বাঙালি মুসলিমগণ ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তানের নির্মাণ করে।

 

যে নাশকতার তুলনা নাই

মুসিলিম বিশ্বে জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থীদের নাশকতার তুলনা নাই। সমগ্র মুসলিম উম্মাহ আজ ভুগছে তাদের নাশকতার কারণে। কোন সুনামী, ভুমিকম্প, সাইক্লোন বা মহামারি মুসলিম উম্মাহর এতো বড় ক্ষতি করতে পারিনি -যা করেছে জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থী ঘরানার ঘরের শত্রুগণ। আরর জাতীয়তাবাদের জোয়ারে ১৯১৭ সালে আরব ভূমি ২২ টুকরোয় বিভক্ত হয়ে যায়। বাঙালি জাতীয়তাবাদের জোয়ারে ১৯৭১’য়ে ভেঙ্গে যায় পাকিস্তান। অথচ আরব ভূ-খন্ড অখন্ড থাকলে সেখানে ৪০ কোটি আরব জন্ম দিতে পারতো একটি বিশ্বশক্তির। সে জনবল ও অর্থবল তাদের ছিল। এবং ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান। তারা একতাবদ্ধ থাকলে আরব ভূমিতে কখনোই প্রতিষ্ঠা পেত না ইসরাইল। খেলাফত ভেঙ্গে ইসরাইলের জন্য জায়গা করে দিয়েছে এই আরব জাতিয়তাবাদী। ফলে ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়ার ন্যায় আরব মুসলিম ভূমি বেঁচে যেত গণহত্যা ও ধ্বংস প্রক্রিয়া থেকে।  তেমনি পাকিস্তান বেঁচে থাকলে দেশটি হতে পারতো চীন ও ভারতের পর ৪২ কেটি জনসংখার বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পারমানবিক শক্তিধর দেশ। তখন কাশ্মীর, আরাকান ও ভারতের মুসলিমগণ এতোটা অসহায় এতিম হতো না। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সে রাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠি রূপে বাঙালি মুসলিমগণ পেত বিশ্ব রাজনীতিতে -বিশেষ করে বিশ্বের মুসলিম রাজনীতিতে প্রভাব ফেলার অভূতপূর্ব সুযোগ। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৮ -এই ১১ বছরের গণতান্ত্রিক পাকিস্তানে তিন জন বাঙালি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছে বাঙালি। অনেকে স্পীকার, প্রধানমন্ত্রী, নির্বাচনি কমিশনার ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছে। কায়েদে আজমের মৃত্যুর পর তাঁর আসনে যিনি বসেছেন তিনি হলেন ঢাকার খাজা নাজিমুদ্দীন। এমন সুযোগ বাঙালি মুসলিমগণ অতীতে কোন কালেই পায়নি। তারা তো নিজেদের দেশও কখনো নিজেরা শাসন করেনি। চিরকাল শাসিত হয়েছে অবাঙালিদের দ্বারা।

পাকিস্তান বেঁচে থাকলে পাকিস্তানের রাজনীতিতে আজ যেরূপ চলছে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ -তা থেকে মুক্তি দিতে পারতো বাঙালি মুসলিমগণ। উল্লেখ্য যে, ১৯৬৯ সালে স্বৈরাচারী আইয়ুব খানকে সরানোর কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানীরা। ২০২৪’য়ে আগস্ট বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সরিয়ে বাঙালি মুসলিমগণ প্রমাণ রেখেছে তাদের রাজনৈতিক সামর্থ্যের। ফলে গণতান্ত্রিক পাকিস্তানের নির্মাণের মাঝেই ছিল বাঙালি মুসলিমদের প্রকৃত কল্যাণ, সে সাথে বিশাল কল্যাণ ছিল মুসলিম উম্মাহর; পাকিস্তান ভাঙ্গার মধ্যে নয়। কিন্তু ইসলাম থেকে দূরে সরা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও বামপন্থীগণ মুসলিম উম্মাহর সে কল্যাণ চায়নি। আওয়ামী ফ্যাসিস্টগণ ব্যস্ত ছিল ভারতসেবী রাজনীতি নিয়ে। বাঙালি বামদের যুদ্ধ কখনোই পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে ছিল না, তাদের মূল যুদ্ধে ছিল ইসলাম ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। কারণ, বামধারার রাজনীতি পরিচালিত হতো হিন্দুদের দ্বারা -তাদের অনেকেই ছিল জমিদার পুত্র। তাদের ক্ষোভ, পাকিস্তান তাদের জমিদারী কেড়ে নিয়ে বাঙালি মুসলিমদের দিয়েছিল।

স্মরণীয় হলো, যেখানেই মুসলিম ভূমিকে খণ্ডিত করার জাতীয়তাবাদী, বর্ণবাদী ও বামপন্থী আয়োজন, সেখানেই অর্থ, অস্ত্র ও সৈন্য নিয়ে হাজির হয়েছে কাফিরগণ। কারণ, সেটিই হলো কাফির শত্রুদের নিজস্ব এজেন্ডা। তাই উসমানিয়া খেলাফত ভাঙ্গতে আরব জাতীয়তাবাদীদের অর্থ, অস্ত্র দিয়ে সাহায্য  করেছে এবং সেনাবাহিনী নামিয়ে যুদ্ধ করেছে ইংরেজ ও ফরাসী কাফিরগণ। আর পাকিস্তান ভাঙ্গতে বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য করেছে এবং সেনা বাহিনী নামিয়ে যুদ্ধ করেছে ভারতীয় পৌত্তলিকগণ।

 

বিপদ নতুন পরাধীনতার

বাঙালি মুসলিমদের বুঝতে হবে, যতদিন তারা ইসলামের অনুসারী রূপে থাকবে ততদিন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধও থাকবে। সেটি অবিশ্বাস করাই কুফুরি। কারণ সে রায়টি অন্য কারো নয়, বরং খোদ মহান আল্লাহতায়ারার। সে ঘোষণাটি এসেছে সুরা বাকারার ২১৭ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:

وَلَا يَزَالُونَ يُقَـٰتِلُونَكُمْ حَتَّىٰ يَرُدُّوكُمْ عَن دِينِكُمْ إِنِ ٱسْتَطَـٰعُوا۟ ۚ

 অর্থ: “এবং তোমাদের বিরুদ্ধে তারা (তোমাদের শত্রুরা) কখনোই তাদের যুদ্ধকে থামাবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে তারা তোমাদের দীন থেকে ফিরিয়ে নিতে পারবে -যদি সেটি তারা পারতো।”   

তাই মুসলিম হওয়ার অর্থ, শত্রুর পক্ষ থেকে আরোপিত সার্বক্ষণিক যুদ্ধ নিয়ে বাঁচা। তাই বাঙালি মুসলিমের বিরুদ্ধে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের যুদ্ধ ১৯৭১ থেকে শুরু হয়নি। ১৯৪৭ থেকেও নয়। বরং শুরু হয়েছিল তখন থেকেই যখন বাংলার মানুষ ইসলাম কবুল করেছিল। তাই বাঙালি মুসলিম জীবনে শত্রুর যুদ্ধ যেমন অতীতে ছিল, তেমনি এখনো আছে। এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। প্রশ্ন হলো, শত্রুর যুদ্ধ যেখানে লাগাতর, মুসলিম কি যুদ্ধহীন হতে পারে? কখনোই না। এটি মরা-বাঁচার প্রশ্ন। তাই মহান আল্লাহতায়ালা শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত ফরজ করেননি। ফরজ করেছেন যুদ্ধকেও। যার জীবনে সে যুদ্ধ নাই তাকে নবীজী মুনাফিক বলেছেন। ফলে জিহাদবিমুখ আব্দুল্লাহ বিন উবাই নবীজীর পিছনে নামাজ পড়ে এবং রোজা রেখেও মুনাফিক হওয়া থেকে বাঁচেনি। মহান আল্লাহতায়ালা যেমন শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধকে ফরজ করেছেন তেমনি ফরজ করেছেন যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়াকেও । সে নির্দেশ এসেছে সুরা আনফালের ৬০ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:

 وَأَعِدُّوا۟ لَهُم مَّا ٱسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍۢ وَمِن رِّبَاطِ ٱلْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِۦ عَدُوَّ ٱللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ  

অর্থ: “এবং তোমরা শত্রুদের হামলার প্রতিরোধে সর্ব সামর্থ্য নিয়ে প্রস্তুতি নাও; প্রস্তুত করো তোমাদের যুদ্ধের ঘোড়াকে; এভাবে তোমরা ভীত সন্ত্রস্ত করো আল্লাহর শত্রুদের এবং তোমাদের শত্রুদের।”

নবীজীর  প্রতিটি সাহাবা পবিত্র কুর’আনে ঘোষিত মহান আল্লাহতায়ালার এ পবিত্র ফরমানকে মেনে চলতেন।  মহান আল্লাহতায়ালার কোন হুকুম না মানাকে তারা কুফুরি বা বিদ্রোহ মনে করতেন। ফলে এমন কোন সাহাবা ছিলেন না যার কোন যুদ্ধের প্রস্তুতি ছিলনা এবং শত্রুর হামলা হলে যুদ্ধে যোগ দেননি। নবীজীর প্রতিটি সাহাবা ছিলেন যোদ্ধা এবং প্রতিটি মুসলিম মহল্লা ছিল সেনানীবাস। এভাবেই তো তারা সেদিন স্বাধীনতার সুরক্ষা দিয়েছেন এবং অপরাজেয় শক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। নবীজীর ইন্তেকালের পর তার গৃহে কোন অর্থ-সম্পদ পাওয়া যায়নি। কিন্তু পাওয়া গেছে অনেকগুলি তরবারি, ঢাল এবং যুদ্ধের অন্যান্য সরঞ্জাম। এ থেকে বুঝা যায় নবীজীর কতটা প্রস্তুতি ছিল যুদ্ধের জন্য। মুসলিমদের পরাজয় ও পরাধীনতার শুরু তো তখন থেকেই যখন থেকে তারা বাঁচতে শুরু করেছে মহান আল্লাহতায়ালার উপরিউক্ত নির্দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নিয়ে। আর যারা মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নিয়ে বাঁচে -তাদেরকে তিনি কখনো স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা দেন না; বরং তাদেরকে শাস্তি দেয়াই তাঁর শাশ্বত সূন্নত। বাঙালি মুসলিমগণ সে শাস্তি পেয়েছে ১৯০ বছর কাল ব্রিটিশের গোলামীর মধ্য দিয়ে। শান্তি পেয়েছে ১৬ বছর হাসিনার জেলে থেকে।  প্রশ্ন হলো আজও বাঙালি জীবনে কোথায় সে যুদ্ধের প্রস্তুতি? ফলে বিপদ এখানে ভারতের হাতে অধিকৃত হওয়ার। ২৬/১০/২০২৪      

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *