বাঙালী মুসলিমের বিরুদ্ধে ভারতের কেন এতো আক্রোশ এবং প্রতিরোধই বা কীরূপে?
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on February 28, 2021
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
দখলদারিটি ভারতের
বাংলাদেশে রাজনীতির খেলা শেখ হাসিনার হাতে নেই। রাজনীতির ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কোনকালেই চাকর-বাকরের হাতে থাকে না; মনিবরা সব সময়ই সেটি নিজ হাতে রাখে। এমনকি একাত্তরেও আওয়ামী লীগের রাজনীতি শেখ মুজিব বা দলের হাতে ছিল না। সেটিই সব সময়ই ছিল মুজিবের মনিব দিল্লির শাসকচক্রের হাতে। মুজিব রাজনীতির খেলা খেলেছে স্রেফ ভারতের শাসকচক্রের অনুগত সেবাদাস রূপে। সে কাজটি মুজিব বাংলাদেশ সৃষ্টির বহু পূর্ব থেকেই করে আসছিল এবং সেটি চালিয়ে গেছে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টে মৃত্যু অবধি। তবে মনিবরা যেহেতু তাদের খেলাটি খেলে চাকর-বাকরের সাহায্যে, ফলে তাদের কাছে চাকর-বাকরের গুরুত্ব থেকেই যায়। ভারতের কাছে মুজিবের যেমন গুরুত্ব ছিল, তেমনি গুরুত্ব রয়েছে হাছিনারও। এজন্যই চাকর-বাকরকে বাঁচিয়ে রাখাটি তাদের রাজনৈতিক কৌশল হয়ে দাঁড়ায়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যে শতভাগ সত্য ছিল -সেটি আওয়ামী লীগ নেতা ও সে মামলার অপর আসামী লে.কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) শওকত আলী এবং অন্যন্যরাও স্বীকার করেছেন। ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলনের চাপে পাকিস্তান সরকার মুজিবের বিরুদ্ধে আানা মামলা তুলে নিতে বাধ্য হলেও সে ষড়যন্ত্রে মুজিবের নির্দোষ থাকাটি প্রমাণিত হয়নি। তাছাড়া মামলা থেকে ছাড়া পেলেও ভারতের পক্ষ থেকে অর্পিত মিশন থেকে মুজিব এক ইঞ্চিও সরেনি। পাকিস্তানের জেল থেকে ফিরে শেখ মুজিব প্রথম জনসভা করেন রেস কোর্স ময়দানে -যা আজ সোহরোওয়ার্দী ময়দান। সেটি ছিলে ১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারীতে। সেদিন তিনি বলেন, “স্বাধীনতার লড়াই ১৯৭১ থেকে নয় ১৯৪৭সালে শুরু করেছিলাম।” আমি নিজ কানে সে কথা শুনেছি। অথচ তার সে লড়াইয়ে কথা তিনি জনগণকে বলেননি। তবে নিশ্চয়ই বলেছিলেন তার মনিব ভারতেকে এবং ভারতের সাথেই গোপনে কাজ করছিলেন -যা ধরা পড়ে আগরতলা ষড়যন্ত্রে। ষড়যন্ত্রের রাজনীতি কখনোই জনগণকে বলা হয়না। তাই মুজিবও বলেনিন। তবে ভারতের ষড়যন্ত্র পাকিস্তান ভাঙ্গা ও মুজিবের মৃত্যুতে শেষ হয়নি। তাই মুজিবের মৃত্যুতে ভারতের কাছে কদর বেড়েছে শেখ হাসিনার।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির ড্রাইভিং সিটে সব সময়ই ছিল দিল্লির শাসকচক্র। তাই মুজিব ১৯৭১’য়ের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানের জেলে গেলেও আওয়ামী লীগের ভারতসেবী রাজনীতির গাড়ি এক দিনের জন্যও থেমে থাকেনি। ভারত যা চেয়েছে -তাই হয়েছে। মুজিবের মুখ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ারও প্রয়োজন পড়েনি। সে গাড়ি ভারতের কাঙ্খিত লক্ষ্যের দিকে চলাটি অবিরাম অব্যাহত রেখেছে। পাকিস্তান সরকার অনেক দেরীতে হলেও সেটি বুঝেছিল। তাই ১৯৭১’য়ের সেপ্টম্বরের দিকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার প্রশ্নে রেফারেন্ডামের প্রস্তাব দেন। আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের নির্বাচনটি লড়েছে প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র তৈরীর দাবী নিয়ে। তাই সে নির্বাচনের আওযামী লীগের বিজয়টি পাকিস্তান ভাঙ্গার পক্ষে দলিল হতে পারে না। তাই স্বাধীনতার বিষয়ে একটি রিফারেন্ডামের প্রস্তাব দিয়ে ইয়াহিয়া খান দূত পাঠায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির কাছে। কিন্তু ইন্দিরা সে প্রস্তাব অস্বীকার করেন। কারণ, সোভিয়েত রাশির সামরিক ও রাজনৈতিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পেয়ে ভারতের তখন মূল লক্ষ্যটি হয় পাকিস্তান ভাঙ্গা; এবং তা থেকে পিছু হটতে রাজী ছিল না। এবং আরো লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশের মেরুদন্ড ভাঙ্গাও। এভাবে ভারত চায়, দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিমদের শক্তিহীন করতে। তেমন একটি ধ্বংসাত্মক অভিসন্ধির কারণে যুদ্ধ ও যুদ্ধ-পরবর্তীকালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় সৈন্যদের প্রবেশ ও লুটতরাজ অপরিহার্য ছিল। এমন একটি লক্ষ্য নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধের প্রস্তুতি সেপ্টম্বরের মধ্যেই বহুদূর এগিয়ে নিয়েছিল। ফলে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের রিফারেন্ডামের প্রস্তাব মেনে নিলে ভারতের সে লক্ষ্যটি কখনোই অর্জিত হতো না।
উপমহাদেশে যুদ্ধটি ভারত ও পাকিস্তানের মাঝের নয়। বরং সেটি হিন্দু ও মুসলিমের মাঝে। যখন পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠা পায়নি, সে লড়াইটি তখনও ছিল। মুসলিম শক্তি গুড়িয়ে দেয়ার প্রথম চেষ্টা করে শিবাজীর নেতৃত্বে মারাঠারা। সে কাজের জন্য শিবাজী রবীন্দ্রনাথের কাছে পূজনীয়; বাংলায় তিনি শিবাজী উৎসব শুরু করেন এবং শিবাজীর সন্মানে কবিতাও লেখেন। একই মিশন ছিল ইন্দিরা গান্ধীসহ ভারতীয় নেতাদের। ভারতের সে মিশন পূরণে সহায়তা দেয় শেখ মুজিব ও তার দল আওয়ামী লীগ। দক্ষিণ এশিয়ার বুকে মুসলিম শক্তির্ দুটি ডানা: একটি পাকিস্তান , অপরটি বাংলাদেশ। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির লক্ষ্য ছিল, উভয় ডানাকে দুর্বল করা। ফলে তার পরিকল্পনা ছিল: এক). পাকিস্তান খণ্ডিত করা ও দুর্বল করা, দুই). বাংলাদেশের অর্থনীতির বিনাশ এবং রাজনীতিতে ভারতসেবীদের অধিকৃতি। রাজনৈতিক অধিকৃতি অর্জন করে ক্ষমতার আসনে মুজিব ও তার দলকে বসিয়ে। এবং অর্থনীতিতে ধ্বস আনতে শুরু করে সমগ্র সীমান্ত জুড়ে ব্যাপক লুটপাট। সে লুটপাট সহজতর করতে সীমান্ত-বাণিজ্যের নামে বিলুপ্ত করে বাংলাদেশের সীমান্ত। অথচ সীমান্ত বিলুপ্ত হওয়ার অর্থ: অর্থনীতির তলা বিলুপ্ত হওয়া। বাংলাদেশ তাই মুজিবের শাসনামলে বিশ্বের দরবারে পরিচিতি পায় ভিক্ষার তলাহীন ঝুলি রূপে। শুধু দেশী সম্পদই নয়, বিদেশীদের দেয়া ত্রাণসামগ্রীও তখন ভারতে চলে যায়। সে পরিকল্পিত লুটপাটের ফলে দেশবাসীর উপর নেমে আসে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ -যাতে মারা যায় বহু লক্ষ বাংলাদেশী। বাংলাদেশীদের জন্য এ ছিল ভারতের বিশেষ উপহার।
কেন এতো ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে?
১৯৭১’য়ের যুদ্ধে বড় ক্ষতিটা পাকিস্তানের হয়নি। সেটি হয়েছে বাংলাদেশের। যুদ্ধের কারণে পাকিস্তান তলাহীন ভিক্ষার থলি হয়নি। সে দেশে দুর্ভিক্ষ নেমে আসেনি। লক্ষ লক্ষ মানুষ পাকিস্তানে না খেয়ে মারা যায়নি। পাকিস্তানের কোন বস্তিতে জালপড়া বাসন্তিও সৃষ্টি হয়নি। বরং একাত্তরের যুদ্ধের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলি পাকিস্তানের জন্য সদয় হয়; এবং বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিয়ে তাদের শ্রম বাজার পাকিস্তানীদের উম্মুক্ত করে দেয়। ফলে বহু লক্ষ পাকিস্তানী চাকুরীর সুযোগ পায়। অথচ দুর্ভিক্ষ এসেছে এবং জালপড়া বাসন্তি সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে। কারণ, বাংলাদেশের মাটিতে ভারত শুধু যুদ্ধই করেনি, ভয়ানক দস্যুবৃত্তিও করেছে। প্রশ্ন হলো, বাঙালী মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভারতের কেন এতো আক্রোশ? এর সুস্পষ্ট ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। ইন্দিরার অজানা ছিল না যে, পাকিস্তানের মূল স্রষ্টা বাঙালী মুসলিম। মুসলিমের প্রতিষ্ঠা লাহোর বা করাচীতে হয়নি, হয়েছে ঢাকায়। তাছাড়া ১৯৪৬ ও ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মূল যুদ্ধটি লড়া হয়েছিল অবিভক্ত বাংলার রাজধানি কলকাতায়। বিশেষ করে সেটি ১৯৪৬ সালের ২৩ আগষ্ট মুসলিম লীগের ডাইরেক্ট এ্যাকশন দিবসে। কলকাতার গড়ের মাঠের মিছিল থেকে ফেরার পথে ৫ হাজারের বেশী বাঙালী মুসলিম সেদিন হিন্দু গুন্ডাদের হাতে প্রাণ দিয়েছিল। সে রক্তের বন্যায় ভেসে য়ায় কংগ্রেসের অবিভক্ত ভারত সৃষ্টির স্বপ্ন। ১৯৪৬’য়ের নির্বাচনে শতকরা ৯৬% বাঙালী মুসলিম মুসলিম লীগের পাকিস্তান প্রকল্পের পক্ষে ভোট দেয়। অথচ পাঞ্জাব, সিন্ধু ও সীমান্ত প্রদেশের মুসলিমগণ পাকিস্তানের পক্ষে এরূপ সমর্থণ দেয়নি। ফলে বাঙালী মুসলিমদের শায়েস্তা করার নেশাটি ভারতীয় হিন্দু নেতাদের মজ্জাগত। এবং সেটিই দেখা যায় একাত্তর-পরবর্তী ভারতীয় সেনাবাহিনীর নৃশংস লুন্ঠনে।
বাঙালী মুসলিমদের মেরুদন্ড চূর্ণ করা ও শাস্তি দেয়ার ভারতীয় প্রকল্পটি ছিল বহুমুখী। সেটি শুধু সীমাহীন লুন্ঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি বানানো নয়। স্রেফ একটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ উপহার দেয়াও নয়। শুধু সীমান্ত বিলোপও নয়্। বরং সেটি ছিল, যে ঢাকা শহরে পাকিস্তানের জন্মদাতা মুসলিম লীগের জন্ম হয়েছিল সে শহরের বুকে মুসলিম ইতিহাসের সবচেয়ে কলংকজনক নাটকটি মঞ্চস্থ করা। সেটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রের হাজার হাজার সৈন্যের আত্মসমর্পণের নাটক – যা লজ্জাজনক ছিল শুধু পাকিস্তানের জন্যই নয়, সমগ্র বিশ্বের মুসলিমদের জন্যও। ১৯৭১’য়ে ১৫ আগষ্ট তারিখেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণের জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু দিল্লির শাসকচক্র চাচ্ছিল পাকিস্তানের পরাজয় ও বেইজ্জতির মহড়াটি বিশাল আকারে হোক। চাচ্ছিল, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মাঝের সৃষ্ট ঘৃনাটি গভীরতর হোক। তেমন একটি নাটকের জন্যই নির্ধারিত হয় ঢাকার রেসকোর্স ময়দান। সেখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয় একজন ইহুদীর কাছে। উল্লেখ্য, তখন ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ অব স্টাফ ছিলেন মেজর জেনারেল জে. এফ. আর. জেকব। তিনি ছিলেন একজন ইহুদী। এ দিনটিতে বাঙালি সেক্যুলার কাপালিকগণ তাদের হিন্দু কাফের বন্ধুদের সাথে মিলে আনন্দ-উৎসব করলেও বিশ্বের তাবত মুসলিমের হৃদয় সেদিন বেদনাসিক্ত হয়েছিল। দিনটি তাদের জন্য আদৌ আনন্দদায়ক হলে বাংলাদেশকে তারা সাথে সাথে স্বীকৃত দিত। কিন্তু দেয়নি।
ভারতের সে কুৎসিত প্রতিশোধ-পরায়ন মানসিকতার বর্ণনা দিয়েছেনে ভারতীয় সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার ঢাকার ‘ডেইলি স্টার’ পত্রিকায় ‘Beyond the Lines’ শিরোনামায প্রকাশিত তাঁর নিবন্ধে। মিস্টার নায়ার লিখেছেন, একাত্তরের ১৫ ডিসেম্বরই পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর কাছে অস্ত্রসমর্পণের জন্য প্রস্তুত থাকার পরও এবং সেভাবে প্রক্রিয়া শুরুর পরও বিষয়টি ঘটে ২৪ ঘণ্টা পরে এবং নজিরবিহীনভাবে খোলা মাঠে। কেন এটা ঘটেছিল? এ সম্পর্কে তখনকার ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জে. এফ. আর. জেকব সাংবাদিক মি. কুলদিপ নায়ারকে জানান, “New Delhi wanted to humiliate Islamabad by showing that Muslim country had laid down arms before a Jew.” অর্থ: “নয়া দিল্লি চাচ্ছিল ইসলামাবাদকে অপদস্ত করতে, সেটি এরূপ এক প্রদর্শনীর মাধ্যমে যে একটি মুসলিম দেশ একজন ইহুদীর কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেছে।” ঢাকা শহরটি অন্য কোন কারণে না হোক, অন্তত এই একটি মাত্র কারণে সমগ্র বিশ্বের মুসলিম ইতিহাসে কিয়ামত অবধি বেঁচে থাকবে। সেটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশের সেনাবাহিনীর বেইজ্জতি করার ভূমি রূপে। অথচ পাকিস্তানের সৃষ্টিতে বাঙালী মুসলিমদের অবদানটাই ছিল সর্বাধিক। বাংলাদেশ তার মানচিত্র পেয়েছে পাকিস্তান থেকেই। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত না হলে বাংলাদেশ হতো আরেক অধিকৃত কাশ্মীরে।
যে বেইজ্জতি মুক্তিবাহিনীর
১৯৭১’য়ের ১৬ ডিসেম্বরে মুক্তিবাহিনীর অপমানটিও কি কম ছিল? যুদ্ধ হলো বাংলাদেশের মাটিতে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনটি মুক্তিবাহিনীর সদস্যগণ নিজেদের নিজস্ব অর্জন মনে করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো,পাকিস্তানের সেনা বাহিনী কি মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে? ভারতের অর্থে ও ভারতের ক্যাম্পে ভারতের ভাত-পানি খেয়ে গড়ে উঠা মুক্তিবাহিনীকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কোন গুরুত্বই দেয়নি। তাদের কাছে তাই আত্মসমর্পণও করেনি। আত্মসমর্পণ করেছে মুক্তিবাহিনীর মনিবের কাছে। বাংলাদেশ থেকে তাদের যুদ্ধবন্দীদের ফিরিয়ে নিতেও পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশ সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনা করার প্রয়োজনও বোধ করেনি। সেটিও তারা করেছে দিল্লি সরকারর সাথে। ফলে বাংলাদেশ সরকার যে ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের যে অভিযোগ্টি এনেছিল, সে অভিযুক্তদের কেশাগ্র স্পর্শের সুযোগও পায়নি। বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের চোখের সামনে দিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী লুটে নিয়ে যায়। পাকিস্তানের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ পূর্ব পাকিস্তানী হওয়ায় সে অস্ত্র কেনায় অধিকাংশ অর্থ জোগাতে হযেছে বাংলাদেশীদের। অতএব সে অস্ত্র বাংলাদেশে রাখার বৈধ অধিকার ছিল বাংলাদেশর। কিন্তু ভারত সেটি চায়নি। মনিবের সে অস্ত্র লুটের কান্ডটি নীরবে দেখা ছাড়া আওয়ামী বাকশালী পক্ষটি কি কিছু করতে পেরেছিল? তাছাড়া কিছু করার আগ্রহও কি ছিল? ভারতীয় সরকার এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে সামান্যতম আলোচনার প্রয়োজনও বোধ করেনি। মনিবরা কি কখনো চাকর-বাকরের অনুমতি নেয়? বা তাদের সাথে পরামর্শ করে? দিল্লির শাসকদের মনভাব কি আজও ভিন্নতর? দিল্লিস্থ মনিবগণ আজও যা চাচ্ছে বাংলাদেশকে তাই দিতে হচ্ছে। সেটি দেশের অভ্যন্তর দিয়ে করিডোর হোক, তিস্তা বা পদ্মার পানি তুলে নেয়া হোক বা টিপাইমুখে বাধ নির্মাণ হোক।
ভারতের ইসলাম ও মুসলিমভীতি
পাকিস্তান ভাঙ্গা ও দেশটির মেরুদন্ড দুর্বল করার পর ভারতের লক্ষ্য এবার বাংলাদেশের মেরুদন্ড ধ্বংসিয়ে দেয়া। তাদের বিশ্বাস, বাংলাদেশ স্বাধীন ভাবে বেড়ে উঠার সুযোগ পেলে দেশটি বহু ভাষা, বহু বর্ণ ও বহু গোত্রে বিভক্ত পাকি্স্তানের চেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র রূপে বেড়ে উঠার সুযোগ পাবে। তাছাড়া এ অঞ্চলে বাংলাদেশ,পশ্চিম বাংলা, আসাম ও রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠির বসবাস। তাদের মাঝে রয়েছে ভাষাগত ও বর্ণগত সংহতি। নেই শিয়া-সূন্নীর বিভেদ। অতীতে বিশ্বশক্তি রূপে মুসলিমদের যে উত্থান ঘটেছিল -সেটি সুজলা-সুফলা বিশাল কোন সমৃদ্ধ ভূমি থেকে হয়নি। হয়েছিল জনবিরল এক নিঃস্ব মরুর বুক থেকে। এদিক দিয়ে বাংলাদেশ কম কিসে? জনবহুল মুসলিম দেশ হওয়াটাই শত্রুর নজরে পড়ার জন্য যথেষ্ঠ ছিল। তাছাড়া আজ ১৭ কোটি মুসলিমের যে বাংলাদেশ -সেটি ইখতিয়ার মহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির নেতৃত্বে ১৭ জন মুসলিম মুজাহিদের বিজয়ের দান। এখন ভারতের সীমান্তে দন্ডায়মান ১৭ জন তুর্কি মুসলিম নয়, বরং ১৭ কোটি মুসলিম। বহু কোটি মুসলিমের বাস ভারতের অভ্যন্তরেও। ভারতীয়দের মনে তাই প্রচন্ড মুসলিম-ভীতি। এমন মুসলিম ভীতির কারণে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের আচরন তাই বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়ার আশা নাই। ব্রিটিশদের হাতে বাংলা অধিকৃত হওয়ার ফলে ব্রিটিশের প্রশ্রয়ে মুসলিম ও হিন্দুদের মাঝের সম্পর্ক পরিণত হয় চাকর ও মনিবের সম্পর্কে। মনিব ছিল হিন্দু জমিদার। চাকর-বাকরকে বেঁচে থাকার অধিকার দেয়া হলেও তাকে কি কখনো স্বাধীন ভাবে বেড়ে উঠার সুযোগ দেয়া হয়? সুযোগ দেয়া হয় কি শিক্ষাদীক্ষার? বাঙালী মুসলিমদের পদানত রাখাই তখন রীতি হয়। বাঙালী মুসলিমদের পাকিস্তানের প্রয়োজনীতা বুঝাতে তাই সেদিন বেশী বক্তৃতার প্রয়োজন পড়েনি। কিন্তু বিপদের কারণ হলো, ১৯৭১’য়ের পর বাঙালী মুসলিমদের জীবনে গোলামীর সে দিন আবার ফিরে এসেছে; স্বাধীনতা এসেছে শুধু ভারতের সেবাদাসদের।
ব্রিটিশের প্রতিপালনে বাঙালী হিন্দুর জীবনে রেনেসাঁ এসেছিল। কিন্তু বাঙালী হিন্দুর সে রেনেসাঁ মুসলিমদের জীবনে প্রচন্ড দুঃখ ও নাশকতা বাড়িয়েছিল। তখন বাঙালী মুসলিমের কাঁধে চেপেছিল দুটি জোয়াল। একটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শত্রুদের। অপরটি হিন্দু জমিদার ও মহাজনদের। বাঙালী মুসলিমদের বেড়ে উঠার সে সুযোগ কেড়ে নিতেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলছে লাগাতর ষড়যন্ত্র। এবং সেটি ১৯৪৭ সালের পূর্ব থেকেই। ১৯০৫ সালে বাংলার হিন্দুগণ আন্দোলন করেছে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে। কারণ বঙ্গভঙ্গে তারা বাংলার মুসলিমদের কল্যাণ দেখেছিল। এমন কি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধেও কলকাতায় বড় বড় মিছিল করা হয়েছে। সে মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এটি এক বিস্ময়ের বিষয়। মানব ইতিহাসের আর কোথায়ও কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে? কিন্তু সেটি হয়েছে কলকাতার রাজপথে। এমন একটি কদর্য আন্দোলনের জন্য বিবেকের পচনটা যে কত গভীর হওয়া দরকার -সেটি বুঝে উঠা কি এতই কঠিন? হিন্দু মনে এমন গভীর ঘৃনা ও বিদ্বেষের কারণেই বাঙালী মুসলিমদের সংখ্যানুপাতে সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের যে ন্যায্য দাবিটি দেশবন্ধ চিত্তরঞ্জন দাশ মেনে নিয়েছিলেন -সেটিও কলকাতার হিন্দু বাবুগণ মেনে নেয়নি। এমন এক বৈরী মানসিকতা আজও বেঁচে আছে ভারতের আগ্রাসী হিন্দুদের মনে। ফলে তা অসম্ভব করেছে বাংলাদেশের সাথে ভারতের প্রতিবেশীসুলভ সুসম্পর্ক গড়ে উঠাকে।
কোন ভদ্রলোক কি প্রতিবেশীর ঘরের পাশ দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া দেয়? এটি তো প্রতিবেশীকে চোর-ডাকাত ভাবার লক্ষণ। কোন ভদ্র প্রতিবেশী দেশ কি লাশ ঝুলিয়ে রাখে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ায়? কেড়ে নেয় কি নদীর পানি? নদীমুখে দেয় কি বাঁধ? ভারত থেকে নদী দিয়ে পাথর গড়িয়ে যাতে বাংলাদেশে না পড়ে -তার জন্য কতো সাবধানতা! ভারতীয়দের মনের কুৎসিত চিত্রটি কি এরপরও গোপন থাকে? বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আজ যা কিছু ঘটছে -সেটি তো পুরনো ষড়যন্ত্রেরই ধারাবাহিকতা। তাছাড়া বিশ্বব্যাপী ইসলামের জোয়ার দেখে ইসলামের শত্রুপক্ষ তো আরো আতংকিত। বাংলাদেশে ইসলাম জোয়ার রুখা তাই ভারতীয়দের কাছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার চেয়েও গুরুত্বপুর্ণ। তাই বাংলাদেশের নির্বাচনে পুঁজি বিনিয়োগ ও নির্বাচনের ফলাফলটি পক্ষে আনা ভারতীয়দের কাছে আনবিক বোমা বা দূরপল্লার মিজহাইল বানানোর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজে ভারতীয়গণ বিশ্বস্থ মিত্র রূপে বেছে নিয়েছে আওয়ামী বাকশালীদের। একাত্তরে যাদেরকে সাথে নিয়ে ভারত পাকিস্তান ভেঙ্গেছিল,তাদেরকে সাথে নিয়েই আজ তারা বাংলাদেশের মেরুদন্ড ভাঙ্গায় নেমেছে। লক্ষ্য এখানে ইসলাম নির্মূলও। বাংলাদেশে গণতন্ত্র আজে কবরে শায়ীত; ভোট-ডাকাতেরা আজ ক্ষমতাসীন। এসবই তো ভারতীয় ষড়যন্ত্রের ফসল। চাকর-বাকরেরা কখনোই মনিবের চরিত্র নিয়ে ভাবে না। ব্যাভিচারি দুর্বৃত্ত মনিবও চাকরবাকরদের কাছে প্রনামযোগ্য মহাপ্রভু গণ্য হয়। এমন চাকরবাকরদের কাছে ফিরাউন তো ভগবান রূপে স্বীকৃতি পেয়েছে। ভারতীয়দের আগ্রাসী কদর্য চরিত্রও তাই আওয়ামী বাকশালীদের নজরে পড়েনা। তাই কোন ভারতীয় নেতা বা নেত্রী বাংলাদেশে এলে তখন চাকর-পাড়ায় মহোৎসব শুরু হয়।
লড়াই এখন ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে
বাংলাদেশের মাটিতে আজ যে লড়াই, সেটি নিছক নিরপেক্ষ নির্বাচন ও গণত্ন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই নয়। এটি দেশের স্বাধীনতার বাঁচনোর লড়াই। লড়াই এখানে ইসলাম নিয়ে বেড়ে উঠার। শত্রুর হামলাটি যে স্রেফ গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে হচ্ছে -তা নয়। হামলা হচ্ছে ইসলামের নির্মূল কল্পেও। এ যুদ্ধটি শত্রু-শক্তির চাকর-বাকরদের সাথেও নয়। মুল যুদ্ধটি বরং আওয়ামী বাকশালীদের মনিব ভারতের বিরুদ্ধে। ভারতও সেটি বুঝে। তারাও জানে একাত্তরের ন্যায় এবারের যুদ্ধটিও তাদের নিজেদেরই লড়তে হবে। তাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের বিনিয়োগটি বিশাল। ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা র’য়ে এজেন্টগণ এখন আর শুধু রাজধানির গোপন ঘাঁটিতে ঘাপটি মেরে বসে নাই। তারা প্রতিটি থানা ও প্রতিটি ইউনিয়নে পৌঁছে গেছে। বসেছে সেনানীবাসগুলোর অফিসে। হিন্দুদের বসিয়েছে পুলিশ বিভাগ, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। ভারত এখন শুধু বাকশলী চাকর-বাকরদের উপর ভরসা করছে না। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসিয়েছে নিজেদের অফিসারদের।
তাই শুধু রাজপথের মিছিল বা অবরোধে সহজে বিজয় আসবে না। স্বাধীনভাবে বাঁচার যুদ্ধটি আরো রক্তাত্ব হতে বাধ্য। স্বাধীন ভাবে বাঁচতে হলে যুদ্ধ করেই বাঁচতে হয়। স্বাধীনতার মূল্য তো এভাবেই দিতে হয়। আর এ যুদ্ধের শুরুটি আজ থেকে নয়; ১৯৪৭’য়ের পূর্ব থেকেই। বৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মিত্র খুঁজতে হয়। সে সত্যটি ১৯৪৭’য়ের পূর্বে শেরে বাংলা ফজলুল হক,খাজা নাযিমউদ্দিন,হোসেন সহরোয়ার্দি, নুরুল আমীন, আকরাম খাঁর মত বাংলার মুসলিম নেতাগণ বুঝেছিলেন। তারা সে যুদ্ধে সহযোদ্ধা পেতে অন্যান্য ভারতীয় মুসলিমদের সাথে মৈত্রী গড়েছিলেন। এবং তাদের সাথে নিয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধ লড়েছিলেন। ইসলামে এমন ঐক্য ফরজ। এটি ছিল সে কালের নেতাদের স্রেফ রাজনৈতিক প্রজ্ঞাই নয়, ঈমানী দায়ভারও। কিন্তু সে প্রজ্ঞা ও ঈমানীদায়ভার কি তাদের থেকে আশা করা যায় যারা শত্রুশক্তির চাকরবাকর হওয়াকেই জীবনের মূল লক্ষ্য বানিয়ে নেয়? কাশ্মিরের শেখ আব্দুল্লাহর মাঝে সে প্রজ্ঞা ও ঈমান ছিল না বলেই কাশ্মির স্থান পেয়েছে ভারতের পেটে। একই কারণে শেখ মুজিব বাংলাদেশকে গোলাম রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এবং আত্মসমর্পণ নিয়েই শেখ মুজিব স্বাক্ষর করেছিল ভারতের সাথে ২৫ সালা দাসচুক্তি।
স্বাধীন ভাবে বাঁচার খরচ ও বাঙালী মুসলিমের দায়ভার
স্বাধীন ভাবে বাঁচার বর্তমান যুদ্ধটি বাঙালী মুসলিমদের এখন একাই লড়তে হবে। এ লড়াই থেকে পিছুহটার সুযোগ নেই। পিছু হটলে কাশ্মির, সিকিম ও হায়দারাবাদের ন্যায় ভারতের পেটে হজম হয়ে যেতে হবে। ভারতের দাসদের শাসন থেকে মুক্তির এ লড়াইটি দীর্ঘ ও রক্তাত্ব হতে বাধ্য। কিছুদিনের হরতাল ও অবরোধে কোন দেশেই স্বাধীনতা আসেনি। বাংলাদেশেও আসবে না। লড়াই কোন দেশবাসীকে দুর্বল করে না, বরং শক্তিশালী করে। জীবতদের চেতনা তো সবল হয় শহীদের রক্তে। তখন শক্তি নিয়ে বেড়ে উঠে ঈমান। তাই যে দেশে শহীদের রক্ত নেই সে দেশে মুসলিম চেতনা মৃত। মুসলিমগণ একমাত্র তখনই বিশ্বশক্তি ছিল যখন তাদের জীবনে লাগাতর জিহাদ ছিল। নবীজী (সা;) ৭০ শতাংশ সাহাবী সে জিহাদে শহীদ হয়েছেন। দুর্বলতা ও পরাজয় আসে তো জিহাদ না থাকার কারণে। বাংলাদেশের জনগণকে ইতিহাসের এ সহজ সত্যকে অবশ্যই বুঝতে হবে।
স্বাধীনতার মূল্য বিশাল। ইসলামের আদর্শ নিয়ে বেড়ে উঠার খরচও বিশাল। চাল-ডাল,আলু-পটল ও মাছ-গোশতো অর্থ দিয়ে কেনা যায়। কিন্তু স্বাধীনতা কিনতে হয় রক্ত দিয়ে। যারা তা দিতে পারে না, স্বাধীনতা তাদের জুটে না। তাদের বাঁচতে হয় গোলামীর ঘানি টেনে টেনে। ইতিহাস সেটি বার বার শিখিয়েছে। স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচতে ও ইসলামকে বিজয়ী করতে রক্ত দান তাই শ্রেষ্ঠ ইবাদত। এ ইবাদত জান্নাতে নেয়। স্বাধীনতার খরচ তাই স্রেফ ভোট দিয়ে পরিশোধ করা যায় না। লাগাতর যুদ্ধ নিয়ে বাঁচতে হয়। কাশ্মিরে এক লাখের বেশী মানুষ প্রাণ দিয়েছে, সিরিয়ায় প্রাণ দিয়েছে বহুলক্ষ মানুষ। ৪০ লাখের বেশী উদ্বাস্তু হয়েছে। কিন্তু এখনও বিজয় জুটিনি। কিন্তু তারা যুদ্ধ ছাড়তে রাজি নয়। তাই আরো রক্ত দিচ্ছে। গাজার মাত্র ১০ লাখ মানুষ যুদ্ধ লড়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সর্ববৃহৎ সামরিক শক্তি ইসরাইলের বিরুদ্ধে। প্রশ্ন হলো,বাংলাদেশ কি গাজার চেয়েও দুর্বল? ভারত কি ইসরাইলের চেয়েও শক্তিশালী?
ব্যর্থতা আল্লাহতায়ালার সাহায্যকারি হওয়ায়
শত্রুর বিরুদ্ধে চলমান এ যুদ্ধে জিতলে হলে মহাশক্তিশালী মহান আল্লাহতায়ালাকে অবশ্যই পক্ষে আনতে হবে। এছাড়া বিজয়ের কোন পথ নাই। সম্ভাবনাও নাই। আর মহান আল্লাহতায়ালা পক্ষে থাকলে ভারত কেন,কোন বিশ্বশক্তিও কি তখন হারাতে পারে? ১৭ জন মুজাহিদের পক্ষে অবিভক্ত বাংলার ন্যায় বিশাল দেশ জয় সহজ হয়েছিল তো মহান আল্লাহতায়ালা পক্ষে থাকাতেই। যুদ্ধজয় তো আসে একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকেই। কিন্তু আজকের মুসলিমগণ আল্লাহতায়ালাকে পক্ষ আনার বদলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা জাতের কাফের শক্তিকে পক্ষে আনায় ব্যস্ত। সে চেষ্ঠায় নেমেছে এমন কি অনেক ইসলামি দলও। তারা বিজয় ছিনিয়ে আনতে চায় ছল-চাতুরি, প্রচার কৌশল ও বাহুবলে। তাদের আগ্রহ নাই মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা বাস্তবায়নে। আগ্রহ নাই আল্লাহতায়ালার দলের সদস্য হওয়ার। ফলে এসব আালেম-উলামা ও ইসলামি দলের নেতা-কর্মীদের মুখে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার কথা যেমন নেই, তেমনি নেই খেলাফত ও জিহাদের কথাও। এরা যে শুধু ভারতের ভয়ে ভীতু তা নয়, বরং আধমরা তাদের চাকর-বাকরদের ভয়েও। বিস্মযের বিষয়,এ ভীরুরা আবার জান্নাত লাভের কামনা রাখে! প্রশ্ন হলো,মহান আল্লাহতায়ালা কি তাঁর পবিত্র জান্নাতে এসব ভীরু ও কাপুরুষদের স্থান দিবেন?
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা, “ওয়া মা নাসরু ইল্লা মিন ইনদিল্লাহ,ইন্নাল্লাহা আজিজুন হাকীম।” অর্থ: “বিজয় আসে একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে,নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান।”- (সুরা আনফাল, আয়াত ১০)। অতীতে যত পরাজয় এসেছে তা তো মহান আল্লাহর এজেন্ডার সাথে গাদ্দারীর ফলে। মুসলিমগণ ব্যর্থ হয়েছে শত ভাগ বিশুদ্ধ জিহাদ গড়ে তুলতে। আর জিহাদ বিশুদ্ধ না হলে কি মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য আসে? মহান আল্লাহতায়ালাকে পক্ষে আনার পথ তো অতি সহজ। সে পথের কথা তো পবিত্র কোরআনে বার বার শোনানো হয়েছে। যারা যুদ্ধ করে একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্যে, তাদের যুদ্ধও তাঁর যুদ্ধ রূপে গণ্য হয়। তাই নির্দেশ দেয়া হয়েছে,“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারি হয়ে যাও।” –(সুরা সাফ, আয়াত ১৪)। বলা হয়েছে, “তোমরা আমাকে সাহায্য করো, আমিও তোমাদেরকে সাহায্য করবো।” নির্দেশ এসেছে জিহাদ বের হওয়ার। বলা হয়েছে, “তোমাদের প্রস্তুতি হালকা হোক অথবা ভারী হোক, বেরিযে পড়ো অভিযানে। এবং জিহাদ করো তোমাদের সম্পদ ও জান দিয়ে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা বুঝতে।” –(সুরা তাওবা, আয়াত ৪১)।
মুসলিমগণ যখন সেক্যুলার রাজনীতির নেতাকর্মী ও সেপাহীতে পরিণত হয়, তখন কি তারা মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য আশা করতে পারে? তখন তো আসে আযাব। ঈমানদারের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তাই স্রেফ নামাযী বা রোযাদার হওয়া নয়। হজ-ওমরা পালনও নয়। এমন ইবাদত তো লক্ষ লক্ষ মুনাফিকও করে। খোদ নবীজী (সা:) আমলে মুনাফিকদের সংখ্যা কি কম ছিল? ওহুদের যুদ্ধের সময় তারা ছিল প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। ঈমানদারের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, মহান আল্লাহতায়ালার সার্বক্ষণিক সাহায্যকারি হয়ে যাওয়া এবং তাঁর রাস্তায় লাগাতর জিহাদ করা। পরকালে জান্নাত লাভের এটিই তো একমাত্র রাস্তা। কি ভাবে মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্যকারি হতে হয় ও তার রাস্তায় জিহাদ করতে হয় সেটি মহান নবীজী (সাঃ) স্বহস্তে দেখিয়ে গেছেন। দেখিয়ে গেছেন নবীজী(সা:)’র মহান সাহাবাগণও। সে পথটি হলো, সমাজের প্রতি অঙ্গণে মহান আল্লাহতায়ালার নিষ্ঠাবান খলিফা রূপে দায়িত্ব পালন করা এবং তাঁর সার্বভৌমত্ব ও শরিয়ত প্রতিষ্ঠায় জিহাদরত দলের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকা। মহান আল্লাহতায়ালা তো একমাত্র এমন মুজাহিদদের সাহায্য করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যারা তাঁর দ্বীনের বিজয়ে সাহায্য করে, তিনিও তাদের সাহায্য করেন। তাদের সাথে যুদ্ধে সদা প্রস্তুত হলো তাঁর ফেরেশতা বাহিনী। মুজাহিদের বিজয় তো এভাবেই অনিবার্য হয়ে উঠে। মুসলিম জীবনের আজকের ব্যর্থতা তো এখানেই। তারা ব্যর্থ হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্যকারী হতে। আর এ ব্যর্থতা তাদের পরাজয়ই বাড়িয়ে চলেছে। প্রশ্ন হলো, এ ব্যর্থতা কি পরকালেও কোন সফলতা দিবে? পৌঁছাবে কি জান্নাতে? ১ম সংস্করণ ০৭/০৩/২০১৫; ২য় সংস্করণ ২৮/০২/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018