বাঙালী মুসলিম জীবনে গোলামী এবং রাজাকার ও মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গ
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on November 21, 2021
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
বাংলাদেশে ভারতীয় যুদ্ধ
শত্রুর দখলদারী ও যুদ্ধের নেশা কখনোই শেষ হয় না। শুধু কৌশল এবং রণাঙ্গন পাল্টায়। একাত্তরের ভারতীয় যুদ্ধটিও তাই একাত্তরে শেষ হয়নি। সে যুদ্ধ এখনো অবিরাম চলছে এবং চলতেই থাকবে। এক্ষেত্রে যাদের সামান্যতম সন্দেহ আছে তারা হয়তো ভারতীয় নাগরিক অথবা ভারতসেবী দালাল। একাত্তরে ভারতীয় এজেন্ডাটি শুধু তার চিরশত্রু পাকিস্তান ভাঙ্গা ছিল না, ছিল বাংলাদেশের মেরুদন্ড ভাঙ্গাও। ভারত তাই সেদিন এক ঢিলে দুইটি পাখি মেরেছে। এক্ষেত্রে ভারতসেবী বাঙালী জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারিস্ট ও বামপন্থীদের গুরুতর অপরাধটি হলো, তারা ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী হিন্দুদের হাতে একাত্তরে এমন এক বিশাল বিজয় তুলে দিয়েছে যা হিন্দুগণ তাদের বহু হাজার বছরের ইতিহাসে সমগ্র ভারতবর্ষের বুকে এক বারও অর্জন করতে পারিনি। তাই একাত্তরের বিজয় নিয়ে তারা যুগ যুগ ধরে উৎসব করবে। তাদের সাথে উৎসব করতে থাকবে তাদের বাঙালী সেবাদাসগণও। অপর দিক আজ থেকে শত শত বছর পরও বাংলার মুসলিম সন্তানগণ ১৯৭১’য়ের বাঙালী মুসলিমদের ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তান ভাঙ্গার যুদ্ধ করার ইতিহাস পড়ে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ধিক্কার দিবে। ভেবে অবাক হবে, যে হিন্দুত্ববাদীদের সহযোদ্ধা হয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ যে মুসলিম দেশটিকে তারা ভেঁঙ্গেছিল সে দেশটি সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক তারাই ছিল! এবং সে দেশের তিনবার প্রধানমন্ত্রী এবং দুইবার রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছিল এই বঙ্গীয় ভূমির সন্তান! দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ কি সংখ্যালঘিষ্ঠদের থেকে আলাদা হতে দেশ ভাঙ্গে? এমন নজির কি ইতিহাসে আছে? সে নজির সৃষ্টি করেছে বাঙালী মুসলিমগণ।
হিন্দুত্ববাদী ভারত কখনোই চায়নি তার নিজে দেশের দুই পাশে পারমানবিক শক্তির অধিকারী পাকিস্তানের ন্যায় অপরাজেয় কোন মুসলিম শক্তির দুটি ডানা থাকবে। মুসলিমদদের বিরুদ্ধে ভারতীয় হিন্দুদের ঘৃণা ও আক্রোশ কত তীব্র সেটি বুঝা যা সেদেশের রাজপথের মিছিলের স্লোগান শুনলে। ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের প্রধান স্লোগানটি হলো, “মুসলমানো কো লিয়ে দোস্তান; পাকিস্তান ইয়া কবরস্তান।” অর্থ: মুসলিমদের জন্য দুই স্থান: হয় পাকিস্তান অথবা কররস্তান।” বিজিপির সাবেক সভাপতি এবং ভারতের বর্তমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ ভারতীয় মুসলিমদের উঁই পোকা বলে অভিহিত করে থাকে। তাই সব সময় তাদের এজেন্ডা মুসলিম হত্যা ও মুসলিমদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা।
ভারতীয় হিন্দুগণ সব সময়ই চেয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার বুকে একমাত্র অপ্রতিদ্বন্দী দেশ হবে ভারত যার নিয়ন্ত্রণ থাকবে একমাত্র হিন্দুদের হাতে। ভারতীয় হিন্দুদের সে স্বপ্ন কখনোই পূরণ হতো না যদি না তার পিছনে বাঙালী সেক্যুলারিস্ট ও জাতীয়তাবাদী নেতাকর্মীদের সহযোগিতা না থাকতো। একাত্তরের ৯ মাস যাবত ভারতের প্রচুর নিমক পড়েছে ভারতে আশ্রয় নেয়া ইসলামী চেতনাশূণ্য সেক্যুলারিস্ট নেতাকর্মীদের পেটে। হাজার হাজার বাঙালী মুসলিম যুদ্ধ করেছে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে। বিগত ১৪ শত ৫০ বছরের মুসলিম ইতিহাস কোন কালেই কোন মুসলিম জনগোষ্ঠি এভাবে কোন হিন্দুত্ববাদী পৌত্তলিক রাষ্ট্রের সাথে আঁতাত করে কোন মুসলিম দেশ ভাঙ্গার কাজে যুদ্ধ করেনি। এরূপ কলংকিত কর্মের ইতিহাসটি একমাত্র বাঙালী মুসলিমের। কোন দেশ জয় বা বৈজ্ঞানিক আবিস্কারে না হলেও অন্তত এ কদর্য কর্মের জন্য এই বাঙালী মুসলিমগণ মুসলিম ইতিহাসে যুগ যুগ বেঁচে থাকবে। কি বিস্ময়! কি লজ্জা!
অথচ এই বাঙালী মুসলিমগণ ১৯০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে একটি সশস্ত্র যুদ্ধের মুরোদ একবারও দেখায়নি। বিনা যুদ্ধে ব্রিটেশের গোলামী শুধু মেনেই নেয়নি, বহু হাজার বাঙালী মুসলিম দেশে গিয়ে যুদ্ধ করেছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বাঁচাতে। এমন কি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে শামিল হয়েছে বাঙালীর বিখ্যাত জাতীয় চরিত্র কাজী নজরুল ইসলাম ও জেনারেল ওসমানীর মত ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের উপর ভারতের আজ যে দখলদারী তার কারণ তো দেশের ইসলামী চেতনাশূণ্য নেতাদের হিন্দুত্বসেবী এই ভূমিকা। সৌভাগ্য যে ১৯৪৭ সালে কায়েদে আযমের ন্যায় একজন অবাঙালী বাঙালী মুসলিমদের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছিল। নইলে কি আজকের বাংলাদেশ কি কখনো নির্মিত হতো? অথচ বাঙালী মুসলিমদের ব্যর্থতার এ কদর্য ইতিহাস আজ ইতিহাসের বইয়ে পড়ানো হয়না। বরং গেলানো হচ্ছে অগণিত মিথ্যা। অথচ বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ শেখে তাদের অতীত ব্যর্থতাগুলি থেকে। দেশে আজ চোরডাকাত, ভোটডাকাত ও গুম-খুন-সন্ত্রাসের নেত্রীর সামনে মাথা নুইয়ে মাননীয় বলার যে অপসংস্কৃতি –তা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে অতীতে ঔপনিবেশিক ইংরেজ ডাকাতদের মাননীয় বলার কদর্য অভ্যাস থেকে।
ভারতীয় ষড়যন্ত্র ও বাঙালী কলাবোরেটর
ভারত চেয়েছে পাকিস্তান খণ্ডিত করতে এবং পূর্ব সীমান্তে সামরিক শক্তিহীন এক গোলাম বাংলাদেশ গড়তে। সে মহা সুযোগটি পায় একাত্তরে। ভারতের কইয়ের তেলে কই ভেজেছে। খুন ঝরলো মুসলিমের আর বিজয পেল ভারত। ভারতের হিন্দুত্ববাদী নেতাদের সৌভাগ্য হলো একান্ত কলাবোরেটর রূপে কাশ্মিরে যেমন শেখ আব্দুল্লাহ ও সিকিমে লেন্দুপ দর্জির ন্যায় গোলাম পেয়েছে, তেমনি পূর্ব পাকিস্তানে পেয়েছে শেখ মুজিবকে। শেখ মুজিব ও তার অনুসারীদের সাথে কোয়ালিশন গড়ে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার সুযোগে ভারতীয় সীমাবাহিনী যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের সাথে ভারতীয় বাহিনীর সাথে যোগ দেয় পাকিস্তানের প্যান-ইসলামী চেতনার চিরশত্রু বামপন্থীগণ। ভারতীয় সরকার এবং ভারতসেবী ফ্যাসিস্টগণ মুজিবের একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচারকে যেমন শ্রেষ্ঠ গণতন্ত্র মনে করে এবং শেখ হাসিনার ২০১৮ সালের ভোট ডাকাতির নির্বাচনকে যেমন স্বচ্ছ ও বৈধ নির্বাচন গণ্য করে, তেমনি একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অনুপ্রবেশ ও লুটপাটকেও বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতের শ্রেষ্ঠ দান বলে মনে করে। এ মিথ্যাটিই হলো বাংলাদেশের ইতিহাসের অতি প্রতিষ্ঠিত ছবক।
তবে বাংলাদেশ সৃষ্টির ৫০ বছর অতিক্রান্ত হলেও ভারতের দুর্ভাবনা শেষ হয়নি। বাংলাদেশের জনগণ মুজিব-হাসিনার ন্যায় ভারতের কাছে এখনো সবাই আত্মসমর্পণ করেনি এবং অধিকাংশ বাংলাদেশী এখনো ভারত বিরোধী –সেটিই ভারতের কাছে গুরুতর দুর্ভাবনার বিষয়। মুজিবের দিন অকস্মাৎ শেষ হয়েছে। হাসিনাও যদি মুজিবের ন্যায় ইতিহাস থেকে হঠাৎ হারিয়ে যায় তবে বাংলাদেশীদের গলায় পড়ানো ভারতীয় গোলামীর রশিটির কী হবে? সে দুর্ভাবনাই ভারতীয় শাসক মহলে রাতের ঘুমে লাগাতর ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। বাংলাদেশের গলায় ভারতীয় গোলামীর রশিটা বাঁচাতেই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ভোট ডাকাতির নির্বাচনে হাসিনার নির্বাচনকে বৈধ বলেছে। বাংলাদেশের মাটিতে যেমন ফসল ফলে, তেমনি বিপুল সংখ্যায় জন্মায় বিশ্বাসঘাতক। সে বিশ্বাসঘাতকদের কারণেই ইংরেজগণ সমগ্র মুসলিম জগতের মাঝে সর্বপ্রথম উপনিবেশ স্থাপত করতে পারে বাংলায়। এবং সে গোলামী বাঙালীর জীবনে ব্রিটিশের ১৯০ স্থায়ী হয়। পশ্চিম পাকিস্তানীরা ব্রিটিশের গোলাম হয়েছিল বাঙালীর গোলাম হওয়ার ১০০ বছর পর।
গোলামীর নাশকতা
শত্রুর হাতে গোলাম হওয়ার বিপদটি ভয়াবহ। সিংহকে ২০-৩০ বছর খাঁচায় রাখলে সে তার স্বাধীন জীবনের স্বাদ ও অভ্যাসই হারিয়ে ফেলে। খাঁচার গেটে খুলে দিলেও সে বনে না ফিরে বরং স্বেচ্ছায় খাঁচায় ফিরে যায়। অপেক্ষা করে কেউ তার মুখে মাংশ তুলে দিবে। তেমনি মানুষকে গোলামী দীর্ঘকাল খাঁচায় রাখলে তার জীবনে গোলামীই অতি স্বাভাবিক মনে হয়। তখন অসহ্য লাগে স্বাধীনতা। ১৯০ বছরের ব্রিটিশের গোলামী তেমনি বাঙালী জীবনে স্বাধীনতার স্বাদ ও আকাঙ্খাই বিলুপ্ত করে দিয়েছে। বাঙালী জীবনে এটিই হলো ব্রিটিশের অধীনে ১৯০ গোলামীর সবচেয়ে বড় নাশকতা। গোলামীর এ নাশকতা থেকে বাঁচাতেই মুসলিম জীবনে শত্রুর হামলার বিরুদ্ধে জিহাদকে ফরজ করা হয়েছে। যারা সে জিহাদ থেকে দূরে থাকে তাদেরকে কপট মুসলিম বা মুনাফিক বলা হয়েছে। অন্যদের জীবনে স্বাধীনতা রাজনীতি রূপে গণ্য হলেও মুসলিম জীবনে সে লড়াই পবিত্র ইবাদত। দীর্ঘকালীর গোলামীর কুফলের কারণে পাকিস্তানী আমলের ২৩ বছরের স্বাধীনতা বাঙালী মুসলিমের জীবনে অসহ্য মনে হয়েছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের তিন বার প্রধানমন্ত্রী ও দুই বার রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছে এই বঙ্গের সন্তান।পররাষ্ট্র মন্ত্রী, সংসদের স্পীকার, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হয়েছে পূর্ব পাকিস্তান থেকে। কিন্তু সে স্বাধীনতা ও সন্মান কাপালিক বাঙালীর ভাল লাগেনি। তাই একাত্তরে ভারতের গোলামীর শিকলটি নিজ হাতে গলায় পড়িয়ে নেয়।
পূর্ব পাকিস্তানীরা ভারতের গোলামীকে স্বেচ্ছায় বরণ করে নিবে -সেটি পশ্চিম পাকিস্তানী কখনোই ভাবতেই পারেনি। তারা ভেবেছিল ভারত হামলা করলে পূর্ব পাকিস্তানী ভারতে বিরুদ্ধে যুদ্ধে লড়াই করবে। কারণ মুসলিম লীগ থেকে শুরু করে পাকিস্তান সৃষ্টিতে বাঙালী মুসলিমদের অবদানই ছিল সর্বাধিক। মুসলিম লীগ সরকার গড়তে পেরছিল একমাত্র বাংলায়। পাঞ্জাব ও সিন্ধুতে মুসলিম ক্ষমতায় আসে অনেক পরে। তাই একাত্তরে যুদ্ধের জন্য পাকিস্তান সরকারের কোন প্রস্তুতিই ছিল। ফলে সে সময় সাগে সাত কোটি জনসংখ্যার পূর্ব পাকিস্তানের তাদের সৈন্য সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫ হাজার। বিমান ছিল মাত্র এক স্কোয়ার্ডন। অথচ ভারত ৮০ লাখ মানুষের কাশ্মিরে ভারত সৈন্য রেখেছে ৬ লাখ।
গোলামীর প্রতি প্রবল নেশা থাকায় ভোট ডাকাত হাসিনার দুর্বত্তির শাসনও ১৭ কোটি বাঙালীর কাছে অতি শোভন ও সহনীয় গণ্য হয়। স্বাধীন থাকার সামান্যতম ক্ষুধা থাকলে জনগণের আচরণ কি কখনো এরূপ হতো? বাঙালী চাষাবাদ, দর্জির কাজ, মৎস উৎপাদন ও বিদেশ মানব রপ্তানী নিয়েই খুশি। স্বাধীনতা তাদের কাছে অপ্রয়োজনীয় গণ্য হয়। সেটি বুঝা যায় ভোটডাকাত হাসিনার প্রতি তাদের সহনীয় আচরণ দেখে। হংকংয়ের জনসংখ্যা মাত্র ৮০ লাখ, কিন্তু সেখানে গণতন্ত্রের দাবীতে ২০ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে কবরে পাঠানো হলেও ১০ হাজার মানুষও কখনো স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেনি। তাই বাঙালী মুসলিমের মূল সমস্যাটি রাজনীতির নয়, সেটি মূল্যবোধ, মানবতা ও সংস্কৃতির চরম অবক্ষয়ের।
গণতন্ত্রের শত্রু ভারত
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রধানতম শত্রু ভারত। ভারত জানে নির্বাচন হলে ভারতপন্থীরা কখ্নোই নির্বাচিত হবে না। তাই ভারত চায় বাংলাদেশকে গণতন্ত্র শূণ্য করতে। এভাবে চায় বাংলাদেশীদের উপর ভারতের দাসত্বকে স্থায়ী করতে। তেমন একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ভারত তাজুদ্দীনকে দিয়ে ৭ দফা, মুজিবকে দিয়ে ২৫ সালা দাসচুক্তি স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছিল। এখন চায়, হাসিনার মাধ্যমে বাংলাদেশীদের গলায় ভারতীয় গোলামীর রশিটি আরো শক্ত ভাবে বাঁধতে। চায়, বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি, রাস্তাঘাট, অর্থনীতি, নদ-নদী ও সমুদ্র বন্দরের উপর কঠোর দখলদারি। চায়, একাত্তরে যেমন ভারতের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে হাজার হাজার বাঙালী ভারতীয় সেনা বাহিনীর কমান্ডের অধীনে যুদ্ধ করেছিল এবং হত্যা করেছিল ভারতীয় আধিপত্যবাদ-বিরোধী মুসলিমদের, ভারত আজও সেটিই করুক। তাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একাত্তরের চেতনাধারি ভারতসেবী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রয়োজন একটু্ও কমেনি। বরং সে প্রয়োজন মেটাতে সরকারি প্রশ্রয়ে তাদের সংখ্যা বিপুল ভাবে বাড়ানো হয়েছে দেশের প্রতিটি অঙ্গণে। ভারত ক্রয় করে নিয়েছে দেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনী। ফলে দেশবাসীর রাজস্বে পালিত সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনী জনগণের রক্ষক নয়, বরং রক্ষক হলো ভারতসেবী বাকশালী শাসক চক্রের। ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা অফিস গড়েছে এমনকি ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে। ভারতীয় আর.এস.এস পরিণত হয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। এবং আওয়ামী লীগ পরিণত হয়েছে বিজিপিতে। ভারতীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলাই এখন অপরাধ। সে অপরাধে এরাই বুয়েটে আবরার ফাহাদকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। ভোট ডাকাতির মাধ্যমে নির্বাচিত হলে কী হবে, দিল্লির শাসক মহলে শেখ হাসিনার কদর এজন্যই এতো অধীক।
বাঁচতে হবে যুদ্ধ নিয়েই
মানব জীবনে সবচেয়ে বড় খরচটা স্বাধীন ভাবে বাঁচার। নৌকাতে ভাসা বেদেনীরা যে কোন ভাবে বাঁচে। তাদের জীবনে বাঁচাটি যে কোন জীবজন্তুর ন্যায় পানাহারে প্রাণে বাঁচার। কিন্তু পায়ের তলায় মাটি নিয়ে ইজ্জতের সাথে ও স্বাধীন ভাবে বাঁচতে হলে যুদ্ধ নিয়ে বাঁচতে হয়। ইসলামে তাই এটিকে পবিত্র ইবাদতের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো বাঙালী জীবনে সেরূপ স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচটি আদৌ গুরুত্ব পায়নি। নইলে নিজেদের ভোট ডাকাতি হয়ে গেলে কি তারা কখনো চুপ থাকতো? ভদ্র মানুষ তো পকেট থেকে দশটি টাকা তুলে নিলে চোর ধরতে ধাওয়া করে। কারণ, প্রশ্ন এখানে স্রেফ ১০ টাকার জন্য চোর ধরা নয়, বরং চুরি তথা দুর্বৃত্তির নির্মূলের বিষয়। ইসলামে এটি ফরজ ইবাদত পালনের বিষয়। এটিই তো মুসলিম জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ মিশন। এ বিষয়টি পবিত্র কুর’আনে বর্ণিত “আমারু বিল মারুফ ওয়া নেহী আনিল মুনকার” অর্থাৎ “ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং দুর্বৃত্তির নির্মূল”য়ের হুকুমের মধ্যে এসে যায়। তাই ভোটডাকাত ধরা কোন রাজনীতি নয়, সেটি দুর্বৃত্ত নির্মূলের জিহাদ। মুসলিমকে তাই শুধু নামায-রোযা পালন করলে চলে না, তাকে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও দুর্বৃত্তির নির্মূলের জিহাদেও নামতে হয়। এ দুটি কাজ ছাড়া কখনোই উচ্চতর সমাজ ও সভ্যতা নির্মিত হয় না। তাই ঈমানদারকে আন্তর্জাতিক বাজারে মানব রপ্তানীকারক, শ্রম বিক্রেতা ও দর্জির পরিচয় নিয়ে বাঁচলে চলে না, মুজাহিদের পরিচয় নিয়ে বাঁচতে হয়।
মুসলিম জীবনে মহান আল্লাহতায়ালার মুজাহিদ রূপে বেড়ে উঠা গুরুত্ব পেলে ভারত কেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ৫০টি মিত্র দেশকে পরাজিত করাও সহজ হয়ে যায়। তালেবানগণ সেটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। অথচ এমন লড়াকু প্রতিরোধের চেতনাটি শুধু ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসক চক্রের কাছে নয়, বাংলাদেশের ভারতসেবীদের কাছেও অসহ্য। এমন চেতনাধারীগণই ছিল একাত্তরের রাজাকার যারা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এবং হাজারে হাজারে প্রাণও দিয়েছে। অথচ ভারতের বিজয়ে বাঙালী কলাবোরেটরগণ তাদেরকে সেদিন হত্যাযোগ্য শত্রু গণ্য করেছে। ভারত ও ভারতসেবী বাঙালীগণ রাজাকারদের চিনতে আজও ভূল করে না। তাই একাত্তরের ন্যায় আজও যারা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরোধী, তাদের জন্ম একাত্তরের পরে হলেও তাদেরকে এই ভারতসেবীগণ রাজাকার বলে। ফলে মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারের লড়াইটি আদৌ শেষ হবার নয়। বরং এটি নিশ্চিত, যতদিন পাশে ভারত আছে, ততদিন এ যুদ্ধও বাঙালী জীবনে থাকবে। বাংলাদেশীদের বাঁচতে হবে প্রতিদিন সে যুদ্ধ নিয়েই। মেরুদণ্ড ভাঙ্গার লক্ষ্যে তারা বাংলাদেশকে খণ্ডিত করার চেষ্টাও করবে। তেমন একটি লক্ষ্য নিয়ে ভারত অতীতে চাকমা বিদ্রোহীদের নিজ ভূমিতে আশ্রয় দিয়েছে এবং গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রও দিয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ নিয়ে সাবেক আওয়ামী লীগের নেতা ও এম.পি চিত্তরঞ্জন সুতারের ন্যায় যারা স্বাধীন বঙ্গভূমি গড়ার স্বপ্ন দেখে তারাও আশ্রয় পেয়েছে ভারতে।
লড়াই দুটি চেতনার
বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রকৃত লড়াই মূলত দু’টি চেতনার। একটি চেতনা ইসলামের, অপরটি অনৈসলামের। নানা নামের ও নানা দলের নামে যে সংঘাত চলছে সেগুলি মূলত এ রণাঙ্গনে সাইড শো মাত্র। একাত্তরে রাজাকার ও মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে -এ দুটি চেতনারাই প্রবল প্রকাশ পেয়েছিল। বহু বাংলাদেশী বিষয়টি না বুঝলেও ভারত সেটি ষোলআনা বুঝে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একাত্তরে ভারতের প্রতি সেবাদাস চরিত্র নিয়ে যে প্রবল বাঙালী সেক্যুলার পক্ষটি গড়ে উঠেছিল ভারত সরকার ও ভারতভক্ত সেক্যুলার বাংলাদেশীগণ চায় সেটি চিরকাল বাঁচিয়ে রাখতে। বাঙালী জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারদের সে ভারতসেবী চেতনাটিকেই তার বলছে একাত্তরের চেতনা। বাংলাদেশের শিল্পে কোন বিনিয়োগ না করলে কি হবে, ভারত শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে এই ভারতসেবী চেতনা বাঁচাতে। ভারতের আধিপত্যবাদী রাজনীতি বাঁচানোর এ বিশাল বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে অসংখ্য রাজনৈতিক ও সামাজিক দল এবং এনিজিওকে তারা বাংলাদেশে রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও মিডিয়ার ময়দানে নামিয়েছে। সে লক্ষ্য পূরণে শত শত পত্র-পত্রিকা, বহু শত নাট্যদল, বহু সাংস্কৃতিক দল, বহু টিভি চ্যানেল এক যোগে কাজ করছে। বাংলাদেশের সীমান্তে মোতায়েনকৃত ভারতীয় সেনাদের চেয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিয়োজিত এসব এজেন্টদের সংখ্যা এজন্যই অধিক। উপরুন্ত, ভারত থেকে নিয়মিত আমদানী করা হচ্ছে বিপুল সংখ্যক সাংস্কৃতিক যোদ্ধা ও বই-পুস্তক। দেশের অভ্যন্তরে ভারতের পক্ষে মূল যুদ্ধটি লড়ছে তারাই। একাত্তরের বন্দুক যুদ্ধ থেমে গেলেও বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক যুদ্ধ এজন্যই থামেনি। যুদ্ধের প্রচণ্ড উত্তাপ তাই দেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তিতে। ভারতের একাত্তরের যু্দ্ধের এটিই হলো ধারাবাহিকতা। শত্রুর যুদ্ধ তো এভাবেই যুগ যুগ নানা স্ট্রাটেজী নিয়ে নানা রণাঙ্গনে বেঁচে থাকে। এজন্যই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে টিপাই মুখ বাঁধ, ফারাক্কা বাঁধ, সমুদ্র বন্দরে অবাধ সুযোগ ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ট্রানজিটের পক্ষে কথা বলতে কোন ভারতীয় লাগে না। ভারতের পক্ষে সে যুদ্ধ সফল ভাবে লড়ার জন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মোতায়েনকৃত অসংখ্য ট্রোজান হর্সরাই যথেষ্ট।
এজেন্ডা ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী নাশকতার
ব্যক্তির ঈমানদারী তো ইসলামের বিজয়ে ও মুসলিমের কল্যাণে সে কতটা হিতকর বা কল্যাণকর -সেটি প্রমান করায়। ঈমানদারকে তাই প্রতি মুহুর্তে বাঁচতে হয় এ ভাবনা নিয়ে, ইসলামের বিশ্বব্যাপী বিজয়ে ও মুসলিমের কল্যাণে কীভাবে সে আরো অধীক কাজে লাগতে পারে? এমন ভাবনা নিয়েই ঈমানদার ব্যক্তি জিহাদের ময়দান খোঁজে। সে ভাবনা নিয়ে তারিক বিন যিয়াদ ছুটে গিয়েছিলেন স্পেনে; এবং তার পথ ধরে স্পেন ও পর্তুগাল নিয়ে স্থাপন হয়েছিল এক বিশাল মুসলিম সাম্রাজ্য। মুহম্মদ বিন কাসিম ছুটে এসেছিল সিন্ধুতে। বিখ্যাত তুর্কী বীর ইখতিয়ার মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী ছুটে এসেছিলেন বাংলার বুকে। এভাবেই বখতিয়ার খিলজী কোটি কোটি বাঙালীর জীবনে সবচেয়ে বড় কল্যাণটি করেছিলেন। নইলে আজ যারা মুসলিম,তাদের অধিকাংশই হিন্দু থেকে যেত। এবং গরু-বাছুর, শাপ-শকুন, নদ-নদী,পাহাড়-পর্বত ও মুর্তি পূজায় জীবন কাটিয়ে নিশ্চিত জাহান্নামের যাত্রী হতো। বাঙালী মুসলিমের এত বড় কল্যাণ আর কেউই করেনি।
মুসলিম ও ইসলামের কল্যাণে কিছু করাই তো ঈমানদারের কাজ। সে কাজে সে অর্থ দেয়, শ্রম দেয় এবং প্রয়োজনে প্রাণও দেয়। অপরদিকে মুসলিম ও ইসলামের জন্য অকল্যাণকর বা অহিতকর কিছু করা তো শয়তানের কাজ। তাই কোন কর্মে নামার আগে ভাবতে হয় সে কর্মে মুসলিমের কল্যান কতটুকু? এবং সে কর্ম কি ইসলাম সিদ্ধ? প্রশ্ন হলো, ইসলাম ও মুসলিমের কোন কল্যাণের এজেন্ডা নিয়ে কি গঠিত হয়েছিল মুক্তিবাহিনী? সেটি কি ছিল ইসলাম সিদ্ধ? ইসলাম ও মুসলিমের কল্যাণ কি ভারতের গর্ভে বা ভারতের সাহায্য নিয়ে সম্ভব? প্রশ্ন হলো, ভারতের মত একটি আগ্রাসী হিন্দু দেশ মুসলিমের কল্যাণের যুদ্ধ করবে বা একটি বাহিনী গড়ে তুলবে -সেটি কি ভাবা যায়? আজ পর্যন্ত কোথায়ও কি ভারত তেমন কর্ম করেছে? ভারত যা বলে বা করে -তাতে মুসলিমের কল্যাণ থাকবে সেটি ভাবাই বেওকুপি। অথচ সেটিই বিশ্বাস করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীরা। ভারতীয় রাজনীতির মূল কথাই ভারত জুড়ে হিন্দুত্বকে বিজয়ী করা এবং মুসলিমদের শক্তিকে খর্ব করা। এজন্যই তারা যেমন মুসলিমদের জানমাল ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি করছে তেমনি মসজিদ জ্বালিয়ে দিচ্ছে। সে লক্ষ্যেই ১৯৭১ সালে তারা পাকিস্তান ভেঙ্গেছে। আর বাংলাদেশে সে পাকিস্তান ভাঙ্গা নিয়ে উৎসব করে ভারতসেবীগণ।
রাজাকারের চেতনা ও মুক্তিযোদ্ধার চেতনা
সুলতান মুহাম্মদ ঘোরীর হাতে দিল্লি বিজয়ের পর উপমহাদেশের মুসলিম ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ছিল পাকিস্তান সৃষ্টি। পাকিস্তান সৃষ্টির মধ্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্র –যা এখন বেঁচে থাকলে লোক সংখ্যাটি হতো ৪০ কোটি। এদেশটিকে খণ্ডিত করায় আগ্রহ ছিল সকল ইসলাম বিরোধী শক্তির। একাজে ইসলাম বিরোধী বাঙালীগণ একাকী ছিল না, তাদের পাশে ছিল কাফের-শাসিত দেশ ভারত। ছিল ইসলামের দুষমন সোভিয়েত রাশিয়া ও ইসরাইল। পলাশীর পরাজয়ের পর উপমহাদেশের মুসলিম ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি হয়েছে পাকিস্তানের বিভক্তির মধ্য দিয়ে। এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠি রূপে বাঙালী মুসলিমগণ বিশ্বরাজনীতিতে যে ভূমিকা রাখতে পারতো সেটিও বিনষ্ট হয়েছে। আর অপুরণীয় এ বিশাল ক্ষতির কারণ, বাঙালী সেক্যুলার নেতৃত্ব ও তাদের সৃষ্ট মুক্তিবাহিনী। এ বিভক্তির ফলে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে সামরিক ভাবে পঙ্গু এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভাবে ভারতের অধিকৃত একটি গোলাম রাষ্ট্রে। মুসলিম উম্মাহর সে বিশাল ক্ষতিটি নিয়ে প্রচণ্ড উৎসব হয় শুধু ভারতের হিন্দু শাসক মহলেই নয়, বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা মহলেও।
একাত্তরে রাজাকারদের চেতনায় প্রবল ভাবে যা কাজ করেছিল তা হলো ভারতীয় ষড়যন্ত্র ও সামরিক আগ্রাসন থেকে সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানকে বাঁচানোর প্রেরণা। ভারতীয় প্রচার মাধ্যম বিপুল সংখ্যক বাঙালীদের বিভ্রান্ত করতে পারলেও রাজাকারদের বিভ্রান্ত করতে পারিনি। ভারতের মুসলিম বিরোধী ভূমিকাকে তারা যেমন ১৯৪৭’য়ে দেখেছে, তেমনি ১৯৭১’য়ের পূর্বে এবং পরও দেখেছে। ভারতের হিন্দুত্ববাদী নেতারা নিজ দেশবাসীর কল্যাণ নিয়ে যতটা ভাবে, তার চেয়ে বেশী ভাব মুসলিমদের অকল্যাণ নিয়ে। নিজেদের কল্যাণ নিয়ে ভাবলে তো দেশটিতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ দরিদ্র জনগোষ্ঠির বাস হতো না। পাকিস্তানের জন্ম থেকে দেশটির অকল্যাণ বাড়াতে সব কিছুই তারা করেছে। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠারই শুধু বিরোধীতা করেনি, বিরোধীতা করেছে দেশটির বেঁচে থাকার বিরুদ্ধেও। সে শত্রুতা যে শুধু পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছিল তা নয়, ছিল পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্ধেও। পূর্ব পাকিস্তানীদের উপর মহবব্ত থাকলে কি তারা ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতো। দিত কি তিস্তা বাঁধ? সীমান্তে কি গুলী করতো বাংলাদেশীদের? ভারতের আগ্রাসী আচরণটি দেখা গেছে কাশ্মীর, হায়দারাবাদ, মানভাদর ও সিকিমে। একাত্তরে এমন আগ্রাসী ভারতকে মুক্তিযোদ্ধাগণ আপন রূপে বরণ করে নেয়। অথচ ভারতও যে মুসলিমদের কল্যাণে কিছু করতে পারে রাজাকারগণ সেটি কখনোই বিশ্বাস করেনি। দেশটির শত্রুসুলভ আচরণ যেমন ১৯৪৭ ও ১৯৬৫’য়ে দেখা গেছে, তেমনি দেখা গেছে ১৯৭১’য়ে। মুসলিম কল্যাণে ভারতের কিছু করার আগ্রহ থাকলে সেটির শুরু হওয়া উচিত ছিল কল্যাণকর কিছু করার মধ্য দিয়ে; যুদ্ধ, যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ও বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রের ধ্বংসের মধ্য দিয়ে নয়।
রাজাকার ও মুক্তিযোদ্ধা: কী তাদের পরিচয়?
রাজাকার শব্দটি একটি ফার্সী শব্দ। ফার্সি থেকে এসেছে উর্দুতে। রাজাকার বলতে তাদেরকে বুঝায় যারা স্বেচ্ছা-প্রণোদিত হয়ে কোন যুদ্ধ বা কল্যাণমূলক কাজে অংশ নেয়। ইংরাজীতে তাদেরকে বলা হয় ভল্যান্টেয়ার। একাত্তরে তাদের সে মিশনটি ছিল, ভারতীয় ষড়যন্ত্র ও আগ্রাসন থেকে পাকিস্তানকে বাঁচানোর। পাকিস্তানে অবিচার ছিল, বঞ্চনা ছিল, জুলুমও ছিল। রাজনৈতিক অনাচারও ছিল। তবে সমাধান যে ছিল না -তা নয়। দেহ থাকলে যেমন রোগব্যাধীও থাকে। তেমনি বৃহৎ রাষ্ট্র থাকলে তাতে নানাবিধ সমস্যাও থাকে। শরীরের ভাঙ্গা হাড্ডিটি সারাতেও সময় লাগে। রাষ্ট্রের রোগ সারাতে সময় আরো বেশী লাগে। বহু দেশে এমন সমস্যা কয়েক যুগ ধরে চলে। যেমন পাকিস্তানের বয়সের চেয়ে অধিক কাল ধরে চলছে ইংল্যান্ডে আয়ারল্যান্ডের সমস্যা। কয়েক যুগ ধরে চলছে সূদানের দারফোরের সমস্যা। ভারত কাশ্মীরের সমস্যা বিগত ৬৫ বছরেও সমাধান করতে পারেনি। তবে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির দাবীটি একাত্তরের কয় মাস আগেও কেউ মুখে আনেনি। ১৯৭০’য়ের নির্বাচনেও এটি কোন ইস্যু ছিল না। শেখ মুজিব ও তার লাখ লাখ শ্রোতা মুক্তিযুদ্ধের শুরু মাত্র কয়েক মাস আগেও নির্বাচনী জনসভাগুলোতে পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার যে অভিযোগ -সেটির অস্তিত্ব মার্চের ১৯৭১’য়ের মার্চের একমাস আগেও ছিল না। অথচ এমন একটি অভিযোগ পাশ্ববর্তী মায়ানমারে দেড় দশক ধরে চলেছে। সেদেশে ১৯৯০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী অং সাঙ সূচীর হাতে সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে তাঁকে গৃহবন্দী করে। সে অপরাধে কি কেউ দেশভাঙ্গার জন্য ভারতীয় সাহায্য নিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়েছে? বরং মায়ানমারের স্বৈরাচারী সামরিক জান্তাদের সাথে ভারতের আচরণটি লক্ষ্য করার মত। সেদেশের সামরিক জান্তার সাথে ভারত শুরু থেকেই সদ্ভাব ও সহযোগিতা বজায় রেখেছে এবং পুরাদস্তুর বাণিজ্যও চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভারত ও তার দোসররা নির্বাচন পরবর্তী সে সমস্যার সমাধানে পাকিস্তানকে আদৌ সময় দিতে রাজী ছিল না। সেটিকে বাহানা বানিয়ে ভারত দেশটির বিনাশে হাত দেয়। এটি ছিল অন্যদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অতিশয় ন্যাক্কারজনক ঘটনা। মুক্তিযোদ্ধাদের মিশনটি ছিল সে ভারতীয় এজেন্ডাকে সফল করায় সহায়তা দেয়া। সে মিশনে তারা সফলও হয়।
দেশ বাঁচলেই দেশের রাজনীতি বাঁচে। বাঁচে নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে বেড়ে উঠার স্বাধীনতাও। দেশ ক্ষুদ্রতর হলে রাজনীতির অঙ্গণও ক্ষুদ্রতর হয়। দেশ তখন বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্ব হারায়। গণতন্ত্র মারা পড়লে সেটিকে আবার জন্ম দেয়া যায়, কিন্তু দেশ হারিয়ে গেলে বা ক্ষুদ্রতর হলে শত বা হাজার বছরেও সেটিকে আর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে অআনা যায় না। শত্রুরা সে জন্যই দেশের ভূগোলে হাত দেয়। তাই একাত্তরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল চিহ্নিত শত্রুর পরিকল্পিত হামলা থেকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশটিকে বাঁচানোর দায়বদ্ধতা। এ দায়বদ্ধতাটি ছিল দেশের প্রতিটি ঈমানদারের উপর। এমন একটি চেতনার কারণে কোন ইসলামী দলের নেতাকর্মী ভারতের কোলে আশ্রয় নেয়নি, পাকিস্তান ভাঙ্গার কাজে অংশও নেয়নি। বরং একাজটি ছিল তাদের যারা আজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেক্যুলার ও ইসলামের প্রতি অঙ্গিকারহীন রূপে পরিচিত। অপর দিকে গভীর এক ঈমানী দায়বদ্ধতায় নিজ নিজ সামর্থ্য নিয়ে প্রাণপনে ময়দানে নেমে আসে হাজার হাজার আত্মত্যাগী তরুণ। পাকিস্তানের এবং সে সাথে বাংলাদেশের ইতিহাসে এরাই হলো রাজাকার। তাদের অধিকাংশই ছিল স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বহু হাজার ছিল মাদ্রাসার ছাত্র। অনেকে ছিল পাকিস্তানের অখণ্ডতায় বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সমর্থক। বাংলার হাজার বছরের মুসলিম ইতিহাসে বাংলাভাষী মানুষ নিজ রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষায় এভাবে কাফের সেনা বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে -সে ইতিহাস খুব একটা নেই। বরং ক্লাইভের ইংরেজ বাহিনী যখন বাংলা দখল করে নেয় তখন বাংলার কোন তরুণ একটি তীরও ছুড়েনি। কেউ প্রাণ দিয়েছে -সে নজিরও নেই। বরং অনেকে মুর্শিদাবাদের রাস্তার দুই পার্শ্বে হাজির হয়েছিল ব্রিটিশ বাহিনীর বিজয় উৎসব দেখতে। ফকির বিদ্রোহ ও মহান মুজাহিদ হাজী নেসার আলী তিতুমীরের প্রতিরোধ এসেছে অনেক পরে।
একাত্তরের বহু হাজার রাজাকার প্রাণ হারিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকার –এ দুই পক্ষের মাঝে সবচেয়ে বেশী প্রাণ হারিয়েছে এবং নির্যাতীত হয়েছে এই রাজাকারেরা। মুক্তিযোদ্ধাদের উপর যা কিছু হয়েছে তা লড়াইয়ের মাত্র ৯ মাস যুদ্ধ চলাকালে। কিন্তু রাজকারদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলেছে একাত্তরের পরও। বরং তাদের উপর লাগাতর হামলা হচ্ছে বিগত ৫০ বছর ধরে। সেটিকে অব্যাহত রাখারও অবিরাম চেষ্টা চলছে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকা ও ইতিহাসের বইয়ে রাজাকারদের বিরুদ্ধে শুধু গালিগালাজই নিক্ষিপ্ত হয়েছে। কিন্তু বাংলার মুসলিমদের কল্যাণে তাদেরও যে একটি রাজনৈতিক বিশ্বাস, দর্শন ও স্ট্রাটেজী ছিল -সে সত্যটিকে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। রাজাকারদের অধিকার দেয়া হয়নি তাদের চেতনা ও দর্শনের কথাগুলো লোক-সম্মুখে তুলে ধরার। অথচ সেটিও বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের ইতিহাস বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না।
রাজাকারের দর্শন ও মুক্তিযোদ্ধার দর্শন
রাজকার ও মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে মুল পার্থক্যটি ভাষা বা বর্ণের নয়। সেটি দর্শনের। রাজাকারের কাছে যেটি গুরুত্ব পেয়েছিল সেটি হলো ভাষা ও অঞ্চলিকতার উর্দ্ধে উঠে মুসলিম উম্মাহর শক্তিবৃদ্ধিতে কাজ করা। পাকিস্তান ছিল বহু ভাষাভাষি একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের প্রতীক। আজও সেটি সমগ্র মুসলিম বিশ্বের মাঝে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র। তাই সে রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার দায়ভার শুধু পাঞ্জাবী, পাঠান, সিন্ধি ও বেলুচদের উপর ছিল না। বহু বাঙালী মুসলিমও সে দায়িত্ব পালনকে ফরজ ভেবেছে। কারণ বাঙালীগণ ছিল সে রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক। শেখ মুজিব তাদের আদর্শ ছিল না। গান্ধি, নেহেরু, ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন বা প্রীতিলতাও নয়। তাদের সামনে অনুকরণীয় আদর্শ ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম -যাদের শতকরা ৬০ ভাগের অধিক শহীদ হয়েছেন ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী উম্মাহ গড়ায়। তাদের দৃষ্টিতে বাঙালী মুসলিমের মূল কল্যাণটি বাঙালী রূপে বেড়ে উঠায় নয়, বরং ইসলামের বিজয়ে অঙ্গীকারটি হৃদয়ে ধারণ করে ঈমানদার রূপে বেড়ে উঠায়। সে কল্যাণিট অনন্ত আখেরাতেও। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে হিসাব দিতে হবে ইসলাম ও মুসলিমের কল্যাণে কার কি অবদান সেটির। তাঁর মহান আদালতে কার কি ভাষা বা বর্ণ -সে প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক। তাই ভাষার নামে রাষ্ট্র গড়ায় কোন কল্যাণ নেই। ইসলামে এটি ফরজ নয়, সেটি নবীজী (সাঃ)র সূন্নতও নয়। এমন রাষ্ট্র গড়ায় প্রাণ দিলে কেউ শহীদ হয় না। শহীদ হতে হলে লড়াইটি নির্ভেজাল আল্লাহতায়ালার দ্বীনপালন ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হতে হয়। হতে হয় মুসলিম উম্মাহ ও মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষায়। অথচ মুক্তিবাহিনী যে পথ ধরেছিল সেটি ছিল মুসলিম রাষ্ট্রকে ছোট করার তথা ক্ষতি সাধনের এবং এর মূল লক্ষ্য ছিল উপমহাদেশের বুকে ভারতের ন্যায় কাফের রাষ্ট্রের আধিপত্য বাড়ানো। তাই মুক্তিবাহিনীর গঠনে, প্রশিক্ষণে ও তাদের অস্ত্রদানে ভারত এতোটা আগ্রহী ছিল। ভারত তো পাকিস্তান ভাঙ্গার এমন একটি যুদ্ধ নিজ সৈন্য, নিজ অস্ত্র ও নিজ অর্থে ১৯৪৭ সাল থেকেই লড়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। পাকিস্তান ভাঙ্গার কাজে মুক্তিবাহিনীর কোন প্রয়োজনই ছিল না। ভাষা বা বর্ণ-ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজে সাহাবায়ে কেরাম প্রাণ দান দূরে থাক, সামান্য শ্রম, সময় বা অর্থ দান করেছেন -সে প্রমাণ নেই। এরূপ ভাঙ্গার কাজ গুরুত্ব পেলে হাজার বছর আগেই অখণ্ড খেলাফত ভেঙ্গে বাংলাদেশের ন্যায় পঞ্চাশটিরও বেশী স্বাধীন রাষ্ট্র নির্মিত হতে পারতো।
একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতি ছিল মূলত দুই শিবিরে বিভক্ত। এক শিবিরে ছিল আওয়ামী লীগ, মস্কো ও চীনপন্থি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির দুই গ্রুপ (ন্যাপ), কম্যুনিষ্ট পার্টি -মূলত এ তিনটি সেক্যুলার দল। ইসলামের প্রতিষ্ঠা নিয়ে তাদের কোন অঙ্গীকার ছিল না। বরং তারা ছিল ইসলামের প্রতিপক্ষ শক্তি। পাকিস্তানকে তারা সাম্প্রদায়িক সৃষ্টি মনে করতো। ফলে তারা দেশটির ভাঙ্গার লড়ায়ে ভারতের সহযোগী হতে তাদের পথে কোন বাধা ছিল না। এ দলগুলির ছিল নিজ নিজ দলীয় ছাত্র সংগঠন। মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা ছিল এসব দলের ছাত্র সংগঠনেরর সদস্যরা। অপর শিবিরের দলগুলো হলো মুসলিম লীগের তিনটি মূল উপদল, জামায়াতে ইসলামী, নূরুল আমীন সাহেবে পাকিস্তান ডিমোক্রাটিক পার্টি (পিডিপি), নেজামে ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, কৃষম-শ্রমিক পার্ট, জমিয়তে আহলে হাদীস, এবং মাওলানা মহসিন উদ্দীন ফারাজী আন্দোলন। এছাড়াও ছিল কিছু ছোট ছোটি দল। রাজাকারগণ মূলত আসে এসব দলগুলি থেকে। রাজাকারদের মাঝে বহু নির্দলীয় ব্যক্তিও ছিল। তারা ছিল বিভিন্ন পীরের মুরীদ, ছিল মাদ্রাসার নির্দলীয় ছাত্র। তাদের সবার কাছে পাকিস্তান শুধু একটি দেশের নাম ছিল না, বরং একটি আদর্শ, দর্শন ও স্বপ্নের দেশ। এবং তারা দেশটিকে ভাবতো ভারতীয় আধিপত্য থেকে বাঁচার রক্ষাকবচ রূপে।
১৯৪৭’য়ের পূর্বে শেখ মুজিব নিজেও কলকাতায় থাকা কালে মুসলিম লীগের প্যান-ইসলামী দর্শনের স্রোতে কিছু কাল ভেসেছেন। কলকাতার রাজপথে লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তানও বলেছেন। কিন্তু ১৯৪৭’য়ের পর সে স্রোত কমে যাওয়ায় সেক্যুলার বাঙালী জাতীয়তাবাদের চড়ে তিনি আটকা পড়েন। এভাবে ছিটকে পড়েন পাকিস্তান সৃষ্টির মূল মিশন থেকে এবং যোগ দেন পাকিস্তানের শত্রু শিবিরে। বাস্তবতা হলো, যাদের মাঝে ইসলামী দর্শনের বলটি প্রবল, একমাত্র তারাই ইসলামের পক্ষে প্রবল স্রোত সৃষ্টি করে এবং সে স্রোতে শুধু নিজেরাই চলে না, অন্যদেরও ভাসিয়েও নেয়। ইসলামী দর্শন তো অমর। ফলে প্যান-ইসলামী দর্শনের উপর প্রতিষ্ঠা পাওয়ার মাত্র ২৩ বছরে পাকিস্তানের প্রয়োজনটি ফুরিয়ে যাবে -সেটি মুসলিম সন্তানেরা মেনে নেয় কি করে? ফলে পাকিস্তান ভাঙ্গার প্রজেক্ট ইসলামে অঙ্গীকারশূণ্য কম্যিউনিষ্ট, নাস্তিক, হিন্দু, বাঙালী জাতীয়তাবাদী, ভারতীয় এজেন্ট, ইহুদী এজেন্ট ও সেক্যুলারগণ মেনে নিলেও কোন রাজাকার মেনে নেয়নি। মুক্তিযু্দ্ধের চেতনাধারিদের থেকে রাজাকারদের মূল পার্থক্য বস্তুত এখানেই।
ভিন্নতা শত্রু-মিত্র চেনায়
কে শত্রু আর কে মিত্র –মানুষ সে ধারণাটি পায় তার দর্শন থেকে। তাই ইসলাম যাদেরকে শত্রু বা মিত্র রূপে চিহ্নিত করে, ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলারিজম ও সমাজতন্ত্র তা করে না। মুসলিমের শত্রু বা মিত্র আর বাঙালী জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারিস্টদের শত্রু বা মিত্র -তাই এক নয়। এজন্যই বাঙালী জাতীয়তাবাদীদের কাছে বন্ধু রূপে গৃহীত হয় নাস্তিক সোসালিস্ট, কম্যিউনিস্ট এবং পৌত্তলিকরা। ফলে তাদের কাছে গুরুত্ব পেয়েছিল ভারতের ন্যায় ইসলামের শত্রুদের সাথে কোয়ালিশন গড়াটিও। ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ভারতীয় হিন্দু প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, শিখ জেনারেল অরোরা, পারসিক জেনারেল মানেক শ’, ইহুদী জেনারেল জ্যাকব অতিশয় আপনজন মনে হয়েছে। এবং তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এমনকি নিজ দেশ, নিজ ধর্ম ও নিজ ভাষার নিরস্ত্র রাজাকার হত্যাটিও বীর-সুলভ মনে হয়েছে। ১৯৭১য়ের ১৬ই ডিসেম্বরের পর হাজার হাজার নিরস্ত্র রাজাকারকে হত্যা করা হয়েছে তো এমন এক চেতনাতেই।
প্রতারণার স্বার্থে অতি দুর্বৃত্তদেরও ফেরেশতা সাজার আয়োজন দেখা যায়। সেটি যেমন তাদের কথাবার্তা ও বক্তৃতায়, তেমনি সাজগোজে। তবে ব্যক্তির মনের গোপন অভিলাষ ও তার আসল চরিত্রটি বুঝার মোক্ষম উপায়টি হলো তার নিকটতম বন্ধুদের দিকে তাকানো। কারণ বন্ধু নির্বাচনে সবাই তার মন ও মতের অতি কাছের লোকটিকে বেছে নেয়। তাই শেখ মুজিব বা তার বাঙালী জাতীয়তাবাদী সহচরদের চরিত্র ও তাদের রাজনীতির মূল এজেন্ডা বুঝতে হলে ভারতীয় নেতাদের রাজনৈতিক চরিত্র ও এজেন্ডা বুঝতে হবে। এজন্য মুজিবের লম্বা লম্বা বক্তৃতা শোনার প্রয়োজন নেই। রাজাকারগণ তাই মুজিবকে চিনেছিল তার ঘনিষ্টতম বন্ধু ভারত সরকারের আগ্রাসী আধিপত্যবাদ ও মুসলিম নির্যাতনের ইতিহাস থেকে। একাত্তরের পর ভারতের অবাধ লুণ্ঠন, তলাহীন ভিক্ষার ঝুলির অর্থনীতি, দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষে মৃত্যু এবং অধিকৃত বাংলাদেশের চিত্রটিই তাদের সে ধারণাকে শতভাগ সঠিক প্রমাণিত করেছে। মানুষকে শুধু বিষাক্ত পোকামাকড় ও হিংস্র পশুদের চিনলে চলে না। রাজনীতির ময়দানের ভদ্রবেশী প্রতারকদেরও চিনতে হয়। নইলে দেশ অধিকৃত হয় ও তলাহীন ঝুলিতে পরিণত হয়। দেশে তখন দুর্ভিক্ষও নেমে আসে। গণতন্ত্রের বদলে তখন বাকশালী ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা পায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালী মুসলিমদের ব্যর্থতাটি এক্ষেত্রে প্রকট। সে বিশাল ব্যর্থতাটি মুক্তিযোদ্ধাদেরও। তারা যেমন শত্রুদের চিনতে পারিনি, তেমনি ব্যর্থ হয়েছে সত্যিকার বন্ধুদের চিনতেও। যে মুসলিম লীগ ১৯৪৭’য়ে অখণ্ড ভারত ভেঙ্গে স্বাধীনতা এনে দিল তাদেরকে বরং শত্রু মনে করেছে। পাশে আশ্রয় নেয়া অবাঙালী মুসলিমদের ভাই রূপে গ্রহণ করতেও ব্যর্থ হয়েছে। তারা বিভাজন গড়েছে স্রেফ ভাষার ভিত্তিতে। অবিঙালী মুসলিমদের বিরুদ্ধে ছড়ানো হয়েছে প্রচণ্ড ঘৃণাবোধে। অথচ এমন বিভক্তি ও ঘৃণাবোধ ইসলামে হারাম। এ মহাপাপ আযাব ডেকে আনে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানে ৬৫ লাখ ভারতীয় আশ্রয় পেয়েছিল। আশীর দশকে সোভিয়েত আগ্রাসনের পর পাকিস্তানে আশ্রয় পায় ৩০ লাখ আফগান। ক্ষুদ্র রাষ্ট্র লেবাননের জনসংখ্যার প্রায অর্ধেক হলো রিফিউজী। অথচ বাংলাদেশে কয়েক লাখ বিহারীর বসবাসের স্থান হয় না। তাদের ঘরবাড়ি কেড়ে নিয়ে তাদেরকে বস্তিতে পাঠানো হয়। শুরুতে সাগরে ভাসমান প্রাণ বাঁচাতে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমগণও বাংলাদেশের উপকূলে নৌকা ভেড়ানোর অনুমতি দেয়নি হাসিনা সরকার। পরে দিতে বাধ্য হয়েছে স্রেফ আন্তর্জাতিক চাপে, মানবতার গুণে নয়। সেক্যুলার বাঙালীগণ মানবিক গুণাবলি নিয়ে বেড়ে উঠায় যে কতটা ব্যর্থ –সেটি বুঝতে এর পরও কি কিছু বাঁকি থাকে?
রাজাকারের স্বপ্ন ও মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্ন
সবাই যেমন জীবনে একই লক্ষ্য নিয়ে বাঁচে না, তেমনি একই রূপ স্বপ্নও দেখে না। মানুষে মানুষে স্বপ্নের জগত জুড়ে রয়েছে বিশাল পার্থক্য। সে বিশাল পার্থক্যটি ছিল রাজাকার ও মুক্তিযোদ্ধার মাঝেও। রাজাকারের চেতনা-রাজ্যের সবটুকু জুড়ে যে বিরাট স্বপ্ন ছিল, সেটি বিশ্বশক্তি রূপে মুসলিম উম্মাহর উত্থানের। স্বপ্নটি ইসলামের পূর্ণ প্রতিষ্ঠার। সে জন্যই তারা বিশ্বের সর্ব বৃহৎ রাষ্ট্র পাকিস্তানকে ভারতীয় হামলা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। দেহে প্রাণ থাকা যেমন জীবনের লক্ষণ, তেমনি এরূপ শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিক রূপে বেড়ে উঠা বা বাঁচার স্বপ্নটিও ঈমানের লক্ষণ। আর প্রকৃত ঈমানদারের জীবনে শুধু এ স্বপ্নটুকুই থাকে না, সে স্বপ্নের বাস্তবায়নে প্রাণপন প্রচেষ্টাও থাকে। এজন্যই তো ঈমানদার মাত্রই আল্লাহর পথের রাজাকার তথা স্বেচ্ছাসেবী সৈনিক। এ কাজে তাকে ময়দানে নামতে কেউ বাধ্য করে না, বরং তারা নামে নিজ ঈমানী দায়বদ্ধতায়। আল্লাহর দ্বীনের এমন রাজাকার হলো প্রতিযুগের মুজাহিদগণ। রাজাকার ছিলেন তারাও যারা সাতচল্লিশে “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান” ধ্বণিতে কংগ্রেস ও হিন্দুমহাসভার গুণ্ডাদের বিরুদ্ধে রাজপথে লড়েছেন। রাজাকার তাদেরও বলা হতো যারা ভারতের সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুসলিম শাসনাধীন হায়দারাবাদের স্বাধীনতা বাঁচাতে যুদ্ধ লড়েছিল।
একাত্তরের রাজাকারগণ তাই মুসলিম ইতিহাসের একমাত্র রাজাকার নন। অতীতের ন্যায় এমন রাজাকার আজও অসংখ্য। এরাই আল্লাহর দ্বীনের বিজয় নিয়ে আজও স্বপ্ন দেখে। ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আজও তারা প্রতিরোধে নামে। এ সত্যটুকু বুঝতে শয়তান ভুল করে না। ভুল করে না শয়তানী শক্তির বাংলাদেশী সেবাদাসেরাও। তাই বাংলাদেশের রাজপথে যখন দাড়ি-টুপিধারীদের রাজাকার বলে লগি-বৈঠা নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তাতে বিস্ময়ের কিছু থাকে না। বিস্ময় তখনও জাগে না, যখন একাত্তরের পরে জন্ম নেয়া ইসলামী চেতনাধারী যুবককে রাজাকার বলে হত্যা করা হয়। বিস্ময় জাগে না, যখন একাত্তরে যুদ্ধে অংশ নেয়নি আশি বছরের এক বৃদ্ধ আলেমকে রাজাকার বলা হয় এবং তাকে হত্যা করা হয়। রাজাকারের সংজ্ঞা নিয়ে জ্ঞানশূণ্য ও চিন্তাশূণ্য মুসলিমদের সংশয় থাকতে পারে, কিন্তু সে সংশয় শয়তানের নেই। শয়তানের অনুসারিদেরও নেই। তাই রাজাকার চিনতে তারা ভুল করে না। শয়তানী শক্তির এজেন্টগণ যখন দেশের মাদ্রাসা-মসজিদ গুলোকে রাজাকার উৎপাদনের কারখানা বলে তখন তারা ভুল বলে না। কারণ এগুলোই লড়াকু মুজাহিদ তৈরীর কাজে মহান আল্লাহতায়ালার ইনস্টিটিউশন।
রক্ষা নাই যে বিচার থেকে
নবীজী (সা:)’র হাদীস, “গুনাহ বা ক্ষতিকর কাজ হতে দেখলে ঈমানদারের দায়িত্ব হলো সে কাজ শক্তির বলে রুখা। শক্তি না থাকলে মুখের কথা দিয়ে প্রতিবাদ করা। আর সেটিও না থাকলে মন থেকে সেটিকে ঘৃণা করা। আর এ ঘৃণাটুকুও না থাকলে বুঝতে হবে, তার অন্তরে শরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও নেই”। একটি মুসলিম দেশকে খন্ডিত করার চেয়ে জঘন্য খারাপ কাজ আর কি হতে পারে? মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে এর চেয়ে বড় ক্ষতিকর কাজই বা আর কি হতে পারে? দেশ খন্ডিত হওয়ায় যে দূর্বলতা বাড়ে, সেটি কি মাথাপিছু আয়ু বাড়িয়ে দূর করা যায়? কুয়েত, আবুধাবি, কাতার, সৌদি আরবের মাথাপিছু আয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও অধিক। কিন্তু তাতে কি শক্তি বেড়েছে? বেড়েছে কি প্রতিরক্ষার সামর্থ্য। শত্রুপক্ষ যখন কোন দেশকে দূর্বল করতে চায় তখন তারা সে দেশটির মানচিত্রে হাত দেয়। ভারত সেটি করেছিল পাকিস্তানের বিরদ্ধে। কোন ঈমানদার কি কাফের শক্তির হাতে মুসলিম উম্মাহর দেহ এভাবে টুকরো টুকরো হতে দেখে খুশি হতে পারে? খুশি হলে তার মনে যে শরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও নাই -তা নিয়ে কি সন্দেহ থাকে? রাজাকারগণও তাই দর্শকের ভূমিকায় না থেকে ময়দানে নেমেছে। দেশের ভূগোলের উপর হামলা রুখতে সাহাবায়ে কেরাম জিহাদ করেছেন, দলে দলে শহীদও হয়েছেন। মুসলিম উম্মাহর অপুরণীয় ক্ষতি করতেই আরব বিশ্বকে খন্ডিত করেছে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তিবর্গ। অখণ্ড আরব ভূগোলকে ভেঙ্গে তারা বাইশ টুকরায় বিভক্ত করেছে। আরবদের এভাবে দূর্বল ও নির্জীব করার পরই প্রতিষ্ঠা করেছে ইসরাইল।
আল্লাহর কাছে প্রিয় এবং মুসলিমের বন্ধু হতে হলে তো তাকে মুসলিম ও ইসলামেরও বন্ধু হতে হয়। মুসলিম দেশের অখণ্ডতার হেফাজতে কাফেরদের বিরুদ্ধেও বীরদর্পে রুখে দাঁড়াতে হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহর তায়ালার ঘোষণা,“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারি হয়ে যাও।..” আল্লাহর সাহায্যকারি হওয়ার অর্থ শুধু আমিও মুসলমান –এ টুকু বলা নয়। স্রেফ কিছু ইবাদত-বন্দেগী করাও নয়। আল্লাহপাক তার বান্দাহ থেকে বৃহ্ত্তর কিছু চান। সেটি ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও মুসলিম ভূমির প্রতিরক্ষায় অঙ্গীকার ও কোরবানী। এটিই ছিল রাজাকারের জীবনে মিশন। তারা ফেরেশতা ছিল না, তাদের জীবনেও বহু ভূল-ত্রুটি ছিল। কিন্তু একাত্তরে তাদের জীবনের পাকিস্তান বাঁচানোর মিশনটি পুরাপুরি ইসলামী ছিল। অপরদিকে মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারিরা ভারতের দেয়া রোডম্যাপকেই নিজেদের রাজনীতির রোডম্যাপে পরিণত করেছে। মুসলিম ভূমির প্রতিরক্ষার জন্য কিছু করার বদলে তারা সেটিকে ক্ষুদ্রতর করেছে। এভাবে প্রচণ্ড খুশি ও শক্তি বাড়িয়েছে কাফেরদের। ভারত আজ যে বিশ্বশক্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখে তার কারণ তো একাত্তরে তাদের বিজয়। কথা হলো, কাফেরদের বন্ধু হয়ে এবং তাদের মুখে হাঁসি বাড়িয়ে কি মহান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রিয় হওয়া যায়? ফলে ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থের বিরুদ্ধে তাদের কৃত নৃশংস অপরাধের বিচার বাংলাদেশের মাটিতে না হলেও মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে যে হবেই -তা নিয়ে কি কোন সন্দেহ আছে? তাদের সেদিন দাঁড়াতে হবে নরেন্দ্র মোদী এবং ইন্দিরা গান্ধির ন্যায় ভারতীয় কাফেরদের সাথে –যেমন তারা দাঁড়িয়েছিল একাত্তরে এবং দাঁড়াচ্ছে আজ। নবীজী (সা:)’র হাদীসঃ এ দুনিয়ায় যাদের সাথে বন্ধুত্ব, পরকালে তাদের স্থান হবে তাদের সাথেই। ১ম সংস্করণ ৪/১১/২০১৯; ২য় সংস্করণ ২১/১১/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018