বিবিধ প্রসঙ্গ-৭
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on March 14, 2020
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
১. ভারতে হিন্দুত্ব শাসনঃ এ কোন অসভ্যতা!
কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা ১২ই মার্চ এমন এক বিষয়ে সম্পাদকীয় ছেপেছে যা পত্রিকায় না পড়লে বিশ্বাস করাই কঠিন হতো। বিষয়টি বেছে বেছে মুসলিমদের শাস্তি দেয়ার আইন। আধুনিক যুগে এমন আইন কোন দেশে থাকতে পারে -সেটি কল্পনা্ করাই কঠিন। ভারতের বুকে কীরূপ অসভ্য ও নৃশংস শাসন চেপে বসেছে -এ হলো তারই এক করুণ চিত্র। ভয়ানক দুশ্চিন্তার কারণ হলো, ভারতের ২০ কোটি অসহায় মুসলিম এ অসভ্য ও নৃশংস শাসক ও তাদের দলীয় গুন্ডাদের হাতে জিম্মি। তারা যে কোন সভ্য দেশে সরকারের কাজ হয়, অন্যায়ের নির্মূল এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। কিন্তু ভারতে হচ্ছে এর সম্পূর্ণ বিপরীত। অসভ্যতার অতি নৃশংস চিত্রটি ২০০২ সালে দেখা গিয়েছিল গুজরাতে। তখন গুজরাত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রি ছিল আজকের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নরেন্দ্র মোদি মুসলিম গণহত্যার সে গুজরাতি মডেলকেই সম্প্রতি প্রতিষ্ঠা দিল রাজধানী দিল্লিতে।
দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা বিজিপি সরকারের সে অসভ্য চিত্রটি তুলে ধরেছে “বিষম ব্যবস্থা” শিরোনামায়। সেটি সরকারের একটি আইন নিয়ে। সে আইনী বিধানটি হলো, যদি কোন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন, ও শিখ ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে বেড়াতে এসে ভিসায় প্রদত্ত মেয়াদের চেয়ে অধীক কাল অপেক্ষা করে তবে তাকে ১০০ রুপি জরিয়ানা দিতে হবে। কিন্তু সেটি যদি কোন মুসলিমের পক্ষ থেকে হয় তবে তাকে ২১ হাজার রুপি জরিয়ানা দিতে হবে। অর্থাৎ মুসলিম ব্যক্তির জরিমানাটি হবে ২০০ গুণ। ধর্মের নামে এ এক বিস্ময়কর বৈষম্য!
এটি কি কোন সভ্য দেশের আচরণ? পাকিস্তান ভারতের ন্যায় নিজেকে ধর্ম নিরেপক্ষ রাষ্ট্র বলে দাবী করে না। শাসতান্ত্রিক ভাবে দেশটি শুরু থেকেই ইসলামি প্রজাতন্ত্র। সেখানেও নানা দেশের নানা ধর্মের মানুষ বেড়াতে আসে। ভিসায় প্রদত্ত মেয়াদের চেয়ে বেশী কাল অপেক্ষা করে –এমন ঘটনা সেখানেও বিরল নয়। কিন্তু দেশটি আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ধর্মের ভিত্তিতে ভেদাভেদ করে –এমন অভিযোগ এমন কি দেশটির শত্রুগণও এ অবধি অভিযোগ তোলেনি। আইন ভঙ্গ হলে সে দেশে সবাইকে একই জরিমানা দিতে হয়। অপর দিকে ভারতীয়রা গর্ব করে ধর্মনিরেপেক্ষতার দাবী নিয়ে। প্রশ্ন হলো, আইন প্রয়োগে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে এরূপ পক্ষপাত-দুষ্টতা কি ধর্মনিরেপেক্ষতা? ধর্মনিরেপেক্ষতার নামে ভারতে কীরূপ অসভ্য জালিয়াতি চলছে –আনন্দবাজারের সম্পাদকীয় হলো তারই নজির।
যারা আইন প্রণয়ন করে তারা গাঁজাসেবী বা মাতাল নয়। তারা উচ্চ শিক্ষিত। তাদের মনে মুসলিমদের বিরুদ্ধে পর্বত-সমান ঘৃণা না থাকলে কি এমন আইন তৈরী করতে পারে? সে ঘৃণাটি যেমন দাঙ্গার নামে গণহত্যাতে প্রকাশ পায়, তেমনি প্রকাশ পায় আইনের প্রয়োগে। ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে এমন ঘৃণা যে শুধু সে দেশের আইন-প্রণেতা বিজিপি সাংসদদের মাঝেই বিরাজ করছে -তা নয়। সে বিষাক্ত ঘৃণাটি দেখা যায় ভারতীয় পুলিশ ও ভারতের উচ্চ আদালতের বিচারকদের মাঝেও। দেখা যায় হিন্দু মিডিয়া কর্মীদের মাঝেও। তাই কোথাও মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, গণধর্ষণ ও লুটপাট শুরু হলে পুলিশকে সে অপরাধ দমনে দ্রুত ময়দানে নামতে দেখা যায় না। ময়দানে নামলেও তারা অপরাধ থামায় না। বরং দেখা যায় হিন্দু গুণ্ডাদের সাথে মুসলিমদের বিরুদ্ধে পাথর ছুড়তে বা লাঠি দিয়ে পিঠাতে। সেটি প্রামাণ্য চিত্র দেখা গেছে সোসাল মিডিয়াতে ছড়িয়া পড়া ভিডিওগুলোতে। এমন গভীর ঘৃণা নিয়েই দিল্লির পুলিশগণ মুসলিম গণহত্যা এবং মুসলিমদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে জ্বালাও-পোড়াওয়ের পর্বটি তিন দিন ধরে চলতে দিয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে পুলিশ কিছু সংখ্যক মুসলিম যুবককে রাস্তায় ফেলে পিটাচ্ছে এবং তাদেরকে বলছে জয় শ্রীরাম বলতে। এদের মধ্যে একজনের মৃত্যু ঘটেছে। এমন পুলিশকেই বাহবা দিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। উল্লেখ্য হলো এই অমিত শাহের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ উঠেছিল ২০০২ সালে গুজরাতে মুসলিম বিরোধী গণহত্যায় জড়িত থাকা নেয়। দিল্লির পুলিশ যেহেতু অমিত শাহের অধীন, মুসলিম গণহত্যার সে গুজরাতী মডেলেরই প্রয়োগ হলো এবাব দিল্লিতে। সেটিই লিখেছে কলকাতার “দি টেলিগ্রাফ” পত্রিকাটি।
পুলিশ ও বিজিপির গুন্ডাদের ন্যায় ভারতের উচ্চ-আদালতের বিচারকদের মুসলিম বিদ্বেষ কি কম? হিন্দু গুণ্ডাগণ কোন মসজিদ ভাঙ্গলে ভারতের উচ্চ-আদালতের বিচারকদের কাছে সেটি কোন অপরাধ গণ্য হয় না। সে গুন্ডামীর জন্য কারো কোন শাস্তি হয় না। বরং আদালতের কাজ হয়, ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের জমিতে মন্দির নির্মাণের পক্ষে রায় দেয়া। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এমন রায়ই দিয়েছে্ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘৃণ্য অপরাধকে জায়েজ করতে। বিজিপি’র নেতাগণ যখন প্রকাশ্যে মুসলিমদের উদ্দেশ্যে “গোলি মারো শালেকো” বলে গুন্ডাদের উস্কানী দেয় -সেটিও বিচারকদের কাছে অপরাধ রূপে গণ্য হয় না। দিল্লিত ৯ মসজিদের উপর হামলা হয়েছে, মসিজদের মিনারে হনুমান অংকিত গেরুয়া পতাকা লাগিয়ে অপবিত্র করা হয়েছে -কিন্তু সে অপরাধে পুলিশ কাউকে ধরেনি। বরং নিরব দাঁড়িয়ে দেখেছে। তাই আদালত থেকে কারো কোন শাস্তিও হয়নি। আইনের প্রয়োগ ও জানমালের নিরপত্তা দিতে ভারত যে কতটা ব্যর্থ রাষ্ট্র -এ হলো তারই প্রমাণ।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা যে কতটা সঠিক ছিল এবং ৪০ কোটি মুসলিমের জীবনে দেশটি যে কীরূপ বিশাল কল্যাণ দিয়েছে -সেটি বুঝার জন্য ভারতীয় হিন্দুদের এরূপ অসভ্য শাসনই যথেষ্ট। একমাত্র ভারতের সেবাদাসগণই পাকিস্তান সৃষ্টির অপরিসীম কল্যাণকে অস্বীকার করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশী জনগণের বিপদ হলো, হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের প্রতি নতজানু দাসত্ব নিয়ে বাঁচতে চায় এমন অসভ্য মুসলিম বিদ্বেষীদের সংখ্যাটি ভারতের ন্যায় বাংলাদেশেও বিশাল। বরং সত্য তো এটাই, বাংলাদেশে শাসন চলছে এরূপ নৃশংস ফ্যাসিস্টদেরই। এবং সে শাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এবং বেঁচে আছে ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের সাহায্য নিয়েই। চাকর-বাকর ও দাসী-বাঁদীর মাঝে দুর্বৃত্ত মনিবের খুন-খারবাী ও ধর্ষণের ন্যায় অপরাধের নিন্দার সাহস থাকে না। তারা বরং সে অপরাধে জোগালের কাজ করে। সে ভূমিকাটিই পালন করছে ভারতপালিত শেখ হাসিনা। তাই ভারতে মুসলিম হত্যার নিন্দা না করে শেখ হাসিনা সে দেশের অসভ্য ও দুর্বৃত্ত নরেন্দ্র মোদির প্রতি বন্ধুত্বের হাত প্রসার করেছে।
২. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি সবচেয়ে অবহেলিত
মানব জীবনে যে কাজটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি অর্থ-সম্পদের বৃদ্ধি নয়। নাম-যশ বা প্রভাব-প্রতিপত্তির বৃদ্ধিও নয়। সেটি হলো ঈমান-বৃদ্ধি। একমাত্র ঈমান বাড়লেই মুসলিম রূপে বেড়ে উঠাটি সম্ভব হয়। একমাত্র তখনই শান্তি আসে যেমন এ দুনিয়ায়, তেমনি সম্ভব হয় জান্নাত লাভ। এমন মানুষের সংখ্যা বাড়লে শান্তি ও কল্যাণ কর্মের জোয়ার সৃষ্টি হয় রাষ্ট্রীয় জীবনে। তখন পরস্পরে কলহ-বিবাদ ও হানাহানিতে লিপ্ত না হয়ে মুসলিমগণ ভাতৃ-সুলভ সীসাঢালা দেয়ালের জন্ম দেয়। তখন বাড়ে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে জিহাদে জান-মালের বিনিয়োগ। তখন নির্মিত হয় শক্তিশালী সভ্য রাষ্ট্র, আসে উপর্যোপরি বিজয়। তবে ঈমানের বৃদ্ধি ভাত-মাছ বা অর্থসম্পদে বাড়ে না। সে জন্য অপরিহার্য হলো কোর’আনের জ্ঞান। খাদ্য-পানীয় ছাড়া যেমন দেহ পুষ্টি পায় না, তেমনি কোর’আনের জ্ঞান ছাড়া পুষ্টি পায় না ঈমান। নবীজী (সাঃ) কোর’আনী জ্ঞানের মহাজোয়ার আনতে পেরেছিলেন বলেই সে সময় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঈমানদার গড়তে পেরেছিলেন। মহা আল্লাহতায়ালা তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের মাঝেও গর্ব করতেন। অথচ আজ সে কোর’আনী জ্ঞান তলানীতে ঠেকেছে। ফলে হাজার হাজর স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার পরও মুসলিমদের মাঝে ঈমাদারি বাড়ছে না। বরং দ্রুত বাড়ছে বেঈমানী।
মুসলিম উম্মাহর মাঝে দুর্বৃত্তি, বিভক্তি ও পরাজয় দেখে নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়, ঈমান বৃদ্ধির কাজটি হয়নি। এর অর্থ, যথার্থ ভাবে হয়নি কোর’আনী জ্ঞানার্জনের কাজ। অভাব এখানে লোকবল, অর্থবল বা অস্ত্রবলের নয়, বরং প্রকৃত ঈমানদারের। সভ্য রাষ্ট্র ও সভ্য সমাজ নির্মিত হয় সভ্য মানব নির্মাণের মধ্য দিয়ে। উন্নত রাস্তাঘাট বা কলকারখানার কারণে নয়। তাই রাষ্ট্রের বুকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগটি রাস্তাঘাট বা কলকারখানার নির্মাণ নয়, বরং কোর’আনী জ্ঞানের বিতরণ। একমাত্র তখনই সম্ভব হয় সভ্য ও ঈমানদাররূপে বেড়ে উঠার কাজটি। মানব ইতিহাসের এ গুরুত্বপূর্ণ কাজটির জন্যই মহান আল্লাহতায়ালা নবী পাঠিয়েছেন এবং পবিত্র কোর’আন নাযিল করেছেন। মানব তার নিজ জ্ঞানে রাস্তাঘাট, কলকারখানা ও মারণাস্ত্রও নির্মাণ পারে। কিন্তু নিজে গড়ে উঠতে পারে না সভ্য মানব ও ঈমানদার রূপে। সে অসম্ভব কাজটি সমাধা করতেই ফেরেশতা মারফত পবিত্র কোর’আনের আগমন। সমগ্র মানব ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইসলামের প্রাথমিক যুগে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা গড়ে উঠেছে সে জ্ঞানের বলেই। তাই পবিত্র কোর’আন থেকে জ্ঞনার্জনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ এ ভূবনে দ্বিতীয়টি নাই। অথচ সে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটিই গুরুত্ব হারিয়েছে মুসলিম দেশগুলোতে। ফলে ঘিরে ধরেছে বহুমুখি ব্যর্থতা, পরাজয় ও অপমান। এবং এরচেয়েও ভয়ানক অপমান ও আযাব অপেক্ষা করছে আখেরাতে –যার প্রতিশ্রুতি বার বার শোনানো হয়েছে পবিত্র কোর’আনে।
৩. সমস্যাটি বাঁচার নিয়তে
লক্ষ্য যদি হয় আল্লাহকে খুশি করা ও আখেরাত জান্নাত পাওয়া -তবে আল্লাহর যে কোন হুকুম-পালনই অতি সহজ হয়ে যায়। এমন কি আল্লাহর রাস্তায় বিপুল অর্থদান ও প্রাণদানও। তখন ব্যক্তির জীবন সৃষ্টি হয় মহা বিপ্লব। তখন সহজ হয়, কোর’আনী জ্ঞানার্জনের কাজে অর্থব্যয় ও সময়ব্যয়। মুসলিমদের জীবনে মূল সমস্যাটি এখানেই। অধিকাংশ মানুষ বাঁচে নিজেকে, নিজের পরিবার, দল বা নেতাকে খুশি করতে। ভ্রান্তিটি এখানে বাঁচার নিয়তে। অথচ নামায-রোযার ন্যায় নিয়েত থাকতে হয় ব্যক্তির বাঁচায়। নিয়েত থাকতে হয় প্রতিটি কর্মে। সে নিয়েতের মধ্যেই ধরা পড়ে ব্যক্তির ঈমান এবং নির্ধারিত হয় মহান আল্লাহতায়ালার কাছে তার মর্যাদা।
মুমিন কি জন্য বাঁচবে সে গুরুত্বপূর্ণ নিয়েতটি শিখিয়েছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। এবং সেটি পবিত্র কোর’আনে এসেছে এভাবে, “ক্বুল, ইন্নাস সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়া’ইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। -(সুরা আনয়াম, আয়াত ১৬২)” অর্থঃ “বল (হে মুহম্মদ), নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কোর’বানী, আমার বেঁচে থাকা ও আমার মৃত্যু –এসব কিছুই আল্লাহ রাব্বিল আলামীনের জন্য অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা পূরণে।” ঈমানদারের প্রতি মুহুর্তের বাঁচাটি মূলতঃ এ পবিত্র নিয়েত পূরণে। জায়নামাযে দাঁড়িয়ে অন্য কাজ করা যায় না, নামাযের পুরা সময়টি দিতে হয় আল্লাহর উদ্দেশ্যে। তেমনি যে নিয়েতটি নিয়ে ঈমানদারের বাঁচা, সেখানেও কাফের, জালেম, ফাসেক তথা ইসলামের শত্রুপক্ষের কোন অংশদারিত্ব নাই, কোনরূপ দখলদারিও না্ই। তাই ঈমানদার ব্যক্তি সেক্যুলার রাজনীতির সৈনিক হয় না। গোত্র, দল বা নেতার নামে যুদ্ধও করে না। বরং তাঁর সমগ্র সামর্থ্য ব্যয় হয় মহান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছাপূরণে। এরূপ নিয়েত নিয়ে বাঁচাতে ব্যক্তির সমগ্র বাঁচাটিই ইবাদতে পরিণত হয়। এমন বাঁচার মাঝে গুরুত্ব পায় না মুসলিমের ঐক্য, শরিয়তের প্রতিষ্ঠা ও ইসলামের বিজয়ের বিষয়টি। ব্যক্তির এভাবে বাঁচা্টি মর্যাদা বাড়ায় মহান আল্লাহতায়ালার কাছে। এবং পরকালে জান্নাতে নিয়ে পৌঁছায়।
মুসলিমদের মূল সমস্যাটি এই নিয়তেই। ক’জন বাঁচে মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত নিয়েতটি নিয়ে? বরং অধীকাংশের বাঁচাটি হয় নিজের ইচ্ছা পূরণে; অথবা নিজ দেশ, নিজ ভাষা, নিজ গোত্র ও নিজ দলের স্বার্থ পূরণে। সেটি যেমন রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণে, তেমনি যুদ্ধবিগ্রহে। আল্লাহর উদ্দেশ্যে বাঁচা-মরা ও যুদ্ধবিগ্রহটি গণ্য হয় সাম্প্রদায়িকতা বা মৌলবাদী চরমপন্থা রূপে। দেশ, ভাষা, গোত্র ও দলের স্বার্থ পূরণে এরা জোট বাঁধে ইসলামের দুষমন কাফেরদের সাথে। এভাবেই নিজের সকল সামর্থ্য দিয়ে জাহান্নামের পথে দৌড়ানোটিকে তারা অতি সহজ করে নেয়।
৪. উৎসব বিভক্তি নিয়ে
নামায়-রোযা যেমন ফরজ প্রতিটি ব্যক্তির উপর, তেমনি ফরজ হলো মুসলিম উম্মাহর মাঝে একতা গড়ার কাজটি। নামায়-রোযায় ক্বাজা আছে, কিন্তু ক্বাজা নেই এ ফরজ পালনে। কে কোন দলের বা ভাষার –রোজ হাশরের বিচার দিনে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না। বরং হিসাব দিতে হবে বিভক্ত মুসলিম উম্মাহকে একতাবদ্ধ করার কাজে আদৌ কোন ভূমিকা ছিল কিনা -সেটি। এবং কি ভূমিকা ছিল আল্লাহর আইন তথা শরিয়তকে আল্লাহর ভূমিতে বিজয়ী করায়? মুসলিম উম্মাহর শক্তিহানী ও পরাজয়ের মূল কারণটি লোকবল বা অর্থবলের কমতি নয়। বরং সেটি হলো ৫৭টি দেশ ও শত শত দলের নামে মুসলিম বিভক্তি। এ ভয়ানক পাপের কাজটি শুধু হালাল কর্ম নয়, উৎসবের কারণে পরিণত হয়েছে। কথা হলো, মুসলিম মানচিত্রের বিভক্তির দিনগুলিকে বিজয় দিবস রূপে উৎসব করা কি কোন ঈমানদারের কাজ হতে পারে? তা নিয়ে তো উৎসব হবে কাফেরদের রাজধানীতে –যেমন একাত্তরের বিজয় নিয়ে উৎসব হয় দিল্লিতে। এরূপ বিভক্তি নিয়ে তো বরং মাতম হওয়া উচিত।
মহান আল্লাহতায়ালা তো চান মুসলিম উম্মাহর মাঝে সীসাঢালা প্রাচীরসম একতা। তাই যারা মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করতে চান তারা কি খুশি হতে পারে মুসলিম উম্মাহর বিভক্তি নিয়ে? নামাযের কাতারে নানা ভাষা, নানা বর্ণ ও নানা অঞ্চলের মানুষ যেমন একত্রে দাঁড়ায় তেমনি তাদের একত্রে বসবাস করতে হয় অভিন্ন মুসলিম ভূমির মানচিত্রের মাঝে। নবীজী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাদের আমলে তো সেটিই হয়েছে। নামাযের কাতার ভাঙ্গা যেমন হারাম, তেমনি হারাম হলো মুসলিম রাষ্ট্রের মানচিত্র ভাঙ্গা। একাজে একজন কাফের খুশি হতে পারে, কিন্তু প্রকৃত ঈমানদার নয়। বেঈমানী শুধু মিথ্যাচর্চা, চুরি-ডাকাতি ও নানারূপ দুর্বৃত্তির মাঝেই ধরা পড়ে না, ধরা পড়ে ভাষা,বর্ণ ও আঞ্চলিকতার নামে বিভক্ত মানচিত্র গড়ার মাঝে। সারা জীবন নামায-রোযা ও বার বার হজ্ব-উমরাহ করে কি সে বেঈমানী ঢাকা যায়? মুসলিমদের আজকের দুরাবস্থার কারণ তো এই ভয়াবহ বেঈমানি। এ বেঈমানি আজ জাতির অহংকারে পরিণত হয়েছে।
একতা মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে প্রচুর রহমত বয়ে আনে। এবং বিভক্তি আনে প্রতিশ্রুত আযাব। তাই মানচিত্র ভেঙ্গে মুসলিম দেশগুলি যতই ছোট হয়েছে, ততই বেড়েছে আযাব। ভূগোল ছোট করলে শক্তি বাড়েনা, বরং তা ভয়ানক ভাবে কমে যায়। মুসলিমগণ শক্তিতে তখনই অপ্রতিরোধ্য ছিল এবং সে সাথে ইজ্জতের অধিকারী ছিল যখন তাদের একটি মাত্র রাষ্ট্র ছিল এবং ছিল না ভাষা, বর্ণ ও আঞ্চলিকতার নামে কোন দলাদলি। দেশ ও দলের সংখ্যা যখন থেকে বাড়তে শুরু করেছে তখন থেকেই দ্রুত কমতে শুরু করেছে তাদের শক্তি। এবং দ্রুত কমতে শুরু করেছে ইজ্জত ও নিরাপত্তা। কথা হলো, এ মৌলিক বিষয়গুলি বোঝার জন্য কি স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ার প্রয়োজন পড়ে? ইসলামের গৌরব যুগে ভেড়ার রাখালগণও সেটি বুঝতো। তার কারণ, তাদের ছিল কোর’আনের জ্ঞান। সে জ্ঞানের বলে তারা বুঝতেো, মুসলিম জীবনে অতি পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো মুসলিম উম্মাহকে বিভক্তি থেকে বাঁচানো। এবং তেমন এক চেতনার কারণেই তাদের কাছে পবিত্র জিহাদ গণ্য হতো গোত্র, ভাষা, অঞ্চল ও বর্ণের নামে গড়ে উঠা বিভক্তি ও বিভেদের দেয়ালগুলি ভাঙ্গা। ১৪.০৩.২০২০
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018