বিবিধ ভাবনা (২০)

ফিরোজ মাহবুব কামাল

১. আল-জাজিরার কৃতিত্ব এবং পদলেহী বাংলাদেশী মিডিয়া

আল-জাজিরা বাংলাদেশীদের ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করেছে। তারা একটি অসাধারণ কাজ করেছে। কিন্ত প্রশ্ন হলো, তাতে বাংলাদেশীদের ঘুম ভাঙ্গবে কী? বাংলাদেশ অনেক টিভি চ্যানেল। মিডিয়ার কাজ তো সত্যকে তুলে ধরা; দুর্বৃত্তদের চিনতে জনগণকে সাহায্য করা। কিন্তু বাংলাদেশের মিডিয়া সেটি না করে চোরডাকাত ও ভো্টডাকাত দুর্বৃত্ত নেতাদের মহামান্বিত করছে। সাংবাদিকগণ দুর্বত্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্লজ্জ চাটুকরে পরিণত হয়েছে। এবং এ জঘন্য দুর্বৃত্তিকে তারা পেশায় পরিণত করেছে। 

সে সত্য আল-জাজিরা তুলে ধরলো সেটি সর্ব প্রথম তুলে ধরার দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশের মিডিয়ার। কিন্তু সেটি তারা করেনি। এটি হলো দেশবাসীর প্রতি মিডিয়ার গাদ্দারী। যে সত্য আল-জাজিরা তুলে ধরলো, হয়তো অনেক বাংলাদেশী সাংবাদিকও তা জানতো। তবে সত্য জানলেই তো চলে না। সত্য বলার সাহস লাগে। সততা ও দেশপ্রেম লাগে। কিন্তু চাটুকরদের সে সাহস, সততা ও দেশপ্রেম থাকার কথা নয়। বাংলাদেশের মিডিয়া জগতে তেমন মানুষদের বড্ড অভাব।

 

২. স্বাধীন ভাবে বাঁচার খরচ ও বাঙালীর রুচি

 গোলাম রূপে বাঁচার কোন খরচ নাই। গোলামীর জীবনে শুধু গোলামীই আছে। আছে গ্লানি ও আছে অপমান। কিন্তু সে ইতর জীবনে কোন যুদ্ধ নাই। কিন্ত স্বাধীন ভাবে বাঁচার খরচ আছে। জালেমকে হটাতে লড়াই করতে হয়। আরাম-আয়েশ ছেড়ে শ্রম, সময়, অর্থ ও কখনো বা জানের কোরবানী দিতে হয়। কিন্তু অধিকার ও ইজ্জত নিয়ে বাঁচার এ ছাড়া কোন বিকল্প পথ নাই। ইসলামে এটিই জিহাদ। কিন্তু প্রশ্ন হলো সে রূপ সভ্য বাঁচায় বাংলাদেশীদের কি রুচি আছে? বাংলাদেশে মানুষ কি আবারো সে পরীক্ষায় ফেল করবে?

 

 ৩. মুজিবের স্বাধীনতা ও জনগণের পরাধীনতা

 ১৯৭১’য়ের স্বাধীনতা মুজিবকে দেয় গুম, খুন, লুট ও স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার স্বাধীনতা। মুজিবকে দিয়েছিল বাংলাদেশকে ভারতের গোলাম বানানোর স্বাধীনতা। দিয়েছিল গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচারি শাসনের স্বাধীনতা। দিয়েছিল সকল পত্র-পত্রিকা বন্ধের স্বাধীনতা। মুজিবকে দিয়েছিল ৩০ হাজারের বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যার স্বাধীনতা। সে জন্য তাকে কোন বিচারের সামনে দাঁড়াতে হয়নি।

পাকিস্তান আমলে মুজিব পেয়েছিল শত শত মিটিং ও মিছিল করার অবাধ স্বাধীনতা। তার দল আওয়ামী লীগ পেয়েছিল পত্রিকা প্রকাশের স্বাধীনতা। কিন্তু মুজিব সে স্বাধীনতা বাংলাদেশের জনগণকে দেয়নি। নিজে ভোগ  করেছে জনগণের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার স্বাধীনতা। এবং জনগণ দিয়েছে নির্মম পরাধীনতা।

 

৪. পাকিস্তান আমলের স্বাধীনতা ও একাত্তরের স্বাধীনতা

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেস কোর্স ময়দানে শেখ মুজিব ঘোষণা দেন, “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” এরপরও মুজিবকে রিমা্ন্ডে নেয়া মারপিট করা হয়নি। জেলেও নেয়া হয়নি। বাসায় গিয়ে তিনি পরিবারের সাথে ভাত খেয়েছেন এবং আরামে কাটিয়েছেন। এই হলো পাকিস্তানী আমলের স্বাধীনতা।

শেখ হাসিনা যে ভোটডাকাত -সেটি তো প্রমাণিত সত্য। কিন্তু সে সত্যটি কি কোন জনসভায় বলা যাবে? বললে কি প্রাণ থাকবে? এক তরুন হাসিনার নামে এক বিরূপ মন্তব্য করেছিল। পুলিশ সে যুবককে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায়। বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে মন্তব্য করছিল। সে জন্য তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হলো। এটিই হলো ১৯৭১’য়ে অর্জিত স্বাধীনতা।

 

৫.মুজিবের অপরাধ ও বাঙালীর অপরাধ

শেখ মুজিবের অপরাধগুলোর তালিকাটি বিশাল। সেটি যেমন ৩০ হাজারের বেশী মানব হত্যার, তেমনি গণতন্ত্র হত্যার ও বাকশালী স্বৈরাচারী নৃশংসতার। সে সাথে ভারতের এজেন্ট রূপে কাজ করার এবং ভারতের হাতে বাংলাদেশের স্বাধীনত বিকিয়ে দেয়ার। 

শেখ মুজিবের ন্যায় কোন অপরাধীকে বিশ্বের কোন দেশই কি জাতির পিতা ও দেশের বন্ধুর মর্যাদা দিয়েছে তার নজির কোন আছে? তাতে কি দেশবাসীর ইজ্জত থাকে? অপরাধীদের ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে ফেলাই তো সভ্য জাতির রীতি। অথচ বাঙালীরা সে অপরাধীকে মাথায় তুলেছে। অপরাধীকে সন্মানিত করাও তো আরেক অপরাধ। এটি এক গুরুতর পাপ। আর সে পাপ ও অপরাধটি ঘটেছে বাংলাদেশের ইতিহাসে। নবীজী (সা:)’র হাদীস: যারা অপরাধীর পক্ষ নেয়, পরকালে তাদেরকে সে অপরাধীর সাথেই থাকতে হবে।

 

৬. অপরাধী জেনারেল আজিজ, জিম্মি সেনাবাহিনী ও জিম্মি দেশ

 আল-জাজিরা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দুর্বৃত্ত ও অপরাধীর হাতে কতটা জিম্মি এবং সেনাপ্রধান শেখ হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্ত ভোটডাকাতের কতটা গোলাম। ২০১৮ ‘য়ে নির্বাচনে যে ভোটডাকাতি হলো সেটি কি কোন অশিক্ষিত চোরডাকাতদের কাজ ছিল? সে ডাকাতির কাজটি তো করেছে জেনারেল আজিজের নেতৃত্ব সেনাবাহিনীর অফিসারগণ।

সেনাবাহিনীর লোকদের চরিত্র বলে কি কিছু আছে? থাকলে তারা জেনারেল আজিজের ন্যায় অপরাধীকে কম্যান্ডার রূপে মেনে নেয় কি করে? এটি কি কোন সভ্য ও ভদ্র মানুষদের কাজ? প্রশ্ন হলো জেনারেল আজিজ শেখ হাসিনার ন্যায় এক ভোটডাকাত সর্দারনীর পাহারাদার হতে পারে। কিন্ত সে কি কোন সভ্য সেনাবাহিনীরও কম্যান্ডর হতে পারে?                                                                                                               

জেনারেল আজিজ যে দুর্বৃত্ত ও অপরাধী -সেটি এখন প্রমানিত। আল-জাজিরার প্রমাণগুলিকে জেনারেল আজিজ মিথ্যা প্রমাণ করতে পারিনি। এমন ব্যক্তিকে সেনাপ্রধান রাখার বিপদটি তো গুরুতর। তার নেতৃত্বে সমগ্র সেনাবাহিনী ব্যবহৃত হতে পারে শাপলা চত্তরের ন্যায় গণহত্যায় ও হাসিনার ন্যায় ভোটডাকাতের সেবায় –যেমন টি অতীতে হয়েছে। সেনাবাহিনীর দায়িত্ব তো দেশকে প্রতিরক্ষা দেয়া। কিন্তু সেটি কি দুর্বৃত্ত অপরাধীকে সেনাপ্রধান করে সম্ভব? এমন ব্যক্তি তো দেশ ও দেশবাসীর শত্রু। সেনাবাহিনীর উচিত দেশ বাঁচানোর আগে সেনাবাহিনীকে ভয়ানক অপরাধী থেকে বাঁচানো।

৭. অভাব সাহসী লোকের

মিথ্যুকেরা তখনই বিজয়ী হয় যখন সত্য বলার লোক থাকে না। তেমনি তখনই দেশ শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্ত অপরাধীদের দখলে যায় -যখন দেশে চরিত্রবান সাহসী লোক থাকে না। আর সাহসী লোক তো সে সমাজেই বেড়ে উঠে, যে সমাজে সাহসীদের হিরোর মর্যাদা দেয়া হয়্। এবং ভীরু দুর্বৃত্তদের আবর্জনার স্তুপে ফেলা হয়।

৮. বাঙালী চরিত্রের পরিমাপ

 একটি দেশের জনগণের চরিত্র বুঝার জন্য গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না। সেটি বুঝতে কি খায়, কি পরিধান করে বা কি পাঠ করে -সেটি দেখার প্রয়োজন পড়ে না। জাতির চরিত্রটি নির্ভূল ভাবে বুঝা যায় কাদের তারা ভক্তি করে সেটি দেখে।

শেখ মুজিব সমগ্র বাঙালীর ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্বৃত্ত ব্যক্তি। মুজিবের ইতিহাস হলো গণতন্ত্র হত্যা, মানবহত্যা, মানবাধিকার হত্যা, একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচার, দুর্নীতিবাজ প্রতিপালন, দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি, ও ভারতের প্রতি একনিষ্ঠ গোলামীর। এমন অপরাধ কি আর কোন বাঙালী পূর্বে করেছে? অথচ তাকে জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু বলা হয়!

৯. ঈমানদার হওয়ার শর্ত ও সামর্থ্য

ঈমানদার হওয়ারও কিছু শর্ত আছে। সে জন্য কিছু সামর্থ্য্ও লাগে। ঈমানদার হতে হলে মহান আল্লাহতায়ালাকে শুধু মন থেকে বিশ্বাস করলে চলে না; তাঁকে গভীর ভাবে ভাল বাসার যোগ্যতা লাগে। সে ভালবাসার আলামত হলো তাঁর সার্বভৌমত্ব এবং তাঁর আইন তথা শরিয়তের বিজয়কে ভালবাসা। সে সাথে জরুরি হলো শয়তান ও তার সাথী দুর্বৃত্তদের ঘৃণা করার সামর্থ্য। এবং দ্বীনের এ শত্রুদের পরাজয় ও ধ্বংস কামনা করা। কিন্তু শয়তান ও শয়তানের বন্ধুদের ঘৃণা করার সামর্থ্য বাংলাদেশীদের কতটুকু? ক’জন চায় তাদের পরাজয় ও ধ্বংস?

শেখ মুজিব রাজনীতিতে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ নেয়নি। নিয়েছে শয়তানের পক্ষ্। তাই ক্ষমতা হাতে পেয়েই নাস্তিক কম্যুনিস্টদের দল গড়ার স্বাধীনতা দিলেও নিষিদ্ধ করে সকল ইসলামী দলকে। নিষিদ্ধ করে ইসলামকে বিজয়ী করা ও শরিয়ত প্রতিষ্ঠার রাজনীতি। ইসলামী দলগুলোর নেতাদের জেলে তুলেছে। তার এ কাজে একমাত্র শয়তান ও তার অনুসারিগণই খুশি হতে পারে। আর অভিশপ্ত শয়তান ও তার বন্ধুকে ঘৃণা করার সামর্থ্য থাকলে কি বাঙালী কখনো শেখ মুজিবের ন্যায় অপরাধীকে জাতির পিতা বা বঙ্গবন্ধু বলতো? ভো্ট দিয়ে বাড়াতো কি তার বিজয়?

১০. অভাব ঈমানের

ঘরের আবর্জনা সরানোর কাজটি ঘরে যারা বসবাস করে তাদের সবার। নইলে ঘর বসবাসের অযোগ্য হয়। আর সমাজের অতি ক্ষতিকর আবর্জনা হলো দুর্বৃত্তগণ। সমগ্র সমাজকে তারা সভ্য বসবাসের অযোগ্য করে। তাদের নির্মূলের দায়ভারটি সমাজ ও রাষ্ট্রের সবার। নইলে চেপে বসেছে দুর্বৃত্ত শাসনের আযাব। এজন্যই মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারিত মুসলিম জীবনের মূল মিশনটি হলো দুর্বৃত্ত নির্মূল (নেহী আনিল মুনকার) এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা (আ’মিরু বিল মারুফ)। এ মিশন নিয়ে বাঁচার জন্যই মুসলিম পায় সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির মর্যাদা। এ মিশনে সামর্থ্যের বিনিয়োগের মাঝে দৃশ্যমান হয় ব্যক্তির ঈমান।

 

তাই কোন দেশে প্রকৃত ঈমানদারের সংখ্যা বাড়লে দুর্বৃত্তও নির্মূল হয়। কিন্তু দুর্বৃত্তগণ নির্মূল না হয়ে যদি দুর্বৃত্তির জোয়ার আসে -তখন বুঝা যায় দেশে ঈমানদারের অভাব কতটা তীব্র। বাংলাদেশে দুর্বৃত্ত নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার সে কাজটি হয়নি। ফলে ঘাড়ের উপর চেপে বসেছে ভোটডাকাত হাসিনা ও তার দলের সীমাহীন দুর্বৃত্তি। ০৬/০২/২০২১।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *