বিবিধ ভাবনা (২৭)
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on February 17, 2021
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
১. যে কারণে পশু থেকে ভিন্ন
পানাহারে বাঁচা ছাড়া পশুর জীবনে কোনরূপ সামাজিক দায়-দায়িত্ব থাকে না। ফলে শিকার ধরা ছাড়া পশুর জীবনে কোন লড়াই থাকে না। অথচ মানুষকে বাঁচতে হয় বহুবিধ সামাজিক দায়ভার কাঁধে নিয়ে। তাকে সভ্য সমাজ ও রাষ্ট্র গড়তে হয়। সে লক্ষ্যে দুর্বৃত্তদের নির্মূল এবং ন্যায় ও ইনসাফের প্রতিষ্ঠা দিতে হয়। সে জন্য লাগাতর লড়াই করতে হয়; জান ও মালের কোরবানী পেশ করতে হয। সভ্য সমাজ নির্মাণের সে কাজে ইসলামের সিদ্ধ হাতিয়ারটি হলো জিহাদ। মানব জীবনে এটিই হলো সর্বোচ্চ ইবাদত। এবং সবচেয়ে কল্যাণকর কর্ম।
বস্তুত ঈমানদারের ঈমানের মূল পরীক্ষাটি হয় জিহাদের অঙ্গণে। প্রশ্ন হলো, যার জীবনে জিহাদ নাই -সে কি পশু থেকে আদৌ ভিন্ন? মহান আল্লাহতায়ালা এক শ্রেণীর মানুষকে পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট বলেছেন। এরাই হলো তারা। যে সমাজে এরূপ পশু-চরিত্রের মানুষদের সংখ্যা বেশী -সেখানে অসম্ভব হয় সভ্য সমাজের নির্মাণ। সমাজ বা রাষ্ট্র কতটা সভ্য ভাবে বেড়ে উঠবে তা নির্ভর করে সভ্য নির্মাণের কাজ সে রাষ্ট্রে কতটা হলো তার উপর। রাষ্ট্রের বুকে দুর্বৃত্তদের দখলদারী দেখে নিশ্চিত বলা যায়, সে কাজটি হয়নি। বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলোতে দুর্বৃত্তায়ন তখন থেকে শুরু হয় যখন স্রেফ মসজিদ-মাদ্রসা গুরুত্ব পেয়েছে, এবং গুরুত্ব হারিয়েছে সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের জিহাদ।
২. অপরাধীদের হাতে রাষ্ট্র অধিকৃত হওয়ার বিপদ
প্রতিটি জনপদে যেমন রোগজীবাণু থাকে, তেমনি ভয়ানক অপরাধী এবং দুর্বৃত্তও থাকে। সে অপরাধীদের থেকে নিরস্ত্র জনগণকে বাঁচানোর দায়িত্বটি প্রতিটি সভ্য দেশেরই সরকার, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আদালতের। জনগণ সেকাজের জন্যই রাজস্ব দিয়ে তাদেরকে আরাম-আয়াশের মাঝে প্রতিপালন করে। কিন্তু রাষ্ট্র যখন অপরাধীদের হাতে অধিকৃত তখন তাদের এজেন্ডাই পাল্টে যায়। তখন জনগণকে বাদ দিয়ে তাদের কাজ হয় অপরাধীদের বাঁচানো।
এরা জনগণকে দেখে শত্রু রূপে। এবং আনন্দ পায় জনগণকে নৃশংস ভাবে রাস্তাঘাটে পিটিয়ে, জেলে তুলে, তাদের পকেট থেকে ঘুষের টাকা নিয়ে। তারা নিজেরাই পরিণত হয় ভয়ানক অপরাধীতে। বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে দেশের সকল চোর-ডাকাত, খুনি ও সন্ত্রাসীগণ যত অপরাধ করে তার চেয়ে বেশী আপরাধ করে এসব সরকারি বাহিনীর লোকেরা। তখন প্লাবন আসে চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, খুন ও ধর্ষণে। কোন সভ্য দেশে এমন অসভ্যতার কথা ভাবা যায়না।
জনগণের বিরুদ্ধে নৃশংস অপরাধ কর্মে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশের সরকারি সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীর লোকেরা। তাই ২০১৮ সালে জনগণের ভোটের উপর যখন ডাকাতি হলো, দেশের পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে সে ভোটডাকাতি ঠ্যাকাতে ময়দানে দেখা যায়নি। বরং তাদের দেখা গেছে দুর্বৃত্তদের সাথে। তারা নিজেরা স্বৈরাচারি সরকারকে বিজয়ী করতে ভোটডাকাতিতে লিপ্ত হয়েছে। একাজে নেতৃত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বর্তমান প্রধান জেনারেল আজিজ। আর সেনাবাহিনীর সদস্যদের কাজ হয়েছে এ দুর্বৃত্তকে স্যালুট দেয়া। স্বৈরাচারি সরকারকে বাঁচাতে ২০১৩ সালে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও RABকে দেখা গেছে ঢাকার শাপলা চত্ত্বরে হিফাজতে ইসলামের মুসল্লীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাতে। জনগণের সাথে এরূপ জঘন্য গাদ্দারী আর কি হতে পারে? কুকুরকে পানাহার দিলে কখনোই তারা একাজ করে না।
৩. স্বৈরশাসনের সবচেয়ে বড় নাশকতাটি প্রসঙ্গে
দৈহিক বল পশুরও থাকে। মানবের শ্রেষ্ঠ সামর্থ্যটি দৈহিক বল নয়, সেটি হলো নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বল। এর সামর্থ্যের বলেই উচ্চতর রাষ্ট্র ও সভ্যতা নির্মিত হয়। সভ্য রাষ্ট্রের আলামত হলো, সে রাষ্ট্রের বুকে জনগণ পায় নিজ নিজ সামর্থ্য নিয়ে বেড়ে উঠার পূর্ণ স্বাধীনতা। তখন রাষ্ট্রের কাজ হয়, বেড়ে উঠাকে নিশ্চিত করতে সুষ্ঠ পরিবেশ সৃষ্টি করা। এরূপ সভ্য দেশে গুরুতর অপরাধ গণ্য হয়, এমন কোন আইনই প্রণয়ন করা -যা নিয়ন্ত্রিত করে জনগণের স্বাধীন ভাবে বেড়ে উঠার স্বাধীনতাকে।
অপরদিকে স্বৈরশাসকের সবচেয়ে বড় নাশকতাটি হলো, কেড়ে নেয় নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্য নিয়ে বেড়ে উঠার স্বাধীনতা। জনগণের এমন গুণের মাঝে তারা বিপদ দেখে। ফলে নিয়ন্ত্রিত হয় জনগণের কথা বলা ও লেখালেখির স্বাধানীতা। দুর্বৃত্ত সরকার বরং স্বাধীন ভাবে বেড়ে উঠতে দেয় হয় দুর্বৃত্তদের। কারণ, তাদের মধ্য থেকেই তারা নিজ দলের জন্য লড়াকু দুর্বৃত্ত খুঁজে পায়। এজন্যই স্বৈরাচারি শাসনে সুনামী আসে চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, গুম, খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসে। বাংলাদেশ তো তারই উদাহরণ। দেশটি অতীতে দুর্নীতিতে যেরূপ বিশ্বে ৫ বার প্রথম হলো -তার মূল কারণ এই স্বৈরশাসন।
৪. সর্বশ্রেষ্ঠ জনকল্যাণ মূলক কাজটি প্রসঙ্গে
মানব যখন মানবিক গুণ বেড়ে উঠে তখন সে পায় দুর্বৃত্তির বিরুদ্ধে এবং ন্যায়ের পক্ষে খাড়া হওয়ার নৈতিক সামর্থ্য। এ সামর্থ্যের বলেই মানুষ পায় জান্নাতের পথে চলার যোগ্যতা। একটি দেশে ভাল মানুষের সংখ্যাটি সে দেশে মসজিদ-মাদ্রাসার সংখ্যাটি দেখে মেলে না। সেটি মেলে দুর্বৃত্তি নির্মূলের যুদ্ধে সৈনিকদের সংখ্যা দেখে। সেটি না হলে বুঝতে হবে মসজিদ-মাদ্রাসা কাজ দিচ্ছে না।
অপর দিকে যারা জাহান্নামের যাত্রী, তারা নামে দুর্বৃত্তিতে। তারা যে শুধু একাই সে পথে চলে না –তা নয়; সাথে টানে জনগণকেও। তখন বাজার পায় শয়তানের প্রজেক্ট। দুর্বৃত্ত শাসনের এটিই হলো মূল বিপদ। তাই সমাজে সবচেয়ে বড় কল্যাণকর কাজটি মসজিদ, মাদ্রাসা বা এতিম খানা গড়া নয়, সেটি হলো দেশের বুক থেকে দুর্বৃত্ত শাসনের নির্মূল। তখন রাষ্ট্র পরিণত হয় জান্নাতে নেয়ার বাহনে। রাষ্ট্র পরিণত হয় দুস্থ্য, দরিদ্র, বিধবা ও এতিম -সবার জন্যই এক জনকল্যাণ রাষ্ট্রে।
৫. আল-জাজিরার বিরুদ্ধে হাসিনার প্রতিশোধ
ডাকাত সরদার কখনোই নিজ দলের লোকের খুনের বিচার করেনা। দলের সদস্য জেলে থাকবে বা খুনের অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলবে -সেটিকে তারা নিজেদের জন্য পরাজয় ও অসন্মান মনে করে। তারা কি ক্ষমতায় যায় -এরূপ পরাজয় ও অসন্মান মেনে নেয়ার জন্য? জেল এবং ফাঁসি তো বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীর জন্য।
সম্প্রতি (ফেব্রেয়ারি, ২০২১) আল-জাজিরা টিভি চ্যানেল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান এবং শেখ হাসিনার ভোটডাকাত ম্যানেজার জেনারেল আজিজের খুনি ভাইদের পলাতক দেখিয়েছিল। আল-জাজিরা দেখিয়েছিল, পুলিশ বাহিনী এ পলাতক আসামীদের খুঁজলেও ঢাকার এ বিয়ের অনুষ্ঠানে তারা দেশের প্রসিডেন্ট ও সেনাপ্রধানের সাথে উৎসব করছে। আল-জাজিরার এ ডকুমেন্টারী হাসিনাকে যে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ করেছে –তা নিয়ে সন্দেহ নাই। হাসিনা আল-জাজিরার বিরুদ্ধে ত্বরিৎ বদলাও নিয়েছে; এবং সেটি খুনীদের খুনের অপরাধ থেকে মাফ করে। এখন আরা তারা পলাতক নয়। পুলিশের খাতায় এখন তারা নির্দোষ। ডাকাতের হাতে রাষ্ট্র যাবে এবং ডাকাত জেলে যাবে –সেটি কি করে হয়?
৬. বাংলাদেশ এখন ডাকাতি করা মাল
সমগ্র বাংলাদেশ এখন শেখ হাসিনার ডাকাতির মাল। সে মালের বন্টন হচ্ছে তার পরিবারের সদস্যদের মাঝে। হাসিনা নিজ পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়কে প্রতি মাসে বিপুল অংকের টাকা দিচ্ছে। সেটি দেয়া হচ্ছে হাসিনার ডিজিটাল বিষয়ে পরামর্শদাতার বেতন রূপে। ডাকাতির মাল বন্টনে প্রাপকের যোগ্যতা দেখা হয় না। দেখা হয়, সে ব্যক্তিটি ডাকাত দলের সদস্য কিনা। জয় তো সে দলেরই সদস্য। একই ভাবে নানা খরচের খাত দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা দেয়া হচ্ছে হাসিনার বোন এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের।
৭. ঐক্য আসলে বিজয়ও আসে
মহল্লার লোকেরা সংখ্যায় বিশাল হলেও তাদের ঘরে ডাকাতিতে ডাকাতদের বেগ পেতে হয়না। কারণ, সংখ্যায় কম হলেও ডাকাতদের মধ্যে কাজ করে একতা। একতাই তাদের শক্তি। সে রকম একতা মহল্লাবাসীর মধ্যে থাকে না। তাদের মাঝে ডাকাতদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষাও থাকে না। একই অবস্থা ১৭ কোটি বাংলাদেশীর। তারা নানা দলে বিভক্ত। অনৈক্যই তাদের দুর্বলতা। অপরদিক চোরডাকাত, ভোটডাকাত, খুনি ও সন্ত্রাসী –তা যে কোন জেলার, যে কোন রাজনৈতিক দল বা যে কোন সামরিক বা বেসামরিক প্রতিষ্ঠানেরই হোক না কেন -তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একতাবদ্ধ। সেটি যেমন শাপলা চত্ত্বরের গণহত্যায় দেখা গেছে, তেমনি দেখা গেছে ২০১৮ সালের ভোটডাকাতি।
দেশের প্রধান আপদ যে স্বৈরাচারি দুর্বৃত্তদের অধিকৃতি এবং তাদের নির্মূলে ব্যর্থ হলে যে কারোই কোন শান্তি নাই –এ উপলব্ধিও বিরোধী দলগুলোকে একতাবদ্ধ করতে পারছে না। জনগণের অনৈক্য অসম্ভব করে সভ্য ভাবে বাঁচাকে। অনৈক্য প্রতিশ্রুত আযাব আনে আখেরাতেও। পবিত্র কোর’আনে সে হুশিয়ারী শুনানো হয়েছে সুরা আল-ইমরানের ১০৫ নম্বর আয়াতে। অনৈক্য গড়া এজন্যই হারাম এবং কবিরা গুনাহ। এতে শুধু বিপদই বাড়ে।
পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের জনগণ বাঁচছে অনৈক্যের ন্যায় হারামকে নিয়ে। হারাম নিয়ে বাঁচলে কি মহান আল্লাহতায়ালার রহমত জুটে? বরং বিজয় তুলে দেয় দুর্বৃত্তদের ঘরে। বস্তুত বাংলাদেশের জনগণের উপর দুর্বৃত্ত শাসনের আজ যে আযাব -সেটি তাদের নিজ হাতের কামাই। এ আযাব থেকে বাঁচতে হলে একতার পথে ফিরে আসতেই হবে। একতার বিকল্প একতাই। একতা আসলে বিজয়ও আসে। ১৭/০২/২০২১
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018