বিবিধ ভাবনা (৩১)
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on February 28, 2021
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামা
১. ব্যর্থতার রেকর্ড
ঘরে আগুণ লাগলে বা ডাকাত পড়লে নিজেদের মধ্যে বিবাদ করা যায় না। দেরী্ও করা যায় না। অন্য সব কাজ ফেলে তখন যার যা সামর্থ্য আছে তা দিয়ে আগুণ থামাতে বা ডাকাত নির্মূলে নামতে হয়। এটিই সভ্য মানুষের গুণ। এভাবেই দায়িত্ববোধের পরীক্ষা হয়। কিন্তু পশুরা সে কাজ করে না। আগুণ দেখে তারা পালায় এবং ডাকাতের কাছে বিনা প্রতিবাদে আত্মসমর্পণ করে। এ পরীক্ষায় ফেল করলে তীব্রতর হয় ডাকাতীর আযাব। তখন আরো নৃশংসতর হয় ডাকাতি। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ সে পরীক্ষায় বহু বছর আগেই ফেল করেছে।
সভ্য মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদটি হলো তার স্বাধীনতা। পানাহার পশুরাও পায়; কিন্তু স্বাধীনতা পায় না। পশুদের তাই গলায় পরাধীনতার রশি নিয়ে বাঁচতে হয়। যে কোন সমাজে অতিশয় অসভ্য কর্ম হলো ভোটের উপর ডাকাতি। সম্পদের উপর ডাকাতি হলে মানুষ স্বাধীনতা হারায় না। কিন্তু ভোটের উপর ডাকাতি হলে মানুষও গরুছাগলের ন্যায় স্বাধীনতাহীন অসহায় জীবে পরিণত হয়। তাদেরকে তখন ডাকাতদের কাছে আত্মসমর্পণ নিয়ে বাঁচতে হয়। ভোটডাকাতগণই হলো সবচেয়ে অসভ্য, নিকৃষ্ট ও নৃশংস জীব। এবং বাংলাদেশে তাদের সংখ্যাটি বিশ্বে যে কোন দেশের চেয়ে বেশী। বাংলাদেশ অতীতে দুর্বৃত্তিতে বিশ্বের সকল দেশকে হারিয়ে ৫ বার প্রথম হয়েছে। নিঃসন্দেহে ডাকাতের সংখ্যাতেও তারা প্রথম হবে। এটি বাংলাদেশীদের ব্যর্থতার আরেক দলিল।
সভ্য মানুষেরা শুধু সম্পদের উপর ডাকাতি্ই রুখে না, রুখে দাঁড়ায় ভোটের উপর ডাকাতিও। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ সে ডাকাতি রুখতে ব্যর্থ হয়েছে। গরু-ছাগলের পালে শিকার ধরতে নেকড়কে বেগ পেত হয় না। ভোটডাকাতেরা তেমনি অবাধে ডাকাতি করে প্রতিরোধহীন জনগণের উপর। বাংলাদেশীদের ভোটের উপর প্রথম ডাকাতি হয় ২০১৪ সালের নির্বাচনে। সে নির্বাচনী ডাকাতিতে ১৫৩টি আসনে কোন নির্বাচনই হয়নি। এবং যেসব আসনে নির্বাচন হয়েছিল সেখানেও সুপরিকল্পিত ডাকাতি হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে বাঁচায় রুচি থাকলে যে কোন সভ্য দেশের ন্যায় সেখানেও যুদ্ধ শুরু হতো। জনগণ সেদিন যুদ্ধে নামলে ২০১৮ সালের ন্যায় ভোটডাকাতিতে ভোটডাকাতগণ সাহস পেত না।
২. বিরোধী দলের বিবেকহীনতা
দেশ সবার। ডাকাতদের হাত থেকে দেশ বাঁচানোর দায়িত্বটিও সবার। নীরবে বসে থাকলে ডাকাতের সাহস বাড়ে আরো বেশী ডাকাতি করার। ডাকাতগণ একতাবদ্ধ। তাই জনগণ কি বিভক্ত থাকতে পারে? বাংলাদেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলির মাঝে রয়েছ নানা মত ও পথ নিয়ে বহু মতভেদ। কিন্তু অন্ততঃ একটি বিষয়ে তারা একতাবদ্ধ হতে পারতো। সেটি ভোটডাকাতদের নির্মূলে। কিন্তু তারা একতাবদ্ধ হতে পারিনি। তারা বিভক্ত। ডাকাত তাড়াতে তারা ময়দানে নাই। এটিই তাদের বড় ব্যর্থতা। এটি তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতাও। এ ব্যর্থতা নিয়ে তারা দেশের কি কল্যাণ দিতে পারে? দেশে ডাকাত পড়েছে সেটি দেখেও যদি ডাকাত তাড়াতে না নামে -তবে তাদের যে কান্ডজ্ঞান ও বিবেক আছে সেটি বুঝা যাবে কি করে?
৩. যেদেশে ডাকাতেরা সন্মানিত হয়
প্রতিটি সভ্য দেশেই চোর-ডাকাতদের জেলে পাঠানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশে তারাই সন্মানিত। অথচ চোরডাকাতদের ঘরের চাকর-বাকারও বানানো যায়না। কিন্তু বাংলাদেশে ডাকাতই শাসক। ডাকাত সর্দারনীকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলা হয়। ডাকাতকে সামনে বসিয়ে তার বয়ান শোনা হয়। এটি তো ডাকাতপাড়ার সংস্কৃতি। অথচ সে অসভ্য সংস্কৃতি আজ বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। কিছু দালানকোঠা ও রাস্তাঘাট গড়ে কি অসভ্যতাকে ঢাকা যায়?
ভোটডাকাতগণ সাধারণ চোরডাকাত নয়। তাদের অপরাধ অন্য ডাকাতদের চেয়ে লক্ষগুণ অধিক। সাধারণ ডাকাতেরা অর্থ লুট করে। অথচ ভোটডাকাতগণ ছিনতাই করে সমগ্র দেশ। দেশে চোরডাকাতদের শা্স্তি দেয়ার জন্য বহু শত আদালত রয়েছে। সে সব আদালতে বহুশত বিচারকও রয়েছে। দেশে পুলিশ বাহিনীও রয়েছে। বাংলাদেশে দেশ জুড়ে ভোটডাকাতি হলো। দেশবাসীও সেটি দেখলো। শিশুরাও সেটি জানলো। কিন্তু পুলিশ কাউকে ধরলো না; আদালতেও কোন বিচার হলো না। ফলে সে অপরাধে কারো কোন শাস্তি হলো না। কোন সভ্য দেশে কি এটি ভাবা যায়?
গৃহ যতক্ষণ ডাকাতের দখলে থাকে সে গৃহে শান্তিতে বসবাসের কথা ভাবা যায় না। তেমনি দেশ যখন ডাকাতদের দখলে যায় -শান্তি তখন হাওয়া হয়ে যায়। বাংলাদেশের মূল সংকট এখানেই্। তাই দেশে এখন একটাই যুদ্ধ, সেটি ডাকাত তাড়ানোর। এ যুদ্ধে বিজয়ের উপর নির্ভর করবে দেশের মানুষ সভ্য জীবন ফিরে পাবে কিনা সে বিষয়টি।
৪. ব্যর্থতা মুসলিম হওয়ায়
ছওয়াবের কাজ হলো ক্ষুধার্তের জন্য সামান্য খাবার পেশ করা। তেমনি অতিশয় ছওয়াব কাজ হলো জ্ঞানের ক্ষুধা দূর করতে জ্ঞানের কথা গুলো মানুষের সামনে লাগাতর পেশ করা। কেউ তা গ্রহণ না করলেও যে পেশ করবে সে ছওয়াব পাবে। সমাজ থেকে অজ্ঞতার অন্ধকার তো এভাবেই দূর হয়। মানব জীবনে সবচেয়ে বড় নেক কর্ম তো অন্ধকার সরানো। ইসলামে তাই নামায-রোযার আগে জ্ঞানার্জনকে ফরজ করা হয়েছে।
মহান নবীজী (সা:)’র হাদীস: ঈমানদারের জীবনে দুই অবস্থা। হয় সে ছাত্র, নতুবা সে শিক্ষক। কোন তৃতীয় অবস্থা নাই। তাই শেখা ও শেখানো নিয়ে আমৃত্যু বাঁচাই হলো মুসলিম সংস্কৃতি। কখনো তাকে নামতে হয় শিক্ষকের ভূমিকায়, কখনো সে ভূমিকাটি হয় ছাত্রের্। যার জীবনে সে রকম ভূমিকা নাই, বুঝতে হবে তার মুসলিম হওয়ায় বিশাল ব্যর্থতা রয়ে গেছে। আজ মুসলিম বিশ্বে জ্ঞান-বিজ্ঞানে যে পশ্চাতপদতা তার মূল কারণ মুসলিমদের মুসলিম হওয়ায় ব্যর্থতা।
৫.অখাদ্যের বিপদ
যে খাদ্য পুষ্টি দেয় না -তা অখাদ্য। তাতে শরীরের পতন ঘটে। তেমনি যে বই চেতনায় ও চরিত্রে পুষ্টি জোগায় না –সেটিও ক্ষতিকর অখাদ্য। বাংলাদেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীদের মাঝে ঘুষ, সূদ, দুর্নীতি, ব্যভিচার ও নানারূপ চরিত্রহীনতা দেখে বলা যায় তারা চেতনা পুষ্টি পায়নি। বিদ্যাশিক্ষার নামে যেসব বই পড়ানো হয়েছে তাতে তাদের মগজে অখাদ্য ঢুকানো হয়েছে। মানুষের স্বাস্থ্য দেখে বলা যায় -সে কি খায়। তেমনি চেতনা ও চরিত্র দেখে নির্ভূল ভাবেই বলা যায় -সে কি পড়ে।
৬. বাঁচছে ইসলাম ছাড়াই
বাংলাদেশীদের মূল সমস্যাটি হলো তারা ইসলাম থেকে বহু দূরে সরেছে। ফলে তারা আগ্রহী নয় নবীজী (সা:)’র ইসলামে ফিরে যেতে –যাতে ছিল ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়ত, হুদুদ, জিহাদ, শুরা, বিশ্বমুসলিম ভাতৃত্ব। বস্তুত তারা বাঁচছে ইসলাম ছাড়াই। বাংলাদেশীদের মাঝে ইসলাম থাকলে ভোটডাকাত সরকারের নির্মূলে জিহাদ শুরু হতো। বিভক্তির বদলে একতা প্রতিষ্ঠা পেত। লাগাতর লড়াই হতো শরিয়তের প্রতিষ্ঠা নিয়ে।
ইসলামের পথে থাকলে কখনোই ভারতীয় কাফেরদের অস্ত্র কাঁধে নিয়ে ভারতের শত্রু পাকিস্তানকে ভাংঙ্গতো না। এবং মুজিবের ন্যায় গণতন্ত্র হত্যাকারি, বাকশালী স্বৈরাচারী ও প্রায় ৩০ হাজার মানুষের হত্যাকারি এক ভারতীয় দালালকে জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু বলতো না। জনগণের মাঝে ইসলাম বেঁচে থাকলে দেশ দুর্নীতিতে বিশ্বে ৫ বার প্রথম হতো না।
৭. মহান আল্লাহতায়ালা প্রতি ভালবাসার বিষয়
বাংলাদেশে আল্লাহতায়ালার আশেক এবং রাসূলের আশেক বলে অনেকেই নিজেদের জাহির করে। কিন্তু সেটি প্রচারের বিষয় নয়। কে কতটা মহান আল্লাহতায়ালাকে ভাল বাসে -সেটি তো খালি চোখে দেখা যায়। দেশ থেকে তাঁর সার্বভৌমত্ব বিলুপ্ত করা হলো এব্ং আদালত থেকে তাঁর শরিয়তী বিধানকে বিলুপ্ত করা হলো -অথচ তা নিয়ে মনে কোন ক্ষোভ সৃষ্টি হলো না এবং সে শরিয়তী বিধানকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য লড়াইয়ে নামলো না, সে ব্যক্তি নামাযী ও রোযাদার হতে পারে কি্ন্তু তার মনে যে শরিষার দানা পরিমান মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি ভালবাসা নাই –তা নিয়ে কি কোন সন্দেহ থাকে? মহান আল্লাহতায়ালাকে ভালবাসার অর্থ তার বিধানকে ভালবাসা ও সে বিধানের বিজয় নিয়ে বাঁচা। কথা হলো, সে ভালবাসা জনগণের থাকলে কি তাঁর শরিয়ত বিলুপ্ত হতো?
৮. কেন এতো অনৈক্য?
আল্লাহতায়ার দ্বীনকে বিজয়ী করা ও তাঁকে খুশি করা যখন বাঁচার লক্ষ্য হয় তখন সে ব্যক্তি একতা গড়ার জন্য দিবারাত্র পেরেশান হয়। এমন এক পেরেশানীর কারণেই শতাধিক নবী একই সময়ে একই স্থানে প্রেরণ করলেও তাদের মাঝে কোন অনৈক্য হতো না।
কিন্তু রাজনীতির লক্ষ্য যখন নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ ও দলীয়স্বার্থ হাছিল হয়, তখন মুখে ইসলামের কথা বললেও তারা স্বার্থকেন্দ্রীক বিভক্তির পথ ধরে। তখন রাজনীতিতে লক্ষ্য হয় ক্ষমতায় ভাগ বসানো, দ্বীনের বিজয় নয়। ক্ষমতায় ভাগ বসানোর লক্ষ্যে তখন সেক্যুলারিস্টদের ন্যায় ইসলামের শত্রুদের সাথে কোয়ালিশন গড়াও তখন জায়েজ হয়ে যায়। বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের মাঝে অনৈক্যের মূল কারণ হলো এই স্বার্থপরতা।
৯. স্বৈরশাসনের নাশকতা
মানবের শ্রেষ্ঠ সামর্থ্যটি হলো নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্য। এর বলেই উচ্চতর সভ্যতা নির্মিত হয়। কিন্তু স্বৈরশাসকের বড় নাশকতাটি হলো সে সামর্থ্য নিয়ে জনগণকে স্বাধীন ভাবে বেড়ে উঠতে দেয়া হয়না। তখন চলে নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তির উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ। দুর্বৃত্ত শাসকগণ দেয় নিজের দলীয দুর্বৃত্তদের স্বাধীনতা। তখন প্রতিষ্ঠা পায় শাসকপূজা। এবং দাপট বাড়ে আনুগত্যজীবীদের। চাটুকারীতা ছাড়া কোন বুদ্ধিবৃ্ত্তিক কর্ম্ ও সাহিত্যকর্ম গড়ে উঠে না।
ফলে ফিরাউনদের মত স্বৈরশাসকদের শাসনে বড় বড় পিরামিড নির্মিত হলেও কোন সভ্য মানুষ ও উচ্চতর সভ্যতা নির্মিত হয়নি। স্বৈরশাসক মানেই অসভ্যতার আযাব্। শাসকের অসভ্যতা তখন দেশ জুড়ে অসভ্যতা বাড়ায়। সে অসভ্যতার আযাব চেপে বসেছে এখন বাংলাদেশীদের উপর। তাই স্রেফ কিছু রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কলকারখানা ও স্কুল-কলেজ নির্মাণ করে স্বৈরশাসনের অসভ্যতা থেকে বাঁচা যাবে না। সভ্য সমাজ নির্মাণের কাজও হবে না, সেজন্য অপরিহার্য হলো স্বৈরশাসনের নির্মূল। বাংলাদেশের মানুষ কতটা সভ্য ভাবে বাঁচতে আগ্রহী -তার পরীক্ষা হবে স্বৈরশাসন নির্মূলের এ লড়াইয়ে। ২৮/০২/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018