বিবিধ ভাবনা (৪০)

ফিরোজ মাহবুব কামাল

১. অপরাধীদের দখলদারী ও জনগণের ব্যর্থতা

মানব সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গণটি হলো রাজনীতি। জাতি কোন দিকে যাবে -তা ক্ষেত-খামার, হাট-বাজার, কলকারখানা বা স্কুল-কলেজ থেকে নির্ধারিত হয় না। সেটি নির্ধারিত হয় রাজনীতি থেকে।  তাই যারা দেশ ও দেশবাসীর ভাগ্য পাল্টাতে চায় তারা রাজনীতিতে যোগ দেয়। সমাজ বিপ্লবের এটিই হাতিয়ার। ইসলাম যেহেতু মানুষের জীবনধারাই পাল্টাতে চায়, রাজনীতিকে তাই জিহাদের মর্যাদা দিয়েছে। রাষ্ট্রের অঙ্গণে ইসলাম বিজয়ী হবে না পরাজিত হবে –সেটিই নির্ধারিত হয় রাজনীতি বা জিহাদের ময়দান থেকে। যাত্রীবাহী বাসে চালকের যে ভূমিকা, দেশের ক্ষেত্রে সে ভূমিকাটি হলো রাজনৈতিক নেতা বা সরকার-প্রধানের। বাসের চালক যদি সুস্থ্য থাকে তবে সকল যাত্রী মদ খেয়ে বেহুশ হয়ে পড়লেও তাতে গাড়ি খাদে পড়ে না। দুর্ঘটনাও ঘটে না। সুস্থ্য চালকের কারণে বাস তখন সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে। কিন্তু বাসের চালক যদি মদ খেয়ে ঢলে পড়ে তবে দুর্ঘটনা ঘটবেই। তাতে প্রাণনাশও হতে পারে। তখন যাত্রীদের ক্রন্দন বা দোয়া-দরুদে লাভ হয় না।

একই কারণে ভয়ানক বিপদ ঘটে দুর্বৃত্তকে ক্ষমতায় বসালে। তখন সমগ্র দেশ ডাকাতি হয়ে যায়। সে বিপদ থেকে বাঁচতেই সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে  রাষ্ট্রনায়কের সিটে বসাতে হয়। এটিই হলো মানব সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ কাজ। দেশবাসীর প্রজ্ঞার প্রকাশ তো এভাবেই ঘটে। এবং সেটিই হলো নবীজী (সা:)’র সর্বশ্রেষ্ঠ সূন্নত। মুসলিমগণ অতীতে যেরূপ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিল সেটি মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ার কারণে নয়। সেটি হলো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার আসন থেকে দুর্বৃত্ত নির্মূল ও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা দেয়ার কারণে।

নবীজী(সা:) ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। যতদিন তিনি জীবিত ছিলেন ততদিন তিনিই ছিল ছিলেন মুসলিমদের রাজনৈতিক নেতা এবং সে সাথে রাষ্ট্রপ্রধান। নবীজী (সা:)’র ইন্তেকালের পর সে আসনে বসেছেন তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহাবাগণ। কিন্তু বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশে নবীজী (সা:)’র বহু সূন্নত বেঁচে থাকলেও অতি গুরুত্বপূর্ণ সে সূন্নতটি বেঁচে নাই। চোর-ডাকাত-দুর্বৃত্তদের সন্মানিত করা ও তাদেরকে শাসন ক্ষমতায় বসানো তো দুর্বৃত্তদের সংস্কৃতি। অথচ বাংলাদেশে সেটিই এখন বিজয়ী রাজনৈতিক সংস্কৃতি। ফলে নবীজী (সা:)’র সে পবিত্র শাসনটি হাইজ্যাক হয়েছে ভোটডাকাত দুর্বৃত্তদের হাতে। জনগণের মাঝে তা নিয়ে কোন বিদ্রোহ নাই। মুসলিম দেশগুলিতে ইসলামের পরাজয়ের মূল কারণ তো এই দুর্বৃত্তদের অধিকৃতি ও জনগণের আত্মসমর্পণ।  

পুরা একটি দেশকে হাইজ্যাক করার লক্ষ্যে শাসন ক্ষমতার সর্বোচ্চ আসনটি দখলে নিলেই চলে। সারা দেশ তখন দখলে এসে যায়। হাসিনার নেতৃত্বে ভোটডাকাতগণ সে ভাবেই বাংলাদেশকে হাইজ্যাক করেছে। ফলে দেশ এখন তাদেরই দখলে। তাই জনগণকে শুধু দেশের সীমান্ত পাহারা দিলে চলে না, পাহারা দিতে হয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সর্বোচ্চ আসনটিকেও। প্রয়োজনে সে জন্য যুদ্ধ করতে হয়। সভ্য দেশের নাগরিকদের এটিই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অথচ বাংলাদেশের জনগণ সে দায়িত্ব পালনে পুরাপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ফলে দেশটির রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসে আছে একজন ভোটডাকাত।

তাছাড়া যে পবিত্র আসনে খোদ নবীজী (সা:) বসেছেন, সে আসনে কি কোন চোর-ডাকাত-দুর্বৃত্তকে বসানো যায়? তাতে যেমন নবীজী (সা:)’র সূন্নতের অবমাননা হয়, তেমনি অবমাননা হয় সে পবিত্র আসনের। সেরূপ অবমাননা আযাব ডেকে আনে। তাছাড়া চুরি করা যেমন অপরাধ, তেমনি অপরাধ হলো সে চুরিকে বৈধতা দেয়া। রাষ্ট্রের উপর চোরডাকাতদের সে অবৈধ অধিকৃতির বৈধতা দেয়ার অপরাধটি ঘটে তখন, যখন সে অপরাধীদের না হটিয়ে তাদের শাসন বাঁচাতে রাজস্ব দেয়া হয়। অথচ ডাকাতদের ভোট দেয়া যেমন অপরাধ, তেমন অপরাধ হলো তাদেরকে রাজস্ব দিয়ে প্রতিপালন দেয়া। সে অপরাধের জন্য শাস্তি পেয়েছিল ফিরাউনের প্রজারা। বাংলাদেশের জনগণ একই গুরুতর অপরাধ করছে হাসিনার ন্যায় এক ভোটডাকাত দুর্বৃত্তকে রাজস্ব দিয়ে প্রতিপালন করে। তবে বাংলাদেশে জনগণের আরো অপরাধ হলো, তারা নিজেরাও অনেক সময় দুর্বৃত্তদের সক্রিয় সহযোগী হয়ে পড়ে। ডাকাতেরা একাকী ডাকাতি করতে পারে না; ডাকাতিতে তাদেরও লোক বল চাই। হাসিনার ডাকাতিতে লোকবল জুগিয়েছে বাংলাদেশের সেনবাহিনী, পুলিশ, প্রশাসন ও আদালতের লোকজন। অপর দিকে শেখ মুজিবের ন্যায় বাকশালী স্বৈরাচারি, খুনি, গণহত্যাকারী এবং ভারতীয় দালালও একাকী রাষ্ট্রক্ষমতা হাইজ্যাক করেনি। সে কাজে সহায়তা দিয়েছে দেশের জনগণ।

জনগণের দয়-দায়িত্বটি বিশাল। ব্যক্তির মর্যাদা তো সে দায়িত্ব নিয়ে বাঁচায়। মহান আল্লাহতায়ালা শুধু ঈমানই দেখেন না, আমলও দেখেন। জান্নাতে তো তারাই যাবেন যারা ঈমান ও আমল – এ উভয় ক্ষেত্রেই উন্নত। আমলের মধ্যেই ধরা পড়ে ব্যক্তির বিবেক, চরিত্র ও ঈমানের মান। এবং নেক আমল শুধু দান-খয়রাত নয়, সবচেয়ে বড় নেক আমল হলো দেশের শাসন ক্ষমতা থেকে শয়তান নির্মূল করা। দেশ সভ্যতর হয় তো এ আমলের গুণে। প্রাসাদসম মসজিদ গড়ে দেশ পাল্টানো যায় না, বিপ্লব আনতে হয় দেশের রাজনীতিতে। বাসের চালক দুর্ঘটনা ঘটালে কিছু যাত্রী মারা যায়, কিন্তু রাষ্ট্রের চালক দুর্ঘটনা ঘটালে লাখ লাখ লোকের মৃত্যু হয়। দেশ তখন আযাবের যন্ত্রে পরিণত হয়। তাই সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ হলো, কোন দুর্বৃত্তকে সরকার-প্রধানের আসনে বসানো। এবং এ কারণেই সবচেয়ে বড় নেক আমলটি পথের কাঁটা সরানো বা বাঘ তাড়ানো নয়, সেটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার আসন থেকে অপরাধী ব্যক্তিদের নির্মূল করা। ইসলামের একাজে পবিত্র জিহাদের মর্যাদা রয়েছে। শয়তানকে তো এভাবেই পরাজিত করা যায়। বাজারে সামান্য মাছ কিনতে গেলেও কোনটি পচা এবং কোনটি ভাল –সেটি যাচাই-বাছাই করে কিনতে হয়।  নইলে পচা মাছে স্বাস্থ্যহানী ঘটে। সে নিখুঁত যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি করতে হয় রাজনীতির ময়দানে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় কাকে বসানো হয় –সেটি খুঁতিয়ে দেখার মধ্যেই দেশের মহা কল্যাণ। এখানে ব্যর্থ হলে ভয়ানক শত্রু এবং দুর্বৃত্তও শাসকে পরিনত হয়। সে কাজে বাংলাদেশীদের ব্যর্থতাটি বিশাল। বাংলাদেশে আজ যে ভয়ানক দুঃশাসন -সেটি এক দিনের কামাই নয়। এবং সেটি শুধু সরকারের ব্যর্থতাও নয়। বরং সে জন্য দায়ী বহুদিন ধরে চলা জনগণের নিজেদের ব্যর্থতাও।

 ২. রাজনীতিবিমুখ বাঙালী মুসলিম

জনগণের কান্ডজ্ঞান, ধর্মপ্রেম, দেশপ্রেম ও বিবেকবোধ বোঝা যায় রাজনীতিকে তারা কতটা গুরুত্ব দেয় তা থেকে। সত্যের জয়-পরাজয়ের ন্যায় মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তী বিধান জিতবে না হারবে –সেটি মসজিদ-মাদ্রাসায় স্থির হয় না, নির্ধারিত হয় রাজনীতির ময়দানে। অন্যায়ের নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার ন্যায় মুসলিম জীবনের যে মূল মিশন –সে মিশন নিয়ে বাঁচার পূরণে মূল হাতিয়ারটি হলো রাজনীতি। এজন্যই নবীজী (সা:) নিজে ছিলেন রাজনৈতিক নেতা এবং রাষ্ট্রনায়ক। রাজনীতিতে অংশ নিয়েছেন তাঁর সকল সাহাবাগণ। তাই রাজনীতি থেকে দূরে থাকাটি ইসলামের মিশনের সাথে বেঈমানী। সেটি নবীজী(সা)র সূন্নতের সাথে গাদ্দারী। তাতে বিজয়ী হয় শয়তানের পক্ষ।

তাছাড়া ঈমানের মূল পরীক্ষাটি হয় রাজনীতিতে। নামায-রোযা-হজ্জ অনেক ঘুষখোর, সূদখোর ও হাসিনার ন্যায় ভোটচোর জালেমও করে, কিন্তু রাজনীতিতে ধরা পড়ে সে আসলে কোন পক্ষের সৈনিক। রাজনীতির ময়দানে এক সাথে দুই পক্ষে লড়াই করা যায়না, যে কোন এক পক্ষ বেছে নিতে হয়। ঈমানদারকে যোগ দিতে হয় ইসলামকে বিজয়ী করার পক্ষে। এটি পবিত্র জিহাদ। এ জিহাদে ঈমানদারকে শুধু ভোট দিলে চলে না, বিনিয়োগ করতে হয় তাঁর দৈহিক, আর্থিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্য। এমন কি বিলিয়ে দেয় তার রক্ত ও প্রাণ। অর্ধেকের বেশী সাহাবা শহীদ হয়েছেন। ঈমানদারের ঈমানদারী এভাবেই খালি চোখে দেখা যায় তাঁর রাজনীতিতে।

অথচ অধিকাংশ বাঙালী মুসলিমের রাজনীতিতে রুচি নাই। রাজনীতির ময়দানে নাই অধিকাংশ আলেম ও তাবলিগ জামায়াতের লোকেরা, এটিকে তারা দুনিয়াদারী মনে করেন। নবীজী (সা:)’র রাজনৈতিক সূন্নতের ধারে কাছেও তারা নাই। যারা নিজেদের নামাযী ও রোযাদার ভাবেন, তারাও ইসলামকে বিজয়ী করা নিয়ে ভাবেন না। এজন্যই রাজনীতিতে তাদের তেমন বিনিয়োগও নাই। নির্বাচন কালে বড় জোর ভোট দেন। এবং তাদের অধিকাংশই ভোট দেন তাদেরকে যারা সেক্যুলারিস্ট রূপে পরিচিত এবং যাদের এজেন্ডা হলো ইসলাম ও তার শরিয়তী বিধানকে পরাজিত রাখা। বস্তুত তাদের  কারণেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিরংকুশ বিজয়টি ইসলামের শত্রুপক্ষের।  

 

৩. পালিত হয়নি দায়িত্ব

গণতন্ত্রের সুফলটি বিশাল, এটি জনগণের ক্ষমতায়ন করে। দায়িত্ব দেয় সরকার নির্বাচনের। এ দায়িত্বটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। তবে ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে বাড়ে জনগণের নিজ দায়িত্বও। সে দায়িত্বটি সঠিক ভাবে পালন না করাটিও গুরুতর অপরাধ। দায়িত্ব এখানে যোগ্য, সৎ ও ঈমানদার মানুষকে নির্বাচিত করার। সেটি না হলে অপরাধটি হয় ইসলাম, দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে। পাপটি তখন ফিরাউন ও নমরুদের ন্যায় দুর্বৃত্ত স্বৈরাচারি শাসকদের পক্ষে দাঁড়ানোর ও ইসলামকে পরাজিত করার। তাই পাপটি এখানে ভয়নাক। এ পাপই জনগণকে জাহান্নামে টানে। সে পাপের কারণেই বাংলাদেশের জনগণের ইসলামী শাসনের সুফল থেকে তারা বঞ্চিত এবং ঘানি টানছে বর্বর স্বৈরশাসনের।

লক্ষণীয় হলো, শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ন্যায় নৃশংস স্বৈরশাসক বন্দুকের জোরে ক্ষমতায়  আসেনি। এসেছে কখনো বা জনগণের ভোটে, কখনো বা ভোটডাকাতি করে। ভোট দিয়ে মুজিব ও হাসিনার ন্যায় অপরাধীদের নির্বাচিত করার অপরাধটি অতি গুরুতর। এটি রুচিহীন অসভ্য কর্ম। অপরাধটি এখানে বাংলাদেশের জনগণের। আদালতে দাঁড়িয়ে খুনি ও চোরডাকাতকে ভাল মানুষ বলে সাক্ষী দিয়ে জেল থেকে তাদেরকে মুক্ত করাটি জঘন্য অপরাধ। তাতে সমাজ জুড়ে অপরাধ ও অশান্তি বাড়ে। তেমনি গুরুতর অপরাধ হলো স্বৈরাচারি ভোট-ডাকাতদের পক্ষে ভোট দিয়ে তাদেরকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসানো।

৪. চেনা হয়নি শত্রুদের

প্রতিটি মানুষকেই কিছু দায়-দায়িত্ব নিয়ে বাঁচতে হয়। দায়-দায়িত্ব নিয়ে বাঁচতে হয় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী ও আলেম সমাজকেও। তাদের কাজটি হলো দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে জনগণের সামর্থ্য বাড়ানো। সে সাথে তাদের আরো দায়িত্ব হলো যেসব দুর্বৃত্তগণ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসতে চায় তদের আসল রূপকে জনগণের সামনে তুলে ধরা। কিন্তু বাংলাদেশে সে কাজটিও হয়নি। বরং যাদের দায়িত্ব ছিল দুর্বৃত্তদের মুখোশ উম্মোচন করা, তারাই দুর্বৃত্তদের সাফাই গায়। অথচ চুরি করা যেমন অপরাধ, তেমনি অপরাধ হলো চোরকে সাহায্য করা। ফলে তাদের এ ব্যর্থতার কারণে চেনা হয়নি দেশের শত্রুদের। অথচ সভ্য সমাজ নির্মাণের কাজে শুধু হিংস্র পশুদের চিনলেই চলে না, চিনতে হয় মানবরূপী ভয়ানক শত্রুদেরও। সে ক্ষেত্রে ভূল দেশে গণহত্যা ঘটে এবং দেশের উপর স্বৈরাচারি বর্বরতা ও অসভ্যতার প্লাবন নেমে আসে। অথচ জনগণের সে অপরাধের কারণেই হাসিনা যেমন ক্ষমতায় এসেছে, অতীতে মুজিবও এসেছে। হাসিনাকে চিনতে জনগণ যেমন দারুন ভাবে ব্যর্থ হয়েছে তেমনি ব্যর্থ হয়েছে মুজিবকে চিনতেও।

কীরূপ ছিল মুজিব? কীরূপ ছিল তার রাজনীতি? শেখ মুজিবের রাজনীতির মূল উদ্দেশ্যটি ছিল যে কোন রূপে ক্ষমতা-দখল দেশের স্বাধীনতা, অখন্ডতা, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার এবিষয়গুলি তার কাছে কোন কালেই গুরুত্ব পায়নি। মুজিব ভারতকে সাথে নিয়ে পাকিস্তান ভেঙ্গেছে বাংলাদেশীদের জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি বা গণতন্ত্র দেয়ার জন্য নয়। বরং সেটি ছিল স্রেফ শাসন ক্ষমতা নিজ হাতে কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে। ক্ষমতার লোভে এমন কি শত্রু দেশের সাথে ষড়যন্ত্র করাও তার কাছে গর্হিত মনে হয়নি। ভারতের সাথে মিলে আগরতলা ষড়যন্ত্র্ করেছে ক্ষমতা-লাভকে প্রতিদ্বন্দিতাহীন করতে খুন করা হয়েছে ৩০ হাজারের বেশী মানুষকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সকল বিরোধী দলকে এবং কবরে পাঠানো হয়েছে গণতন্ত্রকে

বাঘ-ভালুকের চেয়ে বহুগুণ অধিক প্রাণনাশী হলো স্বৈরাচারি শাসকেরা। তারাই ইতিহাসে গণহত্যা, গণধর্ষণ, গুম-খুনের নায়ক।  বাংলাদেশেও তাই লাশ পড়ে স্বৈরাচারি শাসকের হাতে, বাঘ-ভালুকের হাতে নয়। প্রতিটি সভ্য দেশে এজন্যই স্বৈরাচারি শাসকদের ঘৃণা করা হয়। এবং ইতর  ও অসভ্য গণ্য করা হয় তাদের যারা তাদের প্রতি  শ্রদ্ধা দেখায়। হিটলারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো এজন্যই জার্মানীতে অপরাধ। জাহান্নামে যাওয়ার জন্য শয়তানকে ভালবাসাই যথেষ্ট। বস্তুত ব্যক্তির সভ্য ও অসভ্য রূপটি চেনার জন্য কোন গবেষণা লাগে না, সেটি দেখা যায় কাকে সে ভাল বাসে বা ঘৃণা করে -সেটি দেখে। মানুষের চরিত্র তো এভাবেই দর্শনীয় হয়। বাঙালীর সে চরিত্রটি দেখা যায় মুজিবের ন্যায় একজন নৃশংস স্বৈরচারীকে জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু বলার মধ্য দিয়ে। তার ন্যায় একজন গুরুতর অপরাধীকে কোন সভ্য মানুষ জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু বলবে সেটি কি ভাবা যায়? মুজিবের অপরাধ তো শুধু বাকশালী স্বৈরাচার নয়, ৩০ হাজার মানুষের প্রাণনাশ নয় এবং মানবিক অধিকার কেড়ে নেয়াও নয়। বরং তার অপরাধ তো ১৮ কোটি মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে তাদেরকে ভারতের ন্যায় শত্রুশক্তির দাস বানানোর। তার কারণেই সমগ্র বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে একটি ভারতীয় জেলখানায়। অপরাধ তো স্বাধীন মুসলিম রূপে বেড়ে উঠার অধিকার কেড়ে নেয়ার।

 

৫. মিলবে কি গণতন্ত্রের সুফল?

গণতন্ত্রের সুফল পেতে হলে জনগণকে প্রথমে শিক্ষিত ও বিবেকবান হতে হয়। শত্রু ও মিত্র, যোগ্য ও অযোগ্য এবং সত্য ও মিথ্যা –এ গুলি চেনার সামর্থ্য অর্জন করতে হয়। নইলে দুর্বৃত্তগণ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। নির্বাচন তখন ধুর্ত চোরডাকাতদের জন্য ক্ষমতার শীর্ষে উঠার সিঁড়িতে পরিণত হয়। ঘোড়ার আগে গাড়ি জোড়া যায়না। তেমনি জনগণকে সুশিক্ষিত নাগরিক রূপে গড়ে তোলার আগে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা দেয়া যায় না। অথচ বাংলাদেশে জনগণের মাঝে সে সামর্থ্য সৃষ্টির কাজটি হয়নি। বরং আগে যা ছিল সেটি দুষ্ট শিক্ষা ও প্রচারনায় বিনষ্ট করা হয়েছে।

পাশ্চত্যের যেসব দেশে গণতন্ত্র সফল ভাবে কাজ করছে -সেসব দেশে জনগণকে শিক্ষিত করার কাজটি শত বছর আগেই সমাধা করা হয়েছে। সেসব দেশে জনগণের মাঝে গড়ে তোলা হয়েছে নৈতিকতা ও বিবেক বোধ। ফলে স্বৈরাচারি শাসকদেরকে তারা গভীর ভাবে ঘৃণা করে। ঘৃণা করে দুর্বৃত্তদের। ফলে সেসব দেশে কোন স্বৈরচারী দুর্বৃত্তকে জাতির পিতা, নেতা ও বন্ধু বলা হয়না। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনের লোকেরা ভোটডাকাতিতে সাহায্য করবে -সেটিও ভাবা যায় না। আদালতের বিচারপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ভোটডাকাতির নির্বাচনকে সুষ্ঠ নির্বাচন বলে রায় দিবে -সেটিও সেদেশগুলিতে কল্পনা যায়না। কিন্তু বাংলাদেশে সেটিই সংস্কৃতি।

প্রশ্ন হলো বাংলাদেশে কি সেরূপ নৈতিকতা ও বিবেকবোধ নিকট ভবিষ্যতে গড়ে উঠবে? সে সম্ভাবনা তো ক্ষীণ। কারণ, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো জনগণকে শিক্ষিত করায় যাদের দায়িত্ব তাদের নিয়ে। দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিজেদেরই শিক্ষিত হওয়াতে অনেক ব্যর্থতা রয়েছে। তারাই দেশের অন্যতম নীতিহীন ও বিবেকহীন শ্রেণী। তারাই ভোটডাকাতিকে সুষ্ঠ নির্বাচন বলে এবং ভোটডাকাত হাসিনাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে। ফলে তারাই গণতন্ত্রের বড় শত্রু। রোগী যেমন রোগ ছড়ায়, এরাও তেমন নীতিহীনতা ও বিবেকহীনতা ছড়াবে। এরূপ নীতিহীনতা ও বিবেকহীনতায় কি কোন দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়? নির্মিত হয় কি সভ্য সমাজ? দেশের প্রতিটি বিবেকবান মানুষকে এ নিয়ে ভাবা উচিত। ০৩/০৪/২০২১

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *