বিবিধ ভাবনা (৪৮)

ফিরোজ মাহবুব কামাল

 ১. ধর্মের নামে ভয়ানক অধর্মের বিষয়টি

ইসলাম যে একমাত্র সত্য ধর্ম -সেটি অন্য ধর্মগুলির সাথে তূলনা করলে সুস্পষ্ট বুঝা যায়। একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালাই নির্ভূল। ফলে তাঁর নির্দেশিত ধর্ম ও ধর্মীয় বিধানগুলিও নির্ভূল। এবং সেটি সুস্পষ্ট বুঝা যায় অন্য ধর্মগুলির সাথে তুলনা করলে। ধর্মের দিক দিয়ে অতি মিথ্যা, অকল্যাণ ও অধর্মে ভরা হলো হিন্দু ধর্ম। যে কোন বিবেকবান মানুষের কাছেই সেটি ধরা পড়তে বাধ্য। একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায়, এ ধর্মের নির্মাণে সামান্য বিবেকবোধও কাজ করেনি। এক সময় এ ধর্মে স্ত্রীকে তার মৃত স্বামীর সাথে একই সাথে চিতায় জ্বলে মরতে হতো। নানা জাতপাতে মানবকে বিভক্ত করাই হলো এ ধর্মের রীতি। এবং রীতি হলো নানা জাতপাতের ভিত্তিতে মানুষকে অচ্ছুৎ গণ্য করা ও ঘৃণা করা। অতিশয় বিস্ময়ের বিষয় হলো, আজকের এই আধুনিক যুগে ভারতের শত কোটির বেশী মানুষ কি করে এমন একটি অজ্ঞতা ও বর্বরতাপ্রসূত ধর্মের অনুসারী হলো। এ ধর্মের বীভৎস রূপটি কোভিড রোগের কারণে আরো বীভৎস রূপে প্রকাশ পাচ্ছে। নীচে তারই কিছু উদাহরণ দেয়া যাক।

ইসলামের বিধান হলো, মৃতদেহের দাফন করা। হিন্দু ধর্মের বিধানটি মৃতদেহ পুড়িয়ে দেয়ায়। সরকারী হিসাব মতে কোভিডের কারণ ভারতে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সরকারী হিসাবে এ অবধি প্রায় ৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে বহু বিশেষজ্ঞের মতে মৃতের সংখ্যা সরকারের দেয়া সংখ্যা থেকে ৫ থেকে ১০গুণ বেশী। কোভিডে সমগ্র বিশ্বে যত মানুষ মারা যাচ্ছে এক ভারতে মারা যাচ্ছে তার অর্ধেকের বেশী। এতে বিপর্যস্ত হচ্ছে ভারতের পরিবেশ। শ্মশানগুলোতে শত শত লাশ পুরানো হচ্ছে। শ্মশানে জায়গা না হওয়ায় কার পার্ক, রাস্তা ও খোলা মাঠের উপর গড়ে উঠছে শ্মশান। হাজার হাজার লাশ পুড়ার গন্ধ ও ধুঁয়ায় বিষাক্ত হচ্ছে্ শহরের পরিবেশ।

একটি মানব দেহকে পুড়িয়ে পুরা ছাই করতে প্রচুর কাঠ লাগে। যে দরিদ্র মানুষের ঘরে চুলা জ্বালানোর জন্য খড়ির অভাব, সে কাঠ জোগাড় করবে কোত্থেকে? তাছাড়া হটাৎ চাহিদা বাড়ায় দিল্লি, মোম্বাই ও অন্যান্য বড় বড় শহরগুলিতে শুরু হয়েছে কাঠের সংকট্। কাঠের দাম প্রতি মন ৫ শত রুপীতে পৌঁছেছে। সংকট এড়াতে ভারতের বন বিভাগ রাস্তার গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু তাতে সমস্যা দূর হয়নি। কাঠের অভাবে লাশ না পুড়িয়ে বা আধা পুড়িয়ে শত শত লাশ ফেলা হচ্ছে নদীতে। হিন্দু ধর্মে সেটিও নাকি সিদ্ধ। গঙ্গা ও যমুনার ন্যায় নদীতে ফেলা অসংখ্য লাশ ফুলে ফেঁপে ভেসে উঠছে। লাশ থেকে রোগ ছড়িয়ে পড়বে এ ভয়ে আতংকিত নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষগুলো। অপর দিকে গলিত লাশগুলো ছড়াচ্ছে বিকট দুর্গন্ধ। অনেক লাশ কুকুর, শৃগাল ও শকুনের খাদ্য হচ্ছে। এ এক বীভৎস চিত্র। ভারতীয় টিভিতে এগুলোই হলো খবরের শিরোনাম।

মানুষ কতটা সভ্য ও বিবেকবান -সেটি ধরা পড়ে শুধু জীবিতদের প্রতি সন্মান দেখানোতে নয়। বরং ধরা পড়ে মৃতদের প্রতি কতটা সন্মান দেখানো হয় তা দেখে। প্রশ্ন হলো, হিন্দু ধর্মের যারা জন্ম দিয়েছিল তাদের মগজে মানব সমাজের অতি গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে কি তারা আদৌ ভাবেনি? ভারতীয় চ্যানেলগুলোয় লোমহর্ষক চিত্রগুলো যখন দেখি তখন মনে ভেসে উঠে নিজ চোখে দেখা ইরানের রাজধানী তেহরানের বেহেশতে জাহরার চিত্র। বেহেশতে জাহরা হলো তেহরানের সবচেয়ে বড় কবরস্থান। এটির আয়োতন ঢাকার সহরোওয়ার্দী উদ্যানের চেয়েও অনেক বড়। ইরাক-ইরান যুদ্ধে ইরানের দশ লাখের বেশী মানুষ নিহত হয়। সে যুদ্ধে তেহরানবাসীদের মধ্য থেকে যারা নিহত হয়েছিল তাদের কবরগুলি এখানে। অথচ মনে হয়, এটিই যেন তেহরানের সর্ববৃহৎ পার্ক। মনেই হয়না এটি কোন কবরস্থান। কবরস্থানের মধ্য দিয়ে অসংখ্য পরিচ্ছন্ন পাকা রাস্তা। রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধ দৃষ্টিনন্দন গাছ। কবরগুলো ঘিরে নানা রংয়ের ফুলের গাছ। যেন সে ফুলগাছগুলি পাহারা দিচ্ছে কবরগুলিকে। কবরের চার পাশ দিয়ে মার্বেল পাথরের আচ্ছাদন। প্রতিটি কবরে রয়েছে ফলক, তাতে রয়েছে নিহতের বাঁধানো ছবি। লেখা আছে জন্ম তারিখ, কবে এবং কোন রণাঙ্গণে নিহত হয়েছিল তার বিবরণ। এসব দেখে মনে হয়, ইরানীরা নিহতদের সন্মান দিতে জানে। কবরস্থানকে তারা জীবিত রেখেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার পরিবার আসে কবরবাসীদের জিয়ারত করতে। ছুটির দিনগুলোতে  কবরস্থান লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। তেহরানের বুকে এটিই হলো তেহরানবাসীর বেড়ানোর সবচেয়ে জনবহুল জায়গা। কবরের পাশে কার্পেট বিছিয়ে তার উপর ঘন্টার পর ঘন্টা অবস্থান করে। সমগ্র কবরস্থান জুড়ে এরূপ জমে উঠে বিপুল সংখ্যক মানুষের জটলা। নিহত ব্যক্তি হয়তো কারো সন্তান, কারা ভাই, কারো স্বামী বা কারো পিতা। তাকে ঘিরে তারা স্মৃতিচারণ করে। কেউ বা দোয়াদরুদ পাঠ করে। সেখানে বসেই তারা পানাহার করে।

জীবিতগণ তাদের জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ পাঠটি পায় মৃতদের থেকে। মৃতগণ নিজে মরে গিয়ে অনেক কিছুই শিখিয়ে যায়। জীবিতদের তারা মৃত্য-সচেতন করে। জিয়ারতকারী কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নিজের আগামী বাসস্থানটি স্বচোখে দেখে ঘরে ফিরে। কবরে যারা শুয়ে আছে তারাও একদিন জীবিত ছিল- সেটিই তো পরম সত্য। নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিপ্লবের জন্য এরূপ মৃত্যু-সচেতনতাটিই তো মুল্। জীবনের এ পাঠটি কোন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া যায় না। এজন্যই নবীজী (সা:) কবরস্থান জিয়ারতের নসিহত করেছেন্। মৃতদেহ জ্বালিয়ে দিলে শিক্ষালাভের সে অমূল্য বিদ্যাপীঠটি আর অবশিষ্ঠ থাকে কী? হিন্দু ধর্মে সেটি নেই।

 

২.  বিরাট ভূল হয়ে গেছে: এবার ভোগের পালা

বিশাল গাছ দেখেই বলা যায়, অনেক আগে সেখানে একটি চারা লাগানো হয়েছিল। তেমনি দেশে দুর্বৃত্তদের অতি নৃশংস স্বৈরশাসন দেখে নিশ্চিত বলা যায়, অতীতে স্বৈরশাসনের বীজ রোপন করা হয়েছিল। গাছ যেমন একদিনেই বড় হয়না, স্বৈরাচারি শাসনের দুর্বৃত্তিও তেমনি একদিনে দেশ জুড়ে জোয়ার আনে না। বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বীজ রোপনের কাজটি হয়েছিল ১৯৭০ সালে। এবং সেটি জনগণের নিজ হাতে। ভয়ানক সে ক্ষতির কাজটি হয়েছিল বাকশালী স্বৈরাচারি, খুনি এবং ভারতের সেবাদাস মুজিবকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করার মধ্য দিয়ে। বাঙালী মুসলিমের সমগ্র ইতিহাসে এটিই হলো সবচেয়ে বড় ভূল। সে ভূলের পর থেকেই বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে ভারতের একটি গোলাম রাষ্ট্রে।

ভূল করলে তার ফলও ভুগতে হয়। মুজিবের ন্যায় একজন ভারতীয় দালাল, খুনি ও বাকশালী স্বৈরাচারিকে ভোট দিলে গণতন্ত্র আসে না। বরং ডাকাতি আসে। হিংস্র নেকড়ে চেনার সামর্থ্য না থাকলে বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে লাভ কী? তখন নেকড়ের পেটে যেতে হয়। তেমনি  স্বৈরচারি দুর্বৃত্তকে কে না চিনলে কি গণতন্ত্র আসে? তবে কথা হলো, শেখ মুজিব ক্ষমতায় বসার পর স্বৈরাচারী, খুনি, দুর্বৃত্ত ও ভারতের সেবাদাস হয়নি। ক্ষমতায় যাওয়ার আগেও তো সে তাই ছিল। ভারতের সাথে ২৫ সালা চুক্তির আগেই সে আগরতলা ষড়যন্ত্র করেছিল।  কিন্তু বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ জেনে বুঝে তাকে মাথায় তুলেছে। ফলে আজ যা কিছু হচ্ছে তা জনগণের নিজ হাতের কামাই।

মুজিবের দুর্বৃত্তি, স্বৈরাচার ও ভারতসেবী চরিত্র পুরাপুরি বেঁচে আছে হাসিনার মাঝে। মুজিবের হাতে গণতন্ত্রের উপর ডাকাতি হয়েছিল। এবং জনগণের উপর চাপানো হয়েছিল একদলীয় বাকশালী ফ্যাসিবাদ। তেমনি হাসিনার হাতেও ডাকাতি হয়ে গেছে স্বাধীনতা। ডাকাতি হয়ে গেছে ভোটদানের অধিকার। ফলে ১৯৭০ সালে পাকিস্তান আমলে জনগণের মিটিং-মিছিল, লেখালেখী ও ভোটদানের যে স্বাধীনতা ছিল -সে স্বাধীনতার কথা এখন ভাবাও যায় না। জনগণ সেদিন যেভাবে স্বাধীন ভাবে ভোট দিতে পেরেছিল, সেটি আজ কল্পনাও করা যায় না। লক্ষণীয় হলো, মুজিবের ন্যায় হাসিনা্ও গণতন্ত্রের সংজ্ঞাই পাল্টে দিয়েছে। মুজিব তার একদলীয় বাকশালী শাসনকে গণতন্ত্র বলতো। তেমনি হাসিনাও স্বৈরাচারকে গণতন্ত্র বলছে। এবং ভোটডাকাতীকে বলছে সুষ্ঠ নির্বাচন।

 

৩. জনকল্যাণের ভাবনা চোরডাকাতদের থাকে না

চোরডাকাতদের জনকল্যাণের মহৎ ভাবনা থাকে না। সে ভাবনা থাকলে কি তারা চুরিডাকাতির ন্যায় কাউকে ক্ষতি করার কাজে নামতো। কল্যাণের সে ভাবনা ভোটডাকাত শেখ হাসিনারও নাই। দেশে কোভিড রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ভারতে সেটি অতি চরম আকার ধারণ করেছে। ভারত সরকারের স্বাস্থ্য খাত এখন পুরাপুরি বিপর্যস্ত। শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে আক্সিজেনের অভাবে। কোভিডের সে প্লাবন যখন তখন বাংলাদেশে্ও ধেয়ে আসতে পারে। অথচ বাংলাদেশ সরকারের জরুরি ভিত্তিতে যা করণীয় ছিল -সেটিই করছে না। দেশে নাই ভ্যাকসিন। ভারতকে ভ্যাকসিনের আগাম মূল্য দিয়েছিল, কিন্তু ভারত ভ্যাকসিন দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। জেলা হাসপাতালগুলোয় নাই আই.সি.ইউ বেড। নাই ভেনটিলেটর। নাই পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা। নাই প্রয়োজনীয় সংখ্যক হাসপাতাল বেড। নাই পর্যাপ্ত সংখ্যক ডাক্তার ও নার্স।  থানা পর্যায়ের হাসপাতালগুলির অবস্থা তো আরো শোচনীয়। জনগণের জীবন বাঁচানো নিয়ে সরকারের আগ্রহ কত সামান্য -সেটি বুঝতে কি এরপরও কিছু বাকি থাকে? অথচ হাসিনার এজেন্ডা স্রেফ তার গদি বাঁচানো এবং সে সাথে তার মৃত পিতার স্মৃতি বাঁচানো। শেখ মুজিবের স্মৃতি বাঁচানোর সে কাজে দেশের রাজস্ব ভান্ডার থেকে সম্প্রতি শত শত কোটি টাকা খরচ করলো।

৪. দানের প্রচার
রমযান মাসে মানুষের মাঝে দানে আগ্রহ বাড়ে। আনেকেই এ মাসে প্রচুর দান-খয়রাত করেন। অনেকে আবার দান-খয়রাতের ছবি ছেপে প্রচারও করছেন। অথচ দান যখন গোপনে করা হয় -বুঝতে হবে সে দানে মহান আল্লাহতায়ালার ভয় আছে। যখন দানের ছবি তুলে অন্যদের দেখানো হয় -তখন বুঝতে হবে এর মধ্যে রাজনীতি ও রিয়াকারী তথা লোকদেখানোর ভাব আছে, যা দানের ছওয়াব কমিয়ে দেয়। দানের লক্ষ্য, পরকালের এ্যাকাউন্টে নিজের সঞ্চয় বাড়ানো। সেটি তখন বাড়ে যখন সে দানে মহান আল্লাহতায়ালা খুশি হয়। কোন বান্দাহকে খুশি করা যেমন লক্ষ্য নয়, তেমনি কারো থেকে বাহবা পাওয়াও লক্ষ্য নয়। ফলে প্রচারের কেন প্রয়োজন হবে?   

৫. শ্রেষ্ঠদান
সবচেয়ে বড় দানটি অর্থ, বস্ত্র, গৃহ বা ভূমিদান নয়। সেটি পবিত্র কুর’আনের জ্ঞানদান। একমাত্র এ দানই জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচায়। কোটি টাকা দানেও সে কল্যাণটি হয়না। নবীরাসূলগণ অর্থশালী ছিলেন না। তারা দান করেছেন ওহীর জ্ঞান। কিন্তু বাংলাদেশে জ্ঞানদানের সে কাজটি হচ্ছে না। মকতব খুলে ছাত্র-ছাত্রীদের স্রেফ তেলাওয়াত শেখানো হচ্ছে। কিন্তু জ্ঞানদানের কাজ হচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশে কুর’আন শেখানোর নামে সেটিই বেশী বেশী হচ্ছে।

৬. শ্রেষ্ঠ ইবাদত

যে ইবাদতে অর্থ, শ্রম, মেধা ও রক্তের বিনিয়োগ ঘটে সেটি হলো জিহাদ। অন্য কোন ইবাদতে জান, মাল ও সামর্থ্যের এরূপ বিশাল বিনিয়োগ হয়না। জিহাদ এজন্যই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। একমাত্র জিহাদই শয়তানী শক্তিকে পরাজিত করে এবং ইসলামকে বিজয়ী করে। নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাতের ন্যায় ইবাদতে সেটি হয় না। জিহাদীরাই মুসলিম উম্মহর ভাগ্য পাল্টা এবং জমিনের উপর মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের গৌরব বাড়ায়। এবং প্রতিষ্ঠা দেয় তাঁর সার্বভৌমত্বের।

জিহাদে প্রাণ গেলে শহীদ হয় এবং বিনা হিসাবে জান্নাত পায়। আন্য কোন ইবাদতের ক্ষেত্রে সে প্রতিশ্রুতি নাই। জিহাদের মধ্যে সত্যিকার ঈমান দেখা যায়। মুনাফিকও নামায পড়তে পারে, হজ্জ করতে পারে এবং যাকাতও দিতে পারে। কিন্তু মুনাফিক কখনোই জিহাদে হাজির হয়না। তাই বলা হয়, যার মধ্যে জিহাদ নাই তার  মধ্যে সত্যিকার ঈমানও নাই। এমন ব্যক্তি ঈমানের দাবী করলেও সে আসলে মুনাফিক।

৭. বই ও বই পড়ার গুরুত্ব

ঘরে শুধু চাল-ডালের- মওজুদ বাড়ালে চলে না, বইয়ের মওজুদও বাড়াতে হয়। চাল-ডাল দেহ বাঁচায়, আর মনে পুষ্টি জোগায় সুন্দর সুন্দর বই। তাই মানবিক গুণে মানুষ রূপে বেড়ে উঠার জন্য বই পড়া জরুরি। মুসলিমদের গৌরবকালে ঘরে ঘরে লাইব্রেরি ছিল। তারা শুধু দৈহিক স্বাস্থ্যেরই অধিকারী ছিল না, তাদের মনের স্বাস্থ্যও বলিষ্ঠ ছিল। সে সময় ছাপাখানা আবিস্কৃত না হলেও হাতে লিখে হাজার হাজার বই প্রকাশ করা হতো। একটি ভাল বই নকল করে সুন্দর হস্তাক্ষরে শত শত বই লেখা হতো। সে গুলি ছড়িয়ে পড়তো সমগ্র মুসলিম বিশ্ব জুড়ে। যারা নকল করতো তাদের কাতেব বলা হতো। হাজার হাজার পরিবার বই নকল করার পেশায় জীবিকা নির্বাহ করতো।

বইপড়া কমতে শুরু হলে নীচে নামাও শুরু হয়। মুসলিম দেশগুলোতে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হলেও বই লেখা ও বইপড়া বাড়েনি। একটি জাতি চেতনা-চরিত্র ও মানবিক গুণে কতটা সমৃদ্ধ সেটি বুঝার জন্য ঘর-বাড়ী, চাল-ডাল ও অর্থ ভান্ডারের খবর নেয়ার প্রয়োজন নাই। দেশের বইয়ের দোকানগুলিতে কতগুলি বই বিক্রয় হয় সে খোঁজ নিলেই সেটি সঠিক বুঝা যায়। সাড়ে ৬ কোটি মানুষের দেশ হলো বিলেত তথা যুক্তরাজ্য। অথচ এদেশে যত বই ছাপা হয় এবং যত বই পড়া হয় তা ১৫০ কোটি মুসলিমের দেশগুলিতে ছাপা হয়না। পড়াও হয়না। অথচ মুসলিম দেশগুলির সম্পদ কি কম? মুসলিমগণ কেন পিছিয়ে আছে সেটি বুঝতে কি এরপরও কি্ছু বাকি থাকে? বই পড়ার দিক দিয়ে এগিয়ে আছে অথচ উন্নয়নে পিছিয়ে আছে -এমন একটি দেশ কি দুনিয়াতে খুঁজে পাওয়া যাবে? তেমনি বই পড়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে কিন্তু উন্নয়নে এগিয়ে আছে -এমন কোন দেশও কি কোথাও আছে?   

৮. বাঙালী মুসলিমের সবচেয়ে বড় অপরাধটি প্রসঙ্গে

মানুষের কর্ম ও চরিত্র নিয়ন্ত্রিত হয় তার ঈমান বা বেঈমানী থেকে। ঈমানদারীর প্রকাশ ঘটে মিথ্যা ও দুর্বৃত্তদের ঘৃনা এবং সত্য ও ভালবাসার মধ্যে। অপর দিকে বেঈমানীর প্রকাশ ঘটে খুনি ও স্বৈরাচারী দুর্বৃত্তদের পক্ষ নেয়ার মধ্য দিয়ে। ফিরাউনের ন্যায় স্বৈরাচারী দুর্বৃত্তগণ যে দেশে পিতা, নেতা ও বন্ধু রূপে স্বীকৃতি পায় সেদেশের মানুষকে কি বলা যাবে? এটি কি ঈমানদারীর প্রকাশ?

ভয়ানক অপরাধ শুধু খুন, ব্যাভিচারীও চুরিডাকাতি নয়। ঈমান ও বিবেকের পরীক্ষা হয় দুর্বৃত্ত ও তার মিথ্যাবৃত্তি ও দুর্বৃত্তিকে ঘৃণা করার সামর্থ্য দেখে। যারা জাহান্নামে যাবে তারা যে সবাই খুনি, ব্যাভিচারী ও চোর-ডাকাত তা নয়। যারা মুর্তি পূজারী কাফের তারা যে সবাই দুর্বৃত্ত বা খুনি তাও নয়। তাদের অপরাধ সত্যকে চিনতে ব্যর্থ হওয়ায়। বাঙালী মুসলিমের সমগ্র ইতিহাসে সবচেয়ে বড অপকর্ম এবং সবচেয়ে বড় অপরাধটি হলো, শেখ মুজিবের ন্যায় বাকশালী স্বৈরাচারী ও ইসলাম বিরোধী দুর্বৃত্তকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করায় এবং তাকে বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা রূপে মেনে নেয়ায়। তার মিথ্যাচারী, স্বৈরাচারী ও ভারতসেবী চরিত্র চিনতে বাঙালী মুসলিমগণ নিদারুন ব্যর্থ হয়েছে। এরূপ ব্যর্থতার কারণেই মিশরবাসীগণ ফিরাউনকে ভগবান বলতো ও হযরত মূসা (আ:)’র বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। তথচ তারা বুদ্ধিহীন ছিল না; তারাই বিস্ময়কর পিরামিড নির্মাণ করেছে। কিন্তু সে বুদ্ধিকে তারা সত্যকে সনাক্ত করার কাজে লাগায়নি। একই রূপ ব্যর্থতা নিয়েই হিন্দুগণ সাপ, মুর্তি ও গরুকে ভগবান বলে। এরূপ অক্ষমতা মহান আল্লাহতায়ালার কাছে গণ্য হয় গুরুতর অপরাধ রূপে। ১১/০৫/২০২১

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *