বিবিধ ভাবনা ৫৮
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on June 15, 2021
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
১. শাবাশ ফিলিস্তিনীরা
অবাক করার মত বিস্ময় দেখিয়েছে ফিলিস্তিনী জনগণ। বাংলাদেশের জনগণের জন্য তাদের থেকে অনেক কিছুই শিখবার আছে। ফিলিস্তিনের জন্য যেমন ইসরাইল, বাংলাদেশের জন্য তেমনি হলো ভারত। যে লড়াইটি আজ ফিলিস্তিনীরা লড়ছে, সে লড়াইটি বাংলাদেশীদেরও লড়তে হবে। ফিলিস্তিনীদের পাশে কেউ নাই। তারা একাই যুদ্ধ লড়ছে। অন্যরা ফিলিস্তিনীদের পক্ষ নিতেও ভয় পায়, কারণ তাতে শত্রুতা অনিবার্য হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সাথে। বাংলাদেশও সব দিকে শত্রু দ্বারা পরিবেষ্টিত, লড়তে হবে একাই। ইসরাইল কোন সাধারণ রাষ্ট্র নয়। সেটি এক বিশাল ক্ষুদার্ত কুমির। শুরু থেকেই সে আগ্রাসী। তার রয়েছে দুইটি বিশাল চোয়াল যা দিয়ে শক্ত ভাবে চেপে ধরেছে সমগ্র ফিলিস্তিনকে। শুরুতে ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা শতকরা ৫ ভাগের বেশী ছিল না। এখন রীতিমত পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলেছে ফিলিস্তিনের প্রায় চার ভাগের তিন ভাগকে। বাকি সিকি অংশকেও লাগাতর ক্ষতবিক্ষত করছে বিশাল দুই দাঁতালো মাড়ির মাঝে রেখে। ফিলিস্তিনীদের ঘরবাড়ী এবং শিশুরাও এ কুমিরের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। রেহাই পাচ্ছে না হাসপাতাল, ক্লিনিক, পাওয়ার হাউস, ও পানির লাইন।
এ আগ্রাসী কুমিরকে শক্তি ও সাহস জুগাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্টসহ সকল পশ্চিমা জগত। তারা শুধু অবৈধ দেশটিকে জন্মই দেয়নি, বিপুল অর্থে ও অস্ত্রে প্রতিপালনও দিচ্ছে। এ কুমিরের গ্রাস থেকে ফিলিস্তিনীদের মুক্তি দেয়ার কেউ নাই। প্রতিবেশী মিশর ও জর্দানের কাছে গুরুত্ব নাই ফিলিস্তিনীদের নিরাপত্তার বিষয়টি। তাদের দরদ বরং ইসরাইলের নিরাপত্তার প্রতি। সম্প্রতি আরব আমিরাত, বাহরাইন, ওমান, সুদান এ কুমিরকেই কোলে তুলে নিয়েছে। ইসরাইলে সাথে এ দেশগুলি কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। বাংলাদেশের হাসিনা সরকারও এ কুমিরের কাছে প্রিয় হতে উদগ্রীব। তাই এতোদিন পাসপোর্টে ইসরাইলে প্রবেশের উপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল সেটিও তুলে দিয়েছে। তাছাড়া আল-জাজিরা ডক্যুমেন্টারী তো দেখিয়ে দিয়েছে, ইসরাইল থেকে সামগ্রী কেনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের বাতিক কত গভীর। শত্রুর সাথে বানিজ্য করার অর্থ তো তার হাতে অর্থ তুলে দেয়া। বাংলাদেশ তো তাই করছে।আর সে অর্থ ব্যয় হচ্ছে ফিলিস্তিনীদের হত্যা ও নির্যাতিত করার কাজে।
কিন্তু কুমিরের চোয়ালে আটকা পড়েও অবাক করার মত সাহস দেখিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনী জনগণ। ফিলিস্তিনী যুবকগণ খালি হাতে এবং কখনো হাতে ঢিল নিয়ে লড়ে যাচ্ছে ইসারাইলের ট্যাংকের বিরুদ্ধে। নানারূপ দমন প্রক্রিয়ার মুখেও ফিলিস্তিনীগণ অবাক করার মত সাফল্য দেখিয়েছে নিজেদের শিক্ষিত করার ক্ষেত্রে। তাদের হাতে রাষ্ট্র নাই, প্রশাসন নাই এবং অর্থও নাই। অথচ স্বাক্ষরতার হার ফিলিস্তিনীদের মাঝে শতকরা শত ভাগ। অন্ধ ও বধিরদদেরও তা শিক্ষা দিয়েছে। শতভাগ শিক্ষার সে হার বিপুল সম্পদ থাকা সত্ত্বেও সৌদি আরবের মত তেলসমৃদ্ধ দেশগুলিতে নাই। আরো বিস্ময়ের বিষয় হলো পিএইডি ডিগ্রিধারীদের হার বিশ্বের সকল রাষ্ট্রগুলির মাঝে সবচেয়ে বেশী হলো ফিলিস্তিনীদের মধ্যে। ফিলিস্তিনীদের সমুদয় জনসংখ্যা ঘরে-বাইরে দিয়ে এক কোটিও নয়। কিন্তু ২২টি আরব দেশের প্রায় ৩৫ কোটি আরব যে সংখ্যক লেখক ও বুদ্ধিজীবী সৃষ্টি করেছে ফিলিস্তিনী লেখক ও বুদ্ধিজীদের সংখ্যা তার চেয়ে অধিক। এভাবে ফিলিস্তিনীরা বিপুল সংখ্যায় গড়ে তুলেছে বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধের কৌশলী লড়াকু সৈনিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা প্রফেসর হলো ফিলিস্তিনী। ফিলিস্তিনের লন্ডনস্থ্য রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে বললেন, এমনকি ইসরাইলের কোন কোন হাসপাতালের শতকরা ৪০ ভাগ ডাক্তার হলো ফিলিস্তিনী। অথচ ইসরাইলে ফিলিস্তিনীগণ জনসংখ্যার মাত্র শতকরা ২০ ভাগ। তাছাড়া আরবী ভাষায় উচ্চাঙ্গের সাহিত্য সৃষ্টিতেও ফিলিস্তিনীগণ এগিয়ে আছে বাকি আরবদের থেকে।
ফিলিস্তিনীদের আরেক সাফল্য হলো তারা গড়ে তলেছে বিপুল সংখ্যক বিশ্বমানের সাংবাদিক এবং বিশেষজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সেটি বুঝা যায় আল-জাজিরার আরবী ও ইংরেজী বিভাগের রিপোটিং ও বিশ্লেষনের মান দেখলে। গাজা ও অধিকৃত ফিলিস্তিন থেকে যারা দিবারাত্র অতি উচ্চমানের রিপোর্টিং করে তারা সবাই ফিলিস্তিনী। ইংরেজী ভাষায় তাদের রিপোর্টিং করার দক্ষতা কোন দক্ষ ইংরেজ বা মার্কিন সাংবাদিকের চেয়ে কম নয়। বিশ্বজুড়ে আল-জারিয়ার জনপ্রিয়তার মূল কারণ রিপোর্টিংয়ের উচ্চ মান। আল-জাজিরা ছাড়াও তারা কাজ করছে অন্যান্য বহু বিদেশী চ্যানেলগুলিতেও। তাদের কারণেই ইসরাইলের বর্বরতাগুলি আজ সরাসরি অসংখ্য কামেরার নখদর্পনে। সেগুলি ত্বরিৎ বেগে প্রদর্শিত হয় সমগ্র বিশ্বজুড়ে। এরই ফল হলো, বিশ্বজুড়ে জনমত গড়ে উঠছে ফিলিস্তিনীদের পক্ষে। সেটি বুঝা যায় ইসরাইলীদের হামলার প্রতিবাদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং দক্ষিণ অ্যামেরিকার শহরগুলির রাজ পথে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় দেখে। লক্ষণীয় হলো, বিক্ষোভকারীদের অধিকাংশই অমুসলিম। কারণ, বহু মার্কিনী ও ইউরোপীয়রা বুঝতে পেরেছে ইসরাইলকে দেয়া তাদের রাজস্বের অর্থ ব্যবহৃত হচ্ছে নিরীহ নারী-পুরুষ ও শিশু হত্যার কাজে। বিবেকমান মানুষ কি তখন নীরবে বসে থাকে? এমনকি অনেক ইহুদীরাও “ফ্রি প্যালেস্টাইন”প্লাকার্ড নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধে ফিলিস্তিনীদের এটি এক গুরুত্বপূ্র্ণ বিজয়।
২. সভ্য ও অসভ্যদের পরিচয়
সভ্য মানুষেরা বসত ঘরে আবর্জনা জমতে দেয় না। সেগুলি নিয়মিত পরিস্কার করে। তেমনি রাষ্ট্র থেকেও নির্মূল করে আবর্জনা তথা দুর্বৃত্তদের। এ কাজগুলি নিয়মিত না হলে দেশ সভ্য বসবাসের আযোগ্য হয়ে পড়ে। অপরদিকে অসভ্য মানুষেরা মশা-মাছি ও পোকামাকড়ের ন্যায় আবর্জনার স্তুপকে ভালবাসে। তারা যেমন ঘরের আঙ্গিনায় আবর্জনার স্তুপ গড়ে, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রকে দুর্বৃত্ত ও অসভ্য মানুষে ভরে তোলে। এরাই ভোটচোর ও ভোটডাকাতকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রূপে বরণ করে নেয়। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে বিশ্বমাঝে ইতিহাস গড়েছে।
অথচ সভ্য মানুষের গুণ হলো, চুরিডাকাতি ও ভোটডাকাতির ন্যায় দুর্বৃত্তিকে সে মন দিয়ে ঘৃনা করে। এ জন্যই যে কোন সভ্য দেশে ভোটচোর ও ভোটডাকাতদের স্থান হয় কারাগারে, তাদেরকে কখনোই প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসানো হয়না। তাই কারো বিবেক আছে কি নাই –সেটি গোপন থাকার বিষয় নয়, সূর্যের আলোর ন্যায় দেখা যায়। যার বিবেক আছে সে কখনোই চোর-ডাকাতকে মাননীয় বলে না, বরং সামর্থ্য থাকলে সে দুর্বৃত্ত অপরাধীর মুখে সর্বশক্তি দিয়ে থাপ্পড় মারে। অপরদিকে যে ব্যক্তির বিবেক নাই, সে ভোটচোরকে মাথা ঝুঁকিয়ে কুর্নিশ করে এবং তারা পায়ে মালিশ করে।
পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশে সে অসভ্য কর্মটিই ব্যাপক ভাবে হচ্ছে। চোরডাকাত, ভোটডাকাত দুর্বৃত্তদের ঘৃনা করা বদলে তাদের প্রতি সন্মান দেখার সংস্কৃতি গড়ে উঠছে। এটি এমন এক ভয়ানক সাংস্কৃতিক ও আদর্শিক দুর্গতি, যার নাশকতা কোভিড মহামারী বা সুনামীর চেয়েও অধিক। মহামারী বা সুনামীতে কিছু মানুষ মারা যায় কিন্তু তাতে জাতির চরিত্র ও বিবেক মারা যায়না। কিন্তু সাংস্কৃতিক ও আদর্শিক দুর্গতিতে মৃত্যু ঘটে জাতীয় চরিত্র ও বিবেকের। অথচ সে ভয়ংকর অপসংস্কৃতি নির্মিত হচ্ছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আদালতের বিচারক, সেনাবাহিনীর জেনারেল, সংসদ সদস্য, সচিব, বুদ্বিজীবী ও মিডিয়া কর্মীদের পক্ষ থেকে। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষক দল বেঁধে ভোটডাকাতিকে সুষ্ঠ নির্বাচন বলে বিবৃতি দেয় তখন কি বুঝতে বাকি থাকে, তাদের বিবেক আদৌ বেঁচে নাই?
গরুরা ঘাস চায়, প্রভুর গুণ দেখে না। মানবরূপী গরুগণেরও একই ধর্ম। তারা বেশী বেশী উচ্ছিষ্ট চায়, মনিবের গুণ দেখে না। তাই চোর, ভোটচোর, ভোটডাকাত, খুনি, ও সন্ত্রাসী হওয়াটি এই গরুচরিত্রের মানুষদের কাছে ঘৃণার কারণ হয় না। বাংলাদেশের জন্য ভয়ানক বিপদের কারণ হলো দেশটি এরূপ গরু চরিত্রের মানুষের সংখ্যাটি বিশাল। ফলে হাসিনার মত নৃশংস ভোটডাকাতকেও অসংখ্য চাকর-বাকর ও চাটুকর পেতে আদৌ বেগ পেতে হয়না। এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুলিশ কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর জেনারেল, সচিব, আদালতের বিচারক পর্যায়ের লোকেরাও সে কাজে সদা প্রস্তুত। রবীন্দ্রনাথ এদের নিয়েই বলেছিলেন, হে বিধাতা সাত কোটি প্রাণীরে রেখেছো বাঙালী করে, মানুষ করোনি। বাঙালী ব্যর্থতা বস্তুত মানুষ হওয়া নিয়েই।
৩. মানুষ ও অমানুষ
যে ব্যক্তি একজন ভোটডাকাতকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে সে ব্যক্তি প্রফেসর, আদালতের বিচারপতি, সেনাবাহিনীর জেনারেল, সরকারের সেক্রেটারী, লেখক বা বুদ্ধিজীবী হতে পারে, কিন্তু সে ব্যক্তি আদৌ কোন মানুষ হতে পারে না। সে বস্তুত মানবরূপী শতভাগ অমানুষ। তার পক্ষে ঈমানদার হওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। ভাত-মাছ-মাংস দৈহিক বল দেয়। ঈমান দেয় নৈতিক বল। নৈতিক বলে সে চোর কে চোর, স্বৈরচারী দুর্বৃত্তকে স্বৈরচারী দুর্বৃত্তই বলে। তাই যার হৃদয়ে শরিষার দানা পরিমান ঈমান আছে সে কি কখনো কোন ভোটডাকাত দুর্বৃত্তকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে? যে ব্যক্তি সেরূপ বলে, বুঝতে হবে সে ব্যক্তি পাকা বেঈমান। ঈমান না থাকার কারণেই তার মাঝে কোন নৈতিক বল নাই। পশুর বাচ্চারা শুধু গায়ে-গতরে বড় হয়।ন্যায়-অন্যায়ের বোধ নিয়ে তারা বাড়ে না। একই অবস্থা মানবরূপী পশুদেরও। এরাই বাংলাদেশে চোরডাকাত-ভোটডাকাতকে সন্মান করে। ভোটডাকাত সর্দারনীকে তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বলে।
৪.জঙ্গলের রাজা ও অসভ্যদের রাজা
জঙ্গলে যে পশুর দেহ, দাঁত ও নখর বড় সেই বনের রাজা হয়। আর অসভ্য দেশে চুরি-ডাকাতি, ভোটডাকাতি, গুম-খুন ও সন্ত্রাসের সামর্থ্য যার বেশী -সেই প্রধানমন্ত্রী বা শাসক হয়। তারই উজ্জল দৃষ্টান্ত হলো বাংলাদেশ। অপর দিকে সভ্য সমাজের লক্ষন হলো, সেখানে সন্মানিত হয় ভদ্র ও যোগ্য জনেরা। তাই একটি দেশ কতটা অসভ্য বা সভ্য সেটি বুঝার জন্য গবেষণার দরকার পড়েনা। চোখ খুললেই সেটি সুস্পষ্ট দেখা যায়। সেটি বুঝা যায় দেশটি চোরডাকাত, ভোটডাকাত, খুনি, ধর্ষক ও সন্ত্রাসীরা কতটা সন্মানিত হয় -সেটি দেখে। এ বিচারে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম। একমাত্র এ দেশটিতেই একজন রাতের ভোটচোরকে কারাগারে না পাঠিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে সন্মান দেখানো হয়। এ লজ্জা ও অপমান সমগ্র বাংলাদেশীদের।
৫. আল্লাহর সৈনিক ও দলীয় ক্যাডার
যে ব্যক্তি মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীন ইসলামকে রাষ্ট্রের বুকে বিজয়ী করার লক্ষে কাজ করে সে পাগল হয় অন্য ইসলামপন্থীদের সাথে একতা গড়ার জন্য। কারণ সে জানে, একতা ছাড়া বিজয় অসম্ভব। তাছাড়া সে ব্যক্তি এটিও জানে, একতা গড়া নামায-রোযার ন্যায় ফরজ এবং অনৈক্য মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে আযাব ডেকে আনে। অপর দিকে যে ব্যক্তি দল, মাজহাব, পীর বা ফিরকার জন্য কাজ করে সে একতার ঘোরতর শত্রু। অন্যদের সাথে একতা গড়ার মাঝে সে নিজের দল, নিজের ফিরকা, নিজের মজহাব ও নিজের পীরমুরিদীর বিলুপ্তি দেখে। তাই সে একতার কথা মুখে আনে না। বাংলাদেশে ইসলামের পরাজয়ের মূল কারণ তো এখানেই। যারা নিজেদের ইসলামী রূপে জাহির করে তাদের প্রবল আগ্রহটি হলো অনৈক্যে। এভাবে মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করার বদলে খুশি ও বিজয়ী করছে শয়তানকে।
বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে ইসলামের নামে দল, মজহাব, ফিরকা ও পীরের নামে বিপুল সংখ্যাক ক্যাডার থাকলেও মহান আল্লাহতায়ার দ্বীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে মুখলেছ সৈনিক নাই। এ ক্যাডারদের মূল তাড়নাটি দলের নেতা, মাজহাবের গুরু ও পীরদের খুশি করা, মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করা নয়। অথচ যদি দেশে বহু শত নবী একত্রে প্রেরিত হতেন তবে তাদের মধ্যে সীসাঢালা প্রাচীরসম একতা স্থাপিত হতো। কারণ তাদের সবারই লক্ষ্য হতো মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করা; কোন দল, ফেরকা, মজহাব বা ফেরকার কর্তা ব্যক্তিকে খুশি করা নয়।
৬. অশিক্ষার খেসারত
সভ্য মানুষের আগ্রহ শুধু পানাহারে নয়, বরং লাগাতর শেখা ও শেখানোতেও। শুধু পানাহার নিয়ে বাঁচাটি পশুর গুণ। অশিক্ষা ও কুশিক্ষার নাশকতা বিশাল। তাতে মুসলিম হওয়া দূরে থাকে, মানুষ হওয়াই অসম্ভব করে। পবিত্র কুর’আনে ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিটি ঈমানদার হলো মহান আল্লাহতায়ালার খলিফা তথা প্রতিনিধি। ইংরেজীতে এরূপ প্রতিনিধিকে বলা হয় ভাইসরয়। খলিফার পক্ষে সার্বভৌম হওয়া হারাম। তাকে কাজ করতে হয়ে প্রভূর দেয়া এজেন্ডা ও কর্মপদ্ধতি মেনে। সেক্ষেত্রে হের ফের হলে জাহান্নামে যেতে হয়।
মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিনিধি তথা ভাইসরয়ের দায়িত্বটি এক বিশাল দায়িত্ব। মানব জীবনে এটিই হলো সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। কোন মুর্খ বা জাহেল ব্যক্তির পক্ষে সে বিশাল দায়ভার পালন কি সম্ভব? যে ব্যক্তি তার প্রভুর দেয়া নির্দেশনা ও কর্মপ্রণালীই বুঝে না, সে দায়িত্ব পালন করবে কী করে? যে ব্যক্তি সেনা কমান্ডারের কমান্ডের ভাষাই বুঝে না -সে ব্যক্তি সৈনিক হয় কি করে? মুসলিম মানেই তো আল্লাহর সৈনকি। মুর্খ বা জাহেল ব্যক্তির পক্ষে এজন্যই অসম্ভব হলো মুসলিম হওয়া। তার জন্য শয়তানের খলিফা হওয়া ও জাহান্নামের যাত্রী হওয়া সহজ হয়ে যায়।
তাই ইসলামে সর্বপ্রথম যে ইবাদতটি ফরজ করা হয়েছে সেটি নামায-রোযা বা হজ্জ-যাকাত নয়। সেটি হলো কুর’আনের জ্ঞানার্জন। এবং “ইকরা”তথা পড়ে কুর’আনের প্রথম শব্দ। লক্ষণীয় হলো, বিশ্বের সকল ধর্মের মাঝে একমাত্র ইসলামই শিক্ষালাভকে ফরজ ইবাদত তথা বাধ্যতামুলক করেছে। নবীজী (সা:)’র হাদীস: যারা কুর’আন শিক্ষা করে এবং কুর’আন শিক্ষা দেয় তারাই মানবকুলে শ্রেষ্ঠতর। অথচ পরিতাপের বিষয় হলো মুসলিমগণই আজ বিশ্বমাঝে সবচেয়ে অশিক্ষিত। এবং সে অশিক্ষাটি সবচেয়ে বেশী হলো কুর’আন শিক্ষার ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীগণ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করে পবিত্র কুর’আনের একটি আয়াত বুঝার সামর্থ্য অর্জন না করেই। দেশের ভবিষ্যৎ ক্ষেতখামার বা কলকারখানায় নির্মিত হয় না, সেটি হয় শিক্ষাঙ্গণে। অথচ বাংলাদেশে এটিই হলো সবচেয়ে ব্যর্থ খাত। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও চোরডাকাত-ভোটডাকাত দুর্বৃত্তদের ঘৃনার সামর্থ্য পাচ্ছেনা। ১৫/০৬/২০২১
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018