বিবিধ ভাবনা ৬০
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on June 22, 2021
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
১. ইতর চেতনা ও অর্জিত আযাব
ভাষা, বর্ণ ও আঞ্চলিকতার উর্দ্ধে উঠে বিশ্বময়ী প্যান-ইসলামীক মুসলিম ভাতৃত্ব ও ঐক্যের কথা বললেই অনেকের কাছে সেটি অসম্ভব ও অলিক ইউটোপিয়ান কথাবার্তা মনে হয়। এরূপ কথায় তাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। কিন্তু উপায় নাই। লক্ষ্যটি বহু দূরের ও দুরুহ মনে হলেও পথচলাটি প্রতি মুহুর্তে সঠিক পথে হওয়াটি জরুরি। নইলে চলাটি ভূল পথে হয়। তাই একতার পথ ছাড়া ঈমানদারের সামনে ভি্ন্ন পথ নাই। বিশ্বময়ী মুসলিম ঐক্যের পথই হলো মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নির্দেশিত একমাত্র সঠিক পথ। পবিত্র কুর’আনে এই পথকেই বলা হয়েছে সিরাতুল মুস্তাকীম। বিভক্তির পথ কখনোই সিরাতুল মুস্তাকীম হতে পারে না, সেটি শয়তানের পথ। তাছাড়া পথ চলায় সফল হওয়াটিই বড় কথা নয়। সেটি ভাবনার বা শংকার বিষয়ও নয়। সফলতা জুটে একমাত্র মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। ফলে সফলতার পুরা ক্রেডিট তো মহান আল্লাহতায়ালার। ব্যক্তি তো পুরস্কার পায় তার নিয়েত, মেহনত ও সঠিক পথ বেছে নেয়ার পুরস্কার রূপে। গন্তব্যে পৌঁছতে বিফল হলে তার জন্য কোন শাস্তি নাই। বহু নবীও মিশনে সফল হতে পারেননি। রোজ হাশরে ঈমানদারের বিচার হবে এ নিয়ে, সে নির্দেশিত পথটি অনুসরণ করেছে কিনা। এখানে ভূল হলে জাহান্নামে পৌঁছতে হবে।
ইসলাম সকল ভাষা, সকল অঞ্চল ও সকল বর্ণের মানুষের ধর্ম। ইসলামের অনুসারী প্রতিটি মুসলিমকে তাই সকল ক্ষুদ্রতার উর্দ্ধে উঠে বিশ্বময়ী হতে হয়। বিশ্বময়ীতার মধ্যেই ঈমানদারী। ইসলাম তাই প্রতিটি ঈমানদারকে ভাষা, বর্ণ ও আঞ্চলিকতা উর্দ্ধে উঠে মনটাকে সবার জন্য প্রসারিত করতে শেখায়। অন্যদের সাথে হাত ধরাধরি করে রাষ্ট্র গড়াতেই সওয়াব। এটিই মহান নবীজী (সা:)’র গুরুত্বপূর্ণ সূন্নত। এতেই মানব জাতির কল্যাণ। মুসলিম ইতিহাসে এরূপ ভাতৃত্ববোধের চেতনাই প্যান-ইসলামী চেতনা রূপে পরিচিত। মুসলিমগণ অতীতে যত বড় বড় বিজয় এনেছে সেগুলি ভাষা-ভিত্তিক বিভক্তির কারণে নয়, বরং বিশ্বময়ী এই ভাতৃত্বের কারণে। তখন আরব, ইরানী, তুর্কী, কুর্দি, আফগানী, মুর, আলবানী, বলকানী –এরূপ নানা বর্ণ ও নানা ভাষার মুসলিমগণ একত্রে ও একই লক্ষ্যে যুদ্ধ করেছে।
অনৈক্য ও বিভক্তির পথটি শুরু থেকেই শতভাগ ভ্রষ্টতার পথ। এটিই হলো পাপের পথ -যা অনিবার্য করে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ভয়ানক আযাব। সে হুশিয়ারীটি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয়া হয়েছে সুরা আল-ইমরানের ১০৫ নম্বর আয়াতে। তাই যারা ভাষা, বর্ণ ও আঞ্চলিকতার নামে বিভক্তির কথা বলে তাদের বিদ্রোহটি মহান আল্লহতায়ালার বিরুদ্ধে। অনুসরণটি এখানে শয়তানের। জাতীয়তাবাদ, গোত্রবাদ, বর্ণবাদের ন্যায় মতবাদগুলি নতুন নয়। এগুলি আদিম জাহিলিয়াত বা অজ্ঞতা। তাই যার হৃদয়ে শরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে -সে ব্যক্তি জাতীয়তাবাদী, গোত্রবাদী ও বর্ণবাদী হতে পারে না। ইসলামে এটি হারাম এবং শাস্তিযোগ্য ফৌজদারী অপরাধ। নবীজী (সা:)’র আমলে কারো মধ্যে একতার বদলে এরূপ বিভক্তির নেশা ধরা পড়লে তার পিঠে বেত্রাঘাত করা হতো। কারণ সেটিকে মুসলিম উম্মাহর একতার বিরুদ্ধে শত্রুর ষড়যন্ত্র মনে করা হতো। শয়তান মুসলিমদের মুর্তিপূজার দিকে ডাকে না, ডাকে ভাষা পূজা, বর্ণপূজা ও ভূগোল পূজার দিকে। মুর্তিপূজার চেয়ে ভাষা, বর্ণ ও ভূগোল পূজার নাশকতা কি কম? আরবগণ ২২ টুকরায় এবং মুসলিম উম্মাহ ৫৭ টুকরায় বিভক্ত ও পরাজিত এসব নানামুখী পূজার কারণে।
অপর দিকে একতার সুফল তো বিশাল। বিশ্বজনীয় ভাতৃত্বের কারণেই ইথোপিয়ার বিলাল (রা:), ইরানের সালমান ফারসী (রা:), রোমের শোয়ায়েব (রা:) ও আরবের ওমর (রা:)’য়ের মধ্যে কোন বিভেদ ছিল না। মর্যাদায় কোন ভেদাভেদ ছিলনা। সে সীসাঢালা দেয়ালসম একতার কারণেই মুসলিমগণ বিশ্বশক্তির জন্ম দিতে পেরেছিল। ইসলামের এরূপ বিশ্বময়ী চেতনাটি এখনো বেঁচে আছে পবিত্র কুর’আন ও হাদীসে। ব্যক্তির ঈমানকে শুধু নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাতের সামর্থ্য দিলে চলেনা, তাকে অন্য ভাষা, অন্য বর্ণ ও অন্য ভূগোলের মুসলিমকে ভাই রূপে বরণ করার সামর্থ্যও দিতে হয়। সে সামর্থ্য সৃষ্টি না হলে বুঝতে হবে প্রচণ্ড শূণ্যতা রয়েছে ঈমানে। ঈমানের সে শূণ্যতাটি শুধু মুর্তিপূজায় ধরা পড়ে না, বরং প্রবল রূপে ধরে পড়ে জাতিপূজা, ভাষাপূজা, ফেরকাপূজা ও বর্ণপূজার মধ্যে।
মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত ও দুর্বল করেছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিচয়ের প্রতি নেশাধারী ঈমানশূণ্য এই বেঈমানগণ। তাই মুসলিম উম্মাহকে বিজয় ও গৌরবের পথে নিতে হলে বিভক্তকামী বেঈমানদের খপ্পড় থেকে মুসলিম উম্মাহকে অবশ্যই উদ্ধার করতে হবে। নইলে মুক্তির কোনই সম্ভাবনা নাই। বিভক্তির পথে চলে হাজার হাজার মসজিদ-মাদ্রাসা গড়েও কোন কল্যাণ নাই। কৃষি, শিল্প, রাস্তাঘাট ও বানিজ্য বাড়িয়েও তখন বিজয় আসে না। কারণ বিভক্তির পথটাই হলো পরাজয় ও আযাবের। এবং সে সাথে সেটি ভয়ানক বিপদ বাড়াবে আখেরাতে।
কুয়ার ব্যাঙ ও গর্তের কেঁচোর বাঁচাতেও একটি ভাবনা থাকে। সেটি বিশ্বকে ক্ষুদ্র করে দেখার ইতর ভাবনা। সেরূপ ইতর ভাবনা নিয়েই রাজনীতির বাজারে ব্যবসা করে জাতীয়তাবাদ, আঞ্চলিকতাবাদ, ফেরকাবাদ ও বর্ণবাদের অনুসারীগণ। এমন ভাবনা নিয়ে বাঁচাটি ইসলামে শতভাগ হারাম। এদের কারণেই মুসলিম বিশ্বে যত বিভক্তি, হানাহানি ও বিপর্যয়। ইসলাম exclusiveness য়ের বদলে inclusiveness নিয়ে বাঁচতে শেখায়। প্রকৃত ঈমানদার মাত্রই inclusive তথা কসমোপলিটান। প্রকৃত ঈমানদারের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তি তাই ভাষা, বর্ণ, ফেরকা ও আঞ্চলিকতার ক্ষুদ্রতায় সীমিত থাকে না। এমন একটি বিশ্বময়ী চেতনার কারণেই ভারতের বুকে খেলাফত আন্দোলন চলা কালে মাওলানা আবুল কালাম লিখেছিলেন, “বলকানের যুদ্ধে কোন তুর্কী সৈনিকের পা যদি গুলি বিদ্ধ হয় এবং তুমি সে গুলীর বেদনা যদি হৃদয়ে অনুভব না করো -তবে খোদার কসম তুমি মুসলিম নও।”
ভাষা, বর্ণ ও অঞ্চল ভিত্তিক ক্ষুদ্রতর পরিচয়ে যারা বিশ্বাসী এবং বিভক্তির নেশায় যারা উম্মত্ত -তারাই হলো মুসলিমদের ঘরে বেড়ে উঠা মুসলিমদের পরম শত্রু। তারাই হলো শয়তানের বন্ধু। শয়তান চায় আরব মুসলিমগণ অনারব মুসলিমদের ঘৃনা করুক এবং হত্যা ও ধর্ষণ করুক। এবং চায়, গভীর ঘৃনা নিয়ে বাঙালীগণ হত্যা ও ধর্ষণ করুক অবাঙালীদের। শয়তানের সে রক্তাত্ব পৈশাচিক খেলা ১৯১৭ সালে দেখা গেছে আরব ভূমিতে এবং বাংলার মাটিতে দেখা গেছে ১৯৭১ সালে। আজ ইসরাইলীদের হাতে আরবদের যে পরাজয় এবং আগ্রাসী ভারতের পদতলে বাঙালী মুসলিমদের যে গোলামী –সেটি অর্জিত হয়েছে নিজ ঘরে জন্ম নেয়া বাঙালী জাতীয়তাবাদীদের নেতৃত্বে। বাংলার মাটিতে মুজিব আবির্ভুত হয়েছিল শয়তানের খলিফা রূপে। তার নেতৃত্বেই মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি এসেছে, এসেছে রক্তাত্ব যুদ্ধ এবং এসেছে ভারতের পদতলে গোলামীর আযাব। অথচ এমন আযাবের হুশিয়ারী পবিত্র কুর’আনে বহুবার শোনানো হয়েছে। বাঙালীর বিবেকের পঙ্গুত্ব এ পর্যায়ে পৌছেছে যে, শয়তানের সেবাদাসকে তারা জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু বলে।
২. ঈমানদারী ও বেঈমানীর স্বরূপ
ঈমানদারের ঈমান গোপন থাকে না। সেটি প্রকাশ পায় চেতনা, চরিত্র, কর্ম ও বাঁচবার মিশনে। তাকে শুধু মহান আল্লাহতায়ালার উপর বিশ্বাস নিয়ে বাঁচলে চলে না। তাকে বাঁচতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার মিশনকে বিজয়ী করার নির্ভীক সৈনিক রূপে। মহান আল্লাহর সে মিশনটি ঘোষিত হয়েছে সুরা আনফালের ৭ ও ৮ নম্বর আয়াতে। সেটি হলো সত্যকে সত্য রূপে প্রতিষ্ঠা দেয়া এবং মিথ্যাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে বাতিল করা। উক্ত সুরার ৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি চান কাফেরদের শিকড় কাটতে। এবং সেটিও ফিরেশতাদের দ্বারা নয়, ঈমানদারদের দিয়ে। সত্যকে প্রকাশ করা এবং মিথ্যাকে বাতিল করার যে মহান সূন্নতটি মহান আল্লাহতায়ালার, প্রতিটি মুসলিমকে বাঁচতে হয় সে মহান সূন্নত নিয়ে। প্রখ্যাত মার্কিন বুদ্ধিজীবী নওম চমোস্কি ষাঠের দশকে বলেছিলেন, বুদ্ধিজীবীদের দায়ভার হলো সত্যকে সাহসিকতার সাথে তুলে ধরা এবং মিথ্যার মুখোশ উম্মোচন করা। অথচ ইসলামে সে দায়ভারটি শুধু বুদ্ধিজীবীর নয়, বরং প্রতিটি ঈমানদারের। ইসলামে এটি পবিত্র ইবাদত।
জালেমের সামনে মুখ ফুটে সত্য কথা বলায় সাহস লাগে। কারণ তাতে গুম, খুন ও নির্যাতনের ভয় থাকে। ভীরু, কাপুরুষ ও বেঈমানদের সত্য বলার সাহস থাকে না। সে সাহস আসে ঈমান থেকে। নামায, রোযা, হজ্জ ও উমরাহ পালনের সামর্থ্য ঘুষখোর, সূদখোর, মিথ্যাবাদী, চোরডাকাত, এবং ভোটডাকাতের ন্যায় অপরাধীদেরও থাকে। কিন্তু সত্য বলা ও মিথ্যার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সামর্থ্য তাদের থাকে না। কারণ, নিজের স্বার্থ রক্ষা করে বাঁচাই তাদের মূল নীতি। তাই সত্য ও ন্যায়ের প্রতি তাদের কোন দায়বদ্ধতা থাকে না। চোখের সামনে চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, জুলুম নির্যাতন হতে দেখেও তারা নিশ্চুপ থাকে। তাদের বেঈমানী তাই সুস্পষ্ট দেখা যায়। অথচ ঈমানদারের পক্ষে জালেমের জুলুম ও মিথ্যাচারের সামনে নীরব থাকাটি অসম্ভব। কারণ সে জানে, সত্যকে গোপন করা কবিরা গুনাহ। সত্যকে প্রকাশ করতে গিয়ে এ জন্যই ঈমানদারের জীবন জিহাদ শুরু হয়। আগুন থাকলে উত্তাপ থাকবেই। তেমনি ঈমান থাকলে জিহাদও শুরু হয়। জিহাদ না থাকাটি তাই বেঈমানীর লক্ষণ।
৩. নবীজী (সা:) কেন সর্বশ্রেষ্ঠ নবী?
মহান নবীজী (সা:) সর্বশ্রষ্ঠ নবী এজন্য নয় যে, তিনি ইসলাম প্রচার করেছেন। বরং এজন্য যে, আরবের বিশাল ভূ-ভাগ থেকে দুর্বৃত্তদের দখলদারী বিলুপ্ত করে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে সভ্য ও কল্যাণকর রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন। বড় বড় কথা অনেক বুদ্ধিজীবীই বলেছেন, কিন্তু সেগুলি প্রয়োগ করতে পারেননি কিন্তু নবীজী (সা:) সত্য, সুবিচার ও ন্যায়ের বানী শুধু প্রচারই করেননি, প্রতিষ্ঠাও দিয়েছিলেন। দুর্বৃত্তদের নির্মূল ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার রাজনীতিকে তিনি পবিত্র জিহাদে পরিণত করেছিলেন। তিনি দেখিয়ে যান, ইসলামের মিশন শুধু ইসলাম প্রচার নয়, বরং স্বৈরাচারী দুর্বৃত্তদের নির্মূল ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। কারণ সমাজে দুর্বৃত্তদের অক্ষত রেখে সত্য ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা দেয়া যায় না।
শুধু নামায-রোযা ও মসজিদ মাদ্রাসার সংখ্যা বাড়িয়ে সমাজকে সভ্যতর করা যায়না। শান্তিও আসে না। বাংলাদেশে মসজিদ-মাদ্রাসার সংখ্যা কি কম? কিন্তু দেশ তাতে কতটা সভ্যতর হয়েছে? ঘর গড়লে ঘরের পাশের আবর্জনাও সরাতে হয়। তেমনি সভ্য রাষ্ট্র গড়তে হলে রাষ্ট্রের বুক থেকে চোরডাকাত,খুনি, সন্ত্রাসী, ধর্ষক, ইত্যাদি দুর্বৃত্ত নির্মূলের জিহাদও থাকতে হয়। নইলে রাষ্ট্র দুর্বৃত্তদের দখল যায়। বাংলাদেশ তো তারই দৃষ্টান্ত।
৪. বিলুপ্ত হয়েছে নবীজী (সা:)’র শ্রেষ্ঠ সূন্নত
ঈমানদারকে শুধু নামাযী ও রোযাদার হলে চলে না, রাজনীতির ময়দানে তাকে নির্ভীক ও আপোষহীন সৈনিক হতে হয়। কারণ রাজনীতিই হলো সমাজ জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত। রাজনীতির ময়দান থেকেই নির্ধারিত হয় দেশ ও জনগণকে কোন দিকে ধাবিত করা হবে এবং কীরূপ গড়া হবে ব্যক্তি, সমাজ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি। নামায-রোযা হচ্ছে হ্ক্কুল আল্লাহ তথা মহান আল্লাহতায়ালার হক অর্থাৎ তাঁর প্রতি ব্যক্তির দায়বদ্ধতা। আর রাজনীতি হলো হক্কুল ইবাদ তথা জনগণের হক অর্থাৎ জনগণের প্রতি ব্যক্তির দায়বদ্ধতা। জনগণকে কিছু অর্থদান, বস্ত্রদান বা গৃহদানই সেরা দান নয়। বরং সবচেয়ে বড় দানটি হলো একটি সুশীল, সভ্য ও জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র দান করা। একমাত্র তখনই সে পায় জানমাল ও ইজ্জত-আবরুর নিরাপত্তা। জনগণ তখন পায় ন্যায় বিচার। পায় সুশিক্ষা। পায় মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়ত পালনের ন্যায় ফরজ পালনের সুযোগ। রাষ্ট্র তখন কাজ করবে জান্নাতে নেয়ার বাহন রূপে। অথচ কাফেরদের অধিকৃত রাষ্ট্রে সে সুযোগ থাকে না। তখন রাষ্ট্র পরিণত হয় জনগণকে দুর্বৃত্ত করা তথা জাহান্নামে নেয়ার বাহনে। ঈমানদারের রাজনীতি এজন্যই পবিত্র জিহাদ তথা শ্রেষ্ঠ ইবাদত।
জনগণের জন্য মহান নবীজী (সা:)’র গুরুত্বপূর্ণ অবদানটি শুধু ইসলাম প্রচার ছিল না, বরং সেটি ছিল ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এটিই নবীজী (সা:)’র শ্রেষ্ঠ সূন্নত। ইসলামী রাষ্ট্রের কারণেই মুসলিমগণ পেয়েছে বিশ্বমাঝে বিশ্বশক্তির মর্যাদা নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সুযোগ। বেগবান হয়েছে ইসলামের প্রচার। সেরূপ একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হলে কুর’আনের শিক্ষা শুধু কুর’আনের মাঝেই বন্দী থাকতো –যেমনটি হয়েছে খৃষ্টান ধর্ম ও ইহুদীদের ক্ষেত্রে। তখন মুসলিমগণ পেত না শত্রু পরিবেষ্টিত বিশ্বে জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা। তখন মুসলিমদের উপর নেমে আসতো আজকের অধিকৃত কাশ্মির বা ফিলিস্তিনের মুসলিমদের ন্যায় গোলামী জীবন ও নিরাপত্তাহীনতা।
নবীজী (সা:)’র আমলে প্রতিটি ঈমানদার শুধু নামাযী ও রোযাদার ছিলেন না, তারা ছিলেন দুর্বৃত্ত নির্মূলের রাজনীতির সার্বক্ষণিক সৈনিক। সে রাজনীতির কারণেই নবীজী (সা:) ১০ বছর রাষ্ট্রপ্রধানের আসনে বসতে পেরেছিলেন। সে রাজনীতি অব্যাহত থেকেছে নবীজী (সা:)’র ইন্তেকালের পরও। ফল সে আসনে বসেছেন তাঁর প্রথম সারির সাহাবাগণ। আজকের মুসলিমগণ বিপুল সংখ্যায় নামায পড়ে, রোযা রাখে এবং হজ্জও করে। হাজার হাজার মসজিদ-মাদ্রাসাও তারা প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও দুর্বৃত্তি নির্মূলের যে রাজনীতি নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম করেছেন সে জিহাদের রাজনীতিতে তারা নাই। তারা রাজনীতি করে ইসলামকে বাদ দিয়ে। ফলে দেশ দখলে গেছে চোর-ডাকাতদের হাতে।
৫. বাঙালী মুসলিমের ব্যর্থতা
ইতিহাসের নানা পর্বে বাঙালী মুসলিমদের ব্যর্থতাটি বিশাল। বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্বটি নবাব সিরাজুদ্দৌলার একার ছিল না। অথচ তাঁর পরাজয়ের পর বাংলার জনগণ যুদ্ধের ময়দানে নামেনি। তিতুমীর ও মজনু শাহের নেতৃত্বে সামান্য কিছু মানুষ জিহাদ করেছে, কিন্তু সাধারণ জনগণ নীরব ও নিষ্ক্রিয় থেকেছে। স্বাধীনতা বাঁচাতে লড়াইয়ের ময়দানে জনগণের না নামাতে ১৯০ বছর ইংরেজের গোলামী করতে হয়েছে। তাই শুধু নবাব সিরাজুদ্দৌলাকে দোষ দিয়ে লাভ নাই। দোষ বাংলার জনগণের।
আগ্রাসী কাফের শত্রুগণ ইরানের উপরও হামলা করেছে। বার বার হামলা করেছে আফগানিস্তানের উপর। কিন্তু দেশ দু’টির জনগণ সরকারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেনি। হাতের কাছে যা পেয়েছে তা দিয়ে শত্রু নির্মূলে যুদ্ধে নেমেছে। কারণ স্বাধীনতা বাঁচানোর যুদ্ধটি স্রেফ সরকারের নয়, সমগ্র জনগণের। অথচ আফগানীদের সংখ্যা বাংলার জনগণের সিকি ভাগও নয়। কিন্তু তারা ইংরেজদের দুই বার শোচনীয় ভাবে পরাজিত করেছে। পরাজিত করেছে সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় দুটি বিশ্বশক্তিকেও। বিজয়ের কারণ, শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইকে তারা সমগ্র জনগণের জিহাদে পরিণত করেছে। জিহাদে মুসলিমগণ একাকী থাকে না, তাদের সাথে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে ফিরেশতারাও যোগ দেয়। পবিত্র কুর’আন সে কথাটিই বার বার বলে।
বাংলাদেশীগণ কি আফগানিস্তানের জনগণ থেকে শিক্ষা নেবে না? বাংলাদেশ আবার অধিকৃত হয়েছে ভারত ও তার দালাল শত্রু শক্তির হাতে। কিন্তু কোথায় সে স্বাধীনতার যুদ্ধ? দেশ কোন দল বা নেতার নয়, সমগ্র জনগণের। তাই স্বাধীনতা বাঁচানোর দায়িত্বও সকল জনগণের। ভারত কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত রাশিয়ার চেয়েও শক্তিশালী? ১৭ কোটি বাঙালী কি সাড়ে তিন কোটি আফগানের চেয়েও দুর্বল? অভাব এখানে জনশক্তির নয়, বরং ঈমানের। ঈমান বাড়ানোর যুদ্ধটি হয় চেনতার ভূমিতে। এটি এক অবিরাম বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ। এবং সে যুদ্ধে মূল হাতিয়ারটি হলো পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান। ঘোড়ার আগে গাড়ি জোড়া যায়না, তাই ঈমান না বাড়িয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধ লড়া যায়না। মহান আল্লাহ তাই পবিত্র কুর’আন দিয়ে ইসলামের বিজয়ের কাজের শুরু করেছিলেন। বদর-ওহুদের রক্তাত্ব যুদ্ধের প্রায় ১৫ বছর পূর্বে নবীজী বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধটি শুরু করেছিলেন। অথচ আজও বাংলাদেশে তেমন একটি যুদ্ধ শুরুই হলো না। বাঙালী মুসলিমদের আজ তাই মহান আল্লাহতায়ালার অনুসৃত হিকমা ও নবীজী (সা:)’র সূন্নতের দিকে ফিরে যেতে হবে। নইলে স্বাধীনতার যুদ্ধে সৈন্য জুটবে না। ২২/০৬/২০২১
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018