বিবিধ ভাবনা ৬৩
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on July 4, 2021
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
১. সভ্য সমাজের নির্মাণ কীরূপে?
গরু ঘাস নিয়ে ভাবে, গলার রশিটি নিয়ে ভাবে না। সামনে কাউকে খুন, ধর্ষিতা বা ডাকাতির শিকার হতে দেখেও গরু ঘাস খাওয়ায় বিরতি দেয় না। এটিই গরু চরিত্র। সে অভিন্ন চরিত্রটি দেখা যায় গরু চরিত্রের মানুষদের মাঝেও। তারাও দেশের চুরি-ডাকাতি, ভোটডাকাতি, গুম-খুন-ধর্ষণের রাজনীতির প্রতিকার নিয়ে ভাবে না। তারা ভাবে নিজেদের ব্যবসা-বানিজ্য, চাকুরি-বাকুরি ও ঘর-সংসার নিয়ে। এর বাইরে যেতে তারা রাজী নয়। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত সেটিকে অহেতুক মনে করে। অথচ ইসলাম প্রতিটি ব্যক্তিকে সামাজিক দায়ভার নিয়ে বাঁচার শিক্ষা দেয়। ঈমানদারের সে চরিত্রটি নিজের খেয়ে দুর্বৃত্ত নির্মূলের জিহাদে নামার। সে জিহাদে সে নিজের জান, মাল, মেধা, শ্রম ও সময়ের বিনিয়োগ করে। এবং এটিই হলো ইসলামে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মীয় কর্ম।
হংকংয়ের জনসংখ্যা ৮০ লাখ। ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি। কিছু দিন আগের হংকংয়ের ২০ লাখ মানুষ গণতন্ত্র রক্ষার দাবী নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল। এটি ছিল হংকংয়ের মূল জনসংখ্যার প্রায় সিকি ভাগ। অথচ ঢাকার রাস্তায় ২০ হাজার লোকও গণতন্ত্রের দাবী নিয়ে রাস্তায় নামে না। হেতু কী? এটি কি হংকংয়ের ভিন্ন জলবায়ু ও ভূ-প্রকৃতির জন্য? ভিন্নতাটি চেতনায়। সেটি গরু-চরিত্র পরিহার করে সামাজিক দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বাঁচার চেতনা। এমন মানুষেরা গরুর ন্যায় স্রেফ পানাহারে খুশি হয় না, তারা স্বাধীনতা চায়। রাষ্ট্রের উপর নিজেদের বৈধ মালিকানা চায়।
গণতন্ত্রের অর্থই হলো রাষ্ট্রের উপর জনগণের দখলদারী। জনগণ সে দখলদারী প্রয়োগ করে ভোটে সরকার নির্বাচন করে, রাস্তায় মিটিং-মিছিল করে এবং পত্রপত্রিকা নিজের মতামত প্রকাশ করে। যেসব দেশে এরূপ চেতনার মানুষের বসবাস সে দেশে গণতন্ত্রের উপর হামলা হলে লাখ লাখ মানুষের মিছিল হয়। গরুরা কখনোই মিছিলে নামে না। মিছিলে নামার সে সাধ গরু চরিত্রের মানুষেরও থাকে না। এজন্যই নিজেদের ভোট ডাকাতি হয়ে গেলেও ঢাকার রাস্তায় মিছিল হয় না। কয়েক যুগ খাঁচায় থাকলে বাঘ-ভালুকও স্বাধীন জীবনের সাধ হারিয়ে ফেলে। খাঁচার গেট খুলে দিলেও তারা বাইরে বেরুয় না। মানুষের জীবনেরও সেটি ঘটে দীর্ঘকাল স্বৈর শাসনের কবলে থাকলে। স্বৈরাচারের এটাই সবচেয়ে বড় কুফল। স্বৈরাচারেরা চায় মানুষ গরু চরিত্র নিয়ে বেড়ে উঠুক এবং দেশের রাজনীতি ও প্রশাসন তাদের হাতে ছেড়ে দিক। বাংলাদেশে সেটিই ঘটেছে। শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বাকশালী স্বৈরাচার বাংলাদেশীদের স্বাধীন ও সভ্য ভাবে বাঁচার রুচিই কেড়ে নিয়েছে।
স্বৈরচারী শাসকেরা শুধু গণতন্ত্র হত্যা করে না। তারা মানুষের বিবেকও হত্যা করে। তারা চেতনায় অপচিন্তা ও পশুবৎ স্বার্থপরতার বিষ ঢুকিয়ে দেয়। নইলে তাদের চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, গুম,খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের রাজনীতিতে দুর্বৃত্ত চরিত্রের লোক-লস্কর জুটে না। স্বৈরাচার তাই সভ্য সমাজ নির্মাণের পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা। বিশ্বের কোথাও স্বৈর শাসন থাকলো এবং সেখানে সভ্য সমাজ নির্মিত হলো – ইতিহাসে সেরূপ উদাহরণ নাই। তাই বাংলাদেশে যতদিন হাসিনার বা তার মত দুর্বৃত্তদের স্বৈর শাসন থাকবে ততদিন অসভ্যতার নতুন নতুন রেকর্ডই কেবল নির্মিত হবে। জনজীবনে দুঃশাসনের তীব্রতাই শুধু বাড়বে।
এজন্যই যারা সভ্য মানুষ ও সভ্য সমাজ নির্মাণ করতে চায় তাদের অবশ্যই নামতে হয় স্বৈর শাসনের নির্মূলে। সভ্যতর সমাজ নির্মাণে এটিই হলো প্রথম ধাপ। স্রেফ স্কুল-কলেজ ও মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ে এছাড়া অসভ্যতা থেকে মুক্তি মেলে না। সভ্য মানুষও গড়ে উঠে না। বাংলাদেশে মসজিদ-মাদ্রসা ও স্কুল-কলেজে সংখ্যা কি কম? বাংলাদেশের যে কোন গৃহ থেকে দুই মাইলের মধ্যে একটি ডিগ্রি কলেজ পাওয়া যায়। আধা মাইলের মধ্যে মসজিদ পাওয়া যায়। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের কোন দেশেই এ সুবিধা নাই। কিন্তু তাকে কি মানব চরিত্র বিকশিত হয়েছে? ক্ষমতায় ফিরাউনের ন্যায় স্বৈর-শাসক বসিয়ে সভ্য মানুষ গড়া অসম্ভব। বাংলাদেশ তারই দৃষ্টান্ত। ইসলামে স্বৈরশাসক নির্মূলের গুরুত্ব এতোই অধিক যে, এটিকে নিছক রাজনীতির পর্যায়ে রাখা হয়নি। বরং সর্বোচ্চ ইবাদতের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। জালেম শাসকের সামনে হক কথা বলাকে নবীজী (সা:) উত্তম জিহাদ বলেছেন। এবং জিহাদ হলো সর্বোচ্চ ইবাদত।
শান্তিতে বসবাস করতে হলে লোকালয় থেকে হিংস্র পশুগুলোকে অবশ্যই নির্মূল করতে হয়। তেমনি দেশে শান্তি আনতে হলে নির্মূল করতে হয় দুর্বৃত্ত শাসকদের। জালেমদের নির্মূলে নবীজী (সা:)কে যুদ্ধে নামতে হয়েছে। শুধু নামায-রোযা ও দোয়া-দরুদে সমাজ থেকে দুর্বৃত্ত নির্মূল করা যায় না। এ কাজের জন্য মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত বিধানটি হলো জিহাদের। যে সমাজে জিহাদ নাই, সে সমাজ কখনোই সভ্য হতে পারে না। জিহাদ হলো সমাজ থেকে আবর্জনা চরিত্রের দুর্বৃত্ত নির্মূলের মোক্ষম হাতিয়ার। জিহাদ না থাকলে রাষ্ট্রের অঙ্গণে আবর্জনা জমতে বাধ্য। দেশে স্বৈরাচারী শাসন দেখে নিশ্চিত বলা যায়, সে দেশে জিহাদের পবিত্র হাতিয়ারকে কাজে লাগানো হয়নি। এটিই হলো মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে অবাধ্যতা। এবং সে অবাধ্যতার শাস্তি হলো স্বৈর শাসনের আযাব। বাংলাদেশের মানুষ আজ সে আযাবের মধ্যেই জর্জরিত।
শান্তিতে বাস করা ও পরকালে জান্নাতে পৌঁছার একটি খরচ আছে। সে খরচ আদায় না করে সেখানে পৌঁছা অসম্ভব। সে খরচ স্রেফ নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাতে আদায় হয় না। সে খরচ পরিশোধে নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ জান, মাল, মেধা, শ্রম ও সময়ের সর্বোচ্চ বিনিয়োগ নিয়ে জিহাদে নেমেছেন। অর্ধেকের বেশী সাহাবা শহীদ হয়ে গেছেন। আজও এছাড়া বিকল্প পথ নাই। অসভ্য স্বৈর-শাসনের নির্মূলে তো তারাই যুদ্ধে নামে সে খরচ আদায়ে যাদের সামর্থ্য আছে। বাংলাদেশীদের মাঝে সে সামর্থ্য নাই বলেই চোরডাকাত, ভোটডাকাত, খুনি, ধর্ষক নির্মূল করতে মিছিলে লোক পাওয়া যায় না। নামায-রোযা ও তাসবিহ-তাহলিল করেই অনেক ভাবেন তারা জান্নাতের চাবি হাতে পেয়ে গেছে। জিহাদে কথা তারা মুখে আনে না। সাহাবাদের জীবনের সাথে নিজেদের জীবনকে তারা কখনোই মিলিয়ে দেখে না। মিলিয়ে দেখলে বুঝতো পার্থক্যটি কত বিশাল। তখন নিজেদের মুসলিম হওয়া নিয়েই সন্দেহ দেখা দিত। এমন মানুষের সংখ্যা দেশে যতই বৃদ্ধি পাক, তাতে কি চোরডাকাতদের হাত থেকে দেশ মুক্ত হয়? বিজয় আসে কি ইসলামের?
২. মিথ্যার নাশকতা ও মিথ্যুকের সন্ত্রাস
মিথ্যার নাশকতা অ্যাটম বোমার চেয়েও মারাত্মক। এ্যাটম বোমা একটি শহরকে ধ্বংস করে এবং সে শহরের কয়েক লাখ মানুষকে হত্যা করে। কিন্তু কাউকে জাহান্নামের আগুনে নেয় না। অথচ মিথ্যা বহু কোটি মানুষের বিবেক হত্যা করে, জাহান্নামে নেয়। মিথ্যাই হলো শয়তানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। এ মিথ্যার সাহায্যেই শয়তান শত শত কোটি মানুষকে বিভ্রান্ত করছে ও জাহান্নামে নিচ্ছে। যে কোন সমাজে মিথ্যাচর্চা ও মিথ্যার প্রচারই হলো সবচেয়ে বড় অপরাধ। এটি অসম্ভব করে সত্যের প্রতিষ্ঠা ও সভ্য সমাজের নির্মাণ। নবীজী (সা:) মিথ্যাকে সকল পাপে জননী বলেছেন। মিথ্যচারীগণ হলো শয়তানের সৈনিক এবং মহান আল্লাহতায়ালার দুশমন।
বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়ংকর নাশকতাগুলি ঘটিয়েছে মিথ্যুকেরা। বাংলাদেশ এখন তাদের হাতেই অধিকৃত। রাজনীতির অঙ্গণে শয়তানের এ অস্ত্রটি ব্যবহার করেছে শেখ মুজিব এবং তার কন্যা শেখ হাসিনা। শেখ মুজিব ৮ আনা সের চাল, সোনার বাংলা ও গণতন্ত্রের মিথ্যা ওয়াদা দিয়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ভোটি নিয়েছিল। এসবই ছিল মিথ্যা। মিথ্যার প্লাবন সেদিন বিজয়ী হয়েছিল। মুজিবের লক্ষ্য ছিল, জনগণকে লোভ দেখিয়ে ভোট নেয়া এবং ক্ষমতা দখল করা। মুজিবের সে কৌশল সফল হয়েছিল। সে মিথ্যাগুলিই পরে প্রচণ্ড নাশকতা ঘটিয়েছে। সোনার বাংলার বদলে মুজিব দিয়েছে দুর্ভিক্ষের বাংলা -যাতে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচার উপহার দিয়েছে। স্বাধীনতার বদলে দিয়েছে ভারতের পদতলে গোলামী। বাংলাদেশে নদীর পানি, সমুদ্র বন্দর, অর্থনৈতিক বাজার, ভিতর দিয়ে করিডোর, তালপট্টি দ্বীপ –সব কিছুর উপরই ভারত প্রতিষ্ঠা করেছে নিজের সার্বভৌমত্ব। মুজিবের ন্যায় একভই রূপ নিরেট মিথ্যাকে অস্ত্র রূপে ব্যবহার করে চলেছে ভোটডাকাত হাসিনা। বিশুদ্ধ ভোটডাকাতিকেও সে বলছে শুদ্ধ নির্বাচন।
মানব জীবনের সবচেয়ে পবিত্র যুদ্ধটি হলো মিথ্যা নির্মূলের যুদ্ধ। মিথ্যা নির্মূল হলে দুর্বৃত্ত নির্মূল হয়। কোনটি সত্য এবং কোনটি মিথ্যা – সেটি সূর্য্যের ন্যায় সুস্পষ্ট। সেটি বুঝার জন্য স্কুল-কলেজের পাঠ নেয়া লাগে না। ভেড়ার রাখালও সেটি বুঝতে পারে। জীবনের সবচেয়ে গুরুতর পরীক্ষা হয় এ ক্ষেত্রে। তারাই সবচেয়ে অযোগ্য যারা সত্য ও মিথ্যার সে পার্থক্যটি বুঝতে ব্যর্থ হয় এবং মিথ্যার পক্ষ নেয়। এটিই সবচেয়ে বড় পাপ; এবং ভয়ানক অপরাধও। অধিকাংশ মানুষ খুন, জ্বিনা, চুরিডাকাতির অপরাধে জাহান্নামে যাবে না। জাহান্নামে যাবে সত্যকে সত্য রূপে এবং মিথ্যাকে মিথ্যা রূপে চিনতে ব্যর্থ হওয়া ও মিথ্যার পক্ষ নেয়ার কারণে। অথচ বাংলাদেশে মিথ্যাসেবী এ দুর্বৃত্তদের সংখ্যা কি কম?
মিথ্যাচারের নাশকতার কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। একাত্তরের যুদ্ধে ইসলামপন্থি প্রতিটি দল ও প্রতিটি ব্যক্তিই অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। ইতিহাসের এটি অতি সত্য বিষয়। কোন আলেম, মাদ্রাসার কোন শিক্ষক, মসজিদের কোন ইমাম ও কোন পীর ভারতে যাইনি এবং পাকিস্তান ভাঙ্গাকে সমর্থণ করেনি। আলেমদের মাঝে নানা বিষয়ে মতভেদ থাকলেও এ বিষয়ে তাদের মাঝে ঐকমত্য ছিল যে, পাকিস্তান ভাঙ্গা সম্পূর্ণ হারাম। দেশ বিভক্তির কাজ শয়তানকে খুশি করে এবং ক্রোধ বাড়ায় মহান আল্লাহতায়ালার। ঈমানদারের ধর্ম মুসলিম রাষ্ট্র গড়াতে, ভাঙ্গাতে নয়। পাকিস্তান ভাঙ্গার কাজটি ছিল ইসলামে অঙ্গিকারশূণ্য ভারতপন্থী আওয়ামী লীগ, বামপন্থি ন্যাপ, কম্যুনিষ্ট পার্টি ও হিন্দুদের। আজও এরাই নিজেদেরকে একাত্তরের চেতনাধারী রূপে পরিচয় দেয়। ইসলামপন্থী কাউকে ফাঁসিতে ঝুলাতে পারলে এদের মহলে আনন্দের উৎসব শুরু হয়।
নিজেদের কাজকে মহামান্বিত করা ও ইসলামপন্থিদের চরিত্র হননের জন্য ভারতসেবীগণ একাত্তর নিয়ে মিথ্যার প্লাবন সৃষ্টি করে। তাদের লক্ষ্য শুধু পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে হেয় করা ছিল না, লক্ষ্য ছিল ইসলামপন্থীদেরও বর্বর রূপে চিত্রিত করা। এজন্য প্রয়োজন দেখা দেয় একাত্তরের নিহতদের সংখ্যাকে বহুগুণ বাড়িয়ে প্রচার করা। এতে শুধু পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে নয়, পাকিস্তানপন্থীদের চরিত্র হননের কাজটি সহজ হয়। তারা বলে একাত্তরে ৩০ লাখ তথা তিন মিলিয়ন মানুষ নিহত হয়। বাংলার ইতিহাসে এটিই হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যা। তখন পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্য ছিল সাড়ে সাত কোটি অর্থাৎ ৭৫ মিলিয়ন। এর অর্থ দাঁড়ায়, প্রতি ২৫ জনে একজন মারা গিয়েছিল (হিসাবটি এরূপ: ৭৫/৩=২৫)। অপর দিকে ৯ মাসে তিরিশ লাখ মারা গেলে প্রতি দিন মারা যেতে হয় ১১ হাজারেরও বেশী মানুষকে। কিন্তু সে হিসাবই বা ক’জন করেছে? মিথ্যা বলায় রেকর্ড গড়েছে কাদের সিদ্দিকী। এ মিথ্যুকটি তার বই “একাত্তর”য়ে লিখেছে ১৯৭১’য়ের ২৫ মার্চের একরাতে তিন লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়।
মিথ্যুকগণ কখনোই হিসাব করে কথা বলে না। তারা মিথ্যা বলে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে। মিথ্যা বলায় পুঁজি বা শ্রম লাগে না। মিথ্যা বলা যে মহাপাপ –সে ভয়ও এ দুর্বৃত্তদের থাকে না। বিস্ময়ের বিষয় হলো বাঙালীদের মাঝে এ মিথ্যুকগণ খরিদদার পেতে অসুবিধা হয়নি। আজও তিরিশ লাখের এ বিশাল মিথ্যাটি অহরহ ধ্বনিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, আদালতের বিচারক, সেনাবাহিনীর জেনারেল, লেখক, বুদ্ধিজীবী, স্কুলের শিক্ষক, কলেজ ছাত্র, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের মুখে মুখে। অথচ মিথ্যুক হওয়ার জন্য তো এটুকুই যথেষ্ট, অন্যের রটানো মিথ্যাগুলি কেই শুনলো এবং কোন রূপ তদন্ত ও চিন্তা-ভাবনা না করেই তা প্রচার করলো। এভাবে মিথ্যাচার পরিণত হয়েছে অধিকাংশ বাঙালীর সংস্কৃতিতে। অথচ মানব চরিত্রের সবচেয়ে খারাপ দিকটি হলো এই মিথ্যাচার। এটিই হলো শয়তানের প্রধান খাসলত। অথচ শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা ও তার সহচরগণ শয়তানের সে খাসলতটিই নিজেদের চরিত্রে পুরাপুরি মিশিয়ে নিয়েছে এবং এভাব আনন্দ বাড়িয়েছে শয়তানের। এবং নাশকতা বাড়িয়েছে ইসলামের।
তবে ঘৃণ্যতম অপরাধ শুধু মিথ্যা বলা নয়, বরং মিথ্যুককে সন্মানিত করাও। ঈমানদারের মৌলিক দায়িত্ব হলো সকল সামর্থ্য দিয়ে সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়া এবং মিথ্যুকের মিথ্যাকে সবার সামনে উম্মোচিত করা। এটিই উত্তম ইবাদত। এবং হারাম হলো মিথ্যা বলা ও মিথ্যুকের পক্ষ নেয়া। বাংলাদেশীদের গুরুতর অপরাধ হলো তারা শেখ মুজিবের ন্যায় মিথ্যাবাদীকে ঘৃণা না করে তাকে জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু বলে সন্মানিত করে! বাঙালীর চারিত্রিক পচন যে কতটা গভীর -সেটি বুঝতে কি এরপরও কিছু বাকি থাকে? চারিত্রিক এ পচন নিয়ে কি সভ্য সমাজ নির্মাণ করা যায়?
বাঙালীর এ গুরুতর চারিত্রক ব্যর্থতাটি কবি রবীন্দ্রনাথের চোখে ধরা পড়েছিল। তাই তিনি প্রচণ্ড ক্ষোভ নিয়ে লিখেছিলেন, “হে বিধাতা, সাত কোটি প্রাণীরে রেখেছো বাঙালী করে, মানুষ করোনি।” রবীন্দ্রনাথের কাছে বাঙালীল মানুষ রূপে বেড়ে উঠায় ব্যর্থতাটি ধরা পড়েছিল। তবে রবীন্দ্রানাথের ভূল এবং সে সাথে অপরাধ হলো, তিনি বাঙালীর ব্যর্থতাকে বিধাতার উপর চাপিয়েছেন। অথচ মানুষ রূপে বেড়ে উঠার দায়িত্বটি প্রতিটি ব্যক্তির। সে সামর্থ্যটি স্রষ্টার পক্ষ থেকে প্রতিটি মানুষকে জন্মসূত্রেই দেয়া হয়ে থাকে। সে সামর্থ্যকে ব্যবহার করে যে কোন ব্যক্তি ফেরেশতাদের পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, আবার শয়তানের পথ ধরে নীচেও নামতে পারে। বাঙালী নীচে নামার পথটিই বেছে নিয়েছে। প্রশ্ন হলো, কেউ যদি মিথ্যাচার ও অসভ্যতার পথ বেছে নেয় -সেজন্য স্রষ্টা কেন দায়ী হবেন? অথচ বিস্ময়ের বিষয় হলো, রবীন্দ্রনাথ এক্ষেত্রে বাঙালীকে দায়ী না করে বিধাতাকে দায়ী করেছেন!
৩. সমস্যা জনগণকে নিয়ে
বাংলাদেশের সমস্যাটি শুধু দুর্বৃত্ত ভোটডাকাত সরকারকে নিয়ে নয়। গুরুতর সমস্যা দেশের জনগণকে নিয়েও। যেদেশের মানুষ মুর্তিপূজারী সে দেশের মন্দিরে মন্দিরে মুর্তিরা পূজা পাবে -সেটিই স্বাভাবিক। তেমনি যে দেশের জনগণ বাকশালী মুজিবের পূজারী সেদেশে স্বৈরাচারী দুর্বৃত্তরা পূজা পাবে –সেটিও অতি স্বাভাবিক। এমন দেশে ভোটডাকাতও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রূপে সমাদৃত হবে –সেটি আদৌ অভাবনীয় নয়। এমন জনগণের মাঝে কি কখনো গণতন্ত্র বাঁচে? মুর্তিপূজা নিয়ে মুসলিম হওয়া যায় না। তেমনি যারা মুজিবের ন্যায় নৃশংস বাকশালী ফ্যাসিস্টকে জাতির পিতা ও বঙ্গঁবন্ধুর সন্মান দেয় তারা কখনোই গণতন্ত্রী হতে পারে না। তারা অবশ্যই স্বৈরাচারী হয়। হাসিনা ও তার বাকশালী সহচরগণ তো সেটিই প্রমাণ করছে।
মানবিক অধিকার নিয়ে বাঁচার জন্য রুচি লাগে। কিন্তু সে রুচি স্বৈরাচার-পূজারীদের থাকার কথা নয়। মশামাছি সব জায়গায় বসে না, আবর্জনা খোঁজে। তেমন একটি কারণেই ভোটচোর স্বৈরচারীদের কাছে বাংলাদেশ এতো প্রিয়। বাংলাদেশে নির্বাচনের নামে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে যেরূপ ডাকাতি হলো সেটি কি বিশ্বের অন্য কোন দেশে সম্ভব? সেটি সম্ভব একমাত্র মুজিবপূজারীদের দেশেই। প্রতি ঘরেই প্রতিদিন আবর্জনা তৈরী হয়। সভ্য ভাবে বাঁচার জন্য ঘর থেকে নিয়মিত আবর্জনা সরানোর লোক থাকতে হয়। বিষয়টি অবিকল অভিন্ন সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে। প্রতি দেশেই যেমন মশামাছি জন্ম নেয়, তেমনি দুর্বৃত্ত উৎপাদনের উর্বর ক্ষেত্র থাকে। সভ্য ভাবে বাঁচতে হলে সেগুলিকে নির্মূল করতে হয়। দুর্বৃত্ত নির্মূলের সে লাগাতর যুদ্ধই হলো পবিত্র জিহাদ। সে যুদ্ধটি না হলে দেশ দুর্বৃত্তদের দখলে চলে যায়। গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে দুর্বৃত্তদের আবর্জনার স্তুপে ফেলার কাজটি হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। কিন্তু স্বৈরাচার কবলিত দেশে সে সুযোগ থাকে না। দুর্বৃত্ত ভোটডাকাতকে নির্মূল না করে বরং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সন্মান দেয়া হয়। বাংলাদেশে সেটিই হয়েছে। বাঙালীর চেতনার বৈকলত্বের এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে?
৪. জিহাদ কেন অপরিহার্য?
দেশ কখনোই কিছু সংখ্যক দুর্বৃত্তের কারণে অসভ্য হয় না। কিছু দুর্বৃত্ত মানুষ মহান নবীজী (সা:)’র যুগেও ছিল। দেশ অসভ্য হয় সেসব সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জন্য যারা চোখের সামনে চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, গুম, খুন, ধর্ষণ হতে দেখেও নীরব ও নিষ্ক্রিয় থাকে। এরূপ নিষ্ক্রিয়তাই হলো নিরেট অসভ্যতা। ইসলামী বিধানে তাই চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, গুম, খুন, ধর্ষণে লিপ্ত হওয়াই একমাত্র অপরাধ নয়, গুরুতর অপরাধ হলো চোখের সামনে এরূপ অপরাধ হতে দেখেও নিশ্চুপ থাকা। তখন মহান আল্লাহতায়ালার আযাব এরূপ অপরাধীদেরও ঘিরে ধরে। স্রেফ নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাত পালন করে এ আযাব থেকে মুক্তি মেলে না।
মুসলিম হলো মহান আল্লাহতায়ালার সার্বক্ষণিক সৈনিক। পবিত্র কুর’আনে মুসলিম উম্মাহকে বলা হয়েছে “হিযবুল্লাহ” তথা আল্লাহর দল। সৈনিককে প্রতিদিন শুধু প্রশিক্ষণ নিলে চলে না, তাকে প্রতি মুহুর্ত দায়িত্ব নিয়ে বাঁচতে হয়। নইলে তার শাস্তি হয়। দায়িত্বটি হলো দুর্বৃত্তদের নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। এভাবে ইসলামের বিজয়ে তাঁকে সার্বক্ষণিক সৈনিক হতে হয়। এ বিষয়ে পবিত্র কুর’আনে মহান আল্লাহতায়ালার নিজের বয়ানটি হলো: “আমারু বিল মারুফ ওয়া নেহি আনিল মুনকার।” এটিই মুসলিম জীবনে প্রতি মুহুর্তের পবিত্রতম জিহাদ। মুসলিম জীবনে এ জিহাদ না থাকলে মহান আল্লাহতায়ালার বিধান শুধু কুর’আনেই থেকে যায়, প্রতিষ্ঠা পায় না। অথচ মহান আল্লাহতায়ালা চান তাঁর রাজত্বে অবশ্যই তাঁর বিধানের প্রয়োগ থাকতে হবে। নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ তো সেটিই করে গেছেন। এবং সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিধানের প্রয়োগের পথ ধরেই তারা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা নির্মাণ করতে পরেছিলেন।
কিন্তু বাংলাদেশে সে জিহাদ কতটুকু হচ্ছে? মহান আল্লাহতায়ালার বিধানের তেলাওয়াত করেই তারা দায় সারছে, সেগুলির প্রতিষ্ঠায় নাই। দেশ মসজিদ-মাদ্রাসায় ভরে গেলে কি হবে, দেশের আদালতে বিচার-আচার চলছে ব্রিটিশ কাফেরদের প্রণীত কুফরি আইনে। হুজুরগণ এ নিয়ে আন্দোলনে নাই। যারা নামায-রোযা পালন করে, তাদের নজরও এদিকে নাই। মহান আল্লাহতায়ালা কি মুসলিমদের এরূপ আচরণে খুশি হতে পারেন? নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাত যেমন ব্যক্তির ব্যক্তিগত পরিশুদ্ধির বিধান, জিহাদ হলো সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিশুদ্ধির বিধান। জিহাদ ছাড়া কি তাই সভ্য রাষ্ট্র ও সভ্য সমাজ নির্মাণের কথা ভাবা যায়? মহান নবীজী (সা:) ও তাঁর মহান সাহাবাগণ কি কখনো এ জিহাদকে তাঁদের জীবন থেকে দূরে রেখেছিলেন? এ সহজ ও সত্য কথাগুলি বুঝতে বাঙালী মুসলিমের এতো ব্যর্থতা কেন? ০৪/০৭/২০২১
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- ভারতীয় ষড়যন্ত্র রুখতে হবে
- সম্প্রতি বাংলাদেশে যা দেখলাম
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018