বিবিধ ভাবনা ৬৭
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on July 18, 2021
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
১. পালিত হচ্ছে না পবিত্র কুর’আনের ফরজ
প্রতিটি ফরজ বিধান প্রতিটি মুসলিমের উপর বাধ্যতামূলক। কোন ফরজ বিধান পালন না করে কেউই মুসলিম রূপে গণ্য হওয়ার কথা ভাবতে পারেনা। তবে ইসলামে শুধু নামায-রোযা ও হ্জ্জ-যাকাতই ফরজ করা হয়নি। তার সাথে আরেকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কেও ফরজ করা হয়েছে। সেটি হলো পবিত্র কুর’আন। সে ঘোষণাটি এসেছে সুরা কাসাসের ৮৫ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে, “ইন্নাল্লাযীনা ফারাদা আলাইকাল কুর’আনা..”। অর্থ: নিশ্চয়ই (হে মুহম্মদ তিনি সেই মহান আল্লাহ) যিনি আপনার উপর ফরজ করেছেন কুর’আন।
প্রশ্ন হলো, কুর’আন ফরজ করার অর্থ কি? অন্ধকার গহীন জঙ্গলে বা বিশাল মরুর বুকে যে পথিক পথ হারিয়েছে তার কাছে রোডম্যাপের গুরুত্ব অপরিসীম। পথের সন্ধান না পেলে তার মৃত্যু অনিবার্য। তমনি গুরুত্বপূর্ণ হলো পথহারা মানুষের কাছে পবিত্র কুর’আন। একমাত্র এ কুর’আনই পথ দেখায় জান্নাতের। তাই যে ব্যক্তি কুর’আন পায়, একমাত্র সেই জান্নাত পায়। নইলে অনিবার্য হয় জাহান্নামে পৌঁছা। একজন বিবেকমান মানুষের কাছে জাহান্নামের আগুনে কোটি কোটি বছর দগ্ধিভুত হওয়া থেকে বাঁচাটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ হলো কুর’আন বুঝা এবং তা অনুসরণ করা।
মুসলিম উম্মাহর মাঝে বহু কোটি মানুষ আছে যারা নামায-রোযা ও হ্জ্জ-যাকাতের ন্যায় ফরজগুলি গুরুত্ব দিয়ে পালন করে। কিন্তু পালন করেনা পবিত্র কুর’আনের ফরজ। মুসলিম উম্মাহর মূল রোগটি এখানেই। ফলে তাদের জীবনে নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাত থাকলেও তারা কুর’আনের পথে তথা জান্নাতের পথে নাই। বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশে কোটি কোটি মানুষ যে পথহারা তা নিয়ে সন্দেহ আছে? যারা জান্নাতের পথে থাকে তারা কি কখনো জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলারিজম, লেবারালিজম ও সমাজবাদের পথে থাকে। তারা কি বিভক্ত হয় এবং নিজ হাতে নিজ দেশ ভেঙ্গে কাফেরদের সাথে নিয়ে উৎসব করে? আদালত থেকে কি বিলুপ্ত করে শরিয়ত? এগুলি তো শয়তানের পথ তথা জাহান্নামের পথ। জান্নাতের পথে শুধু নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাতই থাকে না, থাকে কুর’আনী জ্ঞান শিক্ষা, ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়ত, হুদুদ, জিহাদ, প্যান-ইসলামিক মুসলিম ঐক্য, শুরাভিত্তিক শাসন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশে এর কোনটিই নাই। অথচ নবীজী (সা:)’র আমলে এর সবগুলিই ছিল। এবং ঐগুলিই হলো জান্নাতের যাত্রাপথের মাইল ফলক। জান্নাতে পৌঁছতে হলে যাত্রাপথের এই সবগুলি মাইল ফলক অতিক্রমের নিয়েত থাকতে হয়। এবং সে লক্ষ্যে জিহাদও থাকতে হয়।
কুর’আনের ফরজ কখনোই গ্রন্থ্যটিকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলে পালিত হয়না। না বুঝে তেলাওয়াতেও পালিত হয়না। সে ফরজ তো তখনই পালিত হয় যখন মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া এ সর্বশ্রেষ্ঠ দানটি বুঝার চেষ্টা করা হয় এবং কুর’আনে বর্ণিত বিধানগুলিকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়। মুসলিমদের গৌরব কালে তো সেটিই হয়েছিল। কুর’আনের ফরজ আদায় সে সময় এতটাই গুরুত্ব পেয়েছিল যে মিশর, সুদান, সিরিয়া, ইরাক, মরক্কো, আলজিরিয়া, লিবিয়া, তিউনিসিয়া ও মৌরতানিয়ার ন্যায় বহু দেশের জনগণ তাদের মাতৃভাষাকে দাফন করে আরবী ভাষাকে নিজেদের ভাষা রূপে গ্রহণ করেছিল। তারা বুঝেছিল, কুর’আন না বুঝলে ও না মানলে কুর’আনের ফরজ পালিত হয়না। এবং সে ফরজ পালিত না হলে জান্নাতেও পৌঁছা যায় না।
অথচ বাংলাদেশের ন্যায় বহুদেশের মুসলিমের মূল ব্যর্থতাটি এখানেই। পবিত্র কুর’আনের ফরজ পালন না করেই তারা মুসলিম হওয়ার দাবী করে! এটি অবিকল ডাক্তারী বই না পড়েই ডাক্তারী পেশায় নামার ন্যায়। এভাবে ব্যর্থ হচ্ছে মুসলিম রূপে বেড়ে উঠা। নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাতের ফরজগুলি তো তখনই কাঙ্খিত ফল দেয় যখন কুর’আনের ফরজটি প্রথমে পালিত হয়। কারণ কুর’আনের জ্ঞানই আমলে ও ইবাদতে ওজন বাড়ায়। আর মহান আল্লাহতায়ালা তো আমলের ওজন দেখেন, সংখ্যা নয়। জাহিল ব্যক্তির ইবাদত তাই কখনোই জ্ঞানী ব্যক্তির ইবাদতের সমান হয়না। ইসলামে জ্ঞানার্জনের মর্যাদা এত বেশী যে, হাদীসে বলা হয়েছে: যখন কোন ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের লক্ষ্যে ঘর ছেড়ে পথে বের হয় তখন শুধু ফিরেশতাগণ নয় সকল জীবজন্তু, পশুপাখী ও পানির মাছ তার জন্য দরুদ পড়তে থাকে। এবং জ্ঞানীর যখন মৃত্যু হয় তখন যেন আসমান থেকে একটি নক্ষত্র খসে পড়লো। অথচ সে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকেই মুসলিম সমাজে গুরুত্ব দেয়া হয়না।
কুর’আনের ফরজ আদায়ের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মোল্লা-মৌলভী-আলেমগণ। না বুঝে কুর’আন তেলাওয়াত করলেই বিপুল সওয়াব –এরূপ কথা বলে কুর’আনের ফরজ আদায়ের আগ্রহই তারা বিলুপ্ত করেছেন। এবং তারা ব্যর্থ হয়েছেন সাধারণ জনগণের মাঝে কুর’আন বুঝায় আগ্রহ সৃষ্টি করতে। তাদের কারণে মানুষ না বুঝে তেলাওয়াত করেই আত্মপ্রসাদ লাভ করে। নবীজী (সা:) ও সাহাবাদের আমলে কি সেটি ভাবা যেত? মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর পবিত্র কুর’আনকে না বুঝে তেলাওয়াতের জন্য নাযিল করেননি। বরং এ জন্য নাযিল করেছেন যে মানুষ তা পড়বে, বুঝবে এবং পদে পদে তা অনুসরণ করবে। যেমনটি হয়ে থাকে পথ চলায় রোডম্যাপ অনুসরণের ক্ষেত্রে।
অথচ এ সহজ-সরল বিষয়টি বাংলাদেশের সাধারণ মুসলিমগণ যেমন বুঝতে পারিনি, তেমনি বুঝতে পারিনি দেশের সরকার, শিক্ষাবিদ ও মোল্লা-মৌলভী-আলেমগণ। এজন্যই বাংলাদেশের মত দেশে ঘরে ঘরে কুর’আন তেলাওয়াতের বিপুল আয়োজন থাকলেও তা বুঝার আয়োজন নাই। শয়তান তো এটিই চায়। শয়তান চায়, জনগণ কুর’আন চর্চাকে শুধু তেলাওয়াতের মাঝে সীমিত রাখুক। ফলে চলছে শয়তানকে খুশি করার আয়োজন। মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া ফরজ বিধানগুলিকে পবিত্র কুর’আনের পৃষ্ঠাগুলিতে বন্দী রাখার এর চেয়ে মোক্ষম উপায় আর কি হতে পারে? প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের মত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলিতে কি শয়তানকে খুশি করা ও শয়তানী প্রকল্পকে সফল করার এ কাজগুলিই লাগাতর চলতে থাকবে?
২. যুদ্ধময় জীবন ও শত্রু-মিত্রের পরিচয়
ঈমানদারের জীবনের প্রতিটি মুহুর্তই যুদ্ধময়। প্রতিটি আলোর যেমন উত্তাপ থাকে, তেমনি ঈমানদারের জীবনেও যুদ্ধ থাকে। বস্তুত যুদ্ধই পরিচয় দেয় সে কি আদৌ মুসলিম। মুসলিম রূপে নিজেকে পরিচয় দিল, অথচ জীবনে যুদ্ধ নাই -সেটি কি ভাবা যায়? তবে ঈমানদারের যুদ্ধটি শুধু পানাহারে বাঁচার যুদ্ধ নয়। বরং সেটি আদর্শ নিয়ে বাঁচার। মুসলিম জীবনে সে আদর্শটি হলো ইসলাম। এবং আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মুসলিম যোদ্ধাকে শুধু যুদ্ধ জানলে চলে না, কে শত্রু এবং কে মিত্র -সেটিও সঠিক ভাবে জানতে হয়। নইলে ভাল যুদ্ধ করেও পরাজয় এড়ানো যায় না।
তবে ঈমানদারের জীবনে প্রতি মুহুর্তে যে যুদ্ধ -সেটি মূলত শয়তানী শক্তির পক্ষ থেকে চাপানো যুদ্ধ। বলা হয়ে থাকে, ঈমানদার যদি কোন পাহাড়ে বা বিজন মরুভূমিতে একাকী পথ চলে, সেখানেও তাঁর পিছনে শয়তান এসে হাজির হয়। শয়তান কখনোই তার শত্রু তথা প্রকৃত ঈমানদারকে চিনতে ভূল করেনা। তাই যার জীবনে শয়তানের আরোপিত যুদ্ধ নাই, বুঝতে হবে শয়তান এবং শয়তানের অনুসারিগণ তাকে শত্রু রূপে গণ্যই করে না। এবং শয়তানের দৃষ্টিতে সে ঈমানদার নয়।
নবীজী (সা:)’র চেয়ে অধিক শান্তিবাদী ও সত্যাবাদী মানব সে সময় সমগ্র আরবে আর কে ছিল? নবুয়ত লাভের পূর্ব থেকেই বিবাদমান গোত্রগুলির মাঝে তিনি মীমাংসা করে দিতেন। কিন্তু যখনই তিনি ইসলামের দিকে মানুষদের ডাকা শুরু করলেন, তখনই তাঁর উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। প্রতি সমাজেই যুদ্ধের দুটি রূপ: এক). বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ; দুই). অস্ত্রের যুদ্ধ। মক্বার ১৩ বছর চলে নবীজী (সা:)’র বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ। শত্রুগণ তাঁকে বিনা বাঁধায় এক পাও এগুতে দেয়নি। শুরু হয় লাগাতর গালিগালাজ, হাসি-মস্করা, মিথ্যা অপবাদ আরোপের পালা। তাকে পাগল, যাদুকর ও জ্বিনের আছড়গ্রস্ত বলেও অভিহিত করা হয়। বয়কট করা হয় সামাজিক ভাবে। এসবই ছিল তাঁকে মানসিক ভাবে পরাস্ত ও পঙ্গু করার কৌশল।
সে বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধে নবীজী (সা:)’র হাতিয়ারটি ছিল পবিত্র কুর’আন। এবং কুর’আনকে হাতিয়ার রূপে ব্যবহারের হুকুমও এসেছে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে। বলা হয়েছে “জাহিদু বিল কুর’আন”; অর্থ: কুর’আন দিয়ে জিহাদ করো। অথচ বাংলাদেশের মত দেশগুলিতে যারা ইসলামের পক্ষে লড়াই করে তাদের হাতে সে পবিত্র হাতিয়ারটি নাই। মহান আল্লাহতায়ালার ওয়াজের বদলে তারা নিজেদের ওয়াজ চালিয়ে যায়। অথচ মক্কার বুকে ১৩ বছর যাবত যুদ্ধে নবীজী (সা:) কুর’আনকে ব্যবহার করেছেন হাতিয়ার রূপে। শেষের দিকে ষড়যন্ত্র শুরু হয় তাঁর প্রাণনাশের। এ পর্যায়ে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তাঁকে মদিনায় হিজরতের নির্দেশ দেয়া হয়।
মদিনায় হিজরতের পরও নবীজী (সা:)’র জীবনে যুদ্ধ থেমে যায়নি। বরং শুরু হয় গালিগালাজের বদলে অস্ত্রের যুদ্ধ। লক্ষ্য, তাঁর ও তাঁর অনুসারীদের মদিনা থেকে সমূলে নির্মূল। নবীজী (সা:)ও থেমে যাননি। তাঁকে ইসলামের মিশন চালিয়ে যেতে হয়েছে বদর, ওহুদ, খন্দকের ন্যায় চুড়ান্ত যুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়েই। আজও মুসলিমদের সামনে যুদ্ধ ছাড়া কি ভিন্ন পথ আছে? যুদ্ধ থেকে দূরে থাকার অর্থ বিনা যুদ্ধে শয়তানী শক্তির কাছে পরাজয় মেনে নেয়া। অথচ এরূপ পরাজয় মেনে নেয়াতে ইসলাম বাঁচে না। ঈমানও বাঁচে না। তখন প্রতিষ্ঠা পায় শয়তানের বিধান। বাংলাদেশের মত দেশগুলিতে সেটিই হয়েছে। ফলে শয়তানী শক্তির হাতে বিলুপ্ত হয়েছে রাষ্ট্রের বুকে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব, বিলুপ্ত হয়েছে শরিয়তী আইন এবং বিলুপ্ত হয়েছে নবীজী (সা:)’র আমলের ইসলাম এবং ইসলামী রাষ্ট্র। ফলে বিজয়ের মহোৎসব বেড়েছে সেক্যুলারিস্ট, ন্যাশনালিস্ট, ও ফ্যাসিস্টদের ন্যায় নানারূপ শত্রুশক্তির।
নিরাপদ জীবন শুধু পানাহারে নিশ্চিত হয় না। চিনতে হয় আশে পাশের হিংস্র পশু ও বিষাক্ত সাপ-বিচ্ছু ও পোকামাকড়দেরও। এ জ্ঞান না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি দিয়ে লাভ হয়না। তেমনি যুদ্ধে বিজয়ী হতে হলে কে শত্রু এবং কে মিত্র –সেটিও জানতে হয়। পবিত্র কুর’আনে তাই শুধু নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাতের বিধানই দেয়নি, নানা ভাবে পরিচয় পেশ করা হয়েছে ইসলামের শত্রুদেরও। ইসলামের শত্রুদের চেনার ২টি সহজ উপায় হলো: এক). ইসলামের শত্রুদের বিজয় ও ইসলামপন্থিদের ফাঁসি, নির্যাতন ও কারাবন্দী হতে দেখে তাদের উল্লাস আর গোপন থাকে না; বাঁধ ভাঙ্গা প্লাবনের পানির ন্যায় তা উপচে পড়ে। ইসলামপন্থিদের বিপদ দেখলেই তারা উৎসব করে। দুই). তারা কখনোই কুর’আন-হাদীস ও ইসলামী বিধানের প্রশংসা করে না। সে বিধানের প্রতিষ্ঠায় আগ্রহও দেখায় না। বরং তারা প্রশংসায় গদ গদ হয় ভারতের ন্যায় কাফের শক্তির এবং সে সাথে জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলারিজম ও সমাজবাদের মত কুফরী মতবাদের।
যুদ্ধে পরাজয়ের আরেক কারণ হলো, নিজ দেশে ছদ্দবেশী শত্রুর উপস্থিতি। জিততে হলে এদেরও চিনতে হয়। নিজেকে এরা মুসলিম রূপে পরিচয় দেয় এবং জনসম্মুখে নামায-রোযাও পালন করে। এরাই হলো মুনাফিক। এবং এরাই বিশ্বাসঘাতক। মুসলিমদের বড় বড় পরাজয়ের কারণ হলো এ মুনাফিকগণ। কাফেরদের চেয়েও এরাই হলো ইসলামের বড় শত্রু। খোদ নবীজী (সা:)’র আমলেও তাদের সংখ্যা কম ছিল না। সে সময় যারা নিজেদেরকে মুসলিম রূপে পরিচয় দিত তাদের মাঝে তারা ছিল প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ। তবে তাদের চেনাটিও কঠিন নয়। মুনাফিকদের চরিত্রের ২টি বিশেষ আলামত হলো: এক). ইসলামের শত্রুদের বিজয়, ইসলামী শক্তির পরাজয় এবং দেশের আদালত থেকে শরিয়তের বিলুপ্তি দেখেও তাদের মনে দুঃখ হয়না। শরিয়তের প্রতিষ্ঠা নিয়ে তথা ইসলামের বিজয় নিয়ে তাদের কোন আগ্রহ থাকে না। জিহাদের কথা কখনোই মুখে আনে না। দুই). ইসলামের যারা অতি পরিচিত শত্রু তারা কখনোই এ জীবদের নিজেদের শত্রু মনে করে না। তাদেরকে বরং বন্ধু মনে করে।
৩. চারিত্রিক বিপ্লব কীরূপে?
চরিত্রে আমূল বিপ্লব আনে আখেরাতের ভয়। সে বিপ্লব দেখা গেছে নবীজী (সা:)’র সাহাবাদের জীবনে। যেদেশে সে বিপ্লব আসেনি, নিশ্চিত বুঝতে হবে সে দেশের মানুষ যতই মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ুক বা নামায-রোযা পালন করুক, তাদের মাঝে আখেরাতের ভয় সৃষ্টি হয়নি। কেউ যদি সত্যিই বিশ্বাস করতো, পৃথিবীর সামান্য ক’টি বছরের ভাল কাজের বদলে আখেরাতে জুটবে অনন্ত অসীম কালের জন্য জান্নাত এবং মুক্তি মিলবে কোটি কোটি বছরের জাহন্নামের আগুন থেকে, সে ব্যক্তি কখনোই চুরিডাকাতি, খুন-ব্যাভিচার, সন্ত্রাস ও দুর্বৃ্ত্তিতে নামতো না। তার জীবনে তখন শুরু হতো ভাল কাজে প্রতিযোগিতা। এবং আজীবন লেগে থাকতো জিহাদে। কারণ, জিহাদই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ নেক কর্ম এবং জান্নাতে প্রবেশের অব্যর্থ চাবি। পবিত্র কুর’আনে মহান আল্লাহতায়ালা বার বার ওয়াদা করেছেন, যারা জিহাদে নিহত হবে তাদের বিনা হিসাবে জান্নাত দেয়া হবে। সে বিশ্বাসটি প্রবল ভাবে দেখা গেছে নবীজী (সা:)’র সাহাবাদের মাঝে। এমন চেতনা নিয়ে বাঁচায় নির্মূল হয় মিথ্যা ও দুর্বৃত্তি এবং প্রতিষ্ঠা পায় সত্য, সুবিচার ও শান্তি।
অতি শিক্ষণীয় একটি কাহিনী আছে। মানুষ যখন বহুশত বছর বাঁচতো তখন এক নবীর কাছে সন্তানহারা এক মা গিয়ে দুঃখভরে বলে, তারা পুত্রটি মারা গেছে। তখন সে নবী তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার পুত্রের বয়স কত ছিল? সে বলে আমার পুত্রের বয়স ছিল তিনশত বছরের কিছু বেশী। তখন উক্ত নবী তাঁকে বলেন, এমন এক সময় আসবে মানুষ যখন গড়ে ৭০ বছরেরও কম বাঁচবে। নবীর মুখ থেকে সে কথা শুনে উক্ত মা বিস্ময়ে বলেন, আমি সে সময় হলে ৭০ বছরের সে সময়টি সিজদাতেই কাটিয়ে দিতাম। অনন্তকালের জান্নাতের জন্য ৭০ বছরের সিজদা তাঁর কাছে অতি সামান্যই মনে হয়েছে। একেই বলে প্রজ্ঞা।
কিন্তু যারা নিজেদের ঈমানদার রূপে দাবী করে ও নিয়মিত নামায-রোযা পালন করে -তাদের মাঝেই বা সে প্রজ্ঞা কোথায়? সেটি থাকলে তো তাদের মাঝে নেক আমলের প্লাবন সৃষ্টি হতো। জিহাদের জোয়ার আসতো এবং দেশ থেকে বিলুপ্ত হতো ইসলামের শত্রুশক্তির শাসন। তখন বিজয় আসতো ইসলামের এবং প্রতিষ্ঠা পেত মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও শরিয়ত।
৪. ভিতটিই গড়া হয়নি
নেক আমলে অর্থ, জ্ঞান ও মেহনত লাগে। সবচেয়ে বড় নেক আমল হলো কাউকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানো। সে কাজে জ্ঞান লাগে। এমন কি জ্ঞান অপরিহার্য হলো নিজেকে বাঁচানোর জন্যও। এবং সে অপরিহার্য জ্ঞানটি হলো পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান। জ্ঞান তাই নেক আমলের সর্বশ্রেষ্ঠ হাতিয়ার। নিজের পরিশুদ্ধির জন্যও অপরিহার্য হলো এই জ্ঞান। জাহেলের জীবনে পরিশুদ্ধির কথা তাই ভাবাই যায়না। তার পক্ষে জান্নাতে পথ চেনা এবং সে পথে চলা অসম্ভব। জ্ঞানার্জন এজন্যই শ্রেষ্ঠ ইবাদত।
দালান গড়তে যেমন ভিত থেকে শুরু করতে হয়, তেমন মানুষ গড়তে শিক্ষা থেকে শুরু করতে হয়। এজন্যই মহান আল্লাহতায়ালা নামায-রোযার আগে জ্ঞানার্জনকে প্রথম ফরজ করেছিলেন। কিন্তু মুসলিম দেশগুলিতে শতকরা কত ভাগ মানুষের আছে পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান? এমন কি যারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী তাদেরই বা ক’জন কুর’আন বুঝতে পারে? ২০ বছরের শিক্ষা বছরে ছাত্র-ছাত্রীদের কি একটি আয়াতও শেখানো ও বুঝানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে? এর অর্থ দাঁড়ায় মানব গড়া ও সভ্যতা গড়ার কাজে ভিত গড়ার কাজটিই করা হয়নি। মুসলিমদের সকল ব্যর্থতার মূল কারণ তো এখানেই। ১৮/০৭/২০২১
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018