বিবিধ ভাবনা ৭১

ফিরোজ মাহবুব কামাল

১. ঈমানের সংজ্ঞা ও বেঈমানী

ঈমানের সংজ্ঞা কি, ঈমানদার কাকে বলে এবং ঈমানকে শক্তিশালীই বা কীরূপে করা যায় -এগুলি হলো মানব জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এক্ষেত্রে অজ্ঞতা নিয়ে ঈমানদার হওয়া অসম্ভব। ইসলামে ৫টি খুঁটির মাঝে ঈমানই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খুঁটি। এ খুঁটিকে মজবুত না করে নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাতের ন্যায় অন্য খুটিগুলিকে মজবুত করা অসম্ভব। মহান আল্লাহতায়ালা ব্যক্তির আমলের ওজন দেখেন। এবং সে ওজন বৃদ্ধি পায় ঈমানের গভীরতায়। এবং ঈমানের খুঁটি মজবুত করার একমাত্র মাধ্যম হলো ওহীর জ্ঞান। ইসলামে এ জ্ঞানার্জন ফরজ। নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাত ফরজ করার এক দশকের বেশী আগে এ জ্ঞানার্জনকে তাই ফরজ করা হয়েছে। সে ফরজ আদায়কে সফল করার জন্যই নাযিল করা হয়েছে পবিত্র কুর’আন। পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান ছাড়া ঈমান নিয়ে বেড়ে উঠা অসম্ভব। মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা: একমাত্র জ্ঞানীরাই আমাকে ভয় করে অর্থাৎ সত্যিকার মুসলিম হয়। তবে সে অপরিহার্য জ্ঞানটি ভাষা, বিজ্ঞান, ইতিহাস, গণিত বা অন্য বিষয়ের জ্ঞান নয়। সেটি পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান। বস্তুত সত্যিকার ঈমানদার হওয়ার পথে কুর’আনের জ্ঞানই হলো মূল দরজা।

মুসলিম বিশ্বে আজ সবচেয়ে বড় অজ্ঞতাটি হলো পবিত্র কুর’আনের জ্ঞানে। কুর’আন তেলাওয়াতের বিপুল আয়োজন হলেও তা বুঝার চেষ্টা হয় না। ফলে আদায় হয়না জ্ঞানার্জনের ফরজ। তাই কুর’আনী জ্ঞানের গভীর অজ্ঞতা নিয়ে বসবাস বাংলাদেশের মত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, শিক্ষক, সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক, সাংসদ, সচিব, উকিল, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ তথাকথিত শিক্ষিতজনদের। অথচ মুসলিম শিশুর শিক্ষার শুরু হওয়া উচিত ঈমান কাকে বলে এবং কীভাবে সে ঈমানকে আরো শক্তিশালী করা যায় –সে বিষয়গুলি শেখানোর মধ্য দিয়ে। জ্ঞানদান ও জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে এ গভীর ব্যর্থতার কারণে ব্যর্থ হয়েছে সত্যিকার মুসলিম হওয়ার কাজটি।

কুর’আনী জ্ঞানের অজ্ঞতার কারণে অজ্ঞতা বেড়েছে ঈমানের পরিচয় নিয়ে। অধিকাংশ মুসলিম ঈমান বলতে বুঝে মহান আল্লাহতায়ালা, তাঁর নবী-রাসূল, তাঁর নাযিলকৃত গ্রন্থ, রোয হাশরের বিচার দিন, তাকদির, জান্নাত-জাহান্নাম ও ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস। কিন্তু ঈমানের পরিসীমা আরো গভীর। কারা প্রকৃত ঈমানদার -সে বিষয়টি অতি সহজ ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। পবিত্র কোরআনে ঘোষিত ঈমানদারের সে পরিচয়টি হলো: “ঈমানদার একমাত্র তাঁরাই যারা বিশ্বাস করে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে এবং এ নিয়ে আর কোন রূপ দ্বিধা-দ্বন্দ করে না এবং তারা নিজেদের মাল ও জান নিয়ে জিহাদ করে আল্লাহর রাস্তায়। ঈমানের দাবীতে একমাত্র তারাই হলো সত্যবাদী।” -(সুরা হুজরাত, আয়াত ১৫)। উপরক্ত সংজ্ঞা মতে শুধু মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসুলের উপর ঈমান আনলেই ঈমানদার হওয়া যায় না। তাকে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের বিজয়ে জিহাদে নামতে হয়। জিহাদ হলো ঈমানের প্রকাশ; যেমন উত্তাপের মাঝে আগুণের প্রকাশ। জিহাদ ছাড়া ঈমানের কথা তাই ভাবাই যায় না। তাই নবীজী (সা:)’র প্রতিটি সাহাবার জীবনে জিহাদ ছিল। জিহাদে সংশ্লিষ্ট না হয়ে নিজেকে ঈমানদার রূপে দাবী করাটি তাই ঈমানের সাথে নিরেট ভন্ডামী।

প্রশ্ন হলো জিহাদ কি? জিহাদ হলো মহান আল্লাহতায়ালার রাজ্যে দুর্বৃত্তির নির্মূল ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার লড়াই। সেটি একমাত্র তাঁরই সার্বভৌমত্ব ও তাঁরই প্রদত্ত আইন শরিয়ত প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। তাই যার জীবনে আল্লাহর আইন তথা শরিয়তকে বিজয়ী করার জিহাদ নাই, সে ব্যক্তি নামাযী ও রোযাদার বা হাজী হতে পারে, মসজিদের ইমাম, আলেম, মাদ্রাসার শিক্ষক, মোফাছছের বা ইসলামী দলের নেতাও হতে পারে, কিন্তু সে ব্যক্তি প্রকৃত ঈমানদার নয়।

তাই ঈমানদার হওয়ার জন্য মূল শর্ত হলো, শরিয়তের পালন ও প্রতিষ্ঠা নিয়ে বাঁচা। এবং শরিয়ত নিয়ে বাঁচতে গেলে ঈমানদারের জীবনে জিহাদ অনিবার্য হয়ে উঠে। ঈমান ও জিহাদ তাই ব্যক্তির জীবনে সমান্তরাল ভাবে চলে। নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাত নিয়ে বাঁচায় এমন কি কাফের দেশেও ইসলামের শত্রুদের আপত্তি নাই। তাদের আপত্তি শরিয়ত নিয়ে। দেশের আইন-আদালত ও বিচার ব্যবস্থাকে তারা নিজেদের দখলে রাখতে চায়। চায়, নিজেদের গড়া আইনের শাসন। শরিয়তকে প্রতিষ্ঠা দিলে তাদের স্বার্থ বাঁচে না। মুসলিম জীবনে ঈমানের মূল পরীক্ষাটি হয় বস্তুত শরিয়ত পালনের এ ক্ষেত্রটিতে। কারণ জিহাদ এখানে অনিবার্য। যাদের জীবনে শরিয়তের পালন নাই, মহান আল্লাহতায়ালার সংজ্ঞা মতে তারাই ঈমানশূণ্য বেঈমান। সে বিষয়টি মহান আল্লাহতায়ালা সুস্পষ্ট করেছেন পবিত্র কোর’আনের সুরা মায়েদার ৪৪, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর আয়াতে। উপরুক্ত তিনটি আয়াতে বলা হয়েছে, যারা শরিয়তের আইন অনুযায়ী বিচার করে না তারা কাফের, জালেম ও ফাসেক। সকল মুসলিম শাসক ও জনগণ ইসলামের এ মৌল বিষয়টি বুঝতো। তাদের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে মহাপ্রভুর কাছে ঈমানদার রূপে গণ্য হওয়াটি। ফলে ঔপনিবেশিক কাফেরদের হাতে অধিকৃত হওয়ার আগে সিরাজুদ্দৌলা-শাসিত বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা, মোগল-শাসিত ভারতসহ প্রতিটি মুসলিম দেশে শরিয়তের আইন অনুযায়ী বিচার হতো। সেটি বিলুপ্ত করে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক কাফের শাসকগণ এবং প্রতিষ্ঠা দেয় নিজেদের মনগড়া আইনের। পরিতাপের বিষয় হলো, বিদেশী কাফেরদের শাসন বিলু্প্ত হলেও শরিয়তী শাসন ফিরে আসেনি। আজও কাফেরদের প্রতিষ্ঠিত কুফরি আইন প্রতিষ্ঠিত রয়েছে তাদের খলিফাদের হাতে –যারা বেড়ে উঠেছে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে।

 

২. মহড়াটি ভূয়া ঈমানের

রাজনীতি ও সংস্কৃতির মাঝে ধরা পড়ে ব্যক্তির প্রকৃত আনুগত্যটির ক্ষেত্রটি কোথায়? এবং অনুকরণীয় সত্ত্বা ও দর্শনটিই বা কী? এখানেই দৃশ্যমান হয় ব্যক্তির ঈমান। কে কতটা নামায-রোযা ও তাসবিহ পাঠ করে -সেটি পথেঘাটে ও কর্মক্ষেত্রে দর্শণীয় হয় না। অথচ রাজনীতি ও সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে ব্যক্তির ঈমান ও বেঈমানী কথা বলে। তাই ঈমানের সাথে বিপ্লব আসে রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের মত একটি মুসলিম দেশের রাজনীতি ও সংস্কৃতির অঙ্গণে কোথায় সে ঈমানের পরিচয়? কোথায় সে কাঙ্খিত ইসলামী বিপ্লব?

রাষ্ট্রের প্রতিটি কর্মচারি প্রতিটি কর্মে সরকারি আইন মেনে চলে। আইন অমান্য করলে বা আইনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে চাকুরি থেকে শুধু বহিস্কৃতই হয় না, শাস্তিও ভোগ করে। কোর্টমার্শাল হয় বিদ্রোহী সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিককেও মানতে হয় রাষ্ট্রের প্রতিটি আইন। তাই জেল-জরিমানা থেকে বাঁচতে হলে সবাইকে আইন মেনে চলতে হয়। তেমনি জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে হলে মানতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার আইন শরিয়তকে। স্রেফ নামায়-রোযায় মুক্তি মিলে না। ঈমানের প্রকৃত প্রকাশ তো জীবনের প্রতি পদে শরিয়ত মেনে চলায়। নইলে মহা প্রভুর দরবারে ঈমানের দাবীটি ভূয়া গণ্য হয়। শরিয়তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হলে শাস্তি শুধু পরকালে নয়, দুনিয়ার বুকেও অনিবার্য হয়ে উঠে। সে অবাধ্যতা আযাব ডেকে আনে। অথচ বাংলাদেশের মত একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের আদালতে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা নাই। আদালত চলছে ব্রিটিশ কাফেরদের প্রণীত আইনে। মহান আল্লাহর বিরুদ্ধে এর চেয়ে সুস্পষ্ট বিদ্রোহ আর কি হতে পারে? বিস্ময়ের বিষয় হলো, একদিকে চলছে প্রবল বিদ্রোহ, অপর দিকে জোর দেয়া হচ্ছে নামায-রোযা ও তাসবিহ-তাহলিল পালনে।

অথচ মুসলিম হওয়ার অর্থ হলো, মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিটি হুকুমের পূর্ণ আত্মসমর্পণ। ইসলাম শব্দটির উৎপত্তি হলো আসলামা তথা আত্মসমর্পণ থেকে। সে হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কাফেরে পরিণত করে। এবং সে হুকুমগুলি শুধু নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাতে সীমিত নয়। নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাতের হুকুমগুলি তো মুষ্টিমেয়। অধিকাংশ কুর’আনী হুকুম তো শরিয়ত বিষয়ক। একমাত্র শরিয়তই দেয় জুলুমের নির্মূল, সুশাসন ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি। নামায-রোযার কাজ সেগুলি নয়। তাই শরিয়ত ছাড়া ইসলাম তাই অপূর্ণ। তখন অসম্ভব হয় সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিশুদ্ধি ও ইসলামী সভ্যতার নির্মাণ। শরিয়ত অমান্য করে তাই মুসলিম হওয়া সম্ভব কীরূপে? অথচ বাংলাদেশের মত একটি মুসলিম দেশে সে ভূয়া ঈমানেরই মহড়া হচ্ছে। এবং সেটি দেশের আদালতে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা না দিয়ে। এখানে প্রকাশ পাচ্ছে মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। কথা হলো, এ বিদ্রোহ নিয়ে কি জান্নাতের স্বপ্ন দেখা যায়?

 

৩. মশকরা মহান আল্লাহতায়ালার সাথে!

কর্ম, চরিত্র ও আচরণ নিয়ন্ত্রিত হয় ব্যক্তির চেতনা থেকে। আর ঈমানদারের চেতনার ভূমিতে কাজ করে পরকালের ভয়। পরকালের ভয় না থাকলে অতি কঠিন পাপও সহজ হয়ে যায়। মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহও তখন মামূলী ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তখন প্রবৃত্তির লালসাই জীবনের ইঞ্জিনে পরিণত হয়। প্রবৃত্তি যা বলে, বেঈমানের জীবনের গাড়ি সেদিকেই চলে। হালাল-হারামে বাছ-বিচার তখন গৌণ হয়ে দাঁড়ায়। অপর দিকে ঈমানদারের জীবনে বিপ্লব আনে পরকালের ভয়। ব্যক্তির জীবনে তখন ইবাদত-বন্দেগী আসে এবং নেক আমলে তাড়াহুড়া শুরু হয়। তখন লাগাতর জিহাদ আসে এবং রাষ্ট্রের বুকে অন্যায়ের নির্মূল ও শরিয়তের প্রতিষ্ঠায় শহীদ হওয়ার অদম্য বাসনাও জাগে। এভাবেই জনগণের জীবনে নৈতিক ও চারিত্রিক বিপ্লব শুরু হয়। মানুষ তখন ফেরেশতাদের পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে। এগুলি কোন ইউটোপিয়ান ভাবনা নয়, মুসলিমদের গৌরব যুগে অবিকল তো তাই ঘটেছিল

পরকালের ভয় থাকাতেই নবীজী (সা:)’র সাহাবীদের শতকরা ৬০ ভাগের বেশী শহীদ হয়ে গেছেন। তাদের সে আত্মত্যাগের ফলেই সমাজ থেকে দুর্বৃত্তি বিলুপ্ত হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠা পেয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার বিধান। এবং মুসলিমগণ পরিণত হয়েছে বিশ্বশক্তিতে। অথচ চেতনায় পরকালের ভয় না এলে নামায-রোযা, হজ্জ-উমরাহ পালন করেও মানুষ দুর্বৃত্ত ও মুনাফিক হয়। এমন ব্যক্তিদের জীবনে নৈতিক ও চারিত্রিক বিপ্লব আসে না। মুসলিম সমাজে এমন নামাযী ও রোযাদারের সংখ্যা প্রচুর। এরা নামায পড়েও সূদ খায়, ঘুষ খায় এবং জিহাদকে সন্ত্রাস বলে। এদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে মুসলিমদের বিজয় ও গৌরব আসে না।

মুনাফিকদের বড় পরিচয়টি হলো, দেশে নানারূপ দুর্বৃত্তির জোয়ার এলেও তাদের জীবনে অন্যায়ের নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় জিহাদ থাকে না। শহীদ হওয়ার আগ্রহও থাকে না। তাদের সকল সামর্থ্য ব্যয় হয় নিজেদের পার্থিব জীবনকে সমৃদ্ধ ও আনন্দময় করতে। এবং নামায-রোযার ন্যায় ধর্মের কিছু কিছু বিধানকে তারা খেয়াল-খুশি মত বেছে নেয়। অথচ মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশ হলো, ইসলামের সকল বিধানগুলিতে পূর্ণ আত্মসমর্পণ। পবিত্র কুর’আনে বলা হয়েছে, “উদখুলো ফিস সিলমে কা’ফফা।” এর অর্থ: প্রবেশ করো ইসলামে পুরাপুরী ভাবে। ইসলামের আংশিক পালন ও পবিত্র কুর’আনে কোন একটি বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কোন অবকাশ নাই। অথচ সে বিদ্রোহই পরিণত হয়েছে বাংলাদেশী মুসলিমদের রাজনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি, বিচার আচার ও অর্থনীতিতে। তাই দেশের আদালতে কুফরি আইন, অর্থনীতিতে সূদ, প্রশাসনে ঘুষ, বিদ্যালয়ে কুর’আন বর্জন, শহরে পতিতা পল্লী –এ নিয়েই বাংলাদেশীদের ইসলাম পালন! মহান আল্লাহতায়ালার সাথে এর চেয়ে বড় মশকরা আর কি হতে পারে?  

 

৪. নারী রপ্তানীর হারাম বিষয়টি

আলু-পটল, মাছ বা পোষাক বিদেশে রপ্তানি করা যায়। কিন্তু নারীও কি রপ্তানি করা যায়? অথচ বাংলাদেশে সেটি অবাধে হচ্ছে। নারী পরিণত হয়েছে রপ্তানি পণ্যে। অথচ শরিয়তে নারীদের একাকী হজ্জে যাওয়ার অনুমতিও নাই। এ ফয়সালাটি মহান আল্লাহতায়ালার। অজানা বিদেশে এক অপরিচিতের ঘরে একজন পিতা বা মাতা তার মেয়েকে, ভাই তার বোনকে এবং স্বামী তার স্ত্রীকে কীরূপে কাজ করার অনুমতি দেয়? অজানা সে ব্যক্তিটি যে নারী-লোভী দুর্বৃত্ত নয় -সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত হলো কী করে? কত মেয়ে ধর্ষিতা হয়ে এবং দৈহিক নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে দেশে ফিরছে -সেটি কি তারা জানে না? সরকারই বা কেন নারীদের বানিজ্যিক পণ্যে পরিণত করে? সরকারের দায়িত্ব তো নারীদের প্রতিরক্ষা দেয়া, হারামকে প্রশ্রয় দেয়া নয়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে পুরাপুরি দায়িত্বহীন। তারা শুধু বিদেশ থেকে অর্থ লাভকেই গুরুত্ব দেয়। ইসলাম কি বলে -সেটি তাদের কাছে গুরুত্বহীন।

সরকারের এ কুফুরি আচরনের বিরুদ্ধে আলেমদেরই বা প্রতিবাদ কই? সাধারণ মানুষই বা কেন কথা বলে না? অর্থের লোভে মানুষ কি এতটাই বিবেকশূণ্য ও ঈমানশূণ্য হতে পারে? এরূপ ভয়ানক বিবেকশূণ্যতার কারণেই সূদী লেনদেন ও বেশ্যাবৃত্তির ন্যায় জঘন্য পাপ কর্মও বাংলাদেশের ন্যায় একটি মুসলিম দেশে বৈধ অর্থনৈতিক কর্মে পরিণত হয়েছে। এসব কি ঈমানদারীর পরিচয়? বাংলাদেশীদের মধ্যে সত্যিকার ঈমান থাকলে এসবের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু হয়ে যেত। স্রেফ মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ে কি এ বেঈমানী ঢাকা যায়?

 

৫. প্রতিযোগিতা শয়তানকে খুশি করায়

আর.এস.এস (রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ) হলো ভারতীয় হিন্দুদের অতি উগ্র সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। এ সংগঠন থেকেই জন্ম নিয়েছে বিজিপি। এ সংগঠনের কর্মী নাথুরাম গড়সে ভারতের কংগ্রেস নেতা গান্ধীকে হত্যা করেছিল। আজ এ হত্যাপাগল সংগঠনের কর্মীদের হাতেই অধিকৃত হলো ভারতের শাসন ক্ষমতা, পুলিশ ও আদালত। তারা ভারত থেকে মুসলিমদের নির্মূল করতে চায়। তাদের কথা, হিন্দুস্থান শুধু হিন্দুদের জন্য, এবং ভারতে মুসলিমদের স্থান নাই। রাজপথে তারা স্লোগান দেয়, “মুসলিম কো লিয়ে দো স্থান: পাকিস্তান ইয়া কবরস্থান।” অর্থ: “মুসলিমদের জন্য দুটি স্থান: হয় পাকিস্তান, নয় কবরস্থান।”

ফলে মসজিদ ভাঙ্গলে এবং মুসলিমদের হত্যা ও ধর্ষণ করলেও ভারতের আদালতে শাস্তি হয়না। গুজরাত, মুম্বাই ও দিল্লিতে বহু হাজার মুসলিমকে হত্যা করা হলো, কিন্তু কারো কি শাস্তি হয়েছে? দিন-দুপুরে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হলো ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ, সে অপরাধেও কি কারো শাস্তি হয়েছে? অথচ ভারতের আইনেও সেটি ছিল জঘন্য অপরাধ। মুসলিম হত্যা ও নির্যাতনের কাজটি করে থাকে আর,এস.এস’য়ের গুন্ডারা, সে কাজগুলিই আজ সরকারী ভাবে করছে নরেন্দ্র মোদি সরকারের পুলিশ। নরেন্দ্র মোদি নিজে আর.এস.এস.’র ফসল। অথচ সে মোদীকে ঘনিষ্ট বন্ধু রূপে পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করে শেখ হাসিনা। উপঢৌকন রূপে শেখ হাসিনা মোদির জন্য হাজার কেজি আম পাঠায়। মুসলিমদের জান-মালের প্রতি সামান্য দরদ থাকলে মোদীর ন্যায় মুসলিম হত্যার নায়ক এক জঘন্য অপরাধীকে কেউ কি বন্ধু রূপে গ্রহণ করে? বন্ধুর মধ্যেই ধরা পড়ে একজন ব্যক্তির নিজের পরিচয়। কারণ, বন্ধু নির্বাচনে মানুষ তার মনের কাছের মানুষকে বেছে নেয়। তখন মধ্য ধরা পড়ে তার নিজের পছন্দের ও অপছন্দের বিষয়টি। তাই মোদিকে চিনলেই হাসিনাকে চেনা যায়।

লক্ষণীয় হলো, নরেন্দ্র মোদি যে নির্যাতনটি করছে ভারতীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে, হাসিনাও সেটিই করছে বাংলাদেশী মুসলিমদের বিরুদ্ধে। উভয়েরই অভিন্ন নীতি। নরেন্দ্র মোদি প্রখ্যাত ইসলামী মনিষী যাকির নায়েককে ভারতে নিষিদ্ধ করেছে। হাসিনাও বাংলাদেশে যাকির নায়ককে নিষিদ্ধ করেছে। মোদি নিষিদ্ধ করেছে ইসলামী চ্যানেল পিস টিভি। হাসিনাও নিষিদ্ধ করেছে ইসলামী টিভি চ্যানেল ও ইসলামপন্থীদের দিগন্ত টিভি। হাসিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রখ্যাত তাফসির কারক দেলওয়ার হোসেন সাঈদীকে সারা জীবনের জন্য কারাবন্দী করেছে। যে বীভৎস ও নৃশংস মুসলিম হত্যাকান্ডটি মোদি ঘটিয়েছে গুজরাতে, শেখ হাসিনা সেরূপ নৃশংস হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে হিফাজতে ইসলামের মুসল্লীদের বিরুদ্ধে ঢাকার শাপলা চত্ত্বরে। তাই মুসলিম নির্যাতন ও ইসলাম দমনে মোদীর সাথে হাসিনার প্রতিযোগীতা চলছে। তাদের উভয়েরই লক্ষ্য, মুসলিম ও ইসলাম দমন। এ তো নরেন্দ্র মোদীর সাথে হাসিনার শয়তানকে খুশি করার প্রতিযোগিতা। এমন মুসলিম-দুষমন ব্যক্তি কি কোন মুসলিম দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অধিকার রাখে? এমন দুর্বৃত্তকে শাসক রূপে মেনে নিলে কি ঈমান থাকে? অথচ রাষ্ট্র-প্রধানের এ পবিত্র আসনে ১০ বছর যাবত বসেছেন খোদ নবীজী (সা:)। বসেছেন তাঁর মহান সাহাবাগণ। এ পবিত্র আসন হাসিনার ন্যায় একজন ভোটডাকাত দুর্বৃত্তের হাতে হাইজ্যাক হওয়া নিয়ে বাঙালী মুসলিমদের আদৌ কি কোন ক্ষোভ আছে?

 

৬. শিক্ষা খাতের কদর্য ব্যর্থতা

অজ্ঞ বা জ্ঞানশূণ্য ব্যক্তি কখনোই ঈমানদার হতে পারেনা। ঈমানের খাদ্য হলো জ্ঞান। অজ্ঞতায় মারা যায় ঈমান। বাতি জ্বালাতে যেমন তেল লাগে, ঈমানের বাতি জ্বালাতে তেমনি জ্ঞান লাগে। জাহেলিয়াত বা অজ্ঞতায় সেটি হয়না। এজন্যই নামায-রোযা ফরজ করার আগে মহান আল্লাহতায়ালা জ্ঞান অর্জনকে ফরজ করেছেন। প্রতিটি নারী ও পুরুষের উপর নামায-রোযার ন্যায় সেটি আমৃত্যু ফরজ। মুসলিমের জীবনে দুই অবস্থা। হয় সে কিছু শেখার কাজে ব্যস্ত, নতুবা কাউকে কিছু শেখানোর কাজে ব্যস্ত। শেখা ও শেখানো -এ দুটি কাজই অতি পবিত্র ইবাদত। তাই ঈমানদারের বড় পরিচয়টি হলো, সে সব সময় ব্যস্ত থাকে জ্ঞান অর্জনে বা জ্ঞান বিতরণে। তাই যেদেশে প্রকৃত মুসলিমের বসবাস সেদেশে অশিক্ষা ও কুশিক্ষা থাকতে পারে না। মুসলিম সমাজের অর্থই শিক্ষিত ও সভ্য সমাজ। যে মুসলিম সমাজে অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও অসভ্যতা, বুঝতে হবে সে সমাজের মানুষ মুসলিম হতেই ব্যর্থ হয়েছে।

উন্নয়নের ন্যায় দেশের ধ্বংসের শুরুটিও হয় শিক্ষার অঙ্গণ থেকে। শুধু রাজনীতি, আন্দোলন ও বক্তৃতা দিয়ে জাতির ভাগ্য পাল্টানো যায় না। বাংলাদেশে এসব বহু হয়েছে। কিন্তু দেশ ডুবছে। দেশের ভাগ্য পাল্টানোর মূল জায়গাটি হলো শিক্ষালয়। অথচ বাংলাদেশে সে জায়গাকেই ধ্বংস করা হচ্ছে। তাছাড়া শিক্ষাকে শুধু স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় সীমিত রাখলে জাতিকে শিক্ষিত করা যায় না। মসজিদ, পত্র-পত্রিকা, বই, সাহিত্য, রেডিও-টিভি -এসবই জ্ঞানদানের শক্তিশালী মাধ্যম। সরকার অপরাধী হয় যদি দেশের একজন নাগরিকও খাদ্যাভাবে মারা যায়। কারণ খাদ্য জোগানোর মূল দায়িত্বটি সরকারের। তেমনি সরকার অপরাধী হয় যদি কোন একজন ব্যক্তিও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। প্রতিটি নাগরিককে শিক্ষিত করার মূল দায়িত্বটি সরকারের। অশিক্ষা ব্যক্তির বাঁচাটিই ব্যর্থ করে দেয়। জনগণের এ ব্যর্থতার জন্য দায়ী দেশের ব্যর্থ সরকার। দেশে রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও কলকারখানা কম হলেও জাতির এতো ক্ষতি হয়না, যতটা ক্ষতি হয় জাতির সবাইকে শিক্ষিত না করলে। রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও কলকারখানা গড়া মহান আল্লাহতায়ালা ফরজ করেননি, কিন্তু ফরজ করেছেন শিক্ষাদানকে। তাই শিক্ষাদানই হলো একটি সভ্য সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত।

দেশে কতটা রাস্তাঘাট-ব্রিজ নির্মিত হলো বা অর্থনৈতিক অগ্রগতি হলো -সে প্রশ্নগুলি রোজহাশরের বিচার দিনে উঠবে না। বরং প্রশ্ন উঠবে, জনগণকে জাহান্নাম থেকে ফেরানোর কাজ তথা ঈমানদার রূপে গড়ার কাজ কতটা হয়েছে -তা নিয়ে। আর ঈমানদার রূপে গড়তে হলে তো সুশিক্ষার আয়োজন বাড়াতে হয়। মানুষ পানাহারের অভাবে কাফের ও অসভ্য দুর্বৃত্ত জীবে পরিণত হয় না। সেটি হয় সুশিক্ষার অভাবে। তাই শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন করে লাভ কি যদি মানুষ বেঈমান, অসভ্য ও দুর্বৃত্তে পরিণত হয়? বাংলাদেশের ঘুষখোর, সূদখোর, মদখোর, ধর্ষক, সন্ত্রাসী, চোর-ডাকাত, ভোটডাকাত ও দুর্নীতিপরায়ন ডাক্তার-ইঞ্জিনীয়ার ও সরকারি কর্মচারীগণ বন-জঙ্গলে বেড়ে উঠেনি। তারা বিপুল সংখ্যায় বেড়ে উঠেছে দেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে। বিরাজমান বিপুল সংখ্যক এ অপরাধীরাই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যর্থতা ও কুকীর্তিগুলি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। ­­    

ঔষধে ভেজাল হলে রোগী বাঁচে না। শিক্ষায় ভেজাল হলে চরিত্র বাঁচে না। সভ্য দেশে এ দুইটি ক্ষেত্রেই ভেজাল  অসহ্য। যে দেশে শিক্ষকগণ অসৎ, অলস ও ফাঁকিবাজ এবং পরীক্ষায় যে দেশে নকল হয় ও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় -সে দেশের শিক্ষায় ভেজালটি অতি গভীর। অপর দিকে শিক্ষাকে শুধু স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় সীমিত রাখলে জাতিকে শিক্ষিত করা যায় না। মাদ্রাসায় পরিণত করতে হয় সমগ্র দেশকে। বলা হয়ে থাকে, একটি শিশুকে গড়ে তোলার দায়িত্ব শুধু একটি পরিবারের নয়, সে দায়িত্ব সমগ্র মহল্লাবাসী বা গ্রামবাসীর। একটি গাছও একাকী বেড়ে উঠেনা। সে জন্য চাই সহযোগী পরিবেশ ও আলোবাতাস। তাই প্রতিটি ঘর ও জনপদে চাই শেখা ও শেখানোর পরিবেশ। শিক্ষাদানটি হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্মিলিত সামাজিক দায়িত্ব পালনের জায়গা। মুসলিমগণ যখন শিক্ষাদীক্ষায় সবচেয়ে বড় বিপ্লব এনেছিল এবং গড়ে উঠেছিল বিশ্বশক্তি রূপে তখন তাদের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ই ছিল না। তারা প্রতিটি গৃহকে পরিণত করেছিল সার্বক্ষণিক বিদ্যালয়ে এবং প্রতিটি মসজিদকে পরিণত করেছিল কলেজে। মায়েরা পরিণত হয়েছিল সার্বক্ষণিক শিক্ষিকায়। জ্ঞানবান ও চরিত্রবান মানুষ গড়ে উঠেছিল সেসব বিদ্যালয় থেকেই।

মুসলিমদের গৌরব কালে শিক্ষার সর্বশ্রেষ্ঠ পাঠ্য বইটি ছিল পবিত্র কুর’আন। এটিই হলো ভূপৃষ্ঠের বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব। এ কিতাবের রচিয়তা মহাজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালা। মহান আল্লাহতায়ালার ভাষায়, পবিত্র কুর’আন হলো নূর তথা আলো। এটি হলো জ্ঞানের আলো। একমাত্র সে আলোই মানুষকে আলোময় জান্নাতের পথ দেখায়। আলোময় এ পথটি সত্য, সুবিচার ও সভ্যতার পথ। অজ্ঞতা হলো অন্ধকার। অজ্ঞতার পথটি হলো মিথ্যা, অবিচার ও অসভ্যতার পথ। তাই যে সমাজে কুর’আনের চর্চা নাই সে সমাজে আলো নাই। সত্য, সুবিচার ও সভ্যতাও নাই। সে সমাজ দুর্বৃত্তময় ও অন্ধকারাচ্ছন্ন। সে অন্ধকার নেয় জাহান্নামের পথে। ঈমানদারগণ যখন রাষ্ট্র গড়ে তখন নামায-রোযার ন্যায় জনগণকে আলোর পথ তথা জান্নাতের পথ দেখানোটি সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। এবং সেটি শিক্ষাকে সার্বজনীন করার মাধ্যমে। অথচ বাংলাদেশে মানব শিশুদের হৃদয়ে আলো জ্বালানোর সে কাজটিই হয়নি এবং হচ্ছে না। শিক্ষার নামে স্রেফ সার্টিফিকেট বিতরণ হচ্ছে। সার্টিফিকেট দিয়ে কি দেশ গড়া যায়? মুসলিমগণ যখন সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিয়েছিল তখন তাদের কারোই কোন সার্টিফিকেট ছিল না। তাদের ছিল ঈমান, জ্ঞান ও চরিত্র। অথচ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় অভাব হলো এই তিনটি খাতে। কারণ, যে শিক্ষাব্যবস্থায় ঈমান, জ্ঞান ও চরিত্র গড়া হয় সেটিই ধ্বংস করা হয়েছে। ০৪/০৮/২০২১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *