ভাবনায় নাশকতা ও বিজয়ের নেশা

ফিরোজ মাহবুব কামাল

 এ মানব জীবন ক্ষুদ্র নয়, অনন্ত-অসীম।

এ এক মৃত্যুহীন জীবন।

মৃত্যুই দ্বার খুলে দেয় মৃত্যুহীন অনন্ত জীবনের।

এ শাশ্বত সত্যের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার এবং সবচেয়ে বড় নাশকতা হলো,

মৃত্যুতেই জীবনের সমাপ্তি –এ মিথ্যাটি বলা।

এমন মিথ্যাচারই অন্তহীন জীবনে আনে ভ্রষ্টতা, ক্ষুদ্রতা ও পাপাচারের নেশা।

এ মিথ্যাই জন্ম দেয় আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের।

  এবং এ মিথ্যাতেই বিজয়ী হয় অভিশপ্ত শয়তান।

 

এ জীবনে বাঁচাটি কি শুধু পেটের তাড়না, নিজ গৃহে আশ্রয়, প্রিয়জনের প্রেম, পোষাকের চমক,

পেশাদারী ব্যস্ততা ও স্বপ্নের জাল বুনে বুনে প্রতিদিন বৃত্তাকারে সকাল-সন্ধা পাড় করা?

এ বাঁচারও হঠাৎ অন্ত আছে,

এই দেখা, এই ভোগ, সুখ-দুঃখের এই আয়োজন

একদিন হঠাৎ নাই হয়ে যাবে।

 

কোটি কোটি মানুষ এর আগেও গাছের ঝরে পরা অসংখ্য পাতার ন্যায় হারিয়ে গেছে এ পৃথিবী থেকে।

যে পথে তাঁরা প্রতিদিন হাঁটতো, যে জনপদে তাঁরা বেঁধেছিল ঘর এবং বুনেছিল স্বপ্নের জাল,

সেখানে তাদের কোন স্মৃতিই বেঁচে নাই আর।  

এভাবে হারিয়ে যাওয়াই দুনিয়ার নিয়ম।

 

আমাদের সচল দেহ, সরব মুখ, সতেজ চাহনী, চেতনার ঝড় সবই শেষ হয়ে যাবে।

তুমি, আমি, আমরাও সহসাই হারিয়ে যাবো এ পৃথিবী থেকে।

এটিই তো জীবনের মহা সত্য।

কিন্তু কি বিস্ময়!

জীবনের এ মহা সত্যটি ভূলে মানুষ অবিরাম স্বপ্নের জাল বুনে নশ্বর এই পৃথিবীকে ঘিরে।

এবং ভাবনায় বাদ পড়ে বাঁকি জীবন!  

 

 

এ পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়াটাই জীবনের শেষ কথা নয়।

হারিয়ে যাওয়ার পরও আবার ফিরে আসা আছে।

আবার জেগে উঠে পাড়ি জমাতে হবে কোটি কোটি মাইল দূরের মহাশূণ্যের পাড়ে।

যেখানে লক্ষ লক্ষ নক্ষত্র যুগ যুগ ধরে অপেক্ষায় আছে।

সেখানে নতুন ভাবে বাঁচতে হবে এক মৃত্যুহীন জীবন নিয়ে।

সেটিই অন্তহীন আখেরাতের জীবন।

                      

মহান আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির চুড়ান্ত বাসস্থানটি

ধুলা-বালি, রৌদ্র-খরা, ঝড়-ঝঞ্ঝাপূর্ণ এই ক্ষুদ্র পৃথিবীর ক্ষু্দ্র ক্ষু্দ্র বাসগৃহ নয়,

কি অসীম করুণা মহান আল্লাহর!

সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির তরে শূণ্য আকাশে করুণাময় স্রষ্টা গড়েছেন

আরেক শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, সেটিই তো নেয়ামত-পূর্ণ জান্নাত।

জুটবে যেথা আনন্দভরা বিশাল জগত, অভাবেরই অভাব যেখানে।

ক্ষণিকের এ পার্থিব পর্ব শেষে সেটিই তো শেষ ঠিকানা হবে সকল নেক বান্দার।

আর যারা পাপী, বিদ্রোহী ও বেঈমান তারা পাবে মৃত্যুহীন জীবন জাহান্নামের আগুণে।  

 

কুর’আনের আগেও এ মহা সত্যটি নানা যুগে বার বার ধ্বণিত হয়েছে

প্রতিটি আসমানী কিতাব ও প্রতিটি নবী-রাসূলের মুখে।

কিন্তু কি বিস্ময়!

পৃথিবীর মোহে ডুবা মানুষ বাঁচে সে মহা সত্যটি না জেনে ও না বুঝেই!

মানব সভ্যতার এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা ও এর চেয়ে বড় অজ্ঞতা কি দ্বিতীয়টা আছে?

  

মানবের বড় শত্রু, বড় নাশকতা অর্থাভাব ও খাদ্যাভাব নয়,

সেটি ঘটে জীবন ও জগত নিয়ে এই জ্ঞানশূণ্যতায়।

অজ্ঞতার চেয়ে বড় পাপ কি এই ধরাপৃষ্টে আছে? ‌

এ পাপই শয়তানের পদানত সৈনিক করে ও অসম্ভব করে জান্নাতের যাত্রী হওয়া।

দেশে দেশে দুর্বৃত্তির সুনামী ও জালেমের দুঃশাসন বেঁচে আছে তো

মিথ্যাজীবী ও মনুষ্যরূপী এই শয়তানদেরই কারণেই।

অজ্ঞতার এই তান্ডবে কবরে গেছে অন্তহীন জীবনের ভাবনা।

এভাবেই তো পুরাপুরি ব্যর্থ হয় এ জীবনে বাঁচা।

 

জীবনের এ মিথ্যা ভাবনাগুলি, বাঁচার এ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আয়োজনগুলি

গড়েছে প্রাচীর নিজ কারাগারের।

মানুষ্য জীবেরা এভাবেই বন্দী হয় নিজেদের গড়া ক্ষুদ্র কারাগারে,

মুক্ত ও স্বাধীন তো সেই, যে ভাঙ্গে এই কারাগার,

এবং হাতে নেয় মহা সত্যের কুর’আনী ঝান্ডা।  

 

একমাত্র এরাই দুরন্ত বেগে ছুটে মুক্ত ও অন্তহীন জান্নাতের পানে।

এদেরই ভিড় জমে জিহাদের ময়দানে। 

এরাই তো শহীদ হয় এবং মৃত্যুহীন জীবন পায়;

নিহত হয়েও এরা প্রতিশ্রুত খাদ্য পায় এবং সরাসরি বাসিন্দা হয় জান্নাতের।

ক্ষুদ্র এ পার্থিব জীবন তো এ ভাবেই দুয়ার খুলে দেয় অনন্ত-অসীম আনন্দময় জীবনের।

০৪/০৫/২০২২

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *