ভারতীয় আগ্রাসনের হুমকি: বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুরক্ষা কীরূপে?
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on December 3, 2024
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
ভারতের রণহুংকার
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা উৎখাত হওয়াতে ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ অভ্যুত্থানে পরাজয় শুধু হাসিনার হয়নি, পরাজয়ের গভীর গ্লানিটি ভারতেরও। ভারতের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে দেশটি সে পরাজয় হজম করতে পারছে না। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ভারত পাকিস্তান ও চীনের সাথে ১৯৪৮, ১৯৬২, ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে ৪ বার যুদ্ধ করেছে, কিন্তু এতো বড় ক্ষতি কোন বারই হয়নি। ক্ষতিটি ১৮ কোটি মানুষের বিশাল অঙ্গরাজ্য হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার -যা তারা ১৯৭১’য়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় করে অর্জন করেছিল। এবার তাদের বাড়া ভাতে ছাই পড়েছে; একাত্তরের বিজয় পরাজয়ে পরিণত হয়েছে। এখন ভারতের কাছে বাংলাদেশ গণ্য হচ্ছে শত্রুরাষ্ট্র রূপে; যুদ্ধের হুংকার তাই এখন আর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়, বরং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে।
ভারতের শাসক চক্রের প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায়, দেশটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে রাজী নয়। বরং বাংলাদেশকে দেখতে চায়, ভারতের রাডারের নিচে অধিকৃত অঙ্গরাজ্য রূপে। সে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিল ভারতের সাবেক বাঙালি সেনাপ্রধান শংকর রায় চৌধুরী। একাত্তরে ভারত সে অভিপ্রায়টি সযত্নে গোপন রাখলেও এখন সেটি অতি স্পষ্ট ভাবেই প্রকাশ পাচ্ছে। ভারত কখনোই পাকিস্তানের স্বাধীনতা চায়নি। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হোক এবং দেশটি বেঁচে থাকুক -ভারত সেটি কোনদিনই চায়নি। একই নীতি বাংলাদেশের প্রতিও। ভারত চায়, প্রতিটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রই হোক তার প্রতি আত্মসমর্পিত ও অনুগত। মুজিব ও হাসিনার আমলে বাংলাদেশকে ভারত সেভাবেই পেয়েছে। ভারত ইচ্ছামত বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে করিডর নিয়েছে, পদ্মা-তিস্তাসহ সকল নদীর পানি ইচ্ছামত তুলে নিয়েছে, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরসহ সমুদ্র বন্দরের সুবিধা নিয়েছে এবং সর্বোপরি বাংলাদেশকে ভারতীয় পণ্যের বাজারে পরিণত করেছে। সে সাথে বাংলাদেশের উপর চাপিয়েছে মুর্তি নির্মাণ ও মুর্তি পূজার সংস্কৃতি।
স্বাধীন থাকার ইচ্ছা পোষণই যেন অপরাধ
বাংলাদেশ কখনোই ভারতের বিরুদ্ধে কোনরূপ আক্রমণাত্মক বা শত্রুসুলভ মনোভাবের কথা ব্যক্ত করেনি। শুধু স্বাধীন থাকতে চেয়েছে; এবং স্বাধীন থাকতে গিয়ে স্বাধীনতার শত্রু ফ্যাসিস্ট হাসিনার উৎখাত করেছে -এটাই ভারতের কাছে বাংলাদেশীদের অপরাধ। একই অপরাধের কারণে পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলংকার ন্যায় প্রতিটি প্রতিবেশী দেশের সাথে ভারতের কোন সুসম্পর্ক নেই। ভারত মনে করে, স্বাধীন থাকাটি একমাত্র ভারতের অধিকার। অন্যরা বাঁচবে ভারতের প্রতি অধীনতা মেনে নিয়ে। সে আগ্রাসী ভারতের কাছে তাই স্বাধীনতা হারাতে হয়েছে কাশ্মীর, হায়দারাবাদ, গোয়া, মানভাদরের ন্যায় স্বাধীন রাষ্ট্রকে।
বাংলাদেশীদের সামনে এখন মাত্র দুটি পথ। এক, ভারতের প্রতি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ। ভারত সেটিই চায়। মুজিব ও হাসিনা ভারতের সে দাবী মেনে নিয়েছিল। দ্বিতীয়টি পথটি হলো মাথা উঁচু করে স্বাধীন ভাবে বাঁচা। যারা ইজ্জত, সম্ভ্রম ও স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচতে চায় তারা বাঁচে এ দ্বিতীয় পথ ধরেই। তবে স্বাধীনভাবে বাঁচার খরচটা বেশি। কারণ এ পথে স্বাধীনতার শত্রু শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ আছে। তখন যুদ্ধের খরচ জুগাতে হয় প্রতিটি মুসলিমকে। ইসলামে এমন আত্মবিনিয়োগ ও কুরবানী প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ। ভারতের ন্যায় কোন কাফের শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ নিয়ে বাঁচা ইসলামে হারাম। কারণ, কাফির শক্তির কাছে আত্মসমর্পণে অসম্ভব হয় পূর্ণ মুসলিম রূপে বাঁচা এবং পূর্ণাঙ্গ ইসলাম পালন।
ভারতীয় মুসলিমদের দুর্দশার চিত্রটি আজ সবার চোখের সামনে। সেখানে বাবরি মসজিদের ন্যায় ঐতিহাসিক মসজিদ ভেঙে সেখানে মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। হিন্দুত্ববাদীদের পক্ষ থেকে এখন দাবি তোলা হচ্ছে ভারতের প্রতিটি মসজিদেই নাকি মন্দিরের উপর নির্মিত। সে বাহানায় তারা প্রতিটি মসজিদই ভাঙতে চায়। এভাবে তারা ভারতকে মসজিদশূন্য করতে চায়। দিল্লি, উত্তর প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশসহ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বুলডোজার দিয়ে মুসলিমদের ঘরবাড়ি ও মসজিদ ভাঙা হচ্ছে -যেমনটি ইসরাইলীরা করছে ফিলিস্তিনে। বস্তুত ভারত পরিণত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বুকে বিশাল ইসরাইলে।
গৃহে গরুর গোশত রাখার অভিযোগে রাজপথে পিটিয়ে মুসলিম হত্যা করা হচ্ছে। পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে মুসলিম গরুর ব্যবসায়ীদের। রাজপথে কারো মাথায় টুপি-দাড়ি দেখলে তাকে “জয় শ্রীরাম” বলতে বাধ্য করা হয়। ফলে মুসলিম যুবকরা মাথায় টুপি দিয়ে রাস্তায় নামতে ও দাড়ি রাখতে ভয় পায়। মুসলিমদের হাজার হাজার কোটি টাকার ওয়াকফ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার লক্ষ্যে ভারত সরকার সম্প্রতি নতুন আইন প্রণয়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এভাবে ভারত সরকারের যুদ্ধ এভাবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে। সে যুদ্ধের কামান এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও। মুসলিমদের জন্য ভারত পরিণত হয়েছে এক বিশাল কারাগারে। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের মুসলিমগণ কি সজ্ঞানে এ ভারতীয় কারাগারে প্রবেশ করবে? ১৯৪৭ সালের মুসলিম লীগের নেতাগণ ভারতভূক্তির সে বিপদ সঠিক ভাবেই বুঝেছিল। তাই সেদিন তারা ভারতে যোগ দেয়নি। প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল পাকিস্তানের। কিন্তু একাত্তরে ইসলাম থেকে দূরে সরা পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয়তাবাদী, বামপন্থী ও সেক্যুলারিস্টগণ সে আগ্রাসী ভারতকে ত্রাণকর্তা রূপে গ্রহণ করে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের পক্ষে সমর্থণ জুগিয়েছে তো তারাই। এরাই বাঙালি মুসলিমের ঘরের শত্রু। এ শত্রুদের চিনতে হবে। বাঙালি মুসলিমদের যুদ্ধ শুধু ভারতে বিরুদ্ধে নয়, এ ঘরের শত্রুদের বিরুদ্ধেও।
প্রতিরক্ষার অস্ত্র জিহাদ
ইসলামে অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো কাফের শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার জিহাদ। নামাজ-রোজাতে কাজা আছে, কিন্তু জিহাদে কাজা নেই। নামাজ-রোজা যেমন প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ, তেমনি ফরজ হলো জিহাদ। নবীজির এমন কোন সাহাবী ছিলেন না যিনি জিহাদে অংশ নেননি। বরং সত্য হলো, শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ সাহাবা ইসলামী রাষ্ট্রের স্বাধীনতার সুরক্ষার জিহাদে শহীদ হয়ে গেছেন। তাদের জান ও মালের কুরবানির ফলেই মুসলিম উম্মাহর উদ্ভব ঘটেছে একটি অপরাজেয় বিশ্বশক্তি রূপে। আজও কি এর বিকল্প আছে?
বুঝতে হবে, পবিত্র কুর’আনে যেমন নামাজ-রোজা ও হজ্ব-যাকাতের হুকুম এসেছে, তেমনি হুকুম এসেছে সশস্ত্র জিহাদের। যেমন নিসার ৭৪ ও ৭৫ নম্বর আয়াতে ঘোষিত নির্দেশ হলো:
۞ فَلْيُقَـٰتِلْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ٱلَّذِينَ يَشْرُونَ ٱلْحَيَوٰةَ ٱلدُّنْيَا بِٱلْـَٔاخِرَةِ ۚ وَمَن يُقَـٰتِلْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ فَيُقْتَلْ أَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًۭا ٧٤
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَـٰتِلُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱلْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ ٱلرِّجَالِ وَٱلنِّسَآءِ وَٱلْوِلْدَٰنِ ٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَآ أَخْرِجْنَا مِنْ هَـٰذِهِ ٱلْقَرْيَةِ ٱلظَّالِمِ أَهْلُهَا وَٱجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّۭا وَٱجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا ٧٥
অর্থ: “অতঃপর যারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবনকে আল্লাহর কাছে বিক্রয় করেছে তারা যেন অবশ্যই আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে অতঃপর নিহত হয় বা বিজয়ী হয়, অচিরেই তাকে দেব মহা পুরস্কার। আর তোমাদের কি হলো যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করছো না। অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুগণ ফরিয়াদ তুলছে, “হে আমাদের রব, আমাদের বের করুন এ জনপদ থেকে -যার অধিবাসীরা জালেম এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য অভিভাবক নির্ধারণ করুন। এবং আপনার পক্ষ থেকে নির্ধারণ করুন একজন সাহায্যকারীকে।”
সূরা আনফালের ৬০ নম্বর আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এ মর্মে:
وَأَعِدُّوا۟ لَهُم مَّا ٱسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍۢ وَمِن رِّبَاطِ ٱلْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِۦ عَدُوَّ ٱللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ
অর্থ: “সর্ব শক্তি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে তোমরা প্রস্তুত হও যুদ্ধের জন্য, এবং প্রস্তুত রাখো যুদ্ধের ঘোড়াকে; এ ভাবে সন্ত্রস্ত করো আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের।”
পবিত্র কুরআনে মাহে রমজানের রোজার হুকুম এসেছে মাত্র একবার। আর তাতেই প্রতিটি ঈমানদারের উপর রমজান মাসের একমাস রোজা ফরজ হয়ে গেছে। কিন্তু শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদের হুকুম এসেছে বার বার। অথচ সে জিহাদ থেকে মুসলিমগণ আজ দূরে সরেছে। অনেকে জিহাদের ন্যায় পবিত্র ইবাদতকে সন্ত্রাস বলে। নবীজী (সা:)’র যুগে প্রতিটি মুসলিমদের মাঝে দেখা গেছে জিহাদের প্রস্তুতি। হে প্রস্তুতি ছিল এমনকি মহান নবীজী (সা:)’রও। যাদের জীবনে জিহাদ ছিল না, এমন কি জিহাদের প্রস্তুতিও ছিল না -তাদেরকে মুনাফিক বলা হয়েছে। নবীজী (সা:)’র ইন্তেকালের পর তাঁর ঘরে কোন সম্পদ পাওয়া যায়নি; কিন্তু পাওয়া গেছে অনেকগুলি তরবারি, বর্ম ইত্যাদি অস্ত্র। এরূপ অস্ত্র ছিল প্রতিটি সাহাবীর ঘরেও।
মুসলিমদের জিহাদশূণ্যতা ও অর্জিত পরাধীনতা
পরিতাপের বিষয় হলো, পরবর্তী কালে মুসলিমগণ নবীজী (সা:)’র সে পবিত্র সুন্নত এবং মহান আল্লাহ সুবহানাতায়ালার ঘোষিত কুরআনী সে নির্দেশগুলি মেনে চলেনি। তারা ঘরে জায়নামাজ ও তাসবিহ-টুপি রেখেছে বটে, কিন্তু অস্ত্র রাখেনি। তারা লক্ষ লক্ষ মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করেছে। নানা পেশার প্রশিক্ষণও নিয়েছে, কিন্তু জিহাদের প্রশিক্ষণ নেয়নি। নবীজী (সা:)’র যুগের মুসলিমদের থেকে আজকের মুসলিমদের এখানেই মূল পার্থক্য। ফলে তাদের উপর এসেছে শত্রুশক্তির হাতে পরাজয় ও অধিকৃতি।
জিহাদশূন্যতা ও নিষ্ক্রিয়তার ক্ষেত্রে অতি শোচনীয় ও লজ্জাজনক ইতিহাস গড়েছে বাংলার মুসলিমরা। তারই পরিনাম হলো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ন্যায় একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মাত্র চার হাজার ভাড়াটে সৈনিকের হাতে সমগ্র বাংলা অধিকৃত হয়ে গেছে। অথচ সেদিনও এ বাংলার বুকে হাজার হাজার মসজিদ-মাদ্রাসা ছিল, এ ভূমিতে কোটি কোটি মুসলিমও সেদিন বাস করতো। কিন্তু তারা জিহাদ নিয়ে বাঁচেনি, বরং তারা নিরবে দাঁড়িয়ে মুসলিমদের সে পরাজয় দেখেছে। দেশ রক্ষার সে দায়িত্ব সিরাজুদ্দৌলার সে বাহিনীও সেদিন পালন করিনি।
সেদিনের বাঙালি মুসলিমগণ জিহাদশূণ্যতার ভয়ানক শাস্তিও পেয়েছে। সেটি ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শক্তির কাছে ১৯০ বছরের গোলামীর মধ্য দিয়ে। এরই ফল হলো, যে বাঙালি মুসলিমদের পক্ষে গরিব হাওয়াটাই অসম্ভব ছিল, ইংরেজদের শোষণ প্রক্রিয়ার ফলে তাদের পক্ষে ধনী বা সচ্ছল থাকাই সেদিন অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। নৃশংস লুণ্ঠনের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ সরকার সেদিন উপহার দিয়েছিল ভয়ানক দূর্ভিক্ষ -যাতে বাংলার এক তৃতীয়াংশ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল। ইতিহাসে সেটি ছিয়াত্তরের মনন্তর নামে পরিচিত। অথচ ব্রিটিশ হাতে অধিকৃত হওয়ার পূর্বে বাংলা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশ। ব্রিটিশদের নৃশংস লুণ্ঠনের ফলে সে সমৃদ্ধ বাংলা পরিণত হয় বিশ্বের এক দরিদ্রতম দেশে। ধ্বংস করা হয় দেশটির জগতবিখ্যাত মসলিন ও মখমল বস্ত্র শিল্পকে। জিহাদ হলো প্রতিরক্ষার ইবাদত। সে জিহাদ থেকে দূরে থাকার এই হলো পরিনতি। ইসলামের শত্রুপক্ষ এজন্যই মুসলিমদের জিহাদশূণ্য দেখতে চায়।
দায়িত্ব প্রতিটি মুসলিমের
মুসলিম দেশের প্রতিরক্ষার দায়িত্বটি শুধু সেনাবাহিনীর বেতনভূক সৈনিকের নয়। প্রশাসনেরও নয়। নামাজ-রোজা যেমন প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ, তেমনি প্রত্যেকের উপর ফরজ হলো দেশরক্ষার দায়িত্ব। মুসলিম জীবনের মাত্র দুটি অবস্থা: হয় সে যুদ্ধে থাকবে অথবা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার মধ্যে থাকবে। এছাড়া তৃতীয় অবস্থান নেই। যাদের জীবনে জিহাদ নাই, নবীজীর যুগে তারা গণ্য হয়েছে মুনাফিক রূপে। তাই গৌরব যুগের প্রতিটি মুসলিম মহল্লা ও প্রতিটি মুসলিম জনপদই ছিল ক্যান্টনমেন্ট। সেদিন প্রতিটি মুসলিম ছিল সৈনিক। ইসলামী রাষ্ট্রের অর্থ তাই ক্যান্টনমেন্ট স্টেট।
নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাদের মহান সুন্নতকে আফগান মুসলিমরা ধরে রাখতে পেরেছে। ফলে পৃথিবীতে অন্যরা যেখানে পরাজয় ও অধিকৃত নিয়ে বাঁচছে, আফগান মুসলিমরা বাঁচছে ইজ্জত নিয়ে। ব্রিটিশ, সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্টসহ কোন বিশ্বশক্তিই তাদেরকে পরাজিত করতে পারেনি। বুঝতে হবে, পৌত্তলিক ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত রাশিয়ার চেয়ে শক্তিশালী নয়। বাঙালি মুসলিমরাও আফগান মুসলিমদের চেয়ে সংখ্যায় কম নই। বরং সংখ্যায় তারা আফগানদের চেয়ে চার গুণের বেশি। পার্থক্য শুধু এটুকু, আফগান মুসলিমগণ শুধু নামাজীই নয়, মুজাহিদও। তাদের ঘরে ঘরে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও যুদ্ধাস্ত্র। এ পৃথিবীতে মাথাপিছু অস্ত্রের হার সবচেয়ে বেশি হলো আফগানিস্তানে। অথচ বাংলার মুসলিমরা নামাজ-রোজা পালন এবং গৃহে জায়নামাজ, টুপি-তসবিহ রাখা নিয়েই সন্তুষ্ট। জিহাদ নিয়ে তারা ভাবে না। ১৭৫৭ সালের নিষ্ক্রিয়তা ও জিহাদশূণ্যতার থেকে এখনো তারা মুক্ত হতে পারিনি। এখানেই বাঙালিম মুসলিমের সংকটের মুল কারণ।
বাঙালি মুসলিমদের উচিত অন্যদের শিক্ষা নেয়া। ইসরাইলের প্রতিটি নাগরিক যুদ্ধবিদ্যায় প্রশিক্ষিত। ইসরাইলে প্রতিটি পুরুষের জন্য তিন বছর এবং প্রতিটি মহিলার জন্য দুই বছরের বাধ্যতামূলক হলো সামরিক বাহিনীতে কাজ করা। ভারতে আর.এস.এস’য়ের ন্যায় হিন্দুত্ববাদী যুব সংগঠনের কাজ হলো যুবকদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া। এভাবে তারা ভারতের বুকে লক্ষ লক্ষ হিন্দু যুবকদের হিন্দুত্ববাদেই শুধু দীক্ষা দেয়নি, সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তাদের যুগ যুগ ধরে প্রস্তুত করা হয়েছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য। বাংলাদেশও তো সেরূপ প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। মহান আল্লাহতায়ালার তো সেটি ফরজ করেছেন। কিন্তু সে ফরজ পালিত হয়নি।
শত্রুপক্ষ কখনোই ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ শুরু করে না, সে যুদ্ধ যখন তখন শুরু হতে পারে। তাই যুদ্ধের জন্য সর্বক্ষণের প্রস্তুতি থাকতে হয়। বাংলাদেশে যত ছাত্র সংগঠন রয়েছে তাদের সবার উচিত সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে প্রতিটি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায়। এ প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজে সামরিক বাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিট গড়ে তুলতে হবে। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের কাজ হবে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় গিয়ে ছাত্রদের সামরিক টেনিং দানের ব্যবস্থা করা। জিহাদের প্রস্তুতি নেয়ার কাজে দেশের মসজিদ মাদ্রাসাগুলোকে ও ভূমিকা নিতে হবে। চেতনায় এ ধারণাটি বদ্ধমূল হতে হবে, মুসলিম হওয়ার অর্থ শুধু নামাজী, রোজাদার ও হাজী হওয়া নয় বরং সার্বক্ষণিক মুজাহিদ হওয়াও। নিরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেবল মহান আল্লাহতায়ালার আযাবকে অনিবার্য করে তোলে। সে আযাব আসবে শত্রু শক্তির অধিকৃতির মধ্য দিয়ে -যেমনটি এসেছিল ১৭৫৭ সালে। ০৩/১২/২০২৪
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- ভারতীয় আগ্রাসনের হুমকি: বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুরক্ষা কীরূপে?
- ভারতীয় ষড়যন্ত্র রুখতে হবে
- সম্প্রতি বাংলাদেশে যা দেখলাম
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018