ভারতীয় স্ট্রাটেজী ও হুমকির মুখে বাংলাদেশ
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 21, 2019
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
সভ্যতার দ্বন্দ দক্ষিণ এশিয়ায়
শত্রুর পক্ষ থেকে দেশ দখলের যুদ্ধটি স্রেফ রণাঙ্গণে হয় না। সামরিক যুদ্ধটি তো আসে অনেক পরে। নীরবে লাগাতর যুদ্ধ চলে রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক,আদর্শিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গণে। ইংরাজীতে war এবং battle নামে দুটো ভিন্ন শব্দ আছে। শত্রুর সাথে battle মাঝে মধ্যে বেগবান হয়,কখনও কখনও থেমেও যায়। কিন্তু war কখনই থামে না,সেটি চলে লাগাতর। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে সভ্যতার দ্বন্দটি প্রকট; এখানে প্রতিদ্বন্দি পক্ষ মূলত দুটি। একটি মুসলিম পক্ষ, অপরটি হিন্দু। এ দুটো পক্ষের সৃষ্টি যেমন ১৯৪৭য়ে নয়,তেমনি ১৯৭১য়েও নয়। এ বিভক্তিটির শুরু মুহাম্মদ ঘুরির হাতে দিল্লি বিজয় এবং ইখতিয়ার বিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির হাতে বাংলা বিজয় থেকে। তাই ১৯৭১,১৯৪৭ বা ১৭৫৭ সালের রাজনৈতিক ঘটনার বিশ্লেষণে নজর শুধু ১৯৭১, ১৯৪৭ বা ১৭৫৭ সালে নিবদ্ধ রাখলে পুরা চিত্রটি নজরে আসবে না। ঘটনার বিচারে তখন রায়ও সঠিক হবে না। দৃষ্টিকে সুদূর অতীতে নিতে হবে এবং মুসলিম ইতিহাসের সমগ্র প্রেক্ষাপটকে সামনে রাখতে হবে।
সবাই একই লক্ষ্যে পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্র গড়ে না। সে গুলি গড়ার পিছনে বিশেষ চেতনা বা দর্শন কাজ করে। রাষ্ট্রগড়ার মাঝে ঈমানদারের সভ্যতা নির্মানের লক্ষ্য থাকে। মুসলিমদের কাছে এটি পবিত্রম ও শ্রেষ্ঠতম ইবাদত। নবীজী (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবাদের অর্থ, রক্ত ও সামর্থ্যের সিংহ ভাগ ব্যয় হয়েছে রাষ্ট্র গড়তে এবং সে রাষ্ট্রকে প্রতিরক্ষা দিতে। ভারতীয় হিন্দুরাও চায় তাদের নিজ পৌরাণিক বিশ্বাস নিয়ে রাষ্ট্র ও সংস্কৃতির নির্মাণ। তাই এখানে লড়াই নিছক রাজনৈতিক নয়,বরং দ্বন্দ এখানে প্রতিদ্বন্দি দুটি সভ্যতার। ভারতের লক্ষ্য,সিঙ্গাপুর থেকে সোমালিয়া অবধি ভারত মহাসাগরের উপকূলবর্তী ভূ-ভাগের উপর নিয়ন্ত্রণ। মার্কিনীরাও সেটি সমর্থণ করে। ২০১২ সালে মার্চে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব হেনরি কিসিঞ্জার ভারতকে নসিহত করেছিলেন, ভারত যেন তার এ প্রভাব বলয়ে অন্য কোন শক্তির অনুপ্রবেশকে মেনে না নেয়। তিনি ইঙ্গিত করেছেন চীনের প্রতি। অথচ এ এলাকায় শুধু চীন নয়,অন্যরাও আছে। মুসলমানগণ যেহেতু কোন শক্তি হিসাবে তখনও গড়ে উঠতে পারেনি, তাই মিস্টার কিসিঞ্জার তাদেরকে ধর্তব্যের মধ্যে আনেননি। ইসলামের সাথে পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভারতকে পার্টনার রূপে মনে করে কিসিঞ্জারের এ নসিহত সেটাই প্রমাণ করে। অপর দিকে ভারতকে কোয়ালিশনে নিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নসিহত দিয়েছেন প্রফেসর হান্টিংটন তাঁর ‘Clash of Civilization’ নামক বইতে। তাই একাত্তরের যুদ্ধটি স্রেফ ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধ ছিল না। ছিল দুটি প্রতিদ্বন্দি সভ্যতার প্রতিনিধিদের দ্বন্দ। তাই ১৯৭১’য়ে প্রতিটি ইসলামী দলের নেতা এবং সকল গণ্যমান্য আলেমদের বাঙালী হয়েও পাকিস্তানের পক্ষ নিতে দেখা গেছে। কারণ, পাকিস্তান ছিল বহু ভাষাভাষী, বহু বর্ণ ও বহু মজহাবের লোকদের নিয়ে পৃথিবী পৃষ্টে মুসলিমদের সর্ববৃহৎ সিভিলাইজেশন স্টেট। এমন কি একাত্তরের যুদ্ধে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। অপর দিকে যাদের মাঝে এরূপ ইসলামী চেতনার কোন বালাই ছিল না এবং গড়ে উঠেছিল পুরা মাত্রায় ডি-ইসলামাইজড হয়ে -তারা নামে মুসলিম হয়েও ভারতীয় কাফেরদের পরম বন্ধু ভেবেছিল।
পূর্ব পাকিস্তান বিলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু বিলুপ্ত হয়নি নিজ দেশের পূর্ব সীমান্তে ভারতীয় স্ট্রাটেজী। সহজেই যা বুঝা যায় তা হলো, ভারত তার লক্ষ্যে পৌঁছতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তিনটি স্ট্রাটেজী নিয়ে কাজ করছে। এক).সেনাবাহিনীকে দুর্বল করা; দুই). ইসলামী চেতনার বিনাশ, তিন) ইসলামী সংগঠনগুলিকে শক্তিহীন করা। এ অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে ভারত কাজ করছিল পূর্বপাকিস্তানের মাটিতেও। বাংলাদেশের বুকে এ স্ট্রাট্জেীর বাস্তবায়ন ভারতীয় সরকার ও তার গুপ্তচর সংস্থা একা নয়,সাথে রয়েছে তাদের অর্থে প্রতিপালিত আওয়ামী বাকশালী চক্র এবং ইসলাম থেকে দূরে সরা বুদ্ধিজীবীগণ। ভারতকে সহায়তা দিচ্ছে পাশ্চাত্যের শক্তিবর্গ। সে স্ট্রাটেজীর অংশ রূপে শুধু জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোটের নেতাকর্মীদেরই শুধু জেলে তোলা হচ্ছে না, হত্যা করা হচ্ছে এবং বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হচ্ছে ইসলামের প্রতি অঙ্গিকার আছে বা মুসলিম জাতীয়তাবাদী চেতনা আছে -সেনাবাহিনীর এমন অফিসারদেরও। পিলখানায় ৫৭ জন সেনাঅফিসারের হত্যা এবং কয়েক শত সেনা অফিসারের বাধ্যতামূলক অবসরদান ঘটেছে মূলতঃ সে ভারতীয় পরিকল্পনারই অংশ হিসাবে। আর ডি-ইসলামাইজেশনের অংশ রূপে কাজ করছে বহু পত্র-পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল এবং ময়দানে নামা হয়েছে বহু লক্ষ এনজিও কর্মী। এসব এনজিও কর্মীদের কাজ হয়েছে সংস্কৃতি চর্চার নামে বাঙালী ছেলেমেয়েদের নাচগান শেখানো। একাজে খোদ ভারত থেকে প্রতি বছর আসছে শত শত নর্তকী ও গায়ক-গায়িকা। ভারতের লক্ষ্য, পুরোহিত নামিয়ে বাঙালী মুসলিমদের হিন্দু বানানো নয়, বরং গানবাজনার কৌশল ধরে ইসলাম থেকে দূরে সরানো। চৈতন্য দেব বহু শত বছর আগে গান-বাজনা শুনিয় বাঙালী হিন্দুদের মুসলিম হওয়া থেকে রুখেছিল। এখন ভারত রুখছে মুসলিমদের ইসলামী হওয়া থেকে।
ভারতের লক্ষ্য সুস্পষ্ট। সেটি হলো যে কোন মূল্যে বাংলাদেশের বুকে ইসলামের উত্থানকে প্রতিহত করা। ভারতের ভয় শুধু পাকিস্তানের পারমানবিক বোমা বা মিজাইল নয়। বরং বাংলাদেশের মুসলিমও যে মিজাইলে পরিণত হতে পারে –ভারতীয় শাসকদের চেতনায় কাজ করছে সে ভয়ও। ইসলামের উত্থনাকে ভারত তাই নিজের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে বিশাল হুমকি মনে করে। ইসলামের উত্থান ঠেকানোর কৌশল রূপে বেছে নিয়েছে বাংলাদেশী মুসলমানদের মন থেকে ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলোকে ভূলিয়ে দেয়া। সে প্রকল্পের অংশ রূপেই এ অবধি লাগাতর চেষ্টা হয়েছে মুসলিম দেশ ভাঙ্গা যে হারাম, মুসলিম দেশের স্বাধীনতা রক্ষা যে ইবাদত,শরিয়ত অনুযায়ী বিচার না করা যে কুফুরি এবং শরিয়ত প্রতিষ্ঠার রাজনীতি যে পবিত্র জিহাদ -সে কোরআনী হুকুমগুলো চেতনা থেকে বিলুপ্ত করা। ধারণা দেয়া হচ্ছে, ইসলাম পালনের অর্থ স্রেফ নামায-রোযা, হজ-যাকাত, বিবাহ-শাদী, মৃতের সম্পদ- বন্ঠন ও মুর্দা-দাফনের বিধান মেনে চলা। এবং মাঝে মধ্যে মিলাদ-মহফিল করা। বড়জোর পীরের খানকায় বা তাবলীগী জামাতে বের হওয়া। একাজে ভারত ও ভারতীয় স্বার্থের সেবাদাস আওয়ামী লীগকে সাহায্য করছে দেওবন্দি ফেরকার হুজুরগণ। এরা ১৯৪৭ সালেও কংগ্রেসের দোসর ছিল এবং পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করেছিল। তাদের কারণেই বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে নবীজী (সাঃ)র ইসলাম -যাতে ছিল শরিয়ত, হুদুদ, শুরা ভিত্তিক দেশ পরিচালনা, জিহাদ, খেলাফত এবং প্যান-ইসলামিক মুসলিম ঐক্যে। অথচ ইসলাম থেকে দূরে সরা শুরু হলে শুরু হয় বিভ্রান্তির পথে পথ চলা। শুরু হয় নীতি ও নৈতিকতার দিক দিয়ে নীচে নামা। যে দেশ দুর্বৃত্তিতে বিশ্বরেকর্ড গড়ে সে দেশের জনগণ যে সিরাতুল মোস্তাকীমে চলেনি -সেটি প্রমাণের জন্য কি আর কোন দলিল লাগে? সরকার ও দেশের বুদ্ধিজীবীদের কাজ হয়েছে চলমান এ ভ্রষ্টতা ও বিভ্রান্তিকে আরো প্রবলতর করা। বাংলাদেশের জনগণের ব্যর্থতাকে প্রবল করার এর চেয়ে সফল কৌশল আর কি হতে পারে? অথচ এখানে ব্যর্থতা শুধু পার্থিব জীবনে নয়, বরং তা অনিবার্য করে পরকালের জীবনেও।
স্ট্রাটেজী মিথ্যাবাদী করার
কাউকে পাপী বা অপরাধী বানানোর কৌশল শুধু এ নয়, মানুষ খুনে তার হাতে অস্ত্র তুলে দিতে হবে। বরং সবচেয়ে সফল কৌশলটি হলো তাকে মিথ্যাচারি করা। বিশেষ করে সত্য ও সত্যের অনুসারিদের হত্যায়। নবীজী (সাঃ) বলেছেন,“মিথ্যা হলো সকল পাপের মা।” অর্থাৎ যার মধ্যে মিথ্যা আছে সে পাপকর্ম প্রসব করবেই। আর বড় পাপটি হলো আল্লাহদ্রোহী সরকারকে সমর্থন করা। কারণ, আল্লাহদ্রোহী সরকার মাত্রই তো শয়তানের খলিফা। সে দাঁড়ায় ইসলামের প্রতিপক্ষ রূপে। আসল শয়তানকে দেখা যায় না; কিন্তু দেখা যায় শয়তানের খলিফাকে। শয়তানের খলিফাদের প্ররোচনার ফলেই মানুষ স্রষ্টার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়। ফিরাউন ও নমরুদের আমলে তো সেটিই হয়েছিল। শাপ-শকুন, গরুবাছুর, নদী-পাহাড় ও মুর্তিকে ভগবান বানানোর এ মিথ্যা ধর্মটি কখনই আকাশ থেকে পড়েনি। সেগুলি বাজার পেয়েছে তো শয়তানের খলিফাদের হাতে। তাই কোন মানব সন্তানের জীবনে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি সাধন করার সহজতম ও সফলতম উপায়টি হলো তাকে মিথ্যুকে পরিণত করা। তার পক্ষে তখন অসম্ভব হয় মানুষ রূপে বেড়ে উঠা। তখন সে বাঁচে একজন পাপাচারী অমানুষ রূপে। তেমনি কোন জাতিকে অপরাধীর জাতিতে পরিণত করার উপায়টি হলো, তাদের মাঝে মিথ্যা বলাকে জাতীয় অভ্যাসে তথা সংস্কৃতিতে পরিণত করা। তখন সে জাতি অপরাধের জগতে ত্বরিৎ বিশ্ব রেকর্ড গড়ে। এ শতাব্দীর শুরুতে বাংলাদেশ পর পর ৫ বার বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশকে পিছনে ফেলে দুর্নীতিতে প্রথম হয়েছিল। হেতু কি? কারণ কি দেশের ভূগোল, জলবায়ু বা আলোবাতাস? সেটি তো মিথ্যা বলার কালচার। সেটি শুরু করেছিল শেখ মুজিবের মুখ দিয়ে দেশটি জন্মের আগে থেকেই। শুরু হয়েছিল ৮ আনা সের চাল খাওয়ানো ও সোনার বাংলা নির্মাণের মিথ্যা ওয়াদা দিয়ে। এরপর আরো অসংখ্য মিথ্যা যোগ হয়েছে ১৯৭১’য়ে দেশটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর। বাংলাদেশীদের সংস্কৃতির সাথে যে মিথ্যাটি গভীর ভাবে মিশে আছে তা হলো একাত্তরের তিরিশ লাখের নিহত হওয়া এবং মুক্তিবাহিনী নিজ শক্তিতে দেশ স্বাধীন করার ন্যায় মিথ্যা। অথচ মুক্তিবাহিনী সমগ্র দেশ দূরে থাক পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পরাজিত করে একটি জেলা স্বাধীন করেছে –সে প্রমাণও তো নাই।
দেহ হত্যায় যেমন গোলাবারুদ, মানবগুণের হত্যায় তেমনি মোক্ষম হাতিয়ারটি হলো মিথ্যাচার। গোলাবারুদ না ছুড়েও একটি জাতিকে ধ্বংস করা যায় -যদি সে জাতির জীবনে মিথ্যাচারে প্লাবন আনা যায়। জাতির মেরদণ্ড হলো নাগরিকদের চরিত্র, আর চরিত্রের মেরুদণ্ড হলো সত্যবাদীতা। মিথ্যাচর্চা বাড়লে বিধ্বস্ত হয় জাতির মেরুদন্ড। বিধ্বস্ত হয় নৈতীক বল ও সোসাল ক্যাপিটাল। এমন জাতিকে পরাজিত করতে ও জাহান্নামে নিতে শয়তান ও তার অনুসারিদের কি যুদ্ধ লড়ার প্রয়োজন পড়ে? মশা-মাছি চায়,মলমূত্র ও গলিত আবর্জনা নর্দমা উপচিয়ে মহল্লার সর্বত্র প্রবেশ করুক। কারণ, তাতে সুবিধা হয় তাদের বংশব্স্তিারে। তেমনি দুর্বৃত্তরাও চায়,মানুষ অধিক মিথ্যাচারি ও পাপাচারি হোক এবং বিলুপ্ত হোক আইনের শাসন। তাতে তাদের আয়ুই শুধু বাড়ে না, বরং তাদের দলের প্রতিপত্তি এবং শাসনও বাড়ে। ডাকাতদের দলে তখন বিপুল লোকসমাগম ঘটে। রাষ্ট্রীয় ভাণ্ডারে চুরি-ডাকাতির পাশাপাশি ভোট-ডাকাতি এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিনাবিচারে হত্যার কাজটি তখন সহজ হয়। তাছাড়া দেশে আইনের শাসনের জন্য জরুরী হলো জনগণের মাঝে সত্য বলার অভ্যাস। সেটি বিলুপ্ত হলে আদালতে সত্যবাদী সাক্ষী আসবে কোত্থেকে? আর সত্যবাদী সাক্ষী না জুটলে বিচারপতি ফেরেশতা হলেও তাঁর পক্ষে কি ন্যায় বিচার করা সম্ভব? তখন খুনি, চোর-ডাকাত ও সন্ত্রাসী বিনা বিচারে ছাড়া পায়। এবং মিথ্যা সাক্ষী জোগার করে নিরাপরাধ ব্যক্তিকেও ফাঁসিতে ঝোলানা যায়। তাই মিথ্যাচারিতা সভ্য রূপে বেড়ে উঠার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। এতে সভ্যতর রাষ্ট্র নির্মানের প্রকল্প আস্তাকুঁড়ে গিয়ে পড়ে। বাংলাদেশে তো সেটাই হয়েছে। মশা-মাছির নির্মূল চাইলে অলি-গলি থেকে আবর্জনা সরাতে হয়। তেমনি দেশে শান্তি, উন্নয়ন ও নৈতিক বিপ্লব আনতে হলে মিথ্যা ও মিথ্যুকদের নির্মূলে জিহাদে নামতে হয়। সেটিই তো নবী-রাসূলদের সূন্নত। অথচ বাংলাদেশে হচ্ছে উল্টোটি।
গণতন্ত্র হত্যা ও বাকশাল প্রতিষ্ঠাই শেখ মুজিব এবং তাঁর দলের সবচেয়ে বড় অপরাধ নয়। বরং সেটি হলো,শেখ মুজিব ও তার অনুসারিরা বাঙালীদের নির্ভয়ে মিথ্যা কথা বলতে শিখিয়েছে। তারই প্রমাণ, একাত্তরে নিহত তিরিশ লাখের মিথ্যাটি একজন বাংলাদেশী যত্র তত্র বিনা বাধায় অনর্গল বলতে পারে। সেটি পারে শুধু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীগণই নয়, এমন কি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এবং একজন লেখক বা সাংবাদিক। মিথ্যার মাঝেও মদের ন্যায় প্রচণ্ড নেশাগ্রস্ততা বা মাদকতা থাকে। সে মাদকতায় লোপ পায় বিবেকবোধ। সে বিলুপ্ত বিবেকবোধের কারণে একজন পৌত্তলিক একথা ভাবে না, নিজের হাতে গড়া মুর্তি কি করে ভগবান হয়? এ প্রশ্নও করে না,গরু, মুর্তি,শাপ, নদী, পাহাড়, পুলিঙ্গ –এগুলি কি করে পুজনীয় হয়? মিথ্যাগ্রস্ত ব্যক্তিও তেমনি ভাবে না, একাত্তরে কি করে তিরিশ লাখের মৃত্যু ঘটলো? সে সামর্থ্য যে কতটা বিলুপ্ত হয়েছে তার প্রমাণ দেয়া যাক। ১৯৭১য়ে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি তথা ৭৫ মিলিয়ন। ৭৫ মিলিয়নে তিন মিলিয়ন (৩০ লাখ) মারা গেলে প্রতি গ্রাম ও প্রতি শহরে প্রতি ২৫ জনে ১ জনকে মারা যেতে হয়। (৭৫:৩=২৫:১)।একজন মানুষের পক্ষে সারা দেশের তথ্য জানা সম্ভব নয়, কিন্তু তার নিজ গ্রামে ও পাশের গ্রামে বা শহরের নিজ মহল্লায় ক’জন মারা গেছে সেটি কি সে জানে না? বাংলাদেশের কোন গ্রামে ও শহরে কি প্রতি ২৫ জনে এক জন নিহত হয়েছিল? সেটি হলে যে গ্রামে ১ হাজার লোকের বাস সে গ্রামে ৪০ জনকে মারা যেতে হয়। হাওর-বাউর, চর, দ্বীপ, নদী-নালা নিয়ে বাংলাদেশ। সে সময় শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ বাস করতো গ্রামে। এমন দেশের ৬৮ হাজার গ্রামের মাঝে ১০ হাজার গ্রামেও কি পাকিস্তান আর্মি পৌছতে পেরেছিল? না পৌছলে তারা তিরিশ লাখ মানুষকে হত্যা করলো কি করে?
মিথ্যাচর্চা রাজনৈতিক প্রয়োজনে
বাংলাদেশে মিথ্যার প্রচার ও প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক প্রয়োজনে। সত্যচর্চার পথ ধরে যেমন সত্য প্রতিষ্ঠা পায়, তেমনি মিথ্যাচর্চার পথ ধরে প্রতিষ্ঠা পায় মিথ্যা এবং মিথ্যাসেবী নেতা-নেত্রী। জনগণকে মিথ্যাসেবী না বানালে শেখ মুজিবের ন্যায় একজন বাকশালী স্বৈরাচারিকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী রূপে প্রতিষ্ঠা দেয়া কি সম্ভব? সত্যবাদী মানুষ কি এতবড় মিথ্যা কবুল করে? যে দেশে শাপ-শকুন, গরু-বাছুর এমনকি পুঃলিঙ্গকেও পুজণীয় হয় এবং তিরিশ লাখের মিথ্যাও যদি গ্রহনযোগ্য করা যায়, সে দেশে শেখ মুজিবের ন্যায় একজন স্বৈরাচারিকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী রূপে প্রতিষ্ঠা পাবে –তাতেই বা বিস্ময়ের কি আছে? সত্যকে বর্জন এবং মিথ্যাকে কবুল করার মধ্যেই ধরা পড়ে মিথ্যুকদের অসামর্থ্যতা। অসামর্থ্যতা এখানে সত্যকে সনাক্ত ও কবুল করায়। এরূপ মিথ্যুকদের পরিনতি যে কতটা ভয়ানক -পবিত্র কোরআনে সে কথাই বার বার শুনায়। আল্লাহতায়ালা তাই বলেছেন,“ফাসিরু ফিল আরদি, ফানজির কাইফা কানা আকিবাতুল মোকাজ্জীবীন।” অর্থঃ “অতঃপর তোমরা ভ্রমন করো জমিনের উপর,এবং দেখো মিথ্যুকদের পরিনতি কেমন হয়েছিল।” এখানে আল্লাহতায়ালা মিথ্যুকদেরকে তার নিজের শত্রু রূপে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু সমস্যা হলো, মিথ্যুকদের সামর্থ্য নেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার।
মিথ্যাবাদীতা কখনোই কারো জীবনে একাকী আসে না। সাথে আনে বিবেকহীনতা, নীতিহীনতা, ধর্মহীনতা এবং চরিত্রহীনতা। তাদের কারণে চুরি-ডাকাতি এবং ভোট-ডাকাতিও বাজার পায়। মিথ্যা ধ্যান-ধারণা বাজার পেলে নবী-রাসূলদের ন্যায় শ্রেষ্ঠ মানুষদের উপরও তখন পাথর ছোড়া হয়। তায়েফের ময়দানে তাই অগণিত পাথর খেয়ে সর্বশরীরে রক্তাত্ব হয়েছেন আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ বান্দাহ ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)। প্রতি যুগে সত্যের মোকাবেলায় মিথ্যাকে প্রবল করার সে স্ট্রাটেজীটি মূলতঃ শয়তানের। বাংলাদেশের বুকে সে স্ট্রাটেজী নিয়েই ময়দানে নেমেছে ভারত ও ভারতসেবীগণ। এ ক্ষেত্রে তাদের সফলতাটি বিশাল। ফলে একাত্তরে তিরিশ লাখের নিহত হওয়ার মিথ্যাটিই শুধু বাজার পায়নি, সে মিথ্যার সাথে বাজার পেয়েছে সেক্যুলারিজম ও ন্যাশনালিজমের ন্যায় ধর্মে অঙ্গিকারহীন মতবাদগুলোও। আর তাতে তারা সৈনিক পেয়েছে শুধু রাজনীতির অঙ্গণে নয়, বরং দেশের প্রশাসন,পুলিশ,আদালত, বুদ্ধিবৃত্তি ও পত্র-পত্রিকা জুড়ে। ফলে ইসলামপন্থি ব্যক্তি ও দলের বিরুদ্ধে জনগণকে খ্যাপাতে এবং তাদেরকে যুদ্ধাংদেহি করার কাজে মোক্ষম হাতিয়ারটি এখন ভারতসেবী বুদ্ধিজীবী ও সরকারের হাতে। আজ থেকে ৬০ বছর আগে ইসলামের বিপক্ষ শক্তির হাতে এমন শক্তিশালী অস্ত্র ছিল না। মুসলিম চেতনা বহুলাংশেই তখনও জীবিত ছিল। ফলে সে পরিস্থিতির চাপে শেখ মুজিবের ন্যায় ভারতের সেবাদাসকেও তখন মিটিং-মিছিলে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলতে বাধ্য হতে হয়েছে। পাকিস্তানের অখণ্ডতার সংরক্ষনে কোরআন শরিফ ছুঁয়ে কছমও খেতে হয়েছে। তাকে ওয়াদা দিতে হয়েছে শরিয়তের বিরুদ্ধে কোন আইন না বানানোর। এবং ভারতের সাথে ষড়যন্ত্র পাকাতে তাঁকে আগরতলা যেতে হয়েছে অতি সংগোপনে। কিন্তু এখন সে পরিস্থিতি নাই। ভারতীয় গোয়েন্দাগণ এখন ঢাকায় বসে হুংকার দেয়। বাংলাদেশের মাটিতে এখানেই ভারতের বিশাল স্ট্রাটেজিক বিজয়।
অসহ্য হলো স্বাধীন বাংলাদেশ
শয়তানি শক্তির কাছে মুসলিম অর্থই শত্রু। এবং প্রতিটি মুসলিম-ভূমি তাদের কাছে শত্রুভূমি। এমন এক বৈরী চেতনার কারণে সে শয়তানি শক্তিটি ১২০২ ইখতিয়ার মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির হাতে বাংলা-বিজয় যেমন মেনে নিতে পারিনি, তেমনি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের সৃষ্টিও মেনে নিতে পারেনি। একই কারণে আজকের মুসলিম বাংলাদেশকেও তারা মেনে নিতে পারছে না। একমাত্র ইসলামশূণ্য বাংলাদেশই তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য। তাই মুজিব আমলে প্রতিষ্ঠানের নাম ও মনোগ্রাম থেকে ইসলাম সরানো শুরু হয়েছিল। সে জোয়ারে পবিত্র কোরআনের আয়াত সরানো হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে। নজরুল ইসলাম কলেজ হয়ে যায় নজরুল কলেজ। তারা জানে, ইসলাম শুধু নামায-রোযা, হজ-যাকাতের ধর্ম নয়, এটি নিজেই এক দিগ্বিজয়ী বিশ্বশক্তি। বাংলায় ইসলাম আসার সাথে সাথে তাই বঙ্গবাসীর ধর্মই শুধু পাল্টে যায়নি, রাজনৈতিক শক্তিও পাল্টে গেছে।
মাটি ও পানি পেলে বীজ যেমন বৃক্ষ দেয়, তেমনি পরিস্থিতি অনুকূল পেলে মুসলিম ভূমিতেও ইসলামের বিজয় আসে। তখন মুসলিম শক্তি অপরাজেয় শক্তিতে রূপ নেয়। সেটি যেমন এককালে আরব ভূমিতে হয়েছে, তেমনি ইরান,আফগানিস্তান,তুরস্ক এবং ভারতেও হয়েছে। শত্রু শক্তি তাই বাংলাদেশীদের থেকে সে অনুকুল পরিবেশ কেড়ে নিতে চায়। শয়তানি শক্তি মুসলিমদের শক্তির মূল উৎস্যটি জানে। তাই ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশকে নিয়েও সে ভয় প্রকট ভাবেই ধরেছে ভারতীয়দের মনে। তবে মুসলিম জাগরনের সে ভয় যে শুধু ভারতের -তা নয়। ইসরাইল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট, রাশিয়া ও ইউরোপীয় দেশগুলোর। সম্প্রতি তাই প্রতিদেশে মুসলমানদের মসজিদ, মাদ্রাসা, সংগঠন, সভা-সমিতি,মিডিয়া -সবকিছুই তাদের পর্যবেক্ষণ রাডারের আঁওতায়। ফলে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মুসলমান তাদের র্যাডারের বাইরের থাকবে সেটি কি ভাবা যায়? ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী প্রনব মুখার্জি তাই বলেছেন,“বাংলাদেশকে আর ভারতের র্যাডারের বাইরে যেতে দেয়া যাবে না।” অর্থাৎ শক্তভাবে নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে।
ভারত তার প্রতিরক্ষাকে মজবুত করতে চায় প্রতিবেশীর কোমর ভাঙ্গার মধ্য দিয়ে। এজন্য তারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে খন্ডিত করেছে। ভারত কখনোই স্বাধীন ও শক্তিশালী বাংলাদেশ চায়নি। না একাত্তরে, না আজ।না ভবিষ্যতে। একাত্তরে তারা পাকিস্তানের কোমর ভেঙ্গেছে, তবে সেটি ছিল বহু মাইল ফলকের মাঝে একটি মাইল ফলক।এখন কোমর ভাঙ্গছে বাংলাদেশের। এবং সেটির শুরু একাত্তর থেকেই। তাই পাকিস্তান আর্মির ফেলে যাওয়া অস্ত্র বাংলাদেশী আর্মির হাতে পৌঁছতে দেয়নি। ভারত জানে, এত অস্ত্র কেনার সামর্থ্য বাংলাদেশের হবে না। ফলে সম্ভব হবে না সামরিক শক্তি নিয়ে বেড়ে উঠার। তখন আর্মি পরিনত হবে নিছক এক পুলিশ বাহিনীতে। যুদ্ধ নয়, বরং নানা দেশে জাতিসংঘের শান্তি মিশন নিয়ে ঘুরাফেরাই হবে তার একমাত্র কাজ। বড় জোর কাজ হবে ভারতসেবী সরকার পাহারা দেয়া। এখন দেখা যাচ্ছে, ভারতের সে স্বপ্ন পূর্ণ হয়েছে।
ভারত চায় লেন্দুপদর্জি
তবে শুধু সামরিক শক্তির বিনাশ নিয়েই ভারত খুশি নয়। লক্ষ্য,অর্থনীতি,শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিনাশ। মুজিব আমলে ভারত বাংলাদেশের ক্যারেন্সি নোট ছাপানোর ঠিকাদারি নিয়েছিল। যত নোট ছাপার কথা ছিল তার চেয়ে বহুশত কোটি টাকা বেশী ছেপে কালোবাজারে ছাড়ে।একাত্তরে টাকার মূল্য ভারতীয় রুপীর চেয়ে দ্বিগুণ ছিল। কিন্তু ভারতীয় কালো টাকার ফলে বাংলাদেশী টাকার মূল্য ভারতীয় রূপীর অর্ধেকে নেমে যায়। সীমান্ত বাণিজ্যের নামে শুরু হয় বাংলাদেশের সম্পদের লুন্ঠন। শেখ মুজিব ভারতীয় লুন্ঠনের বিরুদ্ধে কিছুই করেননি। বরং অবতীর্ন হয়েছিলেন ভারতের পক্ষে কলাবোরেটরের ভূমিকায়। পিতার সে ভূমিকাটি পালন করছেন শেখ হাসিনা। তারই ধারাবাহিকতায় আবার ষড়যন্ত্র হচ্ছে সেই আত্মঘাতি সীমান্ত বাণিজ্য ফিরিয়ে আনার।
একাত্তরের পর থেকে পরিকল্পিত ভাবে শুরু হয়েছে মুসলমানদের ইসলাম থেকে দূরে সরানোর কাজ। নাচ-গান, বেপর্দাগী, অবাধ ব্যাভিচার, সিনেমা-নাটক এগুলা হলো এর মূল হাতিয়ার। এভাবে চলছে সামগ্রীক এক সাংস্কৃতিক হামলা। শেখ হাসিনা ভারতের এ সাংস্কৃতিক হামলাকে আারো তীব্রতর করার সুযোগ করে দিয়েছেন। সে সাথে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল সৃষ্টির কাজ। সে লক্ষ্যেই বাতিল করা হয়েছে তত্ত্ববধায়ক সরকারের বিধানকে। এবং সরকার যুদ্ধ শুরু করেছে বিরোধী দলগুলির বিরুদ্ধে। একই রূপ লক্ষ নিয়ে শেখ মুজিব পাকিস্তানের রাজনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিলেন এবং ভারতীয় বাহিনীর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। একাত্তরের ন্যায় ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকার বাহনা চায়। দেশে অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে ভারত সে সুযোগ সৃষ্টি করবে -সেটির সম্ভাবনা কি কম?
শেখ হাসিনা কোন নির্বাচনেই পরাজয় মেনে নিতে রাজী নন। রাজী নয় ভারতও। শেখ হাসিনা তাই স্বৈরাচারি এরশাদের পথ ধরেছে। সে পথটি হলো নির্বাচনি প্রক্রিয়ার উপর নিজ দলের দখলদারি। সে জন্য দলীয় সরকার চায়। সে লক্ষ্যটিকে সামনে রেখেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করা হয়েছে। চায়, নিজের দলের অধীনে নিরংকুশ ভোট ডাকাতি। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের ভোট-ডাকাতি তো সেটিই প্রমাণ করলো। ভারতের কাজ হয়েছে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতসেবী এ দলটি যাই করবে তাকে সর্বভাবে সমর্থন দেয়া। তাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংঘাত তাই থামবার নয়। ভারত তো সেটাই চায়। কারণ,এমন আভ্যন্তরীণ সংঘাতে কোন দেশই শক্তিশালী হয় না, বরং দারুনভাবে দুর্বল হয়। পাকিস্তান তো ভেঙ্গে গেল এমন সংঘাতেই। ভারত বাংলাদেশকে পঙ্গু করার সে ভয়ানক খেলাটিই খেলছে তার অনুগত আওয়ামী বাকশালীদের দিয়ে। সত্তরের দশকে যে জাসদ বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর অফিসারদের নির্মূলের ষড়যন্ত্র করেছিল তারাও এখন ভারতীয় এ প্রকল্পের সাথে জড়িত। এমন সংঘাতে বাংলাদেশ যতই দুর্বল হবে ভারত সরকার ততই ডুগডুগি বাজাবে। বাংলাদেশকে দুর্বল বানানো ছাড়া ভারতের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার উপর অন্য কোন ম্যান্ডেট বা জিম্মাদারি নাই। ছিল না শেখ মুজিবের উপরও। শেখ মুজিবকে দিয়ে ভারত শুধু পাকিস্তানকেই খণ্ডিত করেনি,বাংলাদেশকেও পৃথিবীর সামনে এক স্বৈরাচার কবলিত ভিখারী রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। তাঁকে দিয়ে সীমাহীন সুযোগ নিয়েছে লুন্ঠনের।
সিকিমের রাজনীতিতে বিজয়ী করার লক্ষ্যে লেন্দুপ দর্জিকে বিপুল অর্থ জুগিয়েছিল ভারত। তবে সেটি লেন্দুপ দর্জিকে স্বাধীন সিকিমের প্রধানমন্ত্রী করার লক্ষ্যে নয়। বরং সেটি ছিল সিকিমকে ভারতভূক্ত করার লক্ষ্যে। ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে লেন্দুপ দর্জি চায়, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের ক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রী নয়। সিকিমের লেন্দুপ দর্জির উপর ম্যান্ডেট ছিল সিকিমকে ত্বরিৎ ভারতভূক্ত করার, আর বাংলাদেশী লেন্দুপ দর্জিদের উপর দায়িত্ব পড়েছে দেশটিকে ধীরে ধীরে ভারতভূক্ত করার। আওয়ামী বাকশালীরা তো সে লক্ষ্যা নিয়েই অগ্রসর হচ্ছে। আওয়ামী লীগ অবশ্য এ বিষটি প্রকাশ্যে বলে না। তবে তারা আসলে যা চায় তা প্রকাশ্যে না বলাটাই তাদের রাজনীতি। তাই শেখ মুজিব পাকিস্তান ভাঙ্গার কথাটি ১৯৭০য়ের নির্বাচনে যেমন বলেনি। তেমনি ১৯৭১য়ের মার্চের ২৫ মার্চেও বলেনি। বরং ১৯৬৮ সালে আড়রতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামীর কাটগড়ায় দাঁড়িয়ে শেখ মুজিব নিজেকে পাকিস্তানের রক্ষক রূপে পরিচয় দিয়েছেন। অথচ পাকিস্তান ভাঙ্গাই যে শেখ মুজিবের রাজনীতি মূল লক্ষ্য ছিল এবং সেটি ১৯৪৭ থেকেই -সে কথাটি তিনি প্রথম বলেন পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি পেয়ে ঢাকায় ফিরে সহরোয়ার্দি উদ্দানের জনসভায়।
মুজিবের ন্যায় হাসিনাও তার রাজনীতির মূল এজেন্ডাকে জনসম্মুখে বলছেন না। তবে না বললেও সেটি প্রকাশ পাচ্ছে তার রাজনীতির মধ্য দিয়ে। দেশপ্রেম ও জনগণের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার ভাণ্ডার তার পিতার ন্যায় যে কীরূপ শূণ্য -তা তো দখা গেল ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে। সামান্য দেশপ্রেম ও জনগণের প্রতি সামান্যতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে কেউ কি কখনো এরূপ জনগণের শত্রু রূপে দাঁড়ায়? জনগণের ঘরে কি এরূপ ডাকাতি করে? অথচ হাসিনা তো তাই করেছে। যে চোর-ডাকাতেরা গৃহস্থ্যের ঘরে ঢুকে অর্থ ছিনিয়ে নেয় তাদেরকে কি গৃহস্থের বন্ধু বলা যায়? একই ভাবে যেসব চোর-ডাকাতেরা জনগণের ভোটের উপর চুরি-ডাকাতি করে ক্ষমতায় বসে এবং সফল ডাকাতির আনন্দে ডুগডুগি বাজায় -তাদেরকেও কি জনগণের বন্ধু বলা যায়? এমন ভোট-ডাকাতিকে সমর্থণ করে ভারতও জানিয়ে দিল, তারাও কীরূপ শত্রু বাংলাদেশী জনগণের। একমাত্র ডাকাতই ডাকাতদের সমর্থন করতে পারে, সামান্য মানবতা আছে এমন কোন ব্যক্তি নয়। বাংলাদেশীদের জন্য এখানেই মহা বিপদ। প্রতিবেশী রূপে তারা পেয়েছে এমন নীতিশূণ্য ও মানবতাশূণ্য ডাকাত রাষ্ট্রকে যার সরকার বাংলাদেশের জনগণের ঘরে ডাকাতিকে শুধু সমর্থণই করে না, সে ডাকাতদের তাদের সাথে নিবিড় বন্ধুত্বও করে। ২১/০৩/২০১৯
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018