ভারতের ইসলামভীতি এবং বাংলাদেশের পরাধীনতা
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on April 20, 2019
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
ভারতীয় বিনিয়োগ ও আরোপিত পরাধীনতা
ভারতের শাসক মহলে যে বিষয়টি প্রচণ্ড ভাবে কাজ করে তা হলো ইসলাম ও মুসলিম ভীতি। সে ভয়ের ভিত্তিতেই প্রণীত হয় বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র নীতি, সামরিক নীতি, বাণিজ্য নীতি ও বর্ডার নীতি। বাংলাদেশে কতটা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেল, জনগণ কতটা নাগরিক অধিকার পেল, মিডিয়া কতটা স্বাধীনতা পেল -সেগুলি ভারতের কাছে আদৌ কোন বিবেচ্য বিষয়ই নয়। বরং তাদের কাছে যা গুরুত্ব পায় তা হলো, বাংলাদেশের মুসলিম জনগণকে কতটা দাবিয়ে রাখা হলো, ইসলামের উত্থানকে প্রতিহত করা এবং হিন্দুদের কতটা উপরে তোলা হলো সেগুলি। সে এজেন্ডা নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যেই ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিশ্বস্থ্য ও অনুগত কলাবরেটর চায়। ভারতের সে এজেন্ডা পালনে কলাবরেটর রূপে কাজ করছে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ। সেটি ১৯৭১ সাল থেকে নয়, বরং তার বহু আগে থেকেই। শেখ হাসিনা ভারতকে যতটা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে তা অন্য যে কোন স্বাধীন দেশ থেকে পেতে ভারতকে যুদ্ধ করতে হতো। এবং সে দেশের অর্থনীতিতে ভারতকে বিশাল বিনিয়োগ করতে হতো। যেরূপ পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলি ও জাপানকে বন্ধু রূপে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশাল বিনিয়োগ করেছে সে সব দেশের পুণঃনির্মাণে। অথচ ভারত বাংলাদেশ থেকে সেটি পেয়েছে কোনরূপ অর্থব্যয় না করেই। কারণ তারা জানে, চাকর-বাকরদের থেকে কিছু পেতে বিনিয়োগ করতে হয় না, এজন্য কিছু উচ্ছিষ্ট ব্যয়ই যথেষ্ঠ। ভারতীয় বর্ণ হিন্দুরা শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা বা কোন বাঙালী মুসলিমকে কোনকালেই কি চাকর-বাকরের চেয়ে বেশী কিছু ভেবেছে?
ভারত বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে ট্রানজিট নিয়েছে কোনরূপ রোড ট্যাক্স বা ট্রানজিট ফি না দিয়েই। কারণ চাকর-বাকরের ভিটার উপর দিয়ে হাটতে জমিদারকে কোন ফি দিতে হয় না। কৃতজ্ঞতাও জাহির করতে হয় না। বরং কথায় কথায় চাকর-বাকরদের গালি দেয়াটি জমিদারের অধিকার। তাই পশ্চিম বাংলা ও আসামের মুসলিমগণ গালি খাচ্ছে অনুপ্রবেশকারী বাঙালী মুসলিম রূপে। ভারতের অভিভাবক-সুলভ উদ্ধত দাদাগিরি ধরা পড়ে শেখ মুজিবের শাসনামল থেকেই। সে আমলেই ভারত বাংলাদেশ থেকে বেরুবাড়ি ছিনিয়ে নিয়েছে প্রতিশ্রুত তিন বিঘা করিডোর না দিয়েই। তখনই ফারাক্কা দিয়ে পদ্মার পানি তুলে নেয়। এখন তুলে নিচ্ছে তিস্তার পানি। কুশিয়ারা ও সুরমার পানিতেও হাত দিচ্ছে। সে সাথে উত্তর-পূর্ব ভারতের মজলুম জনগণের মুক্তিযুদ্ধের সাথে শেখ হাসিনা ও তার দলের গাদ্দারিটা কি কম? সেটি একমাত্র ভারতকে খুশি করার লক্ষ্যে। অথচ বাংলাদেশের সাথে এ বিশাল এলাকার মুক্তিকামী মানুষের কোন কালেই কোন শত্রুতা ছিল না। বরং তারা বাংলাদেশের মিত্র ও বাংলাদেশী পণ্যের বিশাল বাজার হতে পারতো।
ভারতের একমাত্র বিনিয়োগ বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও মিডিয়াতে। সেটি দেশের প্রচার, প্রশাসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সেনাবাহিনীতে ভারতসেবী বিশাল দাসবাহিনী গড়ে তোলার স্বার্থে। এ বিনিয়োগের মূল লক্ষ্য, ইসলাম ও মুসলিমের বিরুদ্ধে ভারতের নাশকতাকে তীব্রতর করা। ভারতের এ বিনিয়োগে এক দিকে যেমন সীমাহীন স্বাধীনতা বেড়েছে ভারতসেবী দাসদের, তেমনি পরাধীনতা বেড়েছে বাংলাদেশের জনগণের। এর ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুসলিমদের পিটাতে একাত্তরের ন্যায় ভারতকে তার নিজের সেনাবাহিনী নামাতে হচ্ছে না। সেটি অতি নৃশংস ভাবেই করছে প্রতিপালিত দাসরাই। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ভারতের মূল স্ট্রাটেজী হলো, বাংলাদেশের বুকে ভারতীয় দাসদের শাসনকে প্রতিষ্ঠা দেয়া এবং সেটিকে দীর্ঘায়ীত করা। সেরূপ এক দাস-শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ভারত একাত্তরে প্রকান্ড এক যুদ্ধ লড়েছিল। সে যুদ্ধটির মূল লক্ষ্য দেশটির পূর্ব সীমান্তে পাকিস্তানের ন্যায় আরেক স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা ছিল না। বাঙালী মুসলিমদের গণতান্ত্রিক অধিকার দেয়াও ছিল না। বরং লক্ষ্য ছিল, ভারতসেবী শেখ মুজিব ও তার দলকে মুসলিম ও ইসলাম দলনে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া।এবং সেটি জনগণের স্বাধীনতাকে পদদলিত করে। শেখ মুজিবের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় নীতির মৃত্যু হয়নি। ফলে মুজিবের ন্যায় শেখ হাসিনাও পাচ্ছে গণতন্ত্র হত্যা ও ফ্যাসিবাদি স্বৈরাচারি শাসন চালানোর ক্ষেত্রে ভারতের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের ভোট-ডাকাতিকে সমর্থণ দিতে ভারত তাই কোন রূপ দেরী করেনি। গণতন্ত্র নৃশংস ভাবে নিহত হলেও তা নিয়ে ভারতীয় শাসক চক্রের বিবেকে কোন দংশন দেখা যায়নি।
যে কোন সাম্রাজ্যবাদি শক্তিই জনগণের বলকে নিজের জন্য চ্যালেঞ্জ মনে করে। ভারতও তেমনি বিপদ মনে করে বাংলাদেশের জনগণের শক্তিকে। এজন্যই ভারতের পলিসি হলো, বাংলাদেশের জনগণকে যে কোন মূল্যে শক্তিহীন করা। সেটি স্বৈরাচারি শাসন চাপিয়ে এবং জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে। গণতন্ত্র হত্যায় ভারতের বিনিয়োগটি এজন্যই বিশাল। সেরূপ বিনিয়োগ দেখা গেছে যেমন ২০০৮ সালের নির্বাচনে তেমনি অন্যান্য নির্বাচনেও। আসামের দৈনিক নববার্তা পত্রিকাটি গত ২১/১০/২০১৩ তারিখে প্রথম পৃষ্ঠায় লিড খবর ছাপে যে,হাসিনাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার জন্য ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারত এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। উক্ত পত্রিকায় ভাস্কর দেব আরো রিপোর্ট করে,ভারত গত ২০০৮ সনের নির্বাচনে ৮ শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল। বলা হয়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি নির্বাচনেই ভারত বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে। তবে ২০১৮ সালে ভারতকে পূজি বিনিয়োগ করতে হয়নি। কারণ, ভোট-ডাকাতিতে পূজি লাগে না, লাগে অস্ত্রধারি ডাকাত। শেখ হাসিনা সে ডাকাতদের সংগ্রহ করেছে দেশের পুলিশ ও সেনাবাহিনী থেকে। ডাকাতিতে সহায়তা দিয়েছে দেশের প্রশাসন ও নির্বাচনি কমিশন।
ভীতি মুসলিম-বাংলাদেশ নিয়ে
প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগের পিছনে ভারতের এরূপ বিনিয়োগের হেতু কি? হেতু, স্বাধীন মুসলিম-বাংলাদেশ ভীতি। ভারত ভয় পায় বাংলাদেশের ১৫ কোটি মুসলিমের ইসলামের মৌল বিশ্বাস নিয়ে বেড়ে উঠা নিয়ে। ইতিহাসের ছাত্র মাত্রই জানে, ১৯৪৭’য়ে হিন্দুদের অখন্ড ভারত নির্মাণের স্বপ্নকে যারা ধুলিতে মিশিয়ে দিয়েছিল তারা পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্ত প্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার বা অন্যকোন স্থানের মুসলিম নয়, তারা ছিল বাংলার মুসলিম। ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা থেকে ১৯৪০ সালে লাহোরে পাকিস্তান প্রস্তাব-পাশ ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন পর্যন্ত প্রতিটি পর্বে যারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তারা ছিল এই বাংলার মুসলিম জনগণ। সে সময় মুসলিম লীগের মূল দুর্গটি ছিল বাংলায়। আজও সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার বুকে যে ভূখন্ডটিতে সবচেয়ে বেশী মুসলিমের বাস সেটিও পাঞ্জাব, সিন্ধু, আফগানিস্তান নয়, বরং সেটি বাংলাদেশ। আর যেখানে এত মুসলমানের বাস সেখানে ইসলামের জাগরণের ভয় থেকেই যায়। কারণ ঘুম যত দীর্ঘই হোক, সেটি তো মৃত্যু নয়। যত দেরীতেই হোক, এক সময় সে ঘুমও ভেঙ্গে যায়। বাংলার মুসলিমগণ সাতচল্লিশে জেগে উঠেছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল। আর সে ঘুমের ঘোরেই ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে ঢুকে তার দাসদের সহায়তায় বিরাট সর্বনাশটি করেছিল। কিন্তু বাংলার মুসলিমগণ যে আবার জেগে উঠতে উদগ্রীব -সে আলামত তো প্রচুর। আর তাতেই প্রচণ্ড ভয় ধরেছে ভারতের।
বাংলার মুসলিমদের সাতচল্লিশের জিহাদটি ছিল উপমহাদেশের অন্যান্য এলাকার মুসলমানদের সাথে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার। কারণ, প্রাসাদ গড়তে যেমন বৃহৎ ভূমি লাগে তেমনি সভ্যতা গড়তে বিরাট একটি রাষ্ট্র এবং বৃহৎ জনগোষ্ঠি লাগে। প্রাথমিক যুগের মুসলমানদের এজন্যই মক্কা-মদিনা বা হেজাজের ক্ষুদ্র গন্ডি পেরিয়ে বিশাল দেশ গড়তে হয়েছে। সাতচল্লিশের সে জিহাদটি ছিল দু’টি বৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে। একদিকে ছিল সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ বিশ্বশক্তি, অপর দিকে ছিল আগ্রাসী বর্ণ হিন্দুশক্তি। মূল লক্ষ্যটি ছিল, বিশ্ব-রাজনীতিতে মুসলমানদের হৃত গৌরবকে আবার ফিরিয়ে আনা। উপমহাদেশের মুসলমানদের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠার ফলেই সেদিন হিন্দু ও ব্রিটিশ -এ উভয়শক্তির বিরোধীতার সত্ত্বেও জন্ম নিয়েছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ পাকিস্তান। ভারত শুরু থেকে সে বৃহৎ পাকিস্তানকে মেনে নিতে পারিনি। তেমনি আজ পারছে না স্বাধীন বাংলাদেশকে মেনে নিতে। তাদের ভয়,না জানি এটি আরেক পাকিস্তানে পরিণত হয়। ভারতের ভয়ের আরো কারণ, একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশে পরিণত হলেও বাঙালী মুসলিমের মন থেকে ইসলাম বিলুপ্ত হয়নি। বরং দিন দিন সে ইসলামী চেতনা আরো বলবান হচ্ছে। সে সাথে প্রবলতর হচ্ছে ভারতের পূর্ব প্রান্তে ইসলামি শক্তি রূপে বেড়ে উঠার সাধ। আর তাতে ভয় তীব্রতর হচ্ছে আগ্রাসী ভারতীয়দের মনে। সেটি আঁচ করা যায় ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় সেদেশের রাজনৈতীক নেতা, বুদ্ধিজীবী ও কলামিস্টদের লেখা পড়লে।
ভারতীয়দের “আপনজন” ও “পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে হাসিনা”
ভারত চায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিজ স্বার্থের বিশ্বস্থ পাহারাদার। সেটি না হলে পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ভারতের যুদ্ধ ও বিনিয়োগের মুল উদ্দেশ্যই বানচল হয়ে যায়। পাহারাদারীর সে কাজে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগণ যে ভারতের আপনজন -সে সাক্ষ্যটি এসেছে ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম এক নীতিনির্ধারকের মুখ থেকে। তিনি হলেন ভারতের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী সুশীলকুমার শিন্দে। শেখ হাসিনার ভারতপ্রেমে তিনি এতটাই মোহিত হন যে, এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে তিনি “ভারতের আপনজন’ এবং “যেন পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে” রূপে আখ্যায়ীত করেছেন। সে খবরটি ছেপেছিল কোলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা তার ২০১৩ সালের ৭ই নভেম্বর সংখ্যায়। সুশীলকুমার শিন্দে এ কথাটি বলেছেন পাঞ্জাবের আট্টারি-ওয়াঘা সীমান্তের ধাঁচে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে জয়েন্ট রিট্রিট সেরিমনির সূচনা পর্বের এক সমাবেশে।
প্রতিটি বিনিয়োগের পিছনেই থাকে মুনাফা লাভের আশা। মুনাফা লাভের সম্ভাবনা না থাকলে একটি টাকা ও একটি মুহুর্তও কেউ বিনিয়োগ করে না। আর বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগটি কোনকালেই খয়রাত ছিল না। খয়রাত ছিল না একাত্তরের যুদ্ধে ভারতীয়দের বিপুল অর্থ ও রক্তের বিসর্জনও। তবে বাংলাদেশ থেকে ভারতের মুনাফা তোলার মাত্রাটি অত্যাধিক বেড়ে যায় যখন শাসনক্ষমতা আওয়ামী লীগের হাতে যায়। ২০০৮ সালে হাসিনার ক্ষমতায় আসাতে ভারত যে প্রচুর মুনাফা তুলেছে সে সাক্ষ্যটি এসেছে খোদ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী শিন্দের মুখ থেকে। বাংলাদেশ থেকে তারা এতই নিয়েছে যে এখন সাধ জেগেছে কিছু প্রতিদান দেয়ার। তবে সেটি বাংলাদেশের জনগণকে নয়,সেটি খোদ হাসিনাকে। সে প্রতিদানটি তারা দিতে চায় তাকে পুণরায় ক্ষমতায় বসানোর মধ্যদিয়ে। সে লক্ষ্যেই বাংলাদেশের ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারতের বিনিয়োগ ছিল এক হাজার কোটি রুপি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিন্দের ভাষায়ঃ “পাঁচ বছরে হাসিনার আমলে ঢাকা ভারতকে যে ভাবে সহযোগিতা করেছে, তার প্রতিদান দিতে নয়াদিল্লিও বদ্ধপরিকর”। তাছাড়া আগামী নির্বাচন শুধু বাংলাদেশীদের জন্যই নয়, ভারতীয়দের কাছেও অতি গুরুত্বপূর্ণ। সে অভিমতটি এসেছে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা RAW’য়ের বাংলাদেশ ইনচার্জ ও সিনিয়ার অফিসার শ্রী বিবেকানন্দ থেকে। তিনিও সম্প্রতি জানিয়েছেন,বাংলাদেশের ২০১৪ সালের নির্বাচন ভারতের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। আর নির্বাচনের গুরুত্ব বাড়লে তাতে ভারতীয়দের বিনিয়োগও যে বাড়বে সেটিই তো স্বাভাবিক।
ভারতসেবী দাসের আত্মতৃপ্তি
দাসদের জীবনে বড় চাওয়া-পাওয়াটি হলো মনিব থেকে নিষ্ঠাবান দাস রূপে স্বীকৃতি লাভ। সে স্বীকৃতিটুকু পাওয়ার মাঝেই তারা জীবনের সার্থকতা ভাবে। “দারোগা মোরে কইছে চাচি আমি কি আর মানুষ আছি”–এমন এক দাসসুলভ আত্মতৃপ্তি ফুটে উঠেছে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তের জয়েন্ট রিট্রিট সেরিমনিতে উপস্থিত বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগিরর কথায়। গত ৬/১১/১৩ তারিখে অনুষ্ঠিত সে সেমিনারে ভারতের স্বরাষ্ট্র সুশীলকুমার শিন্দে যখন শেখ হাসিনাকে “ভারতের আপনজন’ এবং “যেন পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে” আখ্যায়ীত করেন তখন করতালি দিয়ে সে কথাকে স্বাগত জানিয়েছেন মহিউদ্দিন খান আলমগির। তিনি তার নিজের বক্তৃতাতে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের। ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বকে ‘চিরায়ত’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য আমরা গর্বিত। এর পরে সুশীলকুমার শিন্দে বলেন,“দু’দেশের বন্ধুত্বের কথা বলতে গেলে শেখ হাসিনাজির কথা বলতেই হয়। আমার তো মনে হয়, উনি যেন এই বাংলারই মেয়ে। আমাদের অত্যন্ত আপনজন।” শিন্দের নিজের কথায়, “বাংলাদেশের মাটিতে আশ্রয় নেওয়া এদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলিকে উচ্ছেদ করার ক্ষেত্রে হাসিনা সরকারের ভূমিকা প্রশংসনীয়। ভারত নিশ্চয়ই তার প্রতিদান দেবে।”
শ্রী শিন্দের কথায় বুঝা যায়, শেখ হাসিনার উপর ভারতীয় নেতাদের এত খুশির কারণ, বাংলাদেশের মাটিতে ইসলামপন্থিদের নির্মূলে তার নির্মম নৃশংসতা। ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরের মুসলমানদের সাথে যেরূপ আচরণ করতে ভয় পায়,শেখ হাসিনা তার চেয়েও নৃশংসতর আচরণ করেছে জামায়াত-শিবির কর্মী ও হেফাজতে ইসলামের মুসল্লিদের সাথে। ইসলামপন্থিদের নির্মূল-কর্মে আদালতকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে যে আদালত বসানো হয়েছে -সেটি তো সে লক্ষ্যেই। সে অপরাধ কর্মে হাসিনা ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে নিজের মুসলিম নামের পরিচিতি। তিনি বলে থাকেন, আমিও মুসলমান। দাবি করেন, সকালে নাকি কোরআনে পড়ে কাজ শুরু করেন। প্রশ্ন হলো, অন্তরে সামান্য ঈমান থাকলে কেউ কি মুসল্লীদের উপর গুলি চালাতে পারে? সংবিধান থেকে বিলুপ্ত করে কি আল্লাহর উপর আস্থার বানী? নিষিদ্ধ করতে পারে কি তাফসির মহফিল? সে কি বিরোধীতা করে মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তী বিধানের? অথচ হাসিনা তো এর সবগুলিই করছেন। এদের সম্পর্কেই পবিত্র কোরআনে মহান রাব্বুল আ’লামীন বলেছেন, “তারা নিজেদের মুসলমান হওয়ার অঙ্গিকারটিকে ঢাল রূপে ব্যবহার করে। অথচ তারা আল্লাহর রাস্তা থেকে (মানুষকে) দূরে হটায়। কতই না নিকৃষ্ট হলো তারা যা করে সে কাজগুলি।”-(সুরা মুনাফিকুন আয়াত ২)।
বাংলাদেশের সীমান্তে আগামীতে যদি কোন বিদেশী সেনাবাহিনীর আগ্রাসন হয় তবে সেটি ১২শত মাইল দূরের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বারা হবে না। বাংলাদেশের শিশুরাও সেটি বুঝে। বাংলাদেশের উপর আজ যাদের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য সেটিও পাকিস্তানের নয়, সেটি ভারতের। বাংলাদেশের সীমান্তে আজ যারা ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে মারা যাচ্ছে তারা পাকিস্তানী সীমান্ত প্রহরী নয়, তারা ভারতীয়। এবং ভারতীয়দের সে হামলার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের রাজপথে ও মিডিয়াতে যারা প্রতিবাদমুখর তারাও আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের কেউ নয়। তারা হলো বাংলাদেশের ইসলামি জনতা। ভারতীয়দের ভাষায় এরাই হলো বাংলাদেশের ইসলামি মৌলবাদী শক্তি। ভারত নিজের অপরাধগুলি দেখতে চায় না,বরং মৌলবাদী রূপে গালি দেয় তাদের যারা ভারতের সে আগ্রাসী নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। ভারতীয়রা চায়, সিকিমের ন্যায় বাংলাদেশও ভারতের বুকে লীন হয়ে যাক। চায়,বাংলাদেশের মানুষ শেখ মুজিব,হাসিনা ও আওয়ামী ঘরানার রাজনৈতীক নেতাকর্মী ও বুদ্ধিজীবীর ন্যায় দাসসুলভ চরিত্র নিয়ে বেড়ে উঠুক। এ দাসদের বিশ্বাস, দাসসুলভ এ আত্মসমর্পণটি হলো ভারতের একাত্তরের ভূমিকার জন্য তাদের দায়বদ্ধতা। কিন্তু সেটি হচ্ছে না দেখেই ভারত প্রচন্ড বিক্ষুব্ধ। সে সাথে প্রচন্ড ভীত বাংলাদেশের বুকে প্রতিবাদী মানুষের বিপুল উত্থান দেখে।
দাস-শাসন বাংলাদেশে
ইসলামের উত্থানের ফলে শুধু বাংলাদেশের রাজনীতিতে নয়, ভারতের রাজনীতিতেও যে ভূমিকম্প শুরু হবে তা ভারতীয় নেতারা বুঝে। কারণ ভারতে রয়েছে ২০ কোটি মুসলমানের বাস -যা সমগ্র বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠি। তাদের হিসাবে প্রতিটি মুসলমানই হলো সুপ্ত টাইম বোমা। সময়মত ও সুযোগমত তা বিস্ফোরিত হতে বিলম্ব করে না। তাছাড়া রাজনৈতীক জাগরণটি প্রচন্ড ছোঁয়াছেও। তাই যে বিপ্লব তিউনিসিয়ায় শুরু হয়েছিল তাই মিশর, লিবিয়া, ইয়েমেন, জর্দান, বাহরাইন ও সিরিয়ায় কাঁপন ধরিয়েছে। ঠোঁট উড়ে গেলে দাঁতেও বাতাস লাগে। তাই বাংলাদেশে ভারত সেবী দাসশক্তির দুর্গ বিলুপ্ত হলে ভারতেও তার আছড় পড়বে। ইসলামের জোয়ার নিয়ে ভারত এজন্যই চিন্তিত। ভারতীয় নেতারা তাই বার বার বলছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামপন্থিরা বিজয়ী হলে তা পাল্টে দিবে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি। তখন সে বিপ্লব আঘাত হানবে শুধু ভারতে নয়, রোহিঙ্গার মুসলিম ভূমিতেও। ভারত চীনকে সে কথা বলে সে দেশের নেতাদের ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে উস্কানি দিচ্ছে। এজন্যই ভারত চায়,বাংলাদেশের মুসলমানদেরকে যে কোন মূল্যে ইসলাম থেকে দূরে রাখতে। চায়, ইসলামপন্থিদের নির্মূল। ভারতের বাংলাদেশ বিষয়ক নীতির সেটিই মূল কথা। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের বিনিয়োগটি এজন্যই এত বিশাল।
আওয়ামী লীগের জন্য ভারত থেকে অর্থ সাহায্যের প্রয়োজন কমেছে। দলটির হাতে এখন বাংলাদেশের রাজস্ব-ভাণ্ডার। এখন পায় নির্দেশমালা। সেটি ১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিজয়ের পর থেকেই। সে সব ভারতীয় প্রতি আনুগত্যের কারণেই শেখ মুজিব ইসলামপন্থিদের রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করেছিলেন।এবং জেলে তুলেছিলেন নেতাদের। শাসনতন্ত্রে মূলনীতি রূপে স্থান দেয়া হয়েছিল সমাজতন্ত্র,বাঙালী জাতিয়তাবাদ ও সেক্যেুলারিজমের ইসলাম বিরোধী মতবাদকে। অথচ ১৯৭০য়ের নির্বাচনে সেগুলি কোন নির্বাচনি ইস্যু ছিল না। অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে এর চেয়ে বড় গাদ্দারি আর কি হতে পারে? মুসলমানের ঈমানী দায়বদ্ধতা হলো,ইসলামের প্রতিষ্ঠায় নিষ্ঠাবান হওয়া। অথচ মুজিব সেটিকে ফৌজদারি অপরাধে পরিণত করেছিলেন। ইসলামি দলের বহু নেতাকর্মীদের সেদিন নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে মুজিবের ন্যায় ইসলামের এতবড় দুষমণ হলো সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী ব্যক্তিত্ব। আর যে শাসনতন্ত্রে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতাকে দাফন করা হয়েছিল এবং প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল একদলীয় বাকশালীয় স্বৈরাচার, সেটিকেই বলা হলো সেরা শাসতন্ত্র। ভারতীয় নেতারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও মুজিবের ন্যায় গণতন্ত্রের এতবড় শত্রুকে সমর্থণ দিতে বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধ করেনি। বরং আজ একই কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে শেখ হাসিনা। হাসিনাকে দিয়ে কোরআনের তাফসির মহফিলগুলো যেমন বন্ধ করা হয়েছে, তেমনি বাজেয়াপ্ত কর হচ্ছে ইসলাম বিষয়ক বইপুস্তক।ইসলামপন্থিদের দলনে ব্যবহৃত হচ্ছে দেশের আদালত। আদালতের নতজানু বিচারকগণ কেড়ে নিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতাকর্মীদের প্রাণ।
তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারত তার সেবাদাসদের দিয়ে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও যুদ্ধাবস্থার জন্ম দিয়েছে -তা কি সহজে শেষ হবার? যুদ্ধ বা রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু করা সহজ, কিন্তু শেষ করাটি আর আক্রমনকারির নিজের হাতে থাকে না। আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে যুদ্ধ ২০০১ সালে শুরু করেছিল তা বিগত ১৮ বছরেও শেষ হয়নি। ইরাকে যে যুদ্ধ ২০০৩ সালে শুরু করেছিল তাও শেষ হয়নি। বরং ছড়িয়ে পড়েছে শুধু সিরিয়া, ইয়েমেন ও মিশরে নয়, আফ্রিকাতেও। ভারতও তার নিজের যুদ্ধ কাশ্মীরে বিগত ৪০ বছরেও যেমন শেষ করতে পারিনি। শেষ করতে পারছে না উত্তর-পূর্ব ভারতেও। বরং দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। ভারতের জন্য বিপদের কারণ হলো, বাংলাদেশ ৮০ লাখ মানুষের কাশ্মীর নয়। সাড়ে তিন কোটি মানুষের আফগানিস্তানও নয়। এবং ভারতও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী নয়। যে চোর-ডাকাত, ভোট-ডাকাতদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ভারত এ যুদ্ধ জিতছে চাচ্ছে সেটিও বা কতদূর সফল হবে? কারণ প্রতিটি যুদ্ধই জনগণের ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়। হাজার হাজার নতুন লড়াকু যোদ্ধাকে রণাঙ্গণে নিয়ে আসে। চোর-ডাকাত ও ভোট-ডাকাতগণ চুরি-ডাকাতিতে পটু হতে পারে, কিন্তু তারা কি যুদ্ধেও বিজয়ী হতে পারে? প্রথম সংস্করণ ১৭/১১/১৩, দ্বিতীয় সংস্করণ ৩০/০৩/২০১৯
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018