ভারতে অসভ্য শাসন এবং বিপন্ন মুসলিম
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on August 17, 2019
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, আর্ন্তজাতিক
- No Comments.
অসভ্যতায় নতুন মাত্রা
ভারতে শাপ পূজা,গরু পূজা, লিঙ্গ পুজার ন্যায় বহু অসভ্যতা বেঁচে আছে বহু হাজার যাবত। কিন্তু ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর সে অসভ্যতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। তাতে যোগ হয়েছে চরম নৃশংস। অসভ্যতার এরূপ তান্ডব এমন কি হিংস্র পশুদের জগতেও দেখা যায় না। পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহতায়ালা এক শ্রেণীর কাফেরদের গবাদী পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট্ বলেছেন। সেটিরই প্রমাণ মিলছে ভারতে মানবরূপী সে নৃশংস অসভ্যদের শাসনে। বনজঙ্গলে গণহত্যা ও গণধর্ষণ যেমন হয়না, তেমনি তা নিয়ে উৎসবও হয় না। কাউকে আগুণে ফেলে হত্যার ন্যায় বীভৎসতাও হয় না। কিন্তু ভারতে এরূপ সবকিছুই হচ্ছে।
দেশটি রক্তাত্ব যুদ্ধ চলছে মুসলিম নির্মূলের লক্ষ্যে। চলমান এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার দল বিজেপি। সাথে রয়েছে বিজেপির জন্মদাতা সংগঠন আর এস এস, এবং সে সাথে বজরং দল, বিশ্বহিন্দু পরিষদ ও শিবসেনাসহ অসংখ্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। রণমুর্তি ধারণ করেছে এমন কি সাধুসন্যাসীগণও। চলমান এ যুদ্ধের মূল অস্ত্রটি হলো মুসলিম বিরোধী তীব্র ঘৃণা। ঘৃণার বিষ মৃত্যু, ধর্ষণ ও নির্যাতন ডেকে আনে হাজার হাজার মুসলিমের জীবনে। সেটি যেমন বার বার দেখা গেছে গুজরাত, মুম্বাই, আসাম, মুজাফনগর, আগ্রা, মুরাদাবাদের ন্যায় নানা স্থানে, তেমনি তার প্রকট রূপটি দেখা যাচ্ছে কাশ্মীরে।
নরেন্দ্র মোদি এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীগণ যে হিন্দু ভারত নির্মাণ করতে চায় সেখানে মুসলিমদের জন্য কোন স্থান নেই। মুসলিমগণও স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচবে, শিক্ষা-দীক্ষা ও চাকুরি-বাকুরিতে অংশ নিবে বা চাষাবাদ ও ব্যবসা-বাণিজ্য করবে -সেটি তাদের কাছে অসহ্য। নিরেট ফ্যাসিবাদের এর চেয়ে নিখুঁত টেক্সটবুক উদাহরণ আর কি হতে পারে? মুসলিমদের জন্য ভয়ানক বিপদের কারণ হলো এ ফ্যাসিস্টদের হাতেই অধিকৃত হয়েছে আধুনিক ভারতের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, পুলিশ বিভাগ, প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা ও মিডিয়া। এদের দাপটে এমন কি হিন্দু মানাবাধিকার কর্মীগণও মুখ খুলতে পারছে না। ফলে মুসলিম বিরোধী বিষাক্ত ঘৃণার লাগামহীন প্রকাশ ঘটছে লাগাতর মুসলিম গণনিধন, নারীধর্ষণ এবং মুসলিমদের ঘরবাড়ী ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগের মধ্য দিয়ে।
তবে বিপদ যে শুধু ভারতীয় মুসলিমদের –তা নয়। ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া-বাহী মশা সীমান্ত মানে না। তেমনি সীমান্ত মানে না ফ্যাসিবাদী চেতনাও। হিটলারের আমলে মানবতাবিধ্বংসী এ হিংস্র মতবাদটি তাই শুধু জার্মানী ও ইতালীতে সীমিত থাকেনি, প্রায় সমগ্র ইউরোপকে গ্রাস করেছিল। একই অবস্থা হতে যাচ্ছে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতেও। ফলে ফ্যাসিবাদের নৃশংসতা শুধু গুজরাতে সীমিত নয়, ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র ভারতে। ছড়িয়ে পড়েছে এমন কি পাশ্ববর্তী শ্রীলংকা এবং মায়ানমারে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, গণধর্ষণ এবং ঘরবাড়ী জ্বালানোর তান্ডব শুরু হয়েছে এ দু’টি বৌদ্ধ-অধ্যুষিত দেশেও। নির্ভেজাল ফ্যাসিবাদ বলতে যা বুঝায় -তা ইতিমধ্যেই চেপে বসেছে বাংলাদেশেও। ফলে দেশটিতে চালু হয়েছে গুম, খুন ও বিচার বহির্ভুত হত্যার সরকারি রাজনীতি। লাঠিয়াল রূপে ব্যবহৃত হচ্ছে দেশের পুলিশ, সেনাবাহিনী, RAB, আত্মসমর্পিত আদালত এবং শাসক দলের দলীয় গুন্ডা বাহিনী। বিলুপ্ত করা হয়েছে মিটিং-মিছিলের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।
অসভ্যতা যেখানে রাজনীতির হাতিয়ার
কাশ্মীরে ইতিমধ্যেই এক লাখের অধিক মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষিতা হয়েছে হাজার হাজার নারী। বহু হাজার বৃদ্ধ, যুবক, মহিলা ও শিশু হয়েছে আহত, অন্ধ ও পঙ্গু। মুসলিম হত্যা ও নারী ধর্ষণের অভয় অরণ্য হলো এখন কাশ্মীর। সেখানে কোন অপরাধই –তা যত নৃশংসই হোক তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়। নরেন্দ্র মোদি এখন কাশ্মীরীদের শায়েস্তা করতে সৈনিকের লেবাস পড়িয়ে হাজার হাজার বিজিপী ও আর এস এস গুন্ডাদের সেখানে পাঠাচ্ছে। লক্ষ্য, এ নৃশংস অসভ্যদের দিয়ে নিরস্ত্র কাশ্মীরীদের ঘরে ঘরে ঢুকে পিটানো এবং নারীধর্ষণের অসভ্যতাকে ব্যাপকতর করা। এভাবে সে বাস্তবায়ীত হচ্ছে মোদির আবিস্কৃত মুসলিম গণহত্যা ও গণধর্ষণের গুজরাতি মডেল। ফ্যাসিবাদী নেতাগণ দলীয় গুন্ডাদের জন্য এভাবেই খুলে দেয় অপরাধের ফ্লাড গেট। একই কারণে বাংলাদেশ দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে ৫ বার প্রথম হয়েছে এবং শেখ হাসিনার অনুসারি ছাত্রলীগের কর্মীর দ্বারা জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণে সেঞ্চুরির উৎসব হয়েছে।
লক্ষণীয় হলো, কাশ্মীরে বা ভারতে মুসলিম-নির্মূল ও ধর্ষণের অসভ্যতা যতই নৃশংসতর হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা ততই তুঙ্গে উঠছে। হিন্দুরা পূজণীয় চরিত্র খোঁজে বিষাক্ত স্বর্প ও শিবের রণমুর্তির মাঝে। চেতনায় বিষপূর্ণ ফ্যাসিবাদি মোদী এজন্যই তাদের কাছে এতো প্রিয়। ২০০২ সালে গুজরাতে তার নেতৃত্বে যে গণহত্যা হয়েছিল তাতে বিশ্বব্যাপী মোদির বিরুদ্ধে ধিক্কার উঠেছিল। এমন কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারও সেদেশে তার প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু তাতে মোদি থামেনি। কারণ, তার জানা ছিল হিন্দু ভোটারের চেতনায় অসভ্যতার মান। সে জানতো নির্বাচনে ভোট বাড়াতে হলে চাই মুসলিম নির্মূলের নৃশংসতা। চাই বিপুল সংখ্যায় মুসলিম নারী ধর্ষণ। তাই গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসার সাথে সাথে তীব্রতর করে মুসলিম নিধন ও মুসলিম নারীধর্ষণের বীভৎসতা। সে নৃশংস অসভ্যতার স্মৃতি তাজা থাকতেই দেয় গুজরাতে নির্বাচন। ফলে যা তার প্রত্যাশা ছিল সেটিই হয়েছে। নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় মোদি। এবং তার জনপ্রিয়তা শুধু গুজরাতে সীমিত থাকেনি; ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র ভারতে। মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছে সে নৃশংস অসভ্যতার সিঁড়ি বয়েই। এ হলো তথাকথিত গণতান্ত্রিক ভারতের চিত্র।
নরেন্দ্র মোদির সফল স্ট্রাটেজী
গুজরাতের পূর্ববর্তী মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে নরেন্দ্র মোদীর মুখ্য মন্ত্রী হওয়ার পিছনে মূল কারণটি ছিল তার দানবীয়্ চরিত্র। ১৯৯২ সালে ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার কাজে গুন্ডা সংগ্রহে তার ভূমিকাটি ছিল বিশাল। তার সে ভূমিকাই তাকে শুধু গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী করেনি, ভারতের প্রধানমন্ত্রীও করেছে। ২০১৪ সালের তূলনায় ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজিপির বিজয়টি ছিল আরো অবাক করার মত। ২০১৯ সালের বিজয়ের পিছনেও কাজ করেছে ৫ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকা কালে তার সরকারের মুসলিম বিরোধী নৃশংসতর নীতি। গরু রক্ষার নামে হিন্দু গুন্ডাদের ক্ষমতা দেয়া হয় পথে ঘাটে মুসলিমদের পিটিয়ে হত্যার। ফলে সে বর্বরতা রোধে মোদীর সরকার বোধগম্য কারণেই কোন উদ্যোগ নেয়নি।
নরেন্দর মোদী সরকার ও তার গুন্ডাদের নৃশংস বর্বরতার এক হৃদয়বিদারক দৃষ্টান্ত হলো ২০১৭ সালের পহেলা এপ্রিল পেহলু খান হত্যাকান্ড। রাজস্থানের পেহলু খান ও তার দুই ছেলে হরিয়ানার গরুর হাট থেকে গরু কেনে ঘরে ফিরছিল। পথে উগ্রহিন্দুদের বাহিনী তাদের উপর হামলা করে। তারা যে হাট থেকে গরু কিনেছে তার বৈধ কাগজ দেখিয়েও নিষ্কৃতি মেলেনি। গুরুতর আহত পেহেলু খান হাসপাতালে মারা যান। কিন্তু খুনের বিচারে খুনিদের শাস্তি মেলেনি। ২০১৯ সালের ১৫ই আগস্ট ইন্ডিয়ার এক্সপ্রেস খবর ছাপে ৭ জন আসামীকেই আদালত মুক্তি দিয়েছে। যদিও পেহেলু খানের উকিল খুনের সাথে আসামীদের জড়িত থাকার প্রমাণ স্বরূপ ভিডিও চিত্র আদালতে পেশ করেছিল। গরুপূজারীদের হাতে মুসলিম নিহত হলে, পুলিশ ও আদালতের আগ্রহ নাই খুনিদের শাস্তি দেয়ায় –এ হলো বাস্তবতা। বরং পত্রিকায় প্রকাশ, পেহলু খান ও তার দুই ছেলেকে শাস্তি দিতে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কেস তুলেছে গরু পাচারের অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে। এতে বুঝা যায়, মুসলিম নিধন-পাগল গুন্ডারা শুধু রাজপথই দখলে নেয়নি, শুধু প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর আসনেই বসেনি, বরং নিজেদের দখলে নিয়েছে দেশের পুলিশ বিভাগ এবং আদালতও।
ভারতে ভোট বৃদ্ধির আরেক মোক্ষম কৌশল হলো পাকিস্তান বিরোধী হুংকার দেয়া। সামনে ছিল ২০১৯ সালের নির্বাচন। তাই জনপ্রিয়তা বাড়াতে নরেন্দ্র মোদি শুধু রণ-হুংকারই দেয়নি, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলাও করে বসে। এতে দ্রুত তুঙ্গে উঠে মোদির জনপ্রিয়তা। তাছাড়া ২০১৯ সালের নির্বাচনে বেছে বেছে এমন সব যুদ্ধাংদেহীদের মনোনয়ন দেয়া হয় -যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে মুসলিম হত্যার ফৌজদারি মামলা। ভূপালের প্রাজ্ঞ ঠাকুর, গুজরাতের অমিত শাহ তো তারই উদাহরণ। হিটলারের ন্যায় নরেন্দ্র মোদিও হত্যাপাগল অপরাধীদের বিপুল সংখ্যায় রাজনীতির ড্রাইভিং সিটে বসিয়েছে। ফলে মুসলিম হত্যায় ভারত সরকারকে হিটলারের ন্যায় গ্যাস চেম্বার নির্মাণ করতে হচ্ছে না। বরং দেশের রাস্তাঘাট এবং জনপদগুলোই পরিণত হয়েছে গণহত্যা, গণধর্ষণ ও নির্যাতনের অভয় অরণ্যে। হিটলার জার্মানদের এতোটা অসভ্য ও নৃশংস করতে পারিনি। ফলে তাকে গ্যাস চেম্বার খুলতে হয়েছে লোক চক্ষুর অন্তরালে। কিন্তু ভারতে এ নৃশংস অসভ্যতা নিয়ে লজ্জা-শরমের বালাই না।
এতদিন বিজেপির ক্যাডারগণ মুসলিমদের হাতে গরু দেখলেই পিঠিয়ে মেরে ফেলতো। এরপর মাথা টুপি দেখলে তাদের মাথা থেকে টুপি কেড়ে নিয়ে জয় শ্রীরাম বলতে বাধ্য করতো। এখন হিন্দুদের হাতে পথে-ঘাটে লাঞ্ছিত বা মার খেয়ে মরার জন্য হাতে গরুর রশি বা মাথায় টুপি থাকার প্রয়োজন নাই, মুসলিম নাম হলেই যথেষ্ঠ। টিকিট কিনে ট্রেনে উঠে নিজের সিটটি ছেড়ে দিতে হয় মুসলিম যাত্রীদের। সে সাথে গালিও খেতে হয়। তবে কাশ্মীরীদের বিরুদ্ধে বাড়তি রাগের কারণ, তারা ভারতে থাকার বিরোধী। তারা যোগ দিতে চায় পাকিস্তানে। ফলে তারা পরিণত হয়েছে হত্যা ও ধর্ষণ-পাগল গুন্ডাদের হাতে জিম্মি পাকিস্তানীতে।
গুজরাতের নৃশংসতা
মুসলিমদের বিরুদ্ধে নরেন্দ্র মোদি ও তার দলীয় ক্যাডারদের ঘৃণা যে কতটি তীব্র -সেটি দেখা গেছে মোদির শাসনামলে গুজরাতে। সেখানে ধর্ষণ পরিণত হয়েছিল যুদ্ধাস্ত্রে। ২০০২ সালে নরেন্দ্র মোদি যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী তখন তার নেতৃত্বে মুসলিম নিধন এবং মুসলিম নারীদের গণধর্ষণের উৎসব শুরু হয়। ২ হাজারের বেশী মুসলিমকে সেখানে হত্যা করা হয় -যার মধ্যে বহু নারী এবং শিশুও ছিল। ধর্ষিতা হয়েছে শত শত। সে বর্বরতার এক করুণ চিত্র তুলে ধরেছেন প্রখ্যাত লেখিকা অরুনদ্ধতি রায়। সোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হ্ওয়া এক বক্তৃতায় তিনি তুলে ধরেন, কীরূপ বর্বরতার সাথে প্রাদেশিক পরিষদের একজন বিধায়ককে জীবন্ত আগুনে ফেলে হত্যা করা হয়। এহসান জাফরী নামক উক্ত বিধায়কের অপরাধ ছিল তিনি মুসলিম ছিলেন এবং তার ঘরে প্রাণ বাঁচাতে বহু মুসলিম নারী, শিশু, বৃদ্ধ আশ্রয় নিয়েছিল। আশ্রয়কারীরা ভেবেছিল, এহসান জাফরী যেহেতু বিধায়ক, তার গৃহে আশ্রয় নিলে প্রাণে বাঁচা যাবে। এহসান জাফরীর গৃহ হত্যাপাগল বিজিপির গুন্ডা ও ধর্ষনকারীদের দ্বারা ঘেরাও হয়ে যায়। পরিস্থিতি গুরুতর দেখে তিনি অনেক সরকারি কর্মকর্তাকে ফোন করেন। ফোন করেন কংগ্রস-নেত্রী সোনিয়া গান্ধিকেও। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নিজে ঘর থেকে বের হয়ে তিনি ঘেরাওকারীদের বলেন, তোমরা আমার সাথে যা ইচ্ছা করতে চাও করো, কিন্তু যারা আমার ঘরে আশ্রয় নিয়েছে তাদের বাঁচতে দাও। কিন্তু এহসান জাফরীর সে আবেদনে কাজ হয়নি; হামলা হয়েছে তার গৃহে। আশ্রয় নেয়া শিশু, মহিলা এবং বৃদ্ধদের কাউকেই বাঁচতে দেয়া হয়নি। ঘরে ফিরতে দেয়া হয়নি এহসান জাফরীকেও, তার হাত পা কাটা হয়েছে এবং হত্যা করা হয়েছ জীবন্ত আগুনে ফেলে। এ হলো মোদি এবং তার কর্মীদের নৃশংস অসভ্যতার মান। এরূপ অসংখ্য নৃশংসতা হয়েছে পুলিশের চোখের সামনে এবং চলেছে কয়েক সপ্তাহ ধরে। যেসব পুলিশ অফিসার বিবেকের তাড়নায় মুসলিম-নিধন ও ধর্ষণ থামাতে উদ্যোগী হয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার তাদেরকে শাস্তিস্বরূপ অন্যত্র বদলী করেছে। এ নরেন্দ্র মোদিকে শেখ হাসিনা নিয়মিত ভেট পাঠায় বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ পাঞ্জাবী আর আমের ঝুড়ি সাজিয়ে। খুনিরা কখনোই খুনের উস্তাদকে সমীহ করতে ভূল করেনা। তাই শাপলা চত্ত্বরের খুনি হাসিনা গুজরাতের খুনি মোদিকে উপঢৌকন পাঠাবে –সেটিই কি স্বাভাবিক নয়?
অসভ্যতা শুধু বিজিপির নয়
তবে ইতিহাসের আরেক সত্য হলো, মুসলিম হত্যার নৃশংস অসভ্যতা শুধু বিজেপী, আর এস এস, বজরং দল, বিশ্বহিন্দু পরিষদ বা শিবসেনাদের বিষয় নয়; সে অসভ্যতা কংগ্রেসী এবং বামপন্থি হিন্দুদেরও। ভারতের ইতিহাসে সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে বড় মুসলিম গণহত্যাটি হয়েছে কংগ্রেসের শাসনমালে। সেটি ১৯৪৮ সালে, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জওহারলাল নেহেরু। সেটি ঘটেছিল মুসলিম শাসক নিযামের শাসনাধীন হায়দারাবাদকে ভারতভূক্ত করার সময়। কোন কোন তথ্য মতে মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার, অনেকের মতে এক লাখের বেশী।
এতবড় গণহত্যা ও গণধর্ষণের পরও কারো কোন বিচার হয়নি, শাস্তি হয়নি। কোন তদন্তও হয়নি। নিহত মশামাছিদের যেমন কেউ গণনা করে না, ভারত সরকারও তেমনি নিহতদের উপর কোন তথ্য সংগ্রহ করেনি। হত্যাকান্ডটি ঘটে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে। মুসলিম নারীদের উপর গণধর্ষণে নামানো হয় হিন্দু ও শিখ গুণ্ডাদের। ইতিহাসে এটি পরিচিত ভারতের গোপন হত্যাকান্ড নামে। সে গণহত্যার মূল নায়ক ছিল ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উপপ্রধানমন্ত্রী আরেক গুজরাতি সর্দার বল্লব ভাই পাটেল। সে উগ্র সাম্প্রদায়িক খুনি পাটেল হলো বিজিপি বা আর এস এসের নেতাকর্মীদের কাছে অতি পূজনীয় ব্যক্তিত্ব। ছিল কংগ্রেসেরও অন্যতম প্রধান কেন্দ্রীয় নেতা। আর এস এসের চেতনাধারীগণ শুধু বিজিপিতে নয়, কংগ্রসের মধ্যেও যে কতটা উচ্চাসনে স্থান পেয়েছে -এ হলো তারই নজির। সে খুনিকে সম্মানিত করতে গুজরাতে নির্মাণ করা হয়েছে ৬০০ ফুট লম্বা মুর্তি। সমগ্র পৃথিবীতে সর্বকালের এটিই হলো সবচেয়ে বড় মুর্তি।
অপর দিকে ১৯৮৩ সালের ১৮ই ফেব্রেয়ারীতে আসামের নওগাঁও জেলার নেলীতে বাঙালী মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে নৃশংস গণহত্যাটি ঘটেছিল -সেটিই হলো আসামের সমগ্র ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণহত্যা। সেটিও ঘটেছিল কংগ্রেসের শাসনামলে। তখন কেন্দ্রে ও আসামে –উভয় স্থলেই ছিল কংগ্রেসের সরকার। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিল ইন্দিরা গান্ধি। সে গণহত্যায় মৃতের সংখ্যা সরকারি ভাবে ২,১৯১ জন বলা হলেও বেসরকারি হিসাবে তা ছিল ১০ হাজারের উপর। ১৮ই ফেব্রেয়ারীর সকালে মুসলিম নির্মূলের উদ্দেশ্য নিয়ে স্থানীয় হিন্দুগণ পরিকল্পিত ভাবে হামলা করে ১৪টি গ্রামের উপর। নারী-শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কেউই রেহাই পায়নি। পশুদের মাঝে কেউ খুন বা ধর্ষিক হলে পশুসমাজে তা নিয়ে বিচার বসে না। মুসলিম নর-নারী খুন বা ধর্ষিতা ভারতের আদালতেও সেটি হয়। নরেন্দ্র মোদির পূর্বে কংগ্রেসও তেমনি এক নিরেট অসভ্যতা নামিয়ে এনেছিল যেমন হায়দারাবাদে, তেমনি আসামের নেলীতে।
তাই নেলীতে অতি নৃশংস গণহত্যার পরও তা নিয়ে আদালতে কোন বিচার বসেনি। কারো কোন শাস্তিও দেয়া হয়নি। সে সময় মুসলিমদের পক্ষ থেকে থানায় ৬৮৮টি হত্যা মামলা হয়েছিল, সরকার সবগুলো মামলাই খারিজ করে দেয়। এবং সেটি করা হয় গণহত্যর মূল আয়োজক চরম মুসলিম বিরোধী ছাত্র সংগঠন “অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন”র (AASU) উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতাদের তুষ্ট করতে। এবং ১৯৮৫ সালে সেটি করে আরেক কংগ্রেসী প্রধানমন্ত্রী এবং ইন্দিরার পুত্র রাজিব গান্ধি। ইন্দিরার আমলে তেওয়ারীর নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়; ৬০০ পৃষ্টার একটি রিপোর্টও লেখা হয়। সে রিপোর্টের মাত্র তিনটি কপি রয়েছে; তবে কোনটিই আজ অবধি আলোর মুখ দেখেনি। সে রিপোর্টটি পরিকল্পিত ভাবে গোপন করা হয়েছে অপরাধীদের ভয়ানক অপরাধগুলিকে গোপন করার জন্য। এভাবে গণহত্যার নায়কগণই শুধু শাস্তি থেকে মুক্তি পায়নি, সরকারকে নিষ্কৃতি দেয়া হয়েছে সে গণহত্যার শিকার মুসলিম পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দায়বদ্ধতা থেকে। কোথাও মুসলিম বিরোধী গণহত্যা হলে তদন্তের নামে এরূপ কমিটি করা এবং সে কমিটির রিপোর্টকে গোপনা করাই হলো প্রতিটি সরকারের চিরাচরিত নীতি। সেটি যেমন কংগ্রেসের, তেমনি বিজিপির। বরং মুসলিম নির্মূলের লক্ষকে সামনে রেখে আসামের পরিস্থিতিকে এখন অন্যদিকে ঘোরানো হচ্ছে। আসামে চলমান গণহত্যাগুলি থেকে যেসব মুসলিম এতোদিন বেঁচে এসেছে এখন তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলে ভারত থেকে তাড়ানোর ফন্দি করা হচ্ছে। তাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে ভারতীয় নাগরিকের তালিকা থেকে। এবং বহু আগেই বাদ দেয়া হয়েছে ভোটের তালিকা থেকে। এদের সংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ। বাংলাদেশ সরকার তাদের নিতে রাজী না তাদেরকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হবে। তখন তাদের বাঁচতে হবে নাগরিকত্বহীন, ভোটাধিকারহীন, মানবাধিকারহীন পশুর জীবন নিয়ে। মায়ানমারের সরকার যা করেছে রোহিঙ্গাদের সাথে -ভারত সরকার অবিকল সেটিই করতে যাচ্ছে আসামের মুসলিমদের সাথে।
অপরদিক বাবরি মসজিদে ভেঙ্গে মাটিতে মিশিয়ে দেয়ার কাজটিও বিজিপি আমলে হয়নি, হয়েছে কংগ্রেসের শাসনামলে। তখন ভারতে কংগ্রেস দলীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নরসিমা রাও। মসজিদ ভাঙ্গার কাজটি চলে সারাদিন ধরে। চলে প্রচণ্ড উৎসবভরে। সে সন্ত্রাসী ঘটনাটি সারা বিশ্বের মানুষ টিভিতে দেখেছে। দেখেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, লোকসভার সদস্য এবং প্রশাসনিক ও পুলিশ কর্মকর্তাগণ।কিন্তু ঐতিহাসিক মসজিদ ধ্বংসের সন্ত্রাস থামাতে কেউই কোন উদ্যোগই নেয়নি। তাদের সবাই সে বর্বরতাটি নীরবে দেখেছে। এরূপ নৃশংসক অসভ্যতা কি কোন সভ্য দেশে আশা করা যায়? অথচ সেটিই হলো ভারতের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নীতিবোধ। কংগ্রেসের শাসনামলেই বহু হাজার শিখকে হত্যা করা হয় ইন্দিরা গান্ধি হত্যার প্রতিশোধ নিতে। সে হ্ত্যাকান্ডেরও কোন বিচার হয়নি। বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা নিয়ে আন্দোলন বিজিপি নেতা আদভানি শুরু করলেও হিন্দুদের জন্য মসজিদের দরজা প্রথম খুলে দেয় রাজীব গান্ধি। এবং এতেই পরবর্তীতে উৎসাহ পায় বিজেপি নেতাকর্মীগণ।
যে অপরাধ বামপন্থিদের
বামপন্থিগণ নিজেদের অসাম্প্রদায়িক রূপে পরিচয় দেয়। কিন্তু মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের কান্ড কি কম সাম্প্রদায়িক ও কম হৃদয়বিদারক? পশ্চিম বাংলায় বাপফ্রন্ট ক্ষমতায় ছিল ৩৪ বছর। মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় শতকরা তিরিশ ভাগ হলেও পশ্চিম বাংলার সরকারি চাকুরিতে তাদের সংখ্যা শতকরা ৫ ভাগও নয়। সরকারের যেখানে খরচ সেখানেই আয়। সরকারি চাকুরিতে স্থান পেলে তাই জনগণের বঞ্চনা বাড়ে। পশ্চিম বাংলার মুসলিমদের এ বঞ্চনা গুজরাতের মুসলিমদের চেয়েও অধিক। এটি কি বামপন্থিদের অসাম্প্রদায়িক নীতির প্রকাশ? বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা শতকরা ৯ ভাগ; অথচ তাদের সংখ্যা চাকুরিতে শতকরা ২০ ভাগেরও বেশী। তাছাড়া বামপন্থিগণও যে কতটা সাম্প্রদায়িকতায় আচ্ছন্ন তার প্রমাণ তারা রেখেছে ২০১৯ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে। গত নির্বাচনে পার্লামেন্টের একটি আসনেও সিপিএম এবং তার শরীক বামপন্থিরা বিজয়ী হতে পারিনি। বামপন্থিদের ভোট পড়েছে বিজিপীকে বিজয়ী করতে। ফলে পশ্চিম বাংলায় বিজিপির আসন ২ থেকে বেড়ে ১৮তে উন্নীত হয়েছে।
ভারতে আরেক অন্যতম প্রধান বামপন্থি সংগঠন হলো উত্তর প্রদেশের মুলায়াম সিং ইয়াদবের সমাজবাদী দল। এ দলটির হাতেও ক্ষমতা গিয়েছিল উত্তর প্রদেশে। এবং তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পিছনে ছিল উত্তর প্রদেশের প্রায় ২০% ভাগ মুসলিম ভোট। অথচ সে দলটির শাসনামলেই ২০১৩ সালে অতি নৃশংস মুসলিম গণহ্ত্যা ঘটে মুজাফ্ফর নগরে। প্রায় ২০০ জন মুসলিমকে হত্যা করা হয় এবং গৃহহীন করা হয় ৫০ হাজারকে। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলে সে গণহত্যা। কিন্তু সে গণহত্যা থামাতে উত্তর প্রদেশের বামপন্থি সরকার কার্যকর কোন ভূমিকাই পালন করেনি। দাঙ্গা শেষে উদ্বাস্তুদেরকে তাদের নিজ ঘরে ফেরার নিরাপত্তাও দেয়নি। ফলে ৬ বছর পরও তাদের অধিকাংশই এখনো ক্যাম্পে উদ্বাস্তু জীবন কাটাচ্ছে। এ হলো ভারতীয় বামপন্থিদের মানবতার মান।
গণহত্যা ও গণধর্ষণ কি অভ্যন্তরীণ বিষয়?
গণহত্যা, গণধর্ষণ বা গণনির্যাতন – এ অপরাধগুলির কোনটিই কোন দেশেরই অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। ভারতেরও নয়। এগুলি মানবতা বিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ। এগুলি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের এবং সে রাষ্ট্রের বুকে নিহত মানবতার সুস্পষ্ট আলামত। কোন অপরাধীই নিজের অপরাধ-প্রবনতাকে নিজের মধ্যে সীমিত রাখে না, বরং সমাজে হত্যা, ধর্ষণ ও চুরি-ডাকাতি নিয়ে বাঁচাই তার সংস্কৃতিতে পরিণত হয়। এমন অপরাধীদের হাতে রাষ্ট্র অধিকৃত হলে অপরাধ কর্মের প্লাবন আসে রাষ্ট্র জুড়ে। তাই গণহত্যা, গণধর্ষণ বা গণনির্যাতন শধু কাশ্মীরে সীমিত নয়, সে বর্বরতা অতি বীভৎস রূপে ঘটছে গুজরাত, আসাম, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্রসহ সমগ্র ভারত জুড়ে। শুধু মুসলিমদের বিরুদ্ধে নয়, খৃষ্টান, আদিবাসী এবং নিম্ম বর্ণের দুর্বল মানুষদের বিরুদ্ধেও।
পাশের বাড়ীতে খুন, ধর্ষণ বা অগ্নিসংযোগ ঘটলে তা কখনোই সে গৃহের অভ্যন্তরীণ বিষয় থাকে না। সেটি থামাতে প্রতিবেশীদের হস্তক্ষেপ অনিবার্য হয়ে পড়ে। এবং সেটি রাষ্ট্রের ব্যাপারেও। তবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সরকার যদি শেখ মুজিব বা শেখ হাসিনার ন্যায় নিজেরাই খুন-গুমের রাজনীতির ফ্যাসিবাদী দুর্বৃত্ত হয় তবে অন্য কথা। এরা তখন ফ্যাসিবাদকে তীব্রতর করতে প্রতিবেশী ফ্যাসিস্টদের কোয়ালিশন গড়ে। হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীর মাঝে সেটিই হয়েছে। তাই বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন ফ্যাসিবাদী হাসিনা যে নরেন্দ্র মোদীর ফ্যাসিবাদী নৃশংসতায় সর্বাত্মক সহায়তা দিবে –সেটি শুধু স্বাভাবিকই নয়, কাঙ্খিত বিষয়ও। তাই হাসিনার সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা, বাংলাদেশের জনগণ যাতে কাশ্মীরীদের প্রতি সমর্থণ জানাতে ভারতের বিরুদ্ধে মারমুখী না হয়।
কোন দেশে গণহত্যা, গণধর্ষণ বা গণনির্যাতনের অপরাধগুলি ঘটায় সে দেশের ফাসিস্ট সরকার। সে অপরাধের শিকার হয় অসহায় দুর্বল জনগণ। ভারতে সে অসহায় জনগোষ্ঠি হলো মুসলিম জনগণ। এবং অপরাধী পক্ষটি হলো নরেন্দ্র মোদীর সরকার ও তার দল বিজিপি। সাথে রয়েছে আর এস এস, বিশ্বহিন্দু পরিষদ, বজরং দল ও শিব সেনাসহ সকল হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। যারা বিশ্বে শান্তি চায় তারা এমন একটি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের নিদারুন নৈতিক ব্যর্থতা ও নৃশংস বর্বরতা নিয়ে কখনোই নিশ্চুপ থাকতে পারেনা। নিশ্চুপ থাকলে এ নৃশংস অপরাধগুলি ঘটাতে বেপরোয়া হবে সে দেশের ভয়ংকর অপরাধীগণ। তখন সংঘটিত হবে ইতিহাসের অতি বর্বরতম গণহত্যা -যা নিকট অতীতে ঘটেছে রুয়ান্ডা ও বসনিয়াতে। তখন ভারত থেকে নির্মূল হবে সেদেশে ২০ কোটি মুসলিম।
ঈমানের পরীক্ষা বাংলাদেশীদের
হত্যা, গুম, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার মজলুম মুসলিমদের পাশে দাঁড়ানোটি মুসলিম উম্মহর রাজনীতির বিষয় নয়, এটি দ্বীনি ফরজ তথা বাধ্যতামূলক। স্রেফ নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত আদায়ে ঈমান বাঁচে না; ঈমান বাঁচাতে দায়িত্ববান হতে হয়। মুসলিম উম্মাহ একটি দেহের ন্যায়। ফলে এক হাতে কেউ আঘাত হানলে অন্য হাত ত্বরিৎ বাধা দেয়। ফলে কোন মুসলিমের উপর হামলা হলে নিষ্ক্রীয় ও নীরব থাকাটি ঈমানদারী নয়। ফলে মজলুম কাশ্মীরীদের বাঁচাতে ময়দানে নামার দায়িত্বটি শুধু পাকিস্তানীদের নয়, বাংলাদেশীদেরও। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিমদেরও। সে দায়িত্ব পালনে অবহেলার অর্থ বেঈমানী নিয়ে বাঁচা।
যে কোন যুদ্ধের তিনটি রূপ থাকে। এক) সামরিক; ২) অর্থনৈতিক; ৩) বুদ্ধিবৃত্তিক। বাংলাদেশের জনগণ অন্ততঃ অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশ ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার। এ মুহুর্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের উপর ফরজ হলো ভারতের পণ্য বর্জন করা। ভারতের পণ্য কেনার অর্থ হলো, মুসলিম হত্যায় ভারতকে যুদ্ধের রশদ সংগ্রহ এবং অস্ত্র নির্মাণে বা ক্রয়ে সাহায্য করা। অতএব এটি ভয়ংকর যুদ্ধাপরাধ এবং ধর্মীয় ভাবে হারাম। এর অর্থ দাড়ায়, যে ব্যক্তি ভারতীয় পণ্য কিনবে সে বস্তুতঃ সরাসরি শরীক হবে সকল প্রকার ভারতীয় অপরাধের সাথে। এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে যত মুসলিম নিহত, ধর্ষিত বা নির্যাতিত হবে –ভারতীয় পণ্যের সে ক্রেতা জড়িত হবে সেসব অপরাধের সাথেও। ফলে কোন মুসলিম কি জেনে বুঝে ভারতীয় পণ্য কিনতে পারে?
বাংলাদেশের হাসিনা সরকারকে বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচিত করেনি। এ সরকার বস্তুতঃ ভারতের মদদপুষ্ট সরকার। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে আছে ভারত সরকার ও ভারতীয় গোয়েন্দাদের সহায়তা নিয়ে। ফলে ভারতে মুসলিমগণ যতই খুন, ধর্ষণ ও নির্মম অত্যাচারের মুখে পড়ুক না কেন, -যে কোন ভারতীয় গুণ্ডার ন্যায় হাসিনাও সেটিকে সমর্থন কররে। হাসিনার সরকার বরাবরই বলে আসছে কাশ্মীরে যা কিছু হচ্ছে তা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অথচ কোন দেশে মুসলিমদের উপর হত্যা, ধর্ষণ বা অত্যাচার হলে তাদেরকে তা থেকে বাঁচানো প্রতিটি মুসলিমের কাছে তার ঈমানদারীর বিষয়ে পরিণত হয়। সেটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক নীতিতে পরিণত হয় প্রতিটি মুসলিম দেশের। তাই যারা ভারতের দাস তারা চুপ থাকলেও কোন মুসলিমের কাছে সেরূপ আত্মসমর্পণের নীতি কি কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে? কারণ ঈমানদারকে শুধু মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসুলের পক্ষে সাক্ষ্য দিলে চলে না, দাঁড়াতে হয় জালেমের বিরুদ্ধেও। ১৭/০৮/২০১৯
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018