ভারতে মসজিদ ধ্বংস ও মুসলিম নির্মূল প্রকল্প

উৎসব অসভ্য কর্মে

মসজিদ বা অন্য কোন ধর্মের উপাসনালয় ধ্বংস করা কোন কালেই এবং কোন দেশেই সভ্যকর্ম রূপে বিবেচিত হয়নি। সভ্যকর্ম রূপে বিবেচিত হয়নি কোন একটি ধর্মের অনুসারিদের হত্যা করা, তাদের মহিলাদের ধর্ষণ করা এবং শিশুদের আগুণে ফেলে উল্লাস করা। এটিও কোন সভ্য কর্ম নয় যে, কে গরুর মাংস খেলো বা কে শুকর বা শাপ খেলো তার ভিত্তিতে রাস্তায় পিটিয়ে কাউকে হত্যা করা। এরূপ হত্যাকান্ড চিরকালই বিবেচিত হয়েছে অতিশয় বর্বর ও অসভ্য কর্ম রূপে। অথচ এরূপ অসভ্য ও বর্বর কর্মগুলি ভারতে নিয়মিত উৎসবভরে হচ্ছে।  এরূপ অসভ্যতা ভারতে যে কতটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তারই প্রমাণ হলো, এ বর্বরতা নিছক কোন দলের দুর্বৃত্ত নেতাকর্মীদের মাঝে সীমিত নেই। বরং সেটি ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনগোষ্ঠির মাঝে। ফলে মসজিদ ভাঙ্গার ন্যায় বর্বর কর্মটি কোথাও শুরু হলে সে অসভ্যতাটিও লাখ লাখ মানুষের উৎসবে পরিণত হয়। সেটি ১৯৯২ সালে সেরূপ একটি উৎসব দেখা গেছে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসকালে। এ বর্বরতাটি এতটাই পবিত্র গণ্য হয়েছে যে, কোন পুলিশ, কোন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা মন্ত্রী ঘটনাস্থলে এসে সেটি থামানোর চেষ্টা করেনি। আরো লক্ষ্যণীয় হলো, মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুদের হত্যা এবং মহিলাদের ধর্ষণের লক্ষ্যে কোন শহরে মুসলিম জনবসতির উপর হামলা শুরু হলে সেখানেও লাখ লাখ হিন্দুর ঢল নামে। যেন সেটিও একটি পবিত্র কর্ম। ১৮৮৩ সালে আসামের নেলীতে, ১৯৯২ সালে মুম্বাইয়ে, ২০০২ সালে গুজরাতে এবং ২০১৩ সালে উত্তর প্রদেশের মুজাফ্ফর নগরে তো সেটিই হয়েছে। সে অসভ্য বর্বরতায় অপরাধীদের পূর্ণ সুযোগ দিতে পুলিশ, প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং সেনবাহিনীও সচরাচর ঘটনাস্থল থেকে পরিকল্পিত ভাবেই অদৃশ্য থেকেছে। যেন তারা কিছু দেখেনি এবং শুনেনি।

মূল সমস্যাটি তাই শুধু অসভ্য অপরাধ কর্মগুলিতে বিপুল সংখ্যক হিন্দুর অংশ গ্রহণ নয়, বরং সে বর্বর কর্মগুলিকে ঘৃণা না করে সর্বমহলে সেগুলিকে পবিত্র জ্ঞান করা। সে সাথে কাপুরুষের ভূমিকায় নেমেছে দেশের লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়। এমন কি ভারতের মুসলিম আলেমগণও।ভারতীয় মুসলিমদের অতিশয় দুশ্চিন্তার কারণ মূলতঃ এখানেই্। দুশ্চিন্তা এতটাই বেড়েছে যে, মায়েরা তাদের সন্তানদের মাথায় টুপি দিয়ে মসজিদে যেতে নিষেধ করে এ ভয়ে যে, বজরং দল, বিজিপি, আর.এস.এস বা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের গুন্ডারা পথে তাদের পিটিয়ে লাশ বানিয়ে ফেলবে। কিছু দিন আগে কলকাতার মুসলিম মেয়র ফিরহাদ হাকিম এমন একটি পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেছেন তার এক বক্তৃতাতে।  মুসলিম ব্যবসায়ীগণ হাটে গরু বেঁচতে যেতেও ভয় পায়, না জানি গো-রক্ষক ভলেন্টেয়ারেরা পথে তাদের হত্যা করে ফেলে। কারণ, এগুলিই তো অহরহ হচ্ছে। লক্ষণীয় হলো, যে নৃশংস অসভ্যতার শিকার হচ্ছে মুসলিম নর-নারী ও শিশুগণ, তা থেকে এখন বাদ পড়ছে না ভারতের ঐতিহাসিক মসজিদগুলিও।    

২০১৪ এবং ২০১৯ সালে নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজিপি)র বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার কারণটি এ নয় যে, দলটি ক্ষমতায় এসে ভারত থেকে দারিদ্র্য দূর করেছে। বরং বাস্তবতা হলো, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব ভারতে দিন দিন বেড়েই চলেছে। এক্ষেত্রে দলটির ব্যর্থতা বিশাল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ দরিদ্র জনগোষ্ঠির বাস এখনো ভারতে। প্রতি বছর বহু হাজার কৃষক আত্মহত্যা করে স্রেফ ঋণের অর্থ পরিশোধ না করতে পেরে। বহুকোটি মানুষ ভিটামাটি হারিয়ে বস্তিতে বসবাস করে। এবং বহুকোটি আদিবাসী বেঁচে আছে বনজঙ্গলের জীব, ফলমূল ও কচু-ঘেচু খেয়ে। বিজিপির জনপ্রিয়তার মূল কারণটি অন্যত্র। সেটি ভারতীয় হিন্দুদের মাঝে চরম মুসলিম বিদ্বেষ সৃষ্টিতে দলটির সফলতা। যে রাজনৈতিক দলটি মুসলিম নির্মূল ও মসজিদ নির্মূলে অধীকতর নৃশংস হওয়ার দৃষ্টান্ত রাখছে -ভারতীয় হিন্দুগণ সে দলকেই বিপুল ভোটে বিজয়ী করছে। সমগ্র ভারত জুড়ে হিন্দুদের মাঝে এরূপ মুসলিম বিদ্বেষের কারণেই গুজরাতের মুসলিম গণহত্যার নায়ক নরেন্দ্র মোদি আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচনে বিজিপির পক্ষে জোয়ার সৃষ্টির আরো কারণ, এ দলটিই নেতৃত্ব দিয়েছিল ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর প্রায় ৫ শত বছরের পুরনো ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদটিকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার কাজে। এবং ১৯৯২ সালে ও ২০০২ সালে নেতৃত্ব দিয়েছিল যথাক্রমে মুম্বাই ও গুজরাতে মুসলিম গণহত্যায়।

ভারতীয় মুসলিমদের জন্য ভয়ানক বিপদ এজন্যও যে, মুসলিম নির্মূল এবং মসজিদ নির্মূলের নৃশংস চেতনাটি শুধু বিজিপি,আর.এস.এস, শিব সেনা, বিশ্বহিন্দু পরিষদ, বজরং দলের গুন্ডাদের মাঝে সীমিত নয়। ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদের মাঝেও। এবং সেটিরই সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া যায় সুপ্রিম কোর্টের গত ৯ নভেম্বরের রায়ে। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণ আজ থেকে ২৭ বছর আগে যে চেতনার পরিচয় দিয়েছিল তা থেকে তারা অনেক দূর পিছু হটেছে। ২৭ বছর আগে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বর্বরতাটিকে তারা একটি জঘন্য ফৌজদারি অপরাধ রূপে গণ্য করেছিল। সে অপরাধে উস্কানি দেয়ার অপরাধে বিজিপির নেতা এবং সাবেক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী লাল কৃষ্ণ আদভানিসহ অনেকের বিরুদ্ধেই আদালত থেকে সমন জারি করা হয়েছিল। অথচ সে বিচারকগণই এখন মসজিদ ধ্বংসকারি গুন্ডাদের সাথে সুর মিলিয়ে রায় দিল বাবরি মসজিদের ভিটাতেই মন্দির হবে। ফলে ২৭ বছর আগে যে অপরাধকর্মটি অপরাধ রূপে গণ্য হয়েছিল এখন সেটি আর অপরাধ থাকছে না। বরং গ্রহনযোগ্য ধর্মীয় কর্ম রূপে গণ্য হচ্ছে। এরই ফলে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের অপরাধ নিয়ে যে মামলাগুলি এখনও আদালতে ঝুলছে, সে গুলি সত্ত্বর তুলে নেয়ার জন্য হিন্দু সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে দাবিও উঠছে। সেদিনও দূরে নয় যখন সে মামলাগুলি সত্যই তুলে নেয়া হবে। এবং আসামীগণ চিত্রিত হবে হিরো রূপে।   

 

বিচারের নামে ভূমি বিনিময়ের সালিশ

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের রায়ে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণ ন্যায়বিচারের বদলে নিছক ভূমি লেনদেনের সালিশী পেশ করলো। এবং আদালতের এ রায়ে বিচারকদের আসল মতলবটিও প্রকাশ পেল। এখন এটি সুস্পষ্ট যে, বিচারের মূল লক্ষ্যটি ছিল ফ্যাসিস্ট হিন্দুত্ববাদীদের মনবাসনা পূর্ণ করা। বিচারের রায়ে হিন্দু ফ্যাসিস্টদের বিজয়টি তাই বিশাল। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা পেয়ে ভারতের হিন্দুত্ববাদীগণ এতটাই গর্বিত যে, তাদের কাছে অসহ্য হলো সাত শত বছরের মুসলিম শাসনের ইতিহাসকে হজম করা। আরো অসহ্য হলো, চোখের সামনে মুসলিম শাসনের স্মৃতি ধারণকারি প্রতিষ্ঠাগুলিকে বরদাশত করা। বস্তুতঃ এমন একটি ঘৃনার কারণে প্রতিটি মুসলিম এবং প্রতিটি মুসলিম প্রতিষ্ঠানই তাদের কাছে অসহ্য। যে মুসলিমগণ ভারত শাসন করেছিল তাদের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তারা প্রতিশোধ নিতে চায় যারা বেঁচে আছে সে মুসলিমদের থেকে। এমন একটি সহিংস চেতনার কারণে ভারত ভূমি থেকে তারা শুধু মুসলিমদেরই নির্মূল চায় না, নির্মূল করতে চায় ইসলাম ও মুসলিম স্মৃতি নিয়ে বাঁচা প্রতিষ্ঠানগুলিকেও। তেমন একটি উদ্দেশ্য নিয়েই তারা গুন্ডামী করে নির্মূল করে দিল ৫ শত বছরের পুরানো ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদকে। অথচ এরূপ একটি গুরুতর বর্বরতাকে খাটো করতেই ভারতের সুপ্রিম কোর্ট মসজিদ ধ্বংসের ন্যায় গুরুতর এক সন্ত্রাসী অপরাধকে নিছক ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ রূপে বিচার করলো। আদালতের বিচারকদের ধারণা, ৫ একর জমি দিয়ে মুসলিমদের সহজেই তুষ্ট করা যাবে এবং সে সাথে এ বীভৎস অপরাধের কান্ডকে ইতিহাস থেকে মুছে দেয়া যাবে। বিচারকদের রায়ে বাবরি মসজিদের ন্যায় ঐতিহাসিক মসজিদের মূল্য যেন ৫ একর জমি। যেন ভারতের ২০ কোটি মুসলিমের ৫ একর জমি কেনার সামর্থ্যও নাই। মুসলিমদের প্রতি এরচেয়ে বড় অবমাননা আর কি হতে পারে? ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার সাথি হিন্দুত্ববাদী অন্যান্য নেতাকর্মীগণ তাই সুপ্রিম কোর্টের বিচারের রায়ে প্রচন্ড খুশি। কারণ মুসলিমদের যেখানে প্রচন্ড পরাজয় ও অপমান –নরেন্দ্র মোদি ও তার সাথিগণ ততই খুশি হবে -সেটিই তো স্বাভাবিক?

ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং আদালতের হিন্দুদের এ বিষয়টি নিশ্চয়ই জানা নেই যে, কোন ভূমিতে যখন মসজিদ নির্মিত হয় তখন সে ভূমির মালিকানা কোন ব্যক্তি, সরকার বা ওয়াক্বফ বোর্ডের থাকে না। প্রতিটি মসজিদই মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের নিজের ঘর। এবং প্রতিটি মসজিদের ইমারত এবং জমির তিনিই একমাত্র মালিক। তাই ভারতীয় হিন্দুগণ মহান আল্লাহতায়ালার মালিকানায় হাত দিয়েছে। তবে আল্লাহতায়ালার ঘরে কেউ হাত দিলে প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব হয় তাঁর খলিফা রূপে সে ঘরের পাহারা দেয়া। তাই ৫ একর জমির বিনিময়ে সে ঘরের জমি মন্দির নির্মাণে হিন্দুদের দিয়ে দেয়াটি ঈমানদারি হতে পারে না। এ নিয়ে আপোষ করার কোন এখতিয়ার কোন মুসলিম রাজনৈতিক দল বা ওয়াকফ কমিটিরও থাকে না। হাদীসে বলা হয়েছে, পৃথিবী পৃষ্টে যারা আল্লাহর ঘর গড়েন, আল্লাহতায়ালাও তাদের জন্য জান্নাতে ঘর গড়েন। এবং আল্লাহর সে ঘরের পাহারা দেয়ার কাজটিও তাই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এক্ষেত্রে ভারতের ২০ কোটি মুসলিমের ব্যর্থতাটি বিশাল। তারা আল্লাহতায়ালার ঘরের নিরাপত্তা দিতে পারিনি। প্রশ্ন হলো, এখন কি তারা আল্লাহর ঘরের ভিটায় মুশরিকদের মন্দির নির্মাণকে মেনে নিবে?   

 

বিচারকদের অবিচার

আদালতের রায়ে বিচারকগণ একথা বলতে বাধ্য হয়েছে যে, এ প্রমাণ কোথাও পাওয়া যায়নি যে মসজিদের নীচে মন্দির ছিল। অতীতে এমন দাবী এমন কি তুলসী দাস, শিবাজী, বিবেকান্দ, গুরু গোবিন্দ, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী এবং অরবিন্দ ঘোষের ন্যায় যারা ভারতের ইতিহাসে প্রখ্যাত হিন্দু পন্ডিত, নেতা বা বুদ্ধিজীবী -তারাও কখনো করেনি। অথচ ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পিছনে মূল কারণ রূপে দেখানো হয়েছে, মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল মন্দিরের উপর। বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার মূল হোতা বিজিপি নেতা লাল কৃষ্ণ আদভানীর দাবি ছিল, মসজিদের ইমাম যে মেম্বরের উপর দাঁড়িয়ে খোতবা দেন, রামের জন্মস্থান ছিল তারই নীচে। মসজিদ ভেঙ্গে সেখান মন্দির নির্মাণ ছাড়া অন্য কোন প্রস্তাবে সে কিছুতেই রাজি ছিল না। তবে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার মধ্য দিয়েই বিজিপি ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলির প্রকল্প শেষ হয়নি। মুসলিম বিরোধী সে ঘৃনাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজন আরো অনেক মসিজদের তলায় মন্দিরের তত্ত্ব শোনাচ্ছে। এবং সেটি ঘৃনাভিত্তিক ক্ষমতা দখলের রাজনীতিকে আরো তীব্রতর করার প্রয়োজনে। তাই বিজিপির এ অপরাজনীতি যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন মসজিদ নির্মূলের রাজনীতিও তীব্রতর হবে। অবিকল সে কথাটিই বলেছেন ভারতীয় হিন্দুদের এক আধ্যাত্মিক গুরু স্বামী অগ্নিবেশ। বলা হচ্ছে মথুরার শাহী মসজিদটি নাকি শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমির উপর। তলায় মন্দিরের কিসসা শোনানো হচ্ছে বারানসির জ্ঞানবাপি মসিজদের বিরুদ্ধেও। কল্পনা করতে তো আর ইতিহাস লাগে না, প্রত্নতাত্তিক প্রমাণ লাগে না। লাগে শুধু কল্পনাবিলাসী মন। এবং গাঁজার কল্কের ন্যায় সেরূপ মনের অধিকারীদের সংখ্যা কি ভারতে কম? এমন কি বলা হচ্ছে, তাজমহলও আগে একটি মন্দির ছিল। সোসাল মিডিয়াতে ইতিমধ্যেই চার শতটি মসজিদের তালিকা পেশ করেছে। বলা হচ্ছে, বাবরি মসজিদের ন্যায় সেগুলিও একের পর এক ধ্বংস করা হবে। তাছাড়া মিথ্যার শক্তি তো বিশাল। একবার রটিয়ে দিলে সে মিথ্যা কোটি কোটি অনুসারি পেয়ে যায়। গরুকে দেবতার আসনে বসানো হয়েছে এবং গো-মুত্রকে পবিত্র পানীয় রূপে প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়েছে এরূপ মিথ্যা রটিয়েই। ইবলিসের বিশ্বজোড়া বিশাল অনুসারি তো এ মিথ্যার উপরই।

ভারতের বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ব বিশারদ হলেন দিল্লির জওহারলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ভারমা। তার গবেষণালদ্ধ আবিস্কার হলো, বাবরি মসজিদের নীচে যে পুরোন ইমারতের আলামত পাওয়া গেছে সেটি হলো একটি পুরোন মসজিদের, মন্দিরের নয়। তার যুক্তি, একটি পুরোন ছোট মসজিদের ভিটায় বিশাল মসজিদ নির্মাণ করা হয়। আদালতের বিচারকগণও তাদের রায়ে মিস্টার ভার্মার সে অভিমতটি মেনে নিয়েছেন। কিন্তু লক্ষণীয় হলো, প্রফেসর ভার্মার সে আবিস্কারটি মেনে নিলেও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ সে সত্যের ভিত্তিতে ন্যায়বিচার প্রদানে নৈতিক বলের প্রমাণ দিতে পারেননি। সেটি সম্ভবতঃ ফ্যাসিবাদী সরকারের ভয়। কারণ বিচারপতিগণও ক্ষুদ্র মানব। দুর্বলতার উর্দ্ধে তারা কোন ফেরেশতা নন। তাদেরও সংসার চালাতে হয় সরকার থেকে পাওয়া বেতন দিয়ে। তাদেরকে যারা নিরাপত্তা দেয় তারা সরকারেরর পুলিশ। তাদের সন্তানদের রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে  হয়, হাটেবাজারে ও স্কুল-কলেজে যেতে হয়। পথে ঘাটে হিন্দু ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে কে তাদের নিরাপত্তা দিবে? একারণেই দুর্বৃত্ত ফ্যাসিস্টদের হাতে দেশ অধিকৃত হলে, যে প্রতিষ্ঠানটির সর্বপ্রথম মৃত্যু ঘটে সেটি হলো দেশের আদালত ও ন্যায় বিচার। আদালত তখন ব্যবহৃত হয় ফ্যাসিবাদী সরকারের খায়েশ পুরণে। এরূপ নতজানু আদালতের রায়কে মান্যতা দেয়াও বস্তুতঃ আরেক নৈতিক অপরাধ। এবং সে অপরাধটি করতে জনগণকে তখন বাধ্য করে ফ্যাসিবাদী সরকার। আদালতের রায় যত ন্যায়বিচার-বিবর্জিত হোক না কেন -সে রায় মেনে নেয়াকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার নসিহতও শোনানো হয়। এবং সেরূপ গর্হিত কাজ যেমন ভারতে হচ্ছে তেমনি বাংলাদেশেও হচ্ছে। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট এভাবেই ব্যবহৃত হয়েছে দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সর্বসম্মতিতে গৃহিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বিলুপ্ত করার ন্যায় এক বিবেক-বিবর্জিত কাজে। কারণ স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার ভোট ডাকাতিকে সহজ করার জন্য সেটি জরুরী ছিল। ভারতেও একই ভাবে আদালত ব্যবহৃত হলো বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ন্যায় অতি অসভ্য কাজকে জায়েজ করতে।

অথচ রাজনৈতিক ময়দানে  বিগত ২৭ বছরেও কোন সরকারের পক্ষেই এরূপ গর্হিত কর্মকে জায়েজ করা সম্ভব হয়নি। এমন কি নব্বইয়ের দশকে বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকারও পারেনি। কারণ রাজনীতিতে একটি লজ্জাশরমের ব্যাপার থাকে। সে সাথে নৈতিক দায়বদ্ধতার বিষয়ও থাকে। ফলে বিজিপি ও তার অঙ্গসংগঠনগুলি ১৯৯২ বাবরি মসজিদ মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারলেও পরবর্তী কোন সরকার থেকেই সে অপরাধ কর্মের পক্ষে বৈধতা আদায় করতে পারেনি। ফলে মসজিদের ভূমিতে মন্দির নির্মাণের এজেন্ডাও সফল হয়নি। গুজরাতে মুসলিম গণহত্যার নায়ক নরেন্দ্র মোদির বিজয়টি এক্ষেত্রে বিশাল। তার শাসনামলেই নিজের ও তার সঙ্গিদের হাতে সংঘটিত মসজিদ ধ্বংসের ন্যায় এক গুরুতর অপরাধকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের দিয়ে বৈধ করে নেয়া হলো।

অথচ মসজিদ ধ্বংসের বিষয়টি ছিল পুরাপুরি একটি ফৌজদারি অপরাধের বিষয়। দেশে আইনের শাসন থাকলে, কোন ফৌজদারি অপরাধই শাস্তি এড়াতে পারে না। কিন্তু ভারতের আদালতে সে অপরাধের কোন বিচারই হলো না। দেশে আইনের শাসন কতটা অনুপস্থিত এ হলো তারই প্রমাণ। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টিকে অপরাধের বিষয় রূপে না দেখে সেটিকে হিন্দু-মুসলিমদের মাঝে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ রূপে খাড়া করেছে। বিচারও করেছে স্রেফ সে গন্ডির মধ্যে থেকে। সে বিরোধ মিটাতে গিয়ে এক দিকে যেমন মসজিদ ধ্বংসের গুরুতর অপরাধকে লঘু করে সেটিকে জায়েজ বা গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করেছে, তেমনি মুসলিমদের ঘুষ দিয়ে তুষ্ট করার চেষ্টাও হয়েছে। সেটি করতেই মসজিদের পবিত্র ভূমিতে মন্দির করার অনুমিত দিয়ে অন্যত্র ৫ একর ভূমি মুসলিমদের দেয়ার প্রস্তাব রেখেছে। কিন্তু ন্যায় বিচার তো কখনোই এভাবে হয়না। একটি মসজিদকে যে গুড়িয়ে দেয়া হলো সে অপরাধের শাস্তি কোথায় গেল? আদালত যদি মনে করে, বাবরি মসজিদের ভূমিতে শুরুতেই মন্দির ছিল; তবে আবার ৫ একর জমি দেয়ার প্রয়োজন পড়লো কেন? অন্য দিকে আদালত যদি মনে করে মসজিদের নীচে মন্দিরের কোন প্রমাণ নাই এবং মসজিদটি তার নিজস্ব ভূমিতেই ছিল -তবে কেন সেখানে মন্দির নির্মিত হবে?  ৫ একর জমি দেয়ার কারণটি কি তবে মসজিদের জমিটি মন্দিরে জন্য গুন্ডামী করে কেড়ে নেয়ার মূল্য? এটি তো বিচারের নামে দুর্বৃত্তি। মুসলিমগণ সে দুর্বৃত্তিকে বিচারের নামে মেনে নিবে কেন?     

 

ভেসে গেছে সেক্যুলার দলগুলিও

ভারতের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও বিগত ২৭ বছরে আমূল পরিবর্তন এসেছে। তারাও মসজিদ ধ্বংসের ন্যায় অসভ্য কুকর্মকে ঘৃণা করার সভ্য চেতনাটি হারিয়ে ফেলেছে। ভারতীয় কংগ্রেস, উত্তর প্রদেশের সমাজবাদি দল, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, দলিতদের দল বহুজন সমাজ পার্টি, তামিলদের দল তেলেঙ্গু দেশম পার্টির ন্যায় সংগঠনগুলি যারা এতদিন নিজেদের সেক্যুলার রূপে পরিচয় দিয়েছে তারাও বিজিপি,আর.এস.এস, শিব সেনা, বিশ্বহিন্দু পরিষদ, বজরং দলের গুন্ডাদের সাথে সুর মিলিয়ে মসজিদের ভিটাতেই মন্দির নির্মাণকে সমর্থণ দিচ্ছে্। অথচ ১৯৯২ সালে যখন বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয় তখন অবস্থা এমনটি ছিল না। তখন সে ঘটনাকে নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস দলীয় প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাও। নিন্দার পাশাপাশি তিনি এ ওয়াদাও দিয়েছিলেন, সরকার আবার সেখানে বাবরি মসজিদ নির্মাণ করবে। সে প্রতিশ্রুতি যে স্রেফ মুসলিমদের শান্ত করার লক্ষ্যে ছিল -তা নিয়ে কি আদৌ সন্দেহ থাকে? ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে সংঘটিত এ অপরাধগুলি নিছক বর্বরতা নয়, নৃশংস প্রতারণাও। সে প্রতারণা যেমন ২৭ বছর আগে করা হয়েছিল, তেমনি আজও হচ্ছে।  লক্ষণীয় হলো, যে নাশকতাটি ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের কাছে ফৌজদারি অপরাধ রূপে গণ্য হয়েছিল -সে অপরাধ রুখতে ঘটনাস্থলে কোন পুলিশ আসেনি। যে অপরাধকে ১৯৯২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও নিন্দা করলেন, সে অপরাধ দমনে তার কেন্দ্রীয় সরকারও কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। সে অপরাধের সাথে যারা জড়িত ছিল তাদেরকে কোন রূপ শাস্তিও দেয়নি। এবং আদালতও বিগত ২৭ বছরে তার চরিত্র হারিয়েছে। যে আদালতে মসজিদ ভাঙ্গার অপরাধটি একটি ফৌজদারি মামলা রূপে গৃহিত হয়েছিল, সে আদালতই সহিংস গুন্ডামীর মাধ্যমে যারা মসজিদ ভাঙ্গলো তাদেরকে ৯ নভেম্বরের রায়ে পুরস্কৃত করলো।

 

অপরাধে সংশ্লিষ্ট হলো আদালতও

ভারতে অহরহ যা কিছু হচ্ছে তা সভ্য রীতি-নীতি থেকে বহু দূরে। কোন ভূমির উপর যদি মসজিদের ন্যায় পবিত্র একটি ইমারত থাকে এবং তা নিয়ে যদি আদালতে মামলা থাকে -তবে সে বিতর্কে সংশ্লিষ্ট একটি পক্ষের কি এ অধীকার থাকে যে বিতর্কিত মসজিদটিকে তারা গুন্ডামী করে ভেঙ্গে দিবে? তারপর মসজিদের ভিটায় মন্দির নির্মাণের দাবী তুলবে? এবং মসজিদ ভাঙ্গার কিছু দিন পর দেশের সুপ্রিম কোর্টও সেখানে মন্দির নির্মাণের অনুমতি দিবে? কোন সভ্য সমাজে কি এমনটি ভাবা যায়? এসব তো নিরেট গুন্ডাতন্ত্রের কথা। এরূপ ক্ষেত্রে যে কোন সভ্য দেশেই সরকার ও আদালতের দায়িত্বটি বিশাল। এক্ষেত্রে আদালতের দায়িত্বটি ছিল, বাবরি মসজিদের ভূমিটি কি আদৌ রামের জন্মভূমি তা নিয়ে নিরপেক্ষ ফয়সালা দেয়া। এবং ভারতের সরকার ও তার পুলিশ বাহিনীর  দায়িত্ব ছিল, আদালতের সে ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত বাবরি মসজিদকে নিরাপত্তা দেয়া। যে সভ্য সমাজের সেটিই তো রীতি। কিন্তু বাবরি মসজিদের ক্ষেত্রে সে সভ্য রীতি আদৌ মানা হয়নি। আদালতের ফয়সালা ছাড়াই একটি পক্ষকে আইন নিজ হাতে নিতে দেয়া হয়েছে। পরে আদালত নিজেই অপরাধীদের পদাংক অনুসরণ করেছে। তাই ১৯৯২ সালে মসজিদ ভাঙ্গার গুন্ডামীটি যে গুরুতর অপরাধ ছিল – আদালত সে বিষয়টি সে সময় মেনে নিলেও ৯ ই নভেম্বরের রায়ে সেটিই ঘোষিত হয়েছে যা অপরাধীগণ সব সময় চেয়ে এসেছে। ফলে সুপ্রিম কোর্টের এ রায়ের মধ্য দিয়ে বিচারকদের গুন্ডা-তোষণ নীতিই সুস্পষ্ট হয়েছে। আদালতের বড় ব্যর্থতা হলো, মসজিদ ভাঙ্গার ফৌজদারি অপরাধের মামলাটি বিগত ২৭ বছর যাবত ঝুলে থাকলেও সে অপরাধের জন্য কোন অপরাধীকেই শাস্তি দেয়া হয়নি। প্রশ্ন হলো, তবে কি অপরাধীদের পুরস্কৃত করার জন্যই মামলাটি নিয়ে দীর্ঘকার গড়িমসি করা হচ্ছিল? অবশেষে রায়ে আইনের শাসনের বদলে গুন্ডাদের শাসনকেই বিজয়ী কর হলো। মসজিদর ভাঙ্গার পূর্বে উগ্রহিন্দুদের আস্ফালন ছিল, বাবরি মসজিদের স্থানেই মন্দির হবে। আদালত অবশেষে সে উদ্ধত আস্ফালনকেই পূরণ করলো। এরূপ অবস্থায় মুসলিমগণ কাদের কাছে বিচার চাইবে? তাদের নিজেদের জানমাল এবং মসজিদ-মাদ্রাসারই বা কীরূপে নিরাপত্তা পাবে?      

বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা হলো এ যুক্তিতে যে, মসজিদটি গড়া হয়েছিল রামের জন্ম ভূমিতে। প্রশ্ন হলো, কোথায় এবং কোন বছরে রামের জন্ম -সে বিবরণ কি কোথাও কোন কিতাবে লেখা আছে? সেটি কোথাও নাই। অনেকের মতে রামের ধারণাটিই হলো গনেশের নাক বা ঋষিদের রথে চড়ে আকাশে উড়ার মত পৌরাণিক কল্প -কাহিনী মাত্র। বাস্তবে কোন রাম অযোধ্যায় জন্ম নেয়নি। তার নামে কোন মন্দিরও ছিল না। বাবরি মসজিদের জমির পরিমাণ ২.৭ একর। কথা হলো, এত বড় বিশাল জমির উপর রামের জন্ম হলো এবং সেখানে একটি বিশাল মন্দির নির্মিত হলো –এরূপ এক বিশাল কাজ ভারতীয় ইতিহাস থেকে বিলুপ্ত হয় কি করে? তাছাড়া বাবরি মসজিদ তো নির্মিত হয়েছিল ১৫২৮ সালে। ভারতে ইতিহাস লেখার কাজের শুরু তারও বহুশত বছর আগে থেকে। হিন্দুদের দাবী সত্য হলে বাবরি মসজিদ নির্মিত হওয়ার পূ্র্বে এ বিশাল ভূমিতে রামের নামে বিশাল ও গুরুত্বপূর্ণ মন্দির থাকার কথা। সে বিশাল মন্দির ভাঙ্গার কর্মটিও তো ইতিহাসে স্থান পাওয়ার কথা।  কিন্তু আদালতে হিন্দুগণ এরূপ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোন প্রমাণই পেশ করতে পারিনি। তাছাড়া জমির মালিকানা নিয়ে কোন বিরোধ থাকলে সে বিষয়টির নিষ্পত্তি হওয়া উচিত ছিল মসজিদটি ভাঙ্গার বহু পূর্বেই। সভ্য সমাজে সে নিষ্পত্তি করার জন্য তো আদালত। কিন্তু ভারতে সেটিও হয়নি। লক্ষণীয় হলো, মসজিদ ধ্বংসের লক্ষ্যে প্রতিটি অপরাধ ঘটানো হয়েছে ধাপে ধাপে এবং পরিকল্পনা মাফিক। প্রথমে মসজিদের ভূমিতে রামের জন্মভূমির মিথ্যাচার, এরপর ১৯৪৯ সালে মসজিদে মুর্তি রেখে অপবিত্রকরণ। এরপর ১৯৯২ সালে মসজিদের বিনাশ। এবং ২০১৯ সালে এসে দেশের সুপ্রিম কোর্ট থেকে মন্দির নির্মাণের পক্ষে রায় লাভ। কথা হলো, মসজিদ না ভাঙ্গলে কি ঐ স্থানে মন্দির বানানোর জন্য আদালত অনুমতি দিতে পারতো? এবং রাম জন্মভূমির মিথ্যা না ছড়ালে কি মসজিদ ভাঙ্গার কাজে লাখ লাখ হিন্দুদের জড়ো করা যেত?

বাবরী মসজিদ ধ্বংসের বর্বরতাটি বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। এ বর্বরতার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেল ভারতীয় হিন্দুদের মুসলিম বিরোধী অসভ্য ও সহিংস মনের আসল রূপটি। ভারতে এরূপ ঘটনা যেমন এই প্রথম নয়, শেষও নয়। যারা হাজার হাজার মুসলিম নর-নারী ও শিশুদের উৎসবভরে হত্যা করতে পারে, মুসলিম শিশুদের আগুনে ফেলতে পারে, মুসলিম নারীদের উপর গণধর্ষণ করতে পারে এবং গরুর গোশতো খাওয়ার সন্দেহে মুসলিমদের পিটিয়ে হত্যা করতে পারে -তাদের কাছে ইট-পাথরের প্রাণহীন মসজিদ গুড়িয়ে দেয়াটি মামূলী ব্যাপার মাত্র। ভারতীয় মুসলিমদের মাথার উপর কীরূপ ভয়াবহ বিপদ -সেটি বুঝতে কি এরপরও কিছু বাঁকি থাকে?  তাছাড়া বিষয়টি শুধু বিজিপি, আর. এস. এস, বিশ্ব হিন্দুপরিষদ, শিব সেনা বা বজরং দলেরও নয়। সে ভয়ানক মুসলিম বিদ্বেষ ঢুকেছে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতীয় হি্ন্দুদের চেতনায়। ফলে নির্বাচনে বিজয়ী হচ্ছে মসজিদ ভাঙ্গায় অংশ নেয়া দলগুলি। 

 

ভারত জুড়ে অক্ষত হিন্দু মন্দির ও অহিংস মুসলিম নীতি

ভারতে ইতিহাসের পাঠটি কখনোই নিরেপক্ষ ভাবে দেয়া হয় না। ব্রিটিশ আমল থেকেই ইতিহাস পাঠ হয়েছে মুসলিমদের ভিলেন রূপে দেখানোর জন্য। নিরপেক্ষ বিচার হলে প্রকাশ পেতো  ভারতে মুসলিম শাসন অন্যান্য দেশ ও সভ্যতার তুলনায় কতটা অহিংস ও উন্নত ছিল। মুসলিম বাদশাহগণ নিজেদের মাঝে যতই ঝগড়া-বিবাদ বা লড়াই করুক না কেন ভারতীয় হিন্দুদের নির্মূলে তারা কখনোই হাত দেয়নি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ইতিহাসের দিকে নজর দিলে ভারতে মুসলিম শাসনের এ শ্রেষ্ঠ দিকটা অবশ্যই নজরে পড়ার মতো। অথচ জাতি, বর্ণ ও ধর্মভিত্তিক গণনির্মূল মানব ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। কোটি কোটি মানুষ সে নির্মূল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ইতিহাস থেকে হারিয়ে গেছে। স্পেন এবং পর্তুগালে গেলে মনেই হবে না যে, সেখানে মুসলিমগণ ৭ শত বছর শাসন করেছিল এবং ইউরোপীয়দের সভ্যতর করতে মুসলিমদের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এবং ভারতের দিকে তাকালেও মনে হবে না যে এখানে বৌদ্ধদের রাজত্ব ছিল। খৃষ্টান শাসকগণ যেমন ইউরোপ,আমেরিক ও অস্ট্রেলিয়া থেকে অখৃষ্টান আদিবাসীদের নির্মূল করেছে, হিন্দুগণও তেমনি ভারত থেকে বৌদ্ধদের নির্মূল করেছে। কিন্তু মুসলিম শাসন আমলে এরূপ কোন বর্বরতা ঘটেনি। মুসলিম শাসনামলে ভারতে হিন্দু নির্মূলে গণহত্যা হয়েছে –ইতিহাসে সে প্রমাণ নাই। তাদের হাতে নির্মূল হয়েছে এমন কোন হিন্দু প্রতিষ্ঠানের কোন দৃষ্টান্ত নাই। ফলে ভারতের শতকরা ৮০ জনগণই হিন্দু থেকে গেছে; অক্ষত থেকে গেছে তাদের মন্দিরগুলিও। এবং সাত বছর শাসন করেও মুসলিমগণ রয়ে গেছে সংখ্যালঘু। অথচ রোমান সম্রাট কন্সটান্টাইন চতুর্থ শতাব্দীর গোড়ায় খৃষ্টান ধর্ম গ্রহন করে তার সাম্রাজ্যের সবাইকে জোর করে খৃষ্টান বানায়। রাশিয়ার জারও সেটিই করেছে।

তাছাড়া কোন ধর্মের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি ভাঙ্গা কি কোন সভ্য কর্ম? অমুসলিমদের উপাসনালয় ভাঙ্গা দূরে থাক, তাদের উপাস্যদের গালি দেয়াও ইসলামে নিষিদ্ধ। নবীজী (সাঃ)র হাদীস, অমুসলিমের দেবদেবীকে গালি দিলে তারাও মুসলিমদের মহান আল্লাহকে গালি দিবে। ইসলামে মসজিদ গড়া একটি পবিত্র কর্ম। এবং এ কাজটির মধ্যে থাকে মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করার পবিত্র প্রেরণা। এমন পবিত্র প্রেরণা নিয়ে কোন মুসলিম কি অন্য ধর্মের উপাসনালয় ধ্বংসের ন্যায় অপরাধে জড়িত হতে পারে? মুসলিমগণ শুধু ভারতই জয় করেনি, এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বহু দেশ জয় করেছে। সে সব দেশে অমুসলিমদের বিশাল বিশাল উপাসনালয় ছিল। তারা যে সেগুলিকে ধ্বংস করেনি বা সেগুলির স্থলে মসজিদ গড়েনি তারই প্রমান হলো, ইস্তাম্বুল, জেরুজালেম, আলেকজান্দ্রিয়ার ন্যায় বহু শহরে বিশাল বিশাল গির্জা এখনো খৃষ্টান ধর্মের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভারতীয় মুসলিম শাসকগণ ভারত জুড়ে বহু শহরের পত্তন ঘটিয়েছে। সে সময় জনসংখ্যা কম হওয়াতে শহরের ভিতরে ও বাইরে বহু খালি জায়গাও ছিল। ফলে মোগলদের কি প্রয়োজন পড়লো যে, বিস্তর খালি জমি পড়ে থাকতে তারা মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ গড়বে? তাতে কি ছওয়াব পাওয়া যায়?

ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাস প্রায় ৭ শত বছরের। দীর্ঘকালীন এ মুসলিম শাসনের পরও ভারতে যত মসজিদ তার চেয়ে বহুগুণ হলো মন্দিরের সংখ্যা। মন্দির ভাঙ্গা লক্ষ্য হলে বহু আধা ভাঙ্গা, আংশিক ভাঙ্গা ও ক্ষতবিক্ষত মন্দিরও দেখা যেত। প্রশ্ন হলো, সারা ভারত জুড়ে যে অসংখ্য বিশাল মাপের পুরোন মন্দির এখনো বিদ্যমান -তার কোন একটিও কি আধা বা আংশিক ভাঙ্গা? কোন একটি মন্দিরের গায়েও দেখা যায় কি মুসলিমদের পক্ষ থেকে নিক্ষিপ্ত গোলা বা কামানের দাগ?

মুসলিমগণ ভারত শাসন করেছে হিন্দুদের সহযোগিতা নিয়ে। মানসিংয়ের ন্যায় মুসলিম শাসকদের দরবারে বহু হিন্দু যেমন জেনারেল হয়েছে, তেমনি মন্ত্রী এবং উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক অফিসারও হয়েছে। মুসলিম রাজপুত্রদের সাথে তারা নিজেদের কন্যাদেরও বিয়ে দিয়েছে। তাদের সে সহযোগিতার কারণেই মুসলিম শাসন দীর্ঘকাল স্থায়ী হতে পেরেছে। আরো লক্ষ্যণীয় হলো, ভারতের সম্পদ পূর্ব-পুরুষদের দেশে নিয়ে সেখানে তারা তাজমহল বা প্রাসাদ গড়েনি। যা কিছু করার তারা ভারতেই করেছে। ইংরেজদের ন্যায় ভারতকে তারা ঔপনিবেশিক কলোনী মনে করেনি, বরং নিজের দেশ মনে করেছে। এদেশের প্রতিরক্ষায় তারা প্রাণ দিয়েছে। প্রশ্ন হলো, মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ নির্মাণ করলে কি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনগণ কি মুসলিম শাসকদের সাথে সহযোগিতা করতো? অপর দিকে ভারতীয় হিন্দুদের নিজেদের কান্ডটিও চোখে পড়ার মত। হিন্দু রাজা শংকরাচর্যের আমলে ভারতীয় হিন্দুগণ বৌদ্ধ শাসনকেই শুধু নির্মূল করেনি, নির্মূল করেছে যেমন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের, তেমনি বিশাল বিশাল বৌদ্ধ মঠগুলিকে। প্রাণে বাঁচতে তাদেরকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায়, নেপাল, শ্রীলংকা ও বার্মায় পলায়ন করে।  

 

প্রকল্প মুসলিম-নির্মূল

ভারতীয় হিন্দুগণ অতীতে যেমন বৌদ্ধদের নির্মূল করেছে, এখন নির্মূল করতে চায় মুসলিমদের। ফলে তাদের লক্ষ্য শুধু মসজিদ নির্মূল নয়, মুসলিম নারী, পুরুষ এবং শিশু নির্মূলও। আর লক্ষ্য যখন নির্মূল-করণ, তখন তাদের কাছে মসজিদ বা মুসলিমদের বৈধ বা অবৈধ হওয়াটি কোন ব্যাপারই নয়। তাই বাবরি মসজিদ নিয়ে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের রায় শোনার মত ধৈর্য্য হিন্দুদের ছিল না। নরেন্দ্র মোদী যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী তখন ৩ হাজারের বেশী মুসলিম নর-নারী ও শিশুদের হত্যা করা হয়। জ্বালিয়ে দেয়া হয় মুসলিমদের শত শত ঘরবাড়ি ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। প্রশ্ন হলো, তারা কি গুজরাতে অবৈধ ছিল?

মুসলিম নির্মূলের লক্ষ্যে বিজিপি ও আর.এস.এস ঘরানার লোকেরা চারটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে্। একাজে তাদের অনুকরণীয় আদর্শ হলো ফ্যাসিস্ট হিটলার। হিটলারের ইহুদী নির্মূলের সফলতাটি আর.এস.এস নেতা সাভারকারের খুব ভাল লেগেছিল। সাভারকার ইহুদী বিদ্বেষ নাই। তার তীব্র বিদ্বেষটি স্রেফ মুসলিমদের বিরুদ্ধে। মুসলিম নির্মূলের লক্ষ্যে যে প্রকল্পগুলি ভারতে চলছে তা হলোঃ এক). দাঙ্গা বাধিয়ে মুসলিম নির্মূল, দুই). ন্যাশনাল রেকর্ড অব সিটিজেন (এন, আর.সি) প্রকল্পের নামে মুসলিমদের ভারতীয় নাগরিকের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া। ইতিমধ্যে আসামে ১৯ লাখ লোককে নাগরিকত্বহীন করা হয়েছে। একই প্রকল্প বাস্তবায়ীত করতে চায় সারা ভারত জুড়ে। পশ্চিম বাংলা বিজিপি’র সভাপতি দিলিপ ঘোষের দাবী, পশ্চিম বাংলার ২ কোটি মানুষ ভারতীয় নাগরিকের তালিকা থেকে বাদ পড়বে। এর অর্থ হলো, তাদের পাঠানো হবে বাংলাদেশে। তিন). মুসলিমদের হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করা। এটিকে তারা বলছে “ঘর ওয়াপসি” -যার অর্থ হলো হিন্দুধর্ম থেকে মুসলিম হওয়া মুসলিমদের আবার হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে নেওয়া। চার). কালচারাল কনভার্শন। এ প্রকল্পের অর্থ হলো হিন্দু ছেলে বা হিন্দু মেয়েদের সাথে বিবাহের মধ্য দিয়ে করে হিন্দু সংস্কৃতির সাথে মিশে যাওয়া।      

 

বাংলাদেশীদের দায়ভার

২০ কোটি ভারতীয় মুসলিমদের সামনে আজ তাই মহা দুর্দিন। তবে এ দুর্দিনের মোকাবেলা তাদের নিজেদেরই সচেষ্ট হতে হবে। আর সে জন্য অপরিহার্য হৃদয়ে পবিত্র কোর’আনের শিক্ষা নিয়ে নির্ভেজাল মুসলিম পরিচয় নিয়ে বেড়ে উঠা। মনে রাখতে হবে সেক্যুলারিজমে দীক্ষা নিয়ে মুসলিমদের রক্ষা নাই। একমাত্র মুসলিম হলেই আল্লাহর সাহায্য তখন অনিবার্য হয়। আর আল্লাহর সাহায্য পেলে তখন কি আর অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে? সংকট যতটি তীব্র হোক, মধ্যপ্রাচ্যের ধনকুবের রাজা-বাদশাহদের কাছ থেকে পাওয়ার কিছু নেই। তারা এ বর্বরতার নিন্দাও করবে না। বরং যে নরেন্দ্র মোদির হাতে হাজার হাজার মুসলিমের রক্ত তাকে সৌদি আরব দিয়েছে সে দেশটির সর্বোচ্চ খেতাব। এবং ভারতের অর্থনীতি মজবুত করতে বিনিয়োগ করেছে ২২ বিলিয়ন ডলার। আরব আমিরাতও লাগাতর সমর্থন করছে নরেন্দ্র মোদির কাশ্মিরে গণহত্যার নীতিকে। শুধু প্রতিবেশী রূপে নয়, মুসলিম রূপে বাংলাদেশীদের দায়ভারটি বিশাল। কারণ, ২০ কোটি ভারতীয় মুসলিমদের সংকটটি শুধু ভারতীয় মুসলিমদের নয়, বরং সেটি সমগ্র উপমহাদেশের মুসলিমদের সংকট। তাছাড়া ঠোট উড়ে গেলে দাঁতেও বাতাস লাগে। তাই ভারতের ২০ কোটি মুসলিম নির্মূল হলে বাংলাদেশের মুসলিমগণও নিরাপদে থাকবে না।

তাছাড়া এক মুসলিম তো আরেক মুসলিমের ভাই। তাই ঈমানদারি শুধু নামায-রোয, হজ্ব-যাকাত পালন নয়,  হৃদয়ে অন্য মুসলিমকে নিজের ভাই জ্ঞান করে তার কল্যাণে কিছু করাও। এ প্রসঙ্গে মাওলানা আবুল কালাম আযাদের একটি বিশেষ উক্তি অতি স্মরণযোগ্য। সেটি ছিল উসমানিয়ায় খেলাফতের বলকান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। তিন তাঁর নিজের সম্পাদিত “আল হেলাল” পত্রিকাতে লিখেছিলেন, “বলকানের রণাঙ্গনে যুদ্ধরত কোন তুর্কি মুসলিম সৈনিকের পা যদি গুলিবিদ্ধ হয়, আর তুমি যদি সে গুলির ব্যথা হৃদয়ে অনুভব না করো, তবে খোদার কসম তুমি মুসলিম নও।” এটিই তো খালেছ বিশ্বজনীন মুসলিম ভাতৃত্বের কথা। তাই প্রশ্ন হলো, মুসলিম ও মসজিদের নির্মূলে ভারতে যে নৃশংসতা চলছে তার ব্যথা যদি কোন বাঙালী মুসলিম হৃদয়ে অনুভব না করে তবে কি সে মুসলিম? মৃত মানুষ যেমন ব্যথা অনুভব করে না, মৃত ঈমানের মানুষও তেমনি অপর মুসলিম ভাইয়ের ব্যথা অনুভব করেনা। তবে এখানে বিষয়টি শুধু ব্যথা পাওয়া নিয়ে নয়, বরং অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ হলো সে বেদনা লাঘবে কিছু কাজ করা। বুঝতে হবে, ভারতীয় মুসলিমগণ শক্তিশালী হলে বাংলাদেশের মুসলিমগণও শক্তিশালী হবে।

তাছাড়া ভারতের তূলনায় বাংলাদেশ ছোট দেশ হলেও সন্ত্রাসী ভারতকে শিক্ষা দেয়ার বিস্তর সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশীদের হাতে। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের করিডোর। বাংলাদেশ হলো ভারতের অতি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। বহু লক্ষ ভারতীয় কাজ করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। ভারতের পণ্য বিদেশে যায় বাংলাদেশের বন্দর দিয়ে। ফলে বাংলাদেশীরা জেগে উঠলে ধ্বস নামবে ভারতের অর্থনীতিতে। কিন্তু সমস্যা হলো বাংলাদেশীরা নিজেরাই ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারের কারাগারে বন্দি। আর বন্দি মানুষ তো চোখের সামনে কাউকে ডুবে বা জ্বলে মরতে দেখলেও তাকে সাহায্যে করতে পারে না।

অথচ ১৭ কোটি স্বাধীন মানুষের সামর্থ্য তো বিশাল। কিন্তু সে সামর্থ্য তো কেড়ে নিয়েছে হাসিনার কারাগার। এবং এটি ভারতীয় স্ট্রাটেজীও। ভারত তার নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই হাসিনাকে দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশকে একটি কারাগারে পরিণত করেছে –যাতে বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রতিবেশী ভাইদের বাঁচাতে কিছু করতে না পারে। তাই ভারতের মুসলিম ভাইদের জন্য ঈমানী দায়িত্ব পালন করতে হলে বাঙালী মুসলিমদের প্রথমে নিজ দেশের ফ্যাসিস্ট সরকারের কারগার থেকে মুক্তি পেতে হবে। ২৩/১১/২০১৯ (নিবন্ধটি লেখা হয় লন্ডনে আলেমদের এক সমাবেশে পেশের জন্য।)     

  

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *