ভোটডাকাতদের এই স্বর্গভূমিতে আবারো ভোটডাকাতি হবে
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on June 23, 2023
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
ইজ্জত দেয়না গণরায়কে কখনোই
গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় ফায়দাটি হলো, এতে জনগণের রায় ইজ্জত পায়। কে শাসক হবে সেটি ভোট দিয়ে ঠিক করে খোদ জনগণ। কিন্তু জনগণের এরূপ ক্ষমতায়ন হোক এবং তাদের রায় ইজ্জত পাক -সেটি ভোটডাকাতগণ চায় না। তারা শুধু গণতন্ত্রের শত্রু নয়, তারা শত্রু জনগণেরও। জনগণের অধিকার ছিনিয়ে নিতেই তারা হামলা করে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পদ্ধতির উপর। হাসিনা সেরূপ একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখেই বিলুপ্ত করে দেয় দীর্ঘ রাজনৈতিক লড়াইয়ের মাধ্যমে অর্জিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা। এবং নির্মিত হয় জনগণের ভোটের উপর ডাকাতি কল্পে রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো। এভাবে অসম্ভব করা হয় হাসিনার পরাজয়। সেটিই দেখা গেছে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে। জনগণের ভোট হাইজ্যাক করে হাসিনা নিজেকে প্রতিষ্ঠা দেয় ফ্যাসিস্ট ফিরাউন রূপে।
সে দেশে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, বুঝতে হবে সে দেশে জনগণের রায়কে ইজ্জত দেয়া হয়। বুঝতে হবে, সে দেশের সরকারের কাছে জনগণের মর্যাদা আছে। কিন্তু সে সভ্য রুচি হাসিনার ন্যায় ভোটডাকাতদের থাকে না। তাই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জনগণের রায়কে হাসিনা ইজ্জত দেয়নি। তার গণদুশমনির নমুনা হলো, ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩ টি আসনে কোন ভোটকেন্দ্রই বসানো হয়নি। সে নির্বাচনে শতকরা পাঁচজন ভোটার ভোট দেয়নি। এরপরও হাসিনা ও তার নির্বাচনি কমিশন সেটিকে সুষ্ঠ নির্বাচন বলছে। অথচ দেশের সংবিধান বলে, নির্বাচনে জনগণের রায়দানকে নিশ্চিত করা। অথচ তেমন একটি ভোটারবিহীন নির্বাচনের দোহাই দিয়ে হাসিনা ৫ বছর ক্ষমতায় থাকে। এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণ ভোটদানের সুযোগই পায়নি; নির্বাচনের আগের রাতেই ডাকাতি হয়ে যায় তাদের ভোট। কোন সভ্য দেশে কি কখনো এমনটি হয়?
জনগণের রায়ের প্রতি ইজ্জত না দেয়াই যাদের নীতি তারা কি কখনো নিরপেক্ষ নির্বাচনে আগ্রহী হয়? এজন্য এটি সুনিশ্চিত যে, ৬ মাস পর আবারো ভোট ডাকাতি হবে। কারণ, ডাকাত সর্দারনী হাসিনা ভাল মানুষ হয়ে গেছে এবং জনগণের রায়কে ইজ্জত দিতে শিখেছে -সে প্রমাণ নাই। বরং আগামী নির্বাচনে ভোটডাকাতিতে সে যে অটল -সে প্রমাণ প্রচুর। হাসিনার কাছে নির্বাচন মানেই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ন্যায় ভোটডাকাতির নির্বাচন। ফলে যারাই ভোটডাকাতি প্রতিহত করার কথা বলছে তাদের বিরুদ্ধেই হাসিনা তীব্র স্বরে তিরস্কার করছে। বলা হয়, চোর শোনে না ধর্মের বানী। হাসিনার উপরও তাই কাজ দেয় না নিরপেক্ষ নির্বাচনের নসিহত।
ভোটডাকাতি প্রতিহত করা কি অপরাধ?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ না করলে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের ভিসা দিবে না। পৃথিবীর প্রতি দেশেই চুরিডাকাতি, ভোট ডাকাতি, বিরোধী দলকে দাবিয়ে রাখা এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে বাধা দেয়া গুরুতর অপরাধ। এরূপ অপরাধের শাস্তি দেয়ার সামর্থ্য বাংলাদেশের আদালতের নাই। কারণ দেশটির বিচারকগণ শাসক দলের চাকর-বাকর। সে সামর্থ্য যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থাকে তবে সেটির প্রয়োগে সভ্য মানুষ মাত্রই খুশি হবে। কারণ, বিশ্বের কোন দেশেই খুনি, ধর্ষক, চোরডাকাত ও সন্ত্রাসীদের ন্যায় ভোটডাকাতগণ তাদের অপরাধ কর্মের স্বাধীনতা পেতে পারে না। কোন সভ্য মানুষই তাদের পক্ষ নিতে পারে না।
সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মার্কিনী নীতিতে ক্ষতি কেবল হাসিনার ন্যায় ভোটডাকাতদের। হাসিনা এজন্যই এতোটা ক্ষেপেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। হাসিনা ক্ষেপেছে RAB ‘য়ের উপর স্যাংকশন দেয়াতেও। কারণ এতে তার গুম, খুন, অপহরণ ও আয়না ঘরের নির্যাতনের রাজনীতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অপর দিকে ভারত, চীন ও রাশিয়া যেহেতু তার ভোটডাকাতি ও ফ্যাসিবাদকে সমর্থণ করে -সে জন্য তাদের সাথে তার ঘনিষ্ঠ মিতালী।
হাসিনার এরূপ আচরণ থেকে বুঝা যায়, নিরপেক্ষ নির্বাচনের সে কত বিরোধী। এবং সুস্পষ্ট ভাবে বুঝা যায়, আগামী নির্বাচনে সে ভোট ডাকাতি করবেই। অথচ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের দাবী তো পৃথিবীর প্রতিটি সভ্য মানুষের। সভ্য মানুষ মাত্রই চায়, শুধু নিজ দেশে নয়, বিশ্বের সব দেশ থেকেই বিলুপ্ত হোক চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি ও গুম-খুনের রাজনীতি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা বিশ্বের অন্য কোন দেশ যদি বাংলাদেশে সুষ্ঠ নির্বাচন চায় -তাতে দোষের কি আছে? বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলিও তো সেটিই চাচ্ছে। এরূপ চাওয়ার মধ্যে অপরাধ কোথায়? কোন সভ্য মানুষের কি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ নির্বাচনে আপত্তি থাকে? আপত্তি থাকে তো তাদের যারা ভোটিডাকাতি চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোটডাকাত-বিরোধী অবস্থানকে হাসিনা বলছে , বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ। কথা হলো, ভোটডাকাতির ন্যায় গুরুতর একটি অপরাধ কর্ম থামানো যদি হস্তক্ষেপ হয়, তবে সেরূপ কল্যাণকর হস্তক্ষেপেই তো প্রতিটি সভ্য মানুষের কাম্য। দেশে দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প বা প্লাবন এলে বিদেশীদের সাহায্য নিতে আমরা কার্পণ্য করি না। তেমনি ভোটডাকাতি থামাতে অন্যদের সাহায্য নিলে দোষের কি?
যে অপরাধটি সবচেয়ে লাভজনক ও নিরাপদ
বাংলাদেশে সবচেয়ে লাভজনক অপরাধটি চুরিডাকাতি, অপহরণ, রাহাজানী বা সন্ত্রাস নয়, বরং সেটি হলো দেশবাসীর ভোটের উপর ডাকাতি। একমাত্র এ অপরাধের মধ্য দিয়ে সমগ্র রাষ্ট্র ও সকল রাষ্ট্রীয় সম্পদের মালিক হওয়া যায়। তখন দেশের পুলিশ, প্রশাসনের কর্মচারি, আদালতের বিচারক ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের চাকর-বাকরে পরিণত করা যায়। তাদেরকে দিয়ে জনগণকে পেটানো, বিরোধী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা ও নেতাদেরকে ফাঁসি দেয়া, মিটিং-মিছিল বন্ধ করা এবং শাপলা চত্তরের গণহত্যার ন্যায় গণহত্যা করিয়ে নেয়া যায়। জনগণকে পরিণত করা যায় জিম্মিত। ২০১৮ সালের ভোটডাকাতির মাধ্যমেই হাসিনা পরিণত হয়েছে এ যুগের ফিরাউনে। তবে পার্থক্য হলো, ফিরাউনের নির্যাতনের শিকার ছিল মূলত বনি ইসরাইলীগণ। কিন্তু হাসিনার নৃশংস বর্বরতার শিকার ১৮ কোটি বাংলাদেশী।
অন্য কোন অপরাধে ভোটডাকাতির মত লাভ নাই; বরং বিপদ অনেক। কারো গৃহে চুরি-ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়লে গণপিটুনিতে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নিহত হওয়া থেকে বাঁচলেও আদালতে শাস্তির ভয় থাকে। অথচ ভোটডাকাতিই হলো বাংলাদেশে সবচেয়ে বিপদমুক্ত অপরাধ। এ অপরাধে সামান্যতম বিপদের ঝুঁকি নাই। জনগণ যেহেতু ভোটডাকাতদের হাতে জিম্মি, ফলে ডাকাতদের বিরুদ্ধে কেউ পুলিশের কাছে নালিশ করার সাহস করে না। তাছাড়া পুলিশকেও তারা ডাকাত দলের সদস্য মনে করে। পুলিশ তো সেটাই করে -যা করতে ক্ষমতাসীন ডাকাত বাহিনী নির্দেশ দেয়।
ডাকাতেরাও যেদেশে সম্মানিত
সফল ভোটডাকাতি করতে পারলে ডাকাতদের প্রচুর ক্ষমতা ও ইজ্জত বাড়ে। সেটি বুঝা যায়, হাসিনার ন্যায় ডাকাতদলের সর্দারনীকে মাননীয় ও শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী বলা থেকে। দেশের পুলিশ-প্রধান ডাকাত দলের ক্ষমতাসীন প্রধানকে ভক্তিভরে স্যালুট দেয়। ভোট ডাকাতিতে সহযোগিতা করতে পেরে এমন কি সেনাপ্রধানও তা নিয়ে গর্বকরে -যেরূপ গর্ব বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব) আজিজের মধ্যে দেখা গেছে।
এমন কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত প্রফেসর ভোটডাকাতিকে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বলে বিবৃত্তি দেয়। প্রশ্ন হলো, অপরাধ যারা করে এবং অপরাধকে যারা সমর্থণ দেয় -তাদের মাঝে নীতিগত কোন পার্থক্য আছে কি? কোন বিবেকবান ব্যক্তি কি ডাকাতের পক্ষ নেয়?
সর্ববৃহৎ ডাকাতদলটি ভোটডাকাতদের
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ডাকাত দলটি ভোটডাকাতদের দল। যে কোন পেশার চেয়ে এ পেশায় উপার্জন বহুগুণ বেশী। ফলে এ দলের সদস্য সংখ্যাও বহু লক্ষ। ফলে তারা দেশজুড়ে ভোটডাকাতির সামর্থ্য রাখে। সারা জীবন সরকারি চাকুরি করেও হালাল বেতনের টাকায় ঢাকা শহরে একটি ফ্লাট বা এক কাঠা জমিও কেনা সম্ভব নয়। কিন্তু ভোটডাকাত দলের সদস্য হলে শুধু ঢাকাতে নয়, কানাডা, লন্ডন ও দুবাইয়ের মত স্থানে বিশাল বাড়ী কেনা যায়। এরূপ ডাকাতগণই কানাডায় বেগম পাড়া গড়ে তুলেছে। সন্তানদের এরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায়।
অতীতে চোরডাকাতগণ রাতের আঁধারে গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে মাঠ-ঘাট পাড়ি দিয়ে চুরিডাকাতি করতো। এখন সেটি করে না। তারা বরং শাসকদলের ডাকাত বাহিনীতে যোগ দেয়। আগেকার দিনে মানুষের গৃহে ডাকাতি করে বড় জোর কয়েক হাজার বা কয়েজ লাখ টাকা লুটতে পারতো। এখন লুট করে হাজার হাজার কোটি টাকা। কারণ, তাদের কবজায় দেশের রাজস্ব-ভান্ডার, ব্যাংকে জমা রাখা জনগণের সঞ্চয়ের অর্থ এবং সরকারি প্রকল্পের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা। এসব অর্থ থেকে হাজার হাজার কোটি ডাকাতি করে নিলেও বাধা দেয়ার কেউ নাই। ইসলামী ব্যাংক থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশী ডাকাতি করে নিলেও কারো এক দিনের জন্যও জেল হয়নি।
এ ডাকাত দলে যেমন আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র রাজনৈতিক দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী রয়েছে, তেমনি রয়েছে প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী, ও সেনা বাহিনীর বহু হাজার সদস্যগণ। নির্বাচনে কালে এসব বহু দলীয় ডাকাতদের একত্র দেখা যায়। সেটি যেমন ২০১৪ ভোটার বিহীন নির্বাচন এবং ২০১৮ সালে ভোটডাকাতির সময়ও দেখা গেছে। এজন্যই পুলিশ অফিসার, প্রশাসনিক , কর্মকর্তা বা বিচারকদের চোখের সামনে ভোটডাকাতি করলেও শাস্তি হয় না। কারণ, তারা জানে এসব ডাকাতেরা তাদেরই লোক। ফলে গ্রেফতার না করে বরং সহাযোগিতা করে।
যে কোন সভ্য দেশে শত বা হাজার টাকা ডাকাতি করলেও শাস্তি পেতে হয়। তাকে আজীবনের জন্য যে কোন সরকারি চাকুরির জন্য অযোগ্য হতে হয়। আদালতে এরূপ অপরাধীর সাক্ষি গ্রহণ করা হয় না। এসবই হলো ডাকাতির শাস্তি। করুণাময় মহান আল্লাহতায়ালার কাছে চুরি-ডাকাতি এতোই ঘৃণ্য যে তিনি চোরদের হাত কাটতে বলেছেন। কিন্ত বাংলাদেশে বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। চোর-ডাকাতদের শাস্তি না দেয়াই দেশের নীতি। তাই ভোটডাকাতির মাধ্যমে সমগ্র দেশ ডাকাতি করে নিলেও পুলিশ ডাকাতকে গ্রেফতার করে না। আদালতে তাকে শাস্তি দেয়া হয়না। ২০১৮ সালের দেশব্যাপী ভোটডাকাতি হলেও সে অপরাধে ভোটডাকাত হাসিনা ও তার ডাকাত দলের কাউকে কোন শাস্তি পেতে হয়নি।
সবচেয়ে বড় দুর্বৃত্ত
চুরি-ডাকাতি, গুম, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস -এসবই গুরুতর অপরাধ। কিন্তু এরূপ অপরাধের মধ্য দিয়ে সমগ্র দেশ ডাকাতি করে নেয়া যায় না। ব্যাংক, শেয়ার মার্কেট, ট্রেজারি ও নানা প্রকল্পের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ইচ্ছামত লুন্ঠন করা যায় না। এবং দেশবাসীকে গোলাম বানানো যায়না। কিন্তু সে সুযোগগুলি মেলে ভোটডাকাতির মাধ্যমে সমগ্র দেশ দখলে নেয়ার পর। এজন্যই ভোটডাকাতি হলো সবচেয়ে বড় দুর্বৃত্তি। এবং এ দুর্বৃত্তির নেত্রী হাসিনাই হলো বাঙালির সর্বকালের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুর্বৃত্ত। এমন নীতিশূণ্য ও বিবেকশূণ্য দুর্বৃত্তদের মাঝে জনগণের রায়কে ইজ্জত দেয়ার ভাবনা থাকে না। রোজ হাশরের বিচার দিন এবং জাহান্নামের আগুনে অনন্ত কাল জ্বলার ভয় তাদের উপর কাজ করে না।
আবারো ডাকাতি হবে ভোট
ছয় মাস পর আবার সংসদ নির্বাচন। সে নির্বাচনে জনগণের ভোট যে আবার ডাকাতি হয়ে যাবে -তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? যে জঙ্গলে আইন নাই এবং বিচার ও শাস্তির ভয় নেই সে জঙ্গলে চোর-ডাকাতেরা নির্ভয়ে বার বার চুরিডাকাতি করে। বাংলাদেশ তেমনি চোরডাকাতদের স্বর্গভূমি। এদেশে হাসিনার ন্যায় ভোটডাকাতের কিসের ভয়? যে দেশের জনগণ ডাকাত তাড়ায় না, ভোট ডাকাতি হয়ে গেলেও জনগণ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে না, পুলিশও ডাকাত ধরে না, এবং বিচারকরা ডাকাতির বিচার করে না -এমন দেশে ভোটডাকাতিতে বাধা কোথায়? ফলে হাসিনা কেন ডাকাতিতে নামবে না?
হাসিনা জানে, ভোটডাকাতি ছেড়ে দিলে তাকে অবশ্যই ক্ষমতাও ছাড়তে হবে। তখন অতীতের চুরিডাকাতি ও ভোটডাকাতির জন্য তাকে আদালতের কাঠগড়ায় উঠতে হবে। এ ঝুঁকি সে কেন নিবে?হাসিনা দুর্বৃত্ত বটে, তবে পাগল নয়। ফলে ভোটডাকাতি ছেড়ে দিয়ে কেন সে ক্ষমতা হারাবে?
স্বাধীনতার খরচ এবং বাংলাদেশীদের ব্যর্থতা
শান্তি, নিরাপত্তা ও ইজ্জত নিয়ে বাঁচার একটি খরচ আছে। এটিই মানব জীবনের সবচেয়ে বড় খরচ। অনেক সময় সে জন্য যুদ্ধে নামতে হয়। অর্থ, সময় ও রক্তের কুরবানী পেশ করতে হয়। চোর ধরতে হলে দৌঁড়াতে হয়। এবং ডাকাত ধরতে হলে লড়াইয়ের ঝুঁকি নিতে হয়। নিছক দোয়া দরুদ পাঠে সে কাজ হয়না। শুধু পানাহারে বাঁচায় তেমন খরচ নাই। ইতর পশুপাখি, জীবজন্তু ও পোকামাকড়েরাও পানাহারে বাঁচার সামর্থ্য রাখে। কিন্তু যারা শান্তি, নিরাপত্তা ও ইজ্জত নিয়ে বাঁচার খরচ জোগাতে পারেনা -তারাই চোর ডাকাতদের অধীনে গোলাম রূপে বাঁচে। বাংলাদেশের মানুষ গোলামীর এ পথটাই বেছে নিয়েছে। প্রতি যুগে এটিই ভীরু-কাপুরুষদের পথ। অথচ সভ্য দেশের মানুষেরা তাদের জনপদ থেকে শুধু হিংস্র বাঘ-ভালুকই তাড়ায় না, চোর-ডাকাত এবং ভোটডাকাতদেরও নির্মূল করে। নইলে সভ্য ও ভদ্র ভাবে বাঁচা যায় না। কিন্তু বাঙালির তাতে রুচি কই? সে লড়াই কই?
আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা ও শয়তানের এজেন্ডা
মহান আল্লাহতায়ালা চান তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানব সভ্য রাষ্ট্রের নির্মাণ করুক। তিনি চান, তারা বাঁচুক জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা নিয়ে। এবং চান, তাঁরা নির্মূল করুক দুর্বৃত্তির এবং প্রতিষ্ঠা দিক সুবিচারের। এটিই হলো মানব জীবনের সবচেয়ে বড় খরচের খাত। এটিই হলো মুসলিম জীবনের জিহাদ। এটিই হলো ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। এই ইবাদত পালিত না হলে হাজার হাজার মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করেও মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করা যায়না। মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা তো দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। জনগণের রায় ইজ্জত পেলে আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার কাজটি সহজ হয়ে যায়।
অথচ ভোটডাকাতির দুর্বৃত্তির মধ্য দিয়ে ঘটে উল্টোটি। এখানে বিজয়ী হয় শয়তানের এজেন্ডা। প্রতিষ্ঠা পায় দুর্বৃত্তি। শেখ হাসিনা তো সেটিই করেছে। কোন ঈমানদার তাই সেটি হতে দিতে পারে না। সর্বশ্রেষ্ঠ এ ইবাদতটি পালিত না হলে সভ্য ও স্বাধীন ভাবে বাঁচার কাজটি হয় না। এ ইবাদতে খরচ হয় বিপুল অর্থ, শক্তি, সময় ও রক্তের। সভ্য সমাজ বা রাষ্ট্র নির্মাণের এ ছাড়া ভিন্ন পথ নাই। অধিকাংশ মানুষ এ কাজে এগুয় না বলেই মহান আল্লাহতায়ালা এ কাজে সবচেয়ে বড় পুরস্কারটি রেখেছেন। এটিকে জিহাদের মর্যাদা দিয়েছেন। যারা এ জিহাদে নিহত হয় তারাই শহীদ হয়। তাদের জন্য পুরস্কার হলো, তারা বিনা হিসাবে সাথে সাথে জান্নাত পায়। ফলে জান্নাতের জন্য শহীদদের রোজ হাশরের বিচার দিন অবধি অপেক্ষা করতে হয়না।
কোন দেশে ভোট ডাকাতদের শাসন দেখেই বুঝা যায় সে দেশের মানুষ কতটা ভীরু, কতটা কাপুরুষ এবং কতটা দায়িত্বশূণ্য। তখন বুঝা যায়, সভ্য ভাবে বাঁচায় সেদেশের জনগণের রুচি নাই। এমন দেশেই ভোটডাকাতদের শাসন দীর্ঘায়ু পায়। এরূপ কাপুরুষেরা ভোটডাকাত হাসিনা ও তার ডাকাতদের হাতে চুরি-ডাকাতি, গুম, খুন, ধর্ষণ ও নির্যাতন মেনে নিতে রাজি, কিন্তু তার বর্বর শাসনের উৎখাতে লড়াইয়ে নামতে রাজি নয়। এমন ভীরুদের দেশে বার বার ভোটডাকাতি হলেও জনগণ রাস্তায় নামে না। কোন প্রতিবাদ মিছিলও হয় না। এমন দেশই হলো ভোটডাকাতদের স্বর্গপুরী। বাংলাদেশ হলো তেমনই একটি দেশ। এমন দেশের নাগরিকগণ কি ভোটডাকাতি থেকে বাঁচে?
প্রতিহত করতে হবে ভোটডাকাতিকে
কোন গ্রামে ডাকাতের হামলা হলে সে গ্রামের মানুষের প্রধান দায়িত্ব হয় ডাকাত নির্মূল। ডাকাত তাড়ানোর কাজটি সবার। তেমনি বাংলাদেশের বুক থেকে ভোটডাকাত তাড়ানোর কাজটি কোন একটি বিশেষ দলের নয়, এ কাজটি সব দলের। প্রতিটি সভ্য নাগরিকের। কিন্তু বাংলাদেশে কোথায় সেই একতাবদ্ধ লড়াই? কোথায় জনগণের মাঝে সে জাগরণ? বুঝতে হবে, শাসন ক্ষমতায় ভোটডাকাত দুর্বৃত্ত বসিয়ে কখনো গণতন্ত্র চর্চা হয়না। পূর্ণ ইসলাম পালনও হয় না।
বিএনপি’র নেতাগণ বলছেন, তথ্যবাধায়ক সরকার না হলে তারা নির্বাচনে অংশ নিবে না। জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় পার্টির নেতাগণও একি কথা বলছেন। কিন্তু তারা বুঝতে পারছেন না যে, নির্বাচনে তারা অংশ না নিলেও ভোটডাকাতদের ভোট ডাকাতি থেমে থাকবে না। এমন কি শতকরা ৫ ভাগ ভোটার ভোট না দিলেও সে নির্বাচনকে নির্বাচনি কমিশন সুষ্ঠ নির্বাচন বলার জন্য দুই পায়ে খাড়া। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তো সেটিই করেছে। ভারত, চীন এবং রাশিয়া এমন একটি ভোটারশূণ্য নির্বাচনকে সুষ্ঠ নির্বাচন বলার জন্য প্রস্তুত। কারণ, হাসিনার ক্ষমতায় থাকাতে তাদের স্বার্থ হাছিল হয়।
অথচ সুষ্ঠ নির্বাচন বলতে বুঝায় এমন এক নির্বাচন যাতে জনগণ যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দিতে পারে। এবং যারা এ নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে অংশ নিতে চায়, তাদের অংশ নেয়ার অধিকার থাকে। অথচ ভোটডাকাতদের পক্ষ থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে উভয় ক্ষেত্রেই। কারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে – হাসিনা সে অধিকারকে নিজ হাতে রাখতে চায়। মিথ্যা মামলা দিয়ে অনেক জনপ্রিয় প্রার্থীকে নির্বাচন কালে কারারুদ্ধ রাখতে চায়। নানা বাহানায় তারা অনেক ইসলামী দলের নিবন্ধনকে আটকে রাখতে চায়। এভাবে নির্বাচনকে অবাধ না করে নিয়ন্ত্রিত করতে চায়। লড়াই হতে হবে এরূপ নিয়ন্ত্রনের বিরুদ্ধে।
ভোটডাকাত হাসিনার লক্ষ্য, ভোটডাকাতি ও নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের উপর তার অবৈধ দখলদারীকে আরো ৫ বছরের জন্য নবায়ন করা। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, নাগরিক অধিকার পরিষদসহ সকল দলের টার্গেট হতে হবে ভোটডাকাতিকে যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করা। শুধু নির্বাচন থেকে দূরে থাকলে চলবে না, নির্বাচনকে বানচাল করতে হবে। বুঝতে হবে, হাসিনার অধীনে নির্বাচন মানেই ভোট ডাকাতি। বুঝতে হবে, হাসিনার অধীনে নির্বাচন মানেই নিরেট দুর্বৃত্তি।
বাংলাদেশের জনগণের ইজ্জত, আব্রু, নিরাপত্তা ও শান্তি এই ভোটডাকাত দুর্বৃত্তদের নির্মূলের সাথে জড়িত। বুঝতে হবে, অপরাধ করা যেমন অপরাধ, তেমনি গুরুতর অপরাধ হলো অপরাধকে সয়ে যাওয়া ও অপরাধীদের কাছে আত্মসমর্পণ করা। হাসিনার ভোট ডাকাতিকে প্রতিহত করতে ব্যর্থ হলে পাঁচ বছরের জন্য ঘাড়ের উপর নতুন করে চেপে বসবে ভোটডাকাতদের শাসন। তখন ফ্যাসিবাদী দুর্বৃত্তির শিকড় আরো গভীরে যাওয়ার সুযোগ পাবে।তখন ফ্যাসিবাদের পূজা জাতীয় সংস্কৃতিতে পরিণত হবে।
এটি আর গোপন নয় যে, হাসিনা যেমন ইসলাম, জনগণ ও গণতন্ত্রের শত্রু, তেমনি বন্ধু ও বিশ্বস্ত খলিফা হিন্দুত্ববাদী ভারতের। হাসিনার শাসন মানেই ভারতের শাসন। হাসিনার বিজয় মানেই ভারতের বিজয়। এজন্যই ২০১৪ ও ২০১৮ সালে হাসিনার বিজয় নিয়ে ভারত উল্লসিত হয়েছিল। ভারত চায়, আগামী নির্বাচনেও হাসিনা বিজয়ী হোক। এবং রাষ্ট্রের উপর থেকে বিলুপ্ত হলো জনগণের নিয়ন্ত্রণ। হাসিনার শাসন নির্মূলের লড়াই এজন্যই একটি পবিত্র জিহাদ। এ জিহাদ যেমন সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের, তেমনি মহান আল্লাহতায়ালার বিধানকে বিজয়ী করা ও বাঙালি মুসলিমের আজাদী প্রতিষ্ঠার। এ জিহাদ থেকে দূরে থাকার অর্থ মহান আল্লাহতায়ালার সাথে গাদ্দারী। তাতে পরাজিত হবে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা। বাংলাদেশের মত একটি মুসলিম দেশে এ রকম গাদ্দারী হতে থাকলে একমাত্র শয়তান ও তার অনুসারীরাই বিজয়ী হবে। তখন উল্লাস বাড়বে দিল্লির হিন্দুত্ববাদী শাসক মহলে। শয়তানী শক্তির ঘরে এরূপ বিজয় তুলে দেয়ায় দেশবাসীর জীবনে আসবে মহান আল্লাহতায়ালার আযাব। বাংলাদেশ তখন বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পাবে দুর্বৃত্ত-অধিকৃত এক অসভ্য রাষ্ট্র রূপে। যার মধ্যে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে সে কি কখনো নিজ দেশের এরূপ অবমাননাকর পরিণতি মেনে নিতে পারে? ২৩/০৬/২০২৩
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018