ভোটদান কি চোর-ডাকাতদের নির্মূলে না বিজয়ে?
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on December 25, 2018
- বাংলাদেশ
- No Comments.
যে আযাব দুর্বৃত্তদের বিজয়ী করায় –
সমাজের সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ স্রেফ খুন-খারাবি, চুরি-ডাকাতি, সন্ত্রাস বা ব্যভিচারী নয়। বরং ভয়ানক অপরাধ হলো সত্য ও ন্যায়ের প্রতিপক্ষ হওয়া এবং মিথ্যা, অন্যায়, স্বৈরাচার ও জুলুমের পক্ষে খাড়া হওয়া। গুরুতর অপরাধ এখানে মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহাত্মক যুদ্ধের। যে সমাজে এমন মানুষের সংখ্যা বেশী -সে সমাজে ফিরাউনের মত দুর্বৃত্তগণও ভগবান রূপে প্রতিষ্ঠা পায়। এবং শাপ-শকুন, গরু-ছাগল এবং মুর্তিও তখন দেবতা রূপে পূজা পায়। হিটলার, নরেন্দ্র মোদী, শেখ মুজিব এবং শেখ হাসিনার ন্যায় খুনী ও নৃশংস স্বৈরাচারীগণও তখন রাজনীতির অঙ্গণে অনুসারি পায় এবং নির্বাচনে দাঁড়ালে ভোটও পায়। রোগাগ্রস্ত একটি সমাজের এটিই হলো আলামত। রাজনীতি তখন জুলুমের হাতিয়ারে পরিণত হয়। অথচ মুসলিম জীবনের মিশন হলো, “আমারু বিল মা’রুফ ও নেহী আনিল মুনকার” অর্থঃ “মা’রুফ বা ভাল কাজের প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায়ের নির্মূল”।
পাড়ায় আগুন লাগলে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকাটি পাপ। তেমনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলো, দেশ অপরাধীদের হাতে অধিকৃত হলে নীরব ও নিস্ক্রীয় থাকা। জিহাদ তখন সামর্থ্যবানদের উপর ফরজ হয়ে যায়। নীরব ও নিস্ক্রীয় থাকার পাপ যে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুত আযাব ডেকে আনে -সেটিই ইতিহাসের গুরুত্পূর্ণ শিক্ষা। পবিত্র কোর’আনে সে হুশিয়ারিটি বার বার শোনানো হয়েছে। ফলে সে অপরাধের ঘটনাটি গণহারে ঘটলো অথচ আযাব আসলো না –সচরাচর তেমনটি ঘটে না। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের এরূপ পাপের কারণে রাষ্ট্র অধিকৃত হয় জালেম দুর্বৃত্তদের হাতে। তখন আযাব অনিবার্য হয় জনগণের উপর। বাংলাদেশীগণ তাই রেহাই পায়নি ১৯৭০‘য়ে শেখ মুজিবের ন্যায় ইসলামে অঙ্গিকারশূণ্য বাকশালী স্বৈরাচারী এবং ভারতীয় চরকে নির্বাচিত করার শাস্তি থেকে। তখন ভোটদানের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন জালেম শাসকের পাপের সাথে বেড়েছে জনগণের সংশ্লিষ্টতা। ফলে তাদের উপর এসেছে যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ। এসেছে ভারতীয় পদসেবার রাজনীতি, লুণ্ঠন ও দাসত্ব। এবং পানি শূণ্য হয়েছে বাংলাদেশের নদ-নদী। শাস্তি এসেছে শেখ হাসিনার ন্যায় স্বৈরাচারীকে বিজয়ী করাতেও। ফলে এসেছে শাপলা চত্ত্বর ও পিল খানার হত্যাকাণ্ড, এসেছে শেয়ার মার্কেট লুণ্ঠন এবং এসেছে ভোট-ডাকাতি, বাংক-ডাকাতি, সন্ত্রাস এবং গুম-খুনের রাজনীতি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ৫০ লাখের বেশী জার্মান নাগরিক নিহত হতে হয়েছে হিটলারের ন্যায় ফ্যাসিস্টকে নির্বাচিত করার পাপে। সে সাথে বিধ্বস্ত হয়েছে জার্মানীর শতাধিক নগরী।
যারা খুন-খারাবি, চুরি-ডাকাতি বা পতিতাবৃত্তি করে -তাদের সংখ্যাটি প্রতি সমাজেই নগন্য। ফলে তাদের কারণে কোন সমাজ বা সভ্যতা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় না। অথচ রাষ্ট্র পরাজিত হয় বা ভেঙ্গে যায় এবং সভ্যতার বিনাশ ঘটে -অধিকাংশ মানুষের রাজনৈতিক পাপের কারণে। সেটি ঘটে জনগণ যখন মিথ্যা, দুর্বৃত্তি ও জুলুমের পক্ষ নেয়। পরকালে যে বিপুল সংখ্যক মানুষ কোটি কোটি বছরের জন্য জাহান্নামের আগুনে গিয়ে পৌঁছবে তাদের অধিকাংশই যে খুনি, চোর, ডাকাত, সন্ত্রাসী বা ব্যাভিচারি হবে -তা নয়। তাদের অধিকাংশই জাহান্নামের বাসিন্দা হবে সত্য ও ন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর কারণে। তাদের অপরাধটি এখানে স্বৈরাচারি দুর্বৃত্তদের পক্ষ নেয়ায়। ব্যর্থতাটি এখানে বিবেকমান মানুষ রূপে বেড়ে উঠায়। বস্তুতঃ বিবেকের সে পরীক্ষাটি প্রতি ব্যক্তিকে প্রতি মুহুর্তে দিতে হয়। মৃত্যু অবধি এ পার্থিব জীবনের প্রতিটি মুহুর্তই হলো পরীক্ষা-পর্ব। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে পবিত্র কোর’আনে সে ঘোষণাটি এসেছে এভাবে, “তিনি সেই মহান সত্ত্বা যিনি জীবন ও মৃত্যুকে সৃষ্টি করেছেন এজন্য যে তিনি পরীক্ষা করবেন কে আমলের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে উত্তম; তিনি সর্বশক্তিমান ও ক্ষমাশীল।” –(সুরা মূলক, আয়াত ২)। ফলে মহাপ্রজ্ঞাময় সে মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে অর্পিত সে পরীক্ষাকে অস্বীকার করায় কি কল্যাণ আছে? কল্যাণ তো সে পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ায়। নইলে রয়েছে জাহান্নামের আযাব। পরীক্ষার সে ভয়টি যখন চেতনার ভূবনে প্রতিষ্ঠা পায়, স্বৈরাচারি দুর্বৃত্তের পক্ষে ভোট দান দূরে থাকে, ঈমানদার মাত্রই তখন সে জালেমের নির্মূলে আমৃত্যু মুজাহিদে পরিণত হয়।
ঈমানের যে পরীক্ষাটি ভোটদানে
নির্বাচনে ভোটদানটি আদৌ কোন মামূলী বিষয় নয়। মানব জীবনে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভোটদানের মাধ্যমে ব্যক্তির ঈমান-আক্বীদা, বিবেক ও বিচারবোধ কথা বলে। তাই বেঈমান ও ঈমানদারের ভোটদান কখনোই একই রূপ হয় না। ব্যক্তির ঈমান শুধু নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাতে ধরা পড়ে না। ধরা পড়ে রাজনীতি ও ভোটদানেও। ভোটদান বস্তুতঃ মহান আল্লাহতায়ালার সামনে সাক্ষ্যদানের বিষয়। সাক্ষ্য দিতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার দুষমনকে দুষমন বলে এবং বন্ধুকে বন্ধু বলে। ফলে ভোটদানে মনের গোপন বিষয়টি সামনে বেরিয়ে আসে। তখন প্রকাশ পায়, কে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার পক্ষে রায় দিল এবং কে শয়তানের এজেন্ডা পূরণে ভোট দিল। ফলে ভোটদানের মধ্য দিয়ে ধরা পড়ে কে ঈমাদার আর কে বেঈমান। যদি ভোটদানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা পায় মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা -তবে বোধগম্য কারণেই সেটি এক বিশাল ইবাদত। কিন্তু যে ভোটদানে বিজয়ী হয় ইসলামের শত্রুপক্ষ এবং প্রতিষ্ঠা পায় শয়তানের এজেন্ডা –সেটি পরিণত হয় ভয়ানক এক কবিরা গুনাহ’তে। তাই ভোটদানের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। পরিতাপের বিষয় হলো, গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টিকে ছোট করে দেখার কারণেই নির্বাচন-কালে বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলিতে গণহারে কবিরা গুনাহর ন্যায় ভয়ানক পাপ সংঘটিত হয়। গুনাহর সে আয়োজনে মহা ধুমধামে নির্বাচিত হয় চিহ্নিত চোর-ডাকাত, ভোট-ডাকাত, খুনি, সন্ত্রাসী, স্বৈরাচারী এবং জালেম, ফাসেক, কাফের ও মুনাফিকের ন্যায় ইসলামের পরিচিত শত্রুগণ।
প্রশ্ন হলো, কোনটি মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা এবং কোনটি শয়তানের এজেন্ডা –সেটি কি এতোই অস্পষ্ট বা গোপন বিষয়? মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা তো তাঁর নিজ ভূমিতে নিজের সার্বভৌমত্বের প্রতিষ্ঠা। সেখানে প্রতিষ্ঠা পাবে একমাত্র তাঁরই নাযিলকৃত শরিয়ত ও হুদুদের আইন। প্রতিষ্ঠা পাবে শুরা, জিহাদ ও খেলাফতের ন্যায় ইসলামের মৌল বিধান। অপর দিকে কোথাও গোপন নয় শয়তানের এজেন্ডাও। শয়তানের এজেন্ডাটি হলো, মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্বের বদলে তার আজ্ঞাবহ রাজা-বাদশাহ, জনগণ, দল, পার্লামেন্ট ও দলীয় এমপি’দের সার্বভৌমত্বের প্রতিষ্ঠা। শয়তান চায়, মুসলিম জীবন থেকে শরিয়ত, হদুদ, শুরা, খেলাফত, জিহাদ ও ইসলামী শিক্ষ-সংস্কৃতির বিলুপ্তি। শয়তানের সে এজেন্ডা নিয়েই বাংলাদেশের রাজনীতিতে অতি সক্রিয় হলো প্রতিটি সেক্যুলারিস্ট, ন্যাশনালিস্ট ও সোসালিস্ট দল। এরাই হলো ইসলামের আত্মস্বীকৃত দুষমন এবং দেশী-বিদেশী কাফেরদের অতি পছন্দের দল। ফলে তাদেরকে বিজয়ী করতে যারা ভোট দেয় -তাদেরকে কি ঈমানদার বলা যায়? ইসলামের শত্রুদের বিজয়ী করার লক্ষ্যে এরূপ ভোটদান তো কবিরা গুনাহ। মুসলিম ভূমিতে এরূপ লাগাতর কবিরা গুনাহ হচ্ছে ইসলামের শত্রুদের নির্বাচিত করার মধ্য দিয়ে। গণহারে সে কবিরা গুনাহর কারণে মুসলিম ভূমিকে অধিকৃত করতে ইসলামের শত্রুদের কোন যুদ্ধই করতে হচ্ছে না।
প্রতিটি কর্ম এবং পথচলার প্রতিটি পদক্ষেপই ব্যক্তির জীবনে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নিয়ে হাজির হয়। জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচাটি নির্ভর করে সে অর্পিত পরীক্ষায় পাশের উপর। বিরামহীন সে পরীক্ষার মাঝে প্রতি মুহুর্ত বাঁচতে হয় কৃতকার্য হওয়ার চেতনা নিয়ে। মানব জীবনে সবচেয়ে বড় যোগ্যতাটি ধরা পড়ে সে পরীক্ষায় পাশের মধ্যে; ডিগ্রিধারী, অর্থশালী বা ক্ষমতাশালী হওয়াতে নয়। পেশাদারী সাফল্যে বিপুল অর্থ ও সুনাম জুটলেও সে কারণে কেউ জান্নাতে যাবে না। জান্নাতের পথে পরীক্ষার সিলেবাসটি যেমন ভিন্ন, তেমনি ভিন্ন হলো টেক্সট বুক। সে টেক্সট বুকটি হলো পবিত্র কোর’আন। এবং পরীক্ষার অঙ্গণটি স্রেফ নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত বা তাসবিহ-তাহলিলে সীমিত নয়। পরীক্ষা হয় রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, যুদ্ধ-বিগ্রহসহ জীবনের প্রতি অঙ্গণ জুড়ে। পরীক্ষা হয় নির্বাচনে ভোটদান বা রায়দানের ক্ষেত্রেও। স্বৈরাচারী জালেমের পক্ষে ভোটদানে যেমন ঈমানদারী নেই, তেমনি মানবতাও নাই।
জেনে বুঝে ট্রেনের নীচে মাথা দেয়াতে জীবন বাঁচে না। তেমনি ঈমান বাঁচে না ইসলামের চিহ্নিত শত্রুদের পক্ষে ভোট দিলে। বস্তুতঃ নির্বাচন কালে ঈমানের মূল পরীক্ষাটি হয় সঠিক পাত্রে ভোটদানে। হিদায়েতের গ্রন্থ রূপে পবিত্র কোর’আনের মূল মিশনটি হলো, জীবনের প্রতি অঙ্গণে পথ দেখানো। ফলে কোর’আনের জ্ঞানে ব্যক্তি পায় পরীক্ষা-পাশের সামর্থ্য। সে সামর্থ্যটি প্রকাশ পায় সত্যকে মিথ্যা থেকে পৃথক করায়। সে সামর্থ্যের বলেই ঈমানদার ব্যক্তি সত্যের পক্ষ নেয় এবং নির্বাচনে যোগ্যতম ব্যক্তিকে ভোট দেয়। এমন সামর্থ্যের কারণেই প্রাথমিক যুগের মুসলিমগণ খোলাফায়ে রাশেদার যোগ্য খলিফাদের পিছনে খাড়া হবার নৈতিক বল পেয়েছিলেন। অপরদিকে ব্যক্তির ঈমানশূণ্যতা এবং সে সাথে অযোগ্যতাটি ধরা পড়ে গুম-খুন ও স্বৈরাচারী রাজনীতির পক্ষে ভোট দানে এবং তাদের পক্ষে লাঠি ধরায়। ঈমানের এরূপ শূণ্যতা কি নামায-রোযা ও হ্জ্ব-যাকাতে পালনের মাধ্যমে দূর করা যায়? প্রশ্ন হলো, গুম-খুন ও স্বৈরাচারী রাজনীতির পক্ষে যারা ভোট দিল এবং লাঠি ধরলো দুর্বৃত্ত শাসকদের শাসন বাঁচাতে -তারা কি পরকালে জান্নাতের ধারে কাছেও ভিড়তে পারবে?
নবী-রাসূলদের মূল মিশনটি ছিল মানুষের মাঝে সত্যকে চেনা এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সামর্থ্য গড়ে তোলা। তাঁরা সেটি করেছেন ওহীর জ্ঞানের প্রতিষ্ঠা দিয়ে। ওহীর জ্ঞান অজ্ঞতার ঘোর অন্ধকারের মাঝে আলো দেখায়। পবিত্র কোরআন হলো ওহীর জ্ঞানের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ভাণ্ডার। অপরদিকে শয়তান ও তার অনুসারীদের মিশনটি সম্পূর্ণ বিপরীত। সেটি হলো, মিথ্যার প্রতিষ্ঠা এবং সত্যের বিলুপ্তি। এটিই মূলতঃ জাহান্নামের পথ। এ পথে প্রলুব্ধ করাতে শয়তানের মূল অস্ত্রটি হলো জাহিলিয়াত বা অজ্ঞতা। জাহিলিয়াত অন্ধকারে অসম্ভব হয় মহান আল্লাহতায়ালার নিদর্শনাবলীর দর্শনলাভ। অসম্ভব করে কোনটি ন্যায় এবং কোনটি অন্যায় -সেটি সনাক্ত করা। জাহিলী সমাজে এজন্যই নমরুদ, ফিরাউন, আবু জেহল, হিটলার, স্টালীন, ট্রাম্পের মত অতি দুর্বৃত্তদের জনগণ চিনতে ভূল করে এবং তাদেরকে নেতা নির্বাচিত করে। বাংলাদেশেও বস্তুত সেটিই হয়েছে। ফলে নৃশংস স্বৈরাচারি এবং গুম-খুন, ভোট-ডাকাতি, ব্যাংক-ডাকাতি ও সন্ত্রাসের নায়কগণও নির্বাচনে ভোট পায় এবং অনেক সময় বিপুল ভোটে নির্বাচিতও হয়।
চোর-ডাকাতগণ নিজেদের দুষ্কর্ম বাড়াতে রাতের অন্ধকারকে ভালবাসে। ইসলামের শত্রুগণও তেমনি ভালবাসে জাহিলিয়াতের অন্ধকারকে। তাই ক্ষমতায় গেলে তাদের এজেন্ডা হয়, পবিত্র কোর’আনের আলো নিভিয়ে দেয়া। তেমন একটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই পবিত্র কোরআনের জ্ঞানার্জন থেকে দূরে রাখা হচ্ছে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের। ফলে বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীগণ তাদের শিক্ষা জীবন শেষ করছে পবিত্র কোরআন থেকে কোনরূপ জ্ঞানার্জন না করেই। পাচ্ছে না কোরআন বুঝার সামর্থ্য। অথচ জ্ঞানার্জনের অঙ্গণে ইসলামে যেটি ফরজে আইন তথা নরনারীর উপর বাধ্যতামূলক তা ডাক্তারী, ইঞ্জিনিয়ারিং বা বিজ্ঞানের বিষয়ে জ্ঞানার্জন নয়, সেটি হলো পবিত্র কোর’আনের জ্ঞানার্জন। পবিত্র কোর’আনের জ্ঞানে অজ্ঞ থাকাটি তাই কবিরা গুনাহ। অথচ বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ছাত্র-ছাত্রীদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে কবিরা গুনাহর পাপ। ফলে অসম্ভব হচ্ছে প্রকৃত মুসলিম রূপে বেড়ে উঠা। ফলে মুসলিম সমাজে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ, হিসাববিদ বা বিজ্ঞানী সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না প্রকৃত মুসলিমের সংখ্যা। ফলে পরাজয় বাড়ছে ইসলামের। ফলে মুসলিম ভূমি অধিকৃত হচ্ছে শুধু বিদেশী শত্রুদের হাতেই নয়, বরং ভয়ানক দেশী শত্রুদের হাতে। নির্বাচনে ইসলামের শত্রুপক্ষের বিজয়ের এটিই হলো মূল বিপদ। তখন বার বার নির্বাচন করেও কোন লাভ হয়না।
যে বিশাল সামর্থ্যটি ভোটের
গণতন্ত্র ব্যক্তির সামনে বিপ্লবের এক বিশাল দরজা খুলে দেয়। গণতন্ত্র না থাকলে শাসন ক্ষমতা থেকে দুর্বৃত্তদের সরাতে অনিবার্য হয় রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধ। সেরূপ যুদ্ধে যেমন বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণনাশ হয়, তেমনি বিপুল আকারে সম্পদনাশও হয়। অথচ গণতান্ত্রিক দেশে দুর্বৃত্ত শাসন থেকে মুক্তির সে লড়াইটি যুদ্ধ ছাড়াই সম্ভব। সেটি নির্বাচনের মাধ্যমে। তবে সে বিপ্লবে যে যোগ্যতাটি অতি জরুরী সেটি হলো সুস্থষ্ঠ বিবেকবোধ ও বিচার ক্ষমতার। সে যোগ্যতাটি দুর্বৃত্ত ও মিথ্যুকদের চেনার। রণাঙ্গণের সামরিক যুদ্ধটি একজন অশিক্ষিত ভাড়াটে দুর্বৃত্ত সৈনিকও যে কোন পক্ষে লড়ে দিতে পারে। কিন্তু এমন দুর্বৃত্ত ব্যক্তি সত্যবাদী ও ন্যায়পরায়ন মানুষের পক্ষে কখনোই ভোট দিতে পারে না। কারণ, ন্যায়পরায়ন মানুষের পক্ষে ভোটদানের সে সামর্থ্যটি তার থাকে না। কারণ, সে জন্য চাই সত্যপ্রেম। চাই, দুর্বৃত্তদের ঘৃণা করার সামর্থ্য। সে সামর্থ্যের জন্য চাই আলোকিত মন। সর্বোপরি মনের ভূবনে চাই, ওহীর জ্ঞানপুষ্ট ঈমানের আলো। ফলে সে সমাজে জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলারিজম, বর্ণবাদ, গোত্রবাদের ন্যায় জাহিলিয়াতের প্লাবন, সে সমাজে সত্যবাদী ও ন্যায়পরায়ন ব্যক্তিগণ অজানা ও অবহেলিত থেকে যায়। তাদের পক্ষে বিজয় তখন অসম্ভব হয়।
নির্বাচনে ভোটদান এজন্যই মামূলী বিষয় নয়। প্রতিটি ভোটারের জীবনে এটি হাজির হয় অতি গুরুত্বপূর্ণ এক পরীক্ষা নিয়ে। পরীক্ষা হয়, চোর-ডাকাত, ভোট-ডাকাত, সন্ত্রাসী, স্বৈরাচারী ও খুনিদের ন্যায় ভয়ানক অপরাধীদের চেনার এবং তাদের পরাজিত করায় নিজের অর্থ, রক্ত, শ্রম ও সামর্থ্যের বিনিয়োগের। এটি মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারিত একটি পরীক্ষা। পরীক্ষা-কক্ষে প্রতিটি ব্যক্তিকে নিজের পরীক্ষা নিজে দিতে হয়। এখানে নকল চলে না। তাছাড়া এটি যেমন পরীক্ষার পথ, তেমনি জাতীয় জীবনে বিপ্লব সাধনের পথও। জাতীয় বিপ্লবের স্টিয়ারিং মহান আল্লাহতায়ালা এখানে প্রতিটি নাগরিকের হাতে দিয়েছেন। জাতিকে সামনে নিবে না পিছনে নিবে, ডানে নিবে না বামে নিবে বা থেমে থাকবে -সে সিন্ধান্ত নেয়ার দায়ভারটি তিনি জনগণকে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালার সুস্পষ্ট ঘোষণাটি হলো, “নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না -যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করে।” –(সুরা রা’দ, আয়াত ১১)। অনুরূপ ঘোষণা এসেছে সুরা আনফালেও। বলা হয়েছে, “বিষয়টি হলো, নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির উপর অর্পিত তাঁর নিয়ামতকে পরিবর্তন করেন না -যদি না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করে। আল্লাহ শ্রবনকারী এবং সর্বজ্ঞানী।” -(আয়াত ৫৩)।
হাসিনার অপরাধনামা এবং জনগণের দায়ভার
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন দু’টি পক্ষ। একটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের পক্ষ এবং অপরটি বিরোধী শিবিরের। ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি এখন আর গোপন বিষয় নয়। বিগত ১০ বছর যাবত জনগণ শেখ হাসিনার নৃশংস স্বৈরাচার স্বচোখে দেখে আসছে। তার ১০ বছরের শাসনে দেশ জুড়ে যা অতি প্রবলতর হয়েছে তা হলো গুম, খুন, চুরিডাকাতি, সন্ত্রাস, ধর্ষণের ন্যায় ভয়ানক অপরাধের রাজনীতি। বাংলাদেশের চোর-ডাকাতদের সবচেয়ে বড় সংখ্যাটি আজ কোন ডাকাত দলে নয়; বরং সেটি সরকারি দলে। কারণ সরকারি দলে থাকলে ব্যাংক-ডাকাতি, চুরি-ডাকাতির সুযোগ যেমন অধীক, তেমন সুযোগ থাকে বিচারের থেকে পলায়নের। এ সুযোগটি বেসরকারি চোর-ডাকাতদের থাকে না।
শেখ হাসিনার অপরাধের তালিকাটি বিশাল। তার সরকার কি প্রসব করতে পারে তা ইতিমধ্যেই দেখিয়ে দিয়ছেন। পুণরায় নির্বাচিত হলে সে অপরাধের তালিকাই আরো দীর্ঘায়ীত হবে। তার অপরাধের তালিকায় রয়েছে শাপলা চত্ত্বরের মুসল্লী হত্যা, পিলখানায় ৫৩ জন সামরিক অফিসার হত্যা, দুই বার শেয়ার মার্কেটে লুণ্ঠন, ২০১৪ সালের ভোট-ডাকাতি, গণতন্ত্র হত্যা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধি বিলু্প্তি এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে রাজনৈতীক প্রতিপক্ষ নির্মূলের ষড়যন্ত্রমূলক বিচার। তার আমলেই শত শত রাজনৈতীক নেতা-কর্মী যেমন নিহত হয়েছেন, তেমনি গুমও হয়েছেন। তার আমলেই রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সোনা তামা হয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে কয়লা খনির বহু হাজার টন মওজুদ কয়লা। তার মন্ত্রীদের দূর্নীতির কারণে বিশ্ব ব্যাংক তার বরাদ্দকৃত অর্থ তুলে নেয় পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে। অথচ সেটি না হলে পদ্মা সেতুর উপর দিকে আজ গাড়ি চলতো। শেখ হাসিনা সম্প্রতি ওয়াদা দিয়েছেন, সামরিক অফিসারদের পরিবারের জন্য দিনরাত ২৪ ঘন্টা গাড়ি ব্যবস্থা করবেন। এ ঘোষণার লক্ষ্য, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সামরিক বাহিনীকে পকেটে রাখা। নির্বাচনকে সামনে রেখে এরূপ মূলা ঝুলানো যে কোন গণতান্ত্রিক দেশে বে-আইনী। শেখ হাসিনার চালবাজীটি এখানে সুস্পষ্ট। তিনি জানেন, সামরিক অফিসারদের তুষ্ট করতে বিশাল অংকের অর্থটি তার নিজ পকেট থেকে যাচ্ছে না। সেটি যাচ্ছে জনগণের রাজস্বের অর্থ থেকে। এটি হলো হাসিনার কইয়ের তেলে কই ভাজার কৌশল। জনগণের রাজস্বের অর্থে এটি হলো তার গদি বাঁচানোর ষড়যন্ত্র।
জনগণের ঘাড়ে এখন বিশাল দায়ভার। মানুষের বিবেক বা মনুষ্যত্ব ধরা পড়ে সত্য-মিথ্যা এবং ন্যায়-অন্যায়ে মাঝে পার্থক্য নির্ণয়ে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে বীরদর্পে দাঁড়ানোতে। বাঘ-ভালুক জঙ্গল ছেড়ে রাস্তায় নামলে সে হিংস্র জীবের বিরুদ্ধে দ্রুত রাস্তায় নামাটাই সভ্য মানুষের রীতি। নইলে সমাজে শান্তি বিনষ্ট হয়। সে বোধটুকু এমন কি ছাগল-ভেড়ার মাঝেও থাকে। ফলে তারা শুধু ঘাস-পানিই চেনে না, চেনে হিংস্র বাঘ-ভালুকদেরও। ফলে প্রাণ বাঁচাতে তারা সাধ্যমত দৌড়ায়। এবং স্বেচ্ছায় তারা আত্মসমর্পণ করে না। কিন্তু বহু মনুষ্যজীব ছাগল-ভেড়ার চেয়েও অধম। তাদের ব্যর্থতাটি শত্রু-মিত্র, ন্যায়-অন্যায়, সৎ ও দুর্বৃত্তের মাঝে পার্থক্য নির্ণয়ে। এদের কারণে মুসলিম ভূমিতে ইসলাম পরাজিত হয়; এবং প্রতিষ্ঠা পায় কাফের শক্তির অধিকৃতি। পবিত্র কোরআনে এমন ব্যর্থ মানুষদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, “উলাইয়িকা কা’আল আনয়াম, বাল হুম আদাল” অর্থঃ ওরাই হলো পশুর ন্যায়, বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্ট।
বাংলাদেশের বুকে এরূপ পশুবৎ মানুষদের সংখ্যাটি বিশাল। তাদের ব্যর্থতা যেমন মনুষ্যরূপী হিংস্র বাঘ-ভালুকদের চেনায়, তেমনি ঘৃণ্য কদর্যতাটি হলো বিপুল সংখ্যায় দলে ভিড়ে সে হিংস্র পশুর পালকে বিজয়ী করায়। এদের কারণেই অতীতে শেখ মুজিবের ন্যায় বাকশালী স্বৈরাচারি, খুনি, মিথ্যাচারি এবং বিদেশীদের স্বার্থের একান্ত সেবাদাসও নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছে। এবং ভারতীয় কাফের বাহিনী ঢুকতে পেরেছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। বর্তমানে তারা ইতিহাস গড়েছে, স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলা গুম, খুন, বাংক-ডাকাতি, ভোট-ডাকাতি, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের রাজত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে না নেমে। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে শুধু শেখ মুজিব এবং শেখ হাসিনাই তাদের স্বৈরাচারী নৃশংসতা ও বিশাল অপরাধনামা নিয়ে বেঁচে থাকবে না; বেঁচে থাকবে জনগণও। সেটি অপরাধী চক্রের হাতে নিজেদের আত্মসমর্পণের ইতিহাস নিয়ে। আজ থেকে বহুশত বছর পরও নতুন প্রজন্ম নিজেদের পূর্বপুরুষদের সে কদর্য ইতিহাস পড়ে বিস্ময়ে হতবাক হবে। ২৩/১২/২০১৮
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018