মানসিক রোগীর হাতে দেশ হাইজ্যাকের বিপদ

ফিরোজ মাহবুব কামাল

সীমাহীন নৃশংসতা

কোন মানসিক রোগী বিমান চালনার দায়িত্ব পেলে সে যে কীরূপ ভয়াবহ বিপদ ঘটাতে পারে তারই সাম্প্রতিক প্রমাণ হলো, ২০১৫ সালের ২৪শে মার্চ জার্মান উইঙ্গস বিমান কোম্পানীর ১৪৯ যাত্রীর করুণ মৃত্যু। এটি কোন বিমান দুর্ঘটনা ছিল না, ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। জার্মান চিকিৎস্যকের কাছ থেকে প্রমাণ মিলেছে, বিমানের কো-পাইলট এ্যাড্রিয়াস লুবিটজ ছিল মানসিক রোগী। সে রীতিমত মানসিক রোগের চিকিৎস্যা নিত। তার রোগটি ছিল ডিপ্রেশন। ডিপ্রেশনের কারন, যে মেয়ে বান্ধবীকে সে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখেছিল সে তার সঙ্গ ত্যাগ করে। সঙ্গি হারানোর বেদনায় লুবিটজ এতটাই বিমর্ষ হয়ে পড়ে যে তার মগজে আত্মহত্যার চিন্তাও বার বার হানা দিতে শুরু করে। অবশেষে সে আত্মহত্যার পথই বেছে নেয়। তবে সাথে ১৪৯ বিমান যাত্রীকে সাথে নিয়ে -যার মধ্যে ছিল বেশ কিছু স্কুল ছাত্র যারা জার্মানী থেকে স্পেনে শিক্ষা সফরে গিয়েছিল। যার নাই নিজের জীবন বাঁচানোর ভাবনা, তার কাছে কি অন্যদের জীবন বাঁচানোর বিষয়টি গুরুত্ব পায়? কো-পাইলট এ্যাড্রিয়াস লুবিটজ’য়ের কাছে তাই কে শিশু, কে বালক, কে নারী বা কে নিরীহ যাত্রী -সে ভাবনা গুরুত্ব পায়নি। তার লক্ষ্যটি ছিল নিজের মৃত্যুর সাথে অন্যদের মৃত্যু ও দুঃখকেও বাড়িয়ে দেয়া।

দৈহিক বিকলাঙ্গতা ও মানসিক বিকলাঙ্গতার পরিনাম এক হয় না। দৈহিক বিকলাঙ্গতায় রোগীর ভাল কাজের সামর্থ্য যেমন লোপ পায়, তেমনি লোপ পায় ক্ষতির সামর্থ্যও। কিন্তু মানসিক বিকলাঙ্গতায় অন্যকে ক্ষতি করা -এমনকি হত্যা করার শারিরীক সামর্থ্যটি পুরাপুরি থেকেই যায়। ফলে তারা সমাজে চলাফেরা করে ভয়ানক হিংস্র জীব রূপে। তাদের হিংস্রতা অনেক সময় হিংস্র পশুকেও হার মানায়। এককালে এমন মানসিক রোগীদেরকে তাই মানসিক হাসপাতালে বন্দী রাখা হতো –যেমন হিংস্র পশুদের রাখা হয় চিড়িয়া খানায় খাঁচায় বন্দী করে। চিকিৎস্যা শাস্ত্রের উন্নতির ফল হলো, এখন তাদেরকে নিজ ঘরে চিকিৎস্যা দেয়া হয়। ফলে তারা সমাজে স্বাধীন ভাবে বসবাসের সাথে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে চাকুরি-বাকুরিও করে। কিন্ত্র সমস্যা সৃষ্টি হয় নিয়মিত চিকিৎসা নেয়া নিয়ে। কলেরা, ম্যালেরিয়া বা নিউমোনিয়ার রোগী চিকিৎসা নিলে যেরুপ পুরাপুরি সুস্থ্য হয়ে উঠে, মানসিক রোগীদের ক্ষেত্রে সেটি ঘটে না। এরূপ মানসিক রোগভোগের বিষয়টি তো আজীবনের। চিকিৎসাও তাই নিতে হয় আজীবন। কিন্তু সমস্যা হলে মানসিক রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসা নেয়ার আগ্রহ থাকে না। চিকিৎসার গুরুত্ব বোঝার সামর্থ্যও তাদের লোপ পায়। ফলে তারা সমাজে বাস করে ভয়ানক রোগ নিয়েই। এমনি এক রোগ হলো ডিপ্রেশন।

ডিপ্রেশনের রোগীদের জীবন বড়ই নিরানন্দ। জীবনে আনন্দ বা সুখবোধ তাদের থাকে না। বাইরের রূপটি যতই চাকচিক্যের হোক, তাদের মনের গভীরে সব সময়ই বিষন্নতার ভাব। অন্যদের জন্য এখানেই বিপদ। যারা জীবনে সুখ পায় না তারা বরং অপরের সুখে আরো বিমর্ষ ও ইর্ষাকাতর হয়। অন্যদের আনন্দঘন জীবন দেখে তাদের দুঃখের মাত্রাটি আরো বেড়ে যায়। এমনকি অন্যকে দুঃখ দেয়া, আঘাত দেয়া ও হত্যা করার মধ্য দিয়ে তারা নিজ মনে আনন্দ ও তৃপ্তি খুঁজে পায়। চিকিৎস্যা শাস্ত্রের ভাষায় মনের এই রোগাস্ত্র অবস্থাকে বলা হয় স্যাডিজম। সমাজে এরূপ মানসিক রোগীরাই চোর-ডাকাত, খুনি, ধর্ষক ও সন্ত্রাসী হয়, এবং নানারূপ অপরাধ জগতে ঢুকে। এবং রাজনীতির অঙ্গণে তারা নৃশংস স্বৈরাচারী, অত্যাচারি ও গণহত্যার নায়ক হয়। জার্মান উইঙ্গস কোম্পানীর যে বিমানটি ডিপ্রেশনের রোগী এ্যাড্রিয়াস লুবিটজ চালনা করছিল সে বিমানের ১৪৯ জন যাত্রীদের অনেকেই ছিল টুরিস্ট -যারা স্পেনে গিয়েছিল তাদের আপনজনকে নিয়ে প্রমোদ ভ্রমনে। তাদের মাঝেও প্রচুর আনন্দ ছিল। বিমানে ছিল জার্মান স্কুলের কিছু আনন্দমুখর তরুন ছাত্র। বিমানের মধ্যে তাদের আনন্দধ্বনি নিশ্চয়ই লুবিটজের বিমর্ষ মনকে আরো বিষিয়ে তোলে। ফলে শুধু নিজের আত্মহননের নেশাই বাড়েনি, বেড়েছে অন্যদের জীবননাশের নেশাও। সে নৃশংস ঘটনাটিই সে ঘটালো বিমান বিধ্বস্ত করে। বিপদের আরো কারণ হলো, দৈহিক পঙ্গুত্ব যেরূপ সচরাচর চোখে ধরা পড়ে, মানসিক পঙ্গুত্বটি সে রূপ ধরা পড়ে না। মনের গভীরে রোগ বহুলাংশে লুকিয়ে রাখা যায়। তাই হিংস্র বাঘ-ভালুক থেকে মানুষ সাবধান হতে পারলেও পাশের অসুস্থ্য ও হিংস্র মানুষ থেকে সাবধান থাকার সুযোগ থাকে না। কো-পাইলট এ্যাড্রিয়াস লুবিটজের রোগটি তাই জার্মান উইঙ্গস বিমান কোম্পানির কর্তৃপক্ষ টের পায়নি। টের পায়নি তার সহকর্মী পাইলটও। তাই অবাধ সুযোগ পায় শুধু নিজের আত্মহত্যার নয়, বরং যাত্রীভর্তি বিমান নিয়ে ফান্সের আল্পস পর্বতমালায় গিয়ে আঘাত হানার। ফলে জার্মান বনের সকল হিংস্র পশুগুলি বিগত শত বছরে যত মানুষ হত্যা করতে পারিনি, লুবিটজ একাই তা করে দেখালো। মানসিক রোগীগণ যে কতটা প্রাণসংহারী হতে পারে এ হলো তার নমুনা।

 

মানসিক রোগীর রাজনৈতিক নৃশংসতা

মানসিক রোগীরা যে শুধু বিমানের পাইলট হওয়ার সুযোগ পায় তা নয়, সুযোগ পায় এমনকি দেশের রাজা, প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট হওয়ারও। তাদের পাইলট হওয়াতে বড় জোর কয়েক শত যাত্রীর জীবননাশ হয়, কিন্তু দেশের শাসক হওয়াতে প্রাণনাশ হয় লক্ষ লক্ষ মানুষের। তারা আবির্ভুত হয় নৃশংস স্বৈরাচারী শাসক রূপে। তখন দেশে যুদ্ধ বা গৃহযুদ্ধ শুরু করে। আত্মঘাতী সে শাসকের হাতে তখন রাষ্ট্রের পুরা সেনাবাহিনী, পুলিশ, আদালত, প্রশাসন ও রাজনৈতিক ক্যাডার বাহিনী আত্মহননের নৃশংস হাতিয়ারে পরিণত হয়। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার হাতে দেশ অধিকৃত হওয়ায় অবিকল সেটিই ঘটেছে। তাছাড়া শেখ হাসিনার মানসিক রোগটি তো প্রকট। যে বেদনার কারণে জার্মান কো-পাইলট লুবিটজ ডিপ্রিশনের রোগী সেটি শধু তার প্রেমিকা হারানোর। কিন্তু হাসিনা গভীর বেদনাটি হলো তারা পিতা, মাতা, ভাইসহ পুরা পরিবার হারানোর। তার অফিস, তার গৃহ, তার জীবনযাপনের প্রতিটি অঙ্গণ প্রাণহারানো সে আপন জনদের ছবিতে পরিপূর্ণ। ফলে নিদারুন দুঃখ নিয়েই তার বসবাস। প্রতিমুহুর্তে তার মগজে যা হানা দেয় তা হলো তার মৃত আপনজনদের স্মৃতি। এমন স্মৃতি যদি শেখ হাসিনার মনে ভয়ানক মানসিক রোগের জন্ম না দেয় তবে বুঝতে হবে সে হয় উদ্ভিদ বা গরুছাগল, স্বাভাবিক মানুষ নয়। উদ্ভিদ বা গরু-ছাগলের পাশে আপন কেউ জবাই হলেও প্রতিক্রিয়া হয় না। গরু তখনও অবিরাম ঘাষ খায়, উদ্ভিদ তখনও শান্ত থাকে। কিন্তু মানুষ তো প্রতিশোধ পরায়ন হয়। এমন প্রতিশোধ পরায়ন মানুষের সুস্থ বিচারবোধ থাকে না। আপনজন হারানো এমন বিপর্যস্ত মানুষটি দেশের কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলে জনস্বার্থে যে কোন সভ্যদেশে তাকে তৎক্ষনাৎ কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দেয়া হয়, এমন মানষিক রোগবিশেষজ্ঞের দায়িত্বে রাখা হয়।

বাংলাদেশের মানুষের সামনে ভয়ানক বিপদের কারণ, দেশটির পাইলটের সিটে এখন শেখ হাসিনার ন্যায় প্রতিশোধকামী এক ভয়ানক মানসিক রোগী। তাছাড়া শেখ হাসিনার মানসিক রোগটি কি এখনও কোন গোপন বিষয়? প্রতিটি রোগেরই সিম্পটম আছে, এবং সে সিম্পটম থেকেই সনাক্ত হয় তার রোগ। নিউমোনিয়া বা ম্যালেরিয়া হলে শরীরে তাপ উঠবেই। তেমনি মানসিক ভাবে কেউ অসুস্থ্য হলে তার আচরণও লক্ষণীয় রূপে পাল্টে যাবেই। সে তখন স্বাভাবিক ও সুস্থ্য আচরনের সামর্থ্য হারায়। হারায় বিচারবোধও। পাগলের রোগ নির্ণয়ে তাই ল্যাবরেটরিতে পাঠানো লাগে না। স্কুলের শিশুরাও সেটি বুঝে। ঢাকার শাপলা চত্বরে নিরস্ত্র মুসল্লীদের জমায়েত রুখতে যে নেত্রী হাজার হাজার সৈনিক, ট্যাংক, গোলাবারুদ ও মেশিন গান পাঠাতে পারে ও হাজার হাজার মানুষকে হতাহত করতে পারে -সে কি মানসিক ভাবে আদৌ সুস্থ্য? মানব ইতিহাসের কোন কালেই কি কোন সুস্থ্য নেতার পক্ষ থেকে এমন ঘটনা ঘটেছে? নয় মাসের যুদ্ধ ছাড়া পাকিস্তান আমলের ২৩ বছরের রাজনীতিতে যত লাশ পড়েছে তার চেয়ে বেশী লাশ পড়েছে শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালে ৫ই মে’র ভয়াল রাতে। সেটি এই অসুস্থ্যতার কারণে।

দলীয় কর্মীদের লগি-বৈঠা নিয়ে কর্মীদের রাস্তায় নামতে বলা এবং এক লাশের বদলে দশ লাশ ফেলতে বলা কি মানসিক সুস্থ্যতার লক্ষণ? যে ব্যক্তি দেশের বিরোধী দলগুলোর অফিসে তালা ঝুলাতে পারে এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া গুলশানের গৃহের সামনে বালুভর্তি ট্রাকের ভিড় দিয়ে রাস্তা বন্ধ করতে পারে -তার মানসিক অসুস্থ্যতা নিয়ে কি সন্দেহ জাগে? ২০১৪ যে নির্বাচনে শতকরা ৫ ভাগ মানুষও অংশ নিল না সেটিকে যে ব্যক্তি সুষ্ঠ নির্বাচন বা গণতন্ত্র বলে -তার বিচার ক্ষমতা যে পূর্ণভাবে লোপ পেয়েছে তা নিয়েও কি সন্দেহ জাগে? কোন সুস্থ্য মানুষ কি নির্বাচনের আগের রাতে দেশব্যাপী ব্যালট পেপার ডাকাতি করতে পারে? অথচ ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের নামে তো সেটিই করেছে। সে ভোটডাকাতির মাধ্যমেই হাসিনা ক্ষমতাসীন হয়েছে। মানসিক রোগের এরূপ অসংখ্য লক্ষণ নিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে দিনের পর অঘটন ঘটিয়ে চলেছে। যে ব্যক্তির বসবাস হওয়া উচিত ছিল কোন মানসিক হাসপাতালে, সে এখন বাংলাদেশ সরকারের ড্রাইভিং সিটে। পুরা দেশ তাই হাইজ্যাক হয়ে গেছে তার মত ক্রদ্ধ ও উম্মত্ত পাগলীর হাতে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমান বিপর্যয় ও হানাহানি মূল কারণ, শেখ হাসিনার এ ভয়ানক মানসিক অসুস্থ্যতা। এমন মানসিক অসুস্থ্যতা নিয়ে আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা নবীজী (সা:)’র চাচা এবং ওহুদ যুদ্ধের সেনাপতি হযরত হামযা (রা:)’র কলিজা চিবিয়ে খেয়েছিল। হিন্দার মানসিক অসুস্থ্যতার কারণ, হাসিনার মত সেও সে তার পিতা ও ভাইকে হারিয়েছিল। এবং সেটি এক বছর আগে সংঘটিত বদরের যুদ্ধে। তার পিতার মৃত্যু ঘটেছিল হযরত হামযা (রা:)’র হাতে। আপন জন হারানোর বেদনা মানুষকে যে কতটা উম্মাদ ও নৃশংস করতে পারে –তার নমুনা ইতিহাসে অনেক। হাসিনার তাদেরই একজন। আর বাংলাদেশের জন্য ভয়ানক বিপদ এখানেই।

 

মটিভ ভারতীয় স্বার্থের পাহারাদারি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিশোধ পরায়ণ হিন্দার বেশে আবির্ভূত হয়েছে শেখ হাসিনা। তার রাজনীতির মূল অভিপ্রায় দেশের ইসলামপন্থী নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলানো। কারণ, প্রধান ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামী ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর তার প্রধানমন্ত্রী হতে বাধা দিয়েছে এবং সহায়তা দিয়েছে তার প্রতিদ্বন্দী খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী হতে। ফলে তার ক্ষোভের কারণটি সুস্পষ্ট। তাছাড় আরো জানে, ভবিষ্যতেও তার রাজনীতির পথে মূল বাধা হয়ে থাকবে। তাই জনাব মতিউর রহমান নিজামী, জনাব আলী আহসান মুজাহিদ, জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা বা জনাব কামরুজ্জামানের হত্যাই হাসিনা ও তার ভারতীয় অভিভাবকের একমাত্র লক্ষ্য নয়। আরো বহু ইসলামী নেতাকেই লাশ হতে হবে বা কারা নির্যাতন সইতে হবে।

ফ্যাসিবাদী স্বৈর শাসনের আমলে শুধু যে গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটে তা নয়, কবরে যায় ন্যায়বিচারও। শেখ হাসিনার আক্রোশ তাই শুধু ১৯৭৫’য়ের বিপ্লবের নায়কদের বিরুদ্ধে নয়, সেটি বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধেও। আক্রোশ এমনকি তার নিজ দলের নেতাদের বিরুদ্ধেও। জনগণের বিরুদ্ধে হাসিনার আক্রোশের কারণ, তার পিতার মৃত্যুর দিনটিতে তারা রাস্তায় শোক মিছিল করেনি। জানাযা বা গাযেবানা জানাজাও পড়েনি। বরং রাস্তায় নেমে প্রচন্ড আনন্দ করেছে, মিষ্টি বিতরনও করেছে। আর দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আক্রোশের কারণ, তারা তার পিতার লাশকে সিঁড়িতে ফেলে খোন্দকার মোশতাকের মন্ত্রীসভার মন্ত্রী হতে ভিড় করেছে। আরো ক্ষোভ, শেখ মুজিবের মৃত্যুতে যে আব্দুল মালিক উকিল বলেছিলেন “ফিরাউনের মৃত্যু হয়েছে” তাকে তারা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি বানিয়েছে। ফলে শেখ হাসিনার গভীর ষড়যন্ত্র খোদ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও।

যারা সাডিস্ট তারা ব্যক্তি জীবনে বড়ই দুঃখী। কারোই সুখই তারা সহ্য করতে পারে না। তারা চায় অন্যরাও তাদের ন্যায় গভীর দুঃখে হাবুডুবু খাক। সে রোগটাই হাসিনার মুল রোগ। আর সেটিই ভয়াবহ অকল্যাণ এনেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। ডিপ্রেশন রোগী সর্বদাই আত্মমুখি হয়। তার ভাবনা শুধু তার নিজের সুখ বিবর্জিত জীবন নিয়ে। সমাজ ও দেশের কল্যাণের ভাবনা তার থাকে না। তাই শেখ হাসিনাও তাই আত্মমুখী, তার রাজনীতির মূল অঙ্গিকার একমাত্র তার নিজের ও নিজ পরিবারের প্রতি। স্বৈরাচারীদের সেটিই চিরাচরিত রীতি। শেখ হাসিনা তাই পরিকল্পিত ভাবেই বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের ভবিষ্যতে বেঁচে থাকা ও বসবাসকেই অসম্ভব করছে। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব মারা গেলেও তার দল বেঁচে গিয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে অপসারিত হলে এবার মারা পড়বে খোদ আওয়ামী লীগ ও তার বহু নেতাকর্মী। পুলিশী প্রটেকশন না পেলে তার কোন মন্ত্রী কি রাস্তায় একাকী চলাচল করতে পারে? শেখ হাসিনারও কি সে সাহস আছে? হিটলারের মৃত্যুর পর তার দল বাঁচেনি, তার দলের নেতৃবৃন্দও বাঁচেনি। ফ্যাসিবাদী শক্তির পতন হলে দল ও দলীয় নেতাকর্মীরা বাঁচে না। কারণ, জনগণকে তারা প্রতিশোধকামী শত্রুতে পরিনত করে। অনুরূপ পরিণতি যে আওয়ামী বাকশালীদের জন্যও অপেক্ষা করছে তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে?

আওয়ামী বাকশালী ফ্যাসিস্টদের জন্য এখন বসন্ত কাল। কিন্তু এরূপ বসন্তকাল কি চিরকাল থাকে? বসন্তের পর শীতও আসে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা না বুঝলেও সেটি তাদের অভিভাবক ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ও দিল্লির শাসক চক্র বুঝে। তাই নির্বাচনে যে কোন মূলে তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে চায়। তাই তাদের লক্ষ্য, বাকশালীদের এ বসন্তকালকে দীর্ঘকাল বাঁচিয়ে রাখা। বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও যে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের শত্রু আছে -সেটি ভারতের অজানা নয়। ভারতের লক্ষ্য, হাসিনাকে দিয়ে ভারতীয় আধিপত্যাবদের যারা বিরোধী তাদের দ্রুত নির্মূল। এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদ-বিরোধী রাজনীতিকে দ্রুত নেতাশূণ্য করা –বিশেষ করে দেশের ইসলামপন্থী শিবিরে। সে সাথে দেশকে দ্রুত ডি-ইসলামাইজড করা। তাই নির্বাচনে কেউ ভোট দিক বা না দিক -সেটি ভারতীয়দের কাছে আদৌ কোন প্রশ্ন নয়। তারা নির্বাচনের তোয়াক্কা করে না। তারা চায়, বাংলাদেশের সরকারে যে ব্যক্তিটি ক্ষমতায় থাকবে সে ব্যক্তিকে অবশ্যই ভারতের অনুগত দাস হতে হবে। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর হাসিনাকে সে উদ্দেশ্যেই দিল্লিতে রেখে নিজ দায়িত্বে প্রতিপালন করেছে এবং গভীর ভাবে পোষ মানিয়েছে। এখন ভারত তাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে চায় নিছক নিজ স্বার্থে। লক্ষ্য, হাসিনাকে দিয়ে ভারত-বিরোধীদের নির্মূলে সমগ্র রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের ব্যবহার। বাংলাদেশ রাজনৈতিক ভাবে যত অস্থির ও দুর্বল হবে, ভারতের ততই লাভ। এবং শক্তি বাড়লেই তাদের ক্ষতি।

বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এই দেশটি সাড়ে ১৪শত বছর পূর্বের মদীনার ন্যায় এটি সামান্য গ্রাম নয়, বরং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। মদীনা থেকে যদি বিশ্বের প্রধান বিশ্বশক্তির উদ্ভব ঘটতে পারে, তিন কোটি আশি লাখ মানুষের দেশ আফগানিস্তানও যদি সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হারাতে পারে তবে বাংলাদেশই বা দুর্বল কিসে? ভারতের এখানেই ভয়। তাদের মনে মুসলিম ভীতি। তাই শুধু পাকিস্তানের নয়, বাংলাদেশের কোমর ভাঙ্গাও ভারতের মূল নীতি। সেটির প্রমাণ মেলে একাত্তরেই। বাংলাদেশকে দুর্বল করতেই ১৯৭১’য়ে তারা বাংলাদেশ লুন্ঠনে নামে। সে সময় ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর, বগুড়া ও সৈয়দপুরের ক্যান্টনমেন্টে তীরধনুক ছিল না, ছিল হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র যা মাত্র ১৭ দিনের যুদ্ধে প্রায় পুরাটাই অব্যবহৃত রয়ে গিয়েছিল। সে অস্ত্র কেনায় বেশীর ভাগ অর্থ জুগিয়েছিল পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক বাঙালী মুসলিমগণ। অথচ ভারতীয় সেনাবাহিনী সে অস্ত্র বাংলাদেশে রেখে যায়নি। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশ ভারতের কাছে স্বাধীন দেশ রূপে যে গণ্য হয়নি -এ হলো তারই প্রমাণ। বরং গণ্য হয়েছে ভারতের অধিকৃত দেশ রূপে, আর পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধাস্ত্র গণ্য হয়েছে গণিমতের মাল রূপে। ভারতীয়গণ তাই সমুদয় অস্ত্রই নিজ দেশে নিয়ে যায়। অথচ সে অস্ত্র লুন্ঠন নিয়ে হাসিনা কোন অভিযোগ তোলে না। শেখ মুজিবও তা নিয়ে কোন কালে কোন রূপ ক্ষোভ ব্যক্ত করেনি। মেজর আব্দুল জলিল তা নিয়ে প্রতিবাদ করায় সেনাবাহিনীর চাকুরি হারিয়েছিলেন। ভারতের রাজনৈতিক লক্ষ্যের সাথে হাসিনা ও তার পিতার রাজনৈতিক লক্ষ্যটিও যে এক ও অভিন্ন –এ হলো তারই প্রমাণ।

 

পরিকল্পনা দেশধ্বংসের

আত্মহননেও পরিকল্পনা লাগে। তেমনি দেশধ্বংসেও পরিকল্পনা লাগে। সেরূপ পরিকল্পনা শেখ হাসিনার বহু। সে পরিকল্পনার অংশ রূপেই শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প পদ্মা সেতুর নির্মাণকে বহু বছরের জন্য পিছিয়ে দেয়। অথচ বিশ্বব্যাংক থেকে পদ্মাসেতুর জন্য বিশাল অংকের অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল ২০১০ সালে -আজ থেকে ১২ বছর আগেই। সে সেতুর উপর দিয়ে ৭ বছর আগেই যান চলাচল শুরু হয়ে যেত। সরকার ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করেছে। গুমু, খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের সুনামী এনেছে। বিদেশ মুদ্রা অর্জন করে অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে গরীব গার্মেন্টস শ্রমিকগণ এবং বিদেশী কর্মরত প্রবাসী শ্রমিকগণ। শেখ মুজিবও পরিকল্পিত ভাবে দেশকে তলাহীন ঝুড়ি বানিয়েছিল। সে পরিকল্পনার অংশ রূপে মুজিব দেশের সীমানা ও দেশী বাজার ভারতের জন্য খুলে দেয়। শুরু হয় অর্থপাচার, পণ্যপাচার ও পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত কলকারখানার যন্ত্রপাচার। এমনকি পাচার হয়ে যায় বিদেশীদের দেয়া রিলিফের সামগ্রীও। একাত্তরের আগে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিকারক দেশে ছিল পাকিস্তান। সে পাট উৎপাদিত হতো তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। ভারতকে হারিয়ে বিশ্ববাজারে সে অবস্থায় পৌঁছতে পাকিস্তান সরকারকে বহু বছর লেগেছিল। কিন্তু সে অবস্থান থেকে দ্রুত নীচে নামাতে মুজিব ও তার মোড়ল ভারতেরও বিশাল পরিকল্পনা ছিল। সেটি ছিল আদমজীর ন্যায় বিশাল বিশাল জুটমিলগুলোতে তালা ঝুলানো ও পাটের গুদামগুলিতে আগুন দেয়া। এতে ফল দাঁড়ালো,বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাট রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হলো ভারত। এমন ষড়যন্ত্র লাগাতর চললে কি দেশের অর্থনীতি বাঁচে? জনগণের জীবনও কি বাঁচে? মুজিব আমলে তাই বাংলাদেশের অর্থনীতি বাঁচেনি। বরং সৃষ্টি হয়েছে ভয়ানক দুর্ভিক্ষ। একাত্তরের যুদ্ধেও এতো মানুষের মৃত্যু হয়নি যা হয়েছে মুজিবের সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে। নারীরা সে সময লজ্জা নিবারণে মাছধরা জাল পড়তে বাধ্য হয়েছিল। অথচ সেরূপ অবস্থা পাকিস্তান আমলে যুদ্ধকালীন ৯ মাসেও সৃষ্টি হয়নি। অথচ সেটিই ছিল শেখ মুজিবের গড়া স্বপ্নের সোনার বাংলা! মুজিবের গড়া সে বাংলা নিয়ে শেখ হাসিনার আজও কত গর্ব! মুজিবের দুঃশাসন ১৯৭৫য়ে শেষ হয়ছে। কিন্তু আজও  শেষ হয়নি তার অসমাপ্ত মিশন। এবং শেষ হয়নি ভারতীয়দের বাংলাদেশ বিধ্বংসী ষড়যন্ত্রও। সে ষড়যন্ত্রকে পূর্ণতা দেয়া নিয়েই তো ভারতের সাথে শেখ হাসিনার কোয়ালিশন।

 

চালকের রুমে তালা

শেখ হাসিনার যেমন তার সফল ভোট ডাকাতি নিয়ে গভীর ভাবে তৃপ্ত, তেমনি তৃপ্ত তার অভিভাবক দেশ ভারতও। ডাকাতিলব্ধ দেশের পাইলটের সিটটি এখন হাসিনা ছাড়তে নারাজ। জার্মান বিমান চালক এ্যাড্রিয়াস লুবিটজ ভিতর থেকে চালকের রুমে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল। মূল পাইলট বহু চেষ্টা করেও সে রুমে ঢুকতে পারিনি। যাত্রীভর্তি বিমান নিয়ে তাই সে সুযোগ পেয়েছে আল্পস পর্বতে আঘাত হানার। হাসিনাও তেমনি দেশের রাজনীতির কন্ট্রোল রুমে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। যাকে ইচ্ছা তাকে ফাঁসি দিচ্ছে, যাকে ইচ্ছা তাকে ঘর থেকে উঠিয়ে নিয়ে গুম করে দিচ্ছে বা ক্রসফায়ারে দিয়ে হত্যা করছে। রাজনীতির ময়দানে বিরোধী দলগুলোর জন্য সামান্যতম স্থান ছাড়তেও রাজী নয়। স্বাধীন মিডিয়াকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, আন্তর্জাতিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ন্যায় বহু প্রতিষ্ঠানের কেউই তার পাইলটের সিটে প্রবেশাধিকার পাচ্ছে না। আত্মঘাতী পাইলটের ন্যায় সে দেশবাসীর প্রাণহননে নেমেছে। জার্মান কো-পাইলট লুবিটজ শুধু একটি বিমানকে প্রাণহননের হাতিয়ার বানিয়েছিল, আর শেখ হাসিনা দেশের পুলিশ, RAB, বিজিবি,আইন-আদালত ও পুরা প্রশাসনকে প্রাণহনের হাতিয়ারে পরিণত করেছে। জনগণের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার এটিই হলো নৃশংস স্বৈরাচারী শাসকদের চিরাচরিত কৌশল। স্বজন হারানোর এমন প্রেক্ষাপটেই অতীতে নৃশংস চেঙ্গিজ খান ও হালাকু খানের জন্ম হয়েছে, এবং তাতে ভয়ানক গণহত্যা নেমে এসেছে পৃথিবীর বিশাল ভূ-ভাগ জুড়ে। তখন ধ্বংসপুরিতে পরিণত হয়ে ছে বাগদাদ,নিশাপুর, সমরকন্দ,বোখারার ন্যায় বহু সমৃদ্ধ নগরী। 

                         

করণীয় কী?

জনগণের দায়ভারটি মানসিক রোগীদের হাত থেকে শুধু বিমানকে বা ট্রেনকে বাঁচানো নয়, বরং দেশকে বাঁচানোও। এজন্য তাদেরকে শুধু হিংস্র বাঘ-ভালুককে চিনলে চলে না। চিনতে হয় মানসিক রোগে আক্রান্ত হিংস্র মানুষগুলোকেও। নইলে স্রেফ ক্ষমতায় যাওয়ার স্বার্থে তারা দেশে ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু করতে পারে। দেশও পরাধীন ও খন্ডিত হতে পারে। ১৯৭১’য়ে তো সেটিই হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষের বড় ব্যর্থতাটি মূলত হিংস্র মানুষ চেনার ক্ষেত্রে। তারা নেতাদের বক্তৃতা ও মিথ্যা ওয়াদায় ভূলেছে, তাদের ফ্যাসিবাদী চরিত্রকে দেখেনি। সে ব্যর্থতা যেমন ১৯৭০ নির্বাচনে হয়েছে, তেমনি ২০০৮ সালের নির্বাচনেও হয়েছে। যে মুজিব সিরাজ শিকদারকে হত্যার পর সংসদে দাড়িয়ে উল্লাস ভরে বলতে পারে,“কোথায় আজ সিরাজ শিকদার” বা কয়েক মিনিটে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে পারে তার মানসিক অসুস্থ্যতা কি কম?  স্বৈরাচারী মুজিবের হাতে দেশ তো পুরাপুরি হাইজ্যাক হয়ে গিয়েছিল ১৯৭০’য়ে নির্বাচনী বিজয়ের সাথে সাথেই। দেশকে ভারতের গোলাম বানাবে সে কথা বলে শেখ মুজিব ভোট নেয়নি। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে ভারতের গোলাম বানিয়ে ছেড়েছে। অবশেষে দেশ রক্ষা পায় ১৯৭৫ সালে এবং ফিরে আসে আবার মানবাধিকার।

কিন্তু দেশ পুণরায় হাইজ্যাক হয়েছে আরেক হিংস্র মানসিক রোগীর হাতে। সেটি তারই কন্যার হাতে। প্রশ্ন,এখন করণীয় কী? করণীয় সেটাই যা জার্মান উইঙ্গসের হাইজ্যাককৃত বিমানের মূল পাইলট করেছিল। ব্লাক বকসের তথ্য থেকে জানা যায়,সে কুড়াল দিয়ে ককপিটের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকতে চেয়েছিল। চেয়েছিল বিমান চালানোর ড্রাইভিং সিট থেকে লুবিটজকে সরাতে এবং বিমান চালানোর দায়ভার নিজে নিতে। কিন্তু ইতিমধ্যে বড্ড দেরী হয়ে গিয়েছিল। বিপদের এরূপ মুহুর্তে সামান্য দেরী হলে এভাবেই ভয়ানক মৃত্যু নেমে আসে। ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশও আজ  হাইজ্যাকের শিকার। ফলে ভয়ানক বিপদগ্রস্ত হলো ১৭ কোটি মানুষ। এরূপ জিম্মিদশা থেকে মুক্তি দিতে হলে জনগণের দায়িত্ব হলো, যত শীঘ্র সম্ভব শেখ হাসিনাকে ক্ষমতার আসন থেকে সরানো। বিলম্ব হলে বিপদ ঘনিভূত হবে সমগ্র বাংলাদেশীদের জীবনে। ইসলামে জিহাদের গুরুত্ব তো এজন্যই সর্বাধিক। কারণ, এরূপ বিপদ থেকে একমাত্র মু’মিনের জিহাদই রক্ষা করতে পারে।

রাজনীতি মুসলিম জীবনে কোন মামূলী বিষয় নয়। পেশাদারীও নয়। জাতি কোন দিকে যাবে সেটি নির্ধারিত হয় রাজনীতি থাকে। এটিই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। এটি জিহাদ। ইসলাম বিজয়ী হয়, দুর্বৃত্তদের শাসনের বিলুপ্তি ঘটে ও উচ্চতর সভ্যতা নির্মিত হয়ে এই জিহাদী রাজনীতির মাধ্যমে। তাই মুসলিমের শুধু নামাজ-রোজায় মনযোগী হলে চলে না, রাজনীতিতেও সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে হয়। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এ ক্ষেত্রটিতে জান, মাল, শ্রম ও বুদ্ধিবৃত্তির বিনিয়োগ ঘটাতে হয়। নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত মানব মনে মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণকে জাগরিত রাখার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কিন্তু হাইজ্যাককারীদের হাত থেকে নামাজ-রোজা, হজ্জ -যাকাত বা দোয়া-দরুদ যেমন প্রাণ বাঁচায় না, তেমনি দেশও বাঁচায় না। বাঁচায় না দেশের স্বাধীনতাও। এবং প্রতিষ্ঠা দেয় না মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তী বিধানের। বাংলাদেশের কোটি মানুষের নামাজ-রোজা এবং তাবলিগী ইস্তেমার লক্ষ লক্ষ মানুষের দোয়াতে তাই স্বৈরাচারী জালেম শাসকের মসনদ একটুও হেলেনি। জালেম শাসকের নির্মূলে মহান আল্লাহতায়ালার প্রেসক্রিপশন হলো জিহাদ। খোদ নবীজী (সা:)কে তাই জায়নামাজ ছেড়ে জিহাদের ময়দানে নামতে হযেছে। নামাজ-রোজা ও হজ্জ -যাকাতে জানের কুর’বানী নেই। অথচ জানের সে বিশাল কুর’বানী আছে জিহাদে। আর ইবাদতের কদর তো বাড়ে কুর’বানীর বিশালতায়। জিহাদ এজন্যই ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। একমাত্র এ ইবাদতটি পালনে প্রাণ গেলে বিনা হিসাবে তৎক্ষনাৎ জান্নাতপ্রাপ্তির গ্যারান্টি মেলে। তখন কবরের আযাব, রোজহাশরের ভয়, পুলসিরাতের বিপদ –এর কোনটাই থাকে না। থাকে না আলমে বারযাখে হাজার হাজার বছর অপেক্ষায় থাকায় পালা। মৃত্যুর পরপরই মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর এ মহান সৈনিককে জান্নাত দিয়ে পুরস্কৃত করেন। দেন অতুলনীয় খাদ্যসম্ভার। জিহাদ এবং জিহাদের ময়দানে শাহাদত তাই মু’মিনের জীবনে সবচেয়ে বেশী কাঙ্খিত। মহান সাহাবায়ে কেরামদের কাছে সবচেয়ে পছন্দের পথ ছিল তাই জিহাদ ও জিহাদের ময়দানে শাহাদত লাভ। এ জন্যই প্রত্যেক সাহাবার জীবনে যেমন জিহাদ ছিল, তেমনি শতকরা ৬০ ভাগের বেশী সাহাবা আল্লাহর পথে জিহাদে শহীদ হয়েছেন।

মুসলিম দেশগুলিতে ইসলাম আজ  যেরূপ পরাজিত তার কারণ নামাজী-রোজাদার ও মসজিদ-মাদ্রাসার কমতি নয়, বরং জিহাদের অনুপস্থিতি। যারা সরাসরি জান্নাতে পৌঁছার পথ খোঁজে, তারা সবাই প্রতিনিয়ত জিহাদের ময়দান খোঁজে। তাই বিশ্বের চলমান বিশুদ্ধ জিহাদের ময়দানগুলিতে নানা দেশ ও নানা ভাষার মানুষের এতো ভিড়। বাংলাদেশে আজ যে শয়তানী শক্তির অধিকৃতি -তা থেকে মুক্তি পেতে জিহাদই একমাত্র পথ। বিগত সাড়ে ১৪ শত বছরের ইতিহাসে জালেম শাসকের নির্মূলে কোনকালেই এ ছাড়া ভিন্ন পথ ছিল না। গতানুগতিক রাজনীতির পথে যে মুক্তি নাই -সেটি ইতিমধ্যে প্রমানিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশে এ যাবত বহু আন্দোলন হয়েছে। তাতে কেবল জান ও মালের খরচ বেড়েছে। এবং বহু সরকারের পতনও হয়েছে। কিন্তু তাতে কি ইসলামের প্রতিষ্ঠা এক শতাংশও বেড়েছে? জুটেছে কি স্বাধীনতা। বেড়েছে কি শান্তি? বরং এসব আন্দোলনে শক্তিশালী হয়েছে ইসলামের শত্রুপক্ষ। একাত্তরে বিরাট যুদ্ধ হলো, অথচ দেশ অধিকৃত হলো কাফের শত্রু শক্তির হাতে। এবং ক্ষমতায় বসলো গণতন্ত্রের ভয়ানক শত্রু ও নৃশংস দুর্বৃত্তগণ। এতে কবরে গেল মত প্রকাশ ও দল গঠনের স্বাধীনতা। সে সাথে কবরে গেল দলীয় রক্ষিবাহিনীর হাতে ৩০ হাজারের বেশী মানুষ।

তাছাড়া স্রেফ নির্বাচন, ভোটদান, জনসভা, মিছিল, হরতাল বা অবরোধ পালনের মধ্য দিয়ে কি জিহাদ পালিত হয়? পালিত হয় কি পরিপূর্ণ ইসলাম। তাতে থাকে কি মহান আল্লাহতায়ালার রাস্তায় জান কুর’বানীর প্রেরণা? এগুলি কি নবীজী (সা:)’র দেখানো পথ? জিহাদ হবে স্রেফ মহান আল্লাহতায়ালার রাস্তায়। জিহাদের লক্ষ্য স্রেফ কোন ইসলামী দলকে নির্বাচনে বিজয়ী করা নয়। সংসদে কিছু দলীয় ব্যক্তির সদস্য পদ পাওয়াও নয়। নিছক কোন ইসলামপন্থী ব্যক্তির মুক্তি নিয়ে আন্দোলনও নয়। লক্ষ্য এখানে বিশাল। সেটি হলো ইসলামের শত্রুপক্ষের সমূলে নির্মূল এবং মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তি বিধানের পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠা। মু’মিনের অর্থদান, শ্রমদান ও আত্মদান এ জিহাদে অপরিহার্য। এছাড়া অন্য কোন কর্মসূচি কি মুসলিমের জীবনে গুরুত্ব পেতে পারে? ১ম সংস্করণ ১২/০৪/২০১৫; ২য় সংস্করণ ০৫/০৩/২০২২।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *