মুজিবের ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার রাজনীতি

ফিরোজ মাহবুব কামাল

অধিকৃত দেশ এবং বিজয় দুর্বৃত্তির

প্রতিটি জাতিকেই বহুবিধ সমস্যা ও সংকটের মোকাবেলা করে বাঁচতে হয়। এ পৃথিবীতে তারাই গর্বভরে মাথা তুলে দাঁড়ায়, যারা সেসব সমস্যার সমাধানে যোগ্যতার পরিচয় দেয়। নইলে পদে পদে পরাজয় আসে; এবং সংকট থেকে মহাসংকট সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের ব্যর্থতা এক্ষেত্রে বিশাল। জনগণের ব্যর্থতা যেমন যোগ্য নেতা নির্বাচনে, সরকারের ব্যর্থতাটি তেমনি নেতৃত্বদানে ও সংকটের শান্তিপূর্ণ উত্তরণে। বরং বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পারঙ্গমতা দেখিয়েছে সংকটের সমাধানের বদলে সেগুলিকে জটিলতর করায়। এজন্য দায়ী শেখ মুজিবের ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার রাজনীতি। মুজিবের রাজনীতি জনগণের জীবনে ডেকে আনে একাত্তরের যুদ্ধ, ভারতীয় অধিকৃতি ও লুন্ঠন এবং যুদ্ধ-পরবর্তী নৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট। এবং প্রতিষ্ঠা দেয়, বাকশালি স্বৈরাচার, তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি, প্রাণনাশী দুর্ভিক্ষ, সরকারি বাহিনীর হাতে তিরিশ হাজার মানুষের মৃত্যু এবং দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে পাঁচবার প্রথম হওয়ার অপমান। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনো প্রবল ভাবে বেঁচে ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার সে রাজনীতি।  সে রাজনীতি ধারাবাহিকতায় ঢাকার পিলখানায় হত্যা করা হলো ৫৭ জন সামরিক অফিসারকে এবং ২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্ত্বরে হত্যা করা হলো বহুশত নিরীহ মুসল্লীকে। ২০২০ সালে এসে সে অপরাধের রাজনীতি নতুন মাত্রা পেয়েছে; দেশ ছেয়ে গেছে চুরি-ডাকাতি, গুম, খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসে।

জাতির যোগ্যতা কখনোই ধান-চাল, আলু-পটল, গরু-ছাগল বা গার্মেন্টস উৎপাদনের মধ্য দিয়ে যাচাই হয় না। যাচাই হয়, অন্যায়, অসত্য ও দুর্বৃত্তদের নির্মূলে কতটা সফল হলো –তা দিয়ে। যাচাই হয়, সভ্যতর রাজনীতি, প্রশাসন ও শিক্ষা-সংস্কৃতির নির্মাণে। যুগে যুগে উচ্চতর সভ্যতা তো এভাবেই নির্মিত হয়েছে। এমন সৃষ্টিশীল কাজে জনগণের বিনিয়োগটি নিছক চাষাবাদ, রাজনীতি, ব্যবসা-বানিজ্য বা সমাজকর্মে সীমিত হলে চলে না। সেটিকে আল্লাহর রাস্তায় সর্বাত্মক জিহাদে পরিণত করতে হয়। রাজনীতি তখন ইবাদতে পরিণত হয়। সে পবিত্র জিহাদে জনগণকে জানমালের বিপুল কোরবানিও পেশ করতে হয়। এবং এ কাজ প্রতিটি ঈমানদারের। চাষাবাদ না হলে জমি আগাছায় ভরে উঠে। তেমনি জিহাদ না হলে দেশ অধিকৃত হয় দুর্বত্তদের হাতে। ঈমানদারের শ্রেষ্ঠ ইবাদতটি  মসজিদে বা ঘরের জায়নামাজে হয় না, সেটি হয় রাজনীতির অঙ্গণে। এখানে যুদ্ধ হয় শয়তানী শক্তির বিরুদ্ধে। রাজনীতির অঙ্গণে পবিত্র এ ইবাদতটি না থাকলে দেশে বহু লক্ষ মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মিত হতে পারে, বহু কোটি নামাযী-রোযাদারও গড়ে উঠতে পারে, কিন্তু সভ্যতর সমাজ নির্মিত হয় না। তখন জোয়ার আসে দুর্বৃত্তির। বাংলাদেশ তো তারই উদাহরণ।   

ঈমানদারের লক্ষ্য, শয়তানী শক্তির নির্মূলে জিহাদকে বেগবান করা। দেহের সাথে যেমন মগজের সম্পর্ক, ঈমানের সাথে তেমনি জিহাদের সম্পর্ক। নবীজী (সাঃ)র হাদীসঃ “যে ব্যক্তি জিহাদে অংশ নিল না, এবং জিহাদে কোনদিন অংশ নেয়ার ইচ্ছাও পোষণ করলো না -তার মৃত্যু হয় মুনাফিক রূপে।” সারা জীবনের নামায-রোযা ও হজ-যাকাত সে মুনাফেকি মোচন করতে পারে না। এবং মুক্তি দেয় না জাহান্নামের আযাব থেকেও। তাই সাহাবাদের মাঝে কোন একজন সাহাবাকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না যারা ইসলামের শত্রু নির্মূলের জিহাদে অংশ নেননি। ইসলামের জগত-বিখ্যাত সভ্যতার নির্মানে সাহাবায়ে কেরাম ও তাঁদের পরবর্তী মুসলিমদের সবচেয়ে বড় কোরবানীটি দিতে হয়েছে তো শত্রু নির্মূলের জিহাদে। এ কাজ মেধা চায়, শ্রম চায়, অর্থ ও রক্তের লাগাতর কোরবানীও চায়। বেশীর ভাগ সাহাবীকে তাই শহীদ হতে হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে ঘটেছে উল্টোটি। জনজীবনে জিহাদের রাজনীতি স্থান পায়নি। দেশটি পুরাপুরি অধিকৃত এমন এক অপশক্তির হাতে যারা বিলুপ্তি চায় জিহাদের রাজনীতির। তারা টানে, জিহাদ-বিমুখ জাতীয়তাবাদী বা সেক্যুলারিজমের রাজনীতিতে। সে রাজনীতিতে আছে ভাষা, বর্ণ বা দলীয় চেতনা নিয়ে ক্ষমতাদখলের লড়াই। জিহাদের চেতনা নিয়ে বেড়ে উঠা এ রাজনীতিতে অপরাধ। বাংলাদেশে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবীর কাজ হয়েছে ঘরে ঘরে গিয়ে জিহাদীদের গ্রেফতার করা এবং জিহাদবিষয়ক বই বাজেয়াপ্ত করা।

 

ঐক্যবিনাশী নাশকতা

ঐক্যের গুরুত্ব পশু-পাখিও বুঝে। পাখিরা তাই ঝাঁক বেধে উড়ে, পশুরা তাই দলবেধে চলাফেরা করে। পশুদের ঐক্যের ভিত্তিটি তাদের জৈবিক ও প্রজাতিগত মিল। কিন্তু মুসলমানের ক্ষেত্রে সেটি হলো আদর্শ ও আক্বিদার মিল। সে মিলের ভিত্তিতে ঐক্য গড়াটি ইসলামে ফরজ। এবং হারাম হলো অনৈক্যের পথে পা  রাখা। তাই মুসলিমকে শুধু মদ্যপান বা ব্যাভিচার থেকে বাঁচলে চলে না, বাঁচতে হয় অনৈক্য থেকেই। আদর্শিক বা ধর্মীয় মিলের বন্ধন যখনই মজবুত হয়, তখনই নানা ভাষা, নানা ভূগোল  ও নানা বর্ণের মুসলিমগণ একতাবদ্ধ বিশাল উম্মাহর জন্ম দেয়। একতার সে পথ বেয়েই অতীতে আরব, ইরানী, কুর্দি, তুর্কী, মুর –এরূপ নানা ভাষী মুসলিমগণ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জন্ম দিয়েছে বিশাল সভ্যতা ও অপরাজেয় রাজনৈতীক শক্তির। মু’মিনের ঈমান শুধু নামায-রোযাতে ধরা পড়ে না, ধরা পড়ে রাজনৈতিক ঐক্যের মাঝেও। অনৈক্যের  মাঝে প্রকাশ পায় বেঈমানী। ১৯৪৭ সালের পূর্বে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনামলে ঐক্যের গুরুত্ব যেমন ভারতীয় হিন্দুরা বুঝেছিল, তেমনি বুঝেছিল মুসলিমরাও। তাই ভাষা, গায়ের রং ও প্রাদেশিকতার উর্দ্ধে উঠে ভারতের বাঙালী, পাঞ্জাবী, বিহারী, গুজরাতি, মারাঠি, সিন্ধি -এরূপ নানা ভাষাভাষী হিন্দুরা যেমন এক পতাকা তলে জমা হয়েছিল, তেমনি একতাবদ্ধ হয়েছিল নানা ভাষাভাষী মুসলিমগণও। সে একতার বলেই ব্রিটিশ শাসক ও প্রতিবেশী হিন্দুদের বিরোধীতা সত্ত্বেও মুসলিমগণ ১৯৪৭’য়ে বিশ্বমাঝে সর্ববৃহৎ মুসলিম জনসংখ্যার রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল। কিন্তু মুসলিমদের সে বিজয় ও গৌরব শেখ মুজিব ও তার সহচর সেক্যুলারিস্টদের ভাল লাগেনি। তারা কোয়ালিশ গড়ে প্রতিবেশী কাফের শক্তির সাথে  এবং আঘাত হানে মুসলিম ঐক্যের মূল ভিত্তিতে। এবং সেটি বাঙালী জাতীয়তার নামে। বাঙালী মুসলিমের প্রায়োরিটই মুজিব পাল্টে দেয়। মুজিবের রাজনীতিতে মুসলিম রূপে বেড়ে উঠার বদলে গুরুত্ব পায় বাঙালী রূপে বেড়ে উঠা। কোর’আন থেকে শিক্ষা নেয়ার বদলে গুরুত্ব পায় রবীন্দ্র-সাহিত্য পাঠ। এভাবে মুজিবের রাজনীতি পরিণত হয় মুসলিমদের ঈমানশূন্য করার হাতিয়ারে। এ বিধ্বংসী কাজে বিশাল বিনিয়োগ হয় বিদেশী কাফের শত্রুদের। ফলে শুধু সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানই শুধু খন্ডিত হয়নি, বাংলার মাটি রঞ্জিত হয়েছে বহু লক্ষ মুসলিমের রক্তে। এভাবেই মুজিব বিজয় ও উল্লাস বাড়ায় বিশ্বের তাবত কাফের শিবিরে। এ বঙ্গীয় ভূমিতে যে ক্ষতিটি ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসক ও ভারতের হিন্দুগণ করতে পারিনি, সেটিই করেছে মুজিব।

হিন্দুধর্মে একতাবদ্ধ হওয়া ও একক রাষ্ট্র গড়াটি ধর্মীয় বিধান নয়। অথচ ইসলামে এটি ফরজ। শয়তান শুধু ব্যাভিচার, বেশ্বাবৃত্তি, মদজুয়া, সূদ-ঘুষের পথেই টানে না। টানে মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি গড়ার কাজেও। শয়তানের পক্ষ থেকে আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় বিদ্রোহটি নামায-রোযার অঙ্গণে হয় না, সেটি হয় রাজনৈতিক ময়দানে। যুগে যুগে ফিরাউন, নমরুদ ও আবু জেহেলদের হাতে রাজনীতি ব্যবহৃত হয়েছে ইসলামের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে হাতিয়ার রূপে। মুসলিম জীবনে রাজনীতির গুরুত্ব এজন্যই সর্বাধিক। শত্রুর আগ্রাসন থেকে রাজনীতির ময়দানটি পাহারা দেয়া এজন্যই পবিত্রতম ইবাদত তথা জিহাদ। এটি হাতছাড়া হলে নিজ ঘরে এবং মসজিদ-মাদ্রাসাতেও দ্বীন-পালন যথার্থ ভাবে হয় না। সম্ভব হয় না শরিয়ত নিয়ে বাঁচা।

বাংলাদেশে রাজনীতির অঙ্গণটি দখলে নেয়ার শয়তানী প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে দেশের সেক্যুলারিস্টগণ। এ কাজে তাদের শিরোমনি ছিল শেখ মুজিব। এবং এখন শেখ হাসিনা। এ কাজে তারা বিপুল সহায়তা পায় ভারতসহ বিশ্বের তাবত কাফেরদের থেকে। মুসলিমদের বড় বড় ক্ষতিগুলো কিছু লোকের ব্যভিচার, মদ-জুয়া, সুদ-ঘুষের কারণে হয়নি। সেটি হয়েছে রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও প্রশাসন শয়তানী শক্তির দখলে যাওয়াতে। রাজনীতির অঙ্গণে দুর্বৃত্তগণ তখন শয়তানের বিশ্বস্থ সৈনিকে পরিণত হয়। তখন বিজয়ী হয় ভাষা, বর্ণ, গোত্র ও আঞ্চলিকতার নামে বিভক্তি গড়ার শয়তানী প্রকল্প। বাংলার মুসলিমদের বিরুদ্ধে এটিই হলো মুজিব ও তার সেক্যুলারিস্ট সহচরদের সবচেয়ে বড় অপরাধ। আর এরূপ অপরাধ তো আল্লাহর আযাবকেই অনিবার্য করে তোলে।

 

রাজনীতি বিশ্বাসঘাতকতার

শেখ মুজিব ও তার সাথীদের রাজনীতির মূল গর্ব এবং মূল পুঁজিটি হলো ১৯৭১’য়ের যুদ্ধ, পাকিস্তানের পরাজয় এবং বাংলাদেশের সৃষ্টি। শেখ হাসিনার রাজনীতিও সে পুঁজি নিয়েই। এরূপ কাজ যে গর্বের নয়, বরং ভয়ানক অপরাধের -তা নিয়ে একটি বিহিত বিচার হওয়া উচিত। নইলে একাত্তরের বিজয়, স্বাধীন বাংলাদেশ ও একাত্তরের চেতনা নিয়ে যে দুর্বৃত্ত শ্রেণীর রাজনীতি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তা থেকে মুক্তি নেই। তবে প্রশ্ন হলো তেমন একটি বিচারের মানদন্ডটি কি হবে? সেটি যদি ভারতসেবী ইসলামের শত্রুপক্ষের হয়, তবে আওয়ামী লীগের একাত্তরের অর্জনটি বাংলার ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ কর্ম রূপে গণ্য হবে। পতিতালয়ে যাওয়া ব্যাভিচারীদের বিচারে ব্যাভিচার কখনোই অপরাধ নয়। তেমনি ইসলামের শত্রুদের কাছে অপরাধ নয় কোন মুসলিম দেশকে খন্ডিত করা ও মুসলিম উম্মাহর শক্তিহানী করা। বরং সে নাশকতা তাদের কাছে বিজয় ও গর্বের বিষয় গণ্য হয়। একাত্তর নিয়ে আওয়ামী লীগের মূল্যায়ন হয়েছে ইসলামশূণ্য চেতনা থেকে। কিন্তু সে বিচারটি যদি বিশুদ্ধ ইসলামী চেতনা নিয়ে হতো তবে রায়টি ভিন্নতর হতো। মুজিব ও তার সহচরদের একাত্তরের ভূমিকাটি গণ্য হতো সবচেয়ে বড় অপরাধ রূপে। বাঙালী মুসলিম ইতিহাসে মুজিব গণ্য হতো সবচেয়ে ঘৃণীত ব্যক্তি রূপে। তবে এটি সত্য, আজ না হলেও একদিন মুজিব ও তার সাথীদের বিচার বাংলাদেশের মাটিতে হবেই। কারণ, দেরীতে হলেও ইসলামের বিজয় একদিন আসবেই। তখন মীর জাফরের ন্যায় মুজিবেরও স্থান হবে কুখ্যাত ব্যক্তি রূপে ইতিহাসের আস্তাকুঁরে। বিষয়টি হাসিনা ও তার বাকশালী সহচরগণও বুঝে। ইসলামের বিজয় রুখতে এজন্যই হাসিনার অবৈধ সরকারের এতো নৃশংস আয়োজন।

জন্ম লাভের পর থেকেই পাকিস্তানে প্রচুর সমস্যা ছিল। দেশটির দুটি অংশের মাঝে বারো শত মাইলের ফারাক থাকায় সে সমস্যায় প্রচণ্ড জটিলতাও ছিল। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যও ছিল। এসব সমস্যার কি সমাধান ছিল না? বহু সমুদ্র ও বহু হাজার মাইলের ফারাক থাকার পরও বাংলা ১৯০ বছর যাবত ইংরেজদের সাম্রাজ্যভূক্ত থেকেছে। সমস্যাগুলি বুঝা ও তার সমাধান নিয়ে যতটা চেষ্টা হয়েছে, তার চেয়ে বেশী হয়েছে রাজনীতির গুটি রূপে সেগুলির ব্যবহার। সবচেয়ে বেশী হয়েছে তা নিয়ে ষড়যন্ত্র পাকাতে। শেখ মুজিবের অভিযোগ ছিল, তার বিরুদ্ধে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অথচ শেখ মুজিব নিজে ষড়যন্ত্র করেছেন পাকিস্তানের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে এবং সেটি করেছেন পাকিস্তানের আজন্ম শত্রু ভারতের সাথে মিলে সংগোপনে। আগরতলা ষড়যন্ত্র যে শতভাগ সত্য ছিল -সেটি বেরিয়ে আসে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর। এখন এ ষড়যন্ত্রকে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ নিজেদের জন্য গর্বের বিষয় রূপে গণ্য করে। যাদের বিরুদ্ধে সে মামলায় সেদিন অভিযোগ আনা হয়েছিল, তারাই এখন সে সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বাহাদুরীও জাহির করছে। ফলে যারা বলে, মুজিব বাংলাদেশ স্বাধীন করার সিদ্ধান্তটি নেন ২৫শে মার্চ পাকিস্তান আর্মির এ্যাকশনের পর, তারা সত্য বলে না। মুজিব সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অনেক পূর্বেই। এবং নিয়েছিল ভারতের সাথে মিলে। আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতা এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব আব্দুর রাজ্জাক সাপ্তাহিক মেঘনায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলে, মুজিব তাদেরকে ভারতের সাথে যোগাযোগ করতে বলেছিলেন। সেখান থেকে সাহায্য মিলবে সে আশ্বাসও দিয়েছেন। মুজিবের ষড়যন্ত্র শুধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছিল না, ছিল সমগ্র মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে। কারণ তার ষড়যন্ত্রে শুধু পাকিস্তান দুর্বল হয়নি। দুর্বল হয়েছে বাংলাদেশও। দুর্বল হয়েছে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ। এজন্যই ভারত, রাশিয়া, ইসরাইলসহ তাবত মুসলিম-বিরোধী  শক্তি মুজিবকে সমর্থণ করেছে।  মুজিবের কারণে ভারতের থাবায় পড়েছে বাংলাদেশের ১৭ কোটি মুসলিম। বাঙালী মুসলিমগণ বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ রূপে বিশ্বরাজনীতিতে যে প্রভাব ফেলতে পারতো সে সুযোগও ধূলিস্যাৎ হয়ে যায়।

পাকিস্তান পারমানবিক শক্তিধারি একটি দেশ। তাছাড়া দেশটির হাতে রয়েছে মুসলিম বিশ্বের সববৃহৎ সামরিক বাহিনী। পাকিস্তানের ভৌগলিক অবস্থানও অতি গুরুত্বপূর্ণ। মধ্য এশিয়ায় প্রবেশের সহজতম রাস্তাটি পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে। ফলে মুসলিম বিশ্বের রাজনীতিতে পাকিস্তান একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। রাজনীতিতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার জন্য বহু অর্থ, বহু শ্রম ও বহু জীবন নাশের মধ্য দিয়ে অন্যরা নিজ দেশের ভূগোল বাড়ায়। ইসলাম শুধু মনের জগতে বিপ্লব আনে না, বিপ্লব চায় বিশাল মানচিত্রের রাজনৈতিক ভূগোলেও। রাজনৈতিক ভূগোল না বাঁচালে মনের ভূবনে আদর্শিক মানচিত্রটি বাঁচে না। ভূগোল যত ছোট হয় ততই কমে সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি। ততই কমে আদর্শিক বল। সে ভূগোল বাড়ানোর তাগিদেই ইখতিয়ার মহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি বাংলাদেশ জয় করেছিলেন। সে একই কারণে নবীজী (সাঃ) রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী কন্সটান্টিনোপল দখলের নসিহত করে গিয়েছিলেন।

বিড়াল যত মোটা-তাজাই হোক, বাঘের বল পায় না। কাতার, কুয়েত বা সৌদি আরব যত তেলগ্যাসই পাক না কেনও, কোনদিনই সে দেশগুলি ভারতের ন্যায় শক্তিশালী হবে না। কারণ, ভারতে নানা ভাষাভাষি হিন্দুদের মাঝে যে একতা, সেরূপ একতা নিয়ে কাতার, কুয়েত ও সৌদি আরব গড়ে উঠেনি। ইজ্জত নিয়ে বাঁচার লড়াই তাই ভূগোল বাড়ানো বা ভূগোলকে প্রতিরক্ষা দেয়ার লড়াই। ভারত তাই সিকিম ও কাশ্মির দখলে নেয়।  মুসলমান হওয়ার অর্থই হলো, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে কসমোপলিটান হওয়া –তথা অন্য ভাষা ও অন্য অঞ্চলের মানুষের প্রতি সহনশীল হওয়া। নইলে দেশের ভূগোল বাড়ে না, ভূগোলের প্রতিরক্ষাও দেয়া যায় না। উমাইয়া, আব্বাসীয় ও উসমানিয়া খেলাফত ছিল কসমোপলিটান। কিন্তু সেটি যেমন কাতার, কুয়েত ও সৌদি আরবে নাই, তেমনি বাংলাদেশেও নাই। সেটি না থাকাতে বাংলাদেশে অবাঙালীদের কোন মর্যাদা নাই্। অথচ পাকিস্তান, ইরান ও তুরস্ক সীমিত ভাবে হলেও নানা ভাষাভাষীর মানুষদের নিয়ে কসমোপলিটান দেশ। ফলে তাদের সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বলও অন্য যে কোন মুসলিম দেশের চেয়ে অধিক। এ সত্য কি অস্বীকারের উপায় আছে?

 

ষড়যন্ত্রটি আত্মধ্বংসের

বাংলাদেশের তিন দিক জুড়ে ভারত। ভারত জেঁকে বসেছে বাংলাদেশের রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও প্রশাসনে। কারা ক্ষমতায় আসবে সেটিও নির্দিষ্ট করে দিচ্ছে ভারত। সুষ্ঠ নির্বাচনে যেহেতু বিজয় সম্ভব নয়, হাসিনাকে তাই ক্ষমতায় বসিয়েছে ভোট-ডাকাতির মাধ্যমে। হাসিনার ভোট-ডাকাত সরকারকে গ্রহণযোগ্য করতে ভারতীয় দূতাবাসগুলি অভিভাবক রূপে বিশ্বব্যাপী ওকালতি করছে। এভাবে  বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে ভারতের অধীনত এক গোলাম রাষ্ট্রে। সংখ্যায় বিশাল হলেও রাজনীতিতে গোলামদের গুরুত্ব থাকে না।তাই বিশ্বরাজনীতিতে  গুরুত্ব নাই বাংলাদেশের ১৭ কোটি পরাধীন মানুষেরও। আর এ অপমান অর্জিত হয়েছে আওয়ামী রাজনীতি বিজয়ী হওয়াতে।

মুজিবের অপরাধ অনেক। তার দুর্নীতি এবং বিশ্বাসঘাতকতাও বিশাল। গণতন্ত্র হত্যা, ৩০ হাজার মানুষ হত্যা, স্বাধীন মিডিয়া ও মানাবাধিকার হত্যা, দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি, জালপড়া বাসন্তি সৃষ্টি এবং দেশকে তলাহীন ভিক্ষার ঝুড়িতে পরিণত করার ন্যায় নানা অপরাধসহ অতি গুরুতর অপরাধ মুজিবের। তবে শেখ মুজিবের সবচেয়ে বড় অপরাধটি হলো, বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষকে ভারতের গোলামীর জিঞ্জিরে বন্দী করার। এতে ভারতের হিন্দুদের ন্যায় বাংলাদেশের হিন্দুরাও প্রচন্ড খুশি। কিন্তু তাতে বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছে সমগ্র উপমহাদেশের মুসলিমদের সাথে। বাংলাদেশে হয়তো গণতন্ত্রও প্রতিষ্ঠা পাবে। হয়তো স্বাধীন পত্র-পত্রিকাও প্রকাশিত হবে। জালপড়া বাসন্তিরাও হয়তো কাপড় পাবে।  কিন্তু ভারতের বন্দী দশা থেকে কি মুক্তি মিলবে? এ কাজটি চাষাবাদ, ডালভাত বা বস্ত্রের ন্যায় সহজ নয়। বিগত ৬০ বছরের বেশী কাল ধরে কাশ্মিরী জনগণ ভারতের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে। ধর্ষিতা হচ্ছে কাশ্মিরী নারী। নিহত হচ্ছে তাদের হাজার হাজার যুবক। কিন্তু বেরিয়ে আসতে পারছে কি? পারিনি। কারণ সে জন্য তো সামরিক বল চাই। অস্ত্রধারিরা তো শুধু অস্ত্রের ভাষাই বুঝে। বাঘের সাথে বিড়ালের কখনোই শান্তি হয় না। পাকিস্তান তো সে প্রয়োজনকে সামনে রেখেই পারমানবিক বোমা বানিয়েছে। সে সাথে দূরপাল্লার মিজাইল ও বিশাল সেনা বাহিনী গড়ে তুলেছে। সে পথেই চলেছে ইরান। এগুলি অর্জন করা তাদের জন্য বিলাসীতা নয়, বরং ইজ্জত নিয়ে বাঁচার জন্য অনিবার্য প্রয়োজন।

ইজ্জত নিয়ে বাঁচার খরচটি বিশাল। সেটি শুধু চাল-ডাল, আলু-পটল, গার্মেন্টস বাড়িয়ে হয় না। বিদেশে নারীপুরুষের রপ্তানী বাড়িয়েও হয় না। সে জন্য বিশাল অর্থ ও মেধার বিনিয়োগ চাই, তেমনি বিনিয়োগ চাই বিশাল রক্তের। চাই বিশাল ভূগোল। নইলে আগ্রাসী শক্তির হাতে অধিকৃত কাশ্মীর, ইরাক বা আফিগানিস্তান হতে হয়।ভূগোল বাড়ানোর তেমনি এক উপলদ্ধি নিয়েই ১৯৪৭ সালে বাংলার মুসলিমগণ সজ্ঞানে পাকিস্তান ভূক্ত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালী মুসলিমের ১৯৪৭ সালের পাকিস্তানভূক্তির ফয়সালাকে ১৯৭১য়ে এসে হঠাৎ পাল্টাতে হবে -তেমন কারণ কোন কারণই ছিল না। পাকিস্তান থেকে বেড়িয়ে আসার বিষয়টি ছিল একটি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেটি ছিল গভীর চিন্তাভাবনার বিষয়। ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান গড়া নিয়ে ভারতীয় মুসলমানগণ ১০বছরের বেশী কাল ধরে চিন্তাভাবনা করেছে। এরপর তা নিয়ে ভোটভুটি হয়েছে। সে ভোটে বাংলায় ১১৯ সিটের মধ্যে ১১৬ সিট পাকিস্তানের পক্ষে অর্জিত হয়েছে। অথচ সেরূপ ভোটভুটি পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ নির্মাণ নিয়ে হয়নি। এতবড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মুজিব রিফারেন্ডাম চায়নি। সিদ্ধান্তটি নেয় মুজিব নিজে ও তার দলীয় ক্যাডারগণ। রিফারেন্ডাম হলে পাকিস্তান ভাঙার এজেন্ডা হেরে যেত বলেই মুজিব সেটি চায়নি।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান ভাঙ্গা কোন নির্বাচনি ইস্যু ছিল না। ১৯৭০’য়ের নির্বাচনে শেখ মুজিব ভোট নেয় প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন, বৈষম্য হটানো ও ৮ আনা সের চাল খাওয়ানো প্রতিশ্রুতি দিয়ে। স্বপ্ন দেখায় সোনার বাংলা বানানোর। তার নির্বাচনি বিজয়ের ফলে হ্যাইজ্যাক হয়ে যায় দেশবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীন মতামত। এবং ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর আগ্রাসী হামলার। এভাবে চাপিয়ে দেয় এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। পুরা দেশবাসী পরিণত হয় জিম্মিতে। হ্যাইজ্যাকার কি জিম্মিদের মতামদের তোয়াক্কা করে? মুজিবও করেননি। নিজের ও তার প্রভু দিল্লির শাসকের মতামতকে চাপিয়ে দেয় জনগণের উপর। এবং সেটিও গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে। যারাই তার মতের বিরোধীতা করেছে তাদের উপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন ও মৃত্যু।

স্বার্থহানী বাঙালী মুসলিমের

অখন্ড পাকিস্তানে বাঙালী মুসলিমগণই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই কায়েদ আযমের মৃত্যুর পর ঢাকার নওয়াব খাজা নাজিমুদ্দীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান ও পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন বগুড়ার মহম্মদ আলী এবং হাসান শহীদ সহরোয়ার্দী। শুধু উপমহাদেশের রাজনীতিতে নয়, বিশ্বমুসলিম রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার স্বার্থেই ১৯৪৬ সালে দিল্লিতে মুসলিম লীগের পার্লামেন্টারী পার্টির বৈঠকে ১৯৪০ সালে পাশকৃত লাহোর প্রস্তাবকে সংশোধন করে বাংলাকে পাকিস্তানভূক্ত করার প্রস্তাব আনেন মুসলিম লীগ নেতা ও বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্র হাসান শহীদ সহরোয়ার্দী। তাঁকে সমর্থণ দেন বাংলার সকল মুসলিম পার্লামেন্টারীয়ানগণ। আজ তাদের সে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের কোন মূল্যায়ন নাই। অথচ বাংলার বুকে ইখতিয়ার বিন বখতিয়ার খিলজির বিজয়ের পর এটিই ছিল বাংলার মুসলিম ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। পাকিস্তান ভূক্তি বাংলার মুসলমানদের সামনে সম্ভাবনার এক নতুন দোয়ার খুলে দেয়। অথচ মুজিব ১৯৭১’য়ে সেটি নস্যাৎ করে দেয়। বাঙালী মুসলমানদের অধিকারের বিরুদ্ধে এটি ছিল বিশাল গাদ্দারি। অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে দেশভাঙ্গার যুদ্ধে পরিণত করা হয়।

বিভক্তির কুফল যে কত মারাত্মক তার প্রমাণ ভারতীয় মুসল মগণ। ভারতীয় মুসলিমদের সংখ্যা অন্য যে কোন মুসলিমদের চেয়ে অধীক। কিন্তু তারা ইংরেজের গোলামী করেছে দীর্ঘকাল। অথচ আফগানিস্তান, ইরান ও তুরস্কের মুসলিমগণ সংখ্যায় ভারতীয় মুসলিমদের থেকে কম হয়েও তারা সাম্রাজ্যবাদীদের রুখতে সমর্থ হয়েছিল। ভারতীয় মুসলিমদের পরাজয়ের মূলে ছিল তাদের নানা ভাষা, নানা গোত্র ও নানা অঞ্চলের নামে বিভক্তি। আফগানিস্তানের জনসংখ্যা যখন এক কোটিরও কম ছিল তখনও ব্রিটিশগণ একাধিক বার হামলা করেও তাদের পরাস্ত করতে পারিনি। হামলা করেছে ইরানের উপরও। ইরানে ফার্সি, তুর্কি, তুর্কমেনি, কুর্দি, বেলুচ, লোর, আরব এরূপ নানা ভাষাভাষীর মানুষের বাস। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদীদের হামলায় তারা সবাই ছিল একতাবদ্ধ। তেমনি আফগানিস্তানেও রয়েছে পখতুন, হাজারা, উযবেক, কিরগিজ, আরবী, ফার্সি ভাষাভাষী বহু গোষ্ঠীর বসবাস। তাদের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মোকাবেলার মূলে ছিল তাদের একতা।

ভারতীয় মুসলিমগণ একতার গুরুত্বটি অনুধাবন করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে গোলাম হওয়ার পর। নামায দিনে ৫ বার এবং রোযা বছরে এক মাস আদায় করলে চলে। অথচ মুসলিমকে একতা নিয়ে বাঁচতে হয় প্রতিদিন ও প্রতিক্ষণ। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে হুকুম হলো, “তোমরা আল্লাহ রশি (কোরআন তথা ইসলামকে) আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” বিচ্ছিন্নতা তাই ইসলামে হারাম। তাই মুসলিম দেশ ভাঙ্গাটি শয়তানের কাজ। যখনই শয়তানের এজেন্টা পূরণে মুসলিমগণ বিভক্তির পথে পা রেখেছে তখনই মহান আল্লাহতায়ালা রহমত থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছে। শাস্তি স্বরূপ এসেছে আযাব। ভারতীয় মুসলিমদের ঘাড়ে ইংরেজগণ জেঁকে বসেছিল সে কারণেই। সেটির শুরু হয়েছিল বাংলার বুক থেকে। এবং শুরুটি পলাশীর ময়দানে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে নয়, বরং বহু আগে দিল্লির শাসন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা রাষ্ট্র নির্মানের মধ্য দিয়ে।

বাংলার সে বিচ্ছিন্নতা শুধু দিল্লির মুসলিম শাসনকেই দুর্বল করেনি, বাংলার মুসলিমগণও প্রতিরক্ষাহীন হয়েছে। দিল্লির ভান্ডারে সবচেয়ে বেশী রাজস্ব যেত বাংলা থেকে। কিন্তু নবাব আলীবর্দীর হাতে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দিল্লির শাসকদের শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলার আর্থিক সামর্থ্য ছিল না। আর বাংলার ছিল না লড়াকু লোকবল। ফলে নবাব সিরাজদৌল্লার সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করতে রাজকীয় ইংরেজ সেনাবাহিনীর প্রয়োজন পড়েনি। ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানীর ভাড়াটিয়া গার্ডগণই বাংলাকে দখল করে নেয়। দিল্লির মুসলিম শাসন থেকে বিচ্ছিন্নতা বাংলাকে তাই স্বাধীনতা দেয়নি, দিয়েছে ব্রিটিশের পদতলে ১৯০ বছরের গোলামী। সমগ্র মুসলিম বিশ্বে বাংলার মুসলিমগণই পরিণত হয় ব্রিটিশ শাসনের সর্বপ্রথম গোলামে। তখন বাংলার মুসলিমদের ঘাড়ে চাপে দুটি জোয়ালঃ একটি ব্রিটিশের ঔপনিবেশিক লুন্ঠনের, অপরটি হিন্দু জমিদারদের। ফলে  বাংলার মুসলিমদের পক্ষে এককালে দরিদ্র হওয়া যেখানে অসম্ভব ছিল সেখানে তাদের পক্ষে স্বচ্ছল থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। একই ঘটনা ঘটেছে একাত্তরে। পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্নতা উপহার দিয়েছে ভারতের গোলামী। আর সে গোলামীকেই আজ স্বাধীনতা বলা হচ্ছে। ১ম সংস্করণ, ১৫/০৬/২০১৩; ২য় সংস্করণ ২/১১/২০২০।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *