মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটি প্রসঙ্গে
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on November 21, 2020
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
চুড়ান্ত ব্যর্থতা ও সফলতার বিষয়
আজকের মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা এ নয়, শিল্প-কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সম্পদে পিছিয়ে আছে। বরং সবচেয়ে বড়টি ব্যর্থতা হলো, তারা ব্যর্থ হয়েছে ইসলামী রাষ্ট্র গড়তে। সভ্য ভাবে জীবনযাপন বনে জঙ্গলে সম্ভব নয়, সে জন্য আপদমুক্ত পরিবেশে নিরাপদ ঘর গড়তে হয়। তেমনি শত্রুকবলিত বিশ্বে নিরাপদ রাষ্ট্রও গড়তে হয়। ঘরবাড়ী তো চোর-ডাকাত, ধর্ষক এবং খুনিও গড়তে পারে। জাতির যোগ্যতা ধরা পড়ে দুর্বৃত্তমুক্ত সভ্যতর রাষ্ট্র গড়ার মধ্যে। রাষ্ট্র যখন গুম, খুন, চুরিডাকাতি, ভোট-ডাকাতি, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের নায়কদের হাতে অধিকৃত হয়, তখন স্রেফ অসভ্যতাই বাড়ে। তখন ঈমান-আক্বিদা, ইজ্জত-আবরু ও জান-মালের নিরাপত্তা নিয়ে বসবাস অসম্ভব হয়। অসম্ভব হয় পূর্ণভাবে ধর্ম পালন। তাই সভ্য রূপে বসবাসের জন্য ঘরাবাড়ি, রাস্তাঘাট ও কলকারখানা নির্মাণের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো সভ্য রাষ্ট্র গড়া। এ পৃথিবী পৃষ্টে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ নাই। ক্ষেতের আখ যেমন চিনিতে পরিণত হয় চিনিকলের গুণে, তেমনি উন্নত মানব ও উচ্চতর সভ্যতা তো গড়ে উঠে রাষ্ট্রের গুণে। শ্রেষ্ঠতর বিজ্ঞান তাই সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের বিজ্ঞান। নবীজী (সাঃ) তাই মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর নিজের ঘর না গড়ে ইসলামী রাষ্ট্র গড়ার সর্বশ্রেষ্ঠ কর্মে মনোযোগী হয়েছিলেন। রাষ্ট্রনায়কের কাজটি তিনি নিজ হাতে তূলে নিয়েছিলেন। নবীজী (সাঃ) তাই শুধু ওযু, তায়াম্মুম, নামায-রোযা, হজ্ব-উমরাহ’র ন্যায় ইবাদতের পদ্ধতিই শিখিয়ে যাননি, বরং ১০ বছর যাবত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে হাতে কলমে শিখিয়ে গেছেন রাষ্ট্র নির্মাণ ও পরিচালনার পদ্ধতিও। যার মধ্যে ঈমান আছে এবং নবীজী (সাঃ)’র প্রতি সামান্যতম ভালবাসা আছে সে কি নবীজী (সাঃ)’র এ গুরুত্বপূর্ণ সূন্নত পালনে অমনোযোগী হতে পারে? কি করে রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে পারে?
ইসলাম বিশ্ববাসীকে বহু কিছুই দিয়েছে; কিন্তু ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দানটি হলো ইসলামী রাষ্ট্র। সে রাষ্ট্রের হাত দিয়েই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা। শরিয়তের ন্যায় মহান আল্লাহতায়ালার শ্রেষ্ঠদান তখন কিতাবে বন্দী থাকেনি, বরং সমাজে তা পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। তখন প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল আইনের শাসন। কিন্তু আজকের মুসলিমগণ মসজিদ-মাদ্রাসায় গড়ায় মনযোগী হয়েছে, কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্র গড়ায় নয়। নবীজী (সাঃ)র আমলে মদিনায় মসজিদে নববী ভিন্ন কোন মসজিদ ছিল না, অথচ বাংলাদেশে প্রতি গ্রাম ও প্রতি মহল্লায় একাধিক মসজিদ। তাতে ইসলামের বিজয় না এসেছে বিজয় বেড়েছে শয়তানের। শয়তানের এজেন্ডা হলো মানব সন্তানদের জাহান্নামে নেয়া। সে জন্যই চায়, পৃথিবীর কোন প্রান্তে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীন যেন বিজয়ী না হয়। চায়, তাঁর শরিয়তি বিধান যেন প্রতিষ্ঠা না পায়। এবং শয়তান কখনোই চায় না মুসলিমগণ বেড়ে উঠুক বিশ্বশক্তি রূপে। এই জন্যই শয়তানী শক্তিবর্গ মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় বাধা দেয় না, সেগুলি নির্মূল করে না। বরং নির্মূল করে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের যে কোন উদ্যোগ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাই ঘোষণা দিয়েছিল, পৃথিবীর কোন প্রান্তে যদি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয় তবে সেটি বোমা মেরে ধুলিস্যাৎ করা হবে। যেন ইবলিস তার মুখ দিয়েই নিজের এজেন্ডার ঘোষণা দিয়েছিল। ইসরাইল, মিশর, ভারত, সৌদি আরব, সিরিয়া, মায়ানমারসহ পৃথিবের নানা প্রান্তে বহু দুর্বৃত্ত শাসক নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। বহু দেশে গণহত্যা হচ্ছে নিয়মিত। পদদলিত হচ্ছে মৌলিক মানবিক অধিকার। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্য দেশগুলি সেগুলি নির্মূলের কথা বলে না। বরং সে সব দুর্বৃত্তদের নৃশংসতা বাড়াতে অস্ত্রের জোগান দেয়।
মানবাধিকার, নারীর অধিকার, দারিদ্রমুক্তি, দাসমুক্তি, দুর্বৃত্তিমুক্তি, ন্যায় বিচার, আইনের শাসন –এরূপ ভাল ভাল কথা বহু মানবই অতীতে বলে গেছেন। কিন্তু নবীজী (সাঃ)ই হলেন একমাত্র মহামানব যিনি ভাল ভাল কথা শুধু মুখ দিয়ে উচ্চারণ করেই দ্বায়িত্ব সারেননি, বরং সেগুলিকে কার্যেও পরিণত করেছেন। এবং সেটি সম্ভব হয়েছিল তাঁর হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থাকার কারণে। রাষ্ট্রই হলো পৃথিবী পৃষ্ঠে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি শয়তানের শক্তির হাতে থাকলে কোন নেক কর্মই করা সম্ভব নয়। মশা-মাছি যেমন আবর্জনার স্তুপে বেড়ে উঠে, তেমনি দুর্বৃত্তরা বেড়ে দুর্বৃত্ত কবলিত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলিতে। মশা-মাছির উপদ্রব কমাতে এজন্যই আবর্জনার নির্মূলে সচেষ্ট তে হয়। এজন্যই সবচেয়ে বড় নেককর্ম হলো রাষ্ট্রের বুক থেকে শয়তানী শক্তির নির্মূল এবং সেটিকে নিজ দখলে নেয়া। ঈমানদারদের রাজনীতির এটিই তো মূল এজেন্ডা। শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ে বা নামাযীর সংখ্যা বাড়িয়ে সেটি সম্ভব নয়। নির্মূলের সে কাজটি যাতে অবিরাম হয় সে জন্য রাজনীতিতে অংশ নেয়াকে নবীজী (সাঃ) তাঁর উম্মতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূন্নত রূপে প্রতিষ্ঠা দেন। সে সূন্নতটি পালন করেছেন সাহাবায়ে কেরামও। ঈমানদারের জীবনে জিহাদ আসে এবং সে জিহাদে শাহাদত আসে মূলত রাজনীতিতে অংশ নেয়ার কারণে। স্রেফ নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাতে নিজেকে সীমিত করলে সে মহান মুহুর্তগুলি জীবনে কখনোই আসে না। এজন্যই বাংলাদেশের মত দেশগুলিতে নামাযী, হাজী, আলেম ও পীরদের সংখ্যা বিপুল ভাবে বাড়লেও শহীদের সংখ্যা বাড়ছে না।
মুসলিমদের পতনের কারণ, ইসলামের বহু ফরজ বিধান এবং নবীজী (সাঃ)’র বহু সূন্নত থেকে তারা দূরে সরেছে। তবে সবচেয়ে কারণটি হলো, তারা দূরে সরেছে নবীজী (সাঃ)’র রাজনীতির সূন্নত থেকে। নবীজী (সাঃ)’র পবিত্র এ সূন্নতটি যে শুধু সাধারণ মুসলিমদের দ্বারা অমান্য হচ্ছে তা নয়, বরং সবচেয়ে বেশী অমান্য হচ্ছে তাদের দ্বারা যারা সমাজে আলেম নামে পরিচিত। রাষ্ট্রনায়কের যে আসনে খোদ নবীজী (সাঃ) বসেছেন এবং বসেছেন হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত উমর (রাঃ), হযরত উসমান (রাঃ), এবং হযরত আলী (রাঃ)’র ন্যায় মহান সাহাবাগণ -সে আসনে বসায় তাদের আগ্রহ নাই। চেষ্টাও নাই। বরং রাজনীতি থেকে আলেমদের দূরে থাকার কারণে সে পবিত্র আসন দখলে গেছে ইসলামের শত্রুদের হাতে। বরং বিস্ময়ের বিষয়, রাজনীতি থেকে দূরে থাকাটি তাদের কাছে গণ্য হয় রুহানী পবিত্রতা রূপে। এবং রাজনীতি গণ্য হয় ক্ষমতালোভীদের দুষ্ট পেশা রূপে। প্রশ্ন হলো, রাজনীতি যদি দুষ্ট পেশা হয় তবে নবীজী (সাঃ) কেন রাষ্ট্রনায়ক হলেন? এতে কি তাঁর রুহানী পবিত্রতা বিনষ্ট হয়েছিল?
রাজনীতি হলো রাষ্ট্রীয় অঙ্গণকে শয়তানের দখলদারী থেকে মূক্ত করার হাতিয়ার। এটি শুধু নবীজী (সাঃ)’র সূন্নতই নয়, বরং পবিত্র জিহাদ। শয়তান চায় ঈমানদারদের হাত থেকে রাজনীতির এ হাতিয়ারকে কেড়ে নিয়ে নিরস্ত্র করতে চায়। তখন সহজ হয় বিনাযুদ্ধে রাষ্ট্রের উপর শয়তানী শক্তির দখলদারী। এজন্যই শেখ মুজিব রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পাওয়া মাত্র ইসলামপন্থিদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিল। নিষিদ্ধ করেছিল ইরানের শাহ, সিরিয়ার হাফেজ আল আসাদ এবং মিশরের জামাল আব্দুন নাসেরের ন্যায় ইসলামের দুশমনগণ। একই কারণে জনগণের জন্য রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সকল স্বৈরাচারি শাসকগণ। হিফাজতে ইসলামের রাজনীতি রুখতে শেখ হাসিনা তাই শাপলা চত্ত্বরে গণহত্যা ঘটিয়েছিল। এবং ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের।
শয়তানের এজেন্ডা এবং মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা
শয়তান চায় ইসলামে অঙ্গিকারহীন সেক্যুলার রাজনীতি। চায়, রাজনীতির অঙ্গণে ইসলামবিরোধী শক্তির অধিকৃতি। চায়, বহু টুকরায় বিভক্ত মুসলিম উম্মাহর দুর্বল ভূগোল। চায়, শরিয়তমুক্ত আদালত। চায়, কোর’আন মুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা। সর্বোপরি শয়তানের লক্ষ্য হলো, সকল মানব শিশুকে জাহান্নামে নেয়া। অপর দিকে মহান আল্লাহতায়ালা চান, রাজনীতির অঙ্গণে ইসলামের বিজয়। চান, মুসলিম উম্মাহর মাঝে সীসাঢালা প্রাচীরসম ঐক্য। চান, ভাষা-বর্ণ-আঞ্চলিকতার উর্দ্ধে উঠে মুসলিম উম্মাহর বিশাল ভূগোল। চান, আদালতে তাঁর দেয়া শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা। চান, প্রতিটি মানব সন্তানের জন্য কোর’আনের জ্ঞান। সর্বোপরি চান, প্রতি মানব সন্তানকে জান্নাতে নিতে। বিস্ময়ের বিষয় হলো, মহান আল্লাহতায়ালা যা চান -তা নিয়ে মুসলিমদের ভ্রক্ষেপ নাই। তারা ব্যস্ত শয়তান যা চায় সেগুলি বিজয়ী করতে। মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা গুরুত্ব পেলে কি মুসলিম বিশ্ব ৫৭ টুকরায় বিভক্ত হতো। ভারতে ভাষার সংখ্যা প্রায় ৭৮০টি। সরকারি ভাবে স্বীকৃত ভাষার সংখ্যা ২২টি। বর্ণ ও ধর্মের সংখ্যাও অনেক। তাছাড়া নানা বর্ণ ও নানা ভাষাভাষীর মাঝে একতা গড়া হিন্দু ধর্মে বাধ্যতামূলকও নয়। এরপরও ভারতে একত্রে একই ভূগোলে বসবাস করে ১২০ কোটি মানুষ। অপর দিকে আরব ভূ-খন্ডে ভাষা এক, অধিকাংশ মানুষের ধর্ম এবং বর্ণও এক। অথচ আরব ভূ-খন্ড বিভক্ত ২২ টুকরায়। শরিয়তের শাসন যেমন ভারতে নাই, সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া আরব বিশ্বেও নাই। অতএব শয়তানের এজেন্ডা কোথায় অধিক বিজয়ী? বিষয়টি তো যে কোন ঈমানদারের বিবেকে ঝড় তোলার মত। কিন্তু তা নিয়ে ক’জন চিন্তিত। বরং বিভক্ত মানচিত্র নিয়ে প্রতিটি মুসলিম দেশে উৎসব হয়!
মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে চরম বিদ্রোহটি শুধু নাস্তিক হওয়া বা মুর্তিপূজারী হওয়ার মধ্য দিয়ে ঘটে না। সেটি ঘটে উম্মাহর মাঝে বিভক্তি এবং আদালতে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা না দেয়ায়। এমন বিদ্রোহ আযাব নামিয়ে আনে। মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে কি এ ব্যর্থতার কৈফিয়ত দিতে হবে না? একটি দেশে সমাজতন্ত্রিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে সে দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়। তেমনি পুঁজিবাদ বা সেক্যুলারিজমের প্রতিষ্ঠা বাড়ে যদি সে মতবাদের অনুসারিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়। তেমনি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে শরিয়ত প্রতিষ্ঠা পাবে সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? তাই দেশে কতগুলি মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মিত হলো বা কতজন আলেম তৈরি হলো -মহান আল্লাহতায়ালার কাছে সেটিই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। বরং অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো, ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণে কতটা অগ্রগতি হলো -সেটি। কারণ মহান আল্লাহতায়ালা চান তার দ্বীনের বিজয় এবং শরিয়তের প্রতিষ্ঠা। শরিয়তের প্রতিষ্ঠা মসজিদের জায়নামাযে বা মাদ্রাসার ক্লাসরুমে হয় না। সেটি ঘটে রাষ্ট্রের চৌহদ্দিতে। বিস্ময়ের বিষয় হলো, মাত্র কয়েক লক্ষ সাহাবী ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে কাজটি করতে পেরেছিলেন, আজকের দেড়শত কোটি মুসলিম সেটি পারছে না। এ ব্যর্থতাটি আরো বিশাল ব্যর্থতার জন্ম দিয়েছে। এ ব্যর্থতা নামিয়ে এনেছে মহান আল্লাহতায়ালার আযাব।
মুসলিমগণ পেয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ দান। সেটি হলো পবিত্র কোর’আন। এ পবিত্র আমানতের সাথে তাদের খেয়ানতটি অতি বিশাল। একমাত্র কোর’আনেই রয়েছে পার্থিব ও পারকালীন সাফল্যের রোডম্যাপ। এটি হলো সকল নৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক রোগমুক্তির প্রেসক্রিপশন। কিন্তু মুসলিমদের অপরাধ, মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া প্রেসক্রিপশনের বদলে তারা গ্রহণ করেছে শয়তানী পক্ষের দেয়া প্রেসক্রিপশনকে। ফলে মুসলিম দেশের আদালতে শরিয়তী আইনের বদলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে কাফেরদের দেয়া আইন। একতার বদলে তারা নিয়েছে বিভক্তির পথ; ৫৭টি ন্যাশন স্টেটের নামে তারা গড়েছে বিভেদ ও বিভক্তির দেয়াল।
ইহুদীদের পথে মুসলিমেরা
আল্লাহর দ্বীনের মূল কথা হলো তাঁর আনুগত্য। সেটি তাঁর প্রতিটি হুকুমের প্রতি। কিন্তু বনি ইসরাইলের লোকেরা তথা ইহুদীরা ইতিহাস গড়েছিল আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে। মহান আল্লাহতায়ালা তাদের সে অবাধ্যতার কাহিনী পবিত্র কোর’আনে বার বার তুলে ধরেছেন। একটি জাতির জীবনে এমন অবাধ্যতা কিভাবে পরাজয় ও বিপর্যয় ডেকে আনে বার বার সে উদাহরণও দিয়েছেন। লক্ষ্য, কোর’আনের অনুসারিদের হুশিয়ার করা। ইহুদীরা হলো আল্লাহতায়ালার দ্বীনের ব্যর্থ ছাত্র। ব্যর্থ ছাত্রদের ইতিহাস পবিত্র কোর’আনে বার বার উল্লেখ করার কারণ সম্ভবতঃ এটিই যে, দ্বীনের নতুন ছাত্র মুসলিমগণ সে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিবে। কিন্তু শিক্ষা না নিয়ে মুসলিমগণ ইহুদীদের পথ অনুসরণ করছে। ইহুদীগণ বিভক্ত হয়েছিল ১২ গোত্রে, আর মুসলিমগণ বিভক্ত হয়েছে ৫৭টি রাষ্ট্রে।
সিনা মরুভূমিতে বনি ইসরাইলীদরে বাঁচাতে করুণাময় মহান আল্লাহতায়ালা বছরের পর বছর আসমান থেকে মান্না ও সালওয়া পাঠিয়েছিলেন। ফলে খাদ্য সংগ্রহে তাদের কোনরূপ মেহনতই করতে হয়নি। যখন মহান আল্লাহতায়ালার নেয়ামত আসে তখন বাড়তি কিছু দায়ভার এবং পরীক্ষাও আসে। কিন্তু বনি ইসরাইলরা সে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিল। ফলে আযাব তাদের ঘিরে ধরে। তাদেরকে যেমন গৃহহীন হতে হয়েছে, তেমনি নানা দেশে বার বার গণহত্যার শিকারও হতে হয়েছে। হযরত মূসা (আঃ) যখন মাত্র ৪০ দিনের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যে গিয়েছিলেন তখনই গাভীর মুর্তি তৈরী করে সেটির পূজা শুরু করেছে। এক মুর্তিপূজককে তারা ধর্মের স্থপতি রূপে গ্রহণ করেছে। ইহুদীদেরও শরিয়ত দেয়া হয়েছিল। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তাদেরকে কানান দেশে গিয়ে বসতি স্থাপন এবং সেখানে ইসলামি রাষ্ট্র নির্মানের হুকুমও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা মহান আল্লাহতায়ালার সে হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। তখন কানানে চলছিল জালেমদের শাসন। তাদের নির্মূলে প্রয়োজন জিহাদের। কিন্তু সে জিহাদে আগ্রহ ছিল না ইহুদীদের। তারা বলেছিল, “হে মূসা (আঃ) তুমি এবং তোমার আল্লাহ গিয়ে যুদ্ধ কর। আমরা অপেক্ষায় থাকলাম।” নবীজী (সাঃ)র সাহাবাগণ যেমন জিহাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিল, ইহুদীগণ সেরূপ সাড়া দিলে মূসা (আঃ)’র হাতে তখন খেলাফতে রাশেদা প্রতিষ্ঠা হতো। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়েছেন নিজ সাথীদের বিদ্রোহের কারণে।
আজকের মুসলিম বিশ্ব অধিকৃত ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে। শরিয়ত প্রতিষ্ঠা করতে হলে সে অধিকৃতির বিলুপ্তি চাই। সে জন্য জিহাদ চাই। কিন্তু আজকের মুসলিমগণ সেরূপ একটি জিহাদ থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে –যেমন দূরে ছিল ইহুদীগণ। অথচ মুসলিমদের জন্য মান্না ও সালওয়া আসছে অতি বিপুল ভাবে। সেটি আসমান থেকে নয়, বরং মাটির বুক চিরে। আসছে শত শত ট্রিলিয়ন ডলারের তেল-গ্যাস ও নানারূপ খনিজ সম্পদ রূপে। সে অঢেল সম্পদ লাভে মুসলিমদের কোন মেহনতই করতে হচ্ছে না। তেল-গ্যাসের বাইরেও রয়েছে মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ দান, সেটি আল-কোরআন। প্রাথমিক যুগের মুসলিমদের বিজয়ের পিছনে মূল শক্তি ছিল এই আল-কোরআন। আল-কোরআনের অনুসরণের মাধ্যমেই তারা সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিয়েছিলেন। কিন্তু আজকের ব্যর্থতা শুধু আল-কোরআনের অনুসরণে নয়, দারুন ভাবে ব্যর্থ হচ্ছে প্রদত্ত সম্পদের ব্যবহারেও। বিশ্বের আর কোন জাতির হাতে এতবড় নেয়ামত যেমন নেই, এত বড় খেয়ানতও নাই। আর খেয়ানত তো সব সময় পরাজয় ও আযাব ডেকে আনে। বিশ্বের মুসলিমগণ তো সে আযাবেরই মুখে। তাদের দেশ অধিকৃত হচ্ছে, শহরগুলি বিধ্বস্ত হচ্ছে। লাখে লাখে মানুষ নিহত হচ্ছে। এবং বহু লক্ষ মুসলিম নারী-পুরুষ উদ্বাস্তুর বেশে নানা দেশের পথে ঘাটে ঘুরছে।
কেন অপরিহার্য ইসলামী রাষ্ট্র?
আল-কোরআনের যেখানেই পূর্ণ অনুসরণ, সেখানেই প্রতিষ্ঠা পায় ইসলামী রাষ্ট্র। বিষয়টি অন্যভাবেও বলা যায়, ইসলামী রাষ্ট্র ছাড়া সম্ভব নয় আল-কোরআনের পূর্ণ অনুসরণ। শরিয়তে প্রতিষ্ঠা দিতে ইসলামী রাষ্ট্র চাই। ইসলামী রাষ্ট্র চাই ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা দিতে ও মুসলিম রাষ্ট্রের ভূগোল বাড়াতে। আর্কিটেক্টের প্রণীত ডিজাইন পূর্ণভাবে অনুসৃত হলে সে ডিজাইন মাফিক কাঙ্খিত ইমারতটি নির্মিত হবে -সেটিই তো স্বাভাবিক। সেটি ইসলামী রাষ্ট্রের বেলায়ও। মহান আল্লাহতায়ালা হলেন ইসলামি রাষ্ট্রের স্থপতি। সে রাষ্ট্রের নির্মানে প্রতিটি মুসলিম হলো তাঁর কারিগর। নবীজী (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরাম কোর’আন-প্রদত্ত সে ডিজাইনের অনুসরণে নিজেদের শ্রম, মেধা, অর্থ ও রক্ত ব্যয় করেছিলেন বলেই নির্মিত হয়েছিল ইসলামী রাষ্ট্র ও ইসলামী সভ্যতার ইমারত। আর আজকের মুসলিমগণ নিজেদের শ্রম, মেধা, অর্থ ও রক্ত ব্যয় করছে সেক্যুলার, জাতীয়তাবাদী, পুঁজিবাদী বা সমাজবাদী ডিজাইনে রাষ্ট্র নির্মানে। মহান আল্লাহতায়ালার সাথে এর চেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা বা গাদ্দারী আর কি হতে পারে?
প্রশ্ন হলো, ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোরআনের কি পূর্ণ অনুসরণ সম্ভব? সরকারের অুনমতি ছাড়া একখানি স্কুল, মাদ্রাসা, কারখানা বা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাও সম্ভব নয়। কোরআন হাদীসের আলোকে একখানি ফতোয়া দেয়াও সম্ভব নয়। ফলে কীরূপে সম্ভব আল-কোরআনে নির্দেশ-মাফিক অন্যায়ের প্রতিরোধ ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা? কীরূপে সম্ভব শরিয়তের প্রতিষ্ঠা? অনৈসলামিক দেশে শরিয়তী বিধান তো কিতাবে বন্দী হয়ে পড়ে। যেমনি হয়েছে বাংলাদেশসহ অধিকাংশ মুসলিম দেশে। এজন্যই মহান আল্লাহতায়ালার কাছে অতি প্রিয় হলো ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ। একমাত্র তখনই তাঁর দ্বীনের বিজয় আসে। এমন রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষায় মহান আল্লাহতায়াল তাঁর সম্মানিত ফেরেশতাদের পাঠান। কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুসলিম মোজাহিদ আর ফেরেশতাগণ তখন একাকার হয়ে যায়। তখন অনিবার্য হয় বিজয়লাভ। সেটি যে শুধু বদর যুদ্ধে ঘটেছিল তা নয়, তেমন ঘটেছিল ওহুদ, খন্দক, হুনায়ুন, তাবুক, মুতাসহ অসংখ্য যুদ্ধে। সে বিবরণ পবিত্র কোরআনে বার বার এসেছে। অথচ মসজিদের জায়নামাযে বা পীরের খানকায় জিকরে বসে বা নামাযে বসে ফিরশতা নামিয়ে আনা হয়েছে -সে প্রমাণ নেই। সাহায্য পাওয়ার শর্তটি হলো, ইসলামি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এবং সে রাষ্ঠ্রের প্রতিরক্ষায় নিজেদের জানমালের বিনিয়োগ। তখন বিনিয়োগ বাড়ে মহান আল্লাহতায়ালার। নবীজী (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরাম তো সে পথেই মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য পেয়েছিলেন। তেমন একটি ইসলামী রাষ্ট্র রাসূল্লাহ (সাঃ)র মক্কী জীবনে নির্মিত হয়নি, ফলে সেখানে বদর, ওহুদ, খন্দক, হুনায়ুনের ন্যায় জানমালের বিনিয়োগের ক্ষেত্রও প্রস্তুত হয়নি। জান-মালের সে বিনিয়োগটি নামায-রোযা ও হজ-যাকাতে ঘটে না। সে জন্য হিযরত করতে হয়, হিযরত শেষে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাও করতে হয়। শুধু ইসলামের ইতিহাসে নয়, সমগ্র মানব জাতির ইতিহাসে মক্কার মুসলমানদের মদিনায় হিজরত এজন্যই এতটা ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের হিজরতের ফলে শুধু যে একটি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ঘটেছিল তা নয়, উদ্ভব ঘটেছিল মানব-ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার। মানব জাতির ইতিহাস সে দিনটিতে নতুন মোড় নিয়েছিল। হিজরতের দিনটি থেকে সাল গণনা চালু করে সেকালের মুসলিমগণ হিজরতের গুরুত্বকেই মূলত বুঝিয়েছেন।
আল্লাহর সাহায্য যে পথে অনিবার্য হয়
ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না পেলে সে রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার প্রশ্নই উঠে না। প্রশ্ন উঠে না শরিয়ত প্রতিষ্ঠার এবং সে সাথে জিহাদের। সেরূপ অনৈসলামিক রাষ্ট্রে গুরুত্ব হারায় ঈমানদারদের জানমালের বিনিয়োগের বিষয়টিও। ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী না হলে মুসলিমদের জানমাল ও মেধার এজন্যই বিপুল অপচয় ঘটে। তখন কোটি কোটি মানুষ জানমালের কোন রূপ বিনিয়োগ না রেখেই ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায়। অথচ ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মানে বিস্ফোরণ ঘটে সে শক্তির। নবীজীর আমলে দাওয়া, জিহাদ ও রাজনীতির ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ময়দানে নেমে এসেছিলেন প্রতিটি মুসলিম। কিছু অন্ধ, পঙ্গু ও বৃদ্ধ ছাড়া প্রত্যেকে ছুটেছেন জিহাদের ময়দানে। তখন বেতনভোগী সেনা-অফিসার বা সেপাই পালনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়নি। প্রতিটি নাগরিক পরিণত রাষ্ট্রের অতন্দ্র প্রহরীতে। প্রতিটি ঘর পরিণত হয়েছিল রাষ্ট্রের পাওয়ার হাউসে। অথচ আজ সে সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশে শতকরা একজন লোকও কি তেমন বিনিয়োগে নেমেছে? বাংলাদেশের মত গরীব দেশে উচ্চ বেতন বা দামী প্লটের প্রতিশ্রুতি দিতে হয় সেনা অফিসারদের। নবীজী দ্বীনের দাওয়াত দিতে গিয়ে পাথরের আঘাতে আহত হয়েছেন। অথচ আজ অর্থ না দিলে আলেমগণ রাজী নন ওয়াজ করতে। কোর’আনের বাণী এভাবে তেজারতের মাধ্যেম পরিণত হয়েছে। সেক্যুলারিজম তথা পার্থিব স্বার্থ চেতনা মুসলিমদের চেতনাকে যে কতটা কলুষিত করেছে -এ হলো তার নমুনা। ফলে ইসলাম শক্তি পাবে কোত্থেকে? মহান আল্লাহতায়ালাই বা কেন এমন পথভ্রষ্ট জাতিকে বিজয়ী করতে ফেরেশতাদের পাঠাবেন? আল্লাহতায়ালা তো তাদের সাহায্যে ফেরেশতা পাঠান তাঁর রাস্তায় যাদের নিজেদের জানমালের বিনিয়োগটি বিশাল।
ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ইসলামের যে দ্রুত প্রসার হয় এবং মুসলিমগণ যে দ্রুত বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয় -তা নিয়ে সেক্যুলার মুসলিমদের সংশয় থাকলেও সেরূপ সংশয় শয়তানের নাই। তাছাড়া মানব সমাজে সবচেয়ে কঠিন কাজটি ঘর গড়া, রাস্তাঘাট নির্মাণ বা কারখানা গড়া নয় বরং মানব সন্তানকে ঈমানদার রূপে গড়ে তোলা। সে কঠিন কাজটি শুধু পিতামাতার দ্বারা হয় না। ওয়াজ মহফিল বা পীরের হুজরাতেও হয় না। সে জন্য রাষ্ট্র চাই। সে কাজে সকল রাষ্টীয় প্রতিষ্ঠানগুলির সহযোগিতা চাই। চাই, জাহান্নামে পথে টানে এরূপ প্রতিষ্ঠানগুলির বিলুপ্তি। নবীজী (সাঃ) তাঁর মক্কী জীবনের ১৩ বছরের লাগাতর চেষ্টায় এমন কি তিন শত মানুষকেও মুসলিম বানাতে পারেননি। হযরত ঈসা (আঃ) তাঁর সারা জীবনে হাতে গুণা মাত্র কয়েকজনকে ঈমানদার বানাতে পেরেছিলেন। কারণ হযরত ঈসা (আঃ)’য়ের হাতে রাষ্ট্র ছিল না। মক্কী জীবনে নবীজী (সাঃ)’র হাতেও রাষ্ট্র ছিল না। অথচ মদিনা কেন্দ্রীক ইসলামী রাষ্ট্র গড়ে তোলার পর দলে দলে ইসলাম কবুলের জোয়ার শুরু হয়। শয়তান সেটি জানে। শয়তান এ জন্যই ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা নবীজী (সাঃ)র আমলে মেনে নিতে রাজী হয়নি, আজও রাজী নয়। ২০০১ সালে আফগানিস্তানের উপর মার্কিন হামলার মূল হেতুতো সেটিই। উপমহাদেশের মুসলিমদের পাকিস্তান প্রজেক্ট এজন্যই শুরু থেকে হামলার মুখে পড়ে। বাংলাদেশে ইসলামের বিপক্ষ শক্তির সরকার এজন্যই ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে নির্যাতনে নামে এবং খুঁজে খুঁজে জিহাদ বিষয়ক বই বাজেয়াপ্ত করে।
ইসলামী রাষ্ট্রে সার্বভৌমত্ব ও আইন-কানুন যেহেতু মহান আল্লাহতায়ালার, সে রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষায় তাঁর বিনিয়োগও বিশাল। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালার সে নিজস্ব বিনিয়োগের বিবরণটি এসেছে এভাবেঃ “স্মরণ কর, (বদরের যুদ্ধের প্রাক্কালে) তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে সাহায্য প্রার্থণা করেছিলে; তখন তিনি তোমাদেরকে জবাব দিয়েছিলেন, “আমি তোমাদিগকে সাহায্য করবো এক হাজার ফিরেশতা দিয়ে, যারা একের পর আসবে।” –(সুরা আনফাল, আয়াত ৯)। বদরের যুদ্ধে কাফের যোদ্ধাদের সংখ্যা ছিল এক হাজার। আর মুসলিম মোজাহিদদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩ জন। এবং তারাও কোন চুড়ান্ত যুদ্ধের জন্য পরিকল্পনা মাফিক সেখানে হাজির হননি। তাদের লক্ষ্য ছিল, আবু সুফিয়ানের সিরিয়া থেকে ফেরতগামী বাণিজ্য কাফেলার উপর স্ট্রাটিজিক হামলা এবং তাকে সবক শেখনো। কিন্তু আল্লাহতায়ালার পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। তিনি চাচ্ছিলেন একটি যুদ্ধ যাতে গলা কাটা পড়বে আবু জেহেল, ওতবা, শায়বার মত শীর্ষস্থানীয় কাফের সর্দারদের। ফলে ঘনিয়ে এলো ভয়ানক এক যুদ্ধ। সংখ্যায় অল্প হওয়া সত্ত্বেও মুসলিমগণ সেদিন পিছুটান দেয়নি। ইহুদীদের ন্যায় নবীজী (সাঃ)কে তাঁরা একথা বলেননি, “যাও তুমি আর তোমার আল্লাহ গিয়ে যুদ্ধ কর। আমরা অপেক্ষায় থাকলাম।” বরং বলেছেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আমরা আপনার উপর ঈমান এনেছি। আপনি যদি আমাদেরকে নিয়ে সমূদ্রেও ঝাঁপিয়ে পড়েন তবুও আমাদেরকে সাথে পাবেন।” মহান আল্লাহ তো তাঁর বান্দাহর এমন বিনিয়োগটিই দেখতে চান। তাদের নিজ প্রাণের এমন বিনিয়োগই আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্যলাভকে সুনিশ্চিত করে। অতীতে মুসলমানদের বিজয় তো এভাবেই এসেছে। এমন বিজয় যেমন জনশক্তিতে আসেনি, তেমনি অর্থবলেও আসেনি। এসেছে আল্লাহর সাহায্যে। আর কার সাহায্য মহা-পরাক্রমশালী আল্লাহর সাহায্যের চেয়ে শক্তিশালী হতে পারে? পবিত্র কোরআনে তাই বলেছেন, “এবং কোন সাহায্যই নাই একমাত্র আল্লাহর নিকট থেকে আসা সাহায্য ছাড়া। আল্লাহই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” –(সুরা আনফাল আয়াত ১০)। শত্রু শক্তির বিরুদ্ধে লড়ায়ে মুসলিমদের প্রস্তুতিতে কোন রূপ কমতি থাকলে সেটি পূরণ করে দেন প্রজ্ঞাময় মহান আল্লাহতায়ালা। এটিই মহান আল্লাহর সূন্নত। বদরের যুদ্ধে মুসলিমদের যা সৈন্যসংখ্যা ছিল আল্লাহতায়ালা তার তিনগুণের অধিক ফিরেশতাদের দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। আর মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ যখন সাহায্য করেন তখন কি সে বাহিনীকে দুনিয়ার কেউ হারাতে পারে? নিঃস্ব ও স্বল্প সংখ্যক মুসলিমদের পক্ষে সে কালে বিশ্বশক্তি রূপে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার মূল রহস্য তো এখানেই। আজও কি এর বিকল্প পথ আছে?
কোন ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠিও যখন নিছক মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা নিয়ে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে তখন সে রাষ্ট্রটি আল্লাহতায়ালার রাষ্ট্রে পরিনত হয়। আল্লাহতায়ালার সাহায্য লাভের জন্য সে রাষ্ট্রটি তখন শ্রেষ্ঠ অসিলায় পরিনত হয়। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মিত না হলে তাই মুসলিমেরা বঞ্চিত হয় মহান আল্লাহর সাহায্য লাভের সে সুনিশ্চিত অসিলা থেকে। মুসলমানদের জীবনে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা ঘটে তখন। মান্না-সালওয়া জুটলেও তখন বিজয় আসেনা, ইজ্জতও বাড়ে না। নির্মিত হয় না ইসলামী সভ্যতা ও বিশ্বশক্তি। আজকের মুসলিমগণ অঢেল সম্পদের উপর বসবাস করেও পরাজিত ও অপমানিত হচ্ছে তো সে কারণেই। অথচ ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষায় মহান আল্লাহর ফিরেশতারা সদাপ্রস্তুত। সে প্রতিশ্রতি মহান আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে বার বার শুনিয়েছেন। তবে ফেরেশতাদের জমিনে নামার শর্ত হলো, ঈমানদারদের নিয়েত যেমন ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় থাকতে হয়, তেমনি থাকতে হয় সে লক্ষ্যে নিজেদের সর্বাত্মক বিনিয়োগটি। নবীজী (সাঃ)’র সাহাবাদের নিয়তে কোন দূষণ ছিল না। মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুতি নিয়েও তাদের মনে কোন সন্দেহ ছিল না। এবং কোনরূপ কার্পণ্য ছিল না নিজ নিজ জানমালের বিনিয়োগে। বিজয়ের পথে এটিই তো একমাত্র রোড ম্যাপ। কিন্তু আজ মুসলিমদের চেতনায় বড় বিভ্রাট গড়ে উঠেছে এ ক্ষেত্রটিতে। তাদের নিয়তে যেমন ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা নেই, তেমনি সে লক্ষ্যে বিনিয়োগও নাই। তাদের ভরসা বেড়েছে নিজেদের অর্থ, অস্ত্র ও লোকবলের উপর, আল্লাহর সাহায্যের উপর নয়। ফলে অর্থ, অস্ত্র ও জনশক্তি বাড়লেও পরাজয় এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ২১/১১/২০২০
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018