যে ব্যর্থতা শরিয়তের প্রতিষ্ঠায় ও মুসলিমের মুসলিম হওয়ায়
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on January 11, 2021
- Bangla Articles, ইসলাম
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
ব্যর্থতা মুসলিম হওয়ায়
আজকের মুসলিমদের মুসলিম হওয়ায় ব্যর্থতাটি যেমন বিশাল, তেমনি ভয়ংকর। তাদের নৈতিক পচনও অতি গভীরতর। কয়েক শত বছরের ঔপনিবেশিক কাফের শাসনে মুসলিমদের সবচেয়ে বড়ক্ষতি যে ক্ষেত্রটিতে হয়েছে সেটি রাজনীতি, সংস্কৃতি ও আচার-আচরণে নয়, বরং মুসলিম রূপে বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে। প্রচণ্ড পথভ্রষ্টতা এসেছে ঈমান, আমল, আক্বিদা ও ইবাদতে। এমন ব্যর্থতা কেবল আযাবই বাড়াতে পারে –সেটি যেমন পরকালে, তেমনি ইহকালে। আজকের মুসলিমগণ বস্তুত সে আযাবেরই গ্রাসে। কাফের শাসন থেকে না বাঁচলে ঈমান-আমলে যে সুস্থ্যতা থাকে না -এ হলো তারই নমুনা। তাই কাফের শাসন থেকে বাঁচার জিহাদই হলো শ্রেষ্ঠ ইবাদত। এ জিহাদ পূর্ণ মুসলিম রূপে বাঁচার জিহাদ। কোন মুসলিম দেশ কাফের শক্তির দখলে শয়তানী প্রজেক্ট শক্তি পায়; তখন রাষ্ট্রের কাজ হয়, সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে মুসলিমদের সরানো। মুসলিম জীবনের ব্যর্থতাগুলোই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, তারা বিচ্যুত হয়েছে সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে। সিরাতুল মুস্তাকীম তো মহান আল্লাহতায়ার দেখানো বিজয়ের পথ –সেটি যেমন পরকালে, তেমনি ইহকালে। তাই যে জাতি সিরাতুল মুস্তাকীমে চললো অথচ বিজয় পেল না –সেটি তো অকল্পনীয়। মুসলিমগণ পরাজিত, অধিকৃত, নির্যাতিত ও অপমানিত হয়ে প্রমাণ করেছে যে তারা সিরাতুল মুস্তাকীমে নাই। নবীজী (সা:)’র ইসলাম –যাতে ছিল ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়তের প্রতিষ্ঠা, খেলাফত, প্যান-ইসলামিক ঐক্য ও জিহাদ, সে ইসলাম আজ বেঁচে নাই্। বরং তারা বাঁচছে নিজেদের মনগড়া ইসলাম নিয়ে। তাদের এ মনগড়া ইসলাম ব্যর্থ হচ্ছে মুসলিম রূপে গড়ে তোলাতেই শুধু নয়, এমন কি মানবিক গুণে গড়ে তোলাতেও
তবে এ পতন শুধু ইসলামচ্যুত সেক্যুলারিস্টদের মাঝেই সীমিত নয়। আক্রান্ত হয়েছে তারাও যারা নামাজ-রোজা-হজ্ব-যাকাত পালন করে, ইসলামের তাবলিগ করে এবং ইসলামী আন্দোলনও করে। প্লাবনের জল গ্রামে ঢুকলে সে প্লাবন থেকে কোন গৃহই যেমন বাদ পড়ে না, তেমনি রাষ্ট্রের উপর কুফরি শক্তি বিজয়ী হলে তার প্রভাব পড়ে সবার উপরে। জোয়ারের পানিতে যেমন ঘাস-পাতা ভাসে, রাজনীতি ও শিক্ষা-সংস্কৃতির জোয়ারে মানুষও ভাসে। এবং সে কুফরি শাসনের জোয়ার যদি কয়েক শত বছর যাবত বহাল থাকে তবে সেটি যে কতটা বিধ্বংসী রূপ ধারণ করে -তারই বড় প্রমাণ হলো আজকের বাংলাদেশ। সে জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে যারা নামায-রোযা,হজ্ব-যাকাত পালন করে তাদের চেতনার ভূমিও। ফলে যারা ইসলামের তাবলিগ করে তারাও নবীজী (সা:)’র ইসলামের কথা বলে না। তারা যে ইসলাম পালন করে তাতে ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়তের প্রতিষ্ঠা ও জিহাদ নাই। শরিয়ত প্রতিষ্ঠার জিহাদ নাই এমন কি তাদের মাঝেও যারা নিজেদের ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মী রূপে পরিচয় দেয়। তারা ব্যস্ত নিজেদের দলীয় এজেন্ডা নিয়ে, মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা নিয়ে নয়।
১৭ কোটি মানুষের এ মুসলিম দেশটিতে ১৯০ বছর যাবত ঔপনিবেশীক ব্রিটিশ আধিপত্যের প্লাবন বইছে। বাঙালী মুসলিমের জীবনে এটিই হলো সবচেয়ে ভয়ানক নাশকতার কাল। ব্রিটিশদের এজেন্ডা শুধু অর্থনৈতিক লুন্ঠন ছিল না, ছিল ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক এজেন্ডা। ব্রিটিশদের হাতে অধিকৃত হওয়ার পূর্বে বাংলাসহ মুসলিম শাসিত ভারতে আদালত চলতো শরিয়তী আইনে। সে কোর’আনী আইনকে দখলদার কাফের শক্তি বিলুপ্ত করে এবং চালু করে নিজেদের কুফরি আইন। শিক্ষা-সংস্কৃতি পরিণত হয় মুসলিমদের ইসলাম থেকে দূরে সরানোর হাতিয়ারে। গোলামী জীবন দীর্ঘকাল স্থায়ী হলে কঠিন হয় স্বাধীন জীবনে পুণঃরায় ফিরে যাওয়া। গোলামী তখন অভ্যাসে পরিণত হয়। বাংলাদেশে কাফেরদের প্রণীত শরিয়ত বিরোধী আইন তো বেঁচে আছে সে গোলামীর স্মৃতি বহন করেই। গোলামী ধ্বসিয়ে দেয় ঈমান-আকিদাও। দীর্ঘকাল ব্রিটিশদের কুফরি আইনের দাপটে ঈমান-আকিদা যে কতটা ভেসে গেছে তার প্রমাণ হলো বাংলাদেশের মুসলিমগণ। শরিয়ত প্রতিষ্ঠার ন্যায় অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের কোন আগ্রহ নাই। সে লক্ষ্যে আন্দোলন নেই, কোরবানীও নেই। অপরাধ এখানে গর্দান থেকে মহান আল্লাহতায়ালার গোলামীর বন্ধনটি ছিন্ন করার। অথচ মুসলিম হওয়ার অর্থই হলো তাঁর নাযিলকৃত আইনের গোলামী নিয়ে বাঁচার। কোন ব্যক্তিই একই সাথে দুই শক্তির গোলাম হতে পারে না। কুফর আইনের গোলাম রূপে যারা বাঁচে তাদের পক্ষে তাই অসম্ভব হয় মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া শরিয়তি আইনের গোলামী। পরিতাপের বিষয়, বাঙালী মুসলিমগণ বেছে নিয়েছে শয়তানের আইনের গোলামী।
সংজ্ঞা কাফের ও মুসলিমের
কে কাফের এবং কে মুসলিম –এ দুটি প্রশ্ন মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। মুসলিম জীবনের আমৃত্যু সাধনা হলো মুসলিম হওয়া এবং কাফের হওয়া থেকে বাঁচা। কারো জীবনেই এছাড়া আর কোন গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা থাকতে পারে না। এক্ষেত্রে অজ্ঞতা বা অস্পষ্টতায় অসম্ভব হয় মুসলিম হওয়া। সে অজ্ঞতা বা অস্পষ্টতা সরাতেই পবিত্র কোর’আনে এ দুটি প্রশ্নের উত্তর বার বার দিয়েছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। কে মুসলিম আর কি কাফের –সে সংজ্ঞাটি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তিনি নিজে। এ বিষয়ে পবিত্র কোর’আনে তাঁর নিজের ঘোষনাটি হলো: “ওয়া মাল্লাম ইয়াহকুম বিমা আনযালাল্লাহু ফা ঊলাউকা হুমুল কাফেরুন।” অর্থ: “এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান (শরিয়ত) মোতাবেক যারা বিচারকার্য পরিচালনা করে না তারা কাফের।” -(সুরা মায়েদা, আয়াত ৪৪)। সুরা মায়েদার ৪৫ এবং ৪৭ নম্বর আয়াতে তাদেরকে জালেম ও ফাসেক রূপেও চিহ্নত করা হয়েছে। উপরুক্ত আয়াত গুলোতে সংজ্ঞায়ীত করা হয়েছে কারা মুসলিম, জালেম ও ফাসেক।
পবিত্র কোর’আনের আর কোথাও এভাবে কোন ফরজ বিধানের উপর পর পর তিনটি আয়াতে এভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এতে বুঝা যায়, মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর নাযিলকৃত শরিয়তের প্রতিষ্ঠাকে কতটা সিরিয়াস গণ্য করেন। কাফের, জালেম ও ফাসেকে গণ্ডি থেকে বেড়িয়ে মুসলিম পরিচিতি পাওয়ার জন্য তাঁর শরিয়ত বাঁচা যে কতটা অপরিহার্য -সুরা মায়েদের তিনটি আয়াতে সেটি সুস্পষ্ট করা হয়েছে। একই রূপ তাগিদ এসেছে সুরা আশ-শুরার ১৩ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছ: “ (হে মুহম্মদ) দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের জন্য হুকুম হলো সেটিই, যেরূপ হুকুম আমি দিয়েছিলাম নূহকে এবং দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে, এবং সেটি হলো প্রতিষ্ঠিত করো আমার দ্বীনকে (তথা শরিয়তী বিধানকে)। তাওরাতে ঘোষিত যে আইন তাকে বাদ দিয়ে কি হযরত মূসা (আ:)’র দ্বীনের কথা ভাবা যায়? তেমনি কোর’আনে ঘোষিত যে শরিয়তি আইন, সেটিকে বাদ দিয়ে ইসলামের কথা ভাবা যায়? হযরত ঈসা (সা:)’য়ের উপর শরিয়ত দেয়া হয়নি, তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল হযরত মূসা(আ:)’র উপর যে শরিয়ত দেয়া হয়েছিল তাকে প্রতিষ্ঠিত করা। শরিয়তের প্রতিষ্ঠা হলো মহান আল্লাহতায়ালার সৃষ্ট এ জমিনের উপর তাঁর সার্বভৌমত্বের ঝান্ডা তথা আলামত। তাই শরিয়তের প্রতিষ্ঠা ছাড়া তাঁর ইবাদত হয়। এবং মুসলিম যে সত্যিকার মুসলিম সেটিও শরিয়ত ছাড়া প্রমাণিত হয় না।
শরিয়তী আইনের উৎস যেমন পবিত্র কোর’আন, তেমনি নবীজী (সা:)’র হাদীস। মুসলিমকে মেনে নিতে হয় বিভিন্ন বিচার বিষয়ক বিষয়ে নবীজী (সা:)’র ফয়সালাগুলোও। সেগুলো না মানলে অসম্ভব হয় ঈমানদার হওয়া। মহান আল্লাহতায়ালা সেটির ঘোষণা দিয়েছেন এই আয়াতে: “কিন্তু না, তোমার রব’এর শপথ! তারা মু’মিন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারের ভার তোমার উপর অর্পণ না করে; অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে যেন কোন রূপ দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা যেন মেনে নেয়।” –(সুরা নিছা, আয়াত ৬৫)। মুসলিম হওয়ার শর্তটি তাই সুস্পষ্ট। সেটি শুধু নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত নয়, সেটি হলো, মহান আল্লাহতায়ালা নাযিলকৃত আইনের কাছে পূর্ণ-আত্মসমর্পণ। শরিয়তী আইনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নিয়ে মুসলিম থাকা ও মুসলিম রূপে মৃত্যুবরণ এ জন্যই অসম্ভব। ফলে কাফের, জালেম ও ফাসেক শুধু মুর্তিপুজারী বা মহান আল্লাহতায়ালার অস্বীকারকারীগণই নয়, যারা তার আইনের অনুসরণ করে না -তারাও। অথচ সে ভয়ানক অবাধ্যতাটি হচ্ছে বাংলাদেশে।
রাসূলে করীমের (সাঃ)’র মক্কী জীবনে যে কাজটি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল সেটি কোর’আন তেলাওয়াত নয়। নামায-রোযা পালনও নয়। বরং সেটি হলো শরিয়তের প্রতিষ্ঠা দিয়ে রাষ্ট্র নির্মাণ। মক্কার মুশরিকগণ অসম্ভব করে তুলেছিল মহান আল্লাহতায়ালার আইনের প্রতিষ্ঠাকে। অসম্ভব করেছিল রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে সামনে এগোনো। এমন কি ষড়যন্ত্র করেছিল তাঁর প্রাণনাশে। ফলে নবীজী (সাঃ) বাধ্য হয়েছিলেন হিজরত করতে। মদিনায় হিজরতের পর একদিনও বিলম্ব করেননি, তৎক্ষনাৎ প্রতিষ্ঠা করেছেন ইসলামী রাষ্ট্র ও শরিয়তের শাসন। সে শাসন বাঁচাতে বহু বার যুদ্ধে নেমেছেন, মৃত্যুর মুখোমুখীও হয়েছেন। নবীজীবনের শ্রেষ্ঠ সূন্নততো এটিই। এ সূন্নতের বলেই তিনি শ্রেষ্ঠ নবী। মুসলিমগণ বিশ্বশক্তি রূপে প্রতিষ্ঠা পয়েছে, মহান আল্লাহতায়ালার আইন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা নির্মিত হয়েছে তো সে সূন্নতের বরকতেই।
ব্যর্থতা পূর্ণ ইসলাম পালনে
নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত পালন এবং মসজিদ নির্মাণের অনুমতি কাফের দেশও দেয়। হোয়াইট হাউসেও ইফতার দেয়া হয়, নামাযের জন্য জায়নামায পেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু তাতে পূর্ণ ইসলাম পালন হয়না। পূর্ণ ইসলাম পালনে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে শরিয়তকে প্রতিষ্ঠা দিতে হয়। সে জন্য জিহাদে নামতে হয় এবং ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা দিতে হয়। এজন্য এটিই হলো ইসলামের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং শ্রেষ্ঠ প্রজেক্ট। পূর্ণ ইসলাম পালনে যাদের আগ্রহ তাদের জীবনে জিহাদ তাই অনিবার্য। কিন্তু মুসলিম জীবনে কতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে পূর্ণ ইসলাম পালন? কতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে নবীজীবনের সে শ্রেষ্ঠ সূন্নত পালন? তারা কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করছে মহান আল্লাহতায়ালার আইন প্রতিষ্ঠায়? বরং তাদের অর্থ, মেধা, শ্রম ও ভোটে বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশটিতে যে আইন প্রতিষ্ঠিত সেটি ব্রিটিশ কাফেরদের প্রবর্তিত কুফরি আই্ন। এ আইনে পতিতাবৃত্তি, সূদ, ঘুষ, মদ্যপান ও নানাবিধ পাপ-কর্মও বৈধ। এ বিদ্রোহ ও অবমাননা শুধু শরিয়তী আইনের বিরুদ্ধে নয়, বরং খোদ মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধেও। মহান আল্লাহতায়ালার উপর যাদের শরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে এবং তাঁর হুমুকের প্রতি সামান্যতম আনুগত্য আছে -তারা কি নিজ দেশে কুফরি আইনের এরূপ বিজয় এবং শরিয়তের এরূপ অপমান সহ্য করতে পারে?
যে সিরাতুল মুস্তাকিম পেল, সেই জান্নাত পেল। নইলে জাহান্নাম অনিবার্য। তাই মানব জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়াটি হলো সিরাতুল মুস্তাকিম পাওয়া। এজন্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দোয়াটি হলো, সিরাতুল মুস্তাকিম চাওয়ার দোয়া। মহান আল্লাহতায়ালা চান, তাঁর বান্দাহ তাঁর কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়াটি করুক। এবং তাঁর শ্রেষ্ঠ মেহেরবানী তো এটিই, সে দোয়াটি তিনি শুধু শিখিয়েই দেননি, নামাযের প্রতি রাকাতে সে দোয়া পাঠকে বাধ্যতামূলক করেছেন। তাই প্রতি রাকাতে “ইহদিনাস সিরাতুল মুস্তাকিম”না বললে নামাযই হয় না। সে সাথে দোয়া করতে হয় পথভ্রষ্ট ও অভিশপ্তদের পথ থেকে বাঁচার জন্যও। বিপুল বিত্ত-বৈভবে সিরাতুল মুস্তাকিম জুটে না। সেটি অর্জিত হয় না নিজের বিচারবুদ্ধিতেও। অথচ এ ক্ষেত্রটিতে ব্যর্থ হলে জীবনের আর কোন সফলতাই সে ক্ষতি পূরণ করতে পারে না। তখন জীবন পূর্ণ হয় সকল অকল্যাণে। শুধু এ জীবন নয়, আখেরাতের জীবনও।
সঠিক পথের বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে মহান আল্লাহপাক পথ দেখানোর সে কাজটি মানুষের বিবেকবু্দ্ধির উপর ছেড়ে দেননি। এমনকি নবীদের উপরও নয়। পবিত্র কোর’আনে আল্লাহপাক বলেছেন, “ইন্না আলায়না লাল হুদা” অর্থ: “পথ দেখানেরা দায়িত্বটি একমাত্র আমার।” মহান নবীজী (সাঃ)কেও তাই “ইহদিনাস্ সিরাতুল মুস্তাকিম” বলে আকুতি জানাতে হয়েছে। প্রশ্ন হলো, সে সিরাতুল মোস্তাকিম কোনটি? সেটি হলো কোরআন-প্রদর্শিত রোড-ম্যাপ। এবং সেটিই হলো শরিয়ত। শরিয়তের শাব্দিক অর্থও হলো “পথ”। এ প্রদর্শিত রোড-ম্যাপের বর্ণনা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহতায়ালা সুরা বাকারার শুরুতেই বলেছেন, “যালিকাল কিতাবু লা-রাইবা ফিহি হুদাল লিল মোত্তাকিন” অর্থ: “এটিই হলো সেই কিতাব যার সত্যতা নিয়ে সামান্যতম সন্দেহ নেই। যাদের মধ্যে আছে আল্লাহর ভয় তাদের জন্য এটিই হলো রোডম্যাপ।”
কেন এতো বিপর্যয়?
জীবনের অর্থ তো স্থবিরতা নয়, বরং আমৃত্যু পথচলা। এ পথ-চলায় রোড-ম্যাপের গুরুত্ব অপরিসীম। সঠিক পথ চলতে হয় যেমন ইবাদতে, তেমনি আইন-আদালত, ব্যবসা-বানিজ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও য্দ্ধু-বিগ্রহসহ সর্বক্ষেত্রে। পথ চলার প্রতি ধাপে কোর’আন নির্দেশনা দেয় কোনটি সিদ্ধ এবং কোনটি নিষিদ্ধ। কোনটি হালাল, কোনটি হারাম। কোনটি জান্নাতের পথ এবং কোনটি জাহান্নামে পথ। গাড়ি চালনায় ট্রাফিক সিগনাল অমান্য করলে দূর্ঘটনা অনিবার্য। তবে দূর্ঘটনার চেয়েও বড় বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে উঠে জীবনের পথ চলায় আল্লাহপাক-প্রদর্শিত সিগনালগুলি অমান্য করলে। পথ হারিয়ে তখন জাহান্নামে পৌঁছে। শুধু নামায-রোযা পালনে সে বিপদ থেকে মুক্তি ঘটে না। নামাযের আহকাম অনুসরণ করছে এমন মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে অসংখ্য। কিন্তু তাতে এসেছে কি শান্তি ও সমৃদ্ধি? ইসলামের প্রাথমিক যুগে সর্বক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছিল তার মূল কারণটি হলো, সে কালের মুসলিম জীবনে ছিল কোরআনী রোড-ম্যাপের পূর্ণ অনুসরণ। সে আমলে প্রশাসন আপোষহীন ছিল এ রোড-ম্যাপ মেনে চলায়। যাকাত দিতে অস্বীকার করায় খলিফায়ে রাশেদার সময় প্রাণদন্ড দেওয়া হয়েছে। সে শরিয়তের অবাধ্যতা গণ্য হয়েছে কুফরি রূপে। শুরুতে এ অবাধ্যতা নির্মূল করা না হলে ক্যান্সারের ন্যায় এটি ছড়িয়ে পড়ো সমগ্র সমাজ জুড়ে। অভিশপ্তদের পথ থেকে বাঁচার জন্য শুধু দোয়া করলে চলে না, সে চিহ্নিত পথগুলোর নির্মূলেও উদ্যোগী হতে হয়। সাহাবাগণ সেটি করেছিলেন। কিন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশে সেটি হয়নি। বরং শরিয়তের অবাধ্যতা গণমুখীতা পেয়েছে। এবং রাষ্ট্রের গাড়ি সিরাতুল মুস্তাকিম থেকে বিচ্যুত হয়ে গভীর গর্তে গিয়ে পড়েছে।
মসজিদে মসজিদে নামাযীরা নামাযের প্রতি রাকাতে আওয়াজ তোলে, সিরাতুল মুস্তাকিম চাই। আওয়াজ তোলে, দোয়াল্লীন তথা অভিশপ্তদের থেকে পরিত্রাণ চাই। অথচ মসজিদের বাইরে স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে এ নামাযীরাই অনুসরণ করে চলেছে অভিশপ্ত কাফেরদের আইন। এবং আগ্রহ নেই মহান আল্লাহতায়ালার আইনের প্রতিষ্ঠায়। এভাবে সিরাতুল মুস্তাকিম থেকে বিচ্যুৎ হয়ে পথ চলা পরিণত হয়েছে দেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আইন-আদালতের আচারে। ভ্রান্ত পথে আজীবন দৌড়ালেও গন্তব্যস্থলে পৌঁছা অসম্ভব। অথচ সঠিক পথে ক্ষণিকেই সেটি সম্ভব। নবীজীর (সাঃ) আমলে আরবের দরিদ্র মানুষেরা যে দ্রুততার সাথে ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিতে পেরেছিল সেটি আজও বিস্ময়। উন্নত মানবতা, মূল্যবোধ ও সৃজনশীলতায় তারা সেদিন উজ্বলতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। সে রেকর্ড আজও কেউ অতিক্রম করতে পারিনি। সেটি সম্ভব হয়েছিল এ জন্য যে, তারা নিজেরা কোন পথ গড়েননি। বরং অনুসরণ করেছিলেন মহান আল্লাহপাকের প্রদর্শিত রোড-ম্যাপ তথা সিরাতুল মুস্তাকিম। তাদের এ আমলে রাব্বুল আলামীন প্রচন্ড খুশি হয়েছিলেন। সে খুশির কথা পবিত্র কোর’আনে ঘোষিত হয়েছে এভাবে, “রাযী আল্লাহু আনহুম ও রাদুউ আনহু।” অর্থ: “আল্লাহ রাযী হয়েছেন তাদের উপর এবং তাঁরাও রাযী হয়েছে আল্লাহর উপর।” মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা নিয়ে বাঁচাতে তাদের উপর বর্ষিত হয়েছিল তাঁর অপার রহমত। সাফল্য তারা শুধু দুনিয়াতেই পাননি, তাদের জন্য বড় সাফল্য অপেক্ষা করছে আখেরাতেও। কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালার আইনের বদলে যারা অনুসরণ করে কুফরি আইন এবং সে আইনের প্রয়োগে ভোট দেয়, ট্যাক্স দেয় এবং শ্রম দেয় তাদের যারা শরিয়তের বিরোধী -তাদের কাজে কি মহান আল্লাহপাক খুশি হন? জুটে কি বিজয় ও সন্মান? জুটে যে না -তা তো তাদের ব্যর্থতাই বলে দেয়। তাছাড়া ভয়ানক দিন অপেক্ষা করছে আখেরাতে।তখন মহান রাব্বুল আ’লামীনের দরবারে বিচার উঠবে তাঁর শরিয়তী বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অপরাধে। বিদ্রোহী কি কোন করুণা আসা করতে পারে?
লক্ষণীয় হলো, বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে সিরাতুল মুস্তাকিম থেকে দূরে সরে আবিস্কার করা হয়েছে ইবাদতের নতুন নতুন মডেল। নিছক নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাতের মধ্যে খোঁজা হয় মহান আল্লাহর রহমত। চেষ্টা নাই এবং আগ্রহও নেই শরিয়তের বাস্তবায়নে। অথচ নানা রূপ এজেন্ডা নিয়ে ব্যস্ততায় কোন কমতি নাই। সেসব এজেন্ডা নিয়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে হাজার হাজার রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বহু হাজার শিক্ষা, গবেষণা, প্রকাশনা ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠা পেয়েছে সুফি ও পীর-দরবেশের অসংখ্য আস্তানা। বাংলাদেশে যত মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বিশ্বের আর কোন দেশে তা নেই। ব্যবসা-বানিজ্য, চাকুরি-বাকরি ও ঘর-সংসার নিয়েও কি ব্যস্ততা কম? হাজার হাজার ঘন্টা ব্যয় হয় এসব কাজে। কিন্তু বিনিয়োগ নাই শরিয়তের প্রতিষ্ঠায়। সরকার পতন, নেতাদের জেলমুক্ত করণ, নির্বাচনী যুদ্ধ ও বহুবিধ আন্দোলনে বহু শ্রম, বহু অর্থ ও বহু রক্ত ব্যয় হয়। কিন্তু শরিয়ত প্রতিষ্ঠা নিয়ে কোন আন্দোলন নাই। নানা ইস্যুতে নানা সংগঠনের সাথে ঐক্য গড়া হয়, কিন্তু শরিয়ত প্রতিষ্ঠা কল্পে কোন ঐক্য নাই? ইসলামী রাষ্ট্র ও শরিয়ত প্রতিষ্ঠার কাজে নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ যেখানে নিজেদের জীবনটাই কোরবানী দিতে নেমেছিলেন -সে কাজে আজকের মুসলিমদের বিনিয়োগটা কই? ক’ঘন্টা ব্যয় হয় এ কাজে? এই হলো মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে গাদ্দারীর নমুনা।
অপরাধ চুক্তি ভঙ্গের
পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহতায়ালার অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘোষণা এসেছে পবিত্র কোর’আনের সুরা তাওবাতে। মুসলিম জীবনে বিপ্লব আনতে এ আয়াতটিই যথেষ্ট। এ আয়াতটি আমূল বিপ্লব এনেছিল নবীজী (সা:)’র সাহাবাদের জীবনে। জীবন, জগত এবং এ জীবনে বাঁচবার মিশন নিয়ে তাদের সমগ্র ধারণাই তাতে পাল্টে গিয়েছিল। উক্ত ঘোষণায় বলা হয়েছে: “ইন্নাল্লাহা আশতারা মিনাল মু’মিনিনা আনফুসাহুম ওয়া আমওয়ালাহুম বি আন্নালাহুমুল জান্নাহ, ইউকাতিলুউনা ফি সাবিলিল্লাহে ফা ইয়াকতুলুউনা ওয়া ইয়ুকতালুউন।” অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন জান্নাতের বিণিময়ে। তারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে এবং এ কাজে তারা যেমন (শত্রুদের) হত্যা করে এবং তেমনি নিজেরাও নিহত হয়।” -(সুরা তাওবাহ, আায়াত- ১১১)। কোন রূপ অসস্পষ্টতা ও জটিলতা নেই উপরুক্ত ঘোষণায়। মহান আল্লাহতায়ালার এ অমোঘ ঘোষণা বুঝতে তাই অসুবিধা হয়নি সেকালে নিরক্ষর মরুচারিদেরও। এটি একটি ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি। এখানে ক্রেতা মহান আল্লাহতায়ালা; বিক্রেতা হলো ঈমানদার। এবং বিক্রিত মালটি হলো ঈমানদারের জান ও মাল। ফলে ঈমান আনার সাথে সাথে ব্যক্তির জীবনে যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনটি ঘটে সেটি হলো তার নিজের জান ও মালের উপর মালিকানায়। ঈমান আনার সাথে সাথে তাঁর নিজের উপর নিজের মালিকানা বিলুপ্ত হয়ে যায়, এবং সে পরিণত হয় মহান আল্লাহতায়ালার ক্রয়কৃত পণ্যে। সে নিজেই তখন নিজের কাছে আল্লাহতায়ালার গচ্ছিত আমানত। প্রকৃত ঈমানদারী তো এ চুক্তি পালনের মধ্যো। ফলে প্রকৃত ঈমানদারের লক্ষ্য হয়, গচ্ছিত সে আমানতকে তার মালিক মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত পথে ব্যয় করে তাঁর সান্যিধ্যে পৌঁছে যাওয়া। এ লক্ষ্যে শ্রেষ্ঠ পথটি হলো জিহাদ এবং শাহাদতের। এবং সে আমানতের খেয়ানত হয় যখন সে গচ্ছিত জানমালের বিনিয়োগ হয় মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা ভিন্ন অন্য কোন এজেন্ডাকে বিজয়ী করায়। এ জীবনে সবচেয়ে বড় পরহেযগারী হলো সে খেয়ানত থেকে বাঁচা। সুরা তাওবার এ আয়াতটি বাংলাদেশেও পড়ানো হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘরে বসেও এ আয়াতটি পাঠ করে। কিন্তু ক’জনের ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি মহান আল্লাহতায়ালার সাথে? বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে এ আমানতের খেয়ানতই বেশী বেশী হচ্ছে। শাসনক্ষমতায় ইসলামের শত্রুপক্ষের বিজয়, রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদ, আদালতে কুফরি আইনের বিজয় এবং শরিয়তের পরাজয় তো এরূপ খেয়ানতের কারণেই। আর খেয়ানত মাত্রই তো আযাব ডেকে আনে।
বিক্রয় চুক্তি শয়তানের সাথে?
খেয়ানতের আলামত, যারা নিজেদের মুসলিম রূপে পরিচয় দেয় তাদের জান-মাল ও চিন্তা-চেতনার উপর মহান আল্লাহতায়ালার মালিকানার বদলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে নিজ-নিজ খেয়ালখুশির আধিপত্য। বিপুল সংখ্যায় পরিণত হয়েছে শয়তানের সৈনিকে। ফলে তাদের রাজনীতি-সংস্কৃতি, বুদ্ধিবৃত্তি, আইন-আদালত, ব্যবসা-বানিজ্য তথা জীবনের প্রতিক্ষেত্রে বিজয়টি অনৈসলামের। নামে মুসলিম হলেও তাদের ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি যেন শয়তানের সাথে। ফলে শয়তানের যা এজেন্ডা -সেটিই হলো তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা। ফলে শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠার যারা বিরোধী, শরিয়তী আইনকে মৌলবাদ বলে যারা তিরস্কার করে -তাদেরকে এরা শুধু ভোটই দেয় না, অর্থ, শ্রম ও রক্তও দেয়। দেশে এদের সংখ্যা-বৃদ্ধির কারণেই শরিয়তের বিরোধীরা ভোট পায়, সূদী-ব্যাংকগুলো গ্রাহক পায় এবং পতিতারাও বিস্তর খরিদদার পায়। নবীপাক (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে এটি কি ভাবা যেত? অথচ এটিই বাঙালী মুসলিমদের অর্জন। এটিই হলো তাদের ইসলাম! এরাই আবার নিজেদেরকে আহলে সূন্নত বলে পরিচয় দেয়!। অথচ নবীজী (সা:)’র আদর্শ গুরুত্ব পেলে কি শরিয়তের বিলুপ্তি ঘটতো?
বাংলাদেশীদের গর্ব, দেশে নামাযীর সংখ্যা দুনিয়ার যে কোন দেশের চেয়ে বেশী। দেশটিতে মসজিদ-মাদ্রাসার সংখ্যাও তুলনাহীন। এ দেশে বিশ লাখের বেশী মুসুল্লী নিয়ে তাবলিগ জামায়াতের ইজতেমা হয়। কিন্তু এ গুলো কি আদৌ গর্বের বিষয়? সফলতার মানদন্ড নামাজির সংখ্যা নয়। ইজতেমায় কত জন হাজির হলো সেটিও নয়। বরং দেশে আল্লাহর আইন কতটা মেনে চলা হলো -সেটি। আল্লাহতায়ালার নিবেদিত প্রাণ সৈনিক রূপে কাজ করার দায়িত্বটি শুধু মাদ্রাসা-পাশ আলেমদের নয়, মসজিদের ইমাম বা ইসলামি সংগঠনগুলির নেতাদেরও নয়। এ দায়িত্ব প্রতিটি মুসলিমের। রোজ হাশরের বিচার দিনে প্রশ্ন উঠবো কে কতটা মুসলিম তা নিয়ে। তাছাড়া আলেম হওয়া তথা জ্ঞানী হওয়াতো প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ। কারণ মুসলিম হওয়ার জন্য জ্ঞানী হওয়াটি তো পূর্ব শর্ত। পবিত্র কোর’আন বলা হয়েছে, “ইন্নামা ইয়াখশাাল্লাহা মিন ইবাদিহিল উলামা।” অর্থ: সমস্ত মানব সৃষ্টির মধ্যে একমাত্র আলেমরাই আল্লাহকে ভয় করে।”
অতএব আলেম না হয়ে একজন ব্যাক্তি আল্লাহভীরু মুসলিম হয় কি করে? আজকের মুসলিমদের মূল রোগটি এখানেই। মুসলিম হওয়ায় যে ব্যর্থতা তার মূল কারণ হলো ইলমশূণ্যতা। ইলমশূণ্যতা থেকে সৃষ্টি হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার ভয়শূণ্যতা। শরিয়ত প্রতিষ্ঠার বিরোধী ও তাতে অমনযোগী হওয়ার কারণ এই ভয়শূণ্যতা। এ ভয়ানক ভয়শূন্যতার কারণে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার কাজে শ্রমদান, অর্থদান ও রক্তদান দূরে থাক ভোটদানেও তারা রাজি নয়। বরং তারা রাজি শত্রু পক্ষের অস্ত্র নিয়ে লড়তে। শত্রুদেরকে খুশি করতে রাজি এমন কি মুসলিম হত্যাতেও। এমন চেতনার কারণে অতীতে বহু মুসলিম সৈনিক বৃটিশ ও ভারতীয় কাফের সৈনিকদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বহু মুসলিমকে হত্যা করেছে। মুসলিম দেশ ভেঙ্গে শত্রুকে খুশি করেছে। সেটি ১৯৭১’য়ে বাংলাদেশে দেখা গেছে, ১৯১৭ সালে ইরাক, ফিলিস্তিন ও সিরিয়ায় দেখা গেছে। বাংলাদেশে শরিয়তের প্রতিষ্ঠার পথে এরাই বড় বাধা। কথা হলো, মহান আল্লাহতায়ালাতে ভয়শূণ্য এরূপ মানব দ্বারা দেশের লাখ লাখ মসজিদ পূর্ণ হলে কি ইসলামের গৌরব বাড়ে?
ব্যর্থতাটি বিকট
যারা মহান আল্লাহতায়ালার অনুগত সৈনিক, শরিয়ত প্রতিষ্ঠার বিষয়টি তাদের কাছে কোন মামূলী বিষয় নয়। এটি অতি মৌলিক ঈমানী দায়িত্বের বিষয়। বিলিয়ন বিলিয়ন বছর জাহান্নামের লেলিহান আগুনে দগ্ধ হওয়া নিয়ে যার লেশমাত্র ভয় নাই -একমাত্র সে ভয়শূণ্য কাফের ব্যক্তিই দায়িত্বশূণ্য হতে পারে। বস্তুত সে দায়িত্বপালনের উপর নির্ভর করে ব্যক্তির মুসলিম পরিচিতি। এ কাজে কার কি বিনিয়োগ – সে হিসাব আখেরাতে দিতেই হবে। এবং এ বিনিয়োগের উপর নির্ভর করে আখেরাতে নাজাতপ্রাপ্তি। নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত ও তাসবিহ-তাহলিলের ন্যায় ইবাদতের কাজ তো সে বিনিয়োগে সামর্থ্য বৃদ্ধি। সে সামর্থ্য নিয়ে বেড়ে উঠা ও তার বিনিয়োগের মধ্যেই অন্যদের থেকে মুসলিমের শ্রেষ্ঠত্ব। মানবের মধ্যে পরস্পরে যে পার্থক্য তা তো বিনিয়োগের পার্থক্যের কারণে। প্রাথমিক যুগের মুসলিমদের থেকে আজকের মুসলিমদের বিনিয়োগে যে বিশাল পার্থক্য -সেটিই্ তো বলে দেয় পরকালের প্রাপ্তীতে পার্থক্য কতটা বিশাল হবে? কিন্তু তা নিয়ে ভাবনাই ক’জনের? আর সে ভাবনাশূণ্যতাই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, মুসলিম রূপে বেড়ে উঠায় আজকের মুসলিমদের ব্যর্থতাটি কতটা প্রকট। ১ম সংস্করণ ০৩/০৬/২০০৩; ২য় সংস্করণ ১১/০১/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018