যে ভয়ংকর নাশকতা বাংলাদেশের শিক্ষানীতিতে
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on November 8, 2019
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি
- No Comments.
হাতিয়ার দেশধ্বংস ও চরিত্রধ্বংসের
বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়ংকর নাশকতাটি কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য বা অর্থনীতিতে হচ্ছে না। বরং সেটি হচ্ছে শিক্ষাঙ্গণে। জীবননাশী সবচেয়ে হিংস্র জীবগুলো বাংলাদেশের বনেজঙ্গলে বেড়ে উঠেনি, বেড়ে উঠেছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। মানবরূপী যে পশুগুলো আবরার ফাহাদ ও বিশ্বজিং দাশের ন্যায় ছাত্রদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে তারা বন-জঙ্গল থেকে বেরুয়নি, পতিতাপল্লী বা ডাকাত পাড়া থেকেও আসেনি। বরং এসেছিল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে। অনেকে পড়াশুনা করেছে নটারডেম কলেজ ও বুয়েটের ন্যায় দেশের শ্রেষ্ঠতম প্রতিষ্ঠানে। বাংলাদেশের বনেজঙ্গলে হিংস্রপশুর সংখ্যা কমে গেলে কি হবে, দেশে মানবরূপী এ পশুদের সংখ্যা পঙ্গপালের ন্যায় বেড়েছে। বাংলাদেশ যে কারণে এ শতাবন্দীর শুরুতে বিশ্বমাঝে দূর্নীতিতে পর পর ৫ বার প্রথম স্থান অধিকার করেছিল -সেটি দেশের জলবায়ু,মাঠ-ঘাট ও আলোবাতাসের কারণে নয়। মানুষ কি খায়, কি পান করে বা কি পরিধান করে –সে কারণেও নয়। বরং কারণটি হলো দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। দেশের মানুষ কীরূপ ধ্যান-ধারণা ও চরিত্র নিয়ে বেড়ে উঠবে, কীরূপ সংস্কৃতি নির্মিত হবে বা দেশ কোন দিকে যাবে -সে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি তো নির্ধারিত হয় দেশের শিক্ষানীতি থেকে।
দুর্বৃত্ত মানুষের কদর্য চরিত্র দেখে নিশ্চিত বলা যায়, তার জীবনে সুশিক্ষা লাভ হয়নি। তেমনি একটি জাতি যখন দুর্বৃত্তিতে বার বার বিশ্বরেকর্ড গড়ে তখন এ বিষয়টি আর গোপন থাকে যে, দেশে সুশিক্ষার ব্যবস্থা নাই। এরূপ বিশ্বজোড়া কুকীর্তির ইতিহাস গড়ার কাজটি দেশের দুয়েক হাজার মানুষের কাজ নয়। বরং এর সাথে জড়িত লক্ষ লক্ষ ডিগ্রিধারি ও লক্ষ লক্ষ পদবীধারি মানুষ। বাংলাদেশে শিক্ষার নামে যা কিছু হয়েছে বা হচ্ছে তা হলো, দেশধ্বংস ও চরিত্র ধ্বংসের হাতিয়ার রূপে শিক্ষা নীতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ব্যবহার। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা হলো,“নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেরাই নিজেদের পরিবর্তনের কাজটি সমাধা না করে।” এ পবিত্র আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়, রাষ্ট্রীয় পরিবর্তন বা বিপ্লবের কাজটি উপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে হয় না, সেটির শুরু জনগণের স্তর থেকে হতে হয়। তাই যে জাতি বিপ্লব আনতে চায়, বিপ্লব আনে শিক্ষায়। এভাবেই বিপ্লবের জন্ম হয় শিক্ষাঙ্গণে। সে বিপ্লব ইসলামের পথে শুরু হলে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকেও তখন সাহায্য জুটে। অথচ বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গণে সে কাজটি শুরু করা দূরে থাক, তা নিয়ে আদৌ ভাবা হয়নি।
সুশিক্ষায় মানুষ যেমন সত্যপথ পায় এবং সততা নিয়ে বেড়ে উঠে, কুশিক্ষায় তেমনি পথভ্রষ্ট হয় ও দুর্বৃত্ত রূপে বেড়ে উঠে। মানব জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জনটি হলো হেদায়াত লাভ। সেটি না পেলে প্রতিপদে, প্রতিকর্মে ও প্রতি সিদ্ধান্তে আসে ভ্রষ্টতা। সে ব্যর্থতা জাহান্নামে নিয়ে পৌঁছায়। সম্পদ-লাভ,সন্তান-লাভ বা ক্ষমতা-লাভ দিয়ে এ ব্যর্থতা দূর করা যায় না। তাই নামাজের প্রতি রাকাতে মহান আল্লাহর নাযিলকৃত যে দোয়া পাঠটি বাধ্যতামূলক, সেটি সন্তানলাভ, সম্পদলাভ, চাকুরিলাভ বা স্বাস্থ্যলাভের দোয়া নয়, বরং সিরাতুল মোস্তাকীম লাভের দোয়া। সে সাথে পাঠ করতে হয় পথভ্রষ্টতা থেকে বাঁচার দোয়া। এজীবনে প্রতি পদেই তো পরীক্ষা। সে পরীক্ষাটি হয় কে হেদায়েত পেল এবং কে পথভ্রষ্টতা থেকে বাঁচলো তা থেকে। সে পরীক্ষায় পাশের জন্য ব্যক্তির আন্তরিক প্রচেষ্ঠার সাথে জরুরী হলো আল্লাহর সাহায্য। মানব জীবনে হেদায়াত লাভের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ন কোন ইস্যু যেমন নেই, সে হেদায়াত লাভে মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে দোয়ার চেয়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ দোয়াও নেই। এবং শিক্ষার মূল কাজটি হলো, হেদায়াত লাভের সামর্থ্য বাড়ানো। কোনটি জাহান্নামের পথ, সুশিক্ষা সেটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া।পথভ্রষ্টতা থেকে বাঁচার উপায়ও বলে দেয়। বিদ্যাশিক্ষার প্রকৃত গুরুত্ব তো এখানেই।
অধিকৃত শিক্ষাঙ্গণ
ইসলামের বিপক্ষ শক্তির হাতে বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি, আইন-আদালত, পুলিশ ও প্রশাসনই শুধু অধিকৃত হয়নি, অধিকৃত হয়েছে দেশের শিক্ষাঙ্গণও। সে অধিকৃতিটা শুধু শিক্ষানীতি, সিলেবাস বা পাঠ্যপুস্তকের উপর নয়, বরং সেটি আরো ব্যাপক ও বহুমুখি। ১৭ কোটি মুসলমানের দেশে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস,পরিণত হয়েছে বিদেশী ধ্যান-ধারণা, বিদেশী সংস্কৃতি, বিদেশী মূল্যবোধের চারণভূমি। সেক্যুলারিজম, জাতীয়তাবাদ, ফ্যাসিবাদ ও সমাজতন্ত্রের ন্যায় ভ্রষ্ট মতবাদগুলো যতটা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ইসলাম তা পায়নি। আর সে অধিকৃতিটা বাড়াতে শত্রুশক্তির বিনিয়োগও বিশাল। সে বিনিয়োগের ফলে ইসলামের শত্রুপক্ষ সৈনিক রূপে পেয়েছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষক ও ছাত্র।
শত্রুপক্ষের এ সৈনিকেরা ইসলামের মধ্যে নিজেদের মৃত্যু দেখতে পায়। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বহু প্রতিষ্ঠানে ইসলামের পক্ষে কথা বলা, মিছিল করা ও সংগঠিত হওয়াকে তারা অসম্ভব করে রেখেছে। অধিকৃত এ ভূমিতে ইসলামের পক্ষে কথা বলার অর্থ যুদ্ধ শুরু করা। যারা ইসলামের পক্ষে কথা বলে তাদেরকে জঙ্গি বলা হয়। বহু ছাত্রকে শুধু ইসলামের পক্ষে কথা বলার জন্য কাম্পাসে লাশ হতে হয়েছে। জেলে যেতে হয় কাছে ইসলাম-বিষয়ক বই রাখার অপরাধে। জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় প্রতিষ্ঠানে হিজাব পড়ে ছাত্রীদের ক্লাসে যোগ দেয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। গ্রেট ব্রিটেন,আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র, এমন কি ভারতেও অবস্থা এতটা নাজুক নয়, যতটা বাংলাদেশে। বিদ্যাশিক্ষার এ অধিকৃত ভূমিতে বেড়েছে অশ্লিলতা, বেড়েছে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, বেড়েছে ড্রাগ-মদের ব্যবহার, বেড়েছে সন্ত্রাস ও চুরিডাকাতি, বেড়েছে ধর্ষণ। এমনকি ধর্ষনের সেঞ্চুরি উৎসবও হচ্ছে। যেমনটি নব্বইয়ের দশকে জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের দ্বারা হয়েছিল।
শিক্ষকের মর্যাদা ইসলামে অতি মহান। শিক্ষকের সে পবিত্র আসনে বসেছেন মহান নবী-রাসূলগণ। সমগ্র মানব ইতিহাসে বস্তুত তারাই তো সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তাদের সে শিক্ষার কারণেই মানুষ যুগে যুগে সত্যপথ পেয়েছে। পেয়েছে উচ্চতর মানবতা,পেয়েছে পাপপঙ্কিলতা থেকে মুক্তি,পেয়েছে মহামানব রূপে বেড়ে উঠার পথ। এবং তখন নির্মিত হয়েছে উচ্চতর সভ্যতা। নবীজী(সাঃ) আগমনে আরবে কৃষি বা শিল্পে বিপ্লব আসেনি,জলবায়ু বা আলোবাতাসেও কোন পরিবর্তন আসেনি। বরং বিপ্লব এসেছিল তাদের চেতনায় এবং চরিত্রে। মানুষ এভাবে পাল্টে যাওয়ার কারণে মহান আল্লাহও তাদের ভাগ্য পাল্টে দেন। তাদের সে বিপ্লবের মূলে ছিল কোরআনী শিক্ষা। মুসলমানগণ সে শিক্ষা থেকে যতই দূরে সরেছে ততই নীচে নেমেছে। নীচে নামতে নামতে আজ বিশ্বে সবচেয়ে পরাজিত ও অধ্বঃপতিত জাতিতে পরিণত হয়েছে।
জিম্মি পথভ্রষ্টদের কাছে
শিক্ষাকে কল্যাণকর করার লক্ষ্যে অরিহার্য হলো সরকারের রাজনৈতীক অঙ্গিকার। সে অঙ্গিকারটি হতে হবে সিরাতুল মোস্তাকীমে চলায়। সমাজতন্ত্রি বা সেক্যুলারিস্টগণ কখোনই দেশের শিক্ষাখাতকে ইসলামিস্টদের হাতে দেয় না। কারণ তাতে সমাজতন্ত্র, ফ্যাসিবাদ বা সেক্যুলারিজম বাঁচে না। তেমনি কোন মুসলিম দেশের শিক্ষাখাতকে সমাজতন্ত্রি বা সেক্যুলারিস্টদের হাতে দিলে ইসলামও বাঁচে না। মশামাছি যেমন রোগ ছড়ায়, পথভ্রষ্ট শি্ক্ষক ও বুদ্ধিজীবীগণও তেমনি রোগ ছড়ায় ভ্রষ্ট চিন্তা-চেতনার। এভাবেই ভ্রষ্টতা আনে কোমলমতি ছাত্রদের জীবনে। বাংলাদেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যায়গুলোতে লম্পট, ধর্ষক, সন্ত্রাসী, সমাজতন্ত্রি, জাতীয়তাবাদী ও সেক্যুলারিস্টগণ যেভাবে পঙ্গপালের মত বেড়ে উঠেছে -তা তো শিক্ষাক্ষেত্রে এরূপ জীবাণু বিস্তারের কারণেই। এরূপ পথভ্রষ্টদের দিয়ে বড় জোর কৃষিবিদ, প্রকৌশলী, চিকিৎস্যক বা রাস্তার ঝাড়ুদারের কাজ করানো যায়, কিন্তু শিক্ষাদানের কাজও কি চলে? সেটি চলে না বলেই ১৯৭৯ সালে বিপ্লবের পর ইরানের সরকার কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজায় ৩ বছরের জন্য তালা ঝুলিয়ে রেখেছিল। এতে বহু হাজার ছাত্র পথভ্রষ্ট শিক্ষদের হাতে জাহান্নামের যাত্রী হওয়া থেকে বেঁচেছিল। অথচ এমন পথভ্রষ্ট শিক্ষকেদের হাতেই বাংলাদেশের ছাত্ররা জিম্মি। শক্তিশালী সেনাবাহিনী দিয়ে অন্য দেশ দখলে নেয়া যায়। কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য বাড়িয়ে অর্থনীতিও সমৃদ্ধ করা যায়। কিন্তু দেশবাসীর ঈমান-আমল ও চরিত্র বাঁচাতে হলে শিক্ষাব্যবস্থাকে অবশ্যই ইসলামী করতে হয়।
মুসলমানদের জীবনে পরাজয় ও বিপর্যয়ের তখন থেকেই শুরু, যখন শিক্ষার ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ খাতটি অধিকৃত হয় পথভ্রষ্টদের হাতে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষাখাতের উপর তাদের দখলদারি। সেটি মুজিব আমল থেকেই। মুজিবের হাতে দেশের শিক্ষানীতির মূল লক্ষ্যটি ছিল ইসলামবিনাশ। কারণ মুজিব নিজেই ছিলেন পথভ্রষ্টতার শিকার। সে পথভ্রষ্টতা তার জীবনে যে কতটা গভীর ছিল সেটি ধরা পড়ে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, সেক্যুলারিজমের ন্যায় ইসলাম-বিরোধী ভ্রষ্ট মতাবাদের প্রতি তাঁর দীক্ষা থেকে। সেটি আরো প্রকটতর হয় তাঁর বাকশালী স্বৈরাচার ও কাফেরদের সাথে ঘনিষ্ঠতা থেকে। অথচ কাফেরদের সাথে বন্ধুত্বের ব্যাপারে মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশনা হলো,“মু’মিনগণ যেন মুমিনদের ব্যতীত কাফিরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে তাদের সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না।” –(সুরা আল ইমরান, আয়াত ২৮)। মুজিব এখানে বিদ্রোহ করেছেন মহান আল্লাহর এ কোরআনী হুকুমের বিরুদ্ধে। সে বিদ্রোহের পথ বেয়েই তিনি দিল্লির কাফের শাসকদের কোলে গিয়ে উঠেছেন, অপরদিকে নিজ দেশের ইসলামপন্থিদের জেলে তুলেছেন।
সত্যকে সত্য, মিথ্যাকে মিথ্যা এবং দুর্বৃত্তকে দুর্বৃত্ত বলার সামর্থ্য সবার থাকে না। অথচ সত্য ও সত্যবাদী সৎ ব্যক্তিকে ভালবাসা এবং মিথ্যা ও মিথ্যাবাদী দুর্বৃত্তকে ঘৃণা করার সামর্থ্যটুকুই মানব জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সামর্থ্য। এ সামর্থ্য না থাকলে ঈমানদার হ্ওয়া যায় না। এবং সে সামর্থ্য বাড়ানোর জন্য চা্ই ইসলামী শিক্ষা। চাই চারিত্রিক বল। নমরুদ,ফিরাউন,আবু জেহেল ও আবু লাহাবের মত দুর্বৃত্তকে দুর্বৃত্ত রূপে চেনার সামর্থ্য তৎকালীন সংখ্যাগরিষ্ঠদের ছিল না। কারণ, যে শিক্ষা থেকে সে সামর্থ্য সৃষ্টি হয় -তা তাদের জুটেনি্। ফলে সে চারিত্রিক বলও তাদের গড়ে উঠেনি। এখানে অভাব ছিল ওহী-প্রদত্ত জ্ঞানের। একই ভাবে সে সামর্থ্য-অর্জন অসম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবনে। ফলে যে ব্যক্তি বাকশালী স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা করলো, দেশজুড়ে দুর্নীতির প্লাবন সৃষ্টি করলো, নিষিদ্ধ করলো সকল ইসলামি সংগঠন এবং ভারতের আজ্ঞাবহ গোলামীই যার রাজনীতির মূল বৈশিষ্ঠ -সে ব্যক্তিকে ঘৃনা করার সামর্থ্যও বাংলাদেশের শিক্ষিতদের মাঝে সৃষ্টি হয়নি। বরং সৃষ্টি হয়েছে ডিগ্রিধারি এমন বহুলক্ষ মানুষ যারা তাঁকে দেশের বন্ধু এবং জাতির পিতা বলে সম্মান দেখায়। এমন একটি দেশের অফিস-আদালত,পুলিশ বিভাগ, প্রশাসন, ব্যাংক, রাজনৈতীক সংগঠন, পার্লামেন্ট, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর দফতর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যাবসা-বাণিজ্য ভয়ানক দুর্বৃত্তদের দিয়ে পূর্ণ হয়ে উঠবে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়?
শয়তান যেখানে শিক্ষকের বেশে
জনগণ জান্নাতে যাবে না জাহান্নামে যাবে -সেটি নির্ধারণে শিক্ষার প্রভাব বিশাল। জাহান্নামের আগুণ থেকে জনগণকে যারা বাঁচাতে চায় তারা তাই শিক্ষা-সংস্কারে হাত দেয়। আবির্ভুত হন শিক্ষকের বেশে। নবীগণও আজীবন শিক্ষক ছিলেন। একই কারণে শয়তানও ক্ষেতেখামারে বা কলকারখানায় বসে না। সেও শিক্ষকের বেশ ধরে বিদ্যালয়ে বসে। ছাত্রদের পথভ্রষ্ট করে এবং জাহান্নামে টানে। পুতুল পূজাকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে মন্দিরের হিন্দু পুরোহিতগণ তাই বিদ্যাদানের কাজকে শত শত বছর নিজ দায়িত্বে রেখেছিল। একই কাজ করেছে গীর্জার পাদ্রীরা। পথভ্রষ্টতা বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী, সমাজতন্ত্রি ও সেক্যুলারিস্টরাও তাই শিক্ষামন্ত্রালয়ের উপর নিজেদের দখলদারি প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে।
আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বাড়াতে অতীতে শেখ মুজিবও শিক্ষাকে হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করেছেন। সে লক্ষ্য পুরণে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর পরই শেখ মুজিব শিক্ষানীতির প্রণোয়নের দায়িত্ব দেন ড. কুদরতে খুদার নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটির উপর। এ কমিটির মূল লক্ষ্য ছিল এমন এক শিক্ষানীতি প্রণোয়ন যা সফলতা দিবে ছাত্রদেরকে ইসলামে অঙ্গিকারহীন করায়। তাই সে শিক্ষানীতির কোথাও বলা হয়নি, এ শিক্ষাব্যবস্থা ছাত্রদের মুসলিম রূপে বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে। অথচ মুসলিম তার সন্তানকে শিক্ষা দেয় শুধু তার উপার্জন বাড়াতে নয়, বরং ঈমান বাড়াতে। এবং ঈমান বাড়লেই জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচে। অথচ কুদরতে খুদা শিক্ষা কমিশনে বলা হয়,“নতুন সমাজতান্ত্রিক সমাজ সৃষ্টির প্রেরণা সঞ্চারই শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান দায়িত্ব ও লক্ষ্য”–(অধ্যায় ১:১)। আরো বলা হয়,“শিক্ষার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবোধ শিক্ষার্থীর চিত্তে জাগ্রত ও বিকশিত করে তুলতে হবে এবং তার বাস্তব জীবনে যেন এর সম্যক প্রতিফলন ঘটে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।”–(অধ্যায় ১:২)। ফলে ষড়য্ন্ত্র হয় শিক্ষানীতিকে ভয়ংকর নাশকতার হাতিয়ার রূপে গড়ে তোলা। এটিই ছিল শেখ মুজিবের রাজনীতির অন্যতম বড় নাশকতা।
শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর রাজনৈতীক পট পাল্টে যায়, ছেদ পড়ে সে শিক্ষানীতির বাস্তবায়নেও। শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে কুদরতে খুদা কমিশন কর্তৃক প্রণীত শিক্ষানীতির ইসলাম বিরোধী নীতি ও কৌশলগুলোকে আরো ধারালো ও ব্যাপক করার উদ্যোগ নেন। সে লক্ষ্যে একটি কমিটি বানানো হয়।সে কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় অতি পরিচিত ইসলাম বিরোধী বুদ্ধিজীবী কবির চৌধুরিকে এবং কো-চেয়ারম্যান করা হয় ড. খলিকুজ্জামানকে। সে কমিটিতে নেয়া হয় জাফর ইকবালের ন্যায় আরেক ইসলামবিরোধী শিক্ষক ও লেখককে। কমিটি ০২/০৯/২০০৯ সালে তার চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। সে রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে সেক্যুলার শিক্ষার,বলা হয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষার ১ম ও ২য় শ্রেণীতে বাধ্যতামূলক বিষয় রূপে থাকবে বাংলা,ইংরাজী এবং গণিত। এবং বাদ দিতে হবে আরবী। আরবীকে রাখা হয়েছে স্রেফ অতিরিক্ত বিষয় রূপে। মাধ্যমিক শিক্ষা থেকে বাদ পড়েছে ধর্মীয় ও নৈতীক শিক্ষা।কোরআন ও কোরআনের ভাষা শিক্ষার বিরুদ্ধে তাচ্ছিল্য আর কাকে বলে?
লক্ষ্য ক্যাডার তৈরী
কুদরতে খুদা কমিশন প্রণীত শিক্ষানীতির মূল লক্ষ্যটি ছিল, দেশের স্কুল-কলেজ¸ বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসাকে ভারতসেবীদের অবৈতনিক দলীয় ক্যাডার তৈরীর কারখানায় পরিণত করা। শিক্ষানীতির এটিই সোভিয়েত সোসালিস্ট রাশিয়ার মডেল। সে নীতির অন্যতম স্ট্রাটেজী হলো,রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে ধর্ম,ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং ধর্মীয় সাহিত্য ও সংগঠনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত করা। কম্যুনিস্ট বিপ্লবের শুরুতে রাশিয়ার বিশাল মুসলিম প্রধান এলাকায় বহু হাজার মসজিদ ও মাদ্রাসা ছিল। সেগুলোকে রাশিয়ার কম্যুনিস্ট সরকার ঘোড়ার আস্তাবলে পরিণত করে। ধর্মকে আফিম আখ্যায়ীত করে ইসলামচর্চাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধে পরিণত করে। বাংলাদেশ সৃষ্টির পরপরই মুজিব সোভিয়ত রাশিয়ার অনুসারিতে পরিণত হন এবং সে সোভিয়েত নীতির বাস্তবায়ন শুরু করেন বাংলাদেশে। বিশেষ করে ধর্মের বিরুদ্ধে। সমাজতন্ত্রকে তিনি রাষ্ট্রীয় চার স্তম্ভের এক স্তম্ভে পরিণত করেন এবং নিষিদ্ধ করেন সকল ইসলামী দলগুলোকে। বন্ধকরে দেন সকল ইসলামি পত্র-পত্রিকা। বন্দী করেন ইসলামি দলসমুহের নেতাকর্মীদের। নিয়ন্ত্রিত করেন ইসলামের বই প্রকাশনা। রেডিও-টিভি ও পত্র-পত্রিকায় সংকুচিত হয় ইসলামের চর্চা।অথচ ক্ষমতাসীন হয়ে এমনটি যে তিনি করবেন,তা নিয়ে নির্বাচনি জনসভাগুলোতে জনগণকে কিছুই বলেননি?
শিক্ষার শক্তি নিয়ে শয়তানী শক্তিরও কোন সন্দেহ নাই। শয়তানী শক্তি তাই মুসলিম দেশের মাঠঘাট, কলকারখানা, রাস্তাঘাট, ক্ষেতখামার, পশুপালন বা মৎস্যপালন নিয়ে ভাবে না। আল্লাহর দ্বীনের অনুসারিদের সাথে তার মূল যুদ্ধটি স্রেফ রণাঙ্গনে বা রাজনীতির ময়দানেও হয় না, বরং সেটি হয় শিক্ষানীতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি দখলে নেয়ার ময়দানে। বাংলাদেশে সে যুদ্ধে এখন বিজয়ী শক্তি হলো শয়তানি শক্তি। বাংলাদেশের বুকে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যারা একসময় লড়াই করতো,মস্কোপন্থি লেলিনবাদী হওয়া নিয়ে যাদের গর্ব ছিল, তাদের দখলে এখন বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রালয়। মুজিবের সাথে সে আমলের লেলিনবাদীদের যেমন ঐক্য গড়ে উঠেছিল, এখন সে অভিন্ন ঐক্য গড়ে উঠেছে এ আমলের লেলিনবাদীদের সাথে। ধর্মের নামে অধর্ম, সংস্কৃতির নামে অশ্লিলতা, সভ্যতার নামে নানা অসভ্যতা আজও বিপুল প্রতিপত্তি নিয়ে বেঁচে আছে এবং দিন দিন যেরূপ শক্তিশালী হচ্ছে –তা তো দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এরূপ ইসলামবিরোধী শক্তির হাতে অধিকৃত হ্ওয়ায়।
ঘরের শত্রু
মুসলিম ভুমি বার বার ইসলামের দুষমনদের হাতে বেদখল হয়েছে। কখনো বিদেশী শত্রুদের হাতে,কখনো বা ঘরের শত্রুদের হাতে। দেশী ও বিদেশী –এ উভয় প্রকার শত্রুই ইসলামের অনুসারিদেরকে নিজেদের জন্য সব সময়ই শত্রু মনে করেছে। অতীতে বিদেশী শত্রুদের হাতে দেশ দখলে যাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার বুকে কলকারখানা বাড়েনি,কৃষি-উৎপাদনও বাড়েনি,বরং বেড়েছে দ্বীনের পথ থেকে দূরে ছিটকে পড়া পথভ্রষ্ট মানুষের উৎপাদন। ইসলাম থেকে দূরে সরানো লক্ষ্যে দেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যবহার করা ছিল তাদের প্রধানতম কৌশল। ঔপনিবেশিক বিদেশী শত্রুপক্ষ ১৯৪৭ সালে বিদায় নিয়েছে। কিন্তু তাদের দীর্ঘ শাসনের কারণে সৃষ্টি হয়েছে বিপুল সংখ্যক দেশীশত্রু। এসব দেশীরা কাজ করছে বিদেশী শত্রুদের খলিফা রূপে। ঔপনিবেশিক দেশগুলিও তাদের শাসিত কলোনিতে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল। সেগুলির লক্ষ্য যতটা বিদ্যাদান ছিল তার চেয়ে বেশী ছিল মানসিক দাস উৎপাদন। ব্রিটিশ শিক্ষামন্ত্রি লর্ড ম্যাকলে ভারতে তাদের প্রণীত শিক্ষাব্যবস্থার কাঙ্খিত ফসলদের সম্পর্কে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন,“রক্ত-মাংসে ভারতীয় হলেও তারা চিন্তা-চেতনায় হবে ব্রিটিশ”। অর্থাৎ ইসলামের পথ থেকে দূরে সরা ও দেশবাসীকে দূরে সরানোর কাজে ব্রিটিশদের ন্যায় তারাও হবে আপোষহীন। এমন একটি শিক্ষানীতির লক্ষ্য ছিল,ভারতের ন্যায় উপনিবেশগুলোতে তাদের প্রত্যক্ষ শাসন শেষ হলেও তাদের সৃষ্ট মানসিক গোলামদের শাসন যেন থেকে যায়। সে নীতিটি ধরা পড়ে মিশরে ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধি লর্ড ক্রোমারের কথায়। তিনি বলেছিলেন,“মুসলিম দেশগুলিতে সমচেতনার সেক্যুলার একটি শ্রেনী গড়ে না উঠা অবধি তাদের অধীনস্থ্ মুসলিম দেশগুলির স্বাধীনতা দেয়ার প্রশ্নই উঠে না।”
দাস-শাসন
লর্ড ম্যাকলে ও লর্ড ক্রোমারদের সে সাধ বৃথা যায়নি। মুসলিম দেশগুলি ঔপনিবেশিক প্রভূদের শাসন থেকে স্বাধীনতা পেলেও আজও অধিকৃত রয়ে গেছে তাদের মানসিক গোলামদের হাতে। শুরু হয়েছে এক দাস-শাসন। তবে বাংলাদেশের মত দেশগুলিতে এসব দাসদের সবাই যে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশের গোলাম -তা নয়। বরং কেউবা মার্কস-লেলিনের খলিফা, কেউবা দিল্লি ও ওয়াশিংটনের খলিফা। নামে মুসলিম হলেও তাদের চেতনায় মুসলিম হওয়ার দায়বদ্ধতার চেতনাটি শূণ্য। অথচ মুসলিম হওয়ার অর্থই হলো, একমাত্র মহান আল্লাহর খলিফা হয়ে যাওয়া এবং অন্যান্য শক্তির খলিফাদের বিরুদ্ধে লাগাতর যুদ্ধ লড়া। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি ঘটেনি। বিদেশী শক্তির এসব দেশী খলিফাদের হাতে বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রশাসন, ও আইন-আদালতই শুধু অধিকৃত হয়নি, অধিকৃত হয়েছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষালয়গুলোও। শিক্ষাব্যবস্থাকে তারা ব্যবহার করছে নিজেদের রাজনৈতীক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার কাজে। এসব খলিফাদের কারণে ঔপনিবেশিক আমলের ন্যায় আজও অসম্ভব হয়ে আছে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা। অসম্ভব হয়ে আছে ইসলামের শিক্ষা। বরং ইংরেজী ভাষা ও পাশ্চাত্যের সেক্যুলার জীবনবোধ, পোষাকপরিচ্ছদ ও সংস্কৃতি নতুন প্রজন্মের জীবনে আরো গভীর ভাবে জেঁকে বসেছে। সাবেক ঔপনিবেশিক শাসকগণ দায়িত্ব নিয়েছে তাদের এসব অনুগত খলিফাদের প্রতিরক্ষা দেয়ার। ফ্রান্সের সামরিক বাহিনী তাই উত্তর আফ্রিকার দেশ মালিতে ছুটে এসেছে ইসলামি বিপ্লবীদের হাত থেকে তাদের খলিফাদের শাসনকে বাঁচাতে। খলিফাদের বাঁচাতে মার্কিন বাহিনী ঘাঁটি আজও গেঁড়ে বসে আছে কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, ওমান, সৌদি আরব, আফগানিস্তানসহ বহু দেশে । তেমনি ভারতও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তার নিজের খলিফাদের প্রতিরক্ষা দিতে দুই পায়ে খাড়া ।
তবে ইসলামের বিরুদ্ধে দুষমনিতে দেশীশত্রুরা কোন কোন ক্ষেত্রে বিদেশী শত্রুদেরও হার মানিয়েছে। ঔপনিবেশিক শাসন আমলে দেশের শিক্ষিতরা এতটা পাশ্চাত্যমুখি ছিল না। বিদেশী কাফেরগণ গায়ে ইসলামের লেবাস চাপিয়ে অধিকৃত দেশের মুসলিম জনগণকে ধোকা দেয়ার সুযোগ পায়নি। মুসলিম জনগণের কাছে এসব বিদেশী শাসকেরা পরিচিত পেয়েছিল বিদেশী কাফের রূপে। তাছাড়া তারা এসেছিল বহু হাজার মাইল দূরের অন্য মহাদেশ থেকে। সংখ্যায়ও ছিল অতি নগন্য। ফলে শক্তি থাকলেও জনগণকে নিয়ে তাদের মনে প্রচণ্ড ভয়ও ছিল। তাই ইসলামি চেতনা বিনাশে তারা প্রচণ্ড কৌশলী ছিল। কিন্ত ইসলামের দেশী শত্রুদের সে ভয় নাই। ঘরের ইঁদুর যত সহজে ভাণ্ডারে হানা দিতে পারে বাইরের চোর-ডাকাতেরা তা পারে না। শয়তান এজন্যই ইসলামের ক্ষতি সাধনে ঘরের ইঁদুরদের বেছে নেয়। হযরত ইমাম হোসনের হত্যায় এবং তার লাশের উপর ঘোড়া চালাতে এজন্যই শয়তান কোন কাফের-পুত্রকে বেছে নেয়নি, বেছে নিয়েছিল সাহাবী-পুত্র ইয়াজিদকে। তেমনি বাংলাদেশে ইসলামের ক্ষতিসাধনে ময়দানে নামানো হয়েছে মুসলিম সন্তানদের।
সবচেয়ে ভয়ংকর নাশকতা
শেখ মুজিব ও তার কন্যা হাসিনার হাতে বাংলার মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি হয়েছে শিক্ষাক্ষেত্রে। মুজিব আমল থেকেই তার অনুসারিদের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্ত্বরে ছাত্রদের লাশ পড়তে শুরু হয়। শুরু হয় টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি। শুরু হয় পরীক্ষায় সীমাহীন দূর্নীতি। নকলবাজির কারণে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা প্রহসনে পরিণত হয়। হাসিনার আমলে শুধু লাশ হওয়া নয়, ধর্ষণের সেঞ্চুরির রেকর্ডও নির্মিত হয়েছে। রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে স্কুলশিক্ষদের রাজপথে পুলিশ দিয়ে পিটানো ও তাদের চোখে মরিচের গুড়া নিক্ষেপের। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ গুণ্ডাদের দিয়ে পিটানো হয়েছে প্রফেসরদের।বর্বরতার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে পুলিশের সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিশ্বজিত দাশের ন্যায় পথচারি হত্যায়। দেশের শিক্ষানীতি সন্ত্রাসী, ধর্ষক, চোরডাকাত ও খুনি উৎপাদনে কতটা সফল হয়েছে এ হলো তার নজির। পাকিস্তান আমলে কি এমনটি হয়েছে? সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনামলেও কি হয়েছে? সরকার আরেক রেকর্ড গড়েছে এসব অপরাধীদের বিচার না করে।
ছাত্রদেরকে দলীয় যোদ্ধা রূপে ব্যবহার করাটি পরিণত হয়েছে এক রাজনৈতীক শিল্পে। বিরোধী দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে কে কতটা নির্দয় ও নিষ্ঠুর সেটির উপর ভিত্তি করে এসব লাঠিয়ালদের থেকেই নির্বাচিত হয় দলীয় নেতা। তারাই মনোনয়ন পায় নির্বাচনে। অনেককে মন্ত্রীও করা হয়। ফলে সন্ত্রাস, খুন ও চুরি-ডাকাতি ক্যাম্পাস থেকে উঠে এসেছে সংসদে ও মন্ত্রীপরিষদে। বিপর্যয় এসেছে চরিত্রে। ব্রিটিশের ১৯০ বছরের শোষণমূলক শাসনে বাংলার মুসলমানদের বিপুল আর্থীক ক্ষতি হলেও চরিত্রের ক্ষতিটি এতটা ব্যাপক হয়নি। ফলে সে সময় দুর্নীতিতে বিশ্বজুড়া বদনামও হয়নি। কারণ,তখনও দেশবাসী থেকে কোরআন-হাদীসের শিক্ষাকে এতটা কেড়ে নেয়া হয়নি যতটা নেয়া হয়েছে বাংলাদেশী আমলে। ইসলামি বইয়ের তল্লাশিতে তখন ঘরে ঘরে পুলিশ নামানো হয়নি। ব্রিটিশগণ মাদ্রাসা কারিকুলামে ইংরেজী শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেনি, আরবীকে ঐচ্ছিক বা অতিরিক্ত বিষয়ও করেনি। অথচ বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সেটি করেছে। মাদ্রাসার ছাত্রদের উপর ইংরাজী ভাষা বাধ্যতামূলক করার অর্থ কি মাদ্রাসা শিক্ষাকে সমৃদ্ধ করা? লক্ষ্য কি ছাত্রদের যোগ্যতা বৃদ্ধি? এতে বাড়বে কি চারিত্রিক গুণাবলি? ইংরাজী ভাষা বাংলাদেশের স্কুল-কলেজগুলোতে শতাধিক বছর ধরে বাধ্যতামূলক,কিন্তু তাতে ছাত্রদের চারিত্রিক বল কতটুকু বেড়েছে? যেসব দুর্বৃত্তগণ অফিস-আদালত, রাজনীতি,ছাত্র-রাজনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে দখলে নিয়েছে তারা কি মাদ্রাসা-শিক্ষিত? মাদ্রাসা-শিক্ষার দুর্বলতা কি আরবী ভাষা শিক্ষা? অথচ আরবী হলো কোরআনের ভাষা। আরবী ভাষার জ্ঞান ছাড়া যেমন পবিত্র কোরআন বুঝা যায় না, তেমনি আল্লাহ-প্রদর্শিত সিরাতুল মোস্তাকীমের সন্ধানও মেলে না। নানা দেশের নানা অনারব জনগণ যখনই ইসলাম কবুল করেছে, তখনই আরবী ভাষা শিক্ষায়ও তারা মনযোগী হয়েছে। অথচ সে অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে বাংলাদেশের মুসলমানদের থেকে। ফলে বিপদে পড়েছে মুসলিম রূপে বেড়ে উঠায়। বাংলাদেশের শিক্ষানীতির বহু নাশকতার মাঝে এটিই হলো সবচেয়ে ভয়ংকর নাশকতা। ২৫/০১/১৩; দ্বিতীয় সংস্করণ ৮/১১/২০১৯
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018