র্বৃত্তির নির্মূলে ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় জিহাদই আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত হাতিয়ার

দুফিরোজ মাহবুব কামাল

জিহাদশূণ্যতাই ঈমানশূণ্যতা

মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর নিজের সৃষ্ট এ সুন্দর পৃথিবী থেকে দুর্বৃত্তির নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা চান। এটিই হলো তাঁর বহু ঘোষিত এজেন্ডা। পবিত্র কুর’আনে তাঁর নিজের ভাষায় সেটি হলো “নেহী আনিল মুনকার” এবং “আমিরু বিল মা’রুফ”। তিনি চান না তার এ পৃথিবী দুর্বৃত্ত শয়তান ও তার দুর্বৃত্ত অনুসারীদের দখলে যাক। সে এজেন্ডাকে সফল করার কাজে তাঁর নিযুক্ত খলিফা তথা নির্বাহী অফিসার কোন ফিরেশতা নন, বরং প্রতিটি  মুসলিম। তাই মুসলিম হওয়ার অর্থ, মহান আল্লাহতায়ালার সে এজেন্ডার সাথে পূর্ণ ভাবে একাত্ম হওয়া। নইলে বেঈমানী ও গাদ্দারী হয়; এবং সে বেঈমানী ও গাদ্দারীর অপরাধে জাহান্নামে যেতে হয়।

তবে দুর্বৃত্তির নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার কাজটি নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত, দোয়া-দরুদ, কুর’আন তেলাওয়াত এবং কুর’আনের হাফিজ হওয়ার মধ্য দিয়ে সম্ভব নয়, সে কাজে অপরিহার্য হলো জিহাদ। সে জিহাদ যেমন বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক হতে পারে, তেমনি সশস্ত্রও হতে পারে। নিরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেবল দুর্বৃত্তকে বিজয়ী হতে সাহায্য করে; তাই সেটি হারাম। মহান আল্লাহতায়ালা এজন্যই শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত ফরজ করেননি, জিহাদকেও ফরজ করেছেন। তাই  ঈমানদার হওয়ার অর্থ শুধু মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর দ্বীনের উপর ঈমান এবং নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত নিয়ে বাঁচা নয়, বরং মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা বিজয়ী করার জিহাদ নিয়ে বাঁচাও। তাই যার মধ্য জিহাদ রয়েছে, ঈমানের দাবীতে একমাত্র সেই সাচ্চা। জিহাদশূণ্যতার অর্থই ঈমানশূণ্যত। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সে বয়ানটি এসেছে সুরা হুজরাতের ১৫ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:

إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا۟ وَجَـٰهَدُوا۟ بِأَمْوَٰلِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّـٰدِقُونَ

অর্থ: “মু’মিন একমাত্র তারাই যারা বিশ্বাস করলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে, অতঃপর তাতে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করলো না, এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করলো তাদের সম্পদ দিয়ে ও জান দিয়ে -ঈমানের দাবীতে এ ব্যক্তিগণই হলো সত্যবাদী।” অতএব অর্থ দাঁড়ায়, ঈমানের দাবী বহু ঘুষখোর-সূদখোর-মিথ্যাবাদী দুর্বৃত্ত এবং ফাসেক-মুনাফিকও করতে পারে। কিন্তু প্রকৃত ঈমানদার তারাই যাদের জীবনে জিহাদ রয়েছে। ঈমান ব্যক্তির অন্তরের অদৃশ্য বিষয়, জিহাদ হলো তার প্রকাশ্য রূপ। আগুনের প্রকাশ যেমন উত্তাপের মধ্য দিয়ে, ঈমানের প্রকাশ তেমনি জিহাদের মধ্যে। তাই কারো জীবনে জিহাদ না থাকলে বুঝতে হবে তার মাঝে আদৌ ঈমান নাই। যা আছে তা হলো মুসলিম সাজার ভন্ডামী তথা মুনাফিকি। অপরদিকে যে বাংলাদেশীরা দুর্বৃত্তির নির্মূল না করে গুম, খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, সন্ত্রাস, চুরি-ডাকাতি, ভোটডাকাতির প্লাবন আনে এবং দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে ৫ বার প্রথম হয় -তাদেরকে কি বলা যাবে? মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে তাদের গাদ্দারী যে অতি প্রকট -সেটি কি গোপন থাকে?     

মুসলিমদের প্রতি মহান আল্লাহতায়ালার হুকুম:

وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌۭ يَدْعُونَ إِلَى ٱلْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْمُنكَرِ ۚ وَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ

অর্থ: “এবং তোমাদের মধ্যে অবশ্যই থাকতে হবে এমন এক উম্মাহ যারা মানুষকে কল্যাণের পথে ডাকবে, ন্যায়ের আদেশ দিবে এবং অন্যায়কে রুখবে। এবং তারাই হলো সফলকাম।” –(সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১০৪)। তাই এ জীবনে সফলকাম হওয়ার জন্য মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে আরোপিত শর্ত হলো, এমন এক উম্মাহর জন্ম দেওয়া -যার কাজ হবে মানুষকে কল্যাণের পথে ডাকা, ন্যায়ের আদেশ দেয়া এবং অন্যায়ের প্রতিরোধ করা। প্রশ্ন হলো, ন্যায়ের আদেশ এবং অন্যায়ের প্রতিরোধ কি মসজিদে বা জায়নামাজে চর্চা করার বিষয়? একাজ তো করতে হয় রাষ্ট্রীয় অঙ্গণে। একাজে হাতিয়ার হলো রাষ্ট্রের প্রশাসন, আদালত, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। মুসলিম জীবনের এটিই হলো মিশন। এ মিশনকে সফল করতে অন্যদের সাথে নিয়ে সংগঠিত হতে হয়; বুদ্ধিবৃত্তি ও রাজনীতির ময়দানেও নামতে হয়। তখন সমাজ ও রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রন হাতে নিতে হয়। জিহাদ তখন অনিবার্য হয়ে উঠে। এটিই হলো নবীজী (সা:)র সূন্নত এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। এর বাইরে মুসলিম দেশের রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদ, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সেক্যুলারিজম ও অন্য মতবাদ নিয়ে যা কিছু আজ ঘটছে -তা তো নিরেট বিদয়াত। ইসলাম ও নবীজী(সা:)র সূন্নতের বিলুপ্তির লক্ষ্যে এগুলি হলো শয়তানের হাতিয়ার। মুসলিমগণ যেদিন থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে সেকুলারিষ্ট, স্বৈরাচারী, রাজতন্ত্রী তথা আল্লাহর শত্রু পক্ষের হাতে ছেড়ে দিয়ে ইসলাম-পালনকে জায়নামাজে সীমিত করে -তখন থেকেই শুরু হয় ইসলামের পরাজয়। তখন থেকেই রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও পুলিশ পরিণত হয়েছে মিথ্যাচার ও দুর্বৃত্তি প্রতিষ্ঠার হাতিয়ারে। ফলে বিলুপ্ত হয়েছে ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার জিহাদ; প্লাবন শুরু হয়েছে নানাবিধ অন্যায় ও পাপাচারের। পাপাচারের সে প্লাবন মুসলিম দেশগুলোকে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে যে দেশগুলি দুর্বৃত্তিতে বিশ্বরেকর্ড গড়েছে। ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ শুধু এরূপ দুর্গতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই জরুরি  নয়, জরুরি  হলো পরকালে মুক্তি পাওয়ার জন্যও। আখেরাতে তো তারাই সফল হয় যাদের  পার্থিব জীবন কাটে  আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার জিহাদে। সে জিহাদেরই ফসল হলো ইসলামী রাষ্ট্র। এখানে পরীক্ষা হয়, সে কি মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের অনুসারী না বিদ্রোহী?

পবিত্র কুর’আনে যে বিষয়টি মহান আল্লাহতায়ালা বার বার উল্লেখ করেছেন তা হলো, পরীক্ষায় পাশ না করে পরকালে মুক্তি নাই। সে পরীক্ষা নবী-রাসূলদেরও দিতে হয়েছে। এবং পরীক্ষা নেয়াই মহান আল্লাহতায়ালার সূন্নত। মু’মিনকে সে পরীক্ষাটি দিতে হয় “সত্য ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা ও মিথ্যা ও অবিচারের নির্মূলে”য়ে নিজ শ্রম, সময়, মেধা, অর্থ ও প্রাণের বিনিয়োগের  মধ্য দিয়ে। এ পথে তাকে শহীদও হতে হয়। ঈমানের দাবীতে কে সাচ্চা এবং কে ভন্ড –সেটি প্রকাশ করে দেয়ার জন্যই এ পরীক্ষা। পরীক্ষা নেয়া হয় ঈমানদারদেরকে জালেম শক্তির মুখোমুখি হাজির করে। কুর’আন পাঠ, নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালনে সে পরীক্ষা হয় না। এরূপ ইবাদত জালেম, ফাসেক, মুনাফিক এবং ঘুষখোর, সূদখোর, মিথ্যাবাদী দুর্বৃত্তগণও করতে পারে। যা সবাই করতে পারে -তা দিয়ে কে ঈমানদার এবং কে বেঈমান সে বাছাইয়ের কাজটি হয়না। পরীক্ষার ক্ষেত্রটি তাই মসজিদ ও জায়নামাজের বাইরে। এ পার্থিব জীবনের পুরা মেয়াদ ও পুরা কর্মক্ষেত্রটাই হলো মু’মিনের জন্য পরীক্ষা পর্ব। পরীক্ষায় পাশের পরই আসে প্রমোশন। সফল মু’মিনের জীবনে সে অচিন্তনীয় প্রমোশনটি আসে জান্নাতপ্রাপ্তির মধ্যে দিয়ে। তখন শুরু হয় আনন্দ-উপভোগময় এক মৃত্যুহীন জীবন। দুনিয়ার এ জীবনে কোন কিছুই বিনা মূল্যে জুটে না, সব কিছুর মূল্য দিয়ে কিনতে হয়। প্রাপ্তিটি যত বড়, মূল্যও তত বিশাল। ঈমানদারদেরও তাই জান্নাতের মূল্য পরিশোধ করতে হয় মৃত্যুর আগেই। এমন কি মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাদেরও। তবে সে মূল্যটি পরিশোধের নিয়মটি ভিন্ন; জান্নাত সম্পদ দিয়ে কেনা যায় না। কিনতে হয় জীবন-ভর আল্লাহতায়ালার প্রতিটি হুকুম পালনের মধ্য দিয়ে। সে কাজে অর্থ, শ্রম, মেধা, সময় ও রক্তদানের মধ্য দিয়ে। মহান আল্লাহতায়ালার যে কোন একটি হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বা অবাধ্যতা সে পরীক্ষায় পাশের সম্ভাবনাকে ধুলিস্যাৎ করে দেয়। সে অনিবার্য পরীক্ষার বিষয়টি মহান আল্লাহতায়ালা সুস্পষ্ট করেছেন এভাবে:

تَبَـٰرَكَ ٱلَّذِى بِيَدِهِ ٱلْمُلْكُ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌ ١

ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلْمَوْتَ وَٱلْحَيَوٰةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًۭا ۚ وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْغَفُورُ ٢

অর্থ: “মহামহিমান্বিত তিনি, সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর করায়ত্ব; তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিময়। তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন; তিনি দেখতে চান, কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম। তিনি মহাপরাক্রমশালী এবং ক্ষমাশীল।” –(সুরা মুলক, আয়াত ১-২) অর্থাৎ পৃথিবীটা মু’মিনের জন্য পরীক্ষাক্ষেত্র। তাকে পরীক্ষাটি দিতে হয় জীবনের প্রতিটি দিন ও প্রতিটি মুহুর্ত জুড়ে। সে পরীক্ষাটি এমন কি নবী-রাসূলদেরও দিতে হয়েছে। পরীক্ষার সে বিবরণ পবিত্র কুর’আনের বহু সুরাতে বহু ভাবে বর্ণিত হয়েছে। সে পরীক্ষা নিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার নিজের বর্ণনাটি শোনা যাক:

أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا۟ ٱلْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُم مَّثَلُ ٱلَّذِينَ خَلَوْا۟ مِن قَبْلِكُم ۖ مَّسَّتْهُمُ ٱلْبَأْسَآءُ وَٱلضَّرَّآءُ وَزُلْزِلُوا۟ حَتَّىٰ يَقُولَ ٱلرَّسُولُ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ مَعَهُۥ مَتَىٰ نَصْرُ ٱللَّهِ ۗ أَلَآ إِنَّ نَصْرَ ٱللَّهِ قَرِيبٌۭ

অর্থ: “তোমরা কি মনে করে নিয়েছো যে, তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ এখনো  তোমাদের নিকট তোমাদের পূর্ববর্তীদের অবস্থা আসেনি? অর্থ সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ তাদেরকে স্পর্শ করেছিল এবং তারা ভীত ও কম্পিত হয়েছিল। এমনকি রাসূল এবং তাঁর সাথের সঙ্গিরা যারা ঈমান এনেছিল তারা বলে উঠেছিল, ”আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে?” জেনে রাখ, আল্লাহর সাহায্য অবশ্যই নিকটে।” –(সুরা বাকারা, আয়াত ২১৪)।

মক্কার কাফের সমাজেও নামাজ পড়া অসম্ভব ছিল না। কিন্তু অতি কঠিন ছিল ইসলামের সামাজিক সুবিচারের নীতি নিয়ে বাঁচা। সে সমাজে অসম্ভব ছিল দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুনীতি-সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। তখন আবু জেহেল ও আবু লাহাবদের ন্যায় দুর্বৃত্তদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা পে্য়েছিল অন্যায়-অত্যাচার, জুলুম-শোষন, চুরি-ডাকাতি, শিশুহত্যা, অশ্লিলতা ও ব্যাভিচারের ন্যায় দুর্বৃত্তির জোয়ার। যেখানেই মিথ্যাচার, দুর্বৃত্তি ও জুলুম-র্নির্যাতন ও বিলুপ্তি আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনের, সেখানেই প্রতি মুহুর্ত ধ্বনিত হয় জিহাদের আযান। নামাজের আযান দেয় মুয়াজ্জিন; আর জিহাদের আযান দেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা।  পবিত্র কুর’আন বার বার ধ্বনিত হয়েছে সে আযান। মুসলিমকে শুধু নামাজের আযানে লাব্বায়েক বললে চলে না, অবশ্যই লাব্বায়েক বলতে হয় জিহাদের আযানেও। কিন্তু যারা কুর’আন যারা পড়লো না, পড়ার পরও যারা বুঝলো না -তারা জিহাদের সে আযান শুনবে কিরূপে? সে আযানে লাব্বায়েকই বা বলবে কিরূপে? বরং তারা লাব্বায়েক বলে শয়তানের আযানে। প্রতিটি মুসলিম ভূমিতে শয়তান আযান দেয় ভাষা, বর্ণ, গোত্র ও আঞ্চলিকতা ভিত্তিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্র গড়ার রাজনীতির। তাদের কারণে মুসলিম ভূমিতে শয়তানের এজেন্ডাই আজ বিজয়ী। এবং বেঁচে নাই নবীজী (সা:)’র প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের অনুরূপ কোন রাষ্ট্র।

এমন কি নবীজী (সা:)’‌র আমলে এমন কিছু লোক ছিল -যারা নামাজে আযানে লাব্বায়েক বলতো বটে, কিন্তু লাব্বায়েক বলতো না জিহাদের আযানে। ওহুদের যুদ্ধের সময় এরা ছিল আব্দুল্লাহ বিন উবাই এবং তার তিন শত সহচর। তাদেরকে মুনাফিক বলা হয়েছে। অথচ তারা নবীজী (সা:)’র পিছনের নামাজ পড়েছে। মাহে রমযানের রোজাও রেখেছে। যাকাতও দিয়েছে। অথচ সে নামাজ, রোজা ও যাকাত তাদের মুসলিম বানাতে পারিনি। খোদ নবীজী (সা:)’র আমলেই তারা মুনাফিকের খেতাব পেয়েছে। ঈমানদারদের উপর ফরজ শুধু হিংস্র পশুগুলিকে চেনা নয়, বরং এ ঘাতক মুনাফিকদের চেনাও। কারণ মুসলিম উম্মাহর বড় বড় ক্ষতিগুলি কোন হিংস্র পশু থেকে হয়না, সেগুলি হয় এসব মুনাফিকদের হাতে। তারাই মুসলিমদের ঘরের শত্রু।

মুনাফিকদের স্থান হবে জাহান্নামের সবচেয়ে ভয়ংকর স্থানে। কারণ, ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে মুনাফিকদের শত্রুতা ও নাশকতা কাফিরদের চেয়েও অধিক। বাংলাদেশের ন্যায় অধিকাংশ মুসলিম দেশে যারা আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনকে বিলুপ্ত করে রেখেছে এবং মুসলিম উম্মাহকে ৫০টির বেশী রাষ্ট্রে বিভক্ত করে রেখেছে -তারা কোন পৌত্তলিক কাফির নয়, বরং তারা হলো মুসলিম নামধারী মুনাফিক। এরা নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, হজ্জ করে, যাকাতও দেয়। দাড়ি-টুপিও আছে। ওয়াজের মাহফিলও করে। এরা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথাও বলে। কিন্তু ইসলামের যে ভূ-রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, শিক্ষা-সাংস্কতিক ভিশন ও মিশন রয়েছে -তার সাথে তারা একাত্ম নয়। তারা চায় না, মুসলিম উম্মাহ আবার প্রতিষ্ঠা পাক এক বিশ্বশক্তি রূপে। এবং চায় না মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইন। বরং ভাষা, বর্ণ ও আঞ্চলিকতা ভিত্তিক মুসলিম উম্মাহর বিভক্তি নিয়েই তাদের প্রচুর আনন্দ। একারণেই মুসলিম উম্মাহর ভূগোল ভাঙ্গার দিনগুলি তাদের কাছে অতি উৎসবের দিন। মুসলিম বিশ্ব জুড়ে ভূ-রাজনৈতিক বিভক্তি প্রতিষ্ঠা দেয়ায় এবং সে বিভক্তিকে বাঁচিয়ে রাখায় এমন কি তারা কাফির শক্তির সথে একত্রে কাজ করতে রাজী। তাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কালে এ মুনাফিকদের দেখা গেছে ইংরেজ ও ফরাসী কাফিরদের সাথে কোয়ালিশন গড়ে উসমানিয়া খেলাফত ভেঙ্গে ২২টি আরব রাষ্ট্রের নির্মাণে। মুসলিম উম্মাহর হৃৎপিন্ডের উপর ইসরাইলের প্রতিষ্ঠা বস্তুত সে বিভক্তিরই ফসল। ১৯৭১’য়ে বাংলার মাটিতে তাদের দেখা গেছে হিন্দুত্ববাদী ভারতের সাথে জোট বেঁধে সে আমলের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানকে খণ্ডিত করতে। এদের মাঝে বিপুল আনন্দ ও উৎসব দেখা যায় মুসলিম উম্মাহর শক্তিহানীতে। বাংলার মাটিতে এরাই কাফির শক্তির পরম মিত্র।    

বাংলাদেশে চলছে সূদ, ঘুষ, গুম, খুন, ধর্ষণ, চুরিডাকাতি, ভোট ডাকাতি, ব্যাংক ডাকাতি, স্বৈরশাসনের ন্যায় অপরাধের প্রকট জোয়ার। অথচ মহান আল্লাহতায়ালা চান, নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের ন্যায় ইবাদতের পাশাপাশি দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। তিনি চান, তাঁর নিজের জমিনে প্রতিষ্ঠা পাক তাঁর নিজের সার্বভৌমত্ব ও নিজের শরিয়তী আইন। এবং নির্মিত হোক জান্নাতের সিরাতাল মুস্তাকীম। সেটিই হলো, মানব জাতিকে নিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার মূল এজেন্ডা। সে এজেন্ডাকে বিজয়ী করার কাজে প্রতিটি ঈমানদার হলো তাঁর খলিফা তথা নির্বাহী অফিসার। প্রতিটি ঈমানদারের মাঝে খেলাফতের দায়িত্ব পালনে সর্ব-অবস্থায় লাব্বায়েক বলার সামর্থ্য সৃষ্টি করার লক্ষ্যেই নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত, কুর’আন পাঠ ও দোয়া-দরুদের ন্যায় প্রতিদিনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। সে প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে একজন ঈমানদার কতটুকু অর্জন করলো তাকওয়া এবং কতটুকু  সৃষ্টি হলো আত্মত্যাগের যোগ্যতা -তারই প্রাকটিকাল পরীক্ষা হয় জিহাদের ময়দানে। সে প্রাকটিকাল পরীক্ষায় যারা পাশ করে তারাই পায় জান্নাত। নবীজী (সা:)‌’র আমলে কেউ ঈমান এনেছে অথচ ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় ও অন্যায়ের প্রতিরোধে ময়দানে নামেনি -এমন কোন নজির নেই। কিছু অন্ধ, বধির ও পঙ্গু ব্যক্তি জিহাদের ময়দানে নামতে পারেনি নিছক শারীরিক বিকলাঙ্গতার কারণে, ঈমানের দুর্বলতার কারণে নয়।

অন্য মু’মিনদের সাথে মসজিদে ৫ ওয়াক্ত জামায়াতে নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে নামাজীর জীবনে যা ঘটে তা হলো, আল্লাহতায়ালার হুকুমের প্রতি প্রতিদিন ৫ বার লাব্বায়েক তথা “আমির হাজির” বলার সামর্থ্য। সে ঈমানী সামর্থ্যকে কাজে লাগাতে হয় সমাজ ও রাষ্ট্রজুড়ে মহান আল্লাহতায়ালার বিধানকে প্রতিষ্ঠা দিয়ে। যাকাত গড়ে অর্থ-কুরবানীর অভ্যাস। রোজা দেয় ক্ষুধা ও পীপাসা সহ্যের সামর্থ্য – যা প্রতিটি লড়াইয়ে নিত্য সহচর। হজ্জ দেয় বিপুল অর্থ ও কষ্ট স্বীকার করে বহু শত বা বহু হাজার মাইল দূরে গিয়ে আল্লাহুর হুকুমের প্রতি ‘লাব্বায়েক’ বলার সামর্থ্য। মু’মিনের কাজ হলো এরূপ লাব্বায়েক বলাকে আজীবন অভ্যাসে পরিণত করা। হাজী হওয়ার অর্থ তাই শুধু মক্কায় গিয়ে হজ্জ মওসুমে লাব্বায়েক বলা নয়, বরং সেটি জীবন ভর মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিটি হুকুমে লাব্বায়েক বলা। এমন লাব্বায়েক বলাই তো হযরত ইব্রাহীম (আ:)’র সূন্নত। তিনিই মুসলিমদের আদি পিতা।

ঈমানদারদের জ্ন্য ‍“মুসলিম” উপাধিটিও ইব্রাহীম (আ:)’র দেয়া -যা পূর্ণ সম্মতি পেয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার। মুসলিম শব্দের অর্থ, এমন ব্যক্তি যে বাঁচে মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিটি হুকুমের কাছে আত্মসমর্পণ নিয়ে। অর্থাৎ তাঁর হুকুমে লাব্বায়েক বলাই যার জীবনের মূল মিশন। সমগ্র  মানব জাতির সামনে হযরত ইব্রাহীম (আ:) হলেন আত্মসমর্পণের সর্বোত্তম মডেল। যখন তাঁর প্রতি মাতৃভূমি ইরাক ছেড়ে হিজরতের হুকুম এসেছে, তখন লাব্বায়েক বলেছেন। যখন স্ত্রী ও শিশু সন্তান ইসমাইলকে জনমানবশূণ্য ও খাদ্য-পানীয়শূণ্য মক্কার মরুভূমিতে ছেড়ে আসার হুকুম হলো তখনও লাব্বায়েক বলেছেন। যখন বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র সন্তানকে কুর’বানী করার নির্দেশ এলো, তখনও লাব্বায়েক বলেছেন। প্রতি বছর মুসলিম জীবনে হজ্জ ও ঈদুল আযহা আসে হযরত ইব্রাহীম (আ:)’য়ের লাব্বায়েক বলার আদর্শকে বলবান করতে।

বস্তুত দ্বীনে ইব্রাহীম তথা ইসলাম হলো মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিটি হুকুমে লাব্বায়েক বলার ধর্ম। নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের ন্যায় সেটি হতে হয় “ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূল”য়ের ন্যায় কুর’আনী হুকুমকে বিজয়ী করার ক্ষেত্রেও। অপর দিকে কুফুরি হলো তার হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নিয়ে বাঁচা। এরূপ বিদ্রোহ নিয়ে বাঁচাই শয়তানের ধর্ম -যা মানুষকে কাফির বানায়। পরম পরিতাপের বিষয় হলো, অধিকাংশ মুসলিমদের মাঝে বিলুপ্ত হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমে লাব্বায়েক বলার সে কাঙ্খিত তাড়না। বরং বাঁচছে বিদ্রোহ নিয়ে। দেশের শাসনতন্ত্রে তারা প্রতিষ্ঠা দিয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্বের বদলে নিজেদের সার্বভৌমত্ব। আদালতে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে শরিয়তী আইনের বদলে নিজেদের বা কাফিরদের প্রণীত আইন। দেশের স্কুল-কলেজ থেকে বিলুপ্ত করেছে কুর’আন-হাদীস শিক্ষা। এবং সিলেবাস থেকে বাদ দিয়েছে নবীজী (সা:)‌’র জীবনী। এভাবে মুসলিম নাম ধারণ করে তারা মহান আল্লাহতায়ালার ভূমিতে বাড়িয়েছে ইসলামের পরাজয় এবং শয়তানের বিজয়। অপরাধ এখানে বিদ্রোহ ও গাদ্দারীর। এবং এরূপ বিদ্রোহ ও গাদ্দারীই অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রের রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।

 

রাষ্ট্রের পরিশুদ্ধির অস্ত্রটি জিহাদ

আত্মার পরিশুদ্ধির অস্ত্রটি হলো পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান, নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত, যিকির-আযকার ও দোয়া-দরুদ।  কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিশুদ্ধির অস্ত্রটি হলো জিহাদ। তাই যে রাষ্ট্রে জিহাদ নাই সে রাষ্ট্র প্লাবিত হয় গুম, খুন, চুরিডাকাতি, ধর্ষণ, অপহরন, অবিচার, স্বৈরাচারের ন্যায় নানাবিধ অপরাধে। তখন দেশ অধিকৃত হয় শক্তিধর জালেমদের হাতে। ইসলামের ন্যায়নীতি ও অনুশাসনের প্রতি সাহাবীদের অঙ্গীকার ছিল আমৃত্যু। ফলে তাদের জীবনে আমৃত্যু জিহাদ ছিল অবিচার ও দুর্বৃত্তির নির্মূলে। অবিরাম জিহাদ ছিল ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় ও প্রতিরক্ষায়। ইসলামী খেলাফতকে বাঁচাতে হযরত আম্মার (রা:) তার ৮০ বছরের বৃদ্ধ বয়সে হযরত আলী(রা:)’র পক্ষে খেলাফত বাঁচাতে জিহাদে নেমেছেন এবং শহীদ হয়েছেন। আজও মুসলিমদের জন্য তো তারাই অনুকরণীয় আদর্শ। যে সমাজে এমন ঈমানদারের সংখ্যা অধিক, সে সমাজে ইয়াজিদ ও মীর জাফরদের মত বিশ্বাসঘাতকদের ক্ষমতায় আসা অসম্ভব হয়ে উঠে। ইয়াজিদ ও মীরজাফরদের নির্মূলে সার্বক্ষনিক সৈনিকেরা তখন গ্রাম-গঞ্জ থেকে অস্ত্র হাতে জিহাদের জন্য বের হয়। এ মুজাহিদরা তখন সমাজ থেকে হযরত ওমর (রা:), হযরত আলী (রা:) ও হযরত ইমাম হোসেনের মত লোকদের খুঁজে খুঁজে বের করে ক্ষমতায় বসায়। এবং তাদের শাসনের নিরাপত্তা দিতে নিজেরা অস্ত্র ধরে।

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি দল গড়া নয়, বরং কুর’আনী জ্ঞান-সমৃদ্ধ ঈমানদার মানুষ গড়া। সে কাজে মূল হাতিয়ারটি হলো পবিত্র কুর’আন। দল গড়লে দলাদলি বাড়ে। অথচ তাকওয়া সমৃদ্ধ ঈমানদার গড়লে একতা বাড়ে। তাকওয়া তখন সিমেন্টের কাজ করে। নবীজী (সা:) তাঁর ১৩ বছরের মক্কী জীবনে লাগাতর সে তাকওয়া সমৃদ্ধ ঈমানদার গড়ার কাজটিই করেছেন। ফলে সে সময় গড়ে উঠেছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। এ জীবন একটি পরীক্ষা-পর্ব মাত্র। বিরামহীন এ পার্থিব পরীক্ষাটির শেষ ঘন্টাটি যে কোন মুহুর্তে বেজে উঠতে পারে। এবং সে ঘন্টাটি বেজে না উঠা পর্যন্ত কোন ঈমানদার কি তাঁর উপর অর্পিত খেলাফতের দায়িত্ব থেকে অবসর নিতে পারে? প্রকৃত ঈমানদার তো তাঁর জীবনের শেষ মুহুর্তটিকেও ব্যবহার করে পরীক্ষায় নম্বর বাড়াতে। এজন্যই মু’মিনের জীবনে অবসর জীবনের ধারণা নেই। এটি নিতান্তই সেক্যুলার  ধারণা। পরীক্ষার জন্য যতটুকু বরাদ্দকৃত সময় -সে সময়ের শেষ মুহুর্তটিও পরীক্ষাকালীন সময়। সর্বশেষ সে মুহুর্তেও বিরতি বা পলায়নের অনুমতি নাই। এজন্যই হযরত আম্মার (রা:) ৮০ বছর বয়সে জিহাদ নেমেছেন এবং শহিদ হয়েছেন। জিহাদকে তারা ভাবতেন এ জীবনে প্রমোশন লাভে তথা জান্নাত লাভের পথে অনিবার্য পরীক্ষা রূপে। যারা প্রমোশন চায়, তারা কি কখনো পরীক্ষা থেকে দূরে থাকে? ফলে সাহাবাগণ জিহাদের সে পরীক্ষাকে কখনোই এড়াতে চাইতেন না। সে পরীক্ষা এড়ানোর অর্থ প্রমোশন তথা জান্নাত লাভ এড়ানো।  নবীজী (সা:)’র যুগে জিহাদের সে পরীক্ষা থেকে দূরে থাকাটি চিত্রিত হতো মুনাফিকি রূপে। নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত সে মুনাফিকী থেকে বাঁচায় না। তার প্রমাণ, আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও তার ৩০০ সহচর নবীজী (সা:)’র পিছনে নামাজ পড়েও মুনাফিক হওয়া থেকে বাঁচেনি। মুনাফিক হওয়া থেকে বাঁচায় কুর’আনী জ্ঞান লব্ধ তাকওয়া ও আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জিহাদ। যারা প্রকৃত ঈমানদারগণ তারা এ বিষয়টি বুঝতেন। এ জন্যই তাদের মাঝে সব সময় প্রচণ্ড তাড়াহুড়া থাকতো কি করে উচ্চ নম্বর নিয়ে জিহাদের পরীক্ষায় উত্তির্ণ হওয়া যায়। যারা জিহাদের যোগ না দিয়ে শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের মাঝে জান্নাত দেখে তাদের সে স্বপ্ন যে শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে এবং সে স্বপ্ন যে কখনোই পূরণ হবে না -সেটি বুঝা যায় তাদের উদ্দেশ্যে রাখা মহান আল্লাহতায়ালা নিম্নের প্রশ্ন থেকে:

أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا۟ ٱلْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ جَـٰهَدُوا۟ مِنكُمْ وَيَعْلَمَ ٱلصَّـٰبِرِينَ

অর্থ: “তোমাদের কি ধারণা করে নিয়েছো যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনো  পরীক্ষা করেননি যে তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ করেছে এবং কে ধৈর্যশীল।” –(সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৪২)। যার জীবনে জিহাদ নাই তার জন্য মুসলিম হওয়া যে অসম্ভব সেটির ঘোষণা এসেছে মুসলিম শরীফে বর্ণিত নবীজী (সা:)’র একটি হাদীসে। উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে, “যে কোন দিন জিহাদ করলো  না এবং জিহাদের নিয়েতও করলো না -সে মুনাফিক।”  জিহাদের সে চরম পরীক্ষা ও পরম পাওয়াটি নিয়ে তাড়াহুড়া করতে বলেছেন মহান আল্লাহতায়লা। মু’মিনদের প্রতি তাড়াহুড়া করার সে নির্দেশটি এসেছে এভাবে:

وَسَارِعُوٓا۟ إِلَىٰ مَغْفِرَةٍۢ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا ٱلسَّمَـٰوَٰتُ وَٱلْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ

অর্থ: “তোমরা তাড়াহুড়া কর তোমাদের প্রভূর মাগফেরাত ও জান্নাত পাওয়ার জন্য, যে জান্নাত আসমান ও পৃথিবীর ন্যায় প্রশস্ত  -যা তৈরী হয়েছে পরহেযগারদের জন্য।” –(সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১৩৩‍।  অপর এক আয়াতে বলা হয়েছে,

سَابِقُوٓا۟ إِلَىٰ مَغْفِرَةٍۢ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ ٱللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَآءُ ۚ وَٱللَّهُ ذُو ٱلْفَضْلِ ٱلْعَظِيمِ

অর্থ:“ তোমরা পরস্পরে প্রতিযোগিতা কর তোমাদের প্রভূর মাগফেরাত ও জান্নাত পাওয়ার জন্য যা আসমান ও পৃথিবীর ন্যায় প্রশস্ত -যা প্রস্তুত করা হয়েছে তাদের জন্য যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর। এসব হলো আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তাকে তিনি তা দান করেন। আল্লাহ মহাঅনুগ্রহশীল।”- (সুরা হাদীদ, আয়াত ২১)।  মহান আল্লাহতায়ালার এ হুশিয়ারি থেকে সাহাবাগণ শিক্ষা নিয়েছেন। তাই তাদের জীবনে আল্লাহর মাগফেরাত লাভে প্রচন্ড তাড়াহুড়া ছিল, ছিল পরস্পরের মাঝে প্রচন্ড প্রতিযোগিতাও। মাগফেরাতের লাভে তারা বেছে নিয়েছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ পথটি। সেটি হলো, মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা পূরণে তথা তাঁর দ্বীনকে বিশ্বব্যাপী বিজয়ী করার জিহাদে নিজ সামর্থের বিনিয়োগ, অর্থ, শ্রম ও মেধার সাথে প্রাণের কুরবানীও। বেশীর ভাগ সাহাবা সে জিহাদে শহিদ হয়েছেন। তাদের সে সার্বক্ষনিক জিহাদী প্রস্তুতির কারণেই সে সেময় সমাজের দুর্বৃত্তরা মুসলিমদের মাথার উপর শাসক রূপে বসতে পারেনি। যখনই মুসলিমগণ জিহাদ থেকে দূরে সরা শুরু করেছে, তখন থেকেই শুরু হয়েছে মুসলিম ভূমির উপর ইসলামের শত্রুপক্ষের অধিকৃতি।

রাষ্ট্র হলো মানব সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনস্টিটিউশন। সেটি সবচেয়ে শক্তিশালী ইনস্টিটিউশনও। মানব জীবনে সংস্কার, সমৃদ্ধি ও সুখশান্তি আনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকাই চুড়ান্ত। আল্লাহর দ্বীনের বিজয়েও এটিই সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। তাই কোন মু’মিন কি এরূপ শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে পারে? সেটি কি নবীজী (সা:)র সূন্নত? অথচ নবীজী(সা:)র জীবনে চুড়ান্ত লড়াই হয়েছে রাষ্ট্রকে দখলে নেওয়া নিয়ে। কোন কোন বর্ণনা মতে তিনি ছোট-বড় ৮৩টি যুদ্ধ ও খণ্ডযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। কুর’আনী আইনের বাস্তবায়ন এবং বিশ্বব্যাপী তার প্রসারের কাজে রাষ্ট্রের বিকল্প নেই। আর রাষ্ট্রীয় সে শক্তিটি হাতছাড়া হয়ে গেলে বিপন্ন হয় মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তের প্রতিষ্ঠা। তখন বিপন্ন হয় ন্যায়-নীতি ও কল্যাণের পথ। তখন বিপদ-সংকুল হয়ে পড়ে সিরাতাল মুস্তাকিমে চলা। তখন আজাদী পায় পাপাচারে মত্ত সমাজের অতিশয় মিথ্যাবাদী ও ক্ষমতালোভী দুর্বৃত্তরা। বাংলাদেশের মত অধিকাংশ মুসলিম দেশগুলী তো এমন নৃশংস দুর্বৃত্তদেরই দখলে। তখন রাষ্ট্রে নামাজ-রোজা আদায়ে বাঁধা না থাকলেও অসম্ভব হয় আল্লাহর আইন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা।

উচ্চতর ও সভ্যতর  সভ্যতা ও সংস্কৃতি তখনই নির্মিত হয় যখন জনকল্যাণ-মূলক কর্মে জনগণ ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলি একত্রে কাজ করে। উন্নয়নের দায়িত্ব সবার; তবে নেতৃত্বের দায়িত্ব সরকারের। তাই যেসব দেশে সরকার নাই এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানও নাই -সেসব দেশে জনগণের বিশাল বসতি থাকলেও সেখানে উচ্চতর ও সভ্যতর  সভ্যতা ও সংস্কৃতি গড়ে উঠেনা। তাই অতীতে পৃথিবী পৃষ্ঠে বহু ভাষার বহু হাজার জনগোষ্ঠির বসবাস থাকলেও সবাই সভ্যতা গড়তে পারেনি। অনেকে সভ্যতা গড়ার কাজ শুরু করলেও সে কাজ বেশী দূর এগুয়নি। মুসলিমগণ অতীতে মানব ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিয়েছিল। সেটি অতি অল্প সময়ের মধ্যে। এর কারণ হলো, ইসলামে শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতই ফরজ নয়, ফরজ হলো নেক আমল করা এবং ইসলামী রাষ্ট্র গড়া। পবিত্র কুর’আনে যেখানেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমানের কথা বলা হয়েছে, সেখানে নেক আমলের হুকুম দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে নেক আমলের তাড়না নেই, বুঝতে হবে তার মধ্যে ঈমানও নাই। বস্তুত নেক আমলের মধ্য দিয়েই ব্যক্তির ঈমান কথা বলে। তাই রোজ হাশরের বিচার দিনে কেবল ব্যক্তির ঈমানের বিচারই হবে না, তার নেক আমলেরও হিসাব নেয়া হবে। অপর  দিকে ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ ছাড়া পূর্ণ ইসলাম পালন সম্ভব নয়। কারণ, ইসলাম পূর্ণ ভাবে পালন করতে হলে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর সকল শরিয়তী আইনের পূর্ণ প্রতিষ্ঠা দিতে হয়। জনগণকে কুর’আন-হাদীসের জ্ঞানদানে সরকারি উদ্যোগ থাকতে হয়। নিরাপত্তা দিতে হয় জনগণের জান-মাল ও ইজ্জতের এবং সহায়ক পরিবেশ  সৃষ্টি করতে হয় ধর্ম পালনের।

রাষ্ট্রের উপর দখলদারী ইসলামের শত্রুপক্ষের তথা শয়তানী শক্তির হাতে রেখে পূর্ণ ইসলাম পালন অসম্ভব। অসম্ভব হলো মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করা। সে মৌলিক বিষয়টি নবীজী (সা:)’র চেয়ে সে সময় আর কে বেশী জানতেন? নবীজী (সা:)’র সে প্রবল উপলব্ধি ও প্রজ্ঞার পরিচয় মেলে তাঁর গৃহিত উদ্যোগ দেখে। মদিনায় হিজরতের পর প্রথম দিন থেকেই তিনি শুরু করেন মসজিদ গড়ার সাথে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ। মসজিদ পরিণত হয় নামাজের পাশাপাশি প্রশাসনের কেন্দ্রেও। মদিনায় বসবাসকারী মুসলিম ও অমুসলিমদের নিয়ে প্রণয়োন করেন মদিনার সনদ -যা ছিল মানব ইতিহাসের প্রথম শাসনতন্ত্র। নবীজী (সা:) নিজে পরবর্তী ১০টি বছর ছিলেন সে রাষ্ট্রের প্রধান। তিনি সবকিছুই করেছেন মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশ মাফিক। আজও এটিই হলো নবীজী (সা:)’র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূন্নত -যা প্রতিটি মুসলিমের জন্য অনুকরণীয়। তাছাড়া নবীজী (সা:) যে পথে চলেন সেটিই তো সিরাতাল মুস্তাকীম। তাই ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ছাড়া নবীজী (সা:)’র পূর্ণ অনুসরণের কথা যেমন ভাবা যায়না, তেমনি ভাবা যায় না পূর্ণ ইসলাম পালনের কথা তথা সিরাতাল মুস্তাকীমে চলা। তখন অসম্ভব হয় ইসলামী সভ্যতার নির্মাণ এবং বিশ্বশক্তি রূপে বেড়ে উঠার কাজ। আজকের মুসলিমদের ব্যর্থতার কারণ অনেক। তবে মূল কারণটি হলো, তারা অনুসরণ করছে না নবীজী (সা:)’র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূন্নতটি। অর্থাৎ তারা চলছে না সিরাতাল মুস্তাকীমে।

ইসলামী রাষ্ট্রই হলো ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইন্সটিটিউশন। এটিই দেয় মুসলিম উম্মাহর নিরাপত্তার সুরক্ষা। দেয় বিশ্বশক্তি রূপে বেড়ে উঠার অবকাঠামো। এজন্যই শয়তানী শক্তির এজেন্ডা নামাজ-রোজা পালন এবং মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণের কাজ বন্ধ করা নয়, বরং পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজকে প্রতিহত করা। কারণ তারা জানে, ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণকে প্রতিহত করা গেলে প্রতিহত করা যায় ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও বিজয়কে। এবং পরাজিত করা যায় মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে। এজন্যই ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ কোথাও শুরু হলে শয়তানী শক্তির পক্ষ থেকে সেখানে ড্রোন হামলা ও হাজার হাজার টন বোমা বর্ষিত হয়। নগরের পর নগরকে বোমা মেরে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়। সেটি যেমন আফগানিস্তানে দেখা গেছে তেমনি দেখা গেছে সিরিয়া ও ইরাকে। অথচ সেরূপ বোমা বর্ষণ অতি নৃশংস ফ্যাসিবাদী স্বৈরতন্ত্র বা রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলে হয়না। বরং সে নৃশংস বর্বর শাসকদের ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের প্রতিরোধে পার্টনার রূপে গ্রহণ করা হয়।    

সমগ্র মানব ইতিহাসে সকল ধর্মের মাঝে সবচেয়ে দ্রুত প্রসার ঘটেছে ইসলামের। এর কারণ, ইসলামের প্রসারে সহায়তা দিয়েছে বিশাল এক রাষ্ট্রীয় শক্তি। নবীজী (সা:) নিজে সে রাষ্ট্রের জন্ম দেন এবং খোলাফায়ে রাশেদা সে রাষ্ট্রকে বিশ্বশক্তিতে পরিণত করেন। অথচ সেরূপ একটি সহায়ক রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো হযরত মূসা (আ:) ও হযরত ঈসা (আ:) পাননি। ফলে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন খোলাফায়ে রাশেদা গড়ে তুলতে। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ’র সে অতীত গৌরব আজ আর বেঁচে নাই। এর কারণ, বিলুপ্ত হয়েছে ইসলামী রাষ্ট্র। এবং বিলুপ্ত হয়েছে মুসলিমদের মাঝে সেরূপ একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার তাড়না। নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব যতটা বুঝেছিলেন -সেরূপ উপলব্ধি আজ আর মুসলিমদের মাঝে বেঁচে নাই। ফলে ইসলামী রাষ্ট্রের বদলে তারা প্রতিষ্ঠা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী, গোত্রবাদী, ফ্যাসিবাদী সেক্যুলারিস্ট রাষ্ট্র।    

অথচ ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণে, সে রাষ্ট্রের সুরক্ষায় ও সেটিকে বৃহৎ ও শক্তিশালী করার কাজে নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ আমৃত্যু জিহাদ লড়েছেন। অতি কম সময়ের মধ্যেই সে রাষ্ট্রকে তারা সর্ববৃহৎ বিশ্বশক্তির পর্যায়ে পৌঁছে দেন। তারা কাজ করেছেন সে রাষ্ট্রের বেতনভোগী সৈনিক রূপে নয়, বরং সার্বক্ষণিক অবৈতনিক মুজাহিদ রূপে। একাজকে তারা আল্লাহর পথে জিহাদ মনে করেছেন। সে জিহাদে তাঁরা নিজ খরচে, নিজ অস্ত্রে, নিজের ঘোড়া ও নিজ গৃহে তৈরী খাবার নিয়ে যোগ দিয়েছেন এবং জীবনও বিলিয়ে দিয়েছেন। যখনই মুসলিমদের মধ্যে এমন সার্বক্ষণিক সৈনিকদের সংখ্যা লোপ পেয়েছে এবং জিহাদের বদলে পেশাদারী চাকুরি রূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, তখনই মুসলিম রাষ্ট্র ও খেলাফত হাইজ্যাক হয়েছে ইয়াজিদদের ন্যায় দুর্বৃত্তদের হাতে। মানব সভ্যতার সবচেয়ে শক্তিশালী এ প্রতিষ্ঠানটি তখন শয়তানের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে এবং ব্যবহৃত হয়েছে জনগণকে বিভ্রান্ত করার কাজে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কাজে রাষ্ট্রের বিশাল সামর্থ্যকে তখন কাজে লাগানো হয়েছে মিথ্যা ধ্যান-ধারণাকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার কাজে। এবং পূজনীয় করা হয়েছে ফিরাউনদের। দুর্বত্ত কবলিত রাষ্ট্র, রাজনীতি ও প্রশাসনের কারণে এভাবেই পথভ্রষ্টতা নেমে এসেছে জনগণের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে। এভাবেই সাধারণ জনগণের জন্য পরিকল্পিত ভাবে অসম্ভব করা হয়েছে সিরাতাল মুস্তিকীম খুঁজে বের করা এবং সে পথে চলা। অশিক্ষা ও কুশিক্ষা বাড়িয়ে জনগণকে পরিণত করা হয়েছে দুর্বৃত্ত শাসকের অনুগত সৈনিকে। বিভ্রান্ত জনগণ তখন নিজ শ্রম, নিজ মেধা, নিজ রক্ত ও নিজ রাজস্বের অর্থে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর এজেন্ডাকে পরাজিত করে এবং বিজয়ী করে শয়তানের এজেন্ডাকে।  জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার তখন রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো, প্রশাসন ও শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্যবহার করে শয়তানের পথ তথা জাহান্নামের পথ গড়ায়। এভাবেই শয়তানের প্রকল্পকে বিজয়ী করা হয়েছে ৫০টির বেশী মুসলিম দেশ।

মুসলিম দেশগুলি থেকে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনকে বিলুপ্ত করে যারা কুফরি আইনকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে এবং স্কুল-কলেজ থেকে বিলুপ্ত করেছে পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান-দান -তারা কোন পৌত্তলিক, খৃষ্টান বা নাস্তিক নয়। তারা তো তারাই যারা জোর গলায় নিজেদের মুসলিম রূপে দাবী করে। এরাই তাহাজ্জুদ পড়ার কাহিনী শুনায় এবং ক্যামেরা লাগিয়ে নামাজ পড়ে ও কুর’আন তেলাওয়াত করে। অথচ দেশের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণে তাদের লাগাতর যুদ্ধটি ইসলামের বিরুদ্ধে। তারা সিরাতাল মুস্তাকীমে চলা কঠিন করেছে এবং সহজ করেছে জাহান্নামের পথে চলা। সেটি যেমন মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনের বিলুপ্তি ঘটিয়ে, তেমনি দুর্বৃত্তির প্লাবন এনে। এসব দেশে বিজয়টি শয়তানের। অথচ ইসলামী রাষ্ট্র নির্মিত হলে অসম্ভব হয় শয়তানের বিজয়। তখন সমাজে নানা মত ও নানা পথের বিভ্রান্তি থাকে না। বিরাজমান পথ তখন একটাই থাকে, সেটি হলো জান্নাতের পথ -তথা সিরাতাল মুস্তাকীম। নিরক্ষর মানুষও তখন সে পথ খুঁজে পেতে অসুবিধায় পড়ে না। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের এটাই হলো সবচেয়ে বড় নিয়ামত। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও মিডিয়া তখন সিরাতাল মুস্তাকীম চেনা ও সে পথে চলা সহজ করে দেয়। সূদী ব্যংক, পতিতা পল্লী, মদের দোকান, ঘুষখোর প্রশাসন ও অশ্লিলতার আখড়াগুলি তখন সমাজের বুকে শিকার ধরার সুযোগ পায় না। এ কাজগুলি গণ্য হয় শাস্তিযোগ্য গুরুতর অপরাধ রূপে। শয়তানের পক্ষ থেকে লাগানো সাইনবোর্ডগুলিকে তখন বিলুপ্ত করা হয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *