শেখ মুজিবের লিগ্যাসী ও মহাসংকটে বাংলাদেশ

আওয়ামী রাজনীতির নাশকতা

প্রত্যেক নেতাই তার অনুসারিদের জন্য লিগ্যাসী তথা অনুকরণীয় শিক্ষা রেখে যায়। সে লিগ্যাসী বেঁচে থাকে অনুসারিদের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও আচার-আচরণে। তেমন এক লিগ্যাসী শেখ মুজিবও রেখে গেছেন। বাংলাদেশে আজ  যে আওয়ামী-বাকশালীদের দুঃশাসন চলছে তার শুরু শেখ হাসিনা থেকে নয়, আজকের আওয়ামী লীগও নয়; বরং এর শুরু শেখ মুজিরেব হাতে। আজও  তা চলছে মুজিবের ঐতিহ্য ধরে। আওয়ামী লীগের সর্বসময়ের ভাবনা সে মুজিবী ঐতিহ্য আঁকড়ে থাকায়। গাছ যেমন শিকড় থেকে শক্তি সঞ্চয় করে আজকের আওয়ামী লীগও তেমনি বল পাচ্ছে সে মুজিবী ঐতিহ্য থেকে। রোগব্যাধী ও ক্যান্সার সব সময়ই একই রূপ সিম্পটম নিয়ে হাজির হয়। যক্ষা আজ থেকে দশ বছর আগে যেরূপ উপসর্গ নিয়ে হাজির হতো আজও সেরূপই আসে। আগামীতেও একই ভাবে আসবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ এক ভয়ানক রোগ। ফলে দলটি যখনই ক্ষমতায় আসে তখন একাকী আসে না,সাথে আনে তার স্বভাবজাত সিম্পটমও। আনে ভয়ানক আযাব। সে আযাবের কারণে ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫’য়ে যেরূপ ভয়ানক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছিল,দেশটির সমগ্র ইতিহাসে আর কোন কালেই তেমনটি ঘটেনি। তাতে যে শুধু গণতন্ত্র, সুশাসন, মৌলিক মানবিক অধিকার মারা গিয়েছিল তা নয়, বরং ভয়ানক দুর্ভিক্ষ ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে মারা পড়েছিল লক্ষাধিক মানুষ। দলটির ২০০৮-য়ের বিজয় এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ভোট-ডাকাতির নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনেনি, বরং নামিয়ে এনেছে হত্যা-গুম-ধর্ষণ-সন্ত্রাস ও জেল-জুলুমের এক ভয়ানক দুঃশাসন।

যক্ষা-কলেরার ন্যায় কোন সংক্রামক রোগ-ব্যাধীকে বুঝতে হলে প্রথমে তার জীবাণুকে সনাক্ত করতে হয়। তেমনি আওয়ামী লীগের দুঃশাসন বুঝতে হলে বুঝতে হয় তার মূল জীবাণুকে। আর সে ঘাতক জীবাণুটি হলো শেখ মুজিব নিজে। এবং সেটি আজও  বেঁচে আছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে। প্রতিটি বিধ্বংসী জীবাণুরই নাশকতা থাকে,মুজিবের ক্ষেত্রে সে নাশকতাটি হলো তাঁর বিনাশী রাজনৈতিক চেতনা। সে চেতনা শুধু চরিত্রেরই বিনাশ ঘটায় না,দেশ ও দেশের সংস্কৃতিরও বিনাশ ঘটায়। সে মুজিবী চেতনায় আনন্দ ও উৎসব দেশ ভাঙ্গাতে,গড়াতে নয়। সর্ববৃহৎ মুসালিম রাষ্ট্র পাকিস্তান ভাঙ্গাতে তারা যেমন বিপুল আনন্দ পেয়েছে,এখন আনন্দ পাছে বাংলাদেশের বিনাশে। সে মুজিবী নাশকতার বাংলাদেশে প্রথম প্রকাশ ঘটেছিল তাঁর বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তরের দুঃশাসনে। কোন দেশপ্রেমিক নেতাই দেশের এক ইঞ্চি ভূমি শত্রুর হাতে তুলে দেয়ে না। অথচ মুজিব আনন্দ চিত্তে বাংলাদেশের ভূমি বেরুবাড়ি ইউনিয়ন ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল। মুজিবের মৃত্যু ঘটেছে, কিন্তু তাঁর সে ঘাতক রাজনীতি মারা পড়েনি। বরং আজও  সে রাজনীতি অবিকল বেঁচে আছে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির মাঝে।

১৯৭৫য়ে মুজিবের মৃত্যু এবং ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬-অবধি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে তাঁর দলের দূরে থাকার ফলে মুজিবের স্বপ্নের সে রাজনীতি ও তাঁর কুকীর্তিগূলো আত্মভোলা বাঙালীদের অনেকেই ভূলে গিয়েছিল। ইতিমধ্যে অনেকেই ভূলে গিয়েছিল তাঁর একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচার,দলীয় ক্যাডারদের সন্ত্রাস,রক্ষিবাহিনীর অত্যাচার,ইসলামি শিক্ষা ও রাজনীতি-বিরোধী নীতি,সীমাহীন ভারতীয় লুণ্ঠন,১৯৭৪য়ের ভয়ানক দুর্ভিক্ষ,সে দুর্ভিক্ষে লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু এবং অসংখ্য জালপড়া বাসন্তির কথা। সে স্মৃতি প্রবীনদের মাঝে কিছুটা বেঁচে থাকলেও নতুন প্রজন্মের তা জানার সুযোগ জুটেনি। এতে প্রচণ্ড লাভ হয়েছিল শেখ মুজিবের। তিনি অনেকের মনে বেঁচে ছিলেন নিজে যা নন তার চেয়েও এক বিশাল পরিচয় নিয়ে। কিন্তু আজ আবার সে মুজিবী শাসনের সে স্মৃতি বাংলাদেশে নেমে এসেছে ভয়ানক তাণ্ডব নিয়ে। ফলে সুযোগ মিলেছে আওয়ামী-বাকশালীদের চরিত্রকে পুনরায় দেখার।

 

মুজিবের অপরাধ

মুজিবের অপরাধের তালিকাটি বিশাল। তাঁর বিশ্বাসঘাতকতা শুধু গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে নয়।সেটি বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্ব ও ইজ্জতের বিরুদ্ধেও। তিনি বিশ্বমাঝে বাংলাদেশের অপমান বাড়িয়েছেন নানা ভাবে। শায়েস্তাখানের সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে তিনি বিশ্বের দরবারে ভিক্ষার তলাহীন ঝুলি রূপে পরিচিত করেছেন। তিনিই সর্বপ্রথম কেড়ে নিয়েছিলেন বাকস্বাধীনতা এবং বন্ধ করেছিলেন সকল বিরোধী পত্রিকা। গণতন্ত্রকে তিনি কবরস্থানে পাঠিয়েছিলেন এবং উপহার দিয়েছিলেন প্রকাণ্ড দুর্ভিক্ষের। দেশের ভূমি বেরুবাড়ি তুলে দেয়ার পাশাপাশি ভারতকে দিয়েছিলেন পদ্মার উপর ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে পানি তুলে নেয়ার অধিকার। দেশকে তিনি পরিণত করেছিলেন ২৫ সালা দাসচুক্তিতে আবদ্ধ ভারতের আজ্ঞাবহ এক করদ রাজ্যে। আওয়ামী ‍‌‌‌লীগের দুঃশাসন নিয়ে ‌‍‍‍‌‌‌‍‌‌‌‌‌‍‍‍‍‍‌‌‌‌‌‌জনাব বদরুদ্দিন উমর লিখেছেন,“একাত্তরের ‍‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‍যুদ্ধকালীন ৯ মাস ছাড়া পাকিস্তান আমলের কোন কালেই অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না যা আওয়ামী শাসনামলে হয়েছে।”

শেখ মুজিব ১৯৭০’য়ের নির্বাচনে ভোট নিয়েছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে,কিন্তু ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে তিনি কবরস্থানে পাঠিয়েছিলেন। গণতন্ত্রের সাথে এতবড় গাদ্দারি ও দুষমনি পাকিস্তানী আমলে যেমন হয়নি,ঔপনিবেশিক শাসনামলেও হয়নি। পাকিস্তানী আমলে যেমন আওয়ামী লীগ ছিল, তেমনি মুজিবের রাজনীতিও ছিল। ছিল আওয়ামী লীগের দলীয় পত্রিকা ইত্তেফাক। সে সময় ভারতের সাথে আগরতলা ষড়যন্ত্র করেও তিনি পাড় পেয়ে গিয়েছিলেন। ব্রিটিশ আমলেও মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের ব্রিটিশ-বিরোধী রাজনীতি ছিল। কিন্তু মুজিবের শাসনামলে সেসব ছিল না; বিরোধী দলের জন্য কোনরূপ স্থান ছেড়ে দিতে রাজী ছিলেন না। গণতন্ত্র বলতে তিনি বুঝতেন তাঁর নিজদলের স্বৈরশাসন। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের জন্য জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে বেঁচে থাকাই তিনি কঠিন করেছিলেন। তাদের সায়েস্তা করতে তিনি পুলিশ ও তাঁর দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর বা্ইরেও সেনা বাহিনীর ন্যায় বিশাল এক রক্ষিবাহিনী গড়েছিলেন। তাদের দিয়ে তিনি প্রায় তিরিশ হাজার রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যার ব্যবস্থা করেছিলেন।

 

বিশ্বাসঘাতকতা ইসলামের বিরুদ্ধে

মুজিবের বিশ্বাসঘাতকতা ইসলামের সাথেও কম ছিল না। ১৯৭০য়ের নির্বাচনে তিনি ভোট নিয়েছিলেন এ ওয়াদা দিয়ে যে,তাঁর দল ক্ষমতায় গেলে ইসলাম বিরোধী কোন আইন প্রণয়ন করবে না।-(সূত্রঃ আওয়ামী লীগের ১৯৭০’য়ের নির্বাচনি মেনিফেস্টো)। অথচ ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই তিনি প্রকাণ্ড হারাম কাজ করলেন একটি মুসলিম দেশে ভেঙ্গে। আর ক্ষমতায় গিয়েই নিষিদ্ধ করলেন ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে সংগঠিত হওয়াকে। ইসলামী চেতনার  বিরুদ্ধে এর চেযে বড় গাদ্দারি ও বিশ্বাসঘাতকতা আর কি হতে পারে? মুসলিম হওয়ার অর্থই হলো ইসলামের প্রতিষ্ঠায় সর্বতোভাবে সচেষ্ট হওয়া এবং মুসলিমদের শক্তিবৃদ্ধিতে আত্মনিয়োগ করা। শক্তিবৃদ্ধির কাজে মুসলিমগণ যে সে শুধু সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিই বাড়াবে তা নয়, তারা দেশের ভূগোলও বাড়াবে। সে কাজে অর্থ দিবে, শ্রম দিবে এবং মেধা দিবে। প্রয়োজনে রক্ত তথা প্রাণও দিবে। স্বয়ং নবীজী (সাঃ)এবং তারা সাহাবীগণ তো সেটাই করেছিলেন। শতকরা ৭০ ভাগের বেশী সাহাবা সে মিশন নিয়ে শহীদ হয়েছেন। ইসলামের প্রসার এবং মুসলিম রাষ্ট্রের ভূগোল ও শক্তিবৃদ্ধির সে তাগিদ নিয়েই তুর্কি যুবক ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি বাংলার বুকে এসেছিলেন বহু হাজার মাইল দূর থেকে। অথচ মুজিব চলেছেন উল্টোপথে। মুসলিমদের রাষ্ট্রকে ক্ষুদ্রতর করা, মুসলিম রাষ্ট্রের অর্থনীতি ধ্বংস করা এবং সে রাষ্ট্রে ইসলামের প্রতিষ্ঠাকে প্রতিহত করার মিশন নিয়ে রাজনীতিতে নেমেছিলেন শেখ মুজিব। অথচ এরূপ কাজ কোন মুসলিমের হতে  পারে না, দেশে দেশে এরূপ কাজ করে ইবলিস শয়তান ও তার এজেন্টগণ। এতে অপরাধ আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও যুদ্ধ ঘোষণার। কারণ মুসলিম রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও মালিকানা একমাত্র মহান আল্লাহর; শাসকগণ প্রতিনিধি মাত্র। “লা তাফারাক্কু” অর্থ পরস্পরে বিভক্ত হয়োনা –এটি মহান আল্লাহর হুকুম। তাই কোন মুসলিম রাষ্ট্রের মুসলিম নাগরিক দেশভাঙ্গায় যুদ্ধে নামবে সেটি ভাবা যায় না। তাই একাত্তরে কোন আলেম বা ইসলামী দলের কোন কর্মী পাকিস্তান ভাঙ্গায় অংশ নেয়নি। কোন মুসলিম রাষ্ট্রও একাজে সহায়তা দেয়নি। সেটি ছিল নিতান্তুই ইসলামি চেতনাশূণ্য সোসালিস্ট, ন্যাশলিস্ট, ‌সেক্যুলারিস্ট ও হিন্দুদের প্রজেক্ট। প্রকৃত ঈমানদারগণ এটিকে সেদিন কবিরা গুনাহ ভেবেছে। বরং এ দেশ বাঁচানোকে তারা জিহাদ ভেবেছে। অথচ াবাভাআলসে বিদ্রোহ ও  যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বয়ং মুজিব। এভাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন শয়তানের এজেন্ট রূপে। ইসলাম-দুষমণ ভারতীয় সরকার এজন্যই এতটা প্রাণখুলে মুজিবকে সহায়তা দিয়েছিল।

ক্ষমতালাভের পর মুজিব কম্যুনিষ্টদেরও রাজনৈতীক অধিকার দিয়েছিলেন। দলগড়া এবং সংগঠিত হওয়ার অধিকার দিয়েছিলেন ক্যাপিটালিস্ট,ন্যাশনালিস্ট,সেক্যুলারিস্ট এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টানদেরও। কিন্তু সে অধিকার তিনি দেশের ইসলামপন্থিদের দেননি। ইসলামপন্থিদের উপর এমন কঠোর নিয়ন্ত্রণ এমনকি ব্রিটিশ শাসনামলেও ছিল না। তিনি কোরআনের আয়াত সরিয়েছেন রেডিও-টিভি ও বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাবোরর্ডের মনোগ্রাম থেকে। যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে ইসলাম ও মুসলিম শব্দ দেখেছেন তিনি সে দু’টি শব্দও সরিয়ে দিয়েছেন। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে “ইকরা বিসমে রাব্বিকা” শব্দটিও সরিয়ে দিয়েছেন। আজ একই পলিসি নিয়ে রাজনীতিতে নেমেছেন তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা সংবিধান থেকে “আল্লাহর উপর আস্থা”র প্রকাশটি বিলুপ্ত করেছেন। অথচ প্রতি কর্মে ও প্রতি পদে আল্লাহর উপর আস্থাটি ঈমানের স্বতঃস্ফুর্ত প্রকাশ।আগুণ যেমন উত্তাপ দিবেই, মু’মিনের ঈমান তেমনি মহান আল্লাহর উপর আস্থার প্রকাশ ঘটাবেই। মু’মিন ব্যক্তি তাই কথায় কথায় ইনশাল্লাহ বলে। মুসলমানদের সংবিধানে তাই “আল্লাহর উপর আস্থা”র কথাটিও থাকে। কিন্তু আওয়ামী-বাকশালীদের সেটি সহ্য হয়নি।

 

ব্যর্থতা শত্রু-মিত্র চেনায়

ধর্ম নিয়ে বাঁচতে হলে জরুরী হয় অধর্মকে জানা। নইলে ধর্ম বাঁচে না। হালালের সাথে হারামের বিধান জানা এজন্যই ইসলামে ফরজ। সমাজে চোর-ডাকাত-ঘুষখোর-ব্যাভিচারিদের চেনা ও তাদের শাস্তিদানের কাজটি যথার্থ না হলে সে সমাজে বসবাস অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাজনীতিতেও তেমনি ফরজ হলো ইসলাম,দেশ ও গণতন্ত্রের শত্রুদেরও জানা এবং জনগণের সামনে তাদেরকে পরিচিত করে দেয়া। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি না নিয়েও প্রাণে বাঁচা যায়, কিন্তু কে শত্রু আার কে মিত্র -এ জ্ঞানটুকু না থাকলে দেশ তখন রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের হাতে অধিকৃত হয়। জনগণকে তাই শুধু নামায-রোযার মাসলা-মাসায়েল,অক্ষর জ্ঞান বা পাটিগণিতের হিসাব-নিকাশ শেখালে চলে না। রাজনৈতিক জ্ঞানদানও জরুরী। সমাজের আবু লাহাব,আবু জেহলদের ন্যায় দুর্বৃত্তদেরও চিনতে হয়। অথচ বাংলাদেশে সে জ্ঞানলাভ ও জ্ঞানদানের কাজটিই হয়নি। এ দায়িত্বটি ছিল দেশের লেখক, বুদ্ধিজীবী, আলেম সমাজ ও রাজনীতিবিদদের। কিন্তু তারা সে দায়িত্বপালনে ব্যর্থ হয়েছেন। দেশ ও জনগণের শত্রুমিত্র চেনায় প্রচণ্ড ফাঁকি রয়ে গেছে। ফলে দেশ,গণতন্ত্র ও ইসলামের চরম শত্রুগণ ঢুকে পড়েছে দেশের রাজনীতি ও প্রশাসনে। বাংলাদেশ আজ  বিষাক্ত শাপদের হাতে তাই কুক্ষিগত।দেশ ও দেশের জনগণ এখন এদের হাতে আষ্টেপৌড়ে আবদ্ধ। এদের বিষাক্ত ছোবলে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে সমগ্র প্রশাসন।

 

শত্রুপক্ষের বিনিয়োগ ও বিজয়

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামে শত্রুপক্ষ বহুদূর এগিয়ে গেছে। দেশের রাজনীতিতে তারাই বিজয়ী পক্ষ। মুজিব তার শাসনামলে এতটা প্রতিষ্ঠা পাননি, যতটা প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন আজ । হাজার হাজার মন্দিরের পুরাহিতগণ দিবারাত্র খাটলে শাপ-শকুন ও গরু-বাছুড়ের ন্যায় জানোয়ারকেও ভগবান রূপে প্রতিষ্টা দেয়া য়ায়। পুরুষের লিঙ্গকেও পুজনীয় করা যায়। এভাবে পরাজিত করা যায় মহান আল্লাহর দ্বীনকে।শয়তানের বিপুল সংখ্যক এজেন্ট তো দিবারাত্র একাজটিই করে। হিটলার, মুসোলিনি,বুশ, ব্লেয়ারের ন্যায় নিষ্ঠুরগণও তো এভাবে নেতারূপে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশে তো সেটিই ঘটেছে। ফলে দেশে ১৫ কোটি মুসলমান থাকতে মহান আল্লাহর শরিয়তী বিধান আস্তাকুঁড়ে গিয়ে পড়েছে। আর আদালতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে কাফেরদের রচিত আইন। -যে আইনে সূদ নিষিদ্ধ নয়। নিষিদ্ধ নয় পতিতাবৃত্তি। বরং এ আইন মোতাবেক রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রহরা দেয়া হয় সূদী ব্যংক ও পতিতাপল্লিকে। শেখ মুজিবের ন্যায় ইসলামবিরোধী, মানবতাবিরোধী ও গণতন্ত্রহত্যাকারি নিষ্ঠুর স্বৈরাচারি ব্যক্তি তো প্রতিষ্ঠা পেয়েছে সে পথেই। এবং আজ  তাঁর প্রতিষ্ঠা বাড়াতে আদালতের বিচারকদেরও লাঠিয়াল রূপে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁকে স্বাধীনতার ঘোষক ও জাতির পিতা বলতে হবে –এরূপ হুকুম জারি করা হচ্ছে এখন আদালতের কক্ষ থেকে। অথচ বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তরের শাসনামলে এমনটি ছিল না। তখন কেউ তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বলেনি। তাঁর প্রতি সম্মান দেখানোর হুকুম দিয়ে আদালত থেকেও সেদিন ফরমান জারি হয়নি।

 

বিজয়ী শয়তানের এজেন্ডা

মানুষ মাত্রই স্বপ্ন দেখে। প্রতেক্যের জীবনে নিজেকে নিয়ে এবং দেশকে নিয়ে কিছু ভাবনাও থাকে। জীবন ও জগত নিয়ে কাফের যেমন স্বপ্ন দেখে, তেমনি ঈমানদারও স্বপ্ন দেখে। তবে ঈমানদার ও বেঈমানের স্বপ্ন কখনো এক নয়। স্বপ্ন বা ভাবনার মধ্যেই ব্যক্তির আসল পরিচয়। এখানে পরিচয় মেলে যেমন ঈমানদারির, তেমনি বেঈমানীরও। স্বপ্ন ও ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় রাজনীতির। তাই স্বপ্ন ও ভাবনা না থাকলে ব্যক্তির রাজনীতি থাকে না। পশুর সেটি থাকে না বলে পশুর পরিচয় নিছক পশু রূপে। পশুর আস্তাবলে তাই রাজনীতির জন্ম হয়না। বস্তুতঃ রাজনীতি হলো মানুষের স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার। সে স্বপ্ন পূরণে ব্যক্তি যেমন কর্মে নামে,তেমনি রাজনীতিতেও আত্মনিয়োগ করে। সময়,শ্রম,অর্থ,মেধার পাশাপাশি এমনকি নিজের জীবনও বিণিয়োগ করে। মুসলমান তো সে স্বপ্ন পূরণে শহীদও হয়। শহীদের রক্ত এখানে শক্তিশালী অস্ত্র হিসাবে কাজ করে। মহান আল্লাহর কাছে ব্যক্তির শহীদ হওয়াটাই তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। কারণ ব্যক্তি এখানে প্রাণ দেয় ব্যবসা বা সম্পত্তি বাড়াতে নয়,বরং আল্লাহর দ্বীনের বিজয় বাড়াতে। ফলে মহান আল্লাহর কাছে এর চেয়ে বড় নেককর্ম নেই। এমন নেককর্মের বিনিময়ে মু’মিন ব্যক্তিটি রেহাই পাবে আখেরাতে বিচারের কাঠগড়ায় জবাবদেহী থেকে। অথচ সে বিচার থেকে অন্যকারো এত সহজে রেহাই নেই।

মু’মিনের জীবনে এখানে যে স্বপ্ন বা ভাবনাটি কাজ করে সেটি আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ের ভাবনা। এখানে আল্লাহর এজেণ্ডার সাথে মু’মিন তাঁর নিজের বাঁচার এজেণ্ডাকে এক করে ফেলে। সে তখন পরিণত হয় হিজবুল্লাহ বা আল্লাহর বাহিনীর মুজাহিদ। তার জীবনে শুরু করে জিহাদ। মহান আল্লাহর সে সর্বকালীন এজেণ্ডাটি ঘোষিত হয়েছে এভাবেঃ “তিনিই সেই মহান আল্লাহ যিনি সঠিক পথ ও সত্যদ্বীনসহ রাসূলকে প্রেরণ করেছেন এ জন্য যে তাঁর দ্বীন যেন সকল ধর্ম ও মতের উপর বিজয়ী হয়।” সুরা সাফ আয়াত ৯, সুরা তাওবাহ আয়াত ৩৩, সুরা ফাতহ আয়াত ২৮)। তাই আল্লাহর দ্বীনকে ন্যাশনালিজম, ক্যাপিটালিজম, সোসালিজম,সেক্যুলারিজম,হিন্দুধর্ম, খৃষ্টানধর্ম ও অন্য কোন ধর্মের উপর বিজয়ী করার জিহাদটি কোন মৌলবাদী রাজনৈতিক দলের বা কোন মৌলানা-মৌলভীর এজেণ্ডা নয়। বরং সেটি খোদ মহান আল্লাহর। ঈমানদার হওয়ার শর্ত্বই হলো মহান আল্লাহর সে এজেণ্ডার সাথে পুরাপুারি একাত্ব হয়ে যাওয়া। সে এজেণ্ডার যে কোন বিরোধীতাই কুফরি বা বেঈমানী। এমন বিরোধীতা মূলত শয়তানের কাজ। অথচ তেমন বিরোধীতায় নেমেছিলেন শেখ মুজিব। শেখ হাসিনা ও তার বাহিনীর হাতে আজও সেটাই হলো মুজিবের লিগ্যাসী।

 

দখলদারি শয়তানের

শয়তান মানুষকে শুধু নামায-রোযা থেকে বিচ্যুত করে না,বরং তার মূল টার্গেটটি রাজনৈতীক অঙ্গনের উপর দখলদারি। কারণ যে কোন জনগণ বা উম্মাহ শক্তি পায় তার রাজনীতি থেকে। শয়তানী শক্তির হাতে রাজনীতির ময়দানটি অধিকৃত হলে ধর্মপালন ও মসজিদ-মাদ্রাসার উপরও তার দখলদারি প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন মুসলিম দেশকে খণ্ডিত করা বা মসজিদ-মাদ্রাসাগুলোকে আস্তাবল বানানো বা সেগুলোকে জিহাদ-শূণ্য করার কাজ সহজতর হয়ে যায়। তখন অতি সহজ হয় ইসলামকে পরাজিত করা এবং মুসলমানদের শক্তিহীন করার কাজ। তাই পুঁজিবাদী,জাতীয়তাবাদী,সমাজবাদী ও ঔপনিবেশিক শয়তানী শক্তি যখনই সুযোগ পেয়েছে তখন মসজিদ-মাদ্রাসা ভাঙ্গায় মনযোগী না হয়ে প্রথমে সেদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা হাতে নিয়েছে,এরপর হাত দিয়েছে ধর্মপালনে। তাই শয়তানের অনুচরদের দখলদারিতে মুসলমানদের রাজনৈতিক মানচিত্রে যেমন ধ্বসে গেছে,তেমনি বিনষ্ট হয়ে গেছে ধর্মীয় বিশ্বাস তথা চেতনার মানচিত্রও। বিনষ্ট হয়েছে ইসলামের সর্বোচ্চ ইবাদত জিহাদ। মুসলিম ভূমিতে তারা নিজেরা আবির্ভূত হয়েছে সাক্ষাৎ শয়তান রূপে। এরূপ ছদ্দবেশী শয়তানদের কারণে ভারত ও ইসরাইলের রাজনৈতিক ভূগোল দিন দিন বাড়তে থাকলেও অখণ্ড আরবভূমি ভেঙ্গে ২২টি রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। এদের হাতে পাকিস্তান ভেঙ্গে গেছে, সূদানও ভেঙ্গে গেছে। ইরাক ও আফগানিস্তানও ভাঙ্গার পথে। অবশিষ্ঠ পাকিস্তানের উপরও লাগাতর হামলা হচ্ছে। এভাবে দিন দিন আনন্দ বাড়ছে এবং সে সাথে শক্তি বাড়ছে শয়তানী শক্তির। আর শয়তানের শক্তিবৃদ্ধির সে উৎসবকে মুসলিম নামধারি শয়তানের এজেন্টগণও নিজেদের উৎসবে পরিণত করেছে।শয়তানের এজেণ্ডাকে নিজদের এজেণ্ডা রূপে গ্রহণ করে বাংলাদেশে তাদের পক্ষে লড়াইটি লড়ছে সেক্যুলার রাজনৈতিক দলের কর্মিবাহিনী ও বুদ্ধিজীবীরা। দেশের মসজিদ-মাদ্রাসা ভাঙ্গা নিয়ে তারা এতটা উৎসাহী নয়,বরং মূল উৎসাহটি ছলচাতুরিতে রাজনৈতীক অঙ্গন দখলে নেয়ায়। লক্ষ্য,মহান আল্লাহর এজেণ্ডাকে ব্যর্থ করে দেয়া।

ঈমানদারের তাকওয়া হলো,শয়তানের সে এজেণ্ডা থেকে সতর্কতার সাথে সর্ব-অবস্থায় দূরে থাকা। সেটি যেমন ধর্ম,অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে,তেমনি রাজনীতিতেও।শয়তানের মূল শয়তানিটি ধরা পড়ে তার রাজনীতিতে,তেমনি রাজনীতিতে ধরা পড়ে ঈমানদারের প্রকৃত ঈমানদারি। নামায-রোযা,হজ-যাকাতে মুনাফেকিটা তেমন ধরা পড়ে না,কারণ শয়তান তার ঝান্ডা বা এজেণ্ডা নিয়ে নামাযের কাতারে বা রোযায় হাজির হয় না। কিন্তু হাজির হয় রাজনীতিতে। ফলে রাজনীতিতে শুরু হয় প্রচণ্ড মুনাফেকি ও বিদ্রোহ। শুরু হয় ঈমানদার সাজার ছদ্দবেশ। ফলে নির্বাচন কালে রাজনীতিতে বাড়ে টুপি,তসবিহ ও মাথায় কালো পট্টি বা রুমাল বাধার কদর।বাড়ে পীরের ওরস,তাবলিগী এজতেমায় ও দরবেশের দরগায় হাজিরা দেয়ার আগ্রহ। ইসলামের স্বঘোষিত শত্রুরাও তখন ধার্মিক সাজে।

 

বন্ধু গণ্য হচ্ছে আল্লাহর শত্রু

ব্যক্তির চেতনা, চরিত্র, রুচিবোধ ও জীবনবোধের সঠিক পরিচয় মেলে তার বন্ধুদের দেখে। সমাজে বা রাজনীতিতে সে ব্যক্তিটি নানা রূপে সাজলেও বন্ধুটিকে বেছে নেয় একান্ত নিজের মত করে। নইলেন্ধুত্ব জমে না। তেল ও পানি যেমন মিশে না,দুই ভিন্ন চরিত্রের মানুষের মাঝেও তেমনি বন্ধুত্ব জমে না। দুর্বৃত্তরা এজন্যই কোন চরিত্রবান ভালো মানুষকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করে না। মদ্যপায়ীরা মদ্যপায়ীদের, ব্যাভিচারিরা ব্যাভিচারীদের এবং ইসলামের শত্রুরা ইসলামের শত্রুদের বন্ধু রূপে গ্রহণ করে তো একারণেই। তাই কে কাকে বন্ধু বা শত্রু রূপে গ্রহণ করলো সেটি সামান্য বিষয় নয়,বরং মানব জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর মধ্য দিয়ে দিয়ে ধরা পড়ে ব্যক্তির প্রকৃত ঈমানদারি ও কুফরি। বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে পবিত্র কোরআন হালাল-হারামের পাশাপাশি কাকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করতে হবে সে বিষয়েও সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। বলা হয়েছে,“মু’মিনগণ যেন ঈমানদারদের বাদ দিয়ে কাফেরদেরকে বন্ধরূপে গ্রহণ না করে। যে কেউ এরূপ করবে তার সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না।” -(সুরা আল ইমরান,আয়াত ২৮)।মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এটি এক মহা হুশিয়ারি। আল্লাহর সাথে বান্দাহর সম্পর্ক থাকবে কি থাকবে না তা নির্ধারিত হবে বন্ধু রূপে সে কাদেরকে গ্রহণ করলো তার উপর। তাই ঈমানদার ব্যক্তি অতি সতর্ক হয়ে যায় বন্ধুরূপে কাউকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে। তাই মুজিবকে চেনার মোক্ষম উপায় তার মাঠের বক্তৃতা নয়। বড় বড় বুলিও নয়। বরং সে জন্য নজর দিতে হবে তাঁর বন্ধুদের প্রতি।

আল্লাহর হুশিয়ারি মুজিবের কাছে গুরুত্ব পায়নি, গুরুত্ব পেয়েছে যে কোন ভাবে ক্ষমতায় যাওয়া। তাতে দেশ ও দেশবাসীর জানমালের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হোক তা নিয়ে কোন ভাবনা ছিল না। ক্ষমতালাভের সে লক্ষ্য নিয়েই তিনি ভারতের ন্যায় শত্রু দেশের সাথে শেখ মুজিব আগরতলা ষড়যন্ত্র করেছেন। তিনি অতি ঘনিষ্ট বন্ধু রূপে বেছে নিয়েছেন মনিসিং,ফনিভূষন মজুমদার ,চিত্তরঞ্জন সুতোর,কালিপদ বৈদ্য, মনরঞ্জন ধর,ইন্দিরা গান্ধির মত ব্যক্তিদের। তাদের সাথে যেমন রাজনীতি করেছেন,তেমনি তাদের পরামর্শ মত দেশও চালিয়েছেন। বাংলাদেশের ইসলামপন্থিদের কাছে মুজিবের এ গোপন ষড়যন্ত্র গোপন থাকেনি। তাই দেশের  হাজার হাজার আলেমের মধ্য থেকে কোন প্রসিদ্ধ আলেমই তার কাছে ভিড়েনি। মুজিব নিজেও কোন আলেমকে কাছে ডাকেননি। কাউকে কোন গুরুত্বপূর্ণ পদও দেননি। বিশ্বে ৫০ টির বেশী মুসলিম রাষ্ট্র,কিন্তু কারো সাথেই মুজিবের বন্ধুত্ব জমেনি। অথচ বন্ধুত্ব জমেছে ভারত ও সোভিয়েত রাশিয়ার ন্যায় মুসলিম-দুষমন দেশের সাথে। এরপরও কি বুঝতে বাঁকি থাকে তিনি কোন পক্ষের লোক? গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাকে মুজিব শুরুতেই আস্তুাকুঁরে ফেলে ছিলেন। স্বাধীনতার বদলে এনেছেন পরাধীনতা। স্বাধীনতা দিয়েছেন নিজ পরিবার, নিজ দল ও নিজপ্রভু ভারতকে।  সন্ত্রাস ও লুন্ঠনে তাদেরকে দেয়া স্বাধীনতাটি ছিল সীমাহীন। মুজিব শাসনামলে সে স্বাধীনতার প্রয়োগ এতটাই হয়েছে যে তাতে ১৯৭৪ সালে দেশে ভয়ানক দুর্ভিক্ষ নেমে এসেছে। এবং সে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমের লক্ষাধিক মানুষের জীবনে মৃত্যু ডেকে আনার ব্যবস্থা করেছেন। কুকুর শৃগালের মত মানুষ মরেছে তখন পথে ঘাটে। ৩০ হাজারের বেশী মানুষকে হত্যা করেছেন রক্ষিবাহিনী দিয়ে। একাত্তরের যুদ্ধেও এত মানুষের মৃত্যু ঘটেনি।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে “ইন্নাদিনা ইন্দাল্লাহেল ইসলাম”।  অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে একমাত্র গৃহীত ধর্ম হলো ইসলাম। এর অর্থ দাঁড়ায় ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মকে ধর্ম বলাই মহাপাপ। এ পাপ ব্যক্তিকে কাফেরে পরিনত করে। অথচ বিশ্বজুড়ে ধর্মের নামে এ ধর্মই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তেমনি ধোকাবাজি হয়েছে গণতন্ত্রের সাথে। মুর্তিপুঁজা, শাপপুঁজা, গরুপুঁজা ও লিঙ্গপুঁজার ন্যায় চরম অধর্ম  যেমন ভারতে ধর্মরূপে  স্বীকৃত, তেমনি বাংলাদেশে পরাধীনতাকে প্রচার পেয়েছে স্বাধীনতা বলে। স্বাধীনতার নামে পাকিস্তান আমলে এতবড় ধাপ্পাবাজি হয়নি। পাকিস্তান আমলের সে স্বাধীনতা যেমন মুসলিম লীগ নেতাকর্মীদের জন্য ছিল তেমনি আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের জন্যও ছিল। তাই মুজিবকে সেদিন গুম করা হয়নি, রিমান্ডে নিয়ে পুলিশী নির্যাতন করা হয়নি, এবং তাকে ডান্ডাবেরিও পড়ানো হয়নি। বরং জেলে তাকে প্রথম শ্রেণী দেয়া হয়েছে। অথচ আজকের পরাধীন বাংলাদেশে সেটি বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য ভাবাও যায় না।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,“আল্লাহতায়ালা ঈমানদারের বন্ধু,এবং তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যান। আর যারা কাফের তাদের বন্ধু হলো শয়তান। শয়তান তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়।” –(সুরা বাকারা আয়াত ২৫৭)।ঈমানদার হওয়ার পুরস্কার ও মর্যদা তাই বিশাল। সে মহা পুরস্কার ও মর্যাদাটি হলো মহান আল্লাহর বন্ধু হয়ে যাওয়ার। আল্লাহর বন্ধু হওয়ার বরকতেই মু’মিনের জীবনে আসে আলোময় সত্যপথ। সে আলোময় পথ বেয়ে মু’মিনের জীবনে জুটে জান্নাত। অপর দিকে বেঈমান তথা ইসলামের বিপক্ষ শক্তি হওয়ার শাস্তি ও অমর্যাদাটিও বিশাল। সেটি শয়তানের বন্ধু হওয়ার। তখন তার জীবন জুড়ে আসে গভীর অন্ধকার। অন্ধকারের পথ বেয়ে সে জুটে জাহান্নামে।

তবে মুজিব নিজেই শুধু শয়তানের পথে যাননি,টেনেছেন সমগ্র বাংলাদেশকেও।সেটি বাংলাদেশের মাটিতে ইসলামের শরিয়তী বিধানের প্রতিষ্ঠা রুখে। একাজে তিনি ভারতের কাফের সরকারকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি নিষিদ্ধ করেছিলেন সকল ইসলামি দলকে,এবং সীমিত করেছিলেন ইসলামচর্চাকে। “ইসলাম” ও “মুসলিম” এ দু’টি শব্দকে তিনি সরিয়েছিলেন বাংলাদেশের নানা প্রতিষ্ঠান থেকে। তাই প্রশ্ন হলো,ইসলামের এরূপ বিরুদ্ধাচারনের পরও কি কোন ব্যক্তি আল্লাহর বন্ধু হতে পারে? এরূপ কাজ তো শয়তানের ও তার বন্ধুর। প্রশ্ন হলো,শয়তানের এরূপ একনিষ্ট বন্ধুকে কোন ঈমানদার কি নিজের বন্ধু রূপে গ্রহণ পারে? সে ব্যক্তিটি কি হতে পারে ১৫ কোটি মুসলিম অধ্যুষিত বাংলার বন্ধূ তথা বঙ্গবন্ধু? সেটি বললে বা মেনে নিলে কি ঈমান থাকে? সমাজের আবু লাহাবেদের ন্যায় ইসলামের প্রতিষ্ঠা-বিরোধীদের “বন্ধু” বা “জাতির পিতা” বলা ইসলামের শিক্ষা নয়,নবীজী (সাঃ)র সূন্নতও নয়। বরং তার বিরুদ্ধে “ধ্বংস হোক” বলাই তো মহান আল্লাহর সূন্নত। “সুরা লাহাব”য়ে আবু লাহাবের বিরুদ্ধে সে স্লোগানটি শুনিয়েছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। ঈমানদারের দায়িত্ব তাই মহান আল্লাহর সে সূন্নতকে নিষ্ঠার সাথে পালন করা। তাছাড়া মুজিব ও তাঁর দলের অপরাধ কি আবু লাহাবের চেয়ে কম? আবু লাহাব মক্কার ন্যায় এক ক্ষুদ্র জনপদে ইসলামের প্রসার ও প্রতিষ্ঠা রুখতে চেষ্টা করেছিল। আর মুজিব আল্লাহর শরিয়তি বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীর বেশে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের ন্যায় এক বিশাল জনগোষ্ঠির দেশে।

হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী ব্যক্তিটি মাটির পুতুল,শাপ-শকুন ও গরু-বাছুড়কে ভগবান বলবে এবং সেগুলোকে ভক্তি ভরে পুজা দিবে সেটিই স্বাভাবিক। কারণ সেটাই তার ধর্ম। তেমনি আল্লাহর শরিয়তি বিধানের বিরুদ্ধে শত্রুতা যে আওয়ামী-বাকশালীদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য,তারা শেখ মুজিবকে “জাতির পিতা” বা “বঙ্গবন্ধু” বলবে সেটিও স্বাভাবিক। কারণ শেখ মুজিব ও তাঁর অনুসারিগণ ইসলামের প্রতি অঙ্গিকার নিয়ে তারা রাজনীতি করে না এবং সে দাবীও তারা করে না। বরং ইসলামের প্রতিপক্ষ হ্ওয়াটাই তাদের মিশন। ফলে ইসলাম-বিনাশী সে রাজনীতির সে নেতাটিকে তারা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বলবে তাতে আর বিস্ময় কিসের? গরু-বাছুড়,শাপ-শকুন ও মুর্তি যদি নোবেলপ্রাইজ বিজয়ী কোন হিন্দু থেকে পুঁজা পায় তাতে কি অবাক হওয়ার কিছু থাকে? তেমনি আওয়ামী বাকশালীদের কাছে শেখ মুজিবও যদি শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালীর খেতাব পায় তাতেই বা বিস্ময়ের কি? কিন্তু যাদের মনে সামান্যতম ঈমান আছে,এবং সে ঈমানের বরকতে নামায-কালাম পড়ে এবং আল্লাহর দ্বীনের প্রতিষ্ঠায় সামান্য অঙ্গিকারও রাখে তারাও যদি এমন ব্যক্তিকে বঙ্গবন্ধু বা জাতির পিতা বলে তবে তার চেয়ে বিস্মযের আর কি থাকতে পারে? ইসলামের শরিয়তি বিধানের প্রতিষ্ঠা রুখা তো শয়তানের এজেণ্ডা। অথচ সে এজেণ্ডা নিয়ে রাজনীতি করেছেন শেখ মুজিব ও তার দল আওয়ামী লীগ। ফলে তাকে বন্ধু বা নেতা বললে কি ঈমান থাকে?

 

শয়তানকে খুশি করার রাজনীতি

পাপ শুধু পুতুল পুজা,শর্পপুজা বা গরুপুজা নয়,বরং মহাপাপ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলো যারা ইসলামের শরিয়ত প্রতিষ্ঠার রাজনীতির যারা বিরোধী তাদের সম্মান দেখানো,তাদের ভোট দেয়া বা তাদের পক্ষ নেয়া। এ অপরাধ তো খোদ আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনার। কোরআনের ভাষায় এরা হলো “মুফছেদ ফিল আরদ”  তথা জমিনের উপর ফ্যাসাদসৃষ্টি। মহান আল্লাহতায়ালা এমন ফ্যাসাদকে মানবহত্যার চেয়েও জঘন্য ক্ষতিকর বলেছেন। খলিফায়ে রাশেদার যুগে এ অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতো। অথচ বিস্ময়ের বিষয় বাংলাদেশের মত একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে সে পাপ এবং সে অপরাধটি হচ্ছে অহরহ। আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও বিদ্রোহ হচ্ছে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির সর্বত্র জুড়ে। দেশটিতে পতিতাবৃত্তির ন্যায় প্রকাশ্য ব্যভিচারকেই শুধু আইনগত বৈধতাই দেয়া হয়নি,বৈধতা ও প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়েছে সূদী ব্যাংক ও মদের ব্যবসাকে। প্রবল ভাবে প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়েছে শরিয়ত-বিরোধী সেক্যুলার রাজনীতিকে। অপরদিকে অসম্ভব করা হয়েছে ইসলামপন্থিদের রাজনীতিকে। কোন ঈমানদার-অধ্যুষিত দেশে কি এটা ভাবা যায়? অথচ একটি মুসলিম দেশে হওয়া উচিত ছিল এর উল্টোটি। ইসলাম বিরোধী এমন রাজনীতিতে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় দেশ এবং শয়তানই খুশি হতে পারে। আর আওয়ামী লীগের রাজনীতি তো শয়তানকে খুশি করার রাজনীতি। সেটি শুধু আজ নয়, বাংলাদেশের জন্মের পূর্ব থেকেই।

 

অসহ্য দেশের মানচিত্র

তবে ভারতের করদ রাজ্য বা “ভিক্ষার তলাহীন ঝুলি”তে পরিণত করাই আওয়ামী-বাকশালীদের একমাত্র এজেন্ডা নয়। কারণ ভারতের এটাই একমাত্র লক্ষ্য নয়। ভারত চায় আরো বড় কাজ। সেটি বাংলাদেশের মাটি থেকে ইসলামে সরানোর। ভারতের পেটের মধ্যে ১৬ কোটি মানুষের মৌলবাদী বাংলাদেশের অবস্থান ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকী। এতে পেটের মধ্যে টাইম বোমা নিয়ে ঘুমানোর বিপদ। বাংলাদেশে ইসলামি চেতনা বেড়ে উঠলে যখন তখন এ বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। ফলে ভারত চায় এ বোমাকে বারুদমূক্ত করতে। আর সে বারুদ হলো মৌল ইসলাম। ফলে ভারত চায় ডি-ইসলামাইজেশন। অর্থাৎ চায় ইসলাম থেকে দূরে সরাতে। এবং সেটি কালচারাল কনভার্শনের মাধ্যমে।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে র‌্যাডক্লিফ রোয়েদাদ বাংলার মাঠ-ঘাট ও গ্রাম-গঞ্জ দিয়ে এঁকেবেঁকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের যে মানচিত্রটি এঁকেছিল তার মধ্যে যেটি ফুটে উঠেছিল সেটি বাংলা ভাষা, অখন্ড বাংলা বা ভাষাভিত্তিক বাঙালী জাতির চিত্র নয়,বরং সে চিত্রটি দুই বাংলার দুই ভিন্ন সাংস্কৃতিক বিভাজনের। তাই বাংলাদেশের দেহে আজ ও ১৯৪৭য়ের পাকিস্তানের ছাপ,সে ছাপটি সাংস্কৃতিক ভিন্নতার। এবং সে ভিন্নতার মূলে ইসলাম। সাতচল্লিশে পাকিস্তান গড়ে উঠেছিল শুধু অর্থনৈতিক প্রয়োজনে নয়,বরং উপমহাদেশের মুসলমানদের প্রচণ্ডতর এক ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রয়োজনে। মুজিব সে পাকিস্তানী প্রজেক্টকে দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্বপাকিস্তানী নাগরিকদের জন্য অসম্ভব করে দিয়েছেন। একাত্তরের পর সে প্রয়োজন মেটানো এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ভারতের মুসলমানদের ন্যায় আজ একই বিপর্যয়ে পড়েছে বাংলাদেশের মুসলমান। মুসলিম বিরোধী সাম্প্রদায়ীক ভারতীয় হিন্দুদের কাছে মুজিব এজন্যই এতটা প্রিয়।

ভারতের কাছে আজও  অতি অসহ্য হলো বাংলাদেশের ১৯৪৭-য়ের এ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মানচিত্র। ভারত একাত্তরে এদেশের ভূগোলের উপর সামরিক দখলদারি পেলেও সে সাংস্কৃতিক মানচিত্র বিলোপ করতে পারিনি। স্বাধীন দেশ রূপে বাংলাদেশের বেঁচে থাকার শক্তির মূল উৎস্যটি পশ্চিম বাংলা বা ভারত থেকে ভিন্নতর এ সাংস্কৃতিক এ মানচিত্র। তাই শত্রুর নজর পড়েছে বাংলাদেশের এই সাংস্কৃতিক মানচিত্রের দিকে। শত্রুপক্ষ সেটির বিলোপ চায়,এবং সেটি বাংলাদেশের মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে সরানোর মাধ্যমে। এজন্যই ভারতের বিনিয়োগ প্রচণ্ড ভাবে বেড়েছে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ময়দানে।

 

সবচেয়ে বড় বিপদ

শেখ মুজিব ভারতের হাতে দেশের ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক মানচিত্র তুলে দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা তুলে দিচ্ছে দেশবাসীর চেতনার মানচিত্র। ফলে শয়তানী শক্তির হাতে দ্রুত অধিকৃত হচ্ছে দেশের ধর্ম ও শিক্ষা-সংস্কৃতির অঙ্গন। বাংলার সুলতানি যুগে ইসলামের দ্রুত প্রসার রোধে চৈতন্যদেবের উদ্ভব ঘটিয়েছিল। তার ভক্তি-মূলক গান মানুষকে ইসলাম থেকে দ্রুত আড়াল করেছিল। একই লক্ষ্যে বাংলাদেশে আনা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথকে। চৈতন্যদেবের ন্যায় তাকেও এক মহাদেব রূপে প্রতিষ্ঠা দেয়া হচ্ছে। এটি এখন আওয়ামী লীগ ও ভারতের যৌথ প্রজেক্ট। একাজে ভারত থেকে শত শত কোটি টাকার অর্থই শুধু আসছে না,হাজার হাজার সাংস্কৃতিক সৈন্যও আসছে। ফলে বাড়ছে ভারতের সাংস্কৃতিক দখলদারি। ১৫ কোটি মুসলমানদের রাজস্বের অর্থে কোরআন-হাদীস ও নবীচরিত ছাপার ব্যবস্থা না হলে কি হবে,প্রতিবছর শত শত বই ছাপা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের উপর। বাড়ছে রবীন্দ্রসঙ্গিতের বছর-ব্যাপী আয়োজন। এতে ভ্রষ্টতা বাড়ছে দেশের নতুন প্রজন্মের মাঝে। ধর্মান্তর না হলেও এতে বিপুল ভাবে ঘটছে কালচারাল কনভার্শন। ফলে আজ  থেকে ৫০ বছরদেশবাসীর জন্য মুসলমান থাকাটি যতটা সহজ ছিল আজ  ততটাই কঠিন হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের জন্য এটিই আজ  সবচেয়ে বড় বিপদ। ০৭/০৫/১২, নতুন সংস্করণ ৩০.০৬.১৯

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *