সেক্যুলারিস্টদের নাশকতা
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on November 28, 2020
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
যে নাশকতাটি চেতনা রাজ্যে
ইসলামের বিরুদ্ধে সেক্যুলারিস্টদের অপরাধ বহুমুখি। তবে সবচেয়ে বড় অপরাধটি হলো তারা মুসলিমদের মধ্যকার প্যান-ইসলামিক ভাতৃত্ববোধকে বিলুপ্ত করতে সমর্থ হয়েছে। অর্থাৎ পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহতায়ালা এক মুসলিমকে অপর মুসলিমের ভাই রূপে যেরূপ পরিচয় করিয়ে দিলেন –সেটিকে যে ভূলিয়ে দিয়েছে তা নয়। বরং ভাষা, বর্ণ, ভৌগলিক ভিন্নতার পরিচয়ে অন্য ভাষা, অন্য বর্ণ ও অন্যদেশে জন্ম নেয়া মুসলিমদের হত্যা করাকে তারা রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত করেছে। অর্থাৎ ফিরিয়ে নিয়েছে ইসলামপূর্ব আদিম জাহিলিয়াতের দিকে। মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশের বিরুদ্ধে এটিই হলো তাদের বড় বিদ্রোহ। তাই বাংলাদেশে ১৯৭১’য়ে বহু হাজার অবাঙ্গালী মুসলিমকে হত্যা করা, তাদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাবাণিজ্য দখল করা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদীদের কাছে ন্যায়সঙ্গত মনে হয়েছে।
অথচ নানা ভাষা, নানা অঞ্চল ও নানা বর্ণের মুসলিমদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্রেফ নামাযে খাড়া হলে চলে না, তাকে একই রূপ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একই ভূগোলে বাঁচবার অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়। নইলে ভাষা অঞ্চল ও বর্ণের ভূ্গোল ভাঙ্গার হারাম কাজটি শুরু হয়। ৫৭টি মুসলিম দেশ তো এরূপ হারাম পথেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। প্রশ্ন হলো, ৫৭টি মুসলিম দেশ সৃষ্টি হওয়াতে মুসলিমদের কি সামান্যতম শক্তিও বৃদ্ধি পেয়েছে। বরং যত বাড়বে মুসলিম দেশের সংখ্যা, ততই বাড়বে মুসলিম উম্মাহর দুর্বলতা। এবং তাতে আনন্দ বাড়ায় কাফের শক্তিবর্গের। এরূপ বিভক্তিতে লাভবান হয়েছে কিছু স্বার্থশিকারী ব্যক্তি যারা পেয়েছে এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশে শাসকের আসনে বসবার সুযোগ। ফলে সৃষ্টি হয়েছে এ বিশাল শাসক শ্রেণী। শত্রু শক্তির কাজ হয়েছে এ বিভক্ত মানচিত্রকে দীর্ঘ আয়ু দেয়া। আর এ কাজে বিপুল সংখ্যক মুসলিম পরিণত হয়েছে শত্রু শক্তির জোগালদারে।
দেয়ালের সিমেন্ট খুলে নিলে সে দেয়াল ধ্বসাতে শক্তি লাগে না। ঝড়ো বাতাসে বা বৃষ্টির পানিতেই তা ধ্বসে যায়। জাতীয় জীবনে তেমনই একটা অবস্থার সৃষ্টি হয় একতার অভাবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে “বুনিয়ানুন মারসুস” অর্থ সীসাঢালা দেয়াল বলেছেন। সে দেয়ালের সিমেন্ট হল, মুসলিম ভ্রাতৃত্ব। মুসলিম হওয়ার অর্থই হল, সে ভাতৃত্বের বন্ধনকে নিজ গলায় পড়িয়ে নেয়া। এটিই মুসলিম উম্মাহর সিমেন্ট। জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারিস্টগণ মুসলিম জীবন থেকে সে সিমেন্টই খুলে নিয়েছে। ফলে মুসলিম উম্মাহকে ৫৭টি টুকরোয় বিভক্ত করতে কোন হালাকু-চেঙ্গিজ, ক্লাইভ বা ক্রসেডারদের রক্তক্ষয়ী লড়াই লড়তে হয়নি। সে কাজটি নিজ খরচে করে দিয়েছে ভিতরের এ সেক্যুলারিস্ট শত্রুরা। খুনি বা ডাকাতেরা যেমন নিজেদের অতি জঘন্য অপরাধগুলি নিয়ে উৎসবও করে, তেমনি অবস্থা মুসলিম নামধারি এসব অপরাধীদের। অথচ পবিত্র কোরআনের কোন একটি আয়াত এবং নবীজী (সাঃ)র কোন একটি হাদীসও এমন পাওয়া যাবে যা মুসলিম উম্মাহর মাঝে বিভক্তি গড়াকে সমর্থণ করে? বরং নির্দেশ দেয়া হয়েছে, “আল্লাহর রশিকে শক্ত ভাবে আঁকড়ে ধরো, এবং পরস্পরে বিভক্ত হয়ো না।” অর্থাৎ ইসলামে বিধান হলো, একতা গড়া ফরজ এবং বিভক্তি গড়া হারাম। অথচ মুসলিম বিশ্বে ‘এ কোর’আনী নির্দেশের বিপরীতটি ঘটছে –এবং সেটি মুসলিমদের হাতে। ঐক্য গড়ার বদলে বিভক্ত ভূগোল গড়ার দিনগুলি মুসলিম দেশগুলিতে উৎসবের দিনে পরিণত হয়েছে।
একটি কাঁচের পাত্র ভাঙ্গলেও তা নিয়ে দুঃখ হয়। অথচ তার মূল্য কতটুকু? অথচ বৃহৎ ভূগোলের গুরুত্ব অপরিসীম। ভূগোলই নির্ধারণ করে বিশ্ববাসীর সামনে দেশবাসির ইজ্জত, গুরুত্ব ও শক্তি-সামর্থ্য। নির্ধারণ করে, দেশটি স্বাধীন দেশ রূপে আদৌ টিকে থাকবে কি না সে বিষয়টিও। ভূগোল যতই ছোট হতে থাকে ততই কমতে থাকে শক্তি-সামর্থ্য, স্বাধীনতা ও ইজ্জত। ভূগোলের গুরুত্ব এতোই অধিক যে এক ইঞ্চি ভূগোল বাড়াতে হলেও প্রচণ্ড যুদ্ধ লড়তে হয়। মানব জাতির ইতিহাস তো ভূগোল বাড়ানো বা কমানোর ইতিহাস। তাই যারা ইজ্জত নিয়ে বাঁচতে চায় তারা ভূগোল ছোট করায় নয়, মনযোগী হয় সেটি বাড়াতে। নবীজী (সাঃ) তাই রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী কন্সটান্টিনোপল দখলের নসিহত করে যান। কারণ, তিনি চাইতেন মুসলিমগণ বেড়ে উঠুক বিশ্বশক্তির মর্যাদা। উসমানিয়া খেলাফতের বিশাল ভূগোল গড়তে বহু লক্ষ মুসলিমের রক্ত ব্যয় হয়েছিল। সে রক্ত ব্যয়ে ৬-৭ শত বছর যাবত শুধু ইজ্জতই বাঁচেনি, লক্ষ লক্ষ মুসলিমের জীবনও বেঁচেছিল। এবং শত শত বছর ধরে বেঁচেছিল শতকোটি মুসলিমের স্বাধীনতা। কিন্তু সে ভূগোল না বাঁচায় আজ মুসলিমদের জীবন যেমন বাঁচছে না তেমনি স্বাধীনতা এবং ইজ্জতও বাঁচছে না। ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, লেবানন, বসনিয়া, চেচনিয়া, কসভো, লিবিয়া, আলজিরিয়ার ন্যায় দেশগুলি যে রক্তপাত -তা তো সে ভূগোল না বাঁচারই ফল। পৌত্তলিক হিন্দুরা একতার সে বল বুঝে, তাই ভারতের নানা ভাষাভাষি হিন্দুরা বিশাল ভূগোলের ভারতকে জন্ম দিয়েছে। অথচ ১৫০ কোটি মুসলিমগণ ভারতের সিকি ভাগ আয়োতনের একটি মুসলিম দেশেরও জন্ম দিতে পারিনি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ দরিদ্র জনগোষ্ঠির বসবাস ভারতে হলে কি হবে, সে বৃহৎ ভূগোলের বলেই ভারত আজ বিশ্বরাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। ১৯৪৭’য়ের পূর্বে ভারতের মুসলিমগণ তেমন একটি বৃহৎ ভূগোলের গুরুত্ব বুঝেছিল। ফলে বাঙালী, পাঞ্জাবী, বিহারী, গুজরাতী, সিন্ধি, পাঠান, বেলুচ ও নানা ভাষাভাষী মুসলিমগণ মিলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু সেটি ভারতের পৌত্তলিক কাফেরদের যেমন ভাল লাগেনি, তেমনি ভাল লাগেনি তাদের সেবাদাস শেখ মুজিব ও তার অনুসারি বাঙালী কাপালিকদের। ফলে তারা যৌথ ভাবে সে বৃহৎ ভূগোলের বিনাশে যুদ্ধ শুরু করে এবং ১৯৭১’য়ের ১৬ই ডিসেম্বর সে কাজে সফলও হয়।
যে রোগ গোপন থাকে না
কোন কিছুতে পচন ধরলে সেটি গোপন থাকে না। প্রকাশ পায় উৎকট দুর্গন্ধ থেকে। তেমনি ঈমানের পচনও গোপন থাকে না। কে মুসলিম আর কে অমুসলিম, কে ঈমানদার আর কে বেঈমান -সেটি তাই নানা ভাবে প্রকাশ পায়। ব্যক্তির ঈমান ও বেঈমানীর প্রকাশটি ঘটে ব্যক্তির কথাবার্তা, চালচলন, খাদ্য-পানীয়, ধর্মকর্ম, রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে। তবে সবচেয়ে বেশী ধরা পড়ে রাজনীতিতে। কারণ রাজনীতিতে মেরুকরণ শুরু হলে প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ মেরুতে গিয়ে হাজির হয় –লোহার গুড়া যেমন চম্বুকের দুইপ্রান্তে জড়ো হয়। রাজনীতিতে একেই বলে পোলারাইজেশন। এরূপ পোলারাইজেশনে কেউ তার চিন্তাচেতনার অতি কাছের লোকটিকে খুঁজে নিতে ভূল করে না। একাত্তরে তাই কদাচিৎ দুয়েকজন বাদে সকল বামপন্থি, সকল বাঙালী জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারিস্ট, সকল অমুসলিম দিল্লিমুখি হয়েছিল। দিল্লির কাফের শাসক চক্রই তাদের চেতনা ও দর্শনের অতি কাছের আত্মীয় মনে হয়েছিল। সে সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বহু ইসলামি দল ছিল, বহু লক্ষ ছিল তাদের সমর্থক ও কর্মী্। ছিল বহু হাজার মাদ্রাসা ও তার বহু লক্ষ ছাত্র ও শিক্ষক। কিন্তু তাদের কেউ কি ভারতের কোলে আশ্রয় নিয়েছিল? নেয়নি। কারণ ভারত তাদের কাছে শত্রু গণ্য হয়েছিল।
২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের পর একই রূপ পোলারাইজেশন শুরু হয়েছে সমগ্র মুসলিম দেশে। প্রতিটি মুসলিম দেশের নাগরিক এখন দ্বি-জাতিতে বিভক্ত; একটি ইসলামের পক্ষের, অপরটি বিপক্ষের। সেক্যুলারিস্টগণ সমবেত হয়েছে মার্কিনী শিবিরে। একাত্তরে বাংলাদেশে যারা ভারতমুখি হয়েছিল তারাই এখন মার্কিনমুখি। ভারত নিজেও এখন মার্কিনীদের পার্টনার। নবীজী (সাঃ)র আমলেও প্রচণ্ড মেরুকরণ হয়েছিল। সে মেরুকরণে মুনাফিকগণ মক্কার মুশরিক ও মদিনার ইহুদীদের সাথে গিয়ে মিশেছিল। মুনাফিকদের মুনাফেকি তাই ধরা পড়েছিল কবরে যাওয়ার আগেই। অথচ তারা বহুদিন ধরে বহু ওয়াক্ত নামায খোদ নবীজী(সাঃ)র পিছনে মসজিদে নববীতে পড়েছিল।
ইসলাম কবুলের কাজটি কখনোই গোপনে হয়না। মানব জীবনে এটিই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা। এ ঘোষণার মাধ্যমে ব্যক্তি জানিয়ে দেয়া হয় সে কোনপক্ষে লড়বে। ইসলাম কবুলের ঘোষণাটি জনসম্মুখে দেয়াটি শুধু ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নয, আইনগত বাধ্যবাধকতাও। রণাঙ্গণে প্রতিটি সৈনিককে তার নিজ নিজ পোষাক নিয়ে হাজির হতে হয় –নইলে কে শত্রুপক্ষের এবং কে নিজপক্ষের সেটি চেনা যাবে কেমনে? ঈমানদারকেও তেমনি রণাঙ্গণে নিজের ঈমানের ঘোষণা দিয়ে ময়দানে নামতে হয়। এ ঘোষনাটি না দিলে কে মুসলিম আর কে অমুসলিম -সেটি চেনা যাবে কীরূপে? অজানা ও অচেনা মানুষদের নিয়ে বিশুদ্ধ মুসলিম সমাজ, মুসলিম জামায়াত, মুসলিম রাষ্ট্র, মুসলিম আর্মিই বা গড়ে তোলা যাবে কি করে? মুসলিমদের উপর শরিয়তের প্রয়োগই বা হবে কীরূপে? সেনাবাহিনীর দায়িত্ব তো তার উপরই বর্তায় যে সেনাবাহিনীর সদস্য, সে দায়িত্ব পালনে অবহেলায় কোর্টমার্শালের বিধান তো রাস্তার লোকের উপর প্রয়োগ হতে পারে না। কারা সে বাহিনীর সদস্য -সে পরিচয়টি জানা তাই জরুরী। সে পরিচয়য়টি জানা শুধু জামায়াতে ইমাম নিয়োগের ক্ষেত্রেই জরুরী নয়, জরুরী হলো রাষ্ট্রের ইমাম বা আমির নির্বাচনের ক্ষেত্রেও্।
পবিত্র কোর’আনে মুসলিমদের বলা হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার দল তথা হিজবুল্লাহর সদস্য। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাস্তায় এবং আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ে। তাই মুসলিম হওয়ার অর্থ, অন্য ধর্ম, অন্য দল ও অন্য আদর্শ ছেড়ে তখন একমাত্র আল্লাহর দলে শামিল হওয়া। এবং আল্লাহর রাস্তায় আমৃত্যু লড়াইয়ে লেগে যাওয়া। তাই কোন অমুসলিম যখন মুসলিম হয় তখন ইসলাম কবুলের সে ঘোষণাটিকে জনসম্মুখে দেয়া বা নিজের নাম পবিবর্তনটিই একমাত্র শর্ত নয়, বরং শর্ত হলো সাবেক দলটি ত্যাগ করা এবং হিজবুল্লাহর সৈনিক রূপে নতুন দায়ভারটি কাঁধে নেয়া। সে দায়ভারটি হলো, প্রতিটি লড়াইয়ে ইসলামের পক্ষ নেয়া এবং শত্রুর বিনাশে নিজের জান, মাল ও শ্রমের বিনিয়োগ করা। ঈমানদারের জন্য এজন্যই অসম্ভব হয় ইসলামে অঙ্গিকারহীন তথা সেক্যুলার হ্ওয়া। এবং অসম্ভব হয় জাতীয়তাবাদী বা সমাজবাদী হওয়া। এবং অসম্ভব হয় সাম্রাজ্যবাদীদের বা পৌত্তলিক কাফেরদের বন্ধু হওয়া।
ভিতরের শত্রু
এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই –এ বিশেষ খেতাবটি মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া। এবং ঘোষিত হয়েছে সুরা হুজরাতে। ফলে যার মধ্যে শরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে সে কখনোই মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া এ খেতাবটির মর্যাদা রক্ষায় ভূল করে না। নইলে মর্যাদাহানী হয় মহান আল্লাহতায়ালার। সৈনিকেরা যেমন অন্য সৈনিকদের সাথে কাধে কাঁধ মিলিয়ে একই রণাঙ্গনে ও একই বাংকারে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করে, মুসলিমও তাই তার অপর মুসলিম ভাইয়ের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে। ইসলামের গৌরব কালে আরব, কুর্দি, তুর্কি, মুর –ইত্যাদি নানা বর্ণের মানুষ একত্রে লড়েছিল বলেই তো সেদিন মুসলিমদের হাতে বিজয়ের পর বিজয় এসেছিল। অপর দিকে পরাজয় বাড়িয়েছে অনৈক্য। লড়াইয়ের ময়দানে যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাই থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, সে মূলতঃ বিচ্ছিন্ন হয় ইসলাম থেকেও। যুদ্ধ বিগ্রহ তো এভাবেই সমাজের বুকে ফিল্টারের কাজ করে -যা বেঈমানদের থেকে ঈমানদারদের পৃথক করে। ওহুদের যুদ্ধে তো সেটাই হয়েছিল। একারণেই কারা ইসলামের পক্ষে এবং কারা বিপক্ষে -সেটি গোপন থাকা বা গোপন রাখার বিষয় নয়। মুসলিম রূপে বাঁচার জন্য অপরিহার্যতা হলো নিজের ঈমানদারীকে রাজনীতি, সংস্কৃতি ও যুদ্ধবিগ্রহের মধ্যে প্রকাশ করা। মুসলিম জীবনে তাই নিরপেক্ষ থাকার কোন হেতু নাই।
নবীজী(সাঃ)’র যুগে নিজেকে মুসলিম রূপে ঘোষণা দেয়ার বিপদটা ছিল অতি ভয়ানক। কাফেরগণ এমন ঘোষণাকারিকে শুধু ধর্মের জন্যই নয়, নিজেদের অস্তিত্বের বিরুদ্ধেও হুমকি ভাবতো, ফলে তার প্রাণ নিতে উদ্যত হতো। ফলে তার উপর নেমে আসতো সীমাহীন অত্যাচার। ইসলাম কবুলের ঘোষণা দেয়ার কারণে হযরত সুমাইয়া (রাঃ) ও তার স্বামী হযরত ইয়াসের (রাঃ)কে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিল। হযরত খাব্বাব (রাঃ)কে জলন্ত অঙ্গারের উপর শুইয়ে দেয়া হয়েছিল। প্রচণ্ড দুপুরে তপ্ত বালির উপর শুইয়ে দেয়া হতো হযরত বেলাল (রাঃ)কে। এমন অবর্ণনীয় বিপদ বহু সাহাবীর জীবনে নেমে এসেছিল। তিনটি বছর তাদেরকে অবরুদ্ধ থাকতে হয়েছে শেবে আবু তালেবে। নবীজী(সাঃ)’র জীবনে সে সময়টিই ছিল সবচেয়ে কঠিন কাল। খাদ্যের অভাবে তাদের গাছের পাতাও খেতে হয়েছে। এরূপ নির্যাতনও যখন তাদেরকে ইসলামের পথ থেকে ফিরাতে পারিনি। তখন খোদ নবীজী (সাঃ)সহ তাদের সবাইকে নির্মূলেরও চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু এত বিপদর পরও মুসলিমগণ তাদের ঈমান গোপন রাখেননি। তারা যে মুসলিম সেটির স্বাক্ষ্য দিয়েছেন নিজেদের কথা ও কর্মের মাধ্যমে। তাই সেদিন কে কাফের আর কে মুসলিম -সেটি গোপন থাকেনি। গোপন থাকেনি মুনাফিকদের পরিচয়ও। তাই ইসলামের শত্রুদের বেঈমানীটি জানার জন্য সে কালের মুসলিমদের কিয়ামত অবধি অপেক্ষা করতে হয়নি।
মলমুত্র বা দেহের বর্জ সর্বদেহে ছড়িয়ে পড়লে মৃত্যু অনিবার্য হয় । তাই বাঁচার স্বার্থে খাদ্য গ্রহণ যেমন জরুরী, তেমনি জরুরী হলো, বর্জ বা মলমুত্র পরিত্যাগ করাটিও। মুসলিম সমাজে সে ক্ষতিকর বর্জ হলো মুনাফিকগণ। আজকের সংকটের মূল কারণ হলো এরা। নবীজী (সাঃ) ও সাহাবাদের যুগে মুসলিম সমাজ থেকে সে বর্জগুলি নিয়মিত পরিত্যক্ত হয়েছিল বলেই মুসলিম সমাজ সুস্বাস্থ্য পেয়েছিল এবং সম্ভব হয়েছিল সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার নির্মান। কিন্তু আজকের সমস্যটি হলো, বিপুল বর্জ জমেছে মুসলিম দেহে। ফলে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা রুখা বা ইসলামের বিজয় প্রতিহত করাই যাদের ঘোষিত রাজনীতি –এমন শত্রুগণও মুসলিম দেশে নেতা নির্বাচিত হয়। এভাবেই শত্রুর হাতে অধিকৃত হয় মুসলিম দেশ। ইসলামের পরাজয়ে তখন কি প্রয়োজন পড়ে বাইরের শক্তির? চিহ্নিত বিদেশী কাফের শত্রুদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে মুসলিম নামধারী এসব দেশী শত্রুগণ।
নায়ক সবচেয়ে বড় অপরাধের
বিগত ১৪শত বছরে ইতিহাসে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় বড় ক্ষতিগুলি হয়েছে বিগত একশত বছরে। এই একশত বছরেই মুসলিম ভূখন্ড সবচেয়ে বেশী খণ্ডিত হয়েছে এবং সবচেয়ে বেশী রক্তাত্ব হয়েছে। সে সাথে শক্তিহীনও হয়েছে। বিলুপ্ত হয়েছে মুসলিমদের সিভিলাইজেশনাল স্টেট। বাংলার মাটিতে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজীর হাতে মুসলিমদের প্রথম বিজয় এসেছিল ১২০২ সালে। কিন্তু এ বাঙলায় বিগত ৮০০ বছরে নানা যুদ্ধ বিগ্রহে মুসলিমদের যত রক্ত ঝরেছে তার বহু গুণ বেশী রক্ত ঝরেছে একমাত্র একাত্তরে। তেমনি কাশ্মিরে বিগত ৮০০ বছরেও কোন কালেই এত রক্তপাত ঘটেনি যা ঝরেছে বিগত ৭০ বছরে। এক লক্ষ কাশ্মিরীকে হত্যা করা হয়েছে। একই রূপ অবস্থা ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, আলজিরিয়াসহ প্রতিটি মুসলিম দেশে।
এসব রক্তপাতের জন্য যতটা বিদেশী ও বিধর্মীরা দায়ী -তার চেয়ে বেশী দায়ী মুসলিম নামধারী জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারিষ্টগণ। ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে আধুনিক কালে সবচেয়ে বড় অপরাধগুলি ঘটেছে তাদের হাতেই। অন্যরা মুসলিমদের সম্পদ লুন্ঠন করছে, আর এরা লুন্ঠন করেছে ঈমান। ফলে সহজ করেছে জাহান্নামের পথে চলা। তাদের কারণে মুসলিমগণ যে হিন্দু, খৃষ্টান বা অন্য কোন ধর্মে দীক্ষা নিয়েছে -তা নয়। বরং তারা মুসলিম চেতনা থেকে ইসলামের মৌল বিশ্বাসকেই হঠিয়ে দিয়েছে। ইংরাজীতে একে্ই বলা হয় ডি-ইসলামাইজেশন। এর অর্থঃ ইসলাম থেকে দূরে সরা তথা চেতনাকে ইসলামশূণ্য করা। সেটি যেমন ইসলামের মৌল বিশ্বাস থেকে দূরে সরা, তেমনি ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের মিশন থেকে দূরে সরা। এরূপ দূরে সরার কারণে ইসলামের বিপক্ষ শক্তির পক্ষে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে নেওয়ায় কাজটি অতি সহজ হয়ে গেছে। ফলে মুসলিমগণ পরিণত হয়েছে নিজ দেশের পরাধীন নাগরিকে। এবং ইসলামের মূল মিশন মুসলিমদের কাছেই অপরিচিত রয়ে গেছে। মুসলিম জীবনে এর চেয়ে ভয়ানক বিপদ আর কি হতে পারে? ২৮/১১/২০২০।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- ভারতীয় ষড়যন্ত্র রুখতে হবে
- সম্প্রতি বাংলাদেশে যা দেখলাম
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018