সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও সাংস্কৃতিক কনভার্শন
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on October 22, 2020
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
সভ্যতার সংঘাত ও সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিং
ইঞ্জিনিয়ারিং শব্দটি এতকাল ব্যবহৃত হয়েছে প্রকৌশল-বিজ্ঞান বুঝাতে। গৃহউন্নয়ন,কলকারখানা¸ রাস্তাঘাট, ব্রিজ, অস্ত্র, যন্ত্র, যানবাহন, কম্পিউটার, স্পেসসায়েন্স ইত্যাদীর উন্নয়নের ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যার অবদান অপরিসীম। যান্ত্রিক সভ্যতার বিস্ময়কর উন্নয়নের মূলে বস্তুতঃ এই ইঞ্জিনিয়ারিং। এক্ষেত্রে অগ্রগতির ফলে বিগত একশত বছরে বিজ্ঞান যতটা সামনে এগিয়েছে তা মানব ইতিহাসের বিগত বহু হাজার বছরেও এগুয়নি। সবচেয়ে দ্রুত এগিয়েছে বিগত ৫০ বছরে। বলা যায়, পৃথিবীতে যত বিজ্ঞানী আজ জীবিত আছে, ইতিহাসের সমগ্র বাঁকি সময়ে হয়তো তার সিকি ভাগও জন্ম নেয়নি। তবে যান্ত্রিক উন্নয়ন বিস্ময়কর গতিতে ঘটলেও চেতনা, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি ও বাঁচবার রুচিবোধে মানুষ সামান্যই সামনে এগিয়েছে। অর্থাৎ মানবিক ও সামাজিক উন্নয়ন সে হারে হয়নি। বরং শঠতা, শোষণ, উলঙ্গতা, অশ্লিলতা, সন্ত্রাস, আগ্রাসন, জাতিভেদ ও বর্ণভেদের ন্যায় বহু অসভ্যতা বেঁচে আছে তার আদিম কদর্যতা নিয়ে।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের সীমা-সরহাদ নেই। আলোবাতাসের ন্যায় জ্ঞান-বিজ্ঞানও উদার। ফলে যে দেশে ও যে নগরে বিজ্ঞানের আগমন ঘটে সেখানে একই রূপ সুফল বয়ে আনে। পৃথিবী জুড়ে যান্ত্রিক উন্নয়নে এভাবেই মিল সৃষ্টি হয়। ফলে সব দেশের মটরগাড়ি, রেলগাড়ি, উড়ো জাহাজ ও ডুবো জাহাজ একই ভাবে নির্মিত হয় এবং চিকিৎসা পদ্ধতি, গৃহনির্মান ও সড়ক নির্মাণ পদ্ধতিও একই ধারায় চলে। কিন্তু সে মিলটি মানুষের ধর্ম, চিন্তা-চেতনা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে হয়নি। বরং চিন্তা-চেতনা, ধর্ম ও সংস্কৃতির মানচিত্রটি নানা জনে ও নানা জনপদে ভিন্ন ভিন্ন। পাশ্চাত্যের একজন বিজ্ঞানী যেরূপ মদ্যশালায় গিয়ে মদ পান করে বা হিন্দু বিজ্ঞানী যেরূপ শাপশকুন ও মুর্তিকে পুজা দেয়, কোন মুসলিম বিজ্ঞানী সেটি করেনা। ধর্ম, রুচিবোধ ও সংস্কৃতি নিয়ে তাদের ধারণাগুলিও ভিন্ন। আর সে ভিন্নতা থেকেই জন্ম নেয় পরস্পরে ঘৃনা এবং ঘৃনা থেকে শুরু হয় সংঘাত। সে ঘৃনা থেকেই মসজিদ, মসজিদের আযান বা মুসলিম রমনীর হিজাবের ন্যায় মুসলিম সংস্কৃতির বহু কিছুই পাশ্চাত্যের বহু দেশে অসহনীয় হয়ে পড়েছে। সে অসহনীয় চেতনার কারণেই পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে মসজিদের আযান মসজিদের বাইরে আসতে দেয়া হয়না এবং দণ্ডনীয় অপরাধ রূপে ঘোষিত হয় মুসলিম মহিলার হিজাব। ফ্রান্সের ন্যায় পাশ্চাত্য সভ্যতার কেন্দ্রভূমিতে তো সেটিই হয়েছে।
একটি দেশের জনগণ কি ধরণের আইন-আদালতকে গ্রহন করবে -সেটি তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তখন প্রকাশ পায় দেশটির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। নামায-রোযা,হজ-যাকাতের ন্যায় শরিয়ত প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে প্রতিটি মুসলিম দায়বদ্ধ মহান আল্লাহর কাছে। এখানে কোন বিদ্রোহ বা অবাধ্যতা চলে না। অথচ সে অধিকার মুসলিম নাগরিকদের দেয়া হচ্ছে না। শরিয়তের প্রতিষ্ঠা রুখতে আফগানিস্তানের ন্যায় মুসলিম দেশ অধিকৃত হয়েছে, মুসলিম ভূমিতে লাগাতর ড্রোন হামলাও হচ্ছে। এরূপ হামলা কোন একটি বিশেষ দেশে সীমিত নয়, বরং হামলা হচ্ছে বহু মুসলিম দেশের বহু জনপদে। বলা যায়, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে নতুন কৌশল নিয়ে। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ৫ বছরের বেশী স্থায়ী হয়নি। কিন্তু মুসলমানদের বিরুদ্ধে শুরু করা যুদ্ধটির বয়স বিশ বছরের বেশী হলেও শেষ হওয়ার নাম নিচ্ছে না। মার্কিন প্রফেসর হান্টিংটন এটিকে বলেছেন “ক্লাশ অব সিভিলাইজেশন” তথা সভ্যতার লড়াই। এ সংঘাতে প্রফেসর হান্টিংটন দুটি প্রধান প্রতিদ্বন্দি পক্ষকে সনাক্ত করেছেন,একটি পাশ্চাত্য সভ্যতা এবং অপরটি ইসলামের পক্ষের শক্তি। সভ্যতার সে লড়াইটি শুধু যে সামরিক তা নয়, বরং লাগাতর লড়াইটি হচ্ছে সাংস্কৃতিক ময়দানেও। মুসলিম উম্মাহর ঈমান ও কোমর ভাঙ্গার এ কাজটি চলছে কোনরূপ গোলাবারুদ ছাড়াই। এ যুদ্ধে মূল হাতিয়ার হলো সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিং। এবং লক্ষ্য হলো কালচারাল কনভার্শন।
প্রত্যেকেই কোন না কোন ভাবে বেঁচে থাকে ও জীবন কাটায়; বেঁচে থাকার সে প্রক্রিয়াটি হলো তার সংস্কৃতি। সবাই একই ভাবে বাঁচে না, জীবনও কাটায় না। ফলে সবার সংস্কৃতিও এক নয়। সমাজ পাল্টাতে হলে সে সংস্কৃতিও পাল্টাতে হয়। এখানে পরিবর্তনটি শুরু হয় চেতনা থেকে। ধর্ম,দর্শন ও নীতিবাক্য এখানে ইঞ্জিনের কাজ করে। সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে দর্শন ও ধর্মের ভূমিকা তাই চুড়ান্ত। প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষ যেরূপ জীবজন্তুর সাথে উলঙ্গ ভাবে বনে বাসে করে তার কারণ, সেখানে কোন ধর্ম বা দর্শন কাজ করেনি। তাই ধর্ম ও দর্শন বই-পুস্তক,মসজিদ-মাদ্রাসা ও ক্লাসরুমে সীমিত থাকলে উচ্চতর সমাজ বা সভ্যতা নির্মিত হয় না। সেগুলির প্রকাশ ঘটাতে হয় মানুষের চেতনা-চরিত্র, মূল্যবোধ, পোষাক-পরিচ্ছদ, সামাজিকতা, রুচি, আচরণ ও কর্মের মধ্যে। তখন ঘটে সাংস্কৃতিক কনভার্শন এবং সেটিকে বেগমান করতেই প্রয়োজন পড়ে সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তথা প্রকৌশলি পরিকল্পনার।
ইসলামি সভ্যতার নির্মান ও গুরুত্ব সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের
ইসলাম মানবিক উন্নয়ন চায়, সে উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বিশ্বজনীন সভ্যতার নির্মান চায়। চায়, ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের উপর ইসলামী বিধানের পূর্ণ বিজয়। এটিই ইসলামের ভিশন; সে সাথে মুসলিমের। ফলে নামায-রোযা,হজ-যাকাতের বাইরেও ইসলাম নিজ সংস্কৃতির প্রসার ও প্রতিষ্ঠা চায়। সংস্কৃতির দুটি ধারা,একটি আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের, অপরটি বিদ্রোহের। সন্ত্রাসী, মদ্যপায়ী, ব্যাভিচারি ও পতিতার সংস্কৃতিতে যেটি প্রকাশ পায় সেটি আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের চেতনা। অথচ মুসলিম সংস্কৃতির মূলে কাজ করে ইবাদতের স্পিরিট। ইবাদতের বিধানটি কাজ করে আল্লাহর অনুগত সুশৃঙ্খল মানুষ গড়ার হাতিয়ার রূপে। ফলে এ সংস্কৃতিতে আসে পবিত্রতা। ইসলামের লক্ষ্য তাই শুধু ধর্মান্তর নয়, সাংস্কৃতিক কনভার্শনও। যে কোন সভ্যতার নির্মানে অপরিহার্য হলো এই সাংস্কৃতিক কনভার্শন। সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিষয়টি তাই শুধু পাশ্চাত্যে বিষয় নয়, ইসলামেরও। বরং পরিকল্পিত সমাজ বিপ্লবের লক্ষ্যে সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সবচেয়ে বেশী প্রস্তুতি,ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামো হলো ইসলামের। ইসলামের ইবাদত তাই শুধু ব্যক্তি-জীবনে সীমিত নয়, বরং ইবাদতকে সর্বব্যাপী করার লক্ষ্যে অপরিহার্য গণ্য হয় সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক অবকাঠামো। আল্লাহর খলিফা রূপে প্রতিটি মুসলমানের নিয়োগপ্রাপ্তি, মহল্লায় মহল্লায় মসজিদ নির্মান, ইসলামি রাষ্ট্র-নির্মান ও হজ-ওমরাহর বিধান তো সে বিশাল অবকাঠামো। ব্রিজ, রাস্তাঘাট ও সামরিক স্থাপনার ন্যায় মুসলিম রাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক অবকাঠামোও প্রতিরক্ষা চায়, সে সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই জিহাদ হলো আল্লাহর নির্দেশিত পবিত্র ইন্সটিউশন। তাই যে সমাজে জিহাদ নেই সে সমাজে ইসলামি শরিয়ত যেমন বাঁচে না,তেমনি বাঁচে না ইসলামি সংস্কৃতিও।
সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কাজে নেতৃত্বের দায়িত্ব যেমন আল্লাহর পবিত্র ঘর মসজিদের, তেমনি গুরু দায়িত্ব হলো ইসলামি রাষ্ট্রের। তাই নামায সংঘটিত করাই মসজিদের মূল কাজ নয়, লক্ষ্য এখানে নামাযীদের সাস্কৃতিক কনভার্শনও। তেমনি রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলের কাজও শুধু রাস্তাঘাট গড়া বা অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়। বরং সেটি হলো পরিপূর্ণ ইসলামি সভ্যতার নির্মান। আল্লাহর ভিশন এখানে সরকারের ভিশন হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত সে ভিশনটি হলো “লি ইউযহিরাহু আলা দ্বীনে কুল্লিহি” অর্থাৎ পৃথিবীর সকল ধর্ম ও মতাদর্শের উপর ইসলামের বিজয়ের। ইসলামে এজন্যই সার্বভৌম শাসকের কোন ধারণা নেই, বরং যে ধারণাটি আছে সেটি হলো খেলাফতের তথা মহান আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের। ব্যক্তি, মসজিদ ও রাষ্ট্র সবই এখানে মহান আল্লাহতায়ালার পবিত্র ভিশন নিয়ে একাকার হয়ে কাজ করে। গ্রামের দরিদ্র ঈমানদার ব্যক্তিটির ভিশন আর রাষ্ট্রের শক্তিধর শাসকের ভিশনে কোন পার্থক্য নাই। সবাই এখানে একই রণাঙ্গনে এক ও অভিন্ন ভিশন নিয়ে জিহাদ লড়ে।
মুসলিম রাষ্ট্র ও সংস্কৃতি
মুসলিম হওয়ার অর্থটি বিশাল। এটি শুধু কালেমা পাঠ, নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত পালন নয়। এতে ব্যক্তির বাঁচা-মরা ও জীবনযাত্রার লক্ষ্যই পাল্টে যায়। তাকে বাঁচতে হয় সভ্যতা নির্মাণের দায়ভার কাঁধে নিয়ে। সে পবিত্র মিশনে আমৃত্যু জড়িত থাকাটিই মু’মিনের সংস্কৃতি। মুসলিম সমাজে তাই নীরব বা নিষ্ক্রীয় ব্যক্তির কোন স্থান নেই। সবাইকে এখানে অবিরাম সক্রিয় হতে হয়। এমন এক সর্বাত্মক অংশগ্রহণের কারণেই উচ্চতর সভ্যতার নির্মাণে সমগ্র মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী সফলতা দেখিয়েছে ইসলাম। মানবতার কথা, নারীপুরুষের সমতার কথা, শোষনমুক্ত সমাজ নির্মাণের কথা, ইনসাফের কথা, দাসমূক্তির কথা এবং ধনীদরিদ্রের পার্থক্য দূরীকরণের কথা –এ সব বড় বড় কথা অতীতে বহু ব্যক্তি, বহু ধর্ম ও বহু মতবাদ নানা ভাবে বলেছে। কিন্তু একমাত্র ইসলামই সেগুলি বাস্তবে পরিণত করেছে। ইসলাম দাসমূক্তিকে শ্রেষ্ঠ ধর্মকর্মে পরিণত হয়েছে। সমতার বিধান? রাষ্ট্রের খলিফা আটার বস্তা নিজের কাঁধে তুলে অন্নহীনের ঘরে পৌছে দিয়েছেন এবং চাকরকে উঠের পিঠে চড়িয়ে নিজে উঠের রশি ধরে টেনেছেন। ইসলামের এ বিস্ময়কর সফলতার কারণ, ইসলাম শুধু ধর্মে পরিবর্তন আনে না, সাংস্কৃতিক কনভার্শনও আনে। আমূল বিপ্লব আনে বাঁচার সংস্কৃতিতে। ইসলামি রাষ্ট্র ও সভ্যতার মূল শক্তি তো এখানেই। কিন্তু বাংলাদেশের ন্যায় যেসব দেশে ইসলামি রাষ্ট্র ও সভ্যতা নির্মিত হয়নি সেখানে দোষটি ইসলামের নয়। বরং এখানে প্রচণ্ড অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে সাংস্কৃতিক কনভার্শনে। এসব দেশের মানুষ নামায-রোযা, হজ-যাকাতের বিধানকে কবুল করলেও তারা ইসলামের সংস্কৃতিকে কবুল করেনি। বরং মানুষ বেড়ে উঠেছে জাহেলী যুগের দুর্বৃত্তি, সন্ত্রাস, ব্যভিচার ও মিথ্যাচার নিয়ে। ইসলামী সংস্কৃতি নিয়ে বেড়ে উঠার ব্যর্থতার কারণেই বাংলাদেশ দুর্বৃত্তিতে বিশ্বের দুই শতটির বেশী রাষ্ট্রকে ৫ বার হারিয়েও দিয়েছে। এটি কি কম বীভৎসতা! জাহিলী যুগের আরবগণ কি এর চেয়েও নীচে ছিল? এ বীভৎস ব্যর্থতা থেকে আজ হাজারো ব্যর্থতা গজিয়েছে। এরূপ ব্যর্থতার আযাব ভয়ানক। তখন সভ্যতর সমাজ গড়ে উঠার বদলে দীর্ঘায়ু পায় ফ্যাসিবাদী দুর্বৃত্ত দুঃশাসন।
ইসলাম-কবুলের অর্থ ব্যক্তির অন্তরে কোরআনী জ্ঞানের বীজ-রোপন। আর সংস্কৃতি হলো, সে বীজ থেকে পত্র-পল্লব, ফুল ও ফলে সুশোভিত বিশাল এক বৃক্ষ। বিশাল বৃক্ষের বেড়ে উঠাকে নিশ্চিত করতে যেমন লাগাতর পরিচর্যা চাই, তেমনি সাংস্কৃতিক কনভার্শনের জন্যও চাই লাগাতর সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিং। মুসলিম রাষ্ট্র ও মসজিদ-মাদ্রাসার বড় দায়িত্ব হলো সে সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিংকে নিশ্চিত করা। কোন মুসলিম দেশে মসজিদ-মাদ্রাসার সংখ্যা বাড়লো অথচ জনগণের বাঁচার প্রক্রিয়ায় কোন ইসলামী বিপ্লব এলো না -তখন বুঝতে হবে সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে এ প্রতিষ্ঠানগুলি বিকল।
প্রতিটি পাশ্চাত্য দেশের নাগরিকই একটি সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি নিয়ে বাঁচে। সে মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি যত অকল্যানকর বা অশ্লিলই হোক -তা বাঁচিয়ে রাখতে বহু লক্ষ মদ্যশালা, নৃত্যশালা, ক্লাব,ক্যাসিনো, পতিতাপল্লি সেখানে কাজ করছে। সেগুলির পাশে কাজ হাজার হাজার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, অসংখ্য পত্র-পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল। সে পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকেই তারা বিশ্বময় করতে চায়। কারণ তাদের বাঁচাটি এখন আর শুধু নিজ দেশে সীমিত নয়। তাদের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমরনীতির কোন সীমান-সরহাদ নাই। সেটি বিশ্বব্যাপী। সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজনে অন্যদেশে তাদের বছরের পর বছর কাটাতে হয়। আফগানিস্তান ও ইরাকে লক্ষাধিক মার্কিনী ও ইউরোপীয়রা অবস্থান নিয়ে আছে দশ বছরেরও বেশী কাল ধরে। মাছ যেমন পানি ছাড়া বাঁচে না, মানুষ তো তেমন নিজ সংস্কৃতি ছাড়া বাঁচে না। তারা যেখানে যায় সেখানে শুধু পানাহার চায় না, মদ, জুয়া, ব্যাভিচার, সমকামিতার ন্যায় আরো বহু কিছু চায়। তাই মুসলিম দেশে তাদের বাঁচাটি দুরুহ ও অসহনীয় হয়ে পড়েছে। মুসলিম দেশের সংস্কৃতিকে তাদের নিজেদের জন্য সহনীয় করতে তার মুসলিম দেশগুলিত নিজ সংস্কৃতির প্রসারে তারা সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিং নেমেছে। মুসলমানদের ধর্মান্তর না ঘটাতে পারলেও তারা চায় তাদের কালচারাল কনভার্শন। সে কাজে হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করছে জাতিসংঘকে। জাতিসংঘ ব্যক্তি-স্বাধীনতা, নারী-স্বাধীনতা, পেশার স্বাধীনতার নামে একটি বিধিমালা তৈরী করেছে। সে বিধামালায় সমকামিতার ন্যায় ভয়ানক পাপকর্ম যেমন অন্যায় ও অবৈধ নয়, তেমনি অবৈধ নয় ব্যভিচারও। পতিতাদেরকে বলছে সেক্স ওয়ার্কার। মদ্যপান, জুয়াও তাদের কাছে কোন অপরাধ-কর্ম নয়। মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির এই যে পাশ্চাত্যের সংজ্ঞা, সেটিকে তারা অন্যদেশের উপর চাপিয়ে দিতে চায়। না মানলে সে অবাধ্য রাষ্ট্রটিকে মৌলবাদী রূপে চিত্রিত করছে। সে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন করতে অবরোধ আরোপ করছে। কোথাও কোথাও ড্রোন হামলাও হচ্ছে। সে সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অংশ রূপে বাংলাদেশের মহিলাদের যেমন রাস্তায় মাটি কাটা বা গাছ পাহারায় নিয়োজিত করছে,তেমনি আফগানিস্তানের পর্দানশিন মহিলাদের বেপর্দা করে তাদের নাচ-গান শেখাচ্ছে ও হাতে হারমনিয়াম তুলে দিচ্ছে।
বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশে ইসলামের অগ্রগতি শুধু ধর্মান্তরে সীমিত রয়ে গেছে। সাংস্কৃতিক কনভার্শনের কাজ সফল ভাবে হয়নি। ফলে ইসলামের সভ্যতার নির্মানে অংশ নেয়াটি জনগণের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়নি। বরং অপরিচিত রয়ে গেছে নবীজী(সাঃ)র ইসলাম। নবীজী (সাঃ)র ইসলাম –যাতে রয়েছে ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মান, শরিয়তের প্রতিষ্টা ও জিহাদ, তাদের অনেকের কাছেই সেটি জঙ্গি ইসলাম মনে হয়। ফলে আরব, ইরান, তুরস্ক ও আফগানিস্তানের জনগণের ইসলাম কবুলের সাথে সাথে সেসব দেশে ইসলাম যেভাবে বিশ্বশক্তি ও সভ্যতা রূপে আবির্ভুত হয়েছিল সেটি বাংলাদেশে হয়নি। এদেশে অমুসলিমদের মাঝে ইসলামের প্রসার যেমন থেমে গেছে, তেমনি থেমে গেছে ইসলামের সাংস্কৃতিক কনভার্শনও। বরং স্রোত উল্টো দিকে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। হিন্দু বা খৃষ্টান ধর্মে দীক্ষিত না হলেও বাঙালী মুসলিমগণ দীক্ষা নিচ্ছে অনৈসলামিক ধ্যান-ধারণা ও সংস্কৃতিতে। সোসাল ইঞ্জিনীয়ারীংয়ের নানাবিধ প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হচ্ছে ইসলাম থেকে মুসলিমদের দূরে সরানোর কাজে। দূরে সরানোর কাজটি যে কতটা সফলতা পাচ্ছে তার প্রমাণ, মঙ্গলপ্রদীপ ও জীবযন্তুর মুর্তি নিয়ে মিছিল হচ্ছে, মুসলিম মহিলারা সিঁধুর লাগাচ্ছে এবং প্রবলতর হচ্ছে অশ্লিলতা। বাড়ছে ব্যভিচার ও ধর্ষণ। হিন্দু সংস্কৃতি থেকে মুসলমানদের যে ভিন্নতা ছিল সেটি দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে।
শত্রুপক্ষের নতুন স্ট্রাটেজী
মুসলমানদের খৃষ্টান,ইহুদী বা হিন্দু বানানো এখন আর শত্রু পক্ষের মূল এজেন্ডা নয়, এজেন্ডা হলো সাংস্কৃতিক কনভার্শন। স্ট্রাটেজী নিয়েছে ইসলাম থেকে দূরে সরাতে। মুসলিম দেশগুলিতে আজকের প্রচারকগণ গীর্জার পাদ্রী নন,সবাই খৃষ্টানও নন। এসব প্রচারকদের অনেকে যেমন স্বদেশী,তেমনি মুসলমান-নামধারীও। ধর্মের প্রচারকও না হলেও তারা একটি মতের প্রচারক। সে মতবাদটি সেক্যুলারিজম। তারা আল্লাহ-রাসূল বা মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাসে সরাসরি হামলা করে না। তাদের লড়াইটি সংস্কৃতির ময়দানে। সংস্কৃতি শুধু গান-বাজনা,পোষাক-পরিচ্ছদ বা সাহিত্য নয়, বরং মানুষ যে ভাবে বাঁচে এবং যে রুচি ও মূল্যবোধ নিয়ে বেড়ে উঠে সেটি। জীবন-ধারণের সে প্রক্রিয়ায় তথা সংস্কৃতিতে এতকাল যা প্রভাব রেখেছে তা হলো ধর্ম। তাই ধর্ম পাল্টে গেলে সংস্কৃতিও পাল্টে যায়। আরবের মানুষ যখন ইসলাম কবুল করে তখন তাদের গায়ের রং, দেহের গড়ন বা ভাষা পাল্টে যায়নি। পাল্টে যায় তাদের সংস্কৃতি। ইসলামের পূর্বে মদ্যপান, উলঙ্গ নাচগান ও ব্যাভিচার না হলে তাদের উৎসব হতো না। সে সংস্কৃতিতে পথিককে লুন্ঠন করা,কণ্যা সন্তানকে দাফন করা,মানুষকে ক্রীতদাস বানানো এবং পশুর ন্যায় মানুষকে হাটে তোলা গর্হিত কর্ম গণ্য হত না। বরং এসব ছিল আবহমান আরব সংস্কৃতি।
ঈমান ব্যক্তির অন্তরের বিষয়; সেটি চোখে দেখা যায় না। তবে ঈমান ধরা পড়ে তার বাইরের রূপে। ধরা পড়ে তার কর্ম ও সংস্কৃতিতে। জ্ঞানবান হওয়ার মধ্য দিয়ে যেমন সেটির শুরু, তেমনি লাগাতর ইবাদতের মধ্য দিয়ে সে সংস্কৃতির পরিশুদ্ধি। তাই যার জীবনে ঈমান ও ইবাদত নাই, তার জীবনে উচ্চতর সংস্কৃতিও নাই্। সমাজ ও সংস্কৃতিতে এভাবেই ইসলাম আনে পরিশুদ্ধি। এটাই হলো ইসলামের সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিং। পরিকল্পিত ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়া কোন সুন্দর গৃহ বা শহর গড়ে উঠে না। আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বদৌলতেই দুর্গন্ধময় বস্তি থেকে সুশ্রী নগর নির্মিত হয়। তেমনি সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়া সুন্দর ও সভ্যতর সমাজ গড়ে উঠে না। ইসলামে কালচারাল কনভার্শন এজন্যই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ধর্মান্তরের মধ্যে ইসলামের প্রচার সীমিত থাকলে তাতে ইসলামী সমাজ,রাষ্ট্র ও সভ্যতার নির্মাণ ঘটে না। ইসলামের প্রচার বহুদেশে হয়েছে, কোটি কোটি মানুষ ইসলাম কবুলও করেছে। কিন্তু সবদেশে সবার সাংস্কৃতিক কনভার্শনটি ঠিক মত হয়নি। ইসলাম কবুলের পরও যদি বেপর্দা ভাবে চলে, ইবাদতে আগ্রহী নয় বা ইসলামে অঙ্গিকারশূণ্য ব্যক্তিকে ভোট দেয় -তখন বুঝতে হবে ইসলাম কবুল করলেও তার সাংস্কৃতিক কনভার্শনটি হয়নি। সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে সে ব্যক্তি হিন্দু বা অমুসলিমই রয়ে গেছে। বাংলাদেশসহ বহু মুসলিম দেশে সে সমস্যাটি প্রকট। বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার হয়েছে প্রধানতঃ সুফিদের দ্বারা। নবীজী (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরাম যে ইসলাম পেশ করেছিলেন এসব সুফিগণ সে ইসলাম দেখেননি। সে ইসলামের জ্ঞানলাভ যেমন ঘটেনি, তেমনি সে ইসলামের পূর্ণ প্রকাশও তাদের জীবন ঘটেনি। তারা বেড়ে উঠেছেন পীরের খানকায়, কোন ইসলামি রাষ্ট্রে নয়। ফলে অপূর্ণাঙ্গতা রয়ে গেছে তাদের বেড়ে উঠায়। তাদের জীবনে ইসলামের জিহাদ এবং রাজনীতি যেমন ছিল না, তেমনি ইসলামের সংস্কৃতিও পুরাপুরি ছিল না। সুফি, তরিকত, সিলসিলা, ওরশ, খানকাহ ইত্যাদি নানা শব্দ তারা আবিস্কার করেছেন যার উল্লেখ পবিত্র কোর’আনে নাই। ফলে তাদের হাতে যেসব হিন্দু বা অমুসলিম ইসলাম কবুল করে তারা ইসলামের সংস্কৃতির পূর্ণ পরিচয় পায়নি। অথচ ইসলাম কবুলের অর্থ পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ। কোরআনে নির্দেশ এসেছে,“উদখুলু ফি সিলমে কা’ফ্ফা” অর্থঃ “তোমরা ইসলামে পুরিপুরি প্রবেশ করো”।অর্থাৎ ইবাদত-বন্দেগী, অর্থনীতি, সংস্কৃতি বা রাজনীতির কোন অংশকেই ইসলামের বাইরে রাখা যাবে না।
জোয়ার সেক্যুলার সংস্কৃতির
পাশ্চাত্য সভ্যতায় সংস্কৃতির যে জোয়ার সেটি মূলতঃ সেক্যুলার সংস্কৃতির। খৃষ্টান ধর্ম বা অন্য কোন ধর্ম নিয়ে তারা বেঁচে নাই, বেঁচে আছে এ সেক্যুলার সংস্কৃতি নিয়ে। পাশ্চাত্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রভাব হারিয়েছে অনেক আগেই। এখানে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে নানা উপাদান নিয়ে। তাতে যেমন প্রাগ-খৃষ্টান যুগের ইউরোপীয় প্যাগানিজম আছে, তেমনি আছে গ্রীক ও রোমান সভ্যতার সংস্কৃতি, তেমনি খৃষ্টানধর্মের কিছু প্রভাবও আছে। তবে এখানে মূল সুরটি সেক্যুলারিজমের তথা ইহজাগতিক সুখসম্ভোগের। ইংরাজীতে যাকে বলা হয় হেডোনিজম। সে সুখ সম্ভোগের তাগিদে পাশ্চাত্য শুধু মদ্যপান,অশ্লিলতা ও উলঙ্গতাকে হালাল করে নেয়নি, জায়েজ করে নিয়েছে সমকামিতার ন্যায় আদিম অসভ্যতাকেও। হিন্দু ধর্মের কোন শরিয়ত বা আইনী বিধান নেয়, ফলে এ ধর্মটিও বেঁচে আছে আবহমান এক সনাতন সংস্কৃতি নিয়ে। সাংস্কৃতিক সে আচার এবং ধর্মীয় আচার এখানে একাকার হয়ে গেছে, উভয়ে মিলে হিন্দু সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে। তেমনি খৃষ্টান ধর্মেও হালাল-হারামের কোন বিধান নেই। এটিও বেঁচে আছে এক সাংস্কৃতিক আচার রূপে। পাশ্চাত্য চায় সে সংস্কৃতির পৃথিবীব্যাপী প্রতিষ্ঠা। সে লক্ষ্যে তারা দেশে দেশে সাংস্কৃতিক কনভার্শনে মনযোগ দিয়েছে। এবং চালাচ্ছে সোসাল ইঞ্জিনীয়ারীং। মুসলিম দেশগুলিতে পাশ্চাত্যের অর্থে প্রতিপালীত হাজার হাজার এনজিও কাজ করছে বস্তুত সে লক্ষ্যে।
শুরুতে মুসলিম দেশগুলিতে ঔপনিবেশিক খৃষ্টানদের লক্ষ্য শুধু লুণ্ঠন ছিল না। রাজনৈতিক প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার সাথে খৃষ্টান ধর্মের প্রচারও ছিল। তখন হাজার হাজার খৃষ্টান-পাদ্রী ধর্মের প্রচার নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে ঘুরেছে। তাদের সে প্রচেষ্ঠা ফিলিপাইন,পাপুয়া নিউগিনি,ফিজি,পূর্ব-তিমুর,নাগাল্যান্ড,মিজোরামের অমুসলিমদের মাঝে সফলতা মিললেও বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশে ১৯০ বছরের শাসনেও সে সফলতা মিলেনি। ইসলাম থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ধর্মচ্যুৎ করতে পারেনি। তাদের হাতে বহু মুসলিম দেশ অধিকৃত হয়েছে। তাদের ঔপনিবেশিক শাসনে মুসলিমদের মাঝে অজ্ঞতা ও অশিক্ষাও বেড়েছে। কিন্তু তাদের অবস্থা কখনোই এতটা পচেনি যে খৃষ্টান ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম বা হিন্দু ধর্মের ন্যায় অন্য কোন ধর্ম তারা কবুল করবে। কয়লা থেকে স্বর্ণ, মল থেকে মধুকে পৃথক ভাবে করতে বিদ্যাবুদ্ধি লাগে না। অজ্ঞতা, ভ্রষ্টতা ও মিথ্যাচারপূর্ণ ধর্মগুলি থেকে ইসলামের শ্রেষ্ঠতা বুঝতেও বেশী বুদ্ধি লাগেনি। গ্রামের মুর্খ মুসলমানেরাও সেটি বুঝে। ফলে হিন্দু ধর্মের গরু-ছাগল,শাপ-শকুন,পাহাড়-পর্বত ও পুলিঙ্গ পুজনীয় হওয়ার ন্যায় প্রকাণ্ড মিথ্যাটি যেমন তাদের কাছে মিথ্যা রূপে ধরা পড়েছে তেমনি ধরা পড়েছে খৃষ্টান ধর্মের হযরত ঈসার মায়ের পেটে ঢুকা, ঈশ্বর হওয়া এবং সে ঈশ্বরের শুলে চড়ে মারা যাওয়ার প্রকাণ্ড মিথ্যাটিও। ধর্মের নামে এরূপ মিথ্যাচার তাই তারা মেনে নেয়নি।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সংকট
বাংলাদেশের মূল সমস্যাটি নিছক অর্থনৈতিক নয়, বরং সেটি সাংস্কৃতিক। সে সাংস্কৃতিক সমস্যার কারণেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে সুস্থ্য ও সভ্যমানুষ রূপে বেড়ে উঠায়। সে অসুস্থতা ধরা পড়ছে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও প্রশাসনিক দূর্নীতিতে। ধরা পড়ছে দ্রুত বর্ধিষ্ণু অশ্লিতা, ব্যভিচার, ধর্ষণ ও নানারূপ পাপাচারে। ইসলাম শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস বাড়ায়না। মানুষকে শুধু মসজিদমুখিই করেনা। বরং মানবতা, শ্লিলতা, পবিত্রতা যোগ করে তাদের বাঁচাতে। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি ঘটেনি। এখানেই বাংলাদেশের বড় ব্যর্থতা।
সংস্কৃতির নির্মানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি হলো জ্ঞান। এ কারণেই মুর্খ বাউল, শ্মশানবাসী কাপালিক, জটাধর সাধু এবং জ্ঞানবান ঈমানদারের সংস্কৃতি কখনোই এক হয় না। ইসলামে জ্ঞানার্জন এজন্যই ফরয। এবং অজ্ঞ থাকাই সবচেয়ে বড় পাপ। জ্ঞানার্জন ছাড়া ব্যক্তির জীবনে সত্যপথ প্রাপ্তি যেমন অসম্ভব,তেমনি সংস্কৃতির নির্মানও অসম্ভব। তবে সে জ্ঞানার্জনে বিশ্ববিদ্যালয় সহায়ক হলেও,ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ যখন তৈরী হয়েছেন সে সময়ে যখন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ই ছিল না। অপরদিকে বাংলাদেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতিহাস গড়েছে বিভ্রান্ত,পথভ্রষ্ট ও দুর্বৃত্তদের সৃষ্টিতে। বাংলাদেশকে যারা ৫ বার পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে পরিণত করলো তারা কেউ গ্রামের মূর্খ রাখাল বা ক্ষেতমজুর ছিল না,বরং ছিল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রিধারি। এ ডিগ্রিধারী দুর্বৃত্তরা বরং দেশের কদর্যতা বাড়িয়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষকে পথভ্রষ্ট করে।
একমাত্র কোরআনী জ্ঞান থেকেই ব্যক্তি পায় পায় ন্যায় ও অন্যায়, শ্লিল ও অশ্লিল, পবিত্র ও অপবিত্র চেনার সামর্থ্য। পায় প্রজ্ঞা। সন্ধান পায় সিরাতুল মোস্তাকীমের। অন্যথায় জীবন মিথ্যাচারে পূর্ণ হয়ে উঠে। কোরআনকে এজন্যই মহান আল্লাহতায়ালা হুদা বা ফোরকান রূপে চিত্রিত করেছেন। হুদা’র অর্থ পথ প্রদর্শক আর ফোরকান হলো সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য সৃষ্টিকারি। মুসলমানের সংস্কৃতি এজন্যই খৃষ্টান, হিন্দু, শিখ বা প্রকৃতি পুজারির সংস্কৃতি থেকে ভিন্ন। কতটা ভিন্ন তার উদাহরণ দেয়া যাক। ইসলামে পবিত্র-অপবিত্রতার যে সুস্পষ্ট বিধান তাতে মলমূত্রের ন্যায় গরুর গোবরও অপবিত্র। তাই কাপড়ে গোবর লাগলে তার পবিত্রতা থাকে না। কিন্তু হিন্দুধর্মে সেটি ভিন্ন। গোবর লাগানোটাই এ ধর্মে পবিত্রতা। অপবিত্র আসে বরং হিন্দুর ঘরে মুসলমান আসন নিলে। গোবর দিয়ে লেপে তখন তাতে পবিত্রতা আনা হয়। গান-বাজনা ও নৃত্য ছাড়া হিন্দুদের পুজা হয় না। অথচ ইসলামে সেটিও ভ্রষ্টতা। সিরাতুল মোস্তাকিমে চলায় গান-বাজনা ও নৃত্য যেমন অমনোযোগী করে, তেমনি ভ্রষ্টতাও বাড়ায়।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অধিকৃতি
বাংলাদেশের ন্যায় অধিকাংশ মুসলিম দেশের আজকের বড় সমস্যা এ নয় যে, দেশগুলি শত্রুর হাতে সামরিক ভাবে অধিকৃত। বরং সবচেয়ে বড় সমস্যা এবং সে সাথে ভয়ানক বিপদের কারণ, দেশগুলির সাংস্কৃতিক সীমান্ত বিলুপ্ত হয়েছে এবং তা অধিকৃত হয়েছে ইসলামের শত্রুপক্ষের দ্বারা। দেশের রাজনৈতিক সীমান্ত বিলুপ্ত না হলেও মুসলিম দেশগুলির সংস্কৃতির মানচিত্র শত্রুপক্ষের দখলে গেছে। ফলে এদেশগুলিতেও সেগুলিই অহরহ হচ্ছে যা কাফের কবলিত একটি দেশে হয়ে থাকে। মুসলিম দেশের সংস্কৃতিও পরিনত হয়েছে মানুষকে আল্লাহর অবাধ্য রূপে গড়া তোলার ইন্সটিটিউশনে। পতিতাপল্লি, নাচের আসর, সিনেমা হল,মদ্যশালাই তাদের একমাত্র প্রতিষ্ঠান নয়,বরং গড়া হচ্ছে এবং নতুন ভাবে আবিস্কার করা হচ্ছে আরো বহু সাংস্কৃতিক আচারকে। মুর্তিপুজার ন্যায় আদিম অজ্ঞতাকে বাঁচিয়ে রাখতে যেমন হাজারো মন্দির গড়া হয়, তেমনি নানারূপ পাচাচার ও ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বাঁচিয়ে রাখতেও গড়া হয়েছে নানা আচার। এসব হলো শয়তানের সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিং। লক্ষ্য, কালচারাল কনভার্শন। এলক্ষ্যেই পহেলা বৈশাখ, বসন্তবরণ, ভালবাসা দিবস, থার্টি ফাষ্ট নাইট ইত্যাদি নানা দিবসকে বাঙালী মুসলিমের জীবনে জুড়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের হাজার হাজার মুসলিম সন্তান মসজিদে না গিয়ে হিন্দুদের ন্যায় গেরুয়া পোষাক পড়ছে। মঙ্গলপ্রদীপ হাতে নিয়ে শোভাযাত্রা করছে। কপালে তীলক পড়ছে, অশ্লিল নাচগানও করছে। এসব হলো মানুষকে পথভ্রষ্ট ও পাপাচারি বানানোর শয়তানী কৌশল। এরাই বাংলাদেশের ন্যায় প্রতি দেশে গড়ে উঠছে শয়তানের পক্ষে লড়াকু সৈনিক রূপে এবং তাদের যুদ্ধাংদেহী অবস্থানটি শরিয়তের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে।
অনৈসলামিক দেশে বসবাসের বড় বিপদটি খাদ্যাভাব নয়। রোগভোগ বা স্বাস্থ্যহানীও নয়। বরং সেটি হলো সিরাতুল মোস্তাকিম সহজে খুঁজে না পাওয়ার। কারণ অমুসলিম রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার জুড়ে তখন যা প্রবলতর হয় তা হলো সত্যচ্যুতির তথা পথভ্রষ্টতার। ইসলামী রাষ্ট্রের মূল দায়িত্বটি তাই আল্লাহর রাস্তায় চলার সিরাতুল মোস্তাকীমটি জনসম্মুখে তুলে ধরা। কাফের রাষ্টনায়কগণ করে তার উল্টোটি। জনগণের দৃষ্টি থেকে তারা সমাজে সিরাতুল মুস্তাকীমকে লুকায়। কুফর শব্দের আভিধানিক অর্থও লুকানো। কুফরি তখন রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিণত হয়। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন তখন পথভ্রষ্টতার পথ গড়ে, এবং সে পথগুলি জাহান্নামের দিকে টানে। বিভ্রান্তির সে বিশাল ভিড়ে তখন হারিয়ে যায় সিরাতুল মোস্তাকীম। সে সমাজে দর্শন, বিজ্ঞান, ধর্ম, সাহিত্য ও সংস্কৃতির নামে জাহান্নামের ব্যবসায়ীগণ তখণ মোড়ে মোড়ে দোকান সাজিয়ে বসেএবং অন্যদেরও সে পথে ডাকে। বাংলাদেশে শত শত পতিতাপল্লি, শত শত সূদিব্যাংক, হাজার হাজার এনজিও, বহু হাজার সাংস্কৃতিক সংস্থা, হাজার হাজার সিনেমা হল, পত্র-পত্রিকা ও মদের দোকান তো সে কাজটাই করছে। এমন একটি সমাজে প্রতি পদে পা ফেলতে হয় অতি সতর্কতার সাথে। নইলে পা জাহান্নামের গর্তে গিয়ে পড়ে।
মদ-জুয়া,নাচের আসর,পতিতাপল্লি,সূদীব্যাংক,সেক্যুলার শিক্ষা ও রাষ্ট্র ছাড়া যেমন প্রাশ্চাত্য সংস্কৃতি বাঁচে না, তেমনি কোর’আন-হাদীসের উপর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র, সমাজ, মসজিদ-মাদ্রাসা ও আইন-আদালত কাজ না করলে ইসলামি সংস্কৃতিও বাঁচেনা। অথচ বাংলাদেশে এ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলি অধিকৃত হয়েছে ইসলামের বিপক্ষ শক্তির হাতে। যারা এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তারা নামে মুসলমান হলেও ইসলামের বিজয় নিয়ে তাদের কোন অঙ্গিকার নাই। লেশমাত্র ভাবনাও নাই। বরং ইসলামের বিজয়ে তেমন একটি আগ্রহ থাকাটাই তাদের কাছে গণ্য হয় ফৌজদারি অপরাধ। আগ্রহী ব্যক্তিদেরকে চিহ্নিত হয় মৌলবাদী সন্ত্রাসী রূপে। তাদের নির্মূলে তারা বরং কাফেরদের সাথে কোয়ালিশন গড়ে।
সাংস্কৃতিক কনভার্শনের বিপদ ও ঈমানী দায়ভার
ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বড় নেয়ামতটি হলো, সেখানে স্পষ্টতর হয় সিরাতুল মোস্তাকীম। এবং বন্ধ করা হয় জাহান্নামের পথ। এমন রাষ্ট্রের বরকতে কোটি কোটি মানুষ বাঁচে জাহান্নামের আগুণ থেকে। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মান এজন্যই মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নেককর্ম। একাজে সামান্য সময় ব্যয়ও সারারাত তাহাজ্জুদ নামায পড়ার চেয়েও শ্রেষ্ঠ। -(হাদীস)। মহান আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা “আনসারুল্লাহ”র তথা আল্লাহর সাহায্যকারির। একাজে তার শত্রুর হাতে তার মৃত্যু হলে সে পাবে শহীদের মর্যাদা। পাবে বিনা বিচারে জান্নাত। মু’মিনের এ মেহনত ও কোরবানীর বরকতেই বিজয়ী হয় আল্লাহর দ্বীন এবং গড়ে উঠে শ্রেষ্ঠতর সভ্যতা। একারণেই শয়তানী শক্তির সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট হলো রাষ্ট্রের বুকে ইসলামের বিজয়কে অসম্ভব করা। সে শয়তানী প্রজেক্ট নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেমেছে বহু রাজনৈতিক দল, এবং বিদেশীদের অর্থে কাজ করছে বহু হাজার এনজিও। দেশটির জন্মকালে ইসলামের প্রতিষ্ঠা যেমন লক্ষ্য ছিল না। তেমনি আজও নয়। ইসলামের প্রতি অঙ্গিকারকে রাষ্ট্রীয় ভাবে নিন্দিত হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা রূপে। সাংস্কৃতিক কনভার্শনের কাজে বিনিয়োগ হয়েছে ভারতসহ বহু কাফের দেশের শত শত কোটি টাকা। সে বিনিয়োগ ফলও দিয়েছে। সে বিনিয়োগের কারণে,পাকিস্তানের ২৩ বছরে যত দুর্বৃত্ত এবং ইসলামের যত শত্রু তৈরী হয়েছিল বাংলাদেশে গত ৪০ বছরে হয়েছে তৈরী হয়েছে তার চেয়ে শতগুণ বেশী। ফলে কঠিন হয়ে পড়েছে আল্লাহর শরিয়তি বিধান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া। দেশ দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে পর পর ৫বার প্রথম হওয়ার মূল কারণ তো শয়তানী শক্তির এ বিশাল বিনিয়োগ। শয়তানী শক্তির সে বিনিয়োগ আজ যে শুধু অব্যাহত রয়েছে তা নয়, বরং বহুগুণ বৃদ্ধিও পেয়েছে। বাংলাদেশের মুসলমানদের ভয়ানক বিপদ বস্তুত এখানেই।
ইসলামি চরিত্রের নির্মান যেমন জঙ্গলে সম্ভব নয়, তেমনি পীরের খানকায়, মসজিদে বা নিজগৃহে নিছক কোরআন-হাদীস পাঠের মধ্য দিয়েও সম্ভব নয়। মুসলমানের ঈমান-আক্বীদা কখনই অনৈসলামিক সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে উঠে না। সে জন্য ইসলামি রাষ্ট্র ও জিহাদী সংস্কৃতি চাই। সাহাবায়ে কেরাম,তাবে ও তাবে-তাবেয়ীগণ মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানুষ রূপে গড়ে উঠেছিলেন তো ইসলামি রাষ্ট্র এবং সে রাষ্ট্রে জিহাদী সংস্কৃতির কারণেই। মুসলমানদের অর্থ, রক্ত, সময় ও সামর্থ্যের সবচেয়ে বেশী ভাগ ব্যয় হয়েছে তো ইসলামি রাষ্ট্র ও ইসলামি শিক্ষা-সংস্কৃতির নির্মানে। নামায রোযার পালন তো কাফের দেশেও সম্ভব। কিন্তু সম্ভব কি ইসলামী শরিয়ত ও ইসলামী সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা ও পরিচর্যা? সম্ভব নয় বলেই মুসলমানদের জীবনে হিযরত আসে। সে সাথে জিহাদও আসে। অতীতের ন্যায় আজকের মুসলমানদের উপরও একই দায়ভার। মহান আল্লাহর খলিফা রূপে এটাই একজন ঈমানদারের উপর সবচেয়ে বড় দায়ভার। এ লড়ায়ে সবাইকে ময়দানে নেমে আসতে হয়। এবং লড়াইয়ের শুরুটি তরবারী দিয়ে হয় না; বরং হয় কোরআনী জ্ঞানের । জ্ঞানার্জনকে এজন্যই নামায-রোযার আগে ফরয করা হয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশে সে ফরয পালনের আয়োজন কোথায়? অনেকেই জ্ঞানার্জন করছে নিছক রুটিরুজির তালাশে, ফরয আদায় এখানে লক্ষ্য নয়। প্রচন্ড বিচ্যুতি এখানে জ্ঞানার্জনের নিয়তে। ফলে লোভি, শঠ, ধুর্ত ও মিথ্যাচারি ব্যক্তি এ শিক্ষার বদলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘুষখোর, ডাকাত বা সন্ত্রাসীতে পরিণত হচ্ছে। এমন জ্ঞানচর্চায় রুটি-রুজী জুটছে ঠিকই, কিন্তু জ্ঞানার্জনের ফরয আদায় হচ্ছে না। ফলে দেশে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বাড়লেও জিহাদের ময়দানে লোকবল বাড়ছে না। ফলে বিপ্লব আসছে না সমাজ ও রাষ্ট্রে। বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য এটি এক বিপদজনক দিক। আগ্রাসী শত্রুর হামলার মুখে অরক্ষিত শুধু দেশটির রাজনৈতিক সীমান্তুই নয়, বরং প্রচন্ড ভাবে অরক্ষিত দেশের সাংস্কৃতিক ও আদর্শিক সীমান্তও। ফলে ইসলামের মুল শিক্ষা ও সংস্কৃতিই দেশবাসীর কাছে সবচেয়ে অপরিচিত থেকে যাচ্ছে। অজ্ঞতার বসে শত্রুর সংস্কৃতিকেই শুধু আপন করে নিচ্ছে না,আপন করে নিচ্ছে তাদের ইসলামবিনাশী রাজনৈতিক এজেন্ডাও।এবং মুসলিম হত্যায় হাতে তুলে নিচ্ছে শত্রুর হাতিয়ার। দেশ তাই দ্রুত অধিকৃত হচ্ছে শত্রুদের হাতে। সেটি যেমন সামরিক,অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভাবে, তেমনি সাংস্কৃতিক ভাবেও। শত্রুর সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও সাংস্কৃতিক কনভার্শন এভাবেই বাংলাদেশের ন্যায় একটি মুসলিম দেশে তাদের বিজয়কে সহজসাধ্য ও কম ব্যয়বহুল করে তুলেছে। সে সাথে ভয়ানক ভাবে বাড়িয়ে তুলেছে দেশবাসীর আখেরাতের বিপদও। তাই আজকের লড়াইটি নিছক রাজনৈতিক নয়। স্রেফ অর্থনৈতিকও নয়। সেটি যেমন শত্রুর হাত থেকে দখলদারি মুক্তির, তেমনি ইসলামি রাষ্ট্র ও সংস্কৃতি নির্মানের। ১ম সংস্করণ ২৮/০৪/১২; ২য় সংস্করণ ২২/১০/২০২০
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018