স্বাধীনতার সুরক্ষার ভাবনা

ফিরোজ মাহবুব কামাল

 শত্রুরা ওষুধের নামে বিষ সেবন করায়। তাতে হত্যার কাজটি সহজ হয়ে যায়। তেমনি তারা স্বাধীনতার নামে পরাধীনতার শিকলও পড়ায়। তাতে দাস বানানোর কাজটিও সহজ হয়ে যায়। হিন্দুত্ববাদী অগ্রাসী ভারত একাত্তরে বাঙালি মুসলিমদের গলায় স্বাধীনতার নামে তেমনি পরাধীনতার শিকল পড়িয়েছিল। সমগ্র মানব ইতিহাসে এমনটি কখনোই ‌ঘটেনি যে মুসলিমদের স্বাধীনতা দিতে পৌত্তলিকগণ যুদ্ধ করেছে এবং নিজেদের অর্থ ও রক্ত দিয়েছে। তারা যুদ্ধ করে শুধু মুসলিম ভূমিকে পরাধীন করতে ও মুসলিমদের সম্পদ লুণ্ঠন করতে। এটিই ঐতিহাসিক সত্য। ১৯৭১’য়ে হিন্দুত্ববাদী ভারত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সেটিই করেছিল। অথচ সেকুলারিস্ট বাঙালি ফ্যাসিস্ট ও বামধরার বাঙালি কাপালিকগণ সে অধীনতাকে বাঙালির স্বাধীনতা বলে করে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আজও উৎসব করে। ভারতের প্রতি চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকার নসিহত শোনায়। এমন ভ্রান্ত ও কপট ধারণা নিয়ে কোন জনগোষ্ঠি কি স্বাধীন থাকতে পারে?

ভারতীয় অধিকৃতির সে শিকল ভেঙেছে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা। বিজয় মহান আল্লাহতায়ালার বিশাল রহমত -তিনি লাখ লাখ মজলুলের দোয়া শুনেছেন। বাঙালি মুসলিমের ইতিহাসে এটি এক বিশাল বিজয়। এ বিজয় ধরে রাখতে হবে, নইলে আবার স্বাধীনতা হারাতে হবে। কারণ, শত্রুগণ ১৮ কোটি মানুষের এ ভূমিকে আবার দখলে নিতে সদা উদগ্রিব। বুঝতে হবে, বৃহৎ শত্রু পরিবেষ্ঠিত অবস্থায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংকটটি প্রতি মুহুর্তের। এ অবস্থায় স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে অবশ্যই শক্তিশালী বন্ধু খুঁজতে হবে। নইলে স্বাধীনতা বাঁচানো যাবে না। নেকড়ের সামনে নিরস্ত্র মানুষ বাঁচে না। তেমনি আগ্রাসী বৃহৎ শক্তি হামলা থেকে দুর্বলে স্বাধীনতা বাঁচে না। বন্ধু খোঁজা নবীজীর সূন্নত। মক্কার কাফিরদের হামলা থেকে বাঁচতে তিনি এমন কি ইহুদীদের সাথেও সন্ধি করেছিলেন। স্বাধীনতার এ সংকটের মুখে বাংলাদেশকে যারা বন্ধুহীন রাখতে চায় তারা স্বাধীনতার মূল শত্রু; তারাই শত্রুর সেবাদাস। তারা চায়, বাংলাদেশ বন্ধুহীন ও দুর্বল থাকুক এবং ভারতের গোলামে পরিণত হোক।

বাঙালি মুসলিমের স্বাধীনতার মূল শত্রু ভারত। ভারতের এই শত্রুতা চিরকালের। এ সত্য টুকু যারা বুঝে না, তারাই বাংলাদেশের জন্য আগামীতে স্বাধীনতার মহা সংকট সৃষ্টি করবে -যেমনটি করেছিল ১৯৭১ সালে। বৃহৎ ও সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী ভারতের মোকাবেলার সামর্থ্য ক্ষুদ্র ও দুর্বল বাংলাদেশের নাই। এটিই বাংলাদেশের জন্য নিরেট বাস্তবতা। ইউক্রেন সেরূপ বন্ধু খুঁজে ব্যর্থ হয়েছে বলেই দেশটির বিশাল ভূ-ভাগ আজ রাশিয়ার দখলে। তাই বাংলাদেশকে অবশ্যই বন্ধু খুঁজতে হবে। ‌ ভারতের শত্রু পাকিস্তান ও চীন। শত্রুর শত্রু হওয়ার কারণে পাকিস্তান ও চীন -এ দুটি দেশই বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হতে পারে। এ দুটি দেশ বন্ধু হতে রাজীও। যারা পাকিস্তান ও চীনের সাথে বন্ধুত্বের বিরোধী তারাই ভারতের এজেন্ট এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার আসল শত্রু। এরাই বাংলাদেশের ঘরের শত্রু।

শুধু বাঙালি মুসলিমের নয়, ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো মূর্তিপূজারী মুশরিকরা। নেকড়েকে যেমন পোষ মানানো যায় না, তেমনি মূর্তিপূজারী মুশরিকদেরও বন্ধু বানানো যায়না। সে সত্যটি  সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহ তায়ালার চেয়ে আর কে জানেন? তাই তিনি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করাকে চির কালের জন্য হারাম করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সে কুরআনী নির্দেশ এসেছে সূরা আল ইমরানের ২৮ নম্বর আয়াতে এবং সূরা মুমতাহানার এক নম্বর আয়াতে। তাই যারা মূর্তিপূজারী মুশরিকদের বন্ধু রূপে গ্রহণ করে, তারা কখনোই মহান আল্লাহ তায়ালার বন্ধু হতে পারে না। তারা বন্ধু হতে পারে না মুসলিমদেরও।

তাই যারা একাত্তরে ভারতকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছে এবং ভারতের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারতীয় সেনা বাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে -তারা মূলত বিদ্রোহ করেছে মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে। এরূপ বিদ্রোহ করা তো ইবলিসের সূন্নত -যা ইবলিসকে অভিশপ্ত শয়তান বানিয়েছিল। বাঙালি মুসলিমদের মাঝে সে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছিল শেখ মুজিব ও মেজর জিয়া। এবং মুজিব ও জিয়ার সে বিদ্রোহের অনুসরণ করেছিল মুক্তিবাহিনী ও মুজিব বাহিনীর লোকেরা। এবং এরাই একাত্তরে ভারতের ঘরে বিজয় তুলে দিয়েছে এবং সে বিজয় নিয়ে উৎসব করে। অথচ একাত্তরে ভারতে বিজয়ের ফলে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতা এই বিদ্রোহী হাতেই গিয়েছিল। এবং কবরে গিয়েছিল বাঙালি মুসলিমদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র।

অতি পরিতাপের বিষয় হলো, ১৬ ডিসেম্বর এলে বিপুল সংখ্যক বাঙালি মুসলিম আজও ইবলিসের সূন্নত পালনকারী সে বাঙালি বিদ্রোহীদের বিজয় নিয়ে ভারতীয় পৌত্তলিকদের সাথে মিলে উৎসব করে। বাঙলি মুসলিমদের ইতিহাসে এতো বড় ভ্রষ্টতা কি কোন কালে ঘটেছে? অথচ সে ভ্রষ্টতা নিয়ে বিপুল সংখ্যক সেক্যুলার বাঙালির গর্বের নানা উপখ্যান। তাই একাত্তর নিয়ে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীর আদলে বাঙালি ফ্যাসিস্ট ও বামধারার বাঙালি কাপালিকগণ গর্বের যে বয়ান খাড়া করেছে সেটি  নস্যাৎ না করা অবধি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুরক্ষা দেয়া যাবে না। কারণ স্বাধীন ভাবে বাঁচতে হলে প্রথমে ভ্রষ্ট দর্শন পাল্টাতে হয়, বিশেষ করে সে দর্শনকে যা শত্রু-মিত্র চেনার সামর্থ্যকে কেড়ে নেয়, চরম স্বার্থান্বেষী করে এবং আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদীদের কোলে তাদের দাস সৈনিক রূপে হাজির করে -যেমনটি একাত্তরে মুক্তিবাহিনী ও মুজিব বাহিনী সদস্যদের ক্ষেত্রে ঘটেছিল।   

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *