স্বৈরশাসকের নির্মূল কীরূপে?
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 6, 2022
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- 1 Comment.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
কি হবে রণকৌশল?
স্বৈরশাসনের অধীনে বসবাসের অর্থই হলো যুদ্ধ নিয়ে বাঁচা। যুদ্ধটি এখানে জনগণের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী সরকারের। তাই যুদ্ধটি এখানে জনগণের উপর চাপানো যুদ্ধ। সভ্য মানুষের কাছে আত্মসমর্পণ কোন অপশন নয়। প্রতিরোধ যুদ্ধ এখানে অনিবার্য। তবে প্রশ্ন হলো কি হবে সে জনযুদ্ধের কৌশল? স্বৈরাচারী শাসকগণ তাদের শক্তির জায়গাটি যেমন বুঝে, তেমনি বুঝে দুর্বলের জায়গাটিও। তারা জানে, তাদের সামরিক শক্তির সামনে দাঁড়ানোর সামর্থ্য জনগণের নাই। এজন্যই যে কোন স্বৈরাচারী শাসকের ন্যায় শেখ হাসিনা ও তাঁর দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্ধত ভাবটা এমন, বিরোধীদলের যদি মুরোদ থাকে তবে শক্তির জোর তাকে সরিয়ে দিক। কারণ হাসিনা জানে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের সামনে দাঁড়ানোর শক্তি নিরস্ত্র জনগণের নেই। বাংলাদেশে সে শক্তির মালিক তো একমাত্র তিনি। তার পিতার হাতে ছিল একটি মাত্র রক্ষিবাহিনী। হাসিনার হাতে সেরূপ অনুগত রক্ষিবাহিনী ৪টি। সেগুলি হলো: সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ বাহিনী এবং RAB। সে সাথে রয়েছে বিশাল দলীয় ক্যাডার বাহিনী। এখানেই সরকার ও বিরোধী দলের মাঝে শক্তির প্রচণ্ড অসমতা। ফলে সশস্ত্র লড়াইয়ের পথ কোন নিরস্ত্র বিরোধী দল বা জনগণ বেছে নিতে পারে না।
স্বৈর-সরকারের দুর্বলতা হলো, জনগণের কাতারে দাড়িয়ে তারা যুদ্ধ করতে পারে না। রাজনীতির লড়াই যখনই জনগণের কাতারে চলে যায়, তখন সে লড়াই কামান দেগে জেতা যায় না। ডাঙ্গায় পড়লে বিশাল মাছ কিছুক্ষণ ছটফট করতে পারে, কিন্তু মৃত্যু এড়াতে পারে না। জনগণের কাতারে একই অবস্থা হয় স্বৈরাচারী শাসকের। তখন স্বৈর-শাসকের পতন ঘটাতে অস্ত্র হাতে নেয়া লাগে না। স্বৈরাচার থেকে মুক্তির এই নিরস্ত্র পথই এটিই সফল ও সহজতর পথ। এবং এটি গণবিপ্লবের পথ। তাই কৌশল হতে হবে এ স্বৈরাচার নির্মূলের যুদ্ধটি রাজপথে টেনে নামাতে হবে। এর বিকল্প নাই। এ যুদ্ধটি ভোট যুদ্ধে জেতা যাবে না। কারণ, স্বৈর শাসকের অধীনে নির্বাচন মানেই ডাকাতির নির্বাচন। আর জনগণ কখনোই তাদের ভোট ডাকাতি হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে না। সেটি ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেখা গেছে।
অর্থসম্পদ ঘরে থাকলে বার বার চোর-ডাকাতদের হামলা হয়। তেমনি জনগণের হাতে যেহেতু ভোট আছে, সেহেতু সে ভোটের উপর বার বার ডাকাতিও আছে। তবে ডাকাতদের ভয়ে কি বসে থাকার উপায় আছে? বন্যায় ফসল ভেসে গেলেও কৃষক আবার ফসল বুনে, তেমনি ডাকাতদের হাতে ভোট-ডাকাতি হলেও বিরোধী দলের জন্য নির্বাচন থেকে পালানোর সুযোগ নেই্। কারণ, ভোটের গুরুত্ব অপরিসীম। মানব সভ্যতার এটি এক গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। এটি দেয় স্বাধীনতা। দেয়, রাষ্ট্রের কারা শাসক হবে -সে বিষয়টি নির্ধারণে জনগণের অধিকার। এজন্যই মানব ইতিহাসের অতি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হলো স্বৈরাচার নির্মূলের যুদ্ধ তথা ভোটের অধিকার অর্জনের যুদ্ধ। এটি হলো স্বৈরাচারী শাসনের অসভ্যতা থেকে জাতিকে মুক্তি দেয়ার লড়াই। যুদ্ধটি এখানে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, বরং স্বৈরতন্ত্রের গণবিরোধী অসভ্য চেতানার বিরুদ্ধে। এ অসভ্য চেতানার কারণেই স্বৈরশাসকগণ হারায় জনগণের মতামত ও রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। তারা শুধু স্বাধীন মতামত প্রকাশের অধিকারই কেড়ে নেয় না, ছিনতাই করে তাদের ভোটও। ভোটডাকাতির মাধ্যমে তারা শুধু বিরোধীদলকে পরাজিত করে না, পরাজিত করে এবং সে সাথে ভোটশূণ্য ও অধিকারশূণ্য করে জনগণকে। ফলে বার বার নির্বাচন হলেও জনগণ যা চায় তা হয় না, বরং স্বৈরশাসক যা চায় সেটিই হয়। কোন সভ্য দেশে কি এটি ভাবা যায়? প্রতিটি সভ্য ও ভদ্র দেশে এটি তো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অথচ সে শাস্তিযোগ্য অসভ্য অপরাধই সংঘটিত হয় বাংলাদেশের নির্বাচনে –যেমনটি হয়েছে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে।
স্বৈরাচার বিরোধী এ যুদ্ধে জিততে হলে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে জনগণের সাথে। এ যুদ্ধ যে জনগণের নিজস্ব যুদ্ধ –জনগণের মনে সে ধারণাটি সুস্পষ্ট ও বদ্ধমূল করতে হবে। স্বৈরশাসক মাত্রই জনগণের স্বাধীনতার শত্রু। স্বৈরশাসনে স্বাধীনতা শুধু দুর্বৃত্তদের। জনগণের স্বাধীনতা এখানে লুণ্ঠিত। দুর্বৃত্ত স্বৈরসরকার ও তাদের সহযোগী বুদ্বিজীবীদের বাইরেও দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষের বসবাস যারা গণতন্ত্রের মূল শত্রুদের চিনতে চায়। তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেও চায়। কারণ, দুর্বৃত্ত স্বৈরসরকারের বিরুদ্ধে লড়াইটি স্রেফ বিরোধী দলের লড়াই নয়, এ লড়াইটি জনগণের। কারণ, এটি তাদের নিজেদের ভোটের মর্যাদা রক্ষার লড়াই। বিরোধী দলের দায়িত্ব হলো স্বৈরাচার বিরোধী চলমান যুদ্ধে দেশের জনগণকে যেমন সাথে নেয়া, তেমনি সে যুদ্ধে তাদের চেতনায় বুদ্ধিবৃত্তিক গোলাবারুদের জোগান। বুঝতে হবে, রাজনীতির ময়দানে বিজয়ী হতে হলে বিজয়ী হতে হবে বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে।
স্বৈরশাসকের গণবিপ্লব ভীতি
শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারের দুর্বলতাটি বিশাল। সাম্রাজীবাদী ব্রিটিশ বা ইরানের মহম্মদ রেজা শাহের চেয়ে তাঁর সরকার শক্তিশালী নয়। কিন্তু গণআন্দোলনের মুখে তারা টিকতে পারিনি। স্বৈরাচার বিরোধী এ নিরস্ত্র যুদ্ধের বিকল্প হলো সশস্ত্র গেরিলা যুদ্ধ। কিন্তু সে পথে স্বৈরাচারী সরকারকে পতন ঘটনা যায়না। কারণ ভারী অস্ত্রের বিশাল ভান্ডার তো সরকারের হাতে। রয়েছে বিশাল সামরিক ও পুলিশ বাহিনী। এজন্যই স্বৈরাচারী সরকার মাত্রই চায়, বিরোধী পক্ষ অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নামুক। তাতে সরকারের পক্ষে সহজ হয় বিরোধী পক্ষের নির্মূল। কিন্তু স্বৈরাচারী সরকারের সরকারের ভয় জনগণের নিরস্ত্র আন্দোলন। বিশ্বের বড় বড় স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে নিরস্ত্র গণ-আন্দোলনে, সশস্ত্র পথে নয়। দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, ফিলিপাইনস, ইন্দোনেশিয়া, চিলি, পূর্বজার্মানী, পোলান্ড, মিশর, তিউনিসিয়া, নেপালসহ বিশ্বের বহু দেশে স্বৈরাচারের নিপাতে জনগণকে অস্ত্রহাতে যুদ্ধে নামতে হয়নি। নিরস্ত্র গণ-আন্দোলনই সেগুলির পতন ঘটিয়েছে। স্বৈরাচারী সরকার মিছিলের উপর গুলি চালাতে পারে। কিন্তু লাখ লাখ লোকের জনস্রোতে যখন রাজধানীর সবগুলো রাস্তাঘাট প্লাবিত হয় তখন কোন স্বৈরাচারী সরকারই সেটি রুখতে পারিনি। সেটি ইরানে শাহ রুখতে পারিনি, মিশরের হোসনী মোবারক রুখতে পারিনি। জেনারেল এরশাদও সে গণজোয়ার রুখতে পারিনি। বিরোধী দলকে জনগণের সে শক্তিক বুঝতে হবে।
হাতিয়ারটি একতার
স্বৈরাচার নিপাতে জনগণের মূল হাতিয়ারটি হলো একতা। অনৈক্যে আন্দোলন ব্যর্থ হতে বাধ্য। স্বৈরসরকারের কৌশলটি হলো সব দলের উপর এক সাথে হামলা করে না। একটি একটি করে ধরে। আর বিরোধী দলগুলির সমস্যা হলো, যখন কোন একদলের কর্মীগণ নিহত ও নির্যাতিত হতে থাকে, অন্যরা তখন নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করে দূরে অবস্থান নেয়। একই কায়দায় আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী, হিফাজতে ইসলাম ও বিএনপি -সবাইকেই ধরেছে। ২০১৩ সালে হিফাজতে ইসলামের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার মূল কারণ, সকল বিরোধী দলকে তারা কাছে টানতে পারিনি। একই কারণে ব্যর্থ হয়েছে জামায়াত-বিএনপির নির্বাচন-পরবর্তী আন্দোলন।
বিরোধীদলগুলি একতার গুরুত্ব না বুঝলে কি হবে, মহাজোট গড়েছে আওয়ামী লীগ ও তার বাকশালী মিত্ররা। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থই সকল বিরোধী দলগুলিকে পরস্পরে দূরে রেখেছে। দলীয় স্বার্থ নয়, স্বৈরশাসক নির্মূলের লড়াই যে এমুহুর্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা -সেটিও তারা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে, হাসিনার স্বৈরাচারী সরকার শুধু জামায়াত ইসলামী বা বিএনপির শত্রু নয়। শত্রু হিফাজতে ইসলামসহ সকল বিরোধী শক্তির। এ সরকারের হাতে জামায়াতে ইসলামী বা বিএনপির শত শত নেতাকর্মী যেমন নিহত হয়েছে, তেমনি হিফাজতে ইসলামেরও বহু হাজার নেতাকর্মী নিহত ও আহত হয়েছে। স্বৈরাচার নির্মূল হলে সবচেয়ে বেশী লাভ হবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। তাই ঐক্যের স্বার্থে সবচেয়ে বেশী ছাড় দিতে হবে তাদের। কারণ তাদের ছাড় দেয়ার মাঝেই তাদের বিজয়।
কথা হলো, দুর্বৃত্ত ভোট-ডাকাতদের বিরুদ্ধে জনগণ না দাঁড়ালে দেশের স্বাধীনতা ও সম্পদকে কে বাঁচাবে? এমন একটি দুর্বৃত্ত সরকারকে সরাতে হলে তাদের অপরাধের বিরুদ্ধে জনগণকে প্রতিবাদী করতে হয়। বুঝাতে হয়, তারা জনগণের ভয়ানক দুশমন। ডাকাতগন যেমন সন্ত্রাসের মাধ্যমে জনগণের অর্থ ছিনিয়ে নেয়, ভোট-ডাকাতগণও তেমনি রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর সন্ত্রাস দেখিয়ে ভোট ছিনিয়ে নেয়। এভাবে ভোটের মালিক হওয়াতে ভোট-ডাকাতেদর পক্ষে রাষ্ট্রের ব্যাংক, সরকারি কোষাগার, শেয়ার মার্কেট, সরকারি ভূমি, বিদেশীদের দেয়া অর্থ –সবকিছুর উপর মালিক হওয়া যায়। অন্যান্য দেশে রাস্তাঘাট গড়তে যে খরচ হয় তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশী বাজেট বরাদ্দ হয় বাংলাদেশে। তবে সেটি ভাল রাস্তাঘাট তৈরীর জন্য নয়, বরং অতিরীক্ত সে বরাদ্দটি হয় সরকারি দলের ক্যাডারদের পকেট ভর্তির জন্য। ফলে সাধারণ চোর-ডাকাতদের চেয়ে বহুহাজার গুণ বেশি ডাকাতি হয় স্বৈরাচারী ভোট ডাকাত। এজন্যই সাধারণ ডাকাতগণ এখন সে ডাকাতির অর্থে ভাগ বসাতে সরকারি ডাকাত দলে যোগ দেয়। এজন্যই শেখ হাসিনার দলে বিরোধী দলের কর্মীদের নিষ্ঠুর ভাবে পেটাতে পুলিশের পাশে সিভিল লেবাসধারি নৃশংস ডাকাতের অভাব হয়না। তাই সচেতন নাগরিকদের দেশে সবচেয়ে বড় যুদ্ধটি হয় এরূপ ভোট-ডাকাত নির্মূলে। কারণ ভোট-ডাকাতদের জন্য ক্ষমতার শীর্ষে উঠার এটাই হলো অবৈধ সিঁড়ি। তাই এ ডাকাতদের থেকে মুক্তি পেতে হলে জরুরি হলো, এ অবৈধ সিঁড়ির নির্মূল। জনগণের হাতে টিভি ও পত্র-পত্রিকা না থাকলেও আছে মোবাইল, ফেস বুক, হোয়াটসএ্যাপ, টুইটার এবং ইমেল। এগুলো কাজে লাগিয়েও ফ্যাসিস্ট সরকারের অপরাধকে দেশবাসী এবং সে সাথে বিশ্ববাসীর সামনে আনা যায়।
স্বৈর শাসনের নাশকতা: মুক্তি কীরূপে?
স্বৈরশাসনের নাশকতা বহুমুখী, ভয়ানক এবং দীর্ঘস্থায়ী। সভ্য ভাবে বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে এটিই সবচেয়ে বড় বাধা। বর্বর এ শাসন থেকে মুক্তির চেয়ে তাই কোন মহত্তর কাজ থাকতে পারে না। বাংলাদেশের মূল সমস্যাটি অর্থনীতি, কৃষি বা শিল্পের নয়। ভূমি বা জলবায়ুরও নয়। সমস্যাটি ড্রাগ বা মাদকাসক্তিরও নয়। বরং সেটি হলো ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসকের ক্ষমতার প্রতি আসক্তি। এরূপ আসক্তি মাদকাসক্তির চেয়েও ভয়ানক। বস্তুত মানব জাতির বড় বড় ক্ষতিগুলো কখনোই মাদকাসক্তির কারণে হয়নি। সে বর্বরতাগুলি হয়েছে স্বৈরশাসকের ক্ষমতাসক্তির কারণে। ক্ষমতার নেশায় উমত্ত হিটলার ও স্টালিনের দখলকৃত দেশে বহু লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এরাই উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদের ন্যায় নানারূপ প্রাণনাশী ভয়ানক মতবাদের জন্ম দিয়েছে। ক্ষমতাসক্ত এ মানুষেরা যখনই রাষ্ট্র ক্ষমতা হাতে পায় তখনই সেদেশে অতি নিষ্ঠুর স্বৈরাচারের জন্ম নেয়। বাংলাদেশেও বিপুল সংখ্যক মানুষ খুন হচ্ছে, গুম হচ্ছে, রিমান্ডের নামে নির্যাতিত হচ্ছে, রাজপথে হাজার হাজার মারা পড়ছে ও নিরাপরাধ কারাবন্দি হচ্ছে ক্ষমতালোভী হাসিনার স্বৈরশাসনকে দীর্ঘায়ীত করার প্রয়োজনে। অতীতে এ শ্রেণীর স্বৈরশাসকগণ নবী-রাসূলদেরও হত্যা করেছে এবং আল্লাহর দ্বীনের প্রতিষ্ঠাকে অসম্ভব করেছে।
ডাকাতি যখন কারো গৃহে ঘটে তখন সেটি ডাকাতি। কিন্তু সে ডাকাতি যখন সমগ্র দেশের উপর ঘটে, তখন সেটি স্বৈরশাসন। তবে পার্থক্য হলো, ডাকাতিগণ শুধু অর্থের উপর ডাকাতি করে, কিন্তু স্বৈরশাসকদের ডাকাতিটি শুধু অর্থের উপর নয়, বরং সেটি সমগ্র দেশ ও সমগ্র দেশবাসীর মৌলিক অধিকারের উপরও। তারা কেড়ে নেয় ভোটের অধিকার, কেড়ে নেয় কথা বলা, লেখালেখী এবং মিটিং-মিছিলের অধিকার। যে কোন দেশে দুর্বৃত্ত স্বৈর শাসককে পরাজিত করা অতি কঠিন। কারণ স্বৈর শাসকগণ সশস্ত্র, কিন্তু জনগণ নিরস্ত্র। এটি সশস্ত্র দুর্বৃত্ত শাসকের বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। ইসলামে এটি পবিত্র জিহাদ। তবে এ জিহাদে জরুরি হলো জনগণের মাঝে একতা, কোন ব্যক্তি বা কোন বিশেষ দল এ বিশাল কাজ একাকী করতে পারে না। দেশে যখন ভূমিকম্প, সুনামী, মহামারি বা মহাপ্লাবনের আঘাত আসে, এরূপ বিপর্যের মুহুর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো দেশবাসীর একতা। বিপদের মুহুর্তে জনগণ যদি কলহ-বিবাদে লিপ্ত হয় -তখন সে বিপর্যয় আরো গভীরতর হয়। তখন সে মহা বিপদ থেকে কোন একক দল বা গোষ্ঠি দেশকে উদ্ধার করতে পারেনা।
বুঝতে হবে, বাংলাদেশের আজকের বিপদটি স্বৈর দুঃশাসনের। ভূমিকম্প, সুনামী, মহামারি বা সাইক্লোনের কারণে কোন জাতিকে কখনোই ধ্বংস হয়না। কারণ সেগুলি জনগণের বিবেক, ধর্ম ও চরিত্রকে ধ্বংস করে না। সে বিপর্যয়ে জনগণকে বছরের পর বছর প্রাণ ভয়ে পালিয়ে থাকতে হয়না। তাতে জনগণের মানবতা, স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারগুলিও বিলুপ্ত হয়না। সে দুর্যোগে মানবিক অধিকার ও গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়না। ফলে ব্যহত হয়না সভ্যরূপে বেড়ে উঠাও। তাই ভূমিকম্পের দেশ ইতালি জন্ম দিয়েছিল রোমান সাম্রজ্যের ন্যায় এক বিশাল বিশ্বশক্তির। ভূমিকম্পের দেশ তুরস্ক বহুশত বছর ছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিশ্বশক্তি। ভূমিকম্পের আরেক দেশ জাপান আজও বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। কারণ, এ বিপর্যয়গুলিতে বিপুল প্রাণনাশ হলেও তা জাতীয় জীবনে প্রতি বছর ও প্রতি দিন থাকে না। এগুলি দেয় বিপদের মুখে বীরত্ব নিয়ে লড়াইয়ের সামর্থ্য। কিন্তু স্বৈর সরকারের নৃশংসতা, গুম, রিমান্ড, গণহত্যা ও জেল-জুলুম তো প্রতি বছরের এবং প্রতি দিনের। সেগুলি ধ্বংস করে দেশবাসীর আত্মবিশ্বাস ও লড়াইয়ের সামর্থ্য। সে অসভ্য শাসকেরা মিথ্যার প্লাবনে গণহারে জনগণের বিবেক হত্যাও করে। সেটি তাদের নৃশংস দুর্বৃত্তিকে প্রশংসনীয় করার প্রয়োজনে। এই পথ ধরেই ফিরাউন, নমরুদের ন্যায় নৃশংস শাসকেরাও জনগণের কাছে খোদায় পরিণত হয়েছিল। সে অভিন্ন নীতি প্রতি যুগে এবং প্রতি দেশে স্বৈরশাসকদেরও। একই পথে গণতন্ত্রহত্যাকারী ও মানবহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট মুজিবও বাঙালীর জীবনে বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতার আসন দখল করেছে।
রাস্তাঘাট, প্রাসাদ ও অর্থসম্পদের কারণে মানুষ সভ্যরূপে পরিচিতি পায়না। সেগুলি চোরডাকাতেরও থাকে। দেখতে হয় সভ্য রীতি-নীতি ও সংস্কৃতি নিয়ে বসবাস করে কিনা সেটি। সভ্যতার বড় পরিচয় সম্পদ নয়; সেটি হলো মানবতা, আইনের শাসন, নিরাপত্তা, সম্মান ও পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে বসবাসের পরিবেশ। স্বৈরাচারী শাসনে সে পরিবেশটি থাকেনা জাতীয় জীবনে সবচেয়ে বড় অসভ্যতাটি হলো স্বৈরাচারী শাসনের অধীনে বসবাস। এটি গৃহে গলিত আবর্জনা নিয়ে বসবাসের ন্যায়। স্বৈরশাসিত এমন অসভ্য দেশে চুরিডাকাতি, ভোটচুরি, গুম, খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাস মামূলী ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ভোটচুরির অর্থ তো নাগরিকের স্বাধীনতা চুরি হয়ে যাওয়া। তখন সমগ্র দেশ চুরি হয়ে যায় চোর-ডাকাতদের হাতে। তখন বিলুপ্ত হয় আইনের শাসন এবং অসম্ভব হয় সমাজের অন্য চোরডাকাতদের। তখন ডাকাতি হয়ে যায় দেশের রিজার্ভ, ব্যাংক, শেয়ার মার্কেট, সরকারি ট্রেজারিসহ জাতীয় সম্পদ। তাই একটি দেশে সবচেয়ে বড় অপরাধী সেদেশের সাধারণ চোর-ডাকাত বা সন্ত্রাসী নয়, বরং তারা হলো দেশে শাসন ক্ষমতায় আসীন ভোট-ডাকাত ফ্যাসিস্ট শাসক। শাসক ভোট-ডাকাতেরা যেন নেকড়ে বাঘ, সে তুলনায় মহল্লার চোরডাকাতেরা ইঁদুর। তাই সভ্য দেশগুলির কাছে প্রায়োরিটি পায় ভোটচোর বা ভোট-ডাকাতদের নির্মূলে। একমাত্র এপথেই নির্মূল হয় স্বৈরাচারের দুর্বৃত্তি। সভ্য জাতি রূপে বেড়ে উঠার লড়াইয়ে এ ছাড়া বিকল্প নাই। স্বৈরশাসন তাই বাংলাদেশীদের জীবনে বিশাল পরীক্ষা নিয়ে হাজির হয়েছে। পরীক্ষাটি এখানে ভদ্র ও সভ্য রূপে বেড়ে উঠায় তাদের সামর্থ্যের। এবং আজ যে সামর্থ্য দেখাবে তা বহুশত বছর পরও নতুন প্রজন্মের মাঝে আলোচনার বিষয় হয়ে থাকবে। ০৬/০৩/২০২২।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- ভারতীয় ষড়যন্ত্র রুখতে হবে
- সম্প্রতি বাংলাদেশে যা দেখলাম
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018
মাশাআল্লাহ্…..