হাসিনার দিন শেষ
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on August 3, 2024
- বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
হাসিনার শাসন মৃত্যু শয্যায়
হাসিনার শাসন এখন মৃত্যু শয্যায়। দেশের জনজীবনে যখন গভীর রক্তপাত হয়, তখন রক্তশূণ্যতা সৃষ্টি হয় শাসকের দেহে। তাতে দ্রুত পতন ঘটে শাসকের। খুনি হাসিনার ক্ষেত্রে সেটিই হতে চলেছে। গত কয়েক দিনে বাংলাদেশে যত রক্তপাত হয়েছে সেরূপ রক্তপাতের পর বিশ্বের কোন স্বৈরশাসকই অতীতে বাঁচেনি। হাসিনাও বাঁচবে না। তার শাসনকে এখন অক্সিজেন দিয়ে কোন মত বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। তার সরকার এখন intensive care (ICU)’তে। মৃত্যুশয্যায় শায়ীত রোগী হাত-পা নাড়া-চাড়া করতে পারে না; বড়জোর মুখ দিয়ে কিছু অস্পষ্ট ও অসংলগ্ন আওয়াজ বের করতে পারে । তেমন একটি অবস্থা খুনি হাসিনার। মাঝে মাঝে হাসিনা বিবৃতি দেয়; কিন্তু সে বিবৃতিতে প্রাণ থাকে না। বরং থাকে মরণাপন্ন রোগীর ন্যায় কিছু আড়ষ্ট কথা।
হাসিনার প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি ও RAB আজ বিকল। তারা ময়দানে থাকলেও কামড় দেয়ার মত দাঁত নেই। তাদের দাঁত ছাত্ররা ভেঙ্গে দিয়েছে। ফলে শুক্রবারে মিছিলের উপর তারা তেমন গুলি চালায়নি। আওয়ামী লীগ, ছাত্র লীগ, যুব লীগের নেতাকর্মীরাও ময়দান ছেড়ে পালিয়েছে। এসব আওয়ামী সংগঠনের নেতাকর্মীগণ ক্যান্টনমেন্টে বাস করে না, ফলে গণরোষ থেকে বাঁচতে অনেকে ঘরবাড়ী ছেড়ে গোপন আস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। অনেকের ঘরবাড়ী ও দোকান-পাট ইতিমধ্যেই জনগণ পুড়িয়ে দিচ্ছে। প্রাণ বাঁচাতে বহু নেতা-কর্মী ও এমপি বিদেশে পাড়ী জমিয়েছে। অনেকেই এখন তল্পিতল্পা বাঁধতে ব্যস্ত। তারাও সত্বর দেশ ছাড়বে। ১৯৭৫ সালে মুজিব নিহত হয়ে আওয়ামী লীগকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল। এবার হাসিনা আওয়ামী লীগের মৃত্যু ডেকে আনবে। আওয়ামী লীগের অবস্থা এখন ডুবন্ত নৌকার মত, যাত্রীরা নৌকা থেকে ঝাঁপ দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে।
নির্মিত হলো নতুন ইতিহাস
শুক্রবার ২ আগস্টে বাংলাদেশের বুকে নতুন ইতিহাস নির্মিত হলো। ছাত্র-জনতার সুনামি দেখা গেছে সমগ্র দেশ জুড়ে। সমগ্র ঢাকা প্লাবিত হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে। বাংলার সমগ্র ইতিহাসে এমন বিপুল জনসমাবেশ আর কোন কালেই হয়নি। জনতার এ সুনামি দেখে পুলিশ-বিজিবি ও RAB ভয় পেয়েছে। তাদের ভাবনা এখন হাসিনার গদি বাঁচানো নিয়ে নয়, বরং নিজেদের পিঠের চামড়া বাঁচানো নিয়ে। তাই আগের মতো আজ তারা গুলি চালায়নি। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় নিরাশ হয়ে ঢাকার উত্তরায় ছাত্রলীগের গুন্ডারা নিজেরাই অস্ত্র হাতে রাস্তায় নেমেছে। এটি হলো শেষ নিশ্বাস ত্যাগের আগে মরণপন্ন রোগীর কিছুক্ষণের জন্য জোরে জোর নিশ্বাস টানার মত। কারণ দেহ তখন বাঁচার জন্য তার শেষ সামর্থ্যটুকুও কাজে লাগায়।
ঢাকার রাস্তা পাহারা দিচ্ছে হাসিনার চৌকিদার সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী পাহারা না দিলে হাসিনাকে শ্রীলংকার শাসকদের মত গদি ছেড়ে বহু আগেই পালাতে হতো। হাসিনার মৃতপ্রায় প্রশাসনে অক্সিজেন দেয়ার কাজটি করছে এ চৌকিদার সেনাবাহিনী। এই অক্সিজেন বন্ধ হলেই হাসিনার শাসনের মৃত্যু ঘটবে। হাসিনা তার শাসনকে বাঁচানোর কোন চেষ্টাই বাদ রাখেনি। রাস্তায় পুলিশ, বিজেবি, RAB ও সেনাবাহিনী নামিয়েছে এবং আকাশ থেকে হেলিকপ্টার দিয়ে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। দেশটিকে একটি রণক্ষেত্রে পরিণত করেছে। দিনের পর দিন কার্ফিউ জারি করে চলেছে। এমনকি একাত্তরের যুদ্ধেও ঢাকায় রাস্তায় সামরিক বাহিনীর এতো ট্যাংক, এতো সাঁজোয়া গাড়ি ও এতো সেনাসদস্য দেখা যায়নি। এবং এতো কার্ফিউ দিয়ে জনগণকে বিপদে ফেলা হয়নি। কিন্তু সব কিছুই ব্যর্থ হয়েছে। হাসিনার সামনে এখন একটিই পথ; সেটি বিদায়ের।
হাসিনার মিথ্যাচার
হাসিনার মিথ্যাচার এবং সত্য গোপনের নমুনা হলো, খুনি হাসিনার হাতে কতজন নিহত হয়েছে ও আহত হয়েছে তার কোন নির্ভরযোগ্য হিসাব নাই। কারণ, হাসিনার উদ্দেশ্য শুধু গণহ্ত্যা নয়, বরং নিহতদের লাশ গোপন করাও। সেটি দেখা গেছে ২০১৩ সালের ৫ মে’র শাপলা চত্বরের গণহত্যার রাতে। শতশত মানুষ সে রাতে নিহত ও আহত হয়েছিল। অথচ হাসিনা দাবী করেছিল সে রাতে একজনকেও হত্যা করা হয়নি। এবং বলেছিল হিফাজতের লোকেরা রং মেখে রাস্তায় শুয়ে ছিল। কত বড় মিথ্যাচার! অনুমান করা হচ্ছে খুনি হাসিনার বাহিনীর হাতে দুই হাজারের বেশী নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এবং অধিকাংশের লাশ গায়েব করা হয়েছে। খবরে প্রকাশ, ঢাকার একটি মাত্র কবরস্থানে ৬০টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা হয়েছে।
মিথ্যাচারিতায় হাসিনা নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। হাসিনার দাবী, বর্তমান ছাত্র আন্দোলনের পিছনে ছাত্ররা নেই; রয়েছে তৃতীয় একটি পক্ষ। হাসিনার ভাষায় সে তৃতীয় পক্ষ হলো, জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি ও ছাত্র শিবির। তার আরো দাবী, সরকারি বাহিনী কাউকে গুলি করে হ্ত্যা করেনি; যত হতাহত হয়েছে তার পিছনে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের সন্ত্রাসীরা। সে অভিযোগ এনে সংগঠন দুটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
হাসিনার আরো দাবী, হেলিকপ্টার থেকে কাউকে গুলি করা হয়নি; আগুন নেভাতে নাকি স্রেফ পানি ফেলার কাজে হেলিকপ্টার ব্যবহৃত হয়েছে। অথচ হেলিকপ্টার থেকে গুলি বর্ষণের ছবি সোসাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে। হাসিনার এরূপ মিথ্যাচার অতি পুরানো। ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসে হাসিনা দাবী করে, সে নাকি ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভোটে। কি বিশাল মিথ্যা!শয়তানের যে কোন খলিফার ন্যায় হাসিনার এভাবে মিথ্যাকে হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফ দাবী করেছে, রংপুরে আবু সায়ীদকে যে পুলিশ হত্যা করেছে -সে নাকি ছাত্র জীবনে ছাত্র শিবির করতো। অন্যদিকে রংপুরে থানার পুলিশ রিপোর্ট করেছে আবু সায়ীদ কোন গুলিতে মারা যায়নি, সে মারা গেছে আন্দোলনকারীদের হাতে।
শক্ত ধাক্কা দেয়ার এখনই সময়
আন্দোলনের ঝড়ে হাসিনার দেয়াল হেলে পড়েছে। সবাই মিলে শক্ত একটি ধাক্কা দিলে সহজেই এটি মাটিতে মিশে যাবে। তাই হাসিনার দেয়ালে ধাক্কা দেয়ার এখনই মোক্ষম সময়। বাংলাদেশের যেসব নর-নারী, ছাত্র-ছাত্রী এবং রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী এতো কাল হাসিনার দুঃশাসনে নির্যাতিত হয়েছে -তাদের জন্য রাস্তায় নামার এখনই সময়। আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালা তাদের সামনে এক সুবর্ণ সুযোগ হাজির করেছেন। এতো কাল এ নৃশংস জালিমকে শাস্তি দেয়ার সুযোগ তারা পায়নি, এখন এসেছে সে সুযোগ। বাংলাদেশের মানুষের জন্য এটি এক বিশেষ নিয়ামত। এ নিয়ামত থেকে ফায়দা না নেওয়াটি হবে বড় রকমের খেয়ানত। এ সুযোগ হারালে বেঁচে যাবে জালেমের নৃশংস শাসন। তখন বাঁচতে হবে জালেমের নৃশংস জুলুম যাতনা সয়ে। এবং পরকালে কাটগড়ায় উঠতে হবে এ নিষ্ক্রিয়তার কৈফিয়ত দিতে।
ঈমানদারের দায়বদ্ধতাটি এ ক্ষেত্রে বিশাল। এ পৃথিবী পৃষ্ঠে মহান আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালার পক্ষ থেকে সে হলো নিয়োগপ্রাপ্ত খলিফা। তাঁর দায়িত্ব, মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করা। সেটি ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের -যেমন নবীজী (সা:)’র আমলে নির্মিত হয়েছিল। এটিই হলো মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নেক কর্ম। তাই সে কখনোই বাংলাদেশের ন্যায় একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে হাসিনার ন্যায় শয়তানের খলিফা ও ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী শাসকের সেবাদাসীর শাসন মেনে নিতে পারে না। সে বাঁচতে পারে না তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ নিয়ে। বরং দায়িত্ব এখানে বিদ্রোহের; এবং জিহাদ এখানে ফরজ।
দায়িত্ব নিতে হবে সবার
খুনি হাসিনাকে সরানো দায়িত্বটি শুধু ছাত্রদের নয়, সে দায়িত্ব দেশের প্রতিটি নাগরিকের। প্রতিটি ঈমানদারের এটিই হলো ঈমানী দায়বদ্ধতা। লড়াই এখানে বেঈমানের বিরুদ্ধে ঈমানদারের । যারা একটি সভ্য, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্ন দেখেন -তাদের এখন ময়দানে নামার সর্বোত্তম সময়। বর্বর ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশে আগুন লাগিয়েছে। যখন দেশে আগুন লাগে তখন ঘুমিয়ে থাকা ও নিষ্ক্রিয় থাকা কবিরা গুনাহ। এটি হারাম। বুঝতে হবে, দেশ কোন দলের বা নেতার নয়। এ দেশ প্রতিটি নাগরিকের। আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালা বাংলাদেশকে আমাদের জন্য আমানত হিসাবে দিয়েছেন। তিনি দেখতে চান, তাঁর দেয়া এ ভূমিতে আমরা কিরূপ ফসল ফলাই। পরীক্ষা হবে আমাদের ঈমানের ও আমলের। এ ভূমিতে একটি সভ্য ও সুন্দর রাষ্ট্র গড়ার দায়িত্ব আমাদের সবার। এ রাষ্ট্রের বুক থেকে জালেমের নিপাত করার লড়াইটি বিশুদ্ধ জিহাদ। এ জিহাদে কার কি অবদান সেটি আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালা প্রতিক্ষণ দেখছেন। জিহাদের এ রণঙ্গণ থেকে যারা দূরে থাকে তাদেরকে নবীজী (সা:)’র যুগে মুনাফিক বলা হয়েছে। এ মুহূর্তে তাই মুনাফিক হওয়া থেকে বাঁচতে হবে। মুনাফিক হওয়া থেকে বাঁচার অর্থ জাহান্নাম থেকে বাঁচা।
সর্বশ্রেষ্ঠ দান মহান আল্লাহ সুবহানাতায়ালার
আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালা বাংলাদেশীদের জন্য একটি বিশুদ্ধ জিহাদের ক্ষেত্র উপহার দিয়েছেন। এ বঙ্গীয় ভূমিতে তিনি নামিয়ে দিয়েছেন জান্নাতে উঠার সিঁড়ি। মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে এর চেয়ে বড় দান আর কি হতে পারে ?আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের শহীদ রূপে জান্নাতে তুলে নেন এই জিহাদের ময়দান থেকেই -যা বলা হয়েছে সুরা আল ইমরানের ১৪০ নম্বর আয়াতে। তাছাড়া যে দেশের বুকে শাসন চলে হাসিনার ন্যায় ইসলামবিরোধী, পৌত্তলিকসেবী, খুনি, জালিম ও ফ্যাসিস্টের, সে দেশের ভূমি তো বিশুদ্ধ জিহাদের ময়দান। জিহাদ কখনোই বিফল হয় না। কারণ জিহাদ মানে আল্লাহর পথে জিহাদ। জিহাদের মালিকানা আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালার। তাই তিনি জিহাদকে পরাজিত হতে দেন না।
তবে শর্ত হলো, জিহাদটিকে আল্লাহর পথে বিশুদ্ধ জিহাদ হতে হয়। মুসলিমদের প্রতিটি যুদ্ধকেই জিহাদ হতে হয়, নইলে সে যুদ্ধ হারাম। বর্ণবাদী, জাতীয়তাবাদী, রাজতন্ত্রী বা সেক্যুলার এজেন্ডাকে বিজয়ী করা যে যুদ্ধ -সেটি কখনোই জিহাদ নয়। তাই খুনি-জালিম-ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে সেক্যুলারিস্ট বা জাতীয়তাবাদীদের যুদ্ধ কখনোই জিহাদ হয়না। সে যুদ্ধকে জিহাদে পরিণত করতে হলে জালিম ফ্যাসিস্টের নির্মূলে সাথে ইসলামী বিধানকে প্রতিষ্ঠার নিয়েতও থাকতে হয়। তাই বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের একাত্তরের যুদ্ধ জিহাদ ছিলনা। কারণ তাতে যুদ্ধ ছিল, কিন্তু ইসলামকে বিজয়ী করার এজেন্ডা বা নিয়েত ছিল না। আর যুদ্ধটি জিহাদ না হলে সে যুদ্ধে মারা গেলে কেউ শহীদ হয়না। বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাংলাদেশে হাসিনা নির্মূলের বর্তমান লড়াইকে অবশ্যই বিশুদ্ধ জিহাদে পরিণত করার চেষ্টা ও নিয়েত থাকতে হবে। তাই এ লড়াইকে অবশ্যই সেক্যুলারিজম ও দলবাদী চেতনার ফিতনা থেকে মুক্ত করতে হবে। নইলে এ লড়াইয়ে বিপুল রক্তদানে হাসিনার পতন হলেও পরকালে রক্তদাতাদের কোন লাভ হবে না।
শিকড় উপড়াতে হবে ফ্যাসিবাদের
হাসিনার পতন হবেই। তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই। তবে শুধু হাসিনার পতন নিয়ে খুশি হলে চলবে না। আরো বহু কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের সমস্যা শুধু হাসিনা নয়। হাসিনাই তার দলর একমাত্র খেলোয়াড় নয়। হাসিনার সহযোগী বিশাল ফ্যাসিবাদী বাহিনীও নির্মূল করতে হবে। এ দেশের বুক থেকে ফ্যাসিবাদের শিকড়কে উপড়িয়ে ফেলতে হবে। নির্মূল করতে হবে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী ষড়যন্ত্রের সকল আস্তানা।
আরো বুঝতে হবে, বাংলাদেশীদের শত্রু শুধু শেখ হাসিনা ও তার দল নয়। সে তো ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী চক্রের প্রতিপালিত দালাল মাত্র। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব নির্মূল হয়েছিল। কিন্তু সেদিন বাংলার মানুষ মুজিবের হাতে প্রতিষ্ঠিত বাকশালী ফ্যাসিবাদের শিকড়কে নির্মূল করতে পারেনি। তাই হাসিনার রূপ ধরে সেটি আবার নৃশংসতা নিয়ে হাজির হয়েছে। এবার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, যাতে আর কখনোই কোন ফ্যাসিস্টের শাসন প্রতিষ্ঠা না পায়। এদেশটিকে শতভাগ স্বাধীন করতেই হবে। মুক্ত করতে হবে ভারতের দখলদারী থেকে। বাংলাদেশীদের কাজ করতে হবে একমাত্র আল্লাহর খলিফার রূপে -ভারতের বা অন্য কোন দেশের খলিফা রূপে নয়।
লিখতে হবে নতুন ইতিহাস
এ লড়াই শুধু রাজনৈতিক জিহাদ নয়, এটি এক বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ। বিগত ৫৪ বছর ধরে ভারতসেবী আওয়ামী বাকশালীরা বাঙালি মুসলিমের রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে যে মিথ্যাপূর্ণ বয়ান তৈরি করেছে, সে জালি ইতিহাসের কবর দিতেই হবে। দীর্ঘকাল ধরে এই ভারতসেবী ফ্যাসিস্টগণ বাংলাদেশের ইসলামদরদী দেশপ্রেমিকদের চরিত্র হনন করেছে। দেশের সম্মানিত দেশপ্রেমিকদেরকে স্বাধীনতার শত্রু বলে চিত্রিত করেছে। তাদের লেখা ইতিহাসে বাংলার কৃতি সন্তান নবাব সলিমুল্লাহ, শেরে বাংলা ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ারদী ও খাজা নাজিমুদ্দিনদের মত ব্যক্তিগণ স্থান পাননি। অথচ তারাই হলেন আমাদের স্বাধীনতার মূল সৈনিক। তাঁরা না হলে এই বাংলাদেশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হিন্দু-শাসিত এক রাজ্য হত। তারাই ১৯৪৭ সালে আমাদেরকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের হাত থেকে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন।
আমরা ভারতসেবী স্বৈরাচারী দুর্বৃত্তদের চরিত্র দেখেছি। তাদের দুর্বৃত্তি, মিথ্যাচার, স্বৈরাচার ও নৃশংসতা আমরা চিরকাল মনে রাখবো এবং আগামী প্রজন্মের জন্য লিখে রাখবো। আমরা নতুন ইতিহাস নির্মাণ করবো। ইসলামের ও গণতন্ত্রের এই শত্রুদের আসল চরিত্রকে জনগণের সামনে আমরা অবশ্য তুলে ধরবো। ১৯৭৫’য়ের পর সে সুযোগ এসেছিল; কিন্তু সে সুযোগ আমরা হেলায় হারিয়েছি। সেটি আর নয়।
নির্মিত হতে যাচ্ছে নতুন ইতিহাস
সৌভাগ্যে বিষয় যে, বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির অঙ্গন নিজেই এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। ছাত্ররাই আজ শিক্ষকদের শিক্ষককে পরিণত হয়েছে। তাই একথা নিশ্চিত করেই বলা যায়, বাঙালি মুসলিমের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। এই বাঙালি মুসলিমরাই ১৯৪৭ সালে এই উপমহাদেশের ভূ-রাজনীতি পাল্টিয়ে দিয়েছিল। মুসলিম লীগের সৃষ্টি ও পাকিস্তানের সৃষ্টিতে বাঙালি মুসলিমরাই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল। আবার আমাদের নতুন ইতিহাস নির্মাণে হাত দিতে হবে। নজর রাখতে হবে, আন্দোলনের ফসল যেন অতীতের ন্যায় বানের জলে ভেসে না যায়। বাঙালি রূপে নয় মুসলিম রূপে বেড়ে উঠায় মনযোগী হতে হবে। কারণ, জান্নাত পেতে বাঙালি পরিচয় কাজে লাগবে না, কাজে লাগবে একমাত্র মুসলিম পরিচয়টিই।
আজ সমগ্র বিশ্বের মুসলিমগণ -বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিমগণ বাঙালি মুসলিমদের মুখের দিকে চেয়ে আছে। কারণ বাঙালি মুসলিমরাই হলো সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার বুকে সবচেয়ে বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠী। উপমহাদেশের মুসলিমদের ১৯৪৭’য়ের পাকিস্তান প্রকল্প ব্যর্থ হয়ে গেছে। এখন ময়দানে আমাদের নামতে হবে। আমরা বাঙালি মুসলিমগণ মেরুদন্ড নিয়ে খাড়া হতে পারলে ভারতীয় উপমহাদেশের ৬০ কোটি মুসলিম এক নতুন ভূ-রাজনৈতিক পরিচয় লাভ করবে।
তাই আমাদের দায়িত্বটি বিশাল। সে দায়িত্ব শুধু হাসিনার মতো এক নৃশংস দুর্বৃত্তের নির্মূল নয় বরং এক নতুন গৌরবজনক ইতিহাস নির্মাণের। আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালা আমাদের দিকে চেয়ে আছেন। আমরা তাঁর রাডারের নিচে। তিনি প্রতিক্ষণ দেখছেন তাঁর এজেন্ডাকে বিজয়ী করার কাজে আমাদের কার কি ভূমিকা। আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালার এজেন্ডা হলো, তাঁর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা। সে সাথে দুর্বৃত্তির নির্মূল (নেহী আনিল মুনকার) এবং ন্যায় ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা (আমিরু বিল মা’রুফ)। এবং তাঁর এজেন্ডার বিজয় নিয়েই তো প্রতিটি ঈমানদারের জিহাদ। এবং এটিই তো নবীজী (সা:)’র পথ। যারা এই জিহাদের ময়দানে নিষ্ক্রিয় -তারাই তো মুনাফিক। এবং সে মুনাফিকগণ যাবে নিশ্চিত জাহান্নামে। তাই আমাদের মিশন শুধু হাসিনার নৃশংস শাসন থেকে বাঁচা নয়, জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। এবং আমাদের এ লড়াই শুধু হাসিনার বিরুদ্ধে নয়, তার ভারতীয় মনিবদের বিরুদ্ধেও। ০৩/০৮/২০২৪
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018