হিন্দুত্ববাদী ভারত এবং বাঙালি মুসলিমের বিপন্ন মুসলিমত্ব ও স্বাধীনতা (পর্ব-৩)

ফিরোজ মাহবুব কামাল

 পরাধীনতাই যখন স্বাধীনতা

সভ্য ও ভদ্র গণতান্ত্রিক রাজনীতি বাংলাদেশে বহু পূর্ব থেকেই কবরে শায়ীত। দেশের উপর পুরা দখলদারীটা অসভ্য, নৃশংস ও স্বৈরাচারী দুর্বৃত্তদের হাতে। এ অসভ্য রাজনীতিতে শান্তিপূর্ণ মিছিল ও জনসভার সুযোগ নাই। পাকিস্তান আমলে  বড় বড় জনসভা করতে শেখ মুজিবকে পুলিশের অনুমতি নিতে হয়নি। জনসভা ও মিছিল করা নাগরিক অধিকার গণ্য হত। অথচ সে অধিকার আজ বিলুপ্ত। পুলিশের অনুমতি ছাড়া দেশের কোথাও কোন মিছিল-মিটিং করা যায় না। এবং পুলিশের অনুমতি সহজে মেলে না। কারণ, পুলিশের কাজ তো এ ধরণের মিটিং-মিছিল পন্ড করা। পাকিস্তান আমলে নির্বাচনে অংশ নিতে কোন দলের দলীয় নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়তো না। সেটি নাগরিকের মৌল অধিকার গণ্য হত। কিন্তু এখন সে অধিকার হরণ করা হয়েছে। শুরু হয়েছে নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ। নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণের নামে চলছে জনগণের স্বাধীনতার উপর নিয়ন্ত্রণ। কি বিস্ময়! এরূপ পরাধীনতাও গণ্য হয় স্বাধীনতা রূপে।

পাকিস্তান আমলে বিরোধী দলের মিছিলের উপর সরকারি পুলিশ ও শাসক দলের গুণ্ডারা হামলা করেনি। অথচ আজ সরকারি দলের অস্ত্রধারী গুন্ডাগণ পুলিশের চোখের সামনে হামলায় নামে। পুলিশ সে হামলাকারিদের গ্রেফতার করে না, বরং প্রতিরক্ষা দেয়। পাকিস্তান আমলের ২৩ বছরে ১০ জন মানুষও পুলিশের গুলিতে রাজপথে মারা পড়েনি। অথচ হাসিনার আমলে ২০১৩ সালের ৫ মে একরাতে বহুশত হিফাজত কর্মীকে হত্যা করা হয়। পাকিস্তান আমলে কোন বিরোধী দলীয় নেতা বা কর্মীকে গুম বা অপহরণ করা হয়েছে -তার প্রমাণ নাই। অথচ পত্রিকায় প্রকাশ, হাসিনার আমলে ৬ শতের বেশী মানুষ গুম হয়েছে। পাকিস্তান আমলে নির্যাতনের জন্য ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে আয়না ঘর নির্মিত হয়নি। অথচ সেটি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে হাসিনার আমলে। অতএব কোথায় অর্জিত হলো বাঙালির স্বাধীনতা? জয় বাংলা’র অর্থ কি তবে স্বাধীনতা হাওয়ায় হারিয়ে যাওয়া? এটির অর্থ কি মানবিক অধিকার হরণ, নির্যাতন, গুম, খুন, ধর্ষণ, গণতন্ত্র হত্যা ও গণহত্যা? জয় বাংলা কি তবে অপরাধীদের জয়? 

বাংলাদেশে আজ স্বাধীন মতপ্রকাশ ও নিরেপক্ষ পত্র-পত্রিকা বলে কিছু নাই। ক্ষমতাসীনদের রুচি নাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার নিষ্পত্তির। এমন রাজনীতিতে যা প্রবলতর হয় তা হলো, প্রতিপক্ষ নির্মূলের সহিংসতা। তখন লাশ পড়ে রাজপথে, গৃহের সামনে ও অফিস-আদালতে। মানুষ তখন গুম হয়, অত্যাচারিত হয় এবং বস্তাবন্দী লাশ হয়ে নদীতে বা ডোবার পানিতে পচা দুর্গন্ধ নিয়ে ভেসে উঠে। হারিয়ে যাওয়াদের খুঁজে বের করার বদলে পুলিশের তখন ব্যস্ততা বাড়ে গুম, খুন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদে মিছিলে নামে তাদের  গ্রেফতার করায়। সরকার প্রধানও তখন মৃতদের নিয়ে মস্করা করে। সেটি মস্করা যেমন মুজিব করেছিল, এখন হাসিনাও করছে। শাপলা চত্বরের হিফাজতে ইসলাম গুলীবিদ্ধ রক্তাক্ত কর্মীদের উদ্দেশ্যে হাসিনা বলেছিল, তারা নাকি গায়ে রং মেখে রাজ পথে শুয়ে ছিল! এবং পুলিশের তাড়া খেয়ে দৌড়িয়ে পালিয়েছিল! এমন অসভ্য ও কুরুচীপূর্ণ রাজনীতি যখন বিজয়ী হয় তখন বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের রাজনীতির অধিকার দূরে থাক, বাঁচার অধিকারটুকুও দেয়া হয় না। তাদের বিরুদ্ধে তখন শুরু হয় নৃশংস নির্মূল অভিযান। বাংলাদেশের জন্ম থেকেই সংঘাতের সে রাজনীতিকে তীব্রতর করা হয়েছে; এবং সেটি স্বৈরাচারী শাসক দলের পক্ষ থেকে।

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রাজনীতির ময়দান থেকে সকল প্রতিদ্বন্দীদের বের করে দিয়ে সমগ্র মাঠ দখলে নিয়ে শেখ মুজিব একা খেলেছেন। তার বাকশালী শাসনামলে সারা মাঠে অন্য কোন দলের খেলোয়াড় ছিল না, গোলকিপার ছিল না, কোন রিফারিও ছিল না। হঠাৎ বল হাতে পেলে অবুঝ শিশু যেমন ঠাউর করতে পারে না হাত দিয়ে খেলবে পা দিয়ে না খেলবে -তেমনি উদভ্রান্ত অবস্থা ছিল শেখ মুজিবের। কখনো খেলেছে প্রধানমন্ত্রী রূপে, কখনো বা প্রেসিডেন্ট রূপে। খেলার রুলটিও ছিল নিজের তৈরী, রিফারির দায়িত্বটাও ছিল তার নিজ হাতে। গোলপোষ্টটিও নিজের ইচ্ছামত যেখানে সেখানে বসিয়ে নিয়েছেন -যাত গোল দিতে সুবিধা হয। ফলে মনের খুশিতে মুজিব যত ইচ্ছা তত গোল দিয়েছেন। রাজনীতির মাঠে বিজয় সবসময়ই ছিল তার। বার বার পেনাল্টি করলেও তাকে শাস্তি দেয়ার লোক ছিল না। সিরাজ সিকদারকে হত্যার পর সংসদে দাঁড়িয়ে “কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?” বললেও খুনের অপরাধে সে আত্মস্বীকৃত খুনিকে লাল কার্ড দেখানোর মত লোক ছিল না।                                                                                                                                                     এরপর মুজিব যখন তিনি টের পেলেন স্বাধীন নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের পরাজয় অনিবার্য, তখন স্বাধীন নির্বাচন বিলুপ্ত করতে সকল দলকেই নিষিদ্ধ করে দেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছাড়াই ১৯৭৩ সালে নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্যের পদ থেকে নিজেকে প্রসিডেন্টের পদে বসিয়ে দেন। মুজিব এভাবেই গণতন্ত্রের সাথে মস্করা করে। একই রূপ মস্করা করে শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালে নির্বাচনের দিন ছিল ৩০ ডিসেম্বর। কিন্তু আগের রাতেই হাসিনা পুলিশ দিয়ে ব্যালট ছিনতাই করে ৩০০ সিটের মাঝে ২৯৩ সিটে বিজয়ী হয়।  ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট মুজিব ও তার বাকশালী ফ্যাসিবাদের মৃত্যু ঘটে। রাজনীতির এমন এক প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমানের অবদানটি যে কোন বিচারেই ছিল বিশাল। তিনি গণতন্ত্রকে কবর থেকে ফিরিয়ে আনেন। রাজনীতির অঙ্গণে তিনিই প্রথম সকল দলের জন্যই স্থান করে দেন। ফলে শুধু মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামী নয়, এমন কি মুজিবের হাতে দাফনপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগও কবর থেকে বেরিয়ে রাজনীতিতে ফিরে আসার সুযোগ পায়।  

 

বেঁচে আছে নৃশংস ফ্যাসিবাদ

 শেখ মুজিব মারা গেলেও তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিপক্ষ নির্মূলের ফ্যাসিবাদী রাজনীতি আজও প্রবল ভাবে বেঁচে আছে। সেটি হাসিনার হাতে শাসন ক্ষমতা হাইজ্যাক হওয়াতে। ভারতও এটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়। কারণ, ভারতের সামনে এছাড়া ভিন্ন পথ নাই। ভারত চায় এক অধীনত বাংলাদেশ। এবং ভারতের প্রতি সে অধীনতা বাড়াতে স্বাধীনতাপন্থীদের  নির্মূলের সে মুজিবী রাজনীতিকে হাসিনা আরো সহিংস ও রক্তাক্ত  করেছে। তাই বিরোধী দলীয় নেতাদের গুম, ফাঁসি, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন ও ক্রস ফ্যায়ারে হত্যা এখন অতি মামূলী ব্যাপার। প্রতিপক্ষ নির্মূলের কাজকে তীব্রতর করতে শেখ হাসিনা শুধু যে নিজ দলের গুন্ডাদের ব্যবহার করছে তা নয়, ব্যবহার করছে দেশবাসীর রাজস্বে পালিত পুলিশ, RAB, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীকেও। রাজনৈতিক শত্রুদের হত্যাকে জায়েজ করতে ব্যবহৃত হচ্ছে শৃঙ্খলিত আদালত। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ এখন রাষ্ট্র ও তার সকল প্রতিষ্ঠানগুলির নিরপেক্ষ চরিত্রকে ধ্বংস করেছে। এগুলি প্রতিপালিত হয় জনগণের রাজস্বের অর্থে; কিন্তু এগুলির উপর মালিকানা একমাত্র শেখ হাসিনার। জনগণের স্বার্থ এ প্রতিষ্ঠানগুলি দেখে না, দেখে একমাত্র হাসিনার স্বার্থ। হাসিনার কই’য়ের তেল কই ভাজছে। অর্থাৎ জনগণের রাজস্বের অর্থ দিয়ে পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী, RAB, আদালতের বিচারকদের প্রতিপালন করে সেগুলি দিয়েই জনগণের ভোটের উপর ডাকাতি করছে। তাদেরকে ব্যবহার করছে জনগণের মিটিং, মিছিল, কথা বলা ও লেখালেখির  ন্যায় মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়ার কাজে। গুম, খুন, অপহরণ, নির্যাতন ও সন্ত্রাসের ন্যায় অপরাধ কর্মের মূল সংগঠক মহল্লার সাধারণ অপরাধীরা নয়, বরং জনগণের অর্থে প্রতিপালিত রাষ্ট্রীয় কর্মচারীগণ।    

 

 জনক পরাধীনতার

ভদ্র্র, সভ্য ও শান্তিপূর্ণ রাজনীতির অপরিহার্য উপকরণ হলো দল গড়া, সভাসমিতি করা, মিছিল করা, পত্র-পত্রিকা ও টিভিতে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা। জনগণকে দিতে হবে যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দেয়ার স্বাধীনতা। সভ্য রাজনীতির আরো রীতি হলো নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের স্বাধীনতা। রাজনীতির শান্তিপূর্ণ পট পরিবর্তনের এটিই তো একমাত্র পথ। কিন্তু স্বৈরাচারী শাসকদের কাছে জনগণের ভোটে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পদ্ধতিটাই অসহ্য। তার তো চায় আমৃত্যু ক্ষমতায় থাকতে। তাদের কাছে অসহ্য তাই নির্বাচন। নির্বাচন দিলেও সে নির্বাচনে যে করেই হোক তারা বিজয়ী হতে চায়। ফ্যাসিস্টদের কাছে পরাজয় অসহ্য। তাই পট পরিবর্তন যেমন মুজিব চায়নি, তেমনি হাসিনাও চায় না। ফলে তাদের আমলে হামলা হয় দল গড়া, সভা-সমিতি করা, মিটিং-মিছিল করা, পত্র-পত্রিকা ও টিভিতে মতামত প্রকাশের ন্যায় মৌলিক স্বাধীনতার উপর। বন্ধ করা হয় নিরপেক্ষ নির্বাচনের রীতি। অথচ স্বাধীনতা না থাকাটাই তো পরাধীনতা। এরূপ পরাধীনতাই তো বড় অসভ্যতা। বাংলাদেশে সে পরাধীনতার পিতা হলো শেখ মুজিব।

বাংলাদেশের জনগণ আজ  সে পরাধীনতা ও অসভ্যতার শিকার। সভাসমিতি ও মিছিলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সরকার বিরোধী দলগুলোকে বাধ্য করা হয়েছে অবরোধ ও হরতালের রাজনীতি বেছে নিতে। তবে অবরোধ ও হরতালের রাজনীতিকেও সরকার এখন মেনে নিতে রাজী নয়। অথচ শান্তিপূর্ণ রাজনীতির এটিই সর্বশেষ ধাপ। এরপর যা বাঁকি থাকে সেটি শান্তিপূর্ণ রাজনীতির পথ নয়, সেটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পথ। বাংলাদেশের জনগণকে আজ  সেদিকেই ধাবিত হতে বাধ্য করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সহিংস সংঘাতের শুরু হঠাৎ হয়নি। এরও দীর্ঘ ইতিহাস আছে। এর কারণ বুঝতে হলে অবশ্যই শেখ মুজিব ও তার অনুসারীদের ভারতসেবী রাজনীতিকে বুঝতে হবে। বুঝতে হবে ভারতের লক্ষ্য ও তার ভূ-রাজনীতিকে। বাংলাদেশে সহিংস রাজনীতির মূলে ভারত। এ যুদ্ধের শুরু স্রেফ একাত্তর থেকে নয়,বরং ১৯৪৭ থেকেই। ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা চায়নি। ১৯৪৭’য়ে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা রুখতে ব্যর্থ হয়ে ভারতের স্ট্রাটেজি হয় অখন্ড পাকিস্তানের বেঁচে থাকাকে অসম্ভব করা। ভারতের পরিচালিত এ যুদ্ধে শেখ মুজিব ছিল ভারতের সেবাদাস সৈনিক মাত্র। মুজিবের সে পরিচিতিটি গোপন নয়। সেটি প্রকাশ পায় আগরতলা ষড়যন্ত্র প্রকাশ পাওয়ার পর। সে ষড়যন্ত্র যে শত ভাগ সঠিক ছিল –সেটি লে. কর্নেল শওকত আলীর ন্যায় যারা ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিল তারাই স্বীকার করেছে।

 

একাত্তরের নাশকতার লিগ্যাসি

ভারতের একাত্তরের যুদ্ধটি শুধু পাকিস্তান ধ্বংসের লক্ষ্যে ছিল না। সেটি ছিল বাংলাদেশের বুকে ইসলামপন্থীদের নির্মূলের লক্ষ্যেও। সে সাথে লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশকে ভারতের আশ্রীত রাষ্ট্রে পরিণত করা। লক্ষ্যটি স্রেফ পাকিস্তানকে খন্ডিত করা হলে ১৯৭১’য়ের পর বাংলাদেশে ভারতসেবীদের মুখে নির্মূলের রাজনীতি অব্যাহত থাকার কথা নয়। কিন্তু একাত্তরের পাকিস্তান খন্ডিত হলেও ইসলামপন্থীদের নির্মূলের কাজটি শেষ হয়নি। তাই ভারতের কাছে শেখ মুজিবের অনুসারীদের প্রয়োজন শেষ হয়নি। বরং বেড়েছে। কারণ বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের নবজাগরণ শুরু হয়েছে। ফলে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের উত্থানের। আর সেটি হলে নতুন রাজনৈতিক স্বপ্ন দেখা দিবে প্রতিবেশী আসাম ও পশ্চিমবাংলার বিপুল সংখ্যক মুসলিমদের মাঝে। সে কারণে প্রচণ্ড ভীতি বেড়েছে ভারতের। ফলে দেখা দিয়েছে ইসলামপন্থীদের ফাঁসিতে ঝুলানো ও তাদেরকে জেলবন্দী রাখার প্রয়োজন। এরই ফলে শেখ মুজিবকে দিয়ে ভারত যা করিয়ে নেয়নি, তা শেখ হাসিনাকে দিয়ে করিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে।

তাছাড়া যুদ্ধ একবার শুরু হলে সেটি কি সহজে শেষ হয়? আফগানিস্তের যুদ্ধ বিগত ৪০ বছরেও শেষ হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক যুদ্ধ শেষ হলেও এখনো চলছে অর্থনৈতিক ও কুটনৈতিক যুদ্ধ। ইরাকের যুদ্ধ না থেমে বরং সে যুদ্ধ সিরিয়াকেও গ্রাস করেছে। মার্কিনীদের শুরু করা কোন যুদ্ধই এখন থামার নাম নিচ্ছে। বাংলাদেশের বুকে একাত্তরের যুদ্ধও শেষ হয়নি। বরং রাজনীতির অঙ্গণে আজ  যে যুদ্ধাবস্থা সেটি মূলত একাত্তরেরই লিগ্যাসি। একাত্তরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুরাপুরি দখলদারী প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতের। আজকের যুদ্ধটির মূল লক্ষ্য তো সে ভারতীয় দখলদারীকে বাঁচিয়ে রাখার। এবং একটি সহজ যুদ্ধজয়ের জন্য আওয়ামী বাকশালীদের ক্ষমতায় রাখা ভারতের কাছে এজন্যই এতো জরুরি।

আর নিয়েত যুদ্ধের হলে সমস্যার শান্তিপূণ সমাধান কি সম্ভব? তাই আবার ফিরে এসেছে যুদ্ধময় একাত্তর। ১৯৭১’য়ে পাকিস্তান ভেঙ্গে যারা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছিল তাদের চেতনায় অন্যদের -বিশেষ করে ভারত বিরোধীদের, বাঁচাটি গুরুত্ব পায়নি। এজন্যই তাদের রাজনীতিতে আজও নির্মূলের সুর। ইসলামের এই শত্রুদের কাছে যা গুরুত্ব পায় তা হলো একমাত্র নিজেদের বাঁচাটি। সেরূপ বাঁচার স্বার্থে তারা ভারতের লাগাতর সাহায্য চায়। ভারতের সাহায্য ছাড়া তারা যে বাঁচতে পারে না -সেটি তারা বুঝে। ভারতও চায় না, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামপন্থীরা বেঁচে থাকুক। সে জন্যই তারা ইসলামপন্থীদের নির্মূল চায়। সে নির্মূল কখনো ফাঁসিতে ঝুলিয়ে, কখনো রাজপথে পিটিয়ে হত্যা করে, আবার কখনো বা কারাবন্দী করে।

 

পাল্টাতে হবে নিজেদের

বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদেরকে দিল্লির শাসক মহল নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে। ভারত জানে, ইসলামপন্থীদের বাঁচিয়ে রেখে হিন্দুত্ববাদের বিজয় অসম্ভব, তাই তাদের নির্মূল চায়। সে নির্মূলের এজেন্ডা নিয়ে বাংলাদেশের বুকে রাজনীতি করে ভারতের অর্থপুষ্ট ভারতসেবীদের দিয়ে গঠিত “ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি”। এবং সে অভিন্ন এজেন্ডা আওয়ামী লীগেরও। মুজিব তাই শাসনক্ষমতা হাতে পাওয়া মাত্রই সকল ইসলামীপন্থীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে। একাত্তরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দখলারি প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই হাজার হাজার ইসলামপন্থী নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়,এবং জীবিতদের জেলে তোলা হয়। একাত্তরের পূর্বে নিছক মাত্র। তার ফ্যাসিবাদী আসল  রূপটি প্রকাশ পায় নির্বাচনী বিজয়ের পর। সে রূপটি ছিল এক নৃশংস ফ্যাসিস্ট শাসকের। সে অভিন্ন ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার নিয়ে শেখ হাসিনা আজ তার পিতার অপূর্ণ এজেন্ডাকে বাস্তবায়ন করছে। ভারত মুজিবকে বাঁচাতে পারিনি। কিন্তু এবার বদ্ধপরিকর হাসিনাকে বাঁচিয়ে রাখায়। 

বাংলাদেশী জনগণের লড়াইটি তাই শুধু গণতন্ত্র হত্যাকারী হাসিনার বিরুদ্ধে নয়, বরং ভারতের বিরুদ্ধেও। হাসিনা থাকবে না, কিন্তু ভারত শতাব্দীর পর শতাব্দী থাকবে। বাংলাদেশীরা তাদের এই আগ্রাসী প্রতিবেশীকে পাল্টাতে পারবো না। বরং স্বাাধীনতা বাঁচাতে হলে অবশ্যই তাদের নিজেদের পাল্টাতে হবে। স্বাধীন ভাবে বাঁচার একটি চড়া মূল্য আছে। স্বাধীন ভাবে বাঁচতে হলে বাংলাদেশীদের সে মূল্য পরিশোধের সামর্থ্য গড়ে তুলতে হবে।  সে সামর্থ্যটি শুধু অর্থনৈতিক বা অস্ত্রের নয়।  বরং মূল সামর্থ্যটি আদর্শের। এবং সে আদর্শটি হলো ইসলাম। এই ইসলাম দিয়েছিল দরিদ্র ও দুর্বল আরবদের রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোর। সে ইসলামই সাড়ে তিন কোটি আফগানদের দিয়েছিল সোভিয়েত রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করার। ভারত সোভিয়েত রাশিয়া ও চেয়ে শক্তিশালী নয়। ১৮ কোটি বাংলাদেশী কি সাড়ে তিন কোটি আফগানদের চেয়ে দুর্বল? ০৯/১২/২০২৩

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *